১)
মানব সৃষ্টির প্রথম মানুষ আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) সহ সকল মানুষ মাটি দ্বারা
সৃষ্টি এ মর্মে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেনঃ-
১,১
পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির
মানুষ সৃষ্টি করব
(ছোয়াদ-৭১)
১,২
আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে
মাটি
দ্বারা সৃষ্টি একটি মানব জাতির পত্তন করব
(হিজর-২৮)
১,৩
আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা
থেকে উদগত করেছেন (নূহ্-১৭)
১,৪
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা
থেকে
(আর রাহ্মান-১৪)
১,৫
আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি
দ্বারা সৃষ্টি করেছি (হিজর-২৬)
১,৬ ‘এ মাটি থেকেই আমি
তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে
ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব (সূরা ত্বো-হা:
৫৫)
১,৭
আমি মানুষকে মাটির
সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি
। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি । এরপর আমি
শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত
করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিওকে মাংস দ্বারা
আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি । নিপুণতম সৃষ্টকর্তা আল্লাহ
কত কল্যাণময় । এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে । অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত
হবে (মু’মিনুন-১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬)
১,৮
আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা
থেকে সৃষ্টি করেছি
। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও
অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে । আর আমি এক
নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু
অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর । তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ
মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌঁছানো হয়,
যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না (হজ্ব-৫)
১,৯
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে
(দাহ্র-২)
১,১০
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে (আলাক-১)
১,১১ হাদীছঃ নবী (সাঃ)
বলেনঃ তোমরা সকলেই আদমের সন্তান, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি
(বায্ যার
প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল জামে’ হা/৪৫৬৮)
১,১২
স্বয়ং নবী বলেছেনঃ মানুষ
মাটির তৈরী,
ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী (মুসলিম, যুহদ ও রাক্বায়িক্ব অধ্যায়,
হা/৫৩৪)
২)
আল্লাহ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তারাও (মাটির তৈরী) মানুষ ছিলেনঃ-
২,১
“তোমার পূর্বেও জনপদ বাসীদের মধ্যে [নবী হিসেবে] প্রেরণ
করেছিলাম মানুষকে,
যাদের আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম”-সূরা ইউসুফঃ ১০৯
২,২
“তোমাদের পূর্বে আমি যত রাসুল প্রেরণ করেছি তারা
সকলেই ছিলো মানুষ
যারা খাদ্য গ্রহণ করতো, এবং রাস্তায় চলাফেরা করতো । বস্তুতঃ আমি তোমাদের একজনকে
অন্যজনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি । [হে মোমেনগণ] তোমরা কি ধৈর্য্য ধারণ করবে ?
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ [সব কিছু] দেখেন”-সূরা ফুরকানঃ ২০
২,৩
“তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম
তারাও
ছিলো মানুষ,
যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম । যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের
জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহ্র] বাণীকে ধারণ করে থাকে”-সূরা আম্বিয়াঃ
০৭
২,৪
“তিনিই জেন্টাইল মানুষের জন্য তাদেরই
মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছেন,
যে তাদের নিকট আয়াত সমূহ আবৃত্তি করে, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও
প্রজ্ঞা । যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিলো সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে”-সূরা জুমুয়াহঃ
২
২,৫
হে পরওয়ারদেগার! তাদের
মধ্য থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন-
যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা
দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন (বাক্বারা-১২৯)
২,৬
তাদেরই
একজনকে তাদের মধ্যে রসুলরূপে প্রেরণ করেছিলাম
এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর (মু’মিনুন-৩২)
২,৭
“তোমাদের
মধ্য থেকেই তোমাদের
প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছি, যে তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে, তোমাদের
পরিশুদ্ধ করে, এবং তোমাদের কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং নূতন জ্ঞান শিক্ষা দেয়”-সূরা
বাকারাঃ ১৫১
২,৮
“এখন তোমাদের
মধ্যে থেকেই
তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে”-সূরা তাওবাঃ ১২৮
২,৯
তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমরাও
তোমাদের মত মানুষ,
কিন্তু আল্লাহ্ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছা, অনুগ্রহ করেন
(ইবরাহীম-১১)
২,১০
‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই
মধ্য থেকে
একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন,
তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা
ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল (সূরাহ আলে ইমরানঃ
১৬৪)
৩)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও (মাটির তৈরী) মানুষঃ-
====================================
৩,১
“তুমি বল, "আমি তো তোমাদের
মত একজন মানুষই
, ওহীর মাধ্যমে আমাকে প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ্ ।
সুতারাং তাঁর দিকে সত্য পথে চল; এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর”-সূরা হামীম
সিজদাহঃ ০৬
৩,২
“বল, "আমি
তোমাদের মত একজন মানুষ;
[কিন্তু] আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় ।
সুতারাং যে তাহার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে, এবং প্রভুর এবাদতে
কাউকে শরীক না করে” -সূরা কাহফঃ ১১০
৩,৩
“বল:" আমার প্রভু মহিমান্বিত! আমি তো হচ্ছি কেবল
একজন
মানুষ,
একজন রাসুল মাত্র”-বনী ইসরাইলঃ ৯৩
৩,৪
“এটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্য্যের বিষয় যে, আমি তাদেরই
একজনের নিকট
আমার ওহী প্রেরণ করেছি ?”-সূরা ইউনুসঃ ০২
৪)
ইবলীস ও জানে মানুষ মাটির তৈরীঃ-
৪,১
(ইবলীস) বললঃ আমি এমন নই যে, একজন
মানবকে সেজদা করব, যাকে
আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি
দ্বারা সৃষ্টি করেছেন (হিজর-৩৩)
৪,২
আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল ? সে
বললঃ আমি আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ । আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর
তাকে
সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা ।
বললেনঃ তুই এখান থেকে নেমে যা । এখানে অহঙ্কার করার অধিকার তোর নাই । অতএব তুই বের
হয়ে যা । নিশ্চয় তুই হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত (সূরাহ আল্ আরাফঃ
১১-১৩)
৫)
কাফেররাও ঈমান আনে নাই নবী রাসুলগণ (মাটির তৈরী) মানুষ বলেঃ-
৫,১
“তারা আশ্চর্য হয় যে, তাদের
মধ্যে থেকেই তাদের
নিকট একজন সতর্ককারী এসেছে । সুতরাং অবিশ্বাসীরা বলে, "এটা তো বড় আশ্চর্য ব্যাপার
!”-সূরা কাফঃ ০২
৫,২
“এরা আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, তাদের
মধ্য থেকেই
তাদের জন্য একজন সর্তককারী এসেছে এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে," এ তো একজন যাদুকর ,
মিথ্যা বলছে”-সূরা ছোয়াদঃ ০৪
৫,৩
আল্লাহ কি মানুষকে
পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন
? তাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে (বনী
ইস্রাঈল-৯৪)
৫,৪
“তাদের অন্তর [তা নিয়ে] তুচ্ছ বিষয়ের মত খেলা করে । পাপীরা তাদের গোপন পরামর্শ
লুকিয়ে রেখে [বলে]" সে
কি তোমাদের মত একজন মানুষ নয়
? তোমরা কি দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে ?”-সূরা আম্বিয়াঃ ০৩
৫,৫
“এবং তারা বলে, "এ কি রকম রসুল, যে
[মানুষের
মত]
আহার করে এবং রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে ? তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো
না, যে তাঁর সাথে থাকতো সতর্ককারীরূপে ? অথবা তাকে ধন ভান্ডার দেয়া হয় নাই কেন
অথবা উপভোগের জন্য তার কোন বাগান নাই কেন ?" দুষ্ট লোকেরা বলে, "তোমরা তো এক
যাদুগ্রস্থ লোকেরই অনুসরণ করছো"-সূরা ফুরকানঃ ০৭-০৮
৫,৬
“কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদের প্রধাণগণ
বলেছিলো, "আমরা তো তোমাকে আমাদের মত মানুষ
ব্যতীত আর কিছু দেখছি না
। আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের, অপরিপক্ক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন, তারা ব্যতীত আর
কাউকে তোমাকে অনুসরণ করতে দেখছি না । আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি
না, বরং আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি”- সূরা হুদঃ ২৭
৫,৭
কাফেররা বললঃ এতো
আমাদের মতই মানুষ
বৈ নয় , তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে । যদি
তোমরা তোমাদের মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে
(মু’মিনুন-৩৩, ৩৪)
৫,৮
তোমরা তো আমাদের
মতই মানুষ ।
তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাও, যার ইবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত
(ইবরাহীম-১০)
৬)
‘নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক থেকে মাটির তৈরী মানুষ’ মর্মে হাদীছ থেকে
প্রমাণঃ
৬,১ ‘তিনি আরো বলেনঃ
আমি তো
একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে
যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে (বুখারী, ছালাত অধ্যায়,
হা/৩৮৬, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯)
৬,২ ‘তিনি আরো বলেনঃ
আমি তো
একজন মানুষ, আমার নিকট বাদী আসে,
সম্ভবত তোমাদের একজন অপর জন অপেক্ষা বেশি বাকপটু হবে, তাই আমি ধারণা করে নিতে পারি
যে সে সত্য বলেছে কাজেই সে মতে আমি তার পক্ষে ফায়ছালা দিয়ে দিতে পারি । তাই আমি
যদি তার জন্য কোন মুসলিমের হক ফায়ছালা হিসাবে দিয়ে থাকি, তাহলে সেটা একটা
জাহান্নামের টুকরা মাত্র । অতএব সে তা গ্রহণ করুক বা বর্জন করুক (বুখারী, মাযালিম
অধ্যায়, হা/২২৭৮)
৬,৩ ‘মা আয়েশাকে যখন
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন ?
তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত
একজন মানুষ ছিলেন । তিনি তার কাপড় সেলাই
করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন (আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল
আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০,
মুখতাতাছার শামায়েলে তিরমিযী, হা/২৯৩, ছহীহাহ, হা/৬৭১)
৭)
পর্যালোচনা
নবী
(সাঃ) কে আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আঃ) থেকে স্বাভাবিক মানুষের যে নিয়ম আল্লাহ
করেছেন সে পদ্ধতিতেই আবদুল্লাহর ওরসে মা আমিনার গর্ভে এ পৃথিবীতে আগমন ঘটিয়েছেন
।
মহান
আল্লাহ একাধিক স্থানে বলেছেন যে নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক
থেকে
بشر
তথা
আমাদের
মতই একজন মানুষ । তবে সাধা
রন মানুষ নয় বরং অসাধারন মানুষ ৷
৭,১ প্রশ্নঃ নবী
মুহাম্মাদ (সাঃ) আদম সন্তানের বাইরে না ভিতরে ? যদি বলে বাইরে তবে তো তার সাথে কথা
বলা অনর্থক । কারন
মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্যান্য মানুষের মতই আদম সন্তান ছিলেন
(উপরের
১,১-১,১২ দ্রঃ)
।
আর যদি বলে যে, তিনিও
আদম সন্তানের মধ্যে গণ্য, তখন আমরা বলব আদম (আঃ) কিসের তৈরী,
নুরের না মাটির ?
যদি বলে ‘মাটির তৈরী’ আর এটা
বলতে তারা বাধ্য- তাহলে তাদের নিকট
প্রশ্নঃ মাটির তৈরী পিতার সন্তান
কিভাবে নূরের তৈরী হল ?
৭,২
মানুষ যেমন পানাহার করে, তেমনি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও পানাহার করতেন
(উপরের
৫,৫ ও ৫,৭ দ্রঃ)
।
৭,৩
অন্যান্য মানুষের যেমন সন্তানাদি ছিল, তেমনি রাসুলদেরও সন্তানাদি ছিল, স্ত্রীও ছিল
।
৭,৪
রাসুল (সাঃ) অতি মানব ছিলেন না যে তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না ।
এরশাদ
হচ্ছে-
“নিশ্চয়ই
তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারা সকলে মৃত্যু বরণ করবে” (সূরা
যুমার ৩৯:৩০)
৭,৫
আর একথা কিভাবে গ্রহণ করা যায় যে, তিনি নূরের তৈরী, অথচ যাকে মানব জাতির
হেদায়েতের জন্য, অনুসরণীয় একমাত্র
আদর্শ হিসেবে আল্লাহ পাঠালেন মাটির মানুষদের কাছে ।
“নিঃসন্দেহে তুমি মহান
চরিত্রের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছো” {সূরা আল ক্বালামঃ আয়াত ৪}
৭,৬
তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন এর ৭৯২ নং পৃষ্টায় আছে-
=============================================
মানবের
রাসুল মানবই হতে পারেনঃ
ভিন্ন
শ্রেণীর সাথে পারস্পরিক মিল ব্যতীত হেদায়েত ও পথ প্রদর্শনের উপকার অর্জিত হয় না ।
ফেরেশতা ক্ষুধা পিপাসা জানে না, কাম-প্রবৃত্তিরও জ্ঞান রাখে না এবং শীত গ্রীষ্মের
অনুভুতি ও পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি থেকে মুক্ত । এমতাবস্থায় মানুষের প্রতি কোন
ফেরেশতাকে রসুল করে প্রেরণ করা হলে সে মানবের কাছেও উপরোক্ত্ কর্ম আশা করতো এবং
মানবের
দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করতো না ।
বলুনঃ
যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতা
(নুরের তৈরী) কেই তাদের নিকট পয়গম্বর করে প্রেরণ করতাম (বনী
ইস্রাঈল-৯৫)
৭,৭
নবী রাসুল নুরের তৈরী বা ফেরেশতা নন তাও আল্লাক তায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেনঃ-
আর আমি তোমাদেরকে
বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে এবং একথাও বলি না যে, আমি গায়বী খবরও
জানি; একথাও
বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা (নুরের তৈরী); আর তোমাদের দৃষ্টিতে
যারা লাঞ্ছিত আল্লাহতাদের কোন কল্যাণ দান করবেন না । তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল
করেই জানেন । সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায় কারী হব (হূদ-৩১)
৮) বিদআতীরা নবীকে নূর
প্রমাণ করতে যেয়ে দলীল স্বরূপ কুরআন থেকে কতিপয় আয়াত পেশ করে থাকে ।
যেমন,
৮,১ মহান
আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল
জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে । এর দ্বারা আল্লাহ যারা
তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয়
নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা
করেন’(সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬)
অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ (অথবা
আত্মা) তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে
নূরের তৈরী বলা হয়নি । আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে
আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন ।
৮,২ এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে
নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর
আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে । (সূরা আল্ আহযাব:
৪৫-৪৬)
নবী (সাঃ) কে
উক্ত আয়াতে (রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক
থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট
।
৯,১ এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব
তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি
ঈমান আনয়ন কর । তোমরা যা কর, সে
বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত (সূরাহ আত্ তাগাবুন: ৮)
৯,২ অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর
ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা
হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত
সফলকাম (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন
।নূর
পার্টিরা কী বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি
!অথচ কুরআন
মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল মুসলিমদের বিশ্বাস । কুরআনকে সৃষ্টবস্তু
জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী,
অতএব, কুরআনকে নূর বলার
পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়,
তবে রাসূলকে নূরের
সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে ?
কারণ মহান আল্লাহ নবীকে
যেমন ‘নূর’ বলেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র আল কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।
১০)
প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনি বলেছেন নবী সা. মাটির তৈরী । অথচ, রাসূল সা. তার এক
হাদিছে বলেন যে,
১০,১
আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন ।
এর জবাব কী ?
এ
উত্তরটা একটি হাদিছ দিয়ে-ই দেই । আল্লাহর রাসূল সা. অন্য হাদিছে বলেন যে,
১০,২
আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেন ।
ঐ হাদিছ এবং এই হাদিছের মর্ম একই ।
অর্থাৎ
আল্লাহর
রাসূলের রুহ মোবারক নূরের তৈরী, সমস্ত শরীর নয় ।
কেননা
মহানবী সা. এর রূহ বা পবিত্র আত্না মাটির তৈরী হবে তো দূরের কথা, কোন মানুষের
আত্নাই মাটির তৈরী নয় । বরং
সমস্ত মানুষের আত্নাই নূরের তৈরী ।
১১)
সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি কুরআন ও
হাদীছ বিরোধী কথা ।
১১,১
কারণ মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ.
‘নিশ্চয়
আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে
তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’ পরহেযগার (সূরা
হুজুরাত: ১৩)
১১,২
নবী (সাঃ) বলেনঃ হে মানব মন্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক, সাবধান! কোন আরবীর
আজমীর (অনারব) উপর, কোন আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই । অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের
ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য
নেই ।
প্রাধান্য
একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার ভিত্তিতে হবে
। ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে
সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’-পরহেযগার (আহমাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ । দ্রঃ শাইখ আলবানীর
গায়াতুল মারাম, পৃঃ১৯০, হা/৩১৩)
কাজেই
নবী (সাঃ) নূর থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি
থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয়
যেমনটি অসংখ্য বিদআতী তাই ধারণা করে বসেছে ।
বরং
নবী (সাঃ) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব, সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার
। সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ বন্ধু ।
আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের
অধিকারী, সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী । মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল
আলামীন, শাফিঊল লিল মুযনিবীন ।
এসব
বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই । ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম,
তাবেঈনে ইযাম, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস । যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে
আসছেন সকল সুন্নী মুসলিম ।
১২)
‘সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব অজর্ন করে’ এটা ইবলীস শয়তানের
ধারণা ও দাবী মাত্র ।
১২,১
এই অলিক ধারণার ভিত্তিতেই সে (ইবলীস) আগুনের তৈরী বলে মাটির তৈরী আদমকে সিজদাহ করতে
অস্বীকার করে ছিল (উপরের
৪,১ ও ৪,২ দ্রঃ)
।
‘নবী
(সাঃ) কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য
করলে সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের
যুক্তিটি
শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল
।
১২,২
কাফেররাও নবী রাসুলকে মাটির তৈরী মানুষ বলে তাঁর প্রতি ঈমাম আনে নাই, অনুসরণ করে
নাই, তাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে নাই (উপরের
৫,১ থেকে ৫,৮ দ্রঃ)
।
আপনারা
যারা নূরের তৈরী আক্বীদা পোষণ করেন, মাটির তৈরী বলে কি আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে চান
না ?!!
এ
রকম ভাবলে কাফেরদের সাথে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় নয় কি ?
শেষ
কথা আল্লাহ খালেক
(সব কিছুর স্রষ্টা)
আর সবকিছু তার মাখলুক
(সৃষ্টি)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আল্লাহ সমস্ত কিছুর
স্রষ্টা ও তিনি সমস্ত কিছুর কর্মবিধায়ক । আকাশ ও পৃথিবীর চাবিও
তাঁরই কাছে’ {যুমার
৬২-৬৩}
আর শ্রেষ্ঠ মাখলুক হল মানুষ
(মাটির
তৈরী)
[যে কারনে
আল্লাহ নুরের তৈরী ফেরেশতাকে মাটির তৈরী মানুষ আদম
(আঃ) কে সেজদা করার আদেশ দিলেন]
মানুষের মধ্যে
সর্বশ্রেষ্ঠ হল বিশ্বনবী
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) । তাঁর শ্রেষ্ঠতের বহু
কারন রয়েছে । তন্মধ্যে
তাঁর প্রতি আল্লাহর বানী
আল কুরআন নাযিল হয়েছে এবং তিনিই আল্লাহর বানীর সর্বাপেক্ষা বুঝদ্বার ও ব্যাখ্যা
বিশ্লেষক ।
আল্লাহ
আপনার প্রতি ঐশীগ্রন্থ
ও প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন
এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না । আপনার প্রতি আল্লাহর
করুনা অসীম (নিসা-১১৩)
জানাতে
পারেনঃ-
এরপরেও যারা রাসুল (সাঃ) কে নুরের তৈরী
বলে আক্বীদা পোষণ করেন,
মৌখিকভাবে
না বলে কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল উল্লেখ করে লিখিত জানাবেন ?