সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০১৫

মাশরুম খান চাষ করুন,মাশরুম কি ?

     


মাশরুম কি ?
মাশরুম হলো এক ধরণের ভক্ষণযোগ্য মৃতজীবী ছত্রাকের ফলন্ত অংগ। এগুলো মূলত Basidiomycetes অথবা Ascomycetes শ্রেণীর অন্তরগত ছত্রাক। ছত্রাকবিদরা বিশ্বে প্রায় ৩ লক্ষ প্রজাতির ছত্রাক চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এই অসংখ্য ছত্রাকের মধ্য থেকে দীর্ঘ যাচাই ও বাছাই করে যে সমস্ত ছত্রাক সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সেগুলোকেই তাঁরা মাশরুম হিসেবে গণ্য করেছেন। সুতরাং ব্যাঙের ছাতা এবং মাশরুম এক জিনিস নয়। ব্যাঙের ছাতা প্রাকৃতিক ভাবে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বিষাক্ত ছত্রাকের ফলন্ত অংগ কিন্তু মাশরুম হলো বিশ্বের সর্বাধুনিক পদ্ধতি (টিস্যু কালচার)-এর মাধ্যমে উৎপন্ন বীজ দ্বারা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে চাষ করা সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ঔষধীগুণ সম্পন্ন সবজি, যা সম্পূর্ণ হালাল।
পবিত্র কোরআন ও হাদীসে মাশরুমকে অত্যন্ত মর্যাদাকর খাবার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফে রাসুল (সঃ) বলেছেন, আল কামাতু মিনাল মান্না ওয়া মাহা সাফা আল্ আইন” অর্থাৎ মাশরুম এক শ্রেণীর মান্না এবং এর রস চোখের জন্য ঔধষ বিশেষ। আর মান্না সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ৫৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে - অযাল্লালনা আলাইকুমুল গামামা ওয়া আনযালনা আলাইকুমুল মান্না-ওয়াস্-সালওয়া কুলুমিন তায়্যিবাতি মা রাযাক্বনাকুম; ওমা জলামুনা আলাকিন কানূ আনফুছাহুম ইয়াযলিমূন অর্থাৎ আর আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। তোমরা খাও সে সব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদের জন্য দান করেছি। সুতরাং পবিত্র কোরআন ও হাদীসের ভাষায় মাশরুম অত্যন্ত উন্নত ও সম্মানিত খাবার হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখিত।
মাশরুম একপ্রকার অপুষ্পক উদ্ভিদ। সবজি হিসেবে এটি একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি ছত্রাকের বা ইউমাইসেটিসের অন্তর্ক্তূক্ত। এতে সবুজ কণা (Chlorophyll) নাই বিধায় সবুজ কণাযুক্ত উদ্ভিদের মতো নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে না। সে কারণে খাদ্যের জন্য এরা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ বস্তুর ওপর নির্ভরশীল। মাশরুমের মত দেখতে বন জংগলে ছাতা আকৃতির ছত্রাক জন্মে যেগুলো খাওয়ার অনুপযোগী ও বিষাক্ত। গ্রীকরা মাশরুমকে যোদ্ধাদের শক্তিবর্ধক খাবার হিসেবে গন্য করেন, রোমানরা একে ঈশ্বরের খাবার এবং চাইনিজ লোকেরা মাশরুমকে দীঘজীবি হওয়ার খাদ্য হিসেবে বিশ্বাস করেন। ছত্রাকের উঁচু ও নিচু এই দুটি স্তর রয়েছে, মাশরুম উঁচু স্তরের ছত্রাক এবং প্রধানতঃ ব্যাসিডিউমাইসেটিস শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত, এতে যৌন স্পোর হয়। ক্যারিওগ্যামী (Karyogamy) ও মিওসিসের (meosis) ফলশ্রুতিতে এই স্পোর উৎপন্ন হয় এবং এগুলো এক নিউক্লিয়েট বিশিষ্ট এবং হ্যাপলয়েড (Haploid)| ব্যাসিডিওমাইসেটিস ব্যতিত এসকোমাইসেটিস শ্রেণীর অন্তর্গত কিছু মাশরুম রয়েছে এগুলো স্পঞ্জ মাশরুম বা মোরেল (morels) নামে পরিচিতি। এক্ষেত্রেও যৌন স্পোর হয় তবে তা বেসিডিও স্পোর নয়, তা এসকোস্পোর (ascospore) নামে পরিচিতি। স্পঞ্জ মাশরুমও ভক্ষণযোগ্য। আমরা ছাতার মতো মাশরুমের যে অংশটি দেখতে পাই এটিকে ছত্রাকের ফ্রুটিং বডি (fruiting body) বলা হয়। মাশরুমের ফ্রুটিং বডি বা ভক্ষণযোগ্য অংশটি সাধারণতভাবে চারভাগে
ভাগ করা হয়েছে।
ওয়েস্টার মাশরুম
(১) টুপী বা পিলিয়াস (Pilius), (২) জিল (gills) বা ল্যামেল্যা, (lamellae), (৩) আবরণ বা ভেইল এনুলাস (veil annulus), (৪) দন্ড বা স্টাইপ (stipe),
(৫) মাইসেলিয়াম মাশরুমের দন্ড বা স্টাইপের নিম্নাংশে থাকে যা সাধারনতঃ দৃশ্যমান হয় না।
টুপী (Pilius)
টুপী বা পিলিয়াস অনেকটা ছাতার আকৃতি বিশিষ্ট। এটি সাধারণত: মাংশ (fleshy) এবং পুরু হয়। জাতভেদে টুপী বিভিন্ন আকৃতি, মাপ ও বর্ণের হয়।
জিল (gills)
জিলাস বা ল্যমেলা মাশরুমের টুপীর নীচের অংশ। এর মধ্যে বংশবিস্তারের অতি প্রয়োজনীয় স্পোর (spore) থাকে। জাতভেদে স্পোরের রং বিভিন্ন হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রংয়ের পরিবর্তন হয়। জিল এক ধরণের অসংখ্যা সমান্তরাল সুতো দিয়ে তৈরী এবং এরই মধ্যে গদাকৃতির কোষের শীর্ষে বেসিডিওস্পোর থাকে। স্পোরগুলো খালি চোখে দেখা যায় না তবে অনেকগুলো স্পোরকে একত্রে ধুলোর মতো মনে হয়। স্পোরগুলো ঝরে পড়লে তা বাতাসে অন্যত্র নিতে হয় । অনুকুল পরিবেশে স্পোরগুলো গজায়। উচ্চবর্ণের উদ্ভিদও যেমন বীজ থাকে, মাশরুমের তেমনি থাকে স্পোর। স্পোর গজিয়ে সুতোর মত এক ধরণের দন্ড জন্ম নেয়। এগুলোকে হাইফা (hypha) বলা হয়। অনেকগুলো হাইফাকো একত্রে মাইসেলিয়াম বলে। মাইসেলিয়াম বৃদ্ধি পেয়ে দীর্ঘায়িত হয় এবং খাদ্যবস্তু সংগ্রহ করে। হাইফাই ছত্রাকের মূল কাঠামো।
আবরণ (veil )
মাশরুমের সদ্যোজাত ফ্রুটিং বডির জিল (gills) এক ধরণের কোষেকলা দিয়ে আবৃত থাকে যা টুপীর (Pilius) প্রান্ত থেকে দন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। এই কোষকলাকে আবরণ বা veil বলা হয়। ধীরে ধীরে ফ্রুটিং বডির বৃদ্ধি হতে থাকলে টুপীর দিককার আবরণ ছিড়ে যায় এবং এর কিছু অংশ টুপীর প্রান্তভাগ সংলগ্ন থাকে অন্য অংশ দন্ডের (stipe) চারিদিকে আংটির মতো থাকে এটিকে এনুলাস বলা হয়।
দন্ড (stipe or stalk)
টুপী বা (Pilius) কে এই দন্ডই (stipe) ধারণ করে রাখে। এই দন্ডটি সাধারণভাবে টুপীর মাঝামাঝি থাকে। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষ এটি একপাশেও থাকতে পারে। দন্ডটির ভেতরের অংশ ভরাট কিংবা ফাঁপা থাকতে পারে। দন্ডটির সর্বাংশ একই ধরণের পরিধি বিশিষ্ট হতে পারে কিংবা মধ্যম বা শেষ প্রান্ত কিছুটা ফুলে থাকতে পারে।
একজন সুস্থ্য লোকের জন্য প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত। উন্নত দেশের লোকেরা প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ গ্রাম সবজি খায়। বিশ্বব্যাপী সবজি গ্রহণের তথ্য উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, যে দেশ যত বেশি উন্নত সে দেশ ততবেশি সবজি খায়। কারণ সবজিতে পাওয়া যায় দেহকে সুস্থ্য, সবল রোগমুক্ত রাখার প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য উপাদান ও রোগ প্রতিরোধক ভিটামিন ও মিনারেল। অধিক সবজি খাওয়ার ফলে তারা অধিক কর্মক্ষম থাকেন এবং বেশী আয়ু লাভ করেন। অথচ আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ গ্রাম (আলু বাদে) সবজি খাচ্ছি। প্রয়োজন ও প্রাপ্তির এই ব্যবধানের কারণে আমাদের দেশের শতকরা ৮৭% লোক অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগেন। এ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে পুষ্টিকর সবজি খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে, আর অধিক পরিমাণে সবজি খেতে হলে অধিক পরিমাণ সবজি উৎপাদন করতে হবে।
আমরা জানি, উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচলিত ২টি পদ্ধতি, একটি হলো আবাদী জমি বাড়িয়ে- সমান্তরাল পদ্ধতি (Horizontal Method) এবং অপরটি হলো প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে- উলম্বিক পদ্ধতি (Vertical Method)। আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক সমহারে সবজি উৎপাদনের উপযোগী জায়গা কমে যাচ্ছে। এক হিসেব মতে দেখা যায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি কমে যাচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দেশের ভূমিহীনের সংখ্যা প্রায় ৫০ ভাগের মত, যাদের শুধুমাত্র ঘরটিই একমাত্র অবলম্বন। সুতরাং সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম পদ্ধতি অর্থাৎ সমান্তরাল পদ্ধতিটি এদেশের জন্য অচল। তাহলে শুধুমাত্র উলম্বিক পদ্ধতিই আমাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারে। কিন্তু এ পদ্ধতির জন্যও নূন্যতম আবাদী জমির দরকার হয়। অথচ দেশের ৫০% লোকের সে সুবিধাও নেই। তাই আমাদের এখন এমন কোন সবজি উৎপাদন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা দরকার যা চাষীরা তাদের ঘরকে ব্যবহার করে উৎপাদন করতে পারেন, আর তা কেবল মাশরুম চাষের মাধ্যমেই সম্ভব।
বিভিন্ন দেশের মাশরুম খাওয়ার অবস্থা লক্ষ্য করলে আবার দেখা যায় যে দেশ যত বেশি উন্নত সে দেশের মানুষ তত বেশি মাশরুম খায়। উদাহরণ স্বরূপ বিশ্বে মাশরুম খাওয়া ও উৎপাদনের ধারা হচ্ছে - বর্তমানে প্রায় ১০০ টি দেশে মাশরুম চাষ হয় যার ৭০% উৎপাদিত হয় চীনে। উৎপাদিত মাশরুমের ৮৫% ব্যবহৃত হয় গ্রুপ-৬ ভূক্ত ৬ টি দেশে যথা - যুক্তরাষ্ট্র ৩০%, জার্মানী ১৭%, যুক্তরাজ্য ১১%, ফ্রান্স ১১%, ইটালী ১০%, কানাডায় ৬%। বাকী ১৫% মাশরুম খায় অবশিষ্ট বিশ্বের মানুষ। মাশরুমের পুষ্টি ও ঔষধি গুণের কারণে এই চাহিদা দিনে দিনে বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষের কাছে মাশরুম একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ন। এতে খনিজ পদার্থের পরিমান মাছ ও মাংসের তুলনায় বেশী এবং প্রচলিত সবজীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। মাশরুমে আমিষের পরিমান আলু থেকে দ্বিগুন, টমেটো থেকে চারগুন এবং কমলা লেবুর থেকে ছয়গুন বেশী। হাদিস শরিফে মাশরুমকে বেহেশতী খাবারের সাথে তুলনা করা হয়েছে (সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।
১। মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেল এমন সম্বনিতভাবে আছে যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশু নিয়মিত মাশরুম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
২। এতে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং আঁশ বেশী থাকায় ডায়বেটিক রোগীদের আদর্শ খাবার হিসেবে গন্য করা হয়।
৩। রক্তের কোলেষ্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ‘ইরিটাডেনিন’ ‘লোবাষ্টটিন’ এবং ‘এনটাডেনিন’ মাশরুমে থাকায় এটি হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় করে ।
৪। মাশরুমে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি থাকায় শিশুদের হাড় ও দাঁত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৫। প্রচুর ফলিক এসিড ও আয়রন সমৃদ্ধ বিধায় মাশরুম রক্তশূন্যতা দূরীকরনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৬। এতে লিংকজাই-৮ নামক পদার্থ থাকায় হেপাটাইটিস-বি জন্ডিস প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৭। মাশরুমের বেটা-ডি, গ্লুকেন, ল্যাম্পট্রোল, টারপিনওয়েড এবং বেনজোপাইরিন ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধক।
৮। মাশরুমের ট্রাইটারপিন এইডস প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৯। মাশরুমের এডিনোসিন ডেংগু জ্বর প্রতিরোধক। কান মাশরুম (Auricularia spp.) চোখ ও গলা ফোলায় উপকারী।
১০। বিভিন্ন প্রকার এনজাইম সমৃদ্ধ মাশরুম আমাদের পেটের পীড়ায় উপকারী।
১১। মাশরুমে সালফার সরবরাহকারী এমাইনো এসিড থাকায় তা চুল পড়া ও চুল পাকা প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
মাশরুমের পুষ্টিমান
পুষ্টি বিচারে মাশরুম নিঃসন্দেহে সবার সেরা। কারণ আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান অতি প্রয়োজনীয় যেমন - প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সেগুলো মাশরুমে উচুঁ মাত্রায় আছে। অন্যদিকে যেসব খাদ্য উপাদানের আধিক্য আমাদেরকে জটিল মরণব্যাধীর দিকে নিয়ে যায়, যেমন - ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেড তা মাশরুমে নেই বললেই চলে। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
মাশরুমের পুষ্টিমূল্য (১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুম)
খাদ্য উপাদানের নাম
পরিমাণ (গ্রাম)
মন্তব্য
আমিষ
২৫-৩৫
উন্নত ও সম্পূর্ণ আমিষ
ভিটামিন ও মিনারেল
৫৭-৬০
সব ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল
শর্করা
৫-৬
পানিতে দ্রবনীয়
চর্বি
৪-৬
অসম্পৃক্ত চর্বি

প্রোটিন মূল্য
মাশরুমের প্রোটিন হল অত্যন্ত উন্নত, সম্পূর্ণ এবং নির্দোষ। একটি সম্পূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি এমাইনো এসিডের উপস্থিতি। মাশরুমে অপরিহার্য এ ৯টি এমাইনো এসিডই প্রশংসনীয় মাত্রায় আছে। অন্যান্য প্রাণীজ আমিষ যেমন-মাছ, মাংস, ডিমের আমিষ উন্নতমানের হলেও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত চর্বি থাকায় তা গ্রহণে দেহে কোলেস্টরল সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মেদভূড়ি ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পক্ষান্তরে মাশরুমের প্রোটিন নির্দোষ। তাছাড়াও প্রোটিনের বিপরীতে ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের সর্বনিম্ন উপস্থিতি এবং কোলেস্টরল ভাঙ্গার উপাদান লোভাস্টাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় কোলেস্টরল জমার ভয় থাকে না। এ কারণে প্রোটিনের অন্যান্য সব উৎসের তুলনায় মাশরুমের প্রোটিন সর্বোৎকৃষ্ট ও নির্দোষ। নিচের ছকে প্রোটিনের অন্যান্য উৎসের সাথে মাশরুমের তুলনা দেখানো হল
প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ
খাবারের নাম
প্রোটিন (গ্রাম)
মাংস
২২-২৫ গ্রাম
মাছ
১৬-২২ গ্রাম
ডিম
১৩ গ্রাম
ডাল ২২-৪০ গ্রাম
মাশরুম ২৫-৩৫ গ্রাম
মাশরুমের ৯টি অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের পরিমাণ (গ্রাম / ১০০ গ্রাম)
এমাইনো এডিসের নাম
Agaricus bisporus
Agaricusb edodes
Pleurotus florida
Pleurotus ostreatus
Pleurotus sajorcaju
Volvereilla volvacea
Leucine
৭.৫
৭.৯
৭.৫
৬.৮
৭.০
৪.৫
Isoleucine
৪.৫
৪.৯
৫.২
৪.২
৪.৪
৩.৪
Valine
২.৫
৩.৭
৬.৯
৫.১
৫.৩
৫.৪
Tryptophan
২.০
-
১.১
১.৩
১.২
১.৫
Lysine
৯.১
৩.৯
৯.৯
৪.৫
৫.৭
৭.১
Threonine
৫.৫
৫.৯
৬.১
৪.৬
৫.০
৩.৫
Phenylalanine
৪.২
৫.৯
৩.৫
৩.৭
৫.০
২.৬
Methionine
০.৯
১.৯
৩.০
১.৫
১.৮
১.১
Histidine
২.৭
১.৯
২.৮
১.৭
২.২
৩.৮
Total essential
৩৮.৯
৩৬.০
৪৬.০
৩৩.৪
৩৭.৬
৩২.৯
ফ্যাট মুল্য
মাশরুমের ফ্যাট অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড দ্বারা তৈরি যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া স্ফিঙ্গলিপিড ও আরগেস্টেরল থাকায় এর মানকে আরও উন্নত করেছে। স্ফিঙ্গলিপিড থাকায় হাড়ের মজ্জা ও ব্রেন ডেভেলপমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং আরগেস্টেরলের উপস্থিতির কারণে ভিটামিন-ডি সিনথেসিসে সহায়ক হয় যা হাড় ও দাঁত তৈরি এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়া মাশরুমের ফ্যাটে ৭০-৮০% লিনোলিক এসিড আছে যা শরীর সুস্থ্য রাখতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কার্বোহাইড্রেট মূল্য
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি যা সম্পূর্ণ খরচ না হয়ে শরীরে জমা হয় এবং নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। মাশরুমে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম এবং তা পানিতে দ্রবনীয়। ফলে মাশরুমের কার্বোহাইড্রেড শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া এরমধ্যে অধিকাংশ পলিস্যাকারাইড যেমন- গ্লাইকোজেন, বেটা-ডি-গ্লুক্যান, ল্যাম্পট্রোল, লোভাস্টাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন, ট্রাইটারপিন, এডিনোসিন, ইলুডিন প্রভৃতি থাকায় দেহের জটিল রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মাশরুম এ্যাসিডিক সুগার ও এ্যাসিডিক পলিস্যাকারাইড বিশেষ করে H৫১ সরবরাহ করে। মাশরুমে আঁশের পরিমাণও বেশি। জাত ভেদে ১০-২৮% আঁশ পাওয়া যায়। ফলে ডায়াবেটিকস রোগীদের ইনসুলিনের চাহিদা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন ও মিনারেল
ভিটামিন ও মিনারেল দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। প্রতিদিন চাহিদা মাফিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল গ্রহণ না করলে দেহে বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। অল্প পরিমাণে অথচ অত্যাবশ্যকীয় এ খাদ্য উপাদান গ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে এ অবস্থার সৃষ্টিই হবে না। ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস হিসেবে মাশরুমের অবস্থান খুবই উচ্চে। শুকনা মাশরুমে ৫৭%-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল (অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস এলিমেন্টসহ) বিদ্যমান। আমাদের শরীরের জন্য প্রতিদিন প্রধান প্রধান ভিটামিন ও মিনারেলের যে পরিমাণ প্রয়োজন এবং ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুম যে পরিমাণ সরবরাহ করে তা নিম্নে দেয়া হল

