বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১১

.পাশ্চাত্য সমাজে আদর্শ পরিবার নিয়ে কিছু ভাবনা-২

molana  abdullah nezami bhouiya


পাশ্চাত্য সমাজে আদর্শ পরিবার নিয়ে কিছু ভাবনা-২




(পূর্ব প্রকাশের পর)



ইসলামের পারিবারিক জীবনের লক্ষ্য ও পাশ্চাত্যের মুসলিম সমাজ



উপরি উক্ত আলোচনায় এই কথা পরিষ্কার যে ইসলামী পারিবারিক জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে পারিবারিক জীবনে শান্তি ও তৃপ্তি। এই প্রসংগে আল্লাহ পাক সূরা আল-আরাফের ১৮৯ নম্বর আয়াতে



আল্লাহই তোমাদেও সৃষ্টি করেছেন একটি সাত্র প্রাণ থেকে এবং তারই প্রজাতি থেকে তার জুড়ি বানিয়েছেন। যাতে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। তারপর যখন পুরুষ নারীকে ঢেকে ফেলে তখন সে হালকা গর্ভধারণ করে। তাকে বহন করে সে চলা ফেরা করে। গর্ভ যখন ভারি হয়ে যায় তখন তারা দুজনে মিলে এক সাথে তাদেও রব আল্লাহর কাছে দোয়া করেঃ যদি আমাদেও একটি ভাল সন্তান দাও তাহলে আমরা তোমার শুকর গোজারী করবো। কিন্তু যখন আল্লাহ তাদেরকে একটি সুস্থ- নিখুঁত সন্তান দান করেন, তখন তাঁরা তাঁর এ ও অনুগ্রহে অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করতে থাকে- আল আরাফ ১৮৯-১৯০। এই আয়াত থেকে পরিষ্কার যে ইসলামে পারিবারিক জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে নারী-পুরুষের দৈহিক চাহিদা বৈধভাবে পূরণের মাধ্যমে লজ্ঝাস্থানের হেফাজত করা। হ্রদয়ে শান্তি ও তৃপ্তি এবং সন্তান সন্তুতি লাভের মাধ্যমে মানব বংশ বৃদ্ধি করা। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই প্রসংগে ইরশাদ করেছেন , ÊÒæÌæÇ ÇáæáæÏ ÊäÇÓáæÇ ÝÇäí ãÈÇå Èßã ÇáÇãã íæã ÇáÞíãÉ-

;- এই হাদীসে এই কথা পরিষ্কার যে আল্লাহর রাসুল (সা) কিয়ামতের দিন তাঁর উম্মতের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ববোধ করবেন এই কারণে সন্তান বেশী হয় এমন বংশে বিবাহ করতে নিতে উৎসাহিত করেছেন।



আমরা এখন একটু চিন্তা করি, মুসলিম পরিবারগুলোতে কি যথার্থ অর্থে শান্তি বিরাজ করছে? এই প্রসংগে আমার মনে হয় এখনও মুসলিম পরিবারগুলো গর্ব করার মত অবস্থানে রয়েছে। কেননা পাশ্চাত্যের তুলনায় মুসলিম পারিবারিক জীবনের শান্তি, স্থিতিশীলতা অনেক গুণ বেশী। পাশ্চাত্যেও জনগণ বৈবাহিক জীবন যাপনের মাধ্যমে পারিবারিক জীবন গঠন করূক বা লীভ টুগেদার করূক না কেন উভয় ক্ষেত্রে তারা নিজেদের দৈহিক চাহিদা পূরণকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। সন্তান-সন্তুতি গ্রহনের প্রতি তাদের মারাত্মক অনীহা রয়েছে। তারা শুধুমাত্র একটু আনন্দ উপভোগের জন্য একটি সন্তান নিতে চায় এবং এরজন্যও , ” পেট ভাড়া” করার প্রতি ঝুঁকছেন। অথচ মুসলমানেরা বৈদভাবে দৈহিক চাহিদা পূরণ ও বংশ বৃদ্ধির কাজ করছে। অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক জরিপে , মুসলমানেরা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বী হিসাবে পরিসংখ্যন প্রকাশিত হবার পর ভ্যাটিকান সিটির পোপ মন্তব্য করেছেন যে, ” মুসলমানেরা সন্তান বৃদ্ধিতে আগ্রহী আর খৃষ্টানরা সন্তান না নেয়ার প্রতি আগ্রহী। তাই মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে”। উপরিউক্ত বাস্তবতা সত্যেও মুসলমানদেরকে আত্মপর্যালোচনা করা দরকার যে, মুসলিম পারিবারিক জীবনে যেই ধরনের শান্তি থাকার কথা ছিল তা আছে কিনা? কি কারণে মুসলমানদের পারিবারিক জীবনে ভাংগন বা অশান্তি দেখা দেয়? মুসলমানেরা সন্তান গ্রহন ও সন্তান লালন-পালনে ইসলামের শিক্ষা কতটুকু অনুসরণ করছে? মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বলা হয়েছে স্বামী স্ত্রী পরস্পরের জন্য চক্ষু শীতলকারী ও আনন্দদায়ক হবে। এই ধরনের পারিবারিক জীবন কামনা করার জন্য আল্লাহ পাক দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরকে আত্ম পর্যালোচনা করতে হবে যে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে দেখলেই সত্যিই কি আনন্দিত হন না অজানা কোন আশংকায় ভুগেন ? কেননা মুসলিম পরিবারগুলোতেও নির্যাতন নিপীড়নের অনেক ঘটনা অহরহ সংঘটিত হচ্ছে।



আদর্শ পরিবার গঠনে করণীয়



আদর্শ পরিবার গঠন করতে হলে বিবাহের আগেই পরিকল্পনা নিতে হবে। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন , মানুষ সাধারনত সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও দ্বীনদারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিবাহ করে। একজন মুসলমানকে দ্বীনদারীর প্রতিই গুরুত্ব দেয়া দরকার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক সময় আমরা দ্বীনদারীর কথা বেমালুম ভূলে যাই। ইউরোপ-আমেরিকায় দেশ থেকে কাউকে আনার জন্য বা সম্পদের লোভের দ্বীনদারীর কথা ভুলে গিয়ে অনেক সময় ছেলে-মেয়েকে বিবাহ দিয়ে তাদের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনা হয়। এই দিকে অভিভাকদের খেয়াল রাখা উচিৎ। আবার কখনও কখনও শারীরিক সৌন্দয়তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চারিত্রিক সৌন্দর্যতাকে গৌণ করে দেখা হয়। এরফলে কিছুদিনের ব্যবধানে পরস্পরের মধ্যে চিন্তা ও আদর্শের দ্বন্ধ দেখা দেয়। ইসলাম সৌন্দর্য, ধন ও বংশ মর্যাদার প্রতি খেয়াল রাখতে নিষেধ করেনি; এক সাথে সবগুলো পেলে ভাল। কিন্তু মুসলমানদের একে অপরের জন্য বা ছেলে মেয়ের জীবন সংগী-সংগীণি তালাশ করার সময় ইসলামী আদর্শ ও চরিত্র কতটুকু আছে তার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কথা আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন।



আদর্শ পরিবারগঠনে আরও কিছু করণীয়



১. পরস্পরের জন্য দুআ করাঃ



স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য দুআ করা উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কোন ভাষায় দুআ করতে হবে তাও শিখিয়ে দিয়েছেন।



২. পরস্পরের হক আদায় করাঃ



স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের অনেক হক রয়েছে। যেমন ক· শারীরিক চাহিদা পূরণ করা। অনেক সময় দেখা যায়, আয়-রোজগার নিয়ে এত বেশী ব্যাস্ততার মাঝে দুই জনের একজন সময় কাটান তার জীবন সংগী বা সংগীনির শারীরিক হক আদায় করার সময়ও খূজে পাননা। এরফলে তার মনের মধ্যে শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়া শুরু করে। শারীরিক হক আদায়ের জন্য শারীরিক ফিটনেস গুরুত্বপূর্ণূ। এইজন্য শারীরিক কোন সমস্যা হলে তার উপযুক্ত চিকিৎসা নেয়া জরূরী। খ· সময় দান- স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সময় দান করা জরূরী। এইজন্য একত্রে খাওয়ার অভ্যাস করা, পারিবারিক বৈঠক করা প্রয়োজন।



৩. ইসলামী শরীয়তের অনুসরণ ও সামষ্টিক ইবাদতের পরিবেশঃ



আদর্শ পরিবার গঠন করতে হলে ঘরে ইবাদতের পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। এই জন্য কুরআন তিলাওয়াত, নামায আদায়, ইসলামী কৃষ্টি ও কালচার এর অনুসরণের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলামী শরীয়তের অনুসরণের প্রতি দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে হবে। ”কোন অবস্থাতেই হারাম রুজি গ্রহন করা হবেনা ” এই ধরনের সিদ্বান্তে পরিবারের সকলকে অটল ও অবিচল থাকতে হবে।



৪. জ্ঞান চর্চার পরিবেশঃ



ইসলামী পারিবারিক জীবন যাপন করতে হলে ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এই কারণে সহীহ ইলম অর্জনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।



৫. পারিবারিক ব্যাবস্থাপনাঃ



পরিবারের কাজগুলো সুন্দরভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য পারিবারিক বৈঠকে পারিবারিক ডাইরী, দৈনন্দিন রুটিন, কর্মবন্টন, হোম ম্যানেজমেন্ট এর যাবতীয় পরিকল্পনা নেয়া জরূরী। এছাড়া পরামর্শ ভিত্তিক পারিবারিক কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। এই কারণে আল্লাহ তায়ালা সন্তানের দুধপান ছাড়ার সময় সম্পর্কে সিদ্বান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্বান্ত নেয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী পরিবারের প্রধান হিসাবে একে অপরের প্রতি সন্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা দরকার।



৬. স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য হচ্ছে লেবাস- (সূরা বাকারা ১৮২)।



কুরআনের এই ঘোষনার বাস্তব প্রতিফলন পারিবারিক জীবনে ঘটানো প্রয়োজন। এর অর্থ হচ্ছে পোশাক যেমনিভাবে গায়ের সাথে লেগে থাকে স্বামী-স্ত্রী অনুরপভাবে পরস্পরের মনের কাছা-কাছি থাকতে হবে। এই জন্য একে অপরকে ভালভাবে জানতে হবে; পরস্পরের চিন্তা-চেতনা ও রুচি অনুধাবন করেই সেইভাবে আচরণ করার চেষ্টা করতে হবে। পোশাক যেমনিভাবে শরীরের দাগ ঢেকে রাখে তেমনিভাবে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের উপস্থিতি বা অনুপুস্থিতি কারো সামনে একে অপরের দোষ বর্ণনা করা ঠিক নয়। পোশাক যেমনিভাবে ব্যক্তি যেখানে যায় সেখানে সাথে থাকে। তেমনিভাবে কোন কারণে স্বামী-স্ত্রী ভৌগলিক দুরত্বে থাকলেও মনের আয়নায় একে অপরের কাছা-কাছি থাকতে হবে। অন্য কারো কথা বা চিন্তা মনের ভিতর যেন উঁকি না দেয় সেজন্য সদা সতর্ক থাকতে হবে।



৭. মানুষ হিসাবে পরস্পরের ভূল হওয়া স্বাভাবিক।



ভূল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হলে রাগের মাথায় কোন কথা না বলে পরে শান্তভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা দরকার। একে অপরের ভুলের জন্য একে অপরকে মাফ করে দেয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। আবার সব সময় একজনই মাফ করবেন বা মাফ চাইবেন বিষয়টি যেন এ পর্যায়ে না থাকে। কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা-দিলে মতের মিল সৃষ্টি করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের অভিভাকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।



৮. দুঃখ কষ্টে ধৈর্য ধারণ করা জরূরী।



এই ক্ষেত্রে পরস্পরের মনে আঘাত লাগে এমন কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা দরকার। একে অপরকে উপহাস করা, হেয় প্রতিপন্ন করা বা খোঁচা দিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।



৯. পরস্পরকে মাঝে মধ্যে উপহার দেয়া উচিৎ।



এই ক্ষেত্রে কথার মাধ্যমেও উত্তম উপহার দেয়া যেতে পারে। রান্না-বান্না, ঘর গুছিয়ে রাখা বা কোন কাজ করার জন্য প্রশংসাসূচক একটি মন্তব্য হ্রদয় উজাড় করা ভালবাসার পথ প্রশস্ত করে। আবার একটি ছোট্ট মন্তব্য পরস্পরের মাঝে পাহাড়সম ব্যবধান সৃষ্টি করতে পারে।



১০. পরস্পরের আত্মীয়কে সন্মান ও মর্যাদা দেয়া উচিৎ।



কখনও কখনও দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিবারকে সহ্য করতে পারেনা। এরফলে তাদের বৈবাহিক জীবনে অশান্তি ও ঝগড়া লেগে থাকে। তাই সম্ভব হলে মাঝে মধ্যে পরস্পরের অত্মীয় স্বজনদাওয়াত দেয়া ভাল।



১১. পরস্পরের প্রতি সুধারনা পোষন করা আবশ্যক।



অনেক সময় দেখা যায় একজন যা ভাবেননা অপরজন তা ধারণা করে বসেন। এরফলে একে অপরের প্রতি রাগ ও ক্ষোভের জন্ম নেয়।



পারিবারিক জীবনে আল্লাহর রাসুলের (সা) কতিপয় উসওয়া



১. রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহির হতে ঘরে ঢুকার আগে দুআ পড়তেন। কেননা দুআ না পড়লে অনেক সময় শয়তান সাথে সাথে ঘরে ঢোকে । একজন ব্যক্তি মাসনূন দুআ পড়ে সব কাজ করলে শয়তান সেক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারেনা।



২. আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ঢুকে সালাম করতেন এবং হাসিমুখে কথা বলতেন।



৩. আল্লাহর রাসূলের হাদীস অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি মায়া মমতা প্রদর্শন করা, একে অপরকে সময় দেয়া এবং শারীরিক হক আদায় করা নেকীর কাজ।



৪. রাসুলে কারীম (সা) বিভিণ্ন কাজের জন্য উম্মাহাতুল মুমীনদের প্রশংসা করতেন।



৫. এক সাথে খাবারের সময় মাঝে মধ্যে পরস্পরের মুখে খাবার তুলে দিতেন। আল্লাহর রাসুল (সা) বলেন, ” স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেয়া সাদকার সওয়াব”।



৬. উম্মুহাতুল মুমীনদেরকে আদর করে ডাকতেন। রাসুলে কারীম (সা) হযরত আয়েশাকে আদর করে আয়েশ বা হুমাইরা ডাকতেন।



৭. আল্লাহর রাসুল (সা) একই সাথে পনানাহার করতেন। হাদীসে উল্লেখ আছে যে , কখনও কখনও আল্লাহর রাসুল গ্লাসের সেই পাশ দিয়ে পানি পান করতেন যে পাশে হযরত আয়েশা পানি পান করেছেন।



৮. আল্লাহর রাসুল ( সা)তিনি মাঝে মধ্যে ঘরের কাজে তথা রান্না-বান্নার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতেন।



৯. উম্মুহাতুল মুমীনগণ আল্লাহর রাসুল (স) আসার আগে ঘর গুছিয়ে রাখতেন এবং নিজেরা সুন্দর পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন। তিনি বাহির থেকে আসার শব্দ শুনলে দরওয়াজা খোলে মুচকি হেসে অভ্যর্থনা জানাতেন।



১০. হাদীসে আছে যে, হযরত আয়েশা গায়ের কোট খুলতে সাহায্য করতেন। আল্লাহর রাসুল (সা- ঘর থেকে বের হওয়ার আগে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়িয়ে দিতেন এবং ঘর থেকে বের হতে কাপড় চোপড় প্রস্তুত করতে সাহায করতেন।



১১. একে অপরকে কখনও চিন্তিত দেখলে সংগ দিতেন এবং কিকারণে চিন্তিত তার কারণ জানার চেষ্টা করতেন।







আদর্শ পরিবার গঠনে আদর্শ সন্তান







আদর্শ পরিবার গঠনে সন্তান-সন্তুতিকে আদর্শ মানুষ রূপে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করা পিতা-মাতার দইয়ত্ব। এই ক্ষেত্রে কয়েকটি কথা উল্লেখ করছিঃ



১. কুরআন ও হাদীস থেকে জানা যায় যে নেক সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করা প্রয়োজন। সুরা ইবরাহীমে উল্লেখিত একটি দুআর ভাষা হচ্ছে , ”- হে আল্লাহ আমাকে এবং আমার সন্তান দিগকে নামায কায়েমকারীদের অন্তর্ভুক্ত করূন”। সন্তান জন্মগ্রহন করার আগে যেমনিভাবে দুআ করতে হয় তেমনিভাবে সন্তান জন্মগ্রহন করার পরও দুআ অব্যাহত রাখতে হয়। কেননা সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দুআ আল্লাহ কবুল করেন।



২. সন্তান জন্মের পর সুন্দর ও অর্থবহ একটি নাম রাখা পিতা-মাতার দায়িত্ব। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় পিতা-মাতা আদর করে এমন নাম রাখেন পরবর্তীতে উক্ত নামে ডাকলে সন্তান লজ্জাবোধ করে।



৩. হালাল রুজি রোজগার থেকে সন্তান প্রতি-পালন করা। কেননা অবৈধ উপার্জনের একটি অনৈতিক প্রভাব ব্যাক্তির জীবনে পড়ে।



৪. ছোট বেলা থেকেই নৈতিক প্রশিক্ষন দান করার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। ছেলে-মেয়েদের অন্যায় আবদার কৌশলে নিবারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে অহেতুক বকুনী বা শাসন করা থেকে বিরত থাকা জরূরী। পাশ্চাত্যে যেসব শিশু জন্মগ্রহন করে তাদের মন- মানসিকতার প্রতি খেয়াল রেখেই তাদেরকে নৈতিক প্রশিক্ষন দিতে হবে। এই জন্য দ্বীনি শিক্ষায় আধুনিক উপায় উপকরণ ব্যবহার করা প্রয়োজন। কেননা তারা আধুনিক শিক্ষা যেই ধরনের আনন্দঘন পরিবেশে পায় আর দ্বীনি শিক্ষা অজূনে যদি উৎসাহিত না হয় তাহলে জোর করে বেশী দিন শিখানো যাবেনা।



৫. সন্তানের মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অর্থ-খরচের মানসিকতা থাকতে হবে। অনেক পিতা-মাতা ব্যবসা-বানিজ্যে অঢেল সম্পদ ইনভেস্ট করে রাখেন কিন্তু সন্তানের মৌলিক প্রয়োজনে অর্থ খরচ করতে চাননা। এরফলে তাদের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠে।



৬. ধুম পান ড্রাগসসহ সমাজের ক্ষতিকর জিনিস সম্পর্কে ধারনা দেয়া জরূরী। এই জন্য পিতা-মাতাকে ভাল বন্ধু জোগড়া করে দেয়া এবং ভাল বন্ধুর সাথে সময় ব্যয় করে কিনা তার খোঁজ খবর নেয়া দরকার।



৭. শারীরিক ও বুদ্ধি বৃত্তিক উতকর্ষতা সাধনের জন্য সহযোগিতা করা দরকার। সময়- সুযোগ অনুযায়ী বাহিরে নিয়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দেয়া দরকার।



৮. ঘরের মধ্যে ইসলামী পরিবেশ বজায় রাখাঃ ঘরের মধ্যে ইসলামী পরিবেশ বজায় না থাকলে যতই ইসলাম শেখানো হোক না কেন তারা বাস্তব জীবনে তা অনুসরণ করতে চাইবেনা। আমি লন্ডনে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার সময় একবার ছাত্রদেও কাছে জানতে চাইলাম ,ফজরের নামাজ সুর্য উঠার আগে কারা পড়ে? অল্প সংখ্যকই ইতিবাচক জবাব দেয়। সে সময় একজন ছাত্র আমাকে বলল, ” উস্তাদজী আমি জীবনেও আমার আব্বা-আম্মাকে নামায পড়তে দেখি নাই”। শিশূ-কিশোররা সব সময় লক্ষ্য করে তাদের পিতা-মাতা কিভাবে কথা বলে, কিভাবে চলে, কিভাবে একে অপরের সাথে ব্যবহার করে। তাই ছেলে সন্তানকে আদর্শ সন্তান হিসাবে গঠন করতে হলে পিতা-মাতাকে আদর্শের নমুনা পেশ করতে হবে।

(সমাপ্ত)







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন