Translate

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১২

একটি বিষ্ময়কর তথ্য!●

একটি বিষ্ময়কর তথ্য!●
●●►পবিত্র কোরআনেঃ
পুরুষ শব্দটা এসেছে ২৪ বার, নারী শব্দটা এসেছে ২৪ বার
আদেশ শব্দটা এসেছে ১০০০ বার, নিষেধ শব্দটা এসেছে ১০০০ বার
হালাল শব্দটা এসেছে ২৫০ বার, হারাম শব্দটা এসেছে ২৫০ বার
...জান্নাত শব্দটা এসেছে ১০০০ বার, জাহান্নাম শব্দটা এসেছে ১০০০ বার
দুনিয়া শব্দটা এসেছে ১১৫ বার, আখিরাত শব্দটা এসেছে ১১৫ বার
ফেরেশতা শব্দটা এসেছে ৮৮ বার, শয়তান শব্দটা এসেছে ৮৮ বার
জীবন শব্দটা এসেছে ১৪৫ বার, মৃত্যু শব্দটা এসেছে ১৪৫ বার
উপকার শব্দটা এসেছে ৫০ বার, ক্ষতিকর শব্দটা এসেছে ৫০ বার
মানুষ শব্দটা এসেছে ৩৬৮ বার, রাসূল শব্দটা এসেছে ৩৬৮ বার
যাকাত শব্দটা এসেছে ৩২ বার, বরকত শব্দটা এসেছে ৩২ বার
জিহ্বা শব্দটা এসেছে ২৫ বার, উত্তম বাক্য শব্দটা এসেছে ২৫ বার
মাস শব্দটা এসেছে ১২ বার, দিন শব্দটা এসেছে ৩৬৫ বা

 ·

শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১২

ইসলামী কিছু সুন্দর নাম , আশা করি পছন্দ হবে,{ ১ম পর্ব ছেলে} 01

মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়। এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী এ বিষয়ে আমাদের পড়াশুনা অতি অপ্রতুল। তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়। শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নাম উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম রাখা সমীচীন হবে!? তাই এ বিষয়ে সঠিক নীতিমালা আমাদের জানা প্রয়োজন।
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে- “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।” এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর উপাসনার স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সমন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।
আব্দ’ (বান্দা) শব্দ সমন্ধিত করে কয়েকটি নাম:

০ আবদুল্লাহ আল্লাহর বান্দা/গোলাম
০ আবদুর রহমান রহমানের বান্দা/ গোলাম
আবদুল কুদ্দুস
• আব্দুল আযীয (عبد العزيز- পরাক্রমশালীর বান্দা),
• আব্দুল মালিক (عبد المالك),
• আব্দুল কারীম (عبد الكريم-সম্মানিতের বান্দা),
• আব্দুর রহীম (عبد الرحيم-করুণাময়ের বান্দা),
• আব্দুল আহাদ (عبد الأحد- এক সত্তার বান্দা),
• আব্দুস সামাদ (عبد الصمد- পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা),
• আব্দুল ওয়াহেদ (عبد الواحد-একক সত্তার বান্দা),
• আব্দুল কাইয়্যুম (عبد القيوم-অবিনশ্বরের বান্দা),
• আব্দুস সামী (عبد السميع-সর্বশ্রোতার বান্দা),
• আব্দুল হাইয়্য (عبد الحي-চিরঞ্জীবের বান্দা),
• আব্দুল খালেক (عبد الخالق-সৃষ্টিকর্তার বান্দা),
• আব্দুল বারী (عبد الباري-স্রষ্টার বান্দা),
• আব্দুল মাজীদ (عبد المجيد-মহিমান্বিত সত্তার বান্দা) ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে এই ‘আব্দ’ শব্দটিকে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন শব্দের সাথে সমন্ধিত করে নাম রাখা হারাম। যেমন:
• আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক),
• আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক),
• আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক),
• আব্দুল কালাম (কথার উপাসক),
• আব্দুন নবী (নবীর উপাসক),
• আব্দুল আলী (আলী এর উপাসক),
• আব্দুল হোসাইন (হোসাইন এর উপাসক) ইত্যাদি।

তবে আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত।


আবার এ প্রবনতা বিশেষত সৌদি আরবে সাধারন মানুষের মধ্যে ও দেখেছিو এটি অনুচিত।

যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়।
তাছাড়া যে কোন নবীর নামে নাম রাখা ভাল।
যেহেতু তাঁরা আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা। নবী করিম (সাঃ) তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোন নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন:
• মুহাম্মদ (محمد),
• আহমাদ (أحمد),
• ইব্রাহীম (إبراهيم),
• মুসা (موسى),
• ঈসা (عيسى),
• নূহ (نوح),
• হুদ (هود), লূত (لوط),
• শিছ (شيث),
• হারুন (هارون),
• শুআইব (شعيب),
• আদম (آدم) ইত্যাদি।

নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর মাধ্যমে নবজাতকের মাঝে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের প্রভাব পড়ার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ।

আরবীতে এটাকে তাফাউল বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল (সাঃ) এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ। বিশিষ্ট সাহাবী যুবাইর ইবনে আওয়াম তার ৯ জন ছেলের নাম রেখেছিলেন বদনের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৯ জন সাহাবীর নামে। তারা হলেন-
• আব্দুল্লাহ (عبد الله),
• মুনযির (منذر),
• উরওয়া (عروة),
• হামযা (حمزة),
• জাফর (جعفر),
• মুসআব (مصعب),
• উবাইদা (عبيدة),
• খালেদ (خالد),
• উমর (عمر)। ।[তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১৭]


ব্যক্তির নাম তাঁর স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শাইখ বাকর আবু যায়েদ বলেন, “কাকতালীয়ভাবে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তাআলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রের মধ্যে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে, আর ভাল নামের লোকের চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।” [তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১০, তুহফাতুল মাওদুদ-ইবনুল কাইয়্যেম ১/১২১]
আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকে। খালারা বা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়শঃ দেখা যায়। এ ব্যাপারে শাইখ বাকর আবু যায়দ বলেন, “নাম রাখা নিয়ে পিতা-মাতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে শিশুর পিতাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’[সূরা আহযাব ৩৩:৫]” অতএব শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয় স্বজন বা অপর কোন ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতাই পাবেন অগ্রাধিকার।
ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম:
আল্লাহর নাম নয় এমন কোন নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন,
• আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস),
• আব্দুল কালাম (কথার দাস),
• আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস),
• আব্দুন নবী (নবীর দাস),
• গোলাম রসূল (রসূলের দাস),
• গোলাম নবী (নবীর দাস),
• আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস),
• আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস),
• আব্দুল আলী (আলীর দাস),
• আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস),
• আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস),
• গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস),
• গোলাম কাদের (কাদেরের দাস) ইত্যাদি।

অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম। যেমন- আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি, বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে) আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি)
• অনুরূপভাবে শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) নাম রাখা হারাম। [মুসলিম] মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম রাখা হারাম। সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা হারাম। [তুহফাতুল মাওলুদ ১/১১৫]
• সরাসরি আল্লাহর নামে নাম রাখা হারাম। যেমন- আর-রাহমান, আর-রহীম, আল-আহাদ, আস-সামাদ, আল-খালেক, আর-রাজেক, আল- আওয়াল, আল-আখের ইত্যাদি।

যেসব নাম রাখা মাকরুহ :
*********************


ক) যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে বাররা (পূন্যবতী)।•
খ) শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি।
গ) ফেরাউনদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ।[তুহফাতুল মাওদুদ ১/১১৮]
ঘ) বিশুদ্ধ মতে ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা মাকরুহ। যেমন- জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল।
ঙ) যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষ যে অর্থকে ঘৃণা করে এমন অর্থবোধক কোন নাম রাখা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।
চ) একদল আলেম কুরআন শরীফের নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৭]
ছ) ইসলাম বা উদ্দীন শব্দের সাথে সম্বন্ধিত করে নাম রাখা মাকরূহ। ইসলাম ও দ্বীন শব্দদ্বয়ের সুমহান মর্যাদার কারণে।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৫, তুহফাতুল মাওদুদ ১/১৩৬]•
জ) দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ।
ঝ) অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত)।
ঞ) শায়খ বকর আবু যায়দের মতে রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ। যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচিত আরো কিছু ছেলেদের সুন্দর নাম:
********************************


• উসামা (أسامة-সিংহ),
• আফীফ (عفيف-পুতপবিত্র),
• হামদান (প্রশংসাকারী),
• লাবীব (لبيب-বুদ্ধিমান),
• রাযীন (رزين-গাম্ভীর্যশীল),
• রাইয়্যান (ريَّان-জান্নাতের দরজা বিশেষ),
• মামদুহ (ممدوح-প্রশংসিত),
• নাবহান (نبهان- খ্যাতিমান),
• নাবীল (نبيل-শ্রেষ্ঠ),
• নাদীম (نديم-অন্তরঙ্গ বন্ধু),
• আব্দুল ইলাহ (عبد الإله- উপাস্যের বান্দা),
• ইমাদ (عماد- সুদৃঢ়স্তম্ভ),
• মাকহুল (مكحول-সুরমাচোখ),
• মাইমূন (ميمون- সৌভাগ্যবান),
• তামীম (تميم),
• হুসাম (حُسَام-ধারালো তরবারি),
• বদর (بدر-পূর্ণিমার চাঁদ),
• হাম্মাদ (حماد-অধিক প্রশংসাকারী),
• হামদান (حمدان-প্রশংসাকারী),
• সাফওয়ান (صفوان-স্বচ্ছ শিলা),
• গানেম (غانم-গাজী, বিজয়ী),
• খাত্তাব (خطاب-সুবক্তা),
• সাবেত (ثابت-অবিচল),
• জারীর (جرير), খালাফ (خلف),
• জুনাদা (جنادة), ইয়াদ (إياد),
• ইয়াস (إياس),
• যুবাইর (زبير),
• শাকের (شاكر-কৃতজ্ঞ),
• আব্দুল মাওলা (عبد المولى- মাওলার বান্দা),
• আব্দুল মুজিব (عبد المجيب- উত্তরদাতার বান্দা),
• আব্দুল মুমিন (عبد المؤمن- নিরাপত্তাদাতার বান্দা),
• কুদামা (قدامة),
• সুহাইব (صهيب) ইত্যাদি।

মাছরূর
শহিদুল ইসলাম
মাহমুদুর রহমান
মিজানুর রহমান
ওবায়দুর রহমান
শামছুদ্দিন
রিদওয়ান
গনি আহমদ
আজিজুল হক্ব
জমির উদ্দিন
আহমদ শফী
আবরারুল হক্ব
আশরফ আলী
সুলতান আহমদ
হাবিবুল্লাহ
নুরুল হুদা
হাছান
হোছাইন
শামছুদ্দিন
কলিমুল্লাহ
নুরুল ইসলাম
নোমান

ইত্যাদি

ইসলামী নামের সমাহার ,শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব ও সুন্দর নামে ডাকুন

এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
আমি যখন লোহাগডা/আমিরাবাদ মাদ্রাসায়ে হোছাইনিয়া আজিজুল উলুম রাজঘাটায় ছিলাম, সে সময়ের কথা। একদিন আমার রুমে কয়েক জন মেহমান আসলেন। তাঁদের মেহমানদারীর জন্য, দুই জনকে দোকানে পাঠালাম।


তাদের এক জনের নাম ছিল মিষ্টি।
কিছু খাবার নিয়ে অন্যজন ফিরে এসে আমাদেরকে নাস্তা দেয়ার সময়, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মিষ্টি কই?
অন্যান্য মেহমানরা বুঝলেন নাস্তার মধ্যে মিষ্টি না থাকায় আমি মিষ্টির কথা বলছি। তাই তারা বলতে লাগলেন , অনেক নাস্তা হয়েছে, মিষ্টি লাগবেনা। সে সময়ই নীচ থেকে মিষ্টি নামক ভদ্র লোকটি এসে হাজির। তখন আমি তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম এর নামই মিষ্টি।

সবাই মিষ্টি খাবার আনন্দের চেয়ে বেশী আনন্দ উপভোগ করলেন। এভাবে আমরা প্রতি নিয়ত অনেক নাম শুনি।

সে সব নাম শুনে বুঝা যায় না, এটা কিসের নাম?

যেমন আমার পরিচিত এক জনের নাম ছিল আকাশ।

রাস্তায় চলতে হঠাৎ যদি তাকে দেখে কোন বন্ধু বলে উঠতো এইতো আকাশ। তখন অনেকের চোখ আকাশের দিকেই নিবদ্ধ হতো। আরেক জনের নাম ছিল পল্লব। এই পল্লব কি গাছের পাতা না আশরাফুল মাখলুকাত কোন এক মানুষের নাম তা বুঝা একটু কঠিন। আমার পরিচিত আরেক জনের নাম ছিল ইতি, ইতি অর্থ শেষ। এ ধরনের আরও কত নাম শুনেছি, যা নিয়ে বন্ধু মহলে হাসাহাসি হত।

সাধারণত নিজের নাম রাখা কেন্দ্রীক নিজের কোন দায়িত্ব নেই। বাবা মা বা আত্মীয় স্বজনরাই নাম রাখেন। কিন্তু বড় হলে নাম কেন্দ্রীক ব্যাঙ্গ তাকেই শুনতে হয়। কেননা বাবা মা বা আত্মীয় স্বজন নাম রাখার সময় চিন্তা করেননি নামের অর্থ কি?

তাই অনেককে বড় হয়ে এফিডেভিট দিয়ে নাম সংশোধন করতেও দেখা যায়।

একজন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার আকীকা করা ও নাম রাখা পিতা মাতার দায়িত্ব। শিশুর জন্মের পর সপ্তম দিন আকীকা ও নাম রাখা সুন্নাত।

কোন কোন হাদীস অনুযায়ী জন্মের পর পরই নাম রাখা যায়। আর কোন কোন হাদীসে জন্মের পর তৃতীয় দিবসে নাম রাখার কথা উল্লেখ আছে। নাম যখনই রাখা হোক না কেন, নামকরণের ক্ষেত্রে উত্তম নাম তালাশ করা উচিত। রাসুল (স.) শিশুর সুন্দর নাম রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন; ‘‘ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতার নামে।

তাই তোমাদের নাম গুলো সুন্দর রাখো”। তাঁর কাছে কোন নতুন ব্যক্তি এলে তার নাম জিজ্ঞাসা করতেন , অপছন্দ হলে সে নাম পরিবর্তন করতেন। যেমন তিনি আসিয়া ( বিদ্রোহিণী) নাম পরিবর্তন করে জামিলা নাম দিয়েছিলেন আর আসসারম (কঠোর) নাম পরিবর্তন করে সায়ীদ নামকরণ করেছিলেন। তিনি এভাবে অনেকের নাম পরিবর্তন করেন।

মানুষ একে অপরকে নাম ধরেই ডাকে। কারো সাথে পরিচয়ের শুরুতেই জানতে চায় আপনার নাম কি? বিশেষত একজন শিশুর সাথে কারো দেখা বা পরিচয় হলে তার নাম জানতে চায়। তাই শিশুর জীবনে নামকরণের বিরাট প্রভাব পড়ে।

আমার এক আত্মীয়ের এক ছেলের নাম সালেহ, এটা একজন নবীর নাম। তাঁর আরেক ছেলের নাম এহসান। এহসান কোন নবীর নাম কিনা তা কারো জানা নেই। সালেহ প্রায়ই গর্ববোধ করে বলে তার নাম একজন নবীর নাম, কিন্তু তার অপর ভাইর নাম নবীর নাম নয়। এভাবে সকল শিশুই একটু বড় হলেই তার নামের অর্থ জানার চেষ্টা করে।

আরেকটু বড় হলে তার নামের সাথে অন্য কারো নাম মিলে গেলে তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। আরও একটু বড় হলে তার নামের সাথে প্রসিদ্ধ কারো নামের মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এবং তার জীবনী পড়ে। যার গভীর প্রভাব তার জীবনে গিয়ে পড়ে। অবশ্য সকল ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম থাকে, তার কথা আলাদা।

মুসলিম সমাজে আলেম উলামাদের সাথে পরামর্শ করে সুন্দর নাম রাখার রেওয়াজ ছিল। তাঁরা নামের অর্থ ও ফযীলতের দিকে দৃষ্টি রেখেই নামকরণ করতেন। তাই সে সব নামের মধ্যে মুসলিম কালচারের প্রভাব ছিল।

এ ধরনের নাম শুনলেই আঁচ করা যায় এটা কোন মুসলমানের নাম। কিন্তু আস্তে আস্তে নামকরণের ক্ষেত্রেও তথা কথিত আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। আরবী অর্থ বহ নামের পরিবর্তে সংস্কৃত, ইংরেজী বা বাংলা এমন সব নাম রাখা শুরু হয়। যার অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়না। আবার অর্থ থাকলেও তা শুনতে শ্রুতিমধুর লাগেনা।

যেমন ডলি, বেনু, অনিল, শ্যামা, শিপ্রা, চপল, চঞ্চল, তুষার, সৈকত, বাদল, শিমুল কাজল, নিশাত, ময়না, টিংকু, শীতল, রীতা, অভি
কপি , ছেন্টু , বলটু , সাগর , সিজার, জিকা, ইত্যাদি।


এ ধরনের নাম শুনে মুসলিম বা অমুসলিম কিছুই বুঝা যায় না। প্রাসঙ্গিক ভাবে এ কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, আরবী নাম রাখলেই অর্থ বহ হয়না। কেননা আল্লাহর রাসুল যে সব নাম পরিবর্তন করেছেন, তা আরবীতেই ছিল। যেমন খায়ল (ঘোড়া) যুওয়াইব (ছোট নেকড়ে বাঘ) শিহাব (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ) গোরাব (কাক) বাহীর (কানকাটা) হারব (যুদ্ধ) প্রভৃতি নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দিয়েছেন।


