Translate

সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক(রহ.) জীবনী

 

৮ আগস্টঃ বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাবেক আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক আর নেই। ঢাকার আজিমপুরস্থ নিজ বাসভবনে আজ দুপুর ১টায় তিন ইন্তিকাল করেছেন( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
হাদীস শাস্ত্রের মহিরুহ আল্লামা আজিজুল হকের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ১৯১৯ সালে বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং-এ তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।
শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের(রহঃ) বর্ণাঢ্য জীবন
বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, উপমহাদেশের অন্যতম হাদীস বিশারদ, ইসলামী আন্দোলনের আপোষহীন জননেতা, বোখারী শরীফের প্রথম বঙ্গানুবাদক, অর্ধশতাব্দীর অধিক কাল ব্যাপী বুখারী শরীফ দরস প্রদানের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী শাইখুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি প্রেরণা। তার জীবনের ধাপে ধাপে রয়েছে ইর্ষণীয় সাফল্য। নিরলস পরিশ্রম, অদম্য ¯পৃহা আর অসীম সহস নিয়ে তিনি পথ চলছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন নিুম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
জন্ম ও পরিবার :
তৎকালীন ঢাকা জিলার মুন্সিগঞ্জ মহকুমার বিক্রমপুর পরগনাস্থ লৌহজং থানার ভিরিচ খাঁ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে ১৩২৬ বাংলা সনের পৌষ মাস মুতাবেক ১৯১৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম : আলহাজ্ব এরশাদ আলী। তিনি মাত্র ৫ বছর বয়সে তাঁর মাকে হারান। ফলে নানা বাড়ীতে নানী ও খালার কাছে লালিত-পালিত হন।
শিক্ষা জীবন :
গ্রামের মক্তবে কিছুদিন পড়ার পর সাত বছর বয়সে ব্রা˛ণবাড়ীয়ার জামেয়া ইউনুসিয়ায় ভর্তি হন। সেখানে মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. এর তত্ত্বাবধানে ৪ বছর লেখা-পড়া করেন। ১৯৩১ সালে ঢাকা বড় কাটারা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ১২ বছর লেখা-পড়া করে কৃতিত্বের সাতে দাওরায়ে হাদীস পাশ করেন। এ সময়ে আল্লামা যফর আহমদ উছমানী, আল্লামা রফিক কাশ্মীরী, হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. প্রমূখ বিজ্ঞ হাদীস বিশারদদের কাছে কুরআন হাদীসের জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতের বোম্বের সুরত জিলার ডাভেল জামেয়া ইসলামিয়ায় ভর্তি হন। সেখানে মাওলানা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী রহ. প্রমুখের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. বুখারী শরীফের যে আলোচনা করেন তা তিনি নোট করে রাখেন। পরবর্তী জীবনে এ ব্যখ্যাই তাঁর জীবনের বিশেষ সম্বল হয়ে উঠে। সর্বশেষ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে মাওলানা ইদরীস কান্ধলবী রহ. এর তত্ত্বাবধানে তাফসীর বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। এবং তাঁর উস্তাদ মাওলান শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. এর নির্দেশে ঢাকায় চলে আসেন।
কর্মজীবন :
ভারতের ডাভেলস্থ জামেয়া ইসলামিয়ায় উচ্চ শিক্ষা শেষে সেখানে অধ্যাপনার দায়িত্ব নেওয়ার আহবাদ জানানো হলেও তার মুরুব্বীগণের নির্দেশে ঢাকাস্থ বড় কাটারা মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এ মাদরাসায় দক্ষতার সাথে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৫২ সালে লালবাগ মাদরাসায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বুখারী শরীফ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের দরস দেন। সেখানে কৃতিত্বের সাথে বুখারী শরীফের অধ্যাপনায় ব্যাপিত থাকায় তাকে ‘শাইখুল হাদীস’ খেতাব দেওয়া হয়। এ সময়েই বুখারী শরীফের বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়। লালবাগে অধ্যাপনার ফাঁকে ১৯৭১ সাল থেকে ২ বছর বরিশাল জামিয়া মাহমুদিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৮ সালের এপ্রিলে কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে বুখারী শরীফের অধ্যাপনা করেন। ৩ বছর সেখানে এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া নামে মুহাম্মাদপুরস্থ মোহাম্মাদী হাউজিং এ একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। যা ১৯৮৮ সালে মুহাম্মাদপুরস্থ সাত মসজিদের পার্শ্বে নিজস্ব জমির ব্যবস্থা হওয়ায় জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া নামে স্থানান্তিরত হয়। বর্তমানে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুরুব্বী ও শাইখুল হাদীস হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মালিবাগ জামিয়া শরইয়্যায়ও প্রিন্সিপাল হিসাবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার ‘শাইখুল জামিয়া’ ও ‘শাইখুল হাদীস’ হিসাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ মাদরাসায় ‘শাইখুল হাদীস’ হিসাবে হাদিসের খেদমাত করেন। বর্তমানে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মিরপুর-১৪ জামেউল উলুম মাদরাসা, দরুস সালাম মাদরাসা, লালমাটিয়া জামেয়া ইসলামিয়া মাদরাসা, সাভার ব্যাংক কলোনী ও বনানী জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় বুখারী শরীফের দরস দিচ্ছেন। তিনি হদীসের একজন গবেষক হিসাবে অধ্যাপনার পাশাপাশি সারা দেশেই ইসলামের দাওয়াত নিয়ে হাজির হন । তার বয়ান শুনতে হাজার হাজার লোক জমায়েত হয়। তিনি লালবাগ কেল্লা জামে মসজিদ, মালিবাগ শাহী মসজিদ ও আজিমপুর স্টেট জামে মসজিদে খতিব হিসাবেও দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় ঈদগাহেও ঈদের ইমামতি করেছেন বেশ কয়েক বছর। তিনি আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবেও দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক জীবন :
ছাত্র জীবনেই ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এ সময় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের কারণে নির্যাতন সহ্য করেন। পাকিস্তান আমলে মাওলানা আতহার আলী, মুফতী শফী রহ. প্রমূখ আকাবিরগণের সাথে নেযামে ইসলাম পার্টির কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১. বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সে সময় উলামায়ে কেরামের একমাত্র দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
২. ১৯৮১ সালে হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর ডাকে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দান করেন। তখন তিনি সিনিয়র নায়েবে আমীর হিসাবে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহ সালার হিসাবে আবির্ভূত হন।
৩. ১৯৮২ সালে হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর সফর সঙ্গী ও মুখপাত্র হিসাবে ইরান, ইরাক ও মধ্য প্রাচ্য সফর করেন। এ সফরে মুসলিম উম্মাহর শান্তি, স্থিতিশীলতা ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধতার ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনা করেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধ বন্ধের জন্য আয়াতুল্লাহ খোমেনী ও প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
৪. ১৯৮৭ সালে তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। এ সময় তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
৫. ১৯৮৯ সালে ৮ই ডিসেম্বর খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন।
৬. ১৯৯১ সালের ৯ই ফেব্র“য়ারী দেশবসীর উদ্দেশ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্কালে ১৫টি মূলনীতির উপর রেডিও-টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
৭. ১৯৯১ সালে সমমনা ইসলামী কয়েকটি দল নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেন। তিনি এর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ১টি আসন (সিলেট-৫) লাভ করে।
৮. ১৯৯২ সালে ৬ই ডিসেম্বর ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা হলে এর প্রতিবাদে শাইখুল হাদীস মিছিল, মিটিং ও আন্দোলনে সক্রিয় হন।
৯. ১৯৯৩ সালে ২-৪ জানুয়ারী বাবরী মসজিদ পুনঃ নির্মাণের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে যশোর বেনাপোল হয়ে অযোধ্যা অভিমুখে লংমার্চের নেতৃত্ব দেন। উক্ত লংমার্চে ৫ লক্ষাধিক লোক স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।
১০. বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসীমরাওকে বাংলাদেশে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেন এবং বিমান বন্দর ঘেরাও কর্মসূচীর ডাক দেন। ফলে তৎকালীন সরকার ৯ই এপ্রিল ১৯৯৩ সালে তাকে গ্রেফতার করে। জনগণের বিক্ষোভের মুখে অবশেষে ৮ই মে ১৯৯৩ সালে সরকার শায়খুল হাদীস সাহেবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
১১. ১৯৯৪ সালে গঙ্গার পানি সংকট নিরসন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
১২. ইসলাম বিদ্বেষী এন.জি.ও দের ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন গড়ে তুলেন। নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তির দাবীতে ৩০ জুন ১৯৯৬ সালে হরতাল ডাকা হলে সারা দেশে অভাবনীয় সাড়া পড়ে এবং স্বত:স্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়।
১৩. ১৯৯৭ সালে তথাকথিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করা হলে শায়খুল হাদীস সঙ্গত কারণে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেন এবং আন্দোলন করেন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চ করেন।
১৪. ১৯৯৯ সালে চার দলীয় জোটে অংশ গ্রহণ করেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৫. ১ই জানুয়ারী ২০০১ হাইকোর্ট থেকে ফতওয়া বিরোধী রায় দেওয়া হলে তিনি এর প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তুলেন।
১৬. ৪ঠা ফেব্র“য়ারী ২০০১ রংপুর থেকে সমাবেশ করে ফেরার পথে মিথ্যা মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। কারা অভ্যন্তরে সরকারী রোষানলে পড়ে প্রায় ৪ মাস অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করেন।
১৮. ২৩ ডিসেম্বর ২০০৬ ঐতিহাসিক ইসলামী আদর্শিক ৫ দফার ভিত্তিতে শায়খুল হাদীসের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসের সাথে এক নির্বাচনী সমঝোতার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলীল তার বাসভবনে এসে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
১৯. ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন সরকারের কুরআন বিরোধী নারী নীতিমালার প্রতিবাদে কুরআন বিরোধী আইন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
লেখালেখি :
১. শায়খুল হাদীস দা. বা. এর অনন্য অবদান হল, বুখারী শরীফের বঙ্গানুবাদ। প্রথমে ৭ খণ্ডে ও বর্তমানে ১০ খণ্ডে সমাপ্ত বুখারী শরীফের এ বিশদ ব্যাখ্যা। গ্রন্থটি আলেম ও সাধারণ শিক্ষিত সকলের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। বুখারী শরীফ অনুবাদ ১৯৫২ সালে হজ্বের সফরে শুরু করেন। ১৬ বছরের কঠোর সাধনায় তা সমাপ্ত করেন। এর অনেক অংশই তিনি রওজা শরীফের পাশে বসে অনুবাদ করেন।
২. ছাত্র জীবনে বুখারী শরীফের উর্দু ব্যখ্যা (শরাহ) লিখেন। ১৮০০ পৃষ্ঠার এ বৃহৎ গ্রন্থটি ‘ফজলুল বারী শরহে বুখারী’ নামে পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকেও প্রকাশের কাজ চলছে।
৩. ‘মুসলিম শরীফ ও অন্যান্য হাদীসের ছয় কিতাব’ নামে অনবদ্য এক হাদীস গ্রন্থ সংকলন করেন। এতে বিষয়ভিত্তিক হাদীসসমূহ অনুবাদসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। এর ২ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।
৪. মছনবীয়ে রূমীর বঙ্গানুবাদ।
৫. পূজিঁবাদ, সমাজবাদ ও ইসলাম।
৬. কাদিয়ানি মতবাদের খণ্ডন।
৭. মাসনূন দোয়া সম্বলিত মুনাজাতে মাকবূল (অনুবাদ)।
৮. সত্যের পথে সংগ্রাম (বয়ান সংকলন)।
এ ছাড়াও তিনি কুরাআনুল কারীমের উপর বিভিন্ন পুস্তিকা রচনা করেন।
পারিবারিক জীবন:
পারিবারিক জীবনে তিনি ৫ ছেলে ও ৮ মেয়ের জনক। তাঁর পরিবারে প্রায় সকলেই হাফেজ। এমন কি নাতি-নাতনিসহ তাঁর পরিবারে হফেজের সংখ্যা প্রায় ৭০ জন।
এ মহান পুরুষ (হিজরী বর্ষ অনুযায়ী) ৯৩ বছরে উপনীত হয়েও নিরলসভাবে হাদীসের দরস এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা আলেম-ওলামা ও সাধারণ লোকদেরকে নসীহত ও দোয়ার মাধ্যমে নায়েবে নবীর গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। আমীন।।

জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব এর দাফন সম্পন্ন সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি :

জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব ছাঃ রঃ   এর দাফন সম্পন্ন


জানাযায় শোকার্ত জনতার ঢল এক অংশ

চট্টগ্রাম আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার শায়খুল হাদীস, দেশবরেণ্য আলেমেদ্বীন মরহুম আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব সাহেব হুজুরের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ১৬ মে, বুধবার, সকাল ১১টায় পটিয়া জামিয়া ইসলামিয়া ময়দানে হুজুরের নামাজে জানাযায় জামিয়া আহলিয়া হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি ফজলুল হক আমিনী, বাবুনগর মাদরাসার পরিচালক আল্লামা মুহিবুল্লাহ, জামিয়া দারুল মা’রিফের প্রধান পরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, বিভিন্ন মাদরাসার পরিচালক, বিশিষ্ট আলেম-ওলামা, রাজনীতিবিদ, সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশ থেকে অর্ধলাধিক শোকার্ত তৌহিদী জনতা শরীক হন। জামিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা নুরুল ইসলাম জদীদের ইমামতিতে নামাজে জানাযা শেষে অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত ও তৌহিদী জনতার অশ্র“সিক্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে জামিয়াস্থ মাকবারায়ে আজীজীতে মরহুম হুজুরকে দাফন করা হয়। জানাযাপূর্ব বক্তৃতায় জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আইয়ুব সাহেব (রহ.) আমার দীর্ঘদিনের সহপাঠী ও একনিষ্ঠ সহকর্মী। তিনি নাহু, ছরফ, তাফসীর, হাদীস, ফিক্হ, মানতিক, ফলসফা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমান পারদর্শী ছিলেন। সারাদেশে একাধারে এতগুলো বিষয়ে পারদর্শী আলেমদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি সুদীর্ঘ ৩৬ বছর যাবৎ জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় হাদীসের দরছদানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে দ্বীনি শিা বিস্তারে অনন্য অবদান রেখেছেন। তাঁর ইন্তেকালে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি :
মরহুম আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ আইয়ুব (রহ.) ১৩৫৮ হিজরীতে রাঙ্গুনিয়া থানার রাজনগর ইউনিয়নের খন্ডালিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মাওলানা ফজলুল রহমান। শিক্ষা জীবনে তিনি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজনগর রুকুনুল ইসলাম মাদ্রাসা এবং জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় পড়ালেখা করেন। তিনি ১৩৭১ হিজরীতে দাওরায়ে হাদীসের সনদ লাভ করেন। তাঁর শিকবৃন্দের মধ্যে আল্লামা মুফতী আজিজুল হক (রহ.), আল্লামা আমির হোছাইন (মীর সাহেব হুজুর) রহ., আল্লামা দানিশ (রহ.), আল্লামা আলী আহমদ বোওয়ালভী (রহ.) অন্যতম। কর্মজীবনে তিনি মীরসরাই জামালপুর মাদরাসা, বগুড়ার জামিল মাদরাসা ও রাঙ্গুনিয়া কোদালা মাদরাসায় ক্রমান্বয়ে শিকতার মহৎ খেদমত আঞ্জাম দেন। এরপর তিনি জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার নাজেমে তালিমাত্ (শিা পরিচালক), আরবী-উর্দু-ফার্সী কাব্য চর্চা বিভাগের পরিচালক ও শায়খুল হাদীস সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়ে, ছাত্র, ভক্তসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১২

