সোমবার, ১৮ জুন, ২০১২

যাকাত দান সমপকে উপদেশ

যাদেরকে আল্লাহ তালা জাকাত দেওয়ার তৌফীক দিয়েছেন তারা জাকাত দেওয়ার মাধ্যমে অনেক ছওয়াব অর্জন করেন তাতে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু কিছু ভুলের কারণে যেমনি ছওয়াব কমে যায় তেমনি কিছু সমস্যাও হয়। আমাদের দেশে জাকাত নিতে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অনেক সময় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ সময় মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আবার লাইনে দাঁড় করিয়ে গরিব মানুষদেরকে অপমানও কম করা হয় না। তাই যারা জাকাত দেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ।

১/ সর্ব প্রথম নিয়ত ঠিক করবেন। নিয়ত রাখবেন যে মানুষকে দেখানোর জন্য নয়, শুধু আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য জাকাত দিচ্ছি।
২/ জাকাত যে নিচ্ছেন তার উপর আপনি দয়া করছেন ভাববেন না, বরং মনে করবেন তিনি জাকাত নিয়ে আপনার উপকার করছেন। তাই তাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে অপমান করবেন না।
৩/ এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করুন যাতে জাকাত গ্রহীতাগণকে লাইন ধরে জাকাত নিতে না হয়। যেমন জাকাত দেওয়ার জন্য শুধু একটি দিন ঠিক করবেন না। যে সময় যে আসেন তাকেই দিয়ে দিবেন। ফুরিয়ে গেলে বলে দিবেন যে ফুরিয়ে গেছে।
৪ / রমজানের ২৭ তারিখের জাকাত দেওয়ার জন্য বসে থাকবেন না।
৫/ শাড়ি বা লুঙ্গি মত কিছু না দিয়ে নগদ টাকা দিয়ে দিলে গরীবের উপকার বেশি হবে। কারণ অনেক শাড়ি লুঙ্গি হয়ে গেলে তা আবার কম দামে বিক্রি করতে হয় তাদেরকে।
৬/ নিজের আত্মীয় স্বজনকে জাকাত আগে দিবেন, তবে বাবা-মা, বা ছেলে-মেয়েদেরকে জাকাত দেওয়া জায়েজ নাই।
৭/ আন্দাজ করে কিছু টাকা না দিয়ে হিসাব করে জাকাত দিবেন।
৮/ যেসব মাদ্রাসাতে বোর্ডিং আছে, মানে ছাত্ররা ফ্রিতে খানা খায়, সে সব মাদ্রাসায় টাকা আপনি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবেন। নিজে গিয়ে দিতে না পারলে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে যারা আপনার কাছে আসেন, তাদের সম্মান রক্ষা করে জাকাত দিবেন। পরে আসেন বলে ঘুরা ঘুরি করবেন না। মাদ্রাসার পক্ষ থেকে যে সব আলেম জাকাতের জন্য আসেন তারা আপনার কাজ করে দিচ্ছেন, আপনার উপকার করছেন বলে মনে করবেন। তারা নিজের জন্য আসেন না। দীনের জন্য আসেন। তাদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করবেন।
মহানবী (স:) বলেন, ‘একজন আলেমের মর্যাদা একজন সাধারণ মানুষের ওপর ততটুকুন, যতটুকুন তোমাদের ওপর আমি একজন নবীর মর্যাদা।’ (সহি তিরমিজি)।
৯/ প্রচারণা কামনা করবেন না। [তবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রকাশ্য দানও জায়েজ আছে] হাদিসে আছে صدقة السر تطفيء غضب الرب’ ‘গোপনে দান করা আল্লাহর রাগকে কমিয়ে দেয়’।
জাকাত সম্পর্কে কোরানে অনেক আয়াত আছে। আমি শুধু দানের ফজিলত আর লোক দেখানো দানের ক্ষতি সম্পর্কে দুটি আয়াত উল্লেখ করছি। مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّـهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّـهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿٢٦١﴾الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। সুরা বাকারা = ২৬১,২৬২
ا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। সুরা বাকারা ২৬৪

শুক্রবার, ১৫ জুন, ২০১২

রাখাইন নারীকে ধর্ষণের ফলে দাঙ্গার সহিংসতা সূত্রপাত । এই তথ্যটি সম্পূর্ন মিথ্যা দেখুন ছবি ব্লগ

http://prothom-aloblog.com/img/uploads/eec05c3131e26f40037ac93661bf8294.jpg
মিয়ানমারের মুলধরারা সংবাদ মাধ্যম, আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম এবং বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম থেকে বারবার প্রচারিত হচ্ছে। আরাকানে তিনজন রোহিঙ্গা মুসলমান কর্তৃক গত ২৮ মে’তে ২৬ বছর বয়সী একজন রাখাইন নারীকে ধর্ষণ করা হয় যার ফলে ‘দাঙ্গা’ শুরু হয়।

কিন্তু সেখানকার স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী, বিকল্প সংবাদ মাধ্যম ও ব্লগাররা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় ও মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছেন যে এ ধরণের কোনো অভিযোগে সহিংসতা সূত্রপাত হয়নি। বার্মিজ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, তাছাড়া স্থানীয় বিকল্প সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে এর সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে। [সুত্র: মোহাম্মদ আরজু, ১২ই জনু, বার্তা নিউজ ২৪.নেট ]
http://www.dailynayadiganta.com/img/uploads/37d332b194630326579245633894943e.gif

দাঙ্গার শুরু যেখান থেকে:
সেখানকার স্হানীয় মানবাধিকার কর্মী ও ব্লগাররা তথ্য প্রমাণ দিয়ে দেখাচ্ছেন, শুধু আরাকানে বা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপরই নয়, গত এপ্রিলের উপনির্বাচনের সময় থেকেই পুরো মিয়ানমার জুড়ে সব জাতিগোষ্ঠির মুসলামানদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লেলেইয়ে দেওয়া হয়েছে আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন অং সান সুকি’র ন্যাশনাল লিড ফর ডেমোক্রেসি থেকে নির্বাচিত একজন সাংসদ

সুকির সাংসদের নেতৃত্বে জাতিগোষ্ঠির মুসলামানদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লেলেইয়ে দেয়ার ধারাবাহিকতায় ৩ জুন, বৌদ্ধ ধর্মালম্বি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রায় তিনশ লোক টাঙ্গো শহরে একটি বাস থামিয়ে যে ১১ জনকে কুপিয়ে হত্যা করে, তাদের মধ্যে ১০ জনই ছিলেন তাবলিগের চিল্লায় রওয়ানা হওয়া জাতিগত বার্মিজ মুসলমান। এদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন, যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। বাকি একজন ছিলেন একজন বৌদ্ধ, যাকে মুসলমান ভেবে হত্যা করা হয়।


গত উপনির্বাচনের সময় থেকেই মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় ও মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো (যেমন ‘নিউ লাইট অফ মিয়ানমার’ নামের অনলাইন এজেন্সি) জাতিগোষ্ঠি নির্বিশেষে মুসলামনাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক প্রচারণা শুরু করে নতুন করে। যেমন ৩ জুনের হত্যাকাণ্ডের পরে সংবাদমাধ্যমগুলো গালিসূচক ‘কালার’ (দক্ষিণ থেকে আসা কালা চামড়ার মুসলমান) শব্দ ব্যবহার করে জানায়, আরাকানিজরা ১১ জন ‘কালার’কে হত্যা করেছে।
[সুত্র: মোহাম্মদ আরজু, ১২ই জনু, বার্তা নিউজ ২৪.নেট ]

http://bhamothar.files.wordpress.com/2011/11/10-seaboundary.jpg

আরাকানের ইতিহাস

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পশ্চিম মায়ানমারের আরাকান (নতুন নাম- রাখাইন, সংখ্যাগুরু রাখাইনদের নামে) রাজ্যের একটি উলেখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত। রোহিঙ্গাদের আলাদা ভাষা থাকলেও অধিকাংশই বাংলা ভাষায় কথা বলে। মায়ানমারের আকিয়াব, রেথেডাং, বুথিডাং এলাকায় এদের বাস। মোট জনগোষ্টি ১৪ লাখ, ৫ লক্ষের অ ধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বাস করে বলে ধারনা করা হয়। [সুত্র: ইউকিপিডিয়া] প্রদেশটির রাজধানী আকিয়াব-এর নাম মুছে ফেলা হয়েছে, নাম রাখা হয়েছে সিতউয়ি। ২০ হাজার বর্গমাইল অধ্যুষিত সমগ্র আরাকান উত্তর-পশ্চিমে ১৭১ মাইলব্যাপী বাংলাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। আরাকানের মোট জনসংখ্যা ৪০ লাখ। তন্মধ্যে ২০ লাখ মগ-বৌদ্ধ, ১৪ লাখ রোহিঙ্গা, ৪ লাখ সর্বপ্রণবাদী এবং ২ লাখ হিন্দু-খ্রিস্টান। [সুত্র: ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ১৫ই জুন, আমারদেশ]

খ্রিস্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরাকান ছিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজ্য। অষ্টাদশ শতকে বর্মী রাজ বোধাপায়া (১৭৮২—১৮১১) সশস্ত্র আক্রমণের মাধ্যমে আরাকানকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত করে নিলে দেশটি তার স্বাধীনতা হারায়। তাও মাত্র অর্ধ শতাব্দীর জন্য। তারপরই এ রাজ্য ব্রিটিশ শাসনে চলে যায়। ব্রিটিশ শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবেই এটি আজ মিয়ানমারের অংশ। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দী থেকেই আরাকানের সঙ্গে আরব ও মুসলিম দেশের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ইসলামের অভ্যুদয়ের মাত্র অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সুফী, সাধক, মুবাল্লিগ ও আরব বণিকদের মাধ্যমে আরাকানে ইসলাম ধর্ম প্রচারিত হয়। কালিমা ও বিসমিল্লাহ খচিত আরাকান রাজ্যের নিজস্ব মুদ্রার নিদর্শন পাওয়া যায়। [সুত্র: ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ১৫ই জুন, আমারদেশ]
http://www.mizzima.com/images/NewsPhotos/JUN12/Rakhine-protest.jpg

রাখাইনদের অতীত ইতিহাস

এই রাখাইনরা হলো সাবেক মগ জাতি। যার মাধ্যমে পুরা ইতিহাসকে মুছে ফেলা হয়েছে। একদা মগরা বর্মী রাজা ও পর্তুগিজদের লগে মিলে আরাকানের ভূমিপুত্র রোহিঙ্গা ও বার্মিজ মুসলিমদের ওপর এথনিক ক্লিনজিং চালিয়েছিল, বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে লুটতরাজ চালিয়েছিল, মোগল জমানার শেষের দিকে ও বৃটিশ ঔপনিবেশিকতার সময়ে। তো, অপরাধী মগদের নাম বদল করে দিয়ে বর্মা প্রমাণ করতে চাইছে যে তার দেশের কোথাও মগরা নাই, যারা রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতির ওপর তিন শতক ধরে এথনিক ক্লিনজিং চালানোর কাজে লিপ্ত ছিল।[সুত্র: খোমেনী ইহসান, ১৪ ই জনু, বার্তা নিউজ ২৪.নেট ]