শিরকী নাম
===============

এ থেকে বুঝা যায় নাম সুন্দর ও অর্থবহ হওয়া জরুরী। কিন্তু অর্থ না জানা বা চিন্তা করে নাম না রাখার কারণে অনেককে শিরকী নাম পর্যন্ত রাখতে দেখা যায়। শিরকী নাম হলো আল্লাহ ছাড়া আর কারও নামে আবদ বা গোলাম ইত্যাদি যোগ করে নাম রাখা। যেমন কেউ কেউ পীরের এত ভক্ত যে, সন্তান হবার পর নাম রাখেন পীর বখশ (পীরের দান) ।
গোলাম নবী , গোলাম রসুল, আবদুননবী, আবদুর রসুল ,

অথচ এক জন মুসলমানের এ আকীদা থাকতে হবে যে রাসুল,পীর, অলী কারো পক্ষে সন্তান দেয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সন্তান দিতে পারেনা। আর একজন মুসলমান একমাত্র আল্লাহরই আবদ বা গোলাম। অন্য কারো নয়, তাই একজন শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে এমন নাম রাখা উচিত নয় যার অর্থ দ্বারা অন্য কারো গোলাম হওয়া বুঝায়।

ইসলামী ও উত্তম নাম
================

আল্লাহর নামের আগে আবদ যোগ করে আব্দুল্লাহ কারো নাম রাখা খুবই উত্তম। এ ভাবে আল্লাহর সিফাতী (গুনবাচক) নামের আগে আবদ যোগ করে নাম রাখা ভাল। যেমন আব্দুর রহমান, আব্দুল করিম, আব্দুর রহিম, আব্দুল আউয়াল, আব্দুল কুদ্দুস প্রভৃতি। তবে এ ক্ষেত্রে নাম ডাকার সময় অবশ্যই আবদ যোগ করেই ডাকতে হবে।


কিন্তু অনেককে দেখা যায় আবদ যোগ না করে শুধু রহীম, রহমান, করীম, কুদ্দুস এ ধরনের আল্লাহর সিফাতী নাম ধরে ডাকেন,এটা অনুচিত। কারণ আল্লাহ যেসব গুনে গুনান্বিত সেব গুনে একজন মানুষ গুনান্বিত হতে পারেনা। তাই মানুষকে আল্লাহর সিফাতী নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। তাই আল্লাহর নামের পুর্বে আবদ বা অন্য কোন শব্দ (যেমন আতাউল্লাহ,রহমত উল্লাহ ) যোগ করেই ডাকতে হয়।



নামকরণের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী, শিশুর পরিচয় পিতার সাথেই সম্পৃক্ত। তাই নামকরণের অধিকার পিতার। অবশ্য পিতা মাতা পরামর্শ করেই নাম ঠিক করা ভাল। অনেক সময় দেখা যায় পিতা মাতা দুই জন দুই নাম পছন্দ করেন, তাই দুই জন দুই নামে ডাকেন। শিশুর অর্থবহ সুন্দর একটি নাম রাখাই উত্তম। আবার অনেকের খুবই দীর্ঘ নাম রাখা হয়, যার কারণে পরবর্তীতে নানা ধরনের সমস্যা পোহাতে হয়। যাদের নাম খুব দীর্ঘ তারা অন্য কোন দেশে গেলে অনেক সময় পরিচিত নামটি হারিয়ে যায়। এজন্য আমি মনে করি এক জন শিশুর সুন্দর, অর্থবহ, সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর নাম হওয়া ভাল। তবে কুনিইয়া (উপনাম) রাখা যেতে পারে। কেননা রাসুল (স) অনেককে এ ধরনের কুনিইয়া বা উপনামে ডাকতেন।

শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব
======================================


এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখতে হয়। সে সময় তার যে নাম রাখা হয় সবাই তাকে সেই নামেই ডাকে। সে ডাক শুনেই সে দুধ পানরত অবস্থায়ও বুঝতে পারে, তাকে ডাকছে। তাই কেউ ডাকলে তার দিকে তাকায়। আর বড় হবার পর এ নামেই সে পরিচিতি লাভ করে।

শিশু জন্মগ্রহণ করার পর নিজের নাম নিজে রাখতে পারেনা। এটা পিতা মাতা বা আত্মীয় স্বজনের দায়িত্ব। পিতা মাতা বা যারাই নাম রাখবে তাদের উচিত সুন্দর নাম রাখা। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস ও আবু সাঈদ থেকে বর্ণিত আছে যে,রাছুল (সঃ) বলেছেন,যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে ও সুশিক্ষা দেয় এবং সাবালক হলে তার বিবাহ দেবে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিবাহ না দেবার কারণে গুনাহ হলে সে গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে। (বায়হাকী, হাদীছটি যঈফ)



এ থেকে বুঝা গেল শিশুর সুন্দর নাম রাখা পিতার কর্তব্য। অর্থবোধক, মার্জিত, ইসলামী ভাবধারায় উজ্জীবিত, সুন্দর নাম রাখলে তা শিশুর জীবনে প্রভাব পড়ে।

অন্য আরেক হাদীসে আছে, আবু দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতাদের নামে, তাই তোমাদের নামগুলি সুন্দর রাখো। ( আবু দাউদ)

এ থেকে বুঝা যায় শিশুর নাম রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুখের বিষয় হচ্ছে মুসলিম সমাজে অনেকেই শিশুর এমন নাম রাখেন যা অর্থবোধক নয়। এবং এই নাম শুনে বুঝা যায়না এটা কোন মুসলিম শিশুর নাম কিনা?

ভাল ও মন্দ নামের প্রভাব
====================

এক জন শিশুর যে নামই রাখা হোক না কেন তা তার জীবনে প্রভাব ফেলে। ভাল নামের ভাল প্রভাব আর মন্দ নামের খারাপ প্রভাব পড়ে। এক জন শিশু যখন বড় হয় তখন সে নামের অর্থ জানার চেষ্টা করে। মনে করুন এক জন শিশুর নাম সালেহ, যার অর্থ সৎ কাজ কারী। সে যখন কোন খারাপ কাজ করে তাকে যদি বলা হয় তোমার নামের অর্থ হচ্ছে সৎ কাজ কারী। তুমি যে খারাপ কাজ করলে তা কি ঠিক হলো? নিশ্চয়ই এ কথাটি তার মনে রেখাপাত করবে। এভাবে অনেক শিশু নামের কারণে মন্দ কাজ করতে লজ্জা বোধ করে।
যেমন কারো নাম আবদুল্লহ আর্থ আল্লাহর বান্দা/গোলাম কাজেই তার কাজই হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে আল্লাহর গোলামী/এবাদত করা , আর তা না করলে স্বভাবতই সে লজ্যা বোধ করবে /মানুষ লজ্যা দিবে,

রাসুল (সঃ) এর সামনে কোন লোক এলে তিনি তার নাম জিজ্ঞাসা করতেন। কারো নাম সুন্দর হলে তিনি খুশী হতেন। আর কারো নাম অসুন্দর হলে তিনি তা পরিবর্তন করে দিতেন।

এক কাহিনী
============


মন্দ নামের করুণ পরিণতির এক কাহিনী ইমাম মালেক তাঁর মুয়াত্তায় উল্লেখ করেছেন।
ইয়্হাইয়া বিন সায়ীদ হতে বর্ণিত আছে যে, উমার ইবনে খাত্তাবের কাছে জুহায়না কবীলার এক ব্যাক্তি এল। তিনি তাকে বললেন, তোমার নাম কি? সে জবাব দিল শিহাব (অগ্নি স্ফুলিঙ্গ)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন: তুমি কার ছেলে? সে উত্তর দিল ইবনে দেরাম (অগ্নি শিখার ছেলে)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি কোন গোত্রের লোক? সে বলল, হারাকা (প্রজ্জলন)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তোমার বাসস্থান কোথায়? সে বলল,বাহরুন্নার (অগ্নি গর্ভে)। তিনি সর্বশেষ প্রশ্ন করলেন, কোন অংশে? সে জবাব দিল বিযাতিল লাযা (শিখাময় অংশে)। তখন উমর (রাঃ) তাকে বললেন: যাও তোমার গোত্রের লোকদের কাছে গিয়ে দেখ তারা ভস্মীভুত হয়েছে। লোকটি তাদের কাছে গিয়ে দেখল সত্যিই তারা সকলে ভস্মীভুত হয়েছে।

উমার (রাঃ) দুরদর্শিতার মাধ্যমে এটা উপলব্ধি করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায় মন্দ নাম রাখা ভাল নয়। তাই এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর উত্তম নাম তালাশ করা পিতা মাতা বা অভিভাবকদের উচিত।

নামকরণের সময়
==================

শিশু জন্মগ্রহণ করার পর কখন নামকরণ করা সুন্নাত এ সম্পর্কে আলেমদের কয়েকটি মত আছে। কেউ কেউ বলেছেন শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে নামকরণ ও আকীকা করা সুন্নাত।

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাসান ও হোসাইনের (রাঃ) আকীকা করলেন জন্মের সপ্তম দিনে এবং তাদের দুই জনের নাম রাখলেন। (ইবনে হাব্বান ও আল মুস্তাদরাক)

আর কেউ কেউ মনে করেন শিশুর জন্ম হবার পর পরই তার নামকরণ করা সুন্নাত। তাঁরা হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেন


আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি তালহার জন্ম হলে তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি উটকে হাত বুলিয়ে আদর করছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার কাছে কি খেজুর আছে? আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর আমি তাঁকে খেজুর দিলাম। তিনি তা চিবিয়ে নরম করলেন এবং শিশুটির মুখ ফাঁক করে তার মুখের ভিতর ভরে দিলেন, শিশুটি তখন তার মুখ নাড়াতে শুরু করলো। নবী (সঃ) বললেন আনসারদের প্রিয় হচ্ছে খেজুর। পরে তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। (বায়হাকী)

এ থেকে বুঝা যায় শিশু জন্মেও পর পরই তার নাম রাখা যায়।


নামকরণে কুসংস্কারের উদাহরণ
==========================



বাংলাদেশের একটি দ্বীপে আমার জন্ম হয়। আমি ছোট বেলা গ্রামেই কাটিয়েছি। গ্রামে নামকরণ কেন্দ্রীক অনেক কুসংস্কার প্রত্যক্ষ করেছি। গ্রাম থেকে এসে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েক বছর ছিলাম। অনেক শিক্ষিত লোকদেরকেও দেখেছি, তাঁদের মধ্যে গ্রামের সেই কুসংস্কার বিরাজ করছে।

আমি গ্রামে লক্ষ করেছি যাদের ছেলে বা মেয়ে জন্ম নেয়ার পর পরই মারা যেত, পরবর্তীতে তাদের সন্তান হলে কপালে কালি মেখে দেয়া হতো এবং তাদের অদ্ভুত ধরনের নাম রাখা হতো। যেমন ধুলো, কালো, গজা, পচা ইত্যাদি। এ ধরনের নামকরণের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল ভুত, পেত্নী, জ্বিন এমনকি যমদুতের কুদৃষ্টি এড়ানো। এটা এক ধরনের কুসংস্কার। সকল মানুষের জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাই এ ধরনের কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে শিশুর নামকরণ করা ঠিক নয়।

শেরকী আকীদা।
=============


আবার অনেককে দেখেছি দীর্ঘ দিন সন্তান না হবার কারণে পীরের দরবারে বা আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে সন্তান ভিক্ষা করতে। এটা সম্পূর্ণ শেরকী আকীদা। কেননা আল্লাহ ছাড়া কারও পক্ষে সন্তান দেয়া সম্ভব নয়। তাঁদের অনেককে দেখেছি দীর্ঘদিন পর সন্তান লাভ করলে এটাকে পীরের দান বলে মনে করতে। তাই তাদের নাম রাখা হতো পীর বখশ বা পীরের দান, খাজা বখশ বা খাজার দান। এ ধরনের নাম রাখাও ঠিক নয়।

এভাবে মুসলমানদের কারো কারো মধ্যে নামকরণ কেন্দ্রীক অনেক কুসংস্কার বিদ্যমান।

নামকরণে কতিপয় লক্ষ্যণীয় দিক
====================


একজন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখা হয়। শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

১. নাম সুন্দর, মার্জিত, শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ হওয়া প্রয়োজন।

২. আব্দুল্লাহ বা আব্দুর রহমান তথা আল্লাহর সত্তাবাচক বা গুণবাচক নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দ যোগ করে নামকরণ করা ভাল। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে ডাকার সময় যেন আবদ বা অন্য শব্দ যোগ করে ডাকা হয়। শুধু রহমান, রহীম, রাজ্জাক ইত্যাদি গুণবাচক নামে যেন ডাকা না হয়।

৩. নামের আগে কুনিইয়া রাখা যায়। আল্লাহর রাছুল এ ধরনের কুনিইয়া রাখতেন।

৪. মুসলিম শিশুর এমন নাম রাখা উচিত যা শোনার সাথে সাথে বুঝা যায় এটা এক জন মুসলিম শিশুর নাম। অনেক সময় দেখা যায় এমন নাম রাখা হয় যা শুনে বুঝা যায় না এটা কি মুসলিম শিশুর নাম না অন্য কোন ধর্মাবলম্বীর? আবার অনেক সময় ছেলে বা মেয়ের নামের মধ্যে ফারাক করা যায়না। যেমন কাজল, নিশাত, ময়না, টিংকু, শীতল, রীতা, অভি ইত্যাদি।

৫. যে সকল গুণবাচক নামের হকদার একমাত্র রাসুলে কারীম (সঃ) সে সব নামে কারও নামকরণ করা ঠিক নয়। যেমন খাতামুন্নাবীয়্যীন (সর্বশেষ নবী), সাইয়েদুল মুরসালীন (রাসুলগণের নেতা)।

৬. আল্লাহ পাকের যাতী নামে কারও নামকরণ করা হারাম। শুধু আল্লাহ কারও নাম রাখা জায়েয নাই। অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে খাস এমন কোন নাম কারো সাথে লাগোনো যাবেনা। যেমন মালেকুল মুলক (জগতের বাদশাহ) সুলতানুস সালাতীন (বাদশাহদের বাদশাহ) ইত্যাদি।

৭. ফেরেশতাদের নামে নামকরণ করাও অধিকাংশ আলেমের মতে নিষিদ্ধ। তাই জিবরীর, ইসরাফীল, আজরাঈল, মীকাঈল ইত্যাদি নামে নামকরণ করা ঠিক নয়।


৮. যে সকল নাম ইসলামের ইতিহাসে খুবই ঘৃণিত সে সকল নামে কোন শিশুর নামকরণ করা ঠিক নয়। যেমন ইবলীশ, শাদ্দাদ, কারুন, ফেরাউন, আবু জেহেল, আবু লাহাব প্রভৃতি নাম রাখা উচিত নয়।

৯. যে সব নামে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের অর্থ বুঝা যায় সে ধরনের নাম রাখাও ঠিক নয়, যেমন আচিয়া (বিদ্রোণী)।

১০. শিশুর একটি সুন্দর নাম রাখা ভাল। তবে কোন কারণে একাধিক নাম রাখা যেতে পারে।

১১. কারও নাম যদি অসুন্দর হয়, সে বড় হয়ে গেলেও তার নাম পরিবর্তন করা যায়।

১২.এমন কোন নাম রাখা ঠিক নয় যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও আবদ বা গোলাম হওয়া বুঝায়। যেমন গোলাম মোস্তফা, গোলাম নবী, গোলাম রাসুল, আব্দুন্নবী, আব্দুস শামস ইত্যাদি।

তাহনীক ও আকীকা
============
সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর মিষ্টি জাতীয় কোন নরম খাদ্য কিংবা খেজুর চিবিয়ে নরম করে শিশুর মুখের ভিতর দেয়াকেই তাহনীক বলা হয়। তাহনীক করা সুন্নাত। আল্লাহর রাসুল (সঃ) খেজুর দিয়ে তাহনীক করতেন। আমাদের সমাজে মধু দিয়ে তাহনীক করার প্রচলন আছে।

সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর তাহনীক ও নামকরণ করার সাথে সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সন্তানের আকীকা করা। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলে কারীম (সঃ) হযরত হাসান (রাঃ) ও হোসাইন (রঃ) এর জন্মেও সপ্তম দিনে আকীকা করেছেন।

পুত্র সন্তান হলে দুইটি ছাগি, বকরী বা কোরবানীর গরুর মধ্যে দুই অংশ দেয়া ভাল। ছেলে সন্তান হলে সামর্থ না থাকলে এক অংশ দেয়াও জায়েয আছে। আর মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগি, বকরী বা এক অংশ দিতে হয়।

আকীকার গোশত ফকীর মিসকীনকে, আত্বীয় স্বজনকে দেয়া যায় এবং নিজেও খাওয়া যায়। আর আকীকা সপ্তম দিন করতে না পারলে পরে করলেও চলবে।

আল্লাহর যাতী ও সিফাতী নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দ যোগে শিশুর নামকরন

আল্লাহ তায়ালার অনেকগুলো গুণবাচক নাম রয়েছে। তিনি সুরা আল-আরাফের ১৮০ নম্বর আয়াতে নিজের গুণগত নামের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
আল্লাহর অনেক সুন্দর নাম রয়েছে। সে নাম গুলোতে তোমরা তাঁকে ডাকো। (আল-আরাফ ১৮০) আলেম গণ আল্লাহ পাকের নামগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।

১.সত্তাবাচক নাম
২. গুণবাচক নাম

আল্লাহর এ সব নামের পুর্বে আবদ শব্দ যোগ করে শিশুর নামকরণ আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর কাছে তোমাদের নামগুলোর মধ্যে প্রিয়তম হলো আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযি ও আবু দাউদ)

এ ভাবে আল্লাহর অন্যান্য গুণগত নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দযোগ করে নাম রাখা ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে আবদ বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর গুণগত নামে কাউকে ডাকা যাবেনা।


যেমন কারো নাম আব্দুর রহমান,আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, আব্দুল মালেক, আতা উররহমান আব্দুর রহীম রাখার পর শুধু রহমান, রহীম, খালেক, মালেক, রাজ্জাক.রব নামে ডাকা ঠিক নয়।