এক নজরে নুরুলগনি ইসলামিক একাডিমী কায্যক্রম

এক নজরে একাডিমী
========
১:-আধুনীক নূরানী তালিমুল কোরআন শিক্ষা বিভাগ ও নাশারী বিভাগ ৷
2:- হেফজুল কোরআন বিভাগ
3:-কারীগরি শিক্ষা তথা কম্পিউটার মোবাইল সাভিসিং ও টেইলারিং ইত্যাদি চালু করন ৷
4:-প্রতিষ্ঠান ও এলাকার দুস্হ দের মধ্যে রমজানে ইফতারী ও ঈদের জামা কাপড বিতরন করন ৷
5:- এতিম গরীব ছাত্রসহ এলাকার জ্ঞান-পিপাসুদের মধ্যে দ্বীনি কিতাব ও কোরআন বিতরন করন ৷
6:- মসজিদ ...
নিমান ৭:-ছাত্রাবাস নিমান
৮:- গভীর নলকূপ ও হেভী মোটর স্হাপন / পানির হাওজ ও অজুখানা নিমান ৷
৯:-গরীব-লাওয়ারীশ মৃতদের দাপন-কাপন সম্পন্ন করন ৷
১০:-উন্মুক্ত কবরস্হান নিমান

আরজ গুজার
========
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক :-

এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
নুরুলগনী ইসলামীক একাডিমী  
008801815503726  


একাউন্ট নং
একাউন্ট
নং
===========
abdullah nezami
islami bank  L t d .
ac / no 4363
baryar hat branch
mirshari . chittagong
bangladesh

 
EMAIL-নুরুলগনি ইসলামিক একাডিমী
 

বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১২

মিরসরাই মহামায়া সেচ প্রকল্প

 আমাদের মিরসরাই বাসীর গৌরব মহামায়া সেচ প্রকল্প

মহামায়া সম্পর্কে ব্লগার ও পাঠকদের কিছু বর্ণনা দিই। এটি মূলত একটা সেচ প্রকল্প এবং কাপ্তাই লেকের পরে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম লেক। প্রকল্পটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধাণে পরিচালনাধীন। এটি চট্টগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বার মিরসরাই উপজেলার ৮নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজারের প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। আর আমাদের বাডি যেহেতু কাটাছরা ১নং ওয়ডর ১ নং ব্লগ সেখান থেকে ৩ কিলো মিটার ব্যবধান মা ত্র .

প্রকল্পের পুরো নাম- মহামায়া ছড়া সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প।
২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২৬ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা।


এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১ /লেক, ২/ পাহাড়, ৩/ ঝর্ণা ও ৪/ রাবার ড্যাম।

লেকের আয়তন ১১ বর্গ কিলোমিটার। লেকে চাইলে আপনি সাতার কাটতে পারেন এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়তে পারেন। সাতার কাটার সময় তীরের আসে-পাশে থাকা ভালো। কারণ লেকের পানি সাধারণত ভারী হয়ে থাকে, যার ফলে যে কেউ সামান্য সাতার কাটার পর দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে এই প্রকল্পের এলাকায় যে পাহাড়ি ঝর্ণা রয়েছে সেটিতে আপনাকে ইঞ্জিন চালিত নৌকার সাহায্যেই যেতে হবে। ভাড়া গুনতে হবে জনপ্রতি ৪০ টাকা (যাওয়া-আসা)।. সংখ্যায় যদি বেশি থাকেন তাহলে একেবারে যাওয়া-আসার জন্য রিজার্ভ ভাড়া করা ভালো। এক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে প্রায় ৪০০-৪৫০ টাকা। সময় বেশি লাগেনা, যাওয়া-আসায় ২৫-৩০ মিনিটের মত লাগে। এককথায় বলতে গেলে যারা লেক, পাহাড়, ঝর্ণা এই তিনটি একসাথে ভালবাসেন তাদের জন্য একটা আদর্শ জায়গা এই মহামায়া প্রকল্প। অর্থাৎ মহামায়া একটি সেচ প্রকল্প হলেও এতদ অঞ্চলের আকর্ষণীয় পর্টযন স্পট হিসেবে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে এটি।

এবার দেখুন ছবি
কেমন লাগলো ? আবশ্যই ঘুরে আসতে মন চায় তাইনা বন্ধু ,
















































 
http://www.sonarbangladesh.com/blog/DaliaNuzha/124257
 

বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১২

রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে ‘হানাফী মাজহাবের’ কোন দলিল নেই এ কি মিথ্যা অপবাদ ,

রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে ‘হানাফী মাজহাবের’ কোন দলিল নেই?!
ডাক্তার সাহেব এক অনুষ্ঠানে রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গবে-নাকি ভাঙ্গবে না? এ ব্যাপারে আলোচনা করতে ‎গিয়ে বলেন,‘কতিপয় ওলামায়ে কিরাম বিশেষত হানাফী মাযহাবের অনুসারী ওলামায়ে ‎কিরামের মতে রক্ত বের হলে অজু ভেঙ্গে যায়। নামাযের মধ্যখানে রক্ত বের হলে কি করতে ‎হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তাদের ফতোয়া (হানাফীদের ফতোয়া) অনেক দীর্ঘ। তবে এ মতের স্বপক্ষে স্পষ্ট কোন দলিল নেই। {হাকীকতে জাকির নায়েক-২১৪, মাকতাবায়ে মদীনা, ভারত}
এখানে ডাক্তার সাহেব ফিকহে হানাফীর সংশ্লিষ্ট ওলমায়ে কিরামের বিরোদ্ধে অপবাদ আরোপ ‎করলেন যে,তারা বিনা দলিলে অজু ভাঙ্গার কথা বলেন। অথচ রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গার ‎‎স্বপক্ষে অসংখ্য হাদিস রয়েছে,এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলও ছিল এর উপর। নিম্নে ‎তার কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হল।‎
(১)
عن عائشة قالت جاءت فاطمة بنت أبي حبيش إلى النبي صلى الله عليه و سلم فقالت يا رسول الله إني امرأة أستحاض فلا أطهر أفأدع الصلاة ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( لا إنما ذلك عرق وليس بحيض فإذا أقبلت حيضتك فدعي الصلاة وإذا أدبرت فاغسلي عنك الدم ثم صلي ) . قال وقال أبي ( ثم تؤضي لكل صلاة حتى يجيء ذلك الوقت )
অর্থ: হযরত আয়শা রা. বলেন,হযরত ফাতেমা বিনতে আবি হুবাইশ রা. হায়য অবস্থায় ‎রাসুলুল্লাহ  
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বলেন,হে আল্লাহর রাসুল! আমি ‎হায়য হলে (দশ দিনের পরও) পবিত্র হই না। (দশ দিনের পরও) কি নামায ছেড়ে দিব? ‎উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-ইহা তো শরীরের ঘাম,হায়েয নয়। তাই হায়েয হলে নামায পড়বে না। আর হায়েয বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত ধুয়ে নামায পড়বে। হিসাম ‎বলেন,আমার পিতা বলেন,অতঃপর প্রত্যেক নামাযের জন্য অজু করবে,আর এই অজু ‎ওয়াক্ত বাকি থাকা পর্যন্ত অব্যহত থাকবে। ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২২৬)
(২)
عن ابن عباس قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : إذا رعف أحدكم في صلاته فلينصرف فليغسل عنه الدم ثم ليعد وضوءه وليستقبل صلاته
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমাদের কারো যদি নামাযে নাক থেকে রক্ত বের হয়, তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে তা ধৌত করবে, তারপর অযু করবে, তারপর নামায আদায় করবে। {আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১১৩৭৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৭, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৬১৮} ‎
(৩)

قال تميم الداري قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : الوضوء من كل دم سائل
অর্থ: হযরত তামিমে দারী রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ বলেছেন-প্রবাহিত রক্তের কারণে অযু আবশ্যক। {সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭, নসবুর রায়াহ-১/৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৪২)

এছাড়া আরো অনেক হাদিস থাকা সত্বেس ও ডাক্তার সাহেব আপন অজ্ঞতাকে গোপন করে ‎মুজতাহিদ সেজে বলে দিলেন,‘রক্ত দ্বারা অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে কোন দলিল নেই’!‎

দারুল ইফতা দারুল উলুম দেওবন্দ , ফতোয়া প্রসঙ্গ জাকির নায়েক

ফাতওয়া নম্বর-১২২=৪৪৮, দাল, দারুল ইফতা দারুল উলুম দেওবন্দ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
প্রশ্ন:
সম্মানিত মুফতি সাহেবান,দারুল উলুম দেওবন্দ! (আল্লাহ তা’আলা আপনাদেরকে দীর্ঘজীবি করুন)‎
السلام عليكم ورحمة الله
আমার জানার বিষয় হল ডা. জাকির নায়ক ব্যক্তিটি কেমন? তার আকিদা-বিশ্বাস কি আহলে সুন্নাত ‎ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাসের সাথে সামাঞ্জস্যশীল? হাদিসের ব্যাখ্যা ও কুরআনের ‎তাফসীরের ক্ষেত্রে তার মতামত কতটুকু গ্রহণ যোগ্য? এবং ফিকহ সাস্ত্রে তার মাযহাব কি? ‎তিনি কোন ইমামের অনুসারী? আমরা তার আলোচনা শুনে তার উপর আমল করতে পারব ‎কি না? দয়া করে সন্তুষজনক উত্তর দিয়ে ধন্য করবেন। ‎
নিবেদক
রিয়াজ আহমদ খাঁন
আলিয়া প্রিন্টার্স, উত্তর সুইয়া, ইলাহাবাদ, ভারত।
মোবাইল-৯৭৯৪৮৬৭৭৭২
দৃষ্টি আর্কষণ:
ডা. জাকির নায়ক সর্ম্পকে প্রতিনিয়ত ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন আসছেই, এ প্রশ্নটিও ঐ ‎ধারবাহিকতার অংশ বিশেষ। এখানে তার আকিদা-বিশ্বাস ও মাযহাব এবং কুরআন-‎হাদিস সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মূল্যায়ন, বিস্তারিত আলোচনার আবেদন করা ‎হয়েছে। তাই,ডা.জাকির নায়কের আলোচনা ও রচনাকে সামনে রেখে একটি সবিস্তার ‎সমাধান পেশ করা হল। ‎
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم،
حامدا ومصليا ومسلما
الجواب وبالله التوفيق والعصمة
ডা. জাকির নায়ক সাহেবের বক্তব্য ও আলোচনায় বিশুদ্ধ আকিদা-বিশ্বাসের বিকৃতি,পবিত্র ‎কুরআনের মনগড়া অপব্যাখ্যা,বিজ্ঞানের চুলচেরা বিশ্লেষণের আতঙ্ক,ইসলাম বিদ্ধেষী ‎পশ্চিমা বিশ্বের চেতনা এবং ফিক্বহী মাসায়িল সমূহে সালাফে সালেহীন ও উম্মতের ‎অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামগণের মত ও পথ থেকে বিচ্যুতির মত ভ্রষ্টপূর্ণ কথাবার্তা পাওয়া যায়। ‎
এবং তিনি মুসলিম জাতিকে মুজতাহিদ ইমামগণের অনুসরণ থেকে বিরত,দ্বীনি মাদরাসা ‎সমূহ থেকে মানুষকে বিমুখ এবং হক্বানী ওলামায়ে কিরামদেরকে জনসাধরণের কাছে ‎সন্দেহান্বিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার অপ-প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। নিম্নে তার ভ্রান্তিপূর্ণ ‎কিছু আলোচনার উদাহরণ দেয়া হলো।‎
এক আক্বিদা সর্ম্পকে ডাঃ জাকির নায়ক সাহেবের কয়েকটি মন্তব্য:‎
আক্বিদা- অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়! তাতে সমান্য পদস্খলন অনেক সময় ঈমানের জন্য ‎আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়ায়। এই আক্বিদা সর্ম্পকে ডাঃ জাকির নায়ক সাহেবের মন্তব্য- ‎
(ক) বিষ্ণুব্রাহ্মমবলে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকা বৈধ?!
ডাক্তার সাহেব এক প্রোগ্রামে বলেন,‎
“আল্লাহ তা‘য়ালাকে হিন্দুদের উপাস্যদের নামে ডাকা বৈধ,যেমন ‘বিষ্ণু অর্থ রব ‎এবং ‘ব্রাহ্মণ’ অর্থ খালিক তথা সৃষ্টিকর্তা। তবে শর্ত হল এই বিশ্বাস রাখা যাবে না যে, বিষ্ণুর ‎চারটি হাত রয়েছে এবং পাখির উপর আরোহিত”। (জাকির নায়েক প্রণীত “ইসলাম আওর আলমী আখওয়াত”-৩৩}
অথচ অনারবী সে সকল শব্দ দ্বারাই কেবল এক মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালাকে ডাকা যায়, যা ‎‎কেবল মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালার জন্যই নির্দিষ্ট। তা ব্যতীত অন্য কোন শব্দ দ্বারা জায়েজ নয়।
তাহলে ‎বিষ্ণু,ব্রাহ্মণ যা হিন্দুদের প্রতীক তা দ্বারা আল্লাহকে ডাকা কিভাবে বৈধ হতে পারে? ‎
(খ) আল্লাহ তায়ালার কালাম (কুরআন শরিফ) কিরূপ? তা বিজ্ঞান ও টেকনোলজী দ্বারা প্রমাণ করা জরুরি?!
ডাক্তর সাহেব এক প্রোগ্রামে বলেন,মানুষ মনে করে এ পবিত্র গ্রন্থটিই আল্লাহ ‎তা‘য়ালার কালাম (বাণী)। কিন্তু যদি আপনি জানতে চান যে, কোনটি প্রকৃত আল্লাহর কিতাব তাহলে ‎আপনাকে সর্বশেষ পরীক্ষা তথা ‘আধুনিক বিজ্ঞান ও টেকনোলজী’ দ্বারা তা প্রমাণ করাতে ‎হবে। যদি তা আধুনিক বিজ্ঞান সমর্থন করে তাহলে ধরে নিতে হবে তা আল্লাহর ‎কিতাব ‎। (আল জাওয়াবু আলা সালাসিনা যাওয়াবান আলা আন জাকিরুল হিন্দ ওয়া আসহাবু ফিকরিহী মুনহারিফীনা দ্বালালান লিশ শায়েখ ইয়াহইয়া আল হাজুরী}
এ কথা দ্বারা ডাক্তার সাহেবের পবিত্র কুরআন সর্ম্পকে গুমরাহীমূলক নির্ভীকতা ও চিন্তার বিপথগামীতা ‎এবং অধুনিক বিজ্ঞানের প্রতি অতিভক্তির বিপদজনক মনোভাব প্রমাণিত হয়। তিনি প্রতিনিয়ত ‎পরিবর্তনশীল অধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণাকে আসমানী কিতাব বিশেষত আল্লাহ তা‘য়ালার ‎পবিত্র কালাম ‘কুরআন’ মজিদের সততা প্রমাণের মানদণ্ড সাব্যস্ত করেছেন। অথচ কুরআন ‎মজিদ আল্লাহ তা‘য়ালার কালাম বা বাণী হওয়ার বড় প্রমাণ তার ‘ই‘জাজ’ তথা তার রচনাশৈলী ও বর্ণনাভঙ্গী। যার উপমা দিতে মানুষ অক্ষম। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে চ্যাল্যাঞ্জ ঘোষণা ‎করেছেন। ‎
(গ) ফাতওয়া দেয়ার অধিকার সকলের রয়েছে?!
ডাঃ জাকির নায়ক সাহেব এক স্থানে বলেন,‘যে কোন মানুষের ফতোয়া দেয়ার অধিকার রয়েছে’ ‎কারণ ফতোয়া দেয়া মানে অভিমত ব্যক্ত করা ‎। {প্রাগুক্ত}

এখানে ডাঃ জাকির নায়েক ফাতওয়া দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ.-এর ভাষ্যমতে,মুফতি ‎আল্লাহ তা‘য়ালার বিধান বর্ণনায় মহান রাব্বুল আলামীনের ভাষ্যকার ও স্থলাভিষিক্ত হয়ে স্বাক্ষরের যিম্মাদার ‎হয়ে থাকেন। ‎
لم تصلح مرتبة التبليغ بالرواية والفتيا إلا لمن اتصف بالعلم والصدق فيكون عالما بما بلغ صادقا فيه ويكون مع ذلك حسن الطريقة مرضي السيرة عدلا في أقواله وأفعاله متشابه السر والعلانية في مدخله ومخرجه وأحواله وإذا كان منصب التوقيع عن الملوك بالمحل الذي لا ينكر فضله ولا يجهل قدره وهو من أعلى المراتب السنيات فكيف بمنصب التوقيع عن رب الأرض والسموات، فحقيق بمن أقيم في هذا المنصب أن يعد له عدته وأن يتأهب له أهبته وأن يعلم قدر المقام الذي أقيم فيه (اعلام الموقعين-1/91)

[অর্থ: হাদীস বর্ণনা এবং ফাতওয়া দেওয়ার যোগ্য কেবল আলেমও সত্যবাদীদের। সুতরাং সে হবে আলেম, সাথে সাথে সত্যাবাদীতা। এবং যার বাহ্যিক অভ্যান্তরিণ অবস্থা হবে সৌন্দর্যমন্ডিত। কথাবার্তা ও কর্মে হবে ন্যায়পরায়ণ। যার প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য ও বাহ্যিক ও অভ্যন্তরিণ অবস্থা হবে সমান সুন্দর। যখন রাজ্যের বাদশাহ হওয়ার পদটিকে এমন মর্যাদা দেয়া হয়ে যে, এর পদর্যাদাকে কেউ অস্বিকার করে না, আর এটাতো সবচে’ উঁচু পর্যায়ের পদ, সুতরাং আসমান জমিনের রবের প্রতিনিধিত্বের পদটি কতটা মর্যাদাপূর্ণ হবে?
প্রকৃত বিষয় হল যাকে এ স্থানে অধিষ্ঠিত করা হবে, তাকে অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং স্বীয় পদমর্যাদা সম্পর্কে হতে হবে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। {ইলামুল মুআক্বিয়ীন-১/৯১}]
ডাক্তার সাহেব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে “স্বীয় অভিমত”বলে একটি সাধারণ শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার মাধ্যমে ‎শুধু নিজের জন্য নয় বরং অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ সকলের জন্য ফতোয়ার দ্বার উন্মুক্ত করে ‎দিলেন। আর তিনি পবিত্র কুরআনের এ আয়াত-‎
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (43)

অর্থ: যদি তোমরা না জেনে থাক তাহলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে নাও {সূরা নাহল-৪৩, সূরা আম্বিয়া-৭}
সেই সাথে রাসুলুল্লাহ ‎সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের হাদিসটি সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেলেন;‎
من افتى بغيرعلم كان إثمه على من أفتاه
‎(অর্থাৎ যে ব্যক্তি পূর্ণ জ্ঞানী হওয়া ছাড়া (অশুদ্ধ) ফতোয়া দেয় ঐ (অশুদ্ধ) ফতোয়ার গুনাহ ‎ফতোয়া প্রদানকারীর উপরই বর্তাবে। ‎(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৫৯৩, বাবু তাফসিরিল কুরআন আন রাসূলিল্লাহ অধ্যায়।
দুই- তাফসীরে- মনগড়া ব্যাখ্যা তথা অর্থবিকৃতি :
কুরআন মজিদের তাফসীরের বিষয়টি খুবই সুক্ষ্ম। কেননা মুফাসসির আয়াত থেকে আল্লাহ ‎তা‘য়ালার উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করেন যে,আল্লাহ তা‘য়ালা এই অর্থই বুঝিয়েছেন। তাই অযোগ্য ‎‎লোকদের এ বিষয়ে পা রাখা অত্যন্ত বিপদজনক। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে-‎
من قال في القرآن برأيه فأصاب فقد أخطأ
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআনের তাফসীর কেবল নিজের জ্ঞান দিয়ে করে, তাহলে সে ঘটনাচক্রে সঠিক বললেও তাকে ভুলকারী সাব্যস্ত করা হবে। ‎‎(তিরমিযি শরিফ-হাদীস নং-২৯৫২)
অন্য বর্ণনায় এসেছে যে,
ومن قال في القرآن برأيه فليتبوأ مقعده من النار
অনুবাদ- যে ব্যক্তি স্বীয় যুক্তি দিয়ে কুরআনের তাফসীর করে সে তার আবাস জাহান্নামকে বানিয়ে নিল। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৯৫১}
তাই মুফাসসিরের জন্য বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে। যেমন, ‎
‎১- কুরআনের সকল আয়াতের উপর দৃষ্টি থাকতে হবে।‎
‎২- হাদীসের ব্যাপারে থাকতে হবে অগাধ পান্ডিত্ব।
‎৩. আরবী ভাষা ও ব্যকরণ তথা নাহু,ছরফ,ইশতিক্বাক্ব,এবং অলঙ্কার শাস্ত্রে ‎রাখতে হবে গভীর পাণ্ডিত্য।

ডাক্তার সাহেবের মধ্যে এ সকল শর্তের একটিও যথাযথভাবে পাওয়া যায় না। তার না আছে আরবী ‎ভাষা ও আরবী ব্যকরণ সর্ম্পকে যথাযথ পারঙ্গমতা।‎
না আছে হাদিস ভাণ্ডারের উপরকোন সুগভীর পড়াশোনা।‎
আর আরবী সাহিত্য ও অলঙ্কার শাস্ত্রেও নন তেমন জ্ঞানী। (এ কথাগুলো নিম্নের উদাহরণ দ্বারা স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ)‎

অপরদিকে তাফসীরের ক্ষেত্রে বিপদগামী হওয়ার যত উপকরণ হতে পারে,সবকটিই তার ‎মধ্যে বিদ্যমান,যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,সাহাবায়ে কিরাম ও ‎তাবেয়ীন থেকে বর্ণিত তাফসীর থেকে বিমুখিতা,কালের চিন্তনে প্রভাবিত হওয়া, এবং পবিত্র ‎কুরআনের বিষয়বস্তুকে ভুল বুঝা ইত্যাদি। তাই তিনি ‎‎দশের অধিক আয়াতকে স্বীয় অজ্ঞতা চর্চার ক্ষেত্র বানিয়েছেন। নিম্নে তার কিছু উদাহরণ দেয়া গেল। ‎
প্রথম আয়াত
الرجال قوامون على النساء
‎(অর্থ: পুরুষরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল)‎
এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ডাক্তার সাহেব বলেন,অনেকে বলেন ‘ক্বাওয়্যাম’ অর্থ এক স্তর উর্ধেিম হওয়া। ‎কিন্তু বাস্তবে ‘ক্বাওয়্যাম’ শব্দটি “ইক্বামাতুন” শব্দ থেকে নির্গত। ‘ইক্বামাতুন’ অর্থ দাঁড়ানো। ‎তাই ‘ইক্বামাতুন’-এর মর্ম হল যিম্মাদারিতে একস্তর উর্ধে উ হওয়া,সম্মান ও মর্যাদায় উর্ধে‘ী ‎হওয়া নয়‎ ‎। (খুতুবাতে জাকির নায়েক-২৯৫, ফরীদ বুক ডিপো)
ডাক্তার সাহেব পশ্চিমা বিশ্বের ‘সমানাধিকার’ নীতির সমর্থনে উক্ত আয়াতের মনগড়া ‎তাফসীর করতে গিয়ে সম্মান ও মর্যাদায় পুরুষের এক স্তর উর্ধেকর হওয়াকে অস্বীকার ‎করেছেন। অথচ উম্মতের বড় বড় মুফাসসিরগণ ‘সম্মান ও মর্যাদায়’ শ্রেষ্ঠ হওয়ার কথা ‎বলেন। যেমন আল্লামা ইবনে কাসীর রহ.‎
الرجال قوامون على النساء
আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন,‎
أي الرجل قيم على المرأة أي هورئيسها وكبيرها والمحاكم عليها،مؤدبها إذا اعوجت
অর্থ: স্ত্রীর কাছে স্বামীর অবস্থান শাসনকর্তা ও সরদারের ন্যায়। প্রয়োজনে স্বামী স্ত্রীকে ‎উপযুক্ত সংশোধনও করতে পারবেন।
আর ‎
وللرجال عليهن درجة
এর তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ লিখেন-‎
وللرجال عليهن درجة أي في الفضيلة في الخلق والمنزلة وطاعة الأمروالإنفاق والقيام بالمصالح والفضل في الدنيا والآخرة ‏
অর্থ: স্বামী স্ত্রী থেকে সম্মান,মর্যাদা,অনুকরণ ইত্যাদিতে এক স্তর উর্ধেلد। (তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/৬১০)
এছাড়াও ডাক্তার ‎সাহেবের এই তাফসীর রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নের হাদিসটির সম্পুর্ণ ‎বিপরীত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-‎
قَالَ « فَلاَ تَفْعَلُوا لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لأَحَدٍ لأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لأَزْوَاجِهِنَّ (سنن ابى داود، رقم الحديث-2142)
অর্থ: যদি আমি আল্লাহ তা‘য়ালা ছাড়া অন্য কাউাকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম,তাহলে আমি ‎মহিলাদেরকে আপন আপন স্বামীকে সিজদা করার আদেশ দিতাম। (আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৪২)‎
যদি স্বামী-স্ত্রী উভয় জন সাম্মান ও মর্যদায় সমান এবং স্বামীর মর্যাদা স্ত্রীর উর্ধোম না হতো, ‎তাহলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদেরকে সিজদা (যা সর্বোচ্চ সম্মানের ‎প্রতীক) করার কেন আদেশ দেয়ার কথা বললেন?‎
দ্বিতীয় আয়াত

ডাক্তার সাহেবের কাছে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল ‘পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে মাতৃগর্ভে ‎নবজাত শিশুর লিঙ্গ কেবল মাত্র আল্লাহ তা‘য়ালাই জানেন। কিন্তু এখন বিজ্ঞান অনেক উন্নতি ‎করেছে,আমরা আল্ট্রাসনুগ্রাফীর মাধ্যমে নবজাতকের লিঙ্গ নির্ধারণ করে থাকি। কুরআনের ‎এই আয়াত কি মেডিকেল সাইন্সের বিপরীত নয়?‎
এর উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন,‘এটি সত্য যে, কুরআনের এ আয়াতের বিভিন্ন অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে,“কেবল আল্লাহ তা‘য়ালাই জানেন মাতৃগর্ভে নবজাতকের ‎লিঙ্গের কথা”। কিন্তু এই আয়াতের বর্ণনা ভঙ্গির প্রতি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা ‎যায়,এখানে ইংরেজী শব্দ sex এর অর্থ প্রদানকারী কোন শব্দ নেই। মূলতঃ কুরআন যা ‎বলতে চায় তা এই যে,মাতৃগর্ভে কি আছে? তা আল্লাহ জানেন। বহু সংখ্যক মুফাসসিরগণ ‎এখানে ভুলের শিকার হয়েছেন। তারা বলেছেন ‘মাতৃগর্ভে নবজাতকের লিঙ্গ আল্লাহই ‎জানেন’। এটি অশুদ্ধ। এই আয়াতটি নবজাতকের লিঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে না। বরং তা ‎‎থেকে উদ্দেশ্য হল এই নবজাতকের স্বভাব কেমন হবে,সে ছেলেটি মাতা-পিতার জন্য ‎রহমত হবে না অভিশাপ? ইত্যাদি‎ ‎। (ইসলাম পর চালিস ইতিরাজাত-১৩০, ডাঃ জাকির নায়েক, আরীব পাবলিশার্স, দিল্লী)
ডাক্তার সাহেব অধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রভাবিত হয়ে এ কারণে সৃষ্টি একটি অভিযোগের উত্তর ‎‎দেয়ার জন্য কুরআনের অন্য আয়াত ও সাহাবী-তাবেয়ী থেকে বর্ণিত তাফসীরকে পশ্চাপদ ‎‎রেখে একটি সু-প্রশিদ্ধ অর্থকে অস্বীকার করে দিলেন। এবং বড় বড় মুফাসসিরগণের উপর ‎অভিযোগ করে তাদেরকে ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করলেন। ডাক্তার সাহেব যে ব্যাখ্যা করেছেন তা ‎ما موصوله’-এর ব্যাপকতায় আসতে পারে। আনেক মুফাসসিরগণ সম্ভাবনা হিসাবে প্রথম ‎অর্থের সাথে এটিকেও যোগ করেছেন। কিন্তু অন্য অর্থকে বিলকুল অশুদ্ধ বলা,ডাক্তার ‎সাহেবের গবেষণায় ঘাটতি ও তাফসীরের ক্ষেত্রে সাহাবা-তাবেয়ীদের ‎মতামতকে অবমূল্যায়নের বড় প্রমাণ। কেননা ডাক্তার সাহেব যে অর্থকে অস্বীকার করছেন ‎তার প্রতি সুরায়ে রা‘দের আট নাম্বার আয়াত ইঙ্গিত করছে। ‎
الله يعلم ما تحمل كل أنثى وما تغيض الارحام وما تزداد
অর্থ: আল্লাহ তা‘য়ালা সবকিছুর খবর রাখেন;যা মাতৃগর্ভে থাকে তার,এবং যা কিছু মায়ের ‎‎পেটে কম-বেশী হয় তার‎। (সূরা রাদ-৮)
এবং প্রশিদ্ধ তা‘বেয়ী,তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম হযরত কাতাদাহ রহ. থেকেও এই অর্থই ‎বর্ণিত। যেমন তিনি বলেন,‎
فلاتعلم مافي الارحام أذكر أم أنثي الخ
অর্থ: মাতৃগর্ভে ছেলে না মেয়ে তার বাস্তব জ্ঞান আল্লাহ তা‘য়ালা ব্যতীত অন্য কারো কাছে ‎‎নেই। তেমনি আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. তাফসীরে ইবনে কাসীরের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৩৫৫ পৃষ্টায়, এবং ‎আল্লামা নাসাফী রহ. তাফসীরে মাদারিকের তৃতীয় খন্ডের ১১৬ নং পৃষ্টায়, এবং আল্লামা ‎শাওকানী রহ. তাফসীরে ফাতহুল কাদীরের পঞ্চম খন্ডের ৪৯৮ নং পৃষ্টায় উপরোক্ত ‎আয়াতের এই অর্থই বলেছেন।‎
কিন্তু ডাক্তার সাহেব এই সকল শীর্ষ মুফাসসিরগণের অর্থকে অশুদ্ধ বলে নিজের পক্ষ থেকে ‎বর্ণনাকৃত অর্থকেই একান্ত বিশুদ্ধ মনে করে তার উপরই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ‎
উল্লেখিত প্রশ্নের বিশুদ্ধ জবাব:
আয়াতের উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘য়ালার জন্য ‘ইলমে গায়ব’ বা অদৃশ্যের জ্ঞান সাব্যস্ত করা। ‎বস্তুত ‘ইলমে গায়ব’ বলা হয় ঐ দৃঢ় ও নিশ্চিত জ্ঞানকে যা কোন বাহ্যিক উপকরণ ছাড়া,‎যন্ত্র ব্যতীত সরাসরি অর্জিত হয়। মেডিকেল সাইন্সের যন্ত্র দ্বারা ডাক্তারদের অর্জিত জ্ঞান ‎‎দৃঢ়-নিশ্চিত জ্ঞানও নয় আবার উপকরণ ছাড়াও নয়;বরং তা একটি ধারণা প্রসূত জ্ঞান মাত্র;যা যন্ত্র দ্বারা অর্জিত হয়। অতএব আল্ট্রাসোনুগ্রাফী দ্বারা অর্জিত এই ধারণা প্রসূত জ্ঞান দ্বারা ‎পবিত্র কুরআনের আয়াতের উপর কোন ধরণের অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে না। ‎
তৃতীয় আয়াত:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَنْ لَا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا (الممتحنة-12)
অর্থ: হে নবী আপনার নিকট মু‘মিন নারীরা এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহ ‎তা‘য়ালার সাথে অংশিদার সাব্যস্ত করবে না। (সূরা মুমতাহিনা-১২)

