নবী-রাসুলগন কি আলেমুল গায়েব ছিলেন?

সকল প্রশংসা আল্লাহর।  দুরুদ ও সালাম নাজিল হোক প্রিয় নবী, বিশ্ব নবী ও রহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর।

আমরা মুসলিমরা কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে যেই ভ্রান্ত আকিদাহ আমাদের মধ্যে ডুকে পডেছে।
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও অন্যান্য নবী-রাসুলগন কি আলেমুল গায়েব ছিলেন? এ বিষয় সম্পর্কে এখানে আলোচনা হবে কোরআন  হাদীসের ভিত্তিতে।
। আলিমুল গায়েব এর সংজ্ঞাঃ
সাধারণত আলিমুল গায়েব তাকে বলা হয় যে সত্তা অথবা ব্যাক্তি নিজে গায়েব জানার ক্ষমতা রাখেন।
যেমনঃ আলেম তাকে বলা হয় যে নিজে কোন শরিয়াআহ এর মাসলা বলার ক্ষমতা রাখেন। কোন আলেম যখন কোন মাসলা বলেন তখন অন্যকে ডেকে নয় বা অন্যের সাহায্যে নয় বরং নিজ যোগ্যতায় সেই মাসলাটি বলেন। ‘প্রকৃত পক্ষে দীনি বিষয়ে আলেম হলেন তারা যারা ইজতিহাদ করার ক্ষমতা রাখেন’। (শেইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমিন এর উলামাদের মতানৈক্য ও আমাদের করনীয়)
যাই হোক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হল আলেম তাকে বলা হয় যার নিজের শরিয়াহ বিষয়ক জ্ঞান থাকে।
ঠিক সেভাবেই, আলেমুল গায়েব তাকে বলা হবে যার নিজের গায়েব জানার ক্ষমতা থাকে।

রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  কি আলীমুল গায়েব ছিলেন?
এই বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ২টি মত বিদ্যমান,
১. রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও নবী-রাসুলগন ছিলেন আলেমুল গায়েব, যেই ধারনাটি আমাদের দেশের শুধুমাত্র সুন্নী নামধারী এক শ্রেনীর লোক যারা মাজার-পীর,ফকির,মারেফত ই্ত্যাদী পলাপ বকা বকে থাকেন এরাই এ ধারণা করে থাকেন। 
২. রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও নবী-রাসুলগন কেউই আলেমুল গায়েব ছিলেন না, বরং একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আলীমুল গায়েব তবে আল্লাহ যেই টুকু গায়েব তার রাসুলগণকে জানাতেন তারা শুধু সেই টুকুই জানতে পারতেন, তার বেশী নয়।  যাকে বলা হয় অহীর জ্ঞান ।এই আক্বিদাটি পৃথিবীর প্রায় ৯৯ % লোক  বিশ্বাস করৈ থাকেন ।

উপরোক্ত ২টি মত থেকে ১টি সঠিক অপরটি ভুল। আমাদের অবশ্যই সঠিকটি গ্রহণ আর ভুলটি পরিত্যাগ করতে হবে।
আর আমি আপনি কি ৯৯% এর কথা মতে চলবেন নাকী 1% এর কথা মতে চলবেন এটা আপনারই ইচ্ছা। আমার দায়িত্ব হল হক্ব কথা পৌঁছিয়ে দেয়া। وما علينا الا البلاغ



এখন  স্পষ্ট আয়াত ও সহীহ হাদীস আলীমুল গায়েবের বিষয়ে কি বলে তা দেখে নেই,

রাসুলুল্লাহ(সা) ও নবী-রাসুলগন কেউই আলেমুল গায়েব ছিলেন না, বরং একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আলীমুল গায়েব তবে আল্লাহ তা’আলা যেটুকু চাইতেন সে টুকু রাসুলদের জানিয়ে দিতেন এর পক্ষে আমাদের দলীলঃ
কোরআনের স্পষ্ট আয়াত সমূহঃ
১. “তুমি বল(হে নবী) আমি তোমাদেরকে এ কথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন ভাণ্ডার আছে, আর আমি অদৃশ্য জগতেরও কোন জ্ঞান রাখিনা, এবং আমি তোমাদেরকে একথাও বলিনা যে, আমি একজন মালাক(ফেরেশতা)। আমার কাছে যা কিছু ওহী রূপে পাঠান হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি। তুমি জিজ্ঞেস করঃ অন্ধ আর চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? সুতরাং তোমরা কেন চিন্তা ভাবনা কর না?” [সুরা আন’আম;৫০]

২. “অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি তারই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেহই তা জ্ঞাত নয়”[সুরা আন’আম;৫৯]

৩. “তুমি বল(হে নবী!) আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ বিষয় আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্য তত্ত্ব ও খবর জানতাম তাহলে আমি রবের কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতোনা, আমিতো শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য একজন ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদবাহী” [সুরা আ’রাফ;১৮৮]

৪. “বল আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না তারা কখন পুনরুত্থিত হবে” [সুরা নামল;২৭]

৫. “কেয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে রয়েছে” [সুরা লোকমান;৩৪]

৬. “তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তার অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেননা”[সুরা জীন;২৬]

৭. “(নুহ নবী তার কাউমকে বলেছেন) আর আমি তোমাদেরকে এ কথা বলছিনা যে, আমার নিকট আল্লাহর সকল ভাণ্ডার রয়েছে। এবং আমি অদৃশ্যের কথা জানিনা, আর আমি এটাও বলিনা যে, আমি ফেরেশতা” [সুরা হুদ;৩১]

৮. “তুমি বলঃ তারা কত কাল ছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তারই; তিনি কত সুন্দর ভাবে দেখেন ও শুনেন। তিনি ছাড়া তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই; তিনি কাউকেউ নিজ কর্তৃত্বের শরীক করেন না” [সুরা কাহাফ; ২৬]
আরো অসংখ্য আয়াত আছে জ্ঞানিদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট 

সহীহ হাদিস সমূহঃ
১. একটি দীর্ঘ হাদিসে মা আয়েশা(রা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এরূপ বলে যে রাসুলে পাক(সা) আল্লাহর ওহী ব্যতীত কাল কি হবে তা জানাতে পারেন। সেও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দিল। কেননা আল্লাহ পাক বলেন, ‘বলুন, আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া গায়েব সংক্রান্ত কোন কিছু কেউই জানে না’ [সহীহ মুসলিম; অধ্যায়-ঈমান, অনুচ্ছেদ- রাসুলুল্লাহ(সা) মিরাজ রজনীতে তার প্রতিপালক কে দেখেছেন কী? হাদীস-৩৩৬; সোলমানিয়া পাবলিকেসন্স; ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর রেফেরেন্স- সহীহ মুসলিম; অধ্যায়-ঈমান, অনুচ্ছেদ-৭৪, হাদীস- ৩৪৭]
২. একটি দীর্ঘ হাদিসে আনাস ইবন মালেক(রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মদীনায় আগমনের খবর ইহুদীদের বিশিষ্ট  আলেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম(রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর কাছে পৌছলে একদিন তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে এসে বললেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি প্রশ্ন করবো, যার উত্তর প্রকৃত নবীগন ব্যাতীত অন্য কেউ জানবে না। তার পর বললেন- (১) কেয়ামতের প্রথম আলামত কি? (২) বেহেশতীরা বেহেশতে প্রবেশ করার পর প্রথম কি খাবেন? (৩) কি কারনে সন্তান-সন্ততি পিতার এবং কি কারনে মাতার সদৃশ হয়ে থাকে?
এতচ্ছ্রবনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, হযরত জিব্রাইল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক্ষুনি আমাকে এ সম্পর্কে অবহিত করে গেছেন। [সহীহ বোখারী,অধ্যায়- নবীদের আলোচনা পর্ব, ৬ ষষ্ঠ খণ্ড, হাদীস-৩০৯৪]
মাসলাঃউপরক্ত হাদীসের শেষাংশে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, “হযরত জিব্রাইল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক্ষুনি আমাকে এ সম্পর্কে অবহিত করে গেছেন” অর্থাৎ, জিব্রাইল (আঃ) জানানোর আগে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে জানতে না কেননা যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ব্যাপারে আগে থেকেই জানতেন তাহলে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানানোর জন্য জিব্রাইল আসতেন না, অর্থাৎ জিব্রাইল জানানোর আগে এই ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন না অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।

৩. আনাস ইবনে মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,  আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, মেরাজ রজনীতে জিব্রাইল  আঃ যখন [নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহ] ইদরীস(আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি[ইদরীস(আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেছিলেন, হে নেক নবী এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা।  [নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন] আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি (জিব্রাইল) জবাব দিলেন, ইনি ইদরীস(আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! (দীর্ঘ হাদীসের সংক্ষিপ্ত) (সহীহ বোখারী, অধ্যায়- নবীদের আলোচনা পর্ব, ৬ ষষ্ঠ খণ্ড, হাদীস-৩১০৬; সোলেমানীয়া পাবলিকেশন্স;;;;সহীহ বোখারী,অধ্যায়-নবীদের আলোচনা, খণ্ড-৬, অনুচ্ছেদ- ২১৫১- মিরাজের ঘটনা, হাদীস-৩৬০৮)
মাসলাঃ উপরক্ত হাদীসে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইদরীস(আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ইনি(ইদরীস) কে? জবাবে জিব্রাইল(আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- ইনি ইদরীস। এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইদরীস(আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেও চিনতে পারেন নি যার কারনে জিব্রাইল কে তিনি এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন, যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব হতেন তাহলে তিনি ইদরীস(আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখা মাত্র চিনতে পারতেন যে ইনি নবী ইদরীস, কিন্তু যেহেতু রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইদরীস (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে চিনতে পারেন নি সেহেতু এতে প্রমানিত হয় যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব নন, কেননা যদি তিনি আলীমুল গায়েব হতেন তাহলে তিনি নবী ইদরীস কে দেখা মাত্র চিনতে পেতেন।

৪. এক্তি দীর্ঘ হাদীসের কিছু অংশঃ যাকে ইফকের ঘটনা বলা হয় ,মুনাফিকেরা হযরত আয়েশা রাঃ সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল,কিন্তু ঐ ঘটনা সম্পর্কে নবী সাঃ কিছুই জানতেননা ,এ নিয়ে নবী সাঃ মর্ম পীড়া অনুভব করছিলেন তখন .......................................................................................১ম অংশ  মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, সকাল বেলা আমি কাঁদছিলাম। এ সময় অহী আসতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রী অর্থাৎ, আমার বিচ্ছেদের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে হযরত আলী ইবন আবী তালেব ও উসমান ইবন যায়েদ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) কে দেকে পাঠান।
মাসলাঃ অপরক্ত অংশে বলা হয়েছে- এ সময় অহী আসতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রী অর্থাৎ, আমার বিচ্ছেদের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে , অর্থাৎঅহী ছাড়া রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু জানতে পারতেন তা অর্থাৎ তিনি আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
২য় অংশঃ মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, অপবাদ রটনার পর থেকে আর তিনি[রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] কোন দিন আমার কাছে এসে বসেননি। এদিকে তিনি একমাস অপেক্ষা করার পরও আমার ব্যাপারে কোন অহী আসে নি
মাসলাঃ উপরক্ত অংশ থেকে এটি স্পষ্ট যে অহী ছাড়া রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুই জানতে পারতেন না, কেননা যদি তিনি জানতে পারতেন তাহলে অহী আসার অপেক্ষা করতেন না, সুতরাং রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
৩য় অংশঃ মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে বসার পর প্রথমে কালেমা শাহাদাত পরলেন, তার পর বললেন, হে আয়েশা! আমি তোমার ব্যাপারে এরুপ অনেক কথা শুনতে পেলাম। যদি তুমি এ ব্যাপারে নিষ্পাপ হও, তা হলে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করবেন। আর যদি তোমার দ্বারা কোন গুনাহ সংঘটিত হয়েই থাকে, তা হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর।
 মাসলাঃ উপরক্ত অংশে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহ) মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে তার পবিত্রতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন, তিনি বলেছেন- “যদি তুমি এ ব্যাপারে নিষ্পাপ হও” আর “আর যদি তোমার দ্বারা কোন গুনাহ সংঘটিত হয়েই থাকে” অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহ আনহা) এর ব্যাপারতা জানতেন না যার কারনে তিনি এরকম ভাবে জিজ্ঞাসা করেছেন, সুতরাং রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
৪র্থ অংশঃ মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি এততুকু আশা করতাম, তিনি(আল্লাহ) স্বপ্নের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমার পবিত্রতা সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন
মাসলাঃ অর্থাৎ, যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানতেন তাহলে তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানানোর প্রয়োজন পড়তো না, কিন্তু যেহেতু তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানানোর প্রয়োজন পড়তো সেহেতু এতি স্পষ্ট যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহ) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
উপরক্ত ৪ অংশে বিভক্ত হাদিসটির রেফারেন্সঃ {সহীহ বোখারী, খণ্ড- ৭ম, অনুচ্ছেদ- মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) এর বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা, হাদীস- ৩৮৩৫; সোলেমানীয়া পাবলিকেশন্স;;; সহীহ বোখারী, খণ্ড-৭,অধ্যায়-যুদ্ধাভিযান অনুচ্ছেদ- ২১৯৮-ইফকের ঘটনা, হাদীস-৩৮৩৫;ইসলামিক ফাউন্ডেশন}

৫.  এক দীর্ঘ হাদীসে,  আবু হোরায়রা(রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (কেয়ামতের দিন) সব মানুষ বেহুশ হয়ে পড়বে। তখন আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, যে দণ্ডায়মান হব। তখন (দেখতে পাব) মুসা(আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর আরশ ধরে আছেন। আমি জানি না, যারা বেহুশ হয়ে পরেছিল তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন কি-না। (সহীহ বোখারী, খণ্ড-১০, অধ্যায়-কোমল হওয়া ,হাদীস-৬০৭৩, অনুচ্ছেদ- ২৭২৪-শিঙ্গায় ফুকদান; ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
মাসলাঃ উপরক্ত হাদীসে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি জানি না, যারা বেহুশ হয়ে পরেছিল তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন কি-না”  এথেকে প্রমানিত হয় যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন না এমন অনেক জিনিস রয়েছে, সুতরাং তিনি আলীমুল গায়েব ছিলেন না, কেননা যদি তিনি আলীমুল গায়েব হতেন তাহলে তিনি এই বিষয়টি জানতেন, কিন্তু যেহেতু তিনি জানতেন না সুতরাং তিনি আলীমুল গায়েব ছিলেন না।

৬. ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) সুত্রে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ গায়েবের কুঞ্জি পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। (১) মাতৃগর্ভে কি গুপ্ত রয়েছে তা জানেন একমাত্র আল্লাহ। (২) আগামীকাল কি সংগঠিত হবে তাও জানেন একমাত্র আল্লাহ। (৩) বৃষ্টিপাত কখন হবে তাও একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। (৪) কে কোন ভুমিতে মারা যাবে তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। (৫)আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই জানে না, কেয়ামত কবে সংগঠিত হবে। (সহীহ বোখারী, অধ্যায়-তাওহীদ, অনুচ্ছেদঃ ৩১০৬, খণ্ড-১০, হাদীস- ৬৮৭৫)
মাসলাঃ এখানে উক্ত হাদীসটি ব্যাখ্যা করার আর কোন প্রয়োজন নেই কেননা, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই বলেছেনঃ গায়েবের কুঞ্জি পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। সুতরাং এই ৫ টি বিষয় তিনি নিজেও জানতেন না অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।

উপরোক্ত হাদীসগুল থেকে স্পষ্ট হয় যে, মা আয়েশা(রা)ও এই আকীদা রাখতেন যে, রাসুলুল্লাহ(সা) আলীমুল গায়েব ছিলেন না। এবং মোট ৬টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।

ইমাম ইবন কাসীর বলেনঃ “বাতিল পন্থিদের এটাই রীতি যে, তারা স্পষ্ট আয়াতকে পরিহার করে অপষ্ট আয়াতের পিছনে লেগে থাকে” [তাফসীর ইবন কাসীর; খণ্ডঃ১-৩, পৃঃ৯৮-৯৯]
==================================================================== 
এবার দেখুন বিভিন্ন মুফাস্সীরীন কেরামদের অভিমত 
১. “তুমি বল(হে নবী) আমি তোমাদেরকে এ কথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন ভাণ্ডার আছে, আর আমি অদৃশ্য জগতেরও কোন জ্ঞান রাখিনা, এবং আমি তোমাদেরকে একথাও বলিনা যে, আমি একজন মালাক(ফেরেশতা)। আমার কাছে যা কিছু ওহী রূপে পাঠান হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি। তুমি জিজ্ঞেস করঃ অন্ধ আর চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? সুতরাং তোমরা কেন চিন্তা ভাবনা কর না?” [সুরা আন’আম;৫০]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুহাম্মাদ(সা)-কে বলেছেনঃ ‘হে রাসুল! তুমি বলে দেও, আর আমি এই দাবীও করি না যে, আমি ভবিষ্যতের বিষয় অবগত রয়েছি’। ভবিষ্যতের জ্ঞানতো একমাত্র আল্লাহ’র রয়েছে। তিনি আমাকে যে টুকু জানিয়েছেন আমি শুধু ঐটুকুই জানি” [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ৮-১১, পারা-৭,সুরা-আন’আম, আয়াতঃ৫০]

২. “অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি তারই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেহই তা জ্ঞাত নয়” [সুরা আন’আম;৫৯]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“ইরশাদ হচ্ছে- অদৃশ্যের কথা আল্লাহ ছাড়া আর কেহ জানেনা”  [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ৮-১১, পারা-৭,সুরা-আন’আম, আয়াতঃ৫৯]

৩. “তুমি বল(হে নবী!) আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ বিষয় আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্য তত্ত্ব ও খবর জানতাম তাহলে আমি রবের কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতোনা, আমিতো শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য একজন ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদবাহী” [সুরা আ’রাফ;১৮৮]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“এখানে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসুল(সা)কে নির্দেশ দিচ্ছেন- হে নবী! তুমি সমস্ত বিষয়ের সম্পর্ক আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেও। নিজের সম্পর্কে তুমি বলে দেও, ভবিষ্যতের জ্ঞান আমারও নেই। তবে হ্যাঁ, আল্লাহ যেটা বলে দেন একমাত্র সেটাই আমি বলতে পারি। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ ‘তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তার অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেননা’(কোরআন-৭২:২৬)”  [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ৮-১১, পারা-৯,সুরা-আ’রাফ, আয়াতঃ১৮৮]

৪. “বল আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না তারা কখন পুনরুত্থিত হবে” [সুরা নামল;২৭]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসুল(সা)কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন সারা জগতবাসীকে জানিয়ে দেন যে, অদৃশ্যের খবর(আল্লাহ ছাড়া) কেউ জানে না। অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া কোন মানব,দানব এবং ফেরেশতা গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানে না” [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ১৫, পারা-২০,সুরা-নামল, আয়াতঃ২৭]
৫. “(নুহ নবী তার কাউমকে বলেছেন) আর আমি তোমাদেরকে এ কথা বলছিনা যে, আমার নিকট আল্লাহর সকল ভাণ্ডার রয়েছে। এবং আমি অদৃশ্যের কথা জানিনা, আর আমি এটাও বলিনা যে, আমি ফেরেশতা” [সুরা হুদ;৩১]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“নুহ(আঃ) তার কাওমকে খবর দিচ্ছেন যে, আল্লাহর ধন-ভাণ্ডারকে হেরফের করার ক্ষমতা তার নেই। তিনি অদৃশ্যের খবরও জানেন না। তবে আল্লাহ যা জানিয়ে দেন তা জানতে পারেন”  [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ১২-১৩, পারা-১২,সুরা-হুদ, আয়াতঃ৩১]

রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব নন এর পক্ষে ৮টি আয়াত ও ৬টি সহীহ হাদীস পেশ করলাম, যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব হতেন তাহলে এর পক্ষে স্পষ্ট আয়াত অথবা সহীহ হাদীস থাকতো, কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব হওার পক্ষে একটিও স্পষ্ট আয়াত অথবা সহীহ হাদীস নেই, এটাই প্রমান করে যে আসলেই রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।

আর যেহেতু রাসুলুল্লাহ(সা) আলিমুল গায়েব ছিলেন না সেহেতু অন্য কোন অলী-আওলিয়া,পীর এর গায়েব জানার প্রশ্নই আসে না।
আর এমন একজন সাহাবী,তাঁবেঈ ও তাঁবে-তাঁবেঈও পাওয়া যাবে না যারা রাসুলুল্লাহ(সা) আলীমুল গায়েব বলে আকীদা রাখতেন।


আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে হক বুঝার ও মানার তৌফিক দান করুন(আমিন)===============






যারা বলে যে, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও নবী-রাসুলগন ছিলেন আলেমুল গায়েব ছিলেন, তাদের পেশকৃত দলীল ও তার জবাবঃ===================================== 

১. “তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তার অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেননা, তার মনোনীত রাসুল ব্যতীত। সেই ক্ষেত্রে আল্লাহ রাসুলের অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী ফেরেশতা নিযুক্ত করেন” [সুরা জীন;২৬-২৭]
জবাবঃ উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ প্রথম অংশে বললেন,  “তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তার অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেননা” আর দ্বিতীয় অংশে বলেছেন- “তার মনোনীত রাসুল ব্যতীত” এবং তৃতীয় অংশে বলেছেন- “সেই ক্ষেত্রে আল্লাহ রাসুলের অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী ফেরেশতা নিযুক্ত করেন”
এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার রাসুলগণকে গায়েবের কিছু খবর জানাতেন, আর তিনি না জানালে তারা জানতে পারতেন না। কেননা, যদি রাসুলগন নিজের ক্ষমতায় গায়েব জানার সামর্থ্য রাখতেন, তাহলে আল্লাহ তা’আলার প্রয়োজন পরতো না তার রাসুলগনকে তার নিকট থেকে গায়েব জানানোর। অর্থাৎ, রাসুলগন আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
কারণ আল্লাহ তা’আলার অন্য আয়াতে বলেন, “অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি তারই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেহই তা জ্ঞাত নয়” [সুরা আন’আম;৫৯] আর এটিই সঠিক, কারণ এখানে এক আয়াত দ্বারা অন্য আয়াত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
২. এবং আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত কিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন । বাকারাহ :
 অতঃপর সে সমস্ত বস্তু ফিরিশতাদের কাছে উপস্থাপন করলেন।এর থেকে 1% লোক মনে করেন নবী-রসুল গন গায়েবের মালিক ।
জবাবঃ   এই আয়াতের কোথায় বলা হয়েছে যে, আদম অথবা মুহাম্মাদ(সা) গায়েব জানতেন? এই আয়াত দ্বারা কোন ভাবেই তো আলীমুল গায়েবের বিষয় প্রকাশ পায় না। কিন্তু বাতিল পন্থিরা কিছু তাফসীর দিয়ে এই আয়াতকে আলীমুল গায়েবের আয়াত প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু কোন মানুষের কোথা দলীল নয়। আর উপরোক্ত আয়াত গায়েবের কথা বলছে না এটা একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবে।

৩. এ রসুল তোমাদের রক্ষণা বেক্ষণকারী ও সাক্ষী হবেন।
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। রাসুলুল্লাহ(সা) রক্ষণাবেক্ষণকারী হবেন এটা কোথায়ে আছে আমি তা জানি না।  জাই হোক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কোরআনের কিছু স্থানে সাহাবীদেরও সাক্ষী থকতে বলেছেন।  এছাড়াও আল্লাহ তা’আলা আহলে কিতাবদের সাক্ষী থাকতে বলেছেন সুরা আলে ইমরানের ৬৪ নং আয়াতে। যদি সাক্ষী থাকার মানে এই হয় যে, সাক্ষী থাকলে আমীমুল গায়েব হতে হবে তাহলে বলব, আহলে কিতাবরাও কি আলীমুল গায়েব? তাদের কেও তো আল্লাহ সাক্ষী থাকতে বলেছেন সুরা আলে ইমরানের ৬৪ নং আয়াতে।

৪. যে মাহাবুব (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি আপনাকে এদের রক্ষণা বেক্ষণকারী হিসেবে আনব
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। রক্ষনা বেক্ষণকারী মানে কি আলীমুল গায়েব? একটি বাড়ীর ক্যায়ার টেকার সেই বাড়ীর রক্ষনা বেক্ষণকারী তাই বলে কি বাড়ীর ভিতর কে কি করছে তা জানা তার জরুরী? না, কখনই না। ঠিক তেমনি যদি রাসুলুল্লাহ(সা) এদের রক্ষণা বেক্ষণকারীও হন এতে করে তার আলীমুল গায়েব হতে হবে না। আর আমার মনে হয় না এই আয়াত কোরআনে আদৌ আছে, কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেনঃ “আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সকলের রক্ষনা বেক্ষনকারী, তন্দ্রা ও নিন্দ্রা তাকে স্পর্শ করে না” [সুরা বাঁকারা;২৫৫] এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এমন গুনের নাম নিয়েছেন যা শুধু মাত্র তারই। আর যেহেতু আল্লাহ নিজেই রক্ষনা বেক্ষনকারী সুতরাং রাসুলুল্লাহ(সা) কে রক্ষণা বেক্ষণকারী হিসেবে আনার কোন প্রয়োজনই নাই।

৫. কে সে, যে তার কাছে তার অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করবে? তিনি তাদের পূর্বাপর সবকিছুই জানেন
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। কিন্তু আমি জানি এটি সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত। কত বড় জালেম সেই ব্যাক্তি যে এই আয়াত দ্বারা রাসুলুল্লাহ(সা) কে উদ্দেশ্য করে? কেননা, এই আয়াত রাসুলুল্লাহ(সা) এর উদ্দেশ্যে নয় বরং আল্লাহ তা’আলা তার নিজের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন। এটি আয়াতের কিছু অংশও, পুরো আয়াতটি হলঃ
“আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সকলের রক্ষনা বেক্ষনকারী, তন্দ্রা ও নিন্দ্রা তাকে স্পর্শ করে না, নভোমণ্ডলে ও ভু-মণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সব তাঁরই; কেসেযেতারকাছেতারঅনুমতিব্যতীতসুপারিশকরবে?তিনিতাদেরসম্মুখের ও পশ্চাতেরসবকিছুইজানেন; তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত তার অনন্ত জ্ঞানের কোন কিছুই কেউ আয়ত্ত করতে পারে না; তার কুরসি নভোমণ্ডল ও ভু-মণ্ডল পরিব্যপ্ত হয়ে আছে এবং এতদুউভয়ের সংরক্ষণে তাকে পরিশ্রান্ত করে না এবং তিনি সমুন্নত, মহীয়ান”[সুরা বাঁকারা;২৫৫] এটি এখন অবশ্যই স্পষ্ট হয়েছে যে, “কেসে,যেতারকাছেতারঅনুমতিব্যতীতসুপারিশকরবেতিনিতাদেরসম্মুখের ও পশ্চাতেরসবকিছুইজানেন” এটি আল্লাহ তার নিজের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন। এছাড়াও এই আয়াতের প্রথম অংশ- “কেসে,যেতারকাছেতারঅনুমতিব্যতীতসুপারিশকরবে?” এটি রাসুলুল্লাহ(সা) কে উদ্দেশ্য করতে পারে না, কারণ রাসুলুল্লাহ(সা) এর কাছে কেউ সুপারিশ করবে না বরং রাসুলুল্লাহ(সা) নিজে আল্লাহ তা’আলার কাছে সুপারিশ করবে। আর অনুমতি তার প্রয়োজন যে সুপারিশ করবে, সুতরাং উক্ত বাক্যটি কোন ভাবেই রাসুলুল্লাহ(সা) কে উদ্দেশ্য করতে পারে না।

৬. তারা তাঁর জ্ঞান ভান্ডার থেকে কিছুই পায় না, তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছে করেন
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। তবে আমার মনে হয় এটিও সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত। সমস্যা কোথায়? আমরাতো আগেই স্বীকার করেছি যে, আল্লাহ তা’আলা যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু তিনি রাসুলুল্লাহ(সা) ও অন্যান্য নবী-রাসুলদের জানিয়েছেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সা) ও অন্যান্য নবী-রাসুলদের নিজে থেকে গায়েব জানার ক্ষমতা ছিল না। আর আল্লাহ তা’আলা রাসুলুল্লাহ(সা) ও অন্যান্য নবী-রাসুলদের সকল গায়েবের খবর জানাতেন না, কিছু জানাতেন মাত্র, এই বিষয় পরবর্তীতে আলোচনা হবে। (ইনশা আল্লাহ)

৭. হে সাধারন লোকগন এটা আল্লাহর শান নয় তোমাদেরকে ইলমে গায়ব দান করবেন। তবে হ্যাঁ রসুলগনের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করে তাকে এ অদৃশ্য জ্ঞান দানের জন্য মনোনিত করেন
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। আমরাতো আগেই স্বীকার করেছি যে, আল্লাহ তা’আলা যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু তিনি রাসুলুল্লাহ(সা) ও অন্যান্য নবী-রাসুলদের জানিয়েছেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সা) ও অন্যান্য নবী-রাসুলদের নিজে থেকে গায়েব জানার ক্ষমতা ছিল না। তবে আয়াতের রেফেরেন্স না দেওয়াতে আয়াতের সঠিক অনুবাদটি জানাতে পারছি না। আর অনুবাদ এটি হলেও সমস্যা নেই।  আর আল্লাহ তা’আলা রাসুলুল্লাহ(সা) ও অন্যান্য নবী-রাসুলদের সকল গায়েবের খবর জানাতেন না, কিছু জানাতেন মাত্র, এই বিষয় পরবর্তীতে আলোচনা হবে। (ইনশা আল্লাহ)

৮. এবং আপনাকে শিখিয়ে দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না। আপনার উপর আল্লাহর এটি বড় মেহেরবাণী
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। আল্লাহু আকবার। কি জ্ঞান এই বাতিল পন্থীদের? এই আয়াতের কোথায় আলীমুল গায়েব নিয়ে কথা বলা হয়েছে? “এবং আপনাকে শিখিয়ে দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না” এটি দ্বারা কি গায়েবের খবরের কথা বলছেন?  বাতিল পন্থীরা কি শব্দও বুঝে না? উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন “এবং আপনাকে শিখিয়ে দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না” এখানে আল্লাহ বলেছেন “শিখিয়ে দিয়েছেন” যদি এটি গায়েব সংক্রান্ত বিষয় হত তাহলে আল্লাহ বলতেন “জানিয়ে দিয়েছেন” কারণ গায়েব ‘শিখানোর’ বিষয় না বরং গায়েব ‘জানানোর’ বিষয়।

৯. আমি এ কিতাবে (কুরআনে) কিছু বাদ দিইনি কুরআন করীমে সমস্ত অবস্থার বিবরণ রয়েছে ।
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। আমার আবার প্রশ্ন- এই আয়াতের কোথায় আলীমুল গায়েব নিয়ে কথা বলা হয়েছে? এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা কোরআনের প্রশংসা করে বললেন যে, কোরআনে কোন কিছু বাদ নেই বরং সব বিষয়ের জ্ঞান রয়েছে। এই আয়াতের সাথে আলীমুল গায়েবের সম্পর্ক কি? আমার মনে হয় কিছু দিন পর বাতিল পন্থীরা বলবে- ‘আলীফ-লাম-মীম’ দ্বারা আলীমুল গায়েবের মাসলা জানা যায়।

১০. এবং শুষ্ক ও আর্দ্র এমন কিছুই নেই, যা উজ্জ্বল কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়নি
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। আমার আবারও একই প্রশ্ন- এই আয়াতের কোথায় আলীমুল গায়েব নিয়ে কথা বলা হয়েছে? এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা কোরআনের প্রশংসা করে বললেন যে, কোরআনে কোন কিছু বাদ নেই বরং সব বিষয়ের জ্ঞান রয়েছে। এই আয়াতের সাথে আলীমুল গায়েবের সম্পর্ক কি?

১১. হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। আমার আবারও একই প্রশ্ন- এই আয়াতের কোথায় আলীমুল গায়েব নিয়ে কথা বলা হয়েছে? এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তার রাসুল(সা) কে বলেছেন- কোরআনে প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। এর সাথে আলীমুল গায়েবের সম্পর্ক কি? তবে হ্যাঁ, এই আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় যে, রাসুলুল্লাহ(সা) আলীমুল গায়েব ছিলেন না। কীভাবে? তা হল, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তার রাসুল(সা) কে বলেছেন- ‘আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত’ এখন প্রশ্ন যদি রাসুলুল্লাহ(সা) জানতেন যে কোরআনে প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত তাহলে আল্লাহ আবার কেন এই আয়াত নাযিল করলেন? যেহেতু আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেছেন সেহেতু বুঝা যায় যে রাসুলুল্লাহ(সা) জানতেন না যে কোরআনে প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত [আল্লাহ ভাল জানেন], অর্থাৎ রাসুল্লাহ(সা) গায়েবের এই খবরটি জানতেন না মানে তিনি আলীমুল গায়েব ছিলেন না। এখন কি হল? বাতিলদের প্রমাণ তাদের বিরদ্ধেই চলে গেল! এসব আয়াত দ্বারা না এটি প্রমাণ করা যায় যে রাসুলুল্লাহ(সা) আলীমুল গায়েব ছিলেন না এটি স্পষ্ট প্রমাণ করা যায় যে রাসুলুল্লাহ(সা) আলীমুল গায়েব ছিলেন না। রাসুলুল্লাহ(সা) আলীমুল গায়েব ছিলেন না এর স্পষ্ট অনেক আয়াত ও হাদীস আছে যা পরবর্তীতে পেশ করবো। (ইনশা আল্লাহ)

১২. এবং লওহে মাহফুজে যা কিছু লিখা আছে কুরআনে তার বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে । এতে কোন সন্দেহ নেই
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। আমার আবারও একই প্রশ্ন- এই আয়াতের কোথায় আলীমুল গায়েব নিয়ে কথা বলা হয়েছে? এই আয়াতটি একজন সাধারণ মানুষ পাঠ করলেও বুঝবেন যে এটি গায়েব বিষয়ক নয় বরং কোরআন বিষয়ক। এখানে আমি উল্লেখ্য করবো রাসুলুল্লাহ(সা) এর বানী, ‘যখন তোমরা ঐ লোকদেরকে দেখ যারা অস্পষ্ট আয়াতসমূহের পিছনে লেগে থাকে তখন বুঝে নিবে যে, তারা ওরাই যাদের নাম স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন এবং স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাক’ [ফাতহুল বারী- ৮/৫৭]

১৩. এ কোন বানোওয়াট কথা নয়, এতে রয়েছে আল্লাহর আগের উক্তি সমূহের সত্যায়ন ও প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। আমার আবারও একই প্রশ্ন- এই আয়াতের কোথায় আলীমুল গায়েব নিয়ে কথা বলা হয়েছে? এই আয়াতটি একজন সাধারণ মানুষ পাঠ করলেও বুঝবেন যে এটি গায়েব বিষয়ক নয় বরং কোরআন বিষয়ক। এটি কোরআনের প্রশংসা মূলক আয়াত।

১৪. দয়াবান আল্লাহ তাআলা স্বীয় মাহবুবকে কুরআন শিখিয়েছেন মানবতার প্রাণতুল্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সৃষ্টির পূর্বাপর সব কিছুর তাৎপর্য বাতলে দিয়েছেন
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি।  এই আয়াতটি উপরোক্ত এই বাক্যে থাকতে পারে না। এটি কোরআনের আয়াত নয়, কোন ভাবেই নয়। কেননা এতে অনেক ভুল রয়েছে, এর মধ্যে একটি হল- “হযরত” এই শব্দ(হযরত) কখনই রাসুলুল্লাহ(সা) এর ক্ষেত্রে কোরআনে থাকতে পারে না। আর যেহেতু রেফেরেন্স দেয় নি সেহেতু মিথ্যা আয়াত দেওয়ার পূর্ণ সুযোগ রয়েছে। এছারাও কোরআন শিখানর সাথে আলীমুল গায়েবের কি সম্পর্ক? আর আল্লাহ পাক যদি সৃষ্টির তাৎপর্য রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানিয়ে থাকেন তাহলে তার সাথে আলীমুল গায়েবের সম্পর্ক কি?

১৫. আপনি আপনার প্রভুর মেহেরবাণীতে উম্মাদ নন
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। কিন্তু আমি জানি যে, এই আয়াত হল সুরা তাকভীর এর ২২ নং আয়াত। ‘উম্মাদ’ শব্দের অর্থ ‘পাগল’, আমরা কি কখনও বলেছি যে রাসুলুল্লাহ(সা) পাগল ছিলেন?(নাউজুবিল্লাহ), যে ব্যাক্তি বলবে যে রাসুলুল্লাহ(সা) পাগল ছিলেন, সেই কাফির হয়ে যাবে, এখন কথা হল উম্মাদ এর সাথে আলীমুল গায়েব এর সম্পর্ক কি? তিনি উম্মাদ(পাগল) ছিলেন না বলে কি আলীমুল গায়েব ছিলেন? তাহলে তো বর্তমানে আলিইমুল গায়েবের অভাব হবে না!!!

১৬. এবং হে মাহবুব আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলবে আমরাতো কৌতুক ও খেলা-তামাশা করছিলাম
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। এই আয়াতের কোথায় আলীমুল গায়েব নিয়ে কথা বলা হয়েছে? বরং আল্লাহ তা’আলা এখানে মুনাফিকদের কথা বলেছেন।

১৭. তিনি (আল্লাহ) তাঁর প্রিয় বান্দার প্রতি যা কিছু ওহী করার ছিল তা ওহী করলেন
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। এই আয়াত তো স্পষ্ট কোরআন বিষয়ক। অর্থাৎ, যা যা কোরআন উল্লেখ্য করার দরকার ছিল আল্লাহ তা করেছেন। এর সাথে আলীমুল গায়েবের সম্পর্ক কই?

১৮. এ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) গায়ব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। তবে এই আয়াতটি হল সুরা তাকভীর এর ২৪ নং আয়াত। এই আয়াতটি বাতিল পন্থিদেরই বিরুদ্ধে যায়, কেননা যারা দাবী করে যে, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন তারা এটাও দাবী করে যে, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল গায়েবের খবর জানতেন, এখন কথা হল উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েবের খবর জানানোর ক্ষেত্রে কৃপণ নন, অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গেয়েবের যেই খবর গুল জানতেন তা তিনি প্রকাশ করতেন, কোন কিছুই তিনি গোপন করতেন না, কেননা তিনি এ ক্ষেত্রে কৃপণ নন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কখনও বলেছেন যে, ‘ইবন উমার জান্নাতুল ফেরদাউসে যাবে’? রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কখনও বলেছেন যে ৮০ হিজরিতে একজন পণ্ডিত আসবে তার নার আবু হানিফা তাকে আমার উম্মত যেন অনুসরণ করে, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কখনও বলেছেন যে, আহমাদ ইবন হাম্বল নামে এক ইমাম আসবে তাকে আমার উম্মত যেন অনুসরণ করে, না তিনি এরকম কথা বলেছেন বলে একটাও সহীহ হাদীস নাই, তার মানে তিনি বলেন নাই, এসব খবর তার জমানাতে ছিল ভবিষ্যৎ অর্থাৎ গায়েবের খবর, কিন্তু তা তিনি জানান নি, এর কারণ কি? কারণ তিনি জানতেন না, যদি জানতেন তাহলে তিনি তা জানাতেন কেননা আল্লাহ কোরআনে বলেছেন- “এ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) গায়ব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন” এ থেকে এটি প্রমাণিত হল যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল গায়েবের খবর জানতেন না, আর যেহেতু তিনি কিছু গায়েবের খবর জানতেন আর কিছু জানতেন না সেহেতু তিনি আলীমুল গায়েব ছিলেন না, এর পরও আরেকটি কথা বাকি থাকে তা হল- রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি নিজের ক্ষমতায় গায়েবের কিছু খবর জানেতে পারতেন? না , কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন- “তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তার অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেননা, তার মনোনীত রাসুল ব্যতীত। সেই ক্ষেত্রে আল্লাহ রাসুলের অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী ফেরেশতা নিযুক্ত করেন” [সুরা জীন;২৬-২৭] অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহ তা’আলা যেই গায়েবের খবর জানাতেন তিনি তা জানতে পারতেন আর যা জানাতেন না তা তিনি জানতে পারতেন না, এই বিষয়গুল আগামীতে আসা মা আয়েশা(রাদিআল্লাহু আনহা) এর হাদিসের মাধ্যমে আর বেশি পরিষ্কার হবে ইনশা আল্লাহ!


১৯. আমি এ রূপেই হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামকে) ভূ মণ্ডল ও নভোমন্ডলে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহী অবলোকন করাই
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। এই আয়াত তো স্পষ্ট আল্লাহর প্রশংসা মূলক আয়াত। এখানে আলীমুল গায়েবের বিষয় কথা থেকে আসলো?

২০. আমি (আল্লাহ) তাঁকে (হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে) আমার ইলমে লদুনী দান করেছি
জবাবঃ এই আয়াতের রেফেরেন্স তারা দেয় নি। এই আয়াত তো স্পষ্ট খিযির সম্পর্কে। আর আল্লাহ তা’আলাল সকলকেই জ্ঞান দান করেন, তাকেও করেছেন। সমস্যা কোথায়? রাসুলুল্লাহ(সা) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ যার কল্যান চান তাকেই দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’[সহীহ বোখারী] এর মানে কি আলেমরাও আলীমুল গায়েব? জ্ঞান দান করলেই আলীমুল গায়েব হতে হবে, এই থিওরী কোথায় পেলেন?

বাতিল পন্থীদের এসব পেশকৃত দলীল আমি তাঁদেরই ওয়েবসাইট থেকে নিয়েছে আর তারা নিয়েছেন –‘জা’আল হক ১ম খন্ড’ থেকে। তারা আরো বলেছেন যে এসব প্রমানের কোন উত্তর নাকি আমাদের কাছে নাই। তাই উত্তর দিলাম। এখন লক্ষণীয় বিষয়- তাদের দেওয়া ২০টি দলীলের একটিতেও কি বলা হয়েছে- ‘হে নবী তুমি গায়েব জান’, ‘হে মুহাম্মদ তুমি জায়েব জান’, ‘মুহাম্মাদ আলীমুল গায়েব’? না একটিতেও বলা হয় নি। বরং ২০টির প্রায় প্রতিটিই অযক্তিক।  তাই আমি বলব রাসুলুল্লাহ(সা) এর বানীঃ যখন তোমরা ঐ লোকদেরকে দেখ যারা অস্পষ্ট আয়াতসমূহের পিছনে লেগে থাকে তখন বুঝে নিবে যে, তারা ওরাই যাদের নাম স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন এবং স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাক” [ফাতহুল বারী- ৮/৫৭]
এবং আল্লাহর বানীঃ “অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, ফলতঃ তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশে অস্পষ্টের অনুসরণ করে” [সুরা আলে ইমরান;৭]