কেননা এ নামগুলোর হকদার হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তবে আল্লাহর এমন কিছু গুণবাচক নাম আছে-যেগুলো আবদ ছাড়াও ডাকা বৈধ। যেমন ওদুদ মানে স্নেহময়। স্নেহের গুণ আল্লাহ ছাড়াও মানুষের মধ্যে আছে। তাই এ নামে মানুষকে ডাকা যায়। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর স্নেহ মমতা আর মানুষের স্নেহ মমতার মাঝে আকাশ পাতাল ফারাক। আল্লাহর মমতার সাথে মানুষের স্নেহ মমতা তুলনা করার সুযোগ নেই।




নতুন সংযোজন =====================================================************************************************************************************************************************************************************************************************************************
মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়। এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী এ বিষয়ে আমাদের পড়াশুনা অতি অপ্রতুল। তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়। শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নাম উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম রাখা সমীচীন হবে!? তাই এ বিষয়ে সঠিক নীতিমালা আমাদের জানা প্রয়োজন।
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে- “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।” এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর উপাসনার স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সমন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।
আব্দ’ (বান্দা) শব্দ সমন্ধিত করে কয়েকটি নাম:
• আব্দুল আযীয (عبد العزيز- পরাক্রমশালীর বান্দা),
• আব্দুল মালিক (عبد المالك),
• আব্দুল কারীম (عبد الكريم-সম্মানিতের বান্দা),
• আব্দুর রহীম (عبد الرحيم-করুণাময়ের বান্দা),
• আব্দুল আহাদ (عبد الأحد- এক সত্তার বান্দা),
• আব্দুস সামাদ (عبد الصمد- পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা),
• আব্দুল ওয়াহেদ (عبد الواحد-একক সত্তার বান্দা),
• আব্দুল কাইয়্যুম (عبد القيوم-অবিনশ্বরের বান্দা),
• আব্দুস সামী (عبد السميع-সর্বশ্রোতার বান্দা),
• আব্দুল হাইয়্য (عبد الحي-চিরঞ্জীবের বান্দা),
• আব্দুল খালেক (عبد الخالق-সৃষ্টিকর্তার বান্দা),
• আব্দুল বারী (عبد الباري-স্রষ্টার বান্দা),
• আব্দুল মাজীদ (عبد المجيد-মহিমান্বিত সত্তার বান্দা) ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে এই ‘আব্দ’ শব্দটিকে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন শব্দের সাথে সমন্ধিত করে নাম রাখা হারাম। যেমন:
• আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক),
• আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক),
• আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক),
• আব্দুল কালাম (কথার উপাসক),
• আব্দুন নবী (নবীর উপাসক),
• আব্দুল আলী (আলী এর উপাসক),
• আব্দুল হোসাইন (হোসাইন এর উপাসক) ইত্যাদি।
তবে আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়।
তাছাড়া যে কোন নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা। নবী করিম (সাঃ) তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোন নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন:
• মুহাম্মদ (محمد),
• আহমাদ (أحمد),
• ইব্রাহীম (إبراهيم),
• মুসা (موسى),
• ঈসা (عيسى),
• নূহ (نوح),
• হুদ (هود), লূত (لوط),
• শিছ (شيث),
• হারুন (هارون),
• শুআইব (شعيب),
• আদম (آدم) ইত্যাদি।
নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর মাধ্যমে নবজাতকের মাঝে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের প্রভাব পড়ার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। আরবীতে এটাকে তাফাউল বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল (সাঃ) এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ। বিশিষ্ট সাহাবী যুবাইর ইবনে আওয়াম তার ৯ জন ছেলের নাম রেখেছিলেন বদনের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৯ জন সাহাবীর নামে। তারা হলেন-
• আব্দুল্লাহ (عبد الله),
• মুনযির (منذر),
• উরওয়া (عروة),
• হামযা (حمزة),
• জাফর (جعفر),
• মুসআব (مصعب),
• উবাইদা (عبيدة),
• খালেদ (خالد),
• উমর (عمر)। ।[তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১৭]
ব্যক্তির নাম তাঁর স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শাইখ বাকর আবু যায়েদ বলেন, “কাকতালীয়ভাবে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তাআলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রের মধ্যে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে, আর ভাল নামের লোকের চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।” [তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১০, তুহফাতুল মাওদুদ-ইবনুল কাইয়্যেম ১/১২১]
আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকে। খালারা বা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়শঃ দেখা যায়। এ ব্যাপারে শাইখ বাকর আবু যায়দ বলেন, “নাম রাখা নিয়ে পিতা-মাতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে শিশুর পিতাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’[সূরা আহযাব ৩৩:৫]” অতএব শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয় স্বজন বা অপর কোন ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতাই পাবেন অগ্রাধিকার।
ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম:
আল্লাহর নাম নয় এমন কোন নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন,
• আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস),
• আব্দুল কালাম (কথার দাস),
• আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস),
• আব্দুন নবী (নবীর দাস),
• গোলাম রসূল (রসূলের দাস),
• গোলাম নবী (নবীর দাস),
• আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস),
• আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস),
• আব্দুল আলী (আলীর দাস),
• আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস),
• আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস),
• গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস),
• গোলাম কাদের (কাদেরের দাস) ইত্যাদি।
অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম। যেমন- আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি, বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে) আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি)
• অনুরূপভাবে শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) নাম রাখা হারাম। [মুসলিম] মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম রাখা হারাম। সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা হারাম। [তুহফাতুল মাওলুদ ১/১১৫]
• সরাসরি আল্লাহর নামে নাম রাখা হারাম। যেমন- আর-রাহমান, আর-রহীম, আল-আহাদ, আস-সামাদ, আল-খালেক, আর-রাজেক, আল- আওয়াল, আল-আখের ইত্যাদি।
যেসব নাম রাখা মাকরুহ :
ক) যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে বাররা (পূন্যবতী)।•
খ) শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি।
গ) ফেরাউনদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ।[তুহফাতুল মাওদুদ ১/১১৮]
ঘ) বিশুদ্ধ মতে ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা মাকরুহ। যেমন- জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল।
ঙ) যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষ যে অর্থকে ঘৃণা করে এমন অর্থবোধক কোন নাম রাখা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।
চ) একদল আলেম কুরআন শরীফের নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৭]
ছ) ইসলাম বা উদ্দীন শব্দের সাথে সম্বন্ধিত করে নাম রাখা মাকরূহ। ইসলাম ও দ্বীন শব্দদ্বয়ের সুমহান মর্যাদার কারণে।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৫, তুহফাতুল মাওদুদ ১/১৩৬]•
জ) দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ।
ঝ) অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত)।
ঞ) শায়খ বকর আবু যায়দের মতে রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ। যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)
নির্বাচিত আরো কিছু ছেলেদের সুন্দর নাম:
• উসামা (أسامة-সিংহ),
• আফীফ (عفيف-পুতপবিত্র),
• হামদান (প্রশংসাকারী),
• লাবীব (لبيب-বুদ্ধিমান),
• রাযীন (رزين-গাম্ভীর্যশীল),
• রাইয়্যান (ريَّان-জান্নাতের দরজা বিশেষ),
• মামদুহ (ممدوح-প্রশংসিত),
• নাবহান (نبهان- খ্যাতিমান),
• নাবীল (نبيل-শ্রেষ্ঠ),
• নাদীম (نديم-অন্তরঙ্গ বন্ধু),
• আব্দুল ইলাহ (عبد الإله- উপাস্যের বান্দা),
• ইমাদ (عماد- সুদৃঢ়স্তম্ভ),
• মাকহুল (مكحول-সুরমাচোখ),
• মাইমূন (ميمون- সৌভাগ্যবান),
• তামীম (تميم),
• হুসাম (حُسَام-ধারালো তরবারি),
• বদর (بدر-পূর্ণিমার চাঁদ),
• হাম্মাদ (حماد-অধিক প্রশংসাকারী),
• হামদান (حمدان-প্রশংসাকারী),
• সাফওয়ান (صفوان-স্বচ্ছ শিলা),
• গানেম (غانم-গাজী, বিজয়ী),
• খাত্তাব (خطاب-সুবক্তা),
• সাবেত (ثابت-অবিচল),
• জারীর (جرير), খালাফ (خلف),
• জুনাদা (جنادة), ইয়াদ (إياد),
• ইয়াস (إياس),
• যুবাইর (زبير),
• শাকের (شاكر-কৃতজ্ঞ),
• আব্দুল মাওলা (عبد المولى- মাওলার বান্দা),
• আব্দুল মুজিব (عبد المجيب- উত্তরদাতার বান্দা),
• আব্দুল মুমিন (عبد المؤمن- নিরাপত্তাদাতার বান্দা),
• কুদামা (قدامة),
• সুহাইব (صهيب) ইত্যাদি। 
 http://sonarbangladesh.com/blog/DaliaNuzha/102272


শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১২

সাহরী, কালিন সহবাস,কুলি করা ,,ফজরের নামাজ তাড়াতাড়ি ,

সাহরী খাওয়ার সুন্নত সময়:
রোযাদারের জন্য রাতের শেষাংশে সুবহে সাদিকের আগে আগেই সাহরী খাওয়া সুন্নত এবং সাওয়াব ও বরকতরেত কারণ। অর্ধ রাতের পরে যে সময়ই সাহরী খাবে সাহরীর সুন্নত আদায় হয়ে যাব। কিন্তু রাত্রের শেষাংশে সাহরী খাওয়া উত্তম। যদি মুয়ায্যিন সময় হওয়ার পূর্বেই ফযরের আযান দিয়ে দেন, তা হলে সাহরী খাওয়া নিধে নয়। যতণ সুবহে সাদিক না হয়, ততণ খেতে পারবে। সাহরীর সময়ের ব্যপারে হাদীস শরীফে পাওয়া যায়, যায়েদ বিন সাবেত রাদিঃ বর্ণনা করেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সাহরী খেয়েছি তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হয়ে গেলেন। আরেক হাদীসে এসেছে, হযরত আনাস রাদিঃ বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আযান এবং সাহরীর মধ্যে কতটুকু বিলম্ব থাকত? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় পরিমাণ (তরজমা বোখারী :১/৬৮৯)।
সাহরীর জন্য ঘন্টা-ঢোল বাজানো:
সামাজি ও ধর্মীয় অন্যান্য কাজে যে রকম ডাকা ডাকি ও ঘন্টা বাজানো সাইলেন বাজানো জায়েয আছে। তবে প্রচলিত কোন বাদ্যযন্ত্র না হতে হবে। সাহরী ও ইফতারের সময় জানানোর জন্য গানবাদ্ধ সাদৃশ্য ছাড়া প্রয়োজনীয় উচ্চ আওয়াজ সম্বলিত বস্তু দিয়ে মানুষকে ঢাকা যাবে (ফতোওয়ায়ে রহীমিয়া/ শামী)।
তাড়াতাড়ি সাহরী খেয়ে অব্যস্ত কিছু খাওয়া:
যথা সম্ভব সাহরী দেরী করে খাবে। মনে রাখতে হবে যাতে রোযার ব্যপারে সন্দেহ সৃষ্টি না হয় (বেহেস্তী জেওর)।এ এ ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, সাহরী তাড়াতাড়ি খেয়ে তারপর পান, তামাক (সিগারেট) চা ইত্যাদী দেরি করে পানাহার করে আর যখন সুবহে সাদিক হওয়ার সামান্য সময় বাকি থাকে তখন কুলি করে নেয়, তা হলে বিলম্ব করে সাহরী খাওয়ার সওয়াব পেয়ে যাবে (শরহুল বিদায়াহ)। তবে রামাযান মাসে পান সিগারেট যতটুকু সম্ভব পরিহার করা ভাল। অনেক সময় দেখা যায়, সাহরী খাওয়া সময় মুয়াজ্জিন সাহেব আযান দিয়ে দিচ্ছে, এসময়টা নিয়ে অনেক সময় আমাদের দেশের কতক লোকটে রোযা নিয়ে সন্দেহ মনোরোগে ভোগে। এেেত্র ফয়সালা হচ্ছে, যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সুবহে সাদিক হওয়ার পরেই আযান আরম্ভ হয়েছে, তা হলে রোযা হবেনা। আর যদি মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সুবহে সাদিকের পূর্বে না পরে তাহলে ঐ সময়ে পানাহার মাকরূহ তবে রোযা হয়ে যাবে (আহসানুল ফতোওয়া)।
সাহরী খাওয়া ছাড়া রোযা হবে কি না?
এমন রোগও কারো কারো মাঝে দেখা যায়, সাহরী খাওয়া মূলত রোযার জন্য মুস্তাহাব। সুতরাং সাহরী খাওয়া ছাড়া রোযা হয়ে যাবে (ফতোওয়ায়ে দারুল উলুম)। জাগ্রত না হওয়ার কারণে সাহরী ছুটে গেলে সাহরী খাওয়া ছাড়াই রোযা রাখবে। সাহরী না খাওয়ার অজুহাতে রোযা ছেড়ে দেওয়া যাবেনা।
সাহরী খাওয়ার পর বিবির সাথে সহবাস করা:
আমাদের দেশে অনেক সময় এমনও হয়। সাহরী খাওয়ার পর স্ত্রীর সাথে সহবাস করা হয়। এমতাবস্থায় রোযাদারের করণীয় কি? ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম ও মিশকাত শরীফে পাওয়া যায়, রমযান শরীফে সাহরী খাওয়ার পর যদি সুবহে সাদিক হওয়ার সময় দেরী থাকে, তা হলে স্বীয় বিবির সাথে সহবাস করা যাবে। কোন ব্যক্তি যদি সুবহে সাদিকের পূর্বে সাহরী খেয়ে সুবহে সাদিকের সময় থাকতে থাকতে বিবির সাথে সহবাস করে তাহলে দোষের কিছু নেই। সাহরীও দ্বিতীয়বার খেতে হবেনা এবং রোযারও কোন প্রকার তি হবেনা। ফরজ গোসল সুবহে সাদিকের পর করলেও কোন অসুবিধা নেই।
সাহরী খাওয়ার পর কুলি করা প্রসঙ্গে:
এবিষয়টা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা আমাদের দেশের মানুষের প্রায়শ দাঁতের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের দাঁতের মধ্যে বড় বড় গর্ত ও সুড়ঙ্গ সৃষ্টি হয়। ফলে কিছু খাওয়ার পর দাঁতের ঐসমস্ত গর্তে খাদ্যদ্রব্যের কিছু কিছু অংশ লুকিয়ে থাকে। এজন্যে সাহরী খাওয়ার পর ভালভাবে কুলি করে নেবে যেন দাঁতের ফাঁক ফোঁকে কোন খাদ্যদ্রব্য আটকে থাকলেও তা পরিস্কার হয়ে যায়। মনে রাখা ভাল, কুলি না করার কারণে দাঁতের ফাঁকে চনা বা বুটের সমপরিমাণ অথবা তার বেশী কোন খাদ্য যদি আটকে যায়, এবং তা যদি গলার ভিতর চলে যায়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এরোযার েেত্র উক্ত রোযার কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা ওয়াজিব হবেনা। উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে ছোট বা কম হলে রোযা ভাংবে না। তারপরও সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কুলি করে নেওয়া ভাল (আহসানুল ফতোওয়া)।
রমাযান মাসে ফজরের নামাজ তাড়াতাড়ি করা প্রসঙ্গে:
রমাযান মাসে দেখা যায় অনেক লোক সাহরী খাওয়ার পর ফজরের নামাজ দেরী আছে তখন তারা ঘুমিয়ে পড়ে, এবস্থায় অনেক লোকের ফজরের মূল্যবান নামাজ ছুটে যায় আবার অনেকের কাযা হয়ে যায়। উক্ত বিষয়ে ফয়সালা হল, রমাযানে সাহরী খাওয়ার পরে, প্রথম ওয়াক্তে ফযরের নামাজের জন্য নামাজীরা একত্রিত হলে এবং প্রতিদিনের সময়মত (রমাযান ছাড়া অন্যান্য সময়ের ফযরের নামাজের মত) জামাত করতে গেলে অধিকাংশ লোকের জামাত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে। এমনকি নামাজই কাযা হয়ে যায়। তাই রমাযান মাসে ফজরের নামাজ প্রথম সময়ে আদায় করে নেওয়া উত্তম (ফতোওয়ায়ে মাহমুদিয়াহ)।

বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১২

আহলে হাদীসের সাথে যেসব ক্ষেত্রে মতবিরোধ 1

আহলে হাদীসের সাথে যেসব ক্ষেত্রে মতবিরোধ
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ

১. তাকলীদ প্রসঙ্গ সাহাবা,তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন অর্থাৎ চার মাযহাবের ইমামগণের তাকলীদ করাকে তারা বিদ‘আত বা শিরক বলে। অথচ কুরআন ও হাদীসের আলোকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’-এর নীতি-আদর্শ হলো, যে ব্যক্তি ইজতিহাদ করার যোগ্যতা, তার জন্য ইজতিহাদ করা জরুরী। তাকলীদ করা অবৈধ। আর যার মাঝে ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই, তার জন্য কোনো এক মুজতাহিদ ইমামের মাযহাবের তাকলীদ করা ওয়াজিব।


২. আল্লাহর গুনাবলী প্রসঙ্গ কুরআন, হাদীসে এমন কিছু শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার গুনাবলির বিবরণ আছে, যেগুলোর বাহ্যিক অর্থে আল্লাহর আকৃতি,দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রমাণিত হয়। এধরনের আয়াত ও হাদীসের ক্ষেত্রে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর মতাদর্শ হলো, এগুলোর বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করা হবে না। কারণ বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করলে কুরআনের আয়াতليس كمثله شيئ وهو السميع البصير অর্থাৎ “আল্লাহর সমতুল্য কিছুই নেই, তিনি শুনেন ও দেখেন”।(সূরা শুয়ারা-১১) এর পরিপন্থী হয়ে কুরআন অমান্য করার নামান্তর হয়। কিন্তু আমাদের দেশের আহলে হাদীস এ নীতিতে বিশ্বাসী নয়। তারা এমন মতাদর্শের অনুসারী যা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত” এর মাপকাঠিতে পড়ে না। বরং তারা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর ইমামদ্বয় যথাক্রমে আবুল হাসান আশআরী ও আবু মানসুর মাতুরীদিকে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ বলে প্রচার করে।

৩. দোয়ার মধ্যে উসিলা প্রসঙ্গ
কুরআন-হাদীসের যেসব অবস্থায় উসিলা দিয়ে দোয়া করার ফযিলত ও বৈধতা প্রমাণিত “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”সে উসিলাকে যথাযথ স্থানে বৈধ বা মুস্তাহাব মনে করেন। সারকথা হল, জীবিত বা মৃতব্যক্তি নিজের আমল ও অন্যের আমল দ্বারা উসিলা গ্রহণ সর্বাবস্থায় জায়েয। কারণ এ সবগুলোর মূলকথা হলো, আল্লাহ তা‘য়ালার উসিলা ধারণ। অথচ লা-মাযহাবীরা এ বিষয়ে গোঁড়ামির পথ অবলম্বন করে, বৈধকে অবৈধ সাব্যস্ত করে। যা বহু আয়াত ও হাদীসের অপব্যাখ্যার শামিল।

৪.ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ প্রসঙ্গ
কুরআনের আয়াত,আল্লাহর নাম এবং হাদীসে বর্ণিত দোয়াসমূহ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”এর নীতি-আদর্শে বৈধ। তবে লা-মাযহাবীরা এ নিয়ে চরম বাড়াবাড়ি ও একগুঁয়েমীর নীতি অবলম্বন করে তাবিজ-কবজকে কুফর আখ্যায়িত করে।
‘আল-লুমআত শরহে মিশকাত’-এ উল্লেখ আছে ,
وهي جائزة بالقرآن والاسماء الالهية ومافي معناها بالاتفاق
ঝাড়-ফুঁক কুরআন, আসমায়ে হুসনা ও অনুরূপ অর্থ বিশিষ্ট বাক্য দ্বারা জায়েয ও বৈধ। তবে যে কালামের অর্থ জানা যায় না, অনারবী ভাষায় শিরকযুক্ত কালাম দ্বারা তাবিজ-কবজ,ঝাড়-ফুঁক করলে এবং এগুলোর নিজস্ব ক্ষমতা আছে মনে করলে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। যে হাদীসে ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজকে শিরক বলা হয়েছে তা উপরোক্ত কারণ পাওয়া যাওয়ার শর্তে বলা হয়েছে।

৫. রাসূলের রওযা যিয়ারতের নিয়তে মদিনা যাওয়া প্রসঙ্গ
আমাদের দেশের আহলে হাদীসগণ আল্লামা ইবনে তাইমিয়া ও কাজী ইয়াজ রহ.-এর ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে সাহাবা, তাবেঈনের আমল ও আদর্শের বিপরীতে এ নিয়ে নতুন বিতর্ক ও ফিতনার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হল, মুসলমান মদিনা শরীফে যাবে একমাত্র মসজিদে নববীতে নামায পড়ার নিয়তে। রওযা শরীফ যিয়ারতের নিয়তে মদিনা গমন অবৈধ, কারণ হাদীস শরীফে এসেছে- لاتشدوا الرحال الا الي ثلثة مساجد…الخ “মসজিদে নববী, হারাম শরীফ ও মসজিদে আকসা ছাড়া অন্য কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না”।

হাদীসের উক্ত ব্যাখ্যা নিতান্ত ইবনে তাইমিয়ার নিজস্ব ব্যাখ্যা। অথচ সকল মুহাদ্দিসগণ এর ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেন যে, উক্ত তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। অর্থাৎ তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য স্থানে সফর করার বিষয়টি এর অন্তর্ভুক্তই নয়। এটাই সঠিক ব্যাখ্যা। তাহলে রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন কিভাবে অবৈধ। কারণ এর অনুকূলে হাদীস পাওয়া যায়। তাছাড়া আল্লামা আইনী ও আসকালানী রহ.সহ সকল মুহাদ্দিস এ ব্যাখ্যাকে সঠিক বলেছেন। তাই রাসূলের রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদিনা গমন করা শরীয়তসম্মত।

৬. জুম‘আর খুতবা অনারবীতে পড়া প্রসঙ্গ
সম্প্রতি আহলে হাদীসরা জুম‘আর খুতবা অনারবীতে ও আঞ্চলিক ভাষায় পড়ার কথা বলে থাকে। এ প্রসঙ্গে তাদের কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। কারণ রাসূল স. ও সাহাবাদের যুগে কখনো অনারবীতে খুতবা দেয়ার প্রমাণ মেলে না। সাহাবিদের মধ্যে যারা ভিন্ন ভাষাভাষী ছিলেন, তারাও নিজেদের দেশে মাতৃভাষায় খুতবা পড়েননি। একারণেই ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত, পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বহু ভাষার মুসলমান থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা পড়ার নিয়ম চালু হয়ে আসছে।
হ্যাঁ, লা-মাযহাবীদের নিকট শুধু যুক্তি ও কিয়াস আছে।

 অথচ তারা যুক্তি কিয়াসের বিরোধী। তারা শুধু কুরআন,হাদীস মানার দাবী করে থাকে। এ বিষয়ে কুরআন,হাদিস বাদ দিয়ে মনগড়া যুক্তির ভিত্তিতে অনারবী ভাষায় খুতবা পড়ার প্রথা চালু করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর মৌলিক আদর্শ ও মাপকাঠি বিরোধী। তাই তারা এ বিষয়েও “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”থেকে বহির্ভূত।

৭. নামাযে মুক্তাদির সূরা ফাতেহা পড়া,জোরে আমীন বলা,
বার বার হাত উঠানো প্রসঙ্গ


এ বিষয়গুলো এমন যে, রাসূল স. থেকে এসব বিষয়ে বিভিন্ন রকম বিবরণ পাওয়া যায়। ফলে এর ব্যাখ্যায় মাযহাবের ইমামগণ মতবিরোধ করেছেন। মুজতাহিদগণের মতামত দেয়ার অধিকার কুরআন-সুন্নাহ কর্তৃক প্রমাণিত। যারা মুজতাহিদ নন, তারা যে ইমামের তাকলীদ করেন সে ইমামের মতানুসারে আমল করাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”এর আদর্শ। যেমন, মুক্তাদি নামাযে ফাতেহা পড়া। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রকম আয়াত ও হাদীস রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী রহ. ফাতেহা পড়াকে ওয়াজিব বলেছেন, তাই শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়াই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর আদর্শ।
ইমাম আবু হানিফা রহ. ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়াকে নাজায়েয বলেছেন, তাই হানাফিদের জন্য ইমামের পিছনে ফাতেহা না পড়াই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ।

পক্ষান্তরে লা-মাযহাবীরা মুজতাহিদও নন যে, নিজেরাই একটি স্বতন্ত্র মত উদ্ভাবন করবেন। আবার কোন মাযহাবের অনুসারীও নন যে, ইমামের মাযহাব মতে আমল করবেন। তাহলে মুক্তাদি হয়ে ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতেহা পড়াও তাদের জন্য সুন্নাত হবেনা, না পড়াও সুন্নাত বলে গণ্য হবে না। তা সত্ত্বেও ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মত মুজতাহিদের ইজতিহাদকে ভুল আখ্যা দিয়ে সূরা ফাতিহা পড়ার উপর চেঁচামেচি করা আহলে সুন্নাতের আদর্শ পরিপন্থী, যা তারা করে থাকেন।

মুজতাহিদ না হয়ে কোন মুজতাহিদের তাকলীদ না করে নামাযে বার বার হাত উঠানো বা না উঠানো কোনোটিই সুন্নাতের অনুকরণ হবে না। আমীন জোরে বললেও সুন্নাতের অনুকরণ হবে না। আস্তে বললেও হবে না। তাই এসব বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ পরিপন্থী। তাই তারা এসব ব্যাপারেও “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”বিরোধী।

৮. তাসাওফ ও আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি
শরীয়ত ও তরীকত উভয়ই ইসলামের অঙ্গ,একটি অপরটির পরিপূরক। ইসলামে শরীয়তবিহীন তরীকতের যেমন অনুমোদন নেই, তেমনি তরীকতবিহীন শরীয়তেরও কোনো মূল্য নেই। মানুষের বিবেক যেন পাহারা দিচ্ছে শরীয়তকে, আর অন্তর পাহারা দিচ্ছে তরীকতকে। সাহাবায়ে কিরাম, আসলাফ এ আদর্শের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
 তাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ হলো, যেভাবে শরীয়তের যাহেরী বিধানের উপর আমল করা জরুরী। তদ্রুপ ইখলাস, তাকওয়া,সবর, শোকর প্রভৃতি আত্মার গুনাবলি অর্জন এবং রিয়া, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি অন্তরের ব্যাধিগুলো দূর করাও মুমিনের উপর ওয়াজিব।

 ইরশাদ হয়েছে, قد افلح من زكها وقد خاب من دسها অর্থাৎ “সফলকাম সে, যে নিজের তাযকিয়া তথা আত্মশুদ্ধি করে” আর আত্মশুদ্ধির এ সাধনাকে বলা হয় আধ্যাত্মিক সাধনা। হাদীসের ভাষায় এর নাম ইহসান। যা বুখারী শরীফের ঐতিহাসিক ‘হাদীসে জিবরাঈল’-এ উল্লেখ হয়েছে।
 কুরআন-হাদিস এবং সাহাবাদের অনুকরণে তাসাওফকে জরুরী মনে করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ।

 তবে এতে অতিমাত্রায় আসক্তি কুরআন-সুন্নাহ বিকৃতির শামিল, যা ভণ্ডপীরের স্বভাব। এটা যেমন হারাম ও বাতিল বলে গণ্য, তেমনি ভাবে হাদীসের ইহসানের ব্যাখ্যা না মেনে আধ্যাত্মিক সাধনাকে শিরক বা বিদ‘আত বলা, যা লা-মাযহাবীদের আদর্শ তাও বাতিল ও ভ্রষ্টতা এবং কুরআন-হাদীস বিকৃতি।

http://www.islamforuniverse.com/archives/2331

নাসিরুদ্দিন আলবানী সম্পর্কে কিছু চমৎকার তথ্য জানতে এখানে

নাসিরুদ্দিন আলবানী সম্পর্কে কিছু চমৎকার তথ্য
1. ভিন্ন চিন্তা চেতনার অধিকারী আলবানী সাহেব কোন প্রতিষ্ঠানে বা কোন উস্তাদের নিকট পড়া লেখা করেন নাই, নিজস্ব গবেষনার মাধ্যমে সুন্দর বিন্নস্ত আকারে অনেক গবেষনা মূলক বই পুস্‌তক পাঠকবর্গকে উপহার দিয়েছেন।
তাই এতে তিনি হাদীস যাচাই বাছাইয়ে হাদীস শাস্ত্রের বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ও তাদের প্রনীত মূলনীতির পরোয়া না করে নিজ মতাদর্শকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করেছেন। একারণে বিচক্ষন উলামায়ে কেরামের নিকট হাদীসের মান নির্ধারনে আলবানী সাহেবের গবেষনায় অনেক ক্ষেত্রে মতবিরোধ হয়েছে, এমন কি হাদীস গবেষনার জগতের বিজ্ঞ উলামাগন আলবানী সাহেবের ভূলত্রুটি একত্র করে ৫০ টির অধিক পুস্‌তক রচনা করেছেন।

তাম্মধ্যে
১। তানাফুজাতে আলবানী- গ্রন্থকারঃ- হাসান ইবনে আলী আস সাক্কাফ,
প্রকাশনায়ঃ-দারুল ইমাম বিন নবুবী- (উমাম- উর্দুন) এবং
২। তানবীহুল মুসলিম ইলা তাযাদ্দী আলবানী-গ্রন্থকারঃ- মাহমুদ সাইদ মামদুহ-
প্রকাশনায়ঃ মাকতাবা-আল ইমাম শাফী-(রিয়াদ-সৌদী)
বিষেশ ভাবে উল্লেখ যোগ্য।


2. তিনি অনেক সহীহ হাদীসকে যঈফ এবং যঈফ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। প্রথমে আমরা দেখব নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব কিভাবে সহীহ হাদিসকে যঈফ বলেছেন , তার উদাহরন :
আবু হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে বর্নিত রাসুল (সাঃ) বলেনঃ- যখন তোমাদের কেহ রাত্রিতে নামাযের জন্য দাড়ায়, তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাতের মাধ্যেমে আপন নামাযকে শুরু করে।

হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম (রহঃ) স্বীয়গ্রন্থ সহীহ মুসলিম (১/৫৩২) পৃষ্টায় উল্লেখ করেন । এ ছাড়াও আল ইহসান ফি তাকরিবে সহীহ ইবনে হিববান-(৬/৩৪০) আল মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল-(৯/১২৯) শরহুস সুন্নাহ লিল ইমাম বগবীতে (৪/১৭) উল্লেখ করা হয়েছে।


হাদীসটিকে যুগ শ্রেষ্ট হাদীস গবেষকগন গবেষনার মাধ্যমে বিশুদ্ধ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তম্মেধ্যে উল্লেখ যোগ্য ,
আল্লামা শুয়াইব আরনাউত (রহঃ) মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ(১৫/৯৮)-
ইমাম বগবী (রহঃ) স্বীয় কিতাব শরহুস সুন্নাতে (৪/১৭)
হামজা আহমাদ যাইন (রহঃ) মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদে (৯/১২৯) বিশুদ্ধ হাদীস বলে ঘোষনা করেছেন।
উল্লেখিত হাদীসটিকে আলবানী সাহেব স্বীয় কিতাব ‘‘যইফুজ জামে ও যিয়াদাহ’’ নামক গ্রন্থে (১/২১৩-) উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম (রহঃ) এবং ইমাম আহমাদ (রহঃ) আবু হুরাইরা (রাঃ) এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি (যঈফ) মর্জাদার দীক দিয়ে দুর্বল।

এবার আমরা দেখব নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব কিভাবে যঈফ হাদিসকে সহীহ বলেছেন , তার
***************************************************************************

উদাহরন :
হযরত উমায়ের ইবনে সাইদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস তিনি বলেন তোমরা মোয়াবিয়া (রাঃ) কে ভাল ভাবেই স্বরণ কর, কেন না আমি রাসুল (সাঃ) থেকে শুনেছি রাসুল (সাঃ) বলেছেন হে আল্লাহ তুমি মোয়াবিয়াকে হেদায়েত দাও। (সুনানে তিরমিজি-৫/৬৪৫)
হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ সাব্যস্হ করে স্বীয় কিতাব সহীহ সুনানে তিরমিজি (৩/২৩২) তে উল্লেখ করেছেন। অথচ হাদীসটির সূত্রের উপর গবেষনার দ্বারা দেখা যায় হাদীসটি মানগত ভাবে অত্যন্ত দুর্বল।
সূত্রের একজন রাবী-আমর ইবনে ওকেদ ইনার ব্যাপারে উলামাদের বক্তব্য,
১। হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন (মাতরুক) ইনি পরিত্যাজ্য।
(তাকরিব-আত তাহজীব-৪২৮পৃঃ)
২। ইমাম বুখারি ও তিরমিজি (রহঃ) বলেন (মুনকারুল হাদীস) ইনি এমন রাবী যাদের হাদীস গ্রহন করা হয় না।
৩। আল্লামা মারওয়ান (রহঃ) বলেন (কাজ্জাব) মিথ্যাবাদী।
৪। ইমাম নাসায়ী,দারাকুতনী, এবং ইমাম বুবকানী (রহঃ) এনারা এই রাবীর ব্যাপারে একমত হয়ে বলেন (মাতরুকুল হাদীস) ইনি এমন রাবী যাদের হাদীস পরিত্যাজ্য। (তাহজীবত তাহজীব (৮/৯৮)
সূত্রের রাবী আমর ইবনে ওকেদ সম্পর্কে উল্লেখিত ইমামদের বক্তব্যের দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হল হাদীসটি কোন অর্থেই সহীহ হতে পারে না।

এমন কি আলবানী সাহেব এই রাবীকে দুর্বল সাব্যস্‌ত করে ওনার কিতাব ‘‘জয়ীফা’’ তে (২/৩৪১) উল্লেখ করেছেন। স্বয়ং তিরমিজি (রহঃ) উল্লেখিত হাদীসটি (যঈফ) দুর্বল হিসেবে ইংগীত করে স্বীয় কিতাব সুনানে তিরমিজিতে (৫/৬৪৫) বর্ণনার শেষে বলেন, আমর ইবনে ওকেদ দুর্বল রাবীদের অন্‌তর ভুক্ত।

3. আলবানী সাহেব একই রাবীকে কখনও সিকাহ বা গ্রহনযোগ্য এবং অন্যসময় যঈফ বা অগ্রহনযোগ্য বলেছেন। এ বিষয়টি ওনার গবেষনার জগতের ভূল ত্রুটির অন্যতম একটি অংশ ।

 উদাহরন স্বরুপ একটি ঘটনা নিম্নে তুলে ধরা হল।


আবু উমামা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন তোমরা মুমিন ব্যক্তির অন্তদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাক, কেননা সে আল্লহ তা’লার নূরের দ্বারা দৃষ্টি করে থাকেন। (মুজামুল আওসাত-৩/৪৪৫)
উল্লেখিত হাদীসটির সূত্রের এক জন রাবী হলেন আবু সালেহ আব্দুল্লহ ইবনে- সালেহ । হাদীসটি আলবানী সাহেবের মতাদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারনে তিনি আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহকে দুর্বল আখ্যায়িত করে হাদীসটি অগ্রহনযোগ্য হিসাবে স্বীয় কিতাব ‘‘সিলসিলাতুল আহাদীস আজ যইফাতু মওযুয়া,, (৪/২৯৯) তে উল্লেখ করেছেন।

অথচ আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহ-এই একই রাবীর মাধ্যমে ইমাম তিরমিজি (রহঃ) স্বীয় কিতাব সুনানে তিরমিজিতে ইবনে মুররা (রাঃ)এর সূত্রে হাদীস উল্লেখ করেছেন রাসুল (সাঃ) বলেন হুসাইন আমার থেকে আর আমি হুসাইনের থেকে-, যে ব্যক্তি হুসাইনকে ভালবাসে সে আল্লাহ তা’লাকে ভালবাসে। হুসাইন আমার পরবর্তি-বংশধর।
সূনানে তিরমিজি-(৫/৬১৮)

হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ হিসাবে স্বীয় কিতাব সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহীহা (৩/২২৯) তে উল্লেখ করেন। এবং বলেন হাদীসটির সনদ উৎকৃষ্ট মানের আবু আব্দুল্লা ইবনে সালেহ এর ব্যপারে দৃর্বলতার যেই কথা রয়েছে তাহা কোন ক্ষতিকারক নয়।
উপরের উদাহরন দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম , একই রাবী আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহকে আলবানী সাহেব কখনও দুর্বল আবার কখনও গ্রহনযোগ্য সাব্যস্হ করেছেন।
লেখকঃ এ.এস.কে. সুমন
http://www.islamforuniverse.com/archives/2339

রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১২

মক্কা কাবা শরীফ সরাসরি সম্প্রসার লিংক

 [1]  মক্কা কাবা শরীফ সরাসরি সম্প্রসার লিংক
http://www.youtube.com/user/MakkahLive  

[2]  মক্কা কাবা শরীফ সরাসরি সম্প্রসার লিংক
http://ar.justin.tv/bidayatv?utm_campaign=live_embed_click&utm_source=www.7tot.com#/w/3111194352/9 

[3] মক্কা কাবা শরীফ সরাসরি সম্প্রসার লিংক
http://ar.justin.tv/makkahlive#/w/3469425232/9

 [4] মক্কা কাবা শরীফ সরাসরি সম্প্রসার লিংক
http://www.youtube.com/user/MakkahLive?feature=plcp&v=cMgnsrJXTOc

শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১২

,,,রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?

রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?

প্রশ্ন
রোযা অবস্থায় শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতে ইনহেলার ব্যাবহার করলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
উত্তর
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে,শ্বাস গ্রহণের রাস্তা দিয়ে কোন ঔষধ উদাহরণ স্বরূপ ভেনটোলিন ইনহেলার ব্যবহার করলে তার ১০% উপকরণ সরাসরি ফুসফুসে পৌছায়,বাকী ৯০% উপকরণ পরিপাকযন্ত্র শোষন করে,আর এ অবস্থায় ঔষধ সরাসরি রোগীর পেটে গিয়ে পৌঁছায়।
যেহেতু ইনহেলার গ্রহণের রাস্তাটি সেটাই যেটা দ্বারা খাদ্য পেটে যায়, বা খাদ্য পৌঁছানোর নালির নিকটবর্তী শিরা দিয়ে তা গ্রহণ করা হয়,তাই এর দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যাবে। সতর্কতা এটাই। সতর্কতা হিসেবে শরয়ী অনেক বিধানই সাব্যস্ত হয়। উদাহরণত-
1-ঘুমকে অযু ভঙ্গের কারণ সাব্যস্ত করা। এ হিসেবে যে, ঘুমিয়ে গেলে নিতম্ব জমিন থেকে উঠে যেতে পারে, ফলে বায়ু বের হয়ে যায়। যদিও ঘুম অযু ভঙ্গের কারণ নয়, বরং বায়ু বের হওয়া হল অযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু যেহেতু ঘুমিয়ে গেলে এসব ব্যাপারে কোন খবর থাকে না, তাই ঘুমটাকেই সতর্কতাস্বরূপ অযু ভঙ্গের কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। {বাদায়েউস সানায়ে-২/৫৩৫}
২-সহবাস করা সত্বেও বীর্যপাত না হলেও গোসল করাকে আবশ্যক সাব্যস্ত করা হয়েছে। অথচ গোসল ওয়াজিব হওয়ার মূল কারণ হল বীর্যপাত হওয়া। এটা এজন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, যেহেতু বীর্যপাত সহবাসের কারণেই হয়ে থাকে। তাই কারণটাকেই সতর্কতাস্বরূপ মূল বিষয়ের হুকুমে সাব্যস্ত করা হয়েছে। {হেদায়া-১/১৯, বাদায়েউস সানায়ে-১/১৪৬}
৩-
এমনিভাবে ঐ ব্যক্তির উপর রোযা রাখা আবশ্যক করা হয়েছে সতর্কতাস্বরূপ যে নিজে চাঁদ দেখেছে কিন্তু বিচারক তথা চাঁদ কমিটি তার চাঁদ দেখাকে গ্রহণ করেনি। {হেদায়া-১/১৯, বাদায়েউস সানায়ে-১/১৪৬, ফাতওয়ায়ে শামী-১/২৯৯}
যেহেতু ইনহেলার সে রাস্তা দিয়েই ব্যবহার করা হয়, যা দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করা হয়, তাই সতর্কতামূলত রোযা ভেঙ্গে যায় বলেই হুকুম আরোপিত করা হবে।
রোযা অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া ইনহেলার ব্যবহার করা জায়েজ নয়। যদি কেউ একান্ত বাধ্য হয়ে ইনহেলার ব্যবহার করে তাহলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে পরে তা কাযা আদায় করতে হবে।
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ [٢:١٨٥]
কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে,সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর,যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। {সূরা বাকারা-১৮৫}
রোযা অবস্থায় ভাঁপ দিয়ে ওষুধ পৌঁছানোর বিধান
ভাঁপ দিয়ে মুখে ভিতর ওষুধ পৌছানোর দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যায়। চাই আগের পদ্ধতিতে ভাঁপ দেয়া হোক বা নতুন কোন মেশিনের দ্বারা ভাঁপ দেয়া হোক। সর্বাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে। কারণটি স্পষ্ট। সেটা হল-এর দ্বারা হলকের ভিতরে ওষুধ পৌঁছে যায়।
উত্তর লিখনে
লুৎফর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা।
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com

নামাযরত অবস্থায় কেউ ডাকলে কী করণীয়?

নামাযরত অবস্থায় কেউ ডাকলে কী করণীয়?

প্রশ্ন
নামাযরত অবস্থায় কেউ যদি ডাকে, তাহলে কী করণীয়? অর্থাৎ নামাযরত ব্যক্তি কিভাবে একথা জানাবে যে, সে নামাযরত আছে?
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
নামাযরত অবস্থায় কোন ব্যক্তির প্রশ্নের জবাব দেবার নিমিত্তে কোন কিছু বললে বা করলে নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু সে নামাযরত একথা জানানোর জন্য কিছু কাজ করতে পারে, এর দ্বারা নামায ভঙ্গ হয় না। যেমন-সুবহানাল্লাহ বা আল্লাহু আকবার বলবে, কিংবা ক্বিরাত একটু জোরে পড়বে, যাতে যে ডাকছে সে বুঝতে পারে যে, লোকটি নামাযরত। তাহলে নামায ভঙ্গ হবে না। {ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/৪৯}
দলিল
فى رد المحتارسمع اسم الله تعالى فقال جل جلاله أو النبي صلى الله عليه وسلم فصلى عليه ، أو قراءة الإمام فقال صدق الله ورسوله تفسد إن قصد جوابه الخ وقيد بقصد الجواب لأنه لو لم يرد جوابه بل أراد إعلامه بأنه في الصلاة لا تفسد اتفاقا (رد المحتار، كتباب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة-2/381)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com

তাযাল্লিয়াতে সফদর-৫ (আমি যেভাবে হানাফী হলাম-দ্বিতীয় পর্ব) 02

তাযাল্লিয়াতে সফদর-৫ (আমি যেভাবে হানাফী হলাম-দ্বিতীয় পর্ব)

তাযাল্লিয়াতে সফদর-৫ (আমি যেভাবে হানাফী হলাম-প্রথম পর্ব)‎
কর্ম পদ্ধতি
আমার ব্রেইন যখন পোক্ত হয়ে গেল তখন আমার উস্তাদজি বলতেন-“একবার দু’ তিনজন সাধারণ হানাফী যুবককে ধরে আমি ‎বললাম-‘আমাকে তোমাদের হানাফী মাওলানা সাহেবের কাছে নিয়ে চল, সে যদি আমাকে একটি হাদিস দেখাতে পারে ‎তাহলে আমি হানাফী হয়ে যাব’। সেই বেচারারা আমাকে তাদের মাওলানা সাহেবের কাছে নিয়ে গেল। আমি মাওলানা ‎সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম-“মাওলানা সাহেব! একটি হাদিস দেখাও! যেখানে নবীজী সা. বলেছেন যে, তাকে ছেড়ে আবু ‎হানীফার তাকলীদ করতে বলেছেন”। প্রশ্নটি করার পর আমি তাদের জবাব ভাল করে শুনিনা কখনো। বরং প্রতি দু’ মিনিট ‎পরপর আমি এই দুই যুবককে স্বাক্ষ্য বানিয়ে বলতাম-‘দেখ! মাওলানা সাহেবের একটি হাদিসও মুখে আসেনা। যখন ‎দ্বিতীয়বার আমি মাওলানা সাহেবকে বলতাম যে, ‘আপনারতো একটি হাদিসও মুখ দিয়ে বের হয়না’। তখন তিনি ‎স্বাভাবিকভাবেই ক্ষেপে যান। তখন আমি উঠে চলে আসলাম”। ‎
উস্তাদজি আনন্দচিত্তে আমাকে নিয়ে কয়েকটি গ্রামে ভ্রমণ করেছেন, আর আমার ব্যাপারে প্রচার করতেন যে, ‘দেখ! এই ছেলে ‎ওমুক হানাফী মুফতী সাহেবকে লা-জাওয়াব করে দিয়েছে। সে একটি প্রশ্নের জবাবও দিতে পারেনি। একটি হাদিসও দেখাতে ‎পারেনি। ‎جاء الحق وزحق الباطل ان الباطل كان زهوقا‎ অর্থাৎ সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, নিশ্চয় মিথ্যা অপসৃতই হয়ই, এই ‎স্লোগান দিতে থাকতেন’।
ছয় নাম্বার
উস্তাদজি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। তিনি বলতেন যে, হানাফীদের পর্যুদস্ত করার জন্য কুরআন হাদিস আর ফিক্বহ পড়ার ‎কোন দরকার নাই। নিম্নের কয়েকটি বিষয় ভাল করে পড়েই তাদেরকে পর্যুদস্ত করে একশত শহীদের সওয়াব পেতে পার। ‎
১. যখন কোন হানাফীর সাথে সাক্ষাত হয় তখন তাকে প্রশ্ন কর যে, আপনি যে ঘড়ি হাতে দিলেন এটা কোন হাদিস দ্বারা ‎প্রমাণিত? এরকম প্রশ্নের জন্য কোন ইলমের প্রয়োজন নেই। তুমি একটি ছয় বছরের বাচ্চাকে মেডিকেল ষ্টোরে পাঠিয়ে দাও। ‎সে ওষুধের উপর হাত রেখে প্রশ্ন করবে যে, এই ওষুধের নাম হাদিসের কোথায় আছে? এই প্রশ্নটির পর নিজের মসজিদে এসে ‎বলবে যে, আমি অমুক হানাফী মাওলানা সাহেবকে হাদিস জিজ্ঞেস করলাম, সে বলতে পারেনি। তারপর তখন সকল গায়রে ‎মুকাল্লিদ বাচ্চা ও বয়স্কদের উপর ফরজ হল, তারা প্রত্যেক অলিতে গলিতে এই প্রচারণা চালাবে যে, ওমুক হানাফী মাওলানা ‎সাহেব একটি হাদিসও জানেনা।
২. দ্বিতীয় নাম্বার হল এই যে, আল্লাহ না করুন যদি তুমি কোথাও ফেঁসে যাও, আর তোমাকে জিজ্ঞেস করে বসে যে, তুমি যে ‎পাঞ্জাবীতে পকেট লাগালে তার নাম হাদিসের কোথায় আছে? তখন ঘাবরিওনা, বরং তৎক্ষণাৎ তাকে জিজ্ঞেস কর যে, কোন ‎হাদিসে এর নিষেধাজ্ঞা আছে? আর শোরগোল শুরু করে দিবে যে, নিষেধাজ্ঞার হাদিস দেখাতে পারবেনা, ওমুক কাজ করারও ‎হাদিসও দেখাতে পারবেনা। তখন সকল গায়রে মুকাল্লিদরা এটা প্রচার করতে শুরু করবে যে, সে হাদিস কোত্থেকে পাবে? ‎সেতো সারা জীবন ফিক্বহ নিয়েই পড়ে থাকে।
৩. আর যদি কোন স্থানে এভাবে ফেঁসে যাও যে, ‘কোন হাদিসের কিতাব নিয়েই আসে, আর বলে যে, তুমি আহলে হাদিস, ‎অথচ কত হাদিসের উপর তোমাদের আমল নেই’। একথা শুনে ঘাবরানোর দরকার নেই, তখন হঠাৎ করেই কাশি দিয়ে বলতে ‎শুরু করবে যে, এই হাদিসের কোন ঠিক নেই, কোত্থেকে এনেছ? আমরাতো কেবল বুখারী মুসলিম আর বড় জোর সিহাহ সিত্তার ‎হাদিসই কেবল মানি। বাকি সব হাদিসের অধিকাংশ কেবল শুধু অস্বিকারই করিনা, বরং বিদ্রোপও করি। আর আমাদের হাসি ‎তামাশা দেখে বেচারা এতটাই লজ্জা পাবে যে, সে হাদিসের কিতাব লুকিয়ে জান বাঁচাতে ছুটে পালাবে।
৪. যদি কেউ এই ছয় কিতাবের মধ্য থেকে কোন হাদিস দেখিয়ে দেয়, যা তোমাদের বিপরীত। তখন তাড়াতাড়ি কোন শর্ত ‎নিজের পক্ষ থেকে লাগিয়ে দিবে যে, ‘ওমুক শব্দ দেখাও! তাহলে এক লাখ টাকা তোমাকে পুরস্কার দিব। যেমন মির্যায়ীরা বলে ‎থাকে যে, “এই শব্দে হাদিস দেখাও যে, জাগতিক শরীরসহ হযরত ঈসা আ. জীবিত আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সেটা সহীহ, ‎সুষ্পষ্ট, আর মারফু’ আর গায়রে মারজুহ, হতে হবে”। যেমন গায়রে মুকাল্লিদরা বলে থাকে যে, “রফয়ে ইয়াদাইন এর সাথে ‎রহিত হবার শব্দ দেখাও”। তখন নিজের বক্তব্যের উপর এতটা চিল্লাফাল্লা করবে যে, বিরোধি ব্যক্তি চুপ হয়ে যাবে।
৫. যদি কখনো সে শব্দটা পেয়েও যায়, আর দেখিয়ে দেয়, যে শব্দ তুমি জানতে চেয়েছিলে, তখন পূর্ণ শক্তিমত্তা দিয়ে জোরে ‎তিনবার ঘোষণা দিয়ে দিবে যে, এটা দুর্বল! দুর্বল!! দুর্বল!! তখন হাদিসও মানতে হলনা, আবার ভীতিও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে ‎যে, দেখ! মাওলানা সাহেবের তাহকীকই নাই যে, এটা দুর্বল হাদিস।
৬. ছষ্ঠ ও শেষ নাম্বার হল-উস্তাদজি তাগীদ দিয়ে বলতেন যে, ‘যে নামায পড়েনা তাকে তাকে নামায পড়ার কথা বলা যাবেনা। ‎হ্যাঁ যে নামায পড়ে তাকে অবশ্যই বলবে যে, “তোমার নামায় হয়না”। ‎
ব্যাস। এই ছয় নাম্বার আমাদের ইলমে কালাম তথা তর্কশাস্ত্রের মেরুদন্ড ছিল। আমার পিতা নামায, রোযা, আর তাহাজ্জুদের ‎খুব পাবন্দ ছিলেন। তিনি খুবই ইবাদতগুজার মানুষ ছিলেন। প্রতিদিন তার সাথে আমার ঝগড়া হত। আমি বলতাম তাকে-‎‎“আপনার নামায হয়না। আপনার দ্বীন আপনার তাহাজ্জুদ কিছুই কবুল হবেনা। আপনার কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়”। ‎আমার পিতা বলতেন-“ঝগড়া করনা, তোমার নামাযও হয়, আমার নামাযও হয়”। আমি বলতাম-“কত বড় ধোঁকা এটা! কি ‎এক খোদা দুই নামায নাজিল করেছেন? একটা মদীনায় আর একটা কুফায়? আমাদের নামায নবীজী সা. এর নামায, যা ‎আমাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। আপনাদের নামায কুফাবাসীর নামায। এটা আপনাদের সোজা জাহান্নামে নিয়ে যাবে”। আমার ‎পিতা বলতেন-“ফালতু প্যাচাল করনা”। আমি এটাকে আমার জীবনের বড় বিজয় মনে করতাম। আর অহংকারের সাথে ‎বলতাম-“আমিতো আপনাকে অনেক সম্মান করি, নতুবা ফিক্বহের গোমর ফাঁক করে দিতাম। যার ফলে সবার মাথা গরম হয়ে ‎যাবে”। ‎
এরকম করেই কেটে গেল কয়েক বছর।
স্থানান্তর
আমরা সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেলাম। সেখানে কোন উৎসাহদাতাও ছিলনা। ছিলনা কোন সাবাশদাতাও। শহরের এক ‎মাদরাসায় এক সময় পড়তে চলে যাই। সেখানে আসবাকে ইলমুন নাহু আর বুলুগুল মারাম এবং নাসায়ী শরীফ ছিল। শিক্ষার ‎উদ্দেশ্য কোন কিতাব পূর্ণ পড়া ছিলনা, বরং ফাতিহা খালফাল ইমাম, রফয়ে ইয়াদাইন, আমীন জোরে বলা, সীনার উপর হাত ‎বাঁধা, টাখনো মিলিয়ে দাঁড়ানো, ইত্যাদি মাসআলা যদি এসে যেত তাহলে প্রথম বিভাগে পাশ করা সুনিশ্চিত ছিল। অবশ্য তখন ‎গ্রামেও সেই তুলকালাম অবস্থা আর বাকি ছিলনা।
খতমে নুবওয়াত আন্দোলন
সে সময় ৫৩ ঈসাব্দের খতমে নবুওয়াত আন্দোলন চলছিল। আমাদের লক্ষ্ণৌ সাহেবরা সেই আন্দোলনের বিরোধি ছিল। ‎কেননা তারা কাদিয়ানীদের মুসলমান বলত। সে সময় এলাকা ঘেঁটে দুই জন বুযুর্গ মানুষ হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ মুহাম্মদ ‎আব্দুল হান্নান সাহেব রহ. আর রাওয়ালপিন্ডির তায়ালীমুল কুরআন রাজাবাজারের সাবেক শাইখুল হাদিস হযরত মাওলানা ‎আব্দুল কাদির সাহেব রহ. গ্রেফতার অবস্থায় ছিলেন। এই দুই হযরতকে সাহওয়াল জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। এই জেলে ‎দারুল উলুম দেওবন্দের ফারেগ ওকারার খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের নেতা হযরত মাওলানা জিয়উদ্দীন সিহারওয়ী রহ. ও ‎ছিলেন। এই দুই জনই দারুল উলুম দেওবন্দের ফারিগ আর ইমামুল আসর আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. এর খাস ছাত্র ‎ছিলেন। হযরত সিহারওয়ী রহ. দুইজনকেই রাজী করালেন যে, তারা মুক্তি পাবার পর ওকারাতে শিক্ষকতা করাবেন। সুতরাং ‎মুক্তির পর উভয় শায়েখ ওকারাতে আসলেন। হানাফীরা ওকারার মাঝে ইলম ও মারেফাতের এই অনাবিল বৃষ্টিকে অনেক ‎প্রচার করে। আর এই দুই হযরতকে শানদার অভ্যার্থনা জানায়।
বিতর্কের আকাংখা
সে সময় আমার গায়রে মুকাল্লিদ উস্তাদ খান্ডিলওয়ীর মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল জাব্বার সাহেব ছিলেন। তিনি আমাকে ডেকে ‎বললেন-“শোন! আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. এর ছাত্র এসেছে। তাদের সাথে বিতর্ক করতে হবে”। আমি তাচ্ছিল্যের ‎সাথে বললাম-“তারা কি করবে? খোদ ইমাম আবু হানীফা রহ. কবর থেকে উঠে এলেও আমাদের সাথে মুকাবিলা করতে ‎পারবেনা। আমাদের সাথে আছে হাদিস। আর তাদের কাছে কিয়াস তথা যুক্তি”। উস্তাদ সাহেব এতে খুব খুশি হলেন। অনেক ‎দু’আ করলেন। একটি প্রচারপত্র দিলেন, যার শিরোনাম ছিল “সারা পৃথিবীর হানাফীদের এগারো হাজার টাকা পুরস্কারের খোলা ‎চ্যালেঞ্জ”। তিনি বললেন-“এই ইশতিহার নিয়ে যাও! তোমার বিজয় অবশ্যাম্ভাবী।
ঈদাগাহ ময়দানে
সেই হযরতদের অবস্থান ঈদগাহ মাদরাসায় ছিল। আমি দেখলাম যে, হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান সাহেবের আশেপাশে ‎বহুত মানুষ। আর হযরত মাওলানা আব্দুল কাদির সাহেবের কাছে কম মানুষ। প্রথম দর্শনেই আমি আন্দাজ করলাম যে, ‎তাদের মাঝে বড় আলেম কে? আমি পিছনের চেয়ারে বসে গেলাম। হযরতের কাঁধ এবং মাথার উপর হাত বুলাতে শুরু ‎করলাম। হযরত আমার দিকে দুই তিনবার তাকালেন। কিন্তু চুপ রইলেন। চতুর্থবার জিজ্ঞেস করলেন-“কি কর?” আমি এই ‎সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলাম। চট করে পকেট থেকে প্রচারপত্রটি বের করে হযরতের সামনে খুলে দিলাম। আর আরজ করলাম ‎যে, ‘হযরত! আহলে হাদিসের লোকেরা আমাকে খুব চাপে ফেলেছে। তারা হাজার টাকা পুরস্কারও ঘোষণাও করেছে। কিন্তু ‎আমাদের ওলামাদের কাছে কোন হাদিসই নাই। আপনি কষ্ট করে তাড়াতাড়ি আমাকে রক্ষা করুন। আর হাদিস লিখে দিন। ‎যাতে এই এগার প্রশ্নের জবাব থাকবে’। হযরত বললেন-“আমি পাঞ্জাবে অধ্যাপনা খুব কম করেছি। আমার উর্দু বেশি ভালনা। ‎মাওলানা আব্দুল কাদির সাহেব পাঞ্জাবে অনেক অধ্যাপনা করেছেন। তার উর্দুও খুব ভাল। তার এই সকল মাসআলায় আগ্রহও ‎আছে। তুমি তার কাছ থেকে বুঝে নাও”। ‎
আমি উঠে হযরত মাওলানা আব্দল কাদির সাহেবের দিকে চললাম। এদিকে হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান সাহেব আওয়াজ ‎দিয়ে বললেন-“ছেলেটা বুদ্ধিমান তাকে ভাল করে বুঝান, আল্লাহর কাছে এই প্রত্যাশা রাখি যে, প্রথম চান্সেই তার থেকে ‎অন্ধকারচ্ছন্নতা বিদূরিত হবে”। হযরতের বলার পর আমার হাত থেকে মাওলানা সাহেব ইশতিহারনামাটি নিলেন। মাওলানা ‎সাহেব ইশতিহার পড়তে ছিলেন আর আমার চোখ ছিল মাওলানা সাহেবের চেহারার উপর। কিছুক্ষণ পরপর ঠোঁটে মুচকি হাসি ‎দেখা দিত। কখনো চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ পরিলক্ষিত হত। অবশেষে মাওলানা সাহেব পূর্ণ ইশতিহারটি পড়লেন।
নিয়ত
হযরত সর্বপ্রথম এটা বললেন যে, “বেটা! নিয়ত ঠিক করে নাও! যদি কোন ব্যক্তি এই নিয়তে মাসআলা জিজ্ঞেস করে যে, দ্বীন ‎বুঝে আমল করবে, তো মাসআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আলাদা সওয়াব পায়। আর এই মাসআলার উপর আমল করার সওয়াব ‎পায় আলাদা। আর যদি কোন ব্যক্তি এই নিয়তে মাসআলা জিজ্ঞেস করে যে, খারাপ ও ফিতনার জন্য হয়, তাহলে মাসআলা ‎জিজ্ঞেস করা ও ফিতনার গোনাহ আলাদা আলাদা পায়। আমিতো এই নিয়তে তোমাকে মাসআলা বুঝাব যে, এতে ‎একনিষ্টভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিই উদ্দেশ্য থাকবে। এতটুকুই যথেষ্ট”। আমি বললাম-“আমিও আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট ‎করার জন্যই বুঝতে চাই”।
দলিল দেয়া কার জিম্মায়?‎
হযরত বললেন-“এই ইশতিহারে অনেক ধোঁকাবাজি আছে। কিন্তু মাওলানা সাহেবের ধোঁকা মাওলানা সাহেবই বুঝতে পারে। ‎সবাই এটা বুঝতে পারেনা। যদিও ইশতিহারের লেখক নিজেকে আহলে হাদিস দাবি করেছে, কিন্তু সে মূলত হাদিস ‎অস্বিকারকারী। কেননা প্রসিদ্ধ হাদিসে এসেছে যে, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন যে, ‎البينة على المدعى ‏‎ অর্থাৎ “দলিল হল ‎দাবিকারীর জিম্মায়” দুনিয়ার সকল আদালতে সর্বদা বাদির কাছেই দলিল চাওয়া হয়। আর এই এগার মাসআলায় বাদি হল ‎গায়রে মুকাল্লিদরা। সুতরাং দলিল দেয়া তাদের জিম্মায় আবশ্যক। কিন্তু নিজের দুর্বলতার উপর পর্দা ঢাকার জন্য আমাদের ‎জিম্মায় তা প্রয়োগ করার অপচেষ্টা করছে। এর একটি উপমা দেখ-‘রাফেজীরা আযানের শব্দে কিছু অতিরিক্ত শব্দ বলে, যেমন ‎তারা বলে যে, আশহাদু আন্না আলিয়্যান অলীআল্লাহ….’ এখন আমাদেরতো এই অধিকার আছে যে, তাদেরকে এই প্রশ্ন করা ‎যে, “আপনারা কোন আয়াত বা হাদিস কিংবা কমপক্ষে হযরত আলী রা. থেকে এই সকল শব্দ প্রমাণিত তা দেখান”। কিন্তু ‎কিয়ামত পর্যন্ত তারা তার প্রমাণ দেখাতে পারবেনা। তারা তাদের মুর্খ লোকদের ধোঁকা দেবার জন্য এই প্রশ্ন বানায়, যেমন এই ‎গায়রে মুকাল্লিদরা বানিয়েছে। গায়রে মুকাল্লিদদের মত যদি এরকম প্রশ্ন বানানো হয় যে, “সারা দুনিয়ার গায়রে মুকাল্লিদরা ‎এক হয়ে একটি সহীহ সুষ্পষ্ট, মারফু’ এবং গায়রে মাজরুহ এমন হাদিস উপস্থাপিত করুক, যাতে হুজুর সা. অথবা হযরত আলী ‎রা. আজানের মাঝে অতিরিক্ত বাক্য সংযোজিত করতে নিষেধ করেছেন?” আর নিষেধাজ্ঞার হাদিস দেখালে এক লাখ টাকা ‎নগদ পুরস্কার দেয়া হবে মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়! তুমি তোমার উস্তাদ থেকে এরকম হাদিস লেখিয়ে নিয়ে আস। নতুবা শিয়া ‎মতবাদ সত্য আর গায়রে মুকাল্লিদদের মতবাদ মিথ্যা একথা মেনে নাও। ‎
কি সারা দুনিয়ার সকর গায়রে মুকাল্লিদরা মিলে একটি হাদিসও দেখাতে পারবে এ ব্যাপারে?”‎
আমি বললাম-“আমরা কেন হাদিস দেখাব? যারা এই বাক্যগুলি অতিরিক্ত দেখাচ্ছে তারা তাদের প্রমাণ দেখাবে। এটাইতো ‎যৌক্তিক। আমাদের নিষেধাজ্ঞার হাদিস তাদেরকে দেখানোর কি প্রয়োজন? এই প্রশ্নটিতো কেবলি একটি ধোঁকা।”‎
তিনি বললেন-“তাহলে রফয়ে ইয়াদাইন তোমরা কর, আর আমাদের কাছে নিষেধাজ্ঞার হাদিস চাওয়াটাও তেমনি একটি ‎ধোঁকা। দেখ! কুরআন পাকের প্রথম সূরা ফাতিহা। এরই নাম উম্মুল কুরআন তথা কুরআনের মা। আর এরই মাঝে অনেক ‎বিবাদ। কেউ ‎فاتحة على الطعام‎ তথা ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্য খানা পাকিয়ে মানুষকে খানা খাওয়ানোর সময় ফাতিহা পড়া ‎নিয়ে ঝগড়া করে। আর কেউবা ‎فاتحة خلف الإمام‎ তথা ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়া নিয়ে ঝগড়ায় মাতে। ‎
মৌলিকভাবে ফাতিহার ক্ষেত্রে দু’টি মাসআলা। একটি হল মাসআলায়ে তাওহীদ তথা একত্ববাদের বিষয়। অন্যটি মাসআলায়ে ‎তাক্বলীদ তথা অনুসরণের বিষয়। ফাতিহা আলা তয়ামদের তাওহীদ ভাল নয়। আর ফাতিহা খালফাল ইমাম দলের তাক্বলীদ ‎ভাল নয়। অর্থাৎ ফাতিহাকে মানার মত মন এই দুই দলের কারো নেই”।
তারপর তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন-“আচ্ছা! যদি তোমার বিতর্ক ফাতিহা আলাত তয়াম গ্রুপের সাথে হয়। সে সময় যখন তুমি ‎তাকে প্রশ্ন করবে যে, ‘ঈসালে সাওয়াবের নিয়তে খানা পাকিয়ে ফাতিহা পড়ার উপর হাদিস নিয়ে আস’। তখন কি তাদের এই ‎প্রশ্ন করার অধিকার থাকবেনা যে, ‘সারা দুনিয়ার গায়রে মুকাল্লিদরা মিলে শুধুমাত্র একটি সহীহ সুষ্পষ্ট, মারফু’ এবং গায়রে ‎মাজরুহ এমন হাদিস উপস্থাপিত কর, যাতে হুজুর সা. বিশেষ করে ঈসালে সাওবাবের নিয়তে খানা সামনে রেখে ফাতিহা ‎পড়তে নিষেধ করেছেন। বিশেষভাবে এটা করতে নিষেধ করেছেন এই মর্মে হাদিস দেখাতে পারলে এক লাখ টাকা নগদ ‎পুরস্কার দেয়া হবে’। এরূপ হাদিস কি তুমি দেখাতে পারবে?”‎
আমি বললাম-“আমাদের কাছে নিষেধাজ্ঞার হাদিস কেন চাইবে?”‎
তিনি বললেন- “কি শুয়াইব আ. এর জাতির মত তোমাদের নেবার বাটখারা একটি। আর দেবার বাটখারা অন্যটি সাব্যস্ত ‎করলে নাকি? হুজুর সা. এর ফরমান কি মনে নেই যে, ‘তোমরা নিজের ভাইয়ের জন্য তা’ই পছন্দ কর যা নিজের জন্য পছন্দ ‎কর’”।!‎
পরবর্তি লিখা-আমি যেভাবে হানাফী হলাম (শেষ পর্ব) 
http://jamiatulasad.com/?p=685

তাযাল্লিয়াতে সফদর-৫ (আমি যেভাবে হানাফী হলাম-প্রথম পর্ব) 01

তাযাল্লিয়াতে সফদর-৫ (আমি যেভাবে হানাফী হলাম-প্রথম পর্ব)‎

আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। চিন্তার বিষয় ছিল আমাকে কুরআন শরীফ কে শিখাবে? আমাদের গ্রামে একটি মসজিদ ছিল। ‎যেখানে প্রায় প্রতি জুমআর দিন ঝগড়া হত। বেরেলবীরা চাইত যে, এখানে তাদের মতাদর্শী ইমাম নিযুক্ত হোক। আর গায়রে ‎মুকাল্লিদরা চাইতো তাদের মদাদর্শী ইমাম নিযুক্ত হোক। আর আমাদের দেওবন্দী আক্বিদা সম্পন্ন ঘর ছিল একটা। যাকে কেউ ‎গণনায়ও ধরতনা। কখনো সখনো ঝগড়া যখন তীব্রতা লাভ করত, তখন ছয় সাত মাস যাবত মসজিদে কোন ইমামই হতনা। ‎কখনো দুই জামাত শুরু হয়ে যেত। আমার পিতা এই ব্যাপারে খুবই পেরেশানীতে ছিলেন। সর্বশেষে তিনি এই সীদ্ধান্ত নেন যে, ‎বেদাতীদের তুলনায় গায়রে মুকাল্লিদরা আক্বিদা-বিশ্বাসের দিক দিয়ে ভাল, তাই তাদের কাছেই আমাকে কুরআন শিখতে ‎পাঠালেন। অবশেষে কুরআন শরীফ শিখার জন্য আমাকে এক গায়রে মুকাল্লিদের কাছে পাঠানো হল।
শিক্ষা পদ্ধতী
যেহেতো আমি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। অক্ষর জ্ঞানতো ছিলই। তাই প্রথম পাড়া থেকে সবক শুরু হল। উস্তাদ সাহেব ‎দুই তিন আয়াত বলতেন আর আমি দোহরাতাম। তারপর আমাকে উস্তাদ সাহেব শোনাতেন যে, “আমি ওমুক হানাফী মুফতী ‎সাহেবকে পরাজিত করেছি, ওমুক হানাফী আলেমকে লা-জাওয়াব করে দিয়েছি। দুনিয়ার মাঝে কোন হানাফী বা বেরলবী নাই ‎যে আমার সামনে দাঁড়াতে পারে”। তারপর কোন একটা প্রচার পত্র নিয়ে বসে যেতেন। আর বলতেন-“দেখো! এই প্রচার ‎পত্রটি বিশ বছর পুরনো। এতে দুনিয়াজোড়া হানাফীদের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে যে, একটি হাদিস দেখাও নবীজী সা. এর, যাতে ‎রফয়ে ইয়াদাইনকে বর্তমানে রহিত করা হয়েছে। একটি হাদিস দেখাও! যেখানে নবীজী সা. বলেছেন যে, আজ থেকে রফয়ে ‎ইয়াদাইনের বিষয় রহিত করে দেয়া হয়েছে। একটি হাদিস দেখাও! যেখানে নবীজী সা. বলেছেন যে, এক শতাব্দী পর আমার ‎দ্বীন রহিত হয়ে যাবে। আর ইমাম আবু হানীফার তাক্বলীদ আমার উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যাবে। এই প্রচারপত্রটি দেওবন্দ ‎পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তারা কোন হাদিস দেখাতে পারেনি। হাজার হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দেয়া হল, কিন্তু সামনে ‎দাঁড়াতে সাহস পায়নি কেউ”।
‎ উস্তাদের ব্যাক্ষাই আমার মত এ বিষয়ে অজ্ঞ ব্যক্তির উপর খুব প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু যখন তিনি একথা ‎বলতে লাগলেন যে, “আমি একবার দিল্লী যাচ্ছিলাম। তখন দেওবন্দ নামলাম। সেটা নামাযের সময় ছিল। তখন মাদরাসার ‎সকল উস্তাদ ও ছাত্ররা মসজিদে উপস্থিত ছিল। সে সময় আমি দাঁড়িয়ে প্রচারপত্রটি দেখিয়ে বলতে লাগলাম যে, এই ‎প্রচারপত্রটি বিশ বছর যাবত প্রতি বছর আপনাদের মাদরাসায় পাঠানো হয়, তারপরও আপনারা কেন হাদিস দেখান না? তখন ‎সেখানকার এক উস্তাদ লজ্জিত হয়ে নম্রতার সাথে আমাকে বলল যে, “মাওলানা সাহেব! আপনি জানেন আমরা হলাম হানাফী। ‎আমরাতো আবু হানীফা রহ. এর ফিক্বহ পড়ি, না হাদিস পড়ি, না কখনো হাদিস দেখেছি। আপনি বারবার আমাদের কাছে ‎হাদিস চেয়ে লজ্জা দেন কেন?”” ‎
উস্তাদের এই বাগড়ম্বতার পর আমি প্রচন্ড বিষ্মিত হয়ে যেতাম। কারণ আমি ঘরে শুনেছি যে, দেওবন্দ মাদরাসা হল পৃথিবীর ‎মাঝে সবচে’ বড় মাদরাসা। তো আমাদের উস্তাদ যখন তাদেরই লা জাওয়াব করে আসলেন, সেখানে আর হাদিস কোত্থেকে ‎পাওয়া যাবে?!‎
মতানৈক্য কি?‎
একদিন আমি উস্তাদজিকে জিজ্ঞেস করলাম-“উস্তাদজী! আপনি এবং আহলে সুন্নাতওলাদের মাঝে পার্থক্যটা কি?” তিনি ‎বললেন-“বেটা! কালিমা আমরা যেমন নবীজী সা. এর টাই পড়ি, তেমনি ওরাও তাই পড়ে। আমাদের মাঝে এতটুকু একতা। ‎কিন্তু আমরা যখন তাদের বলি যে, যার কালিমা পড়, কথাও তার মান! তখন তারা বলে-“না! আমরা কালিমা নবীজী সা. এর ‎টাই পড়ব, কিন্তু কথা মানব ইমাম আবু হানীফা রহ. এর”।” ‎
আমি উস্তাদজিকে জিজ্ঞেস করলাম-“ইমাম আবু হানীফা রহ. যদি মুসলমান আলেম থেকে থাকেন, তাহলে তিনি নিশ্চয় নবীজী ‎সা. এর কথাই মানুষকে মানতে বলতেন। কেননা খাইরুল কুরুনের মানুষের ক্ষেত্রে এমনটি কল্পনাই করা যায়না যে, তারা ‎জেনে বুঝে মানুষকে নবীজী সা. এর উল্টো কথা জানাবে”। উস্তাদজি বলেন-“ইমাম আবু হানীফা রহ. তো ভাল মানুষ ছিলেন। ‎কিন্তু তার জমানায় হাদিস সমূহ সংকলিত হয়নি। এই জন্য ইমাম আবু হানীফা রহ. অনেক মাসআলা কিয়াস করে বলে ‎দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সাথে সাথে এটাও বলে দিয়েছেন যে, আমার যে বক্তব্যটি হাদিসের উল্টো পাবে তা ছেড়ে দিবে। কিন্তু ‎হানাফীরা এর উল্টো কাজটাই করে থাকে”।
সে সময় আমার এতটুকু জ্ঞান ছিলনা যে, তাকে প্রশ্ন করতাম যে, উস্তাদজি! সে সময় কি এত প্রয়োজন ছিল যে, প্রথমে ফিক্বহ ‎সংকলন করা হয়? আর হাদিস সংকলন করা হল পরে? সিহাহ সিত্তার সকল সংকলক সুনিশ্চিত আইয়িম্মায়ে আরবাআর পর ‎এসেছেন। কিন্তু কেউই নিজের কিতাবে না ফিক্বহে হানাফীর প্রতিরোধে কোন অধ্যায় স্থাপন করেছেন, না ফিক্বহে শাফেয়ী ‎প্রতিরোধে কোন অধ্যায় লিখেছেন। ‎
ইলমে হাদিস
উস্তাদজি আমাকে বলতেন-“যেমন কাপড় কাপড়ের দোকান থেকে পাওয়া যায়। চিনি চিনির দোকান থেকে পাওয়া যায়। ‎এমনিভাবে হাদিস শুধুমাত্র আহলে হাদিস থেকেই পাওয়া যায়। আর মাদরাগুলিতেতো হাদিস পড়ানোই হয়না। তুমি সারা ‎জীবন পা ঠুকরে ঠুকরে মরে যাবে, কিন্তু নবীজী সা. এর একটি হাদিস শোনারও সৌভাগ্য তোমার হবেনা। ওহে নবী সা. এর ‎কথা শ্রবণকারী! নবী কারীম সা. এর হাদিস কেবল এখানেই পড়ানো হয়। অন্য কোথাও নয়”। ‎
সে সময় আমার এত বুঝ হয়নি। একথাও জানা ছিলনা যে, এই আহলে হাদিসদের ভাই হল আহলে কুরআন। কিন্তু এটি ‎উস্তাদজির ধোঁকা ছিল যে, আমাকে বলনি যে, “কুরআন শুধু আহলে কুরআন থেকেই শিখা উচিত” কেননা তার সাথে আহলে ‎কুরআনের কি সম্পর্ক?‎
মোটকথা, আমাকে বিশ্বাস করানো হল যে, আমরা কিছু লোক মূলত নবীজী সা. কে মানি আর বাকি সবাই নবীজী সা.কে ‎মানেনা।
একশত শহীদের সওয়াব
আমার ভাল ভাবেই মনে আছে যে, নফল আদাই করা হতনা। বরং এতে ঠাট্টা করা হত। আর সুন্নাতেরও বিশেষ প্রয়োজন নেই। ‎কেননা হানাফীরা নফল এবং সুন্নাত পূর্ণ গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে। হ্যাঁ, যে সকল সুন্নাত মৃত হয়ে গেছে, সেগুলি জিন্দা ‎করতে অনেক তাগিদ দেয়া হত। যেমন জামাতে নামাযের মাঝে পাশের মুসল্লির সাথে টাখনোর সাথে টাখনো মিলানো সুন্নাত। ‎যেটা মৃত হয়ে গেছে এটার উপর আমল করা একশত শহীদের সওয়াব পাওয়া যায়। এমনিভাবে জোড়ে আমীন বলা সুন্নাত। ‎নবীজী সা. বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি আমীন বলা ছেড়ে দিবে সে আমার উম্মতের ইহুদি”। সুতরাং আমীন জোড়ে বলে যত ‎হানাফীদের কান পর্যন্ত সেই আওয়াজ পৌঁছানো যাবে তত শত শহীদের সওয়াব পাওয়া যাবে। আর ইহুদীদের কষ্ট দেবার ‎সওয়াবও পাওয়া যাবে।
হাকিকাতুল ফিক্বহ
উস্তাদজির কাছে মাওলানা ইউসুফ জীপুরীর “হাকিকাতুল ফিক্বহ” কিতাব আর মাওলানা মুহাম্মদ রফীক পাসরুরী সাহেবের ‎পুস্তিকা “সমশীরে মুহাম্দাদিয়া বর আক্বায়েদে হানাফিয়্যা” এবং “শময়ে মুহাম্মদি” কিতাব ছিল। উস্তাতজি আমাকে নিয়ে ‎বসতেন আর এই সকল কিতাব থেকে একেকটি মাসআলা পড়তেন। তারপর পাঁচ মিনিট পর্যন্ত আমি এবং উস্তাদজি কানে হাত ‎লাগিয়ে তওবা! তওবা! করতাম। হায়! হায়! এরকম নোংরা মাসআলা হিন্দুদের বইয়েও নাই। আয় আল্লাহ! যদি হিন্দুরা, ‎শিখেরা অথবা খৃষ্টানেরা এই মাসআলা জানে, তাহলে তারা মুসলমানদের কতটা নিচু মনে করবে?! ‎
মোটকথা হল আমাকে এই বিষয়টি বদ্ধমূল করে দেয়া হত যে, দুনিয়ার মাঝে হানাফী মাযহাব এমন একটি নোংরা মাযহাব, যা ‎থেকে হিন্দু, শিখ এবং ইয়াহুদী খৃষ্টানেরসহ সকল কাফেররাও আশ্রয় চাইবে।
পরবর্তি লিখা-আমি যেভাবে হানাফী হলাম (দ্বিতীয় পর্ব) http://jamiatulasad.com/?p=683

বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১২

কওমী মাদরাসার সুচনার ইতিহাস ও কিছু কথা

দারুল উলুম দেওবন্দ” ভারত উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও সুপ্রাচীন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবিগত শতাব্দীর মুসলিম বিশ্বে খ্যাতনামা মনীষীবর্গের জন্মদাতাউম্মাহর ইলম ও আমলের পথে সফল রাহবারএই মাদারে ইলমীর পরিচয়, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং ভারতবর্ষে তার অবদান কী তা জানতে হলে আমাদের কে ফিরে তাকাতে হবে প্রায় দেড় শতাব্দী পেছনে
১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল মুসলমানদের পক্ষ থেকে হিন্দুস্তানকে ফিরিঙ্গী আগ্রাসন মুক্ত করার সর্বশেষ সশস্ত্র পদক্ষেপএই আন্দোলনের মাধ্যমে উপনেবেশিক শক্তি এতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, মুসলিম জাতি কোন অবস্থাতেই গোলামীর জিন্দেগী বরন করে নিতে সম্মত হবে নাতাই তারা কর্ম কৌশল পরিবর্তন করলযে পিঙ্গল বর্ণের নরপিশাচ হিন্দুস্তানের মাটিতে লক্ষ মুসলমানের বুকের তাজা রক্তে খুনের দরিয়া রচনা করেছে, তারাই আবার সর্বসাধারনের কল্যাণকামীর মুখোশ পরে তাদের সামনে হাজির হলউদ্দেশ্য ছিল, ভয়-ভীতি দেখিয়ে কিংবা গায়ের জোরে যে কওমকে দমন করা যায় না, ধীরে ধীরে তাদের চিন্তা-চেতনা ও মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন আনাযেন তারা ধর্মীয় অনুশাসন, স্বকীয় সভ্যতা ও দীপ্তিমান অতীতকে ভুলে গিয়ে অদূর ভবিষ্যতে নিজেকে সতন্ত্র জাতি হিসেবে মূল্যায়ন করতে না পারে
এই হীন উদ্দেশ্য সফল করার সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করাএবং এর মাধ্যমে তাদের দিল-দেমাগে পাশ্চাতের চতুর্মূখী প্রভাব বদ্ধমূল করাযেন এতে প্রভাবিত হয়ে তারা নিজ বিবেক দিয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেএ লক্ষকে সামনে রেখে লর্ড ম্যাকলএদেশের মানুষের জন্য এক নতুন শিক্ষানীতির সুপারিশ করেন তা বাস্তবায়নের লক্ষে তিনি একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেনতাতে ভারতবর্ষের জাতীয় শিক্ষানীতি তথা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ন্যাক্কারজনক ভাবে উপহাস করা হয়এবং ওলামায়ে কেরামের উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করা হয় পরিশেষে তিনি স্পষ্ঠ ভাষায় লেখেন, ” এখন আমাদের কর্তব্য হল, এমন একদল লোক তৈরি করা যারা আমাদের অধিকৃত অঞ্চলের অধিবাসী ও আমাদের মাঝে দোভাষীর দায়িত্ব পালন করবেযারা রক্ত ও বর্ণে হিন্দুস্তানী হলেও চিন্তা-চেতনা, মেধা-মনন ও চারিত্রিক দৃষ্টিকোন থেকে হবে ইংরেজ্”
দূরদর্শী ওলামায়ে কেরাম এই সুদূর প্রসারী চক্রান্ত ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে বেখবর ছিলেন নাতাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, এখেন পরিস্থিতিতে মুসলমানদের দ্বীন-ঈমান রক্ষার্থে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভিবষ্যতে তারা সতন্ত্রজাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে নাকয়েক খান্দান পরে হয়তো ইসলাম ও তার মৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পর্কে সচেতন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে নাতাই তাঁরাও সম্মুখ সমরে লড়াই পরিহার করতঃ কার্যপদ্ধততে পরিবর্তন আনায়নে সচেষ্ট হলেননব উদ্ভুত শিক্ষানীতির ধ্বংসের হাত থেকে মুসলিম জাতিকে রক্ষার একটি মাত্র পথ তখন খোলা ছিলদারুল উলূম প্রতিষ্ঠার প্রায়াসে তাঁরা সে দিকেই অগ্রসর হয়েছিলেন
হযরত মাওলানা কাসেম নানুতবী, রশিদ আদম্মদ হাঙ্গুহী, হাজী আবেদ হুসাইন (রহঃ) ১৮৫৮ সালের জিহাদে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেনএমন কি উত্তর প্রদেশের একটি ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হনএ কারনে অবশ্য দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁদেরকে ইংরেজ প্রশাসনের কোপানলের শিকার হয়ে থাকতে হয়েছিল সশস্ত্র সংগ্রাম আপাত ব্যর্থ হলে তাঁরা নীরব ও সফল আন্দোলনের বীজ দেওবন্দের মাটিতে বপন করেনযা ধীরে ধীরে গোটা ভারতবর্ষে আপন শাখা-প্রশাখা, পত্র-পল্লব বিস্তার করে এক মহীরুহের রূপ ধারন করেযার সুশীতল ছায়ায় ইসলাম ও মুসলিম জাতির ইহতহাস, ঐতিহ্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাহযীব-তামাদ্দুন ও স্বাতন্ত্রবোধ লালিত হতে থাকেহাঁ, সেই সাজারে তুবার নাম দরুল উলুম
তদানীন্তন হিন্দুস্তানে কোন দ্বীনি মারকায প্রতিষ্ঠা করা ছিল নিজেকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেবার নামান্তরসুলতান মুহাম্মদ তুঘলকের শাসনামলে শুধুমাত্র দিল্লিদতই সহস্রাধিক মাদরাসা ছিলকিন্তু ফিরিঙ্গি আগ্রাসনের পর পুরো ভারতবর্ষের কোথাও একটি মাদরাসা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছিলওলামায়ে কেরামকে আযাদী আন্দোলনে অংশ গ্রহণের অপরাধে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হত কিংবা আন্দামান দ্বীপে নির্বাসন দেয়া হতআর যারা মুক্ত ছিলেন, সংঘবদ্ধ হওয়া তাদের জন্য ছিল দুষ্করতাই আকাবিরত্রয় প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রামকেই বেছে নিয়ে প্রভুত কল্যাণের এই ধারা রচনা করেন
১৫ মুহাররম ১২৮৩ হিজরী মোতাবেক ৩০ মে ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দে নিতান্ত অনাড়ম্বর এক অনুষ্টানে এই নীরব আন্দোলন প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেএখলাসের সাথে দ্বীনের খেদমতই যেহেতু একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল তাই কোন প্রচার মাধ্যমের আশ্রয় না নিয়ে দেওবন্দের ছোট্র পল্লিতে, ছাত্তা মসজিদের আঙ্গিনায়, একটি ডালিম গাছের ছায়ায়, আবে হায়াতের এই নহর তারা রচনা করেনদুই বুযুর্গের মাধ্যমে কার্যত প্রতিষ্ঠানটির পদযাত্রা শুরু হয় প্রথমজন শিক্ষক; হযরত মাওলানা মোল্লা মাহমুদদ্বিতীয়জন ছাত্র; দেওবন্দের নওজোয়ান মাহমুদ হাসানযিনি পরবর্তীতে শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান নামে খ্যাত হনএবং ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন
লর্ড ম্যাকল কর্তৃক ইসলামকে মিটিয়ে দেওয়ার হীন ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতঃ দ্বীনকে অক্ষুন্ন রাখা ছিল দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার অন্যতম মৌলিক উদ্দেশ্য এরই সাথে ওলামায়ে কেরামের এক জানবাজ জামাত তৈরি করাও ছিল সময়ের দাবী, যারা যে কোন পরিস্থিতিতে দ্বীনকে আগলে রাখবেন এবং সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে পৌছে দিবেনযেন সাধারণ মানুষ ইসলামের হেদায়েত অনুসারে জীবন যাপন ও তার আলোকে নিজ ভবিষ্যত গড়তে পারে
যদি বলা হয় দারুল উলূমনিজস্ব পরিমণ্ডলে সফল, তাহলে অতুক্তি হবে না প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্ন থেকে তালীম তরবিয়ত, তাযকীয়া-তাসাউফ, দাওয়াত-সিয়াসত সহ প্রতিটি অঙ্গনের জন্য সে জন্ম দিয়ে আসছে যুগের খ্যাতনামা মনীষীবর্গকে যারা দ্বীনকে আগলে রেখেছেন অক্ষুন্ন আদলেতার অমিয় বাণী পৌছে দিয়ে যাচ্ছেন উম্মাহর প্রতিটি ব্যক্তির কানেআহারে-অনাহারে, দুঃখে-সাচ্ছন্দ্যে যে কোন প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে, আপন স্বার্থকে পেছনে ফেলে উম্মতের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ টিকিয়ে রাখতে তারা নিবেদিত প্রাণবাতিলের শত ঝড় ঝাপটার মুখে হিমালয়ের মত অবিচল, তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যয় উত্তাল, নববী আদর্শের মূর্ত প্রতিক
মুফতী শফী (রাহঃ) (“দারুল উলূম দেওবন্দ আওর উসকি মেযায”… অবলম্বনে) সূত্র- ইছলাহী ইজতিমা স্মারক

কওমী মাদ্রাসা কি ও কেন? কওমী শিক্ষার পরিচয়”

