Translate

রবিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ইনোসেন্স অফ মুসলিম্‌স , প্রতিক্রিয়া ,ফিরে দেখা :ক্রোধের কারণ :

২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ১১শ বার্ষিকী উপলক্ষে এ বছর Innocense of Muslims (মুসলিমদের নির্দোষিতা) শিরোনামে আমেরিকা থেকে একটি সিনেমা চিত্র ইন্টারনেটে ছাড়া হয়েছে। যাতে পবিত্র কুরআন, ইসলাম ও ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (ছা.) সম্পর্কে জঘন্যতম মন্তব্য ও কুরুচিপূর্ণ চিত্রায়ন করা হয়েছে। ভিডিও চিত্রটি তারা ইউটিউব নামক সামাজিক ওয়েবসাইটে পোষ্ট করেছে এবং আরবীতে অনুবাদসহ মধ্যপ্রাচ্যে ছেড়েছে। ১০০ জন ইহুদীর ৫০ লক্ষ ডলার ব্যয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্মিত উক্ত নিকৃষ্টতম চলচ্চিত্রটির নির্মাতা ও প্রযোজক হ’ল ইসরাঈলী বংশোদ্ভূত মার্কিন ইহুদী নাগরিক ক্যালিফোর্ণিয়ার ৫৬ বছর বয়সী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্যাম বাসিলে। উক্ত সিনেমায় ইসলামকে ‘ক্যান্সার’ ও মুসলমানকে ‘গাধা’ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। সেখানে শেষনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে কুৎসিত চরিত্রের মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে এবং তাঁকে জঘন্যতম ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়েছে। যেমন ইতিপূর্বে ২০১০ সালে ডেনমার্কের কার্টুনিস্ট ফিনলে গার্ড জেনসেন রাসূল (ছা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র তৈরী করে প্রচার করেছিল ও সারা বিশ্বের নিন্দা কুড়িয়েছিল। সিনেমাটি তথ্যগত ভাবে ডাহা মিথ্যায় ভরা এবং নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে চরম বিকৃত রুচির পরিচায়ক।

সিনেমায় কী ছিল দেখানো হয়েছে : মাত্র ১০ মিনিটের যে অংশ ইন্টারনেটে ছাড়া হয়েছে তা দেখে কোনো মুসলিমের রক্ত ঠান্ডা থাকার কথা নয়। সিনেমাটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিগত চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নারী লিপ্সু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একসঙ্গে একাধিক নারীর শয্যাগ্রহণকারী হিসেবেও দেখানো হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। স্ত্রীদের কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুতাপেটা করার দৃশ্যও সংযোজন করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অমুসলিম নিধনকারী হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও দাড়ি বিহীন সন্ত্রাসী হিসেবে আবার কখনো জুব্বা গায়ে ভণ্ড চরিত্রে উপস্থান করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত সাহাবী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, উমরা রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অন্যান্য সাহাবীদের চরমভাবে অপমান করা হয়েছে। উম্মাহাতুন মুমিনীন তথা নবীর স্ত্রীদেরও উপস্থাপন করা হয়েছে বেপর্দা ও নগ্নভাবে। [নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক]

পৃথীবির সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব : যে মানুষটি শুধু তাঁর সমকালীন মিত্র ও সঙ্গীদের প্রিয়তম ব্যক্তি ছিলেন না, ছিলেন আদর্শিকভাবে তাঁর ঘোর শত্রুদের চোখেও শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য। সমসাময়িক অনুচরবৃন্দ থেকে নিয়ে কিয়ামত দিন পর্যন্ত যে মানুষটি সকল বিবেকবান চক্ষুষ্মান অনুসারীর দৃষ্টিতে সবচে ভালোবাসার পাত্র। যাকে ‘সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী’ অভিধায় ভূষিত করেছেন খোদ নিখিল সৃষ্টির নিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। [আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় রাসূল সম্পর্কে সার্টিফিকেট দিয়ে বলেন,
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ فَسَتُبۡصِرُ وَيُبۡصِرُونَ ٥ بِأَييِّكُمُ ٱلۡمَفۡتُونُ ٦ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ ٧ ﴾ [القلم: ٤، ٧]
‘আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত। অতঃপর শীঘ্রই আপনি দেখতে পাবেন এবং তারাও দেখতে পাবে- তোমাদের মধ্যে কে বিকারগ্রস্ত? নিশ্চয় আপনার রবই সম্যক পরিজ্ঞাত তাদের ব্যাপারে যারা তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, আর তিনি হিদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞাত’। {সূরা আল-কলম, আয়াত : ৪-৭}]
যে মানুষটির জীবনেতিহাস ও মানবজাতির প্রতি তাঁর অপরিসীম অবদানের আলেখ্য পড়ে ভক্তিগদগদ হয়ে ওঠেন আধুনিক বিশ্বের নিরপেক্ষ অসংখ্য মনীষী, আমেরিকারই নাগরিক মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর সারা জাগানো বই ‘দ্যা হানড্রেড’ এ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহামানব হিসেবে এক নাম্বারে রেখেছেন। ইউলিয়াম ম্যুর থেকে নিয়ে অসংখ্য পণ্ডিত ও মনীষী তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে অকুণ্ঠ স্বীকৃতি দিয়েছেন। সেই মানুষকে নিয়ে যখন ব্যঙ্গ কার্টুন আঁকা হয়, সিনেমা বানিয়ে তাঁর চরিত্রে ইচ্ছে মত কালিমা লেপন করা হয়, তখন শুধু সারাবিশ্বের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ পাঠকারীদের অন্তরই নয়, বিবেকবান প্রতিটি মানুষের হৃদয়ই কেঁদে ওঠে। মুহাম্মদ নামের এই নিরক্ষর মহাজ্ঞানী ব্যক্তিটি শুধু অসংখ্য মানুষের নবীই নন, তিনি সবার ভালোবাসার বাতিঘর। তাঁকে সবচে বেশি ভালোবাসা ঈমানের অপরিহার্য অংশ। যেমন, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»
‘তোমাদের কেউ সে অবধি মুমিন হতে পারবে না, যাবৎ আমি তার কাছে প্রিয়তর হই তার পিতা ও সন্তান থেকে এবং সকল মানুষ থেকে।’ [বুখারী : ১৫; মুসলিম : ৪৪]
পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতি : পশ্চিমাদের বিবেক-বিবেচনা দেখে তখনই দুঃখটা জাগে যখন দেখি তারা চিন্তা-বাকস্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতেই আইন করে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে। যখন তারা কেবল নিজেদের ভোগ-বিলাসের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে রাজনীতির বলী বানায় অসংখ্য নিরীহ বনি আদমকে। যে নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে তারা বিশ্বজুড়ে শোরগোল করে অবলীলায় তাদেরই মিসাইল আর বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে নির্দয়ভাবে। পক্ষান্তরে কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় আঘাত করে যে কুলাঙ্গার সিনেমা বানায় তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে প্রশ্রয় দেয়া হয়। তথাকথিত চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে আর কত অন্যায়কে জায়েয করা হবে?
বৃটিশ রাজপুত্র ইউলিয়াম তার স্ত্রী কেটকে নিয়ে ফ্রান্সের সাগরপারে বেডরুমের বিনোদন করেছেন তাঁর ‘বিশ্বব্যাপী’ দীর্ঘ মধুচন্দ্রিমার অংশ হিসেবে। সেখানে তোলা তাদের কিছু নগ্ন ছবি পত্রিকায় প্রকাশ করায় তিনি ও বৃটিশরা বেজায় চটেছেন পত্রিকার ওপর। এটাকে তিনি ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বলে অপমান জ্ঞানে মামলা করেছেন। আদালত কালবিলম্ব না করে তাঁর পক্ষে রায়ও দিয়েছে। অথচ একই সময়ে পৃথিবীর সবচে ত্যাগী মানুষ, মানুষের মুক্তি ও শান্তির চিন্তায় অস্থির রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদাহানী করে আমেরিকায় সিনেমা বানানো হলো। তথাপি এ ব্যাপারে পশ্চিমা নেতারা পরিষ্কার নিন্দাসূচক কিছু বলেন নি। মুসলিম ঔরসে জন্ম নেয়া ইয়াহূদীবান্ধব খাঁটি খ্রিস্টান বারাক ওবামাও কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নেন নি।
তাকে গ্রেফতার করা হয় নি। উপরন্তু মাত্র সাত দিনের মাথায় সিনেমা নির্মাণের ক্ষোভ প্রশমিত না হতেই আবার ফ্রান্সের ‘শার্লি হেবদো’ সাময়িকী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যঙ্গাত্মক দুটি কার্টুন প্রকাশ করেছে। ফ্রান্সের মুসলিম নেতারা সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই কার্টুন প্রকাশের নিন্দা জানিয়েছেন। বিক্ষোভের আশঙ্কায় ফ্রান্স ২০টি দেশে তাদের দূতাবাস ও কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। পশ্চিমাদের তথাকথিত নীতিকথা আর আদর্শের পুরোটাই যে ভেক আর ভণ্ডামি তা আরও সপ্রমাণ হলো।
পশ্চিমাদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে বলে যথার্থ মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহম্মদ। ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতার’ ওপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের এক বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে মাহাথির এ মন্তব্য করেন। ওই চলচ্চিত্র তৈরি প্রসঙ্গে হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, এর প্রচার ও প্রকাশ বন্ধ করা হলে মতপ্রকাশের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবমাননা করায় সারা বিশ্বের মুসলিমরা যখন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত-সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে তখন চলচ্চিত্রটির প্রচার বন্ধ না করে বরং সংঘাতকে আরো উস্কে দিলেন হিলারি।
এর জবাবে মাহাথির মুহম্মদ তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, ‘মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের অধিকারের দোহাই দিয়ে হিলারি মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী এ চলচ্চিত্রের পক্ষে কথা বলেছেন। আমি মনে করি, পশ্চিমাদের মূল্যবোধ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের কথা বলে তারা একে অপরকে অপমান করতেও আর দ্বিধা করছে না।’
মাহাথির মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘মানুষ যদি একে অপরকে অবজ্ঞা ও অপমান করতে থাকে তাহলে কি ধরনের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে? রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যক্তি কোথাও কোন শান্তি থাকবে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু অপমান করার অধিকার কারও নেই।’
মাহাথির মুহাম্মদ জোর দিয়ে বলেন, অন্য জাতির ধর্ম ও মূল্যবোধকে আঘাত করা হলে বিশ্ব থেকে শান্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও ঘৃণা ও সংঘাত বেড়ে যাবে। [দৈনিক সংবাদ ২২/৯/২০১২ সংখ্যা]
বিশ্ব মানবতার প্রতি শান্তির ধর্ম ইসলাম ও মহানবীর অবিস্মরণীয় অবদান : যে ধর্মের নাম থেকে নিয়ে কর্ম ও চিন্তার প্রতিটি পর্যায়ে লক্ষ্যণীয় ‘শান্তিশব্দে’র সক্রিয় উপস্থিতি, যে ধর্ম শুধু তার অনুসারীদেরই নয়, বিধর্মীদেরও দেয় নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার ও মর্যাদা। সে ধর্মকে জোর করে উগ্র বানাবার উন্মাদ প্রচেষ্টা বড়ই হাস্যকর। বলতে দ্বিধা নেই আজ বিশ্ব সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে যে মৌলিক চেতনাগুলোর ওপর, তার অধিকাংশের চারা রোপন করেছে এই ইসলাম। এত অত্যাচার অপপ্রচারেও যে ধর্মের অনুসারীদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না, বিশ্বের সব মতবাদ আর ইজমের কাছে হতাশ হয়ে যে ধর্মের শান্তির শীতল ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন পাশ্চাত্যের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ও সভ্য মানুষগুলো, সে ইসলামের ওপর কেন এত রাগ আর এত বদনাম গাওয়া তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাশ্চাত্যের জানা উচিত, আল্লাহর ওহী প্রাপ্তির মাধ্যমে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বমানবতাকে মানুষের দাসত্ব থেকে একমাত্র শরীকবিহীন আল্লাহর ইবাদতের পথ দেখিয়েছেন। এর ফলে আল্লাহ বৈ সব কিছুর দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে মানুষ। তিনি বিশ্বমানবতাকে সকল কল্পকথা ও কুসংস্কার এবং সব রকমের মিথ্যা ও প্রতারণার সামনে শির না নোয়াবার শিক্ষা দিয়েছেন। অক্ষম প্রতিমা ও অলীক প্রভুদের বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করেছেন। মুক্ত করেছেন অসুস্থ চিন্তাধারা থেকে। বিশ্ব মানবতার চেতনায় ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার চারা রোপন করেছেন। তাঁর প্রতি অবতীর্ণ গ্রন্থ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيِّۚ فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦ ﴾ [البقرة: ٢٥٦]
‘দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৫৬}
জীবদ্দশায় তিনি নিজেও দ্ব্যর্থহীনভাবে মুসলিমের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসকারী অমুসলিমদের সকল অধিকার নিশ্চিত করেছেন। ধর্ম-বর্ণ-বংশ নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর শিক্ষার মধ্যে বরং এমন উপাদানেরও অভাব নেই যা পক্ষী ও প্রাণীকুলের প্রতি মায়া-মমতা ও কোমলতা দেখাতেও গুরুত্ব দেয়। নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এদের অকারণে কষ্ট প্রদান কিংবা এদের প্রতি বিরূপ আচরণকে।
তিনি তাঁর অগ্রবর্তী সকল নবীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল চিত্র উপস্থাপন করেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন নবী ইবরাহীম, মুসা ও ঈসা (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের নবী) প্রমুখ। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। প্রস্থানের তিন মাস আগে বিদায় হজে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি মানুষের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানে আঘাত হানাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি মানুষের সহজাত প্রকৃতিবান্ধব এক দীন নিয়ে আবির্ভূত হন যা আত্মিক খোরাক ও দৈহিক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রাখে। পার্থিব কাজ ও আখিরাতের আমলের মধ্যে ভারসাম্য বিধান করে। মানুষের সহজাত বাসনা ও ঝোঁককে করে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত। অপরাপর জাতিগুলোর সভ্যতার মতো একে ধ্বংস বা অবদমিত করে না।
মানবতার কল্যাণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আন্তঃসম্প্রদায় ভ্রাতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ নমুনা পেশ করেছেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কোনো মানব সম্প্রদায়ের ওপর অন্য কোনো মানব সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মূল সৃষ্টি, অধিকার ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে তারা সবাই সমান। শ্রেষ্ঠত্ব বিবেচিত হবে কেবল ঈমান ও তাকওয়া তথা বিশ্বাস ও আল্লাহভীতির নিরিখে। তিনি তাঁর সকল সঙ্গী-সাহাবীকে ধর্মসেবা এবং তাতে সম্পৃক্ত হবার সমান সুযোগ দিয়েছেন। তাইতো তাঁদের মধ্যে আরবদের পাশাপাশি ছিলেন (রোম দেশের) সুহাইব রূমী, (হাবশার) বিলাল হাবশী এবং (পারস্যের) সালমান ফারসী রাদিআল্লাহু আনহুম প্রমুখ।
পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীরের অনুভূতি : পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক, জিও টিভির প্রধান নির্বাহী হামিদ মীর তাঁর দৈনিক জং-এর এক কলামে লিখেছেন, ‘আমার কষ্ট ও যন্ত্রণা ছিল বর্ণনাতীত। এটা আমার সাংবাদিকতাসুলভ অনুসন্ধিৎসু মনোভাবের কারণে। সিএনএনে ইসলামবিরোধী একটি চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে লিবিয়ায় বিক্ষোভের খবর দেখার পর ইন্টারনেটে ওই চলচ্চিত্রটি খোঁজা শুরু করি। আমার এক সহকর্মী কোথাও থেকে ভিডিওটি ডাউনলোড করে আমার কাজ সহজ করে দেন। যখন ওই চলচ্চিত্রটি দেখা শুরু করি তখন আমার কাছে মনে হতে লাগল, কেউ যেন আমার মন ও মস্তিষ্কে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।
নিজেকে অনেক শক্ত মনের মানুষ বলে জানি, কিন্তু স্যাম ভাসেলির নির্মিত ইনোসেন্স অব মুসলিম নামের এই চলচ্চিত্র বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদ। কারণ এই চলচ্চিত্রের দৃশ্য ও সংলাপগুলো বোমা বিস্ফোরণের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আলকায়েদার হামলায় তিন হাজার লোক মারা গিয়েছিল। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ ইউটিউবে প্রচারিত এই ভিডিওচিত্রটি কোটি মুসলিমের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই চলচ্চিত্র কয়েক মিনিটের বেশি দেখতে পারি নি। এই ভয়াবহ চলচ্চিত্রের বিবরণ দেয়াও আমার জন্য অনেক কষ্টকর। শুধু এতটুকু বলব, এই চলচ্চিত্রের কয়েকটি দৃশ্য দেখে স্যাম বেসিলের বিপরীতে ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসবাদকে অতি তুচ্ছ বলে মনে হয়েছে। আমেরিকার জন্য এটা বড় পুরস্কার, এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী স্যাম বেসিল এত বড় অপকর্ম করার পরও আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশ্রয়েই আছে। আল্লাহ তা‘আলার কাছে লাখো শুকরিয়া যে, আজ পর্যন্ত কোথাও কোনো মুসলিম ঈসা আলাইহিস সালাম অথবা অন্য কোনো নবীর ব্যাপারে এ ধরনের বেয়াদবী করেন নি।’
হামিদ মীরের একটি যুক্তি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার পক্ষ থেকে আমাদের দেশের মাদরাসাগুলোর ওপর অনেক অভিযোগ আরোপ করা হয়। অথচ দ্বীনি মাদরাসার ছাত্ররা কখনো খ্রিস্টান অথবা ইয়াহূদী ধর্মের এমন অবমাননার কথা চিন্তাও করে না যা করেছে স্যাম বাসেলি ইসলাম ও ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে।
আমার আফসোস হয়, এ ব্যাপারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া লোকদেখানো। এই চলচ্চিত্রকে আমেরিকার প্রশাসনবিরোধী হিসেবে অভিহিত করাই যথেষ্ট নয়, বরং এটাও স্বীকার করতে হবে, কিছু খ্রিষ্টান ও ইয়াহূদী সন্ত্রাসী আমেরিকাকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা করছে। তারা তথাকথিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আলকায়েদা, তালেবান ও হাক্কানী নেটওয়ার্ক থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর। আমি বারাক ওবামার কাছে স্যাম বাসেলের মতো সন্ত্রাসীর বিচার প্রার্থনা করব না, তবে আমেরিকান মিডিয়ার বন্ধুদের কাছে আবেদন করব, তারা যেন এটা খুঁজে বের করেন, তাদের দেশের সন্ত্রাসীদের কোন কোন গোপন সংগঠন সহযোগিতা করে। আমি বিশ্বাস করি, ডেরি জনস ও স্যাম ভাসেলি গোটা আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করে না। আমেরিকায় রমস ক্লার্কের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিও আছেন, যিনি পাকিস্তানি ডাক্তার আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করছেন।
আমার কাছে মনে হচ্ছে, মুসলিম বিশ্বে আজ আমেরিকা ক্লার্কের দেশ হিসেবে পরিচিত নয়, পরিচিত হচ্ছে স্যাম বাসিলের দ্বারা।
স্যাম বাসিলের সন্ত্রাসবাদ আমাকে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মুসলিমদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা করায় খ্রিস্টান বাদশাহর প্রতি রাগান্বিত হয়ে তলোয়ার হাতে নিয়েছিলেন। আর শেষ পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয় করেছিলেন। কিন্তু আফসোস, আজ মুসলিম বিশ্বের কোনো শাসকের মধ্যে এই অনুভূতি ও উদ্যমটুকু নেই যে, নবীজীর অবমাননাকারী কুচক্রীদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে।’ [বার্তা ২৪ এর সৌজন্যে]




প্রতিক্রিয়া :
Every action has a reaction ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে’। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে সেটাই হয়েছে। মার্কিনী হামলায় সদ্য বিধ্বস্ত লিবিয়ার বেনগাযী শহরে মার্কিন কনস্যুলেটে জনগণের হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ ৪ জন মার্কিন কুটনীতিক ও ১০ জন লিবীয় রক্ষী নিহত হয়েছে। আফগানিস্তানে দু’জন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। কায়রোতে হাযার হাযার মানুষ বিক্ষোভ করেছে ও দেওয়াল টপকে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করে গাড়ী পুড়িয়েছে ও মার্কিন পতাকায় আগুন দিয়েছে। একই অবস্থা তিউনিসিয়া, সূদান, ইয়ামন, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কুয়েত ও বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিম রাষ্ট্রে হয়েছে। এমনকি ইসরাঈলেও ইহুদী শান্তিবাদীরা এর বিরুদ্ধে মিছিল করেছে ও এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইরানী পার্লামেন্টের আর্মেনীয় ও আসীরিয় দু’জন খৃষ্টান প্রতিনিধি এর প্রতিবাদ করে বলেছেন, এরা অজ্ঞতার যুগে ফিরে গেছে। কুরআনে ঈসা ও মারিয়ামের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। ফলে এরা কুরআন পুড়িয়ে নিজেদের নবীকে অপমান করেছে’। মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক রিক সানচেজ বলেছেন, মুসলমানেরা যদি এখন বাইবেল পোড়ায়, তাহলে কেমনটা হবে? অতএব তাদের একাজটি একেবারেই অজ্ঞতাসুলভ হয়েছে’। প্রেসিডেন্ট ওবামা এ ঘটনার নিন্দা করেছেন ও রাষ্ট্রদূত হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে লিবিয়া সীমান্তে দু’টি রণতরী পাঠিয়েছেন। এছাড়াও বিদেশে সকল মার্কিন দূতাবাসে যরূরী সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন। ইরান মুসলিম বিশ্বের নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আহবান জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অনতিবিলম্বে উক্ত সিনেমা বন্ধ করার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। এভাবে বিশ্বের সর্বত্র নিন্দাবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ভীত হয়ে বীরপুঙ্গব স্যাম বাসিলে গা ঢাকা দিয়েছে। অতঃপর গোপন অবস্থান থেকে টেলিফোনে বলেছে যে, ‘সে ইসলামকে ক্যান্সারের মত মনে করে এবং এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সে ইসলাম ধর্মের ত্রুটিগুলি মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। যা ইসরাঈলের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে সহায়ক হবে’। উল্লেখ্য যে, তার এই ভিডিও নির্মাণে সমর্থন জুগিয়েছেন নিউইয়র্কের বিতর্কিত খৃষ্টান ধর্মযাজক টেরি জোন্স। যিনি ২০১১ ও ১২ সালে প্রকাশ্যে কুরআন পোড়ানোর কারণে সারা বিশ্বে নিন্দিত হন। এখন প্রকাশ পেয়েছে যে, ঐ যাজক হ’ল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চর। পাদ্রী হওয়াটা তার বাহ্যিক রূপ মাত্র।

ফিরে দেখা :
১৯১৭ সালে কুখ্যাত বেলফোর চুক্তির মাধ্যমে জাতিসংঘের তদারকিতে ফিলিস্তীনের মুসলিম ভূখন্ডে ইহুদী রাষ্ট্র কায়েমের চক্রান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। হাযার বছরের আরব মুসলিমদের বিতাড়িত করে সেখানে বিভিন্ন দেশে ছড়ানো-ছিটানো ইহুদীদের বসতি স্থাপন করা হয়। উক্ত প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তীনের একাংশে ‘ইসরাঈল’ নামক রাষ্ট্র কায়েম করা হয় এবং সেখানকার স্থায়ী মুসলিম অধিবাসীরা বিতাড়িত হয়ে আশপাশের মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে উদ্বাস্তু হিসাবে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আজও তারা সেভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। পরাশক্তিগুলির পারস্পরিক যোগসাজশে প্রতিষ্ঠিত ইসরাঈল রাষ্ট্র মূলতঃ মধ্যপ্রাচ্যের তৈল ভান্ডারের উপর স্থায়ীভাবে ছড়ি ঘুরানোর জন্য এবং সেখানকার তৈল স্বল্পমূল্যে ভোগ করার জন্য একটি সামরিক কলোনী মাত্র। পরাশক্তির সমর্থন ব্যতীত একদিনও এ রাষ্ট্রের টিকে থাকার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ বলেন,

‘(ওদের নিরাপত্তার ব্যাপারে) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি (নিরপরাধ বৃদ্ধ ও নারী-শিশুদের হত্যা না করা) ও মানুষের প্রতিশ্রুতি (সন্ধিচুক্তি) ব্যতীত তারা যেখানেই অবস্থান করুক না কেন ওদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওরা আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করেছে। আর ওদের উপর মুখাপেক্ষিতা আরোপ করা হয়েছে। একারণে যে, ওরা আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তারা নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। ওরা অবাধ্যতা করেছিল ও সীমা লংঘন করেছিল’ {আলে ইমরান ৩/১১২}।

খৃষ্টানরা ঈসা ও তার মা মারিয়ামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তাঁদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করেছে। ইহুদী ও নাছারা উভয় জাতি আল্লাহর কিতাবকে বিকৃত ও বিনষ্ট করেছে ও তার বিনিময়ে দুনিয়া উপার্জন করেছে। তাদের কেতাবে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছা.)-এর আগমনের সুসংবাদ লিপিবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও তারা তা মানেনি এবং শেষনবীকে পেয়েও তাঁকে স্বীকার করেনি। শুধু তাই নয়, তারা তাঁর ও তাঁর উম্মতের বিরুদ্ধে সবধরনের চক্রান্ত করেছে। অতঃপর বিগত নবীগণের ন্যায় শেষনবীকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। আজও তারা একই অভ্যাসের পুনরাবৃত্তি করছে। তাই এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকটে আমাদেরকে সূরা ফাতিহায় প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ঐ লোকদের পথে পরিচালিত করবেন না, যারা অভিশপ্ত হয়েছে ও পথভ্রষ্ট হয়েছে’। এই দো‘আর শেষে বলতে হয় ‘আমীন’ (হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন)। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই লোকগুলি কারা? তিনি বললেন, ওরা হ’ল ইহুদী ও নাছারা’ {তিরমিযী}। মুসলিম উম্মাহকে সাবধান করে আল্লাহ বলেন,

‘হে বিশ্বাসীগণ! ইয়াহূদ ও নাছারাদের তোমরা বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। ওরা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যারা ওদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদের সুপথ প্রদর্শন করেন না’ {মায়েদাহ ৫/৫১}।

ওদের চক্রান্তে অতিষ্ঠ রাসূলকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘ইহুদী-নাছারাগণ কখনোই আপনার উপর খুশী হবে না, যতক্ষণ না আপনি ওদের দলভুক্ত হন। আপনি বলে দিন যে, আল্লাহ প্রেরিত সুপথই হ’ল সুপথ। অতএব আপনি যদি আপনার নিকট নিশ্চিত জ্ঞান (অহি-র বিধান) এসে যাওয়ার পরেও ওদের খোশ-খেয়াল সমূহের অনুসরণ করেন, তাহলে আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী থাকবে না’ {বাক্বারাহ ২/১২০}।

দুর্ভাগ্য! মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিজেদের কাছে অহি-র বিধান কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ থাকা সত্ত্বেও তা বাদ দিয়ে ইহুদী-নাছারাদের চালান করা নানা ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী হয়েছেন ও প্রায় সর্বক্ষেত্রে তাদের তাবেদার হয়েছেন। পাশ্চাত্য বিশ্বের নেতারা সালমান রুশদী সহ এযাবত কোন ব্যঙ্গকারীকে শাস্তি দেয়নি। বরং বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছেন। যদি তারা তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি দিতেন, তাহলে আজকে এ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতো না। অতএব বর্তমান ঘটনার জন্য মূলতঃ পাশ্চাত্যের নেতারাই দায়ী। সেকারণ তাদের উপরে নেমে আসছে একের পর এক লাঞ্ছনা ও অপমানকর পরিণতি। শান্তিপ্রিয় বিশ্বের এ ক্ষোভ ও ঘৃণা থেকে বাঁচার উপায় তাদের নেই।

ক্রোধের কারণ :
(ক) ওরা কুরআনের উপরে নাখোশ। কারণ কুরআনই পৃথিবীর বুকে একমাত্র ইলাহী ধর্মগ্রন্থ, যা অবিকৃত রয়েছে ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে এবং যা পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ। এর হেফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন {হিজর ১৫/৯}। কুরআন মানবজীবনের সকল দিক ও বিভাগের জন্য পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। যা সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। যার পরিবর্তনকারী কেউ নেই {আন‘আম ৬/১১৫}। তাওরাত-ইনজীল ছিল অপূর্ণাঙ্গ ও কেবল সে যুগীয়। তাই আল্লাহ তার স্থায়ীত্বের দায়িত্ব নেননি। ফলে তা স্বাভাবিকভাবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই রাগে ও ক্ষোভে ওরা কুরআনকে গুলি করে। যেমন ইরাকের আবু গারীব কারাগারে তারা করেছে। কুরআনকে পুড়িয়ে মনের ঝাল মিটায়। যেমন পাদ্রী টেরি জোন্স নিউইয়র্কে গত বছর ও এ বছর করেছে। ইরাকে গত ১৯শে মে’১২ এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা এ বছর কুরআন পুড়িয়েছে। ১৯৮৯ সালে ওরা সালমান রুশদীকে দিয়ে Satanic Verses (স্যাটানিক ভার্সেস) লিখিয়ে কুরআনের আয়াত সমূহকে ‘শয়তানের পদাবলী’ বলেছে। ১৯৯৪ সালে তাসলীমা নাসরীনকে দিয়ে ‘লজ্জা’ উপন্যাস লিখিয়ে কুরআন পরিবর্তনের দাবী করেছে। যেমন ইতিপূর্বে আবু জাহলরা দাবী করেছিল {ইউনুস ১০/১৫}।

(খ) ওরা ‘ইসলাম’-কে বরদাশত করতে পারে না। কেননা ‘আল্লাহর নিকট মনোনীত একমাত্র দ্বীন হ’ল ইসলাম’ {আলে ইমরান ৩/১৯}। ইসলামের বাণী যার অন্তরে প্রবেশ করে, সে মুসলমান হয়ে যায়। যেমন নাইন ইলেভেনের পরে পাশ্চাত্যের মানুষ এখন অধিক হারে ইসলাম কবুল করছে। তাদেরই হিসাব মতে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘ইসলাম’ বিশ্বধর্মে পরিণত হবে। বড় কথা হ’ল, অন্য ধর্ম ছেড়ে মানুষ ইসলাম কবুল করে। কিন্তু ইসলাম ছেড়ে অন্য ধর্ম কবুলের ঘটনা একেবারেই বিরল। তাই তারা ইসলামকে ‘ক্যান্সার’ বলেছে। আর মুসলমানকে বোকা, ‘গাধা’ বলেছে। আর সেকারণেই খাঁটি ঈমানদারগণের উপর ওদের রাগ বেশী। তাই এ বছর আফগানিস্তানে তালেবানদের মৃত লাশের উপর দাঁড়িয়ে মার্কিন সেনাদের পেশাব করতে এবং তা ভিডিও চিত্রে ধারণ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতেও এদের লজ্জা হয়নি। দেশে দেশে প্রকৃত ইসলামী নেতারাই এখন এদের টার্গেট।

(গ) মুহাম্মাদ (ছা.)-এর উপর রাগের কারণ, তিনিই একমাত্র বিশ্বনবী। মূসা ও ঈসা সহ সকল নবী ছিলেন গোত্রীয় নবী। শেষনবীর আবির্ভাবের পর সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয় একমাত্র নবী হলেন মুহাম্মাদ (ছা.)। যার আগমনের সুসংবাদ স্বয়ং ঈসা (আ.) দিয়ে গিয়েছেন {ছফ ৬১/৬}। রাসূল (ছা.) বলে গেছেন ‘যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, তার কসম করে বলছি যে, ইহুদী হৌক, নাছারা হৌক, পৃথিবীর যে কেউ আমার আবির্ভাবের কথা শুনেছে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ আমার আনীত দ্বীনের উপর ঈমান আনেনি, সে ব্যক্তি জাহান্নামের অধিবাসী হবে’ {মুসলিম}। তিনি আরও বলেন, ভূপৃষ্ঠের এমন কোন শহর-গ্রাম ও বস্তিঘর থাকবে না, যেখানে ইসলামের কলেমা প্রবেশ করবে না। তারা সম্মানিত অবস্থায় ইসলাম কবুল করবে অথবা অসম্মানিত অবস্থায় এর অনুগত হবে। আর এভাবেই দ্বীন আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ হয়ে যাবে’ {আহমাদ}। ইহুদী-নাছারা ও তাদের দোসরদের হাযারো চেষ্টা সত্ত্বেও ইসলাম দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। এক হিসাবে জানা যায় ইসলামের বিরুদ্ধে বছরে তারা ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় করে এবং তাদের দু’শোর বেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়া বর্তমানে এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বিভিন্ন দেশের মুসলিম সরকার ও ইসলামী নেতাদের তারা ছলে-বলে-কৌশলে দলে ভিড়াচ্ছে। অথবা ভয় দেখিয়ে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মার্কিন সেনারাই এখন মুসলমান হয়ে যাচ্ছে। খোদ টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা মুসলমান হয়ে গেছেন। তাই বর্তমানে যা কিছু ঘটছে, সবই তাদের আদর্শিক পরাজয়ের ক্ষুব্ধ বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের ব্যতীত অন্যদের মিত্ররূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ক্ষতি করতে পিছপা হবে না। তোমরা যাতে বিপন্ন হও, তারা সেটাই কামনা করে। তাদের মুখ থেকে বিদ্বেষ সমূহ বেরিয়ে আসে। আর যা তাদের অন্তরে লুকিয়ে রাখে, তা আরও ভয়ংকর। আমরা তোমাদের নিকট আয়াত সমূহ বিবৃত করছি। যাতে তোমরা বুঝ’। ‘সাবধান! তোমরা তাদের ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদের ভালবাসে না। অথচ তোমরা (পূর্ববর্তী) সকল ইলাহী কিতাবে বিশ্বাস করে থাক। যখন ওরা তোমাদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আর যখন তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে আঙ্গুল কাটে। আপনি বলুন, তোমরা তোমাদের ক্রোধে মরো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকলের হৃদয়ের খবর রাখেন’ {আলে ইমরান ৩/১১৮-১৯}।

অতএব হে মুসলিম ভাই ও বোন! ধৈর্য ধারণ কর। নিজের দ্বীনের উপর আরও দৃঢ় হও। অন্যদের থেকে সাবধান থাক। সার্বিক জীবনে ইসলামের যথার্থ অনুসারী হও। ‘পৃথিবীর মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে খুশী এর উত্তরাধিকারী করেন। তবে শুভ পরিণাম কেবলমাত্র আল্লাহভীরু বান্দাদের জন্যই নির্ধারিত’ {আ‘রাফ ৭/১২৮}।

জাতিধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের যেসকল বিবেকবান মানুষ এ ঘটনার নিন্দা করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে এর প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য মুসলিমদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। নইলে শত্রুরা এটাকে অজুহাত বানাবে। মনে রাখা আবশ্যক যে, মসজিদে নববীতে জনৈক বেদুঈন দাঁড়িয়ে পেশাব করেছিল। ছাহাবীগণ তাকে মারতে উদ্যত হলে রাসূল (ছা.) তাদের নিবৃত্ত করেন ও সেখানে পানি ঢালতে বলেন। অতঃপর বলেন, ‘তোমরা প্রেরিত হয়েছ সরল নীতির ধারক হিসাবে, কঠোর নীতির ধারক হিসাবে নয়’ {বুখারী}। বস্তুতঃ এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য। আর এভাবেই ইসলাম মানুষের অন্তর জয় করে থাকে ও সর্বত্র বিজয়ী হয়।

পরিশেষে আমরা প্রেসিডেন্ট ওবামা সহ সকল ইহুদী-নাছারা ও অমুসলিম বনু আদমকে ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির স্বার্থে মৃত্যুর আগে ইসলাম কবুল করার আহবান জানাচ্ছি। সেদিনের খ্রিষ্টান বাদশাহ নাজাশী ও তাঁর পাদ্রীরা কুরআন শুনে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। আজকের ওবামারা কি সেটা পারেন না? অতএব দু’দিনের এ দুনিয়াবী মরীচিকায় আচ্ছন্ন না থেকে আসুন আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত সত্যের কাছে মাথা নত করি ও জান্নাতের অধিকারী হই। কুরআনকে বুকে ধারণ করি ও মনেপ্রাণে ইসলাম কবুল করে ধন্য হই। ঐ শুনুন, আপনাদের জন্যই নেমে এসেছে আসমানী তারবার্তা: ‘(কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে) তবে তাদের নয়, যারা তওবা করে এবং ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ {ফুরক্বান ২৫/৭০}। হে আল্লাহ! তুমি কুরআন, ইসলাম ও ইসলামের নবীর সম্মানকে আরও উচ্চ কর এবং অসম্মানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও। যেমন তুমি দিয়েছিলে ফেরাঊনকে। আমীন! ইয়া রব্বাল আলামীন!!

সৌজন্যেঃ আত-তাহরীক 

http://www.sonarbangladesh.com/blog/siddiquee/129360#Comment872971
 

মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

স্বামী-স্ত্রীর প্রতি হেদায়েত ,হাকীমুল উম্মাত হযরত থানবী রহ.

স্বামী-স্ত্রীর প্রতি হেদায়েত

হাকীমুল উম্মাত হযরত থানবী রহ.

স্বামীর উদ্দেশ্যে
হযরত হাকীম ইবনে মুয়াবিয়া রহ. স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, পিতা বলেন, আমি রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আমাদের স্ত্রীদের আমাদের উপর কী কী অধিকার রয়েছে? তখন উত্তরে তিনি বলেন,
১. যখন তুমি পানাহার কর, তখন তাকেও পানাহার করাও।
২. যখন তুমি পোশাক গ্রহণ কর, তখন তাকেও পোশাক দাও।
৩. স্ত্রীর মুখের উপর কখনো মারবে না বা আঘাত করবে না।
৪. কখনো ক্রদ্ধ হয়ে হস্ত পর্যন্ত স্পর্শ করবে না।
৫. তার সাথে উঠা বসা করা বন্ধ করবে না।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাময়ার সূত্রে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা যেন কেউ স্বীয় স্ত্রীদের ক্রীতদাসের মত মারপিট না কর।
হযরত আবু হুরাইরা রা. এর সূত্রে হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদেরকে স্ত্রীদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবহার করার নসীহত করছি। আমার এ উপদেশ তোমরা কবূল কর। কারণ, নারীদেরকে আল্লাহপাক শরীরের পার্শ্বদেশের হাড্ডি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, এখন যদি তোমরা ষোল আনা তাদের সোজা করতে চেষ্টা কর, তবে তা ভেঙ্গে যাবে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি ঘটবে। আবার যদি তাদেরকে মুক্তভাবে ছেড়ে দাও তবে তারা যে বাকা,সে বাকাই থেকে যাবে। এজন্য আমি তোমাদেরকে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার উপদেশ দিচ্ছি।
আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য
হাড্ডি সোজা করার মর্ম হলো, তাদের কোন কথা যদি স্বভাবের সাথে না মেলে, তবে তার সংশোধনের প্রচেষ্টায় সফল হতে পারবে না। যদি তাদের ত্রুটির পিছনে লেগেই থাকো তবে চূড়ান্তরূপে সম্পর্কের ইতি ঘটবে। এ জন্য ছোট-খাট তুচ্ছ ব্যাপার এড়িয়ে চলা উচিত এবং সেই সাথে এটাও জেনে রাখা উচিত যে, তাদের প্রতি কঠোর ব্যবহারে বেপরওয়া হয়ে উঠলে কখনো কখনো শয়তান স্ত্রীদের অন্তরে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার দুঃসাহস যুগিয়ে দেয়।
হযরত উম্মে সালমা রা. বর্ণনা করেন, আমি ও মায়মূনা রা. রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাজির ছিলাম, ইত্যবসরে (অন্ধ সাহাবী) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. এলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তার থেকে পর্দা করতে নির্দেশ দিলেন। আমরা আরজ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি তো অন্ধ, তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। নবীজী উত্তর দিলেন, তোমরাও কি অন্ধ হয়েছো যে, তাকে দেখতে পাচ্ছ না? (তিরমিজি, আবু দাউদ)

আনুষাঙ্গিক জ্ঞাতব্য
এটাও স্ত্রীদের অধিকারের অন্তর্ভুক্ত যে, পর-পুরুষের থেকে তাকে এমনভাবে পর্দায় রাখবে, যাতে তাকে কেউ দেখতে না পারে আর না সে কাউকে দেখতে পারে। এর ভিতর স্ত্রীদের দ্বীনের হিফাযত নিহিত রয়েছে। কারণ বেপর্দেগীর অমঙ্গলতা থেকে তারা এর মাধ্যমে বাঁচতে পারবে। পার্থিব উপকারিতাও এখানে অজানা নয়। কারণ অভিজ্ঞতায় বলে, কোন ব্যাপারে যখন বেশি গুরত্ব আরোপ করা হয় তখন তার সাথে নিবিড় ও প্রগাঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পর্দার মাঝে এ উপকারিতা বিদ্যমান তা বলাই বাহুল্য। এর মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক গভীর হবে এবং তার অধিকারও বেশি সংরক্ষিত হবে। তাহলে বোঝা গেল স্ত্রীদের পার্থিব উপকারিতা পর্দা পালনের মাঝে বেশি নিহিত।

স্ত্রীর উদ্দেশ্যে
হযরত আবু হুরাইরা রা. এর সূত্রে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি যদি কাউকে কারো জন্যে সিজদার নির্দেশ দিতাম তবে আমি অবশ্যই স্ত্রীদের জন্য স্বামীকে সিজদা করতে নির্দেশ দিতাম। এর দ্বারা স্বামীদের কত বড় হক প্রমাণিত হয়। ইবনে আবি আওফার সূত্রে হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, স্ত্রীরা ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার স্বামীর হক আদায় না করে।
আনুষাঙ্গিক জ্ঞাতব্য
অর্থাৎ শুধু নামায, রোযা আদায় করে যেন কোন স্ত্রী এটা মনে না করে যে, আমি আল্লাহর হক আদায় করে ফেলেছি, এটা ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় হয় না যতক্ষণ স্বামীর হক আদায় করা না হয়। কারণ, স্বামীর হক আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহপাক।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন যে, আমি হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরজ করলাম যে, কোন মহিলা সবচেয়ে বেশি ভাল? তদুত্তরে তিনি ইরশাদ করলেন, সে সকল মহিলারা শ্রেষ্ঠ যাদেরকে স্বামীরা যখন দেখে তখন আন্তরিক সুখ অনুভব করে এবং স্বামীরা যখন কোন নির্দেশ দেয়,তখন তারা তা পালন করে। আর নিজের আত্মমর্যাদা ও অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে অপছন্দনীয় কথা বলে স্বামীর বিরুদ্ধে যায় না।
দুনিয়া ও আখেরাতের উপকার পূর্ণাঙ্গরূপে একজন দম্পতির মাঝে তখনই কেবলমাত্র দেখা দেয়, যখন স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরে থাকবে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা, আর এটা তখনই গড়ে উঠে, যখন একে অন্যের অধিকার আদায় করে দেয়।
বিবাহের পর ভিন্ন ঘরের প্রয়োজনীয়তা
১. বিবাহের পর মাতা-পিতার সাথে এক পরিবারে থাকা সম্ভব হলে কোন বাধা নেই; কিন্তু একত্রে একই গৃহে থাকা কিছুতেই উচিত নয়। এর অপকারিতা প্রথমে বুঝে না এলেও পরবর্তীতে বোঝা যায়।
২. পারিবারিক অশান্তি থেকে বেঁচে থাকার জন্য মোক্ষম পন্থা হলো, এক গৃহে একত্রে না থাকা; কারণ একাধিক মহিলা এক স্থানে থাকলে বেশি অশান্তির কারণ হয়। (মালফুজাতে আশরাফিয়া : ৩২৭)
৩. আমার জনৈক বন্ধুর পারিবারিক অশান্তি ও ঝগড়া বিবাদের কথা জানানো হলে আমি আমার বন্ধুকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলাম: আমার এই পরামর্শের কথা যেন কেউ জানতে না পারে। পরে সে যৌথ পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর তদের মাঝে আর ঝগড়া-বিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি, শান্তিমত সবাই বসবাস করেছে। তবে সে পিতা-মতার খরচ বহন করেছে। (প্রাগুক্ত : ১৪১)
পুত্রবধুর সাথে একত্রে না থাকা উচিত
বর্তমান যুগে বিবাহের পর মাতা-পিতা থেকে আলাদা থাকা চাই, এতে উভয়ের শান্তি ও নিরাপত্তা রয়েছে। মিরাঠে আমার এক বন্ধু ছিল। সে চিঠি লিখে তার পারিবারিক অশান্তি ও কলহ বিবাদের কথা জানিয়ে এর সমাধান জানতে চাইল। আমি তাকে বললাম, তুমি দেরি না করে ভাড়া করা বাসায় উঠে পড়। সে আমার কথামত আমল করতে শুরু করলো এবং এরপর থেকে আর তার গৃহে বিবাদ দেখা দেয়নি।
আমি বলতে চাই, বিবাহের পর মাতা-পিতার উপর নির্ভরশীল না হয়ে আলাদা উপার্জন করা উচিত, আর এটাই যুক্তিযুক্ত।  http://dawatul-haq.com/catarticle.php?cid=16&id=255

 

সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সাহাবী সালমান ফার্সির (রাঃ)ইসলামে আসার কাহিনী!

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে সালমান ফার্সি (রাঃ) নিজের মুখে তাকে নিচের গল্পটি বলেন. আমি ছিলাম এক পার্সিয়ান। ইসবাহানের কাছে জেয় নামের এক গ্রামের লোক আমি। আমার বাবা ছিলেন তার গ্রামের সর্দার এবং আমি ছিলাম আল্লাহ র সৃষ্টির মধ্যে তার সবচেয়ে বেশি ভালবাসার পাত্র। তিনি আমাকে এতই পছন্দ করতেন যে সবসময় চোখের সামনে রাখতে কখনোই আমাকে ঘরছাড়া হতে দিতেননা; আগুনের কাছেই রাখতেন- ঠিক মেয়েদের মত।আমি অগ্নিপূজকদের ধর্মে কঠোর সাধনা করতাম। পরে আমি তাদের পবিত্র আগুনের রক্ষাকারী হয়ে যাই।আমি সারাদিন সেই আগুন দেখাশুনা করতাম যেন ওটা কখনো নিভে না যায়। আমার বাবার ছিল বিশাল বাগান। একদিন তিনি কিছু নির্মান কাজে খুব ব্যস্ত থাকাতে আমাকে বললেন : "সালমান, আমি এই বাড়ির কাজ নিয়ে আজ খুব ব্যস্ত, তুমি আজকে বাগানে যাও আর কিছু কাজ ছিল; ওগুলো করে আস," কি কি কাজ করার ছিল তা তিনি আমাকে বলে দিলেন। আমি বাগানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।যাওয়ার পথে এক খ্রিস্টান চার্চ চোখে পরে আমার।তাদের প্রার্থনার আওয়াজ আসছিল আমার কানে।বাসায় বন্দী থাকাতে বাইরের পৃথিবীর ব্যাপারে আমার ধারণা ছিলনা বললেই চলে। তাই পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় তাদের প্রার্থনার শব্দ শুনে আমি ওদের ওখানে ঢুকে পরি।তাদের প্রার্থনা আর ধর্ম দেখে আমি তাদের ব্যাপারে আগ্রহী হলাম।আল্লাহর শপথ! আমার মনে হলো এই ধর্ম আমাদের ধর্মের চেয়ে ভালো।আমি সন্ধা পর্যন্ত ওখানেই থেকে গেলাম।বাবার কথা গুলো বেমালুম ভুলে গেলাম! আর বাগানে যাওয়াই হলনা।এই ধর্মের আদি স্থান কোথায় তা তাদের জিগ্যেস করলাম।তারা সিরিয়ার কথা বললেন। এরপর আমি আমার বাবার কাছে ফিরে যাই। এদিকে উনি চারিদিকে লোক পাঠিয়ে আমাকে খুঁজছেন।তার সারাদিনের কাজ ভেস্তে গেছে।ফেরার পর তিনি আমাকে বললেন, " সালমান, কই ছিলে এতক্ষণ? আমি তোমাকে কিছু কাজ দিয়েছিলাম; ওগুলো করনি? আমি বললাম, " গির্জাতে প্রার্থনারত কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি।তাদের ধর্মে যা দেখলাম তা আমার মনে দাগ কাটল। আল্লাহর শপথ! সন্ধা পর্যন্ত আমি তাদের সাথেই ছিলাম। তিনি বললেন, " ও আমার সন্তান! ওই ধর্মে কোনো ভালো কিছু নেই।তোমার আর তোমার বাপ দাদার ধর্ম এর চেয়ে অনেক ভালো।আমি বললাম, " না, আল্লাহর শপথ! আমি যা দেখেছি তা আমাদের ধর্মের চেয়ে ভালো।উনি আমার কথায় বেশ ঘাবড়ে গেলেন আর আমার পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে বাসায় বন্দী করে রাখলেন। আমি গির্জার সেই খ্রিস্টানদের খবর পাঠালাম- সিরিয়া থেকে কোনো ব্যবসায়ী কাফেলা এলে তারা যেন আমাকে জানায়।তাদের একজন আমাকে জানাল তাদের কাছে সিরিয়া থেকে একটা কাফেলা সত্যিই এসেছে কয় একদিন আগে।তাদেরকে তারা আমার কথাও জানিয়েছে। আমি তাকে বললাম কাজ শেষে যখন ওরা দেশে ফিরবে তখন যেন আমাকে খবর দেয়।ওদের যখন যাওয়ার সময় হলো তখন তারা আমাকে খবর দিল। আমিও আমার পায়ের শিকল খুলে ছুড়ে ফেললাম আর ওই কাফেলার সাথে চললাম; একেবারে সিরিয়া পর্যন্ত চলে এলাম।সিরিয়া পৌছানোর পর আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, " এই ধর্মের সব চেয়ে ভালো ব্যক্তি কে? তারা বলল, " চার্চের বিশপ। " আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, " আপনাদের এই ধর্ম আমার ভালো লেগেছে। আমি আপনার সাথে থেকে চার্চের সেবা করতে চাই।সাথে আপনার কাছে এই ধর্মের ব্যাপারে শিক্ষা আর প্রার্থনা করা যাবে।"তিনি এতে সায় দিলেন আর আমিও তার সাথে রয়ে গেলাম। কিন্তু লোকটা ছিল খুব মন্দ প্রকৃতির।তিনি চার্চের অনুসারীদের দানশীলতার আদেশ আর উত্সাহ দিতেন; অথচ সেই দানের টাকার বেশির ভাগ উনি গরিবদের না দিয়ে নিজের জন্য রেখে দিতেন।এইভাবে তার সাত টা সিন্দুক সমান সোনা আর রূপা জমা হলো।তার কাজকর্মে আমি তাকে যারপর নাই ঘৃনা করতাম।তারপর একদিন তিনি মারা গেলেন। ওখানকার খ্রিস্টানরা সব তাকে কবর দেয়ার জন্য আসল। আমি তাদের বললাম এত একজন মন্দ লোক ছিল। সে তোমাদের দানশীলতার আদেশ আর উত্সাহ দিত, অথচ যখন তোমরা তা নিয়ে আসতে, তার পুরোটাই সে নিজের জন্য রেখে দিত, কোনো অংশই সে গরিবদের দিতনা।তারা বলল, "এর প্রমান কি? তার সে সম্পদ কোথায় আছে দেখাও আমাদের!" আমি তাদের দেখিয়ে দিলাম আর বের হয়ে আসল তার লুকানো সেই সাতটা সিন্দুক; সোনা রূপায় ভরা। তারা সবাই বলল, " আল্লাহর শপথ! আমরা এই লোককে কবর দিবনা।" তারা তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে পাথর ছুড়ল। এরপর তারা তার জায়গায় নতুন এক লোককে নিয়ে এনে নিয়োগ দিল। তার চেয়ে ভালো করে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে এমন কাওকে আমি কখনো দেখিনি। তিনি দুনিয়াত্যাগী আর পরকাল প্রত্যাশী ছিলেন। তার দ্বীনদারির কোনো তুলনায় ছিলনা। তাকে আমি সব চেয়ে বেশি ভালবাসতাম; এমনটা আর কারো জন্য আমি অনুভব করিনি।তার সাথে আমি বেশ কিছুদিন ছিলাম। তারপর যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো, আমি বললাম , " ও শায়খ! আমি আপনার সাথে ছিলাম। আপনাকে সব চেয়ে বেশি ভালোবেসেছি, যেমনটা আগে আর কখনোই হয়নি। এখন আল্লাহর ফরমান আপনার কাছে চলে এসেছে। আপনি আমায় কার কাছে যাওয়ার উপদেশ দেন? কি করার আদেশ দেন?" তিনি বললেন, " ও আমার সন্তান! এমন কারো নামতো মনে আসছেনা যে আমার এই পথ অনুসরণ করে।লোকেরা ধংসের দিকে এগোচ্ছে। সবাই বদলে গেছে আর তাদের ধর্ম কে ত্যাগ করেছে। তবে একজন লোক আছে মসুলে। তার নাম অমুক আর সে আমার মতই এখনো সত্যের উপরে অটল আছে। তুমি তার কাছে যাও।উনি মারা গেলে পরে কবরস্থ হবার পর আমি মসুলের সেই লোকের কাছে যাই।আমি তাকে বললাম, " অমুক ব্যক্তি মৃত্যুর আগে আমাকে আপনার কাছে আসার উপদেশ দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন আপনি তার মত একই সত্যের অনুসারী।" তিনি বললেন, "তুমি আমার সাথে থেকে যাও।"আমি তার সাথে রয়ে গেলাম।উনিও খুব ভালো লোক ছিলেন; ঠিক তার সঙ্গীর মত।কিন্তু উনিও বেশিদিন বাঁচলেননা. মারা যাওয়ার আগে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, " ও আমার শায়খ ! অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার কাছে আসার ও আপনার সাহচর্যের উপদেশ দিয়েছিলেন।এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার ডাক চলে এসছে।আপনি আমাকে কার কাছে যাওয়ার উপদেশ দেন ?কি করার আদেশ দেন?" তিনি বললেন," ও আমার সন্তান ! এমন কারো নামতো মনে আসছেনা যে আমার এই পথ অনুসরণ করে।তবে একজন লোক আছে নাসিবিয়ায়।তার নাম অমুক আর সে আমার মতই এখনো সত্যের উপরে অটল আছে। তুমি তার কাছে যাও।"উনি মারা গেলে পরে কবরস্থ হবার পর আমি নাসিবিয়ার সেই লোকের কাছে যাই।আমি তাকে আমার গল্প বললাম আর জানালাম আমার সঙ্গীর কথা যিনি আমাকে তার কাছে পাঠিয়েছেন।তিনি বললেন, "তুমি আমার সাথে থেকে যাও।" আমি তার সাথে রয়ে গেলাম।তিনি তার অপর দুই সঙ্গীর মতই পরহেজগার এবং দ্বীনদার ছিলেন।আল্লাহর শপথ ! খুব শীঘ্রই তারও মৃত্যু হলো। মৃত্যুর আগে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম," অমুক ব্যক্তি আমাকে অমুকের কাছে আসার উপদেশ দিয়েছিলেন, ওই ব্যক্তি পরবর্তিতে আমাকে আপনার কাছে আসার উপদেশ দেন।এখন আপনি আমাকে কোথায় যাবার উপদেশ দেন এবং কি করার আদেশ দেন?" তিনি বললেন," ও আমার সন্তান ! এমন কারো নাম আমরা জানিনা যে আজকের দিনে আমাদের এই দ্বীনের উপর সুপ্রথিষ্ঠিত আছে; যার কাছে তুমি যেতে পার।তবে আমুরিয়াহ তে একজন লোক আছে।সে আমাদের মতই এই পথের অনুসারী।তোমার ইচ্ছে হলে তার কাছে যেতে পার; সে সত্য পথের অনুসারী।তিনি মারা যাবার পর তাকে কবরস্থ করে আমি আমুরিয়ার সেই লোকের কাছের গেলাম আর আমার গল্প বললাম।তিনি বললেন, "তুমি আমার সাথে থেকে যাও।"আমি তার সাথে রয়ে গেলাম; তিনি তার সঙ্গীদের মতই একই পথ অনুসরণ করছিলেন।ইতিমধ্যে আমি বেশ ধন সম্পদ অর্জন করলাম, বেশ অনেক গরু আর মেষ ছিল আমার।তারপর এই ব্যক্তির ও শেষ সময় চলে আসল আল্লাহর নির্দেশে।মৃত্যুর আগে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম," অমুক ব্যক্তি আমাকে অমুকের কাছে আসার উপদেশ দিয়েছিলেন, ওই ব্যক্তি পরবর্তিতে আমাকে তার মৃত্যুর সময় অমুকের কাছে পাঠান, ওই ব্যক্তি এরপর আমাকে আমাকে অমুকের কাছে পাঠান তার শেষ সময়ে, এরপর উনি একইভাবে আমাকে আপনার কথা বলে যান যাওয়ার আগে।এখন আপনি আমাকে কোথায় যাবার উপদেশ দেন এবং কি করার আদেশ দেন?"তিনি বললেন," ও আমার সন্তান ! এমন কারো নাম আমরা জানিনা যে আজকের দিনে আমাদের এই দ্বীনের উপর সুপ্রথিষ্ঠিত আছে ;যার কাছে তুমি যেতে পার।কিন্তু আল্লাহর একজন নবী আসার সময় হয়ে এসেছে যিনি ইব্রাহিম(আঃ) এর ধর্ম নিয়ে আসবেন।তিনি আসবেন আরব ভূমিতে আর হিযরত করবেন এমন এক জায়গায় যার দুই ধারে আসে কালো পাথরের টিলা আর মাঝখানে খেজুর বাগান।তার কোনো লুকানো বৈশিষ্ট্য থাকবেনা। উপহার হিসাবে দেয়া খাবার তিনি খাবেন; কিন্তু সাদাকার খাওয়া নয়।তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে থাকবে নবুয়্যতের মোহর।যদি পার ওখানে চলে যাও।এরপর উনি মারা যান এবং কবরস্থ হন।আমি আমুরিয়ায় আল্লাহর ইচ্ছাতে বেশ অনেক দিন থেকে গেলাম।এরপর একদিন কালব এর কিছু ব্যবসায়ীদের ওখান দিয়ে যেতে দেখে আমি তাদের বললাম," আমি তোমাদের এই সব গরু ও মেষ দিব, এর বিনিময়ে আমাকে তোমরা আরবে নিয়ে যেতে পার? তারা তাতে সায় দিল।আমিও তাদের সব গরু আর মেষ দিয়ে দিলাম।তারা আমাকে সেখানে নিয়ে গেল।কিন্তু আল ওয়াদি আল কুরার কাছে আসার পর তারা আমাকে প্রতারিত করল আর এক ইহুদির কাছে আমাকে ক্রীতদাস হিসাবে বেচে দিল।তার সাথে থাকার সময় ওই খেজুর বাগান আমার চোখে পরে।আমার মন বলছিল এটাই আমার আমুরিয়ার সেই শায়খের বর্ণিত জায়গা; তবে নিশ্চিত হতে পারছিলামনা। একদিন আমার মনিবের এক জ্ঞাতি ভাই এলো মদীনার বানু কুরায়জা গোত্র থেকে।আমার মনিব আমাকে এবার তার কাছে বেচে দিল আর সে আমাকে মদীনা তে নিয়ে এলো।আল্লাহর শপথ! আমি দেখা মাত্রই জায়গাটা চিনতে পারলাম, ঠিক যেমনটা আমার সঙ্গী বলেছিলেন। আমি সেখানে থাকতে লাগলাম। এদিকে আল্লাহ তার রাসুল (সাঃ) কে পাঠালেন মক্কাতে।ক্রীতদাসের কাজের ভারে আমি এই সময়টা তার ব্যাপারে কিছুই শুনিনি। তারপর তিনি মদীনাতে এলেন। আল্লাহর শপথ! একদিন আমি ছিলাম আমার মনিবের এক খেজুর গাছের উপরে। আমি কিছু কাজ করছিলাম আর আমার মনিব কাছেই বসে ছিলেন। এমন সময় তার এক জ্ঞাতি ভাই এসে তাকে বলা শুরু করলো," বানু কায়লা কে আল্লাহ ধংস করুন। আল্লাহর শপথ! এই মুহুর্তে তারা কুবাতে সমাবেশ করছে এক লোককে স্বাগত জানাতে; যে আসছে মক্কা থেকে- তারা বলছে সে একজন নবী।" এ কথা শুনে আমার এমন কাপুনি ছুটল যে মনে হলো আমি আমার মনিবের উপরেই পড়ব। গাছ থেকে নেমে এসে আমি ওই লোককে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলাম, " বলছ কি তুমি? বলছ কি তুমি?" আমার মনিব এসব দেখে বেশ রেগে গেলেন আর আমাকে একটা ঘুষি মেরে বললেন," এসব দিয়ে তোমার কি কাজ? কাজে মনোযোগ দাও।" আমি বললাম, " কিছুনা। আমি কেবল ঠিক ভাবে জানতে চাচ্ছিলাম উনি কি বলছেন।" আমার কিছু সংগ্রহ ছিল। সন্ধা হলে পরে আমি ওগুলো নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে গেলাম। তখনো তিনি কুবাতে ছিলেন। আমি তার কাছে গেলাম আর বললাম, " আমি শুনেছি আপনি একজনন্যায়পরায়ণ মানুষ আর আপনার সঙ্গীরা খুব নি:স্ব; তাদের সাহায্যের দরকার।এই জিনিসগুলো তাই আমি সাদাকার নিয়তে নিয়ে এসেছি।আমার মনে হচ্ছে অন্য যে কারো চেয়ে আপনারই এসবের বেশি প্রয়োজন।আমি ওগুলো রাসুল (সাঃ) এর কাছে নিয়ে গেলে তিনি সাহাবীদের (রাঃ) ওটা থেকে খেতে বললেন; কিন্তু নিজে বিরত থাকলেন। আমি মনে মনে বললাম, "এই তো প্রথম আলামত নবুয়্যতের।" আমি চলে গিয়ে আরো বেশ কিছু জিনিস জোগার করলাম। এর মধ্যে রাসুল (সাঃ) মদীনাতে চলে এসছেন।আমি তখন তার কাছে গিয়ে বললাম, " আপনি তো সাদাকার খাবার খান না। তাই আমি আজ কিছু উপহার নিয়ে এসেছি আপনার সম্মানে।" রাসুল (সাঃ) তা থেকে নিজে কিছু খেলেন আর সাহাবিদেরও (রাঃ) শরিক হতে বললেন।আমি দ্বিতীয় আলামত পেলাম।এরপর আমাদের দেখা হয় বাকি আল গারকাদে, ওখানে রাসুল (সাঃ) তার একজন সাহাবীর (রাঃ) এর জানাজা পড়াচ্ছিলেন। তাঁর গায়ে দুটো শাল ছিল আর উনি তাঁর সাহাবীদের মধ্যে বসে ছিলেন।আমি তাকে সালাম দিলাম। এরপর তাঁর পিছনে এসে তার কাঁধের নবুয়্যতের মোহর দেখবার চেষ্টা করছিলাম; যার বর্ণনা আমি শুনেছিলাম আমুরিয়ার সেই শায়খের কাছে। যখন রাসুল (সাঃ) আমাকে তাঁর পিছনে যেতে দেখলেন তখন তখন তিনি বুঝলেন আমি এমন কিছু খুঁজছি যার বর্ণনা আমাকে দেয়া হয়েছে।তিনি তার পিছনের কাপড়টা সরিয়ে দিলেন। আমি নবুয়্যতের মোহর দেখে নিশ্চিত হলাম।এরপর আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম, মোহরের জায়গাটিতে চুমু খেলাম আর ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। রাসুল (সাঃ) আমাকে ঘুরে দাড়াতে বললেন। আমি তাই করলাম আর আমার গল্প বললাম ঠিক যেমন করে এখন তোমায় বলছি ও ইবনে আব্বাস (রাঃ)।রাসুল (সাঃ) চাইলেন তার সাহাবীরাও এই কাহিনী শুনুক।এরপর আমি আমার কৃতদাসের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পরি, বদর আর উহুদ চলে গেল- আমি রাসুল (সাঃ) এর সাথে থাকতে পারলামনা। রাসুল (সাঃ) একদিন বললেন, " ও সালমান, তোমার মনিবের সাথে তুমি একটা মুক্তির বন্দোবস্ত কর।" আমি আমার মনিবের সাথে চুক্তি করলাম যে আমি তার জন্য ৩০০ টা খেজুর চারা লাগিয়ে দিব আর ৪০ উকিয়া দিব- এর বিনিময়ে সে আমাকে মুক্তি দিবে।আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তার সাহাবীদের (রাঃ)বললেন, " তোমাদের ভাইকে সাহায্য কর." তারা আমাকে খেজুরের চারা দিয়ে সাহায্য করলো। একজন ৩০ টা, একজন ২০ টা, একজন ১৫টা , একজন ১০ টা- এভাবে সবাই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দিল যতক্ষণ না ৩০০ টা খেজুর চারা হলো। রাসুল (সাঃ) বললেন, " ও সালমান, যাও! গিয়ে গর্ত খোঁড় যেখানে চারা গুলো লাগাবে। কাজ শেষ হলে আমাকে জানাও। আমি নিজ হাতে ওগুলো লাগাবো।" তারপর আমি গর্ত খোঁড়া শুরু করলাম আর আমার সঙ্গীরা আমাকে সাহায্য করল।যখন আমার কাজ শেষ হলো তখন আমি রাসুল (সাঃ) কে জানালাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমার সাথে বেরিয়ে এলেন, আমরা চারা গুলো এগিয়ে দিচ্ছিলাম আর উনি ওগুলো গর্তে রোপন করছিলেন। শপথ সেই পবিত্র সত্ত্বার যার হাতে এই সালমানের প্রাণ, একটা চারাও মরেনি। চুক্তি অনুযায়ী খেজুর চারা রোপন করা হয়ে গেলেও আমার টাকার অংশটা তখনো বাকি। একবার এক যুদ্ধ জয় থেকে ডিমের আকারের এক টুকরো সোনা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর কাছে এলো। উঁনি আমায় খুঁজছিলেন, " ওই পার্সিয়ান কোথায় যার মনিবের সাথে তার মুক্তিপনের বন্দোবস্ত ছিল?" আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে আসা হলে তিনি বললেন," ও সালমান! যাও, এটা দিয়ে তোমার ঋণ শোধ কর।" আমি বললাম , " ও আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! এটুকু দিয়ে কি করে আমার সব ঋণ শোধ হবে?" তিনি বললেন, " এটা নাও।আল্লাহই তোমাকে তোমার ঋণ শোধের ব্যাপারে সাহায্য করবেন।" আমি ওটা নিয়ে গিয়ে ওজন দিলাম; শপথ সেই পবিত্র সত্ত্বার যার হাতে এই সালমানের প্রাণ, দেখি ওটার ওজন ঠিক ৪০ উকিয়া। আমি তখন চুক্তি অনুযায়ী সব দেনা শোধ করলাম আর আমার মনিব আমায় মুক্ত করে দিল। খন্দকের যুদ্ধে আমি রাসুল (সাঃ) এর সাথে ছিলাম এবং এরপর আর কোনো বড় ঘটনাতে আমি তার সঙ্গ ছাড়িনি.
এই ঘটনাটি ইমাম আহমাদ (রহঃ) তার মুসনাদ (৫/৪৪১) এ বর্ণনা করেছেন।মুহাদ্দিস রা এই হাদিস টিকে হাসান সাব্যস্ত করেছেন।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন:
'যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন'। (সুরা হুজুরাত:৬৯)
আমি আপনি দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত থেকে ধর্মটাকে আরেকজনকে লিজ না দিয়ে, যদি পরিস্কার অন্তর নিয়ে বাপদাদার থেকে পাওয়া ধর্মটাকে কুরআন সুন্নাহর সাথে একটু মিলিয়ে দেখি......চেষ্টা করি সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ অন্বেষণের.....তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরাও হিদায়েতের পথ পাব। দুনিয়ার কোন বাতিল শক্তিই আমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না।

তোহ্ফাতুল হুজ্জাজ কেরাম

তোহ্ফাতুল হুজ্জাজউমরা পালন করার নিয়মইহরাম বাঁধা (ফরয): উমরা পালনকারী মীকাতে পৌঁছে অথবা তার পূর্ব হতে গোসল বা উজু করে (পুরুষগণ ইহরামের কাপড় পরে) ২ রাকাআত নামায পড়ে মাথা হতে টুপি ইত্যাদি সরিয়ে কেবলামুখী হয়ে উমরার নিয়ত করবে। নিয়ত শেষে অন্ততঃ ৩ বার (পুরুষগণ সশব্দে) ৪ শ্বাসে তালবিয়াহ পাঠ করবে। তালবিয়া এইi. لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ ii. لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ iii. اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ iv. لاَ شَرِيْكَ لَكَ নিয়ত ও তালবিয়ার দ্বারা ইহরাম বাঁধা হয়ে গেল। এখন বেশী বেশী এ তালবিয়াহ পড়তে থাকবে এবং ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বিরত থাকবে। 


তাওয়াফ করা (ফরয): অতঃপর মসজিদুল হারামে প্রবেশের সুন্নাতের প্রতি লক্ষ রেখে তাওয়াফের স্থানে প্রবেশ করবে। এরপর তাওয়াফের স্থানে পৌঁছেই তালবিয়াহ বন্ধ করে দিবে। হাজরে আসওয়াদের দাগের বাঁয়ে দাঁড়িয়ে প্রথমে উমরার তাওয়াফের নিয়ত করবে। তারপর দাগের উপর এসে হাজরে আসওয়াদকে সামনে করে তাকবীরে তাহরীমার মত হাত তুলবে এবং তাকবীর বলবে। অতঃপর হাত ছেড়ে দিবে। এরপর ইশারার মাধ্যমে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করবে। অতঃপর পূর্ণ তাওয়াফে ইযতিবা ও প্রথম ৩ চক্করে রমল সহকারে উমরার ৭ চক্কর সম্পন্ন করবে। প্রত্যেক চক্কর শেষে হাজরে আসওয়াদকে ইশারার মাধ্যমে চুম্বন করবে। তাওয়াফ শেষে সম্ভব হলে কাউকে কষ্ট না দিয়ে মুলতাযামে হাযিরী দিয়ে দু’আ করবে, তারপর মাতাফের কিনারায় গিয়ে মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে বা যেখানে সহজ হয় ওয়াজিবুত তাওয়াফ দু’রাকাআত নামায আদায় করবে। এরপর যমযমের পানি পান করবে। 

সায়ী করা (ওয়াজিব): এরপর সাফা মারওয়া এর সায়ী করার উদ্দেশ্যে হাজরে আসওয়াদকে ইশারার মাধ্যমে চু্ম্বন করে বাবুস সাফা দিয়ে বের হয়ে সাফা পাহাড়ে কিছুটা উপরে চড়বে এবং বাইতুল্লাহ মুখী হয়ে দু’আ করে মারওয়া পাহাড়ের দিকে চলবে। মারওয়াতে পৌছলে একবার সওত হয়ে গেল। এভাবে সাত সওত অর্থাত, ৭ বার সায়ী সম্পন্ন করবে। মারওয়াতে কিছুটা উপরে চড়ে বাইতুল্লাহ মুখী হয়ে দু’আ করে সাফার দিকে চলবে। প্রত্যেক বার সাফা মারওয়াতে বাইতুল্লাহ মুখী হয়ে দু’আ করবে এবং প্রতিবার (পুরুষগণ) সবুজ বাতিদ্বয়ের মাঝে দ্রুত চলবে। সায়ীর পর ২ রাকাআত নফল নামায পড়বে। এবার সায়ী সম্পূর্ণ হল।হালাল হওয়া (ওয়াজিব): এরপর মাথা মুন্ডিয়ে বা চুল ছোট করে হালাল হতে হবে। এখন আপনার উমরার কাজ সম্পূর্ণ হল। 



হজ্জে ইফরাদ পালনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাইহরাম বাঁধা (ফরয): হজ্জে ইফরাদ পালনকারী হজ্জের মাস সমূহে মীকাতে পৌছে বা তার পূর্ব হতে (বাংলাদেশী হাজীদের জন্য বাড়ী বা ঢাকা থেকে) হাজামাত (ক্ষৌরকায) ইত্যাদি সমাপ্ত করে গোসল করে বা কমপক্ষে উজু করে ইহরামের কাপড় পড়িধান করে টুপি পরে দুরাকাআত ইহরামের নামায আদায় করবে। নামায শেষে টুপি খুলে হজ্জের নিয়ত করবে। নিয়ত শেষে অন্তত তিন বার আওয়াজ করে তালবিয়াহ পাঠ করবে। ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকবে। তালবিয়াহ এই --i. لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ ii. لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ iii. اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ iv. لاَ شَرِيْكَ لَكَ 


তাওয়াফ করা: অতঃপর মক্কা মুকরারমায় পৌঁছে মসজিদে প্রবেশের সুন্নত অনুযায়ী মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে তাওয়াফের স্থানে গিয়ে প্রথমে তাওয়াফে কুদুম সম্পূর্ণ করবে। তাওয়াফের সংক্ষিপ্ত নিয়ম উমরার বয়ান থেকে দেখে নিন। ৭ চক্করে তাওয়াফ সম্পন্ন করে মাতাফের নিকটি গিয়ে মাকামে ইবরাহীমকে সামনে করে বা অন্য স্থানে ২ রাকাআত ওয়াজিবুত তাওয়াফ নামায এমনভাবে পড়বে, যেন তাওয়াফকারীদের সমস্যা না হয়। তারপর যমযমের পানি পান করবে, হজ্জের সায়ী এ তাওয়াফের পরই করার ইচ্ছা করলে উক্ত তাওয়াফে ইযতিবা ও ১ম তিন চক্করে রমল করতে হবে। উল্লেখ্য, ইফরাদ হজ্জ পালনকারীর জন্য তাওয়াফে কুদুমের পর মক্কায় অবস্থান কালে ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে সাধ্যমত বিরত থেকে বেশী বেশী নফল তাওয়াফ করার চেষ্টা করবে। উল্লেখ্য সব ধরনের তাওয়াফের পর দু’রাকাআত নামায পড়া ওয়াজিব। তাওয়াফ কালে তালবিয়াহ উচ্চস্বরে পাঠ করবে না এবং হাজরে আসওয়াদ সামনে করা ছাড়া বাইতুল্লাহ এর দিকে সীনা ও দৃষ্টি করা যাবে না। 




৮ই জিলহজ্বে করণীয়ঃ ৮ই জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা অভিমূখে রওয়ানা হওয়া সুন্নত। ঐ দিন মিনায় গিয়ে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং রাত্রি যাপন করে পর দিন ফজরের নামায সেখানে আদায় করা সুন্নাত। মুআল্লিমগণ সাধারণতঃ ৭ই জিলহজ্জ রাত্রেই হাজীদেরকে মিনার তাবুতে পৌঁছে দেয়। নতুন লোকদের জন্য পেরেশানী থেকে বাঁচার জন্য অগ্রিম যাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। ৮ তারিখ জোহরের পূ্র্বেই মিনায় পৌঁছতে হবে। এবং অতি সংক্ষিপ্ত জরুরী সামান-বিছানা এবং পরিধেয় কাপড় নিতে হবে এবং কয়েক দিনের খাবারের জন্য মুয়াল্লিমের নিকট টাকা জমা দেয়াটাই সহজ উপায়। আর মিনাতেও খানা-পিনা কিনে খাবার ব্যবস্থা আছে।

৯ই জিলহজ্জে করণীয়ঃ উকূফে আরাফা (ফরয): ঐদিন ফজরের নামায যথা সময়ে আদায় করে (পুরুষগণ আওয়াজ করে, এবং মহিলাগণ নীরবে ১ বার) তাকবীরে তাশরীফ পড়ে নিবে। নাস্তা ইত্যাদির জুরুত শেষে সূয উঠার পর তালবিয়া পড়তে পড়তে আরাফা অভিমুখে রওয়ানা হতে হবে। আরাফায় পৌঁছে মুয়াল্লিমের তাবুতে উকুফ করতে হবে, তাবুতে না থাকলে আরাফায় নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে অবস্থান করবে। সংক্ষেপে উকুফের পদ্ধতিঃ এই ময়দানে পৌঁছে সেখানে আউয়াল ওয়াক্তে যোহরের নামায পড়ে দাড়িয়ে, আর কষ্ট হলে বসে দু’আ-কালাম-তাসবীহ-তাহলীল পড়তে থাকবে। তারপর হানাফী মাযহাব মতে আসরের সময় হলে আসর নামায পড়ে সূয সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়া পযন্ত পূর্বের নিয়মে দু’আ ও যিকিরে মশগুল থাকবে। অন্য আযান শুনে কোন অবস্থায় আসরের ওয়াক্তের পূর্বে আসর পড়বে না। আরাফার ময়দানে এই অবস্থানকে ‘উকুফে আরাফা’ বলা হয়। সূয সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়ার পরে এখানে বা রাস্তায় মাগরিব না পড়ে তালবিয়াহ পড়তে পড়তে মুআল্লিমের গাড়ীতে করে মুযদালিফায় রওয়ানা হবে যাবে। 


মুযদালিফায় রাতে অবস্থান করা (ওয়াজিব): মুযদালিফা ময়দানে পৌঁছে ইশার ওয়াক্ত হওয়ার পর এক আযান ও এক ইকামতে প্রথমে মাগরিব ও পরে ইশার ফরয নামায আদায় করতে হবে। তারপর সুন্নাত, নফল ও বিতির পড়বে। অতঃপর মুযদালিফার খোলা ময়দানে রাতে অবস্থান করতে হবে। আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের নামায পড়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পযন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করে তাসবিহ-তাহলীল যিকির ও দুআয় মশগুল থাকবে। এ সময় অবস্থান করাকে “উকুফে মুযদালিফা” বলে। এখান থেকে ৪৯ টি পাথর কণা সঙ্গে নিবে। সূয উঠার কিছুক্ষণ পূর্বেই তালবিয়া পড়তে পড়তে মিনার উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে রওয়ানা হয়ে যাবে।১০ই জিলহজ্ব করণীয়ঃ রমী করা জামরায়ে উকবা তথা বড় শয়তানকে কংকর মারা (ওয়াজিব): মিনায় পৌঁছে জরুরত সেরে এই দিন শুধুমাত্র জামরায়ে উকবায় তথা বড় শয়তানের স্থানে রমী করার জন্য ভীড় আজকাল সাধারণত আসরের নামাযের পূর্বে ভীড় কমে না। এ জন্য আউয়াল ওয়াক্তে আসর পড়ে বা প্রয়োজনে আরো পরে বড় শয়তারে বেষ্টনির মধ্যে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবে। এইটাকেই রমী করা বলা হয়। উল্লেখ্য, ১০ই জিলহজ্ব বড় শয়তানের নিকট পৌঁছে প্রথম কংকর নিক্ষেপের পূর্বক্ষণেই তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিবে।



কুরবানী করা (মুস্তহাব): রমী শেষে সময় থাকলে এদিন অন্যথায় পরের দিন পশু বাজারে গিয়ে বা আমানতদার কাউকে পাঠিয়ে কুরবানী করবে। হজ্বে ইফরাদ পালনকারীর জন্য কুবানী করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। সুতরাং তাওফীক থাকলে কুরবানী করতে চেষ্টা করবে।হালাল হওয়া (ওয়াজিব): বড় শয়তানকে কংকর মারার পরে এবং কুরবানী করলে কুরবানী শেষে মাথা মুন্ডাতে বা চুল ছাটতে হবে এবং এর মাধ্যমেই মুহরিম হজ্বের ইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেল। হালাল হওয়ার সময় চেহারার নূর দাড়ী কোন ক্রমেই মুন্ডাবেন না। যাদের এখনো দাঁড়ি রাখার সৌভাগ্য হয়নি তারা পূর্বেই এ ব্যাপারে পাক্কা নিয়ত করে নিবেন। যাতে করে দাঁড়ি নিয়ে রওজা শরীফ যিয়ারত করতে পারেন।তাওয়াফে যিয়ারত (ফরয) ও সায়ী করা (ওয়াজিব): হালাল হওয়া তথা ইহরাম মুক্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক পোষাকে বাইতুল্লাহ গিয়ে দাওয়াফে যিয়ারত করা ও সাফা-মারওয়াতে সায়ী করা। ১০ থেকে ১২ জিলহজ্ব সূয ডোবার পূর্বে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পূর্ণ করতে হবে। তাওয়াফে কুদূমের পরে হজ্বের সায়ী না করে থাকলে এই তাওয়াফের পরে সাফা-মারওয়াতে সায়ী করতে হবে। সায়ী করার তরীকা উমরা এর বর্ণনায় দেখে নিন। সায়ীর পরে দুরাকাআত নামায পড়বে। এরপর মিনা ফিরে আসবে। 




১১, ১২ ও ১৩ই জিলহজ্বের করণীয়:তিন জামরায় কংকর মারা ওয়াজিবঃ ১১ ও ১২ জিলহজ্ব ভীড় থেকে বাঁচার জন্য বাদ আসর প্রথমে ছোট, পরে মাঝারী সবশেষে বড় জামরার বেষ্টনির মধ্যে ৭টি করে কংকর মারবে। এ কয়দিন মিনায় রাত যাপন করা সুন্নাত। উল্লেখ্য, ১২ই জিলহজ্ব ৩ জামরায় কংকর মেরে কেউ মক্কা চলে গেলে কোন অসুবিধা নাই। তবে বিশেষ জরুরত না থাকলে ১৩ই জিলহজ্ব বিকাল ৩টার দিকে পর্যায় ক্রমে তিন মাজরায় কংকর মেরে মক্কায় যাওয়া উত্তম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৩ জিলহজ্ব কংকর মেরে মক্কা গিয়েছিলেন। ১৩ জিলহজ্ব আসর পযন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। তাওয়াফে বিদা (ওয়াজিব): যখন মক্কা শরীফ থেকে চলে আসার সময় হয় তখন শান্ত ভাবে কয়েক ঘন্টা পূর্বে স্বাভাবিক পোষাকে বাইতুল্লাহ শরীফে এসে ৭ চক্কর তাওয়াফ সম্পন্ন করবে। তারপর ওয়াজিবুত্ তাওয়াফ দু’রাকাত নামায পড়ে যমযমের পানি পান করে আবারও বাইতুল্লাহ যিয়ারতের তাওফীক লাভের জন্য মনে প্রাণে দু’আ করা অবস্থায় চলে আসবে। ইহাকে “তাওয়াফে বিদ” বলা হয়। এ তাওয়াফের মধ্যে ইযতিবা ও রমল নেই 


এবং পরে কোন সায়ী নেই, উল্লেখ্য প্রতিবার মসুজদে হারামে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সুন্নাতের প্রতি খেয়াল রাখবে। হজ্জে কিরানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাআর যারা হজ্জে কিরান করতে চান তারা মীকান থেকে বা তার পূর্ব হতে একত্রে উমরা ও হজ্জের নিয়ত করে ইহরাম বাধঁবেন। তারপর তার উমরাহ শেষে ইহরাম অবস্থায় থাকবেন। তারা উমরাহ করে হালাল হতে পারবেন না। হজ্জে সকল কাজ সম্পন্ন করে পূর্বে বর্ণিত নিয়মে মাথা মুন্ডিয়ে হজ্জ্ব থেকে হালাল হওয়ার সময় হজ্জ্ব ও উমরার উভয় ইহরাম থেকে হালাল হওয় যাবে। উল্লেখ্য, কিরান ও তামাত্তু হ্জ্বকারীর জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব এবং তাদের জন্য মাথা মুন্ডানোর পূর্বেই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ব্যাংকের ওয়াদাকৃত সময় সাধারণত ঠিক থাকে না সে জন্য হালাল হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ জন্য তামাত্তু ও কিরানকারীরা কোনো অবস্থায় ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানী করবে না। 

মহিলাদের হজ্জের পার্থক্যমহিলাগণ স্বাভাবিক পোষাকেই ইহরাম বাধবে এবং মাথা ঢেকে নিবে চেহারা খোলা রাখবে না বরং চেহারার পর্দা করবে এবং এমনভাবে নেকাব লাগাবে যেন চেহারার সাথে কাপড় লেগে না থাকে। তালবিয়াহ নিম্ন আওয়াজে পড়বে। তাওয়াফের মধ্যে ইযতিবা ও রমল করবে না। সায়ীতে সবুজ বাতিদ্বয়ের মাঝে স্বাভাবিক চলবে। চুলের আগা থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটে হালাল হবে। পুরুষদের থেকে পৃথক হয়ে মাতাফের কিনারা দিয়ে বা ছাদে গিয়ে তাওয়াফ করবে। হায়েয অবস্থায় তাওয়াফ করবে না, মক্কা বা মদীদার অবস্থান গৃহে আদায় করবে, এত সাওয়াব বেশী হবে। মক্কা শরীফে শুধু তাওয়াফের জন্য এবং মদীনা শরীফে নিদিষ্ট সময়ে শুধু রওজা যিয়ারতের জন্য মসজিদে যাবে। 

  http://www.darsemansoor.org/public/home.php


 

মহিলাদের করনীয় কাজ ,বর্জনীয় অভ্যাস

মহিলাদের করনীয় কাজ

১.ঈমান-আক্বীদা পরিশুদ্ধ করা।
২.ইবাদত বন্দেগী সুন্নাত তরীকায় করা।
৩.স্বামীর খেদমত করা।
৪.স্বামীর বৈধ হুকুম মান্য করা।
৫.স্বামীর মালের হেফাযত করা।
৬.নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে পর্দায় রাখা।
৭.সন্তান লালন-পালন ও দ্বীনী শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়া।
৮.মহিলাদের মধ্যে দ্বীনী দাওয়াত পেশ করা ও দ্বীনের জরুরী কথার তালীম করা।

বর্জনীয় অভ্যাস

. জরুরী আকায়িদ, ইবাদত, সহীহ কুরআন তিলাওয়াত , পিতা-মাতা, স্বামীর হক ও সন্তানের হক সম্পর্কে ইলম হাসিল করে না, অথচ জরুরত পরিমাণ ইলম অর্জন করা ফরয।

২. সময়ের পাবন্দি করে না।

৩. দুই তিন জন একত্রিত হলে অন্যের দোষ চর্চায় লিপ্ত হয়।

৪. আপোসে সালাম দেয়ার অভ্যাস খুবই কম।

                      
                        ৫. চোগলখুরি তথা একের কথা অন্যের কাছে লাগনো অনেক মেয়েদের একটা বদ অভ্যাস।

৬. সাধারণত মেয়েদের মধ্যে নিজেকে প্রদর্শনের মানসিকতা অধিক লক্ষ্য করা যায়।

৭. বর্তমান মেয়েরা সাজ-সজ্জার নামে অনেক নাজায়িয ও হারাম কাজ করে থাকে। 
 ৮. মেয়েদের জন্য সমস্ত শরীর আবৃতকারী মোটা কাপড়ের এমন ঢিলেঢালা পোষাক পরা জরুরী যাতে করে শরীরের রং, ভাজ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকার আকৃতি বোঝা না যায় ।

৯. অনেক মেয়েরা বাহিরে পর্দা করে বের হলেও পরিবারিক জীবনে পর্দার ধার ধারে না।

১০. অনেকে বোরকা পরিধান করে কিন্তু চেহারা খোলা রাখে অথচ চেহারা সকল সৌন্দর্যের সমষ্টি; চেহারা আবৃত করা জরুরী। 
   ১১. কোথাও কোন প্রয়োজনে যেতে হলে, অযথা ঘোরাঘুরি করে যাত্রা বিলম্ব করে ।

১২. হাতে টাকা থাকুক বা না থাকুক, কোন কিছু পছন্দ হলে তা অপ্রয়োজনীয় হলেও কিনতে হবে।

১৩. কেউ কোন উপকার করলে তার শুকরিয়া আদায় করে না। বিশেষত: ঘরের বউ-ঝিরা প্রশংসার যোগ্য কোন কাজ করলেও শাশুড়ি কিংবা ননদরা তার শুকরিয়া আদায় করে না।
১৪. শাশুড়িরা অনেক সময় পুত্রবধূদের কাজের মেয়ের মত মনে করে, কখনোই নিজের মেয়ের মত মনে করতে পারে না।

১৫. পুত্রবধূরাও শাশুড়িদেরকে নিজ মায়ের মত ভাবতে পারে না। শাশুড়িকে তার প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান থেকে বঞ্চিত করে।

১৬. স্ত্রীরা স্বামীর ইহসান তথা দয়া ও অনুগ্রহ স্বীকার করতে চায় না।
 ১৭. স্বামীর স্ত্রীর জন্য পছন্দ করে কোন জিনিস আনল, কিন্তু ঘটনাক্রমে স্ত্রীর তা পছন্দ হল না, তখন স্ত্রী স্বামীর মুখের উপর বলে দেয় আমার এটা পছন্দ হয়নি; আমি এটা পরবও না ছুইবও না।

১৮. অনেক সময় টাকা, গহনা ইত্যাদি মূল্যবান জিনিস বালিশের নিচে বা খোলা যায়গায় রেখে দেয়, পরে হারিয়ে গেলে পরিবারের নিরাপরাধ লোকদের দোষারোপ করতে থাকে। যা মারাত্বক গুনাহ।
১৯. মহিলাদের মধ্যে কর্মতৎপরতা ও দূরদর্শিতার বেশ অভাব রয়েছে ; ব্যস্ততার সময়ে কোন কাজ তারা ঝটপট করতে পারে না; গতিমন্থরতা যেন তাদের একটা অংশ।

২০. দুই ব্যক্তি কোন বিষয়ে আলাপ করতে থাকলে অনেক মহিলা অযাচিতভাবে সেই কথায় অংশগ্রহণ করে এবং পরামর্শ দিতে থাকে।
২১. কোন কোন মহিলা মেয়েমহল থেকে এসে অন্য মহিলাদের অলংকার, শারীরিক গঠন, রূপ, পোশাক ইত্যাদির বর্ণনা নিজ স্বামীর কাছে করে থাকে।

২২. কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে সে যত জরুরী কথা বা কাজেই লিপ্ত থাকুক না কেন সে দিকে খেয়াল না করে সে নিজের কথা বলবেই, ঐব্যক্তির কাজ বা কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করে না।
২৩. কেউ কিছু বললে পূর্ণ মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শোনে না; এর মাঝে অন্য কাজ করতে থাকে বা ফাঁকে ফাঁকে কারো কথার উত্তর দিতে থাকে

২৪. নিজের ভুল-ত্রুটি পূর্ণ মনোযোগ করতে চায় না। বরং যথাসম্ভব কথার ফুলঝুরি দিয়ে দোষ চাপা দিতে চায়; চাই তার কথার মধ্যে যুক্তি থাক বা না থাক।
২৫. কোন কথা বা সংবাদ বলতে গেলে অসম্পূর্ণ বলে থাকে, যদ্দরুন ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং আসল কাজ ব্যাহত হয়।

২৬. এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার বা আসার সময় অনেক মহিলা অবশ্যই একটু কাঁদবে।

২৭. অলসতাবশত: ফরয গোসল করতে দেরি করা মেয়েদের একটা চিরাচরিত অভ্যাস।


২৮. বর্তমান আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতা মেয়েরা উযু গোসল সম্পর্কীয় মাসআলা মাসায়েল ও জানে না।

২৯. অনেক বোকা মহিলা স্বামীর কর্মস্থান থেকে ফেরার সাথে সাথে তাকে শান্তি পৌঁছানোর পরিবর্তে, তার কানে সংসারের কলহ বিবাদের কথা পৌঁছায়।
৩০. অনেক ননদ ভাই বৌদের সহ্য করতে পারে না, এমনিভাবে আনেক ভাই বৌ ননদদের সহ্য করতে পারে না।

৩১. অনেক মেয়েলোক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যপারে উদাসীন থাকে।

৩২. কোন সন্তানকে হয়ত বেশী মহব্বত করে তার জন্য অনেক কিছু করে , এমনকি তার দোষ সহ্য করতে চায় না।
৩৩. অনেক মহিলা রোগ শোক চাপা দিয়ে রাখে, কাউকে বলে না।

৩৪. অনেক শিক্ষিতা মহিলা স্বামীর ঘরে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করার চেয়ে বাইরে গিয়ে চাকুরী করাকে বেশি পছন্দ করে।

শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কাবা ঘরের স্বচিত্র ইতিহাস।সংক্ষেপ


মুসলমানদের কেবলা কাবা শরিফ। এ কাবা শরিফ মহান আল্লাহতালার এক অপূর্ব সৃষ্টি। প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তাওয়াফ করতে মক্কা গমন করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদত গা রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ওই ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত।’ কাবাঘরটি আল্লাহর আরশে মুয়াল্লাহর ছায়াতলে সোজাসুজি বায়তুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করেন। হজরত আদম আঃ ও হজরত হাওয়া আঃ-এর পৃথিবীতে মিলন হলে তারা উভয় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ হজরত আদম আঃ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বায়তুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হজরত আদম আঃ সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকেন (শোয়াব-উল-ঈমান, হাদিসগ্রন্থ) অনেক তফসিরবিদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আল্লাহতায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন। তফসিরবিদ মুজাহিদ বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বায়তুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন।’ মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হজরত আবুজর গিফারি হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল সাঃ তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন,



‘বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এর পরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণের ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়।’
হজরত আদম আঃ কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করত, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিত এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত।


‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়’মাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লাশারিকা, লাকা লাব্বাইক।’

 

এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকল। এরপর হজরত শিষ আঃ কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করলেন। দিন দিন একাত্মবাদের সংখ্যা বাড়তে থাকল। এরপর কাবা শরিফ নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন হজরত ইব্রাহীম আঃ। হজরত ইব্রাহীম আঃ হজরত ইসমাঈল আঃ-কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন। হজরত ইব্রাহীম আঃ কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ করো। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো, আমাদের হজের রীতি-নীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমাদের আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চই তুমি মহাপরাক্রমশালী।’ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হজরত ইব্রাহীম আঃ ও হজরত ইসমাঈল আঃ-এর বংশ হতে হজরত মুহম্মদ সাঃ-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসেবে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন,

 

 এরপর কয়েক শ’ বছর গত হলো। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করল আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরো শ’ শ’ বছর কিংবা হাজার হাজার বছর পরে কাবাঘর সংস্কার করল মক্কার জুরহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যেসব গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকত কাবা শরিফ রক্ষণাবেক্ষণের। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানিত ও গর্বের মনে করত। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। কাবা শরিফ ও কাবাঘরকে সংস্কার করলেন মোজার সম্প্রদায়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কোরাইশ বংশেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ ৫৭০ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন। কোরাইশরা কাবা শরিফ সংস্কারের পর হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়।


সবার সম্মতিক্রমে আল্লাহর রাসূল কাবাগৃহে হাজরে আসওয়াদ কাবা শরিফে স্থাপন করেন। ৬৪ হিজরিতে আব্দুল্লাহ ইবনে জোবায়ের রাঃ কাবা শরিফ সংস্কার করেন।

 হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরিতে কাবা শরিফ সংস্কার করেন। সুদীর্ঘ ১৪শ’বছরে কাবাগৃহে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি।


শুধু কাবাঘরের চার পাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন,সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।


বর্তমানে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরিফের মোতোয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন। ভৌগোলিক দিক দিয়ে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত।
মক্কা নগরীর পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের মধ্যস্থানে হওয়ায় মহান আল্লাহ কাবাঘর মক্কাতেই স্থাপন করেন। পবিত্র হজ পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরিফে গমন করেন। জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মূল হজ অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহার দিন। এ দিন কোরবানি দিতে হয়। যা হজরত ইব্রাহীম আঃ-এর ও হজরত ইসমাঈল আঃ-এ স্মৃতি বহন করে চলছে হাজার হাজার বছর ধরে।


জমজম কূপও ঠিক তেমনি হজরত ইসমাঈল আঃ ও তাঁর মা বিবি হাজেরা আঃ-এর স্মৃতি বহন করে চলছে। এ জমজম কূপ মহান আল্লাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হজ মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আল্লাহ নিজে। বিশ্ব মুসলমানদের মিলন মেলা ঘটে হজের মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরিফে।

বিভিন্ন সময়ে কাবা ঘরের দৃশ্যঃ
১। উপরের গিলাপ ছাড়া কাবা ঘরের ছবিঃ


২। কাবা ঘরের ভিতরের আর্কিটেকচার ডিজাইনঃ

৩।কাবার গিলামে এরাবিক ক্যালিও গ্রাফি করার ছবিঃ


৫। কাবাঘরে গিলাপ পরানোর দৃশ্যঃ


৬। পুরানো সময়ের কাবাঘরের ছবিঃ

৭।পুরাতন মাকাম এ ইব্রাহিমঃ


৮।নতুন মাকাম এ ইব্রাহিমঃ


৯। মাকাম এ ইব্রাহিমের ভেতরে সংরক্ষিত ইব্রাহিম আঃ এর পায়ের ছাপঃ

১০।মসজিদে হারাম এর রাতের দৃশ্যঃ


বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আহলে হাদীস বনাম ওহহাবী ও মুহামমদী //আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত

আহলে হাদীস বনাম ওহহাবী ও মুহামমদী

           ******************************
দ্বাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত আলিম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদী (রহঃ) (মৃতঃ ১২০৬ হিঃ) মূলত হাম্বলী মায্হাবেরই মুক্বাল্লিদ্ ছিলেন। তৎকালীন সৌদি আরবে বিশেষত নজ্দে শিরক্, বিদয়া, কবরপূজা, মাযারপূজা, গাছপূজা, আগুনপূজা প্রতিমা-মানব ইত্যাদি পূজা-উপাসনার মোকাবিলা প্রতিরোধে তার কার্যকরী, সাহসী বীরবিক্রম পদক্ষেপ আসলেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশংসার দাবী রাখে। তাঁরই অবদানে তদানীন্তন আরব মধ্যযুগীয় বর্বরতা, সীমাহীন ভ্রষ্টতা শিরক কুফরের অতুলনীয় অন্ধকারাচ্ছন্নতা থেকে রেহাই পেয়েছে।
তবে অনেক বিষয়ে নিষ্প্রয়োজনীয় বাড়াবাড়ির ফলে তাঁর সঙ্গে তদানীন্তন সউদী আলেম উলামাদের  মহামতানৈক্য সৃষ্টি হয়। তিনিই মহানবী (সঃ) এর রওজার উপর বিস্তৃত গম্বুজটি ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা করেন এবং ভিন্ন মতাবল্মীদেরকে পবিত্র হজ্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তাদেরকে কাফির, মুশরিক ইত্যাদি জঘন্যতম আখ্যায় আখ্যায়িত করতে থাকেন। ফলে ভয়াবহ ফিৎনা-ফাসাদ বিশ্ব মুসলিম সমাজে পারস্পরিক কোন্দলের সূচনা হয়। পক্ষান্তরে যারা তার মতবাদের তাক্বলীদ করতে থাকে তাদেরকে মুসলমানগণ ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন। এদিকে ভারতবর্ষের লা-মায্হাবীরাও যেহেতু নিছক ঝগড়া-বিবাদ মুসলমানদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদীর অন্তঃসারশূণ্য বিচিত্র মতবাদ গ্রহণ করে যেত, তাই তাদেরকেও মুসলমানগণ ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন।   আর তারা নিজেদেরকে মুহাম্মদী  , আহলে হাদীস বলে প্রচারের চেষ্টায় মেতে উঠে    বতমান অন্য সকল নাম বাদ দিয়ে  আহলে হাদীস আন্দোলন নামের ব্যানারে নিজেদের  কে প্রকাশ করছে ৷   এবং এ নামটি মূলত ইংরেজ কতৃক সীকৃত যা পরে আলোচনায় আসবে ,  সাথে একটি কথা সাধারনের জ্ঞাতাথে  বলে রাখি বাংলাদেশের কোন কোন স্হানে দেওবন্দী ওলামাদের কে ওহহাবী বলে তিরস্কার করতে দেখা যায় কিন্তু দেওবন্দী ওলামাদের সাথে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদীর সাথে কোন সমপকই নেই , কারন একেতো তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী আর সকল দেওবন্দী ওলামাগন হানাফী মাযহাব এর অনূসারী , তিনি হলেন লামাযহাবী গায়রেমোকল্লিদদের ইমাম , দেওবন্দীদের ইমাম নয় দেওবন্দীগন সঠিক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর অনুসারী
 
 
উক্ত নামটি গ্রহণ করা হয়েছে রাসূল স. এর একটি হাদীসের সরাসরি শব্দ থেকে, তা হলো:-
ان بني اسرائيل تفرقت علي ثنتين وسبعين ملة وتتفرق امتي علي ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار الا واحدة قالوا من هي يارسول الله قال ما انا عليه واصحابي (رواه الترمذي)
অর্থাৎ “বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিলো এবং আমার উম্মত তিয়...
াত্তর দলে বিভক্ত হবে। তারমধ্যে একটি দল ছাড়া সবই জাহান্নামী।(উপস্থিত সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ দলটির পরিচয় কী? উত্তরে রাসূল স. বললেন: যারা আমার “সুন্নাত ও আমার সাহাবাগণের মতাদর্শে অটল থাকবে”।
দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক নন্দিত মুহতামিম হাকীমুল ইসলাম কারী তৈয়ব রহ. তার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘আকীদাতু তহাবী’র ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন-
وفي رواية احمد وابي داؤد : وهي الجماعة وفي رواية من كان علي السنة والجماعة ففيه اشارة الي أن لقب اهل الحق باهل السنة والجماعة مأخوذ من قول النبي صلي الله عليه وسلم........وهذا اللقب مركب من جزئين منهاج السنة المراد من ما,والذوات القدسية المراد من الجماعة , فمعيار الحق السنة واهلها لا احدهما فقط......فالسنة و اهلها متلازمان .....
(عقيدة الطحاوي مع الحواشي)
অর্থাৎ- উক্ত হাদীসের শেষাংশে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় উল্লেখ আছে: ‘জান্নাতী দলটিই হচ্ছে জামা‘আত। অন্য বিবরণে উল্লেখ আছে, যারা সুন্নাত এবং জামা‘আতের উপর প্রতিষ্ঠিত’ তারাই জান্নাতী দল। সুতরাং এ বিবরণ মতে রাসূলের হাদিসের মর্মই শুধু ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ নামের উৎস নয় বরং হাদীসের সরাসরি শব্দ থেকেই এ নাম গৃহীত। এ নামের দু’টি অংশ রয়েছে, প্রথমাংশ হচ্ছে সুন্নাতের পথ বা তরিকা। যা আলোচ্য হাদীসে “ما” শব্দটির মর্ম । আর দ্বিতীয়াংশ হচ্ছে সাহাবাগণের পবিত্র আত্মাসমুহ যা “الجماعة” এর মর্ম। সুতরাং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সত্যপন্থী দলটির মানদণ্ড বা মাপকাঠি একটি নয়;বরং দু’টি। রাসূলের সুন্নাত ও সুন্নাতের অনুসারী সাহাবাগণের জামা‘আত। তাই সুন্নাত এবং জামা‘আত একটি অপরটি থেকে অবিচ্ছেদ্য ।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেলো, রাসুল স.এর প্রসিদ্ধ একটি হাদীসের ভিত্তিতে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” এর নামকরণ করা হয়েছে।
ইসলামী আকীদার ইমামগণও ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আত’এর নামকরণের কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে,রাসূল স.এর সুন্নাত ও সাহাবাগণের জামা‘আত দ্বারা যেসব আকীদা-বিশ্বাস প্রমাণিত, তার উপর যারা অটল থাকবে তারাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” বলে অভিহিত হবে।
এ মর্মে ‘শরহে আকাইদে নাসাফী’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, ماورد به السنة ومضي عليه الجماعة فسموا اهل السنة والجماعة- “রাসূলের সুন্নাত ও সাহাবায়ে কেরামের জামা‘আত দ্বারা প্রমাণিত আকীদায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই দলটি “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” নামে অভিহিত হয়েছে