ডাক্তার সাহেব এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন,এখানে ‘বায়আত’ শব্দ ব্যবহার ‎করা হয়েছে। তাই ‘বায়আত’শব্দে আমাদের বর্তমান ইলেক্শনের অর্থও অন্তর্ভুক্ত। কেননা ‎রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিকে আল্লাহ তা‘য়ালার রাসুল ছিলেন,অপরদিকে রাষ্ট্র প্রধানও ছিলেন। আর ‘বায়াআত’ দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ রাষ্ট্র প্রদানের আনুগত্ব করার নামই। এ হিসেবে ইসলাম নারীদেরকে ভোটাধিকারও প্রদান করেছিল ‎। (ডাঃ জাকির নায়েক প্রণীত “ইসলাম মে খাওয়াতিন কি হুকুক”-৫০)
এখানে ডাক্তার সাহেব আয়াতের অপ-ব্যাখ্যার মাধ্যমে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রমাণ করতে ‎চাচ্ছেন;তিনি বলেন,মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে ‎‘বায়আত’ গ্রহণ করা;মূলত বর্তমান গণতন্ত্রের নির্বাচন পদ্ধতির প্রাচীন পদ্ধতি।‎
অথচ গণতন্ত্র সর্ম্পকে যারা অবগত তারা ভালভাবেই জানেন যে,ডাক্তার সাহেবের এই ‎ব্যাখ্যা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবতা বিরোধী,এবং তাফসীরের ক্ষেত্রে যুক্তির অপ-প্রয়োগ মাত্র। ‎‎কেননা বর্তমান গণতন্ত্রে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচন করার জন্য আপন আপন ভোটাধিকার প্রয়োগ ‎করার অধিকার সকলের রয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি সংখ্যাগরিষ্ট লোকের ভোট না ‎পায় তাহলে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবেন না। যদি রাসূল সাঃ এর বায়আত নেয়ার মূলত ভোট নেয়া হতো, তাহলে কি সেসব সাহাবীয়াদের কি কোন অধিকার ছিল রাসূল সাঃ কে রাষ্র্রপ্রধান মানতে অস্বিকৃতি জানানো?
চুতুর্থ আয়াত:
সুরায়ে মারয়ামের আটাশ নাম্বার আয়াত-‎
يَا أُخْتَ هَارُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ امْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيًّا (مريم-28)
এর উপর অজ্ঞতার কারণে উত্থাপিত প্রশিদ্ধ প্রশ্ন;“হযরত মারয়াম আঃ হযরত হারুন আঃ-এর বোন ছিলেন ‎না,উভয় জনের মধ্যে প্রায় এক হাজার বছরের ব্যবধান রয়েছে”। এর ‎উত্তর দিতে গিয়ে ডাঃ সাহেবে বলেন,
‘‘খৃষ্টান মিশনারীরা বলেন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লামের নিকট ঈসা মসীহের মাতা মারয়াম (mary) ও হারুন আঃ এর বোন মারয়ামের ‎মধ্যে প্রার্থক্য জানা ছিল না, অথচ আরবী ভাষায় ‘উখত’ বলতে সন্তানকেও বুঝায়। এ জন্য লোকেরা তাকে বলেছিল হে ‎হারুনের সন্তান, বাস্তবেও তা থেকে হারুন আঃ-এর সন্তানই উদ্দেশ্য। {ডাঃ জাকির নায়েক প্রণীত “ইসলাম পর চালিস ইতিরাজাত”}
ডাক্তার সাহেবর হাদিস ও ভাষা সর্ম্পকে অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল এই ‎বক্তব্যের বিশ্লেষণে মুসলিম শরীফের নিম্নের হাদিসটিই যথেষ্ট।‎
‏ عن المغيرة بن شعبة قال لما قدمت نجران سألونى فقالوا إنكم تقرءون يا أخت هارون وموسى قبل عيسى بكذا وكذا. فلما قدمت على رسول الله -صلى الله عليه وسلم- سألته عن ذلك فقال إنهم كانوا يسمون بأنبيائهم والصالحين قبلهم (صحيح مسلم-6/171، دار الجيل بيروت، رقم-5721)
অর্থ: হযরত মুগিরা ইবনে শু‘বা রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি যখন নাজরানে গেলাম ‎তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হল,তোমরা পড় ‘‘ইয়া উখতা হারুন!’’ ‘‘হে হারুনের বোন’’ ‎অথচ মুসা আঃ এর যুগ ঈসা আঃ-এর যুগের অনেক পূর্বের। অতপর আমি রাসুলুল্লাহ ‎সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তার ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলাম। তখন ‎রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,তারা (তখনকার লোকেরা) নবীগণ ও ‎‎যোগ্য উত্তরসুরীদের নামে নিজেদের নাম করণ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৭২১)‎
‎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতের স্পষ্ট ব্যাখ্যা আজ থেকে ‎‎চৌদ্দশত বছর পূর্বেই করে দিয়েছেন। তার সারাংশ হল হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‎মাতা হযরত মারয়াম আলাইহাস্ সালাম হযরত মুছা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাই হারুন ‎আলাইহিস্ সালাম-এর বোন ছিলেন না;বরং হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতার ‎ভায়ের নামও হারুন ছিল। আর তখনকার লোকেরা নবীগণ ও স্বীকৃত বুযুর্গদের নামে নিজেদের ‎নামকরণ করতেন। অতএব একথা স্পষ্ট যে,এটি কোন নতুন অভিযোগও নয়;আর এর উত্তর ‎নিজের পক্ষ থেকে দেয়ারও কোন দরকার নেই।
ডাক্তার সাহেবের তাফসীর সংশ্লিষ্ট হাদীসের ব্যাপারে অজ্ঞতা এতটাই সীমাহীন যে, হাদীস ভান্ডার ও তাফসীরের মৌলিকত্ব পর্যন্ত পৌছার চেষ্টার বদলে মনগড়া ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছেন। ‎
পঞ্চম আয়াত:
ডাক্তার জাকির নায়েক
‎ وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا النازعات-30)
এ আয়াতে কারীমা সম্পর্কে বলেন-এখানে ‎ডিমের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ‘দাহা’। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল উটপাখির ডিম। উটপাখির ডিম জমিনের সাথে সাদৃশ্য রাখে। ‎তাই পবিত্র কুরআন বিশুদ্ধভাবে পৃথিবীর আকৃতির ব্যাখ্যা করছে। অথচ কুরআন নাযিলের ‎সময় পৃথিবীকে (Flat) সমতল মনে করা হতো। {খুতুবাতে জাকির নায়েক, কুরআন আওর জাদিদ সায়েন্স-৭৩-৭৪}
এখানে ডাক্তার সাহেব বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাবিত হয়ে, সেই সাথে পবিত্র কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় (তথা তাওহীদ ও রিসালত,আর বাকি প্রাকৃতিক বিষয়াদির আলোচনা প্রাসঙ্গিক মাত্র) না বুঝার কারণে পৃথিবীর আকৃতির বিশ্লেষণ করার জন্য আয়াতে কারীমা দিয়ে ভুল দলিল দিতে আয়াতের মনগড়া তাফসীর করেছেন।
‎কেননা, আরবী ভাষায়-‎دحـــو‎ শব্দটি এবং তার মূল উৎস বিস্তৃত ও বিস্তীর্ণ করার অর্থ প্রদান করে। এই ‎অর্থ হিসেবে ‘দাহাহা’-এর অনুবাদ ও তাফসীর হল ‘পৃথিবীকে বিস্তৃত করা ও তাতে বিদ্ধমান বস্তু ‎সমূহকে সৃষ্টি করা’। (দ্রষ্টব্য: তাফসীরে ইবনে কাসীর) এই শব্দটি ও তার মূল উৎস ‘ডিমের’ অর্থে আসে না। ‎
তিন. হাদীসে নববীতে অজ্ঞতা :
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশাল হাদিস ভাণ্ডার সম্পর্কে ডাক্তার সাহেবের ‎অজ্ঞতার কারণে অনেক জায়গায় তিনি বিশুদ্ধ হাদিসের বিপরীত মাসআলা বলছেন। ‎আর বহু স্থানে কোন মাসআলায় অনেক হাদিস বিদ্যমান থাকা সত্তেও তিনি বলে দেন ‘এই ‎বিষয়ে কোন দলিল নেই’। নিম্নে ডাক্তার সাহেবের হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতা বা জেনেও না বলার কয়েকটি দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করা হল-
(ক) হায়য অবস্থায় মহিলাদের কুরআন পড়ার অনুমতি প্রদান:
এক প্রোগ্রামে ডাক্তার সাহেব মহিলাদের বিশেষ দিন (হায়য চলাকালীন সময়) সম্পর্কে ‎বলেন-‘কুরআন হাদিসে নামায মাফ হওয়ার কথা আছে;কিন্তু (মহিলারা হায়য অবস্থায়) ‎কুরআন পড়তে পারবে না’এই মর্মে কোন হাদিস নেই। ‎
অথচ তিরমিযি শরিফে স্পষ্ট আছে-‎
عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال لا تقرأ الحائض ولا الجنب شيئا من القرآن (سنن الترمذى، ابواب الطهارات، باب ما جاء في الجنب والحائض : أنهما لا يقرأن القرآن، رقم الحديث-131)
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩}
একটু ভেবে দেখুন-বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট হাদিস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার সাহেব নিজেকে সর্বজ্ঞানী সাব্যস্ত করে তা অস্বিকার করে দিলেন।
(খ) রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে হানাফী মাজহাবেরকোন দলিল নেই?!
ডাক্তার সাহেব এক অনুষ্ঠানে রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গবে-নাকি ভাঙ্গবে না? এ ব্যাপারে আলোচনা করতে ‎গিয়ে বলেন,‘কতিপয় ওলামায়ে কিরাম বিশেষত হানাফী মাযহাবের অনুসারী ওলামায়ে ‎কিরামের মতে রক্ত বের হলে অজু ভেঙ্গে যায়। নামাযের মধ্যখানে রক্ত বের হলে কি করতে ‎হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তাদের ফতোয়া (হানাফীদের ফতোয়া) অনেক দীর্ঘ। তবে এ মতের স্বপক্ষে স্পষ্ট কোন দলিল নেই। {হাকীকতে জাকির নায়েক-২১৪, মাকতাবায়ে মদীনা, ভারত}
এখানে ডাক্তার সাহেব ফিকহে হানাফীর সংশ্লিষ্ট ওলমায়ে কিরামের বিরোদ্ধে অপবাদ আরোপ ‎করলেন যে,তারা বিনা দলিলে অজু ভাঙ্গার কথা বলেন। অথচ রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গার ‎‎স্বপক্ষে অসংখ্য হাদিস রয়েছে,এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলও ছিল এর উপর। নিম্নে ‎তার কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হল।‎
(১)
عن عائشة قالت جاءت فاطمة بنت أبي حبيش إلى النبي صلى الله عليه و سلم فقالت يا رسول الله إني امرأة أستحاض فلا أطهر أفأدع الصلاة ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( لا إنما ذلك عرق وليس بحيض فإذا أقبلت حيضتك فدعي الصلاة وإذا أدبرت فاغسلي عنك الدم ثم صلي ) . قال وقال أبي ( ثم تؤضي لكل صلاة حتى يجيء ذلك الوقت )
অর্থ: হযরত আয়শা রা. বলেন,হযরত ফাতেমা বিনতে আবি হুবাইশ রা. হায়য অবস্থায় ‎রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বলেন,হে আল্লাহর রাসুল! আমি ‎হায়য হলে (দশ দিনের পরও) পবিত্র হই না। (দশ দিনের পরও) কি নামায ছেড়ে দিব? ‎উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-ইহা তো শরীরের ঘাম,হায়েয নয়। তাই হায়েয হলে নামায পড়বে না। আর হায়েয বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত ধুয়ে নামায পড়বে। হিসাম ‎বলেন,আমার পিতা বলেন,অতঃপর প্রত্যেক নামাযের জন্য অজু করবে,আর এই অজু ‎ওয়াক্ত বাকি থাকা পর্যন্ত অব্যহত থাকবে। ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২২৬)
(২)
عن ابن عباس قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : إذا رعف أحدكم في صلاته فلينصرف فليغسل عنه الدم ثم ليعد وضوءه وليستقبل صلاته
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমাদের কারো যদি নামাযে নাক থেকে রক্ত বের হয়, তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে তা ধৌত করবে, তারপর অযু করবে, তারপর নামায আদায় করবে। {আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১১৩৭৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৭, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৬১৮} ‎
(৩)
قال تميم الداري قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : الوضوء من كل دم سائل
অর্থ: হযরত তামিমে দারী রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ বলেছেন-প্রবাহিত রক্তের কারণে অযু আবশ্যক। {সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭, নসবুর রায়াহ-১/৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৪২)

এছাড়া আরো অনেক হাদিস থাকা সত্বেس ও ডাক্তার সাহেব আপন অজ্ঞতাকে গোপন করে ‎মুজতাহিদ সেজে বলে দিলেন,‘রক্ত দ্বারা অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে কোন দলিল নেই’!‎
(গ) নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য অবৈধ ?!
অন্য এক জায়গায় ডাঃ জাকির নায়ক সাহেব নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য প্রসঙ্গে বলেন, ‎‘‘কোথাও একটি সনদবিশিষ্ট বিশুদ্ধ হাদিস পাওয়া যায় না যেখানে নারীদেরকে পুরুষ থেকে ‎পৃথক পদ্ধতিতে নামায আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে বুখারী শরিফে বর্ণিত যে,‎হযরত উম্মে দারদা রা. বলেন,আত্তাহিয়্যাতের বৈঠকে মহিলারা পুরুষের ন্যায় বসার হুকুম”।
এখানে ডাক্তার সাহেব সরাসরি দুইটি ভুল করেছেন:
(ক) নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্যের ব্যাপারে কোন হাদীস নেই। ‎
(খ) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে পুরুষের ন্যায় বসতে বলেছেন। ‎
ডাক্তার সাহেব প্রথম কথা বলে ঐ সকল হাদিস অস্বীকার করে বসলেন যার মধ্যে নারী-‎পুরুষের নামাযে পার্থক্যের কথা রয়েছে। নিম্নে তার কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হল-
১-
‏‏ أخرج البخاري عن النبي – عليه السلام- أنه قال: يا أيها الناس ما لكم حين نابكم شيء في الصلاة أخذتم في التصفيق إنما التصفيق للنساء ‏

অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,হে লোক সকল! তোমাদের ‎কি হল? নামাযে কোন অসুবিধা দেখলে করতালি দাও; করতালি তো একমাত্র মহিলাদের ‎জন্যই। {সহীহ বুখারী-১/১৭৪, হাদীস নং-১১৭৭}
২-
عن وائل بن حجر قال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم : يا وائل بن حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها
অর্থ: হযরত ওয়ায়েল ইবনে হাজার রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন,হে ওয়ায়েল! নামায পড়ার সময় হাত কান পর্যন্ত ‎উঠাও আর মহিলারা সিনা পর্যন্ত উঠাবে। (আল মু’জামুল কাবীর লিত তাবরানী, হাদীস নং-২৮, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১৯৬৪০ )‎

৩-
عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل
অর্থ: হযরত ইয়াযিদ ইবনে আবি হাবীব রাঃ থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে গমন করছিলেন, তখন (তাদেরকে উদ্দেশ্য ‎করে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,যখন তোমরা সিজদা দাও, তখন শরীরের কিছু অংশ ‎মাটির সাথে মিলিয়ে দাও। কেননা,এই ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষের মত নয়। (সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩০১৬, সুনানে আবু দাউদ মুরসালান)‎
৪-
عن ابن عمر أنه سئل كيف كن النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : كن يتربعن ثم أمرن أن يحتفزن
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রা. থেকে জিজ্ঞাসা করা হল,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লামের যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন? তিনি বলেন,তারা চারজানু হয়ে বসতেন,পরে তাদের জড়সড় হয়ে নামায আদায়ের ‎আদেশ দেয়া হয়। (জামিউল মাসানিদ-১/৪০০)‎
এ সকল বর্ণনায় নারী-পুরুষের নামাযে বিভিন্ন ধরণের পার্থক্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‎এ ছাড়াও আরো অনেক হাদিস রয়েছে,এ বিষয়ে রচিত কিতাবাদীতে বিস্তারিত দেখা যেতে পারে।‎
আর দ্বিতীয় বিষয় অর্থাৎ বুখারী শরিফে মহিলাদেরকে পুরুষের ন্যায় নামায আদায় করার হুকুম সংশ্লিষ্ট বিষয়টি একটি ভুল নিসবত ইমাম বুখারীর দিকে। ডাক্তার সাহেব হযরত উম্মে দারদা এর যে ‎হাদিসটির উদ্ধৃতি দিয়েছেন তা এভাবে বর্ণিত-
وكانت أم الدرداء تجلس في صلاتها جلسة الرجل وكانت فقيهة
অর্থ: উম্মে দারদা নামাযে পুরুষের ন্যায় বসতেন,আর তিনি ‘ফকীহা’ ছিলেন। {সহীহ বুখারী-১/১১৪}
এখানে কোথাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী বা আমলের কথা উল্লেখ ‎‎নেই; বরং এটি এক মহিলা তাবেয়ীর আমলমাত্র। যা উল্লেখ করে ইমাম বুখারী রহঃ ইঙ্গিতও ‎করেছেন যে,তিনি ফকীহা ছিলেন,তিনি স্বীয় ইজতিহাদের ভিত্তিতে এমন করতেন। এছাড়াও ইমাম বুখারী এ বক্তব্যের কোন সনদ উল্লেখ করেন নি। তা’লীকান উল্লেখ করেছেন।
চার- ডাক্তার সাহেবের মাযহাব:
ডাক্তার সাহেবের বক্তব্য ও রচনায় মুজতাহিদ ইমামগণের অবাধ্যতা ও ফিকহী মাসাআলা ‎সমূহে সংখ্যাগরিষ্ট দলের মতের বিরোধীতা তিনি কোনো ইমামের ‎অনুসারী নয় বলেই প্রমাণ বহন করে। বরং তিনি মুক্তচিন্তা,অতি অধুনিকতা ও প্রগতিবাদী চেতনায় ‎উজ্জেবিত,‘লা মাযহাবী তথা ‘গায়রে মুকাল্লিদদের’(কথিত আহলে হাদীস) অন্তর্ভুক্ত বলেই স্পষ্ট প্রতিভাত হয়। শুধু তাই নয়, ডাক্তার সাহেব নিজেতো সুনির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসারী ননই;সেই সাথে ইমামদের তাক্বলীদকারী সাধারণ মুসলমানদেরও গায়রে মুকাল্লিদ হতে তথা ইমামদের অনুসরণ ছেড়ে দেওয়ার আহবান করে থাকেন। তিনি মাসআলা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক সময় কোন ইমামের বক্তব্য বা কোন ইমামের ‎গবেষণালব্দ সিদ্ধান্ত নিজের গবেষণা ও সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেন। আবার কখনো কখনো ‎মুজতাহিদ সেজে নিজেই মাসআলার বলতে শুরু করে দেন। অথচ ডাক্তার সাহেবের উচিৎ সুনির্দিষ্টভাবে সে ইমামের নাম উল্লেখ করে তারপর মাসআলাটি বলা, যাতে করে শ্রোতাদের মনে এ ভুল ধারণা না জন্মে যে, কুরআন ও হাদীস দ্বারা কেবল এটাই প্রমাণিত। এছাড়া অন্য যেসব বিষয় মানুষের আমলে আছে তা সবই বাতিল। চাই সেসব আমল কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হোক বা কোন মুজতাহিদের বক্তব্য হোক।
নিম্নের আলোচনা দ্বারা উল্লেখিত বিষয়গুলো পরিস্কার হবে। লক্য্ব করুন-
(ক)
বিনা অজুতে কুরআন শরিফ স্পর্শ করা জায়েজ?!

ডাক্তার সাহেব এক স্থানে বলেন,বিনা অজুতে কুরআন মজিদ র্স্পশ করা জায়েয হওয়া উচিত।
অথচ ‎ডাক্তার সাহেবের এই সিদ্ধান্তটি কুরআনের আয়াত ও সকল মুজতাহিদ ইমামগণের সিদ্ধান্তের বিপরীত বক্তব্য।
لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ (79)
‎অর্থ: (অজু বা গোসল দ্বারা ) পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন মজিদ স্পর্শ করো না। {সূরা ওয়াকিয়া-৭৯}
(খ)
জুমার খুতবা আরবী ব্যতিত স্থানীয় ভাষায় হওয়া চাই :
তিনি অন্যত্র বলেন,‘আমাদের দেশে জুমার খুতবা স্থানীয় ও মাতৃভাষায় দেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা উচিত বলেই আমার মনে হয়’। ‎
অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত জুমার খুতবা ‎আরবী ভাষায় দেয়ার প্রচলনই নিরবচ্ছিন্ন আমল দ্বারা চলে আসছে। আর এখন ডাক্তার সাহেব জুমার খুতবা স্থানীয় ভাষায় দেয়ার ‎‎দাওয়াত দিচ্ছেন;যেন মানুষ খুতবা বুঝতে সক্ষম হয়। অথচ এই যুক্তি (অনারবরা খুতবা ‎বুঝা) রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেও বিদ্যমান ছিল। কেননা ‎রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুতবায় অনারবরাও উপস্থিত থাকতেন,তা ‎সত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদা আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন;অন্য ‎‎কোন ভাষায় নয়। পরবর্তীতে অনুবাদও করাতেন না। অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কিরাম,তাবেয়ী,তাবে তাবেয়ী ও তাদের অনুসারীগণ আরব থেকে বের হয়ে ‘আজম’ অনারব রাষ্ট্রে ‎বসবাস করেছেন,প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্বে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু সবর্ত্রই জুমআর খুতবা ‎হত আরবী ভাষায়। অথচ বর্তমানের তুলনায় তখন দ্বীন প্রচার-প্রসারের প্রয়োজন ছিল বেশি। শুধু তাই নয়, তখন বেশ কিছু সাহাবী ও তাবেয়ীগণ অনারবী ভাষা খুব ভালভাবে ‎জানতেন। তা সত্ত্বেও তারা খুতবা আরবীতেই মুখস্ত করতেন।
সারকথা:
খুলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীনগণের ধারাবাহিক আমল এবং ‎‎গোটা উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন সূত্রপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করা আমল একথার উপর স্পষ্ট দলিল যে, খুতবা আরবী ‎ভাষায়ই দিতে হবে।
এমনকি ‘আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া’ ইমাম মালেক রহঃ-এর মতে জুমা ‎বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। যদিও সমবেত সকল লোক অনারবী হয়, যাদের কেউ আরবী জানেনা। যদি ‎আরবীতে খুতবা দেয়ার মত কোন লোক না থাকে,তাহলে সবাই যোহরের নামায আদায় করবে,‎জুমার নামায তাদের জিম্মা থেকে বাদ হয়ে যাবে।
ولو كان الجماعة عجما لا يعرفون العربية فلو كان ليس فيهم من يحسن الإتيان بالخطبة عربية لم يلزمهم جمعة
অর্থ: যদি গোটা জামাত অনারবী হয়,যাদের কেউ আরবী ভাষা জানেনা,তাদের মধ্যে এমন কোন ‎ব্যক্তি নেই, যে ভাল করে আরবীতে খুতবা দিতে পারে, তাহলে তাদের উপর জুমআ পড়া আবশ্যক নয়। হাশিয়াতুত দাসুকী আলা শরহীল কাবীর-১/৩৭৮}
আর হযরত শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহঃ বলেন,খুতবা শুধুমাত্র আরবী ভাষায়ই হবে। পূর্ব-পশ্চিম সারা বিশ্বে সদা এটার উপরই আমল চলে আসছে‎। {মুসাফফা শরহে মুয়াত্তা-১৫২, প্রকাশক-মাতবায়ে ফারুকী, দিল্লী}
(গ)
তিন তালাকে এক তালাক হওয়া চাই?!
ডা.জাকির নায়ক বলেন, তিন তালাকের জন্য এতগুলো শর্ত রয়েছে যে,সবকটি এক সাথে ‎পাওয়া যাওয়া দুষ্কর ও অসম্ভব। এ সর্ম্পকে সৌদি আরবের তিনশ ফতোয়া বিদ্যমান। ‎বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক সাথে তিন তালাকে এক তালাক হওয়া চাই। {খুতুবাতে জাকির নায়েক, বহাওয়ালায়ে হাকীকতে জাকির নায়েক-৩৩১}
অথচ সাহাবায়ে কিরাম,তাবেয়ীগণ,মুজতাহিদ ৪ ইমামগণ ও অধিকাংশ ওলামায়ে কিরাম, সেই সাথে ‎বর্তমান সৌদি আরবের নির্ভরযোগ্য সকল ওলামায়ে কিরামগণ এক মজলিসে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাকই পতিত হয়, এক তালাক নয় মর্মে ফতোয়া দিয়েছেন। এ বিষয়ে পূর্ণ ইসলামের ইতিহাসে কোন ‎গ্রহণযোগ্য আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি। কেবল মাত্র আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা রহঃ ও ‎তার শিষ্য আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ ব্যতিত। কিন্তু সকল উম্মতের বিপরীত (যেখানে ‎ইমাম চতুষ্টয়- ইমাম আবু হানীফা রহঃ, ইমাম শা‘ফী রহঃ, ইমাম মালেক রহঃ, ইমাম ‎আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ অন্তর্ভূক্ত) এই দুই জনের সিদ্ধান্ত কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে ‎না। ডাক্তার সাহেব এমন সর্বজন স্বীকৃত বিষয়ের বিরোধিতা করে উম্মতকে পথ ভ্রষ্ট করার ‎অপ-প্রয়াস চালাচ্ছেন। এই সিদ্ধান্ত ( এক সাথে তিন তালাকে তিন তালাক পতিত হওয়া) ‎ কুরআনের আয়াত ও অগণিত হাদিস এবং সাহাবায়ে কিরামের আমল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। নিম্নে কয়েকটি হাদীস পেশ করা হল। ‎
(১)

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্রীمرকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
(২)
عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه ثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا) وإنك لم تتق الله فلم أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك
অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহঃ. বলেন,আমি ইবনে আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি ‎এসে বলেন-‘সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ করে রইলেন। আমি ‎মনে মনে ভাবছিলাম-হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ ‎পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে নির্বোধের মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে ‎আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী-“যে ‎ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্রীস তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস নং-২১৯৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৪৭২০, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪৩}
(৩)
عن مالك أنه بلغه أن رجلا قال لعبد الله بن عباس إني طلقت امرأتي مائة تطليقة فماذا ترى علي فقال له ابن عباس طلقت منك لثلاث وسبع وتسعون اتخذت بها آيات الله هزوا
অর্থ: হযরত ইমাম মালেক রহঃ এর কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর ‎কাছে জিজ্ঞাসা করল-“আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি,এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? ‎তখন ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তুমি যা দিয়েছ তা থেকে তিন তালাক তোমার স্ত্রীর উপর ‎পতিত হয়েছে,আর সাতানব্বই তালাকের মাধ্যমে তুমি আল্লাহ তা‘য়ালার সাথে উপহাস ‎করেছ। [মুয়াত্তা মালেক;১৯৯, হাদীস নং-২০২১]। ‎
(৪)
عن مالك أنه بلغه أن رجلا جاء إلى عبد الله بن مسعود فقال إني طلقت امرأتي ثماني تطليقات فقال ابن مسعود فماذا قيل لك قال قيل لي إنها قد بانت مني فقال ابن مسعود صدقوا
অর্থ: হযরত ইমাম মালেক রহঃ এর কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ‎মাসউদ রাঃ এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে আট তালাক দিয়েছি। ‎হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,লোকেরা তোমাকে কি বলেছে? সে উত্তর দিল,তারা বলল ‎‘‘তোমার স্ত্রী ‘বায়ানা’ তালাক প্রাপ্ত হয়ে গেছে’’ তখন হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,তারা সত্য বলেছে। অর্থাৎ তিন তালাক পতিত হয়েছে। (মুয়াত্তা মালিক; পৃঃ-১৯৯, হাদীস নং-২০২২]‎

(৫)
نا علي بن محمد بن عبيد الحافظ نا محمد بن شاذان الجوهري نا معلى بن منصور نا شعيب بن رزيق أن عطاء الخراساني حدثهم عن الحسن قال نا عبد الله بن عمر أنه طلق امرأته تطليقة وهي حائض ثم أراد أن يتبعها بتطليقتين أخراوين عند القرئين فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال : يا بن عمر ما هكذا أمرك الله إنك قد أخطأت السنة والسنة أن تستقبل الطهر فيطلق لكل قروء قال فأمرني رسول الله صلى الله عليه و سلم فراجعتها ثم قال إذا هي طهرت فطلق عند ذلك أو أمسك فقلت يا رسول الله رأيت لو أني طلقتها ثلاثا أكان يحل لي أن أراجعها قال لا كانت تبين منك وتكون معصية
অর্থ: হযরত হাসান রাঃ বলেন,হযরত ইবনে উমর রাঃ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি আপন স্ত্রীকে ‎হায়য অবস্থায় এক তালাক দিয়েছিলেন, অতঃপর ইচ্ছা করলেন যে, দুই তুহুরে [হায়য থেকে ‎পবিত্র অবস্থায়] অবশিষ্ট দুই তালাক দিয়ে দিবেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ‎বিষয়ে অবগত হওয়ার পর বলেন-ইবনে ওমর! এভাবে আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাকে হুকুম ‎‎দেননি। তুমি সুন্নাতের বিপরীত কাজ করেছ [হায়য অবস্থায় তালাক দিয়েছ]।
তালাকের ‎শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতি হল,‘তুহুর’ পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। প্রত্যেক ‘তুহুরে’ এক ‎তালাক দেয়া। তার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রুজু’ করার নির্দেশ ‎দিলেন। এ জন্য আমি ‘রুজু’ করে নিয়েছি। অতঃপর তিনি বললেন,সে পবিত্র হওয়ার পর ‎‎তোমার এখতিয়ার থাকবে। চাইলে তুমি তালাকও দিতে পারবে,বা তাকে নিজের কাছে রাখতে পারবে।
হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন-তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম-ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যদি তিন তালাক দেই তখনও কি ‎‘রুজু’ করার অধিকার থাকবে? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- না। তখন স্ত্রী ‎‎তোমার কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাবে। এবং তোমার এই কাজ (এক সাথে তিন তালাক ‎‎দেয়া) গুনাহের কাজ সাব্যস্ত হবে। {সুনানে দারা কুতনী-২/৪৩৮, হাদীস নং-৮৪, যাদুল মাআদ-২/২৫৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৪৭৩২}
লক্ষ্য করুন উল্লেখিত হাদিস সমূহে তিন তালাক দ্বারা তিন তালাকই পতিত হওয়ার ‎নির্দেশ রয়েছে। এ ছাড়াও আরো অনেক হাদিস সুস্পষ্টভাবে এ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করে যে,তিন তালাক ‎দ্বারা তিন তালাকই পতিত হবে এক তালাক নয়। ‎
বিঃ দ্রঃ- ডাঃ জাকির নায়ক সাহেব নিজের বক্তব্যে এ সংক্রান্ত তিনশত আলেমের ফাতওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তারপর নিজের ‎মতামতও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সেসব ওলামায়ে কেরাম কারা? তারা কী বলেছেন? এসব কোন কথা জাকির নায়ক সাহেব রহস্যজনক কারণে উদ্ধৃত করেন নি। ‎
অথচ সৌদী আরবের গ্রহণযোগ্য গবেষক আলেমগণ গবেষণা করে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, তিন তালাকে তিন তালাকই পতিত হবে। সৌদী ওলামাদের নির্ধারিত সিদ্ধান্তের কপি নিম্নরূপ-
بعد الاطلاع على البحث المقدم من الأمانة العامة لهيئة كبار العلماء والمعد من قبل اللجنة الدائمة للبحوث والإفتاء في موضوع ( الطلاق الثلاث بلفظ واحد ) .
وبعد دراسة المسألة ، وتداول الرأي ، واستعراض الأقوال التي قيلت فيها ، ومناقشة ما على كل قول من إيراد – توصل المجلس بأكثريته إلى اختيار القول بوقوع الطلاق الثلاث بلفظ واحد ثلاثا ___الخ (مجلة البحوث الإسلامية، المجلة الأول، العدد الثالث، سنة 1397 ه)
অর্থ: লাজনাতুত দায়িমা লিল বুহুস ওয়াল ইফতা পরিষদ সৌদী আরব কর্তৃক নির্বাচিত ‘এক শব্দে তিন তালাক’ ‎বিষয়ে গবেষণা কর্মে দায়িত্বরত শীর্ষ ওলামাদের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত গবেষণাপত্র ও ‎এ বিষয়ে গভীর অধ্যয়ন,প্রতিটি উক্তির বাছ বিচার ও তার পক্ষে-বিপক্ষে উপস্থাপিত সকল ‎প্রশ্নের উত্তর উত্থাপিত হওয়ার পর অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিষদ ‎এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে,এক শব্দে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। ‎‎(মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়্যা, প্রথম খন্ড, তৃতীয় সংখ্যা, ১৩৯৭ হিজরী)‎
(ঘ)
সারা বিশ্বে এক দিনে ঈদ উদযাপন করা:

ডাক্তার সাহেব এক প্রোগ্রামে পরামর্শ স্বরূপ বলেন,‘‘মুসলমানদের এমন এক পদ্ধতি বের ‎করা জরুরি যেন সারা বিশ্বে এক দিনে ঈদ উদযাপন করা যায়’’ ‎
ডাক্তার সাহেবের এই মতামত সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎হাদিস ‎‏(صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته)‏ তথা “চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ভাঙ্গ” এর সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধিরও খেলাফ।
কারণ, ‘একদিনে ঈদ উদযাপন’ বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার মূল কারণ হল ঈদকে তারা ‎‎দেশী বা আর্ন্তজাতিক একটি উৎসব বা জাতীয় উৎসব হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু এটি অত্যন্ত ‎ভুল সিদ্ধান্ত। কেননা আমাদের উভয় ঈদ, রমজান ও মুহাররম কোন ‘উৎসবের’ নাম নয়,বরং এ ‎সবকিছুই ইবাদত।
এছাড়া প্রত্যেক রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রদেশে সেখানকার দিগন্ত অনুযায়ী সময়ের ‎ব্যবধান হওয়া আবশ্যাম্ভাবী। আমরা ভারতে যখন আসরের নামায পড়ি তখন ওয়াশিংটনে সকাল ‎‎হয়। যখন আমরা ভারতে যোহরের নামায পড়ি তখন লন্ডনে মাগরিবের নামায হয়ে ‎‎যায়। তাছাড়া এমনও হয় যে,এক দেশে জুমার দিন আগমন করে আর অন্য দেশে এখনও ‎বৃহস্পতিবার এবং আরেক দেশে শনিবার আরম্ভ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সারা বিশ্বে ‎একদিন ঈদ উদযাপনের দাবি কি করে উত্থাপন করা হয়?

সারকথা
উল্লেখিত ভ্রান্তিতার ভিত্তিতে একথা সুষ্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়ে যে, ডা.জাকির নায়ক সাহেব বহু সংখ্যক ‘মাসআলায়’‎আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস থেকে পথচ্যুত হয়েছেন। কুরআন-হাদিসের ‎ব্যাখ্যায় আরবী ভাষা ও পূর্বসুরীদের তাফসীরকে অবেহেলা করে অপরিশোধিত বুদ্ধি দ্বারা ‎তাফসীর করে অর্থকে বিকৃত করেছেন। ‎
এবং তিনি (ডাক্তার সাহেব) ইলমে শরীয়ত ও মাকসাদে শরীয়ত সম্পর্কে অগভীরতা সত্ত্বেও ‎‎কোন ইমামের অনুসরণ করেন না। বরং উল্টো তাদের সমালোচনা করেন। তাই ডাক্তার ‎সাহেবের কথা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। তার প্রোগ্রাম দেখা,তার বক্তব্য শুনা এবং যাচাই-‎বাছাই করা ছাড়াই তার কথায় আমল করা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আর যেহেতু বাস্তব যাচাই-‎বাছাই ও গবেষণা যেহেতু সকলের পক্ষে সম্ভব নয়,তাই তার প্রোগ্রাম থেকে সাধরণ ‎মুসলমানদের বেঁচে থাকা জরুরি। প্রত্যেক মু‘মিনের সর্বদা স্বরণ রাখা জরুরি যে,দ্বীনের ‎ব্যাপারটি খুবই স্পর্শকাতর;মানুষ দ্বীনের আলোচনা শুনে এবং তার উপর আমল করে ‎‎কেবল মাত্র আখেরাতে মুক্তির আশায়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র নতুন নতুন গবেষণা ও যুক্তিপূর্ণ ‎উত্তর,বরাতের আধিক্য এবং মানুষের কাছে বাহ্যিক গ্রহণযোগ্যতা দেখে অনুসন্ধান ও বাছবিচার ‎ছাড়াই কারো কথায় কখনো আমল করা উচিত নয়। বরং মানুষের এটা চিন্তা করা জরুরি যে,ব্যক্তিটি দ্বীনি বিষয়ে কতটুকু যোগ্যতা সম্পন্ন? কোন ধরণের শিক্ষক থেকে জ্ঞান অর্জন ‎করেছেন? কোন পরিবেশে গড়ে উঠেছেন? তার চাল-চলন ও লেবাস-পোষাক কেমন? ‎অন্যান্য আলেমদের সাথে সামঞ্জস্যশীল কিনা? সেই সাথে সমসাময়িক নির্ভরযোগ্য ওলামা-মাশায়েখগণ ‎তার ব্যাপারে কী বলেন? সাথে সাথে এটাও লক্য্অণীয় যে, তার পাশে সমবেত জনতা ও ‎তার কথায় প্রভাবিত লোকদের কাছে দ্বীনের অনুভূতি কতটুকু আছে? এবং দ্বীনি খিদমতে ‎নিয়োজিত ব্যক্তিগণ তার সাথে কতটুকু সংযুক্ত? যদি কোন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি তার কাছে ‎‎থাকে তার কাছ থেকে জেনে নেয়া জরুরি যে,তিনি কি হিসেবে তার কাছে আছেন? কেন তার ‎নিকটে আছেন? এমন নয় যে,তারা ভুল ধারণা বশতঃ বা অজানা অথবা ধারণা প্রসূত ‎‎কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তার কাছে অবস্থান করছে। ‎
‎মোট কথা এ সকল বিষয় যাচাই-বাছাই ও অনুসন্ধানের পর যদি নিশ্চিত হওয়া যায়; ‎
তখনই দ্বীনি বিষয়ে তার কথা নির্ভরযোগ্য ও আমলযোগ্য বিবেচিত হবে। না হয় তার কাছ ‎‎থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। প্রসিদ্ধ তা‘বেয়ী হযরত মুহাম্মদ ইবনে সিরীন রহঃ-এর বাণী-‎
إن هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم
অর্থাৎ দ্বীনী কথা শুনা এবং শিখার জন্য জরুরী হল আগেই ভাল করে চিন্তা করে নাও কার কাছ থেকে ইলম হাসীল করছো আর দ্বীন শিখছো?
আল্লাহ তাআলা সবাইকে সীরাতে মুস্তাকীমের উপর চলার তৌফিক দান করুন।
উত্তর লিখনে-
যাইনুল ইসলাম কাসেমী ইলাহাবাদী
নায়েবে মুফতী-দারুল ইফতা, দারুল উলুম, দেওবন্দ।
২০/০৩/১৪৩২ হিজরী মোতাবিক ২৪/০২/২০১১ ঈসাব্দ।
ফতোয়ায় স্বাক্ষরকারী মুফতী সাহেবান
১-মুফতী হাবীবুর রহমান সাহেব দাঃবাঃ
দারুল উলুম দেওবন্দ।
২-মুফতী মাহমুদ হাসান বুলন্দশহরী দাঃবাঃ
দারুল উলুম দেওবন্দ।
৩-ওকার আলী সাহেব দাঃবাঃ
দারুল উলুম দেওবন্দ।
৪-মুফতী ফখরুল ইসলাম সাহেব দাঃবাঃ
দারুল উলুম দেওবন্দ।(সংগৃহীত)

সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'ত পরিচিতি

আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত নামের উৎস
যে হাদীসে মুসলমানদের তেয়াওর দলের বিভক্ত হওয়ার কথা বণিত হয়েছে, সে হাদীসকে হাদীসে ইফতেরাকে উম্মত বলা হয় এর অর্থ , উম্মতের দলাদলির বিবরণ m¤^wjZ হাদীস হাদীসটি তিরমিযী শরীফ , আবু দাউদ শরীফ ও মিশকাত শরীফসহ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এ হাদীসের মূল বক্তব্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শব্দগতভাবে সামান্য ব্যবধান থাকলেও সেগুলির মর্মে কোন ব্যবধান নেই তাই অর্থগত দিক থেকে হাদীসটা মুতাওয়াতির বা সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত ।এ হাদীসের এক বর্ণনায় জান্নাতী দলটির পরিচয়ে রাসূল সা. বলেছেন- যে তরিকায় আমি আছি , আর আমার সাহাবাগণ আছেন আর রাসূলের তরিকা বা তার অনূসৃত পদ্ধতিকে তার সুন্নত , আর সাহাবাগণের সমষ্টিকে সাহাবাগনের জমাত বলা হয় তাই আলোচ্য হাদীসের এ অংশটির মর্মার্থ হল , রাসূলের সুন্নত এবং তার সাহাবাগণের জমাত এর আর্দশে প্রতিষ্ঠিত দল আর এ মর্মেই এ হাদীসকে আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত নামের উৎস হিসেবে Aej¤^b করা হয়েছে
এ ছাড়া দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক মুহতামিম হাকীমুল ইসলাম আল্লামা ক্বারী তৈয়ব সাহেব র. আক্বীদাতুত তাহাবী এর ব্যাখ্যায় লেখেন : অর্থাৎ, মসনদে আহমদ ও আবু দাউদ শরীফের বর্ণনায় উক্ত হাদীসের শেষাংশ উল্লেখ আছে, জান্নাতী দলটিই হচ্ছে জমাত আরেক বিবরণে উল্লেখ আছে , যারা সুন্নত এবং জমাতের উপর প্রতিষ্ঠিত তারাই জান্নাতী দল এ বিবরণমতে রাসূলের হাদীসের মর্মই শুধু আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত নামের উৎস নয় ; বরং হাদীসের সরাসরি শব্দ থেকেই হকপন্থী মুসলমান দলের নামটি গৃহিত হয়েছে অর্থাৎ , আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত নামের দুটি অংশ রয়েছে প্রথম অংশ ,সুন্নত তরিকা , যা আলোচ্য হাদীসে শব্দটির মর্ম আর দ্বিতীয় অংশ সাহাবাগণের পবিত্র আত্মাসমূহ , যা শব্দটির মর্ম
সুতরাং এ হাদীস দ্বারা মিয়ারে হক্ব বা সত্যের মাপকাঠি অর্থাৎ , মুসলমানদের বাহাওরটি বাতিল দল থেকে একমাত্র হক বা সত্যপন্থী দলটি পরখ করার মানদন্ড একটি নয় ; দুটি সাব্যস্ত হল যার একটি হচ্ছে, রাসূলের সুন্নত , আর অপরটি , এর অনুসারী দল সাহাবাগণের জমাতসুতরাং সুন্নত এবং জমাত একটা অপরটা থেকে অবিচ্ছেদ্য কারণ সুন্নতের উপরই জমাত প্রতিষ্ঠিত, আর জমা তের দ্বারাই সুন্নত অনুসৃত
এ বিবরণ দ্বারা এ কথা দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে গেল যে , রাসূলের একটা প্রসিদ্ধ হাদীসের ভিত্তিতেই আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের নামকরণ করা হয়েছে এবং সুন্নতে রাসূল সা. এবং জমা তে সাহাবা সত্যের মাপকাঠি হওয়াই এ নামকরণের কারণ
প্রকত আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত পরিচিতি
প্রথম কথা ঃ-
পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এক আদমের সন্তান তাই হযরত আদম আ. গোটা জগতের সকল মানুষের আদিপিতা আর তার স্ত্রী হাওয়া আ. সকল মানুষের আদিমাতা সেই আদম - হাওয় কে সৃষ্টি করে আল্লাহ তাআলা প্রথমে জান্নাতে বসবাস করতে দেন পরবতীতে শয়তানের প্রতারণায় নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়া কে কেন্দ্র করে তাদের উভ কে জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন পাঠাবার সময় সরাসরি তাদের দুজনকে আর তাদের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলে দেন ঃ-

সূরাতুল বাক্বারাহ ঃ৩৮-৩৯ অর্থাৎ, তোমার এখন তেকে (পৃথিবীতে) নেমে যাও অতপর ঃ আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে (পুনরায় জান্নাতে পৌছার) পত প্রদর্শক আসবে তখন যারা আমার পথের অনুসরন করবে , তাদের জন্য (ভবিষ্যতেরও ) কোন ভয় নেই এবং (অতীতেরও) কোন চিন্তা থাকবে না আর যারা অমান্য করবে এবং আমার বাণীসমূহকে অবিশ্বাস করবে , তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে
আল্লাহ তাআলা সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৃথিবীর মানুষকে আবার জান্নাতে ফিরে যাওয়ার পথ প্রদর্শনের জন্য লক্ষাধিক নবী রাসূল ও শতাধিক আসমানী কিতাব নাযিল করেন সে সকল নবী রাসূলের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হলেন আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. আর তার কাছে নাযিল করেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ আল কুরআন পবিত্র কুরআনের ভাষায় আল্লাহর প্রতিশ্রুত সেই পথ প্রর্দশনকে বলা হয়েছে হেদায়ত বা পথ দেখানো, আর তার প্রদর্শিত সেই পথকে বলা হয়েছে ছিরাতে মুস্তাক্বীম এর বাংলা অর্থ সোজা পথ কাদের জন্য সোজা পথ ? পৃথিবীর মানুষের জন্য কোথায় যাওয়ার সোজা পথ ? জান্নাতে যাওয়ার সোজা পথ
এবার প্রশ্ন আসে , সেই সোজা পথের ব্যাখ্যা কি ? মুফাসইসরীনে কেরাম(পবিত্র কুরআনের সম্মানিত ব্যাখ্যাকারগণ) ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সোজা পথের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পেশ করেছেন যেমন ঃ-
১.ইসলামের পথ
২.কুরআনের পথ
৩.নবীগণের পথ
৪.সিদ্দীকগণের পথ
৫.শহীদগণের পথ
৬.সালেহগণের পথ
৭.আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের পথ
এ ব্যখ্যাসমূহের প্রতিটারই তফসিলী বিবরণ আছে যা সবিস্তারে উল্লেখ করার অবকাশ এ পুস্তকে নেই তাই এখানে শুধু ছিরাতে মুস্তাক্বীমের সপ্তম ব্যাখ্যা অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জমাতের পথ বলতে কোন মতাদর্শ বুঝায়, তার সামান্য বিশ্লেষণ পেশ করা হচ্ছে কারণ আমাদের সমাজের কিছু লোক আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের নামে তাদের কতিপয় মনগড়া মতবাদ প্রচার করে বেড়াচ্ছেন
যার ফলে অনেক সরলপ্রাণ মুসলমান তাদের মনগড়া মতবাদেই আহলে সুন্নত ওয়াল জমাতের মতাদর্শ মনে করে প্রতারিত হচ্ছে
কুরআনের ভাষায় -
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়োতে ছিরাতে মুস্তাক্বীম এর উল্লেখ রয়েছে তন্মধ্যে এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে ঃ-
অর্থাৎ আর নিশ্চয়ই এটি আমার ছিরাতে মুস্তাক্বীম (বা প্রদশিত সোজা পথ )তাই তোমরা এ পথে চল, এ ছাঢ়া অন্যান্য পথে চলো না অন্যথায় সেগুলি তোমাদে কে তার পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে তিনি (আল্লাহ)অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তোমাদের এ উপদেশ দিচ্ছেন, যাতে তোমরা(ভ্রান্ত পথ থেকে) বাঁচতে পার
এ আয়াতে ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সোজা পথ কথার অর্থ ইসলাম বা কুরআনের পথও হতে পারে , আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের পথও হতে পারে যদি ইসলাম বা কুরআনের পথ গণ্য করা হয় , তাহলে অন্যান্য পথ বলতে অন্যান্য ধর্মের পথ বুঝতে হবে আর যদি সোজা পথ বলতে আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের পথ গণ্য করা হয় , তাহলে অন্যান্য পথ বলতে ইসলামের মনগড়া অপব্যাখ্যাকারী বাহাওর দলের ভ্রান্ত মতবাদ বুঝতে হবে



******************************************
দেশ-বিদেশে এখন মুসলিম উম্মাহর দুর্দিন চলছে। বাতিলের বহুমুখী ষড়যন্ত্র তাদের অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। ব্যক্তি, সামাজ, দেশ ও বিশ্ব- সবই যেন তাদের বিরুদ্ধে আমরণ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাই মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সভ্যতা-সংস্কৃতি আজ চরম হুমকির শিকার। শুধু তাই নয়, মুসলিম উম্মাহর জীবন পরিচালিত হয় যে শরীয়ার আলোকে, সেই শরীয়াকে আজ সমাজের সামনে বিতর্কের বিষয় হিসাবে উপস্থাপন করে তাকে খেলনার বস্ত্ততে পরিণত করা হচ্ছে। এ অবস্থা বেশি দিন স্থায়ী হলে আমরা সত্যি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যাবো। তাই দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহকে যাবতীয় ফিতনা-ফাসাদ থেকে রক্ষার স্বার্থে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।

এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন মুসলিম উম্মাহ হিসাবে আমাদের পরিচয় জানা। এই পরিচয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের আদর্শের সন্ধান পাবো। আর আমরা যখন আমাদের আদর্শের সন্ধান পাবো, তখন আমাদের আদর্শ বিরোধী সব দল ও ফিরকা চিহ্নিত হয়ে যাবে। স্পষ্ট হয়ে যাবে তাদের যাবতীয় বাতিল কর্ম-কান্ড। আর আদর্শ বিরোধী দল ও ফিরকা এবং তাদের কর্ম-কান্ড সম্পর্কে যখন জানা হয়ে যাবে, তখন আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণও সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা তাউফীক দান করুন।

আমাদের পরিচয়:
***************

আমাদের সংক্ষিপ্ত ও সাধারণ পরিচয়, আমরা ‘মুসলিম’ বা ‘মুসলমান’। আর কুরআন-হাদীসের আলোকে কিছুটা বিস্তৃত ও বিশেষায়িত পরিচয়, আমরা ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’।

‘মুসলিম’ তো আমাদের ধর্মীয় পরিচয়। এ নামের সূচনার কথা পবিত্র কুরআনে এসেছে। হযরত ইবরাহীম আ. সর্বপ্রথম এ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যুগে যুগে নবী-রাসূলদের আনীত সত্যধর্ম- কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে- যারা গ্রহণ ও অনুসরণ করেছেন এবং করেন, তারাই ‘মুসলমান’। একটি হাদীসে এর সমর্থনও পাওয়া যায়। হাদীসটি যথাস্থানে উল্লেখ করা হবে।  মুহাম্মদ সা. ‘ইসলাম’ ধর্মকে যে রূপ ও আঙ্গিকে তার উম্মতকে উপহার দিয়েছেন, আর তার একনিষ্ঠ অনুসারী সাহাবায়ে কেরাম রা. যেভাবে এই ‘ইসলাম’কে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাকে কোনো ধরনের রদবদল না করে যারা এই ‘ইসলাম’ এর অনুসরণ-অনুকরণ করে কিংবা চর্চা ও প্রচার করে, তারাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’।



সুতরাং আমাদের পরিচয়, আমরা ‘মুসলিম’ এবং ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’।
*****************************************************************



যুগের পালা বদলে ‘ইসলাম’ ও ‘মুসলিম’ শব্দের প্রতি বেশ অবিচার শুরু হয়। যে কেউ নিজ খিয়াল-খুশি মতো ‘ইসলাম’ এর ব্যাখ্যা করে এবং সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে নিজকে ‘মুসলিম’ বলতে ও ভাবতে শুরু করে। তাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ নামে আমাদের পরিচয় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। রাসূল মুহাম্মদ সা. এর মাধ্যমে আমাদের সঠিক পরিচয় জানিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র সঠিক মর্ম ও তাৎপর্য অনুধাবন করা জরুরি।

আমাদের পরিচয় ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ কেন?
সুন্নাহ ও জামাআর আনুসারী যারা তারাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’। তাই ‘সুন্নাহ’ ও ‘জামাআহ’ কী, বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। এখানে সংক্ষেপে উক্ত দু’টি বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।

সুন্নাহ:
*******

আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ‘অনুসৃত দলীল’ আকড়ে ধরার জন্য। তাই ‘অনুসৃত দলীল’ অনসন্ধান করা আমাদের জন্য জরুরি। আল্লাহ তাআলা মানবজীবনের উন্নতি ও সফলতার জন্য পবিত্র গ্রন্থ ‘আল কুরআন’ নাযিল করেছেন। আর এর ব্যাখ্যা করে তাকে সমাজ্জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেরণ করেছেন রাসূল মুহাম্মদ সা.কে। আর রাসূল সা. যেসময় যে সমাজে আগমন করেন, তখন সে সমাজে বিরাজ করছিল মানবেতিহাসের সব চেয়ে খারাপ অবস্থা। সমাজের এই খারাপ ও অস্থিতিশীল অবস্থা মুহূর্তেই বদলে যায়নি। রাসূল মুহাম্মদ সা. এর প্রতি ধাপে ধাপে ওহী প্রেরণ করে আল্লাহ তাআলা সমাজকে পরিশুদ্ধ করেন। নবুওয়াতের দীর্ঘ ২৩ বছরে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে যা একটি পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা তথা ‘শরীয়াহ’র রূপ লাভ করে।

এখানে একটি লক্ষণীয়। আর তা হলো, ওহীর মাধ্যমে রাসূল সা. বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে পর্যায়ক্রমে যেসব বিধান প্রবর্তন করেছেন, তার কোনোটা ছিলো সাময়িক, কোনোটা স্থায়ী। আর তা ছিলো সামাজিক প্রয়োজনেই। পরবর্তীতে রাসুল সা. সাময়িক বিধানগুলোর কোনোটা রহিত ঘোষণা করেছেন, কোনোটা আংশিক পরিবর্তিত আকারে রেখেছেন, আবার কোনোটা অপরিবর্তিত অবস্থায়ই রেখে দিয়েছেন। তাই একথা বলাই বাহুল্য যে, কিছু হাদীসের উপর সাহাবায়ে কেরামের আমল আছে আর কিছু হাদীসের উপর নেই। কিছু হাদীস অনুসৃত আর কিছু হাদীস অনুসৃত নয়। তাই প্রশ্ন হলো, ‘হাদীস’ এর বিশাল ভান্ডার থেকে ‘অনুসৃত দলীল’ হিসাবে কোন্ ধরনের ‘হাদীস’ গৃহীত হবে?

এব্যাপারে গভীর অধ্যয়নের পর জানা যায়, ‘হাদীসে’র দু’টি অবস্থা আমাদের সামনে বিদ্যমান। যার একটি ‘হাদীস’ নামেই প্রসিদ্ধ। অপরটি ‘সুন্নাহ’ হিসাবে পরিচিত। ‘হাদীসে’র বিশাল ভান্ডারের যেসবের উপর উম্মতের ‘আমল’ বিদ্যমান, তাকেই ‘সুন্নাহ’ বলে। অর্থাৎ ‘সুন্নাহ’র উপর উম্মতের ‘আমল’ রয়েছে, তাই ‘অনুসৃত দলীল’ হিসাবে এই ‘সুন্নাহ’-ই নির্ধারিত, ‘হাদীস’ নয়।

বিষয়টি দলীল-প্রমাণের সাহায্যে স্পষ্ট করার প্রয়াস পাবো।
************************************

‘সুন্নাহ’কে ‘অনুসৃত দলীল’ বলার কারণ দু’টি। যথা-


 1.ইসলাম মুসলমানদের একমাত্র জীবনাদর্শ। তাই ইসলামী শরীয়তকে জীবনের সর্বোত্র বাসত্মবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে অসংখ্য হাদীসে। আর হাদীসে যেখানেই এই তাগিদ দেয়া হয়েছে, সেখানেই ‘সুন্নাহ’র কথা বলা হয়েছে, হাদীস নয়।

রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,

من رغب عن سنتى فليس منى ـ رواه البخارى عن أنس بن مالك : ২/৭৫৭


অর্থ: যে ব্যক্তি  আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, সে আমার দলভূক্ত নয়। (বুখারী: ২/৭৫৭)



 عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ ـ رواه ابوداؤد عن العرباض بن ساريةصـ ২/৬৩৫, والترمذى وابن ماجه واحمد

অর্থ: তোমরা আমার সুন্নাহের এবং হেদায়াত ও সুপথপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাহের অনুসরণ করো এবং তা সুদৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরো এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরো। (আবু দাউদ: ২/৬৩৫, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)





أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: تركت فيكم أمرين لن تضلوا ماتمسكتم بهما- كتاب الله وسنة نبيه ـ رواه مالك صـ ৩৬৩



অর্থ: নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন- আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত এদুটিকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না; – আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ।- মুয়াত্তা ইমাম মালিক: ৩৬৩



أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال العلم ثلاثة أية محكمة، وسنة قائمة ، وفريضة عادلة.أخرجه إبن ماجه فى سننه عن عبد الله بن عمرو صـ৬



অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ইলম তিন প্রকার- আয়াতে মুহকামা, সুন্নাতে কায়েমা ও ফারিযায়ে আদেলা।

উপরে চারটি ‘হাদীস’ পেশ করা হয়েছে। প্রতিটি ‘হাদীসে’ ‘শরীয়তে ইসলাম’ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার প্রতি ‘উম্মত’কে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয়, প্রতিটি ‘হাদীসে’ ‘‘সুন্নাহ’’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে, ‘হাদীস’ নয়। তাই কোনো বিষয়ে কোনো ‘হাদীস’ পাওয়া গেলেই তা নির্দ্বিধায় আমলযোগ্য বিবেচনা করার সুযোগ নেই।



২. সহজের জন্য দ্বিতীয় কারণটি আলোচনার পূর্বে জানা দরকার ‘হাদীস’ কী?

হাদীসবিদগণ বিভিন্নভাবে হাদীসের সংজ্ঞা  দিয়েছেন। তন্মধ্যে এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।



الحديث هو أقوال النبى صلى الله عليه وسلم وأفعاله وسهوه وتقاريره وتروكه وماهمّ به ففعله أو لم يفعله وأحواله وشمائله وصفاته الخِلقية و الخُلُقية حتى الحركات والسكنات فى اليقظة والمنام سواء كان قبل البعثة أو بعدها ـ أنظر توجيه النظر ولمحات من تاريخ السنة و علوم الحديث صـ১১



অর্থ: হাদীস হল, নবী কারীম সা. এর কথা, কাজ, সাহু, সমর্থন, বর্জন এবং যা ইচ্ছা করেছেন বাস্তবে রূপান্তর করে থাকুন বা না থাকুন। তার অবস্থা, শামায়েল এবং তাঁর অবয়বগত ও চরিত্রগত গুণাবলী। এমনকি ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় নড়াচড়া এবং তা নবুওয়াতের পূর্বে হোক বা পরে।

শায়েখ তাহের জাযায়েরী হাদীসের সংজ্ঞায় বলেন,



الحديث ما أضيف إلى النبى صلى الله عليه وسلم من قول أو فعل أو تقرير أو ترك أو هَمٍّ أو سيرة أو حالة أو صفة خِلقية أو خُلُقية سواء كان قبل البعثة أو بعدها ـ أنظر توجيه النظر إلى أصول الآثر صـ ১/৩৭ للشيخ طاهر الجزائرى ومجموع الفتوى صـ ১৮/২-১০



অর্থ: নবী কারীম সা. এর দিকে সম্পৃক্ত কৃত কাজ, তার সমর্থন, বর্জন, ইচ্ছা, সীরাত, অবস্থা, অবয়ব ও চরিত্রগত গুণাবলী- তা নবুওয়াতের পূর্বে হোক বা পরে- তার সবই ‘হাদীস’। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: তাওযীহুন নজর ও মাজমুআতুল ফতওয়া ইবনে তাইমিয়্যা।

হাদীসের পরিচয় সংক্রান্ত হাদীস-বিশারদদের উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, হাদীসের একটি বড় ভান্ডার দখল করে আছে যেসব জিনিস তার মধ্যে রয়েছে-

ক. মানসূখ হাদীস,

খ. নবী কারীম সা. এর জন্য নির্ধারিত বিষয়াদি (যেমন, চারের অধিক বিবাহ),

গ. নবী কারীম সা. এর অবয়বগত গুণাবলী,

ঘ. নবুওয়াতের পূর্বের বিষয়াদি,

ঙ. জাল হাদীস … ইত্যাদি।

সচেতন পাঠক লক্ষ করলে দেখতে পাবেন, হাদীসের সংজ্ঞানুযায়ী যেসব বিষয় হাদীসের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে বা হয়ে থাকে, তার সবই ‘অনুসৃত’ নয়। তাই তা আমাদের দলীলও নয় এবং এসবের উপর আমল করাও জরুরি নয়। পক্ষান্তরে হাদীসে ইরশাদকৃত ‘সুন্নাহ’ হল, নবী কারীম সা. এর ঐসকল বিষয়াদি, যেগুলো আমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য। এবং এটাই দীন ও শরীয়তের  অনুসৃত পথ।

শায়েখ অব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ র. বলেন,

قال الشيخ عبد الفتّاح أبو غدّه فى هامش لمحات من تاريخ السنة وعلوم الحديث  ولفظ السنة إذا ورد فى كلام النبى صلى الله عليه وسلم وكلام الصحابة والتابعين رضى الله تعالى عنهم فالمرادبهالطريقةالمشروعةالمتبعةفىالدينوالمنهجالنبوىالحنيفوذلك فيما جاء منه في سياق الإستحسان و الثناء والطلب والإقتضاء والإيراد والسنة الفقهية التى تقابل الواجب ولايراد به ايضا المعنى الذى اصطلح عليه الأصوليون او المحدثون صـ১৪



অর্থ: ‘সুন্নাহ’ শব্দটি যখন নবী কারীম সা., সাহাবায়ে কেরাম রা. ও তাবেঈনে কেরাম র. এর ভাষায় উল্লেখ করা হয় তখন এর উদ্দেশ্য হয়, দীনের বিধিবদ্ধ অনুসরনযোগ্য ও নবী কারীম সা. এর মধ্যপন্থী জীবন ব্যবস্থা। এবং তা পছন্দনীয়, প্রসংশিত কাম্য ও কাঙ্খিত বিষয়াদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর দ্বারা ফিকহী ‘সুন্নাত’ উদ্দেশ্য নয়, যা ওয়াজিবের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। এবং সেই অর্থও উদ্দেশ্য নয়, যা উসূল ও হাদীস-বিশারদদের পরিভাষায় ব্যবহার হয়। (টীকা: লমহাত মিন তারীখিস সুন্নাহ: ১৪)

হাদীসের এই পরিচয় থেকে ‘সুন্নাহ’ ‘অনুসৃত দলীল’ হওয়ার দ্বিতীয় কারণও স্পষ্ট হলো। অর্থাৎ হাদীসে ‘সুন্নাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঐসকল বিষয়, যা অনুসরণযোগ্য এবং দীন ও শরীয়ত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।



উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনার দ্বারা একথা বুঝে আসে যে, মুসলমানদের জন্য ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ সা. এর রেখে যাওয়া আদর্শ হচ্ছে ‘সুন্নাহ’। তাই আদর্শ হিসাবে গ্র্হণ করতে হবে সুন্নাহকে, হাদীসকে নয়।



জামাআহ:
********

جماعةএর পূর্ণরূপ হচ্ছে جماعة الصحابة। অর্থাৎ মুসলিমজীবনের সর্বোত্র সাহাবায়ে কেরামের জামাআতকে অনুসরণ করা হবে। কারণ, কুরআন নাযিল হয়েছে রাসূল মুহাম্মদ সা. এর উপর। আর এই কুরআনের আমল প্রত্যক্ষ করেছেন কেবল তারাই, যারা রাসূল সা. এর প্রতি ঈমান এনে তার একান্ত সান্নিধ্যে সময় কাটিয়েছেন। তাই ‘সুন্নাহ’ এর সঠিক মর্ম তারাই ভালোভাবে বুঝে আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন। সুতরাং ‘সুন্নাহ’কে তার প্রকৃত ও সঠিক ব্যাখ্যা মোতাবেক নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে হলে তা অবশ্যই সাহাবায়ে কেরামের জামাতের আমলের নমূনায় করতে হবে; নতুবা সে ‘আমল’ ‘সুন্নাহ’ অনুযায়ী হবে না। আর কোনো ‘আমল’ ‘সুন্নাহ’ অনুযায়ী না হলে তা কখনোই আল্লাহ তাআলার নিকট গৃহীত হবে না।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন,

آمنوا كما آمن الناس قالوا أنؤمن كما آمن السفهاء ـ سورة البقرة: ১৩



অর্থ: তোমরা ঈমান আনো, যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে। তখন (মুনাফিকরা) বলল, আমরা কি সেভাবে ঈমান আনবো যেভাবে নির্বোধরা ঈমান এনেছে? -সূরা বাকারা: ১৩

এই আয়াতে الناس ও السفهاء  দ্বারা সাহাবায়ে কেরাম উদ্দেশ্য। তাফসীরে ইবনে কাসীর গ্রন্থে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,



يعنون اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم رضى الله عنهم قال ابو العالية والسدى بسنده عن أبن عباس وإبن مسعود وغير واحد من الصحابة صـ১/৭২



অর্থাৎ, তারা এদ্বারা রাসূল সা. এর সাহাবাগণকে উদ্দেশ্য করেছে। এটা আবুল আলিয়া ও সুদ্দী নিজ সনদে হযরত ইবনে আববাস ও ইবনে মাসউদ  এবং একাধিক সাহাবা থেকে বলেছেন। ১/৭২

বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ তিরমিযী শরীফে এসেছে,



২. عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن بنى إسرائيل تفرقت على ثنتين وسبعين ملة وتفترق أمتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار إلا ملة واحدة قالوا من هى يارسول الله! قال ماأنا عليه وأصحابى ـ رواه الترمذى فى أبواب العلم صـ ২/৯৩



অর্থাৎ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, নিশ্চয় বনী ইসরাঈল বাহাত্তরটি দলে বিভক্ত হয়েছে। আমার উম্মত তিহাত্তরটি দলে বিভক্ত হবে সকলেই জাহান্নামে যাবে শুধু মাত্র একটি দল ছাড়া। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা? নবী কারীম সা. ইরশাদ করলেন, আমি ও আমার সাহাবারা যার উপর আছে।-তিরমিযী: ২/৯৩

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করছে, আমল ও ঈমান তখনই নাজাতের মাধ্যম হবে, যখন তা জামা‘আতে সাহাবায়ে কেরামের আমলের নমূনায় হবে। তাই দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলা যায়, আদর্শের প্রশ্নে মুসলিম জাতির নাম হলো, আহলুস সুন্নাহ ওয়া জামা‘আতিস্ সাহাবা, আহলুল হাদীস নয়।



‘‘আহলুল হাদীস’’ পরিচয় কেন কাম্য নয়
**************************************

উপরে আমারা বিভিন্ন দলীল-প্রমাণের দ্বারা মোটামুটি স্পষ্টভাবে বলে এসেছি যে, মুসলমানদের আদর্শিক পরিচয়, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। স্বভাবতই এর বিপরীত কোনো নামে তাদের পরিচয় দেয়া হলে তা তাদের আদর্শের পরিচয় বহন করবে না। সেহেতু আহলুল হাদীস নাম তাদের জন্য কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়। কারণ, কুরআন ও হাদীস এর প্রমাণ নেই। তাই এটা বিদআত।



আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর বৈশিষ্ট
***********************************

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সবচেয়ে বড় আলামত হচ্ছে, তারা-

১. আকীদায় সবসময় মধ্যপন্থী।

২. বান্দাকে একেবারে কর্মক্ষমতাহীন জড় পদার্থও মনে করে না। আবার বান্দাকে কোনো কাজের কর্তাও মনে করে না।

৩. গোনাহগারকে বেঈমান মনে করে না। আবার কবীরা গোনাহকারীকে জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত নয়- এমনও মনে করে না।

৪. হযরত আলী রা.কে ফাসেকও মনে করে না। অপরদিকে তাকে মা’বূদ কিংবা নবীদের মতো মা’সূমও মনে করে না।

৫. পীরকে সকল ক্ষমতার অধীকারী মনে করে না।

৬. বাইআত হওয়াকে ফরয মনে করে না। আবার এটাকে পীর-তন্ত্র বলে শিরক বা বিদআতও বলে না।

সুন্নাহ ও জামাআতুস সাহাবার বিপরীত কোনো কর্ম-কান্ডকে ইসলামের নামে করা হলে তা বিদআত বলে গণ্য। তাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর বিপরীতে যেকোনো নামে বাতিল আত্ন প্রকাশ করলে আমাদের ঈমানী দায়িত্ব, তার অসারতা প্রমাণ করে দ্বীন-ইসলামের সঠিক অবয়ব জনমানুষের সামনে তুলে ধরা। এপর্যায়ে তাদের সাথে মোকাবেলার কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছি।





                          বাতিলের মোকাবেলা কিভাবে করবো
************************************************


 1.দ্বীনী কাজ এখলাসের সাথে করতে হয় নতুবা সেটা দ্বীনী কাজ বলে গন্য হয় না। তাই এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম নিয়তকে খালিস করে নেয়া জরুরি।
 2.বাতিলের মোকাবেলা নবী ও সাহাবীদের কাজ। তাই একাজের উপর আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে প্রতিদানের আশা রাখা।
 3.যেকোনো বাতিলের ব্যাপারে সম্মক অবগতি লাভ করতে হবে। এবং তাদের প্রকৃত স্বরূপ ঊদঘাটন করতে হবে। নতুবা আমাদের বক্তব্যকে মানুষ অপপ্রচার সাব্যস্থ করবে।
 4.যেকোনো বাতিলের ব্যাপারে উলামায়ে হাক্কানী ও আকাবেরে কেরামের বক্তব্য এবং তারা তাদের যে সকল ত্রুটি ধরেছেন তা জানা। এবং তাদের রদ্দের পদ্ধতি দেখা আবশ্যক।
 5.বাতিলের প্রতি ব্যক্তিগত কোনো বিদ্বেষ রাখা যাবে না। ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রতি হামদরদী থাকতে হবে। তাদেরকে হক বুঝানোর আকাঙ্খা থাকতে হবে।
 6.দাওয়াতের ভিত্তি সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহ হতে হবে। কেননা, কুরআনের أدع إلى سبيل ربك بالحكمة বলে সুন্নাহকেই উদ্দেশ্য  নেয়া হয়েছে। সুন্নাহের ত্বরীকায় দাওয়াত দিতে হবে। তাই نصوص এর বড় অংশ মুখস্থ করে নিতে হবে।
 7.নিজে কুরআন ও সুন্নাহের উপর মযবুতভাবে আমলদার হতে হবে।  জামাতের পাবন্দী ইবাদত ও জিকরের পাবন্দী করতে থাকতে হবে।
 8.কখনোই আঘাত করে বা খোচা দিয়ে কথা বলা যাবে না। কেননা, এভাবে কাউকে হিদায়াতের পথে আনা যায় না। এগুলো করা হয় আত্মতৃপ্তিলাভ করার জন্য যা সম্পূর্ণ تشهى। মনে রাখা দরকার,  تشهى  থেকে বাঁচতেই تقليد  বা  تقليد شخصى     কে আবশ্যক মনে করা হয়।
 9.বাতিলকে প্রথমে হকের পথে আনার চেষ্টা করতে হবে। তাদের বক্তব্যগুলোকেও সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা চাই। তাদের কথায় কোনো সঠিক বিষয় থাকলে তা বিবেচনায় আনা চাই। কেননা, إن الكذوب قد يصدق

10. তাদের ভ্রান্তিগুলোকে প্রথমে আপসে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। যদি তা কোনোভাবেই সম্ভব না হয়, তা হলে জনসাধারণকে তাদের বিভ্রান্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা ও খায়েরখাহীর বহিরপ্রকাশ ঘটাতে হবে। যাতে কেউ মনে করতে না পারে যে, এটা হিংসাত্মক কোনো মতানৈক্য।
 1.বাতিলের মাঝে অবশ্যই فرق مراتب করতে হবে। এক্ষেত্রে তাওহীদ ও ঈমানিয়াতের উপর আঘাতকারী বাতিল প্রথমে প্রতিহত করতে হবে। আমার ধারণা, এদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভন্ড পীরদের দ্বারা মানুষের ঈমান বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই মুকাবেলায় তাদেরকে প্রথমে তাদেরকেই বেছে নেয়া উচিত বলে মনে করি।

12. আমাদের মাঝে আত্মসমালোচনার মনোভাবও থাকা চাই। আমাদের সকল কাজ কি ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এর নীতি ও আদর্শ মোতাবেক কি না? এক্ষেত্রে বাতিলের কোনো কোনো কথা গ্রহণযোগ্যও থাকতে পারে। সব মিলিয়ে নিজেদের সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে। নতুবা لم تقولون ما لا تفعلون এর وعيد থেকে কেউ বাঁচতে পারব না।