কওমী মাদ্রাসা কি ও কেন?
“কওমী মাদ্রাসা” সঠিক সম্ভাবনা ও প্রদীপ্ত আশার আলো, পৃথিবীর বুকে যুগ পরম্পরায় যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর মাঝে অন্যতম ও সর্বোত্তম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কওমী মাদ্রাসা। যার নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহান স্রষ্টা স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ থেকে প্রেরিত মানবতার মহান অগ্রদূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার অমীয় সূধা পান করে তৃপ্ত হয়েছেন হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ, হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ। সৃষ্টি হয়েছেন হযরত ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক, ইমাম আহমদ রাহিমাহুমুল্লাহু আলাইহিম প্রমুখ আইম্মায়ে কেরাম।
কওমী মাদ্রাসা প্রকৃত আদর্শ মানব তৈরীর সুনিপুণ কারখানা। যে কারখানা থেকে তৈরী হয়েছেন হযরত ইমাম গাজালী, মুহাদ্দিসে দেহলভী, মুহাজিরে মাক্কী রাহিমাহুমুল্লাহু আলাইহিম এর মত বিখ্যাত ব্যক্তিরা। যারা জাতির ক্রান্তিলগ্নে ইংরেজ বেনিয়াদের হাত থেকে ধর্ম দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে গড়ে তুলেন “দারুল উলূম দেওবন্দ” মাদ্রাসা এবং দারুল উলূম দেওবন্দকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসা।
দেশ ও ধর্ম প্রিয় এই আলেমগনের রোনাজারি আহাজারি ও নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং নিরলস সাধনা প্রচেষ্টায় তৈরী হয় সেবা প্রিয় এক দল ছাত্র সমাজ তাদের মহান আত্মত্যাগ ও বিপ্লবী হুংকারে কেঁপে উঠেছে ব্রিটিশ বেনিয়াদের মসনদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে উপমহাদেশ। তাদের তাজা খুনের প্লাবন স্রোতে তরী ভেসেছে ১৯৪৭ সালের মহান স্বাধীনতার। যে তরীর কান্ডারী ছিলেন হযরত কাসিম নানুতুবী, হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী, শাহ ইসমাঈল শহীদ রাহিমাহুমুল্লাহ সহ অসংখ্য দেওবন্দী ওলামায়ে কেরাম। ধর্মের প্রকৃত রুপায়ন, সঠিক সংরক্ষণ, সকল প্রকার অপব্যাখ্যা ও মনগড়া ধর্ম ব্যবস্থাপত্র থেকে কোরআন ও হাদিস, ইলমে নববীর মূলধারা সুন্নতে রাসূল সাঃ এর রূপরেখা সংরক্ষিত হচ্ছে সুপ্রাচীর কওমী দুর্গে।
কওমী মাদ্রাসা জাতিকে শুধু স্বাধীনতাই উপহার দেয়নি বরং প্রতি বছরই উপহার দেয় স্বার্থত্যাগী সচেতন এক দল কর্মনিষ্ট কর্মী।যারা প্রিয় মাতৃভুমিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছেন।
“কওমী শিক্ষার পরিচয়”
কওমী শিক্ষার্থীদের পরিচয় হল তারা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ অনূগত ও আস্থাশীল, সুন্নাতে নববীর পূর্ণ অনুরক্ত ও অনুসারী। এই শিক্ষা ব্যবস্থা মানব গবেষণা প্রদত্ত নয় বরং আল্লাহ প্রদত্ত। যার আবেদন করেছিলেন জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম আঃ সন্তানের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুখ শান্তি এবং উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা ভেবে। আর পার্থিব সেই শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যসূচি ছিল কোরআনের তিলাওয়াত, চরিত্র সংশোধন তথা আত্মশুদ্ধি এবং কিতাব ও হিকমাতের শিক্ষাদান।আল্লাহ্‌ তাআলা এই প্রার্থনা কবুল করলেন এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই পাঠ্যসূচী দিয়ে প্রেরণ করলেন। এরপর সাড়ে চৌদ্দশত বছরের দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর যুগ পরম্পরায় এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের পর্যন্ত পৌছে দেন সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন তাবে তাবেঈন এবং সালফে সালেহীন রিযওয়ানিল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন। সুতরাং বিজ্ঞানের সামনে অজ্ঞান হয়ে যারা কওমী মাদ্রাসা সম্পর্কে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার অবান্তর অভিযোগ তুলেন তারা মূলত এই শিক্ষা ধারার লক্ষ উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনবগত।
বস্তুত এই শিক্ষা আহরণ করে এবং নববী আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কওমী শিক্ষার্থীরা হয় ভদ্র, সভ্য, নম্র, বিনয়ী এবং মানবিক উন্নত চরিত্রাবলীর অধিকারী। ফলে কওমী শিক্ষার্থীরা ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে পাশ্চাত্বের অন্ধ অনুকরণ করেনা। সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির বেড়াজালে গাঁ
ভাসিয়ে দেন না এবং আকাশ মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার নোংরামী, বেহায়াপনা, নগ্নতা ও অশ্লীলতায় নিমগ্ন হননা। কওমী শিক্ষার্থীরা অল্পে তুষ্ট, পরকল্যাণে সচেষ্ট, দশ ও দেশের জন্য উৎসর্গিত এবং উম্মত ও জাতির প্রতি দরদ, মায়া এবং সম্প্রীতি ও ভালবাসা প্রদর্শনের এক অনুপম দৃষ্টান্ত। তাই অভাব অনটন ও ক্ষুধা, অনাহারে ক্লিষ্ট থাকা সত্বে ও কওমী শিক্ষার্থীরা লোভ-লালসা, সন্ত্রাস, হানাহানি, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির কালো বাজার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন।
আমার ও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস পাশ্চাত্বমুখী আধুনিক শিক্ষায় গর্বিত দেশের ও দেশের বাইরের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ গুলো এর একটি উপমাও পেশ করতে সক্ষম হবেনা। কওমী শিক্ষার্থীরা তাদের হৃদয়ের গহীনে এই বিশ্বাস লালন করে যে অর্থ-সম্পদ, যশ-খ্যাতি এবং ভোগ ও প্রাচুর্যের মধ্যে কোন কামিয়াবী ও সফলতা নেই বরং সততা ও ন্যায়নীতি এবং বিশ্বস্ততা ও আমানতদারীর ভিত্তিতেই জীবনে সফলতার সৌধ নির্মিত হয়। তাই দেশ ও জাতির আমানতের খেয়ানত, দুর্নীতি ও ইয়াবা কেলেঙ্কারীর দায় থেকে কওমী শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র।
ন্যায় ইনসাফের কষ্টি পাথরে যাচাই করলে আমরা দেখতে পাই প্রতিটি কওমী মাদ্রাসা দ্বীন ও ইসলামের এক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বাধীনতার স্বপক্ষে সৈনিক তৈরীর আদর্শ প্রতিষ্ঠান এবং দেশ প্রেমিক সুনাগরিক সৃষ্টির নির্মল ঝর্ণাধারা। এখানে বিরাজ করে পারষ্পরিক কলহ বিবাদ মুক্ত এক অন্তরঙ্গ পরিবেশ। দূষিত রাজনীতির পঙ্কিলতা এবং ছাত্র রাজনীতির বিষাক্ততা এখানে নেই।
“কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ও প্রসঙ্গ কর্মসংস্থানঃ”
দ্বীনি শিক্ষার মারকায এই কওমী মাদ্রাসাগুলোকে আজ বাংলাদেশের কোন কোন সমালোচক ভূলবশত অসত্য বিশেষনে বিশেষায়িত করতে চান। তারা এগুলোকে অপ্রয়োজনীয়, বেকার ও বেকারত্ব সৃষ্টিকারী ইত্যাকার কটুবাক্যে কালিমা লেপন করে এগুলোর ভাবগাম্ভীর্য বিনষ্ট করতে সচেষ্ট। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে, টেনে টোনে, জোড়াতালি দিয়ে বুঝাতে চান যে, এসব মাদ্রাসায় পড়ে কোন চাকরী-নকরী পাওয়া যায়না। ইচ্ছেমত টাকা পয়সা কামাই করা যায়না। বিলাসী জীবন উপভোগ করা যায়না। তাহলে এইসব প্রতিষ্ঠান দিয়ে সমাজের কি লাভ। এসব বুদ্ধিজীবি ভাইদের উদ্দেশ্যে আমরা কিছু আরজ করতে চাই তারা যদি বুদ্ধির সদ্ব্যবহার করেন এবং নিম্নোক্ত কথাগুলোতে একটু চিন্তা করেন তাহলে আশা করি তারা তাদের উপরোক্ত অবস্থান থেকে সরে আসবেন। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি নির্বিশেষে পৃথিবীর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নিছক রুজি-রোজগার ও আর্থিক উন্নতি সাধনকে নিজেদের শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে ঘোষনা দেয়নি দিতে পারে ও না। বরং ছাত্রদের জ্ঞান ও প্রতিভার উপযুক্ত বিকাশ সাধনই হলো সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিন্ন উদ্দেশ্য।
তাহলে কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত কোন আলিমকে এ মানদন্ডে কেন বিচার করা হয় যে তিনি তার এই লেখাপড়ার দ্বারা মাসে কত টাকা রোজগার করতে পারেন এটা আমাদের বোধগম্য নয়। চোখে রঙ্গিন চশমা লাগিয়ে তাকালে সবকিছুর সঠিক রং অনুমান করা যায়না চশমা খুলে তাকালে তবেই আসল রং বুঝা যায়। যে সব বন্ধু কওমী শিক্ষিতদেরকে বেকার ও অকর্মণ্য দোষে দোষী করতে চান, যদি দয়া করে চোখ থেকে রঙ্গিন চশমাটি সরিয়ে তাকাতেন তাহলে দেখতেন যে, কওমী আলিমগন বেকার তো ননই বরং ভীষন ব্যস্ত। মানুষকে দ্বীনের সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে নৈতিকতা ও আদর্শের গুণ অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করা এবং তাদেরকে আখেরাতমুখী বানানোর মত ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজে তারা সদা নিয়োজিত। আমাদের অনেক আলেমে দ্বীন রয়েছেন যাদের ডায়রীতে বিপুল পরিমাণ কাজের দীর্ঘ ফিরিস্তি পরে রয়েছে। কিন্তু সময়ের অভাবে তারা তাতে হাত দিতে পারছেননা।
বলা হচ্ছে কওমী আলিমদের কোন কর্মক্ষেত্র নেই আসলেই কি বিষয়টি এরকম, কিছুতেই না। বরং তাদের কর্মক্ষেত্র অসংখ্য ও অগণিত সুবিশাল ও সুবিস্তৃত। তবে এগুলোকে কঠিন পর্দা দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে যা উন্মোচন করতে দেওয়া হচ্ছেনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি মতে প্রতি দশ জন মানুষের দৈহিক সুস্থতার জন্য অন্তত একজন চিকিৎসক এবং একজন আইন উপদেষ্টা বিদ্যমান থাকা একটি মৌলিক অধিকার এখন আমরা বলতে চাই মানুষ কি শুধু শরীরের নাম। না বরং শরীর ও রুহ এ দুইয়ের সমন্বয়ে হল মানুষ। সামান্য শরীরের জন্য যদি বিশ্ববিবেক প্রতি দশ জনের জন্য একজন চিকিৎসক ও আইন উপদেষ্টার প্রয়োজন মনে করে তাহলে মানুষের রুহ ও আত্মার সুস্থতার জন্য রুহানী চিকিৎসক ও শরয়ী আইন উপদেষ্টার প্রয়োজনীয়তা কিভাবে অস্বীকার করা যায়।
একজন হক্কানী আলিম হলেন মানুষের রুহ ও আত্মার চিকিৎসক তিনি মানুষের যাবতীয় আমল-আখলাক, কাজকর্ম, লেনদেন ইত্যাদির আইন উপদেষ্টা। অতএব বিশ্ব বিবেকের নীতি অনুযায়ী যদি চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে কর্ম সংস্থান ও চাহিদার তুলনায় আলিমদের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। শেষে একটি কথা না বলে পারছিনা কওমী বিদ্বেষী কতিপয় চিন্তাবিদ অযথা এ উক্তি করে থাকেন যে কওমী শিক্ষিতদের অধিকাংশই অভাবী। অভাবের তারনায় তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নেন কিন্তু আমরা অভাবে স্বভাব নষ্ট, এই প্রবাদ সর্বক্ষেত্রে সত্য বলে মেনে নিতে পারছিনা। কে বলেছে অভাবের কারনে মানুষ সন্ত্রাসী হয়? অভাবের কারনে মানুষ সন্ত্রাসী হয়না বরং তুলনামূলক বেশি সংযমী হয়। অধিক খোদাভীরু ও আল্লাহ্‌ওয়ালাই হয়। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় অপকর্ম, দুর্নীতি, অত্যাচার ইত্যাদির ৮০% ঘটে সমাজের ধনী লোকদের দ্বারা আর হয়ত ২০% ঘটে গরীব লোকদের মাধ্যমে। বস্তুত কোন মানুষ যদি সন্ত্রাসী হয় তাহলে সেটা মন্দ সাহচর্য ও মন্দ পরিবেশ এবং অশিক্ষা ও কুশিক্ষার কারণে কিংবা জীবন যাত্রায় মওত ও আখেরাতের ভয় বিদ্যমান না থাকার কারণে।
আসলে রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় না করে আমরা জাতিকে ঔষধ সেবন করিয়ে যাচ্ছি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। চিন্তাবিদ মহলের জন্য বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার
শেষ কথা:
মানবতার বাতিঘর এই কওমী মাদ্রাসা গুলো বরাবরই বিশ্বসন্ত্রাস ইহুদী, খ্রিষ্টানদের প্রধান শত্রু বিবেচিত হয়ে আসছে। কারণ জালিমের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে যারা তাদেরকেই জন্ম দেয় কওমী মাদ্রাসা। তাই সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি এ সকল প্রতিষ্ঠানকে নির্মূল করার জন্য সর্বদাই গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কওমী শিক্ষাকে সন্ত্রাস ও বেকারত্ব সৃষ্টিকারী, আধুনিক যুগের উন্নতি-অগ্রগতির পথে বাধা ইত্যাদি দোষে দোষী করে সমাজের সামনে তুলে ধরতে তারা সদা সচেষ্ট। অতএব সর্বস্তরের মুসলিম জনগনের প্রতি আবেদন শ্ত্রুর অপপ্রচারে যেন আমরা বিভ্রান্ত না হই। মনে রাখবেন যেদিন এই কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা থাকবেনা। সেদিন হয়ত বিদ্যুতের ঝলক থাকবে, প্রযুক্তির গতি থাকবে, মানুষ উড়বে মহাকাশে মহাবেগে, আধুনিকতায় পৃথিবী ঝলমল করবে। কিন্তু সেদিন হয়ত মানুষ আর মানুষ থাকবেনা পশুকে ও হার মানাবে।
দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ২০১২ সালের তাফসীর বিভাগের পক্ষ থেকে ছাপানো ফয়জুল আজিজ নামক ডায়রী থেকে সংকলিত।
সংকলকঃ
মুসা আল ফক্বীহ
তাফসীর বিভাগ ২০১২
হাটহাজারী মাদ্রাসা

মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১২

সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত ফজরের সুন্নাত ও ফরজ ছাড়া অন্য কোন নামায পড়া যাবে কি?

সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত ফজরের সুন্নাত ও ফরজ ছাড়া অন্য কোন নামায পড়া যাবে কি?
সুবহে সাদেক এর পর ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্য নফল নামাজ পড়া যায় কি না ?
ফজরের সুন্নত এর আগে বা কোন নফল পড়া যাবে কি না ? ফজরের সুন্নত এর পরে ফরজ পর্যন্ত অন্য কোন নফল পড়া যাবে কি না ?
পড়া না গেলে তার কারণ কি ?

জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
সুবহে সাদিকের পর ফজরের ফরয নামাযের আগে দুই রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য নফল নামায পড়া প্রমানিত নয়। মসজিদে গিয়েও নামায পড়া যাবে না।
ফজরের ফরয পড়ার পর সূর্য উদিত হয়ে কিছুটা উঁচু হওয়া পর্যন্ত কোন নামায পড়তে রাসূল সাঃ নিষেধ করেছেন। তাই সে সময় নামায পড়া যাবে না।
দলিল
عَنْ حَفْصَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ لاَ يُصَلِّى إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ وفى رواية إلا ركعتي الفجر
অনুবাদ-হযরত হাফসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ফজর উদিত হবার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন নামায পড়তেন না।
{সহীহ মুসলিম হাদীস নং-১৭১১,সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৫৮৭,মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২২৫,সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৪২২৭,সুনানে বায়হাকী,হাদীস নং-৯৭৯,আল মু’জামুল কাবীর হাদীস নং-৩৮৫}
فى صحيح البخارى- أبا سعيد الخدري يقول : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول لا صلاة بعد الصبح حتى ترتفع الشمس ولا صلاة بعد العصر حتى تغيب الشمس ( صحيح البخارى- كتاب مواقيت الصلاة، باب لا يتحرى الصلاة قبل غروب الشمس، رقم-1139)
অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন-আমি নবীজি সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, ফজরের নামাযের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই, এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই। (সহীহ বুখারী-১/৮২, হাদীস নং-১১৩৯)
وفى صحيح المسلم- قال عمرو بن عبسة السلمى ………… فقلت يا نبى الله……أخبرنى عن الصلاة قال « صل صلاة الصبح ثم أقصر عن الصلاة حتى تطلع الشمس حتى ترتفع فإنها تطلع حين تطلع بين قرنى شيطان وحينئذ يسجد لها الكفار (صحيح مسلم- صلاة المسافربن، باب إسلام عمرو بن عبسة،رقم-1967)
অনুবাদ-আমর বিন আবাসা আস সুলামী রাঃ বলেন-আমি বললাম-হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে নামায সম্পর্কে শিক্ষা দিন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন-ফজরের নামায আদায় করবে। তারপর সূর্য পূর্বাকাশে উঁচু হওয়া পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্যখানে উদিত হয়, এবং সে সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে। (সহীহ মুসলিম-১/২৭৬, হাদীস নং-১৯৬৭)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com