মানুষের মহামূল্যবান বীর্য সংক্রান্ত অজানা তথ্য
বীর্যের যাবতীয় তথ্য -
আপনার বীর্যের গুনাগুন কি সঠিক আছে?
গড়পড়তা প্রতি বীর্যস্থলনে উত্পাদিত
বীর্যের পরিমান ২ থেকে ৫ মিঃলিঃ।
বীর্যের পরিমান এবং পুর্বের বীর্যপাতের সময় ব্যবধানের হিসাব অনুযায়ী বীর্যের ঘনত্বের
তারতম্য হিসাবে ১ বার বীর্যপাতে
২,৭০,১৬,৪০৯ টি শুক্রকীট বের হয় আসে। প্রতিবার বীর্যের সাথে।
(একেকবারের স্থলনে) শুক্রানুর
সংখ্যা ৪ (চার) কোটি থেকে ৬০
(ষাট) কোটি পর্যন্ত হতে পারে।
বীর্যে শতকরা ২০ ভাগ শুক্রানু জীবিত
না হলে সে পুরুষ বন্ধা ।পুরুষাঙ্গ
থেকে বীর্য নির্গত হবার গড়পড়তা
বেগ ঘন্টায় ২৮ কিলোমিটার। কিন্তু
এটা নারী যোনীতে প্রবেশের পর
গতি হ্রাস পায়।
মাত্র ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের যোনী নালী
অতিক্রম করতে শুক্রানুগুলোর ৫ মিনিট
সময় লাগে। এবং নারীর ডিম্ব খুজে
পেতে ৭২ ঘন্টারমত সময় ব্যায় হয়।
শুরুতেই বলে রাখি - বীর্য শুধুমাত্র
পুরুষের প্রজননতন্ত্র থেকে নির্গত হয়।
নারীর বীর্য বলে কোন কিছু নেই।
নারীর কখনো বীর্য নির্গত হয়না। তবে
যেহেতু নারীর যৌনাঙ্গ এবং মুত্রথলি
খুব কাছাকছি অবস্থিত এবং মিলনকালে
মুত্রথলিতে যথেষ্ট চাপ পড়ে তাই মিলনে
পুর্নতৃপ্তিতে শেষের দিকে সামান্য
পরিমান প্রস্রাব বেরিয়ে যেতে পারে
যাকে পুরুষ/নারী অজ্ঞতাবশত বীর্য
বলে ধরে নেন।
বীর্য কি?
বীর্য হল অসচ্ছ, সাদা রঙের শাররীক
তরল যা বীর্যস্থলনের সময় পুংলিঙ্গের
ভিতর দিয়ে প্রবাহিত মুত্রনালীর
মাধ্যমে শরীর থেকে বাহিরে নির্গত
হয়। বীর্যের বেশি অংশ যৌন অনুভুতির
সময় পুরুষ প্রজননতন্ত্রের ক্ষরন/নিঃসরন
হতে সৃষ্ট।
৬৫% বীর্য-তরল ধাতুগত
গুটিকা (seminal vesicles)
দ্বারা উত্পাদিত।
৩০% থেকে ৩৫% মূত্রস্থলীর গ্রীবা সংলগ্ন
গ্রন্থিবিশেষ থেকে সরবরাহকৃত। ৫%শুক্রাশয় এবং অন্ডকোষের epididymes নামক অংশ হতে।
বীর্যে প্রাপ্ত রাসায়নিক পদার্থগুলো
হলো যথাক্রমে - সাইট্রিক এসিড, ফ্রি
এ্যামিনো এসিড, ফ্রাকটোস, এনজাইম,
পসপোহ্রিলকোলিন, প্রোষ্টাগ্লেন্ডিন,
পটাশিয়াম এবং জিংক। গড়পড়তা প্রতি
বীর্যস্থলনে উত্পাদিত বীর্যের পরিমান
২ থেকে ৫ মিঃলিঃ। বীর্যের পরিমান
এবং পুর্বের বীর্যপাতের সময় ব্যবধানের
হিসাব অনুযায়ী বীর্যের ঘনত্বের
তারতম্য এবং প্রতিবার বীর্যের সাথে
(একেকবারের স্থলনে) শুক্রানুর সংখ্যা
৪ (চার) কোটি থেকে ৬০ (ষাট) কোটি
পর্যন্ত হতে পারে। বীর্যে শতকরা ২০
ভাগ শুক্রানু জীবিত না হলে সে পরুষ
বন্ধা - অর্থাত্ সন্তান জন্মদানে অক্ষম।
ডাক্তারী পর্যবেক্ষনের জন্য সাধারনত
হস্তমৈথুনের সাহায্যে বীর্যের নমুনা
সংগ্রহ করা হয়। তবে বীর্যদাতা যদি
শারিরীক মিলন ব্যতিত বীর্যস্থলনে
অসমর্থ্য হন, সেক্ষেত্রে রাসায়নিক
বিক্রিয়া হয়না এবং শুক্রনিধক পদার্থ
নেই এমন কনডম ব্যবহার করে বীর্যের
নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
############################
স্বাভাবিক/সাধারন বীর্য দেখতে কেমন?
১,বাহ্যিক রূপঃ
বীর্য সাধারনত দেখতে মেঘলা সাদা
অথবা কিছুটা ধুসর তরল। বীর্যস্থলেনের
সাথে সাথে এটি দেখতি গাঢ় এবং
জেলীর মত ইষত্ শক্ত। তবে পরবর্তি ৩০
মিনিটের মধ্যে বীর্য তরল এবং পানির
মত পাতলা হয়ে যায়। বীর্যের পুরু এবং
তরলীকরণ প্রজনন তথা সন্তান জন্ম
দেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয় ।
২,গন্ধ:
বীর্যে ক্লোরিন এর মত একপ্রকার
স্বাভাবিক গন্ধ থাকে।
৩,স্বাদ:
অধিক মাত্রায় ফলশর্করা (fructose)
থাকার কারনে এটি কিছুটা মিষ্টি
স্বাদযুক্ত। তবে ব্যাক্তিবেধে বীর্যের
স্বাদের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এমনকি
খাদ্যাভ্যাসের পার্থক্য থেকে বীর্যের
স্বাদের পরিবর্তন হতে পারে।
৪,কি রকম বীর্যকে 'অস্বাভাবিক বীর্য'
বলা হবে ?
অল্প পরিমানে বীর্য বের হওয়া:
বীর্যস্থলনে বীর্যের পরিমান কম হবার
কারন হতে পারে ধাতুগত গুটিকা (seminal
vesicles) অথবা বীর্য নিঃসরন নালীর
(ejaculatory duct) প্রতিবন্ধকতা।
৫,অল্প পরিমান বীর্যরস নির্গত হওয়া
হয়তো বিপরিতগামী বীর্যস্থলনের
কারনেও হতে পারে, যদি বীর্য
নিঃসরনের সময় বীর্যের প্রবাহ
মুত্রনালী দিয়ে বাহিরের দিকে না হয়ে
উল্টোপথে মুত্রথলির দিকে প্রবাহিত হয়
- সে অবস্থায় এমনটি হতে পারে।
বীর্যের এই বিপরিতমুখীতা মূত্রস্থলীর
গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থির সংক্রমন, পুর্বের
কোন মূত্রস্থলীর গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থির
(prostate) অস্ত্রপ্রচার, ডায়াবেটিস
এবং অনেক ঔষধের পাশ্বাপ্রতিক্রিয়ায়ও হতে পারে।
৬,অতিরিক্ত গাঢ় এবং পিন্ডাকার বীর্য ঃ
শরীরে পানিশুন্যতার কারনে বীর্য
হয়তো অস্বাভাবিক গাঢ় হতে পারে ,
তবে এটি একটি অস্থায়ী অবস্থা।
গাঢ় / পিন্ডাকার বীর্যের একটু ভয়ানক
কারন হল শুক্রাশয় এর নিন্মমুখী স্তর।
যদি আপনার বীর্য একনাগাড়ে দুই থেকে
তিন সপ্তাহ এ রকম আস্বাভাবিক দেখা
যায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরনাপন্ন
হতে হবে।
৭,লাল অথবা বাদামী রঙের বীর্য:
যদি আপনার বীর্য লাল অথবা বাদামী
রঙের দেখা যায় তাহলে মূত্রস্থলীর
গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থি (prostate) তে
হয়তো বিস্ফোরিত রক্তপ্রবাহ হচ্ছে।
এটি সাধারন বীর্যস্থলনের সময়ও দেখা
যেতে পারে। এবং সাধারনত এক কিংবা
দুই দিনে বীর্য তার স্বাভাবিক রঙে
ফিরে আসতে পারে। যদি বীর্যের এই রঙ
পরিবর্তন একটানা কয়েকদিন থেকে
দেখা যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের
কাছে পরামর্শের জন্য যেতে হবে।
অবিরাম বীর্যের মধ্যে রক্তের
উপস্থিতি হয়তো কোন প্রকার সংক্রমন,
রক্তক্ষরন (হয়তো মানসিক আঘাত জনিত
কারনে), এবং বিরল ক্ষেত্রে ক্যন্সারের
কারনে দেখা যেতে পারে।
৮,হলুদ কিংবা সবুজ রঙের বীর্য:
সাধারন বীর্যে ধুসর সাদা কিংবা ইষত্
হলুদ বনর্চ্ছটা থাকতে পারে।
হলুদ কিংবা সবুজ রঙের বীর্য হয়তো
রোগ সংক্রমনতা নির্দেশ করে , হতে
পারে এটি যৌনবাহিত রোগ ' গনোরিয়া '
র' লক্ষন।
আপনার পাশ্ববর্তী কোন চিকিত্সালয়ে
যান যেখানে যৌন বাহিত রোগের চিকিত্সা সেবা দেয়া হয়।
যদি বীর্যের এই বিবর্নতা গনোরিয়ার
কারনে হয়ে থাকে তাহলে উপযুক্ত
এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধে চিকিত্সা
সম্ভব।
৯, বিরক্তিকর গন্ধযুক্ত বীর্য:
বীর্যের বিরক্তিকর গন্ধের প্রায়শঃ
প্রধান কারন হলো রোগ সংক্রমনের
লক্ষন। বীর্যে দুর্গন্ধ পরিলক্ষিত হলে
তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে
হবে।
১০,স্পার্ম মরপোলোজি - শুক্রানুর আকার
এবং গঠন ঃ
পুরুষ বন্ধত্বের জন্য সিমেন এ্যানালাইসিস এর একটি অংশ হল স্পার্ম মরপোলোজি। স্পার্ম মরপোলোজি পরীক্ষা দিয়ে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে বীর্যে
শুক্রানুর হার দেখা হয়।স্বাভাবিক শুক্রানুর মাথা ডিম্বাকার এবং লম্বা লেজ থাকে (দেখেতে অনেকটা বাঙাচির মত)। অস্বাভাবিক
শুক্রানুর মাথা অথবা লেজ বিকৃত , যেমন
খুব বড় আকৃতির মাথা , ভাংগা অথবা
একই শুক্রানুর দুইটি লেজ থাকে। এ সকল
অস্বাভাবিকতা হয়ত শুক্রানুর ডিম্বের কাছে যাওয়া ব্যহত করে।
১১,যাইহোক, বীর্যে সংখ্যার হার হিসেবে
বিশাল অংকের অস্বাভাবিক শুক্রানু
থাকা একটি সাধারন বিষয়, এবং এটি
নারীর গর্ভধারনের ক্ষেত্রে কোন বড়
বিবেচ্ছ্য নয়। বস্তুতঃপক্ষে একজন
পুরুষের শুক্রাণু নমুনা স্বাভাবিক
বিবেচিত হয়না, যদি না অধিকাংশ
শুক্রাণু আকৃতির অস্বাভাবিক পরিসীমায় না হয়।
অস্বাভাবিক শুক্রানুর নিষেকে যদি
নারী গর্ভধারন করেন তাহলে গর্ভের
সন্তান অস্বাভাবিক হবার কোন সম্ভাবনা নেই।
১২,শুক্রানুর আকার ছাড়াও স্পার্ম
মরপোলোজি দ্বারা শুক্রানুর সংখ্যা
এবং এর চলার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।
চলার অক্ষমতা এবং স্বল্প সংখ্যক
শুক্রানু উপস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই
অস্বাভাবিক স্পার্ম মরপোলজিতে
দেখা যায় এবং এটা পুরুষ বান্ধত্বের
কারনও হতে পারে।
যদি বীর্য পরীক্ষায় অস্বাভাবিক
স্পার্ম মরপোলজি অথবা অন্য কোন
অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে প্রথমতঃ
'ওয়েট এন্ড সি' মানে রোগীকে
অপেক্ষা করা এবং পুনঃপরীক্ষার জন্য
বলা হয়।
পরবর্তী পরীক্ষা সাধারনত চার
থেকে ছয় সপ্তাহ পর করা হয় এবং দেখা
হয় প্রাকৃতিক ভাবে শুক্রানুতে কোন
পরিবর্তন এসেছে কিনা? যদি দ্বিতীয়
পরীক্ষায়ও আশানুরুপ ফলাফল পাওয়া
না যায় তখন এর কারন উদঘাটনের জন্য
অন্যান্য আনুষাঙ্গিক পরীক্ষা করা হয়ে
থাকে।
১৩, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুক্রানুর সমস্যাগুলো
জন্মগত এবং তা চিকিত্সা করা অসম্ভব।
অন্য ক্ষেত্রে যে সকল কারনে শুক্রানুর
সমস্যা তা চিকিত্সার মাধ্যমে শুক্রানুর
কোয়ালিটি ইমপ্রুভ হতে পারে। কিছু
সাধারন ক্ষেত্রে শুক্রানু অস্থায়ী
ভাবে কিংবা স্থায়ীভাবে চিকিত্সা
করা যায়। যেমন:
অন্ডকোষের ভিতর শিরা-উপশিরার
আকার বৃদ্ধির সাহায্যে (varicocele)
উচ্চমাত্রায় উষ্ণতা/তাপ এর সাহায্যে।
কিছু নির্দ্ধিষ্ট নিষিদ্ধ ঔষধ ব্যবহার
করে।
সংক্রামন অস্বাভাবিক স্পার্ম মরপোলজি ,
শুক্রানুর চলমানতা সমস্য অথবা কম
সংখ্যায় শুক্রানুর উপস্থিতিতেও হয়তো
গর্ভধারন সম্ভব ! যাইহোক গর্ভধারন সব
সময় সঠিক সময়ে আসেনা। কিছু যুগলের
ক্ষেত্রে এর জন্য বছর লেগে যায়। যদি
অনেক চেষ্টায়ও আপনি গর্ভধারনে সফল
হচ্ছেন না, বর্তমান যুগে প্রজুক্তির
বিশাল বিকাশে এ বিষয়ে বেশি চিন্তা
না করলেও চলে।
১৪,বীর্যের মাথায় ক্রোমোজম থাকে এটি
পুরুষের উর্বরতার উদ্ভব ঘটায়। এক ফোঁটা
বীর্যের মাথা হল একটি ক্ষুদ্র পিনের
মাথার আকারের সমান। অণুবীক্ষণ
যন্ত্রের সাহায্যে এটি দেখা যায়।
সংকলিত।
সূত্র ঃ
https://m.dailyhunt.in/news/india/bangla/anm+news-epaper-anmban/18+aapanar+biryer+gad+gatibeg+kat+janen+jene+nin+biry+sampark+aarao+nanan+tathy-newsid-106691477