মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১২

শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব ও সুন্দর নামে ডাকুন

abdullah nezami
আমি যখন লোহাগডা/আমিরাবাদ মাদ্রাসায়ে হোছাইনিয়া আজিজুল উলুম রাজঘাটায় ছিলাম, সে সময়ের কথা। একদিন আমার রুমে কয়েক জন মেহমান আসলেন। তাঁদের মেহমানদারীর জন্য, দুই জনকে দোকানে পাঠালাম।






তাদের এক জনের নাম ছিল মিষ্টি।

কিছু খাবার নিয়ে অন্যজন ফিরে এসে আমাদেরকে নাস্তা দেয়ার সময়, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মিষ্টি কই?

অন্যান্য মেহমানরা বুঝলেন নাস্তার মধ্যে মিষ্টি না থাকায় আমি মিষ্টির কথা বলছি। তাই তারা বলতে লাগলেন , অনেক নাস্তা হয়েছে, মিষ্টি লাগবেনা। সে সময়ই নীচ থেকে মিষ্টি নামক ভদ্র লোকটি এসে হাজির। তখন আমি তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম এর নামই মিষ্টি।



সবাই মিষ্টি খাবার আনন্দের চেয়ে বেশী আনন্দ উপভোগ করলেন। এভাবে আমরা প্রতি নিয়ত অনেক নাম শুনি।



সে সব নাম শুনে বুঝা যায় না, এটা কিসের নাম?



যেমন আমার পরিচিত এক জনের নাম ছিল আকাশ।



রাস্তায় চলতে হঠাৎ যদি তাকে দেখে কোন বন্ধু বলে উঠতো এইতো আকাশ। তখন অনেকের চোখ আকাশের দিকেই নিবদ্ধ হতো। আরেক জনের নাম ছিল পল্লব। এই পল্লব কি গাছের পাতা না আশরাফুল মাখলুকাত কোন এক মানুষের নাম তা বুঝা একটু কঠিন। আমার পরিচিত আরেক জনের নাম ছিল ইতি, ইতি অর্থ শেষ। এ ধরনের আরও কত নাম শুনেছি, যা নিয়ে বন্ধু মহলে হাসাহাসি হত।



সাধারণত নিজের নাম রাখা কেন্দ্রীক নিজের কোন দায়িত্ব নেই। বাবা মা বা আত্মীয় স্বজনরাই নাম রাখেন। কিন্তু বড় হলে নাম কেন্দ্রীক ব্যাঙ্গ তাকেই শুনতে হয়। কেননা বাবা মা বা আত্মীয় স্বজন নাম রাখার সময় চিন্তা করেননি নামের অর্থ কি?



তাই অনেককে বড় হয়ে এফিডেভিট দিয়ে নাম সংশোধন করতেও দেখা যায়।



একজন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার আকীকা করা ও নাম রাখা পিতা মাতার দায়িত্ব। শিশুর জন্মের পর সপ্তম দিন আকীকা ও নাম রাখা সুন্নাত।



কোন কোন হাদীস অনুযায়ী জন্মের পর পরই নাম রাখা যায়। আর কোন কোন হাদীসে জন্মের পর তৃতীয় দিবসে নাম রাখার কথা উল্লেখ আছে। নাম যখনই রাখা হোক না কেন, নামকরণের ক্ষেত্রে উত্তম নাম তালাশ করা উচিত। রাসুল (স.) শিশুর সুন্দর নাম রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন; ‘‘ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতার নামে।



তাই তোমাদের নাম গুলো সুন্দর রাখো”। তাঁর কাছে কোন নতুন ব্যক্তি এলে তার নাম জিজ্ঞাসা করতেন , অপছন্দ হলে সে নাম পরিবর্তন করতেন। যেমন তিনি আসিয়া ( বিদ্রোহিণী) নাম পরিবর্তন করে জামিলা নাম দিয়েছিলেন আর আসসারম (কঠোর) নাম পরিবর্তন করে সায়ীদ নামকরণ করেছিলেন। তিনি এভাবে অনেকের নাম পরিবর্তন করেন।



মানুষ একে অপরকে নাম ধরেই ডাকে। কারো সাথে পরিচয়ের শুরুতেই জানতে চায় আপনার নাম কি? বিশেষত একজন শিশুর সাথে কারো দেখা বা পরিচয় হলে তার নাম জানতে চায়। তাই শিশুর জীবনে নামকরণের বিরাট প্রভাব পড়ে।



আমার এক আত্মীয়ের এক ছেলের নাম সালেহ, এটা একজন নবীর নাম। তাঁর আরেক ছেলের নাম এহসান। এহসান কোন নবীর নাম কিনা তা কারো জানা নেই। সালেহ প্রায়ই গর্ববোধ করে বলে তার নাম একজন নবীর নাম, কিন্তু তার অপর ভাইর নাম নবীর নাম নয়। এভাবে সকল শিশুই একটু বড় হলেই তার নামের অর্থ জানার চেষ্টা করে।



আরেকটু বড় হলে তার নামের সাথে অন্য কারো নাম মিলে গেলে তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। আরও একটু বড় হলে তার নামের সাথে প্রসিদ্ধ কারো নামের মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এবং তার জীবনী পড়ে। যার গভীর প্রভাব তার জীবনে গিয়ে পড়ে। অবশ্য সকল ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম থাকে, তার কথা আলাদা।



মুসলিম সমাজে আলেম উলামাদের সাথে পরামর্শ করে সুন্দর নাম রাখার রেওয়াজ ছিল। তাঁরা নামের অর্থ ও ফযীলতের দিকে দৃষ্টি রেখেই নামকরণ করতেন। তাই সে সব নামের মধ্যে মুসলিম কালচারের প্রভাব ছিল।



এ ধরনের নাম শুনলেই আঁচ করা যায় এটা কোন মুসলমানের নাম। কিন্তু আস্তে আস্তে নামকরণের ক্ষেত্রেও তথা কথিত আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। আরবী অর্থ বহ নামের পরিবর্তে সংস্কৃত, ইংরেজী বা বাংলা এমন সব নাম রাখা শুরু হয়। যার অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়না। আবার অর্থ থাকলেও তা শুনতে শ্রুতিমধুর লাগেনা।



যেমন ডলি, বেনু, অনিল, শ্যামা, শিপ্রা, চপল, চঞ্চল, তুষার, সৈকত, বাদল, শিমুল কাজল, নিশাত, ময়না, টিংকু, শীতল, রীতা, অভি

কপি , ছেন্টু , বলটু , সাগর , সিজার, জিকা, ইত্যাদি।





এ ধরনের নাম শুনে মুসলিম বা অমুসলিম কিছুই বুঝা যায় না। প্রাসঙ্গিক ভাবে এ কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, আরবী নাম রাখলেই অর্থ বহ হয়না। কেননা আল্লাহর রাসুল যে সব নাম পরিবর্তন করেছেন, তা আরবীতেই ছিল। যেমন খায়ল (ঘোড়া) যুওয়াইব (ছোট নেকড়ে বাঘ) শিহাব (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ) গোরাব (কাক) বাহীর (কানকাটা) হারব (যুদ্ধ) প্রভৃতি নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দিয়েছেন।





শিরকী নাম

===============



এ থেকে বুঝা যায় নাম সুন্দর ও অর্থবহ হওয়া জরুরী। কিন্তু অর্থ না জানা বা চিন্তা করে নাম না রাখার কারণে অনেককে শিরকী নাম পর্যন্ত রাখতে দেখা যায়। শিরকী নাম হলো আল্লাহ ছাড়া আর কারও নামে আবদ বা গোলাম ইত্যাদি যোগ করে নাম রাখা। যেমন কেউ কেউ পীরের এত ভক্ত যে, সন্তান হবার পর নাম রাখেন পীর বখশ (পীরের দান) ।