দৈনিক মানবদেহে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা এবং ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে এদের পরিমাণ
প্রধান প্রধান ভিটামিন ও মিনারেলের নাম
দৈনিক চাহিদা
মাশরুমে প্রাপ্তি
থায়ামিন (বি ১)
১.৪ মিলি গ্রাম
৪.৮ - ৮.৯ মিলি গ্রাম
রিবোফ্লাভিন (বি ২) ১.৫ মিলি গ্রাম
৩.৭-৪.৭ মিলি গ্রাম
নায়াসিন
১৮.২ মিলি গ্রাম
৪২-১০৮ মিলি গ্রাম
ফসফরাস ৪৫০ মিলি গ্রাম
৭০৮-১৩৪৮ মিলি গ্রাম
লৌহ
৯ মিলি গ্রাম
১৫-১৭ মিলি গ্রাম
ক্যালসিয়াম
৪৫০ মিলি গ্রাম
৩৩-১৯৯ মিলি গ্রাম
কপার
২ মিলি গ্রাম
১২-২২ মিলি গ্রাম

মাশরুমের মোট ash এর মধ্যে পটাসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৭০ ভাগ, যার মধ্যে আবার ৪৫ ভাগই হচ্ছে পটাসিয়াম। এছাড়া কপার ও সেলিনিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় চুল পড়া, চুল পাক রোধসহ মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
মাশরুমের স্বাদ
মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু সবজি। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মুখোরোচক এই মাশরুমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে খাদ্য তালিকায় মাশরুমকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যবহৃত হতো অসাধারণ লোভনীয় স্বাদের মাশরুম। বিশ্বব্যাপী ভোজন রসিকরা মাশরুমকে স্বর্গীয় খাবারের সাথে তুলনা করে। মাশরুম শুধু নিজেই স্বাদই খাবার নয়, মাশরুম অন্য খাবারের সাথে ব্যবহার করলে তার স্বাদ বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই মাশরুমকে বলা হল পরশস্বাদু খাবার।
ঐতিহাসিক গুরুত্বঃ মাশরুমের স্বাদ এবং পুষ্টি দুটোই অসাধারণ। যে কারণে খৃষ্টপূর্ব ৫০০ সন থেকে মানুষ মাশরুমকে সুস্বাদু খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে আসছে। প্রাচীন ফারাও সম্রাট মাশরুমকে দেবতার খাবার হিসেবে মনে করতেন। আর গ্রীকরা মনে করতেন ‘ঝুঁকিপূর্ণ লড়াইয়ের ময়দানে জয়লাভের জন্যে প্রয়োজনীয় শৌর্যবীর্য যোগাতে পারে মাশরুম’। চাইনিজরা ‘অমরত্বের সন্ধানে’ মাশরুম খাওয়া শুরু করেন। হাদিস শরীফের সূত্র হতে জানা যায়, ‘মাশরুম হচ্ছে মান্নার নির্যাস থেকে উৎপন্ন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন খাবার’। ছত্রাকবিদদের মতে মাশরুম থেকেই ‘মাইকোলজি’ শব্দটি এসেছে।
পুষ্টিগুনের কারণে মাশরুমকে অধিকাংশ মরণব্যাধির প্রতিরোধক এবং নিরাময়ক হিসেবে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। যে সমস্ত কারণে মাশরুম বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিরোধক এবং নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে তা নীচের ছকে দেয়া হল।
যে সকল রোগ নিরাময় হয় যে যে উপাদানের কারনে নিরাময় হয়
ইমুন সিস্টেম উন্নত করে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের অপূর্ব সমন্বয়
ডায়াবেটিস চর্বি ও শর্করা কম এবং আঁশ বেশী, পলিস্যাকারাইড, ইনসুলিন উপাদানেয় সহায়ক
কোলেস্ট্রেরল, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টাটিন, এন্টাডেনিন ও নায়াসিন
দাঁত ও হাড়ের গঠন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন - ডি
রক্ত শূন্যতা
ফলিক এসিড ও লৌহ
হেপাটাইটিস বি, জন্ডিস লিঙ্কজাই-৮, ফলিক এসিড
ক্যান্সার, টিউমার বেটা-ডি-গ্লুকেন, ল্যাম্পট্রোল, টারপিনওয়েড গ্রুপ ও বেনজোপাইরিন অর্গানিক জার্মানিয়াম
এইড্‌স ট্রাইটারপিন
আমাশয় ইলুডিন এম ও ইলুডিন এস
যৌন অক্ষমতা গ্লাইকোজেন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ই
ডেঙ্গু জ্বর
এডিনোসিন
হাইপার টেনশন ও মেরুদন্ড স্ফিঙ্গলিপিড ও ভিটামিন বি-১২, এন্টি অক্সিডেন্ট
পেটের পীড়া
এনজাইম
কিডনি ও এলার্জি নিউক্লিক এসিড ও এন্টি এলার্জেন
চুলপড়া ও চুল পাকা সালফার এমাইনো এসিড, সেলিনিয়াম ও কপার
“রোগ মুক্ত স্বাস্থ্য চান - নিয়মিত মাশরুম খান”
মাশরুম চাষের সুবিধাসমূহ
মাশরুম বিষয়ক সকল তথ্য জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র, সাভার, ঢাকা এর সৌজন্যে আপডেট করা হয়েছে
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের অত্যন্ত উপযোগি। সে সাথে মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণও (যেমন- খড়, কাঠের গুড়া, আখের ছোবড়াসহ বিভিন্ন কৃষিজ ও শিল্পজ বর্জ্য) অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য।
মাশরুম চাষের সাধারন সুবিধাসমূহঃ
(১) মাশরুম চাষে আবাদী জমি দরকার হয় না।
(২) ঘরের মধ্যে চাষ করা যায়।
(৩) তাকে তাকে সাজিয়ে একটি ঘরকে কয়েকটি ঘরের সমান ব্যবহার করা যায়।
(৪) অত্যন্ত অল্প সময়ে অর্থাৎ মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যে মাশরুম পাওয়া যায় যা বিশ্বের অন্য কোন ফসলের বেলায় প্রযোজ্য নয়।
(৫) বাড়ির যে কেউ মাশরুম চাষে অংশ নিতে পারে।
ঘরে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাশরুম চাষ
মাশরুম চাষে গৃহিনী
মাশরুম চাষে অর্থনৈতিক সুবিধাঃ
মাশরুম চাষ একটি সর্বোত্তম লাভজনক ব্যবসা। অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে কোন ব্যবসা সর্বাধিক লাভজনক তখনই ধরা যাবে যখন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো সর্বোচ্চ অনুকূল অবস্থা থাকবে। যেমন-
(ক) কম পুঁজির দরকার হবে।
(খ) বিনিয়োগকৃত অর্থ অল্প সময়ের মধ্যে তুলে আনা সম্ভব হবে এবং
(গ) অল্প শ্রমের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে।
অপরদিকে বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাপ্তির ক্ষেত্রেঃ
(ক) যদি একক প্রতি ফলন অধিক হয়
(খ) বাজার মূল্য অধিক হয়
(গ) একক প্রতি লাভ অধিক হয়, তবে তা সর্বোত্তম ব্যবসা বটে।
কেবল মাশরুমের ক্ষেত্রেই উপরোক্ত সবকটি বিষয় প্রযোজ্য। তাই মাশরুম ব্যবসা মানেই সর্বোত্তম লাভজনক ব্যবসা। এছাড়া অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে মাশরুম আমদানী কমিয়ে দেশী মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আরও অধিক উৎপাদন করা সম্ভব হলে বিদেশে মাশরুম রপ্তানীর মাধ্যমে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে এনে জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
মাশরুম চাষের সামাজিক সুবিধাঃ
মাশরুম চাষে যে সমস্ত সামাজিক সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ
(১) ঘরে ঘরে মাশরুম চাষ করে অত্যন্ত পুষ্টিকর এই সবজি নিয়মিত খেয়ে দেশে পুষ্টিহীনতা দূর করা সম্ভব হবে।
(২) পুষ্টিহীনতা দূর হলে রোগব্যাধী জনিত ব্যয় সাশ্রয়সহ সমাজের সুস্ততা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
(৩) আর সুস্থ্য সবল দেহই অধিক কর্মক্ষম, ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
(৪) মাশরুম চাষে, সংরক্ষণে, প্রক্রিয়াজাতকরণেও বাজারজাতকরণে কর্মহীন লোকদের নিয়োজিত করে জনগণকে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
(৫) যে সমস্ত শিক্ষিত যুবক-যুবতী বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত, প্রচলিত সামাজিকতার কারণে শিক্ষিত হবার পর যারা রোদে পুড়ে, মাঠে কাদামাটির সাথে মিশে নিজেদেরকে প্রচলিত উৎপাদন পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত করতে অনীহা প্রকাশ করেন, সে সমস্ত বেকার ছেলেমেয়েদের জন্য মাশরুম চাষ একটি আর্শীবাদ। কারণ মাশরুম চাষ করতে রোদে পুড়তে হয়না, কাদামাটির সংস্পর্শে আসতে হয় না, ঘরের মধ্যে তাকে তাকে সাজিয়ে সামান্য শ্রমে অল্প সময়ে ন্যূনতম পুজিতে অধিক এবং স্বাধীন উপার্জন করা সম্ভব। যেহেতু মাশরুম উচ্চবিত্তের সৌন্দর্যচর্চা ও সৌখিন খাবারের উপকরণ। তাই মাশরুম চাষ অত্যন্ত মর্যাদাকর পেশা যেখানে শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা কোন রকম হীনমন্যতায় না ভুগে গর্বিতচিত্তে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন। সুতরাং বাংলাদেশে মাশরুম চাষ মানেই আছে বেকার সমস্যা সমাধানের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা।
মাশরৃম চাষে নারী
মাশরুম চাষে শিক্ষিত যুবক
(৬) বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। অথচ দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে পর্দা, পুরুষতান্ত্রিকতা অথবা মহিলা শ্রমের সুব্যবস্থা না থাকার মহিলারা উপার্জন বিমুখ। ফলে দেশের অর্ধেক কর্মক্ষম জনশক্তি উন্নয়নের কাজে সম্পৃক্ত নয়। অথচ মাশরুম এমন একটি সবজি যা চাষ করে মহিলারা আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার সাথে সংগতি রেখে, স্বামীর যত্ন এবং সন্তান লালন পালন করেও বাড়তি উপার্জন করতে পারেন। তাই মাশরুম চাষ এদেশে মহিলাদের কর্মসংস্থানের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় দ্বার খুলতে পারে।
মাশরুম চাষে পরিবেশের সুবিধাঃ
১। সচরাচর প্রতিদিন আমরা যে সব সবজি খেয়ে থাকি, তার প্রায় সবটাই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদন করা হয়। সবজিতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক শুধুমাত্র ভোক্তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে না বরং এগুলো যখন প্রয়োগ করা হয় তখন বায়ুমন্ডলকে দূষিত বা বিষাক্ত করে, মাটিকে বিষাক্ত করে, বৃষ্টির পানিতে সেই বিষ ধুয়ে পানিকেও বিষাক্ত করে। অথচ অধিকাংশ মাশরুমে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক কোনটাই ব্যবহার করতে হয় না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরে সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ উপায়ে মাশরুম উৎপাদন করা হয়। তাই মাশরুম সর্বোচ্চ পরিবেশ এবং শরীরের বান্ধব।
২। মাশরুম চাষে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ কৃষি, বনজ ও শিল্পের উপজাত যেগুলোর যত্রতত্র এবং অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত করে। সেগুলোকে উৎপাদনের উপকরণ হিসাবে প্রক্রিয়াজাত করে সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। ফলে পরিবেশ অধিক দূষনমুক্ত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথাটি এখন জোরের সাথে বলা যায় যে, মাশরুম চাষের মাধ্যমে এদেশের পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা বেকারত্ব দূরীকরণ (বিশেষ করে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি), আমদানী ব্যয় হ্রাস এবং রপ্তানী আয় বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ উন্নয়নের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। 
https://www.facebook.com/DiKrsibida/posts/593345240775687 

https://www.youtube.com/watch?v=UTm1T-4_1cg 

কালিমায়ে তায়্যিবাহ নিয়ে বিতর্কের জবাব

কালেমা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সম্বলিত কয়েকটি আরবি পংক্তির নাম। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ পূর্ণতা পায়। ইসলামে কালমিার গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক । কালিমার মূল অবকাঠামো হচ্ছে বিশ্বাস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মারা যায় যে সে জানে আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক উপাস্য নেই সে জান্নাতে যাবে।

কথিত আহলে হাদিছের কুখ্যাত শায়খ মুতি মাদানি  যিনি ইসলামের  অনেক বিতর্কীত মাছালা বলতে অভ্যস্হ, এখন এ নতুন ফেরকাটির বিভিন্ন উক্তির জবাব সন্মানীত ওলামায়ে কেরাম দিয়ে যাচ্ছেন , 
এখন কথা হল ইসলামের কালিমা " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ নাকী আলেমদের বানানো নাউযুবিল্লাহ 
তাহলে দেখা যাক এটার বর্ননা হাদিসের কোথাও আছে কিনা?

আরশের খুটিতে লেখা আছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
হাদিসটি পড়ুন,
€ হাদীস নং- 1
روى سيدنا عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم (لما اقترف آدم الخطيئة قال: يا رب أسألك بحق محمد إلا غفرت لي فقال الله تعالى يا آدم كيف عرفت محمدا ولم أخلقه؟ قال: يا رب إنك لما خلقتني رفعت رأسي فرأيت علي قوائم العرش مكتوبا لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنك لم تضف إلى اسمك إلا أحب الخلق إليك فقال الله تعالى صدقت يا آدم إنه لأحب الخلق إلى وإذ سألتني بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد ما خلقتك
অনুবাদঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আদম আলাইহিস সালামের নিকট তাঁর নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণের বিষয়টি ধরা পড়ল, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি মুহাম্মাদের ওয়াসীলা নিয়ে তোমার দরবারে ফরিয়াদ করছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। অতঃপর আল্লাহ বললেন, হে আদম, তুমি মুহাম্মাদকে কীভাবে চিনলে, এখনো যাকে সৃষ্টি করি নাই? তিনি বললেন, হে আল্লাহ, তুমি যখন আমাকে সৃষ্টি করেছিলে, আমি তখন আমার মাথা উঠিয়েছিলাম। তখন দেখতে পেয়েছিলাম,


আরশের খুটিগুলোর উপর লেখা, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। 
তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সমগ্র সৃষ্টির মধ্য সবচেয়ে প্রিয় না হলে তুমি তাঁর নাম তোমার নামের সাথে মিলাতে না। অতঃপর আল্লাহ বললেন, হে আদম তুমি ঠিকই বলেছ। নিশ্চয়ই সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সে আমার সবচেয়ে প্রিয়, আর যেহেতু তুমি তাঁর ওয়াসীলা নিয়ে আমার নিকট দোয়া করেছ, তাই তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আর(জেনে রাখ) মুহাম্মাদকে সৃষ্টি না করলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।
রেফারেন্সঃ
দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাকী
৫/৪৮৯
আল মুস্তাদরাক লিল হাকিম-২/৬১৫
আল মু’জামুল আওসাত লিত তাবারানী- ৬৪৯৮

যে সকল মুহাদ্দিসীন এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেনঃ
১-ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ।
আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫
২- ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।
শিফাউস সিকাম, পেইজ-১২০
৩- ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ।
দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২
৪-ইমাম কস্তল্লানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।
মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহঃ১/১৬
৫- ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ।
ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯
৬- ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।
আল খাসাইসঃ১/৮
৭- ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদীসটি দলীল হিসাবে তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯
সুতরাং প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের এসব মন্তব্যের পর আর কোন সন্দেহ থাকল না, নিঃসন্দেহে বলা যায় হাদিসটি সহীহ।

€• হাদীস নং- 2
আর এই পবিত্র কালিমা শরীফ সহীহ সনদে হাদীস শরীফে বর্নিত আছে। আসুন আমরা সনদ সহ হাদীস শরীফখানা লক্ষ্য করি-

حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاري
حدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه "لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد

অর্থ: হযরত ইমাম হাকিম নিসাবুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু।

সনদ পরিবর্তন/ দ্বিতীয় সনদ : হযরত ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি , তিনি হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তিনি বলেন-
" মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আপনি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে উনাকে যারা পেতে চায় তাঁদের নির্দেশ করুন, তাঁরা যেন উনার প্রতি ঈমান আনে। যদি সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন  তবে আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করতাম না, যদি সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি না হতেন, তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না। আর যখন আমি পানির উপর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যে
لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم
লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।"
এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ।"

দলীল-
√ আল মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, - কিতাবু তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা।

√ মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খন্ড ১০৬৭ পৃষ্ঠা



 হাদীস নং-3
বিখ্যাত ইমাম হাফিজে হাদীস আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন-

عن ابن عباس رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلي الله عليه و سلم ما في الجنة شجرة عليها ورقة الا مكتوب عليها لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, জান্নাতের এমন কোন গাছ নেই যার পাতার মধ্যে لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم এ বরকতময় কালিমা শরীফ লিখিত নেই। "

দলীল-
√ খাছায়েছুল কুবরা ১ম খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা।
√ আল হিলইয়া লি আবু নুয়াইম রহমাতুল্লাহি আলাইহি।


হাদীস নং- 4
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আরো বর্ননা করেন,-

عن حضرت جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلي الله عليه و سلم مكتوب علي باب الجنة لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم

অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ননা করেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, জান্নাতের দরজা মুবারকে লিখা রয়েছে-
لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم

দলীল-
√ খাছায়িছুল কুবরা ১ম খন্ড 



 হাদীস নং- 5
কিতাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ননা রয়েছে-

عن حضرت ابي الحسن علي بن عبد الله الهاشمي الرقي رحمة الله عليه قال : دخلت بلاد الهند، فرايت في بعض قرأها شجرة ورد اسود ينفتح عن وردة كبيرة طيبة الراءحة سوداء عليها مكتوب بخط ابيض لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم ابو بكرن الصديق عليه السلام عمر الفاروق رضي الله عنه فشككت في ذاك وقلت انه معمول فعمدت الي حبة لم تفتح ففتحتها فرايت فيها كما رايت في ساءر الورد في البلد منه شيء كثير

অর্থ: হযরত ইবনে আসাকির রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইবনে নাজ্জার রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা দু'জন স্বীয় ইতিহাসগ্রন্থে হযরত আবুল হাসান আলী ইবনে আব্দুল্লাহ আল হাশীমি আররক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ভারতবর্ষের কোন এক এলাকায় পৌঁছে একটি কালো রঙ্গের গোলাপ গাছ দেখলাম। এর অকটি ফুল অনেক বড়, যার রঙ কালো, সুগন্ধিময় এবং অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ছিলো। ঐ ফুলটির গায়ে সাদা হরফে লিখা ছিলো-
لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم ابو بكرة صديق رضي الله غنه عمر الفاروق رضي الله عنه
আমি মনে মনে চিন্তা করলাম এবং আমার বিশ্বাস হলো নিশ্চয়ই এটা কারো কাজ হবে। তাই আমি অন্য একটি বন্ধ কলি খুলে দেখলাম। আশ্চর্যের বিষয় তাতেও এরূপ লিখা ছিলো। এধরনের গোলাপ গাছ সেখানে প্রচুর পরিমান ছিলো। " সুবহানাল্লাহ্ !!

দলীল-
√ ইবনে আসাকির
√ ইবনে নাজ্জার।

উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য দলীল থেকে প্রমানিত হলো কালিমা শরীফ হচ্ছে " লা'ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু, ছাল্লালাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম'"।

অথচ সালাফী  আহলে হাদীসরা  বলছে এধরনের কোন কালিমা শরীফ নাকি ইসলামে নাই। নাউযুবিল্লাহ !!
শুধু তাই নয় জামাতের এক আলেম মাওঃ  তারেখ মনোয়ার বলেছে কালিমা শরীফে " লা'ইলাহা ইল্লাল্লাহু " এই বাক্যের পাশাপাশি "মুহম্মদুর রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখা শিরক। নাউযুবিল্লাহ !!

