Translate

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

নাস্তিকদের প্রশ্নের সমোচীত জবাব

একটি ব্লগে এক ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক ইসলাম সম্বন্ধে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল।তার প্রশ্নগুলোর উত্তর ঠিক এভাবেই দেওয়া হয়েছিল: 

১) দশই রমজান শুক্রবার কেয়ামত। বাংলাদেশে যখন শুক্রবার তখন আমেরিকায় শুক্রবার নয়: মক্কায় বাংলাদেশের একদিন বা দুইদিন আগেই দশই রমজান হয়ে থাকে। তাহলে কিয়ামত সর্বত্র কিভাবে দশই রমজান হবে?

উত্তর: কেয়ামত যে “দশই রমজান”- এই কথা আপনি পেলেন কোথায়? কুরআন বা হাদীসের কোথায় “দশই রমজান” এর কথা উল্লেখ আছে?রেফারেন্স দিন। কেয়ামত সম্বন্ধে মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে বলা হয়েছে , কেয়ামত বা মহাপ্রলয় শুরু হবে শুক্রুবার হতে। কিন্তু কোন স্পেসিফিক মাসের কথা তো সেখানে  উল্লেখ নেই! আর যদি বলা হয় যে কেয়ামত শুরু হবে শুক্রুবার হতে , তবে তাতে সমস্যাই বা কোথায়? কোন না কোন একদিন তো কেয়ামত শুরু হবেই, হোক সেটা শুক্রুবার বা সোমবার।আর সেই কেয়ামত বা মহাপ্রলয়ের তান্ডব থেকে তো পৃথিবীর কেউই বাঁচতে পারবেনা,গোটা দুনিয়াই এফেক্টেড হবে এর দ্বারা ।একটি উদাহরণ দেই।ধরুন, আমি আপনাকে বল্লাম আগামি শুক্রবার সকাল ৯টা হতে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ৫দিন ব্যাপী টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে।তো,স্যাটেলাইট টিভির মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসে এই খেলা লাইভ উপভোগ করা সম্ভব,  ঠিক না?সময়ের ব্যবধান যাই হোক, ঐ সময়ে যে ঐ ক্রিকেট ম্যাচটি ঐ অঞ্চলে শুরু হবে তা-তো সত্যি,ঠিক না? ঠিক তদ্রুপ শুক্রুবার (যদি ধরে নেই সৌদি আরবের শুক্রবার) হতে কেয়ামত বা মহাপ্রলয় শুরু হলেও গোটা পৃথিবী জুড়েই এর ধ্বংসলীলা পরিলক্ষিত হবে। বুঝে আসছে?

২) সবেরবাত আরে ও বাংলাদেশে একদিনে হয় না। সবেবরাতের আগের দিন বাংলাদেশ থেকে দ্রুতগামী বিমানে সৌদি আরব গেলে দেখা যাবে সেখানে সবেবরাত একদিন আগেই হয়ে গেছে। তাহলে সে কিভাবে সবেবরাত পালন করবে? উল্টা ঘটলে দুবার সবেবরাত পাবে কে?

উত্তর: ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে “ভ্যালেন্টাইন্স ডে” পালন করা গেলে ১৫ই সা’বান শবে বরাত পালন করতে বাঁধা কোথায়? সময়ের ব্যবধানের কারণে বাংলাদেশের কোটা বাতিল হয়ে গেছে না-কি?
৩) কিছু কিছু দিন বেহেস্তের দরজা খোলা থাকে। ঐ দিনটা সারা পৃথিবীতে একে স্থানে একেদিন হলে বেহেস্তেও দরজা কদিন খোলা থাকবে?

উত্তর: আপনি বললেন- “কিছু কিছু দিন বেহেস্তের দরজা খোলা থাকে”-কোন কোন দিন খোলা থাকে একটু বলবেন কী? কুরআন/হাদীসের রেফারেন্সটাও কি একটু দিবেন? হাদীসে আছে শুধু মাত্র “রমজান” মাসেই বেহেশতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। এর বাইরে অন্য কোন মাসে/দিনে বেহেশতের দরজা খোলা হয় এধরনের কোন উল্লেখ হাদীসে শরীফে নেই। থাকলে সেটা আপানার বানানো।
৪) মেরুতে ছয়মাস দিন ও ছয় মাস রাত থাকে। সেখানে কিভাবে নামাজ-রোজা পালন করবে?

উত্তর: একদম সোজা! এরকম একটি প্রশ্ন নবীজি(স.)কে করা হয়েছিল। প্রশ্নটি ছিল “দাজ্জাল” এর আবির্ভাব এর পরে নামাযের সময় নির্ধারণ সংক্রান্ত। যখন দাজ্জাল আবির্ভূত হবে তখন এক একটি দিন এক বছরের সমান লম্বা হবে। এ বিষয়ে সাহাবারা নবীজির (সা.) দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিজ্ঞেস করেছিলেন -“ও আল্লাহর নবী! এমন একটি সময় আসবে যখন একটি দিনের দৈর্ঘ এক বছরের সমতুল্য হবে তখন কী এক দিনের নামায  কী গোটা বছরের জন্য যথেষ্ট হয়ে হবে? উত্তরে নবীজি (স.) বলেছিলেন-না, তখন তোমরা দিনের সময়গুলোকে ভাগ করে করে নিবে।” অর্থাত একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রতি ওয়াক্তের নামাযগুলো আদায় করে নিবে। বুঝলেন?

আর, মেরুতে যেহেতু ছয় মাস দিন ও ছয় মাসরাত সেহেতু সেক্ষেত্রে আপনি উপরোক্ত হাদীস মতে সময়কে ভাগ করে নিবেন এবং প্রতি ওয়াক্তের নামায গুলো আদায় করবেন এবং রোজাও ঐভাবে পালন করবেন। তাছাড়া, আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে উক্ত মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি কোন দেশের সময়ানুযায়ী নামায-রোজা পালন করা, মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগে যেটি খুবই সহজ সাধ্য কাজ । ক্লিয়ার?

৫)যারা কোনদিন ইসলামের দাওয়াত পায়নি এবং কোন অপরাধ করেনি তারা কেন বেহেস্তে যাবে না? গোলাম আজম কোন দিন না কোনদিন বেহেস্তে প্রবেশ করবে মুসলিম বলে অথচ মাদারতেরেসা প্রবেশ করবেন না অমুসলিম বলে এটা কি ন্যায় বিচার?

উত্তর: আপনার প্রশ্নটা ছিল-“যারা কোনদিন ইসলামের দাওয়াত পায়নি এবং কোন অপরাধ করেনি তারা কেন বেহেস্তে যাবে না?” তার আগে আপনি আমাকে বলুন-“যারা ইসলামের দাওয়াত পেয়েও ইসলাম কবুল করেনি তারা কেন বেহেস্তে যাবে?

আর আপনি জানতে চেয়েছেন মাদার তেরেসা বেহেস্তে প্রবেশ করবেন কি-না? তার আগে চলুন জেনে নেই পবিত্র কুরআনের আলোকে বেহেস্তে প্রবেশের ক্রাইটেরিয়াগুলো কী কী? সূরা আল আসরে (১০৩:১-৪) আল্লাহ সময়ের কসম করে বলছেন, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে লিপ্ত রয়েছে তারা ব্যতীত যারা ঈমান আনে, সত কাজ করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্য ধারনের উপদেশ দেয়। অর্থাত বেহেস্তে প্রবেশের শর্ত চারটি, যথা-ঈমান, সত কাজ, সত্যের উপদেশ এবং ধৈর্যের উপদেশ।মাদারতেরেসা যদি এই চারটি উপাদান মেনে চলে থাকেন তবে তিনি অবশ্যই বেহেস্তে প্রবেশ করবেন; অন্যথায় নয়।
৬)পুরুষ বেহেস্তেকমপক্ষে ৭০টি হুরী ও তার স্ত্রীকে পাবে এবং নারী বেহেস্তে গোলেমান ও তার স্বামীকেপাবে। তাহলে পুণ্যবান পুরুষের পাপিষ্ঠা স্ত্রীএবং পূণ্যবতী নারীর পাপী স্বামীও কি বেহেস্তে যাবে?

উত্তর: এক কথায় ‘না’। যেমন: হযরত আসিয়া(রা.) এর স্বামী ছিল পাপিষ্ঠ ফেরাউন। সুতারাং ফেরাউন বেহেস্তে যাবেনা। তেম্নি হযরাত লুত (আ.)এবং হযরাত নূহ’র(আ.) এর স্ত্রী ছিল পাপিষ্ঠ, তারাও বেহেস্তে যাবেনা। আল্লাহ যেমন বলছেন-“যারা কুফুরির নীতি অবলম্বন করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ নূহের স্ত্রী আর লূতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত পেশ করছেন। এরা ছিল আমার দু’পূণ্যবান বান্দার অধীনে।কিন্তু তারা দুজনেই তাদের স্বামীদ্বয়ের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারলনা।”(৬৬:১০)। ক্লিয়ার?

৭) হোসেনের পরজয়ের পর হোসেন ও তার বংশধরদের হত্যাকারীরা প্রায় ৬শ বছর রাজত্ব চালায়। এরাই প্রকৃতপক্ষে ইসলামের প্রসার ঘটায়। মুহম্মদের বংশধরদের রক্তে যাদের হাতরঞ্জিত তাদের হাতে যারা মুসলমান হয়েছে তারা কি প্রকৃত মুসলমান হবে?

উত্তর: আপনি বলেছেন-হোসেনের পরজয়ের পর হোসেন ও তার বংশধরদের হত্যাকারীরা না-কি প্রায় ৬শ বছর (!) রাজত্ব চালিয়েছিল।ইতিহাসের এতবড় মিথ্যা কথাটা আপনি কোথায় পাইলেন? হোসেনের হত্যাকারী ইয়াজিদ ৬৮০-৬৮৩ খ্রি. মোট তিন বছর রাজত্ব করেছিল।আর ইয়াজিদের উমাইয়া বংশ ইয়াজিদের মৃত্যুর পর অর্থাত ৬৮৩খ্রি. হতে ৭৫০ খ্রি.পর্যন্ত মোট ৬৭ বছর রাজত্ব করেছিল। তো, আপনি ৬৭ বছরকে “ছয়শ” বানাইলেন কেন? আর ইয়াজিদ না হয় খারাপ লোক ছিল তাই বলে যে তার বংশধররা খারাপ- একথা আপনাকে কে বলেছে?

৮)মুসলমানদের মধ্যে অনেকগুলো ভাগ ও উপভাগ রয়েছে। এদের মধ্যে কারা প্রকৃত মুসলমান এবং কেন? অন্যরা কি মুসলমান নয়?

উত্তর: দেখুন, একটি ক্লাশে ভালো ছাত্র যেমন থাকে, তেমনি খারাপ ছাত্রও থাকে।যারা ভালো করে মন দিয়ে পড়াশুনা করে তাদেরকে আমরা ভালো ছাত্র বলি, আর যারা করে না তাদেরকে আমরা বলি খারাপ ছাত্র বা দুষ্টছাত্র,  কিন্তু খারাপ বা দুষ্টদের অছাত্রও বলিনা। তেমনি মুসলমানদের মধ্যেও ভালো যেমন আছে, তেমনি মন্দও আছে। যেসকল মুসলমান আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান পোষণ করে এবং  কুরআন-হাদীস অনুযায়ী আমল করে তাঁরা ভালো মুসলমান আর যারা এসব পালন করেন না তাদের আমরা বলি খারাপ মুসলমান। আশা করি উত্তরটা পেয়েছেন। 
৯)উসমানের ইসলামবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করায় সাহাবা আবুজর গিফরীকে নির্বাসন দেয়া এবং তারা নিজের পছন্দসই কোরান বাদে বাকীগুলিকে পুরিয়ে ফেলার পরও সে কিভাবে আমাদের খলিফা? এছাড়া আলী বুদ্ধি, কৌশল এবং শেষে পেশিতে মোয়াবিয়ার কাছে পরাস্ত হলেন সে কিভাবে আল্লার তরবারী এবং খলিফা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? এছাড়া আবু বক্কর ও ওমরকে শ্বশুর এবংজামাতা অর্থাত আত্মীয়ার বন্ধনে আবদ্ধ করা কি ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল নয়? চার খলিফাই একই বংশভূক্ত এবং কেউ জামাতা কেউ শ্বশুর এটা স্পষ্টতই পারিবারিককরণ নয় কি?

উত্তর: প্রথমে আসি আবুজর গিফারী প্রসঙ্গে।আপনি বলেছেন, হযরত উসমান আবুজর গিফরীকে নির্বাসনে দিয়েছিলেন।তো তাতে সমস্যা কোথায়?আবুজর যে নির্বাসনে যাবেন এবং সেখানেই তাঁর একাকী মৃত্যু ঘটবে একথা রাসুলুল্লাহই(স.) ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপরিচালনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানকে অনেক সময় অনেক অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হতেওপারে, তা কারোও কাছে পছন্দীয় হতে পারে বা না-ও হতে পারে। হযরত উসমান এবং আবুজরগিফরী দু’জনেই আল্লাহর নবীর খুব ভালো সাহাবী ছিলেন।রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে হযরত উসমানের সাথে আবুজর গিফরীর কিছুটা মতভেদ হয়েছিল সত্যি, কিন্তু তাতে তাঁদের মর্যাদা কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি। আর ১৪০০ বছর পর এসে  আপনি যদি হযরত উসমানকে খলিফা হিসেবে না-ও মানেন তাতে উসমানের খেলাফতের কিচ্ছু আসে যায় না।

দ্বিতীয়ত: আপনি প্রশ্ন তুলেছেন হযরত উসমান কতৃক কুরআন পুড়ানো নিয়ে। আচ্ছা,বলুনতো কোন ঘটনা বা কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত উসমান বিভিন্ন স্থানে কুরআনের কপি পুড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন? ব্যাকগ্রাউন্ড জানলে এই প্রশ্ন আপনি কখনোই করতেন না।

আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল- “আলী বুদ্ধি, কৌশল এবং শেষে পেশিতে মোয়াবিয়ার কাছে পরাস্ত হলেন সে কিভাবে আল্লার তরবারী এবং খলিফা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন?” 

দয়া করে বলবেন কী হযরত আলী কোন যুদ্ধে এবং কোথায় মুয়াবিয়ার কাছে “বুদ্ধি, কৌশল এবং পেশিতে” পরাস্ত হয়েছিলেন?সিফ্ফিনের যুদ্ধে আসলেই কী কোন পক্ষ জিতেছিল? 

আর হযরত আলীর টাইটেল যে “আল্লাহর তরবারী” ছিল একথা আপনাকে কে বলেছে? মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা দরকার।

আর আপনার তৃতীয় আপত্তি ছিল- “চার খলিফাই একই বংশভূক্ত এবং কেউ জামাতা কেউ শ্বশুর এটা স্পষ্টতই পারিবারিককরণ নয় কি?” বংশভুক্তকেউ যদি উপযুক্ত থাকে তবে তাতে সমস্যা কোথায়? আর বলুন তো চার খলিফা কোন কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং কীভাবে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন? তারা কী টুপ করে ক্ষমতায়বসে পড়েছিলেন না-কি তাঁদের নির্বাচিত করা হয়েছিল? 


১০)ইমাম মেহেদী এত অস্ত্রের মুখে কেন তরবারীদিয়ে যুদ্ধ করবে এবং ঘোড়ায় করে সংবাদ পাঠাবে।

উত্তর: “ইমাম মেহেদী  তরবারী দিয়ে যুদ্ধ করবে এবং ঘোড়ায় করে সংবাদ পাঠাবে”- এই বক্তব্যটি কুরআন শরীফের কোন সূরায় বা  কোন হাদীসে উল্লেখ আছে দয়া করে বলবেন কী? ইমাম মাহদী আগমন সম্পর্কিত ৪০টি নির্ভরযোগ্য হাদীস আমি পড়ে দেখেছি, কিন্তু কোথাও ইমাম মাহদী যে ঘোড়ায় চড়বেন বা তরবারী দিয়ে যুদ্ধ করবেন এমন তথ্য  কোথাও পায়নি। বরং, ইমাম মাহদী আগমন সংক্রান্ত এক হাদীসে বলা হয়েছে এভাবে-“যখন প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হবে তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীনকে সহায়তা করার জন্য নন-আরবদের মধ্য থেকে এমন এক সেনাবাহিনীর উম্মেষ ঘটাবেন,যাঁদের হাতে থাকবে উন্নতমানের অস্ত্র-শস্ত্র এবং তাঁরা হবে দ্রুত আরোহী (গ্রেটরাইডার)।”(সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-৯৭১, ভল্যুম-৩)।এই হাদীসে ইমাম মাহদীর সময়ে উন্নতমানের যানবাহন এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে ইঙ্গিতকরা হয়েছে। তো, ‘ঘোড়ায় চড়া’ এবং ‘তরবারী ব্যবহারের’ তথ্যগুলি কোত্থেকে পেয়েছেন দয়াকরে একটু বলবেন কী?

১১)মানুষ মাটি দিয়ে সৃষ্টি। অন্য প্রাণীরা মাটির সৃষ্টি নয়। অথচ মানুষের কোষের সাথে অন্য প্রাণীর কোষে প্রচুর মিল রয়েছে। এমনকি গঠন পরিপাক, জনন প্রনালী অনেকটাই এক রমক অর্থাত তারা একই ভাবে সৃষ্টি। এর কারণ কি?

উত্তর: ভালো প্রশ্ন।এর জবাবটা পবিত্র কুরআনেই দেয়া আছে। সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-“… আর প্রাণসম্পন্ন সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম, তবু কী তারা বিশ্বাস করবেনা?(২১:৩০) ।” পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে-“আল্লাহ পানি হতে সমস্ত জীবন সৃষ্টি করেছেন(২৪:৪৫)।” এছাড়া বলা হয়েছে,“তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানুষ,…(২৫:৫৪)।” যেহেতু মানুষ সহ  সমস্ত প্রাণীই পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে,সেহেতু মানুষের কোষের সাথে অন্য প্রাণীর কোষের প্রচুর মিল রয়েছে এবং পরিপাক,জননপ্রণালীও অনেকটা একরকম। বুঝতে পেরেছেন?

১২)ঈমানদারদের চেয়ে বেঈমানদাররা বেশি সত কাজ করছেন কেন? আল্লাহর রহমত মুসলমানদের উপর কি করে গেছে? মুসলমানদের সাফল্য এত কম কেন? মুসলমানরা অনেকক্ষেত্রেই বিধর্মীদের দয়ায় বেঁচে থাকে কেন? তাহলে বিধর্মীরা কি আল্লাহর বেশি প্রিয় হয়ে যাচ্ছে?

উত্তর: “মুসলমানদের সাফল্য এত কম কেন?”এই প্রশ্নথেকেই বোঝা যাচ্ছে মুসলমানদের অতীত ইতিহাস সম্বন্ধে আপনি একদম ওয়াকিবহাল নন।সভ্যতার বিকাশ এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের উম্মেষে মুসলমানদের অবদান কী ছিল তাসংক্ষিপ্তভাবে জানতে নীচের লিংকগুলো ভিজিট করুন;


তবে, হাঁ,মুসলমানরা বর্তমানে সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেছে, কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীর ৬০ শতাংশ খনিজ সম্পদের মালিক হওয়া সত্বেও মুসলমানদের পিছিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কুরআন ও হাদীসের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া। যাহোক, এটি আরোও বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার  দাবী রাখে।

আপনি আরো প্রশ্ন করলেন- “মুসলমানরা অনেকক্ষেত্রেই বিধর্মীদের দয়ায় বেঁচে থাকে কেন?” এটা কী একটা প্রশ্ন হলো? মুসলমানরা যদি ইউরোপ-আমেরিকায় বিধর্মীদের তেল সরবরাহ বন্ধকরে দেয় তবে তাদের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। তবে কী আপনি বলবেন যে বিধর্মীরা মুসলমানদের দয়ায় বেঁচে আছে !! পৃথিবীতে বেঁচে থাকার তাগিদে সবাই সবার নির্ভরশীল,আল্লাহপাক সমাজটাকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন। যেমন: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলছেন,“তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছেন, মর্যাদায় তোমাদেরকতককে কতকের উপরে স্থান দিয়েছেন, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি ওগুলোর মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য,…”(৭:১৬৫)।

আপনি আরোও জিজ্ঞেস করলেন- ‘ঈমানদারদের চেয়ে বেঈমানদাররা বেশি সত কাজ করছেন কেন?’ ঈমানদার বা বেঈমানদার-কে কত পরিমাণ  সত কাজ করছে সে সংক্রান্ত কোন গবেষণাকর্ম কী আপনারকাছে আছে ? থাকলে একটু দেন তো। সতকাজ পরিমাপের মাপকাঠিই বা কী?


১৩) চোর ডাকাতদের রেজেক কে দেয়? যদি আল্লাহই চোর ডাকাতদের রেকেজ এভাবেই দেয় তবে তাদেও করার কি আছে? জারজ সন্তানদের রুহু যদি আল্লাহই সৃষ্টি করে থাকেন তাহলে শয়তান এখানে কি করেছে? মানুষের ভাগ্য ও হেদায়েত আল্লাহর হাতে থাকলে শয়তানের গুরুত্ব কি?

উত্তর: চোর ডাকাতদের রেজেক আল্লাহই দেন। মানুষেরসামনে সবসময় দু’টি পথ খোলা থাকে।একটি ভালো অপরটি মন্দ। দু’টি পথই আল্লাহর সৃষ্টি।দুধ খেলে যেমন শক্তি হয় তেমনি মদ খেলেও শক্তি হয়। ভালো বা মন্দ বেছে নেওয়ার দায়িত্ব মানুষের ।আল্লাহ মানুষকে যেমন ভালো কাজ করতে বাধ্য করেন না তেমনি মন্দ কাজ করতেও বাধা দেন না। তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গরু বা ছাগলকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেয়া হয়নি।  গরু বা ছাগল চাইলেই বিমানে করে উড়ে গিয়ে আমেরিকান গরু বা ছাগলের সংগে দেখা করতে যেতে পারে না।কিন্তু মানুষ চাইলে তা পারে।  গরু বা ছাগল চাইলেই সারা বছর প্রজনন করতে পারে না,কিন্তু মানুষ তা পারে ।মানুষকে অফুরন্তস্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। তাই শেষ বিচারের দিন মানুষের বিচার হবে, গরু-ছাগলের হবেনা। 
১৪)স্রষ্টা ছাড়া যদিকিছু সৃষ্টি না হয়। অর্থাত বলা হয় আল্লাহ না থাকলে এত সৃষ্টি হল কিভাবে এবং সুনিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কিভবে? তাহলে স্রষ্টা ছাড়া আল্লাহর নিজের সৃষ্টি কিভবে হল?

উত্তর: প্রশ্ন করলেন, “স্রষ্টা ছাড়া যদি কিছু সৃষ্টি না হয়। তাহলে স্রষ্টা ছাড়া আল্লাহর নিজের সৃষ্টি কিভবে হল?” ঠিক আছে, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম “এক্স” নামকবস্তু আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে। তবে, এবার বলুন তো এই “এক্স”কে কে সৃষ্টি করেছে?
১৫)মানুষকে লোভ দেখিয়ে কোন কাজ করানো বা ভয় দেখিয়ে কোন কাজ করানো অবশ্যই ঠিক নয়। তাহলে বেহেস্ত-দোজখের লোভ বা ভয় দেখিযে তাকে ধর্মের পথে আনানো কি সঠিক?

উত্তর: “ভালো করে পড়াশুনা কর, না হয় ফেল করবা”-এইভয় দেখিয়ে মা-বাবা যদি সন্তানকে উপদেশ দিতে পারে তবে বেহেশত-দোজখের লোভ বা ভয় দেখিয়ে ধর্মের পথে আনা  সঠিক হবে না কেন?

১৬)বৃষ্টিপাত নাকি মিকাইল ফেরেস্তা নিয়ন্ত্রন করেন। বৃষ্টিপাতের সিস্টেম আজ মানুষের জানা সেই সিস্টেমে মিকাইল ফেরেস্তার প্রয়োজন কোথায়? মানুষ বর্তমানে কৃত্রিম ভাবেও বৃষ্টি নামাচ্ছে। এটাকি মিকাইল ফেরেস্তার কাজে হস্তক্ষেপের সামিল নয়? তারপরেও তিনি নীরব কেন?
উত্তর: আচ্ছা, আজরাইল ফেরেশতা তো মানুষের জান কবজ করে। যখন মানুষ আত্মহত্যা করে তখন কী আজরাইলের কাজে হস্তক্ষেপ ঘটে? কী মনে হয়?


১৭)মৃত্যুর পর হিসাব নিকাশের পর বেহেশত দোযখ বরাদ্দ হবে, তাহলে কবরের আযাব কি জিনিশ? ঐখানে কিসের বেসিসে পানিশম্যান্ট দেয়া হবে? যদি মৃত্যুর পরপরি কাউকে বেহশত এর সুখ আর দোযখের কষ্ট ভোগ করান শুরু হয়ে যায় তাহলে শেষবিচারের দরকার টা কি?

উত্তর:সেই সহজ ব্যাপারটাও বুঝলেন না! একজন খুনীকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন কী করা হয়?তাকে হাজতে নেয়া হয়, এজাহার,চার্জশীট প্রস্তুত করা হয়, কোর্টে চালান করা হয়, জেলে নেয়া হয়, রিমান্ডে নেয়া হয় , স্বাক্ষ্য-প্রমাণ আনা হয়,বিচার করা হয়, সবকিছু প্রমাণ হলে তার ফাসীঁ হয়। ঠিক তেমনি কবর আযাব হচ্ছে রিমান্ড ও বিচারাদির প্রাথমিক প্রক্রিয়া আর শেষ বিচার হচ্ছে চুড়ান্ত বিচার যার পরেই হবে আসল শাস্তি বা মুক্তি।কথা বুঝে এসছে?

http://www.shodalap.org/rasel-eusoofi/24754/ 

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

হাদিস ছহিহ ও যঈফ হয় কিন্তু জাল্ হতে পারেনা ,যারাই হাদিসকে জাল্ বলে তারাই মূলত জালিয়াতী



বর্তমানে আহলে হাদিসের ভাইয়েরা সাহীহ,ও যঈফ এই দু
ই প্রকারের হাদিস নিয়েই বিশেষ আলোচনা করে থাকেন এবং মানুষকে এভাবে বুঝিয়ে থাকেন যে আমরা কোরআন আর ছহিহ হাদিস মানি আর ছহীহ অর্থ সঠিক ও সত্য আর যঈফ অর্থ নকল মিথ্যা বানোয়াট জাল্। এটাই মানুষ স্বাভাবিক ভাবে ছহীহ এবং জাল শব্দের অর্থ বুঝে থাকেন।এবং বুঝিয়ে থাকেন আসলে কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় বরং হাদিসের ক্ষেত্রে ছহিহ এবং যঈফ কাকে বলে তা আমাদের প্রচলিত পরিভাষা দিয়ে বুঝলে হবেনা বরং কোরআন-হাদিসকে তার নিজস্ব পরিভাষা দিয়েই বুঝতে হবে অন্যাথায় হীতে বিপরীত হবে।
এই জন্য আগে এ সংক্রান্ত কিছু ব্যবহারীত কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে হবে যেমন 

রিওয়ায়ত (رواية)]
হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়ত বলে। কখনও কখনও মূল হাদীসকেও রিওয়ায়ত বলা হয়। যেমন, এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়ত (হাদীস) আছে।
সনদ (سند)[]
হাদীসের মূল কথাটুকু যে সূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলা হয়। এতে হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।
মতন (متن)
হাদীসের মূল কথা ও তার শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।
এবার আসুন মূল কথায়

যেমন হাদিসের পরিভাষায় সাহীহ (صحيح) বলা হয়:-
যে মুত্তাসিল হাদীসের সনদে উলে¬খিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবতা-গুণসম্পন্ন এবং হাদীসটি যাবতীয় দোষত্র“টি মুক্ত তাকে সাহীহ হাদীস বলে।এবং এর দ্বারা আক্বাইদ সংক্রান্ত মাছয়ালা প্রমানের সাথে সাথে শরয়ী বিধি বিধানও প্রমানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
হাসান حسن বলা হয়;-
যে হাদীসে কোন রাবীর যারতগুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলা হয়। ফিকহবিদগণ সাধারণত সাহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরী‘আতের বিধান নির্ধারণ করেন।
যঈফ (ضعيف)] বলা হয়:-
যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।যঈফ হাদিসের দ্বারায় ফাজায়েল তরগীব ও তরহীব সম্পর্কিত বিধান প্রমানীত হয়।

উপরোক্ত সংজ্ঞাটি আলেম ওলামা সহ যারা হাদিস অধ্যয়ন করেন তাদের জন্য। তাই অনেক ক্ষেত্রে উক্ত সংজ্ঞাটি সাধারনের বুঝতে অনেক কষ্ট হয়ে যায় এই জন্য সাধারনের সুবিধার্থে এই ভাবে বলা হয় থাকে যে,
যেমন হাদিস বর্নণাকারীদের অবস্হার পরিপেক্ষিতে হাদিস ছহিহ, হাছান বা যঈফ হয়ে থাকে।

যেমন হাদিসের বর্নণাকারী যোগ্যতার মাফকাঠিতে তিন ধরনের হয়ে থাকে 1. উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন হাদিস বর্নণাকারী 2.মধ্যম যোগ্যতা সম্পন্ন হাদিস বর্নণাকারী ও3. নিন্ম যোগ্যতা সম্পন্ন হাদিস বর্নণাকারী (অর্থাৎ ফাস্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস, ও থার্ট ক্লাস) তাই উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন বর্নণাকারীদের হাদিস কে "সাহীহ হাদিস" বলা হয়। মধ্যম যোগ্যতা সম্পন্ন বর্নণাকারীদের হাদিসকে "হাসান হাদিস" বলা হয়। আর নিন্ম যোগ্যতা সম্পন্ন বর্নণাকারীদের হাদিস কে "যঈফ হাদিস "বলা হয়।
কিন্তু নিন্ম যোগ্যতা সম্পন্ন বর্নণাকারীদের বর্নণাকৃত হাদিসকে কোন ভাবেই জাল মিথ্যা বানোয়াট হাদিস বলার সুযোগ নেই। হাদিস বর্নণাকারীর দুর্বলতার কারণেই হাদীসকে দুর্বল বা যঈফ বলা হয়, অন্যথায় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন কথাই যঈফ নয়।

যঈফ (ضعيف) বলা হয় ঐ সকল হাদিসকে 
যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।যঈফ হাদিসের দ্বারায় ফাজায়েল তরগীব ও তরহীব সম্পর্কিত বিধান প্রমানীত হয়।
বিঃদ্রঃ:-- রাবীর দুর্বলতার কারণেই হাদীসকে দুর্বল বলা হয়, অন্যথায় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন কথাই যঈফ নয়।যঈফ অর্থ দূর্বল কিন্তু একে জাল বলে আখ্যায়িত করা অনূচীত। বরং যে বা যাহারা যঈফ হাদিসকে জাল বলে আখ্যায়িত করেন,জাল হাদিস, জাল হাদিস বলে মুখের ফেনা বাহির করে ফেলেন মূলত তারা এ কর্মের দ্বারা রসুল সাঃ এর উপর মিথ্যার এলজাম দিয়ে থাকেন পরোক্ষ ভাবে।যেমন সাধারণত জাল্ শব্দের অর্থ নকল, মিথ্যা, বানোয়াট,ই বুঝায়, যার আরবী হল তযবীর অর্থাৎ জাল্। কিন্তু হাদিসের পরিভাষায় যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।আর "যঈফ" ইহা একটি আরবী শব্দ এর অর্থ হল দূর্বল।কিন্তু কোন প্রকারেই জঈফ হাদিসকে "জাল" হাদিস বলা যাবেনা।বা "যঈফ" শব্দের অর্থ "জাল" বলা যাবেনা।
যারাই বলেন মূলত তারা সাধারনকে ধোকা দিয়ে ,শব্দের অপব্যাখ্যা করে অদৃশ্য কোন ফায়দা হাছিল করতে চায়।
যেমন ধরুন যারা বলেন আমরা কোরআন এবং ছহীহ হাদিস মানি ও ছেহাহ ছিত্তার হাদিস মানি এর অর্থ দাড়ায় যে ছেহাহ ছিত্তার বাহিরে আর কোন ছহিহ হাদীস নেই?আসলে তা নয় বরং ছেহা ছিত্তার বাহিরেও অসংখ্য ছহি হাদিস বিদ্ধমান । অথচ ছেহাহ ছিত্তায় গডে মিলে সর্বমোট ৩৮৭৭৫ টি হাদিস (তকরার সহ)অথচ নবী সাঃ হইতে রেওয়ায়েত কৃত হাদিসের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষাধীক।আর ইমাম বোখারীর সংকলন কৃত সেই বোখারী শরিফে হাদীসের সংখ্যা-7275 টি হলেও তাঁর সংকলনে ছিল প্রায় ৬ লক্ষাধীক হাদিস। আর মুখস্হ ছিল প্রায় ৩ লক্ষাধীক হাদিস।তাহলে পূর্ণাঙ্গ শরিয়তের উপর আমল করতে হলে 38775 টি হাদিস কি যথেষ্ট? তাই যদি হয় তাহলে অন্যান্য হাদিসের উপর কি ভাবে আমল করা সম্ভব? তাছাড়া যদি ৩৮৭৭৫ টি হাদিস কে যদি ছহিহ মানী আর বাকী সব হাদিসকে যঈফ জাল্(তাদের ভাষায়) বলি তাহলে এর অর্থ কি দাড়াল ? আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ, যিনি সমস্ত গুনাহর থেকে পাক পবিত্র নিশ্পাপ হওয়া সত্বেও প্রায় ৯,৬০,০০০টির মত জাল অর্থাৎ নকল, মিথ্যা বানোয়াট, ও ভূল কথা বলেছেন ।নাউযুবিল্লাহ! এমন কথা বলা বা বিশ্বাস করা কোন ঈমানদার মুসলমান কি করতে পারে?এক কথায় বলব যে , না, না,কখনো কোন মুসলিম এমন আক্বিদাহ বিশ্বাস রাখতে পারেনা। তাহলে কেন সাধারন মুসলমানকে ধোকা দেয়ার জন্য কথায় কথায় ছহিহ হাদিসের জিকির করা হচ্ছে?কার সার্থে? কাকে খুশি করার জন্য।না জানি এর পিছনে কোন গভীর চক্রান্ত লুকায়ীত আছে! হাদিস ছহিহ ও যঈফ হয় কিন্তু জাল্ হতে পারেনা ,যারাই হাদিসকে  জাল্ বলে তারাই মূলত জালিয়াতী 

তাছাড়া এখানে আরও একটি বিষয় স্বরন রাখা জরুরী যে যঈফ হাদিসকে জাল্ হাদিস বলে চালিয়ে দেয়ার মাধ্যমে কৌশলে ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে নিন্ম যোগ্যতা সম্পন্ন নবীর ছাহাবীদের অবজ্ঞা করা হচ্ছে। তাদের যোগ্যতা ও কর্মকে অস্বীকার করা হচ্ছে।এতে পরোক্ষভাবে ছাহাবিদের অস্বীকার করার নামান্তর।মূলত এমন চরিত্র শিয়াদেরই মানায়,

আল্লাহ আমাদের সকলকে হক কথা বুঝার তাওফিক দান করুন আমিন।

লেখক:-লেখক:-া
মাওঃ আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
লেখক,গবেষক, কলামিষ্ট,অনলাইন ইসলামী এক্টিভিষ্ট এন্ড ব্লগার

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভালোবাসা দিবস নামক সামাজিক এ ক্যান্সার থেকে আপনার সন্তানদের দূরে রাখুন। যার ফসল হল মরণ ব্যাধী এইডস্।

ভালোবাসা দিবস আমাদের সংস্কৃতি নয়,ভালোবাসা দিবস নামক সামাজিক এ ক্যান্সার থেকে আপনার সন্তানদের দূরে রাখুন।ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’।এই দিসবতো পালনীয় নয় বরং একে থুথু নিক্ষেপ করা উচিত।এটা ভালবাসার নামে "গজব দিবস" "বিশ্ব বেহায়া" দিবস নাম হওয়া উচিত।

 আমরা দূর্ভাগা জাতি।আমরা না জানি নিজেদের ধর্ম, না জানি নিজেদের কৃষ্টি ও সভ্যতা। এজন্য প্রথমেই এগিয়ে আসা উচিত্‌ রাষ্ট্রকে।কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী যখন "ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে বা ভালোবাসা দিবসে" নিজেদেরকে ঐ দিবসে উপস্থিত থেকে জনসাধারণকে ভালোবাসা দিবসে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে বিদেশী অপসংস্কৃতিকে পালনের জন্য সহজ-সরল মানুষগুলোকে আহ্বান জানায়। বিশেষকরে উড়তি বয়সের তরুন-তরুনী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা এতে  বেশি আকৃষ্ট হয়।

এই সংস্কৃতি শুধু বেহায়াপনা তৈরী করে না সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। মুক্তমনা সংস্কৃতির নামে সমাজে আজ নারী প্রগতিবীদ ও কিছু সুশীল! সমাজপতিরা উদার মানসিকতার কথা বলে, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে, নারীদের বেপর্দা করে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। সন্তান-সন্ততিদের মায়ের স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে। অথচ ইসলাম কখনো নারীকে অন্তপুরে বন্দি রাখতে বলেনি। বরং শালীন পোশাক আর পর্দা করে সকল কাজে অংশীদার হতে বলেছে।

অনেকের পিতা মাতা আছেন যাঁরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন তবে তাদের ছেলে-মেয়েরা এই সমস্ত অপসংস্কৃতিতে অংশগ্রহণ করছে। তাই আমি মনে করি সর্বপ্রথমে পরিবারের পিতা-মাতাকে সন্তানের মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসা উচিত্‌। আজ শহর থেকে গ্রামেও এই ভালোবাসা দিবস ছড়িয়ে গেছে। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের সহজ-সরল বাবা মাকে ভুল বুঝিয়ে অর্থ নিয়ে এই অপসংস্কৃতিকে পালন করছে। আজ ইউরোপ আমেরিকায় ভালোবাসার নামে দিনে দুপুরে সবারই সামনে যেভাবে ভালোবাসার প্রমাণ দেয় তা পশু প্রবৃত্তিকেও ছাড়িয়ে গেছে। দুঃখের বিষয় আজকে আমাদের গুনেধরা এ সমাজের কিছু  কুলাংগার এই বেইশ্যা প্রবৃত্বিকে স্বাগত জানাতে সরওয়ারদি উদ্যানে প্রকাশ্যে কিস্ করার ঘোষনা দিয়ে  এ জাতিকে কি শেখাতে চাচ্ছে। আমাদের এই জাতির ভবিষ্যৎ এই দেশের ভবিষ্যৎ কি হবে আল্লাহই ভাল জানেন।

অনেক অমুসলিম দেশে হোটেল রেস্তোরা গুলো অগ্রীম বুকিং দিয়ে রাখতে হয় ,ঐ দিনটি প্রেমিক প্রেমিকাদের ভালবাসার প্রমান স্বরূপ , কথিত আছে যে সারা বছর টানকী মারার পর ঐ দিন নাকী চুডান্ত ফলাফল পাওয়ার দিন হিসাবে তাদের কাছে গন্য করা হয় । ছি, ছি , ছি, এই নগ্নতাকে ধিক্কার জানাই এই বেহায়া পনাকে , ধিক্কার জানাই এই স্বঘোষিত বেইশ্যা দিবস কে ।আজকের সমাজে এই রকম ভালবাসার নামে অবৈধ যৌন মিলনের ফসল হল মরণ ব্যাধী এইডস্।

অবাধ যৌন মিলনের ফলে “AIDS” নামক একটি রোগ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটা এমনি মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে এর কোন আরোগ্য নেই। কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে :

1. বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশী লোক থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক লক্ষ এগার হাজারেরও বেশী “AIDS” রোগীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে।’’(আব্দুল খালেক, নারী,(ই,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ. ৯৬)

2. ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২,৪২,০০০ এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১,৬০,০০০ মৃত্যু বরণ করেছিল। ১৯৯২ সালের গবেষণালব্ধ তথ্য মতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্য এইডস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।(Baron& Byrne, Ibid., P. 329)

3. ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ এর Time International’ পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য মতে, ৬৫ লক্ষ জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। আগামী ৫ বৎসরে আরও ৩ কোটি লোক মারা যাবে এই রোগে।(মাসিক পৃথিবী, (ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯), পৃ. ৫)

4. বিশ্ব এইডস দিবস ২০০০-এর প্রাক্কালে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে : ‘‘ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী এবং সমকামিতা, ইতর রীতির যৌনতার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন-আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় এইডস দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে প্রতি তিনজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এইডস আক্রান্ত। শিশুদের ৮০ ভাগ এই রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত। আফ্রিকার উপ-সাহারা এলাকায় এ বছর ১০ লাখেরও বেশী লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে নতুন করে এইডস দেখা দিয়েছে। মাত্র একবছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যেও নতুন করে এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’’(রয়টার্স, দৈনিক ইনকিলাব, (ঢাকা, ২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ .১-২)

5. ৬. জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে : ‘‘বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক এইডসে আক্রান্ত ২০০০ইং সনে ৫০ লাখ লোক নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে।’’(প্রাগুক্ত)

6. ৭. ‘‘বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় (ঢাকা) বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজকল্যাণ, প্রতি মন্ত্রী ড. মোজাম্মেল হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে এইডস ভাইরাস বহনকারী রোগীর সংখ্যা একুশ হাজারের বেশী।’’(দৈনিক ইনকিলাব, (স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা, ২রা ডিসেম্বর, ২০০০ ইং) পৃ.১)

সিফিলিস-প্রমেহ : বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমেরিকার শতকরা ৯০% অধিবাসী রতিজ দুষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেখানকার সরকারী হাসপাতালগুলিতে প্রতি বৎসর গড়ে দুই লক্ষ সিফিলিস এবং এক লক্ষ ষাট হাজার প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। (Encyclopedia Britannica, V. 23, P. 45.) এছাড়াও আমেরিকায় প্রতি বৎসর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিশু জন্মগত সিফিলিস রোগে মৃত্যুবরণ করে। ( আঃ খালেক, নারী, (ঢাকা : ই.ফা. বা., ১৯৮৪ ইং), পৃ. ৯৬)


Dr. Laredde বলেন— ফ্রান্সে প্রতি বৎসর কেবল সিফিলিস ও তদ-জনিত রোগে ত্রিশ হাজার লোক মারা যায়। (প্রাগুক্ত)
হার্পিস রোগ :
ব্যভিচারের কারণে জননেন্দ্রিয়ে সৃষ্ট অত্যন্ত পীড়াদায়ক রোগ হলো Genital Herpes. মার্কিন জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ (জনসংখ্যা ২৬ কোটি ধরলে তার ১০% হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ) এই রোগে আক্রান্ত। এটাই সব নয়। প্রত্যেক বৎসর প্রায় ৫০০,০০০ মানুষের নাম এই মারাত্মক হার্পিস রোগীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। (Baron & Byrne, Social psychology : Understanding Human Interaction, P. 329.)
৮. বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কাণ্ডের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে।
৯. মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।


প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা ! ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।ভালবাসা আমাদেরকে দিনক্ষন নির্ধারন করে পালন করতে হবেনা, মুসলমানদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব সময় সব কাজ কর্ম সবই ভালবাসার প্রতীক। দিনক্ষন নির্ধারন করে ভাল বাসা দিবস  পালন করা ওদের জন্যই মানায় যাদের মধ্যে , স্বামী তার স্ত্রীকে বিশ্বাস করেনা আর স্ত্রী তার স্বামীকেও বিশ্বাস করেনা।ভাই তার বোনকে বিশ্বাস করেনা এবং বোনও তার ভাইকে বিশ্বাস করতে পারেনা। ছেলে তার মাকে বিশ্বাস করেনা পক্ষান্তরে মাও তার ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারেনা। ঐ জাতির জন্যই ভালবাসার  দিনক্ষন লাগে ।দ্বীনদার ঈমানদার মুসলমানদের জন্য এমন দিনের প্রয়োজন পডেনা।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড হতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালবাসি এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখি। আমীন !!! 
লেখক:- 
m.m.abdullah bhuiyan 

মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

জুমার খোৎবাহ আরবীতে নাকী মাতৃভাষায় ,জুমার খোৎবা বাংলা ভাষায় দেয়া যাবে কি

জুমার খোৎবা বাংলা ভাষায় দেয়া যাবে কি ?


এটা বর্তমান সময়ের একটা মৌলিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন কারণ আজকাল অনেকে জুমা বা ঈদের খোৎবাকে ওয়াজ নসিহত মনে করে আরবী খোৎবার বিপরীতে বাংলা বা ইংরেজীতে , বা বাংলা আরবী ও ইংরেজী ইত্যাদি ভাষার সংমিশ্রনে খোৎবা দিয়ে থকেন।এই জন্য আমাদের সকলের কাছে এ বিষয়টি পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন যে,আসলে জুমার এ খোৎবাটি নিচক বক্ততা,না জিকিরের অন্তর্ভূক্ত। তাই এ ব্যাপারে আমি আহলে হক্ব মিডিয়ার প্রশ্নো্ত্তর পর্বে আমি ফতোয়া তলব করেছিলাম , সন্মানীত মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী ছাঃ পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা এর কাছে । তখন তিনি যে উত্তরটি প্রদান করেছিলেন সর্ব প্রথম আমি তা হুবহু তুলে ধরছি।

আচ্ছালামু আলইকুম ,

প্রশ্ন:—- আমাদের দেশে সচরাচর আরবীতেই খুৎবা দিয়ে থাকেন , আবার ইদানীং কোথাও কোথাও শুধু বাংলাতেই খুৎবার প্রচলন দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে অনেক দেশ যেখানে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ও অন্যান্য ভাষার লোকজন ও আছে সেখানে , বাংলা আরবী ইংরেজী ইত্যাদীর সংমিশ্রনে খোৎবা দিয়ে থাকেন । এমনটি জায়েয কিনা ?আর আমাদের দেশে আরবীর সংমিশ্রনে বাংলাতে খোৎবা দেয়া যাবে কি ?

এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া,মক্কা সৌদি আরব

উত্তর

وعليكم السلام ورحنة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

জুমআর খুতবা অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুতবা প্রদান করা রাসূল সাঃ এবং পরবর্তীতে কোন সাহাবী থেকেই প্রমাণিত নয়।

নবীজী সাঃ এর মৃত্যুকালের শেষ সময়ে আরবের বাহিরের অনেক অনারবী মুসলমানই মসজিদে নববীতে এসে নামায পড়তো। কিন্তু কোনদিনও কোন জুমআর খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি।

সাহাবায়ে কেরামের জমানায় এর কোন নজীর পাওয়া যায় না। হযরত উমর রাঃ এর জমানায় অনারবী মানুষে ভরে গিয়েছিল মদীনা। কিন্তু কোনদিন মসজিদে নববীতে জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দেয়া হয়েছে বা দোভাষী দিয়ে অন্য ভাষায় তা অনুবাদ করা হয়েছে এর কোন নজীর নেই।

সেই সাথে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন দেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গেছেন। সেসব রাষ্ট্রে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু অনারবী রাষ্ট্রে এসে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়েছেন বা তাদের আরবী খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে জুমআর সময় শুনানো হয়েছে এর কোন নজীর নেই।

যে কাজ রাসূল সাঃ করেননি, বা পরবর্তী সাহাবায়ে কেরাম করেননি। সে কাজ দ্বীন হিসেবে করা সুনিশ্চিতভাবেই বিদআত। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। এটি পরিত্যাজ্য।

নামাযের কিরাত যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া বিদআত। ঠিক তেমনি জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দেয়া বিদআত।

যারা এ বিদআতি কাজটি করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে রাসুল সাঃ থেকে এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে সহীহ হাদীসের দলীল চান। তাহলেই দেখবেন, দলীল নয় মনের খাহেশাতই হচ্ছে তাদের দলীল।

সুতরাং এ বিদআতি কাজ থেকে সকলেরই বিরত থাকতে হবে।

হযরত ইরবাস বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,

مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

তোমাদের মাঝে আমার পর জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের উপর আমার এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরবে। সেটিকে মাড়ির দাত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪৪}

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ»

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মে নেই এমন বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে আবিস্কার করে তা পরিত্যাজ্য। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-২৬৯৭}

একটি মনগড়া কিয়াসের জবাব:- যারা রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে নিজের নফসের পূজা করে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়ে থাকেন, তারা কুরআন ও হাদীস রেখে নিজের অজ্ঞ মস্তিস্কপ্রসূত একটি ভ্রান্ত কিয়াসের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। সেটি হল, তারা বলেন, খুতবা হল একটি বক্তৃতা। আর বক্তৃতা সেই ভাষায়ই দিতে হবে, যে ভাষায় মানুষ বুঝে থাকে।

জবাব ১,খুতবা মানে শুধু বক্তৃতা এটি অজ্ঞতাসূচক বক্তব্য। কুরআন ও হাদীসে জুমআর খুতবাকে শুধু বক্তৃতা সাব্যস্ত করা হয়নি।বরং কুরআন-হাদিসে খুতবাকে জিকির বলা হয়েছে। প্রমান দেখুনو

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩]

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ( সুরা জুমা আয়াত ৯ )আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য । (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)হাদিসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।

فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر

যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতারা এসে যিকির শুনে অর্থাৎ খুতবা শোনে । (বোখারি ১/৩০১, মুসলিম হাদিস নং ৮০৫)সুতরাং কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির যেমন অন্য ভাষায় দেয়া হয় না।তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেয়ার বিধান নেই।

২,হাদীসে জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামজের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে ।হযরত ওমর ও আয়েশা রঃ থেকে বর্ণিতحَدِيثُ عُمَرَ وَغَيْرِهِ أَنَّهُمْ قَالُوا إنَّمَا قَصُرَتْ الصَّلَاةُ لِأَجْلِ الْخُطْبَةِ জুমার নামাজ কে খুতবার জন্য ছোট করে দেওয়া হয়েছে। (ইবনে হাজার আসকালানি তালখিসুল হাবির ২/১৭৬)

كَانَتِ الْجُمُعَةُ أَرْبَعًا فَجُعِلَتِ الْخُطْبَةُ مَكَانَ الرَّكْعَتَيْنِ জুমার নামাজ চার রাকাত ছিল অতঃপর খুতবাকে দুই রাকাতের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে (বাইহাকি ৫২৫৮ নং)শুধু নিছক বক্তৃতার নাম খুতবা নয়। এটি নামাযের মতই গুরুত্বপূর্ণ ও দুই রাকাতের স্থলাভিসিক্ত। তাই নামাযে যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া যায় না, তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় পড়া যাবে না।

খুতবা অন্য ভাষায় দেয়ার দাবি ইসলামকে খেলনা বস্তু বানানোর ষড়যন্ত্র

আজান, ইকামত, তাকবীর, কুরআন, তিলাওয়াত, জিকির ও খুতবা এ সবই ইসলামের প্রতীক। এর কোনটিরই অন্য ভাষায় পড়ার কোন নজীর রাসূল সাঃ থেকে নেই। নেই সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে। এমনকি তাবেয়ী বা তাবেয়ীগণ থেকেও নেই।তাই এসবকে অনুবাদ করে বলার দাবি করা ইসলামের প্রতিককে পাল্টে ফেলার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানকারী বিদআতি ব্যক্তিদের থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। আমীন والله اعلم بالصواب

সন্মানীত পাঠকবৃন্দ :-

আমরা উপরোক্ত ফতোয়া বা আলোচনার আলোকে জানতে পারলাম যে জুমার খোৎবা সহ দুই ঈদের খোৎবা এটা নিছক কোন বক্ততা নয় বরং এটা একটা জিকির ।এবং জুমার খোৎবা দুই রাকাত নামাজের স্হলা বিসিক্ত সুতরাং নামাজ যেমন আরবী ছাডা অন্য ভাষায় পড়ার সূযোগ নেই তেমনি জুমার খোৎবাও অন্য ভাষায় পড়ার বা দেয়ার সুযোগ নেই।খোৎবার ভেতরে বাংলা ভাষার সংমিশ্রণ করা হুজুরপাক (সা.)-এর সুন্নাতে মুতাওয়ারেছার বরখেলাপ, যা মুসলমানদের কাম্য হতে পারে না। যদি কোনো মসজিদে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে ইমাম সাহেব খোৎবার আজানের পূর্বে অথবা জুমার নামাজের পরে খোৎবার সারমর্ম মুসল্লিগণকে বুঝিয়ে দিতে পারেন । অথবা দেশের কোন কোন স্হানে প্রচলিত আছে যে সামর্থ থাকলে তা ছাপিয়ে বিতরণ করতে পারেন। তাহলে আসুন এই নিয়ে বিশদ আলোচনার মাধ্যমে মূল কথাটি অনূধাবন করার চেষ্টা করি।

খোতবা বলতে কী বুঝায় :---

খুতবা একটি পারিভাষিক শব্দ। শরীয়তের পরিভাষায় এর স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে। শুধু আভিধানিক অর্থের মাধ্যমে এর পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়। এটা শুধু খুতবাতে নয়; বরং ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত সকল শব্দের ক্ষেত্রে একই নিয়ম। যেমন- সালাত, যাকাত, সাওম ইত্যাদি।

সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ দুআ। যদি কোন ব্যক্তি পুরো দিনও দুআয় মগ্ন থাকে, তাহলে কেউ তাকে বলবে না যে, সে সালাত আদায় করছে; বরং শরীয়ত সালাত আদায়ের যে পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে তা অবলম্বনেই একমাত্র সালাত আদায় সম্ভব।

যাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা। সাওম এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। কিন্তু এসব আভিধানিক অর্থ দ্বারা যাকাত ও সাওমের পরিচয় পাওয়া যায়না। শুধু পবিত্রতার মাধ্যমে যাকাত আদায়ের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না। যে কোনো জিনিস থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সাওমের দায়িত্ব পালিত হয় না। কেননা, আভিধানিক অর্থের বাহিরে এসব শব্দের নিজস্ব পারিভাষিক অর্থ ও পরিচয় আছে।

শরীয়তের পরিভাষায় এসব শব্দ বিশেষ কিছু ইবাদতকেই বুঝায়। যা তার নির্ধারিত নিয়ম কানুনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

এমনিভাবে খুতবার আভিধানিক অর্থ বক্তৃতা। কিন্তু এর মাধ্যমে খুতবার বাস্তবতা ও পরিচয় পাওয়া যায় না। শরীয়তের দৃষ্টিতে খুতবা সম্পাদিত হওয়ার জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে কিছু নিয়ম-কানুনের অনুসরণ করা অপরিহার্য। এসব নিয়ম-কানুন ও বৈশিষ্টাবলীর প্রতি লক্ষ্য করলে খুতবার শরয়ী তাৎপর্য স্পষ্ট হয়।

খুতবা দেওয়ার মাসনুন তরীকা :-- 

উপমহাদেশের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী র. তার রচিত মুয়াত্তায়ে মালেকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মুসাফ্ফা’-তে লিখেন-

لما لاحظنا خطبة النبي (ص) وخلفائه (رض) وهلم جرا فنجد فيها وجود أشياء منها : الحمد والشهادتين والصلوة علي النبي (ص) والامر بالتقوي وتلاوة آية والدعا للمسلمين وللمسلمات وكون الخطبة عربية …………..الخ. (مصفي شرح موطأ: ১/১৫৩)

অর্থ: রাসূল স., খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কিরাম ও উলামায়ে দীনের খুতবা সমূহ লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, তাদের খুতবাতে নিম্নের বিষয়গুলো ছিলো। যথা:

আল্লাহ তাআলার হামদ্, শাহাদাতাইন (অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য) রাসূল স. এর প্রতি দরুদ, তাকওয়ার আদেশ মূলক কুরআন পাকের আয়াত, মুসলমানদের জন্য দুআ। তারা সকলেই আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। মুসলিম বিশ্বের বহু অঞ্চলের ভাষা অনারবী হওয়া সত্ত্বেও গোটা বিশ্বে আরবী ভাষাতেই খুতবা দিয়েছেন। (মুসাফ্ফা-খ:১ পৃ: ১৫৪)

সুতরাং রাসূল স., খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনের খুতবার উপর ভিত্তিকরে ফুকাহায়ে কিরাম বলেন- খুতবাতে নিম্নের বিষয়গুলো থাকা সুন্নাত। যথা:

১. হামদ ২.সানা ৩.শাহাদাতাইন ৪.রাসূল স. এর উপর দরুদ ৫.তাকওয়ার আদেশ মূলক কুরআনের আয়াত ৬.আরবী ভাষায় ওয়াজ নসীহত ৭.দুই খুতবার মাঝে বসা ৮.দ্বিতীয় খুতবায় পুনরায় হামদ, সানা, শাহাদাতাইন ও দরুদ পাঠ করা। ৯.সকল মুসলমানদের জন্য দুআ করা। ১০.উভয় খুতবা নামাযের তূলনায় সংক্ষিপ্ত হওয়া ইত্যাদি।

ফিক্হ ও ফাতওয়ার গ্রন্থ থেকে উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রমাণ

আল্লামা কাসানী র. বলেন-

ক্স ينبغي أن يخطب خطبة خفيفة يفتتح فيها بحمد الله تعالى ويثني عليه ويتشهد ويصلي على النبي ويعظ ويذكر ويقرأ سورة ثم يجلس جلسة خفيفة ثم يقوم فيخطب خطبة أخرى يحمد الله تعالى ويثني عليه ويصلي على النبي ويدعو للمؤمنين والمؤمنات . (بدائع الصنائع: ১/৫৯১)

আল্লামা শামী র. বলেন-

ক্স قوله ( ويبدأ ) أي قبل الخطبة الأولى بالتعوذ سرا ثم بحمد الله تعالى والثناء عليه والشهادتين والصلاة على النبي والعظة والتذكير والقراءة قال في التجنيس والثانية كالأولى إلا أنه يدعو للمسلمين مكان الوعظ. (رد المحتار : ৩/২১)

وكذا في البحر الرائق: ১/২৫৮ ، فتح القدير : ২/৫৭ ،الفتاوي الهندية : ১/১৪৬-৪৭ ،حاشية الطحطاوي علي مراقي الفلاح : ص৫১৫.

খুতবার পরিমাণ:-

আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে সূরা জুমার ৯ম আয়াতে খুতবাকে ‘যিকির’ বলেছেন। এই যিকির নামক খুতবার পরিমাণ কতটুকু তা নিয়ে ইমাম আবু হানিফা র., ইমাম আবু ইউসফ র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. এর মাঝে মত পার্থক্য রয়েছে।

ইমাম আবু হানিফা র. বলেন, খুতবাতে শুধু যিকির পাওয়া যাওয়াই শর্ত। অর্থাৎ কেউ যদি খুতবাতে শুধু যিকির করে অর্থাৎ শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা সুবহানাল্লাহ বলে খুতবা শেষ করে, তাহলে তার নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে এটা মাকরূহ।

ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবাতে লম্বা আলোচনা তথা: আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা, সানা, শাহাদাতাইন, রাসূল স. এর উপর দরুদ ইত্যাদি থাকা জরুরী। যার উপর খুতবা শব্দের প্রয়োগ করা যায়। তাঁরা আরো বলেন, খুতবা কমপক্ষে তাশাহহুদ পরিমাণ দীর্ঘ হওয়া জরুরী ।

আল্লামা শামী র. বলেন-

وكفت تحميدة أو تهليلة أو تسبيحة ) للخطبة المفروضة مع الكراهة وقالا لا بد من ذكر طويل وأقله قدر التشهد الواجب. (الدر المختار : ৩/২০)

অর্থ: ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা সুবাহানাল্লাহ বলার দ্বারাই খুতবার ফরযিয়্যাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এটা মাকরূহ। আর ইমাম আবু ইউসুফ র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবা তাশাহহুদ পরিমাণ দীর্ঘ হওয়া জরুরী।

আল্লামা কাসানী র. বলেন-

وصح الاقتصار في الخطبة علي ذكرخالص لله تعالي نحو تسبيحة أو تحميدة أو تهليلة او تكبيرة مع الكراهة لترك السنة عند الامام وقالا: لابد من ذكر طويل يسمي خطبة واقله قدر التشهد. (حاشية الطحطاوي: ص৫১৩، وكذا في البدائع: ১/৫৯০) 

উসুলে ফিকাহ্-এর আলোকে :-

উসুল ফিকাহ্-এর মূলনীতির আলোকে আরবি ভাষায় খোৎবা অকাট্য ও অলঙ্ঘনীয় সুন্নাত। কেনান মহানবী (সা.) খোলাফায়ে রাশেদীন, অন্যান্য সাহাবা, তাবেঈন- তবে তাবেঈন সকল মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও ফুকাহায়ে কিরাম র. ধারাবাহিকভাবে আরবী ভাষাতেই খুতবা দিয়ে আসছেন। কাজেই আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুতবা দেয়া শরীয়ত পরিপন্থী ও বিদআত বলে বিবেচিত হবে। (আহসানুল ফাতওয়া: ৪/১৫৪)

অর্থাৎ গোটা ইসলামের সোনালী যুগ থেকে সর্বাদা আরবি ভাষায় খোৎবা দান করা হতো বিধায়, এটি সুন্নাতে নববী, সুন্নাতে খোলাফায়ে রাশেদীন, সুন্নতে আইম্যায়ে মুজতাহেদীন , সুন্নাতে মুতাওয়াতেরা (নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক সুন্নাত) ও সুন্নাতে মুতাওয়ারেছাহ (বা যুগপরম্পরা সুন্নাত)।সূতরাং এর বিপরীত চিন্তাভাবনা হবে বেদআত।

ইতিহাসের আলোকে :- আমরা ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে , সাহাবা, তাবেঈন এবং অপরাপর ইসলামের সিপাহশালার ও শাসকগণ অনেক অরানব রাষ্ট্র জয় করেছিলেন অনারব দেশসমূহে শ্রোতাদের প্রয়োজন কোথাও অনারবি ভাষায় খোৎবা দান করেছিলেন বলে কোনো প্রমাণ নেই।যেমন সপ্তম শতকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আগত সাহাবা প্রতিনিধি দল, অতঃপর মেঘনার মোহনা থেকে সুদূর কক্সবাজার পর্যন্ত ব্যাপক বিচরণকারী আরব বণিক তথা দ্বীন প্রচারক দলসমূহ এবং বাংলার গ্রেট ধর্মপ্রচারক বায়েজিদ বোস্তামী, শাহ জালাল, নূর কুতুব ও খানজাহান আলী (রহ.)সহ অগণিত অলি-দরবেশ বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তারা এখানকার মাতৃভাষায় দাওয়াহ কর্ম পরিচালনা করেছিলেন বলে ডক্টর এবনে গোলাম ছমদ, ডক্টর এনামুল হক ও আবদুল মান্নান তালিব প্রমুখ অভিমত প্রকাশ করেন। কিন্তু কোনো প্রচারকর্মী সমসাময়িক নব-মুসলিমদের কাছে বাংলায় খোৎবা দান করেছিলেন বলে আদৌ প্রমাণ নেই।

খোৎবা ও বক্ততার মধ্যে প্রার্থক্য:-

খোৎবা জিকির, না ভাষণ এ বিষয়ে মুফতি শফি (রহ.) বলেন, (ক) খোৎবার আসল উদ্দেশ্য হল জিকির, যা বিশেষ একটি ইবাদত। কিন্তু গৌণভাবে ওয়াজ-উপদেশ ও হয়ে যায় । কেননা (১) খোৎবায় দুটি ফরজ এবং পনেরটি সুন্নাত রয়েছে (আলমগীরি-১/১৪৬), যা সাধারন কোন ওয়াজ বা বক্ততায় নেই।

(২) জুমার খোৎবা হচ্ছে চার রাকাত বিশিষ্ট জোহরের ফরযের বাকি দুই রাকাত নামাজ (বাহার- ১/১০৮), (৩) খোৎবার মাঝখানে কথা বলা যাবে না (মবছুত লিচ ছুরুখছী-২/২৬), কিন্তু বক্তিতার মাঝ খানে কথা বলতে দোষ নেই

(৪) জুমার নামাজ ছহী হওয়ার খোৎবা শর্তবিশেষ (ফতহুল ক্বদীর) ও (৫) খোৎবার সময় নামাজ পড়া, কথা বলা, তাসবিহ-তাহলিল করা, সালাম দেয়া, এবং অন্যায় কাজে মৌখিক নিষেধ করা সবকিছুই নিষিদ্ধ (হেদায়া, বাহার)।তবে অন্যায় কাজের বাধা খতিবের জন্য প্রযোয্য।অথচ ওয়াজ-বক্তৃতায় এগুলো নিষিদ্ধ নয়। আর না ওয়াজের জন্য কিছু ফরজ ও সুন্নাত রয়েছে। না ওয়াজ জুমার জন্য শর্তস্বরূপ। কাজে এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, খোৎবা প্রচলিত ওয়াজ-বক্তৃতা নয়। - বরং জিকিরের অর্তভূক্ত।

এই বিশেষ জিকির যা ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে করেন আর শ্রোতামন্লীড না বুঝলেও তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেন।

(5) নবী করিম (সা.)-এর খোৎবায় রোম, পারস্যসহ বিভিন্ন অনারব দেশের লোক শরিক হতো। তখন সাহাবীদের মধ্যে অনুবাদকর্মে সক্ষম ব্যক্তি অনেক বিদ্যমান ছিলেন। খোৎবা প্রচলিত ওয়াজ-বক্তৃতা হলে রাসূল (সা.) নিঃসন্দেহে অনুবাদের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু খোৎবার ব্যাপারে তা করেছিলেন বলে ইতিহাসে কোথাও প্রমাণ নেই। নবী করিম (সা.)-এর পরে সাহাবীরা বাঁধ ভাঙা জোয়ারের ন্যায় অনারব দেশসমূহে ঢুকে পড়েন এবং বিজিত এলাকায় সর্বত্র জুমা ও ঈদ কায়েম করেন। প্রাদেশিক গভর্নরগণ রাষ্ট্রীয় কাজে দোভাষী ব্যবহার করতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) দাওয়াহ কর্মের জন্যে বেতনধারী একজন দোভাষী রেখেছিলেন (বোখারী অফুদ অধ্যায়)। কিন্তু তারা অনারবি ভাষায় কখনো খোৎবা দেননি। আর না কেউ খোৎবার কাজে কোনো দোভাষীকে ব্যবহার করেছিলেন। কাজেই বোঝা গেল খোৎবা নামাজের ক্বেরাত, তাসবীহ, তাশাহুদ ইত্যাদির ন্যায় জিকির বিশেষ, বক্ততা নয়, নামাজে সুরা কেরাতের যেমন অর্থ না বুঝা সত্বেও আরবীর বিকল্প নেই তেমনি খোতবাও, তবে আরবী না বুঝাটা আমাদের দূর্বলতা, আর আমাদের ব্যক্তি স্বার্থে শরিয়তের হুকম রদ বদল হবেনা এটা ই সত্য।

খুতবার ভাষা নিয়ে ইমামগণের মতামত :--

খুতবার ভাষা কি হবে:- , এ ব্যাপারে যদি আমরা চার মাযহাবের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাই যে, চার মাযহাব মতে জুমআর খুতবা আরবীতে দেয়া আবশ্যক।

মালেকী মাযহাব

মালেকী মাযহাবে জুমআ সহীহ হওয়ার জন্য সর্ববস্থায় উভয় খুতবা আরবী ভাষায় দেয়া শর্ত। যদি উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ আরবীতে খুতবা দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে তারা অন্যান্য দিনের ন্যায় জুমআর দিনও যোহর নামায পড়বে। জুমআ পড়বে না।

মাওসুআ গ্রন্থে রয়েছে-

ذَهَبَ الْمَالِكِيَّةُ : إِلَى أَنَّهُ لاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ الْخُطْبَةُ بِاللُّغَةِ الْعَرَبِيَّةِ ، فَوُقُوعُهَا بِغَيْرِ الْعَرَبِيَّةِ لَغْوٌ ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْجَمَاعَةِ مَنْ يَعْرِفُ الْعَرَبِيَّةَ وَالْخَطِيبُ يَعْرِفُهَا وَجَبَتْ ، فَإِنْ لَمْ يَعْرِفِ الْخَطِيبُ الْعَرَبِيَّةَ لَمْ تَجِبْ ، وَلاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ جَهْرًا فَإِسْرَارُهَا كَعَدِمِهَا وَتُعَادُ جَهْرًا ، وَلاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ لَهَا بَالٌ. (الموسوعة الفقهية الكويت: ১৯/১৮০) وكذا في (كتاب الفقه علي المذاهب الاربعة: ১/৩৬৯، حاشية الدسوقي: ১/৩৮৭، حاشية شرح منح الجليل: ১/২৬০، جواهر الاكليل: ১/৯৫)

শাফেয়ী মাযহাব

নামাযে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় আরবী ভাষায় খুতবা দেয়াও শর্ত। হ্যাঁ, উপস্থিত লোকদের কেউ যদি আরবী ভাষায় খুতবা দিতে না পারে এবং সময় স্বল্পতার কারণে আরবী খুতবা শিখতে না পারে, তাহলে উপস্থিত লোকদের কোন একজন স্বীয় ভাষায় খুতবা দিতে পারবে। আর যদি খুতবা শিক্ষা করা সম্ভব হয় তাহলে সবার উপর আরবী ভাষায় খুতবা শিক্ষা করা ওয়াজিব। যদি সুযোগ থাকা সত্তেও কেউ শিক্ষা না করে, তবে সবাই গুনাহগার সাব্যস্ত হবে। এমতাবস্থায় তাদের জুমআর নামায সহীহ হবে না; বরং যোহরের নামায আদায় করবে।

নিহায়াতুল মুহতাজ গ্রন্থে আছে-

ويشترط كونها اي الخطبة عربية لاتباع السلف والخلف ولانها ذكر مفروض فاشترط فيه ذلك كتكبيرة الاحرام. (نهاية المحتاج الي شرح المنهاج: ২/৩০৪، كتاب الفقه علي مذاهب الاربعة: ১/৩৬৯، زاد المحتاج: ১/৩২৭، اعانة الطالبين علي حل الفاظ فتح المعين: ২/ ৬৮)

হাম্বলী মাযহাব

হাম্বলী মাযহাবে আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম হলে অনারবীতে খুতবা দেয়ার অনুমতি নেই। যেমন, নামাযে অনারবীতে কেরাত পড়ার অনুমতি নেই। তবে উপস্থিত মুসল্লিদের কেউ যদি আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে অন্য ভাষায় খুতবা দিলে সহীহ হয়ে যাবে।

الحنابلة قالوا : لا تصح الخطبة بغير العربية ان كانوا قادرا عليها فان عجز عن الاتيان بها اتي بغيرها مما يحسنه. (كتاب الفقه علي مذاهب الاربعة: ১/৩৬৯)

ولا تصح الخطبة بغير العربية مع القدرة عليها بالعربية. (كشف القناع عن متن الاقناع: ২/৩৬، كباب الفروع: ২/১১৩)

হানাফী মাযহাব

হানাফী মাযহাব মতে আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম হলে অনারবী ভাষায় খুতবা দেয়া বা আরবী ভাষায় খুতবা পাঠ করে বাংলা বা অন্য কোন ভাষায় তরজমা করা মাকরুহে তাহরীমী ও না জায়েয।

وصح شروعه مع كراهة التحريم بتسبيح وتهليل وتحميد كما صح لوشرع بغير عربية. الدر المختار: ২/১৮২-১৮৩)

وعلي هذا الخلاف الخطبة وجميع اذكار الصلوة. (الدر المختار: ২/১৮৩، البحر الرائق: ১/৫৩৫)

ماذكر في التحفة والذخيرة والنهاية من ان الاصح انه يكره الافتتاح بغير الله اكبر عند ابي حنيفة (رح) فالمراد به الكراهة التحريم. (البحر الرائق: ১/৫৩৪، وفيه ايضا: وقالا لايجوز الا عند العجز وبه قالت الثلاثة. (البحر الرائق: ১/৫৩৫) وكذا (حاشية ابن عابدين: ২/১৮২، المبسوط للسرخسي: ১/১৩৬، الهداية: في هامشه: ১/১০১، حاشيةالطحطاوي: ص২৮০، المحيط البرهاني: ২৩৩، تاتار خانية: ২/৫২، عمدة الرعاية: ১/২০০، كفاية المفتي: ৩/২১৭، فتاوي محمودية: ১২/৩৬৮)

একটি সন্দেহ ও তার নিরসন:- 

সন্দেহ: কেউ কেউ বলেন, মাতৃ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে- খুতবা শুধু একটি বয়ান বা বক্তৃতার নাম। আর বয়ান ও বক্তৃতা দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে শ্রোতারা তা বুঝা এবং উপদেশ গ্রহণ করা। যদি আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া হয়, তাহলে অনারবী শ্রোতারা তা থেকে কীভাবে উপকৃত হবে ? তাই মাতৃ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া যাবে না।

নিরসন: তাদের এই ধারণাটি সঠিক নয়। কেননা, খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়; বরং খুতবা হলো জুমআর নামাযের সংশ্লিষ্ট একটি ইবাদত, যা দুই রাকাত নামাযের স্থলাভিষিক্ত। খুতবা যে শুধু বক্তৃতার নাম নয়; বরং একটি বিশেষ ইবাদত এর স্বপক্ষে নিম্ন কয়েকটি প্রমাণ উল্লেখ করা হলো:

১. বক্তৃতাকে আরবীতে ‘তাযকীর’ বলা হয়, অথচ কুরআন ও হাদীসে খুতবাকে ‘যিকির’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ (سورة الجمعة: ৯)

অর্থ: হে মুমিনগণ ! জুমআর দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও। (সূরা: জুমআ: ৯) এখানে যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জুমআ।

২. সকল ফুকাহায়ে কিরাম জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবাকে শর্ত বলেছেন-

ويشترط لصحتها سبعة اشياء الرابع: الخطبة فيه. (الدر المختار: ৩/১৯)

وكونها شرطا لانعقاد الجمعة . (بدائع الصنائع: ১/৫৮৯) ( وكذا في فتح القدير: ২/৫৫) (حاشيةالطحطاوي: ص৫১৩)

যদি খুতবা দ্বারা ওয়াজ করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে এটাকে জুমআর নামায সহীহ হওয়ার পূর্বশর্ত বলা অর্থহীন।

৩. জুমআর খুতবা জুমআর নামাযের ওয়াক্তে হওয়া শর্ত। যেমনটি ফুকাহায়ে কিরাম লিখেন-

فلو خطب قبله وصلي فيه لم تصح. (الدر الختار: ৩/১৯)

অর্থ: যদি জুমআর নামাযের ওয়াক্ত আসার পূর্বে খুতবা দেয়া হয়। আর ওয়াক্ত আসার পর নামায পড়ে তাহলে জুমআ সঠিক হবে না। (বাদায়ে: ২/২৫৬, হিন্দিয়া: ১/১৬৮)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, যদি খুতবা দ্বারা উদ্দেশ্য ওয়াজ বা বক্তৃতা হতো, তাহলে জুমআর নামাযের ওয়াক্ত হওয়া শর্ত করা হতো না; বরং যে কোন সময় কিছু ওয়াজ নসিহত করাই যথেষ্ট হতো। সময় নির্ধারণই প্রমাণ বহন করে এটি একটি ইবাদত। শুধুমাত্র ওয়াজ বা নসিহত নয়।

৪. জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবা পাঠ করা শর্ত। আর খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তবে যদি উপস্থিত মুসল্লিদের সকলেই বধীর বা ঘুমন্ত থাকে এবং তাদের সামনে খুতবা দেয়া হয়, তাহলেও তা জুমআ আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। যেমন, আল্লামা শামী র. বলেন-

كونها قبلها بحضرة جماعة ينعقد الجمعة بهم ولو كانوا صما او نياما. (حاشية ابن عابدين: ৩/১৯، البحر الرائق: ২/১৫৭)

অর্থ: জুমআ বিশুদ্ধ হতে কম পক্ষে তিন জন লোকের সম্মুখে নামাযের পূর্বে খুতবা দেয়া শর্ত। যদিও মুসল্লিগণ বধীর বা ঘুমন্ত হোক। যদি খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতা-ই হতো তাহলে বধীর ও ঘুমন্ত লোকদের সামনে খুতবা দেয়ার কি অর্থ?

৫. খুতবা দেয়ার পর যদি খতীব সাহেব কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং তাতে দীর্ঘ সময় বিলম্ব হয়ে যায়, তাহলে পূনরায় খুতবা দিতে হবে। যদিও শ্রোতা প্রথম বারের শ্রোতারা-ই হোক না কেন ।

ولو خطب ثم رجع الي بيته فتغدي او جامع واغتسل ثم جاء استقبل الجمعة وكذا في المحيط. (البحر الرائق: ২/২৫৮)

যদি খুতবা দ্বারা ওয়াজ বা নসিহত করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে একবার খুতবা দেয়ার পর বিলম্ব হওয়ার কারণে পূর্বের শ্রোতাদের সামনে পূনরায় খুতবা দেয়ার কি অর্থ ?

৬. খুতবা শুধু ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়। এর বড় প্রমাণ হলো, ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা সুবহানাল্লাহ পড়ার দ্বারা খুতবা আদায় হয়ে যায়।

واذا خطب بتسبيحة واحدة او بتهليل وبتحميد اجزائه لقول ابي حنيفة رح. (المبسوط: ২/৪৭)

অথচ ‘সুবহানাল্লাহ’ বা ‘আলহামদু লিল্লাহ’ কে কেউ ওয়াজ বা বক্তৃতা বলে না।

উপরোক্ত প্রমাণগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়; বরং একটি বিশেষ ইবাদত বা যিকির। তবে খুতবা নামক ইবাদতে আরবী ভাষায় ওয়াজ, নসিহত থাকা একটি স্বতন্ত্র সুন্নাত। সুতরাং যখন প্রমাণিত হলো, খুতবার উদ্দেশ্য ওয়াজ নসিহত নয়; বরং ইবাদত। তাই অনারবী শ্রোতাদের সামনে আরবী ভাষায় খুতবা দেয়ার দ্বারা কি ফায়দা ? এ ধরণের প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। যদি কেউ এমন প্রশ্ন করে, তাহলে সর্ব প্রথম নামায ও কুরআনের ব্যাপারে করতে হয়। যখন কুরআন বা নামাযের ব্যাপারে এই ধরণের প্রশ্ন নেই। তাহলে খুতবার ব্যাপারে প্রশ্ন করাও অনর্থক।

খুতবা ও নামাযের মাঝে যে সব বিষয়ে মিল রয়েছে

১. নামযের সময় নির্ধারিত; খুতবার সময় ও নির্ধারিত।

২. নামায বিনা ওযরে দাড়িয়ে পড়তে হয়; খুতবাও দাড়িয়ে দিতে হয়।

৩. নামাযের পূর্বে ইকামত আছে, তেমনি খুতবার পূর্বে আযান আছে।

৪. নামাযের মধ্যে যেমন সালাম কালাম করা যায় না, তেমনি ভাবে খুতবাতেও সালাম কালাম করা যায় না।

৫. নামায ও খুতবার বিষয়বস্তু মৌলিকভাবে এক। নামাযে যেমন, সূরা ফাতেহা পড়া হয় যাতে আল্লাহ তাআলার হামদ আছে, এমনিভাবে খুতবাতেও আল্লাহ তাআলার হামদ থাকতে হয়।

৬. খুতবাতে রাসূল স. এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়। নামাযেও রাসূল স. এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়।

৭. খুতবাতে আল্লাহ তাআলার তাওহীদ ও রাসূল স. এর রিসালাতের সাক্ষ্য আছে, নামাযেও তাশাহহুদ আছে।

৮. খুতবায় কুরআনের তিলাওয়াত আছে, নামাযেও কুরআনের তিলাওয়াত করতে হয়।

৯. খুতবায় মুসলমানদের জন্য দুআ করা হয়, নামাযেও সালামের পূর্বে দুআ আছে।

১০. ইমাম আবু হানিফা র.ও মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবা নামাযের স্থলাভিষিক্ত। খুতবাতে কারো হাঁচির উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা যাবে না। কারো সালামের উত্তর দেয়া যাবে না। (যেমনিভাবে নামাযে কারো হাঁচি ও সালামের উত্তর দেয়া যায় না।)

উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা খুতবা ও নামাযের সাদৃশ্যতা সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে। সুতরাং নামাযের তাকবীর, কেরাত, তাসবীহ, দুআ ইত্যাদি যেভাবে আরবী ভাষায় পড়া আবশ্যক, অন্য ভাষায় পড়া বা তরজমা করা জায়েয নেই। তদ্রুপ খুতবা আরবী ভাষায় পড়া আবশ্যক। 

লেখক:-

মৌলানা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া 

ফাজেলে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া, 

সিনিয়র শিক্ষক মাদ্রাসা হোছাইনিয়া আজিজুল উলুম রাজঘাটা, লোহাগাড়া ,চট্টগ্রাম, 

ব্লগার ও ইসলামি অনলাইন এক্টিভিস্ট