যে কারনে মানুষ" আশরাফুল মাখলুকাত "
বাস্তবতার নিরীখে এর প্রমান কি? ধারাবাহীক ভাবে এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর :
বাস্তবতার নিরীখে এর প্রমান কি? ধারাবাহীক ভাবে এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর :
(১) اعتدال (
ভারসাম্য ) -এর শাব্দিক অর্থ সমান হওয়া ৷عدل মূল ধাতু থেকে এর উৎপত্তি ,
আর عدل এর
অর্থও সমান
হওয়া ৷
( ২) যে গুরুত্বের কারনে
ভারসাম্যকে সন্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি সাব্যস্ত করা হয়েছে তা একটু ব্যাখ্যাসাপেক্ষ
৷
বিষয়টি প্রথমে একটি স্হূল উদাহরণ দ্বারা বুঝুন ৷ ইউনানী ,আয়ুর্বেদিক ,এ্যালোপ্যাথিক ,হোমিওপ্যাথিক ইত্যাদি যত নতুন ও পুরাতন চিকিৎসা পদ্বতি পৃথিবীতে প্রচলিত রয়েছে ,সে সবই এ বিষয়ে একমত যে, মেযাজে,র বা স্বভাবের ভারসাম্যের উপরই মানবদেহের সুস্হতা নির্ভরশীল ৷ভারসাম্যের ক্রটিই মানবদেহে রোগ-বিকার সৃষ্টি করে৷বিশেষত: ইউনানী চিকিৎসা পদ্বতির মূলনিতীই মেযাজ পরিচয়ের উপর নির্ভরশীল ৷এ শাস্ত্র মতে মানবদেহে চারটি উপাদান-রক্ত, শ্লেষ্মা ,অম্লও পিত্ত দ্বারা গঠিত ৷এ চারিটি উপাদানের ভারসাম্যই মানবদেহের প্রকৃত সুস্হতা নিশ্চিত করে৷পক্ষান্তরে যে কোন একটি উপাদান মেযাজের চাহিদা থেকে বেড়ে বা কমে গেলেই তা হবে রোগ ব্যাধি।চিকিৎসা দ্বারা এর প্রতিকার না করলে এক পর্যায়ে মৃত্যুর কারন হবে ৷
বিষয়টি প্রথমে একটি স্হূল উদাহরণ দ্বারা বুঝুন ৷ ইউনানী ,আয়ুর্বেদিক ,এ্যালোপ্যাথিক ,হোমিওপ্যাথিক ইত্যাদি যত নতুন ও পুরাতন চিকিৎসা পদ্বতি পৃথিবীতে প্রচলিত রয়েছে ,সে সবই এ বিষয়ে একমত যে, মেযাজে,র বা স্বভাবের ভারসাম্যের উপরই মানবদেহের সুস্হতা নির্ভরশীল ৷ভারসাম্যের ক্রটিই মানবদেহে রোগ-বিকার সৃষ্টি করে৷বিশেষত: ইউনানী চিকিৎসা পদ্বতির মূলনিতীই মেযাজ পরিচয়ের উপর নির্ভরশীল ৷এ শাস্ত্র মতে মানবদেহে চারটি উপাদান-রক্ত, শ্লেষ্মা ,অম্লও পিত্ত দ্বারা গঠিত ৷এ চারিটি উপাদানের ভারসাম্যই মানবদেহের প্রকৃত সুস্হতা নিশ্চিত করে৷পক্ষান্তরে যে কোন একটি উপাদান মেযাজের চাহিদা থেকে বেড়ে বা কমে গেলেই তা হবে রোগ ব্যাধি।চিকিৎসা দ্বারা এর প্রতিকার না করলে এক পর্যায়ে মৃত্যুর কারন হবে ৷
এই স্হূল উদাহরনের পর এখন আধ্যাত্বিকতার দিকে আসুন।আধ্যাত্বিকতায়
ভারসাম্যের নাম আত্নিক সুস্হতা এবং ভারসাম্যহিনতার নাম আত্নিক ও চারিত্রিক
অসুস্হতা৷এ অসুস্হতার চিকিৎসা করে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা না হলে পরিণামে
আত্নিক মৃত্যু ঘটে৷চক্ষুমান ব্যক্তি মাত্রই জানে যে,যে উৎকৃষ্টতার কারণে মানুষ সমগ্র
সূষ্টিজীবের সেরা,তা তার দেহ বা দেহের উপাদান অথবা সেগুলোর আবস্হা,তাপ শৈত্য নয়৷
কারন,এসব উপাদান ও আবস্হার ক্ষেত্রে দুনিয়ার অন্যান্য জীব-জন্তুও মানুষের
সমপর্যায়ভূক্ত,বরং তাদের মধ্যে ক্ষেত্র বিশেষে এসব উপাদান মানুষের চাইতেও বেশী
থাকে৷
যে বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ ' আশরাফুল-মাখলুকাত '
তথা
সৃষ্টির সেরা বলে গন্য হয়েছে , তা নিশ্চতই তার রক্ত-মাংস চর্ম এবং তাপ-শৈত্যের
উধের্ব অন্য কোন বিষয় যা মানুষের মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যমান-অন্যান্য সৃষ্টজীবের
মধ্যে ততটুকু নেই৷এ বস্তুটি নির্দিষ্ট ও চিহ্নিত করাও কোন সুক্ষ ও কঠিন কাজ নয়।বলাবাহুল্য
,তা হচ্ছে মানুষের আত্নিক ও চারিত্রিক পরাকাষ্ঠা বা পরিপূর্ণতা।
আত্নিক
ও চারিত্রিক পরাকাষ্ঠাই যখন মানুষের সন্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি,মানবদেহের মত
মানবাত্নাও যখন ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতার শিকার হয় এবং মানবদেহের সুস্হতা যখন
মেযাজ ও উপাদানের ভারসাম্য আর মানবাত্নার সুস্হতা যখন আত্না ও চরিত্রের ভারসাম্য,তখন কামেল মানব একমাত্র তিনিই হতে পারেন,যিনি দৈহিক ভারসাম্যের সাথে সাথে
আত্নিক ও চারিত্রিক ভারসাম্যেরও অধিকারী হবেন।এ উভয়বিধ ভারসাম্য সমস্ত পয়গম্বরকে
বিশেষভাবে দান করা হয়ছিল এবং আমাদের রসুল সাঃ তা সর্বাধিক পরিমানে প্রাপ্ত
হয়েছিলেন ।এ কারনে তিনি সর্বপ্রধান কামেল মানব।
আলোচ্য
আয়াতে পয়গম্বর প্রেরণ ও গ্রন্থ অবতরণের রহস্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়ছে যে,এগুলোর
মাধ্যমে মানুষের মধ্যে চারিত্রিক ভারসাম্য সৃষ্টি করা হবে এবং লেন-দেন ওপারস্পারিক
আদান-প্রদানে বৈষয়িক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানদন্ড নাযিল করা হয়েছে ।
মানদন্ড
অর্থ প্রত্যেক পয়গম্বরের শরীয়ত হতে পারে।শরীয়ত দ্বারা সত্যিকার ভারসাম্য জানা যায়
এবং ইনসাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়৷উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে,মানবমন্ডলীকে
আত্নিক ও চারিত্রিক ভারসাম্যের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করাই পরগম্বর ও আসমানী গ্রন্থ
প্রেরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য ।বলাবাহুল্য,এটাই মানব মন্ডীলর সুস্হতা ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেই
সর্বপ্রকার ভারসাম্য নিহিত:মুসলিম সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা
হয়েছে :
وكذالك جعلناكم امة وسطا অর্থাৎআমি তোমাদেরকে ভারসাম্য সম্প্রদায় করেছি
।উপরোক্ত বর্ণনা থেকেই অনুমান করা যায় যে, وسطا শব্দটি
উচ্চারণ ও লেখায় একটি সাধারণ শব্দ হলেও তাৎপর্যের দিক দিয়ে কোন সম্প্রদায় অথবা
ব্যক্তির মধ্যে যত পরাকাষ্ঠা থাকা সম্বভ,সে সবগুলোকে পরিব্যপ্ত করেছে।
আয়াতে
মুসলিম সম্প্রদায়কে মধ্যপন্থী,ভারসাম্যপূর্ণ সম্প্রদায় বলে অবিহিত করে বলা হয়েছে
যে,মানবীয় মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তাদের মধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে বিদ্যমান ।যে উদ্দেশ্য
সাধনের লক্ষে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের যাবতীয় কর্মধারা অব্যাহত রয়েছে এবং পয়গম্বর ও
আসমানী গ্রন্থসমূহ প্রেরিত হয়েছে,তাতে এ সম্প্রদায় থেকে স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী ও
শ্রেষ্ঠ।
কোরআন
বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের এ শ্রষ্ঠত্বের কথা বর্ণনা
করেছে।সূরা আরাফের শেষভাগে এ সম্প্রদায় সমপর্কে বলা হয়েছে:وممن خلقنا امة يهدون
بالحق وبه يعدلون অর্থাৎ
আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় রয়েছে,যারা সৎপথ প্রদর্শন
করে এবংতদনুযায়ী ন্যায়বিচার করে।
এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের আত্বিক ও চারিত্রিক ভারসাম্য
বিধৃত হয়েছে যে,তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ ও কামনা-বাসনা বিসর্জন দিয়ে আসমানী
গ্রন্থের নির্দেশ অনুযায়ী নিজেরাও চলে এবং অন্যদেরকেও চালাবার চেষ্টা করে।কোন
ব্যাপারে কলহবিবাদ সৃষ্টি হলে তার মিমাংসাও তারা গ্রন্থের সাহায্যেই করে,যাতে কোন
ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের স্বার্থপরতার কোন আশংকা নেই।
সূরা আল-ইমরানে মুসলিম সম্প্রদায়ের আত্বিক ভারসাম্য
এভাবে বর্ণিত হয়েছে :
كنتم خير امة اخرجت
للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله অর্থাৎ তোমরাই সে শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির
কল্যাণের জন্য যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে,মন্দকাজে নিষেধ
করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান রাখবে।
অর্থাৎ মুসলমানরা যেমন সব পয়গম্বরের শ্রেষ্ঠতম
পয়গম্বর প্রাপ্ত হয়েছে,সব গ্রন্থের সর্বাধিক পরিব্যপ্ত ও পূর্ণতর গ্রন্থ লাভ
করেছে,তেমনি সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে সুস্হ মেজায এবং ভারসাম্যও সর্বাধিক পরিমাণে
প্রাপ্ত হয়েছে। ফলে তারাই সকল সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায় সাব্যস্ত হয়ছে।তাদের
সামনে জ্ঞানবিজ্ঞান ওতত্ব-রহস্যের দ্বার উন্মুক্ত করা