অথচ উপরোক্ত হাদীস শরীফ দেখুন, স্পষ্ট ভাবেই দুইটা কালাম একসাথেই আছে॥ এবং হাদীস শরীফের ইমামগনও পাশাপাশি ভাবে নিজেদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

এত সহীহ দলীল থাকার পরও কিভাবে এরা বিরোধীতা করে ??
হাদীস শরীফে আছে, আখেরী জামানায় কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জালের  বের হবে। এরা এমন সব কথা বলবে তোমরা শোন নাই তোমাদের বাপ দাদারাও শোনে নাই। "

আল্লাহ সকলকে হেদায়েত দান করুন আমিন 

   
https://www.facebook.com/pages/%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%93-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%97/540269456025502?fref=nf 


 কথিত আহলে হাদীসের ভ্রান্ত মতবাদ ও তাদের পক্ষ থেকে উপস্হাপীত  প্রশ্নের জবাব 


https://www.youtube.com/watch?v=E5ANlIvcklQ 

রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৫

বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে নামাজ

বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে ইসলামের আমল নামাজ

 নামাজ আল্লাহর বিশেষ এক এবাদত,যা আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের সহায়ক,  একমাত্র  নামাজ মুসলিম-অমুসলিমদের মধ্যে পার্থক্যকারী এক বিশেষ এবাদত,তাছাডা হাজারো উপকারীতার কথা আমরা কোরআন-হাদীস থেকে জানতে পারি। কিন্তু আজকাল বিজ্ঞান আমাদের  নামাজ সম্পর্কে কি বলে তা নিয়েই আলোচনা করবো। তবে একথা দিবালোকের ন্যায়ই সত্য যে কোরআন বুঝতে আমাদেরকে বিজ্ঞান বুঝতে হবেনা তবে বিজ্ঞান বুঝতে হলে কোরআন বুঝতে হবে। তবে আজকাল বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে আমাদেরকে কোরআন বুঝতে অনেকাংশে সহায়ক হচ্ছে ।


 আমরা অনেকেই জানি নামাজের বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল শারীরিক উপকারিতা। আর মুসলিম হিসেবে আপনি এটাও হয়তো জেনে থাকবেন যে, নামাজের শ্রেষ্ঠতম অংশ হল সিজদা।

তাই এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে পবিত্র কোরআনে সিজদা শব্দটি কম করে হলে ও ৯০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। একবার ভেবে দেখুন কিভাবে সিজদা করি আমরা। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যখন দাড়িয়ে থাকি বা বসে থাকি তখন আমাদের ব্রেইনে রক্ত পৌছায় ঠিকই, কিন্তু তা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু আমরা যখন সিজদায় যাই তখন মস্তিষ্কে/ব্রেইনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্ত সঞ্চালিত হয়, যা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য খুবই জরুরী। আর আমরা যখন সিজদা করি তখন ব্রেইনের ন্যায় আমাদের মুখমণ্ডলের ত্বকেও অতিরিক্ত রক্তসঞ্চালন হয়, যা আমাদের চিল্বলাইন(chilblain) নামক এক ধরনের চর্মরোগ এবং এজাতীয় আরও অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।তাছাড়া সিজদা আমদেরকে সাইনুসাইটিস (sinusitis) থেকেও বাছিয়ে রাখে। কেননা যারা নিয়মিত সিজদা করে অর্থাৎ নামাজ পড়ে তাদের সাইনাসের (sinus) প্রদাহ হবার সম্ভাবনা অনেক কম।


এছাড়াও সিজদার আরও উপকার রয়েছে। যেমন, যারা নিয়মিত সিজদা করে তাদের ব্রঙ্কাইটিস (bronchitis) হবার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কম। একটা লোক যখন স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস ছাড়ে  তখন আমদের ফুসফুসে থাকা দূষিত বায়ুর কেবল দুই-তৃতীয়াংশ বের হয় বাকি একতৃতীয়াংশ ভিতরেই থেকে যায়। কিন্তু কেউ যখন সিজদায় অবনত হয় তার এবডমিনাল ভিসেরা(abdominal viscera) ডায়াফ্রামের(diaphragm) উপর চাপ প্রয়োগ করে, ফলে ডায়াফ্রাম ফুসফুসের নিছের দিকে (lower lobes) চাপ প্রয়োগ করে।

 ফলে কেউ যখন সিজদায় অবনত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস নেয় তখন ফুসফুসের ভিতরে জমে থাকা এক তৃতীয়াংশ দূষিত বাতাসও বের হয়ে যায়, যা একটা সুস্থ ফুসফুসের জন্য খুবই দরকারি। এর ফলে আমদের ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।


যদি কেউ নিয়মিত সিজদা করে তবে সিজদার সময় করা অঙ্গভঙ্গি ও শরীরের বিভিন্ন রকমের নাড়াচাড়ার কারণে তার অর্শ(hemorrhoid) বা পাইল্‌স(piles) এবং হার্নিয়া (hernia) হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।

আবার আমরা যখন সিজদা থেকে উঠে দাড়াই তখন শরীরের পুরো ওজন আমদের পায়ের উপর পড়ে এবং আমদের পা আর রানের পেশীতে চাপ পড়ে। তখন সে পেশীগুলু সক্রিয় হয়ে উঠে যা আমাদের নিন্মাঙ্গে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নামাজে রুখু সিজদা বসা আর উঠে দাঁড়ানোর সময় আমরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করি যার কারণে আমাদের মেরুদণ্ডে ও বিভিন্ন রকমের নাড়াচাড়া হয়, যা আমদের মেরুদণ্ডের বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

নামাজের এরকম হাজারো উপকারিতা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আমরা মুসলিমরা সালাত আদায় করি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আর তার প্রশংসা করবার জন্য। তাই আমাদের মুসলিমদের জন্য উপরে উল্লেখ করা উপকারগুল হল এক ধরনের সাইড ডিশ(side dishes)

বলতে পারেন ডেজার্ট(dessert), যা মূল খাবারের পরে সামান্য পরিমাণে খাওয়া হয়। একজন অমুসলিমকে নামাজের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য উপরোক্ত উপকারগুলুর কথা বলতে পারেন আপনি; তা হয়ত তাকে নামাজের দিকে আকৃষ্ট করবে, কিন্তু আমাদের মুসলিমদের জন্য প্রধান বা মূল খাবার অর্থাৎ নামাজের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর হুকুম পালনে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার সাথে তাঁর প্রিয় বান্দা ও তার রসূলের বিধান মেনে চলা।


 কেন দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায় করি আমরা?

সালাত হল সৎকাজের জন্য একধরনের প্রশিক্ষণ বা প্রোগ্রামিং। আর প্রশিক্ষণের মূল জিনিটিই হল কোন একটি কাজ বার বার করা বা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তা আয়ত্ত করা। তাই আমদেরকেও সালাত আদায় করতে হয় দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার। উদাহারন স্বরূপ বলা যেতে পারে, আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য অর্থাৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক কমপক্ষে তিন বেলা খাবার খেতে হয় আমাদের। একইভাবে আত্তাকে সুস্থ রাখবার জন্য দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়া দরকার আমাদের। এছাড়াও সমাজে যেহেতু পাপের ছড়াছড়ি তাই নামাজের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ না নিলে সিরাত-উল-মুস্তাকিম অর্থাৎ সৎপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। তাই দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক। 

 আল্লাহপাক আমাদের দেহের মধ্যে যেসব মূল্যবান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করেছেন তার শুকরানাস্বরূপ আমরা নামাজ পড়ব কেননা হাশরের দিন প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি প্রশ্ন করা হবে। কাজেই আমরা যে অনুভব শক্তি প্রাপ্ত হয়েছি তাতে সুখ-দুঃখ দুটি জিনিস অনুভব করতে পারি সেই জন্য ফজরের ২ রাকাত নামাজ। জিহ্বা দ্বারা মিষ্টি, টক, তিতা ও কটু এই ৪টা স্বাদ গ্রহণ করতে পারি এজন্য জিহ্বার শুকারানাস্বরূপ ৪ রাকাত নামাজ জোহর। নাসিকা দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস, সুগন্ধ ও দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারি এজন্য আসরের ৪ রাকাত নামাজ। চক্ষু দ্বারা ডান-বাম ও সামনে দেখি এজন্য মাগরিবের তিন রাকাত নামাজ। কর্ণ দ্বারা চারদিকের শব্দ শুনতে পাই এজন্য এশার ৪ রাকাত নামাজ। সুতরাং মূলকথা প্রত্যেক নামাজ প্রত্যেক অঙ্গের শুকরানাস্বরূপ। 

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চলনশীল দেহ প্রদান করেছেন। এজন্য তার স্বাস্থ্য দেহের চলার (অর্থাৎ ব্যায়াম ইত্যাদি) ওপর টিকে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে সচল রাখে। থেমে থেমে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। জামাতে নামাজ পড়া একই সঙ্গে উচ্চমানের ব্যায়াম হিসেবেও কাজ করে।


 ফজরের সময় : যখন রাত শেষ হয়ে আসে, তখন সূর্য উদয় হওয়ার আগে ফজরের নামাজ ফরজ করা হয়েছে। এ সময়ের নামাজ হালকা প্রকৃতির। সারারাত আরাম করার পর ওই সময় পাকস্থলীও খালি হয়ে যায়। এজন্য এ সময় হালকা ও সংক্ষিপ্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়। নামাজি এই চার রাকাত নামাজ পড়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে উপকৃত হয়। ফজর নামাজ পড়ে লোকেরা নিজ অবসাদগ্রস্ত দেহকে পুনরায় সক্রিয় ও চলমান করে। এরপর সারাদিন নিজ রিজিক ও জীবিকা অর্জন করার জন্য কাজকর্মে মনোযোগ দেয়ায় উদ্দীপনা ফিরে পায়। মস্তিষ্ক চিন্তা-ভাবনার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সুবেহ সাদিকের সতেজ প্রকৃতি এবং আলোতে মানুষ নামাজের জন্য বাইরে বের হয় এবং পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, এতে সতেজ পরিচ্ছন্ন প্রশান্ত পরিবেশ থেকে যে সূক্ষ্ম অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।


জোহরের সময় : দিন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ধুলা-ময়লা তার গায়ে লাগে। রোগ-জীবানু হাত-পায়ে লাগার আশঙ্কাও রয়েছে। কেননা মানুষ জীবাণুযুক্ত বায়ুর মধ্যে থাকে। তখন তার দেহের ওপর জীবাণু আক্রমণ করে। এছাড়াও দুপুর পর্যন্ত কাজ করতে করতে ক্লান্তিও অনুভূত হয়। এ কারণে একজন নামাজি জোহর নামাজের জন্য অজু করে স্বীয় হাত, মুখ, পা ইত্যাদি ধৌত করায় দেহমনে পরিচ্ছন্নতার কারণে প্রফুল্লতা আসে। এর ফলে রোগের কোনো আশঙ্কাও থাকে না।

 ক্লান্ত দেহে জোহরের নামাজ পড়ে আরাম ও প্রশান্তি অনুভব করে এবং পুনরায় উজ্জীবিত হয়, যার দ্বারা ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এসব উপকারিতা একজন নামাজির জোহরের নামাজের সময় অর্জিত হয়।

 আসরের সময় : জ্ঞানবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং বিজ্ঞ মাত্রেই জানেন, পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। এগুলো হলো : লম্ব ও বৃত্তীয়।

 যখন সূর্য ঢলতে থাকে, তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে, এমনকি আসরের সময় ঘূর্ণনের পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। এ কারণে মানুষের ওপর দিনের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে, প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় মানুষের সচেতন অনুভূতির ওপর অচেতন অনুভূতির প্রভাব শুরু হয়, যার দ্বারা মানুষ আরামদায়ক অনুভূতি লাভ করে।


মাগরিবের সময় : মানুষ সারাদিন শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায় এবং নিজ ও পরিবারের জন্য রুজি-কামাই করে আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া আদায় করে যে, সেই মহান সত্তা এগুলো অর্জন করার জন্য শক্তি প্রদান করেছেন। এটি আনন্দের মধ্যে হয়, যার দ্বারা অন্তর এক বিশেষ প্রকারের আনন্দ অনুভব করে। মাগরিবের সময় সে আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজিরা দিয়ে নিজ দাসত্বকে প্রকাশ করে, আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করে। মানুষের এই আকুতি তাকে নূরানী তরঙ্গমালায় আচ্ছাদিত করে এবং তার আত্মাকে প্রশান্তি প্রদান করে।


এশার সময় : মানুষ স্বভাবগতভাবে রাতে বাড়ি ফিরে সুস্বাদু খাবার খায়। যখন সে কাজকর্ম থেকে ঘরে ফিরে আসে, খানা খায় এবং স্বাদ ও লোভের কারণে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। যদি সে খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়ে, তাহলে সে ধ্বংসকারী রোগের শিকার হয়। মানুষ সারাদিনের ক্লান্তির পর খাবার খেয়ে তৎক্ষণাৎ শুয়ে পড়লে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শোয়ার আগে এবং অতিরিক্ত খানা খাওয়ার পরে কমবেশি ব্যায়াম করে নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এশার নামাজ সে ক্ষেত্রে আত্নিক চাহিদার পাশাপাশি দৈহিক চাহিদা অর্থাৎ ব্যায়ামের কাজটিও করে।যেমন হাদিসে রসুল সাঃ থেকে আমরাআরও জানতে পারি সুস্বাস্হের জন্য রাত্রে খানা খাওয়ার পর কম পক্ষে ৪০ কদম পথ চলার কথা।


 ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকলে আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, একটা লোক নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে পারেনা। একটা লোক যদি সকাল ৯টায় অফিসে এসে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে থাকে, তবে তার কর্ম উৎপাদনশীলতা বাড়ার পরিবর্তে কমে যেতে পারে উল্টো। আর একারণেই অফিসের কাজের ফাকে ফাকে সংক্ষিপ্ত বিরতির ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে করে নিজেদের চাঙ্গা করে নিতে পারি আমরা। একইভাবে নামাজও আমাদের চাঙ্গা করে আমাদের কর্ম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।


 এটা আমদের শরীর ও মনকে সতেজ করে তুলে। একজন মুসলমানের জন্য নামাজ হল একপ্রকারের বিনোদন। এখন কেউ যদি বলে যে কাজের ফাকে ১৫ মিনিট একটা লাঞ্চ ব্রেক নিলে সময়ের অপচয় হয়, উৎপাদনশীলতা কমে যায় তবে সেটা হবে অযৌক্তিক। একইভাবে কেউ যদি কাজের ফাকে নামাজটা আদায় করে নেয় নিয়মিত, তবে তার হয়ত অল্প কিছুক্ষণের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হতে পারে, কিন্তু নামাজ আদায় করে সে যখন চাঙ্গা মন নিয়ে ফিরবে আবার কাজে, তখন মোট উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে তার। তাই একজন যৌক্তিক ও আধুনিক মানুষের এটা মেনে নেওয়া উচিত যে অফিসে কাজের ফাকে ফাকে প্রয়োজনীয় বিরতির ব্যবস্থা রাখা দরকার যাতে করে কর্মীরা চাঙ্গা করে নিতে পারে নিজেদের, আর একজন মুসলমানের জন্য নামাজ হল নিজেকে সতেজ ও চাঙ্গা করে তুলবার সর্বোত্তম মাধ্যম।

  কিছু রোগের জন্য নামাজ ছাড়া প্রেসক্রিপশান নাই
 নামাজ হার্ট এ্যাটাক,প্যারালাইসিস,ডায়াবেটিস,মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত,নামাজ মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না। অন্যসব ধর্মের মধ্যে এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই। নামাজীর জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব মানবের সকল অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং সামগ্রিক মানব অঙ্গগুলোতে নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য অটুট থাকে। 

তুরস্কের ডাক্তার হুলুক নূর বাকী নামাজের আত্মিক দিকের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তিনিও এর দৈহিক উপকারিতার দিকে দৃষ্টি দেননি। এভাবে তিনি লিখেছেন—It today even materialist acknowledge that there can be no prescription other than prayer for the relief of joints.‘আজ বস্তুবাদীরাও স্বীকার করে যে, জোড়ার ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য আজ নামাজ ব্যতিত আর কোনো ব্যবস্থাপত্র নেই।

ক্যামিস্ট্রির ব্যবস্থাপত্র :নামাজের ব্যায়াম যেমন বাইরের অঙ্গ সুনিপুণ সৌন্দর্য ও বৃদ্ধির মাধ্যম, এটা তেমনি ভেতরের অঙ্গগুলো যেমন-হূদয়, প্লীহা, জঠর, ফুসফুস, মগজ, অন্ত্র, পাকস্থলী, মেরুদন্ডের হাড়, ঘাড়, বুক এবং দেহের সকল গ্লান্ড ইত্যাদি সুদৃঢ় করে ও উন্নত করে এবং দেহের সিডিউল এবং সৌন্দর্য রক্ষা করে। নামাজের প্রচলন যদি হতো তাহলে :কিছু রোগ এরূপও আছে যেগুলো থেকে নামাজ চালু করার দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়, কেননা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দেহে এসব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।


এর ধারাবাহিকতায় ডাক্তার হাসান গজনবীর এ বাক্যগুলো চিন্তার খোরাক জোগায়। তিনি লেখেন :“In addition to saving us from the sins and elevating us to the hights of spirituality prayers are great help in maintaining our physical health. The keep our body active, help digestion and save us from nuscase and joint diseaes through regular balanced exercise. They help the circulation of blood and also the bad effect of cholesterol. Prayers a vital role in acting as preventive measure against heart attack, Paralyes. diabetes mellitus etc. Hearts patients should offer the five obligatory prayers regularly as they get the permission from their doctor to leave bad. (Islamic Medicine. P. 68).”

(উপরের চিত্রটি দেখুন নিয়মিত নামাজ আদায়কারীর আথ্রাইটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে)আমাদেরকে পাপ থেকে রক্ষা করা এবং আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করানোর সাথে সালাত আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ধরনের সাহায্য করে। এটি আমাদের দেহকে সক্রিয় রাখে, হজমে সাহায্য করে, আমাদেরকে জড়তা ও জোড়ার রোগ থেকে নিয়মিত সুষম ব্যায়ামের দ্বারা রক্ষা করে। এটি রক্ত পরিসঞ্চালনে এবং কলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, যেমনিভাবে তারা তাদের ডাক্তারদের নিকট খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনুমতি লাভ করে থাকেন’ (প্রাগুক্ত)


পশ্চিমারা আজ হরেক রকমের ব্যায়াম করছেন যাতে তাদের দেহের কলেস্টেরল গড়মাত্রা সীমাতিক্রম না করে। এছাড়াও এদের দেহ সব প্রভাবশীল পন্থায় কাজ করে। তারা এ সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ইসলামী নামাজ যা কোনোরূপ ব্যায়াম নয় অথচ তা নানারূপ ব্যায়ামের রূপ পরিগ্রহ করে। তা স্বাস্থ্যসম্মতও বটে।

যেমন জার্মানের প্রসিদ্ধ পত্রিকা ডি হায়েফ’-এ প্রসিদ্ধ জার্মান মান্যবর ও প্রাচ্যবিদ জাওয়াকীম ডি জুলফ এ সত্যকে প্রকাশ করেছেন তার জবানীতে। তিনি লিখেছেন: যদি ইউরোপে ইসলামী নামাজের প্রচলন হতো তাহলে আমাদের দৈহিক ব্যায়ামের জন্য নতুন নতুন ব্যায়াম ও নড়াচড়া আবিষ্কার করার প্রয়োজন হতো না (আল মাসালিহুল আমলিয়াহ লিল আহকামিশ শরইয়াহ পৃ. ৪০৬)।



নামাজ সর্বোত্তম পর্যায়ের চিকিত্সা :এক পাকিস্তানি ডাক্তার মাজেদ জামান উসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য গিয়েছেন। যখন সেখানে সম্পূর্ণ নামাজের ব্যায়াম পড়ালেন এবং বুঝালেন তখন তিনি এ ব্যায়াম দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন যে, আমরা এতদিন পর্যন্ত নামাজকে এক ধর্মীয় আবশ্যক বলেই জানতাম এবং পড়তে থাকতাম, অথচ এখানে তো আশ্চর্য ও অজানা জিনিসের আবিষ্কার হয় যে, নামাজের মাধ্যমে বড় বড় রোগ নিরাময় হয়ে যায়।

 ডাক্তার সাহেব তাকে একটি তালিকা প্রদান করেন যা নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিরাময় হয়১. মানসিক রোগ (Mental Diseases) ২. স্নায়ুবিক রোগ (Nerve Diseases) ৩. মনস্তত্ত্ব রোগ (Psychic Diseases) ৪. অস্থিরতা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা রোগ (Restlessness, Depression and Anxiety) ৫. হার্টের রোগ (Heart Diseases) ৬. জোড়ার রোগ (Arthritis) ৭. ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ (Diseases due to Uric Acid) ৮. পাকস্থলীর আলসার (Stomach Ulcer) ৯. চিনি রোগ (Diabetes Mellitus) ১০. চোখ এবং গলা ইত্যাদির রোগ (Eye and E.N.T. Dieases).


মনস্তাত্তিক রোগ নামাজের মধ্যে মনস্তাত্তিক রোগ যেমন- গুনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদিরও চিকিত্সা রয়েছে। যার বর্ণনা পুস্তকের কলেবর দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে বাদ দিতে হচ্ছে। যা হাদীসে রসুল অধ্যয়ন করলে আমরা জানতে পারবো। তবে এখানে একটা কথা না বললে  নয় তাহল উপরোক্ত বৈজ্ঞানীক উপকারীতা গুলো আমরা সকলেই উপভোগ করতে পারবো যদিনা আমরা রসুল সাঃ এর পূর্নাঙ্গ বাতানো তরীকা মোতাবেক নামজ আদায় করি ।কিন্তু নামাজের রুকু সেজদাহ গুলো যথাযথ সুন্নত মোতাবেকই আদায় করতে হবে ছেলে খেলা বা মুরগীর ঠোকরের ন্যায় তাড়াহুড়ো করে ধায় সাড়া নামাজ আদায় করলে হবেনা


একই সঙ্গে নামাজ দ্বারা পূর্বোক্ত উপকারিতা ছাড়াও দৈহিক ও মেধাগত উপকারিতাও হয়। আজ ইসলামি ইবাদতের বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলো সামনে আসছেনামাজের প্রত্যেকটি রুকন কোনো না কোনো চিকিত্সাগত ও মনস্তাত্তিক উপকারের বাহক।

ব্যায়াম ও নামাজ :- নামাজের রুকনগুলো এককভাবে ব্যাখ্যা করলে তার আলোকে দেখা যায় নামাজের প্রত্যেক রুকন আদায়ের মধ্যেই বিশেষ অঙ্গ ও জোড়ার আন্দোলন সৃষ্টি হয় এবং বিশেষ অঙ্গগুলোর ব্যায়াম হয়। শরীরতত্ত বিদ্যার (Physiology) একটি মূলনীতি এই যে, যখন মানুষ নড়াচড়ার ইচ্ছে করে তখন সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের কেন্দ্র থেকে নড়াচড়া স্নায়ুর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায় এবং অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে উদ্দিষ্ট কাজ করে থাকে এবং যখন নামাজ আদায়ের শুরুতে বারবার নামাজের রুকনগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন এ আকার একটি ব্যায়ামের প্রকৃতি গ্রহণ করে যার দ্বারা অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এভাবে নামাজের সব রুকন আদায়ের মাধ্যমে মানবের সব অঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। যার দ্বারা মানব দেহের সতেজতা ও শক্তি বহাল থাকে এবং দৈহিক কার্যাবলি প্রাকৃতিক মাপকাঠির ওপর চলতে থাকে। সামগ্রিক ইবাদত নামাজ একটি উত্তম ইসলামি ব্যায়াম, যা মানুষকে সর্বদা সতেজ রাখে। অলসতা ও অবসাদকে দেহের মধ্যে বাড়তে দেয় না কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে এমন কোনো সামগ্রিক ইবাদত নেই যা আদায়ের মাধ্যমে মানুষের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বৈশিষ্ট্য শুধু নামাজের মধ্যেই রয়েছে যে এটা সমগ্র ইসলামের সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব সমগ্র মানব অঙ্গের ওপর সমভাবে পড়ে এবং দেহের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে (ইসলামি স্বাস্থ্য বিধি, পৃ-৩৬)।


কঠিন বস্তু সচল করা :- নামাজ আত্মা ও দেহ উভয়ের জন্য ব্যায়াম-এ জন্য এর মধ্যে দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সিজদা এগুলোর বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া হয়ে থাকে এবং নামাজী এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে। নামাজে দেহের অধিকাংশ জোড়া নড়াচড়া করতে থাকে এবং এর সাথে বেশির ভাগ অদৃশ্য অঙ্গগুলো পাকস্থলী, অন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র, এবং খাদ্যের অঙ্গগুলো এসবের গঠনে নড়াচড়া এবং পরিবর্তন আসে। অত:পর এ অবস্থায় কোনো কথা নিষেধকারী যে এ সব নড়াচড়ার দ্বারা কিছু অঙ্গ শক্তি অর্জন করবে এবং অপ্রয়োজনীয় আবশ্যিক জিনিসগুলো সচল না হবে? (তিব্বে নববী, পৃ.-৩৯৯)।সুতরাং কোরআনের সাথে বিজ্ঞানের কোন সংঘর্ষ নেই বরং বিজ্ঞানের কারণে আজকাল সাধারন লোকের সাথে সাথে অমুসলিমরাও  ইসলামকে বুঝার চেষ্টা করছে।যদিও কোরআন কে বুঝার জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই।