Translate

রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩

শবে বরাত কি? নাম করন , করনীয় বজনীয়

শবে বরাত কি?
 ...................
ইসলামী আক্বীদা ও বিশ্বাস মতে বছরের প্রতিটি মাস, সপ্তাহ, দিন, ঘন্টা ও সেকেন্ড মানুষের জন্য কল্যাণকর। কোনো সময়ের ব্যাপারে অকল্যাণ ও অশুভ হওয়ার ধারণা করা ইসলামী আক্বীদা বিরোধী। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, কোনো সময় কিংবা জামানাকে অশুভ ও অকল্যাণকর মনে করবে না। অকল্যাণকর মনে করার অর্থই হলো, আল্লাহ পাক কে অকল্যাণকর মনের করা। বরকত ও মর্যাদার দিক থেকে এ ধরণের শ্রেষ্ঠত্বের কথা কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে উম্মতকে জানানো হয়েছে। যে সকল রাতেরে মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষত্বের কথা কুরআন শরীফে এসেছে, তা হলো- শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর ও দুই ঈদের রাত্রি।


শবে বরাত কুরআনের ভাষায় লাইলাতুল মুবারক, হাদিসের ভাষায় লাইলাতুল বারাত ও সাধারণ মুসলামদের মাঝে শবে বরাত নামে প্রশিদ্ধ।

 আরবী ভাষায় বরাত অর্থ নাজাত ও মুক্তি। আর এই রাতটি এমন, যার মধ্যে আল্লাহ পাক অগণিত/অসংখ্য মানুষের গুনাহ খাতা ক্ষমা করে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দান করেন। এ জন্য রাত্রটির নামকরণ করা হয়েছে লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত।

 তা ছাড়া এ রাত্রিতেে মানুষের প্রয়োজনীয় এক বৎসরের বিষয়াদীর ফয়সালা করা হয়। আর এ রাতটি শা’বানের পনেরতম রাত যা চৌদ্দ তারিখ সূর্য্যাস্ত যাওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত বাকি থাকে। এ রাতটি ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযাহর ন্যায় খুশি উদযাপনের রাত নয়।


ইসলামী শরীয়তে এর পর্যায় এতটুকুই যে, এটা একটি মোবারক ও বরকতপূর্ণ রজনী। এ রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য রাতের তুলনায় অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকতেন। মৃত: ব্যক্তিদের ইসালে সাওয়াবের জন্য কবরস্থানে তাশরীফ নিয়ে যেতেন। আর এর পরের দিন রোযা রাখতেন। এ হলো শবে বরাত পালনের মূল পদ্ধতি যে, এ রজনীকে বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী করবে। স্বীয় গুনাহ খাতার জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং কবরস্থানের গিয়ে সুন্নাত ত্বরীক্বা মতে নিজের মাতা-পিতা, আত্মীয় স্বজন এবং সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর পরের দিন রোযা রাখবে। (তবে এসকল কাজকে অতি জরুরী মনে করা যাবেনা। এটি যার যার ব্যক্তিগত তাকওয়ার ব্যাপার। আর দল বেঁধে কবস্থানে যাবেনা বা একে জরুরী মনে করবেনা)


শবে বরাতের রাতে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের আগমন
................................................................................
হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, শা’বান মাসের ১৫ পনের তারিখ দিনগত রাতে জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমার নিকট এসে বললো- হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি আসমানের দিকে তাকান। নবীজি বলেন, আমি আসমানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, আসমানের সব ক’টি দরজা উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
 প্রথম দরজায় দাঁড়িয়ে এক ফিরিস্তা ঘোষনা দিচ্ছে, যে ব্যক্তি এ রাতে রুকু করবে সে অনেক ভাগ্যবান হবে।
 দ্বিতীয় দরজায় দাঁড়িয়ে আরেক ফিরিস্তা ঘোষনা দিচ্ছে, যে ব্যক্তি এ রাতে সিজদা করবে সেও অনেক ভাগ্যবান হবে।
 তৃতীয় দরজায় দাঁড়িয়ে আরেক ফিরিস্তা ঘোষনা দিচ্ছে, যে ব্যক্তি এ রাতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দু’আ করবে সেও অনেক ভাগ্যবান হবে।
 চতুর্থ দরজায় দাঁড়িয়ে আরেক ফিরিস্তা ঘোষনা দিচ্ছে, যে ব্যক্তি এ রাতে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবে সেও অনেক ভাগ্যবান হবে।
 পঞ্চম দরজায় দাঁড়িয়ে আরেক ফিরিস্তা ঘোষনা দিচ্ছে, যে ব্যক্তি এ রাতে আল্লাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি করবে সেও অনেক ভাগ্যবান হবে।
 ষষ্ঠ দরজায় দাঁড়িয়ে অন্য এক ফিরিস্তা ঘোষনা দিচ্ছে, আজকে সকল মুসলমান মুমিনের জন্যে সৌভাগ্য।
 সপ্তম দরজায় দাঁড়িয়ে আরেক ফিরিস্তা ঘোষনা দিচ্ছে, আছে কি আল্লাহর নিকট চাওয়ার মতো কোনো বান্দা? সে যা চাইবে তাকে তা দেয়া হবে এবং
 অষ্টম দরজায় দাঁড়িয়ে আরেক ফিরিস্তা ঘোষনা দিচ্ছে, আজকে যে বান্দা আল্লাহর নিকট স্বীয় গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি জিবরাইল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আসমানের এ দরজাগুলো কখন পর্যন্ত খোলা থাকবে। উত্তরে তিনি বললেন, রাত্রির প্রথম প্রহর থেকে সকাল হওয়া পর্যন্ত খোলা থাকবে। তার পর জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, হে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা এতো পরিমাণ বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যে পরিমাণ পশম কালব গ্রোত্রের বকরীর গায়ে রয়েছে। (গুনিয়াতুত তালেবীন : ৩৬২)
উল্লেখ্য : আরবে প্রত্যেক গোত্রেরই অধিক পরিমাণে বকরী থাকতো। কিন্তু বনূ কালবের সবচেয়ে বেশী বকরী ছিলো। এই সবগুলো বকরীর শরীরে যে পরিমাণ পশম রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তার থেকেও অধিক পরিমাণ বান্দাদেরকে মাফ করে দেন। এখানে মূলত সংখ্যাধিক্য বুঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ একটি বকরীর শরীরেই তো অনেক পশম থাকে, তাহলে সমস্ত বকরীগুলোর শরীরে কি পরিমাণ পশম থাকতে পারে? এতো অধিক পরিমাণে আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে মাফ করবেন।


্------------------------------------------
প্রসঙ্গ শবে বারাআতঃ একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••¥
ভূমিকা
 এই বিষয়টা সম্পর্কে কলম ধরার কোন ইচ্ছে ছিলনা। নফল ইবাদত নিয়ে অযথা বিতর্ক করা ঠিক নয়। যেখানে এদেশের নামের মুসলমানরা ফরয ছেড়ে দিচ্ছে অহরহ। হাজারো মুসলমান নাস্তিক হচ্ছে ধর্ম সম্পর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার কারণে। হাজারো মুসলমান কুরআনের আক্ষরিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। কেন একজন মুসলমান অন্য ধর্মাবলম্বী থেকে আলাদা তা’ই জানেনা কোটি মুসলমান। সেখানে নফল কোন আমল নিয়ে বিতর্ক করা মানে হল-ফরয সতর ঢেকে রাখা লুঙ্গি খুলে সুন্নত পাগড়ী মাথায় দেবার মত বোকামী আচরণ।


তারপরও যখন কতিপয় নামধারী আহলে হাদিস নামের হাদিস অস্বিকারকারীদের দাম্ভিকতাপূর্ণ আচরণ চলছে দেদার। নবীজী সাঃ থেকে প্রমাণিত একটি নফল আমলকে অস্বিকার করছে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করে। অপরদিকে রাজারবাগী, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, আর আটরশী, চন্দ্রপুরী ও মাইজভান্ডারীসহ বেদআতের ধ্বজাধারী নামধারী আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতসহ অসংখ্য মাজার -কবর এবং পীরপূজারীরা পবিত্র শবে বরাতের নামে হালুয়া রুটি আর সম্মিলিত ইবাদতের মত চূড়ান্ত পর্যায়ের হীন বেদআতি কর্ম করে যাচ্ছে ধর্ম বলে। তাই বিষয়টি সাধারণ মুসলমানদের সামনে পরিস্কার করার জন্য নিবন্ধ।


 শবে বারাআত কি?


“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরাআত এটি আরবী শব্দ। মূলত হল-براءت যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বারাআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত (برات) মানে হল বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব-শবে বারাআত( شب براءت)


শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”(ليلة النصف من شعبان) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত। কেউ কেউ “শবে বরাআত” নামে হাদিসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বিকার করার মত খোড়া যুক্তি দিয়ে থাকেন। তাদেরকে আমি বলি-আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক বলি কুরআন হাদিসে বর্ণিত নির্দেশের কারণে। কিন্তু কুরআন হাদিসের কোথাও কি নামায শব্দ আছে? তাওহীদ কে আমরা ঈমানের শর্ত বলি। কিন্তু কুরআন হাদীসের কোথাও তাওহীদ শব্দ নেই। তাই বলে কি তাওহীদ কুরআন হাদীস দিয়ে প্রমাণিত নয়? আমরা যাকে নামায বলি সেই অর্থবোধক কুরআন হাদিসের উদ্ধৃত শব্দ “সালাত”ই হল নামায। আমরা যাকে তাওহীদ বলি কুরআন হাদীসের একত্ববাদ প্রকাশক সকল শব্দই হল এ তওহীদ। তেমনি আমরা যাকে “শবে বারাআত” বলি তথা শাবানের পনের তারিখের রাত বলে থাকি এই অর্থবোধক শব্দ হাদিসে পাওয়া গেলে তা’ই হবে শবে বারাআত। আর এই অর্থবোধক হাদীসে বর্ণিত শব্দ হল “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”। সুতরাং তাই হল শবে বারাআত।
 হাদিসে শবে বারাআত

 কুরআনে শবে বারাআতের কোন উল্লেখ নাই। কুরআনে কেবল “লাইলাতুল কদর” তথা “শবে কদর” এর কথা উল্লেখ আছে। পবিত্র কুরআনের পঁচিশ নাম্বার পাড়ার সূরায়ে দুখানের ২ ও ৩ নং আয়াতে বর্ণিত মুবারক রজনী দ্বারা লাইলাতুল কদর তথা শবে কদর উদ্দেশ্য। শবে বারাআত নয়। এটাই বিশুদ্ধ বলেছেন গ্রহণযোগ্য মুফাসসিরীনে কেরাম। যার পক্ষে যুক্তিও শক্তিশালী। বিস্তারিত জানতে দেখুন-
১ আদ দুররুল মানসুর-৭/৪০১-৪০৭
 ২ তাফসীরে কাশশাফ-৪/২৭২
 ৩ তাফসীরে ইবনে কাসীর-৭/২৪৬


 ৪ তাফসীরে বাগাভী-৭/২২৭-২২৮


 বিভিন্ন হাদিসে শবে বারাআতের বর্ণনা এসেছে। যেমন-
عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )
হযরত আলী বিন আবু তালীব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। {সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২}
عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب
অনুবাদ-হযরত আয়শা রাঃ বলেন-এক রাতে রাসূল সাঃ কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রাঃ বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সাঃ তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯}

যেহেতু গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা এ রাতের ফযীলতকে অস্বিকার করে থাকেন। তাই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং অন্ধভাবে মান্যবর ব্যক্তিত্ব কথিত আহলে হাদিসদের ইমাম শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহঃ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আস সিলসিলাতুস সাহিহাহ আল মুজাল্লাদাতুল কামিলাহ” গ্রন্থে ৩ নং খন্ডে ১১৪৪ নং অধ্যায়ে ২১৮ নাম্বার পৃষ্ঠায় শবে বারাআত সম্পর্কে হাদিস এনে যে দীর্ঘ আলোচনা করে যে মত ব্যক্ত করেছেন তা তোলে ধরা হল-
عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن )
অনুবাদ-হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে]আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪}

আলবানী তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন। “এই হাদিসটি সহীহ” এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন # মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ # আবু সা’লাবা রাঃ # আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ # আবু মুসা আশয়ারী রাঃ # আবু হুরায়রা রাঃ # আবু বকর সিদ্দীক রাঃ # আউফ বিন মালিক রাঃ # আয়েশা রাঃ প্রমুখ সাহাবাগণ।
 উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-
و جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منها
 عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث ، فما نقله
 الشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في ” إصلاح المساجد ” ( ص ১০৭ ) عن أهل التعديل
 و التجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح ، فليس مما ينبغي
 الاعتماد عليه ، و لئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل
 التسرع و عدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك . و الله تعالى هو الموفق
অর্থাৎ “সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত “ইসলাহুল মাসাজিদ” গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, “শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে” সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া(ঘারতেড়া) স্বভাবের, আর তার ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম”।
শায়েখ আলবানী রহঃ এর বিশ্লেষণ থেকে একথা নির্ধিদ্ধায় আমরা বলতে পারি হাদিস দ্বারা শবে বারাআত প্রমাণিত।
 একটি প্রশ্ন ও জবাব
 অনেক গায়রে মুকাল্লিদ ভাই প্রশ্ন করে থাকেন যে, এ রাত ফযীলতপূর্ণ একথা ঠিক আছে। কিন্তু এ রাতে আমল করতে হবে একথাতো কোথাও নেই। তাই আমল করা জায়েজ হবে না। বেদআত হবে।
 জবাব
 বড়ই আশ্চর্য প্রকার বলে থাকেন তারা। যে সময় ফযীলতপূর্ণ, সে সময় ইবাদত করা নিষিদ্ধ। তাহলে সে সময় ফযীলতপূর্ণ হয়ে লাভ কি? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিভিন্ন সময়ের ফযীলতের কথা কেন বলেছেন? সে সময় নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকার জন্য? না ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করার জন্য?
শবে কদরের ফযীলত কেন বলা হয়েছে? নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর জন্য? তাহলেতো একথাও বলা যায় যে, শবে কদরের ফযীলত আছে। কিন্তু সে রাতে ইবাদত করা বিদআত। কারণ কোন নির্ধারিত ইবাদতের কথা এ রাতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়নি। এমন কথা বলাটি কি বোকামী হবে না?
ফযীলত বলা মানেই হল এ সময় ঘুমিয়ে না থেকে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার তাকীদ দিচ্ছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। ঘুমিয়ে থাকলে ফযীলত অর্জিত হবে কিভাবে?
এ রাতে করণীয়
 এ মহামান্বিত রাতে করার মত নির্দিষ্ট কোন আমল নেই। সবাই কোথাও একত্র হয়ে সম্মিলিত কোন আমলও নেই। উল্লেখিত হাদীসের আলোকে এ রাতের আমল হল-
১-ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা।
 ২-আড়ম্বরপূর্ণভাবে নয় স্বাভাবিকভাবে হলে কবর যিয়ারত করা।
 ৩-অনির্ধারিতভাবে নফল ইবাদত করা।
 ৪-পরদিন রোযা রাখা।
 এ রাতে বর্জনীয়
 ১ হালুয়া রুটির মত আনন্দ উল্লাসের আয়োজন। আল্লাহর কাছ থেকে মাফ পেতে হলে তার ইবাদত করতে হবে, খাওয়া দাওয়ার মধ্য দিয়ে ফুর্তি করার মাধ্যমে নয়
 ২ আতশবাজি করা, রং ছিটানো।
 ৩ সম্মিলিত কোন আমলকে এই রাতে আবশ্যকীয় মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত।
 হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করে দাও, যেন তা পালন করতে পারি, আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপিত করে দাও, যেন এ থেকে বিরত থাকতে পারি।
 সংকলক
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া

 

১৫ই শাবান : লাইলাতুল বরাত 1

১৫ই শাবান : লাইলাতুল বরাত

১৫ই শাবান অর্থাৎ ১৪ই শাবান দিবাগত রাত। হাদীস শরীফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ বলা হয়েছে। এর ব্যাপারে সঠিকও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোনো রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদতকরাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মত মনে করা এবং এ রাতের ফযীলতেরব্যাপারে যত হাদীস এসেছে তার সবগুলোকে ‘মওযূ’ বা ‘যয়ীফ’মনে করা যেমন ভুল তেমনি এ রাতকে শবে কদরের মত বা তারচেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও একটি ভিত্তিহীন ধারণা। বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি কোনটিই উচিত নয়। যতটুকু ফযীলত প্রমাণিত এ রাতকে ততটুকুইগুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং এ কেন্দ্রিক সকল রসম-রেওয়াজ পরিহার করা উচিত।

এ রাত ও তার আমল সম্পর্কে হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা নিম্নরূপ :

১.

عن مالك بن يخامر عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف منشعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن،رواه ابن حبان وغيره ورجاله ثقات وإسناده متصل على مذهب مسلم الذي هو مذهب الجمهور في المعنعن ولم يجزم الذهبي بأن مكحولا لم يلق مالك بن يخامر كما زعم وإنما قاله على سبيل الحسبان، راجع : سير أعلامالبلاء.

মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদকরেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।’’- সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়।কিন্তু শিরকী কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যেরব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপকরহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিববান একে ‘কিতাবুস সহীহ’এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিকদৃষ্টিকোণ থেকে ‘হাসান’ বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।

ইমাম মুনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাসতাল্লানী, যুরকানী এবংঅন্যান্য হাদীস বিশারদ এইহাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন,আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১১৮, ৩/৪৫৯;লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫; শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১

বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানীরাহ. ‘‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা’’ ৩/১৩৫-১৩৯-এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেন-

وجملة القول أن الحديث يمجموع هذه الطريق صحيح بلا ريب والصحة تثبت بأقلمنها عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث.

‘‘এ সব রেওয়ায়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়।’’ এরপর শায়খ আলবানী রাহ. ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেনযারা কোনো ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই।

২. ‘‘হযরত আলা ইবনুল হারিস রাহ. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবংএত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণাহল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলিনড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবাবলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমারহক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘসেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-

هذه ليلة النصف من شعبان إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.

‘‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’’-শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৩

ইমাম বাইহাকী রাহ. এই হাদীসটি বর্ণনারপর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন-

هذا مرسل جيد

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিতহয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামায পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওযীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাআত হতে হবে, প্রতি রাকাআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়, হাদীস শরীফে এসব নেই; এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়মঅনুযায়ী দুই রাকাআত করে যত রাকাআত সম্ভব হয় এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইসতেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমানোর প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমনযেননা হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতেফজরেরনামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না