গোলাম নবী , গোলাম রসুল, আবদুননবী, আবদুর রসুল ,



অথচ এক জন মুসলমানের এ আকীদা থাকতে হবে যে রাসুল,পীর, অলী কারো পক্ষে সন্তান দেয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সন্তান দিতে পারেনা। আর একজন মুসলমান একমাত্র আল্লাহরই আবদ বা গোলাম। অন্য কারো নয়, তাই একজন শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে এমন নাম রাখা উচিত নয় যার অর্থ দ্বারা অন্য কারো গোলাম হওয়া বুঝায়।



ইসলামী ও উত্তম নাম

================



আল্লাহর নামের আগে আবদ যোগ করে আব্দুল্লাহ কারো নাম রাখা খুবই উত্তম। এ ভাবে আল্লাহর সিফাতী (গুনবাচক) নামের আগে আবদ যোগ করে নাম রাখা ভাল। যেমন আব্দুর রহমান, আব্দুল করিম, আব্দুর রহিম, আব্দুল আউয়াল, আব্দুল কুদ্দুস প্রভৃতি। তবে এ ক্ষেত্রে নাম ডাকার সময় অবশ্যই আবদ যোগ করেই ডাকতে হবে।





কিন্তু অনেককে দেখা যায় আবদ যোগ না করে শুধু রহীম, রহমান, করীম, কুদ্দুস এ ধরনের আল্লাহর সিফাতী নাম ধরে ডাকেন,এটা অনুচিত। কারণ আল্লাহ যেসব গুনে গুনান্বিত সেব গুনে একজন মানুষ গুনান্বিত হতে পারেনা। তাই মানুষকে আল্লাহর সিফাতী নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। তাই আল্লাহর নামের পুর্বে আবদ বা অন্য কোন শব্দ (যেমন আতাউল্লাহ,রহমত উল্লাহ ) যোগ করেই ডাকতে হয়।







নামকরণের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী, শিশুর পরিচয় পিতার সাথেই সম্পৃক্ত। তাই নামকরণের অধিকার পিতার। অবশ্য পিতা মাতা পরামর্শ করেই নাম ঠিক করা ভাল। অনেক সময় দেখা যায় পিতা মাতা দুই জন দুই নাম পছন্দ করেন, তাই দুই জন দুই নামে ডাকেন। শিশুর অর্থবহ সুন্দর একটি নাম রাখাই উত্তম। আবার অনেকের খুবই দীর্ঘ নাম রাখা হয়, যার কারণে পরবর্তীতে নানা ধরনের সমস্যা পোহাতে হয়। যাদের নাম খুব দীর্ঘ তারা অন্য কোন দেশে গেলে অনেক সময় পরিচিত নামটি হারিয়ে যায়। এজন্য আমি মনে করি এক জন শিশুর সুন্দর, অর্থবহ, সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর নাম হওয়া ভাল। তবে কুনিইয়া (উপনাম) রাখা যেতে পারে। কেননা রাসুল (স) অনেককে এ ধরনের কুনিইয়া বা উপনামে ডাকতেন।



শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব

======================================





এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখতে হয়। সে সময় তার যে নাম রাখা হয় সবাই তাকে সেই নামেই ডাকে। সে ডাক শুনেই সে দুধ পানরত অবস্থায়ও বুঝতে পারে, তাকে ডাকছে। তাই কেউ ডাকলে তার দিকে তাকায়। আর বড় হবার পর এ নামেই সে পরিচিতি লাভ করে।



শিশু জন্মগ্রহণ করার পর নিজের নাম নিজে রাখতে পারেনা। এটা পিতা মাতা বা আত্মীয় স্বজনের দায়িত্ব। পিতা মাতা বা যারাই নাম রাখবে তাদের উচিত সুন্দর নাম রাখা। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস ও আবু সাঈদ থেকে বর্ণিত আছে যে,রাছুল (সঃ) বলেছেন,যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে ও সুশিক্ষা দেয় এবং সাবালক হলে তার বিবাহ দেবে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিবাহ না দেবার কারণে গুনাহ হলে সে গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে। (বায়হাকী, হাদীছটি যঈফ)







এ থেকে বুঝা গেল শিশুর সুন্দর নাম রাখা পিতার কর্তব্য। অর্থবোধক, মার্জিত, ইসলামী ভাবধারায় উজ্জীবিত, সুন্দর নাম রাখলে তা শিশুর জীবনে প্রভাব পড়ে।



অন্য আরেক হাদীসে আছে, আবু দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতাদের নামে, তাই তোমাদের নামগুলি সুন্দর রাখো। ( আবু দাউদ)



এ থেকে বুঝা যায় শিশুর নাম রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুখের বিষয় হচ্ছে মুসলিম সমাজে অনেকেই শিশুর এমন নাম রাখেন যা অর্থবোধক নয়। এবং এই নাম শুনে বুঝা যায়না এটা কোন মুসলিম শিশুর নাম কিনা?



ভাল ও মন্দ নামের প্রভাব

====================



এক জন শিশুর যে নামই রাখা হোক না কেন তা তার জীবনে প্রভাব ফেলে। ভাল নামের ভাল প্রভাব আর মন্দ নামের খারাপ প্রভাব পড়ে। এক জন শিশু যখন বড় হয় তখন সে নামের অর্থ জানার চেষ্টা করে। মনে করুন এক জন শিশুর নাম সালেহ, যার অর্থ সৎ কাজ কারী। সে যখন কোন খারাপ কাজ করে তাকে যদি বলা হয় তোমার নামের অর্থ হচ্ছে সৎ কাজ কারী। তুমি যে খারাপ কাজ করলে তা কি ঠিক হলো? নিশ্চয়ই এ কথাটি তার মনে রেখাপাত করবে। এভাবে অনেক শিশু নামের কারণে মন্দ কাজ করতে লজ্জা বোধ করে।

যেমন কারো নাম আবদুল্লহ আর্থ আল্লাহর বান্দা/গোলাম কাজেই তার কাজই হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে আল্লাহর গোলামী/এবাদত করা , আর তা না করলে স্বভাবতই সে লজ্যা বোধ করবে /মানুষ লজ্যা দিবে,



রাসুল (সঃ) এর সামনে কোন লোক এলে তিনি তার নাম জিজ্ঞাসা করতেন। কারো নাম সুন্দর হলে তিনি খুশী হতেন। আর কারো নাম অসুন্দর হলে তিনি তা পরিবর্তন করে দিতেন।



এক কাহিনী

============





মন্দ নামের করুণ পরিণতির এক কাহিনী ইমাম মালেক তাঁর মুয়াত্তায় উল্লেখ করেছেন।

ইয়্হাইয়া বিন সায়ীদ হতে বর্ণিত আছে যে, উমার ইবনে খাত্তাবের কাছে জুহায়না কবীলার এক ব্যাক্তি এল। তিনি তাকে বললেন, তোমার নাম কি? সে জবাব দিল শিহাব (অগ্নি স্ফুলিঙ্গ)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন: তুমি কার ছেলে? সে উত্তর দিল ইবনে দেরাম (অগ্নি শিখার ছেলে)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি কোন গোত্রের লোক? সে বলল, হারাকা (প্রজ্জলন)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তোমার বাসস্থান কোথায়? সে বলল,বাহরুন্নার (অগ্নি গর্ভে)। তিনি সর্বশেষ প্রশ্ন করলেন, কোন অংশে? সে জবাব দিল বিযাতিল লাযা (শিখাময় অংশে)। তখন উমর (রাঃ) তাকে বললেন: যাও তোমার গোত্রের লোকদের কাছে গিয়ে দেখ তারা ভস্মীভুত হয়েছে। লোকটি তাদের কাছে গিয়ে দেখল সত্যিই তারা সকলে ভস্মীভুত হয়েছে।



উমার (রাঃ) দুরদর্শিতার মাধ্যমে এটা উপলব্ধি করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায় মন্দ নাম রাখা ভাল নয়। তাই এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর উত্তম নাম তালাশ করা পিতা মাতা বা অভিভাবকদের উচিত।



নামকরণের সময়

==================



শিশু জন্মগ্রহণ করার পর কখন নামকরণ করা সুন্নাত এ সম্পর্কে আলেমদের কয়েকটি মত আছে। কেউ কেউ বলেছেন শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে নামকরণ ও আকীকা করা সুন্নাত।



হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাসান ও হোসাইনের (রাঃ) আকীকা করলেন জন্মের সপ্তম দিনে এবং তাদের দুই জনের নাম রাখলেন। (ইবনে হাব্বান ও আল মুস্তাদরাক)



আর কেউ কেউ মনে করেন শিশুর জন্ম হবার পর পরই তার নামকরণ করা সুন্নাত। তাঁরা হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেন





আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি তালহার জন্ম হলে তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি উটকে হাত বুলিয়ে আদর করছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার কাছে কি খেজুর আছে? আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর আমি তাঁকে খেজুর দিলাম। তিনি তা চিবিয়ে নরম করলেন এবং শিশুটির মুখ ফাঁক করে তার মুখের ভিতর ভরে দিলেন, শিশুটি তখন তার মুখ নাড়াতে শুরু করলো। নবী (সঃ) বললেন আনসারদের প্রিয় হচ্ছে খেজুর। পরে তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। (বায়হাকী)



এ থেকে বুঝা যায় শিশু জন্মেও পর পরই তার নাম রাখা যায়।





নামকরণে কুসংস্কারের উদাহরণ

==========================







বাংলাদেশের একটি দ্বীপে আমার জন্ম হয়। আমি ছোট বেলা গ্রামেই কাটিয়েছি। গ্রামে নামকরণ কেন্দ্রীক অনেক কুসংস্কার প্রত্যক্ষ করেছি। গ্রাম থেকে এসে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েক বছর ছিলাম। অনেক শিক্ষিত লোকদেরকেও দেখেছি, তাঁদের মধ্যে গ্রামের সেই কুসংস্কার বিরাজ করছে।



আমি গ্রামে লক্ষ করেছি যাদের ছেলে বা মেয়ে জন্ম নেয়ার পর পরই মারা যেত, পরবর্তীতে তাদের সন্তান হলে কপালে কালি মেখে দেয়া হতো এবং তাদের অদ্ভুত ধরনের নাম রাখা হতো। যেমন ধুলো, কালো, গজা, পচা ইত্যাদি। এ ধরনের নামকরণের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল ভুত, পেত্নী, জ্বিন এমনকি যমদুতের কুদৃষ্টি এড়ানো। এটা এক ধরনের কুসংস্কার। সকল মানুষের জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাই এ ধরনের কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে শিশুর নামকরণ করা ঠিক নয়।



শেরকী আকীদা।

=============





আবার অনেককে দেখেছি দীর্ঘ দিন সন্তান না হবার কারণে পীরের দরবারে বা আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে সন্তান ভিক্ষা করতে। এটা সম্পূর্ণ শেরকী আকীদা। কেননা আল্লাহ ছাড়া কারও পক্ষে সন্তান দেয়া সম্ভব নয়। তাঁদের অনেককে দেখেছি দীর্ঘদিন পর সন্তান লাভ করলে এটাকে পীরের দান বলে মনে করতে। তাই তাদের নাম রাখা হতো পীর বখশ বা পীরের দান, খাজা বখশ বা খাজার দান। এ ধরনের নাম রাখাও ঠিক নয়।



এভাবে মুসলমানদের কারো কারো মধ্যে নামকরণ কেন্দ্রীক অনেক কুসংস্কার বিদ্যমান।



নামকরণে কতিপয় লক্ষ্যণীয় দিক

====================





একজন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখা হয়। শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।



১. নাম সুন্দর, মার্জিত, শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ হওয়া প্রয়োজন।



২. আব্দুল্লাহ বা আব্দুর রহমান তথা আল্লাহর সত্তাবাচক বা গুণবাচক নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দ যোগ করে নামকরণ করা ভাল। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে ডাকার সময় যেন আবদ বা অন্য শব্দ যোগ করে ডাকা হয়। শুধু রহমান, রহীম, রাজ্জাক ইত্যাদি গুণবাচক নামে যেন ডাকা না হয়।



৩. নামের আগে কুনিইয়া রাখা যায়। আল্লাহর রাছুল এ ধরনের কুনিইয়া রাখতেন।



৪. মুসলিম শিশুর এমন নাম রাখা উচিত যা শোনার সাথে সাথে বুঝা যায় এটা এক জন মুসলিম শিশুর নাম। অনেক সময় দেখা যায় এমন নাম রাখা হয় যা শুনে বুঝা যায় না এটা কি মুসলিম শিশুর নাম না অন্য কোন ধর্মাবলম্বীর? আবার অনেক সময় ছেলে বা মেয়ের নামের মধ্যে ফারাক করা যায়না। যেমন কাজল, নিশাত, ময়না, টিংকু, শীতল, রীতা, অভি ইত্যাদি।



৫. যে সকল গুণবাচক নামের হকদার একমাত্র রাসুলে কারীম (সঃ) সে সব নামে কারও নামকরণ করা ঠিক নয়। যেমন খাতামুন্নাবীয়্যীন (সর্বশেষ নবী), সাইয়েদুল মুরসালীন (রাসুলগণের নেতা)।



৬. আল্লাহ পাকের যাতী নামে কারও নামকরণ করা হারাম। শুধু আল্লাহ কারও নাম রাখা জায়েয নাই। অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে খাস এমন কোন নাম কারো সাথে লাগোনো যাবেনা। যেমন মালেকুল মুলক (জগতের বাদশাহ) সুলতানুস সালাতীন (বাদশাহদের বাদশাহ) ইত্যাদি।



৭. ফেরেশতাদের নামে নামকরণ করাও অধিকাংশ আলেমের মতে নিষিদ্ধ। তাই জিবরীর, ইসরাফীল, আজরাঈল, মীকাঈল ইত্যাদি নামে নামকরণ করা ঠিক নয়।





৮. যে সকল নাম ইসলামের ইতিহাসে খুবই ঘৃণিত সে সকল নামে কোন শিশুর নামকরণ করা ঠিক নয়। যেমন ইবলীশ, শাদ্দাদ, কারুন, ফেরাউন, আবু জেহেল, আবু লাহাব প্রভৃতি নাম রাখা উচিত নয়।



৯. যে সব নামে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের অর্থ বুঝা যায় সে ধরনের নাম রাখাও ঠিক নয়, যেমন আচিয়া (বিদ্রোণী)।



১০. শিশুর একটি সুন্দর নাম রাখা ভাল। তবে কোন কারণে একাধিক নাম রাখা যেতে পারে।



১১. কারও নাম যদি অসুন্দর হয়, সে বড় হয়ে গেলেও তার নাম পরিবর্তন করা যায়।



১২.এমন কোন নাম রাখা ঠিক নয় যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও আবদ বা গোলাম হওয়া বুঝায়। যেমন গোলাম মোস্তফা, গোলাম নবী, গোলাম রাসুল, আব্দুন্নবী, আব্দুস শামস ইত্যাদি।



তাহনীক ও আকীকা

============

সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর মিষ্টি জাতীয় কোন নরম খাদ্য কিংবা খেজুর চিবিয়ে নরম করে শিশুর মুখের ভিতর দেয়াকেই তাহনীক বলা হয়। তাহনীক করা সুন্নাত। আল্লাহর রাসুল (সঃ) খেজুর দিয়ে তাহনীক করতেন। আমাদের সমাজে মধু দিয়ে তাহনীক করার প্রচলন আছে।



সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর তাহনীক ও নামকরণ করার সাথে সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সন্তানের আকীকা করা। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলে কারীম (সঃ) হযরত হাসান (রাঃ) ও হোসাইন (রঃ) এর জন্মেও সপ্তম দিনে আকীকা করেছেন।



পুত্র সন্তান হলে দুইটি ছাগি, বকরী বা কোরবানীর গরুর মধ্যে দুই অংশ দেয়া ভাল। ছেলে সন্তান হলে সামর্থ না থাকলে এক অংশ দেয়াও জায়েয আছে। আর মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগি, বকরী বা এক অংশ দিতে হয়।



আকীকার গোশত ফকীর মিসকীনকে, আত্বীয় স্বজনকে দেয়া যায় এবং নিজেও খাওয়া যায়। আর আকীকা সপ্তম দিন করতে না পারলে পরে করলেও চলবে।



আল্লাহর যাতী ও সিফাতী নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দ যোগে শিশুর নামকরন



আল্লাহ তায়ালার অনেকগুলো গুণবাচক নাম রয়েছে। তিনি সুরা আল-আরাফের ১৮০ নম্বর আয়াতে নিজের গুণগত নামের বর্ণনা দিয়ে বলেন,

আল্লাহর অনেক সুন্দর নাম রয়েছে। সে নাম গুলোতে তোমরা তাঁকে ডাকো। (আল-আরাফ ১৮০) আলেম গণ আল্লাহ পাকের নামগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।



১.সত্তাবাচক নাম

২. গুণবাচক নাম



আল্লাহর এ সব নামের পুর্বে আবদ শব্দ যোগ করে শিশুর নামকরণ আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর কাছে তোমাদের নামগুলোর মধ্যে প্রিয়তম হলো আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযি ও আবু দাউদ)



এ ভাবে আল্লাহর অন্যান্য গুণগত নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দযোগ করে নাম রাখা ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে আবদ বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর গুণগত নামে কাউকে ডাকা যাবেনা।





যেমন কারো নাম আব্দুর রহমান,আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, আব্দুল মালেক, আতা উররহমান আব্দুর রহীম রাখার পর শুধু রহমান, রহীম, খালেক, মালেক, রাজ্জাক.রব নামে ডাকা ঠিক নয়।



কেননা এ নামগুলোর হকদার হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তবে আল্লাহর এমন কিছু গুণবাচক নাম আছে-যেগুলো আবদ ছাড়াও ডাকা বৈধ। যেমন ওদুদ মানে স্নেহময়। স্নেহের গুণ আল্লাহ ছাড়াও মানুষের মধ্যে আছে। তাই এ নামে মানুষকে ডাকা যায়। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর স্নেহ মমতা আর মানুষের স্নেহ মমতার মাঝে আকাশ পাতাল ফারাক। আল্লাহর মমতার সাথে মানুষের স্নেহ মমতা তুলনা করার সুযোগ নেই।













1 টি মন্তব্য:

  1. Ans: উত্তরঃ বাচ্চার বয়স যখন সাত দিনের মধ্যে তার সুন্দর নাম রাখতে হবে। যেসব নামের শুরুতে ‘আব্দু’ রয়েছে হাদিস শরীফে সেগুলোকে সর্বোত্তম নাম বলা হয়েছে। যেমন: আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান ইত্যাদি। আত্মিয় স্বজনের মধ্যে এ সব নাম ব্যাপকভাবে থেকে থাকলে আন্বিয়া আ., সাহাবায়ে কেরাম রা• দের নামের সাথে মিলিয়ে রাখতে হবে। এমনটাও সম্ভব না হলে ভালো অর্থবোধক আরবী নাম রাখা যেতে পারে। কেননা নামের অর্থগত একটি প্রভাব কোননা কোনভাবে সে ব্যক্তির চরিত্রে ফুটে ওঠে। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন: তোমরা ভাল নাম রাখ করাণ কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার নাম ধরে ডাকা হবে। -আবু দাউদ শরীফ। কাজেই নামের অর্থ খারাপ হলে সেদিন চরম লজ্জা ও ভয়ের কারণ হতে পারে।

    উত্তরমুছুন