বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

পানের অপকারীতা ও বৈঞ্জানীক গবেষনা:-

পানের অপকারীতা  বৈঞ্জানীক গবেষনা:-

পানের সাথে তিল তিল করে  যে বিষ পাণ করা হচ্ছে সেটা আমরা কয়জনেইবা জানি!তাহলে আসুন জেনে নেই কি করে বা কি ভাবে আমরা পানের সাথে বিষ পাণ করি একটি সিগারেটের সাথে যেমন নিকেটিন দেওয়া থাকে আর পানের সাথেও তেমন আমরা নিকেটিন মিশিয়ে বিষ পাণ করি অর্থাৎ বিড়ি-সিগারেটের তামাক পুড়িয়ে পাণ করি আর পানের তামাক চিবিয়ে পুরো রসটাই পাণ করি।এ যেন ঠান্ডা মাথায় দেখে শুনে নিজের গলায় নিজে রশি দিয়ে ফাঁস দেওয়ার মত আবস্হা  নিকোটিন হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ। যদি আপনি ধূমপান করেনতবে মাত্র ৬ সেকেন্ডের মধ্যে তা আপনার মস্তিষ্কে পৌঁছে যাবেযা হেরোইনের চেয়ে দ্বিগুণ দ্রুত কাজ করে।আর পানের সাথে 3মিনিটেই মস্তিসকে পৌঁছে যা্য়। যদিও পান আমাদের তেমন উপকারী খাদ্য না হলেও কিন্তু পান আমাদেরকে তিল তিল করে যে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।যা আজকাল বিভিন্ন গবেষনায় ফুটে উঠছে।সুপারী ও জর্দার সংমিশ্রনের পান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় :-এখন পান সুপারী তামাক ও জর্দার মিশ্রনের বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আলোচনা করব। এর আগে জেনে নেয়া যাক পান খাওয়র প্রকারবেদ ১. খালি পান কোন কিছুর সংমিশ্রন ব্যতিরেকে  2. পান আদা লবঙ্গ এলাচির ইত্যাদি মসল্লার সংমিশ্রন 3. পান চুন সুপারীর সংমিশ্রন  4 পান চুন সুপারী তামাক জর্দার সংমিশ্রন ১ম ও দ্বিতীয় স্বাস্হ্যের জন্য উপকারী ৩য় প্রকার সামান্য ক্ষতিকর হলেও ৪র্থ প্রকার মারা্ত্বক ক্ষতি এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বহন করে। আর এই পর্যন্ত যে সকল বৈজ্ঞানীক গবেষনা হয়েছে মূলত ৩য় ও ৪র্থ প্রকার নিয়েই তাহলে আসুন এবার আমরা ঐ সকল গবেষনায় কি বেরিয়ে আসছে জানার চেষ্টা করব।
(ক) আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সী'র মতে সুপারি ও পান ক্যান্সারজনক পদার্থ (কার্সিনোজেন) যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সুপারিসহ পান খেলে মুখ গহ্বরের ক্যান্সার হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছেসুপারি দিয়ে পান খেলে মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৯.৯ গুন (জর্দা সহ) এবং ৮.৪ গুন ( জর্দা ছাড়া)


(খ)২০০৪ সালেবিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার করা গবেষনা অনুযায়ী এশিয়ার দেশগুলোতে মুখগহবরের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশী। আক্রান্ত রোগীদের ইতিহাস নিয়ে দেখা গিয়েছে যে তাদের একটা বড় অংশ পান পাতা চিবানোতে অভ্যস্ত।
(গ) পানের সঙ্গে চুনার মিশ্রন :-ক্যান্সারের সঙ্গে চুনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছিলো অবশ্য অনেক আগেই-সেই ১৯৯২ সালেপাপুয়া নিউগিনিতে করা একটি গবেষনায়। পরবর্তীতে ২০০২ এবং ২০০৮ সালে করা দুটো পৃথক গবেষনায় প্রমাণিত হয় যে শুধুমাত্র জর্দা ও সুপারীও ক্যান্সার তৈরীতে সরাসরি অবদান রাখে  মোটামোটি সাম্প্রতিক২০০৯ সালে তাইওয়ানে করা একটি গবেষনায় প্রমাণ হয় যে শুধু ক্যন্সার নয়হৃদরোগের সঙ্গেও আছে পান সুপরী  চিবানোর সরাসরি সংযোগ।


(ঘ) ২০১০ সালে বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়ে প্রমাণিত হয় যেপান খাওয়া লোকদের ক্যান্সার হওয়া শুধু মুখগহবরেই সীমাবদ্ধ নেইপান এমনকি গলবিলশ্বাসনালীযকৃৎঅগ্নাশয় ও ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার পিছনেও ভূমিকা রাখে। পান কিভাবে ক্যান্সার ঘটায় তা নিয়ে নানা মত আছে। কেউ বলেন পানে থাকা ট্যানিন ইএর জন্য দায়ীযদিও কি উপায়ে তা এখনো অজানা। আরেকদলের মতেপানের উপাদান সরাসরি কোষের ডিএনএর উপরে কাজ করে ক্যান্সার তৈরীতে ভূমিকা রাখে।আবার কেউ বলেনপানে থাকা চুন মুখের অভ্যন্তর কে ক্ষারীয় করে ফ্রি র্যাডিকেল তৈরীতে সহায়তা করে যা ক্যান্সার কোষ সৃষ্টির জন্য দায়ী।


(ঙ) অন্তত প্রায় ১০ বছর ধরে যাদের নিয়মিত ভাবে সুপারী চিবানোর অভ্যাস আছে তাদের চেহারাতেও আসে পরিবর্তন। গালের চর্বি ঝরে মুখ লম্বাটে হয় যায়ফিবরোসিস তৈরী উচ্চারনেও পরিবর্তন আসে। চেহারার এই ধরণের পরিবর্তনকে বলা হয় গুটকা সিন্ড্রোম(বাস্তবে আমি তা অনেককে দেখেছি যে পান খাওয়ার কারনে মুখ শক্ত হয় যাওয়ায় কথা বলতেও সমস্যা হয়েছে।পরক্ষনে মুখ ও জিহবা ভাল করে পরিস্কার করেই সরিষার তৈল মেখেই ভারী মুখ হালকা করেছেন)   পানের সঙ্গে বেশি খয়ের খেলে ফুসফুসে ইনফেকশান হয়। পানে বেশিমাত্রায় চুন খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। যাদের জ্বর এবং দাঁতের সমস্যায় ভোগেন তাদের পান খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত।তেমনি ভাবে হাঁপানী রুগিদেরও।  তাই শিশুরা এবং অন্তঃস্বত্ত্ব মহিলাদের পান খাওয়াও উচিত নয়। তবে যারা মাঝে মধ্যে  পান খেতে অভ্যস্হ তাদের বেলায় এমন মারাত্বক ক্ষতি ভয়ে আনবেনা আশা করা যায়।


(চ) অনেকে পানের সাথে পচা বা মজে যাওয়া সুপারি খেয়ে থাকেনযার গন্ধ প্রায়ই মানব বিষ্ঠার চেয়েও বেশি খারাপ। পান খাওয়া ব্যক্তি নিয়মিত এই দুর্গন্ধ-যুক্ত সামগ্রী খেয়ে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে হয়তো গন্ধ উপলব্ধি করতে পারে না। কিন্তু যারা পান খায় নাতারা টের পায় যে গন্ধটি কতো জঘন্য।  রাসূল (সা.) বলেছেন যে, “তোমাদের মধ্যে কেউ যেনো দুর্গন্ধ যুক্ত সামগ্রী (যেমন: কাঁচা পিয়াজকাঁচা রসুন) খেয়ে মসজিদে প্রবেশ না করেযতক্ষণ পর্যন্ত সে দুর্গন্ধ মুক্ত না হয়। কিছু নামাযী  আছেন যারা তামাকদ্রব্য দিয়ে পান খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করার পর তাদের পাশে কেউ নামাজে দাঁড়ালে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় যে গন্ধ বের হয়তাতে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির নি:শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তেমনি ভাবে ধূমপায়ীদের মুখের দুর্গন্ধের ও একই দশা। এই জন্য নিতান্ত এমন অভ্যাস থাকলেও মসজিদে প্রবেশের পূর্বে বা জনসমাগম হয় এমন মজলিশে গমন পূর্বে আবশ্যই ব্রাশ বা মেসওয়াক দিয়ে দাঁত মুখ পরিস্কার করেই প্রবেশ করা অপরিহার্য। মুখের দূর্গন্ধ ঘামের দূর্গন্ধ তেমনি পাঁয়ের মুজার দূর্গন্ধ এগুলো অনেক বিরক্তি কর  আমার আপনার এমন কোন  কৃতকর্মের দ্বারা যেন কোন মুসলিম কষ্ট না পায় সে দিকে স্বজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। রসুল সাঃ বলেন প্রকৃত মুসলিম ঐ ব্যক্তিযার হাত ও মুখ  হইতে অপর ব্যক্তি নিরাপদ থাকে।
(ছ)  চা বাগানে কিছু পোকা আছেযেগুলো বিষ প্রয়োগেও মরে নাসেগুলো তামাকের পাতা ভিজানো পানি দিয়ে নিধন করতে হয়। তাহলে সহজেই বুঝা যায় এ ক্ষেত্রে বিষের চেয়ে অধিক শক্তিশালি বিষাক্ত দ্রব্য হলো তামাক পাতা। সেই তামাক পাতাই আমাদের অনেকে গুল হিসাবে সরাসরি ব্যবহার করে আবার জর্দা হিসেবে পানের সাথে খেয়ে থাকে। যারা পানের সঙ্গে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণ করেনতাদের সাধারণের চেয়ে ৫ গুণ বেশি মুখে ক্যান্সার হওয়ার আশংকা থাকে। জর্দা বিষাক্ততাই এতে যতোই সুগন্ধি মেশানোই হোকনা কেনো তা জীবনের সৌরভ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে।


(জ)  যখন আমরা কেউ পান খাওয়া শুরু করি তখন আগে একটু পান সুপারি আর একটু চূর্ন পরে আস্তে আস্তে এটা অভ্যাস হয়ে যায় তখন একটু করে জর্দ্দা নেওয়া শুরু করি  আর তা আস্তে আস্তে নেশায় পরিনত হতে শুরু করে তখন আর জর্দা তামাক ছাড়া পান ভাল লাগেনা কিন্তু এমনিতেই পানের উপকার আছে কিন্তু সেই উপকারী বস্তুটার সঙ্গে তামাকসাদা পাতা,পাতি জর্দা,নুরানী জর্দা,হাকীমপুরী জর্দা সহ আরও কত কি মিশ্রন করা হয়।এতে করে ঐ পানটা এক প্রকার বিষে পরিনত হয়।
তাহলে কি দাড়ালো একটু লক্ষ্য করে দেখুন আপনি পান খাওয়ার পরে আপনার জিব্বাহ এবং আপনার গোলাপী রংএর ঠোট দুটো কতটা লাল হয়েছে এটা শুধু চুন সুপারি আর পান খেলে এ অবস্থা আর তার সাথে যদি একটু জর্দা মিলিয়ে নেন তাহলে দেখবেন জিব্বাহ এবং গোলাপী রং এর ঠোট দুটো কত তা কালো হয়েছে তা একবার আয়নাতে পান খাওয়ার পর দেখলে বুঝতে পারবেনতামাক আর জর্দা দিয়ে পান খাওয়ার পর কি আবস্হা হয়।  



 পানের উপর বিভিন্ন গবেষনার ফলাফল পাঠকদের উদ্দ্যেশে সংক্ষিপ্ত আকারে যা তুলে ধরা হয়েছে এতে প্রতিয়মান হয় যেধূমপানকে আজকাল বিশেষজ্ঞ ওলামাগন যে কারনে হারাম হিসাবে ফতোয়া দিচ্ছেন প্রায় ঐ রকম স্বাস্হ ঝূঁকি তথা ক্যান্সার এর ঝূঁকি  জর্দা তামাক জাতীয় দ্রব্যের সংমিশ্রনে পান খাওয়ার মধ্যেও রয়েছে,এই জন্য অনেক বিশেষজ্ঞ গবেষক ওলামায়ে কেরাম জর্দা ও তামাক মিশ্রিত পান খাওয়াকেও হারাম বলেছেন। তাই এই নিয়ে  ওলামাদের এই নিয়ে আরও গবেষনার দাবী রাখে।যাতে করে জাতী হারাম-হালালকে পার্থক্য করে চলতে পারে।কারণ ধূমপানে তামাককে পুডিয়ে ধোঁয়াটাই নিচ্ছে আর পানের মাধ্যমে সরাসরি সেই তামককেই চিবানো হচ্ছে। পানের অনেক ভাল দিক আছে। কিন্তু খারাপ দিকগুলো ভালো দিকগুলোকে ছাপিয়ে যায়। পান খাওয়ার পরপরই একটু তারতম্য হলে মাথা ঘোরাঘাম ইত্যাদি বের হতে পারে। অনেক সময় হাঁপানিরক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এমনকি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। হাঁপানী রুগিদের পান সুপারী একেবারেই অনুচিত। দীর্ঘদিনের অভ্যাসে দাঁত ও মাড়িতে বিশ্রী দাগ পড়ে। সাময়িকভাবে জিহ্বা পুরু হয়। ক্ষুধামন্দা হয়। জর্দার নিকোটিন নেশার উদ্রেক করে। এখানে সেখানে পানের পিক ফেলার কারণে পরিবেশ নোংরা হয়। ফলে পরিবেশ দূষিত হয়। সবকিছু ছাপিয়ে যে ব্যাপারটি আমাদের জন্য আতঙ্কের তা হলোপান-সুপারি জর্দা ইত্যাদি মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার রিসার্চ এজেন্সি পান-সুপারিকে মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে মনে করে।যা উপরে আলোকপাত করা হয়েছে। নিয়মিত পান খেলে মুখেজিহ্বায়গ্রাসনালিতে এবং পাকস্থলীতে ক্যান্সার হতে পারে। এই উপমহাদেশে মুখের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ পান-সুপারি ওজর্দা। অতএব খারাপ দিকগুলো বিবেচনা করে তামাকদ্রব্য মিশ্রিত পান ও ধূমপানের  অভ্যাস পরিত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।আর যে সকল কারনে ধূমপানকে মাকরুহে তাহরিমী বা হারাম বিবেচনা করা হয় তেমনি তামাকও জর্দা মিশ্রত পান খেলেও ঠিক একই ধরনের সমস্যা তথা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় সেহেতু এটাও তেমনি হারাম। আল্লাহ আমাদের সহায় হউক আমিন।
ওয়া-ছাল্লাল্লাহ আলা সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদ ওয়া- আলা  আলিহি ওয়া-আছহাবিহী ওয়া-বারীক ওয়াছাল্লীম
       
লেখক :--  এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া 

 প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নুরুলগন ইসলামিক একাডিমী  মিরসরাই 

অনলাইন ইসলামী এক্টিভিস্ট, কলামিষ্ট্  ও ব্লগার 

    ফাজেলে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া 

   মিরসরাই কাটাছরা চট্টগ্রাম