শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০

পৃথিবীতে ‎ ‎মুর্তি ‎পুজার ‎সুচনা ‎ও ‎ভাষ্কর্ষ ‎

পৃথিবীতে  মূর্তিপূজা তথা কবর বা মাজার পূজার সূচনা ভাষ্কর্যের মাধ্যমেই শুরু  হয়েছিল। 
এ কথাটি বুঝতে আমাদের কে একটু পিছনে যেতে হবে

হযরত আদম আঃ থেকে নূহ্ আঃ পর্যন্ত তৎকালীন পৃথিবীর সকল মানুষই মুসলিম ছিল,  অর্থাৎ 
আত্বসমর্পন কারী তথা তাওহীদের উপর অটল ছিল , কোন ফেরক্বা বন্দী ছিলনা, এমন অবস্হা হযরত নূহ আঃ এর জামানা পর্যন্ত চলতে থাকে . ইমাম বগবী রঃ বলেন হযরত আদম আঃ ও নূহ আঃ এর মধ্যবর্তী সময়ে ৫ জন বিশিষ্ট মুত্তাকী ধর্মভীরু নেককার লোক ছিলেন, যার বর্ননা সূরা নূহ্ এ ভাবেই এসেছে , , وفالوا لا تذرن الهتكم ولا تذرن ودا ولاسواعا ولا يغوث ويعوق ونسرا الاية سورة نوح
এ ৫ জন যথাক্রমে ওয়াদ,সূয়া , ইয়াগুছ, ইয়াউক, ও নসর , এরা প্রকৃত পক্ষে সে জামানার মুত্তাকী পরহেজগার লোক বা সে জমানার অলী, সবাই এদের সন্মন করত , তাদের কৃত নছিহত শুনতো আমল করত,ভক্তরা সূদীর্ঘকাল পর্যন্ত তাদের পদান্ক অনূসরন করে সঠিক ও তাওহীদের উপর অটল ছিল কিন্তু তাদের সকলের এন্তেকালের পর শয়তান মানুষের রুপ ধারণ করে ভক্তদের কাছে এসে প্ররোচনার জাল আঁটল এভাবে যে,

ক, তোমরা যে সকল মহাপুরুষদের পদান্ক অনূসরন করছ তাদের ছবি এঁকে উপাসানলয়ে রেখে এবাদত করলে এবাদতে পূর্নতা লাভ করবে, মানুষবেশী শয়তানের পরামর্শে তাই করল, এভাবে অনেক দিন চলতে থাকে।
খ,পরবর্তীতে এদের মৃত্যুর পর অন্য প্রজন্মের কাছে অন্য আর একটি পন্দী আঁটল এভাবে যে, তোমাদের মুরুব্বীদের মূর্তী ভাষ্ককর্য  তৈরী করে তোমাদের সামনে রেখে দাও তাহলে আল্লাহর এবাদতে একাগ্রতা ও পূর্নতা লাভ করবে, তারা শয়তানের ধোকা বুঝতে না পেরে প্রতিকৃতি উপাসনালয়ে রেখে এদের সৃতি জাগরীত করে এবাদতে বিশেষ পুলক অনূভব করতে লাগল,এ ভাবে অনেক দিন চলতে লাগল ৷
গ,তৃতীয় ধাপে এসে পরবর্তী বংশধরদেরএমন ভাবে প্ররোচনা করল যে মালায়ূন শয়তান কামীয়াব হল আর ভক্তরা পথভ্রষ্ট হয়ে ইতিহাসের সর্বনিন্ম আস্তাকূডে নিক্ষিপ্ত হলো ৷
 শয়তান বল্ল যে তোমাদের পূর্ব পূরুষরাই শুধু মাত্র এসব মূর্তীর সন্মানই করেনী বরং এসকল মূর্তীরই এবাদত করেছে,  তাদের আপদে বিপদে তাদের উসিলায় দোয়া করছে, তাদের কাঋে হাজত রাওয়া করছে 
এগুলোই হচ্ছে ওদের উপাসক,
সুতরাং তোমরাও তোমাদের বাপ দাদার অনূসরন কল্পে এদেরই এবাদত কর,কাজেই শয়তানের পরামর্শে তাইই করল৷এ ভাবে পৃথিবীতে সর্ব প্রথম মূর্তি পূজার সূচনা হয়। মুলত 
  গুলো সর্বপ্রথম  উপাশনায়  ব্যবহারীত হয়নি বরং ভাষ্কার্য হিসাবে সন্মান প্রদর্শ ও পরে এবাদতে ধাবিত হয়। 


ইমাম বোখারী (রহঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, এই লোকগুলি হযরত নূহ (আ.)-এর যুগের নেককার ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান তাদের অনুসারীদের এই মর্মে ধোঁকা দিল যে, এঁদের বসার স্থানগুলিতে এক একটি মূর্তি বা ভাষ্কর্য 
বানাও ও তাদের নামে নামকরণ কর। লোকেরা তাই করল। ...
এই মূর্তিগুলি পরবর্তীকালে আরবদের মধ্যেও চালু ছিল।
ওয়াদ ছিল ‘কালব’ গোত্রের দেবতা, ‘সুওয়া’ ‘হুযাইল’ গোত্রের, ‘ইয়াগুছ’ ‘মায্যাহ’ গোত্রের, ‘ইয়া‘উক’ ইয়ামেনের ‘হামদান’ গোত্রের এবং ‘নাসর’ ইয়ামেন অঞ্চলের ‘হিমইয়ার’ গোত্রের দেবতা ছিল। (ড. জামীল আব্দুল্লাহ আল-মিসরী, তারিখুদ দা‘ওয়াহ আল-ইসলামিয়্যাহ ফি যামানির রাসূল ওয়াল খোলাফায়ির রাশেদীন, (মদীনা মুনওয়ারা : মাকতাবাতুদ দার, ১৯৮৭ খৃ.), পৃ. ৩১।


এ মর্মে কুরআন মাজীদে এসেছে
[﴿ أَفَرَءَيۡتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلۡعُزَّىٰ ١٩ وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ ٢٠ ﴾ [النجم: ١٩، ٢٠ “তোমরা কি ভেবে দেখছো ‘লাত’ ও ‘উয্যা’ সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে ? সূরা আন্ নাজম: ১৯-২০।
লাত: চারকোণ বিশিষ্ট একটি পাথরের মূর্তি, যার চতুষ্পার্শে আরবরা তাওয়াফ করতো। এটি তায়েফে স্থাপন করা হয়েছিল।

মানাত : কালো পাথরে নির্মিত মূর্তি, যা লোহিত সাগরের উপকূলে কোদাইদ এলাকার মুসাল্লাল নামক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল। (প্রাগুক্ত)

উয্যা: উয্যা ছিল ‘আরাফাতের নিকটবর্তী ‘নাখলা’ নামক স্থানের মূর্তি। কুরাইশদের নিকট এ মূর্তিটি সর্বাধিক সম্মানিত ছিল।


ইসাফ’ ছিল কা‘বাঘর সংলগ্ন। 

আর ‘নায়েলা’ ছিল যমযমের কাছে। কুরায়শরা কা‘বা সংলগ্ন মূর্তিটাকেও অপর মূর্তির কাছে সরিয়ে দেয়। এটা ছিল সে জায়গা যেখানে আরবরা কুরবানী করত। 

(সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, নবীয়ে রহমত, অনু: আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী, (ঢাকা ও চট্টগ্রাম : মজলিস নাশরাত-ই-ইসলাম, ১৯৯৭ খৃ), পৃ. ১১১।তাহের সূরাটী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১৫। 

তবে অন্য এক বর্নণায় ছাফা’ পর্বতে ‘এসাফ’ এবং ‘মারওয়ায়’ ‘নায়েলা’র কথা এসেছে।
পৌত্তলিকরা বিভিন্নভাবে উল্লেখিত মূর্তির উপাসনা করত।যেমন:-
ক. তারা মূর্তির সামনে নিবেদিত চিত্তে বসে থাকত এবং তাদের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করত। তাদেরকে জোরে জোরে ডাকত এবং প্রয়োজনপূরণ, মুশকিল আসান বা সমস্যার সমাধানের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করত।
খ. মূর্তিগুলোর উদ্দেশ্যে হজ্ব ও তওয়াফ করতো। তাদের সামনে অনুনয় বিনয় এবং সিজদায় উপনীত হতো।

গ. মূর্তির নামে নযর-নেওয়ায ও কুরবানী করত। এমর্মে কুরআনে এসেছে, “তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে সেসব জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নিয়ে যবাই করা হয়েছে,যদিও আজকাল কিছু ইতিহাস বিকৃতিকারী মূর্খপন্ডিতরা আমাদের দেশের পাঠ্যবইয়ে পর্যন্ত লেখতে দ্ধীধাবোধ করেননি যে দেবতাদের নামে উৎসর্গকৃত পশুর গোশ্ত হালাল।নাউযুবিল্লাহ।


ঘ. মূর্তির সন্তুষ্টি লাভের জন্য পানাহারের জিনিস, উৎপাদিত ফসল এবং চতুষ্পদ জন্তুর একাংশ মূর্তির জন্য তারা পৃথক করে রাখতো। পাশাপাশি আল্লাহর জন্যেও একটা অংশ রাখতো। পরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে আল্লাহর জন্য রাখা অংশ মূর্তির কাছে পেশ করতো। কিন্তু মূর্তির জন্য রাখা অংশ কোন অবস্থায়ই আল্লাহর কাছে পেশ করতো না। আল-কুরআন, সূরা আল-মায়িদা 

:৩, যেমনটি আজকাল আমাদের দেশের মূর্খ শ্রেনীর কিছু লোকজন মাজারের নামে এমন সব কিছু উৎসর্গ করে থাকেন।
========= 
আরব জাতির অধিকাংশ গোত্র, বিশেষ করে খোজার বংশের অন্তর্গত গোত্রসমূহ এক অত্যন্ত নিম্নস্তরের জড়বাদের প্রতি আসক্ত ছিল। ইতর প্রাণী ও উদ্ভিদ দ্রুতগামী হরিণ, ঘোড়া, উট, খেজুরগাছ, পর্বত, পাথর ইত্যাদির মত অজৈব বস্তু প্রধান উপাস্য বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল।

(যেমন আজকাল আমাদের গুনেধরা সমাজের মুর্খরা মাজারের গজার মাছ,হরিণ,উট,কবুতর,ও নির্দিষ্ট গাছে সুতা,পুটলি বেঁধে বরকত ও মনোবাসনা পূরণের জন্য অনেকে  নযর নেয়ায ওমান্নত করে থাকেন) অবশ্য এক সার্বভৌম ঐশী সত্ত্বার ধারণা অপরিজ্ঞাত ছিল না। কিন্তু তার প্রভাব অত্যন্ত নগন্য সংখ্যক লোকের মধ্যে সীমিত ছিল। এই লোকগুলি পৌত্তলিকতার মোহপাশ থেকে মুক্ত হয়ে প্রতিবেশী সেবীয়, মূসা কিম্বা ঈসা আঃ এর শরীয়তের ও পার্থিব পৌরাণিক ধারণা দ্বারা রঞ্জিত দার্শনিক সংশয়বাদের আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক সর্বশক্তিমান আল্লাহর ধারণা স্পষ্ট স্বীকার করত এবং যুগের অশ্লীলতা ও স্থূল জড়বাদের বিরুদ্ধে অন্তরে বিদ্রোহ অনুভব করত।
পৌত্তলিক আরবদের মধ্যে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে ধারণা ব্যক্তি বা গোত্র ভেদে বিভিন্নরকম ছিল। 

কোন কোন গোত্র প্রাকৃতিক বস্তুতে দেবত্ব আরোপ করত, কেউ কেউ মৃত্তিকা, দন্ড কিংবা পাথর পূজা করত; কেউ কেউ পরকালে বিশ্বাস করত আবার কারও সে সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। তাদের দৈববাণীর জন্যে বৃক্ষ ছিল, পুরোহিতবৃন্দ ছিল যারা সাধারণতঃ মন্দির বা গীর্জার সাথে যুক্ত থাকত। লিঙ্গপূজা তাদের মধ্যে অজ্ঞাত ছিল না। প্রজনন শক্তিসমূহ পাথর ও কাঠের তৈরী স্মৃতিস্তম্ভের তলায় পূজা লাভ করত।
তৎকালীন জাহেলীযুগে আরবরা নিজেদের তৈরী বিভিন্ন রকম কূ-প্রথা ও কুসংস্কারের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তাদের অভ্যাস ছিল যে, শস্যক্ষেত্র, বাগান এবং ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে যা কিছু আয় হত; তার একাংশ আল্লাহর জন্যে এবং একাংশ উপাস্য দেবদেবীদের নামে পৃথক করে রাখত।(যেমনটি মাজার পন্থিরা করে থাকে) আল্লাহর নামের অংশ থেকে ফকির-মিসকীনকে দান করা হত এবং দেবদেবীর অংশ মন্দিরের পূজারী, সেবায়ত ও রক্ষকদের জন্যে ব্যয় করত।

প্রথমতঃ এটাই কম অবিচার ছিল না যে, যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ এবং সমুদয় উৎপন্ন ফসলও তিনিই দান করেছেন, কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত বস্তুসমূহের মধ্যে প্রতিমাদেরকে অংশীদার করা হত।যেমনটি আজকাল মাজারে করা হয় তদুপরি তারা আরও অবিচার করত এই যে, কখনও উৎপাদন কম হলে তারা কমের ভাগটি আল্লাহর অংশ থেকে কেটে নিত, অথচ মুখে বলতঃ আল্লাহ তো সম্পদশালী, অভাবমুক্ত-তিনি আমাদের সম্পদের মুখাপেক্ষী নন। এরপর প্রতিমাদের অংশ এবং নিজেদের ব্যাবহারের অংশ পুরোপুরি নিয়ে নিত। আবার কোনসময় এমন হত যে, প্রতিমাদের কিম্বা নিজেদের অংশ থেকে কোন বস্তু আল্লাহর অংশে পড়ে গেলে তা হিসাব ঠিক করার জন্যে সেখান থেকে তুলে নিত। পক্ষান্তরে যদি আল্লাহর অংশ থেকে কোন বস্তু নিজেদের কিম্বা প্রতিমাদের অংশে পড়ে যেত, তবে তা সেখানেই থাকতে দিত এবং বলতঃ আল্লাহ অভাবমুক্ত; তাঁর অংশ কম হলেও ক্ষতি নেই।
এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ-আল্লাহ যেসব শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো থেকে তারা এক অংশ আল্লাহর জন্যে নির্ধারণ করে অতঃপর নিজ ধারণা অনুসারে বলে, এটা আল্লাহর এবং এটা আমাদের অংশীদারদের। অতঃপর যে অংশ তাদের অংশীদারদের, তা তো আল্লাহর দিকে পৌঁছে না এবং যা আল্লাহর তা তাদের উপাস্যদের দিকে পৌঁছে যায়। তাদের বিচার কতই না মন্দ।(৬:১৩৬)

(হিস্ট্রি অব আরবস -ফিলিপ কে হি্ট্টি। দি স্পিরিট অব ইসলাম -সৈয়দ আমীর আলী। এন্সিয়েন্ট মনার্কী –শিলথন)।
ঙ.যখন কোনো সফরের ইচ্ছা করত, তখন তারা বাহনে আরোহন করার সময় মূর্তি স্পর্শ করত। সফরে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে এটা ছিল তাদের শেষ কাজ এবং ফিরে এসেও ঘরে প্রবেশের পূর্বে এটা ছিল তাদের সর্বপ্রথম কাজ।বর্তমান আমাদের সমাজে বিকৃতমস্তিক্কধারী জাহেলরা বিদেশ ভ্রমন,বিবাহ,ব্যবসা,ও যে কোন শুভকাজ শুরু করেন মাযার যেয়ারতের মাধ্যমে শুরু করে থাকে,এগুলো শরিয়ত বহির্ভূতকাজ।এছাড়াও তারা বিভিন্ন মূর্তির নামে পশু মানত করতো। 

সর্বপ্রথম মূর্তির নামে পশু ছেড়েছিল, ‘আমর ইবন লুহাই।
পৃথিবীর প্রথম ও কাবার প্রথম ও প্রধান মূর্তি :-
ইবনু আবী হাতেম-এর বর্ণনায় এসেছে যে, ‘ওয়াদ’ মূর্তিই ছিল এদের মধ্যে প্রথম এবং সর্বাধিক নেককার ব্যক্তি।যা একটু আগে বর্নণা করেছিলাম যে৫জন বিশষ্ট নেককারের কথা তন্মধ্যে প্রথমজন। তিনি মারা গেলে লোকেরা তার প্রতি ভক্তিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শয়তান এই সুযোগ গ্রহণ করে এবং লোকদেরকে তার মূর্তি বানাতে প্ররোচনা দেয়। ফলে ওয়াদ-এর মূর্তিই হ’ল পৃথিবীর সর্বপ্রথম মূর্তি, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার পূজা শুরু হয়’।আর মক্কা তথা কাবার প্রধান বা প্রথম মূর্তি হল "হুবাল" যা দিয়ে কাবা এবং তার আশে পাশে মূর্তি পূজা শুরু হয়।
মক্কা তথা কাবা শরীফে কি ভাবে মুর্তিপুজা শুরু হল তা ৬ষ্ট রত্ন অংশে বর্ননা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
অতএব পৃথিবীর প্রাচীনতম শিরক হ’ল নেককার মানুষের কবর অথবা তাদের প্রতিকৃতি বা মূর্তিপূজা। যা আজও প্রায় সকল ধর্মীয় সমাজে চালু আছে এবং বর্তমানে যা মুসলিম সমাজে স্থানপূজা, কবর পূজা, ছবি-প্রতিকৃতি, মিনার ও ভাষ্কর্য পূজায় রূপ নিয়েছে।উক্ত পাঁচটি মূর্তির মাহাত্ম্য ও তাদের প্রতি ভক্তি, লোকদের হৃদয়ে এমনভাবে প্রোথিত হয়েছিল যে, তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবং পারস্পরিক চুক্তি সম্পাদনকালে তাদের নাম উল্লেখ করত। এতদ্ব্যতীত তারা নানাবিধ সামাজিক অনাচারে ডুবে গিয়েছিল। সম্প্রদায়ের এইরূপ পতন দশায় আল্লাহ তাদের হেদায়াতের জন্য নূহ্ (আ.)-কে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেন {আ‘রাফ ৭/৬১}।
এর ফলে তখনকার সময় প্রায় সকল মানুষই মুর্তি পূজায় লিপ্ত হয়ে পথভ্রষ্টতার অতল গহবরে নিমজ্জিত হয়। এসকল মূর্তির কাছে মনোবসনা পূ্ন্যের কামনা করত,নজর-নেওয়াজ কোরবানী ইত্যাদী সব কিছুই করত ,যেমন আজকাল মাজার সমূহে হচ্ছে৷আল্লাহ আমাদের সমাজকে এসব শীর্ক থেকে হেফাজত করুক আমিন।
কেউ কেউ এ সকল মূর্তিকেই স্বয়ং খোদা মনে করতো, কেউ বা খোদাকে পাওয়ার মাধ্যম মনে করতো ৷
এ ভাবে যখন গোটা জাতিই শিরকে লিপ্ত হলো চতুর্রদিকে কূফরীর অন্ধকার চেয়ে গেছে ঠিক তেমনি সে মূহুর্তে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়েতের জন্য হযরত নূহ আঃ কে রসুল হিসাবে প্রেরন করলেন ৷
কিন্তু তিনি ৯৫০ বৎসর পর্যন্ত দাওয়াতের কাজ করার পর মাএ ৪০জন বা ৪০ জোড়া মহিলা পুরুষ মিলে তাঁর ধর্ম গ্রহন করলেন।
অবশেষে তিনি ওহী মারফত জানতে পারলেন যে এজাতি আর হেদায়েত পাবেনা তখনি আল্লাহর হুকুমে তিনি তাদের ধবংসের জন্য দোয়া করলেন ,
এবং আল্লাহ তায়ালা মহাপ্লাবন দ্বারা সকল কাফেরদের ধবংস করে দিলেন ৷==এই ইতিহাস সকলেরই জানা আছে।
তেমনি ভাবেই আজকাল আমাদের দেশের স্বাথম্বেশী পেট পূজারী গূটি কয়েক ওলামায়েছুর ছএ ছায়ায় কবর কেন্দ্রিক লাল -সালু কাপড , মুমবাতি আগর বাতি জালিয়ে গডে তুলছে শীর্কের কারখনা , সেখানেই করা হচ্ছে ঈমান বিধংসী কর্মকান্ড ৷বর্তমানে আমাদের দেশে কবর কেন্দ্রীক যা করা হচ্ছে , পূর্বেকার যূগে ও প্রাথমীক ভাবেএমন কর্মকান্ড করা হতো যার ফলে গোটা জাতিকে কুফরের অন্ধকারে  ধবংস হয়েছিল , এখনও অদূর ভবিষ্যতের এ দেশের আবস্হা এমন হতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ 
সাথে বাংলাদেশ  সহ বিশ্বের  অনেক দেশে সে দেশের বিশেষ  সন্মানী ব্যক্তিদের মুর্তি বা ভাষ্কর্য  তৈরীতে মত্ত এ গুলোর বিরুদ্ধে কেউ কোন কথাই  বলতে গেলে সমস্যা তৈরী হয়।  মুলত পৃথিবীতে মুর্তি পুজার সুচনা এ সকল সন্মানী ব্যক্তিদের ভাষ্কর্য থেকেই  শুরু হয়েছিল। 

এদেশের মূর্তি পূজকরা সাধারনত ৪ টি কাজ করে থাকে ,
[১] বাৎসরীক ২ টি বড় অনূষ্ঠান দূর্গাপূজা ও কালীপূজা এ ছাডা আরও ছোট ছোট অনূষ্ঠান ৷
[২] প্রতিমাদের সামনে প্রদীপ মূমবাতী আগরবাতী ইত্যাদী প্রজ্যলীত করন ৷
[৩] এদের নামে পশূ / পাঁঠা কোরবনী [বলী] দিয়ে থাকে ,
[৪] প্রতিমাদের সামনে মাথা নত ও সেজদা করে থাকে ৷
দুর্গার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র বলে, ‘আয়ুরারোগ্যং বিজয়ং দেহি দেবি নমস্তুতে। রূপং দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতি দেহি মে। পুত্রান দেহি ধনং দেহি সর্ব্বকামাংশ্চ দেহি মে।।’ (হে ভগবতী, আপনাকে প্রণাম করি, আপনি আমাকে রোগমুক্ত করুন, বিজয়ী করুন, যশ ও সৌভাগ্য প্রদান করুন, পুত্র ও ধন দিন এবং আমার সকল কামনা পূর্ণ করুন।)
বর্তমান মাজার পন্থীদের ও ৪ টি কাজ
[১] বাৎসরীক ওরস ও মিলাদ মাহফিলের নামে  কত কিছু,
[২] কবরের সামনে মুমবাতি আগরবাতি প্রজ্জলন  ,
[৩] পীরের / মাজারের নামে পশু কোরবানী /মান্নত করন ,
[৪] কবর ওয়ালার কাছে কিছু চাওয়া ,মনোবাসনা পূন্যের জন্য কবর কেন্দ্রিক দোয়া করা ,ক্ষেএ বিশেষ কবর কে সেজদা করা ইত্যাদি ৷
আর  অনেক মাজার পন্থীরা মাজার/কবর /বা পীরের কাছে ধন সম্পত্তী /সন্তান /রোগমূক্তি/ সহ মনোবাসনা পূন্যের দোয়া করে থাকে,
পাঠক বৃন্দই পার্থক্য করুন প্রতিমাপূজক ও বর্তমান মাজার পূজারীদের মধ্যে কোন প্রাথক্য আছে কি ?
ইসলাম মানবজাতির জন্য হেদায়েতের আলো। মানুষের চিন্তা ও কর্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য এবং সকল ভ্রান্তি ও প্রান্তিকতা থেকে রক্ষা করার জন্য এই দ্বীন আল্লাহ তাআলা দান করেছেন। তাই একজন প্রকৃত মু’মিন যেমন মূর্খতা ও অবিশ্বাসের শিকার হতে পারেন না তেমনি অজ্ঞতা ও অন্ধ-বিশ্বাসেরও শিকার হন না। সকল প্রকার কুফর ও শীরক্ থেকে আল্লাহ তার চিন্তা ও কর্মকে রক্ষা করেন। কুফর  শীর্ক হল মানব-সমাজের সবচেয়ে বড় কুসংস্কার। মানুষ এই কুসংস্কারের শিকার তখনই হয় যখন ইসলামের শিক্ষাকে ত্যাগ করে মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূত মতবাদের অনুসরণ করে। পৃথিবীতে যত প্রকারের শীর্ক ও কুফর আছে সবগুলোর মূলে রয়েছে বিভিন্ন কাল্পনিক ও অবাস্তব ধারণা ও অতীভক্তি ।
এজন্য কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- فاجتنبوا الرجس من الأوثان واجتنبوا قول الزور ‘তোমরা অপবিত্রতা থেকে তথা মূর্তিসমূহ থেকে দূরে থাক। আর দূরে থাক মিথ্যাকথন থেকে।’-সূরা হজ্ব : ৩০-৩১
বস্তুত মিথ্যাই সকল পৌত্তলিকতার জনক। অতএব পৌত্তলিকতা থেকে মুক্ত থাকতে হলে মিথ্যার সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কিংবা কোনো স্থান বা কাল সম্পর্কে ভিত্তিহীন বিশ্বাস পোষণ করার অবকাশ ইসলামে নেই। তদ্রূপ কল্পনাপ্রসূত ধারণার উপর ভিত্তি করে ভক্তি নিবেদনে সীমালঙ্ঘন করারও সুযোগ নেই। এ জাতীয় সকল ধারণা ও আচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা যেমন সত্যবিমুখ অবিশ্বাসীদের মর্মন্তদ পরিণাম ঘোষণা করেছেন তেমনি ধর্মের নামে ভিত্তিহীন কর্ম ও বিশ্বাস প্রচার কারীদেরকে ‘আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।অতএব দু’টোই গোমরাহী ও সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য।
মাযারকেন্দ্রিক কার্যকলাপের তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট
 মাযারকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে 4টি  অনাচার হয়ে থাকে তার অধিকাংশই রিপুতাড়িত কর্মকাণ্ড যাপরিহার করতে হবে।
প্রথমত:-  নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গান-বাদ্য এবং মদ ও গাঁজা হচ্ছে মাযার কেন্দ্রিক মেলা ও ওরসের অন্যতম অনুষঙ্গ। এগুলোর তাত্ত্বিক সূত্র একটিই। তা হচ্ছে, নোংরামী ও রিপুর চাহিদা-পূরণ। এজন্য দেখা যায়, এইসব মাযার-ওরসে অংশ গ্রহণকারীদের সিংহভাগ হল সমাজের অশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনগোষ্ঠী।
যে কর্মগুলি সাধারণ আবস্হায় হারাম হলেও মাযারে তা হালাল হিসাবে গন্য করে থাকে জ্ঞানপাপিরা।
দ্বিতীয়:- অনাচার মাযারের সেবকদের বৈষয়িক ধান্দা। এরা মাযারে আগত নারী-পুরুষের দান-দক্ষিণা ও মান্নত-কোরবানী গ্রহণ করে এবং ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ ও আশীর্বাণী বিক্রি করে। বলাবাহুল্য, এখানে তত্ত্বের চেয়ে বৈষয়িক দিকটিই বড়।
তৃতীয়:- অনাচার হচ্ছে কুফর ও শিরক। মাযারপন্থী বা মাযারে আগত লোকেরা বিভিন্ন কুফরী ও শিরকী ধারণা পোষণ করে। যেমন মাযার বা মাযারে শায়িত ব্যক্তিকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করা; হাজত-পূরণকারী, বালা-মুসীবত থেকে উদ্ধারকারী এবং মানুষের উপকার-অপকারের মালিক মনে করা ইত্যাদি। এসকল শিরকী বিশ্বাস থেকে তারা বিভিন্ন শিরকী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। যথা : মাযারের নামে মান্নত করা, মাযারে এসে সিজদা করা, পশু জবাই করা, মাযারওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে রোনাযারী করা এবং মাল-দৌলত, সন্তান-সন্ততি, সুস্থতা ও স্বচ্ছলতা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। এভাবে বিশ্বাসের শিরক, মানুষকে কর্মের শিরকের মাঝেও লিপ্ত করে দেয়।
চতুর্থ ও সর্বশেষ অনাচারটি হল:- কুরআন-সুন্নাহ এবং দ্বীন-শরীয়তের বিকৃতিসাধন। মাযার কেন্দ্রিক সকল গর্হিত কার্যকলাপের পক্ষে সামপ্রদায়িতাধর্মী জেদ ও হঠকারিতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একশ্রেণীর আলখেল্লাধারী গুরু বিভিন্ন অবাস্তব ধারণা প্রচার করে এবং নির্দ্বিধায় কোরআন-সুন্নাহর তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাশুধু ‘অপব্যাখ্যা’ থাকে না; বরং জরুরিয়্যাতে দ্বীন বা দ্বীনের সর্বজনবিদিত আকীদা ও আমলকে অস্বীকার করা হয়।
 মাজার বা কবরস্হানে যা করা যাবে:-
কবর-যিয়ারতের সাথে এসব অনাচারের কোনো সম্পর্ক নেই ইসলামে কবর যিয়ারতের বিধান আছে, কিন্তু' কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করার অবকাশ নেই। কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য হল, আখিরাতের স্মরণ জাগ্রত করা এবং কবরবাসীর জন্য দোয়া করা। হাদীস শরীফে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা যিয়ারত করতে পার। কারণ তা আখিরাত কে স্বরন করিয়ে দেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২১২৭) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাঁর সাহাবীদের কবর যিয়ারত করেছেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। কবর যিয়ারতেরও মাসাইল ও নিয়মকানুন আছে। সে মোতাবেক কবর যিয়ারত করলে তাহবে ছওয়াবের কাজ। পক্ষান্তরে কোনো কবরকে ‘মাযারে’ পরিণত করে বছর বছর নির্দিষ্ট স্থানে জমায়েত হওয়া এবং উৎসবে পরিণত করা সম্পূর্ণ হারাম। হাদীস শরীফে পরিষ্কার ভাষায় তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা নিজেদের ঘরকে কবর বানিও না। (অর্থাৎ কবরের মতো ইবাদত-বন্দেগী শূন্য করো না) এবং আমার কবরকে উৎসবের স্থান বানিও না। বরং আমার প্রতি দরূদ পড়। কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছবে।’-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২০৪০
তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকেই যখন উৎসবের স্থান বানানোর অবকাশ নেই তখন অন্যদের কথা তো বলাই বাহুল্য।
আমরা কিন্তু ওলী আল্লাহ বিরোধী না ,বরং আমাদের দেশ সহ সারা পৃথিবীর সত্যিকারের হক্কানী আলেম-ওলামা, পীর, মাশায়েখ, আউলিয়ায়ে কেরাম আমাদের মাথার মুকুট সমতূল্য সন্মানের পাত্র এতেকোন সন্দেহের অবকাশ নেই৷কারন হক্কানী ওলামায়ে কেরামরাই হলেন এ দ্বীনের ধারক বাহক, যাদের কে নবীর ওয়ারীস হিসাবে খেতাব্ দেয়া হয়েছে ৷তাদের কথা মানবো শুনবো ও আমল করবো তাদের লেখা বই পুস্তুক পডবো, ওয়াজ নছিহত শুনবো , এবং তাদের এন্তেকালের পর পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করবো ৷এবং সময় সূযোগ হলে তাদের কবর যেয়ারত করব ৷
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সব ধরনের গোমরাহী থেকে রক্ষা করুন এবং সঠিক পথে চলার তাওফীক দান করুন।

শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০

হাতেম ‎তায়ীকে ‎নিয়ে ‎ভূলধারণা ‎নিরশন ‎

দাতা হাতেম তাই এবং আমার ভুল ধারণা. 
আহমেদ কবির

ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত দয়ালু, উদার, দানশীল হাতেম তাইয়ের নাম শুনে আসছি। গল্প পড়েছি তাঁকে নিয়ে। নাটক হয়েছে, এমনকি ছবিও হয়েছে বড় পর্দায়! বাংলাদেশের সোহেল রানা অভিনীত দাতা হাতেম তাই শেষ করার ধৈর্য আমাদের বন্ধুদের ছিল না বলে হল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। সব সময়ই আমার ধারণা ছিল, দাতা হাতেম তাই কাল্পনিক মানুষ, গল্পের নায়ক। বাস্তবে এমন কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব ছিল না। আমার সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

 কারণ, হিজরি ৮ সালে মক্কা বিজয়ের পর আরবের যেসব ছোট ছোট শহরে মূর্তিপূজা তখনো ছিল, নবী (সা.) সেই সব শহরে অভিযান চালিয়ে সমগ্র আরবকে মূর্তিপূজামুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি প্রায় তিনশত সৈন্যসহ আলী ইবনে আবু-তালিবকে সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমের শহর হাইলে আত-তায়ি গোত্র অভিমুখে পাঠালেন। হাইল শহরে একজন নামকরা ব্যক্তি হাতেম আত-তাইয়ের বাস ছিল, যার নাম প্রায় সব আরবই জানত। তাঁর দানশীলতা ও উদারতা ছিল শিখরছোঁয়া এবং এটাই ছিল তাঁর খ্যাতির কারণ। হাতেম তাই ছিলেন তাই গোত্রের প্রধান এবং তিনি ইসলাম-পূর্ব ৫৭৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে আদি ইবনে হাতেম গোত্রের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
আদি যখন জানতে পারলেন মুসলমানরা বিভিন্ন অমুসলিম গোত্রে অভিযান চালাচ্ছে, তখন তিনি পালানোর রাস্তা খুঁজতে থাকেন। কিছু সম্পদসহ উট প্রস্তুত করে রাখেন। যখন নিশ্চিত হলেন মুসলমানরা আসছে, তখন তিনি তাঁর গোত্রকে পরিত্যাগ করে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সৌদি আরবের উত্তরে রোমানদের কাছাকাছি এক শহরে পালিয়ে আসেন। আদি আগেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে রোমানদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল।
এদিকে মুসলমানরা হজরত আলী ইবনে আবু-তালিব (রা.)-এর নেতৃত্বে আত-তাই গোত্রকে পরাজিত করে কিছু যুদ্ধবন্দীকে মদিনায় নিয়ে আসেন। বন্দীদের মধ্যে একজন নারী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানালেন এই বলে যে তিনি হাতেম তায়ের মেয়ে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তাঁকে একটি উট, কিছু টাকা দিলেন এবং বললেন, পছন্দের যেকোনো জায়গায় তিনি নিরাপদে যেতে পারবেন। তিনি তাঁকে মুক্তি দিয়ে দিলেন শুধু হাতেম তাইয়ের মেয়ে হওয়ার কারণে। ভাই কোথায় আছেন, সে খবর পেয়ে তাঁর কাছে গিয়ে প্রথমে ক্রোধ প্রকাশ করলেন তাঁকে রেখে পালিয়ে আসার কারণে, তারপর ভাইকে পরামর্শ দিলেন মোহাম্মদ (সা.)-এর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য। আদিকে বললেন, ‘তিনি যদি নবী হন, তাহলে তাঁর প্রতি বিশ্বাস রেখে তাঁর ধর্ম যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করবে, ততই তোমার মঙ্গল হবে। আর যদি তিনি রাজা হন, তাহলে কিছু অনুগ্রহ বা সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করতে পারো।’
আদি ইবনে হাতেম নিজেই বর্ণনা করেন, ‘মোহাম্মদ (সা.)-এর চেয়ে আর কেউ আমার কাছে এত বিদ্বেষের ছিলেন না, কিন্তু আমি নিজেকে বললাম, গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেখি না, যদি তিনি সত্য বাণী বলেন, তাহলে সরাসরি তাঁর কাছ থেকে শুনব আর যদি তা না হয়, তাতে আমার তেমন ক্ষতির কিছু নেই।’ তাই তিনি ৮ম হিজরির শেষের দিকে অথবা ৯ম হিজরির প্রথম দিকে মদিনায় গেলেন। মদিনায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু লোক তাঁকে চিনে ফেলে চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘উনি হাতেম তাইয়ের ছেলে আদি’ এবং লোকেরা তাঁকে ঘিরে ফেলল। তারপর তারা তাঁকে রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, ‘উনি হাতেম তাইয়ের ছেলে আদি।’
নবী (সা.) আদিকে বললেন, ‘ইয়া আদি, আসলিম তুসলিম’ (হে আদি, ইসলাম গ্রহণ করো এবং তুমি নিরাপদ হবে)। আদি উত্তর দিলেন, ‘আমি তো একটি ভালো ধর্মের অনুসারী।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও দুইবার বললেন এবং আদি একই উত্তর দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ইয়া আদি, আনা আলামু বি দিনিকা মিনকা’ (হে আদি, আমি তোমার ধর্ম সম্বন্ধে তোমার থেকে বেশি জানি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি কি তোমার গোত্রের প্রধান নও?’ আদি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তাদের আয়ের চার ভাগের এক ভাগ কর হিসাবে নাও?’ আদি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো যে তোমার নিজের ধর্ম এটা নিষেধ করে?’ আদি কিছুটা লজ্জা পেলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আদির হাত ধরে তাঁর ঘরের দিকে রওনা দিলেন। আদি বলেন, ‘পথিমধ্যে এক শিশুসহ একজন বৃদ্ধা ওনাকে থামালেন এবং তাঁর সমস্যার কথা বলতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীটি আশ্বস্ত হওয়া পর্যন্ত কথা বললেন। আমি তখন চিন্তা করছিলাম এই লোক রাজা নন। আমরা তাঁর ঘরে এলে উনি এক পুরাতন ছেঁড়া মাদুর আমার নিচে দিয়ে বসতে বললেন। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে তাকিয়ে আর কিছু না দেখে তাঁকে বসতে বললাম। তিনি জোর করে আমাকেই বসতে বললেন। আমি বসলে উনি মাটিতেই বসলেন। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি আর কোনো গড জানি কি না আল্লাহ ছাড়া? আমি উত্তর দিলাম, না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমি আর কাউকে জানি কি না আল্লাহ থেকে বেশি ক্ষমতাবান ও শক্তিশালী? আমি আবার বললাম, না। তখন তিনি বললেন, ইয়াহুদরা মাকদুব ও নাসারারা মিসগাইডেড এবং ভুল যা তারা বিশ্বাস করে।
‘তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি বোধ হয় ইসলাম গ্রহণ করছ না আমার আশপাশের মানুষগুলোর অবস্থা দেখে (রাজনৈতিক দুর্বলতা ও দারিদ্র্য ইত্যাদি)। তুমি কি আল-হিরার নাম শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। তবে কখনো যাইনি ওই শহরে। নবী (সা.) বললেন, প্রকৃতপক্ষে এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র, যখন কোনো মহিলা আল-হিরা শহর থেকে মক্কায় কাবা তাওয়াফ করার জন্য কোনো নিরাপত্তাসঙ্গী ছাড়াই আসবে। তার ভয়ের কোনো কারণ থাকবে না এবং সত্যি সত্যিই এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র যখন কিসরার ধনভান্ডার আমাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। আমি তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিসরা? হরমুজের ছেলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, কিসরা, হরমুজের ছেলে। আর প্রকৃতপক্ষে এটাও সময়ের ব্যাপারমাত্র যখন মানুষ মদিনার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছাদকা দিতে চাইবে কিন্তু একজনকেও ছাদকা দেওয়ার যোগ্য পাবে না।
‘আমি রাসুলুল্লাহর (সা.) তিনটার দুইটাই স্বচক্ষে দেখেছি। মুসলমান রাজ্যের শান্তি ও নিরাপত্তা নিজে দেখেছি এবং আমি নিজে অংশগ্রহণ করেছি টেসিফান (Ctesiphan, the Capital of Sasaniad empire) সাসানিদ রাজ্যের রাজধানী বিজয়ের যুদ্ধে (Battle of Nihawand, 651). যা-ই হোক, আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। আমি প্রায়ই রাসুলুল্লাহর (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম। একবার আমি তাঁকে আমার পিতা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমার বাবা তাঁর আত্মীয়স্বজনদের প্রতি ছিলেন সদয়, দয়ালু এবং মানুষের প্রতি খুব দানশীল ছিলেন; তিনি কি তাঁর কাজের প্রতিদান-পুরস্কার পাবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বললেন, তোমার বাবা যা কামনা-আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন এবং তিনি তা পেয়েছেন যা চেয়েছিলেন।’ (ইবনে হিব্বান)
এই হাদিসের মানে, কেউ যদি নাম-যশের, দুনিয়ায় সুখ্যাতির জন্য করে, তবে তা সে দুনিয়াতেই পাবে, আর কেউ যদি আল্লাহর কাছে পাওয়ার জন্য করে, তাহলে তার পাওনা আদায় ওইখানেই হবে।
আদি ইবনে হাতেম (রা.) বেঁচেছিলেন অনেক দিন, অনেকের মতে, ১২০ বছরের কাছাকাছি। তিনি ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যা (Killing of Uthman) দেখেছেন, তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর (রা.) সঙ্গে মুয়াবিয়ার (রা.) বিরুদ্ধে সাফিন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, যার ফলে শিয়া সম্প্রদায়ও তাঁকে সন্মান করে।

Dr.Qadi-র Seerah of Prophet (s) থেকে। 
সংকলিত প্রথম আলো ২৯ জুলাই ২০১৭ অনলাইন সংস্করণ থেকে। 

সংকলক 
এম  এম  আবদুল্লাহ  ভূঁইয়া  

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

রং ‎চা ‎এর ‎অবাক ‎করা ‎উপকারীতা ‎


লাল চায়ের অবাক করা উপকারিতা কিন্তু কি ভাবে সেবন করবেন? জেনে নিন। 

দিনের শুরুতে এক কাপ চা না পেলে কেমন যেন হাঁপিয়ে ওঠে শরীরটটা। তাই না? কিন্তু কী চা খান সকালে? দুধ চা হলে ক্ষণিকের জন্য মনটা চনমনে হয়ে উঠলেও শরীরের কিন্তু কোনও উপকারই হয় না। তবে যদি এক পেয়ালা লাল চা খান, তাহলে কথাই নেই! মনের পাশপাশি শরীরও চাঙ্গা হয়ে ওঠবে। কারণ লাল চা-এর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই পানীয়টি নানাভাবে শরীরের গঠনে কাজে লাগে, যে সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। লাল চায়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে ক্লান্তি দূর করার পাশপাশি হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, লাল চায়ে থিয়োফিলাইন নামে একটি উপাদান থাকে। এটি শরীরকে সার্বিকবাবে চাঙ্গা করতে দারুন কাজে দেয়। এখানেই শেষ নয়। এই পানীয়র আরও কিছু উপকারিতা আছে। যেমন... ১. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে একদম ঠিক শুনেছেন। প্রতিদিন কয়েক কাপ লাল চা আপনাকে এই মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। আসলে এই পানীয়তে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপার্টিজ সহ এমন কিছু উপাদান, যা লাং, প্রস্টেট, কলোরেকটাল, ব্লাডার, ওরাল এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, লাল চা শরীরের যে কোনও অংশে ম্যালিগনেন্ট টিউমারের বৃদ্ধি আটকাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে নানাবিধ অসুস্থতার প্রকোপ থেকে বাঁচতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটা একান্ত প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে লাল চা। এখানেই শেষ নয়, এই পানীয়তে টেনিস নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা নানা ধরনের ক্ষতিকর ভাইরাসের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। ফলে সহজে কোনও রোগ ছুঁতে পারে না। ৩. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে লাল চায়ে ক্যাফিনের পরিমাণ কম থাকায় এই পানীয়টি মস্তিষ্কে রক্তচলাচলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে স্ট্রেস কমে। প্রসঙ্গত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে এক মাস টানা যদি লাল চা খাওয়া যায়, তাহলে পারকিনস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। ৪. ওজন হ্রাস করে লাল চা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার সুযোগই পায় না। তাই আপনি যদি ওজন কমাতে বদ্ধপরিকর হন, তাহলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন এই পানীয়। ৫. হার্ট চাঙ্গা হয়ে ওঠে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে লাল চায়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই পানীয়তে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমিয়ে দেয়। প্রসঙ্গত, স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমাতেও লাল চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ৬. হাড়কে শক্তপোক্ত করে লাল চায়ে উপস্থিত ফাইটোকেমিকালস হাড়কে শক্ত করে। ফলে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। ৭. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় প্রতিদিন লাল চা খেলে হজম ক্ষমতা ভাল হতে শুরু করে। আসলে এতে রয়েছে টেনিস নামে একটি উপাদান, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশপাশি গ্য়াস্ট্রিক এবং নানা ধরনের ইন্টেস্টিনাল রোগ সরাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ৮. স্ট্রেস কমায় লাল চায়ে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা স্ট্রেস কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে মনকে চনমনে করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
সূত্র ঃ
২১ মার্চ ২০১৭ কালের কন্ঠ অনলাইন সংস্করণ এ প্রকাশিত প্রবন্ধ অবলম্বনে। 
এর সাথে আমি লায়ন ডাক্তার আলমগীর মতি  মর্ডান হারবাল কোং   মহোদয়ের একটি  কথা সংযোজন  করতে চাই  তাহল রং চা এর এ উপকারীতা  আমাদের পেতে হলে  শুধু মাত্র  রং চা ই পান করুন চিনি বা দুধ ছাডাই কারন চায়ের সাথে  দুধ চিনি মিশানোর ফলে চা এর সেই   কাঙ্ক্ষিত  উপকারীতা কখনো সম্ভব নয়। 
তাছাডা  তিনি বলেন এ রং চা কে আরও উপকারীতা  করে তুলতে হলে এর সাথে তুলশি পাতা, পুদিনা পাতা, আদা, ইত্যাদি  মিশিয়ে  সেবন করতে পারলে আরও চমৎকার  ফলাফল  পাওয়া  যাবে। 
কারন তিনি  বলেন মঙ্গলিয়ান রা কখনো চা এর সাথে দুধ  চিনি  কিছুই  মিশান না তারা শুধু  লিকার চা টাই পান করেন পানির পরিবর্তে। 
তাদের খাওয়ার টেবিলে  অফিসে সর্বদা প্লাক্স ভর্তি চা থাকবেই। তাছাডা তিনি বলেন যে পৃথিবীতে  প্রায়  শতাধিক  রকমের ভেষজ চা আছে। তা আমরা অনেকেই  জানিনা। 
সুতরাং   চা খেতে হলে রং চা দুধ চিনি  ছাডাই অভ্যাস করতে পারেন  শুরুতে  একটু সমস্যা  মনে হলেও ধীরে ধীরে অভ্যস্হ হয়ে গেলে খালি উপকারই উপকার।আর একান্ত চিনি খেলেও যেন পরিমানটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। 

সংকলন সংযোজন  
এম  আবদুল্লাহ  ভূঁইয়া 
  

তাছাডা আরও  জানতে ভিজিট করুন  
রং চা নাকি দুধ চা?  
http://aponblog.com/morning-tea-whose-best

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০

আই ‎বি ‎এস ‎কি ‎চিকিতসা ‎করনীয় ‎বর্জনীয় ‎পরামর্শ ‎

আই_বি_এস (IBS) চিকিৎসা / করনীয় বর্জনীয় ঃ 

আই বি এস কি? 

 আই.বি.এস (Irritable Bowel Syndrome)-এর রোগীরা দীর্ঘমেয়াদি পেটের সমস্যায় ভুগে থাকেন ,বাংলাদেশর মোট জনসংখ্যার প্রায়  ১১-১২%মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।  অর্থাৎ বদহজম, গ্যাস  আমাশা চির জীবনের সঙ্গী হয়ে যায়। পেটে হঠাৎ করে কামড় দেবে এবং সাথে সাথে বাথরুমে যেতে হবে। এমনও ব্যক্তি আছে যার দিনে চার-পাঁচ বার বাথরুমে যাওয়া লাগে।হঠাৎ  পাতলা পায়খানা হঠাৎ  কোষ্ঠকাঠিন্য, আবার কখনো আমাশয় জনিত  সমস্যা, পেটে গ্যাস বদহজম লেগেই থাকে। এক কথায় বলতে গেলে হ্যাভি গ্যাস্টিক অর্থাৎ  গ্যাস্টিক যখন উচ্চ  পর্যায়ে  পোছে  যায়  তখন একে আই বি এস বলা হয়। কিন্তু পেটের এত সমস্যা থাকার পরও  অনেক সময় কোন পরীক্ষায় ও ধরা পডেনা। 

Types প্রকারভেদ : আই বি এস দুই প্রকার ঃ
১।ডায়রিয়া প্রধান (আইবিএস)
২।কোস্টকাঠিন্য প্রধান  (আইবিএস)

Aetiology কারণঃ
১।মানসিক ও সামাজিক সমস্যা 
২।পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা 
৩। অতিরিক্ত তেলে ভুনা খাদ্য গ্রহণ 
৪।অতিরিক্ত রাএি জাগরণ 
৫।মদ্যপান
৬।অতিরিক্ত নেনশন
৭। অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ 
৮।অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা
৯।অতিরিক্ত ফাস্টফুড জাতিয় খাবার গ্রহণ 
১০।দীর্ঘদিন  Constipation এ ভোগার কারণে 
১১।Vagus nerve বেশি উওেজিত হওয়া। 

োClinical feature.লক্ষ্যন
১।মল কখনও শক্ত আবার কখনও নরম হয়। 
২।খাবার পরপর পায়খানার বেগ হয়। 
৩।মলের সাথে মিউকাস বা আঠালো বিজলা যেতে পারে। 
৪।পেট ফেঁপে থাকে 
৫।পেটের বাম দিকে চাপ দিলে ব্যাথা লাগে। 
৬।প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রনা থাকতে পারে। 
৭।শরীরের ওজন কমে যায়। 
৮।কোনো কোনো সময় মলের সাথে রক্ত যেতে পারে। 
৯। রোগী অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকে। 
১০।পেটে ভুটভাট শব্দ হয়ে থাকে। 
১১।Anorexia /অরুচি 
১২।দীর্ঘদিন এই রোগে ভুগতে থাকলে যৌন সমস্যার সৃষ্টি হয়। 

Investigation :রোগী যে সমস্যা বা রোগের বর্ণনা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাতেই রোগ নির্ণয় হয়ে যায়। তাছাড়াও যে সকল পরীক্ষা সমূহ করা উচিৎ। 
 👉History,নিতে হবে।
👉রক্ত পরীক্ষা
👉কলোনস্কাপি
👉সিগময়ডোস্কপি, 
👉থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা
👉মল পরীক্ষা
👉দুধ সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা ইত্যাদি। 
 
যে সব 
নিষেধ : 
আইবিএসের রোগীদের আমরা চর্বিযুক্ত খাবার, তৈলাক্ত খাবার, আঁশযুক্ত খাবার, যব, গম, গমের তৈরি খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি, শাকসবজি, সালাদ ইত্যাদি নিষেধ। হোটেলের খাবার, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার বন্ধ তবে ছানা খাওয়া যাবে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার ও গুরুপাক বর্জন করতে হবে। 

পরামর্শ : নরম ভাত, হালকা ঝোলের তরকারি, কাচা -পাকা পেঁপে,-পাকা বেল খাবেন, কদু,শষা,ইসুবগুল, মাছ,  গরম-গরম-টাটকা খাবার খেতে হবে। বাসি পচা খাবার খাওয়া যাবে না । 

যে সকল খাবার রোগী খেতে পারবেন ঃ-
১। জিরা+ ধনিয়া+মিষ্টি জিরা-সবগুলো উপাদান ১০০ গ্রাম নিয়ে হালকা ভেজে পাউডার করে ১চামচ পাউডার ১টি খালি পানের ভিতর চাবাই খাবেন ভরাপেট এ ১বার। 
৩। খাবার আগে ও পরে ১ টুকরা আদা চাবাই খাওয়া যেতে পারে। 
৪। প্রতিদিন থানকুনি ও পুদিনাপাতা খাওয়া যেতে পারে। 

যে সকল খাবার রোগীর জন্য নিষেধ:-

দুধ জাতীয় খাবার, শাকজাতীয় খাবার, মাংস জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া, অতি তৈলাক্ত, মসলাও চর্বিযুক্ত খাবার। 
সব চেয়ে  গুরুত্বপূর্ণ  কথা  হল  এ সকল রুগিদের  খুব সিম্পল জীবন যাপন করতে হয় সতর্কতার সঙ্গে। 
এবং ধৈর্য্য ধারণ  করে

 নিয়মিত ভেষজ সেবনে সচেষ্ট  হলে অনেকাংশে  সুস্হ থাকা যায়। 

 ত্রিফলা,
 বেল শুঁঠ, 
পুদিনা,
সুফুপ কম্মুন 
থানকুনি, 
 ইসুবগুল,
আদা, 
আফেল সাইডার ভিনিগার 

  ইত্যাদি  চিকিৎসক এর পরামর্শে  সেবন করা যায়।

সৌজন্যে 
 ভূঁইয়া  ন্যাচরাল হার্বস
01829318114

কোরআনের ‎আয়াতের ‎সংখ্যা ‎নিয়ে ‎সংশয় ‎নিরসন ‎

 কুরআনে মোট আয়াত সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কত হত পারে? এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে। 
যেমন 

👏👏১ম অভিমত👏👏
১) আয়েশা(রাঃ) —– ৬,৬৬৬ টি।
২) উসমান(রাঃ) —– ৬,২৫০ টি।
৩) আলী(রাঃ) ——- ৬,২৩৬ টি।
৪) ইবনে মাসুদ(রাঃ)– ৬,২১৮ টি।
৫) মক্বার গনণা ——- ৬,২১২ টি।
৬) ইরাকের গনণা —- ৬,২১৪ টি।
৭) বসরার গনণা —– ৬,২২৬ টি।

✌এইগুলোর সাথে বিসমিল্লাহ ধরে হিসাব করলে এইরুপ হবেঃ-

আয়েশা(রাঃ)—— ৬,৬৬৬ টি।
উসমান(রাঃ) —– ৬,২৫০ + ১১৩ = ৬,৩৬৩ টি।
আলী(রাঃ) ——– ৬,২৩৬ + ১১৩ = ৬,৩৪৯ টি।
ইবনে মাসুদ(রাঃ)— ৬,২১৮ + ১১৩ = ৬,৩৪১ টি।
মক্বার গনণা ——- ৬,২১২ + ১১৩ = ৬,৩২৫ টি।
ইরাকের গনণা —– ৬,২১৪ + ১১৩ = ৬,৩২৭ টি।
বসরার গনণা —— ৬,২২৬ + ১১৩ = ৬,৩৩৯ টি।

✌উল্লেখ্য যে, সুরা আত-তাওবা’য় বিসমিল্লাহ নাই। এই কারনে আল্লাহ রাববুল আলামিন মোট ১১৪ টি সুরায় ১১৩ বার বিসমিল্লাহ সংযোজন করেছেন এবং সুরা আত-তাওবায় কেন বিসমিল্লাহ সংযোজন করেননি তা আল্লাহই ভাল জানেন।ঐতিহাসিকরা আয়েশা (রাঃ) এর গনণা বা মত (৬,৬৬৬টি) গ্রহন করেছেন।তবে এটা সত্য যে, বেশির ভাগ আলেম-উলামাগণ আবার আলী (রাঃ) এর মতকেও (৬,২৩৬টি বিসমিল্লাহ ছাড়া এবং ৬,৩৪৯টি বিসমিল্লাহ সহ) গ্রহন করেছেন।

🌹তবে সূরার শুরুতে  ‘বিসমিল্লাহ’ কুরআনের কোন আয়াত নয় এই ব্যাপারে ওলামগন একমত। তেমনি সূরা ফাতিহার শেষে ‘আমীন’ ও কোন আয়াত নয়। তবে এটা কোরআনের  আয়াত এতে কোন সন্দেহ  নেই।  ( আল্লাহ ভাল জানেন) 

কুরআনে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মোট ১১৪টি সূরা রয়েছে। সকল সূরা মিলিয়ে মোট আয়াতের সংখ্যা।প্রায় ৬২৩৬ (মতান্তরে ৬৩৪৮টি অথবা ৬৬৬৬টি)।

[সূত্র: উইকিপিডিয়া।] 


👏👏👏২য় অভিমত👏👏👏
আল কোরআন একাডেমী লন্ডন থেকে প্রকাশিত পবিত্র কোরআনের পূর্ণাঙ্গ সহজ সরল বাংলা অনুবাদ জনাব হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ সাহেবের কিতাব থেকে দেখা যায় যে, তিনি তার কিতাবের ১৭ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন:

জান্নাতের ওয়াদা ১০০০, জাহান্নামের ভয় ১০০০, নিষেধ ১০০০, আদেশ-১০০০, উদাহরন-১০০০, কাহিনী-১০০০, হারাম-২৫০, হালাল-২৫০, পবিত্রতা-১০০ এবং বিবিধ-৬৬ সর্বমোট ৬৬৬৬ আয়াত।

হযরত আয়েশা (রা.) এঁর মতে ৬৬৬৬, হযরত ওসমা (রা.) এঁর মতে ৬২৫০, হযরত আলী (রা.) এঁর মতে ৬২৩৬, হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) এঁর মতে ৬২১৮, মক্কার গননা মতে ৬২১২, বসরার গণনা মতে ৬২২৬, ইরাকের গণনা মতে ৬২১৪টি আয়াত আমাদের মুসলমাদের ধর্মগ্রন্থে বিদ্যমান। ঐতিহাসিকদের মতে আয়েশা (রা.) গণনাই বেশী প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।

✌এই অনুবাদক সাহেব খুব জোড় দিয়েই লিখেছেন ঐতিহাসিকদের মতে আয়েশা (রা.) গণনাই বেশী প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।

👏👏👏৩য় অভিমত👏👏👏
*(ক.) পবিত্র কোরআনের আয়াত সংখ্যার ব্যাপারে মদীনা বাসিদের দুটি মত।

এক-৬২১৭ টি*
দুই-৬২১৪ টি *
[ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়া খ: ২,পৃ: ১৩২]

*(খ.) মক্কা বাসিদের মতে কোরআনে কারীমের আয়াতের সংখ্যা ৬২২০ টি, যা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) এর দিকে নিসবত করা হয়।
[ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়া খ: ২,পৃ: ১৩২]

*(গ.) কূফা বাসিদের নিকট আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি।
[মছদারু চ্ছাবিক খ:২, পৃ: ১৩২]

*(ঘ.) এ ব্যাপারে বসরা বাসিদের দুটি মত।
এক-৬২০৫ টি*
দুই-৬২১৯ টি*
[মছদারু চ্ছাবিক খ:২, পৃ: ১৩২]

*(ঙ.) শাম বাসিদের মতে কোরআনে কারীমের আয়াত সংখ্যা ৬২২৬ টি [ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়া খ: ২,পৃ: ১৩২]

*(চ.) আরবের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্বারীগণ কোরানের আয়াতের সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন: কুফীদের মতে: ৬,২৩৬টি আয়াত; বসরাবাসীদের মতে: ৬,২১৬টি আয়াত; সিরীয়াবাসীদের মতে: ৬,২৫০টি আয়াত; ইসমাইল ইবনে জাফর মদনীর মতে: ৬,২১৪টি আয়াত; মক্কীদের মতে: ৬,২১৮টি আয়াত; হযরত আয়শার মতে: ৬,৬৬৬টি আয়াত”।
[দ্র: সং. ই. বিশ্বকোষ,১ম খ.৩য় মুদ্রণ ‘আয়াত’ অধ্যায়; পৃ: ৭০; ই. ফা.]

✌আল-কোরআন পাঠের সময় বিশেষ কিছু স্থানে ওয়াকফ করতে হয় অর্থাৎ থামা জরুরী এবং না থামলে গোনাহ হয়। আবার কিছু কিছু স্থানে থামা ও না থামা উভয়ই অনুমোদিত অর্থাৎ না থামলেও চলে। আর এ কারনেই অনেকে একসাথে একের অধিক আয়াত/বাক্যকে একসাথে ধরে গুনেছেন। আবার অনেকে প্রতিটি ওয়াকফ/থামার স্থানকে এক একটি বাক্য হিসেবে ধরে গুনেছেন।

✌বাংলা ভাষাতেও কোন বিষয়কে একই সংখ্যক শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে যেমন বিভিন্ন সংখ্যক বাক্য রূপে প্রকাশ করা যায়। আরবী ভাষার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য এবং আরও সহজ বটে। তবে এক্ষেত্রে শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনরূপ অসামঞ্জস্যতা ও বিকৃত অর্থ পরিলক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয়।

যেমন: আমি হাসপাতালে গিয়ে একজন রোগী দেখলাম। তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে তৎক্ষণাৎ আইসিইউ-তে স্থানান্তর করি, সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এখন আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ।
[এখানে পাঁচটি আয়াত/বাক্য রয়েছে]

✌একটু ভিন্নভাবে হিসেব করলে দেখুন কয়টি বাক্য হয় দেখুন: আমি হাসপাতালে গিয়ে একজন রোগী দেখলাম যিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাকে তৎক্ষণাৎ আইসিইউ-তে স্থানান্তর করি এবং সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এখন আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ।
[এখানে দুইটি আয়াত/বাক্য রয়েছে]

🌹কোরানের আয়াত সংখ্যা নির্ণয়ে এ মতবিরোধ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। একটি উদাহরণের মধ্য দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠবে। সুরা ফাতিহার আয়াত সংখ্যা সাধারণভাবে গণ্য করা হয় ৭টি। কিন্তু ইমাম হাসান (রা.)-এর মতে আয়াত সংখ্যা ৮টি। তিনি ‘বিসমিল্লাহ’-কেও একটি আয়াত গণ্য করেছেন। আবার কারও কারও মতে সুরা ফাতিহার আয়াত সংখ্যা ৬টি। এ মতানুযায়ী ৬ ও ৭ আয়াতদ্বয় মিলে এক আয়াত এবং বিসমিল্লাহ আয়াত নয়। আবার কার কারও মতে সুরা ফাতিহার আয়াত সংখ্যা ৯টি।

🌴তবে বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত কোরানের প্রতিটি সুরার প্রারম্ভে প্রতিটি সুরার যে আয়াত সংখ্যা উল্লেখিত আছে তা এক সঙ্গে যোগ করা হলে মোট আয়াত সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২৩৬টি আর ‘বিসমিল্লাহ’-কে প্রতিটি সুরার এক একটি আয়াত গণ্য করা হলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২৩৬+১১৩ = ৬৩৪৯টি।”

✌প্রত্যেকে হুবহু একই কোরানকে আয়াত সংখ্যার দিক দিয়ে বিভিন্ন মত দিয়েছেন।কারন তারা একেকজন আয়াতকে একেক জায়গায় শেষ করেছেন।তাই মূল কোরআনে বিভিন্নতা না থাকলেও আয়াত সংখ্যার গননায় বিভিন্নতা।এজন্য আয়াত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ দেখা গেলেও আজ পর্যন্ত আয়াত সংখ্যায় বিভিন্ন মত দানকারীদের মধ্যে কোরানে কম বেশি করা হয়েছে -এ জাতীয় বিতর্ক সৃষ্টি হয় নি।কেননা তারা মূল বিষয়টি জানেন।কিন্তু বর্তমানে এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতেছে।কেননা,৬৬৬৬ সংখ্যাটির সৌন্দর্য বিবেচনায় আলেমগন এ মতটিকে গ্রহন করেছেন।কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রচলিত কোরআনে সাজানোর ধরন অনুযায়ী আয়াত সংখ্যা হয় ৬২৩৬ টি।এখন এ পরিস্থিতিতে আহলে হাদীসরা বলছে কোরআনের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি,৬৬৬৬ সংখ্যাটি ভুল।দেওয়ানবাগী বলছে,৬৬৬৬ সংখ্যাটি ভুল।আমি সংস্কার করে বললাম ৬২৩৬ টি,নতুবা গুনে দেখুন।আর শিয়ারা বলতেছে ৬৬৬৬ টি আয়াত ছিল,সুন্নীরা ৪৩০ টি আয়াত গায়েব করে ফেলেছে।অজ্ঞতার কারনে ধর্মে কি পরিমাণ ফেতনা ছড়াচ্ছে।

✌প্রশ্ন হতে পারে সেই ৪৩০ টি আয়াত কোথায় গেল?কোথায় সংরক্ষিত আছে?আপনারা কেন দেখাতে পারছেন না?সত্যের দলীল একেবারে গায়েব করা যায় না।কোরআন তো কখনোই না।কারন আল্লাহ নিঁজেই ঘোষনা করছেন তিঁনি এর হেফাজতকারী।কাফের মোশরেকরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে কোরআনকে উল্টাপাল্টা করে দিতে।কিন্তু পারে নি।যেই শিয়ারা বলেছে যে কোরআন থেকে ৪৩০ টি আয়াত মুছে ফেলা হয়েছে,তাদের কাছে অনুমান ও কাল্পনিকতা ব্যতীত স্পষ্ট দলীলের প্রমাণ চাই,দিতে পারবেন কি?একজন অলির কিতাব থেকে প্রমাণ দিতে পারবেন যে কোরান থেকে আয়াত মুছে ফেলা হয়েছে?সবচেয়ে বড় কথা হল,মাওলা আলী (আ:) বলেছেন,আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি আর মা আয়েশা(রা:) এর মত হল আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬ টি।তাই প্রশ্ন থেকে যায়,আপনারা যেখানে মাওলা আলী (আ:) ব্যতীত কাউকে মানছেন না এবং মা আয়েশা (রা:) কেও মানছেন না,তবে আপনারা কেন আয়াত সংখ্যা নির্ধারনে মাওলা আলী (আ) কে বর্জন করে মা আয়েশা (রা:) এঁর মত গ্রহন করে ৪৩০ টি আয়াত মুছে ফেলার অভিযোগ তুলছেন? আপনারা এক সকল ক্ষেত্রে মাওলা আলী (আ:) কে মানলে এখানে কেন মা আয়েশা (রা:) এর মত গ্রহন করে মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।অথচ: আয়াত সংখ্যা সুস্পষ্ট মতভেদের কারন পরিলক্ষিত হচ্ছে।যেটা নিয়ে এত মতভেদ দেখা যায়,সেটা নিয়ে কেন এত বাড়াবাড়ী??

👏👏👏৪র্থ অভিমত👏👏👏
এ. বি. এম. আব্দুল মান্নান মিয়া ও আহমদ আবুল কালাম কোরানের আয়াত সংখ্যার বিষয়ে যে অভিমত দিয়েছেন তা এরকম: “কোরানের আয়াত সংখ্যা ছয় হাজারের মত। শায়খ আদ-দানী (রা.) বলেছেন, মুসলিম উম্মাহ একমত যে কোরানের আয়াত সংখ্যা মোটামুটি ছয় হাজারের মত। তবে তাঁদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে এই ছয় হাজারের পরে কত সংখ্যা বেশি আছে তা নিয়ে। এ বিষয়ে ছয়টি মত পাওয়া যায় :

১. পূর্ণ ছয় হাজার; না বেশি, না কম।
২. ৬ হাজার ২শত ৪টি।
৩. ৬ হাজার ২শত ১৪টি।
৪. ৬ হাজার ২শত ১৯টি।
৫. ৬ হাজার ২শত ২৫টি।
৬. ৬ হাজার ২শত ৩৬টি।

👏👏👏৫ম অভিমত👏👏👏

*(ক.) মুসনাদ দায়লামীর এক বর্ণনায় আছে কোরানের আয়াত সংখ্যা ৬ হাজার ২শত ১৬টি।

*(খ.) ইবনুদ দুরীস (রা.)-এর এক বর্ণনায় জানা যায় কোরানের আয়াত সংখ্যা ৬ হাজার ৬শত।

*(গ.) আমাদের দেশে ও অন্যান্য মুসলিম বিশ্বে বহুল প্রচলিত কোরানের আয়াত সংখ্যা ৬ হাজার ৬শত ৬৬টি।তবে যেভাবে পূর্ণ আয়াত ধরা হয়েছে,সেভাবে হিসাব করলে আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি।

🌹অধিকাংশ মানুষ পবিত্র কোরআনের আয়াত সংখ্যা সম্পর্কে যা জানে তা হল পবিত্র কোরআনের আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬ টি।তবে কেউ গণনা করে দেখে না যে আসলে কয়টি আয়াত বিদ্যমান। মূলত ৬৬৬৬ সংখ্যাটি আমরা পেয়েছি আলেম উলামাদের কল্যানে।কিন্তু পবিত্র কোরআন শরীফের আয়াত গণনা করলে আমরা ৬২৩৬ টি আয়াত পাই।৬৬৬৬ টি আয়াত হতে আরো ৪৩০ টি আয়াত প্রয়োজন।তাহলে কি আলেম উলামাগণ ভুল গণনা করলেন?

👌আলেমগনের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি ৬৬৬৬ আয়াতের কথা বলেছেন, তিনি হলেন ইবনে হুজাইমাহ (রা:)।তিনি উনার আন নসিহ ওয়াল মানসুখ কিতাবে এটি প্রকাশ করেন।ইবনে হুজাইমাহ (রা:) পবিত্র কোরআনের আয়াতের ধরন অনুযায়ী উল্লেখ করেনঃ

🎷১০০০ আয়াত-ওয়া’আদ
🎷১০০০ আয়াত-ওয়া’ইদ
🎷১০০০ আয়াত-আমর
🎷১০০০ আয়াত-নাহি
🎷১০০০ আয়াত-তথ্য ও ইতিহাস
🎷১০০০ আয়াত-নিষেধ ও উদাহরন
🎷৫০০ আয়াত-কতৃত্ব
🎷১০০ আয়াত-ইবাদত ও মহত্ব 🎷 ৬৬আয়াত-নাসিহ ও মানসুহ
=মোট হল ৬৬৬৬ -টি আয়াত

✌ অবশ্য তিনি প্রতিটি শ্রেণী বিভাগের বিস্তারিত বর্ণনা দেন নি।অন্যদিকে বর্তমানে সাজানো কোরআন শরীফে আয়াত পাওয়া যাচ্ছে ৬২৩৬ টি।বলা বাহুল্য হযরত উসমান (রা) সর্বপ্রথম যে কোরআন সংকলন করেছিলেন তাতে তিনি আয়াত সংখ্যা বসান নি।ফলশ্রুতিতে গণনায় বিভিন্ন মত পাওয়া গিয়েছিল, যা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার।তবে সর্বোচ্চ গৃহীত মত হল ৬২৩৬ টি আয়াত মতান্তরে ৬৬৬৬ টি আয়াত।তাহলে এই মতান্তরে বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ৪৩০ টি আয়াতের হিসাব আমরা কিভাবে দিব?আসুন একটু গবেষনা করে দেখা যাক।

✌পবিত্র কোরআনুল মাজিদে দুই ধরনের আয়াত বিদ্যমান।

১)তারসুরাত/জাহের-লিখিত।
২)তারসিরাত/বাতেন-গোপন।

✌জাহেরে আয়াত ৬২৩৬ টি,বাতেনে আরো ৪৩০ টি আয়াত বিদ্যমান।

✌আম্মিজান হযরত আয়েশা(রা) কে জিঙ্গেস রাসূল (ﷺ) এঁর জীবন পদ্ধতি সম্পর্কে জিঙ্গেস করা হলে তিনি জবাব দেন,হুজুর পাক (ﷺ) উঁনার কর্মে কোরআন,উঁনার চলনে কোরআন,উঁনার কথাবার্তায় কোরআন,উঁনার জীবনে কোরআন।

🌹🌹অর্থাৎ হুজুর পাক (ﷺ) হলেন জীবন্ত কোরআন।এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে সুরা নজমে উল্লেখ হয়েছে,
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى

এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।
[সুরা নাজম,আয়াত নং ৩ ]

إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى

কোরআন ওহী,যা প্রত্যাদেশ হয়।
[ সুরা নাজম,আয়াত নং ৪ ]

عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى

তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা,
[সুরা নাজম,আয়াত নং ৫ ]

🌹🌹হুজুর পাক (ﷺ) হলেন রহমাতাল্লিল আলামিন এবং কোরআন ও হুজুর পাক (ﷺ) উভয়ই হলেন নূর।সুতরাং পবিত্র কোরআন থেকে কখনো হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) কে পৃথক করা যাবে না।সুতরাং হুজুর পাক (ﷺ) নিঁজেই আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ওহি।উঁনার নামে চারটি হরফ।যথাঃ মীম,হা,মীম,দাল।

*১. মীম-২৪ তম হরফ-২৪ তম সুরা আন নূর-আয়াত সংখ্যা-৬৪

*২. হা-৬ষ্ঠ হরফ-৬ষ্ঠ সুরা আল আনআম-আয়াত সংখ্যা-১৬৫

*৩. মীম-২৪ তম হরফ-২৪ তম সুরা আন নূর-আয়াত সংখ্যা-৬৪

*৪. দাল- ৮ম হরফ- ৮ম সুরা আনফাল-আয়াত সংখ্যা-৭৫
____________________________
(২৪+৬৪+৬+১৬৫+২৪+৬৪+৮+৭৫)
=৪৩০
[সুরা নম্বর ও সুরা গুলোর আয়াত সংখ্যার যোগফল]

🌹সুতরাং, ৬২৩৬ টি আয়াত হল জাহেরে।কিন্তু ৬৬৬৬ টি আয়াত হল জাহের ও বাতেনের সমন্বয়ে।

✌এবার ৬৬৬৬ সংখ্যার প্রতিটি সংখ্যা আলাদা যোগ করলে হয়,

৬+৬+৬+৬=২৪(কালেমায় ২৪ হরফ)

🌴১২ হরফ-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং ১২ হরফ- “মোহাম্মাদুর রাসূল আল্লাহ”।
কালেমা পূর্ণ হতে যেমন “মোহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ” প্রয়োজন,তেমনি মোহাম্মদ (ﷺ) ব্যতীত কোরআন অপূর্ণ।যখন মোহাম্মদ (ﷺ) দ্বারা কোরআন পূর্ণ করা হয় তখন কোরআনের আয়াত সংখ্যা হয় ৬৬৬৬ টি।
[এখন মানা, না মানা যার যার ব্যাপার।



বিঃদ্রঃ  

পরিশেষে  একটা কথা না বললেই  নয়  এ আয়াত সংখ্যা নিয়ে ভিন্নতা থাকলেও কিন্তু পবিত্র কোরআনে  কোন প্রকারের সন্দেহ  সংশয় এর অবকাশ নেই। 

মূলত আয়াত সংখ্যা গননা করতে কেউ কোন অংশ কে বাদ দিয়ে করেছেন কেউ বা ছোট আয়াত বড আয়াতের মধ্যে পার্থক্য  করেছেন কেউ বা ওয়াকফ করার স্হান সম্পর্কে  ভিন্নমত পোষণ করে গননা  করেছেন সেই  হিসাবে  মূল গননায় পার্থক্য  হয়েছে। কিন্তু  মূল কোরআনে কোন সংশয় বা সন্দেহের অবকাশ নেই। আল্লাহ  সবাইকে  সঠিক ভাবে  বুঝার তাওফিক  দান করুক আমিন।  


সার কথা ঃঃ 

হযরত আয়েশা রাঃ  এর মত অনূসারে  কোরআনের আয়াত ৬৬৬৬। এটাই  প্রসিদ্ধ,

আর হযরত আলী রাঃ এর মতে ৬২৩৬ আয়াত। তবে বর্তমান  ছাপানো কোরআনে ৬২৩৬ আয়াতই দেখা যায়, যেটা আলী রাঃ এর মত অনূসারে এটাও প্রসিদ্ধ। 

আমি ব্যক্তিগত ভাবে সৌদি আরব এ  মদীনার সেই  কিং ফাহাদ ছাপাখানা থেকেন ছাপানো কোরআন শরীফ গননা করে দেখেছি সেখানেও ৬২৩৬ আয়াত পেয়েছি। তাছাডা ওমান - দুবাই  থেকে  ছাপানো  কোরআনে  ও ৬২৩৬ আয়াত দেখা গেছে।তাই এটাও প্রসিদ্ধ মত।

সংকলন সংযোজন 

 এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া 

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক 

নূরুল গনি ইসলামি একাডেমী কাটাছরা  জোরারগঞ্জ,  মিরসরাই,  চট্টগ্রাম,  বাংলাদেশ  


তথ্য  সূত্র ঃ 

https://modinargolam.wordpress.com/2018/06/25/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%9F-%E0%A6%86%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE/