Translate

বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

চুল দাডিতে কলপ বা খেযাবের বিধান



যুবক ও বৃদ্ধ লোকদের জন্য কালো খেযাব বা অন্য
রঙের খেযাব ব্যবহারের হুকুম কি ? এছাড়া
যুবকদের অসুস্থতা বা কোনো কারণে চুল
সাদা হয়ে গেলে তারা কালো খেযাব
ব্যবহার করতে পারবে কি ?
আসলে এ মাছয়ালাটি বর্তমান সময়ের খুবই গুরুত্ব পূর্ন মাছয়ালা এই জন্য ব্যাখার দাবী রাখে

বার্ধ্যকের কারনে চুল-দাড়ি পেকে গেলে
তাতে কালো খেযাব ব্যবহার করা নাজায়েয। এতে সন্দেহের অবকাশ নেই ।তবে কালো ছাডা হলুদ বা লাল রঙের মেহেদী ব্যবহার জায়েয।
একাধিক হাদীসে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ার
এসেছে। হাদীস শরীফে এসেছে, মক্কা বিজয়ের দিন
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর
পিতা আবু কুহাফা রা.-এর চুল এবং দাড়ি পাকা
দেখে বললেন , এটাকে কোনো কিছু দ্বারা
পরিবর্তন কর। তবে কালো থেকে বিরত থাক।
সহীহ মুসলিম , হাদীস : ৫৪৬৬
অবশ্য কোনো যুবকের অসুস্থতা বা অন্য কোনো
কারণে যদি চুল-দাড়ি পাকার বয়সের আগেই
সাদা হয়ে যায় তবে সে কালো খেযাব ব্যবহার
করতে পারবে।তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন আবরন বা প্রলেফ যুক্ত খেযাব না হয়।
তবে এখানে বার্ধক্য বলতে কি বুঝায় বা কখন বা কত বৎসর বয়স থেকে বার্ধক্য শুরু তাও এখানে জানা দরকার
বন্ধুরা আপনারা জানেন যে রসুল সাঃ বলেছেন اعمار امنى ما بين ستين الى سبعين অর্থাৎ আমার উম্মতের বয়স ৬০ হইতে ৭০ বছরের মাঝামাঝি। সেই হিসাবে আমরা যদি ৬০/৭০ বছর বয়সকেই যদি বৃদ্ধ বয়সে হিসাাবে গননা করি তাহলে ভূল হবে কারন ৬০/৭০ বছর হল মৃত্যুর বয়স যদিও আল্লাহর বিশেষ রহমতে এর চেয়েও বেশী হায়াত কেউ পেয়ে থাকেন তা কিন্তু নাদের ।
যা হোক বৃদ্ধ বয়সের শুরু কিন্তু ৪০ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়। কেননা আপনারা জানেন বৈজ্ঞানীক-ডাক্তারী গবেষনায় ৪০ বৎসর বয়স থেকে যৌবন এবং চোখের জ্যেতি কমতেই থাকে এর মানে হল চল্লিশে পৌঁছা মানে আপনি আমি বৃদ্ধা বয়সে পৌছে গিয়েছি।তাছাডা ৪০ এর একটা গুরুত্বও আছে তাইতো চল্লিশের নীচে কোন মানব সন্তানকে আল্লাহ নবুয়তও দান করেননি ।চল্লিশে পৌঁছা মানে সব দিক দিয়েই পরিপক্ক তাই সেই হিসাবে বার্ধক্যের হিসাব আমাদেরকে চল্লিশ থেকেই গননা করতে হবে।


কলপ বা খেযাব দু’ধরনের হয়ে থাকে।
প্রথমত: যেটা ব্যবহার করলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা কিন্তু কালো হয়। তবে এ ধরনের কালো রঙের খেযাব বা কলপ ব্যবহার করাও শরীয়তে মাকরূহ তাহরীমী বলা হয়েছে। আর যে সকল কলপে আবরন থাকে নোখ পালিশের মত তা ব্যবহার হারাম কারন এতে চুলে পানি পৌঁছেনা যদি ওযু ও ফরয গোসলের সময় চুল দাডিতে পানি না পৌঁছে বরং উপর দিয়ে বহিয়া যায়। তা নিঃসন্দেহে না জায়েয। আর যে গুলো ব্যবহার করলে আবরন বা প্রলেপ পড়েনা কিন্তু হলুদ বা লাল হয় যেমন মেহেদী তা ব্যবহার জায়েয ।
আহমাদ আলী সাহারানপুরী রহঃ
বলেন , হাদীসে কালো খেযাব ব্যবহার করতে
নিষেধ করা হয়েছে। এর মূল কারণ অন্যদের
সামনে বয়স গোপন করা এবং অন্যকে ধোঁকা
দেওয়া। হাশিয়া সহীহ বুখারী ১/৫৩০
যুবকের ক্ষেত্রে ধোঁকার এই দিকটি অনুপস্থিত।
তাই কোনো কোনো ফকীহ যুবকদের জন্য কালো
খেযাব জায়েয হওয়ার মত দিয়েছেন। (ফায়যুল
কাদীর ১/৩৩৬ ; ইমদাদুল আহকাম ৩/৩৭৬) তবে শর্ত ফলেপ যূক্ত না হতে হবে।
তাবেয়ী
ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন , আমাদের চেহারা
যখন সতেজ ছিল তখন আমরা কালো খেযাব
ব্যবহার করতাম। আর যখন আমাদের চেহারা
মলিন হয়ে গেল এবং দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেল তখন
আমরা কালো খেযাব ছেড়ে দিয়েছি। ফাতহুল
বারী ১০/৩৬৭
অবশ্য হাদীসে যেহেতু কালো খেযাবকে
বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে তাই যুবকদের
জন্যও একেবারে কালো খেযাব ব্যবহার না
করে লাল কালো মিশ্রিত খেযাব ব্যবহার করাই
উচিত হবে। তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/১৫৪ ; ফায়যুল
কাদীর ১/৩৩৬
আর বার্ধক্যের কারণে চুল পেকে গেলে কালো
খেযাব ছাড়া অন্য খেযাব ব্যবহার করা
মুস্তাহাব। যেমন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু কুহাফা রা.কে
কালো খেযাব ছাড়া অন্য খেযাব ব্যবহার করতে
নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অন্য এক হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর
রা. বলেন , আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হলুদ রং ব্যবহার করতে
দেখেছি তাই আমিও হলুদ রং ব্যবহার করতে
পছন্দ করি।
-সহীহ বুখারী, হাদীস, ১৬৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২১৫-২২০; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৭/১৬৬-১৭০৷
সাদা চুল-দাড়ি মেহদী বা অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাত। তিনি সাদা চুলকে কালো রং বাদ দিয়ে অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করতে আদেশ দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা [রা.] হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لَا يَصْبُغُونَ فَخَالِفُوهُمْ
ইয়াহুদী ও নাসারারা চুল ও দাড়িতে খেযাব লাগায় না। সুতরাং তোমরা খেযাব লাগিয়ে তাদের বিপরীত কর। [বুখারি, অধ্যায় : আহাদিছুল আম্বিয়া|]
কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে লোকেরা এ আদেশ অমান্য করে কালো রং দিয়ে খেজাব (কলপ) লাগাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ فِي آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ
আখেরী যামানায় একদল লোকের আগমণ হবে যারা সাদা চুল-দাড়ি কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করবে। তারা জান্নাতের গন্ধও পাবেনামুমিন। [আবু দাউদ, অধ্যায় : কিবাবুত তারাজ্জুল]
হাদীছের ভাষ্য বাস্তবে পরিণত হয়েছে। পুরুষদের মাঝে দাড়ি ও মাথার চুল কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করা এবং শত্রুর হৃদয়ে ভীতি সঞ্চার করার জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি ‘মুনকার’ বা ‘যঈফ’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৬২৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৯৭২)।

বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কলপ আর প্রাকৃতিক মেহেদী এক রকম নয়। কারণ প্রাকৃতিক মেহেদী ব্যবহার করলে চুলে প্রলেপ পড়ে না।
কিন্তু বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কলপ ব্যবহার করলে চুলে প্রলেপ পড়ে। বিধায় কলপ ব্যবহার করলে ওযু, গোসল, নামায কোনটাই শুদ্ধ হবে না।কেননা ওযু গোসলের সময় সমস্ত অঙ্গে পানি পৌঁছানো ফরজ । কিন্তু প্রলেপের কারণে অজু গোসলের অঙ্গে পানি পৌঁছায়না।
এই জন্যই  যারা মুসলিম নামাজী তাদেরকে আবশ্যই পবিত্রতার দিকটাই আগে খেয়াল করতে হবে।সৌন্দর্য পরে।

ওয়া-ছাল্লাল্লাহ আলা সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদ্ ওয়া-আলিহী ওয়া-আছাহাবিহী ওয়া-বারিক্ ওয়া-ছাল্লিম।



মৌলানা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
দাওরায়ে হাদিস মাষ্টার্স
 জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া    
লেখক গবেষক ইসলামি অনলাইন এক্টিভিস্ট ও ব্লগার

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

যুগ উপযোগি বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের শরয়ী সমাধান বা ফতোয়ার সংকলন


প্রশ্ন: 01
ক) মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা কি জরুরিনা মনে মনে করলেই হবে?
খ) সম্মিলিত মুনাজাত করার বিধান কী?
গ) জায়নামাযের দুআ পড়া যাবে কি?


উত্তর:
ক) কোনো কাজের ব্যাপারে অন্তরের দৃঢ় ইচ্ছাকেই নিয়ত বলে।
সুতরাং নামায-রোযা এবং অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে অন্তরের সংকল্পই নিয়ত হিসেবে যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে অন্তরের নিয়তের সাথে সাথে মুখেও উচ্চারণ করে বলতে নিষেধ নেই। কেউ যদি ইচ্ছার দৃঢ়তার জন্য মুখেও উচ্চারণ করে নেয় তবে তা দোষণীয় হবে না। -উমদাতুল কারী ১/৩৩;শরহুল মুনইয়া ২৫৪আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫
খ) দুআ অনেক বড় ইবাদত। হাদীস শরীফে এসেছেদুআই ইবাদত। এই দুআ যেমন একা করা যায় তেমনি সম্মিলিতভাবেও করা যায়। সম্মিলিত দুআ সংক্রান্ত এক দুটি দলিল নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল-
১.   কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে। -সূরা ইউনুস : ৮৯
এ আয়াতে তোমাদের দুইজনের দুআ বলতে মুসা আ. ও হারূন আ.-এর দুআ বুঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী ইমামের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যেহযরত মুসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা দুজনের দুআ বলেছেন। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৬৬৫আদ্দুররুল মানসূর ৩/৩৪১
তো এটা তাদের দুজনের সম্মিলিত দুআ ছিলযা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরি শুনিয়েছেন যেতোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে।
২.   একটি দীর্ঘ হাদীসে সাহাবীয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আল ফিহরী রা. বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যেকিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যেএকজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন। -মুজামে কাবীর তবারানী ৪/২৬মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩৪৯
সম্মিলিত দুআ বিষয়ে আরো জানতে মাসিক আলকাউসারশাবান-রমযান ১৪২৯আগস্ট ২০০৮ সংখ্যায় হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব লিখিত সম্মিলিত দুআ : একটি প্রশ্নের উত্তর’’ প্রবন্ধটি পাঠ করুন।
গ) জায়নামাযের কোনো দুআ নেই। কোনো কোনো মহলে ইন্নি ওয়াজ্জাহতু দুআটি জায়নামাযের দুআ নামে পরিচিত। কিন্তু এটি ঠিক নয়। এটি জায়নামাযের দুআ নয়বরং হাদীস শরীফে নামায শুরু করার পর ছানা হিসেবে এ দুআ পড়ার কথা আছে। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৭৭১সুনানে আবু দাউদহাদীস ৭৬০;রদ্দুল মুহতার  ১/৪৮৮ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫১ 
*************************************-
প্রশ্ন: 02 
আমি এক মসজিদে ইমামতি করি। দু বছর
আগে আমাদের এলাকার এক ধনাঢ্য
ব্যক্তি মারা যায়। তার উপর হজ্ব ফরয
ছিল। কিন্তু সে হজ্ব করেনি। তাই
ওয়ারিসরা আমাকে তার বদলি হজ্ব
করার জন্য অনুরোধ করছে। আর আমার
উপর হজ্ব ফরয না হওয়ার কারণে আমি
হজ্ব করিনি। এখন জানার বিষয় হল,
আমি ঐ ব্যক্তির বদলি হজ্ব করতে পারব
কি না? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
বদলি হজ্বের জন্য এমন ব্যক্তিকে প্রেরণ
করা উত্তম যিনি নিজের ফরয হজ্ব আদায়
করেছেন এবং হজ্বের আহকামও
ভালোভাবে জানেন। আর যে ব্যক্তি
হজ্বে যায়নি এবং তার উপর হজ্ব ফরযও নয়
তাকে বদলি হজ্বের জন্য পাঠানো মাকরূহ
তানযিহি তথা অনুত্তম। তবে এমন
ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ্ব করালেও হজ্ব
আদায় হয়ে যাবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৮/১৮৯;
বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৭; ফাতহুল
কাদীর ৩/৭২; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৩;
মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৫২;
গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৭৷
উত্তর প্রদানে
মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393 
+++++++++++++++++++++++++++
  • প্রশ্ন: 03
    কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন। মেঝ ভাই ঢাকা থাকেন। তার দিকে লক্ষ্য করেই জানাযার সময় ঠিক করা হয়কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে পারেননি। তার জন্য অপেক্ষা করতে চাইলে লোকজন বিরক্তিবোধ করে। তাই আমি জানাযা পড়িয়ে দিই।
    মেঝ ভাইও আলেম। তার সাথে জানাযা পড়ার জন্য অনেকেই প্রথম জানাযায় শরীক হয়নি। জানাযা শেষ হওয়ার পাঁচ-সাত মিনিট পর মেঝ ভাই পৌঁছে যান। তখন যারা প্রথম জানাযায় শরীক হয়নি তারা মেঝ ভাইকে দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ানোর জন্য খুবই জোর করে। কিন্তু মেঝ ভাই তা করেননি। ফলে লোকজন তার সাথে খুবই রাগ করেন এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এলাকার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
    এখন জানার বিষয় হলআমার জন্য কি মেঝ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে মৃত বড় ভাইয়ের জানাযা পড়ানো ঠিক বা জায়েয হয়েছেআর মেঝ ভাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অধিকার ছিল কি নাতিনিও তো বড় ভাইয়ের ওলি এবং আমার চেয়ে যোগ্যও বেশি।

    উত্তর:
    প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে আপনার মেঝ ভাই যেহেতু উপস্থিত হতে পারেনি তাই আপনার জন্য জানাযা পড়ানো ঠিক হয়েছে এবং জায়েযও হয়েছে। আর এক্ষেত্রে মেঝ ভাইয়ের দ্বিতীয়বার জানাযা না পড়াও শরীয়তসম্মত হয়েছে। কেননা মৃতের এক ভাইয়ের উপস্থিতিতে জানাযা পড়া হয়ে গেলে অন্য ভাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অধিকার থাকে না। 
    -আদ্দুররুল মুখতার ২/২২০, ২/২২৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬২-৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪
  • ****************-*--********--*********
  •  প্রশ্ন ০৪ 

  •  জুমার খোৎবা বাংলা ভাষায় দেয়া যাবে কি ?

    এটা বর্তমান সময়ের একটা মৌলিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন কারণ আজকাল অনেকে জুমা বা ঈদের খোৎবাকে ওয়াজ নসিহত মনে করে আরবী খোৎবার বিপরীতে বাংলা বা ইংরেজীতে , বা বাংলা আরবী ও ইংরেজী ইত্যাদি ভাষার সংমিশ্রনে খোৎবা দিয়ে থকেন।এই জন্য আমাদের সকলের কাছে এ বিষয়টি পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন যে,আসলে জুমার এ খোৎবাটি নিচক বক্ততা,না জিকিরের অন্তর্ভূক্ত। তাই এ ব্যাপারে আমি আহলে হক্ব মিডিয়ার প্রশ্নো্ত্তর পর্বে আমি ফতোয়া তলব করেছিলাম , সন্মানীত মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী ছাঃ পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা এর কাছে । তখন তিনি যে উত্তরটি প্রদান করেছিলেন সর্ব প্রথম আমি তা হুবহু তুলে ধরছি।

    আচ্ছালামু আলইকুম ,

    প্রশ্ন:—- আমাদের দেশে সচরাচর আরবীতেই খুৎবা দিয়ে থাকেন , আবার ইদানীং কোথাও কোথাও শুধু বাংলাতেই খুৎবার প্রচলন দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে অনেক দেশ যেখানে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ও অন্যান্য ভাষার লোকজন ও আছে সেখানে , বাংলা আরবী ইংরেজী ইত্যাদীর সংমিশ্রনে খোৎবা দিয়ে থাকেন । এমনটি জায়েয কিনা ?আর আমাদের দেশে আরবীর সংমিশ্রনে বাংলাতে খোৎবা দেয়া যাবে কি ?

    এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া,মক্কা সৌদি আরব

    উত্তর

    وعليكم السلام ورحنة الله وبركاته

    بسم الله الرحمن الرحيم

    জুমআর খুতবা অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুতবা প্রদান করা রাসূল সাঃ এবং পরবর্তীতে কোন সাহাবী থেকেই প্রমাণিত নয়।

    নবীজী সাঃ এর মৃত্যুকালের শেষ সময়ে আরবের বাহিরের অনেক অনারবী মুসলমানই মসজিদে নববীতে এসে নামায পড়তো। কিন্তু কোনদিনও কোন জুমআর খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি।

    সাহাবায়ে কেরামের জমানায় এর কোন নজীর পাওয়া যায় না। হযরত উমর রাঃ এর জমানায় অনারবী মানুষে ভরে গিয়েছিল মদীনা। কিন্তু কোনদিন মসজিদে নববীতে জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দেয়া হয়েছে বা দোভাষী দিয়ে অন্য ভাষায় তা অনুবাদ করা হয়েছে এর কোন নজীর নেই।

    সেই সাথে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন দেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গেছেন। সেসব রাষ্ট্রে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু অনারবী রাষ্ট্রে এসে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়েছেন বা তাদের আরবী খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে জুমআর সময় শুনানো হয়েছে এর কোন নজীর নেই।

    যে কাজ রাসূল সাঃ করেননি, বা পরবর্তী সাহাবায়ে কেরাম করেননি। সে কাজ দ্বীন হিসেবে করা সুনিশ্চিতভাবেই বিদআত। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। এটি পরিত্যাজ্য।

    নামাযের কিরাত যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া বিদআত। ঠিক তেমনি জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দেয়া বিদআত।

    যারা এ বিদআতি কাজটি করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে রাসুল সাঃ থেকে এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে সহীহ হাদীসের দলীল চান। তাহলেই দেখবেন, দলীল নয় মনের খাহেশাতই হচ্ছে তাদের দলীল।

    সুতরাং এ বিদআতি কাজ থেকে সকলেরই বিরত থাকতে হবে।

    হযরত ইরবাস বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,

    مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

    তোমাদের মাঝে আমার পর জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের উপর আমার এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরবে। সেটিকে মাড়ির দাত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪৪}

    عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ»

    হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মে নেই এমন বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে আবিস্কার করে তা পরিত্যাজ্য। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-২৬৯৭}

    একটি মনগড়া কিয়াসের জবাব:- যারা রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে নিজের নফসের পূজা করে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়ে থাকেন, তারা কুরআন ও হাদীস রেখে নিজের অজ্ঞ মস্তিস্কপ্রসূত একটি ভ্রান্ত কিয়াসের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। সেটি হল, তারা বলেন, খুতবা হল একটি বক্তৃতা। আর বক্তৃতা সেই ভাষায়ই দিতে হবে, যে ভাষায় মানুষ বুঝে থাকে।

    জবাব ১,খুতবা মানে শুধু বক্তৃতা এটি অজ্ঞতাসূচক বক্তব্য। কুরআন ও হাদীসে জুমআর খুতবাকে শুধু বক্তৃতা সাব্যস্ত করা হয়নি।বরং কুরআন-হাদিসে খুতবাকে জিকির বলা হয়েছে। প্রমান দেখুনو

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩]

    মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ( সুরা জুমা আয়াত ৯ )আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য । (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)হাদিসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।

    فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر

    যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতারা এসে যিকির শুনে অর্থাৎ খুতবা শোনে । (বোখারি ১/৩০১, মুসলিম হাদিস নং ৮০৫)সুতরাং কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির যেমন অন্য ভাষায় দেয়া হয় না।তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেয়ার বিধান নেই।

    ২,হাদীসে জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামজের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে ।হযরত ওমর ও আয়েশা রঃ থেকে বর্ণিতحَدِيثُ عُمَرَ وَغَيْرِهِ أَنَّهُمْ قَالُوا إنَّمَا قَصُرَتْ الصَّلَاةُ لِأَجْلِ الْخُطْبَةِ জুমার নামাজ কে খুতবার জন্য ছোট করে দেওয়া হয়েছে। (ইবনে হাজার আসকালানি তালখিসুল হাবির ২/১৭৬)

    كَانَتِ الْجُمُعَةُ أَرْبَعًا فَجُعِلَتِ الْخُطْبَةُ مَكَانَ الرَّكْعَتَيْنِ জুমার নামাজ চার রাকাত ছিল অতঃপর খুতবাকে দুই রাকাতের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে (বাইহাকি ৫২৫৮ নং)শুধু নিছক বক্তৃতার নাম খুতবা নয়। এটি নামাযের মতই গুরুত্বপূর্ণ ও দুই রাকাতের স্থলাভিসিক্ত। তাই নামাযে যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া যায় না, তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় পড়া যাবে না।

    খুতবা অন্য ভাষায় দেয়ার দাবি ইসলামকে খেলনা বস্তু বানানোর ষড়যন্ত্র

    আজান, ইকামত, তাকবীর, কুরআন, তিলাওয়াত, জিকির ও খুতবা এ সবই ইসলামের প্রতীক। এর কোনটিরই অন্য ভাষায় পড়ার কোন নজীর রাসূল সাঃ থেকে নেই। নেই সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে। এমনকি তাবেয়ী বা তাবেয়ীগণ থেকেও নেই।তাই এসবকে অনুবাদ করে বলার দাবি করা ইসলামের প্রতিককে পাল্টে ফেলার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানকারী বিদআতি ব্যক্তিদের থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। আমীন والله اعلم بالصواب

    সন্মানীত পাঠকবৃন্দ :-

    আমরা উপরোক্ত ফতোয়া বা আলোচনার আলোকে জানতে পারলাম যে জুমার খোৎবা সহ দুই ঈদের খোৎবা এটা নিছক কোন বক্ততা নয় বরং এটা একটা জিকির ।এবং জুমার খোৎবা দুই রাকাত নামাজের স্হলা বিসিক্ত সুতরাং নামাজ যেমন আরবী ছাডা অন্য ভাষায় পড়ার সূযোগ নেই তেমনি জুমার খোৎবাও অন্য ভাষায় পড়ার বা দেয়ার সুযোগ নেই।খোৎবার ভেতরে বাংলা ভাষার সংমিশ্রণ করা হুজুরপাক (সা.)-এর সুন্নাতে মুতাওয়ারেছার বরখেলাপ, যা মুসলমানদের কাম্য হতে পারে না। যদি কোনো মসজিদে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে ইমাম সাহেব খোৎবার আজানের পূর্বে অথবা জুমার নামাজের পরে খোৎবার সারমর্ম মুসল্লিগণকে বুঝিয়ে দিতে পারেন । অথবা দেশের কোন কোন স্হানে প্রচলিত আছে যে সামর্থ থাকলে তা ছাপিয়ে বিতরণ করতে পারেন। তাহলে আসুন এই নিয়ে বিশদ আলোচনার মাধ্যমে মূল কথাটি অনূধাবন করার চেষ্টা করি।

    খোতবা বলতে কী বুঝায় :---

    খুতবা একটি পারিভাষিক শব্দ। শরীয়তের পরিভাষায় এর স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে। শুধু আভিধানিক অর্থের মাধ্যমে এর পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়। এটা শুধু খুতবাতে নয়; বরং ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত সকল শব্দের ক্ষেত্রে একই নিয়ম। যেমন- সালাত, যাকাত, সাওম ইত্যাদি।

    সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ দুআ। যদি কোন ব্যক্তি পুরো দিনও দুআয় মগ্ন থাকে, তাহলে কেউ তাকে বলবে না যে, সে সালাত আদায় করছে; বরং শরীয়ত সালাত আদায়ের যে পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে তা অবলম্বনেই একমাত্র সালাত আদায় সম্ভব।

    যাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা। সাওম এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। কিন্তু এসব আভিধানিক অর্থ দ্বারা যাকাত ও সাওমের পরিচয় পাওয়া যায়না। শুধু পবিত্রতার মাধ্যমে যাকাত আদায়ের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না। যে কোনো জিনিস থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সাওমের দায়িত্ব পালিত হয় না। কেননা, আভিধানিক অর্থের বাহিরে এসব শব্দের নিজস্ব পারিভাষিক অর্থ ও পরিচয় আছে।

    শরীয়তের পরিভাষায় এসব শব্দ বিশেষ কিছু ইবাদতকেই বুঝায়। যা তার নির্ধারিত নিয়ম কানুনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

    এমনিভাবে খুতবার আভিধানিক অর্থ বক্তৃতা। কিন্তু এর মাধ্যমে খুতবার বাস্তবতা ও পরিচয় পাওয়া যায় না। শরীয়তের দৃষ্টিতে খুতবা সম্পাদিত হওয়ার জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে কিছু নিয়ম-কানুনের অনুসরণ করা অপরিহার্য। এসব নিয়ম-কানুন ও বৈশিষ্টাবলীর প্রতি লক্ষ্য করলে খুতবার শরয়ী তাৎপর্য স্পষ্ট হয়।

    খুতবা দেওয়ার মাসনুন তরীকা :-- 

    উপমহাদেশের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী র. তার রচিত মুয়াত্তায়ে মালেকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মুসাফ্ফা’-তে লিখেন-

    لما لاحظنا خطبة النبي (ص) وخلفائه (رض) وهلم جرا فنجد فيها وجود أشياء منها : الحمد والشهادتين والصلوة علي النبي (ص) والامر بالتقوي وتلاوة آية والدعا للمسلمين وللمسلمات وكون الخطبة عربية …………..الخ. (مصفي شرح موطأ: ১/১৫৩)

    অর্থ: রাসূল স., খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কিরাম ও উলামায়ে দীনের খুতবা সমূহ লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, তাদের খুতবাতে নিম্নের বিষয়গুলো ছিলো। যথা:

    আল্লাহ তাআলার হামদ্, শাহাদাতাইন (অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য) রাসূল স. এর প্রতি দরুদ, তাকওয়ার আদেশ মূলক কুরআন পাকের আয়াত, মুসলমানদের জন্য দুআ। তারা সকলেই আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। মুসলিম বিশ্বের বহু অঞ্চলের ভাষা অনারবী হওয়া সত্ত্বেও গোটা বিশ্বে আরবী ভাষাতেই খুতবা দিয়েছেন। (মুসাফ্ফা-খ:১ পৃ: ১৫৪)

    সুতরাং রাসূল স., খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনের খুতবার উপর ভিত্তিকরে ফুকাহায়ে কিরাম বলেন- খুতবাতে নিম্নের বিষয়গুলো থাকা সুন্নাত। যথা:

    ১. হামদ ২.সানা ৩.শাহাদাতাইন ৪.রাসূল স. এর উপর দরুদ ৫.তাকওয়ার আদেশ মূলক কুরআনের আয়াত ৬.আরবী ভাষায় ওয়াজ নসীহত ৭.দুই খুতবার মাঝে বসা ৮.দ্বিতীয় খুতবায় পুনরায় হামদ, সানা, শাহাদাতাইন ও দরুদ পাঠ করা। ৯.সকল মুসলমানদের জন্য দুআ করা। ১০.উভয় খুতবা নামাযের তূলনায় সংক্ষিপ্ত হওয়া ইত্যাদি।

    ফিক্হ ও ফাতওয়ার গ্রন্থ থেকে উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রমাণ

    আল্লামা কাসানী র. বলেন-

    ক্স ينبغي أن يخطب خطبة خفيفة يفتتح فيها بحمد الله تعالى ويثني عليه ويتشهد ويصلي على النبي ويعظ ويذكر ويقرأ سورة ثم يجلس جلسة خفيفة ثم يقوم فيخطب خطبة أخرى يحمد الله تعالى ويثني عليه ويصلي على النبي ويدعو للمؤمنين والمؤمنات . (بدائع الصنائع: ১/৫৯১)

    আল্লামা শামী র. বলেন-

    ক্স قوله ( ويبدأ ) أي قبل الخطبة الأولى بالتعوذ سرا ثم بحمد الله تعالى والثناء عليه والشهادتين والصلاة على النبي والعظة والتذكير والقراءة قال في التجنيس والثانية كالأولى إلا أنه يدعو للمسلمين مكان الوعظ. (رد المحتار : ৩/২১)

    وكذا في البحر الرائق: ১/২৫৮ ، فتح القدير : ২/৫৭ ،الفتاوي الهندية : ১/১৪৬-৪৭ ،حاشية الطحطاوي علي مراقي الفلاح : ص৫১৫.

    খুতবার পরিমাণ:-

    আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে সূরা জুমার ৯ম আয়াতে খুতবাকে ‘যিকির’ বলেছেন। এই যিকির নামক খুতবার পরিমাণ কতটুকু তা নিয়ে ইমাম আবু হানিফা র., ইমাম আবু ইউসফ র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. এর মাঝে মত পার্থক্য রয়েছে।

    ইমাম আবু হানিফা র. বলেন, খুতবাতে শুধু যিকির পাওয়া যাওয়াই শর্ত। অর্থাৎ কেউ যদি খুতবাতে শুধু যিকির করে অর্থাৎ শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা সুবহানাল্লাহ বলে খুতবা শেষ করে, তাহলে তার নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে এটা মাকরূহ।

    ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবাতে লম্বা আলোচনা তথা: আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা, সানা, শাহাদাতাইন, রাসূল স. এর উপর দরুদ ইত্যাদি থাকা জরুরী। যার উপর খুতবা শব্দের প্রয়োগ করা যায়। তাঁরা আরো বলেন, খুতবা কমপক্ষে তাশাহহুদ পরিমাণ দীর্ঘ হওয়া জরুরী ।

    আল্লামা শামী র. বলেন-

    وكفت تحميدة أو تهليلة أو تسبيحة ) للخطبة المفروضة مع الكراهة وقالا لا بد من ذكر طويل وأقله قدر التشهد الواجب. (الدر المختار : ৩/২০)

    অর্থ: ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা সুবাহানাল্লাহ বলার দ্বারাই খুতবার ফরযিয়্যাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এটা মাকরূহ। আর ইমাম আবু ইউসুফ র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবা তাশাহহুদ পরিমাণ দীর্ঘ হওয়া জরুরী।

    আল্লামা কাসানী র. বলেন-

    وصح الاقتصار في الخطبة علي ذكرخالص لله تعالي نحو تسبيحة أو تحميدة أو تهليلة او تكبيرة مع الكراهة لترك السنة عند الامام وقالا: لابد من ذكر طويل يسمي خطبة واقله قدر التشهد. (حاشية الطحطاوي: ص৫১৩، وكذا في البدائع: ১/৫৯০) 

    উসুলে ফিকাহ্-এর আলোকে :-

    উসুল ফিকাহ্-এর মূলনীতির আলোকে আরবি ভাষায় খোৎবা অকাট্য ও অলঙ্ঘনীয় সুন্নাত। কেনান মহানবী (সা.) খোলাফায়ে রাশেদীন, অন্যান্য সাহাবা, তাবেঈন- তবে তাবেঈন সকল মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও ফুকাহায়ে কিরাম র. ধারাবাহিকভাবে আরবী ভাষাতেই খুতবা দিয়ে আসছেন। কাজেই আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুতবা দেয়া শরীয়ত পরিপন্থী ও বিদআত বলে বিবেচিত হবে। (আহসানুল ফাতওয়া: ৪/১৫৪)

    অর্থাৎ গোটা ইসলামের সোনালী যুগ থেকে সর্বাদা আরবি ভাষায় খোৎবা দান করা হতো বিধায়, এটি সুন্নাতে নববী, সুন্নাতে খোলাফায়ে রাশেদীন, সুন্নতে আইম্যায়ে মুজতাহেদীন , সুন্নাতে মুতাওয়াতেরা (নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক সুন্নাত) ও সুন্নাতে মুতাওয়ারেছাহ (বা যুগপরম্পরা সুন্নাত)।সূতরাং এর বিপরীত চিন্তাভাবনা হবে বেদআত।

    ইতিহাসের আলোকে :- আমরা ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে , সাহাবা, তাবেঈন এবং অপরাপর ইসলামের সিপাহশালার ও শাসকগণ অনেক অরানব রাষ্ট্র জয় করেছিলেন অনারব দেশসমূহে শ্রোতাদের প্রয়োজন কোথাও অনারবি ভাষায় খোৎবা দান করেছিলেন বলে কোনো প্রমাণ নেই।যেমন সপ্তম শতকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আগত সাহাবা প্রতিনিধি দল, অতঃপর মেঘনার মোহনা থেকে সুদূর কক্সবাজার পর্যন্ত ব্যাপক বিচরণকারী আরব বণিক তথা দ্বীন প্রচারক দলসমূহ এবং বাংলার গ্রেট ধর্মপ্রচারক বায়েজিদ বোস্তামী, শাহ জালাল, নূর কুতুব ও খানজাহান আলী (রহ.)সহ অগণিত অলি-দরবেশ বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তারা এখানকার মাতৃভাষায় দাওয়াহ কর্ম পরিচালনা করেছিলেন বলে ডক্টর এবনে গোলাম ছমদ, ডক্টর এনামুল হক ও আবদুল মান্নান তালিব প্রমুখ অভিমত প্রকাশ করেন। কিন্তু কোনো প্রচারকর্মী সমসাময়িক নব-মুসলিমদের কাছে বাংলায় খোৎবা দান করেছিলেন বলে আদৌ প্রমাণ নেই।

    খোৎবা ও বক্ততার মধ্যে প্রার্থক্য:-

    খোৎবা জিকির, না ভাষণ এ বিষয়ে মুফতি শফি (রহ.) বলেন, (ক) খোৎবার আসল উদ্দেশ্য হল জিকির, যা বিশেষ একটি ইবাদত। কিন্তু গৌণভাবে ওয়াজ-উপদেশ ও হয়ে যায় । কেননা (১) খোৎবায় দুটি ফরজ এবং পনেরটি সুন্নাত রয়েছে (আলমগীরি-১/১৪৬), যা সাধারন কোন ওয়াজ বা বক্ততায় নেই।

    (২) জুমার খোৎবা হচ্ছে চার রাকাত বিশিষ্ট জোহরের ফরযের বাকি দুই রাকাত নামাজ (বাহার- ১/১০৮), (৩) খোৎবার মাঝখানে কথা বলা যাবে না (মবছুত লিচ ছুরুখছী-২/২৬), কিন্তু বক্তিতার মাঝ খানে কথা বলতে দোষ নেই

    (৪) জুমার নামাজ ছহী হওয়ার খোৎবা শর্তবিশেষ (ফতহুল ক্বদীর) ও (৫) খোৎবার সময় নামাজ পড়া, কথা বলা, তাসবিহ-তাহলিল করা, সালাম দেয়া, এবং অন্যায় কাজে মৌখিক নিষেধ করা সবকিছুই নিষিদ্ধ (হেদায়া, বাহার)।তবে অন্যায় কাজের বাধা খতিবের জন্য প্রযোয্য।অথচ ওয়াজ-বক্তৃতায় এগুলো নিষিদ্ধ নয়। আর না ওয়াজের জন্য কিছু ফরজ ও সুন্নাত রয়েছে। না ওয়াজ জুমার জন্য শর্তস্বরূপ। কাজে এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, খোৎবা প্রচলিত ওয়াজ-বক্তৃতা নয়। - বরং জিকিরের অর্তভূক্ত।

    এই বিশেষ জিকির যা ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে করেন আর শ্রোতামন্লীড না বুঝলেও তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেন।

    (5) নবী করিম (সা.)-এর খোৎবায় রোম, পারস্যসহ বিভিন্ন অনারব দেশের লোক শরিক হতো। তখন সাহাবীদের মধ্যে অনুবাদকর্মে সক্ষম ব্যক্তি অনেক বিদ্যমান ছিলেন। খোৎবা প্রচলিত ওয়াজ-বক্তৃতা হলে রাসূল (সা.) নিঃসন্দেহে অনুবাদের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু খোৎবার ব্যাপারে তা করেছিলেন বলে ইতিহাসে কোথাও প্রমাণ নেই। নবী করিম (সা.)-এর পরে সাহাবীরা বাঁধ ভাঙা জোয়ারের ন্যায় অনারব দেশসমূহে ঢুকে পড়েন এবং বিজিত এলাকায় সর্বত্র জুমা ও ঈদ কায়েম করেন। প্রাদেশিক গভর্নরগণ রাষ্ট্রীয় কাজে দোভাষী ব্যবহার করতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) দাওয়াহ কর্মের জন্যে বেতনধারী একজন দোভাষী রেখেছিলেন (বোখারী অফুদ অধ্যায়)। কিন্তু তারা অনারবি ভাষায় কখনো খোৎবা দেননি। আর না কেউ খোৎবার কাজে কোনো দোভাষীকে ব্যবহার করেছিলেন। কাজেই বোঝা গেল খোৎবা নামাজের ক্বেরাত, তাসবীহ, তাশাহুদ ইত্যাদির ন্যায় জিকির বিশেষ, বক্ততা নয়, নামাজে সুরা কেরাতের যেমন অর্থ না বুঝা সত্বেও আরবীর বিকল্প নেই তেমনি খোতবাও, তবে আরবী না বুঝাটা আমাদের দূর্বলতা, আর আমাদের ব্যক্তি স্বার্থে শরিয়তের হুকম রদ বদল হবেনা এটা ই সত্য।

    খুতবার ভাষা নিয়ে ইমামগণের মতামত :--

    খুতবার ভাষা কি হবে:- , এ ব্যাপারে যদি আমরা চার মাযহাবের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাই যে, চার মাযহাব মতে জুমআর খুতবা আরবীতে দেয়া আবশ্যক।

    মালেকী মাযহাব

    মালেকী মাযহাবে জুমআ সহীহ হওয়ার জন্য সর্ববস্থায় উভয় খুতবা আরবী ভাষায় দেয়া শর্ত। যদি উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ আরবীতে খুতবা দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে তারা অন্যান্য দিনের ন্যায় জুমআর দিনও যোহর নামায পড়বে। জুমআ পড়বে না।

    মাওসুআ গ্রন্থে রয়েছে-

    ذَهَبَ الْمَالِكِيَّةُ : إِلَى أَنَّهُ لاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ الْخُطْبَةُ بِاللُّغَةِ الْعَرَبِيَّةِ ، فَوُقُوعُهَا بِغَيْرِ الْعَرَبِيَّةِ لَغْوٌ ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْجَمَاعَةِ مَنْ يَعْرِفُ الْعَرَبِيَّةَ وَالْخَطِيبُ يَعْرِفُهَا وَجَبَتْ ، فَإِنْ لَمْ يَعْرِفِ الْخَطِيبُ الْعَرَبِيَّةَ لَمْ تَجِبْ ، وَلاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ جَهْرًا فَإِسْرَارُهَا كَعَدِمِهَا وَتُعَادُ جَهْرًا ، وَلاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ لَهَا بَالٌ. (الموسوعة الفقهية الكويت: ১৯/১৮০) وكذا في (كتاب الفقه علي المذاهب الاربعة: ১/৩৬৯، حاشية الدسوقي: ১/৩৮৭، حاشية شرح منح الجليل: ১/২৬০، جواهر الاكليل: ১/৯৫)

    শাফেয়ী মাযহাব

    নামাযে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় আরবী ভাষায় খুতবা দেয়াও শর্ত। হ্যাঁ, উপস্থিত লোকদের কেউ যদি আরবী ভাষায় খুতবা দিতে না পারে এবং সময় স্বল্পতার কারণে আরবী খুতবা শিখতে না পারে, তাহলে উপস্থিত লোকদের কোন একজন স্বীয় ভাষায় খুতবা দিতে পারবে। আর যদি খুতবা শিক্ষা করা সম্ভব হয় তাহলে সবার উপর আরবী ভাষায় খুতবা শিক্ষা করা ওয়াজিব। যদি সুযোগ থাকা সত্তেও কেউ শিক্ষা না করে, তবে সবাই গুনাহগার সাব্যস্ত হবে। এমতাবস্থায় তাদের জুমআর নামায সহীহ হবে না; বরং যোহরের নামায আদায় করবে।

    নিহায়াতুল মুহতাজ গ্রন্থে আছে-

    ويشترط كونها اي الخطبة عربية لاتباع السلف والخلف ولانها ذكر مفروض فاشترط فيه ذلك كتكبيرة الاحرام. (نهاية المحتاج الي شرح المنهاج: ২/৩০৪، كتاب الفقه علي مذاهب الاربعة: ১/৩৬৯، زاد المحتاج: ১/৩২৭، اعانة الطالبين علي حل الفاظ فتح المعين: ২/ ৬৮)

    হাম্বলী মাযহাব

    হাম্বলী মাযহাবে আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম হলে অনারবীতে খুতবা দেয়ার অনুমতি নেই। যেমন, নামাযে অনারবীতে কেরাত পড়ার অনুমতি নেই। তবে উপস্থিত মুসল্লিদের কেউ যদি আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে অন্য ভাষায় খুতবা দিলে সহীহ হয়ে যাবে।

    الحنابلة قالوا : لا تصح الخطبة بغير العربية ان كانوا قادرا عليها فان عجز عن الاتيان بها اتي بغيرها مما يحسنه. (كتاب الفقه علي مذاهب الاربعة: ১/৩৬৯)

    ولا تصح الخطبة بغير العربية مع القدرة عليها بالعربية. (كشف القناع عن متن الاقناع: ২/৩৬، كباب الفروع: ২/১১৩)

    হানাফী মাযহাব

    হানাফী মাযহাব মতে আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম হলে অনারবী ভাষায় খুতবা দেয়া বা আরবী ভাষায় খুতবা পাঠ করে বাংলা বা অন্য কোন ভাষায় তরজমা করা মাকরুহে তাহরীমী ও না জায়েয।

    وصح شروعه مع كراهة التحريم بتسبيح وتهليل وتحميد كما صح لوشرع بغير عربية. الدر المختار: ২/১৮২-১৮৩)

    وعلي هذا الخلاف الخطبة وجميع اذكار الصلوة. (الدر المختار: ২/১৮৩، البحر الرائق: ১/৫৩৫)

    ماذكر في التحفة والذخيرة والنهاية من ان الاصح انه يكره الافتتاح بغير الله اكبر عند ابي حنيفة (رح) فالمراد به الكراهة التحريم. (البحر الرائق: ১/৫৩৪، وفيه ايضا: وقالا لايجوز الا عند العجز وبه قالت الثلاثة. (البحر الرائق: ১/৫৩৫) وكذا (حاشية ابن عابدين: ২/১৮২، المبسوط للسرخسي: ১/১৩৬، الهداية: في هامشه: ১/১০১، حاشيةالطحطاوي: ص২৮০، المحيط البرهاني: ২৩৩، تاتار خانية: ২/৫২، عمدة الرعاية: ১/২০০، كفاية المفتي: ৩/২১৭، فتاوي محمودية: ১২/৩৬৮)

    একটি সন্দেহ ও তার নিরসন:- 

    সন্দেহ: কেউ কেউ বলেন, মাতৃ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে- খুতবা শুধু একটি বয়ান বা বক্তৃতার নাম। আর বয়ান ও বক্তৃতা দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে শ্রোতারা তা বুঝা এবং উপদেশ গ্রহণ করা। যদি আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া হয়, তাহলে অনারবী শ্রোতারা তা থেকে কীভাবে উপকৃত হবে ? তাই মাতৃ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া যাবে না।

    নিরসন: তাদের এই ধারণাটি সঠিক নয়। কেননা, খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়; বরং খুতবা হলো জুমআর নামাযের সংশ্লিষ্ট একটি ইবাদত, যা দুই রাকাত নামাযের স্থলাভিষিক্ত। খুতবা যে শুধু বক্তৃতার নাম নয়; বরং একটি বিশেষ ইবাদত এর স্বপক্ষে নিম্ন কয়েকটি প্রমাণ উল্লেখ করা হলো:

    ১. বক্তৃতাকে আরবীতে ‘তাযকীর’ বলা হয়, অথচ কুরআন ও হাদীসে খুতবাকে ‘যিকির’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ (سورة الجمعة: ৯)

    অর্থ: হে মুমিনগণ ! জুমআর দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও। (সূরা: জুমআ: ৯) এখানে যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জুমআ।

    ২. সকল ফুকাহায়ে কিরাম জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবাকে শর্ত বলেছেন-

    ويشترط لصحتها سبعة اشياء الرابع: الخطبة فيه. (الدر المختار: ৩/১৯)

    وكونها شرطا لانعقاد الجمعة . (بدائع الصنائع: ১/৫৮৯) ( وكذا في فتح القدير: ২/৫৫) (حاشيةالطحطاوي: ص৫১৩)

    যদি খুতবা দ্বারা ওয়াজ করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে এটাকে জুমআর নামায সহীহ হওয়ার পূর্বশর্ত বলা অর্থহীন।

    ৩. জুমআর খুতবা জুমআর নামাযের ওয়াক্তে হওয়া শর্ত। যেমনটি ফুকাহায়ে কিরাম লিখেন-

    فلو خطب قبله وصلي فيه لم تصح. (الدر الختار: ৩/১৯)

    অর্থ: যদি জুমআর নামাযের ওয়াক্ত আসার পূর্বে খুতবা দেয়া হয়। আর ওয়াক্ত আসার পর নামায পড়ে তাহলে জুমআ সঠিক হবে না। (বাদায়ে: ২/২৫৬, হিন্দিয়া: ১/১৬৮)

    এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, যদি খুতবা দ্বারা উদ্দেশ্য ওয়াজ বা বক্তৃতা হতো, তাহলে জুমআর নামাযের ওয়াক্ত হওয়া শর্ত করা হতো না; বরং যে কোন সময় কিছু ওয়াজ নসিহত করাই যথেষ্ট হতো। সময় নির্ধারণই প্রমাণ বহন করে এটি একটি ইবাদত। শুধুমাত্র ওয়াজ বা নসিহত নয়।

    ৪. জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবা পাঠ করা শর্ত। আর খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তবে যদি উপস্থিত মুসল্লিদের সকলেই বধীর বা ঘুমন্ত থাকে এবং তাদের সামনে খুতবা দেয়া হয়, তাহলেও তা জুমআ আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। যেমন, আল্লামা শামী র. বলেন-

    كونها قبلها بحضرة جماعة ينعقد الجمعة بهم ولو كانوا صما او نياما. (حاشية ابن عابدين: ৩/১৯، البحر الرائق: ২/১৫৭)

    অর্থ: জুমআ বিশুদ্ধ হতে কম পক্ষে তিন জন লোকের সম্মুখে নামাযের পূর্বে খুতবা দেয়া শর্ত। যদিও মুসল্লিগণ বধীর বা ঘুমন্ত হোক। যদি খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতা-ই হতো তাহলে বধীর ও ঘুমন্ত লোকদের সামনে খুতবা দেয়ার কি অর্থ?

    ৫. খুতবা দেয়ার পর যদি খতীব সাহেব কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং তাতে দীর্ঘ সময় বিলম্ব হয়ে যায়, তাহলে পূনরায় খুতবা দিতে হবে। যদিও শ্রোতা প্রথম বারের শ্রোতারা-ই হোক না কেন ।

    ولو خطب ثم رجع الي بيته فتغدي او جامع واغتسل ثم جاء استقبل الجمعة وكذا في المحيط. (البحر الرائق: ২/২৫৮)

    যদি খুতবা দ্বারা ওয়াজ বা নসিহত করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে একবার খুতবা দেয়ার পর বিলম্ব হওয়ার কারণে পূর্বের শ্রোতাদের সামনে পূনরায় খুতবা দেয়ার কি অর্থ ?

    ৬. খুতবা শুধু ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়। এর বড় প্রমাণ হলো, ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা সুবহানাল্লাহ পড়ার দ্বারা খুতবা আদায় হয়ে যায়।

    واذا خطب بتسبيحة واحدة او بتهليل وبتحميد اجزائه لقول ابي حنيفة رح. (المبسوط: ২/৪৭)

    অথচ ‘সুবহানাল্লাহ’ বা ‘আলহামদু লিল্লাহ’ কে কেউ ওয়াজ বা বক্তৃতা বলে না।

    উপরোক্ত প্রমাণগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়; বরং একটি বিশেষ ইবাদত বা যিকির। তবে খুতবা নামক ইবাদতে আরবী ভাষায় ওয়াজ, নসিহত থাকা একটি স্বতন্ত্র সুন্নাত। সুতরাং যখন প্রমাণিত হলো, খুতবার উদ্দেশ্য ওয়াজ নসিহত নয়; বরং ইবাদত। তাই অনারবী শ্রোতাদের সামনে আরবী ভাষায় খুতবা দেয়ার দ্বারা কি ফায়দা ? এ ধরণের প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। যদি কেউ এমন প্রশ্ন করে, তাহলে সর্ব প্রথম নামায ও কুরআনের ব্যাপারে করতে হয়। যখন কুরআন বা নামাযের ব্যাপারে এই ধরণের প্রশ্ন নেই। তাহলে খুতবার ব্যাপারে প্রশ্ন করাও অনর্থক।

    খুতবা ও নামাযের মাঝে যে সব বিষয়ে মিল রয়েছে

    ১. নামযের সময় নির্ধারিত; খুতবার সময় ও নির্ধারিত।

    ২. নামায বিনা ওযরে দাড়িয়ে পড়তে হয়; খুতবাও দাড়িয়ে দিতে হয়।

    ৩. নামাযের পূর্বে ইকামত আছে, তেমনি খুতবার পূর্বে আযান আছে।

    ৪. নামাযের মধ্যে যেমন সালাম কালাম করা যায় না, তেমনি ভাবে খুতবাতেও সালাম কালাম করা যায় না।

    ৫. নামায ও খুতবার বিষয়বস্তু মৌলিকভাবে এক। নামাযে যেমন, সূরা ফাতেহা পড়া হয় যাতে আল্লাহ তাআলার হামদ আছে, এমনিভাবে খুতবাতেও আল্লাহ তাআলার হামদ থাকতে হয়।

    ৬. খুতবাতে রাসূল স. এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়। নামাযেও রাসূল স. এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়।

    ৭. খুতবাতে আল্লাহ তাআলার তাওহীদ ও রাসূল স. এর রিসালাতের সাক্ষ্য আছে, নামাযেও তাশাহহুদ আছে।

    ৮. খুতবায় কুরআনের তিলাওয়াত আছে, নামাযেও কুরআনের তিলাওয়াত করতে হয়।

    ৯. খুতবায় মুসলমানদের জন্য দুআ করা হয়, নামাযেও সালামের পূর্বে দুআ আছে।

    ১০. ইমাম আবু হানিফা র.ও মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবা নামাযের স্থলাভিষিক্ত। খুতবাতে কারো হাঁচির উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা যাবে না। কারো সালামের উত্তর দেয়া যাবে না। (যেমনিভাবে নামাযে কারো হাঁচি ও সালামের উত্তর দেয়া যায় না।)

    উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা খুতবা ও নামাযের সাদৃশ্যতা সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে। সুতরাং নামাযের তাকবীর, কেরাত, তাসবীহ, দুআ ইত্যাদি যেভাবে আরবী ভাষায় পড়া আবশ্যক, অন্য ভাষায় পড়া বা তরজমা করা জায়েয নেই। তদ্রুপ খুতবা আরবী ভাষায় পড়া আবশ্যক। 

    লেখক:-

    মৌলানা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া 

    ফাজেলে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া, 

    সিনিয়র শিক্ষক মাদ্রাসা হোছাইনিয়া আজিজুল উলুম রাজঘাটা, লোহাগাড়া ,চট্টগ্রাম, 

    ব্লগার ও ইসলামি অনলাইন এক্টিভিস্ট 

প্রশ্ন: ০৫
আমি একজন গৃহিণী। আমার প্রায় বারো ভরি স্বর্ণ আছে। যা আমার বিবাহের মোহরানা ও পিতামাতার কাছ থেকে উপহার স্বরূপ পাওয়া। আর আমার স্বামীর আয় খুবই সীমিত। যা দিয়ে সংসারের খরচাদি ও অন্যান্য প্রয়োজন পূর্ণ করার পরে আয়ের টাকা থেকে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আর আমাকে হাত খরচ হিসেবে যা দেওয়া হয় তাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। এদিকে আমার স্বামীর উপর বর্তমানে অনেক ঋণ আছে। ইত্যাদি কারণে আমি আমার উল্লেখিত স্বর্ণের যাকাত আদায় করতে অক্ষম।
উল্লেখ্যএই বারো ভরি স্বর্ণ যার বিবরণ উপরে উল্লেখিত হল তা আমি আমার সন্তানদের মালিক বানিয়ে দেওয়ার নিয়ত করেছি। সন্তানরা এখনো নাবালেগ রয়েছে। তাই প্রশ্ন হল৭.৫ ভরি স্বর্ণ আমি নিজের জন্য রেখে বাকি স্বর্ণগুলোকে এই নাবালেগ সন্তানদের মালিক বানিয়ে দিলে যাকাতের হিসাবটা আমি কীভাবে করববিস্তারিতভাবে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর:
যাকাত ইসলামের অন্যতম রোকন। পাঁচ স্তম্ভের একটি। এবং যাকাত সম্পদের হক। কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার পরও যাকাত আদায় না করা বা আদায় না করার জন্য হীলা-বাহানা খোঁজ করা অথবা আদায় করতে গড়িমসি করা সবটাই অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আপনি যাকাত আদায়ে অসামর্থ্যরে কথা লিখেছেন। কিন্তু শরীয়ত তো সম্পদের অংশ বিশেষ দ্বারাই যাকাত দিতে বলেছে। যেমন আপনার কাছে স্বর্ণ আছেআপনি তার ২.৫০% যাকাত হিসেবে আদায় করবেন। অন্য কোনো সম্পদ বা টাকা তো আদায় করতে হবে না। হাঁআপনি চাইলে সোনার বদলে সমমূল্যের টাকাও দিতে পারেন।
তাই নিজের কাছে ১২ ভরি সোনা থাকার পরও অসামর্থ্যরে প্রশ্ন আসে না।
উল্লেখ্য যেনাবালেগ সন্তানদের কিছু স্বর্ণ দিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বাস্তবেই যদি তাদেরকে ঐ পরিমাণ একেবারেই দিয়ে দেন এবং এরপর আপনার কাছে যদি ৭.৫ তোলা স্বর্ণ থাকে তবে তখনও আপনার উপর যাকাত ফরয হবে। তবে যদি ৭.৫ তোলার কম স্বর্ণ থাকে এবং অন্য কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকে (যার দ্বারা আপনার যাকাতের নেসাব পূর্ণ হতে পারে) তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি নেসাবের মালিক না থাকার কারণে আপনার উপর যাকাত ফরয হবে না।
কিন্তু যাকাত থেকে বাঁচার জন্য বাহানা হিসেবে এমনটি করা যাবে না। সন্তানদেরকে বাস্তবেই মালিক বানিয়ে দিলে তারা মালিক হয়ে যাবে। তখন আর তাতে আপনার কোনো অধিকার থাকবে না। কিন্তু শুধু যাকাতের ভয়ে নামেমাত্র মালিকানা দিলে যাকাত মাফ হবে না।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৬৭; কিতাবুল আছল ২/৯১; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৮৫১
প্রশ্ন: ০৬ 
ক) আমার হজ্ব করার সামর্থ্য নেইকিন্তু ওমরাহ করার সামর্থ্য আছে। এখন আমার জন্য কি ওমরাহ করা আবশ্যক?
খ) হজ্বের মতো ওমরার জন্য কি নির্দিষ্ট সময় আছে?
গ) শুনেছিকাবা শরীফ দেখলে নাকি হজ্ব ফরয হয়ে যায়এ কথা কি ঠিকতাহলে আমি ওমরাহ করলে কি আমার উপর হজ্ব ফরয হয়ে যাবে?
উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে শরঈ সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর:
ওমরারর সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। অতএব এ অবস্থায় আপনার জন্য ওমরাহ করা সুন্নত। আর ওমরার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু যিলহজ্ব মাসের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিন ওমরাহ করা মাকরূহ। এছাড়া বছরের যে কোনো সময় ওমরাহ করা জায়েয আছে। আর রমযান মাসে ওমরাহ করা সবচেয়ে উত্তম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনরমযানে একটি ওমরাহ করা আমার সাথে একটি হজ্ব করার সমতুল্য। -সহীহ বুখারীহাদীস ১৮৬৩
আর কাবা শরীফ দেখলেই হজ্ব ফরয হয়ে যায়এ ধারণা ঠিক নয়। হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে কাবা শরীফ দেখা-না দেখার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি হজ্বের মৌসুমে হজ্বে আসা-যাওয়ার খরচসহ তার অনুপস্থিতির দিনগুলোতে পরিবারের চলার মতো স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া বাইরে থেকে ওমরার ভিসায় গিয়ে হজ্ব করা নিষেধ। তাই ওমরাহ করতে গিয়ে হজ্ব পর্যন্ত থেকে যাওয়ারও সুযোগ নেই।
-গুনইয়াতুন নাসিক ২২, ১৯৬; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৬৩; আততাজরীদ ৪/১৬৮৮ 

প্রশ্ন: ০৭
একজন নিঃসন্তান বিধবা নারীর উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। তার আপন ভাই আছেকিন্তু তাদের উপর হজ্ব ফরয নয়। তবে বিধবার ছোট বোন ও তার স্বামী হজ্বের সফরে যাচ্ছে। উক্ত বিধবা তাদের সাথে হজ্বের জন্য নিয়ত করেছে।
এখন প্রশ্ন হলছোট বোন ও তার স্বামীর সাথে বিধবার হজ্বের জন্য যাওয়ার বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? 
উত্তর:
হজ্বের সফরেও মহিলাদের জন্য মাহরাম থাকা আবশ্যক। সহীহ মুসলিমে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত আছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনআল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার পিতাছেলেস্বামী বা ভাই অথবা অন্য কোনো মাহরাম ছাড়া তিনদিন (৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার) বা তার চেয়ে বেশি দূরত্বের কোথাও সফর করা বৈধ নয়।-সহীহ মুসলিমহাদীস ১৩৪০
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেনআমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুতবায় বলতে শুনেছি, .. কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া কোথাও সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেনহে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী তো (মাহরাম ছাড়াই) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। আর আমি তো অমুক যুদ্ধে যাব বলে নাম লিখিয়েছি। আল্লাহর রাসূল বললেনযাওতুমিও তোমার স্ত্রীর সাথে গিয়ে হজ্ব কর। -সহীহ মুসলিমহাদীস ১৩৪১
সুতরাং প্রশ্নোক্ত মহিলার জন্য তার বোন ও তার স্বামীর সাথে হজ্বে যাওয়া জায়েয হবে না। মাহরামের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে। আর শারীরিক সক্ষমতা থাকা পর্যন্ত যদি মাহরামের ব্যবস্থা না হয় তাহলে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেলে কাউকে দিয়ে বদলি হজ্ব করাতে হবে বা বদলি হজ্বের অসিয়ত করে যেতে হবে।
উল্লেখ্য যেশরীয়তের বিধান অনুযায়ী যেমন মহিলাদের জন্য হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম থাকা জরুরি তেমনি বাস্তবতার আলোকেও হজ্বের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য পুরো সফরে মহিলার জন্য মাহরামের প্রয়োজন। তাছাড়া সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী মহিলার সাথে মাহরাম থাকা বাধ্যতামূলক। মাহরাম সাথে না থাকলে হজ্ব এজেন্সিগুলো ভুয়া মাহরাম বানিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। হজ্বের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আদায় করতে গিয়ে এমন গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
-রদ্দুল মুহতার ২/৪৫৮; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৫৫ 
প্রশ্ন:০৮
আমাদের প্রিন্টিং প্রেসে ক্রেতাদের সাথে এভাবে লেনদেন হয়ে থাকে যেযখন তারা কোনো বই-পুস্তকড য়েরীপোস্টার ইত্যাদি ছাপাতে চায় তখন তাদেরকে ভালো কোয়ালিটির কাগজও বাইন্ডিং হিসাবে দাম বলা হয়। যদি তারা ঐ দামের সাথে সন্তুষ্ট না হয় বরং এর চেয়ে অনেক কম দামে দিতে চায় তখন আমরা কম দামে পণ্য বানিয়ে দেই। কিন্তু দাম হিসাবে পণ্যের মান কমিয়ে দেই। অনেক সময় নমুনা দেখিয়ে দরদাম ঠিক করা হয়। যদি তারা ঐ নমুনার ন্যায্য দামের সাথে সন্তুষ্ট না হয় এবং তারা যে দাম বলে ঐ দামে ঐ কোয়ালিটির পণ্য বানিয়ে দেওয়া যদি সম্ভব না হয় তখন আমরা তাদেরকে ঐ দামে ঐ কোয়ালিটির পণ্য বানিয়ে দিতে সম্মত হই। কিন্তু পরে সূ²ভাবে কাগজ ও বাইন্ডিং এর মান কমিয়ে দেইযা ক্রেতারা বুঝতে পারে না। তবে দাম হিসেবে পণ্যের মান কম হয় না।
উল্লেখ্য যেএভাবেই প্রিন্টিং প্রেসগুলোতে লেনদেন হয়ে থাকে তাই আমরাও এভাবে করতে বাধ্য হই। অন্যথায় ক্রেতা ধরে রাখা এবং ব্যবসার মান ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। প্রায় সময় লস দিতে হবে। জানার বিষয় হলআমাদের এভাবে কারবার করা সহীহ হচ্ছে কি না?

উত্তর:
ক্রেতার সাথে যে মানের কাগজছাপা এবং বাঁধাইয়ের চুক্তি হবে প্রেস কর্তৃপক্ষের জন্য ঐ মানেরই বইডায়েরী ইত্যাদি দেওয়া জরুরি। তদ্রূপ কোনো নির্দিষ্ট নমুনার উপর চুক্তি হলে তার চেয়ে নিম্ন মানের পণ্য দেওয়া জায়েয হবে না।
ক্রেতা মূল্য কম দিতে চাইলে তাকে সুস্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে যেএই মূল্য দিয়ে উক্ত মানের কাগজ বা বই দেওয়া যাবে না।
মোটকথাক্রেতাকে চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী পণ্য না দেওয়া এবং ক্রেতাকে বাস্তব কথা না বলে ভালো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিম্ন মানের দেওয়া ধোঁকা ও মিথ্যার শামিল। খরিদ্দার ধরে রাখার স্বার্থেও এমন মিথ্যা বলা জায়েয নেই। এতে ব্যবসার বরকত নষ্ট হয়ে যায়।
অতএব সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখেই ব্যবসা করতে হবে এবং নিজেদের স্বচ্ছতার কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সততা ও স্বচ্ছতার মধ্যেই আল্লাহ তাআলা বরকত রেখেছেন। সত্য ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের জন্য হাদীসে সুসংবাদ এসেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তরজমা) ... যদি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সত্য বলে এবং সবকিছু স্পষ্ট করে (লেনদেন করে) তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি গোপন রেখে (লেনদেন করে) এবং মিথ্যা বলে তাহলে এতে তাদের ব্যবসায় বরকত থাকবে না। -সহীহ বুখারীহাদীস ২১১৪
আরেক হাদীসে এসেছেহযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিতরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনসত্য ও আমানতদার মুসলিম ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন শহীদদের সাথে থাকবে। 
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৩৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/২৬৬; আলমওসূআতুল ফিক
প্রশ্ন: -০৯ 
আমি ছোট বেলায় আমার আব্বার
সঙ্গে হজ্ব করেছি। এখন আমি
বড় হয়েছি এবং আমার কাছে
হজ্বে যাওয়ার মতো সম্পদ
আছে। প্রশ্ন হল, আমার
ছোটবেলার ঐ হজ্বটিই কি ফরয
হজ্ব হিসেবে আদায় হয়ে
গেছে, নাকি আবার হজ্ব করতে
হবে? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
আপনার ছোটবেলার হজ্বটি নফল
হিসেবে আদায় হয়েছে। তাই
আপনাকে ফরয হজ্ব আদায় করতে
হবে। ইবনে আব্বাস রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বালক
হজ্ব করবে অতপর প্রাপ্তবয়স্ক
হবে তাকে আরেকটি হজ্ব
করতে হবে ।
তবারানী, হাদীস ৭২৫২; মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৪৭৩ (হাদীস ৫২৫৪, বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৩; আলবাহরুল আমীক ১/৩৬২৷


প্রশ্ন ১০ 

ঝাড ফুক তাবিজ ব্যবহার কি জায়েয? 
উত্তর-ঃ৷ 
ড়ফুক তাবিজ কবজ চার শর্তে জায়েয আছে;
(১) কুফুরী কালাম না হওয়া।
(২) লেখাগুলো অস্পষ্ট না হওয়া।
(৩) কোন নাজায়েয কাজের জন্য না হওয়া।
(৪) এমন আক্বীদা না থাকা যে,
তাবিজের মধ্যে ই ভালো করার
ক্ষমতা রয়েছে। কারন ভালো
করার মালিক একমাত্র আল্লাহ।
¤উল্যেখিত শর্ত অনুযায়ী ঝাড়ফুক,
তাবিজ, কবজ দিয়ে বিনিময়
নেওয়া জায়েয আছে।
মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ৫৬৭,
মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা-
হাদিস নং ২৪০১৩,
ফতোয়ায়ে শামী - ৬/৩৬৩৷


প্রশ্ন: ১১

আমার আব্বা দুই বিবাহ করেন। প্রথম পক্ষে
তিন মেয়ে হওয়ার পর ঐ স্ত্রী ইন্তেকাল
করেন। পরবর্তীতে আমার আম্মাকে বিবাহ
করেন। আব্বার প্রথম পক্ষের বড়
মেয়ের মেয়ের মেয়ে তথা বড়
মেয়ের নাতনীর সাথে আমি কিছুদিন পূর্বে
বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু ধর্মীয় দিক
থেকে কেউ কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন
উঠালে আমি বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হই।
অতএব মহোদয়ের কাছে আমি এ বিষয়ে
মাযহাব বর্ণনাসহ ফকীহদের বিস্তারিত মতামত
জানতে একান্ত আগ্রহী।
উত্তর:
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মেয়েটি আপনার
মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তার সাথে আপনার বিবাহ
শুদ্ধ হয়নি। কুরআন মাজীদের সূরা নিসার ২৩ নং
আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন , ( তরজমা)
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে
তোমাদের মাতা , তোমাদের
কন্যা, তোমাদের বোন , তোমাদের
ফুফু , তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগ্নিকন্যা ...।
উক্ত আয়াতে মাহরামের আলোচনায় যে
ভগ্নিকন্যা এসেছে তাতে বোনের
মেয়েসহ তার অধস্তন সকল কন্যা অন্তর্ভুক্ত।
এতে আপন বোনের মেয়ে , বৈপিত্রেয়
বোনের মেয়ে এবং বৈমাত্রেয় বোনের
মেয়ে এবং এদের অধস্তন সকল কন্যার হুকুম
সমান।
তাই এখন আপনাদের কর্তব্য হল, এখনি পৃথক
হয়ে যাওয়া এবং নিজেদের ভুলের জন্য
আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার করা।
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হুকুমটি (ভগ্নিকন্যার
অধস্তনগণ মাহরাম হওয়া) সর্বসম্মত মাসআলা।
এতে কোনো ইমাম বা কোনো মাযহাবের
দ্বিমত নেই।
আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১২৩; তাফসীরে
মাযহারী ২/২৬৫; কিতাবুল আছল ৪/৩৮৫; ফাতাওয়া
খানিয়া ১/৩৬০; ফাতহুল কাদীর ৩/১১৭৷ 


প্রশ্ন: ১২


আমরা হজ্বের বিভিন্ন বইয়ে পড়েছি , ইহরাম
করার আগে দুই রাকাত নফল নামায পড়া সুন্নাত।
কিন্তু কিছুদিন আগে এক ভাই থেকে শুনলাম ,
ইহরামের আগে কোনো নামায নেই। বরং
তা বিদআত। কথাটি শোনার পর বিভ্রান্তিতে
পড়ে যাই। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী ?
দলীল প্রমাণসহ জানতে চাই।
উত্তর:
একাধিক হাদীসে নামাযের পর ইহরাম করার কথা এসেছে। অতএব ফরয নামায আদায় করলে
এরপর ইহরাম করবে নতুবা ইহরামের
উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে এরপর
ইহরাম করবে। এটিই সুন্নত। সহীহ বুখারীতে
আছে , উমর রা. বলেন , আকীক নামক স্থানে
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বলতে শুনেছি , আজ রাতে আমার রবের পক্ষ
থেকে আগমনকারী (অর্থাৎ জিবরীল
আলাইহিস সালাম) এসেছিলেন। তিনি আমাকে
বললেন , এই বরকতময় স্থানে নামায পড়ুন এবং
বলুন , আমি হজ্বের সাথে উমরার ইহরাম করলাম।
সহীহ বুখারী , হাদীস ১৫৩৪৷
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
হজ্বের বিবরণ সম্বলিত হাদীসগুলোতেও
আছে ,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুলহুলাইফাতে দুই রাকাত নামায পড়ার পর ইহরাম
করেছিলেন। দেখুন সহীহ মুসলিম, হাদীস
১১৮৪ ; জামে তিরমিযী , হাদীস ৮১৯৷
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে এক
বর্ণনায় স্পষ্টভাবে এসেছে , তিনি
বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুলহুলাইফার মসজিদে দুই রাকাত নামায পড়ার পর ঐ
মজলিসেই হজ্বের ইহরাম করেছিলেন।
সুনানে আবু দাউদ , হাদীস ১৭৭০ ; মুসতাদরাকে
হাকেম , হাদীস ১৬৯৯৷
প্রকাশ থাকে যে , এই মাসআলায় চার মাযহাবের
সিদ্ধান্ত এক ও অভিন্ন। ইমাম নববী রাহ. “ আল
মাজমূ শরহুল মুহাযযাব ” লিখেছেন, ইহরাম করার
সময় দুই রাকাত নামায পড়া উত্তম। এ ব্যাপারে সবার
ঐকমত্য রয়েছে। আলমাজমূ ৭/২৩২৷
সুতরাং ইহরামের পূর্বের নামাযকে বিদআত বলা
সম্পূর্ণ ভুল ও মনগড়া কথা। 

 প্রশ্ন:৷ ১৩ 
আমরা তো জানি, ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত
কাপড় পরা জায়েয নয়। প্রশ্ন হল , লুঙ্গির
ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম ? না এক্ষেত্রে
মাসআলা ভিন্ন ?
উত্তর:
ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য শরীরের
কোন অঙ্গের আকৃতিতে সেলাই করা
পোশাক পরা নাজায়েয।
যেমন, পাঞ্জাবী, পায়জামা, গেঞ্জি ও মোজা
ইত্যাদি। আর লুঙ্গি যেহেতু পায়জামার মত
কোনো অঙ্গের আকৃতিতে বানানো নয় তাই
সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরা নাজায়েয নয়। তবে
খোলা চাদর পরলে যাদের সতরের
অঙ্গগুলো বা তার অংশবিশেষ খুলে যাওয়ার
আশংকা না থাকে তাদের জন্য সেলাইযুক্ত লুঙ্গি
না পরাই উচিত। কেননা ইহরামের কাপড়
একেবারে সেলাইমুক্ত হওয়া উত্তম। তাই সম্ভব
হলে ইহরাম অবস্থায় সেলাইবিহীন চাদরই
পরবে। কিন্তু সেলাইবিহীন চাদর পরলে
কারো যদি সতর খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে
তবে তার জন্য সেলাই করা লুঙ্গি ব্যবহার করা
অনুত্তম হবে না।
মানাসিক, পৃ. ৯৮, ১২০; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৮/৭৫;
আহকামে হজ্ব, মুফতী মুহাম্মাদ শফী পৃ.৩৪৷

তবে  রসুল সাঃ ও সলফে সাসেহীন সবাই সেলাই বিহীন সাদা কাপড়ই পড়েছেন  তাই সাদা কাপড়ই উত্তম বলে ওলামায়ে কেরাম মতামত ব্যক্ত করেছেন 

 প্রশ্ন:৷ ১৪
নখ, চুল বা পশম ইত্যাদি কাটার পর
আমরা শহরের মানুষ তা কোথায় ফেলব?
কেননা শহরে দাফনের জায়গা পাওয়া
কঠিন। কমোডে ফেলা যাবে কি না?
দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
নখ, চুল বা পশম ইত্যাদি কাটার পর তা
মাটিচাপা দেওয়াই উত্তম। তবে শহরে বা
যেখানে মাটিচাপা দেওয়ার সুযোগ নেই
সেখানে বাসার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা
যাবে। কিন্তু তা কমোডে না ফেলাই
উচিত।
আর যেসব পশম শরীরে থাকা অবস্থায়
অন্যের জন্য দেখা নাজায়েয শরীর থেকে
পৃথক হওয়ার পর বা কাটার পরও তা দেখা
নাজায়েয। তাই এ ধরনের পশম পরিষ্কার
করে টয়লেটের ভেতর ফেলে দেওয়া
যাবে। আর অন্য কোথাও ফেলতে চাইলে
আলাদা কোনো কিছুতে ফেলা
উচিত, যেন তা দেখা না যায়।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস
২৬১৭১, ২৬১৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৯,
৫/৩৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; খুলাসাতুল
ফাতাওয়া ৪/৩৪১; ফাতাওয়া খানিয়া
৩/৪১১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৭১৷


প্রশ্ন:৷ ১৫


দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে
আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে
তখন কী করণীয়? মনে পড়লে বসে পড়বে কি না? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর:
ফরয নামাযের শেষ রাকাতে বৈঠক না
করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত
রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ
হওয়ামাত্র বৈঠকে ফিরে আসবে এবং
সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সম্পন্ন
করবে। কিন্তু অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা করে ফেললে নামাযটি আর ফরয থাকবে না। তাই দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে এমনটি হলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, ৩য় রাকাতে বৈঠক না করে আরো এক রাকাত পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পুরো চার রাকাতই নফল গণ্য হবে। আর তাকে ফরয নামায পুণরায় পড়ে নিতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২২; ইলাউস সুনান ৭/১৭৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬২-৪৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৫  


চলবে ------ 

সংকলক 
এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া  
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক 
নুরুলগনি ইসলামি একাডেমি  কাটাছরা মিরসরাই চট্টগ্রাম। 
০০৮৮-০১৮২৯৩১৮১১৪ 
০০৯৬৬-৫০৪৯৬৭৮৬৩ ওয়াতসাফ / ইমু।