রোহিঙ্গাদের অভিযোগ মিয়ানমারের শরনার্থীদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে অং সান সুচি শুধু কারেনদের ব্যাপারেই বলেন। সুচি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে একটিও আশার বানী শোনান না। রোহিঙ্গারা যখন অং সান সুচি’র সাহায্য চাইছেন তখন সুচি গেলেন ইউরোপে নোবেল পুরস্কার আনতে। যদিও এটা মায়ানমারের অভ্যন্তরিন ব্যাপার। তবে বাংলাদেশ এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যঢ়েষ্ট কারণ আছে। বাংলাদেশ সরকার, বিরোধীদল সহ সবার উচিত বিষয়টি বিশ্বদরবারের নজরে আনা।
 সূত্র---------------------------কপি পোষ্ট

http://www.amarbornomala.com/details13478.html 



http://sonarbangladesh.com/blog/sikder/114636 



ধারাল অ্স্ত্র হাতে মগেরা ।
রোহিংগা নারী পুরুষের মৃতদেহ ।
অসহায় একটি পরিবার । যারা ক্ষুদা তৃষ্ণায় কাতর। কেউ খাদ্য দেয় না তাই ক্ষুদা মিটেনা । নদীর পানি নোনা তাই তৃষ্ণা মিটেনা।
কেউ নাই সাহায্য করার । শক্তিশালী পুরুষরাও আজ অসহায় ।
কেউ যদি সাহায্য করে এই আশায় দিন গুনছে।


মৃত্যুর মিছিলে আরও কয়েকজন।

কি দোষ ছিল এই শিশুটির ? শুধু মুসলমান বলেই কি মরতে হল ?
এর দোষ এ ছিল মুসলমান । কারন মুসলমানরা মানুষ নয়।
স্বজন হারানোর কান্না ।


আর কত চোখের জল আর কত অসহায়ত্ব ফুটাতে হবে চেহারায় ?


বুধবার, ১৩ জুন, ২০১২

আহলে হাদীস দলের সংজ্ঞাতেই প্রতারণা দেখতে এখানেই দেখুন

আহলে হাদীস দলের সংজ্ঞাতেই প্রতারণা
যে দলের রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে ইংরেজদের কাছ থেকে সে দলের সংজ্ঞার মাঝে ধোঁকাবাজী ও প্রতারণা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ওদের সংজ্ঞার মাঝেই ধোঁকাবাজী আছে এটা বুঝার সহজ পদ্ধতি হল-
আপনি তাদের জিজ্ঞেস করুন-আহলে হাদীস কাকে বলে?
ওরা বলবে-কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার নাম আহলে হাদীস।
তাহলে কি দাঁড়াল? যারা কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানে তাদের বলা হয় আহলে হাদীস। মানে তারা কোন ব্যক্তির অনুসরণ [যার আরবী হল তাক্বলীদ] করে না।
এবার তাদের জিজ্ঞেস করুন-কোন হাদীসকে আল্লাহ তায়ালা সহীহ বা দুর্বল বলেছেন কুরআনে? বা নবীজী সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেছেন হাদীসে?
ওরা বলবে-না বলেন নি।
আপনি তখন তাদের বলুন-হাদীস সহীহ বা দুর্বল হওয়ার বিষয় যেহেতু আল্লাহ ও বলেননি, নবীজী সাঃ ও বলেননি তাই তারা নিজেরা হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলে আহলে হাদীস হওয়া থেকে বের হয়ে যায়। কারণ তারা না আল্লাহ, না নবী। তাদের কোন অধিকার নেই কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলা। যেহেতু কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার নাম হল আহলে হাদীস। আর কুরআনে কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলা হয়নি। সেই সাথে হাদীসেও নবীজী সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেননি। তাই কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলার মানেই হল এরা নিজেদের হয়তো আল্লাহ নয়তো নবী দাবি করছে। যদি বলে আল্লাহ বা নবী দাবি করেনা, বরং সহীহ বা দুর্বল বলে থাকে হাদীস বিশারদ মুহাদ্দিসদের বক্তব্যের আলোকে। তাহলেও তারা আর আহলে হাদীস থাকে না।
কারণ মুহাদ্দিসীনদের কথা মানা, মানেই হল অনুসরণ করা যাকে আরবীতে বলা হয় তাক্বলীদ। আর তাক্বলীদ হল ওদের ভাষায় শিরক। মুহাদ্দিসীনদের কথা মানা মানেই অনুসরণ তথা তাকলীদ। আর তাক্বলীদ করার মাধ্যমে তারা নিজেদের বক্তব্য অনুযায়ী শিরকী কাজ করে। অথবা সেই মুহাদ্দিসকে আল্লাহ বা নবী [নাউজুবিল্লাহ] দাবি করে। দাবি যদি না করে তাহলে তারা কিছুতেই স্বীয় সংজ্ঞা অনুযায়ী আহলে হাদীস থাকতে পারে না। হয়তো নিজেকে আল্লাহ বা নবী দাবিদার হয় [নাউজুবিল্লাহ], নতুবা মুহাদ্দিসীনদের তাক্বলীদ করে হয় ওদের ভাষায় শিরককারী, কিংবা মুহাদ্দিসীনদেরই আল্লাহ বা নবী দাবিদার হবে [নাউজুবিল্লাহ]।
সুতরাং ওরা মুখে কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার কথা বললেও তারা নিজেদের এ দাবিতে হাদীসের প্রকারভেদ ও সংজ্ঞাতেই ঠিক থাকতে পারে না। অথচ সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণ করা ছাড়া শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার প্রচারণা করে একটি মিথ্যা ও প্রতারণামূলক মতবাদের দিকেই আহবান করে।
যাচাই বাছাই ছাড়া আহলে হাদীস মতবাদের দিকে আহবানকারী নবীর হাদীস অনুযায়ী মিথ্যাবাদী
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ (سنن ابى داود-كتاب الأدب، باب فِى التَّشْدِيدِ فِى الْكَذِبِ، رقم الحديث-4994)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যা শুনে তা’ই বলতে থাকা [যাচাই বাছাই ছাড়া] ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ঠ। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৬২৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৮২০১, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-১৪১৫, মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-১৯৮০, মুসনাদে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, হাদীস নং-১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬১৩১}
সুতরাং যেসব আহলে হাদীস মতাদর্শীরা তাদের আহলে হাদীস হওয়ার সংজ্ঞার এ ধোঁকাবাজী সম্পর্কে যাচাই বাছাই ছাড়াই নিজেদের মতবাদের দিকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য ডাকে ওরা নবীজী সাঃ এর হাদীসের ভাষায় মিথ্যাবাদী।
আমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তাক্বলীদের পর্যায়
আমাদের আক্বিদা হল সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহই অনুসরণীয় সেসব ক্ষেত্রে যেসব ক্ষেত্রে কুরআন হাদীসের বর্ণনা সুষ্পষ্ট। তাতে কোন প্রকার অস্পষ্টতা নেই। সাথে সাথে পরস্পর বিরোধী কোন বর্ণনা হাদীসে বা কুরআনে নেই। সেসব ক্ষেত্রে কারো তাকলীদ করা জায়েজ নয়। আমরা সেসব ক্ষেত্রে কারো তাকলীদ বা অনুসরণ করিও না। যেমন নামায ফরয, রোযা ফরয, হজ্ব ফরজ ইত্যাদী।
কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে আয়াত বা হাদীসের অর্থ বোধগম্য নয় কঠিন। বা পরস্পর বিরোধী বর্ণনা হাদীসে এসেছে। যেমন ইমামের পিছনে মুক্তাদী কিরাত পড়বে কি না? আমীন জোরে বলবে না আস্তে বলবে? সেসব ক্ষেত্রে নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ মুজতাহিদ ব্যক্তির ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করি। যে মুজতাহিদদের ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী বলেছেন-
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}
তারা ভুল করলেও এক নেকি পাবে, আর সঠিক করলে ডাবল নেকি তাদের ব্যাখ্যাকে অনুসরণ করি। ব্যক্তিকে অনুসরণের জন্য নয়, বরং তিনি কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ হওয়ার কারণে, এবং নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্ব হওয়ায় নিজের ইচ্ছা ও বুঝের উপর নির্ভর না করে বিজ্ঞ ব্যক্তির ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করি।
অন্ধ তাক্বলীদ কাকে বলে?
আজ কালের কিছু লোক এই অপবাদ ছড়ায় যে, এটাতো অন্ধ তাকলীদ।
আফসোস! এই বেচারারা অন্ধ তাকলীদের অর্থও জানেনা। অন্ধ তাকলীদ এটাকে বলে, যেখানে অন্ধ অন্ধের পিছনে চলে। তখন উভয়ে কোন গর্তে নিপতিত হয়। এটা অন্ধ তাকলীদ। আর যদি অন্ধ দৃষ্টিবান মানুষের পিছনে চলে, তো এই দৃষ্টিবান ব্যক্তি এই অন্ধকেও তার চোখের বরকতে সকল গর্ত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে। আর মানজিলে মাকসাদে পৌঁছিয়ে দিবে।
আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন (নাউজুবিল্লাহ) অন্ধ নয়। তারা দৃষ্টিবান। তারা কুরআন সুন্নাহ ও সাহাবাদের ফাতওয়া ও জীবনাচার সম্পর্কে, সেই সাথে আরবী ভাষাসহ ইলমী সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ।
তবে অন্ধ ব্যক্তি আছে। আছে অন্ধ মুকাল্লিদও। যারা নিজেরাও অন্ধ। তাদের পথিকৃত ও অন্ধ। অর্থাৎ তাদের ইজতিহাদের চোখ নাই। এই জন্যই নবীজী সাঃ বলেছেন যে, যে মুর্খকে দ্বীনের পথিকৃত বানায়, সেই মুর্খ নিজেও গোমড়া হয়, আর তার অনুসারীদেরও গোমড়া করে। এর নাম অন্ধ তাকলীদ।
আল্লাহ তায়ালা নিষ্পাপ নবী সাঃ আর পূণ্যবান মুজতাহিদীনদের গবেষণা-সম্পাদনার উপর আমলে করার তৌফিক দান করুন। আর নব্য নব্য ফেতনা থেকে হিফাযত করুন।
তাক্বলীদের অস্বিকারকারীরা নিজেদের পিতার পরিচয় পেতে পারে না
তাক্বলীদ মানেই হল বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে মানা। যাকে যে বিষয়ে প্রাজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি মনে হয় তাকে মানার নামই তাক্বলীদ। কথিত আহলে হাদীস গোষ্ঠি যেহেতু বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির তাক্বলীদকে শিরক বলে তাই তারা নিজেদের পিতাকে পিতা বলতে পারবে না। কারণ পিতা কে? এটা জানার জন্য মায়ের উপর বা কাছের আত্মীয় স্বজনের কথার তাক্বলীদ করতে হয়।
যেহেতু মায়ের কথা ছাড়া ও স্বীকারোক্তিকে বিশ্বাস ও মানা তথা তাক্বলীদ করা ছাড়া পিতার পরিচয় পাওয়া যায় না, আর আমরা যেহেতু তাক্বলীদকে স্বীকার করি তাই আমরা আমাদের পিতাকে চিনি মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী। মাকে অনুসরণ করে, মাকে বিশ্বাস করে। তাকে বিশ্বাসভাজন মনে করে।
কিন্তু কথিত আহলে হাদীসরা যেহেতু তাক্বলীদকে শিরক বলে। নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির অনুসরণ তথা তাক্বলীদকে মানে না, তাই তারা তাদের পিতার পরিচয় পেতে পারে না। কারণ পিতাকে চিনতে হলে মাকে বিশ্বাস করতে হবে। মায়ের কথার তাক্বলীদ করতে হবে। আর তাক্বলীদ শিরক হওয়ায় তারা তা করতে পারে না। তাই তারা হয়ে যাবে পিতাহীন জারজ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com

নসীহতের ৪ পদ্ধতি

নসীহতের পদ্ধতি

 

নসীহত শব্দটি মূলত আরবী। আরবী ভাষায় এ শব্দের অর্থ কল্যাণকামিতা। এজন্য উপদেশ-নসীহতের উদ্দেশ্যও কল্যাণকামিতা ছাড়া অন্য কিছু হওয়া উচিত নয়। কল্যাণকামিতার প্রতি উদ্বুদ্ধদ করে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-‘দ্বীন হচ্ছে কল্যাণকামিতা।’ সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, কার প্রতি কল্যাণকামিতা ইয়া রাসূলাল্লাহ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর কিতাবের প্রতি, মুসলমানদের নের্তৃবৃন্দের প্রতি এবং সাধারণ মুসলমানদের প্রতি। নসীহত ফলদায়ক হওয়ার জন্য অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে ইখলাস ও বিচক্ষণতা। এ দু’ টো বিষয় না হলে নসীহত ফলদায়ক হওয়ার আশা করা উচিত নয়। নসীহতের ক্ষেত্রে সহজ কিছু নীতি এখানে উল্লেখ করছি :
  • ১. সর্বাবস্থায় ধৈর্য্যশীল হওয়া প্রয়োজন। যাকে নসীহত করা হচ্ছে সে তা গ্রহণ করবেই এমন মনে করা উচিত নয়। তদ্রূপ তাৎক্ষণিকভাবে নসীহত গ্রহণ না করলেও হতাশ হওয়া উচিত নয়। কেননা, হতে পারে এ মুহূর্তে সে তা গ্রহণ করেনি, কিন্তু এক সময় করবে। তদ্রূপ একজন গ্রহণ না করলে অন্যজন করবে।
  • ২. নসীহতের ক্ষেত্রে নম্রতা ও কোমলতা অপরিহার্য। সর্বদা ক্রদ্ধ হওয়া বা কঠিন বাক্য ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে বিরক্তি ও দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে কোমলতা নৈকট্য ও মুহব্বত সৃষ্টি করে।
  • ৩. সালাফে সালেহীনের কর্ম ও সাধনা এবং ত্যাগ ও মুজাহাদা বেশি বেশি আলোচনা করা উচিত।
  • ৪. ভুল-ত্রুটি সংশোধনের ক্ষেত্রে সাবধানতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন।
মনে রাখতে হবে, যাকে সংশোধন করা হচ্ছে তার কল্যাণকামিতাই উদ্দেশ্য, ব্যক্তিগত ক্ষোভ চরিতার্থ করা উদ্দোশ্যে নয় ৷

















পাহাড়ের জীবন আছে, পাথরেরও জীবন আছে। পাথর ও কি হাঁটতে পারে



ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালীর মরুভূমির এই চলন্ত পাথরের রহস্যের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা আজো পরিষ্কারভাবে দিতে ব্যর্থ। এখানে হঠাৎ হঠাৎই একশ টনের ওপরের ওজনের পাথরকেও একশ গজ পর্য়ন্ত এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা এর কারণ হল তীব্র বাতাস এবং মরুর কাদাময় বালির প্রবাহ। কিন্তু তাঁরা ব্যাখ্যা করতে পারেন নি যে কিভাবে পাশাপাশি থাকা দুটি প্রায় একই ওজনের পাথর ভিন্ন গতি এবং ভিন্ন দিকে সরে যেতে পারে। তাছাড়া হিসেবে বলে যে ঐ ওজনের একেকটি পাথর নড়াতে একশ মাইল গতির বায়ূপ্রবাহ দরকার যা ঐ মরুভূমিতে অনুপস্থিত। কাজেই এই ঘটনাটি এখনো প্রকৃতির এক অমিমাংসিত রহস্য হয়ে আছে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পাথরের মাঝে এমনও আছে যা আল্লাহর ভয়ে ফেটে যায়, গড়িয়ে পড়ে’ (২:৭৪)। ‘আল্লাহর পথে শহীদদেরকে মৃত বলো না, তারা নিজেদের পালনকর্তার কাছে জীবিত এবং জীবিকা প্রাপ্ত’ (৩:১৬৯)। ‘আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবই আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর তসবীহ পাঠ করে থাকে কিন্তু তোমারা বোঝ না’ (১৭:৪৪)। ‘পর্বত ও পক্ষীকুল ছিল দাউদের অনুগত, তারা তার সাথে আল্লাহর তসবীহ পাঠ করতো (২১:৭৯)।

অর্থাৎ পাহাড়ের জীবন আছে, পাথরেরও জীবন আছে।

-ফেইসবুক বাংলা কমিকস পেইজ থেকে।

মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

টেষ্ট টিউবের মাধ্যমে প্রজনন এবং এতদসংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান কি??

টেষ্ট টিউবের মাধ্যমে প্রজনন এবং এতদসংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান

মূল-

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী দাঃ বাঃ
ভূমিকা
বেশ কিছুদিন আগে টেষ্টটিউব পদ্ধতিটি জায়েজ না নাজায়েজ? এ ব্যাপারে আমাদের সাইটে একটি প্রশ্ন এসেছিল। যেহেতু বিষয়টি নব উদ্ভুত বিষয়, তাই এ ব্যাপারে সরাসরি কোন বক্তব্য ফিক্বহের কিতাবে না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই এ বিষয়ে অধমের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে নিজের পক্ষ থেকে লিখা নিরাপদ মনে হয়নি। তাই খুঁজছিলাম বিজ্ঞ আলেমদের কোন সমৃদ্ধ লিখা। আল্লাহর রহমতে ভারতের হায়দারাবাদের দারুল উলুম সাবিলুস সালামের পরিচালক বিজ্ঞ আলেম মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী সাহেবের একটি লিখা দেখতে পাই তাঁর প্রণীত “জাদিদ ফিক্বহী মাসায়েলে”। উক্ত লিখাটিই বাংলায় অনূদিত করাটাকে উপকারী হিসেবে মনে হ্ওয়ায় তা সরল বাংলায় অনুদিত করতে চেষ্টা করেছি। বাকি অযোগ্যতার কারণে অনুবাদে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। আশা করি পাঠকদের উপকারে আসবে এ অনুবাদটি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত হতে সাহায্য করুন। আমীন।
অধম অনুবাদক

টেষ্ট টিউবের মাধ্যমে প্রজনন
=======================


ডাক্তারী বিষয়ে প্রযুক্তিগত উন্নতী যেসব নতুন ফিক্বহী মাসআলার উদ্ভব করেছে তার মাঝে অন্যতম একটি মাসআলা হল “টেষ্টটিউবের মাধ্যমে প্রজনন”। এই উদ্ভাবন অনেক নোংরামীর দরজাকে খুলে দিয়েছে। অন্যদিকে সন্তান বঞ্চিত লোকদের জন্য এটি শুনাচ্ছে আশার বাণী। সচেতন নাগরীক হিসেবে আমাদের এ সকল বিষয়ে নোংরামী এবং খারাবীর দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সাথে সাথে সত্যান্বেষী হিসেবে এটিরও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন যে, যদি এর কোন জায়েজ সুরত থাকে, সেটিকে অযথা না জায়েজ বলা থেকে বিরত থাকা। সেই সাথে কোন সুরত যদি জায়েজ হয়, তাহলে তৎসংশ্লিষ্ট ফিক্বহী হুকুম ও তার প্রভাবের ব্যাপারেও রাখতে হবে তীক্ষ্ণ নজর।


স্ত্রী ছাড়া অন্য মহিলার ডিম্বানু সংমিশ্রণ
============================

মৌলিকভাবে টেষ্টটিউবের মাধ্যমে প্রজননের দু’টি পদ্ধতি। একটি হল-অপরিচিতা মহিলা ও পুরুষের ডিম্বানু ও শুক্রানো মিশ্রণ করে প্রজনন করা। চাই এ দুই অপরিচিত উৎসগিরি [ডিম্বানু ও শুক্রানু] কোন টিউবে একত্র করা হোক, বা সেই মহিলার জরায়ুতে বা অন্য কোন মহিলার জরায়ুতে হোক। অথবা সেই পুরুষের নিয়মসিদ্ধ ও শরয়ীতসিদ্ধ স্ত্রীর জরায়ুতে তা ফিট করা হোক।
এ পদ্ধতিটি একদমই না জায়েজ। কেননা এতে করে প্রজননে সংমিশ্রণ ঘটে। আর ব্যভিচারের মূল নিষিদ্ধতা এ কারণেই। এ ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা আছে-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-
عَنْ رُوَيْفِعِ بْنِ ثَابِتٍ الأَنْصَارِىِّ قَالَ قَامَ فِينَا خَطِيبًا قَالَ أَمَا إِنِّى لاَ أَقُولُ لَكُمْ إِلاَّ مَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ يَوْمَ حُنَيْنٍ قَالَ « لاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ يَسْقِىَ مَاءَهُ زَرْعَ غَيْرِهِ (سنن ابى داود-كتاب النكاح، باب فِى وَطْءِ السَّبَايَ، رقم الحديث-2160)
অনুবাদ-হযরত রুয়াইফি বিন সাবিত আনসারী রাঃ একদা খুতবাদানকালে বলেন-আমি কি তোমাদের বলব না যা আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি হুনাইন যুদ্ধের দিন? তিনি বলেছেন-আল্লাহ ও আখেরাত বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে, সে তার পানি [বীর্য} দিয়ে অন্য কারো জমি [জরায়ু] প্রবাহিত করবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৬০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬৯৯০, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৭৪৯, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪৪৮২}
এ মিশ্রণ থেকে বাঁচার জন্যই বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার পর স্ত্রীর উপর ইদ্দত পালনকে আবশ্যক করা হয়েছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ লিখেন-
منها معرفة براءة رحمها من مائه ، لئلا تختلط الأنساب ، فان النسب أحد ما يتشاح به ، ويطلبه العقلاء ، وهو من خواص نوع الانسان ، ومما امتاز به من سائر الحيوان ، (ححة الله البالغة، كتاب النكاح، باب العدة-2/13)
অনুবাদ-ইদ্দত পালনের উপকারিতার মাঝে এটাও একটা যে, এর দ্বারা মহিলার জরায়ু পূর্ব স্বামীর উৎসগিরি [ডিম্বানু] থেকে মুক্ত হওয়া বুঝা যায়। যেন বংশে সংমিশ্রণ সৃষ্টি না হয়। কেননা বংশ এটি এমন বিষয় যার কামনা করা হয়। আর জ্ঞানীরা যার অনুসন্ধানী। যা মানুষের বিশেষত্ব। এর মাধ্যমে মানুষ অন্য প্রাণী থেকে বৈশিষ্টমন্ডিত। {হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা-২/১৩}
সুতরাং পুরুষ ও নারীর উৎসগিরির সংমিশ্রণের সকল পদ্ধতিই গোনাহের কাজ। আর হুকুমের দিক থেকে ব্যভিচার। তবে যেহেতু হদ [শরীয়ত নির্দিষ্ট শাস্তি] সাধারণ সন্দেহর কারণেও বাদ হয়ে যায়, আর এখানে সেই সন্দেহ বিদ্যমান। কেননা ব্যভিচার হল দুই গায়রে মাহরামের মাঝে না জায়েজ শারিরিক কর্ম অর্থাৎ শারিরিক সম্পর্কের নাম, আর এ পদ্ধতিতে উক্ত বিষয়টি বাহ্যিকভাবে অনুপস্থিত। এছাড়াও ব্যভিচারের মাঝে পুরুষ ও নারী একজন অপরজনের শরীর উপভোগ করে। আর এ প্রকারের যান্ত্রিক কাজে সে ধরণের শারিরিক মজা অনুভূত হয় না, তাই জিনার নির্ধারিত হদ তথা শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি কার্যকর হবে না।
কিন্তু যেহেতু এ কর্মটি মৌলিকত্বের দিক থেকে ব্যভিচারের মতই ক্ষতিকর। তাই বিচারক এ কারণে ন্যায্য শাস্তি প্রয়োগ করবে।
যদি সে মহিলাটি কোন পুরুষের স্ত্রী থাকা অবস্থায় অন্য কোন পুরুষের বীর্য দ্বারা অন্তসত্মা হয়,অথবা সন্তান জন্ম দেয়, তাহলে সে সন্তানের বংশ স্ত্রীর আসল স্বামী থেকেই হবে। কারণ বংশ প্রমাণের অধ্যায় ফিক্বহী মুলনীতি হল-যা রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
عن أبى هريرة : قال النبي صلى الله عليه و سلم ( الولد للفراش وللعاهر الحجر (صحيح البخارى-كتاب الحدود، باب للعاهر الحج، رقم الحديث- 6432)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-সন্তান হবে তার বিছানা হল যার, আর লম্পটের জন্য হল পাথর নিক্ষেপন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৪৩২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৬৮৮, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪৩১৪}
আর স্ত্রীকে তার স্বামীর বিছানা নির্ধারিত করা হয়েছে [হেদায়া-২/৪৩, বাবু সুবুতিন নাসাব]। এমনকি অবিবাহিত মেয়েও যদি এ পদ্ধতিতে মা হয়, তাহলেও সে পুরুষ থেকে বাচ্চার বংশ প্রমাণিত হবে না, যার বীর্য দ্বারা সে গর্ভ ধারণ করেছে, বরং বংশ সাব্যস্ত হবে জন্মদায়িনী মেয়ের পক্ষ থেকে। যেমন ব্যভিচারের দ্বারা জন্ম নেয়া বাচ্চার হুকুম।
হ্যাঁ, যদি কোন অপরিচিত মেয়ের ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয়, তারপর তা কোন পুরুষের শুক্রানুর সাথে টিউবের মাঝে সংমিশ্রণ করা হয়। তারপর পরাগায়িত সংমিশ্রণটি সেই পুরুষের বৈধ স্ত্রীর গর্ভে স্থানান্তর করা হয়। আর তার স্ত্রী তা গর্ভে ধারণ করে, তাহলে এ থেকে জন্ম নেওয়া বাচ্চার মা হবে সে গর্ভধারণকারী মহিলা। কেননা কুরআনে মা সে মহিলাকে বলা হয়েছে যে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে। {সূরা মুজাদালা-২)
যখন পুরুষটির স্ত্রী মা হল, তখন বাচ্চা তার বিছানা থেকেই হল, এজন্য লোকটি বাচ্চার পিতা সাব্যস্ত হবে। আর গর্ভে ধারণকারী মায়ের স্বামী থেকেই বংশ প্রমাণিত হবে।
থেকে গেল সে মহিলার কথা, যার ডিম্বানু প্রজননের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, সে মহিলার অবস্থান মা হিসেবে হবে না। কেননা শরীয়তে এতটুকু প্রমাণই যথেষ্ঠ নয় যে, প্রসূত বাচ্চা কারো অংশ হওয়া। বরং এটাও জরুরী যে, স্বীয় প্রজননে যে পুরুষ-নারীর অংশ হল সেটা জায়েজ ও হালাল পদ্ধতিতে হতে হবে। এ কারণেই ব্যভিচারের দ্বারা বংশ প্রমাণিত হয় না। অথচ প্রসূত বাচ্চা ব্যভিচারীর অংশ থেকেই হয়েছে। আর দুগ্ধপানের সময়সীমা দুই বছর অতিক্রান্তের পর মহিলার দুধ পান করলে দুধ মায়ের সম্পর্ক সাব্যস্ত হয় না, যেহেতু এ দুগ্ধপান শরীয়তসিদ্ধ ও বৈধ পদ্ধতিতে হয়নি। তবে যেহেতু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে বিবাহ হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, তাই ব্যভিচারের দ্বারাও বিবাহ হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয়। এ কারণে প্রসূত বাচ্চার জন্য যার শুক্রানু দ্বারা বাচ্চার প্রজনন হল তার সকল খান্দানের সাথে বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত হয়, তেমনি যে মহিলার ডিম্বানু দ্বারা প্রজনন হল সেই মহিলার খান্দানের সাথে বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত হবে। ঠিক তেমনি সেই মহিলার খান্দানের সাথেও বিবাহ হারাম হওয়া সাব্যস্ত হবে, যার গর্ভে বাচ্চাকে ধারণ করে প্রসবের কষ্ট সহ্য করেছে।
 
স্বামী স্ত্রীর উৎসগিরি [শুক্রানু ও ডিম্বানু] সংমিশ্রণ
=====================================


দ্বিতীয় পদ্ধতি হল-স্বামী ও স্ত্রীর উৎসগিরিকে সংমিশ্রণের মাধ্যমে প্রজনন করা। এর তিনটি পদ্ধতি হতে পারে-
১-স্বামীর শুক্রানু ইনজেকশনের দ্বারা স্ত্রীর গর্ভে পৌঁছানো।
২-স্বামী ও স্ত্রীর উৎসগিরি [শুক্রানু ও ডিম্বানু] সংগ্রহ করে তা টিউবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাখা হবে। তারপর সেটি মহিলার গর্ভে স্থানান্তরিত করা হবে।
৩-স্বামী ও স্ত্রীর উৎসগিরি সংগ্রহ করে সেই স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভে স্থানান্তরিত করে দেয়া হবে। এ কারণে যে, প্রথম স্ত্রী গর্ভ ধারণে সক্ষম না হয় অসুস্থতার কারণে বা অক্ষমতার কারণে।
এ পদ্ধতিগুলোতে একটি প্রশ্নতো এটি হয় যে, এ পদ্ধতিগুলো কি শুধুমাত্র সন্তানের বাবা-মা হওয়ার আগ্রহ ও মনের প্রশান্তির কারণে জায়েজ হবে?
দ্বিতীয়ত প্রসূত সন্তানের বংশ পিতা-মাতা থেকে প্রমাণিত হবে?
তৃতীয়ত তৃতীয় পদ্ধতিতে প্রসূত সন্তানের মা কে হবে? যার ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয়েছে সে হবে মা? না কি যার গর্ভে লালিত হয়েছে ভ্রুণ এবং যে সন্তান ধারণের কষ্ট সহ্য করেছে সে হবে মা?
প্রথমে আমাদের এটা ভাবতে হবে যে, এমন করা জায়েজ আছে কি না?
যারা এ পদ্ধতিগুলোকে না জায়েজ বলেন এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হল ৩টি। যথা-
-পুরুষকে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্য বের করার দরকার হবে। আর হস্তমৈথুন করা জায়েজ নয়।
-পুরুষ ও নারীর সতর খুলতে হবে। বিশেষ করে নারীরতো হবেই। আর চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রয়োজন ছাড়া ডাক্তারের সামনেও সতরহীন হওয়া জায়েজ নয়।
-এ পদ্ধতিটি স্বাভাবিক রীতি বিরুদ্ধ কাজ। আর শরীয়তের আম নীতি হল-স্বাভাবিক রীতির বিরোধী বিষয়কে বাঁধা দেয়।
হস্তমৈথুনের বিষয়টিতো শরীয়ত সুনিশ্চিত নিষিদ্ধ করেছে। আর জমহুর ফুক্বাহারা এটাকে না জায়েজ বলেছেন। কিন্তু যেখানে তীব্র প্রয়োজন হয়, সেখানে এটাকে জায়েজ ও বলেছেন। আব্দুর রশীদ তাহের বুখারী রহঃ লিখেন-
ولا يحل هذا الفعل خارج رمضان ان قصد قضاء الشهوة وان قصد تسكين الشهوة أرجو أن لا يكون عليه وبال (خلاصة الفتاوى-1/26)
অনুবাদ-এ কর্মটি [হস্তমৈথুন] রমযান ছাড়া অন্য সময়ে [রমযানের মতই] হালাল হবে না, যদি মনের কুপ্রবৃত্তির জন্য এমনটি করে। তবে যদি উন্মদনার প্রাবল্যতা কমাতে এমনটি করে তাহলে আশা করা যায় কোন শাস্তি হবে না। (খুলাসাতুল ফাতওয়া-১/২৬)
আমাদের জমানার ডাক্তারী গবেষণা, ও পরীক্ষার জন্য এর অনুমতি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
কথা হল-সন্তানের পিতা-মাতা হওয়া একটি স্বভাবজাত আগ্রহ। আর কখনো কখনো এ আগ্রহ এতটাই বেড়ে যায় যে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে তা জরুরতের পর্যায়ে উপনীত হয়ে যায়।
অন্যান্য ফুক্বাহায়ে কিরাম কিছু এমন কাজকে জায়েজ বলেছেন-যা পরিণতির দিক থেকে একেবার হস্তমৈথুনের মতই। যেমন-আজল করা তথা স্ত্রীর সাথে এমনভাবে সহবাস করা যে, যখন বীর্য স্খলীত হওয়ার সময় হয়ে যাবে, তখন বিশেষ অঙ্গ বের করে বাহিরে বীর্যপাত করা। ভিতরে নয়। হানাফীদের মতে এ পদ্ধতিটি জায়েজ। হস্তমৈথুনে যেমন উত্তেজনা প্রশমিত করা হয়, আর বীর্যকে করা হয় নষ্ট, তেমনি আজল করে উত্তেজনা প্রশমিত করা হয়, আর বীর্যকে নষ্ট করা হয়। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, মহিলার শরীর দ্বারা আনন্দ লাভ করার বদলে হস্তমৈথুনে স্বীয় হাতে আনন্দ লাভ করে।
হস্তমৈথুন নিষিদ্ধতার কারণ হল-এভাবে মানুষ প্রাণ সঞ্চারী বীর্যকে মূল কাজে ব্যবহার না করে উদ্দেশ্যহীন ব্যবহার করে এবং অযথা নষ্ট করে। এবার ভেবে দেখুন-যদি বৈজ্ঞানিক প্রজননের জন্য হস্তমৈথুন করা হয়, তাহলে এর উদ্দেশ্যই পাল্টে যাচ্ছে। এখানে হস্তমৈথুন দ্বারা প্রাণ সঞ্চারী বস্তুকে নষ্ট করা নয়। বরং এটাকে ফলবান ও কার্যকরি করার জন্যই করা হচ্ছে। তাই এ পদ্ধতিটি নিষিদ্ধতার অধীনই নয়।
দ্বিতীয় কারণ তীব্র প্রয়োজন ছাড়া সতরহীন হওয়া জায়েজ নয়। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটি একটি শক্তিশালী কারণ, যা তা নিষিদ্ধ হওয়ার উপর দাঁড় করানো যায়। কিন্তু চিন্তা করুন-এক হল সন্তান লাভ করা একটি অনিস্বিকার্য তীব্র আকাংখা হয়। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। সন্তানহীনতার প্রভাব মহিলাদের অনেক সময় শারিরিক-মানসিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করে দেয়। কখনো কখনো স্বামী স্ত্রীর মাঝে এ ব্যাপারটি একটি শক্ত মন কষাকষির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি বিচ্ছেদের মত ঘটনাও ঘটে থাকে। কখনো নাজায়েজ পদ্ধতিতে গর্ভ হওয়ার মত গোনাহে লিপ্ত হওয়ার বাসনাও মনে জাগরিত করে তোলে।
এ কারণে এ ব্যাপারটি সাধারণ মহিলাদের জন্য এটা বলা যায় যে, এটা জরুরী নয়। কিন্তু কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে তা জরুরতের পর্যায়ভূক্ত হতে পারে।
এবার যখন আমরা ফিক্বহী ইবারত দেখি, তখন স্পষ্ট জানা যায় যে, কিছু এমন সুরতেও সতরহীন হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে যেটা মূলত কোন কঠিন অসুখ নয়, কিন্তু সম্ভাবনার সাথে কঠিন অসুখ হতে পারে, যেমন সন্তানহীনতা কখনো কঠিন রোগের কারণ হতে পারে, আল্লামা সারখসী রহঃ লিখেন-
فى المبسوط- وقد روي عن أبي يوسف رحمه الله تعالى أنه إذا كان به هزال فاحش وقيل له أن الحقنة تزيل ما بك من الهزال فلا بأس بأن يبدي ذلك الموضع للمحتقن وهذا صحيح فإن الهزال الفاحش نوع مرض يكون آخره الدق والسل (المبسوط
অনুবাদ-ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ থেকে বর্ণিত। যদি কারো চূড়ান্ত পর্যায়ের দুর্বলতা দেখা দেয়, আর তাকে বলা হয় যে, ইঞ্জেকশন পুশ করার দ্বারা তার দুর্বলতা দূরিভূত হতে পারে, তাহলে তার জন্য কোন সমস্যা নেই ইঞ্জেকশনের জন্য সে স্থান [পায়খানার স্থান] খুলে দেয়াতে। আর সঠিক কথা হল অধিক দুর্বলতাও একটি অসুখ। যার সমাপ্তি চিকন হয়ে যাওয়া বা যক্ষ্মা দ্বারা হয়। {মাবসূতে সারাখসী-১/১৫৬}
এ রায়টিতো কাযী আবু ইউসুফ রহঃ এর।
যৌনশক্তি বৃদ্ধি ফুক্বাহাদের বর্ণানাভঙ্গি দ্বারাতো জরুরতের অন্তর্ভুক্ত বলে সাব্যস্ত হয় না, যেমন খোদ সারাখসী রহঃ ই তা জরুরতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা অস্বিকার করেছেন। কিন্তু ফিক্বহের এক মহান উদ্ভাবক ইমাম শাফী রহঃ এর নিকট যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্যও ইঞ্জেকশন দেয়া, এবং ইঞ্জেকশনদাতার সামনে আব্রুহীন হওয়া জায়েজ। সারাখসী রহঃ নিজেই বর্ণনা করেন-
وحكي عن الشافعي رحمه الله تعالى قال إذا قيل له أن الحقنة تقويك على المجامعة فلا بأس بذلك أيضا (المبسوط السرخسى- كتاب المبسوط – الجزء العاشر-1/156)
অনুবাদ-ইমাম শাফী রহঃ থেকে বর্ণিত। যদি অসুস্থকে বলা হয় যে, তাকে ইঞ্জেকশন দিলে তার ভিতরে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাবে, তাহলে ইঞ্জেকশন দেয়া দেয়া জায়েজ। {মাবসুতে সারখসী-১/১৫৬}
[বিঃদ্রঃ এখানে আরবী ইবারতের হুকনা শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য হল পশ্চাদ্দেশে অসুধ প্রবিষ্ট করানো। যার অনুবাদ করা হর ইঞ্জেকশন বলে।]
কখনো ফুক্বাহায়ে কিরাম সুন্নাত আদায়ে বা এমন বিষয়ের জন্যও সতরহীন হওয়ার অনুমোদনের কথা বলেছেন যা শুধু মুবাহ বিষয় বা একবার করার যোগ্য।
পুরুষের খতনা করা সুন্নাত। কিন্তু সতরহীন হওয়া হারাম। আর মহিলাদের খাতনা করা জায়েজ, কিন্তু ফুক্বাহায়ে কিরাম একেও প্রয়োজন ও ওজরের সীমারেখায় প্রবিষ্ট করিয়েছেন। আর এজন্য সতরহীন হওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকেন।
প্রসিদ্ধ ফক্বীহ আলাউদ্দীন সামারকন্দী যার “তুহফাতুল ফুক্বাহা” গ্রন্থকে আল্লামা কাসানী রহঃ তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ “বাদায়েউস সানায়ে” এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ সাব্যস্ত করেছেন, তিনি বলেন-
ولا يباح النظر والمس الى مابين السرة والركبة الا فى حالة الضرورة بان كانت المرأة ختانة تختن النساء (تحفة الفقهاء-3/334)
অনুবাদ-নাভি ও হাটুর মাঝামাঝি অংশ দেখা এবং স্পর্শ করা জায়েজ নয় প্রয়োজন ছাড়া এবং মহিলাকে খতনা করার সময় খতনাকারী মহিলা ছাড়া। {তুহফাতুল ফুক্বাহা-৩/৩৩৪}
মোটা হওয়া কোন জরুরত? না প্রয়োজন? তবু ফুক্বাহায়ে কিরাম এর অনুমোদন দিয়েছেন। খোলাসাতুল ফাতওয়াতে সংকলক বলেন-
لا بأس بالحقنة لأجل السمن هكذا روى عن ابى يوسف (خلاصة الفتاوى-4/363)
অনুবাদ-মোটা হওয়ার জন্য ইঞ্জেকশন দেয়া জায়েজ, এমনটিই বর্ণিত ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ থেকে। {খুলাসাতুল ফাতওয়া-৪/৩৬৩}
সন্তানের মা-বাবা হওয়ার আকাংখাতো প্রাকৃতিক আকাংখা। ফুক্বাহায়ে কিরাম মহিলাদের এ আকাংখাকেও দৃষ্টিযোগ্য নয় বলে সাব্যস্ত করেন নি। তাইতো স্বামীকে খুশি করতে মোটা হওয়ার জন্যও ইঞ্জেকশন নেয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে এসেছে-
والمرأة اذا كانت تسمن نفسها لزوجها لا بأس به (الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، الباب التاسع عشر في الختان والخصاء وقلم الأظفار وقص الشارب وحلق الرأس وحلق المرأة شعرها ووصلها شعر غيرها -5/356)
অনুবাদ-মহিলা যদি নিজের স্বামীর জন্য মোটা হতে চায়, তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। {ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৫৬}
টেষ্ট টিউবের সাহায্য নিয়ে সন্তান ধারণ মূলত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ফুক্বাহায়ে কিরাম মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট মাসায়েলকে ১-জরুরত, ২-হাজাত তথা প্রয়োজন, ৩-সৌন্দর্যবর্ধক এ তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করেছেন।
আর নিষিদ্ধ বিষয়কে কেবল সে সময় জায়েজ বলেছেন, যখন জরুরত বা হাজাত এটার অনুমোদনকে চায়। কিন্তু ফুক্বাহাদের শাখাগত মাসায়েল দেখলে বুঝা যায়, অসুখ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারা একটু বেশিই সুযোগ দিয়েছেন। আর সহজতা ও সহজলভ্যতার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেমন উল্লেখিত মোটা হওয়ার কোন জরুরত নেই, তারপরও আলমগীরীতে বলা হয়েছে-
وسئل ابو مطيع ان إمرأة تأكل القبقبة وأشباه ذلك تلتمس السمن، قال لا بأس به مالم تأكل فوق الشبع واذا اكلت فوق الشبع لا يحل (الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، الباب التاسع عشر في الختان والخصاء وقلم الأظفار وقص الشارب وحلق الرأس وحلق المرأة شعرها ووصلها شعر غيرها -5/356)
অনুবাদ-আবু মুতী রহঃ এর কাছে এক মহিলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল যে মোটা হওয়ার জন্য শামুক এবং এ জাতীয় বস্তু খায়, তখন তিনি বললেন-যদি পেট ভরে না খায়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। পেট ভরে খেলে জায়েজ নয়। {ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৫৬}
এ কারণে অধমের ধারণা হল সন্তানহীন মা-বাবার সন্তান লাভ করা একটি প্রাকৃতিক আকাংখা এবং স্বাভাবিক চাহিদা। এ কারণে পুরুষের জন্য পুরুষ ডাক্তারের সামনে আর মহিলার জন্য মহিলা ডাক্তারের সামনে বেআব্রু হওয়া জায়েজ আছে।
আর তৃতীয় বিষয়টি তথা এটি স্বাভাবিক রীতি বিরুদ্ধ বিষয়। এটি নিষিদ্ধতার কোন শক্তিশালী দলিল নেই। একটি প্রাকৃতিক চাহিদা সম্পাদনের জন্য এমন রীতিবিরুদ্ধ সুরত অবলম্বন করা যা নিষিদ্ধতার কোন আয়াত বা হাদীস নেই সেটি জায়েজ হতেই পারে।
অষুধ পৌছানোর পথ হল মুখ এবং খাদ্যনালী দিয়ে। কিন্তু উপকারীতার কারণে ইঞ্জেকশনের তথা পিছনের রাস্তা দিয়ে পৌঁছানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বাচ্চা প্রসবের আসল রাস্তা হল মহিলাদের লজ্জাস্থান। কিন্তু প্রয়োজনের সময় অপারেশনের অনুমতি আছে। এজন্যই কোন কারণ নেই যে, অপারগতার সময় এ রীতি বিরুদ্ধ পদ্ধতি অবলম্বন করা থেকে বাঁধা দেয়া হবে। সুতরাং সন্তানহীন/সন্তানহীনাদের জন্য এ রীতি বিরুদ্ধ পদ্ধতিতে সন্তান লাভ করা জায়েজ আছে।


টিউব বেবির বংশ কার থেকে ধরা হবে?
============================



এখানে একথাটিতো স্পষ্ট যে, যে পুরুষের শুক্রানু হবে সেই হবে প্রসুত বাচ্চার পিতা। বংশ প্রমানের জন্য স্বামীর শুক্রানু দ্বারা স্ত্রী গর্ভবতী হওয়াই যথেষ্ঠ। এটা জরুরী নয় যে, শারিরিকভাবে তার সাথে সঙ্গম করে।
আর টেষ্ট টিউব পদ্ধতিটি একদমই নতুন পদ্ধতি। এ কারণে এ ব্যাপারে ফিক্বহী কিতাবে সরাসরি হুকুম পাওয়া কঠিন। তবে এমন কিছু ইবারত পাওয়া গেছে যার দ্বারা সঙ্গম ছাড়াও সন্তান ধারণ সম্ভব বলে স্বীকার করা হয়েছে, এবং বংশ প্রমাণিত করা হয়েছে। যেমন-
رجل عالج جاريته فيما دون الفرج فأنزل فأخذت الجارية ماءه في شيء فاستدخلته في فرجها فعلقت عند أبي حنيفة رحمه الله تعالى أن الولد ولده وتصير الجارية أم ولد له (الفتاوى الهندية-كتاب الدعوى، الدعوة ثلاثة أنواع-3/347)
অনুবাদ-কোন ব্যক্তি তার বাদির জরায়ুর বাহিরে সঙ্গম করল। বীর্যপাতও করল। তখন বাদি সে শুক্রকে কোন কিছুতে মিলিয়ে নিজের জরায়ুতে প্রবিষ্ট করিয়ে দিল। আর এতে করে সে গর্ভবতী হয়ে যায়। তাহলে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে প্রসূত বাচ্চাটি মনীবের হবে। আর বাদিটি মনীবের উম্মে ওয়ালাদ হয়ে যাবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৩/৩৪৭)
একথাটিতো স্পষ্ট যে, মহিলার ডিম্বানু যদি সে মহিলাই তার গর্ভে ধারণ করে তাহলে সে তার মা গণ্য হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল-যদি এক মহিলার ডিম্বানু আরেক মহিলার গর্ভে ধারণ করে, আর সে গর্ভবতী থেকেই বাচ্চা প্রসব হয়, তাহলে বাচ্চার মা কে হবে? এ ব্যাপারে ফুক্বীহদের মতভিন্নতা পাওয়া যায়। কারো কারো মতে বাচ্চা সে মহিলার হবে যার ডিম্বানু ছিল। আর একদলের মতে মা সে মহিলা হবে যার গর্ভে তা ধারণ করে তা লালিত হয়েছে।
মূল কথা হল-দলিলের হিসেবে এবং শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তো উভয় রায় যৌক্তিক। যে মহিলার ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয়েছে সে এজন্য মা, যেহেতু সে বাচ্চাটি তারই অংশ। আর বংশ ও হারাম হওয়ার সম্পর্ক এ অংশ হওয়ার উপরই। হেদায়া প্রণেতা ব্যভিচারের কারণে হুরমতে মুসাহারাত তথা আজীবনের জন্য বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয় আলোচনা করতে গিয়ে এ সুক্ষ্ম কথাটি এভাবে এনেছেন
أن الوطء سبب الجزئية بواسطة الولد حتى يضاف إلى كل واحد منهما (الهدية-كتاب النكاح، فصل فى بيان المحرمات)
অনুবাদ-সঙ্গম প্রসূতের ক্ষেত্রে অংশ হওয়ার কারণ। এ কারণেই প্রসূতকে স্বামী স্ত্রী উভয়ের দিকেই সম্বোধিত করা হয়। {হেদায়া, বিবাহ অধ্যায়, মুহাররামাত পরিচ্ছেদ)
আরবীতে মাকে “উম্ম” বলা হয় এ দিকে লক্ষ্য করেই। “উম্ম” মূল ও শিকড়কে বলা হয়। উল্লেখিত মহিলার ডিম্বানু যেহেতু তার প্রজনের জন্য মূল এবং ভিত্তি, তাই আবশ্যক হল তাকে “মা” সাব্যস্ত করা।
সাথে সাথে দুগ্ধপানের মাসআলাও এ বিষয়টিকে জোরালো করে। দুগ্ধপানের কারণে হারাম হওয়া সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এটা জরুরী নয় যে, মহিলার স্তন থেকেই দুধ পান করতে হবে। বরং অন্য কোনভাবে পান করলেও দুগ্ধপানের কারণে “হুরমতে রিযায়াত” সাব্যস্ত হয়ে যায়। তেমনি মহিলার ডিম্বানু অন্যকোনভাবে প্রজনন হওয়ার মাধ্যমেও মায়ের সম্পর্ক প্রমাণিত করাকে চায়।
যে ফক্বীহরা ঐ মহিলাকে মা সাব্যস্ত করেছেন যে গর্ভধারণ করে, ও যার গর্ভে লালিত হয়, তাদের জন্য সবচে’ বড় দলিলতো কুরআনে কারীমের আয়াত, যাতে মাকে ওয়ালেদা তথা বাচ্চাকে গর্ভে লালনকারী শব্দে উদ্ধৃত করেছে। তারপর বাচ্চাটি সে সন্তানের অংশ সাব্যস্ত হয়ে যায়।
তাই এ মাসআলাটি আরো বিস্তর চিন্তা-ভাবনা করার বিষয়।
ফিক্বহী কিতাবে দৃষ্টি বুলালে পাওয়া যায়, এক সন্তানের বংশ দুই ব্যক্তি থেকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন-
وإذا كانت جارية بين اثنين وجاءت بولد فادعياه حتى ثبت النسب منهما (الجوهرة النيرة، كتاب النكاح-2/6)
অনুবাদ-দুই ব্যক্তির এক বাদি। সে বাদি বাচ্চা প্রসব করলে উভয় মালিকই যদি সন্তানের পিতা দাবি করে, তাহলে বংশ উভয় থেকেই সাব্যস্ত হবে। (আল জাওহারাতান নায়্যিরাহ-২/৬)
আল্লামা ইবনে নুজাইম রহঃ জাহিরিয়্যাহ এর বরাত দিয়ে এ বিষয়টিকে কিছুটা পার্থক্যসহ লিখেছেন-
وفي الظهيرية والجارية بين اثنين إذا جاءت بولد فادعياه حيث يثبت النسب من كل واحد منهما ينفرد كل واحد منهما بالتزويج (البحر الرائق-كتاب النكاح، باب الأولياء والأكفاء-3/119)
অনুবাদ-দুই ব্যক্তির মাঝে শরিকানা বাদির যদি সন্তান হয়, আর উভয়ে একে নিজের সন্তান দাবি করে, তাহলে বংশ উভয় থেকেই সাব্যস্ত হবে। উভয়েরই একে বিবাহ করার অধিকার অর্জিত হবে। {আল বাহরুর রায়েক-৩/১১৯}
এ আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হল যে, বিবাহ এবং অন্যান্য বিষয়ে উভয় মহিলাকেই বাচ্চার জন্য আসল মা হিসেবে হুকুম আরোপিত হবে। আর লালন পালন ও মিরাসের ক্ষেত্রে ঐ মহিলাকে আসল মা বলা হবে, যার পেটে সন্তান লালিত হয়েছে। অর্থাৎ যে তা প্রসব করেছে। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلاَّ اللاَّئِي وَلَدْنَهُمْ
অনুবাদ-তার মা সেই যে তাকে পেটে ধারণ করেছে। {সূরা মুযাদালা-৩}


সারমর্ম {অনুবাদক}

আমরা উপরোল্লিখত আলোচনা থেকে কয়েকটি বিষয় জানতে পারি-
-ডিম্বানু যদি স্বীয় স্ত্রীর হয়, আর শুক্রানু হয় স্বামীর তাহলে টিউবের মাধ্যমে প্রজনন হলে, বা উক্ত মহিলার গর্ভেই তা লালিত হয়ে প্রসব হলে এ পদ্ধতিটি সন্তানের জন্য তীব্র আকাংখী পরিবারের জন্য জায়েজ আছে।
-অপরিচিত মহিলার ডিম্বানু, বা অপরিচিত পুরুষের শুক্রানু দ্বারা প্রজনন জায়েজ নয়। কারণ এটা জিনা তথা ব্যভিচারের মতই।
-এক মহিলার ডিম্বানু আর আরেক মহিলার গর্ভে যদি সে ডিম্বানু দ্বারা বাচ্চা প্রসব করানো হয়, তাহলে ডিম্বানু যার সেও উক্ত বাচ্চার মা হিসেবে হুরমতে মুসাহারাত তথা সে মহিলার পিতা-মাতা তথা তাদের উপরের ব্যক্তিরা এবং তাদের নিচের তথা সন্তানরা সে বাচ্চার জন্য বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত হবে।
সেই সাথে যার গর্ভে জন্ম নিল সেও মা হিসেবেই সাব্যস্ত হবে।


http://jamiatulasad.com/?p=1101#comment-633

ব্রেইনের জন্য ক্ষতিকর

ব্রেইন বসিয়ে রাখা যেমন ঠিক নয়, অতিরিক্ত চাপে রাখাও অনর্থ ঘটায়। খাবার, পরিবেশ এবং অভ্যাসও ব্রেইনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এমন ১০টি ক্ষতিকর বিষয় নিচে দেয়া হলো-
১. সকালে নাশতা না করা


অনেকেই ব্যস্ততার কারণে সকালের নাশতা না করেই বাসা থেকে বের হয়ে যাই। কিন্তু এই অভ্যাসটা ভালো নয়। কারণ সকালে নাশতা না করলে নিম্ন রক্তে গ্লুকোজস্বল্পতার কারণে ব্রেইন পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। এতে ধীরে ধীরে ব্রেইন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সকালের নাশতা করতে ভুলে যাবেন না।


২. অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ


অনেক সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলি। মনে হয় মাঝেমধ্যে একটু বেশি খেলে কী আর হবে! কিন্তু অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের অভ্যাস আমাদের ব্রেইনের রক্তনালির ইলাস্টিসিটি নষ্ট করে দেয়। ফলে অনেক ধরনের মানসিক সমস্যার উৎপত্তি হতে পারে।


৩. ধূমপান


ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব বলে শেষ করা যাবে না। তাই যারা ধূমপান করেন, তাদের জন্য সতর্কতা-ধূমপানে কেবল ফুসফুস ক্যান্সার নয় বরং এতে করে ব্রেইন সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে আলঝেইমারস নামের স্মৃতি বিলোপকারী রোগেরও উদ্ভব হতে পারে।


৪. অতিরিক্ত মিষ্টি গ্রহণ


অনেকের ধারণা মিষ্টি বেশি খেলে ব্রেইন ভালো থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে সেটা আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিপাক ও শোষণে বাধা সৃষ্টি করে যা ব্রেইনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং ব্রেইনের বিকাশ সাধনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।


৫. বায়ুদূষণ
বায়ুদূষণের জন্য ব্রেইনের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। দূষণের ফলে অক্সিজেনসমৃদ্ধ বাতাস আমাদের ব্রেইনে যেতে পারে না। ফলে ব্রেইন ধীরে ধীরে পুষ্টির অভাবজনিত স্বাভাবিক কার্যকর ক্ষমতা হারাতে থাকে। তাই বায়ুদূষণযুক্ত পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন এবং বায়ুদূষণরোধে নিজেও অন্যকে সচেতন করুন।

৬. নিদ্রাহীনতা
ঘুম ব্রেইনের বিশ্রামের জন্য জরুরি। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ব্রেইন কোষের স্বাভাবিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যারা দীর্ঘদিন ধরে নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন কিংবা কাজের ব্যস্ততার জন্য ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না-তারা সতর্ক হোন। কারণ নিদ্রাহীনতা ব্রেইনের কোষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। সুতরাং পর্যাপ্ত ঘুমকে কেবল সময় নষ্ট হিসেবে নয়, বরং ব্রেইনের বিশ্রামের জন্য দরকারি হিসেবেও নিন।


৭. ঘুমানোর সময় মাথা আবৃত করা
অনেকে লেপ, কাথা বা চাদরে মাথা মুড়ে ঘুমান। এটা ব্রেইনের জন্য ভালো নয়। কারণ মাথা আবৃত করে ঘুমালে নিঃশ্বাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড ঘনীভূত হয় এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এতে ব্রেইনের ক্ষতি হয়।

৮. অসুস্থ শরীরে অতিরিক্ত কাজ

যখন অসুস্থ হই, তখন উচিত কোনো পরিশ্রমী কাজ অথবা পড়াশোনা থেকে বিরত থেকে ব্রেইনকে বিশ্রাম দেয়া। তা না হলে অসুস্থতার সময় অতিরিক্ত চাপ ব্রেইনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ব্রেইনের দীর্ঘমেয়াদি মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়।


৯. চিন্তা না করা

বেশি বেশি চিন্তা করুন, ব্রেইন কোষের উদ্দীপনার জন্য চিন্তা-ভাবনা করা অত্যন্ত জরুরি। যত বেশি সৃষ্টিশীল চিন্তায় মনোযোগ দিতে পারবেন, তত বেশি আপনার ব্রেইন কোষ উদ্দীপিত হবে। আপনি আরও বেশি দক্ষ ও মনোযোগী হতে পারবেন যেকোনো কাজে। কারণ চিন্তাহীন ব্রেইন ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে ব্রেইনের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

১০. কথা কম বলা

চুপচাপ থাকাও ব্রেইনের জন্য ক্ষতিকর। কারণ যত বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে পারবেন, সেটা ব্রেইনের স্বাভাবিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তত কাজে লাগবে।

তাই চুপচাপ নয় বরং কার্যক্ষেত্রে বেশি বেশি আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্রেইনকে সতেজ রাখুন।

মস্তিষ্ক বা ব্রেইন সম্পর্কে মজার জ্ঞান -বিজ্ঞান

 মস্তিষ্ক বা ব্রেইন সম্পর্কে মজার জ্ঞান ||

▣ মানুষের মস্তিকের প্রতি সেকেন্ডে ১০১৫ টি হিসাব করার ক্ষমতা আছে। যা পৃথিবীর সবচে বড় সুপার কম্পিউটারেরও নেই…!!

▣ মানব মস্তিস্কের প্রায় ৭৫ ভাগই পানি!!!
...
▣ বাচ্চা অবস্থায় একটি মানুষের মস্তিস্কের ওজন থাকে ৩৫০-৪০০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় যা বেড়ে হয় ১৩০০-১৪০০ গ্রাম !

▣ একজন মানুষের ব্রেইন,অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রানীর চেয়ে প্রায় ৩ গুন বড়।

▣ ব্রেইন মানুষের দেহের মোট আয়তনের মাত্র ২% হলেও দেহে উৎপন্য মোট শক্তির ২০ ভাগেরও বেশী খরচ করে সে একাই!! আশ্চর্য না?
 ▣ জাগ্রত থাকা অবস্থায় মস্তিস্ক প্রায় ২৫ ওয়াট পাওয়ার সৃষ্টি করে,যা একটি লাইট বাল্ব জালানোর জন্য যথেষ্ট |

▣ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক অক্সিজেন ছাড়া মাত্র ৫ মিনিট টিকতে পারবে |

▣ মানুষের নিউরনে তথ্য চলাচলের সর্বনিম্ন গতিবেগ হলো প্রায় ২৫৮.৪৯০ মাইল/ঘণ্টা, আর বর্তমান বিশ্বে সবচে দ্রুততম গাড়ি “বুগাত্তি ভেরন ই.বি ১৬.৪” এর গতিবেগ ২৫৩ মাইল/ঘন্টা |

▣ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন প্রায় ৭০০০০ বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে সক্ষম |

▣ ৩০ বছর বয়সের পর থেকে মানুষের ব্রেনের ভর প্রতি বছর .২৫% করে বাড়তে থাকে |

▣ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনিস্টাইনের মস্তিস্কের ভর ছিলো ১২৭৫ গ্রাম,যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম |
 

মানবদেহের কিছু মজার তথ্য বিজ্ঞান

মানবদেহের কিছু মজার তথ্য

█►একজন মানুষের রক্তের পরিমাণ তার মোট ওজনের ১৩ ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ ৬৫ কেজি ওজন মানুষের রক্তের পরিমাণ হল ৫ কেজি।

█► দেহের সব শিরাকে পাশাপাশি সাজালে দেড় একর জমির প্রয়োজন হবে।
...
█►. একজন মানুষের স্নায়ুতন্ত্র এত লম্বা যে তা দিয়ে পৃথিবীকে ৭ বার পেঁচানো যাবে।

█► কোন অনুভূতি স্নায়ুতন্ত্রের মধ্য দিয়ে ঘন্টায় ২০০ মাইল বেগে প্রবাহিত হয়।

█►দেহে ও মনে অনুভূতি আসলে তা মস্তিষ্কে পৌঁছতে ০.১ সেকেন্ড সময় লাগে।

█►একজন শিশুর জন্মের সময় হাড় থাকে ৩৫০ টি।

█►দেহে ও মনে অনুভূতি আসলে তা মস্তিষ্কে পৌঁছতে ০.১ সেকেন্ড সময় লাগে।

█►একজন শিশুর জন্মের সময় হাড় থাকে ৩৫০ টি।

█►একজন মানুষ সারা জীবনে ৪০ হাজার লিটার মূত্র ত্যাগ করে।

█►একজন মানুষের শরীরে চামড়ার পরিমাণ হচ্ছে ২০ বর্গফুট।

█► একজন মানুষের চামড়ার ওপর রয়েছে ১ কোটি লোমকূপ।
 █►মানুষের শরীরে যে পরিমাণ চর্বি আছে তা দিয়ে ৭ টি বড় জাতের কেক তৈরি সম্ভব।

█► একস্থান থেকে শুরু করে সমগ্র শরীর ঘুরে ঐ স্থানে ফিরে আসতে একটি রক্ত কণিকা ১,০০,০০০ কিমি পথ অতিক্রম করে।

█► আমাদের মস্তিষ্ক প্রায় ১০,০০০ টি বিভিন্ন গন্ধ চিনতে ও মনে রাখতে পারে।
 

সোমবার, ১১ জুন, ২০১২

দুবাই টাওয়ার ছবি ব্লগ

সংকলিত নেট থেকে
















































































এ সব দেখে মনে কি হয় ?মনতব্য করুন .

ভারতবর্ষের গাইরে মুক্বাল্লিদ্ ও পৃথিবীর অন্যান্য গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের মধ্যে যোগসূত্রঃ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী
ভারতবর্ষের গাইরে মুক্বাল্লিদ্ ও পৃথিবীর অন্যান্য গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের মধ্যে যোগসূত্রঃ
১।
তৃতীয় শতাব্দীর শুরু লগ্নে ২০২ হিজরীতে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস দাউদে যাহেরীর (রহঃ) জন্ম। তিনি শরীয়তের সকল পর্যায়ে কিয়াস বর্জন করে কেবল কুরআন-হাদীসের প্রত্যক্ষ ও যাহেরী অর্থের ভিত্তিতে চলার মতবাদ রচনা করেন। তাঁর মতে ক্বিয়াস শরীয়তের কোন দলীল হতে পারে না। যদিও এ ক্বিয়াস কোরআন-হাদীসের আলোকে এবং কোন বিষয়ে কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট উক্তি না থাকা সত্ত্বেই হোক না কেন! এ জন্যই তাকে দাউদে যাহেরী বা “ প্রত্যক্ষদর্শী ” এবং তাঁর অনুসারীদেরকে যাহেরিয়া বলা হয়।
( মু’জামুল মুয়াল্লিফিন, উমর রেজাঃ পৃ-১/৭০০ জীবনী নং-৫২৪০ ও আল-আলম খাইরুদ্দীনঃ পৃ-২/৩৩৩ )
২।
চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ৩৮৪ হিজরীতে আল্লামা ইবনে হাযাম যাহেরীর (রহঃ) জন্ম হয়। তিনি প্রথমে ছিলেন শাফেয়ী মায্হাবের অনুসারী। পরবর্তীতে তিনি দাউদে যাহেরীর মায্হাব অবলম্বন করেন এবং এক পর্যায়ে সকল মায্হাব ত্যাগ করে তাক্বলীদ্কে হারাম বলতে আরম্ভ করেন। এমনকি মুজতাদিহ ইমামগণকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাগামহীনভাবে তাদের প্রতি কটুক্তি করতে থাকেন। তার এ বাড়াবাড়ির অসংখ্য নযীর তার রচনাবলীতে বিদ্যমান রয়েছে।
৩।
হিজরী ৮ম শতাব্দীর ইমাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) (মৃতঃ ৭২৮ হিজরী) ও হাফেজ ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহঃ) (মৃতঃ ৭৫১ হিঃ) হাম্বলী মায্হাবের অন্যতম অনুসারী ছিলেন। তবে কিছু কিছু ইজতেহাদী বিষয়ে তাদের ব্যতিক্রমধর্মী মতামত তথা যাহেরিয়াদের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা ছিল।
এ কারণেই আল্লামা ইবনে বতুতা (রহঃ) ইবনে তাইমিয়্যা সম্বন্ধে লিখেনঃ
“ ইবনে তাইমিয়্যা বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার সাথে আলোচনা করেন, তবে তার মাথায় কিছু ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা-চেতনাও রয়েছে। ”
( তুহ্ফাতুন নাজ্জার থেকে মাওলানা ইসমাইল সাম্বলী প্রনীত তাক্বলীদে আইম্মাঃ পৃ-৫৩ )
এবং হাফেজ যাহাবী (রহঃ) ইবনুল ক্বাইয়্যিম সম্বন্ধে লিখেনঃ
“ তিনি নিজস্ব মতেই আত্নতৃপ্ত। মাথায় কিছু বৈচিত্র্য রয়েছে, যার ফলে গর্হিত অনেক কিছু প্রকাশ পেয়েছে। ”
( আলমু’জাম থেকে তাক্বলীদে আইম্মাঃ পৃ-৫৪ )
৪।
দ্বাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত আলিম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদী (রহঃ) (মৃতঃ ১২০৬ হিঃ) মূলত হাম্বলী মায্হাবেরই মুক্বাল্লিদ্ ছিলেন। তৎকালীন আরবে বিশেষত নজ্‌দে শিরক্, বিদয়া’ত, কবরপূজা, মাযারপূজা, গাছপূজা, আগুনপূজা ও প্রতিমা-মানব ইত্যাদি পূজা-উপাসনার মোকাবিলা ও প্রতিরোধে তার কার্যকরী, সাহসী ও বীরবিক্রম পদক্ষেপ আসলেও গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসার দাবী রাখে। তাঁরই অবদানে তদানীন্তন আরব মধ্যযুগীয় বর্বরতা, সীমাহীন ভ্রষ্টতা ও শিরক কুফরের অতুলনীয় অন্ধকারাচ্ছন্নতা থেকে রেহাই পেয়েছে।
তবে অনেক বিষয়ে নিষ্প্রয়োজনীয় বাড়াবাড়ির ফলে তাঁর সঙ্গে তদানীন্তন সউদী আলেম উলামাদের মহামতানৈক্য সৃষ্টি হয়। তিনিই মহানবী (সঃ) এর রওজার উপর বিস্তৃত গম্বুজটি ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা করেন এবং ভিন্ন মতাবল্মীদেরকে পবিত্র হজ্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন ও তাদেরকে কাফির, মুশরিক ইত্যাদি জঘন্যতম আখ্যায় আখ্যায়িত করতে থাকেন। ফলে ভয়াবহ ফিৎনা-ফাসাদ ও বিশ্ব মুসলিম সমাজে পারস্পরিক কোন্দলের সূচনা হয়। পক্ষান্তরে যারা তার মতবাদের তাক্বলীদ করতে থাকে তাদেরকে মুসলমানগণ ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন। এদিকে ভারতবর্ষের লা-মায্হাবীরাও যেহেতু নিছক ঝগড়া-বিবাদ ও মুসলমানদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদীর অন্তঃসারশূণ্য বিচিত্র মতবাদ গ্রহণ করে যেত, তাই তাদেরকেও মুসলমানগণ ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন। আর তারা নিজেদেরকে মুহাম্মদী বা আহলে হাদীস বলে প্রচারের চেষ্টায় মেতে উঠে।
৫।
এ ধারার শেষ ব্যক্তি ক্বাযী শাওকানী (রহঃ) (মৃতঃ ১২৫৫ হিজরী) মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদীরই সমসাময়িক ছিলেন। তিনি প্রথমতঃ ছিলেন শিয়া মতালম্বী। তার রচনাবলী প্রায়ই পরস্পর বিরোধপূর্ণ ও নিরপেক্ষতাহীন মতামতে ভরপুর।
দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যেতে পারে হানাফী মায্হাব অনুযায়ী “ বিতর ” নামায্ ওয়াজীব। এ মতামত খন্ডন করার জন্য ইমাম শাওকানী হাদীসে মুয়া’য্ (রঃ) পেশ করেছেন, যাতে বলা হয়েছে যে, “ আল্লাহপাক রাত্র দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায্‌ ওয়াজিব্‌ তথা ফরয করেছেন ” এ ছাড়াও তিনি হাদীসে আ’রাবী পেশ করেছেন, যাতে মহানবী (সঃ) গ্রাম্য লোকটিকে মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায্‌ আদায় করতে বলায় তিনি প্রশ্ন করেন যে আমার উপর এ ছাড়া কি আর কোন নামায্‌ আছে? তদুত্তরে মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন “ না, এ ছাড়া সমস্তই নফল। ”
এ হাদীস দু’টির মাধ্যমে শাওকানী সাহেব প্রমাণ করেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায্‌ ব্যতীত আর কোন নামায্‌ই ওয়াজিব বা ফরয নয়। তাই “ বিতর ” নামায্‌ও পাঁচ ওয়াক্তের বহির্ভূত বিধায় ওয়াজিব হতে পারে না বরং নফল নামাযেরই অন্তর্ভূক্ত।
( নাইলুল আওতারঃ পৃ – ৩/৩১ )
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপ ও হাস্যকর বিষয় হল যে, তিনি মাত্র এর কয়েক পৃষ্ঠা পরই “ তাহিয়্যাতুল মসজিদ ” নামাযের বর্ণনায় উপরোক্ত হাদীসগুলো দৃষ্টিগোচর করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বহির্ভূত “ তাহিয়্যাতুল মসজিদ ” নামায্‌কে ওয়াজিব প্রমাণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ তিনি নিজেও “ তাহিয়্যাতুল মসজিদ ” সুন্নত হওয়ার পক্ষে সকল উলামায়ে কিরামের ইজ্‌মা (সর্বসম্মত রায়) নকল করেছেন।
( নাইলুল আওতারঃ পৃ – ৩/৬৮ )
সুতরাং তার এ ধরণের কর্মকাণ্ড পক্ষপাতিত্ব, অনিরপেক্ষতা ও নিছক গোঁড়ামি বৈ আর কি?
৬।
হিন্দুস্তানে ইসলাম আগমনের সূচনা থেকেই মুসলমানগণ হানাফী মায্‌হাবের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ইংরেজ হুকুমাত প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালেও মুসলমানদের মধ্যে কোন ধর্মীয় মতানৈক্য ছিল না। অবশেষে হিজরী ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটে যারা দাউদে যাহেরী, ইবনে হাযাম, ইবনে তাইমিয়্যাহ, মুহাঃ ইবনে আব্দুল ওহ্‌হাব নযদী ও ক্বাজী শাওকানীর কেবল বৈচিত্র্যময় ও সমস্ত মুসলমানদের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ এবং হানাফী মায্‌হাব ও অন্যান্য মায্‌হাব অবলম্বীদের সঙ্গে মতানৈক্য অযথা বিরুদ্ধাচরণ, অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ ও তাদেরকে নির্মূল করার গভীর ষড়যন্ত্রে মরিয়া হয়ে উঠে। বিশেষ করে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ও হানাফীদেরকে কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, কবরপূজারী ইত্যাদি শব্দে অপবাদ দেয়া যেন তাদের ঠিকাদারী ও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যবসায় পরিণত হয়।
( আল্লাহ এ ধরণের অপবাদ রটানোর মত সমস্ত হারাম কাজ থেকে মুসলমানদের হেফাযত করুন এবং সবাইওকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন !)
৭।
উল্লেখ্য যে, ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল ক্বাইয়্যিম ও মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্‌হাব (রহঃ) ছিলেন সমকালীন ইসলামী চিন্তাবিদ, যুগশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থের প্রণেতা। সাথে সাথে তাঁরা ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের মুক্বাল্লিদ ও অনুসারী। যদিও তাদের মধ্যে কিছু বিতর্কিত বিষয়ও ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌রা তাদের গুণগত বিষয়গুলো উপেক্ষা করে কেবল বিতর্কিত বিষয়গুলো অবলম্বন করতঃ মুসলমানদের মধ্যে ফিৎনা-ফাসাদ ও মতানৈক্যের যোগান দিচ্ছে। এমনিভাবে তাদের সীমিত জ্ঞানে হানাফীদের বিশেষ করে দেওবন্দী উলামায়ে কিরামের মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু উপলব্ধি করতে পারলেই অতিরঞ্জিত ও অপব্যাখ্যার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। ইবনে তাইমিয়্যার পুরো জীবনই ছিল জিহাদী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ। তাতারীদের মোকাবিলায় জিহাদ করে তিনি কারাবরণও করেছেন। কিন্তু বর্তমান যুগে গাইরে মুক্বাল্লিদ হিসেবে যারা পরিচিত, আহলে হাদীস আন্দোলন নামে যারা বই লিখছে তাদের কেউ জিহাদে অংশ নিয়েছে বা কারাবরণ করেছে এমন নযীর কি এদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে? বরং তারা সর্বদা জালিম সরকার আর নাস্তিকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে এবং তাদের সঙ্গে আঁতাত করে আপন স্বার্থ উদ্ধারের অবলম্বন করে চলছে। ভারতবর্ষে মুসলমানদের চিরশত্রু জালিম সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ সরকার ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ অবৈধ প্রমাণের অপচেষ্টায় “ আল-ইক্বতেছাদ-ফী মাসাইলিল জিহাদ ” নামক অমূলক গ্রন্থ লিখার মুচলেকা ও চুক্তিপত্র গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌ আলিম মুহাম্মাদ হুসাইন বাটালভীর মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছিল। হিন্দুস্তানে মুসলিম ও নাস্তিকদের মাঝে তো যুদ্ধ-জিহাদ বরাবরই চলে আসছে। বাংলাদেশেও কাদিয়ানী, বেরলভী, এন,জি,ও এবং বিভিন্ন ফিৎনা ফাসাদ ও নাস্তিকতার বিরুদ্ধে প্রায়ই জিহাদী আন্দোলন হয়ে থাকে। এতে কোন গাইরে মুক্বাল্লিদের নাম মাত্র ভূমিকা কি ছিল? বা আছে? এ সকল প্রশ্নের জবাব একটাই, আর তা হল “ না ”। অনুরূপভাবে তামাম বিশ্বের ইয়াহুদী খৃষ্টানরা যখন আফগান, ফিলিস্তিন, ইরাক তথা সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানদের উপর বে-নযীর নির্যাতন আর মুসলিম নিধনের গভীর ষড়যন্ত্রে মরিয়া হয়ে উঠেছে তখন ইবনে তাইমিয়্যার তথাকথিত অন্যসারী গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌দের ভূমিকা রহস্যজনক; বরং, তারা এবং তাদের ঠাকুরগণ ও তাদের ভক্তবৃন্দরা সম্ভাব্য সকল উপায়ে হানাদারদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে, সহযোগিতা করছে। এ দেশে মিশনের নামে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ঠিক করা তথা আমাদেরকে মুসলমান বানানোর অভিনয় করছে। অথচ জিহাদ করা আহলে হক্বের একটি পরিচয়। কুরআন-হাদীসের অসংখ্য স্থানে জিহাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাহলে কি গাইরে মুক্বাল্লিদরা জিহাদ থেকে গা ঢাকা দিয়ে ইবনে তাইমিয়্যার অনুসারী ও আহলে হক্বের দাবীর অনধিকার চর্চার স্পর্ধা দেখাচ্ছে না? সাথে সাথে আরও ভাবনার বিষয় যে, তাদের বই-পুস্তকের শিরোনাম “ আহলে হাদীস আন্দোলন ” মানে কোন্‌ আন্দোলন? মুক্তির আন্দোলন? নাকি সরলমনা মুসলমানদেরকে বিপথগামী ও ভ্রষ্ট করার আন্দোলন?

২ নদীর মিশ্রন ছবি ব্লগ আল্লাহর অসীম কুদরতের লীলা-খেলা

১। থমসন আর ফ্রেজার নদীর মিলন, কানাডা



২। রোন আর আরভে নদীর মিলন। জেনেভা, সুইজারল্যান্ড।



৩।ঈলজ- দানিউব আর ঈন নদীর মিলন, পাসাঊ, জার্মানী



৪। দ্রাভা এবং দানিউব নদীর মিলন, ওসিজেক, ক্রোয়েশিয়া



৫। মোজেল এবং রাইন নদীর মিলন, জার্মানী



৬। জিয়ালিং এবং ঈয়াংজী নদীর মিলন, চংকিং, চীন


৭।রিও নিগ্রো এবং রিও সলিমো নদীর মিলন, মানাউস, ব্রাজিল




৮। অলকনন্দা ও ভাগিরথী নদীর মিলন, দেবপ্রয়াগ, ভারত।



৯।ওহিও আর মিসিসিপি নদীর মিলন, ইলিনয়, আমেরিকা



১০। কলোরাডো ও গ্রীন নদীর মিলন। ক্যানিওন ল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক, উটাহ, আমেরিকা



সুত্র এবং আরও বিস্তারিত জানতে:
http://twistedsifter.com/2012/04/confluences-around-the-world/