Translate

শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১২

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত কারা ও এর আকিদাহ কি ? ১ম পর্ব

এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া


প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক

নুরুলগনি ইসলামী একাডিমী

কাটাছরা

মিরসরাই

চট্গ্রাম



আকীদার অর্থ

=========



আভিধানিক দিক থেকে আকীদাহ শব্দটি উৎকলিত হয়েছে, আল-আকদু, আতাওসীকু, আল-ইহকামু, বা দৃঢ় করে বাঁধা বুঝানোর অর্থে।

পরিভাষায় আকীদাহ বলতে বুঝায়: এমন সন্দেহাতীত প্রত্যয় এবং দৃঢ় বিশ্বাসকে যাতে বিশ্বাসকারীর নিকট কোন সন্দেহের উদ্রেক করতে পারে না।

তাহলে ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায় : মহান আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান বিশ্বাস রাখা, অনিবার্য করণেই    ***    আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর আনুগত্যকে মেনে নেওয়া এবং   ***  ফিরিশতা,   *** আসমানী কিতাবসমুহ, সকল   **** রাসূল,   **কিয়ামত দিবস,    **তাকদীদের ভালো মন্দ,   **কুরআন হাদীসে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত সকল গায়েবী বিষয় এবং যাবতীয় সংবাদ, অকাট্যভাবে প্রমাণিত সকল তত্বমূলক বা কর্মমূলক বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।











আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত:

=====================

যারা সত্যিকার অর্থে রসুল সাঃ এর প্রকৃত সুন্নাত ও আদর্শ পালন কল্পে , যাবতীয় নবআবিষ্কৃত বেদআত,

ও কূসংষ্কার থেকে নিজেকে দূরে রেখে এক মাত্র সুন্নতের উপরই সূদৃঢ থেকেছে তারাই আহলুস সুন্নাহ,



আর যারা জামাতে ছাহাবা এর
অনুগত তাদেরকে আল জামা‘আত বলা হয় এই মর্মে যে, তাঁরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে, দ্বীনের ব্যাপারে বিচ্ছিন্ন না হয়ে হিদায়াতপ্রাপ্ত ইমামদের ছত্রছায়ায় একত্রিত হয়েছেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধাচারণে লিপ্ত হন নি, এছাড়া যে সমস্ত বিষয়ে আমাদের পূর্বসূরী সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ একমত হয়েছেন তারা তাঁর অনুসরণ করে, তাই এ সমস্ত কারণেই তাঁদেরকে আল-জামা‘আত বলা হয়।

এছাড়া রাসূলের সুন্নাহর অনুসারী হওয়ার কারণে কখনো তাদেরকে কখনো আহলুল আসার, কখনো অনুকরণকারী দল, বা সাহায্যপ্রাপ্ত ও সফলতা লাভকারী দল বলেও আখ্যায়িত করা হয়।







ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণের মূল উৎস এবং উহার প্রমাণপঞ্জি উপস্থাপনের পদ্ধতি

===================================================







১. ইসলামী আকীদা গ্রহণের মূল উৎস কুরআনে করীম, সহীহ হাদীস ও সালফে-সালেহীনের ইজমা।ও কেয়াস ,



২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত সহীহ হাদীস গ্রহণ করা ওয়াজিব, এমনকি তা যদি খবরে আহাদও হয়।



৩. কুরআন-সুন্নাহ বুঝার প্রধান উপাদান, কুরআন সুন্নারই অন্যান্য পাঠ, যার মধ্যে রয়েছে অপর আয়াত বা হাদীসের স্পষ্ট ব্যাখ্যা, এছাড়া আমাদের পূর্বসূরী সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন এবং আমাদের সম্মানিত ইমামগণ প্রদত্ত ব্যাখ্যা। আর আরবদের ভাষায় যা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। তবে ভাষাগত দিক থেকে অন্য কোন অর্থের সম্ভাবনা থাকলেও সাহাবা, তাবেয়ীনদের ব্যাখ্যার বিপরীত কোন ব্যাখ্যা গ্রহণ করা যাবে না। সম্ভাব্য কোন অর্থ এর বিপরীত কোন অর্থ বহন করলেও তাঁদের ব্যাখ্যার উপরেই অটল থাকতে হবে।





৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের মূল বিষয়বস্তুসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করেছেন। এজন্য দ্বীনের মধ্যে নতুন করে কোন কিছু সংযোজন করার কারও অধিকার নেই।





৫. প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সর্ব বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সামনে আত্মসমর্পন করা। সুতরাং নিজের মানসিক ঝোঁক বা ধারণার বশঃবর্তী হয়ে, আবেগপ্রবণ হয়ে অথবা বুদ্ধির জোরে বা যুক্তি দিয়ে কিংবা কাশফ অথবা কোন পীর-উস্তাদের কথা, অজুহাত দিয়ে কুরআন সুন্নাহর কোন কিছুর বিরোধিতা করা যাবে না।





৬. কুরআন, সুন্নার সাথে জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকের কোন সংঘাত বা বিরোধ নেই। কিন্তু কোন সময় যদি উভয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয় এমতাবস্থায় কুরআন সুন্নাহর অর্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।





৭. আকীদা সংক্রান্ত বিষয়ে শরী‘আতসম্মত ভাষাও শব্দ প্রয়োগ করা এবং বিদ‘আতী পরিভাষাসমূহ বর্জন করা





আর সংক্ষেপে বর্ণিত শব্দ, বাক্য বা বিষয়সমূহ যা বুঝতে ভুল-শুদ্ধ উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে, এমতাবস্থায় বক্তা থেকে ঐ সমস্ত বাক্য বা শব্দের বিস্তারিত ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়া,



তারপর তন্মধ্য থেকে যা হক বা সঠিক বলে প্রমাণিত হবে তা শরী‘আত সমর্থিত শব্দের মাধ্যমে সাব্যস্ত করতে হবে, আর যা বাতিল তা বর্জন করতে হবে।





৮. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন নিষ্পাপ, ভ্রুল-ত্রুটির উর্ধ্বে। আর সামষ্টিকভাবে মুসলিম উম্মাহও ভ্রান্তির উপরে একত্রিত হওয়া থেকে মুক্ত। কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত) এ উম্মতের কেউই নিষ্পাপ নন।



আমাদের সম্মানিত ইমামগণ এবং অন্যান্যরা যে সব বিষয়ে মত পার্থক্য করেছেন, সে সমস্ত বিষয়ের সূরাহার জন্য কুরআন ও সুন্নার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তবে উম্মতের মুজতাহিগণের যে সমস্ত ভুল-ত্রুটি হবে সেগুলোর জন্য সঙ্গত ওজর ছিল বলে ধরে নিতে হবে। [অর্থাৎ ইজতিহাদী ভুলের কারণে তাঁদের মর্যাদা সমুন্নতই থাকবে এবং তাঁদের প্রতি সুন্দর ধারণা পোষণ করতে হবে।]



কারন তাঁরা তাদের ইজতেহাদে ভূল করলে ও একগুন ছাওয়াবের অধিকারী হবে , আর ছহীহ হলে ডাবল ছাওয়াব পাবেন ,





৯. এ উম্মতের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান সমৃদ্ধ ও ইলহামপ্রাপ্ত অনেক মনীষী রয়েছেন। সুস্বপ্ন সত্য এবং তা নবুওয়াতের একাংশ। সত্য-সঠিক দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের বাণী সত্য এবং তা শরী‘আত সম্মতভাবে কারামত বা সুসংবাদের অন্তর্ভুক্ত। তবে এটি ইসলামী আকীদা বা শরী‘আত প্রবর্তনের কোন উৎস নয়।





১০. দ্বীনের কোন বিষয়ে অযথা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া অত্যন্ত জঘন্য ও নিন্দনীয়।

তবে উত্তম পন্থায় বিতর্ক বৈধ। আর যে সমস্ত বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া থেকে শরী‘আত নিষেধ করেছে, তা থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। এমনিভাবে অজানা বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়াও মুসলিমদের জন্য অনুচিৎ, বরং ঐ অজানা বিষয় সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞানী আল্লাহর উপর সোপর্দ করা উচিৎ।





১১. কোন বিষয়ে বর্জন গ্রহণের জন্য ওহির পথ অবলম্বন করতে হবে। অনুরূপভাবে কোন বিষয় বিশ্বাস বা সাব্যস্ত করার জন্যও ওহীর পদ্ধতির অনুসরণ করতে হবে। সুতরাং বিদ‘আতকে প্রতিহত করার জন্য বিদআতের আশ্রয় নেয়া যাবে না। আর কোন বিষয়ের অবজ্ঞা ঠেকাতে অতিরঞ্জন করার মাধ্যমে মোকাবেলা করা যাবে না। অনুরূপ কোন বিষয়ের অতিরঞ্জন ঠেকাতে অবজ্ঞাও করা যাবে না। [অর্থাৎ যতটুকু শরী‘আত সমর্থন করে ততটুকুই করা যাবে]





১২. দ্বীনের মধ্যে নব সৃষ্ট সব কিছুই বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আতই হলো পথভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার পরিণতিই জাহান্নাম।











অন্ধকারের ধূম্রজালে আবদ্ধ,ভ্রান্তির শৃংঙ্খলে বেষ্টিত,কুফর ও শিরকের দাবানলে দগ্ধ,পৃথিবীর মোহে আসক্ত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় দিশেহারা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দানের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুক্তির দূত ,পথ হারা মানুষের সুপথের দিশারী ,রাহামাতুল্লিল আলামীন সায়্যিদুনা মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর পক্ষ থেকে রাসূল হিসাবে এ ধরাধামে পাঠিয়েছেন ।



তাঁর আগমনের পর হক-বাতিলের সঠিক পরিচয় সকলের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠে । অসত্যের সকল নিশানা থেকে সত্য তার সর্বাঙ্গ সুন্দর রূপ নিয়ে বের হয়ে আসে।





মহান আল্লাহর অপার কৃপায় ও তাঁর বন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহান করে । মানব হিতৈষী এ মহা মানব দীর্ঘ ৬৩ বছর এ পৃথিবীতে জীবন যাপন করে মানুষকে সত্যপথের সন্ধান দিয়ে বন্ধুর মিলনে গমন করেন অনন্ত জগত আখিরাতের পানে।





সঠিক পথের পাথেয় হিসাবে উম্মাতের কাছে রেখে যান দুটি মহা মূল্যবান সম্পদ তথা পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহ।হাদীস শরীফে এসেছেঃ

إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : تركت فيكم أمرين لن تضلوا ماتمسكتم بهما كتاب الله و سنة نبيه (صدق رسول الله صلى الله عليه وسـلم )

প্রত্যেকটি জ্ঞানকে গ্রন্থ থেকে মন্থন করার জন্য শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । তাইতো মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন নাযিল করে ক্ষান্ত হননি।বরং তাঁর সাথে পবিত্র গ্রন্থকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সায়্যিদুনা রাসূল পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে শিক্ষক হিসাবে প্রেরণ করেছেন । যিনি সুন্নাহের মাধ্যমে উহাকে শিক্ষা দিয়েছেন।





ঠিক তেমনি মহা মূল্যবান দুটি জিনিস তথা পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহের আলোকে জীবন গঠনের জন্য শিক্ষক বা আদর্শ হিসাবে সায়্যিদুনা রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেখে গিয়েছেন তাঁর পবিত্র বংশধর ,ছিদ্দীকীন ,সাহাবায়ে কিরাম এবং আউলিয়া কিরামগণকে।যাদের আদর্শ অনুসরনের জন্য আমাদেরকে আদেশও করেছেন।







** তাঁর পবিত্র বংশধরগণের আদর্শ অনুসরন করা সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عن جابر بن عبد الله رضى الله عنه قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى حجته يوم عرفة وهو على ناقته القصواء يخطب فسمعته يقول:( ياأيها الناس إنى تركت فيكم ماإن أخذتم به لن تضلوا:كتاب الله وعترتى أهل بيتى .....)







*সাহাবা কিরামের আদর্শ অনুসরনের ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে:

عن ابن عمر رضي الله عنهما قال :خطبنا عمر بالجابية فقال :يا أيها الناس :اني قمت فيكم كمقام رسول الله صلي الله عليه وسلم فينا فقال : أوصيكم بأصحابى ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم



অন্য হাদিসে এসেছে

عن عبد الله بن عمر قال :قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : …وإن بنى إسرائيل تفرقت على ثنتين وسبعين ملة وتفترق أمتى على ثلاث و سبعين ملة كلهم فى النار إلا ملة واحدة قالوا: ومن هذا يا رسول الله ؟ قال : ما أنا عليه وأصحابى



উল্লেখ্য যে,৭৩ ফেরকা সম্পর্কে ছাহীহ হাদীছে এসেছেঃ

عن أبي هريرة رضي الله ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قال:(تفرقت اليهود علي احدي وسبعين فرقة ،أو اثنتين و سبعين فرقة و النصاري مثل ذلك،وتفترق أمتي علي ثلاث وسبعين فرقة)6





**ছিদ্দীকীন এবং আউলিয়া কিরামগণের আদর্শ অনুসরন সম্পর্কে পবিত্র কুরান মাজীদে সিরাতে মুস্তাকীমের পরিচয় দানের মধ্য দিয়ে এসেছেঃ

صراط الذين أنعمت عليهم (الفاتحة)



(আল্লাহ তায়ালা যাদের উপর নিয়ামত দিয়েছেন তাঁদের পথ সিরাতে মুস্তাকীম)





আর মহান আল্লাহ তায়ালা যাদের উপর নিয়ামত দান করেছেন তাঁরা হচ্ছেন নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখিত আম্বিয়া-মুরছালীন,ছিদ্দীকীন,শোহাদা এবং আউলিয়া কিরাম।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

ومن يطع الله والرسول فأولئك مع الذين أنعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين و حسن أولئك رفيقا 7

উপরোক্ত আয়াত প্রমাণ করে যে,নাবী-রাসূলগণ,সাহাবা কিরাম এবং আউলিয়া কিরামগণের পথ ও মতের উপর থাকাই হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকীমের উপর থাকা।





তাই বলা যায়,আম্বিয়া–মুরছালীন,ছিদ্দীকীন,শোহাদা,রাসুল পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র বংশধর,সাহাবা কিরাম এবং আউলিয়া কিরামগণের পথ ও মতের অনুসরনই হচ্ছে "সিরাতে মুস্তাকীমের" অনুসরন ।তাঁদের আদর্শ গ্রহণই হচ্ছে কুরআন এবংসুন্নাহের অনুসরন। আর তাঁদের অনুসারীগণই হচ্ছে নাজাত প্রাপ্ত দল ।হাদীস শরীফে যাদের নামকরণ করা হয়েছে " জামায়াত"(আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত)বলে। ইরশাদ হচ্ছেঃ





عن معاوية بن أبى سفيان أنه قام فينا فقال ألا إن من قبلكم من أهل الكتاب افترقوا على ثنتين وسبعين ملة وإن هذه الملة ستفترق على ثلاث و سبعين. ثنتان و سبعون فى النار وواحدة فى الجنة وهى الجماعة .8

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণীত হলো সায়্যিদুনা রাসুল পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওফাত মুবারকের পরে তাঁর বংশধর ,ছিদ্দীকীন, সাহাবা কিরাম ,আউলিয়া কিরাম এবং শোহাদাগণের পথ অনুসরন হচ্ছে " আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত "অনুসরনের নামান্তর।





*********************************************************************************



আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অস্তিত্ব

************************************************



**********************************************

উল্লেখ্য যে – ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী (ইঃ324হিঃ) এবং ইমাম আবুল মানছূর আল মাতুরীদী (ইঃ333হিঃ) ইমাম দ্বয়কে " আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত " এর ইমাম বলা হয়ে থাকে।এর দ্বারা এ উদ্দেশ্য নয় যে, তাঁদের পূর্বে আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অস্তিত্ব



ছিলনা।বরং সাহাবা কিরাম,তাবেয়ীন এবং তাবে তাবেয়ীন হচ্ছেন এই নামের অধিক উপযুক্ত।

উল্লেখিত ইমামদ্বয়কে " আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামায়াত " এর ইমাম বলার কারণ হচ্ছে –



35 হিজরী সনে হযরত উসমান(রাঃ)এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে খারিজী ফিত্নার দানা বেঁধে উঠতে আরম্ভ করে।37 হিজরী সনে ছিফ্ফীনের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সে ফিতনার সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ ঘটে। তারপর ক্রমান্বয়ে " মুর্যিয়া " " জাবরিয়া " ফেরকারও সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম হাসান বাসরী (রাঃ)(ইঃ110 হিঃ) এর দরবারে কতিপয় বিদয়াতী মহান আল্লাহ পাকের জন্য জিসম (শরীর)সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা চালায় । তাই তিনি তাদেরকে মজলিসের এক পাশে তাঁড়িয়ে দেন ।পরে তারা " হাশাভীয়্যাহ" ফেরকা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে ।





ইমাম হাসান বাসরী (রাঃ) এর সাথে তাঁর ছাত্র ওয়াছেল বিন আতা (ইঃ131 হিঃ) অবাধ্যতা করে ভ্রান্ত মতবাদ গ্রহন করে। তিনি তাকেও তাঁর মজলিস থেকে তাঁড়িয়ে দেন





।পরবর্তীতে "মুতাজিলা "ফেরকা হিসাবে তারা পরিচিতি লাভ করে ।এভাবে ক্রমান্বয়ে ইসলামের ভিতরে বিভিন্ন বাতিল ফেরকার অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে।



আগমন ঘটে ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী(রাঃ)এর।তিনি সকল বাতিল ফেরকার ভ্রান্ত মতবাদ খন্ডন করে সঠিক মতাদর্শের উপর পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহের আলোকে বিভিন্ন কিতাব রচনা করেন ।তার সমসাময়িক ইমাম আবুল মানছুর আল মাতুরীদী(রাঃ)ও অনূরুপ খিদমতের আঞ্জাম দেন। এই ইমামদ্বয়ের মতাদর্শকে সারা দুনিয়ার মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক লো্ক ব্যতীত সকলেই গ্রহন করে নেয়।তাইতো তাঁদের সময় থেকে আজ পর্যন্ত কিছু সংখ্যক আলিম ব্যতিত তাঁদের মতাদর্শের পতাকাধারী হয়ে আছেন দুনিয়ার সকল বিখ্যাত ওলামায়ে কিরাম।আজো বিশ্বের অসংখ্য-অগনীত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে "আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের "আক্বিদার কিতাব পড়ানো হয়



।সহস্র বছরোত্তর ঐতিহ্য ধন্য মিশরের আল্ আযহার বিশ্ববিদ্যালয়েও তাই। ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ ভারত , দারুল উলুম করচি পাকিস্তান ,কলকাতা আলিয়া ,ও বাংলদেশের জামেয়া ইসলাময়া পটিয়া,জামেয়া হাটহজারী , নানুপুর , জিরি , বসুন্দরা মাদ্রাসা,ঢাকা আলিয়া ইত্যাদি সকল সরকারী -বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সূমুহে পড়ানো হয়ঃ

যেমন ;--------------------------------------



العقيدة الطحاوية للإمام أبو جعفر الطحاوى ، المتوفى 321 هــ . العقائــد النسفية لشيخ الإسلام النسفى ، المتوفى 508هـــ . و شرح المواقف للإمام الجرجانى،و الفقه الأكبر للامام أبي حنيفة رضي الله عنهم ,وشرح العقائد وغيره .

ইত্যাদি আক্বীদার কিতাব সমূহ।



সুতরাং প্রমাণীত হলো "আশয়ারী ও মাতুরীদী " অনুসারীগণ যুগ যুগ ধরে " আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত " হিসাবে পরিচিত







عن أنس بن مالك رضى الله عنه يقول : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : إن امتى لا تجتمع على ضلالة فإذا رأيتم اختلافا فعليكم بالسّواد الأعظم ( صدق رسول صلى الله عليه وسلم )9

وفي الحديث الصحيح:يد الله مع الجماعة10





9.ابن ماجه/كتاب الفتن/باب السواد الأعظم.10 رواه الترمذي/كتاب الفتن/باب في لزوم الجماعة





“আল্লাহ্‌ কোথায়

====================





এক্ষণে আমরা “আল্লাহ্‌ কোথায়?” এ বিষয়ে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস এবং সালফে সালেহীন তথা শ্রেষ্ঠ যুগের মহা পণ্ডিতদের বক্তব্য ও আকীদাহ্ দলীলসহ আলোচনা করার চেষ্টা করব:





সমগ্র জাহানের প্রতিপালক ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা সপ্তাকাশের উপর অবস্থিত সুমহান আরশের উপর সমুন্নত, তিনি সর্বস্থানে বিরাজিত নন। তাঁর ক্ষমতা অসীম ও সর্বব্যাপী। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আরশে আ’যীমে থেকেই সব কিছু সুচারু€রূপে পরিচালিত করেন।তাই তাঁর আসীম ক্ষমতা ও কুদরত সর্বস্থানে বিরাজিত , কিন্তু তাঁর সত্তা বা জাত সর্বস্থানে বিরাজিত , নয় ,

যদি তাই হয় তাহলে





এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, ভাল-মন্দ সকল বস্তু এবং স্থানেই মহান আল্লাহর অস্তিত্ব বিদ্যমান । মানুষ-জিন, গরু€-ছাগল, কুকুর-শুকর, মসজিদ-মন্দির, উপাসনালয়-বেশ্যালয় ইত্যাদি শব্দগুলো ‘সবকিছুর’ই অন্তর্ভুক্ত। মলতঃ উক্ত কথাটি ইবনে আরাবী, মনসূর হাল্লাজ প্রমূখ বেদ্বীন সুফীদের কথার সাথে মিলে যায়,



ঐ সকল সূফীদের কথা হল: (وما الكلب والخنزير إلا إلهنا : وما ربنا في الكنيسة إلا راهب) অর্থাৎ-কুকুর-শুকর এগুলো মলতঃ আমাদের উপাস্য, আর গির্জায় অবস্থানকারী পাদ্রী আমাদের প্রতিপালক ছাড়া আর কিছুই নয়। আর ইবনে আরাবীর কথা হল: (العبد رب والرب عبد : يا ليت شعري من المكلف؟) বান্দা হল রব আর রবই হল বান্দা, হায় আমি যদি জানতাম কে আদেশ প্রাপ্ত? তাই তো আজকাল কোন কোন সুফি দরবেশ বলে থাকে ‘যত কল্লা তত আল্লাহ্‌’।





১) মহান আল্লাহ্‌ এরশাদ করেন:



(ان ربكم الله الذي خلق السموات والأرض في ستة أيام ثم استوى على العرش)



অর্থ:‘ নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্‌, যিনি আকাশ সমূহ এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।’ (সূরা আরাফ-৫৪)

২) আল্লাহ্‌ তা’আলা আরও বলেন:



الرحمن على العرش استوى



অর্থ: ‘রহমান (আল্লাহ্‌) আরশে সমুন্নত।’ (সূরা ত্বহা-৫) এ কথায় কোনই সন্দেহ নেই যে আরশ আসমান রয়েছে জমিনে নয়।



৩) তাই মহান আল্লাহ্‌ অন্যস্থানে বলেন:



أأمنتم من في السماء أن يخسف بكم الأرض



অর্থ: ‘তেমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, যিনি আকাশে অবস্থিত রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না।’ (মূলক-১৬)



এ ছাড়া বহু আয়াতে আল্লাহ্‌ পাক নিজের পরিচয়ে বলেছেন যে, তিনি আকাশের উপর মহান আরশেই রয়েছেন।





এ ক্ষেত্রে অধিক প্রমাণের জন্য নিম্ন লিখিত আয়াত গুলো দেখা যেতে পারে। ( ইউনুস-৩, রা’দ-২, ফুরক্বান- ৫৯, সাজদাহ্-৪, হাদীদ-৪)

৪) হাদীছে রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:



ألا تأمنوني وأنا أمين من في السماء يأتيني خبر السماء صباحاً ومساءً -متفق عليه



অর্থ: ‘তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না, অথচ যিনি আসমানে আছেন আমি তাঁর আমানতদার। আমার কাছে আসমানের খবর সকাল-সন্ধ্যায় আসে।” (বুখারী ও মুসলিম) আসমানে যিনি আছেন নিশ্চয় তিনি মহান আল্লাহ্‌। কোন সন্দেহ আছে কি ?





৫) হযরত মুয়াবিয়া বিন হাকাম আস্ সুলামী (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

) জনৈক দাসীকে প্রশ্ন করেছিলেন : ‘আল্লাহ্‌ কোথায়?’ উত্তরে সে বলেছিল : আল্লাহ্‌

====================================================

আসমানে। তিনি বললেন , আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মনিবকে বললেন: তাকে আজাদ করে দাও। কেননা সে ঈমানদার। (ছহীহ মুসলিম)







৬) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন:



(ارحموا من في الأرض يرحمكم من في السماء )



অর্থাৎ-‘ যারা জমিনে আছে তোমরা তাদের প্রতি দয়াশীল হও যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়াশীল হবেন।’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ)





৭) সুপ্রসিদ্ধ মে’রাজের ঘটনা বুখারী -মুসলিম সহ বহু হাদীস গ্রন্থে রয়েছে।



হে বিবেকবান মুসলিম ভাই! আল্লাহ্‌ যদি সর্বত্র সবকিছুতেই বিরাজিত থাকেন, তবে মে’রাজের কি দরকার ছিল? মে’রাজের রাত্রে বোরাকে চড়ে সপ্তাকাশের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌র দরবারে গমনই তো প্রমাণ করে যে মহান আল্লাহ্‌ সাত আসমানের উপর অবস্থিত আরশেই রয়েছেন। নতুবা মে’রাজ অর্থহীন হয়ে যায় না কি?









এ ক্ষেত্রে সালফে সালেহীনের বা আকাবেরদের আকীদা বা কিছু উক্তি:=

=====================================





৮) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ আরশে আছেন একথা বিশ্বাস করে, কিন্তু সন্দেহ করে যে আল্াহ আসমানে আছে না জমিনে তবে সে কাফের বলে গণ্য হবে। (দ্র: আল্ ফিকহুল আবসাত)





৯) ইমাম আওযায়ী বলেন: আমরা তাবেয়ীগণের উপস্থিতে বলতাম, নিশ্চয় মহান আল্লাহ্‌ তাঁর আরশের উপর রয়েছেন। তাঁর গুণাগুণ সম্পর্কে যে বর্ণনা এসেছে আমরা সবই তা বিশ্বাস করি। (ইমাম যাহাবী প্রণীত মুখতাছার উলু দ্রষ্টব্য)





১০) ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন: ( الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو منه شيء ) ‘আল্লাহ্‌ রয়েছেন আসমানে এবং তাঁর ইলম সর্বাস্থানে পরিব্যপ্ত , তার জ্ঞান থেকে কোন স্থান খালি নেই।





১১) ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন: আমি যে তরিকার উপর প্রতিষ্ঠিত ও যাদেরকে ঐ তরিকার উপর পেয়েছি যেমন সুফিয়ান সাওরী, মালিক প্রমুখগণ তা হল- এ কথার স্বীকৃত দেয়া যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন হক মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসূল আর আল্লাহ্‌ তিনি আসমানে আরশের উপর রয়েছেন। তিনি তার বান্দার নিকটবর্তী হন যে ভাবে ইচ্ছা করেন এবং যে ভাবে চান ঠিক সেভাবেই …।

দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন



তবে কি ভাবে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন তার প্রকৃত আবস্হা আল্লাহই ভল জানেন,

এ বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে , মাথা পেতে বিশ্বাস করাই বান্দার কাজ .









১২) ইমাম আহমাদ (রাহ) কে জিজ্ঞেস করা হল: আল্লাহ্‌ সপ্তাকাশে আরশের উপর রয়েছেন। সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক আছেন এবং তার কুদরত ও ইলম সকল স্থানে পরিব্যাপ্ত। উত্তরে তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি স্বীয় আরশে রয়েছেন এবং কোন বস্তু তার ইলমের বাইরে নয়।







১৩) ইমাম ইবনে খুযাইমা বলেন: (من لم يقر بأن الله على عرشه استوى فوق سبع سماواته بائن من حلقه فهو كافر يستتاب فإن تاب وإلا ضربت عنقه وألقي على مزبلة لئلا يتأذى بريحه أهل القبلة وأهل الذمة ) ”যে ব্যক্তি স্বীকার করে না যে আল্লাহ্‌ তা’আলা সপ্তাকাশে স্বীয় আরশে সমুন্নত, সৃষ্টি জগত হতে সম্পূর্ণ আলাদা-সে কাফের। তাকে তওবা করার নির্দেশ দিতে হবে। তওবা না করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। অতঃপর তার লাশ ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করতে হবে যাতে করে কিবলা ওয়ালা মুসলমানগণ এবং কর প্রদানকারী অমুসলিমগণ তার দূর্গন্ধে কষ্ট না পায়। (ইমাম যাহাবী প্রণীত মুখতাছার উলু দ্রষ্টব্য)





১৪) বড় পীর হিসেবে খ্যাত হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) স্বীয় ‘গুনিয়াতুত্ তালেবীন’ নামক গ্রন্থে বলেন: ‘আল্লাহ্‌ পাক আরশে সমুন্নত রয়েছেন। রাজত্ব নিজ আয়ত্তে রেখেছেন। সমস্ত বস্তুকে বেষ্টন করে রেখেছেন। ….. আর এ ভাবে তাঁর পরিচয় দেয়া জায়েজ নয় যে, তিনি প্রত্যেক স্থানে বিরজমান; বরং বলতে হবে তিনি আসমানে আরশের উপর রয়েছেন যেমনটি তিনি (নিজেই) বলেছেন: الرحمن على العرش استوى “রহমান (আল্লাহ্‌) আরশে সমুন্নত”। (ত্বা-হা/৫)





একথা স্বাভাবিক ভাবেই বলতে হবে কোন প্রকার অপব্যখ্যা করে নয়। তিনি যে আসমানে আছেন একথা নবী-রাসলদের প্রতি নাযিলকৃত প্রত্যেক কিতাবেই লিখিত আছে। তবে আরশে তিনি কিভাবে রয়েছেন তার পদ্ধতি কারো জানা নেই।’







১৫) মানুষের সৃষ্টিগত ফিৎরাতও একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ্‌ তায়ালা আসমানেই রয়েছেন সব স্থানে নয়। এর প্রমাণে আপনি আপনার স্নেহের কচি শিশুকে প্রশ্ন করুন- আল্লাহ্‌ কোথায়? দেখবেন তার পবিত্র মুখ থেকে জবাব বেরুবে, ‘উপরে’। বা সে তার কচি আঙ্গুল উঠিয়ে উপর দিকেই ইশারা করবে, অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ্‌) আকাশে রয়েছেন, সব জায়গাতে নয়। আরও বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে যেগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় আল্লাহ তায়ালা সব জায়গায় বিরাজমান নন। বরং তার ক্ষমতা, রাজত্ব, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, জ্ঞান, দৃষ্টি ইত্যাদি সর্বত্র ও সব কিছুতে বিরাজমান। কিন্তু তিনি স্বত্বাগতভাবে অবস্থান করেন, সাত আসমানের উপর আরশে আযীমে।





সম্মানিত পাঠক!







এই হল কুরআন-হাদীস এবং সালফে সালেহীনের আকিদাহ্ ও বিশ্বাস যা সংক্ষেপে উদ্ধৃত করা হল। যার সার সংক্ষেপ হল- মহান আল্লাহ্‌ আরশে রয়েছেন তিনি সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজিত নয়। আর এটাই হল বিশুদ্ধ আকীদা।







একটি সংশয় নিরসন:

================





কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ্‌ বান্দার ‘সাথে’ রয়েছেন বলা হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে তিনি তাদের সাথে মিলিত ও সংযুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। কেননা এরূপ অর্থ পূর্বসূরী বিদ্বানগণ কেহই করেন নি। পক্ষান্তরে এটা ভাষাগতভাবেও আবশ্যক নয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা ‘সাথে’ থাকার ব্যাখ্যা নিজেই দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন: وهو معكم أين ما كنتم والله بما تعملون بصير “তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। আল্লাহ্‌ তোমাদের কৃতকর্মের সম্যক দ্রষ্টা।” (হাদীদ /



৪) অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আমাদের সাথে আছেন, স্ব অস্তিত্বে নয়। হযরত মুসা ও হারূন (আঃ)কে আল্লাহ্‌ ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন: إنني معكما أسمع وأرى “আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি শুনছি ও দেখছি।” (সূরা ত্বা-হা/ ৪৬) অত্র আয়তে আল্লাহ্‌ পাক সাথে থাকার অর্থ নিজেই করেছেন দেখা ও শোনার মাধ্যমে।





অর্থাৎ আমি তোমাদের সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী। যেমন- সাধারণভাবে আমরা বলে থাকি ‘আপনি উমুক কাজটি করুন আমরা আপনার সাথে আছি’। অর্থাৎ আমরা আপনাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করব। যেমন- টেলিফোনে কথা বলার সময় একজন অপরজনকে বলে থাকে: কে আপনি আমার সাথে? জবাবে বলে আমি উমুক আপনার সাথে। অথচ এখানে দুজন অঙ্গা-অঙ্গী হয়ে থাকে না। দু’জন দু’দেশ থেকে কথা বলে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে সাথে থাকার অর্থ মিশে থাকা নয় বরং মহান আল্লাহ্‌ সেই আরশে আ’যীমে থেকেই তাঁর সাহায্য-সহযোগিতা, দেখা-শোনা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি অসীম ক্ষমতাবান এবং যা চান তাই করতে পারেন।

আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে হক জানা ও তা মানার তাওফীক দিন। আমীন।









যুগে যুগে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ওলামায়ে কিরাম তথা আমরা যাদের উত্তর সূরীঃ

=============*****************************=========================





*ইমামে আযম আবু হানিফা (রাঃ)ইঃ(150হিঃ)*ইমাম মালেক(রাঃ)ইঃ (179হিঃ)*ইমাম শাফেয়ী(রাঃ)ইঃ (204হিঃ)*ইমাম আহামাদ(রাঃ)ইঃ( 241 হিঃ)*





এবং এলমে নাহু-ছরফ এর ইমামগন যেমন ছিবওয়াই , আখফশ , ফারাবী ,ইত্যাদি





ইমাম যুন্নুন মিশরী(রাঃ)ইঃ (245 হিঃ)*ইমাম বুখারী(রাঃ)ইঃ (256 হিঃ)* ইমাম তাবারী(রাঃ)ইঃ(310হিঃ)*ইমাম জুয্যাজ(রাঃ)ইঃ( 311 হিঃ)* ইমাম তাহাবী(রাঃ)ইঃ(321 হিঃ)*ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী(রাঃ)ইঃ(324হিঃ)*ইমাম মাতুরিদী(রাঃ)ইঃ(333 হিঃ)*হাফেয ইবনু হিব্বান (রাঃ)ইঃ(354হিঃ)*আবু ওসমান মাগরিবী(রা)ইঃ(373হিঃ) *হাফেয আবু বাকর কেলাবাযী(রাঃ)ইঃ (385হিঃ)*ইমাম খাত্তাবী(রাঃ)ইঃ(388 হিঃ)*



হাফেয হালিমী(রাঃ)ইঃ (403 হিঃ)*সাইফুস সুন্নাহ বাকেল্লানী (রাঃ)ইঃ(403 হিঃ)*ইমাম সাহল নিশাপুরী(রাঃ)ইঃ(404হি:)*ইমাম ইবনে ফুরেক আশয়ারী (রাঃ)ইঃ(406হিঃ)*ইমাম আবু আলি মারজুকী (রাঃ)ইঃ(421হিঃ)*হাফেয ইবনে বাত্তাল মালেকী(রাঃ)ইঃ (449 হিঃ)*হাফেয বায়হাকী(রাঃ)ইঃ(458 হিঃ)*ইমাম আব্দুল কারিম কুশায়রী(রাঃ)ইঃ(465 হিঃ)*ইমাম সিরাজী(রাঃ)ইঃ(476 হিঃ)*ইমামুল হারামাঈন(রাঃ)ইঃ(478হিঃ)*ফখরুল ইসলাম বাযদুবী (রাঃ)ইঃ( 482হিঃ)*ইমাম রাগেব ইস্পাহানী(রা)ইঃ(502 ইঃ)*হুজ্জাতুল ইসলাম গাজ্জালী(রঃ)ইঃ (505 হিঃ)*ইমাম নাসাফী(রাঃ)ইঃ(508হিঃ)*ইমাম ইবনে আকিল হাম্বলী(রাঃ)ইঃ(513 হিঃ)



*ইমাম ইবনে কুশাইরী(রাঃ)ইঃ(514 হিঃ)*ইবনে রুশদ(রাঃ)ইঃ( 520 হিঃ)*ইমাম নাজমুদ্দিন নাসাফী(রাঃ)ইঃ( 537 হিঃ)*হাফেয ইবনুল আরাবী(রাঃ)ইঃ (543হিঃ)*ইমাম কাজী আয়ায মালেকী(রাঃ)ইঃ( 544 হিঃ)*ইমাম শাহারাস্তানী(রাঃ)ইঃ( 548হিঃ)*ইমাম সিরাজ উদ্দিন আউশী(রাঃ)ইঃ (569হিঃ)*হাফেয ইবনে আসাকের দামেস্কী(রাঃ)ইঃ( 571হিঃ)*ইমাম আহামাদ কাবির রেফায়ী(রাঃ)ইঃ( 578 হিঃ)*মুজাহিদ সালাহ উদ্দিন আইউবী(রঃ)ইঃ(589 হিঃ)*হাফেয ইবনুল যাওজী(রাঃ)ইঃ( 597 হিঃ)*ইমাম হেবাতুল্লাহ মক্কী(রাঃ)ইঃ (599হিঃ)*হাফেয ইবনে আসির(রাঃ)ইঃ( 606হিঃ)*ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী(রাঃ)ইঃ(606 হিঃ)*ইমাম ফাখরুদ্দীন ইবনে আসাকের ইঃ(602 হিঃ)*ইমাম ইব্রাহিম শায়বানী(রাঃ)ইঃ (629 হিঃ)*উছুলী সাইফুদ্দীন আমদী(রাঃ)ইঃ





(631হিঃ)*ইমাম জামালুদ্দীন হুছাইরী(রা)ইঃ(636হিঃ)*সুলতানুল ওলামা(রা)ইঃ(660হিঃ)*ইমাম আবু শামা মাকদিসী(রাঃ)ইঃ (665হিঃ)*ইমাম কুরতুবী মালেকী(রাঃ)(671হিঃ)*ইমাম নববী(রাঃ)ইঃ(676হিঃ)*ইমাম জাকারিয়া কাযবানী(রাঃ)ইঃ(682হিঃ)*ইমাম কারাফী মালেকী(রাঃ)ইঃ(684হিঃ)*ইমাম বায়যাবী(রাঃ)ইঃ (685হিঃ)*হাফেয ইবনে মুনির(রাঃ)ইঃ(695হিঃ)*হাফেয ইবনে আবি যামরাহ(রাঃ)ইঃ(699 হিঃ)*হাফেয ইবনে দাকীক ঈদ(রাঃ)ইঃ(702হিঃ)*ইমাম ইবনে আতাউল্লাহ ইসকান্দারানী(রাঃ)ইঃ (709হিঃ)*ইমাম হাফিজুদ্দীন নাসাফী(রাঃ)ইঃ( 710হিঃ)*ইমাম ইবনে মানযুর আফ্রিকী(রাঃ)ইঃ (711হিঃ)*হাফেয ইবনে জামায়া(রাঃ)ইঃ (733হিঃ)*ইমাম ইবনে যাহবাল(রাঃ)ইঃ (733হিঃ)*ইমাম ইবনুল হায মাগরেবী,মালেকী(রঃ)ইঃ(737হিঃ)*ইমাম খাযেন(রাঃ)ইঃ(741হিঃ)*সম্রাট ইবনে কালাওন(রাঃ)ইঃ(741হিঃ )*হাফেয নাছিরুদ্দীন দামেষ্কী ইঃ (৭৪২হিঃ )* ইমাম তিবী(রাঃ)ইঃ (743হিঃ)*শাইখুল ইসলাম তাকী উদ্দিন সুবকী(রাঃ)ইঃ (756হিঃ)*হাফেয সালাহ উদ্দিন আলায়ী(রাঃ)ইঃ (761হিঃ)*ইমাম ইয়াফেয়ী ইয়ামানী(রাঃ)ইঃ (768হিঃ)*ইমাম ইবনে সুবকী(রাঃ)ইঃ (771হিঃ)*ইমাম কিরমানী(রাঃ)ইঃ (786হিঃ)*ইমাম সাতাবী (রাঃ)ইঃ (790হিঃ)*ইমাম তাফতাযানী(রাঃ)ইঃ (792হিঃ)*ইবনে খালদুন(রাঃ)ইঃ (808হিঃ)





*হাফেয নূরুদ্দিন হাইছামী(রাঃ)ইঃ (808হিঃ)*হাফেয ইরাকী(রাঃ)ইঃ (826হিঃ)*ইমাম তকী উদ্দিন হিসনী(রাঃ)ইঃ (829হিঃ)*শাইখুল ইসলাম হাফেয ইবনে হাজার(রাঃ)ইঃ(852হিঃ)*ইমাম বাদরুদ্দিন আইনী(রাঃ)ইঃ (855হিঃ)*ইমাম জালালুদ্দিন মাহাল্লী(রাঃ)ইঃ(868হিঃ)*ইমাম ইবনে আমিরুল হাজ হানাফী(রাঃ)ইঃ( 879হিঃ)*ইমাম বুরহানুদ্দিন বাকায়ী(রাঃ)ইঃ( 885হিঃ)*ইমাম সানুছী(রাঃ)ইঃ (895হিঃ)*ইমাম রুমী হানাফী(রাঃ)ইঃ (901হিঃ)*ইমাম আসমুনী(রাঃ)ইঃ(902হিঃ)*হাফেয সাখাবী(রাঃ)ইঃ (902হিঃ)*ইমাম খালেদ আযহারী(রাঃ)ইঃ( 905হিঃ)*হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূতী(রাঃ)ইঃ( 911হিঃ)*হাফেয কাস্তাল্লানী(রাঃ)ইঃ (923হিঃ)*হাফেয ইবনে তুলুন হানাফী(রাঃ)ইঃ (953হিঃ)*ইমাম শায়ারানী(রাঃ)ইঃ (973হিঃ)*হাফেয ইবনে হাযার মক্কী(রাঃ)ইঃ (974হিঃ)*ইমাম খাতীব সারবিনী(রাঃ)ইঃ( 977হিঃ)*ইমাম রামলী(রাঃ)ইঃ (1004হিঃ)*



ইমাম মুল্লাহ আলী কারী হানাফী(রাঃ)ইঃ (1014হিঃ)*ইমাম লাক্কানী(রাঃ)(1041হিঃ)*ইমাম ইবনে মুকরী (রাঃ)ইঃ (1041হিঃ) *



ইমাম শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী ইঃ( 1052 হিঃ) *ইমাম ইবনে আল্লান মাক্কী (রাঃ)ইঃ

**********************************************************************************

(1057হিঃ)*ইমাম ইব্রাহীম লাক্কানী মালেকী(রাঃ)ইঃ (1078হিঃ)*ইমাম কামাল উদ্দিন বিয়াদী হানাফী(রাঃ)ইঃ (1098হিঃ)*ইমাম মুহিব্বুল্লাহ বিহারী (রাঃ)ইঃ (1119হিঃ)*ইমাম আব্দুল বাকী যুরকানী(রাঃ)ইঃ (1122হিঃ)*ইমাম আলাভী হাদ্দাদ হাদারামী(রাঃ)ইঃ (1132হিঃ)*ইমাম সিন্দী হানাফী(রাঃ)ইঃ (1138হিঃ)*ইমাম আব্দুল গণী নাবলুসী(রাঃ)ইঃ( 1143হিঃ)*ইমাম দারদিরী





মালেকী(রাঃ)ইঃ (1201হিঃ)*হাফেয মুরতাদা যুবায়দী(রাঃ)ইঃ (1205হিঃ)*ইমাম খালিল মুরাদী(রাঃ)ইঃ (1206হিঃ)*শাহ আব্দুল আযীজ মুহাদ্দীস দেহলভী (রাঃ)ইঃ (1239হিঃ)*ইমাম ফকীহ ইবনে আবেদীন শামী(রাঃ)ইঃ(1252)হিঃ*ইমাম আলূছী বাগদাদী(রাঃ)ইঃ( 1270হিঃ) *ইমাম খালেদ নক্সেবন্দী(রাঃ)ইঃ( 1299হিঃ)* ইমাম আঃহাই লাকনাভী(রাঃ) (1304হিঃ) *ইমাম আহম্মাদ রেযা খাঁন বেরলভী(রাঃ)ইঃ(1340হি) * ইমাম নাবহানী (রাঃ)ইঃ(1350হিঃ) *মুফতী সায়্যিদ মুহামমদ আমীমুল ইহসান(রাঃ) ( ইঃ1394হিঃ)*শাহ সূফী নেছারুদদীন আহমাদ



ছারছীনাভী(রাঃ) (1952ইং) *শাহ সূফী আবূ জাফর মুহামমাদ ছালিহ ছারছীনাভী (রাঃ) (1990ইং )*সায়্যিদ আলাভী মালিকী মাককী(রাঃ) *প্রফেসর বোরহান উদদীন ওয়েসী আহমাদী(রাঃ)*শেরে বাংলা আযীযুল হক(রাঃ)*





*শাইখুল আযহারগণের তালিকা(যারা আহলুস্সুন্নাত ওয়াল জামাতের ঝান্ডাবাহী ছিলেন)-

************************************************************************************



ঃ*মুহাম্মাদ আল খারাসী ইঃ(1690ইং)*ইব্রাহীম আল বারমাভী ইঃ(1694ইং)*মুহাম্মাদ আন্নাশ্রাতী ইঃ(1708ইং)*আব্দুল বাকী ইঃ(1719ইং)*মুহাম্মাদ শানান ইঃ(1721ইং)*ইব্রাহীম আল ফাইওমী ইঃ(1725ইং)* *মুহাম্মাদ আল হাফনী ইঃ(1767ইং)*আব্দুর রাঊফ আস সাজানী ইঃ( 1768ইং) *আব্দুল্লাহ আশশাব্রাভী ইঃ(1775ইং)*আহমাদ আদ দামানহুরী ইঃ(1776ইং)*আহমাদ আল আরূসী ইঃ(1793ইং)*আব্দুল্লাহ আশ্ শারকাভী ইঃ(1812ইং)*মুহাম্মাদ আশ্ শানওয়ানী ইঃ(1818ইং)*মুহাম্মাদ আল-আরূসী ইঃ(1829ইং)* আহমাদ আদ-দামহূজ়ী ইঃ(1830ইঃ )* হাসান আল আত্তার ইঃ(1834ইঃ) * হাসান আল কাওসীনী ইঃ (1838ইং)* আহমদ আব্দুল আল-জাওয়াদ আল-সাকতী ইঃ(1848ইং)* ইব্রাহীম আল-বাজূরী ইঃ(1860ইং) *শামসুদ্দীন আল-ইনবাবী ইঃ(1892ইং)*মোহাম্মদ আল-মাহদী আল –আব্বাসী ইঃ(1898ইং)*মোস্তাফা মোহাম্মদ আল-আরূসী ইঃ(1876ইং)*সালিম বিন আবি ফারাজ ইঃ(1916ইং)*হাসূনা আল-নাওয়াভী ইঃ(1924ইং)*আব্দুর রহমান আল-নাওয়াভী ইঃ(1900ইং)*আলী মোহাম্মদ আল-বাবলাভী ইঃ(1905ইং)* আব্দুর রাহমান আশ-শারবীণী ইঃ(1926ইং)* মোহাম্মদ আবুল ফজল আলজীজাভী ইঃ(1928ইং) * মোহাম্মদ আল-আহমদ আদ-দাওয়াহিরী ইঃ(1944ইং) * মোহাম্মদ মোস্তাফা আল-মোরাগী ইঃ(1945ইং) *আব্দুল মাজীদ সালিম ইঃ(1945ইং) * মোস্তাফা আব্দুর রাজ্জাক ইঃ(1947ইং)* মোহাম্মদ মামুন আশ-শাণাবী ইঃ(1950ইং, ) * মোহাম্মদ খাদির হাসান ইঃ(1958ইং)* *ইব্রাহীম ইব্রাহীম হামরূশ ইঃ(1960ইং) মাহমুদ শালতুত ইঃ(1963ইং)*হাসান মামুণ ইঃ(1973ইং)*আব্দূর রাহমান তাজ ইঃ(1975ইং)*মুফতি আযাম হিন্দ মো্স্তাফা রেজা খান* মোহাম্মদ আল ফাহহাম * মোহাম্মদ আব্দুর রাহমান বিছার *আব্দুল হালীম মাহমুদ ইঃ (1978ইং)* জাদুল হাক আলী জাদুল হাক ইঃ(1996ইং) রাদিআল্লাহু আনহুম।











মহান আল্লাহ সমপর্কে আক্বিদা

========================





১. একমাত্র মহান আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা।







আকাশ, পৃথিবী, আলো-বাতাস, আগুন-পানি, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-তারা, ছায়াপথ, গাছ, শষ্য, ফল, ফুল, তৃণ-‎লতা, ভাল-মন্দ, মানুষ, জ্বীন, সাদা-কালো ইত্যাদি দৃশ্য ও অদৃশ্যমন, আমাদের জানা-অজানা, ‎আবিস্কৃতকিংবা অনাবিস্কৃত সব কিছুরই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হলেন মহন আল্লাহ তা‘য়ালা।এক সময় ‎এসব কোন কিছুরই অস্তিত্ব কোথাও ছিল না। আল্লাহ তা‘য়ালা সবকিছুকে সৃষ্টি করলেন। অস্তিত্ব প্রদান ‎করলেন। ‎ এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনেইরশাদ হয়েছে: : ‎‏ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْ‎ অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘য়ালাইসব কিছুর ‎সৃষ্টিকর্তা। (সূরা ঝুমারঃ ৬২)‎اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا ‏‎ অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘য়ালাআসমান ও জমিন এবং এতোদভয়ের ‎মধ্যেবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। ( সূরাআসসাজদাহ: ৪)‎







২. আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। ‎





তাঁর কোন শরীক বা অংশিদার নেই।কোন ভাবেই তাঁর সাথে কারো কোন অংশিদারী নেই। তিনি কারো ‎কাছে কোন কিছুরমুখাপেক্ষি নন। কারো থেকে জন্ম গ্রহন করেননি এবং তাঁর পবিত্র স্বত্তা থেকেকোউ ‎জন্ম গ্রহনও করেনি। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‎قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ ‏يُولَدْ (3) ‏‎ অর্থাৎ- ১.হে নবী আপনি বলে দিন, তিনি আল্লাহ এক। ২.অল্লাহ অমুখাপেক্ষী। ৩•তিনি ‎কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। (সূরা ইখলাসঃ ১-৩) ‎







৩. তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।







অতীতে কেউ কখনো তাঁর সমকক্ষছিল না এবং ভবিষ্যতেও কেউ তাঁর সমকক্ষ কখনো হবে না। তিনি ‎অতুলনীয়। তাঁরসাথে কারো কোন তুলনাই চলে না। তিনিই সর্বোচ্চ ও সর্ববৃহৎ। পবিত্র কুরআনে‎ইরশাদ হয়েছে:‎‏لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِي‎অর্থাৎ-তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি সর্ব বিষয় শোনেন ও দেখেন। ‎‎(সূরা শুরাঃ১১)‎‏وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ‏অর্থাৎ- তাঁর (আল্লাহর)সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাসঃ ৪) ‎







৪. তিনি অনন্ত-অনাদী কাল ব্যাপী আছেন, চিরকাল থাকবেন।







তার আদিও নেই অন্তও নেই। তিনিই একমাত্র চিরন্তন।চিরকালব্যপী একমাত্র তিনিই আছেন ও ‎থাকবেন। حى القيوم অন্য কিছু বা কেউ এমন ছিল না বাথাকবে না। সারা জাহানের সব কিছুই নশ্বর। কেবল ‎তিনিই অবিনশ্বর। পৃথিবীরকোন সৃষ্টি যেমনঃ আগুন, পানি, গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য, কোন শক্তিইত্যাদি ‎কোন কিছুই চিরন্তন কিংবা চিরস্থায়ী নয়। একমাত্র মহান আল্লাহছাড়া অন্য কোন কিছুকে চিরন্তন কিংবা ‎চিরস্থায়ী মনে করা বা বিশ্বাস করাস্পষ্ট শিরক বা কুফরী। কেউ যদি কোন অগ্নিশিখাকে কিংবা কোন ‎শক্তিকে চিরন্তনবলে একান্তভাবে বিশ্বাস করে তবে সে আর মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারেনা। ‎



পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে:



‎هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ‎



অর্থাৎ-তিনিই প্রথম, তিনিই‎সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও তিনিই অপ্রকাশমান এবং তিনিই সব বিষয়ে জ্ঞাত। (সূরা হাদীদঃ ০৩)‎



ولا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لا إِلَهَإِالا هُوَ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ الا وَجْهَهُ لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ‎



অর্থাৎ-তোমরা (তোমাদের ‎সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালনকারী, জীবন ও মৃত্যু দানকারী, রিঝিকদাতা, ধন-সম্পদ প্রদানকারী ইত্যাদি‎হিসেবে) মহান অল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশিদার হিসেবে ডেকোনা বা মেনেনিওনা। তোমাদের ‎মা‘বুদ বা উপাস্য একমাত্র তিনি আল্লাহ। এমাহাবিশ্বের সব কিছুই এক সময় ধ্বংস হয়ে ‎যাবে একমাত্র তিনিআল্লাহছাড়া। এ জগতের যাবতীয় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র‎তাঁরই। কেননা প্রত্যেকেই এক সময় তাঁর নিকটেই প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরাক্বসছঃ ৮৮)



‎كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ. وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَام‎



অর্থাৎ- মহাবিশ্বের সকল কিছুই ধ্বংসশীল, কেবল‎আপনার মহিমাময় ও মহানুভব প্রতিপালক ছাড়া। (সূরা আর রাহমানঃ ২৬-২৭) ‎







৫.সকল অহংকারের একমাত্র মালিক তিনি।‎



সকল দোষ হতে তিনি পূত-পবিত্র। প্রকৃতসকল সম্মান ও মর্যাদা তাঁরই। সকল মান সম্মানের প্রকৃত ‎মালিকও তিনি। এপ্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ



‏ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ ‏



অর্থাৎ-‎তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিইএকমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, ‎আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপশালী, মহামন্বিত। তারা যাকে অংশিদার করে আল্লাহ তায়ালা তা থেকে‎পবিত্র। (সূরা হাশরঃ ২০) ‎



হাদিসে কুদ্‌সিতে তিনি স্বয়ং ঘোষণা করেছেনঃ



‎قال رسول الله صلى الله عليه و سلم \\\" قال الله عزوجل الكبرياء ‏ردائي والعظمة إزاري فمن نازعني واحدا منهما قذفته في النار‎



অর্থাৎ- রাসূল সা•বলেন, মহান আল্লাহ তা‘য়ালা ‎বলেছেনঃ অহংকার আমার কুদরাতী চাদর তুল্য। আরসম্মান আমার কুদরাতী পরিধেয়। যে আমার ‎এসব কিছু নিয়ে টানাটানি করবে তাকেআমি জাহান্নামের শান্তি আস্বাদন করাব। (আবু দাউদ শরীফ)‎







৬. তিনি নিরাকার।



আমাদের জানা অজানা কোন কিছুর সাথেই তাঁর মহান স্বত্তার কোন ধরণের সাদৃশ্যচলেনা। তিনি ‎নিরাকার। আমরা তাঁকে নির্দিষ্ট কোন অবয়বে বা আকারে কল্পনাওকরতে পারি না। এ ব্যাপারে রাসূল ‎সা.বলেছেন: ‎تفكروا في آلآء الله ولاتتفكروا في الله‎ অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর সৃষ্টি বা নিদর্শন এর মধ্যে‎গবেষণা কর আল্লাহ সম্পর্কে নয়। (আল মু‘জেম আল ও-সেতী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৫০পৃঃ)‎







৭. তিনি সকল বিচারকের বিচারক।



তিনি মহা রাজাধিরাজ। তিনি সকল বাদশাহরবদশাহ। কুরআনে ইরশাদ ‎قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاء ‏‎ অর্থাৎ- হে নবী ‎আপনি সকলকে জানিয়ে ঘোষণা করুন; ‘আল্লাহইহলেন সকল বাদশাহের প্রকৃত বাদশাহ। যাকে ইচ্ছা ‎এ পৃথিবীর কোন অংশের সাময়িকরাজত্ব দান করেন’। (সূরা আল ইমরানঃ ২৬) ‎‎‎وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ‎ অর্থাৎ- আপনি (আল্লাহ) হলেন সকল বিচারকের বিচারক। (সূরাহুদঃ ৪৫)‎







৮. মহা-পরাক্রমশালী অসীম ক্ষমতাবান একমাত্র পবিত্র স্বত্ব। ‎



তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। ইরশাদ হয়েছেঃ



‎إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ ‏‎



অর্থাৎ-নিশ্চয়ই আপনার প্রভূ মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হুদঃ ৬৬)‎ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:



‎إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيدُ ‏‎



অর্থাৎ- নিশ্চই আপনার প্রতিপালক তিনি ইচ্ছাকরেন তাই ‎করে থাকেন। (সূরা হুদঃ ১০৭) ‎







৯. তিনিই একমাত্র আইনদাতা।‎



এপৃথিবীতে নিজেদের খেয়াল খুশিমত কোন আইন রচনার অধিকার কোন মানুষের নেই এবং‎প্রয়োজনও নেই। এ পৃথিবী ধ্বংস হওয়া অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত সারাদুনিয়ার মানুষের চলার জন্য, ব্যক্তি, ‎সমাজ ও রাষ্ট্রব্যাবস্থা পরিচালনা, অন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায়ে রাখা, অর্থনৈতিক সকল কার্যক্রম পরিচালনা ‎করাইত্যাদি সব বিষয়ের প্রয়োজনীয় সকল বিধানাবলী অল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্রকুরআন ও সুন্নাহর ‎মাধ্যমে জগতবাসিকে জানিয়ে দিয়েছেন।



কুরআন সুন্নাহরমধ্যে স্পষ্ট বর্ণনা নেই এমন কোন আইন ‎প্রণয়নের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রেওনতুন আইন কুরআন সুন্নাহর মূলনীতি বজায়ে রেখে কুরআন সুন্নাহ ‎ঘোষিতনির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে আইন রচনা করতে হবে। কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী নাকরে নিজেদের ‎খেয়াল খুশি মত আইন রচনা করলে তা কুরআন সুন্নাহকে অস্বীকারকরার নামন্তর। আর এটাই হল ‎কুফরী। এ প্রসঙ্গে তিনি পবিত্র কুরআনে অসংখ্যআয়াত নাঝিল করেছেন। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা ‎বলেনঃ



ক. ‎مَّا فَرَّطْنَا فِي الكِتَابِ مِن شَيْءٍ‎ অর্থাৎ-আমি এ কুরআনে কোন কিছুর বর্ণনাই বাদ দেইনি। (সূরা আনআমঃ ‎৩৮)‎



খ.‎أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ‎



অর্থাৎ- তারা কিঅন্ধকার ও মুর্খ যুগের শাসন ‎ব্যবস্থা চায়? অথচ শান্তিকামীদের জন্য আল্লাহঅপেক্ষা উত্তম আইন প্রণয়নকারী আর কে আছে? (সূরা ‎মায়েদাঃ ৫০)‎



গ. وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ‎



অর্থাৎ- রাসুল সা.তোমাদের জন্য ‎‎(মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিধি-বিধান সহ অন্যান্য) যা কিছুনিয়ে এসেছেন তার পুরোটাই অনুসরণ কর ‎আর যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।আর জেনে রাখ আল্লাহ তাঁর অবাধ্যদেরকে কঠোর ‎শাস্তিদাতা। (সূরা হাশরঃ ০৭)‎ঘ. ‎إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ‎ অর্থাৎ-আল্লাহই একমাত্র আইন দাতা। (সূরা আনআমঃ ৫৭)‎







১০. তিনিই সকল ক্ষমতার মালিক।



সার্বভৌমত্বে একমাত্র তাঁর।তিনিই সকল ক্ষমতার ‎উৎস। إِنَّكَ عَلَىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ‎ অর্থাৎ-নিশ্চই আপনি সর্বময় ক্ষমতার মালিক। (সূরা আল ইমরানঃ ২৬)‎وَلَمْ يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا‎অর্থাৎ-সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি ‎প্রত্যেকবস্তুকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর সেগুলোকে পরিমিত ও যথাযথ করেছেন (সূরা ফুরকানঃ০২)‎







১১. সারা জাহানের তিনি প্রতিপালক, জীবন ও মৃত্যু দাতা, রিঝিক দাতাতিনি এক আল্লাহ।‎



আমাদের জানা অজানা সারা জাহানের একমাত্র প্রতিপালক মহানআল্লাহ তা‘য়ালা। তিনি সকলকে ‎জীবন ও মৃত্যু দান করেন। আমাদের জানা অজানাসকল প্রাণীকে একমাত্র তিনিই রিঝিক দান করেন। ‎মহান আল্লাহ তা‘য়ালা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেনঃ



‎ وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ ‏



অর্থাৎ-আরপৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই , তবে সবার জীবিকারদায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন। তিনি ‎জানেন তারা কোথায় থাকে এবং সমাপিত হয়, এসব কিছু এ সুবিন্যস্ত কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা ‎হুদঃ ৬)



‎ قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ قُلِ اللّهُ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاء لاَ يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا



অর্থাৎ-জিজ্ঞেস করুন, নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের প্রতিপালক কে? বলে দিন-আল্লাহ।বলুন, এর পরও ‎কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাক হিসেবে গ্রহন করবেযারা নিজেদেরই ভালো-মন্দ ‎কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না? (সূরা আর্‌ র‘য়াদঃ১৬)



‎ كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتاً فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ‏‎



অর্থাৎ-তোমরা কিভাবে আল্লাহর ‎ব্যাপারে কুফরী কর? অথচ তোমরা ছিলে মৃত্যুঅতপর তিনিই (আল্লাহ) তেমাদেরকে জীবন দান ‎করেছেন। আবার মৃত্যু দান করবেন।পূনরায় জীবিত করবেন। শেষটায় তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। ‎‎(সূরাবাকারাঃ ২৮)



‎ هُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ‎



অর্থাৎ- তিনি (আল্লাহ) মহানসত্তা যিনি তোমাদেরকে জীবনদান করেন এবং মৃত্যু ‎বরণ করান। (সূরা গাফেরঃ৬৮)‎



‎‎‏ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَاء بِغَيْرِ حِسَاب‎



অর্থাৎ-তিনিআল্লাহ যাকে ইচ্ছা অসীম রিঝিক দান করেন।



قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ ‏‎



অর্থাৎ হে নবী আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, আসমান ওজমিনে ‎আল্লহ ছাড়া অন্নদাতা আর কে আছে? (সূরা ইউনুছঃ ৩১)



‎‎‏ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ‎



অর্থাৎ-নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালাউত্তম রিঝিক দাতা। (সূরা হজ্জঃ ৫





১২/



আল্লাহ এক অদ্বিতীয়

তাঁর কোন শরীক নেই

তাঁর কোন বংশ পরিক্রমা নেই . قل هو الله احد الله الصمد لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا احد



 মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য জিসিম (শরীর)সাব্যস্ত করা কুফুরী।পবিত্র কোরআনে যে সকল আয়াতে আল্লাহর হাত. মুখ ইত্যাদি হওয়ার বর্ননা আসছে .যেমন كل شئ هالك الا وجه সেখানে কোন প্রকরের ব্যখ্যা করা ব্যতিরেকেই ঈমান আনা , এর প্রকৃত অর্থ আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া.



তিনি সকল সৃষ্টির স্রষ্টা . এ সৃষ্টির মধ্যে অন্য কেউ অংশিদারীত্ব নেই , তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকরী





১৩/



তিনিই আরশেই সমাচিন ثم الاستوى على العرش





তবে কোথায় কি ভাবে সমাচীন তঁার খুজাখুজি ব্যতিরেকে শুধূ মাত্র আরশেই সমাচিন এ ভাবেই ঈমান বা বিশ্বাস করা



এ সমপকে উপরে বিস্তাীত আলোচনা করা হয়েছে .

১৪/



 এক মাত্র আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন কাদীম (অনাদী) । কোন সৃষ্টির জন্য " কাদীম " সাব্যস্ত করা যাবেনা । যেমন পৃথিবীকে কাদীম (অনাদী) বলা।



১৫/



 আল্লাহ তায়লার জন্য স্থান ,কাল ,দিক ইত্যাদী নির্ধারন করা হারাম।এগুলি সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি।







**সায়্যিদুনা রাসুল পাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সম্পৃক্তঃ**

===================**************************************************





 তিনি সকল সৃষ্টি জীব থেকে শ্রেষ্ট ।তিনি শেষ ও সর্ব শ্রেষ্ট নবী . তিনি আখেরী নবী .



এ সমপর্কে ২য় পর্বে আলোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ >

শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১২

যৌতুক প্রথা নারী নির্যাতনের অন্তভূক্ত

abdullah nezami
আমাদের সামাজিক একটা বেদী হলো যৌতুক ,যেটা সত্যিকার অথে শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষরাই ইহাকে ঘৃনা করলে ও অনেক শিক্ষিত ও ভদ্র পরিবারে আবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ্ ভাবে হলেও এ প্রথা চালু আছে ৷


স্বাভাবীক ভাবে যৌতুক হলো , বিবাহ কে কেন্দ্র করে ছেলে কিংবা মেয়ের পক্ষ থেকে অনূধিকার

সস্পদ আদায় করা কিংবা সূযোগ সূবিধা আদায় করে নেয়া৷

যেমন আরব দেশ গুলোতে মেয়ের বাবা তার কন্যাকে বিবাহ দেওয়ার মানসে বরের থেকে মোহর ছাড়াও অনাকাঙ্কীত আরও অনেক কিছু আদায় করে নেয়, এটাও যৌতুক ৷

আর আমাদের বাংলাদেশে মেয়ের বিবাহের উপলক্ষ করে বর কে ,বা বর পক্ষকে অনেক কিছু দিতে হয় ৷

-------------- আমাদের দেশে নিচু শ্রেনীর লোক ,দরিদ্র, মূখ বা অনেক সময় ভদ্র পরিবারের লোকেরা ও সরাসরি দাবী করে বসে ৷ যেমন ৫০০০০/ ১০০০০০/টাকা ,মোটর সাইকেল ,বিদেশ ভ্রমনের জ্ন্য ভিসা ইত্যাদি ৷ এগুলো সরাসরী যৌতূক যা সমপূন্ হারাম , অবৈধ ,অ্ন্যায় ৷

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يحل مال امرء مسلم الا بطيب نفسه কোন মুসলমানের সম্পদ গ্রহন করা বৈধ নয় و তার পছন্দ বা ইচ্ছা ছাড়া ৷

প্রতোক্ষ্ বা পরোক্ষ ভাবে যে ভাবেই ইউক না কেন অন্যায় ভাবে মানুষের মাল ভক্ষন করা জায়েয নেই ৷ জোর পূবক আথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কারো কোন টাকা -পয়সা ,খাওয়ার জিনিষ, বা ব্যবহারিক জিনিষ , তেমনি ভাবে সমাজিক চাপে পডে কোন গীফট্ আদায় করে নেয়া ইত্যাদি , অন্যায় অবৈধ হারাম ৷



আল্লাহর বাণী - واتوالنساء صدقاتهن نحلة فان طبن لكم عن شيئ منه فكلوا منها هنيئا مريئا -- النساء আথ্যাৎ তোমরা তোমদের স্এীদের কে তাদের মোহর দিয়ে দাও , যদি তিনি সেচছায় < কোন প্রকার বল প্রয়োগ বা হীলা করা ছাড়া > তোমাকে দে ,বা গীফট্ করে তবে তুমি তা গ্রহন করতে পারবে ৷



কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে হলে তা জায়েয হবেনা ৷

------------------- আর যৌতুকের টাকা বরের জন্য বা তার বাবা বা পরিবারের জন্য গ্রহন করা সমপূন হারাম , যেমন শুকরের গোশ্ত ভক্ষন করা হারাম ৷ এটা একটা সামাজিক ব্যাধি , কূসংস্কর , নারী নিযাতনের নামান্তর ,. এটাকে আমরা ঘৃনা করব, এবং এটাকে নিমূল করার জ্ন্য জনমত তৈরী করব ,

কিন্তু আশ্চযজনক হলেও সত্য যে , আমাদের শিক্ষীত ভদ্র সমাজে ও আজ যৌতুক গ্রহন করছে ভিন্ন কায়দায় --



যেমন বর যাএী ::-----------------

ছেলের বাবা ,বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ের বাবাকে বলে যে , আমাদের কিছু চাওয়া র নেই শুধু মাএ একটু বর যাএীদের মেহমান দারী করলেই হবে এরকম চেয়ে নেওয়া ৷ ইসলামে বর যাএী খাওয়ার কোন বিধান নেই ৷ বরং ওলীমার ব্যবস্হা আছে, যা বর কে করতে হবে ৷ কনে কে বাডিতে এনে উভয় পক্ষের লো কজনদের মেহমানদারী বরের জন্য সুন্নাত, বরের পয়সার থেকেই ,

কিন্তু দুঃখের বিষয় বর পক্ষ তো করছেই না , বরং কন পক্ষকে চাপ দিয়ে আদায় করা হচ্ছে, কনের বাবা নিরুপায় হয়ে কজ করে , জমি বিক্রি কর, লৌন নিয়ে , হাত পেতে ভিক্ষা করে বর যাএীদের খাওয়র ব্যবস্হা করে তাও কোন সাধরন খানা ও নয় উচ্চ মানের হতে হবে৷

এটাকি পরোক্ষ যৌতুক নয় ?

আজকে নারীবাদীরা ও যারা নারীদের অধীকার নিয়ে কথা বলে তাদের বিবাহে ও বাস মিনিবাসের বহর নিয়ে বরযাত্রী খাওয়ানোর অনূষ্ঠান ধূম-ধাম করে পালন করছে , এটা কি নারী নির্যাতনের পথ খূলে দেয়া হচ্ছেনা ?

বতমানে বর যাত্রী খাওয়ার ও একটা প্রতিযোগিতার হিডিক পডে যাচ্ছে যে অমুকের বিবাহে ১০০০ হলে আমার বিবাহে ১৫০০ হতে হবে ইত্যাদি, তাছাডা বিবাহ পরবতি সামাজীক বিভিন্ন রসম রেওয়ায়েজ তো আছে, যা ভূক্তভূগী ছাড়া কেউ অনূধাবন করা সম্ভব না ৷ যার কারনে যারা এ সব রসম রেওয়াজ পালন করতে সক্ষম না ঐসকল পরিবারের মেয়েদের বিবাহ হচ্ছেনা সহজে ; এবং মাতা-পিতা দূরচিন্তায় ঘূমাতে পারছে না ৷

যাদের পরিবরে ৩/৪/ বা ততোধীক কন্যা সনতান আছে তাদের আরামের ঘূম হারাম হয়ে যাচ্ছে এর জন্য কি আমাদের সামাজীক ব্যবস্হা দায়ী নয়?



আমরা কি পারিনা আমাদের সমাজকে একটু পরিবতন করতে ?

আমরা কি পারিনা কনের বাডিতে না খেয়ে বরের বাডিতে খেতে ?

আমরা কি পারিনা এ সব হারাম ভক্ষন ত্যাগ করতে ?

হ্যাঁ আবশ্যই পারব

তবে একটু সচেতনেতার প্রোয়জন

ও তার সাথে খোদাভীতী



-

ছেলে সাজানো ------------

কোন কোন স্হানে বিশেষত দক্ষিন চট্টগ্রামে এমন প্রথা ও আছে যে বরের বাবা কনের বাবাকে বলে যে আপনরা বরকে সাজিয়ে দিবেন , আথ্যাৎ বরকে সাজানোর জন্য শাট-পেন্ট কোট ইত্যাদী এমন কি স্যাপ মেশিন সহ দিতে হয় ,

এখানে ছেলেকে সাজানোর জন্য কনের বাবাকে কয়েক হাজার টাকা খরচ করতে হয়,

এটা কি লজ্যার ব্যাপার নয় ,? এটা কি কনের বাবার কাছে হাত পাতা নয় ?

এটা পুরূসত্বের লক্ষন নয়, সাহসিকতার লক্ষন নয়,



পুরুষ কে তো নিজের পয়সা দিয়েই , নিজ সামথ্য দিয়েই সাজতে হবে , নিজে সাজার বা স্এীকে সাজনো সহ তার বরন পোষন দানের সামথ না থাকলে বিবাহ করা তার উপর ফরজ ,বা ওয়াজিব নয় ৷

এখানে নিজে সাজার জন্য কনের বাবার কাছে হাত পাতা এর চেেয় নিচু মানের মানসিকতা ছাড়া আর কি হতে পারে :

হ্যাঁ কনেকে সাজানোর ১০০/; বরের দায়িত্ব ৷



ইফতারী দান ==============

মেয়ে বিবাহ দেওয়ার পর পর সামাজীক চাপের

মুখে পড়তে হয় প্রথম বৎসর , রমজানে ইফতারী দেওয়া নিয়ে , মেয়ের বাবা , আবশ্যই ইফতারী করাতে হবে ছেলের বাবা সহ পরিবারের সবাই কে এমন কি সমাজের লোকজন সহ তার আত্তীয়দের ,

মেয়ের বাবা সি এন জি বা ট্রাক ভত্তি করে বেয়াইর বাড়িতে ইফতারী পাঠানোর ব্যবসহা করে থাকে ৷ কিন্তু তাতে যদি একটু আইটেমের কম হয় , বা উচ্ছ মানের না হয় তখন হতভাগা মেয়েকেই গাল মন্দ শুনতে হয় ,আপসোস হাজারো আপসোস এ সমাজের কমকান্ডের উপর ৷





ইফতারী করানো আবশ্যই ছাওয়াবের কাজ এতে কোন সন্দেহ নেই ,

যে কোন রোজা দারকে ইফতারী করালে পূনাঙ্গ একটি রোজার ছাওয়াব পাওয়া যাবে ,

কিন্তু এখানে আমরা কি সে ছাওয়াবের আশা করি ?যদি করা হতো মেয়ের বাবা মা এর জন্য কেন ইফতারী পাঠানো হয়না ?

মেয়ের বাবা কি ইফতারীর পাওয়ার যোগ্য নয় ? যদি হয় তাহলে সামাজীক এ ভৌষম্ম কেন ?আসুন আমরা সকলে মিলে সামাজীক এ সকল ভৌষম্ম দূর করি , কূসংষ্কার গুলো দূর করি এবং ছেলের বাবাদের মত মেয়েদের মা বাবার জন্য ও ইফতারীর ব্যবস্হা করি , যদি করতে হয় ৷ একতরফা ভাবে যাতে না হয় ৷



তাও ট্রাক বা সি এন জি ভতির প্রয়োজন নেই শুধুমাএ প্রয়াজন মত ,





চলবে==-----------------------------------------------------------------



আল-কোরআনে সম্প্রতি আবিষ্কৃত ”দুই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ”এবং বিস্ময়কর তথ্য !!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’


কেমন আছেন সবাই,আসা করি ভাল…সবাই ভাল থাকুন এই কামনা করে আজকের লেখনি



সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মহাকাশে এমন একটি গ্রহ আবষ্কার করেছেন যা দুটি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। ফলে সেখানে একই দিনে দুই সূর্যোদয় এবং দুই সূর্যাস্ত একটি গতানুগতিক বিষয়। নাসা জানিয়েছে যে, দূরবীক্ষণ যন্ত্র কেপলারের সহায়তায় পৃথিবী থেকে ২০০ আলোকবর্ষ দূরে 'কেপলার-১৬বি' নামের এরূপ একটি গ্রহ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। খোদ বিজ্ঞানী মহলের কাছে এটি একটি চমকপ্রদ বিষয় বৈকি। শনি গ্রহের মতোই বিশাল শীতল এই গ্যাসীয় গ্রহটির দুটি সূর্য আমাদের সূর্যের চেয়ে ৬৯ ও ২০ মতাঙশ ছোট ও তুলনামূলকভাবে শীতল। তাই 'কেপলার- ১৬বি' এর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা -৭৩ এবং -১০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ২২৯ দিনে একবার দুই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।



"দুই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরা গ্রহ আবিষ্কার"- 'দৈনিক প্রথম আলো'- ১৭/৯/২০১১ ইং- পৃষ্ঠা-২৪

From double sunrise to double sunset the show goes on, always changing.



Where the Sun Sets Twice. NASA’s Kepler mission has discovered a world where two suns set over the horizon instead of just one. The planet, called Kepler-16b, is the most “Tatooine-like” planet yet found in our galaxy and is depicted here in this artist’s concept with its two stars. Tatooine is the name of Luke Skywalker’s home world in the science fiction movie Star Wars. In this case, the planet is not thought to be habitable. It is a cold world, with a gaseous surface, but like Tatooine, it circles two stars.

Sometimes the orange sun rises first. Sometimes it is the red one, although they are never far apart in the sky and you can see them moving around each other, casting double shadows across the firmament and periodically crossing right in front of each other.



A planet with two sunsets and two sunrises-







Tatooine comes true: An artist's concept of the planet Kepler-16b. — PHOTO: Reuters

From double sunrise to double sunset the show goes on, always changing. Sometimes the orange sun rises first. Or the red one, though they are never far apart and you can see them moving around each other, casting double shadows across the firmament and periodically crossing right in front of each other.

Astronomers discover planet orbiting a pair of stars-



The sunset on Kepler-16b would look something like the iconic double sunset depicted in Star Wars, only better, says astrophysicist Laurance Doyle of the SETI Institute in Mountain View, Calif. “Nature is always more amazing,” says Doyle, coauthor of a Sept. 16 Science paper that describes Kepler-16b. “There, you’d get a different sunset every day!”



আমাদের পৃথিবীটা নিজ অক্ষের উপর ঘুরতে ঘুরতে একটি নক্ষত্র অর্থাৎ সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে। ফলে এটি এমনি একটি স্থান যেখানে আমরা এক সূর্যের উদয় ও অস্তকে অবলোকন করি। সুতরাং এই পৃথিবী ও এর মত সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোকে এক সূর্যোদয় ও এক সূর্যাস্তের স্থান বলাটাই যুক্তিসংগত।



*নিচের আয়াতগুলোর বক্তব্য পৃথিবীর সাথে সম্পর্কিত। তাই এক্ষেত্রে এক সূর্যের উদয় ও অস্তগমনের কথা এক বচনে প্রকাশ করা হয়েছে-



আল-কোরআন-

সূরা বাকরা (মদীনায় অবতীর্ণ)



(০২:১১৫) অর্থ- (এক বচন- সূর্য) উদয়ের দিক (পূর্ব) ও (সূর্য) অস্তগমনের দিক (পশ্চিম) আল্লাহরই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।

(০২:১৪২) অর্থ- এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুন, (এক বচন- সূর্য) উদয়ের দিক (পূর্ব) ও (এক বচন- সূর্য) অস্তগমনের দিক (পশ্চিম) আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।



(০২:১৭৭) অর্থ- সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, (এক বচন- সূর্য) উদয়ের (পূর্ব) দিকে ও (এক বচন- সূর্য) অস্তগমনের (পশ্চিম) দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।





(০২:২৫৮) অর্থ- তুমি কি সে লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল ইব্রাহীমের সাথে এ কারণে যে, আল্লাহ সে ব্যাক্তিকে রাজ্য দান করেছিলেন? ইব্রাহীম যখন বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুর্যকে নিয়ে আসেন (এক বচন- সূর্য) উদয়ের দিক (পূর্ব) থেকে, এবার তুমি তাকে (এক বচন- সূর্য) অস্তগমনের দিক (পশ্চিম) থেকে ফিরিয়ে আন দেখি। তখন সে অবিশ্বাসী হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ সীমালংঘণকারী সম্প্রদায়কে সরল পথ প্রদর্শন করেন না।





এই পৃথিবীতে বসে কিছুদিন আগেও দুই সূর্যোদয় ও দুই সূর্যাস্ত সম্পর্কে বাস্তব ধারনা নেয়া কঠিন ছিল।

=====================================================





তাই বিশেষ করে আল-কোরআনের (৫৫:১৭) নং আয়াত ও এরূপ অন্যান্য আয়াতের বক্তব্যকে শুধু এই পৃথিবীর সাথে সম্পর্কিত ভেবে বিভিন্ন জনে বিভিন্নভাবে অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। যেহেতু বিষয়টি অজ্ঞাত ছিল, তাই যে যেভাবেই বলে থাকুক না কেন, সেক্ষেত্রে কেউ ভুল বললেও এক কথায় তাকে দোষ দেবার পক্ষে আমি নই। বরং নিজের জ্ঞান মাফিক চেষ্টা করার জন্য অন্তত তারা প্রশংসা পাবার যোগ্য। তাছাড়া সৃষ্টিজগৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে আল্লাহতায়ালা বিশ্বাসীদের জন্য যোগ্য পুরষ্কারের ঘোষনা করেছেন।





কিন্তু যারা বিশ্বাস তো করেই না, বরং সর্বজ্ঞ আল্লাহতায়ালার বাণীকে অবাস্তব কল্পকাহীনি আখ্যা দিয়ে কটাক্ষ করে- স্রষ্টা তাদেরকে মোক্ষম জবাব দেবার ব্যবস্থা করেছেন। যতই দিন যাবে, তাদের কটাক্ষের কড়া প্রত্যুত্তর বিজ্ঞানের মাধ্যমেই তারা পেয়ে যাবে।



এবার দেখা যাক আল-কোরআনে দুই নক্ষত্র/সূর্য উদয় ও দুই নক্ষত্র/সূর্যাস্ত অস্তগমন সম্পর্কে আদৌ কোন ইংগিত আছে কি?

======================================================



আল-কোরআন

(Al-Quran) -

সূরা আর রহমান ( মদীনায় অবতীর্ণ )

(৫৫:১৭) রাব্বুল মাশরিকাইনি ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইন

(৫৫:১৭) অর্থ- তিনি দুই (নক্ষত্র/সূর্য) উদয়ের (স্থানের) পালন-কর্তা এবং তিনি দুই (নক্ষত্র/সূর্য) অস্তগমনেরও (স্থানেরও)পালন-কর্তা।

(55:17) [He is] Lord of the (place of) two/double (Star/Sun) risings and Lord of the (place of) two/double (Star/Sun) settings.



(৫৫:১৭) নং আয়াতে 'মাশরিকাইন' ও 'মাগরিবাইন' শব্দ দুটি 'দ্বি-বচন' এবং দ্বৈত ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। 'মাশরিক' শব্দের অর্থ সাধারনত (এক) সূর্যোদয়ের স্থান/দিক হিসেবেই করা হয়ে থাকে। (০২:২৫৮) নং আয়াতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এখানে 'মাশরিক' শব্দটির অর্থ 'পূর্ব দিক' হিসেবে করা হয়ে থাকে। মূলত 'শার্ক' ও 'গার্ব' এই দুটি শব্দের অর্থ হলো 'পূর্ব' ও 'পশ্চিম'। কাজেই 'শার্কাইন' ও 'গার্বাইন' শব্দ দুটির অর্থ 'দুই পূর্ব' ও 'দুইপশ্চিম'। (০২:২৫৮) নং আয়াতে 'মাশরিক' ও 'মাগরিব' শব্দ দুটির সাথে যেহেতু 'শামসু' অর্থ 'সূর্য' শব্দটি এসেছে এবং 'পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদয়' এবং 'পশ্চিম দিক থেকে সূর্যকে আবার ফিরিয়ে আনার' প্রসঙ্গটি এসেছে। তাই অন্যান্য আয়াতেও 'মাশরিক' ও 'মাগরিব' শব্দ দুটিকে 'সুর্যোদয়'

ও 'সূর্যাস্ত' হিসেবেই সরাসরি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। কিন্তু মৌলিক ভাবে 'মাশরিক' ও 'মাগরিব' শব্দ দুটি দ্বারা শুধু সূর্য নয়, বরং যে কোন নক্ষত্রের 'উদয়ের দিক/স্থান' ও 'অস্তগমনের দিক/স্থান' -কে বোঝানো যেতে পারে।





*বিজ্ঞানের চমকপ্রদ আবিষ্কার-



দুটি নক্ষত্র/সূর্য-কেন্দ্রিক জগতের মাঝে অবস্থিত 'কেপলার-১৬বি' এমনি একটি গ্রহ যেখানে একই দিনে দুটি নক্ষত্র/সূর্য উদিত হয় ও অস্তগমন করে। তাই এই গ্রহটিকে তো বটেই এবং এরই মত আরও যে সব গ্রহ আবিষ্কৃত হবে সেগুলোকে 'দুই নক্ষত্র/সূর্য উদয়ের ও দুই নক্ষত্র/সূর্য অস্তগমনের স্থান' বলা হলে নিশ্চয় অযৌক্তিক হবে না।





শুধু তাই নয, আল-কোরআনে দুইয়ের অধিক নক্ষত্র/সূর্য উদয় ও দুইয়ের অধিক নক্ষত্র/সূর্য অস্তগমন সম্পর্কেও ইংগিত দেয়া হয়েছে-



আল-কোরআন



(Al-Quran) -



সূরা আস-সাফফাত (মক্কায় অবতীর্ণ)

(৩৭:০৫) অর্থ- তিনি আসমান সমূহ, পৃথিবী/ভূমির ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা এবং পালনকর্তা বহু (নক্ষত্র/সূর্য) উদয়েরও (স্থানেরও)।

(37:05) Lord of the heavens and the earth and that between them and Lord of the multiple (Star/Sun) risings.



সূরা আল মা’আরিজ (মক্কায় অবতীর্ণ)

(৭০:৪০) আমি শপথ করছি বহু (নক্ষত্র/সূর্য) উদয়ের (স্থানের) এবং বহু (নক্ষত্র/সূর্য) অস্তগমনের (স্থানের) পালন-কর্তার, নিশ্চয়ই আমরা সক্ষম-



(70:40) So, I swear by the Lord of the (place of) multiple (Star/Sun) risings and the (place of) multiple (Star/Sun) settings, that indeed We are able.



(৩৭:০৫) ও (৭০:৪০) নং আয়াতে 'আল-মাশারিকি' ও 'আল-মাগারিবি' এর অর্থ শুধুমাত্র আমাদের এই পৃথিবীতে এক সূর্যের উদয় ও অস্তের সাথেই সম্পৃক্ত নয়। বরং মৌলিকভাবে অনুবাদ করলে এর মাধ্যমে বহু-বচন বোঝায় এবং মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে 'বহু নক্ষত্র/সূর্যের উদয়'('আল-মাশারিকি') এবং 'বহু নক্ষত্র/সূর্যের অস্তগমনের'('আল-মাগারিবি') ভাবই প্রকাশ পায়। কাজেই শুধুমাত্র পৃথিবীর সাথে সম্পৃক্ত করে অনুবাদ করা হলে, মহান স্রষ্টা এর মাধ্যমে যে ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করতে চেয়েছেন তা ব্যহত হতে পারে। যেহেতু (৫৫:১৭) নং আয়াতে বিশেষ ভাবে দুই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বক্তব্য এসেছে। সুতরাং (৩৭:০৫) ও (৭০:৪০) নং অয়াতে 'বহু' বলতে ২ এর অধিক অর্থাৎ ৩, ৪, ৫ বা তার অধিক সংখ্যক বুঝতে হবে।বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে তিন সূর্যকে প্রদক্ষিণরত গ্রহও খুঁজে পেয়েছেন-





Triple Sunset: Planet Discovered in 3-Star System-

A newly discovered planet has bountiful sunshine, with not one, not two, but three suns glowing in its sky.

The triple-star system, HD 188753, is located 149 light-years away in the constellation Cygnus. The primary star is like our Sun, weighing 1.06 solar masses. The other two stars form a tightly bound pair, which is separated from the primary by approximately the Sun-Saturn distance

>>>First Planet Under Three Suns Is Discovered
 
 
http://www.sonarbangladesh.com/blog/DaliaNuzha/70879
 

.পত্র-পত্রিকায় কুরআন মজীদের আয়াত, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, হাদীস শরীফ / ৭৮৬ / ইত্যাদি লেখার প্রচলন

হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানুবী রাহ.-এর খেদমতে নিম্নোক্ত ইসতিফতা পেশ করা হয়েছিল :




প্রশ্ন : পত্র-পত্রিকায় কুরআন মজীদের আয়াত, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, হাদীস শরীফ ইত্যাদি লেখার প্রচলন আছে। অথচ ঐসব পত্রিকায় ছবি থাকে, সিনেমার বিজ্ঞাপন থাকে। এরপর পুরানো কাগজে বিক্রি হয়ে যায়। এর দ্বারা দোকানদাররা গ্রাহকদেরকে জিনিসপত্র মুড়িয়ে দেয়। তদ্রূপ পুরানো পত্রিকা এখানে সেখানে পড়ে থাকে। পায়ের নীচে পড়ে। এ অবস্থায় পত্রিকায় আয়াত-হাদীস লেখা জায়েয হবে কি?



তাছাড়া কিছুদিন যাবৎ সরকারী দফতরে সরকারী চিঠিপত্রে পুরা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা হচ্ছে। এই কাগজগুলোরও উপরের অবস্থা হয়ে থাকে। তো এই সকল চিঠিপত্রে কি বিসমিল্লা লেখা



জায়েয হবে? পুরা বিসমিল্লাহর স্থলে যদি বিসমিহী সুবহানাহু



ওয়া তাআলা বা বিসমিহী তাআলা কিংবা ৭৮৬ লেখা হয়



তাহলে সুন্নতের ছওয়াব পাওয়া যাবে কি না?



হযরত মুফতী ছাহেব উপরের প্রশ্নের এই জবাব দিয়েছেন:



‘বর্তমানের পত্রপত্রিকা ও বিজ্ঞাপনে (যার অবস্থা প্রশ্নে বলা হয়েছে) কুরআন মজীদের আয়াত ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা জায়েয় নয়। সরকারী দাফতরিক কাগজপত্রে লেখা জায়েয; বরং মুস্তাহসান (ভালো)। কেউ অমর্যাদা করলে সে গুনাহগার হবে। বিসমিল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ বা ৭৮৬ লেখা কুরআনে কারীম, আল্লাহর রাসূলের আমল ও উম্মতের মুতাওয়ারাছ আমলের খেলাফ। হোদায়বিয়ার সন্ধির সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিসমিল্লাহ লেখার আদেশ করেছিলেন। মুশরিকরা আপত্তি করে বলেছিল,



اكتب ما كنت تكتب باسمك اللهم



এ থেকে প্রমাণ হয়, ইসলামে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখাই নির্ধারিত। এর পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ লিখলে বিসমিল্লাহর ছওয়াব পাওয়া যাবে না এবং সুন্নত আদায় হবে না।



৫ রবিউল আওয়াল ১৪০১ হি.



(আহসানুল ফাতাওয়া খন্ড ৮, পৃ. ২৪)



আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমলের



তাওফীক দান করুন। আমীন।



http://www.alkawsar.com/article/469



তাছাডা বিছমিল্লাহ এর পরিবর্তে ৭৮৬ লেখা একে বারেই না জায়েয বলে মনে হয় , কেননা মাওঃ তারেক মানাওয়ার এর ওয়াজের ভিডিওতে শুনেছি ে যে হরে কৃষ্ণ হরে রাম কে অক্ষরে পরিনত করলে ও ৭৮৬ হয় ,



তাহলে এ ৭৮৬ কে বিছমিল্লাহর স্হানে লেখার প্রবনতা ইহুদী/খৃষ্টান/ মুশরিক/ বা হিন্দুদের চক্রান্ত ছাডা কিছুই না

সুতরং এ থেকে শতর্ক থাকা জরুরী

বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১২

প্রসঙ্গ মাদরাসা শিক্ষা ও শ্রেণীবৈষম্য



গত ৭ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও বুদ্ধিজীবি জনাব বদরুদ্দীন উমরের ‘মাদ্রাসা শিক্ষা ও শিক্ষাক্ষেত্রে শ্রেণীবৈষম্য’ শীর্ষক লেখাটি পড়ে বিস্মিত হয়েছি। ইন্টারনেট ভিত্তিক পত্রিকা সোনার বাংলাদেশে ঢুকেও দেখলাম, উল্লেখিত লেখাটি পড়ে প্রায় সবাই- এরকম একপেশে ও তথ্যবিবর্জিত লেখার জন্য লেখকের কঠোর সমালোচনা করে রেটিং অপশনে মাইনাস দিয়ে ভরে রেখেছেন (দেখুন: http://www.sonarbangladesh.com/article.php?ID=5329)। যাইহোক বিবেকের তাড়না, অনেকের অনুরোধ ও এ বিষয়ে মানুষকে সত্য ইতিহাস জানানোর মানসে এই অধমের কলম ধরা।




ইসলামের প্রথম শিক্ষক হযরত মুহাম্মদ (স.) এর হাত ধরে দারুল আরক্বাম ও মসজিদে নাববীতে যে শিক্ষাব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়েছিল, সেই শিক্ষাব্যবস্থাই কালের পরিক্রমায় মাদরাসা নাম ধারণ করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় দীপ্তি ছড়িয়ে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের উৎকর্ষে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলছে। ইসলাম ধর্ম যেমন আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব নিছক কোন ধর্ম নয়, তেমনি ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা তথা মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাও নিছক ধর্ম শেখানোর মাধ্যম নয়। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থাকে কেউ যদি হিন্দু ধর্মের টোল ও খ্রিষ্টান ধর্মের সেমিনারি শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তুলনা করে তাহলে তিনি ভুল করবেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ ধর্ম শেখার জন্য টোল ও সেমিনারি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করলেও ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য ব্যাপক ও সামগ্রিক। পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াতই ছিল পড়া সংক্রান্ত। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না” (সূরা আলাক্ব: ১-৫ )। উল্লেখিত আয়াতগুলোর প্রথম আয়াতে আল্লাহর নামে পড়তে বলার পরপরই ‘সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে’ একথা বলে আল্লাহ তায়ালা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুসলমানরা আল্লাহর নামে শুধু ধর্ম শিক্ষাই নেবে না বরং জ্ঞান-বিজ্ঞানে নিজেদের নিমজ্জিত করবে। আল্লাহ কিভাবে মানুষকে ও গোটা সৃষ্টিজগতকে তৈরী করেছেন তা নিয়ে গবেষণা করবে। পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চিন্তার জগত প্রসারিত করে বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে গবেষণা করতে বলেছেন। আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য” (সূরা আল-ইমরান: ১৯০)। “তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব আশা করছ না। অথচ তিনি তোমাদেরকে বিভিন্ন রকমে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি লক্ষ কর না যে, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে। আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদ্গত করেছেন। অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নিবেন এবং আবার পুনরুত্থিত করবেন” (সূরা নূহ:১৩-১৮)। নবী (স.) বলেন: ‘প্রত্যেক নর-নারীর উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ’। তিনি আরো বলেন: ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হলে সুদূর চীন যেতে হলেও গমন কর’।



আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশনা কাজে লাগিয়ে মুসলমানগণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে আত্মনিয়োগ করে গোটা বিশ্বকে জয় করে নেয়। প্রাথমিক যুগে মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চললেও পরবর্তীতে তা মসজিদের গন্ডি ছাড়িয়ে আরো বিস্তৃতি লাভ করে। উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি ঘটে। আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন ৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে বায়তুল হিকমা নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ততকালীন সময়ে বায়তুল হিকমা জ্ঞান-বিজ্ঞানে ব্যাপক অবদান রাখে। গণিত, ভূগোল, আকাশ বিদ্যা, ফিজিক্স, ক্যামেস্ট্রি, মেডিকেল সায়েন্সসহ বিজ্ঞানের সকল শাখায় মুসলমানরা যে অবদান রেখেছে তা অনবদ্য। মূলত: তাদের আবিস্কৃত সূত্রের ওপর ভর করেই এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান চর্চা চলছে। খলদুন, রূশদ, ফারাবি, খারেজমি, ইবনে সিনাদের অবদান সারাবিশ্ব কিয়ামত পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য। মুসলমানরা স্পেন বিজয় করে সেখানে ৮০০ শত বছরের শাসনামলে শত শত মসজিদ ও পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেছিল। গ্রানাডা ও কর্ডোভার পাঠশালাগুলোতে খ্রিষ্টানরা এসে মুসলমানদের থেকে জ্ঞান আহরণ করতো। তখনকার সময় পাঠশালাগুলো ছিল একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়; জ্ঞান-বিজ্ঞানের দূর্গ।



ভারতবর্ষে মুসলমানদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৮০০ বছরেরও আগে। তখন গোটা ভারতবর্ষের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা ছিল মাদরাসা শিক্ষা। শিক্ষা, সংস্কৃতি, আইন, চিকিৎসা, স্থাপত্য, রাষ্ট্রনীতি সব শিক্ষাই ছিল মাদরাসা ভিত্তিক। ১৭৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কলিকাতা আলীয়া মাদরাসা। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে অবিভক্ত বাংলায় ইংরেজ শাসনের প্রবর্তন ঘটে। এর প্রায় ৫০ বছর পরে ১৮০১ সালে পোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে ভারতবর্ষে ইংরেজী শিক্ষা চালু হয়। এর আগে ভারতবর্ষে ইংরেজী শিক্ষা বা আজকের দিনের জেনারেল শিক্ষার কোন অস্তিত্ব ছিল না। ইংরেজদের শাসন শুরু হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের কাজ। কেননা ইংরেজরা ভাল করে জানে যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানরা এগিয়ে থাকলে তারা কখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল যে, এমন শিক্ষাব্যবস্থা গড়তে হবে যার ছাত্র থাকবে এদেশের মুসলমান এবং চিন্তা-চেতনা থাকবে ইংরেজদের আদলে। মগজ ধোলাই যাকে বলে। ইংরেজ আমলের শেষভাগে জেনারেল শিক্ষাই জাতীয় শিক্ষায় রূপ নেয়। তখন মাদরাসা শিক্ষাকে ইংরেজদের জেনারেল শিক্ষার সাথে সমন্বিত করার দাবি উঠলে মাদরাসাগুলোতে নিউ স্কিম নামে স্বতন্ত্র মাদরাসা চালু হয়। ১৯১৪-১৫ সাল থেকে নিউ স্কিম ও ওল্ড স্কীম নামে মাদরাসায় দুটি ধারা চালু হয়। পরে কালক্রমে নিউস্কীম মাদরাসা সাধারণ স্কুল কলেজের রূপ ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৭ সনে সরকারীভাবে ঘোষণা দিয়ে অসংখ্য মাদরাসাকে স্কুল কলেজে পরিণত করা হয়। যার সংখ্যা ছিল ১৯৭৪ সালের হিসাব অনুযায়ী ১০৭৪। ঢাকার বর্তমান নজরুল কলেজ, চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ, রাজশাহীর হাই মাদরাসা এককালের মাদরাসা থাকলেও এখন তা কলেজ হয়ে মুসলমানের সৌর্য-বীর্য হারানোর সাক্ষী হয়ে আছে।



ইংরেজদের নীতি হচ্ছে- ''Divide and Rule' তথা ‘বিভেদ তৈরী করে শাসন কর’। সেই নীতির ভিত্তিতে এদেশে যে দুই ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছিল তার মাধ্যমেই সর্বপ্রথম এদেশে শ্রেণীবৈষম্য শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ইংরেজদের সেক্যুলার চিন্তা চেতনা বিদ্যমান থাকায় ঐ শিক্ষায় শিক্ষিতরা একই দেশের একই জাতের মাদরাসা পড়ুয়াদের অন্য চোখে দেখা শুরু করল। আবার মাদরাসায় শিক্ষিতদের চোখেও অনুরূপ চিত্র ফুটে উঠতে লাগল। একই দেশে এই দুই ধারা ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করে জাতি এখন দুইভাগে বিভক্ত। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে মুসলমানদেরে চিন্তা-চেতনার আলোকে যদি একই ধারার সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা (Integrated Education System) চালু করা যেত তাহলে আর এই শ্রেণীবৈষম্য তৈরী হত না। কিন্তু ইংরেজরা চলে গেলেও তাদের রেখে যাওয়া গোলামেরা ইংরেজদের চেতনাকে আরো পাকাপোক্ত করার জন্য নিরলস কাজ করে গেছে আর মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ব্যর্থ চেষ্টা করে তার মধ্যেই এখন সেক্যুলারিজমের বিষ ঢালা শুরু করেছে।



যারা মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে সেকেলে কিংবা প্রগতির অন্তরায় ভাবেন। তারা আসল কথা মানুষকে বলেন না; তা হচ্ছে- মাদরাসা শিক্ষা যদি ভালোভাবে চালু হয় তাহলে সেক্যুলারপন্থীদের কপাল পোড়া যাবে, ইসলামপন্থীরাই সবকিছুর নেতৃত্ব দেবে। এ কারণেই সংবিধানের দেয়া মৌলিক অধিকারকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকরা (?) মাদরাসা ছাত্রদের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিষয়ে ভর্তির সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের ভয়, মাদরাসার ছাত্ররা সাংবাদিকতা, অর্থনীতি, আইন, বাংলা ও ইংরেজির মত গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টে পড়লেতো প্রগতিশীলদের জায়গা বেদখল হয়ে যাবে। তাই যেভাবে হোক মাদরাসা ছাত্রদের নেতৃত্বে আসার পথ রুদ্ধ করতেই হবে। তা না হলে স্যামুয়েল হান্টিংটনের ঘোষণা অনুযায়ী মুসলিম নিধন যে কঠিন হয়ে পড়বে। একদিকে মাদরাসা ছাত্রদের জঙ্গি বানানোর চেষ্টা আর একদিকে তাদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পথ রুদ্ধ করা দ্বিমূখী নীতি নয় কি?



ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারণ শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। জগতের সব জ্ঞানই ইসলামী জ্ঞান যদি না তার মধ্যে ইসলামী চেতনার পরিপন্থি কিছু থাকে। গণিত, ভূগোল, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, গার্হ্যস্থ অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, ইতিহাস, আইনসহ সকল জ্ঞানই ইসলামী জ্ঞান। আরববিশ্বে স্কুলকে মাদরাসা, কলেজকে কুল্লিয়াহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জামিয়াহ নামে বলা হয়। আর যে দেশের ভাষা আরবী নয় সেদেশের প্রচলিত শব্দ দিয়েই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বোঝানো হয়। কখনো আরবী নামে কখনো ইংরেজী নামে। ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লেবানন, মিশর, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় যে একমূখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে তা ধর্মকে আলাদা করে নয়। ঐ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কখনো নাস্তিক উৎপাদন হয় না। ওখানকার ছাত্রদের আধুনিক শিক্ষা দানের পাশাপাশি ''Spiritual Development' তথা আত্মিক উন্নয়নের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। সৌদি আরবে একটি ছেলে স্কুলের গন্ডি পেরোনের আগেই কুরআনের হাফেজ হয়, ইসলামী শরীয়াতের খুটিনাটি জ্ঞানও তাকে শেখানো হয়। তাই ওখানকার একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আমাদের দেশের একজন ভালো মানের মুফতি, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরের চেয়ে উত্তম। মালয়েশিয়ায় সরকারীভাবে প্রত্যেক মুসলমানকে শুদ্ধ কুরআন শেখানো এবং ইসলামী শরীয়াতের আবশ্যকীয় জ্ঞান দান করা হয়। শুধু তাই নয় ইসলামী পন্ডিত তৈরী করার জন্য মিশরে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হোস্টেল নির্মাণ করে মালয়শিয়ার সরকার তাদের বাছাই করা সন্তানদের মোটা অঙ্কের বৃত্তি দিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার অনেক মুসলমান বেশ চমৎকার আরবী বলতে পারেন যা আমাদের দেশে বিরল। মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টির সংখ্যা প্রায় সত্তুরটি যা অনেক আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই।



ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য থাকে জাগতিক উৎকর্ষতার পাশাপাশি আত্মিক উৎকর্ষ সাধন। একজন শিক্ষার্থী যখন উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা তথা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, আখিরাতের ভয়, তাক্বওয়া, মানুষের হক্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন তখন তার জ্ঞানের দ্বারা অপরের ক্ষতি সাধন হয় না। সে তার প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে চুরি, বদমাশী, পর্ণোগ্রাফি তৈরীতে ব্যবহার করে না। এর সত্যতা আমাদের দেশের মাদরাসা শিক্ষিতদের দিকে তাকালে পাওয়া যায়। আমি বাংলাদেশে ইভটিজিং নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ইভটিজার হিসাবে একজন মাদরাসা ছাত্রের নামও পাইনি। আবার যেসকল মেয়েরা মাদরাসায় পড়ে অথবা তাদের মত বোরকা পড়ে রাস্তায় চলাচল করে তারা ইভটিজিংয়ের শিকার হন না বললেই চলে। আমাদের দেশের থানাগুলিতে খুন, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, নারী নির্যাতনের যে রেকর্ড আছে তাতেও মাদরাসা ছাত্রদের নাম খুব একটা দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে তাদের মধ্যে হালাল হারামের জ্ঞান আছে। খারাপ কাজ করলে আখিরাতে আল্লাহ কঠিন পাকড়াও করবেন এ বিশ্বাস তাদের আছে। মাদরাসার ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আধুনিক বিষয় সমূহে ও মেডিকেল কলেজেও ভালো রেজাল্ট করছে। চাকুরীজীবনেও বেশ পারঙ্গমতা দেখাচ্ছে।



কিন্তু তারপরও আমাদের দেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় যে ত্রুটি আছে তাতে সন্দেহ নেই। এই ত্রুটিগুলো মূলত: শাসকগোষ্ঠিরা বরাবর জিইয়ে রেখেছেন জাতিকে বিভক্ত রাখার জন্য। আবার মাদরাসা ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করলেও তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে নানান ছুতায়। সরকারী চাকুরী পাওয়াতো মাদরাসা ছাত্রদের জন্য সোনার হরিণ। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মাদরাসা ছাত্র হলে রক্ষা নেই, ভাইভা পরীক্ষায় আটকিয়ে দেয়া হয়। পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠির জন্য ১৯২১ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তখন নাস্তিক্যবাদী ইসলাম বিরোধী শক্তিরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস! কালের পরিক্রমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা ছাত্রদের ভর্তির দুয়ার প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাবি প্রতিষ্ঠার বিরোধীতাকারী প্রেতাত্মারাই এখন ঢাবির নিয়ন্ত্রক!



সাধারণ শিক্ষার্থী ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রেণীবৈষম্য মূলত: মাদরাসা ছাত্রদের প্রতি সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণেই জন্ম নিয়েছে। তাই অনেকে মাদরাসা শিক্ষা মনেপ্রাণে ভালোবাসলেও নিজ সন্তানের চাকুরীর নিশ্চয়তা ও ভবিষৎ চিন্তা করে তাদের সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করান না। আর মাদরাসার অধিকাংশ ছাত্র গরীব, এর কারণ দুটি। প্রথমত, বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিকই গরীব। আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বরা বাল্যবয়সে কত অনাহারে থেকেছেন তার ইয়ত্তা নেই। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের বর্তমান গভর্ণর জনাব আতিউর রহমান ছাত্র জীবনে মাদরাসার হুজুরদের বদান্যতায় ধন্য হয়েছেন। উল্লেখ্য বদরুদ্দীন উমরের বাবাও একজন জাদরেল আলেম ছিলেন। এরকম অসংখ্য নজির আছে। বর্তমান সময়ের অনেক বাম-নাস্তিকরা হুজুরদের বোগলের তলে থেকেই বড় হয়েছেন। দ্বিতীয়ত, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা আল্লাহভীরু বেশী হয়। কারণ ধনীদের ধন যেরকম মানুষকে অহঙ্কারী করে; গরীবদের দারিদ্র তেমনি তাকে বিনয়ী করে। তাই ধার্মিক মানুষেরা তাদের সন্তানকে মাদরাসায় পাঠিয়ে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করেন। তবে সম্পদশালী লোকদের সন্তানরাও এখন মাদরাসায় পড়ে, এ সংখ্যাও কম নয়।



সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ও ইসলামী শিক্ষিতদের মধ্যকার বৈষম্য দূর করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠের চেতনার ভিত্তিতে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। তবে এদেশে তা সম্ভব নয়। অন্তত সেক্যুলারপন্থী কমরেডরা তা হতে দিবে না। বিগত জোট সরকারের আমলে একমূখী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু তা বামপন্থীরা রুখে দিয়েছে। এই সরকার আবার একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে, তবে তা সংখ্যাগরিষ্ঠের চেতনার বিপরীতে সংখ্যালঘু সেক্যুলার চেতনার ভিত্তিতে। এতে হিতে বিপরীত হবে তা হলফ করে বলা যায়। তাই মাদরাসা রক্ষায় আলেম-ওলামাদেরকেই সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে হবে। নিজেদের মধ্যের সব ভেদাভেদ দূরে ঠেলে দিয়ে একই প্লাটফর্মে দাড়াতে হবে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই। না হয় আরেকটি স্পেনের ভাগ্যবরণের প্রস্তুতি নিতে হবে।



লেখক: সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।



http://www.sonarbangladesh.com/articles/MuhammadAminulHaque

http://www.sonarbangladesh.com/article.php?ID=5434

রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১২

দরুদ শরীফের ফজিলত সমপর্কিত ৪০ হাদীস ; সংগ্রেহে রাখার মত


 الحديث الأول عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال قال رسول
الله من صلى على  صلت عليه
الملائكة ومن صلت عليه الملائكة صلى الله عليه ومن صلى الله عليه لم يبق شيءفي السموات ولا في
الأرض إلا صلى عليه





" الحديث الثاني قال رسول الله " من صلى علي صلاة واحدة أمر الله حافظيه أن
لا يكتبا عليه ذنبا ثلاثة أيام "



الحديث الثالث قال رسول الله " من صلى علي مرة خلق الله من قوله ملكا

له جناحان جناح بالمشرق وجناح بالمغرب رأسه وعنقه تحت العرش وهو يقول اللهم صل على عبدك
ما دام يصلي على نبيك "





الحديث الرابع قال رسول الله " من صلى علي مرة صلى الله عليه بها عشرا
ومن صلى علي عشرا صلى الله عليه بها مائة ومن صلى علي مائة صلى الله عليه بها ألفا ومن صلى
على الفا لم يعذبه الله بالنار "







الحديث الخامس قال رسول الله " من صلى علي مرة كتب الله له عشر



حسنات ومحا عنه عشر سيئات ورفع له عشر درجات "









الحديث السادس قال رسول الله " أتاني جبريل



يوما وقال يا محمد جئتك ببشارة لم آت بها أحدا من قبلك وهي أن الله تعالى يقول لك



من صلى عليك من أمتك ثلاث مرات غفر الله له إن كان قائما قبل أن يقعد وإن كان قاعدا غفر له قبل



أن يقوم فعند ذلك خر ساجدا لله شاكرا "







الحديث السابع قال رسول الله " من صلى علي في الصباح



عشرا محيت عنه ذنوب أربعين سنة "







الحديث الثامن قال رسول الله " من صلى علي ليلة الجمعة أو



يوم الجمعة مائة مرة غفر الله له خطئيته ثمانين سنة "







الحديث التاسع قال رسول الله " من صلى علي



ليلة الجمعة أو يوم الجمعة مائة مرة قضى الله له مائة حاجة ووكل الله به ملكا حين يدفن في قبره



يبشره كما يدخل أحدكم على أخيه بالهدية "







الحديث العاشر قال رسول الله " من صلى علي في يوم



مائة مرة قضيت له في ذلك اليوم مائة حاجة "







الحديث الحادي عشر قال رسول الله " أقربكم مني



مجلسا أكثركم علي صلاة "







الحديث الثاني عشر قال رسول الله " من صلى علي ألف مرة بشر بالجنة



قبل موته "







الحديث الثالث عشر قال رسول الله " جاءني جبريل عليه السلام وقال لي يا رسول الله لا





يصلي عليك أحد إلا ويصلى عليه سبعون ألفا من الملائكة









"

الحديث الرابع عشر قال رسول الله

"



الدعاء بعد الصلاة علي لا يرد "





الحديث الخامس عشر قال رسول الله " الصلاة علي نور على الصراط



وقال لا يلج النار من يصلي علي









الحديث السادس عشر قال رسول الله " من جعل عبادته الصلاة





علي قضى الله له حاجة الدنيا والآخرة "









الحديث السابع عشر قال رسول الله " من نسي الصلاة علي أخطأ طريق الجنة "









الحديث الثامن عشر



قال رسول الله " إن لله ملائكة في الهواء بأيديهم قراطيس من نور لا يكتبون إلا الصلاة علي وعلى أهل



بيتي "







الحديث التاسع عشر قال رسول الله " لو أن عبدا جاء يوم القيامة بحسنات أهل الدنيا ولم تكن



فيها الصلاة علي ردت عليه ولم تقبل منه "







الحديث العشرون قال رسول الله " أولى الناس بي أكثرهم



علي صلاة "







الحديث الحادي والعشرون قال رسول الله من صلى علي في كتاب ما لم تزل الملائكة



تصلي عليه لم يندرس اسمي من ذلك الكتاب "







الحديث الثاني والعشرون قال رسول الله إن لله ملائكة



سياحين في الأرض يبلغوني الصلاة علي من أمتي فأستغفر لهم









الحديث الثالث والعشرون قال رسول



الله من صلى علي كنت شفيعه يوم القيامة ومن لم يصل علي فأنا برئ منه "





الحديث الرابع والعشرون



قال رسول الله يؤمر بقوم إلى الجنة فيخطئون الطريق قالوا يا رسول الله ولم ذاك قال سمعوا اسمي ولم



يصلوا علي "





الحديث الخامس والعشرون قال رسول الله يؤمر برجل إلى النار فأقول ردوه إلى الميزان





فأضع له شيئا كالأنملة معي في ميزانه وهو الصلاة علي فترجح ميزانه وينادي سعد فلان







الحديث



السادس والعشرون قال رسول الله ما اجتمع قوم في مجلس ولم يصل علي فيه إلا تفرقوا كقوم تفرقوا



عن ميت ولم يغسلوه





الحديث السابع والعشرون قال رسول الله " إن الله تعالى وكل بقبري ملكا أعطاه



أسماء الخلائق كلها فلا يصلي علي أحد إلى يوم القيامة إلا بلغني اسمه وقال رسول الله إن فلان بن



فلانة صلى عليك



الحديث الثامن والعشرون عن أبي بكر الصديق رضي الله تعالى عنه أنه قال الصلاة على النبي أمحى



للذنوب من الماء لسواد اللوح







الحديث التاسع والعشرون قال رسول الله إن الله تعالى أوحى إلى موسى



عليه السلام أن أردت أن أكون إليك أقرب من كلامك إلى لسانك ومن روحك لجسدك فأكثر الصلاة على



النبي الأمي







الحديث الثلاثون قال رسول الله إن ملكا أمره الله تعالى باقتلاع مدينة غضب عليها فرحمها



ذلك الملك ولم يبادر إلى اقتلاعها فغضب الله عليه وأكسر أجنحته فمر به جبريل عليه السلام فشكا له



حاله فسأل الله فيه فأمره أن يصلي على النبي فصلى عليه فغفر الله له ورد عليه أجنحته ببركة الصلاة



على النبي





الحديث الحادي والثلاثون عن عائشة رضي الله تعالى عنها قالت من صلى على رسول الله



عشر مرات وصلى ركعتين ودعا الله تعالى تقبل صلاته وتقضى حاجته ودعاؤه مقبول غير مردود











الحديث الثاني والثلاثون عن زيد بن حارثة قال سألت رسول الله عن الصلاة عليه فقال صلوا علي



واجتهدوا في الدعاء وقولوا اللهم صل على محمد وعلى آل محمد







الحديث الثالث والثلاثون عن أبي



هريرة رضي الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلوا علي فإن صلاتكم علي زكاة لكم واسألوا الله لي



الوسلية





الحديث الرابع والثلاثون عن سهل بن سعد الساعدي أن النبي قال لا صلاة لمن لم يصل على



نبيه





الحديث الخامس والثلاثون عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه قال قال رسول الله رغم أنف رجل



ذكرت عنده فلم يصلي علي





الحديث السادس والثلاثون عن ابن عباس رضي الله تعالى عنهما قال قال



رسول الله من قال جزى الله عنا محمدا خيرا وجزى الله نبينا محمدا بما هو أهله فقد أتعب كاتبيه

******* ----------------------------------*****************



الحديث السابع والثلاثون عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه قال قال رسول الله لا تجعلوا بيوتكم قبورا



وصلوا علي فإن صلاتكم تبلغني حيثما كنتم







الحديث الثامن والثلاثون عن أبي هريرة رضي الله تعالى



عنه قال قال رسول الله ما من أحد يصلي علي إلا رد الله علي روحي حتى أرد عليه







الحديث التاسع



والثلاثون قال رسول الله أقربكم مني منزلا يوم القيامة أكثركم علي صلاة







الحديث الأربعون نقل الشيخ



كمال الدين الدميري رحمه الله تعالى عن شفاء الصدور لابن سبع أن النبي قال من سره أن يلقى الله



وهو عليه راض فليكثر من الصلاة علي فإنه من صلى علي في كل يوم خمسمائة مرة لم يفتقر أبدا



وهدمت ذنوبه ومحيت خطاياه ودام سروره واستجيب دعاؤه وأعطي أمله وأعين على عدوه وعلى



أسباب الخير وكان ممن يرافق نبيه في الجنان



اللهم صل على سيد المرسلين وخاتم النبيين ورسول رب العالمين سيدنا محمدصلى الله عليه وسلم



أسأ ل الله ان ان يجمعنا واياكم مع النبي صلى الله عليه وسلم في الفردوس الاعلى من الجنة



وأسأله ان يكون هذا العمل خالصآ لوجهه اللهم امين



والسسسسسلام



كيفية الصلاة والتسليم على النبي :

******************************************************

======================================





قال الله تعالى: إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً [الأحزاب:56] فالأفضل أن تقرن الصلاة والسلام سوياً استجابةً لله عز وجل فهذا هو المجزئ في صفة الصلاة عليه الصلاة والسلام.



وعن أبي محمد بن عجرة قال: خرج علينا النبي فقلت: يا رسول الله قد علمنا كيف نسلم عليك فكيف نصلي عليك؟ فقال: { قولوا اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد، كما باركت على إبراهيم وعلى آل ابراهيم إنك حميد مجيد } [متفق عليه].



وعن أبي حميد الساعد قال: قالوا يا رسول الله كيف نصلي عليك؟ قال: { قولوا اللهم صل على محمد وعلى أزواجه وذريته كما صليت على إبراهيم، وبارك على محمد وعلى أزواجه كما باركت على إبراهيم، إنك حميد مجيد } [متفق عليه].



وفي هذين الحديثين دلالة على الصفة الكاملة للصلاة على النبي .









http://www.google.com.sa/search?hl=ar&site=&q=%D9%81%D8%B6%D9%84+%D8%A7%D9%84%D8%B5%D9%84%D9%88%D8%A9+%D8%B9%D9%84%D9%89+%D8%A7%D9%84%D9%86%D8%A8%D9%89+&rlz=1R2ADSA_enSA399&oq=%D9%81%D8%B6%D9%84+%D8%A7%D9%84%D8%B5%D9%84%D9%88%D8%A9+%D8%B9%D9%84%D9%89+%D8%A7%D9%84%D9%86%D8%A8%D9%89+&aq=f&aqi=&aql=&gs_sm=e&gs_upl=6000l21079l0l22141l23l23l1l12l12l1l953l4453l3-1.3.2.2l8l0

كيفية الصلاة والتسليم على النبي


كيفية الصلاة والتسليم على النبي :

******************************************************

======================================





قال الله تعالى: إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً [الأحزاب:56] فالأفضل أن تقرن الصلاة والسلام سوياً استجابةً لله عز وجل فهذا هو المجزئ في صفة الصلاة عليه الصلاة والسلام.



وعن أبي محمد بن عجرة قال: خرج علينا النبي فقلت: يا رسول الله قد علمنا كيف نسلم عليك فكيف نصلي عليك؟ فقال: { قولوا اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد، كما باركت على إبراهيم وعلى آل ابراهيم إنك حميد مجيد } [متفق عليه].



وعن أبي حميد الساعد قال: قالوا يا رسول الله كيف نصلي عليك؟ قال: { قولوا اللهم صل على محمد وعلى أزواجه وذريته كما صليت على إبراهيم، وبارك على محمد وعلى أزواجه كما باركت على إبراهيم، إنك حميد مجيد } [متفق عليه].



وفي هذين الحديثين دلالة على الصفة الكاملة للصلاة على النبي .


শনিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১২

ঈমানের ৭৭ টি শাখা রয়েছে।

abdullah nezami bhuiya

হজরত রাসূল স·ইরশাদ করেনঃ




ঈমানের ৭৭ টি শাখা রয়েছে।·······মুসলিম শরীফ





নিজেকে একজন পূর্ণ ও খাটি মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ঈমানের এসব শাখা সমূহের উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আমল থাকতে হবে।



নিম্নে ঈমানের ৭৭ টি শাখা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হল।



১·পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে কালেমায়ে তাইয়্যেবা পড়া। -মুসলিম শরীফঃ ১/৪৭



২·আল্লাহ তা‘য়ালার উপর ঈমান আনা। -সূরা হাশরঃ ২২,২৩,২৪



৩·সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘য়ালা- একথার উপর বিশ্বাস করা। -সূরা বাকারাঃ ২৯



৪·ফেরেশতা সম্মন্ধে ঈমান আনায়ন করা। -সূরা নাবাঃ ৩৮



৫·আল্লাহর কিতাব সম্মন্ধে ঈমান রাখা। -সূরা ইউসূফঃ ২



৬·নবী-রাসূল আ·সম্মন্ধে ঈমান রাখা। -সূরা মুমিনঃ ৭৮



৭·আখিরাত সম্মন্ধে ঈমান রাখা। -সূরা মুমিনুনঃ ১১৫



৮·তাকদীর সম্পর্কে ঈমান রাখা। -সূরা ফুরকানঃ ২



৯·জান্নাতের উপর ঈমান রাখা। -সূরা নিসাঃ ১৩



১০·জাহান্নামের উপর ঈমান রাখা। -সূরা আ‘রাফঃ ৪১



১১·অন্তরে আল্লার প্রতি ভালোবাসা রাখা। -সূরা আলে ইমরানঃ ৩১,৩২



১২·আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের স·সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে বন্ধুত্ব কিংবা শত্রুতা পোষণ করা।



-মাজমাউয যাওয়াইদঃ ১/৪৮৫



১৩·রাসূল স·এর প্রতি ভালোবাসা রাখা এবং তাঁর সুন্নতকে ভালোবাসা বা সেগুলোর অনুসরণ



করা। -সূরা আলে ইমরানঃ ১৩২



১৪·ইখলাস বা একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করা। সূরা আ‘রাফঃ ২৯



১৫·গুনাহ বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের স·অবাধ্যতা থেকে তওবা করা।- সূরা বাকারাঃ ১৫৯-১৬০



১৬·অন্তরে আল্লাহর ভয় রাখা। -সূরা বাকারাঃ ১৯৭



১৭·আল্লাহর রহমতের আশা করা। -সূরা যুমারঃ ৫৩



১৮·লজ্জাশীলতা বজায়ে রাখা। -মুসলিম শরীফঃ ১/৪৭



১৯·সর্বদা আল্লাহর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। -সূরা বাকারাঃ ১৫২



২০·অঙ্গকার রক্ষা করা। -সূরা বাণী ইস্রাঈলঃ ৩৪



২১·সবর বা ধৈর্যধারণ করা। -সূরা আছরঃ ৩



২২·তাওয়াজু বা ন্রতা অবলম্বন করা। -সূরা ফুরকানঃ ৬৩



২৩·দয়াদ্র বা স্নেহশীল ও মমতামী হওয়া। -তিরমিজী -২/১৫



২৪·তাক্বদীরের উপর সন্তষ্ট থাকা। -মুসলিম শরীফ, কিতাবুল কদরঃ ২/৩৩



২৫·সকল কাজ ও ক্ষেত্রে তাওয়াক্কুল বা একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা।



-সূরা আলে ইমরানঃ ১৬০



২৬·অহংকার না করা। -মুসলিম শরীফঃ ১/৬৫



২৭·চোগলখুরী ও অযথা মনোমালিন্য বর্জন করা। -সূরা হজ্বঃ ৭৭



২৮·হাসাদ বা হিংসা বিদ্বেষ বর্জন করা। -বুখারী শরীফঃ ২/৮৯৬



২৯·ক্রোধ দমন করা। -সূরা শুরাঃ ৩৭



৩০·অন্যের অনিষ্ট সাধন ও প্রতারণা না করা। -মুসলিম শরীফঃ ১/৭০



৩১·দুনিয়ার প্রতি অত্যাধিক মায়া মুহাব্বত ত্যাগ করা। -বুখারী শরীফঃ ২/৯৪৯



৩২·কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা। -মুসলিম শরীফঃ ১/২২০



৩৩·দীনি (ইসলামী) জ্ঞান অর্জন করা। -বুখারী শরীফঃ ১/১৬



৩৪·দীনি (ইসলামী) জ্ঞান শিক্ষা দেয়া। -ইবনে মাজাহ-১৯



৩৫·আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। -তিরমিজী -২/৬৬



৩৬·আল্লাহর জিকির করা। -বুখারী শরীফঃ ২/৯৪৮



৩৭·অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা। -সূরা শুরাঃ ৩৭



৩৮·পাক-পবিত্র ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায়ে রাখা। -তিরমিজী -২/১০৭



৩৯·সালাত (নামাজ) আদায় করা ও সামাজে প্রতিষ্ঠা করা। -সূরা মুজ্জামিলঃ ২০



৪০·যথাযথভাবে যাকাত দেয়া। -সূরা মুজ্জামিলঃ ২০



৪১·সিয়াম (রোজা) পালন করা। -সূরা বাকারাঃ ১৮৫



৪২·হজ্ব পালন করা। -সূরা আলে ইমরানঃ ৯৭



৪৩·ইতিকাফ করা। -মুসলিম শরীফঃ ১/৩৭১



৪৪·ইসলামের জন্য প্রয়োজনে হিজরত করা। -সূরা বাকারাঃ ২১৮



৪৫·জায়েজ মানত পুরা করা। -বুখারী শরীফঃ ২/৯৯১



৪৬·জায়েজ শপথ (কসম) রক্ষা করা। -সূরা মায়িদাঃ ৮৯



৪৭·কাফ্‌ফারা আদায় করা। -সূরা মায়িদাঃ ৯৫



৪৮·কুরবাণী করা। -সূরা কাউছারঃ ২



৪৯·সতর ঢাকা। -তিরমিজী -২/১০৭



৫০·মৃত্যুব্যক্তির দাফন কাফন করা। -বুখারী শরীফঃ ১/১৬৬



৫১·ঋণ পরিশোধ করা। -সূরা বাকারাঃ ২৮২



৫২·ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা বজায়ে রাখা। -তিরমিজী -১/২৩০



৫৩·সত্য সাক্ষ্য দেয়া। -সূরা বাকারাঃ ২৮৩



৫৪·বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষা করা। -সূরা মু‘মীনুনঃ ৫-৬



৫৫·পরিবারের সদস্যদের হক আদায় করা। -তিরমিজী -২/১৮



৫৬·পিতা-মাতার খিদমত করা। -সূরা নিসাঃ ৩৬



৫৭·সন্তান লালন পালন করা। -সূরা তাহরীমঃ ৬



৫৮·আত্নীয়তা রক্ষা করা। -মুসলিম শরীফঃ ২/৩১৫



৫৯·মনিবের আদেশ-নিষেধ মান্য করা। -সূরা নিসাঃ ৫৯



৬০·ন্যায় বিচার করা। -সূরা মায়িদাঃ ৪২



৬১·সহীহ ইসলামী সংগঠনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও আল্লাহর পথে জিহাদ করা।



-সূরা বাকারাঃ ২৪৪



৬২·ইসলামী রাষ্ট্র প্রধানের আনুগত্ব করা। -সূরা নিসাঃ ৫৯



৬৩·দু‘পক্ষের কলহ মিটিয়ে দেয়া। -সূরা হুজরাতঃ ৯



৬৪·সৎ কাজে পরস্পর সহযোগিতা করা। -সূরা মায়িদাঃ ২



৬৫·সৎ কাজের আদেশ করা। -সূরা তাওবাঃ ৭১



৬৬·অসৎ কাজে বাধা দেয়া। -সূরা তাওবাঃ ৭১



৬৭·হদ বা ইসলামী দন্ড বিধান (রাষ্ট্রিয়ভাবে) বাস্তবায়ন করা। -ইবনে মাযাহঃ ১৮২



৬৮·ইসলামী শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। -মুসলিম শরীফঃ ১/৫১



৬৯·আমানতদারী রক্ষা করা। -সূরা মূমীনুনঃ ৮



৭০·মানুষকে করজে হাসানা দেয়া। -সূরা হাদীদঃ ১১



৭১·পাড়া প্রতিবেশীর সাথে সদ্বব্যবহার করা। -বুখারী শরীফঃ ২/৯৫৯



৭২·অর্থ সম্পদের সদ্বব্যবহার করা। -সূরা আ‘রাফঃ ৩১



৭৩·সালামের উত্তর দেয়া। -সূরা নিসাঃ ৮৬



৭৪·হাঁচি দাতার উত্তর দেয়া। -বুখারী শরীফঃ ১/১৬৬



৭৫·কাউকে কোন প্রকার কষ্ট না দেয়া। -বুখারী শরীফঃ ১/৬



৭৬·ইসলামে অবৈধ খেলাধুলা ও হাসি ঠাট্টা না করা। -সূরা মায়িদাঃ ৯০



৭৭·রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেয়া। -মুসলিম শরীফঃ ১/৪৭


http://www.islamandlife.org/cms.php?menu_id=124


 

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১২

শয়তান সম্পর্কে মানুষকে আল্লাহর সতর্কবাণী

مولانا عبد الله نظامى  ---  مدبر و مؤسس نور الغنى اسلامى اكاديمى

মানুষের পেছনে লেগে এ দায়িত্বই পালন করে শয়তান। মানুষকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের সহজ-সরল-সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত ও বিচ্যুত করে তার প্রকৃত মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন থেকে তাকে নিচে নামিয়ে দেয়াই শয়তানের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। এর জন্যে সে মরিয়া হয়ে কাজ করে। এটাই তার জীবনের একমাত্র প্রতিজ্ঞা, একমাত্র অঙ্গিকার।




কিন্তু মানুষ তার এই স্বঘোষিত সুস্পষ্ট শত্রুর বিষয়ে অচেতন, অসতর্ক ও গাফিল। যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা নবী রসূলগণের মাধ্যমে মানুষকে শয়তান সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন।







ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ



‘তারপর আমি তাকে নামিয়ে দিই নিচুদের চাইতেও নিচে।’ (সূরা আত তীন : ৫)



শয়তানের পদাংক অনুসরণ না করতে, তার আনুগত্য ও দাসত্ব না করতে :



يَا بَنِي آدَمَ لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا ۗ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ







অর্থ : হে আদম সন্তানেরা (সতর্ক হও)! শয়তান যেনো ধোকা প্রতারণার (ফবপবরাব) মাধ্যমে তোমাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন থেকে বিচ্যুত করে) ভুল পথে পরিচালিত করতে না পারে, যেভাবে সে (ধোকা প্রতারণার মাধ্যমে) তোমাদের (আদি) পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল। তাদের পরস্পরকে তাদের গোপন অংগ দেখানোর জন্যে সে তাদের বিবস্ত্র করে দিয়েছিল। সে এবং তার দলবল এমনভাবে (বা এমন স্থান থেকে) তোমাদের দেখতে পায় যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাওনা। আমি শয়তানগুলোকে সেই সব লোকদের অলি (অভিভাবক) বানিয়ে দিয়েছি, যারা ঈমান আনেনা, ঈমানের পথে চলেনা। (সূরা ৭ আল আ’রাফ : আয়াত ২৭)



وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ



অর্থ : তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা, নিশ্চয়ই সে তোমাদের ডাহা দুশমন। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ১৬৮)



وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ



অর্থ : (হে মানুষ!) শয়তান যেনো (সত্য-সঠিক-সরল পথে চলতে) তোমাদের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে না পারে। জেনে রাখো, সে তোমাদের সুস্পষ্ট শত্রু। (সূরা ৪৩ যুখরুফ : আয়াত ৬২)



يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِاللَّهِ الْغَرُورُ إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ



عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا ۚ إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ



অর্থ : হে মানুষ! নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা হক (সত্য); সুতরাং এই পৃথিবীর জীবন যেনো কিছুতেই তোমাদের প্রলুব্ধ ও প্রতারিত না করে এবং সেই মহা প্রতারক (শয়তান)ও যেনো আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের ধোকায় না ফেলে। শয়তান তো তোমাদের ডাহা শত্রু। সুতরাং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করো। সে তো তার অনুসারীদের (এমন সব কাজের) আহবান জানায়, যাতে তারা জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়ে যায়। (সূরা ৩৫ ফাতির : আয়াত ৫-৬)



মহান আল্লাহ এসব অকাট্য ও বিবেক জাগ্রতকারী সতর্কবাণী দ্বারা কি মানুষ শয়তানের ধোকা, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক হবেনা?



২.শয়তান আল্লাহর অবাধ্য, মানুষের চরম দুশমন এবং মহাপ্রতারক



শয়তান সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। কারণ যে ব্যক্তি শত্রুর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেনা, সে সহজেই শত্রুর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। দেখুন শয়তান সম্পর্কে মহান আল্লাহ কী বলেন :



১. শয়তান আল্লাহর চরম অবাধ্য : إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَـٰنِ عَصِيًّا ‘শয়তান দয়াময় রহমানের চরম অবাধ্য-নাফরমান।’ (সূরা মরিয়ম : আ. ৪৪)



২.শয়তান আল্লাহর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ : وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا ‘শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ২৭)



৩.শয়তান মানুষের স্বঘোষিত সুস্পষ্ট দুশমন : ِاِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ‘নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের সুস্পষ্ট শত্রু।’ (সূরা ১২ ইউসুফ : আয়াত ৫)



৪.শয়তান মানুষের জন্যে মহাপ্রবঞ্চক : وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنسَانِ خَذُولًا ‘অবশ্যি শয়তান মানুষের জন্যে মহাপ্রবঞ্চক, মহা ধোকাবাজ।’ (সূরা ২৫: ২৯)







৫.শয়তান মুমিনদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায় : إِنَّمَا ذَ‌ٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ



‘এ হলো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়।’ (সূরা ৩ : ১৭৫)



৬.শয়তানের সংকল্প মানুষকে চরম বিপথগামী করা : وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا : ‘শয়তান তাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত করে বহুদূর নিয়ে যেতে চায়।’ (সূরা ৪ আন নিসা : আয়াত ৬০)



৭.মানুষের সামনে শয়তানের সব প্রতিশ্রুতিই প্রতারণা : وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا : ‘শয়তানের সমস্ত ওয়াদাই প্রতারণা আর ধোকাবাজি।’ (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ৬৪)



৮.শয়তান মহাপ্রতারক : وَلاَ يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغُرُوْرَ ‘মহাপ্রতারক যেনো আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে। (সূরা লোকমান : ৩৩ ; সূরা ফাতির : ৫)



৩. শয়তানের পরিচয়







আরবি ভাষায় শয়তান (شَيْطَانٌ) মানে- সীমালংঘনকারী, দাম্ভিক, স্বৈরাচারি।১ এই বৈশিষ্ট্যের জিন এবং মানুষ উভয়ের জন্যেই শয়তান পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। কুরআন মজিদে উভয়ের জন্যে শয়তান পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, সূরা আল বাকারার ১৪ নম্বর আয়াতে ইসলামের বিরুদ্ধাচারী নেতাদের শয়তান বলা হয়েছে। شَيْطَانٌ-এর বহুবচন شَيَاطِيْنٌ। শয়তান শব্দটি একটি পরিভাষা হিসেবে প্রাচীন কাল থেকেই সকল ধর্মের লোকদের কাছে একটি সুপরিচিত শব্দ। এ শয়তান জিনদের অন্তরভুক্ত২। শয়তান কথাটি সর্বপ্রথম সেই জিনটির জন্যে ব্যবহার করা হয়েছে, যে আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্য করে প্রথম মানুষ আদম আলাইহিস্ সালামকে সাজদা করতে অস্বীকৃতি জানায়। কুরআন মজিদে শয়তান শব্দটি একবচন ও বহুবচনে ৮৮ বার ব্যবহৃত হয়েছে।



শয়তানকে কুরআন মজিদে ইবলিসও বলা হয়েছে।৩ بَلَسٌ ও اِبْلاَسٌ শব্দমূল থেকে اِبْلِيْسٌ শব্দটি এসেছে। এর অর্থ হলো, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাওয়া, ভয়ে ও আতংকে নিথর হয়ে যাওয়া, দু:খে ও শোকে মনমরা হয়ে যাওয়া, সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে সাহস হারিয়ে ফেলা এবং হতাশা ও ব্যর্থতার ফলে মরিয়া (desperate) হয়ে উঠা।







শয়তানকে ইবলিস বলার কারণ হলো, হতাশা ও নিরাশার ফলে তার আহত অহমিকা প্রবল উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে মরণ খেলায় নেমে সব ধরণের অপরাধ সংঘটনে উদ্যত হয়।৪ কুরআন মজিদে ইবলিস শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১ বার।



শয়তানকে কুরআন মজিদে খান্নাসও বলা হয়েছে।৫ خَنَّاسٌ শব্দটি خُنُوْسٌ শব্দমূল থেকে নির্গত হয়েছে। এর অর্থ- সামনে এসে আবার পিছিয়ে যাওয়া, প্রকাশ হয়ে আবার গোপন হয়ে যাওয়া। খান্নাস আধিক্যবোধক শব্দ। সুতরাং এর অর্থ বারবার সামনে আসা এবং পিছিয়ে যাওয়া, বারবার প্রকাশ হওয়া এবং গোপন হয়ে যাওয়া।



শয়তানকে খান্নাস বলা হয়েছে এ কারণে যে, সে বারবার এসে প্ররোচনা দেয় এবং বারবার পিছিয়ে এবং লুকিয়ে যায়। এভাবে সে প্ররোচনা দিতেই থাকে। ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন : মানুষ যখন গাফিল ও অসতর্ক-অসচেতন হয়, তখনই শয়তান এসে তাকে প্ররোচনা ও ধোকা দেয়; কিন্তু যখনই সে সতর্ক হয় এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান পিছিয়ে যায়, লুকিয়ে যায়। এ কারণেই শয়তানকে খান্নাস বলা হয়েছে।৬ কুরআন মজিদে খান্নাস শব্দ ব্যবহার হয়েছে ১ বার।



কুরআন মজিদে শয়তানকে আল গারুর (اَلْغَرُوْرٌ)ও বলা হয়েছে। এর শব্দমূল হলো গরর (غَرَرٌ)। গরর মানে- ধোকা-প্রতারণা। আল গারূর মানে- মহা ধোকাবাজ, মহাপ্রতারক। কুরআন মজিদে ৩ স্থানে শয়তানকে আল গারূর বলা হয়েছে।



৪.শয়তানের পূর্ব ইতিহাস







কুরআন মজিদের সূরা কাহাফের ৫০ (পঞ্চাশ) নম্বর আয়াতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, ইবলিস শয়তান জিন গোত্রীয়। আর জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে। সুতরাং শয়তান আগুনের তৈরি জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত।



মুফাস্সির এবং ঐতিহাসিক ইবনে জারির তাবারি এবং ইবনে কাছির তাঁদের তফসির এবং ইতিহাস গ্রন্থাবলীতে সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. , ইবনে মাসউদ রা. এবং তাবেয়ী হাসান বসরি, তাউস, সায়ীদ ইবনে মুসাইয়্যেব, সা’দ ইবনে মাসউদ, শহর ইবনে হোশেব, কাতাদা প্রমুখ থেকে শয়তান ইবলিসের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। তাঁদের বর্ণনার সংক্ষিপ্ত সার হলো :



মানুষের পূর্বে আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো জিন জাতি। তারা ছিলো আগুনের তৈরি এবং দীর্ঘজীবী। একসময় এসে তারা পারস্পারিক বিবাদ বিসম্বাদে পৃথিবীকে চরম বিপর্যস্ত করে তোলে। তাদের দুষ্কর্মে ও ফিতনা ফাসাদে ভরে যায় পৃথিবী। তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীর কর্তৃত্ব থেকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ফেরেশতাদের পাঠান তাদের কর্তৃত্ব ধ্বংস করতে এবং তাদের বিতাড়িত করতে। ফেরেশতারা এসে জিনদের একদলকে ধ্বংস করে দেন, কিছু জিনকে সমুদ্রের দিকে তাড়িয়ে দেন আর কিছু জিনকে তাড়িয়ে দেন পাহাড় পর্বতের দিকে। এভাবে মহান আল্লাহ পৃথিবী পরিচালনার কর্তৃত্ব থেকে জিনদের উচ্ছেদ করেন এবং তাদের কর্তৃত্বের ক্ষমতা বিনাশ করে দেন।



এই ফেরেশতাদল পৃথিবী থেকে ফিরে যাবার সময় আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে একটি জিন শিশুকে সাথে করে নিয়ে যায়। তার নাম ছিলো আযাযিল। সে ফেরেশতাদের সাথে বসবাস করতে থাকে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত বন্দেগির ক্ষেত্রে ফেরেশতাদের গুণ বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। এভাবে সে ফেরেশতাদের সাথে মিশে যায়। পরবর্তীকালে এই আযাযিলই শয়তান এবং ইবলিস হিসেবে পরিচিত হয়।৭



৫.ইবলিস আল্লাহর হুকুম সত্ত্বেও আদমকে সাজদা করেনি



পৃথিবী থেকে জিনদের কর্তৃত্ব বিলুপ্ত করার পর মহান আল্লাহ ঘোষণা করলেন :



إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً



অর্থ : আমি পৃথিবীতে (নতুন করে) প্রতিনিধি/আরেকটি প্রজন্ম সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ৩০)



অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্যে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্যে আল্লাহ একটি নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করার মনস্থ করলেন। এ প্রজাতির নাম দিলেন তিনি ‘মানুষ’।র প্রতিনিধিত্ব করার সব জ্ঞান দান করলেন তিনি আদমকে। পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বের কর্তৃত্ব পরিচালনার জন্যে প্রয়োজন ফেরেশতাদের সহযোগিতা। তাই মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের হুকুম করলেন আদমকে সাজদা করতে। অর্থাৎ আদম ও তার সন্তানদের আনুগত্য করার প্রতীকি প্রমাণ পেশ করতে। ফেরেশতারা সবাই আদমকে সাজদা করে। কিন্তু সাজদা করতে অস্বীকৃতি জানায় ইবলিস :



ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السَّاجِدِيْن



অর্থ : অতপর আমরা ফেরেশতাদের বললাম : ‘আদমের উদ্দেশ্যে সাজদা করো।’ তখন সবাই সাজদা করলো ইবলিস ছাড়া। সে সাজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলোনা। (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ১১)



وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ



অর্থ : আমরা যখন ফেরেশতাদের আদেশ করলাম : ‘তোমরা সাজদা করো আদমকে।’ তখন সাজদা করলো সবাই; ইবলিস্ ছাড়া। (সূরা ০২ আল বাকরা : আয়াত ৩৪; সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ৬১; সূরা ১৮ আল কাহাফ : আয়াত ৫০)



فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ إِلَّا إِبْلِيسَ



অর্থ : তখন সাজদা করলো ফেরেশতারা সকলেই ইবলিস্ ছাড়া। (সূরা ১৫ আল হিজর : আয়াত ৩০-৩১; সূরা ৩৮ সোয়াদ : আয়াত ৭৩-৭৪)



আল্লাহ ইবলিসকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার নির্দেশ সত্ত্বেও কোন্ জিনিস তোমাকে সাজদা থেকে বিরত রেখেছে?



قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ



অর্থ : সে বললো : আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আগুন থেকে আর ওকে সৃষ্টি করেছো মাটি থেকে। (সূরা ৭ আল আ’রাফ : আয়াত ১২)



.মহান আল্লাহ ইবলিসকে বাদ দিয়ে নয়, তাকে সহই ফেরেশতাদের সাজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাইতো সাজদা না করার কারণে তিনি ইবলিসকে প্রশ্ন করলেন :



قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ



অর্থ : আল্লাহ বললেন : (হে ইবলিস) আমি নির্দেশ দেয়া সত্তেও কোন্ জিনিস তোমাকে সাজদা করা থেকে বিরত রেখেছে? (সূরা ৭ আল আরাফ : আয়াত ১২)



قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ



অর্থ আল্লাহ বললেন : হে ইবলিস ! তোমার কী হলো যে, তুমি সাজদা কারীদের অন্তর্ভুক্ত হলেনা? (সূরা ১৫ আল হিজর : আয়াত ৩২)



قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ ۖ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ



অর্থ : আল্লাহ বললেন : হে ইবলিস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি , তাকে সাজদা করতে কিসে তোমাকে বাধা দিলো? তুমি কি ঔদ্ধত্য দেখালে, নাকি তুমি উচু মর্যাদার কেউ? (সূরা ৩৮ সোয়াদ : আয়াত ৭৫)



এখন একথা পরিষ্কার হয়ে গেলো, মহান আল্লাহ ইবলিসকে সহই ফেরেশতাদেরকে সাজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা না হলে ইবলিসের কাছে সাজদা না করার কৈফিয়ত তলব করার কোনো কারণ ছিলনা।



২.দ্বিতীয় যে বিষয়টি ইবলিসকে সাজদা করার নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত প্রমাণ করে, সেটা হলো স্বয়ং ইবলিসের স্বীকৃতি এবং অস্বীকৃতি।



অর্থাৎ এ নির্দেশ যে ইবলিসের উপরও বর্তিয়েছিল, সেটা ইবলিস নিজেও স্বীকার করে নিয়েছিল। সে আল্লাহর কৈফিয়ত তলবের জবাবে একথা বলে নাই যে, নির্দেশ তো আমাকে দেন নাই, দিয়েছেন ফেরেশতাদেরকে।



তাছাড়া নির্দেশ পালনে তার অস্বীকৃতিও প্রমান করে যে, তাকেও সাজদা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সে আল্লাহর নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানায় এবং যুক্তি প্রদর্শন করে। দেখুন আল্লাহ্র কৈফিয়ত তলবের জবাবে তার বক্তব্য :



قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ ۖ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ



অর্থ : সে (জবাবে) বললো : (আমি তাকে সাজদা করতে পারিনা, কারণ) আমি তার চাইতে উত্তম-শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন দিয়ে আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি দিয়ে। (সূরা ৭ আ’রাফ: আয়াত ১২; সুরা ৩৮ সোয়াদ: আয়াত ৭৬)



قَالَ أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا ؟



অর্থ : (জবাবে ইবলিস) বললো : আমি কি এমন একজনকে সাজদা করবো যাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি দিয়ে? (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ৬১)



قَالَ لَمْ أَكُن لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ



অর্থ : সে বললো : গন্ধযুক্ত কাদার ঠনঠনে মাটি দিয়ে আপনি যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আমি তাকে সাজদা করতে পারিনা। (সূরা ১৫ হিজর : আয়াত ৩৩)



এখন একথা দিবালোকের মতোই পরিষ্কার হয়ে গেলো, ইবলিস কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাড়াই একেবারে সহজ সরলভাবে বুঝে নিয়েছিল, সেও সাজদা করার নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। সুতরাং যার ব্যাপারে প্রশ্ন, তারই যখন কোনো প্রশ্ন নেই, তখন আমি আপনি প্রশ্ন তোলার কে?



৭. ইবলিস জেনে বুঝেই আল্লাহর হুকুম পালন করতে অস্বীকার করে



একথা পরিষ্কার, ইবলিসও সাজদা করার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। জেনে বুঝেই সে আল্লাহর আদেশ পালন করেনি এবং আল্লাহর আদেশ পালন করতে অস্বীকার করে। তার এই অস্বীকৃতির ধরণ কেমন ছিলো? এ প্রসঙ্গে দেখুন আল্লাহর বাণী :



أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ



অর্থ : সে (আল্লাহ্র নির্দেশমতো আদমকে সাজদা করতে) অস্বীকৃতি জানায়, অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ৩৪; সূরা ৩৮ সোয়াদ : আয়াত ৭৪)



أَبَىٰ أَن يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ



অর্থ : সে সাজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করে। (সূরা ১৫ হিজর : আয়াত ৩১)



كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ



অর্থ : সে ছিলো জিন প্রজাতির। সে তার প্রভুর নির্দেশ মান্য করতে অস্বীকার করে এবং সীমালংঘন করে। (সূরা ১৮ আল কাহাফ : আয়াত ৫০)



এখানে ইবলিসের সাজদা না করার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি, অহংকার-দাম্ভিকতা, কুফুরি এবং সীমালংঘনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জেনে বুঝে হুকুম অমান্য করার ক্ষেত্রেই এ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে।



৮. শয়তানের গুরুতর অপরাধ সমূহ



আদমকে সাজদা করার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম অমান্য করে শয়তান তার মর্যাদার আসনে থেকে এমন সব গুরুতর অপরাধ করে বসলো, যা চরম অমার্জিত ও ক্ষমাহীন। তার সেই গুরুতর অপরাধ সমূহ হলো :



১.সে আল্লাহ্র হুকুম পালন করতে অস্বীকার করে এবং



২.সে অহংকার, দাম্ভিকতা ও হঠকারীতা প্রদর্শন করে :



أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ



অর্থ : সে আল্লাহর আদেশ পালন করতে অস্বীকার (refuse) করে, অহংকার-দাম্ভিকতা-হঠকারিতা প্রদর্শন করে। (সূরা ২ বাকারা : আয়াত ৩৪)



৩.সে আল্লাহর হুকুম অমান্য করে সীমালংঘন করে এবং অবাধ্য হয় :



فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ



অর্থ : সে তার প্রভুর হুকুম অমান্য করে সীমালংঘন করে । (সূরা ১৮ কাহাফ : ৫০)



৪.সে নিজেই নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করে :



قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ



অর্থ : সে বলে : আমি তার (আদমের) চাইতে শ্রেষ্ঠ। (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ১২)



৫.সে অনুশোচনা করেনি; বরং নিজের হঠকারিতার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে :



قَالَ أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا



অর্থ : সে বলে : আমি কি এমন একজনকে সাজদা করবো, যাকে তুমি সৃষ্টি করেছো কাদামাটি থেকে? (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ৬১)



নিজের অবাধ্যতার পক্ষে সে আরো যুক্তি প্রদর্শন করে :



خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ



অর্থ: তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আগুন থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছো কাদামাটি থেকে। (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ১২)



قَالَ لَمْ أَكُن لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ



অর্থ: সে বলে : মানুষকে সাজদা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, যাকে তুমি সৃষ্টি করেছো শুকনো ঠনঠনে পঁচা মাটি থেকে। (সূরা ১৫ আল হিজর : আয়াত ৩৩)



৬.সে আল্লাহ্র হুকুমের বিপক্ষে যুক্তিবুদ্ধি প্রয়োগ করে : আল্লামা ইবনে জারির তাবারি এবং আল্লামা ইবনে কাছির তাঁদের তফসিরে উল্লেখ করেছেন, প্রখ্যাত তাবেয়ী মুফাস্সির হাসান বসরি রহ. বলেছেন :



قَاسَ اِبْلِيْسُ وَهُوَ اَوَّلَ مَنْ قَاسَ



অর্থ: ইবলিস তার যুক্তি বুদ্ধি প্রয়োগ করে (নিজেকে শ্রেষ্ঠ ধারণা করে) এবং ইবলিসই সর্বপ্রথম দলিল (evidence)-এর বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে।



প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সীরিন বলেন :



اَوَّلَ مَنْ قَاسَ اِبْلِيْسُ وَمَا عَبَدَتِ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ اِلاَّ بِالْمَقَائِسِ



অর্থ: (দলিল-প্রমাণের বিপক্ষে) সর্বপ্রথম যুক্তি বুদ্ধি প্রয়োগকারী হলো ইবলিস। আর যুক্তি বুদ্ধি প্রয়োগ করেই লোকেরা চন্দ্র সূর্যের উপাসনা করে।



আল্লামা ইবনে কাছির বলেন :



قَاسَ اِبْلِيْسُ قِيَاسًا فَاسِدًا فِىْ مُقَابَلَةِ النَّصِ



অর্থ: এভাবেই দলিল-প্রমাণ (evidence)-এর বিপক্ষে ইবলিস তার ভ্রান্ত যুক্তি বুদ্ধি প্রয়োগ করে।১



৭.সে কুফুরির পথকে আঁকড়ে ধরে : শয়তান ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করে ভালোভাবেই এ জ্ঞান অর্জন করেছিল যে, আল্লাহর হুকুম অমান্য করা মানেই কুফুরি। ফলে সে জেনে বুঝেই কুফুরির পথ অবলম্বন করে :



إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ



অর্থ: তবে সাজদা করেনি ইবলিস। সে হঠকারিতা প্রদর্শন করে এবং কাফিরদের অন্তরভুক্ত হয়ে যায়। (সূরা ৩৮ সোয়াদ : আয়াত ৭৪ ; সূরা ২ বাকারা : আয়াত ৩৪)



৮.সে নিজের ভ্রষ্টতার জন্যে আল্লাহকে দায়ী করে : শয়তানের সবচেয়ে বড়, জঘন্য ও ঘোরতর অপরাধ হলো, সে যে উপরোক্ত অপরাধগুলো সংঘটিত করে ভ্রষ্টতার পথ অবলম্বন করলো, এজন্যে সে নিজের অপরাধ স্বীকার না করে আল্লাহকে দায়ী করে (নাউযুবিল্লাহ) :



قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ



অর্থ: সে বলে, যেহেতু তুমি আমাকে ভ্রষ্টতা ও ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছো, সে জন্যে আমিও এখন থেকে তাদের (আদম সন্তানদের) বিপথগামী করার জন্যে তোমার সিরাতুল মুস্তাকিম-এ ওঁৎ পেতে বসে থাকবো। (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ১৬)







৯. চিরতরে ধিকৃত ও অভিশপ্ত হলো শয়তান

=============================



এসব গুরুতর অপরাধের ফলে শয়তান চিরতরে অভিশপ্ত হলো এবং অনিবার্যভাবে সাব্যস্ত হলো জাহান্নামের জ্বালানি :







قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ



وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ



অর্থ : আল্লাহ বললেন : তুই এখান থেকে বের হয়ে যা, তুই ধিকৃত (outcust)। আর বিচার দিবস পর্যন্ত তোর উপর অভিশাপ (curse)। (সূরা ১৫ আল হিজর : আয়াত ৩৪-৩৫; সূরা ৩৮ সোয়াদ : আয়াত ৭৭-৭৮)



সাথে সাথে তাকে একথাও বলে দেয়া হলো :



فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ



অর্থ : বেরিয়ে যা, এখন থেকে তুই নিচুদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আ’রাফ : আয়াত ১৩)



قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَّدْحُورًا



অর্থ : তিনি বললেন : তুই ওখান থেকে বেরিয়ে যা অপমানিত ও ধিকৃত হয়ে।’ (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ১৮)







১০. আদম সন্তানদের আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করার অংগিকার

============================================



শয়তানকে চিরতরে ধিকৃত ও অভিশপ্ত ঘোষণা করার পর সে চিরতরে নিরাশ হয়ে গেলো। কিন্তু সে নিজের অপরাধের জন্যে নত না হয়ে আরো ঔদ্ধত্যে মেতে উঠলো। সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে আদম এবং আদম সন্তানদের বিপথগামী করার জন্যে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ (সুযোগ) প্রার্থনা করলো :



قَالَ أَنظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ



অর্থ : সে বললো : ‘পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন : যা তুই অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (আল কুরআন, সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ১৪-১৫; সূরা ১৫ হিজর : আয়াত ৩৬-৩৭; সূরা ৩৮ সোয়াদ : আয়াত ৭৯-৮০)



মহান আল্লাহ তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সে প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। আল্লাহ তার অবকাশ মঞ্জুর করার সাথে সাথে সে অংগিকার এবং চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বললো :



فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ



অর্থ : তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করেছো, তেমনি আমিও এখন থেকে তাদের (আদম ও তার সন্তানদের বিপথগামী করার জন্যে) তোমার সিরাতুল মুস্তাকিমে ওঁৎ পেতে বসে থাকবো। সামনে পেছনে, ডানে বাঁয়ে সবদিক থেকে তাদের ঘেরাও করে নেবো। ফলে তাদের অধিকাংশকেই তুমি কৃতজ্ঞ (তোমার অনুগত) পাবেনা। (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ১৬-১৭)



قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ ক্স إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ



অর্থ : সে (ইবলিস) বললো : আপনার ক্ষমতার শপথ (By your might) আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বো, আপনার একান্ত অনুগত দাসদের ছাড়া। (আল কুরআন, সূরা ৩৮ সোয়াদ : আয়াত ৮২-৮৩)



ইবলিসের চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তাকে জানিয়ে দিলেন : তুই যাকে যাকে পারিস পদস্খলনের দিকে ডাক, অশ্বারোহী পদাতিক বাহিনীর আক্রমণ চালা, ধন সম্পদ সন্তান সন্তুতিতে তাদের সাথে শরিক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতির জালে আটকে ফেল- তোর সব প্রতিশ্রুতিই তো ধোকাবাজি আর প্রতারণা। জেনে রাখ :



إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ ۚ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ وَكِيلاً



অর্থ : আমার প্রকৃত দাসদের উপর তোর কোনো কর্তৃত্ব অর্জিত হবেনা। (হে মুহাম্মদ!) ভরসা করার জন্যে তোমার প্রভুই যথেষ্ট। (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ৬৫)



আল্লাহ শয়তানকে আরো বলে দিলেন :



لَمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ



অর্থ : আদম সন্তানদের মধ্যে যারাই তোর অনুসরণ করবে, তোর সাথে তাদেরকে দিয়ে আমি জাহান্নাম ভর্তি করবো। (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ১৮)







মানুষকে বিপথগামী করার জন্যে শয়তানের কৌশল :

====================================







১.শয়তান মানুষের মনে কুপ্ররোচনা সৃষ্টি করে :

=================================



يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ



অর্থ : সে (খান্নাস হয়ে) কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। (সূরা ১১৪ নাস : আয়াত ৫)





২.সে খান্নাসি কৌশল অবলম্বন করে :

==================================



مِنْ شَرِّ الْوَسْوَسِ الْخَنَّاسِ



অর্থ : ‘আমি আশ্রয় চাই খান্নাসের কুমন্ত্রণার ক্ষতি থেকে।’ অর্থাৎ সে এতোটা বদ যে, বারবার সামনে এসে কুমন্ত্রণা দেয় এবং পিছিয়ে যায়, বারবার প্রকাশ হয়ে কুমন্ত্রণা দেয় এবং গোপন হয়ে যায়। (সূরা ১১৪ আন্ নাস : আয়াত ৪)





৩.শয়তান মানুষকে প্রতিশ্র“তি দেয় এবং মানুষের মনে মিথ্যা আশা-বাসনা সৃষ্টি করে :

=====================================================



يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ ۖ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا



অর্থ : সে প্রতিশ্র“তি দেয় এবং মানুষের মনে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে। আসলে শয়তান তাদের যে ওয়াদা দেয় তা প্রতারণা মাত্র। (সূরা ৪ আন নিসা : আয়াত ১২০)







৪.শয়তান মানুষের মন্দ কাজকে তাদের কাছে শোভনীয় ও মনোহরী (fair seeming) করে তোলে :

=====================================================



وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ



অর্থ : শয়তান তাদের মন্দ কাজসমূহকে তাদের দৃষ্টিতে চমৎকার ও মনোহরী করে তোলে এবং এভাবে তাদের সরল সঠিক পথ অবলম্বনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। (সূরা ২৯ আনকাবুত : আয়াত ৩৮)





৫.মানুয যেনো দান না করে সেজন্যে শয়তান মানুষকে দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং কার্পণ্যে উদ্বুদ্ধ করে :

======================================================



اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاءِ



অর্থ : শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং কৃপণতার আদেশ করে। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ২৬৮)



৬.শয়তান মানুষকে মাদক, জুয়া, আস্তানা এবং ভাগ্য নির্ণয়ের খেলায় লিপ্ত করে :

======================================================



يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ



অর্থ : হে ঈমানওয়ালা লোকেরা! জেনে রাখো, মদ (মাদক), জুয়া, আস্তানা (বেদী), ভাগ্য নির্ণয়ের শর -এসবই শয়তানের নোংরা কর্ম। সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন করো, সফলতা অর্জন করবে। (সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৯০)



৭.শয়তান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক শত্র“তা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে :

==================================================



إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ



অর্থ: শয়তান মাদক ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। তবু কি তোমরা (এসব শয়তানি কর্ম থেকে) নিবৃত হবেনা। (সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৯১)





৮.শয়তান সুদী কারবারে লিপ্ত করে :

===============================



الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ



অর্থ: যারা সুদ খায়, তারা অবশ্যি ঐ ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান তার স্পর্শ দ্বারা সুস্থ জ্ঞান-বুদ্ধি শূন্য করে দিয়েছে। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ২৭৫)





৯.শয়তান মানুষকে আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত করে :

======================================



وَمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيدٍ



অর্থ: কতক লোক এমন আছে যারা অজ্ঞতা নিয়ে আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের। (সূরা ২২ হজ্জ: আয়াত ৩)





১০.শয়তান মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কর্মে প্রলুব্ধ করে :

=====================================



وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ



অর্থ: যে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে, সে জেনে রাখুক, শয়তান অশ্লীল ও মন্দ কর্মের আদেশ দেয় (প্রলুব্ধ করে)। (সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ২১)





১১.যারা হিদায়াতের পথ দেখতে পেয়েও তা পরিত্যাগ করে, শয়তান তাদের কাজকে শোভন করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেয় :

=========================================================



إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَىٰ أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى ۙ الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَىٰ لَهُمْ



অর্থ: হিদায়াত সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত ও প্রমাণিত হবার পর যারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান তাদেরকে তাদের এ আচরণ শোভন ও চমৎকার করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা আকাংখায় লিপ্ত করে রাখে। (সূরা ৪৭ মুহাম্মদ : আয়াত ২৫)





১২.শয়তান মানুষকে কানকথায় লিপ্ত করে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে সন্দেহ সৃষ্টি করে দেয় :

==========================================================



إِنَّمَا النَّجْوَىٰ مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا



অর্থ: কানকানি ফিসফিসানি শয়তানের কাজ। সে এটা করায় মুমিনদের ব্যথিত করার জন্যে। (সূরা ৫৮ মুজাদালা : আয়াত ১০)





১৩.শয়তান মানুষের মন-মস্তিষ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করে আল্লাহর কথা ভুলিয়ে দেয় :

==========================================================



اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ ۚ أُولَـٰئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ



অর্থ : শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে নিয়েছে; এভাবে সে তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর কথা। মূলত এরাই শয়তানের দলের লোক। (সূরা ৫৮ মুজাদালা : আয়াত ১৯)



১৪.শয়তান মানুষকে দিয়ে অপব্যয় এবং অপচয় করায় :

=======================================



إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا



অর্থ: যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ২৭)





১৫.শয়তান মন্দ কাজে প্রবলভাবে প্রলুব্ধ করে :

==================================



أَلَمْ تَرَ أَنَّا أَرْسَلْنَا الشَّيَاطِينَ عَلَى الْكَافِرِينَ تَؤُزُّهُمْ أَزًّا



অর্থ: তুমি কি লক্ষ্য করোনি, আমি কাফিরদের জন্যে শয়তানদের ছেড়ে রেখেছি তাদেরকে মন্দ কাজে প্রলুব্ধ করার জন্যে? (সূরা ১৯ মরিয়ম : আয়াত ৮৩)



আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন :



فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ



অর্থ: যখনই তুমি আল কুরআন অধ্যয়নের সংকল্প করবে, তখন ধিকৃত অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে নিও। (সূরা আন নহল : আয়াত ৯৮)







শয়তান ইসলামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে তার ভক্ত বন্ধুদের লেলিয়ে দেয়:

====================================================



যেসব লোক ইসলামের প্রচলন, অনুসরণ ও বাস্তবায়নকে পছন্দ করেনা, শয়তান তাদের বন্ধু হয়ে যায়। সে তাদেরকে ইসলামের অনুসারীদের শত্র“তা ও বিরুদ্ধাচরণে উস্কে দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন :



وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰ أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ ۖ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ



অর্থ: নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতে (**) অহি করে (উস্কে দেয়)। আনুগত্য করো, তবে অবশ্যি তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। (সূরা ৬ আল আনআম : আয়াত ১২১)



প্রত্যেক নবী ও তাঁর খাঁটি অনুসারীদের বিরুদ্ধেই জিন শয়তান ও মানুষ শয়তান দুশমনিতে লিপ্ত হয়েছে। তারা পরস্পরকে নবী ও নবীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে দুশমনি করতে উস্কে দেয়, লেলিয়ে দেয় :



وَكَذَ‌ٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا



অর্থ: এভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর বিরুদ্ধে মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানদের শত্রুতা করার অবকাশ দিয়েছি। তারা পরস্পরকে মনোহরী কথা বলে প্রতারণার উদ্দেশ্যে লেলিয়ে দেয়। (সূরা ৬ আল আনআম : আয়াত ১১২)





১৭. শয়তান আল্লাহর নাফরমানি করিয়ে এবং হানাহানি বাধিয়ে দিয়ে কেটে পড়ে:

=========================================================



শয়তান মানুষের বন্ধু ও কল্যাণকামী সেজে মানুষকে প্ররোচনা দেয়। আর শয়তানের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে কেউ যখন আল্লাহর হুকুম অমান্য করে এবং অপরাধ সংঘটিত করে বসে, তখন শয়তান তাকে ফেলে কেটে পড়ে :



كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ



অর্থ: তাদের উপমা হলো শয়তান। শয়তান মানুষকে (প্ররোচনা দিয়ে) বলে : ‘কুফুরি (আল্লাহর হুকুম অমান্য) করো।’ অতপর সে যখন কুফুরি করে বসে, তখন শয়তান তাকে বলে : ‘তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই, আমি তো আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে ভয় করি।’ ফলে উভয়ের পরিণতিই হবে জাহান্নাম। (সূরা ৫৯ হাশর : আয়াত ১৬-১৭)



শয়তান কিভাবে পরস্পরের মধ্যে বিবাদ ও হানাহানি উস্কে দিয়ে কেটে পড়ে, কুরআন মজিদে আরেক স্থানে মহান আল্লাহ সেকথা এভাবে উল্লেখ করেছেন :



وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَّكُمْ ۖ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكُمْ إِنِّي أَرَىٰ مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ ۚ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