রবিবার, ৩ জুন, ২০১২

কুরআন-হাদীছের আলোকে শবে বরাত - পর্ব ০0১

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى وبعد


এখন রজবের ৫ তারিখ। শাবান মাস আসতে অনেক দেরী, দেরী আছে শাবান মাসের পঞ্চদশ রজনী তথা শবে বরাত আসতে। তাই হয়তো এই অসময়ে শবে বরাত সম্পর্কিত পোস্ট দেখে অনেকে অবাক হচ্ছেন। তবে শবে বরাত সম্পর্কে এত তাড়াতাড়ি কেন পোস্ট দেওয়া হল, তা জানার আগে সবাইকে অনুরোধ করব দয়া করে নিচের লিখাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, কারণ শবে বরাতের পাশাপাশি নিচের বিষয়গুলো জানাও আমাদের জন্য অনেক জরুরী।

সম্প্রীতি ও ঐক্যঃ

মুসলিম উম্মাহ পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং নিজেদের একতা ও সংহতি রক্ষা করা ইসলামের একটি মৌলিক ফরয। তেমনি সুন্নাহর অনুসরণ তথা আল্লাহর রাসূলের শরীয়ত এবং তাঁর উসওয়াহ ও আদর্শকে সমর্পিত চিত্তে স্বীকার করা এবং বাস্তবজীবনে চর্চা করা তাওহীদ ও ঈমান বিল্লাহর পর ইসলামের সবচেয়ে বড় ফরয।

সুতরাং সুন্নাহর অনুসরণ যে দ্বীনের, বিধান উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং বিভেদ ও অনৈক্য থেকে বেঁচে থাকাও সেই দ্বীনেরই বিধান। এ কারণে এ দুইয়ের মাঝে বিরোধ ও সংঘাত হতেই পারে না। সুতরাং একটির কারণে অপরটি ত্যাগ করারও প্রশ্ন আসে না।

কিন্তু এখন আমরা এই দুঃখজনক বাস্তবতার সম্মুখীন যে, হাদীস অনুসরণ নিয়ে উম্মাহর মাঝে বিবাদ-বিসংবাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই অবস্থা প্রমাণ করে, আমাদের অনেকে সুন্নাহ অনুসরণের মর্ম ও তার সুন্নাহসম্মত পন্থা এবং সুন্নাহর প্রতি আহবানের সুন্নাহসম্মত উপায় সম্পর্কে দুঃখজনকভাবে উদাসীন। তদ্রূপ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির সঠিক উপলব্ধি এবং ঐক্যবিনাশী বিষয়গুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তির শিকার। সুন্নাহর অনুসরণ এবং উম্মাহর ঐক্য উভয় ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে চলমান অবহেলা ও ভুল ধারণা ব্যাপক।

আল্লাহপাক কোরআনে বলেনঃ

وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ ۞ فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ۞ فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّى حِينٍ ۞

(তরজমা) ‘নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমাকে ভয় কর। এরপর তারা নিজেদের দ্বীনের মাঝে বিভেদ করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেল। প্রত্যেক দল (নিজেদের খেয়ালখুশি মতো) যে পথ গ্রহণ করল তাতেই মত্ত রইল। সুতরাং (হে পয়গাম্বর!) তাদেরকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মূর্খতায় ডুবে থাকতে দাও।

সূরা মুমিনুন (২৩) : ৫২-৫৩

এখানে যেটি খেয়াল রাখা দরকার তা হল হক সম্পর্কে নিশ্চিত জ্ঞান আসার পর এ বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা কেবল জিদ ও হঠকারিতার কারণেই হয়ে থাকে। আর এই বিভেদের দায় ঐ মতভেদকারীকেই বহন করতে হবে। যারা হকপন্থী, তাদেরকে নয়। কারণ ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ ও মৌলিক আকিদা ও বিধান। যারা এর উপর আছে তারা তো মূল পথেই রয়েছে। যারা মতভেদ করেছে তারা এই পথ থেকে সরে গেছে এবং বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার জন্ম দিয়েছে। আর এ কথা বলাই বাহুল্য যে, তাওহীদের বিষয়ে বা দ্বীনের অন্য কোনো মৌলিক বিষয়ে হক থেকে বিচ্যুত হওয়া বা সন্দেহ-সংশয় পোষণ করা খেয়ালখুশির অনুগামিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আল্লাহ কোরআনে বনী ইসরাঈল সম্পর্কে বলেনঃ

" আমি তাদেরকে দ্বীনের সুস্পষ্ট বিধানাবলি দান করেছিলাম। অতপর তারা যে মতভেদ করল তা তাদের কাছে ইলম আসার পরই করেছিল শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত। তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত তোমার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মাঝে ফয়সালা করে দিবেন।
এরপর আমি তোমাকে দ্বীনের এক বিশেষ শরীয়তের উপর রেখেছি। সুতরাং তা অনুসরণ কর, অজ্ঞদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না।"

সূরা জাছিয়া

এখানে ইসলামের অতুলনীয় ও ন্যায়সঙ্গত শিক্ষাটিও লক্ষণীয় যে, যারা মৌলিক বিষয়ে মতভেদ করে বিচ্ছিন্ন হল তাদের সাথেও জুলুম-অবিচার করা যাবে না; তাদের সাথেও ন্যায়বিচার করতে হবে।

অন্য আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেনঃ

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। পরস্পর বিবাদ করো না তাহলে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।

সূরা আনফাল (৮) : ৪৬

এ আয়াতে ‘তাওহীদ ফিততাশরী’ তথা একমাত্র আল্লাহকেই বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করার আদেশ আছে। শর্তহীন আনুগত্য একমাত্র আল্লাহর এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর রাসূলের। অন্য সকলের আনুগত্য এ আনুগত্যের অধীন। সাথে সাথে কলহবিবাদ থেকে বিরত থাকার আদেশ করা হয়েছে এবং এর বড় দুটি কুফল সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে : এক. এর দ্বারা উম্মাহ শক্তিহীন হয়ে পড়বে, দুই. তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি লোপ পাবে।

অন্যদিকে অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ

‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দাও। আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।

সূরা হুজুরাত

তাই আমাদের কর্তব্য হল, আমরা যাতে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করি। আর যদি কোন বিষয়ে মতভেদ থাকে, তাহলে আমাদের উচিত তা সুন্দর করে মুমিনদের বুঝিয়ে দেয়া। নিছক কোন ধারণার বশবর্তী হয়ে আমরা যাতে কোন বিষয়ে (শরীয়তের বা ব্যক্তিগত) একে অপরের সমালোচনায় লিপ্ত না থাকি।

কারণ

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ ধারণা হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যা। তোমরা আঁড়ি পেতো না, গোপন দোষ অন্বেষণ করো না, স্বার্থের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না, হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না, পরস্পর কথাবার্তা বন্ধ করো না, একে অপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিও না, দাম-দস্ত্তরে প্রতারণা করো না এবং নিজের ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের মাঝে ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করো না। হে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহ যেমন আদেশ করেছেন, সবাই তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।’

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫১৪৩, ৬০৬৪, ৬০৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৬৩/২৮, ২৯, ৩০ ও ২৫৬৪/৩২, ৩৩

এ সকল হাদীসের শিক্ষা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য এক হাদীসে এক বাক্যে ইরশাদ করেছেন-

المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده

মুসলিম সে, যার মুখ ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর হক আদায়ের সাথে বান্দার হকও আদায় করে সে-ই প্রকৃত মুসলিম।

কাযী ইয়ায রাহ. বলেছেন, ‘সম্প্রীতি দ্বীনের অন্যতম ফরয, শরীয়তের অন্যতম রোকন এবং বৈচিত্রে পূর্ণ মুসলিমসমাজকে একতাবদ্ধ করার উপায়’।’’

-শরহু সহীহ মুসলিম ২/১০, বৈরুত

উপরোক্ত দীর্ঘ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য এই যে, আমরা যখন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, তখন এই বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার যে, আমরা সবাই মুসলিম এবং আমরা যা বলব তা শুধুমাত্র ইসলামের স্বার্থেই বলব, কোন কাফির মুশরিককে খুশি করার জন্য নয়। ঠিক তেমনি কোন বিষয়ে মতভেদ দেখা দিলে, তা আমরা কোরআন সুন্নাহর আলোকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিব, কিন্তু কোন ধরণের ঝগড়া বিবাদ করব না, মুমিনের অন্তর হবে কোমল। সবসময় সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করব। আমাদের মনে রাখতে হবেঃ

গোটা সমাজ যেন হয় এ হাদীসের জীবন্ত নমুনা-

المسلمون كرجل واحد، إن اشتكى عينه اشتكى كله، وإن اشتكى رأسه اشتكى كله.

মুসলিমেরা সকলে মিলে একটি দেহের মতো, যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহের কষ্ট হয়, মাথায় ব্যথা হলেও গোটা দেহের কষ্ট হয়।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৮৬/৬৭

সবাই জানেন, দাউদ আ. ছিলেন আল্লাহর নবী। তাঁর পুত্র সুলায়মান আ.ও নবী ছিলেন। এক মোকদ্দমার রায় সম্পর্কে দুজনের মাঝে ইজতিহাদগত মতপার্থক্য হল। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে তাদের মতপার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন এবং সুলায়মান আ.-এর ইজতিহাদ যে তাঁর মানশা মোতাবেক ছিল সেদিকেও ইশারা করেছেন। তবে পিতাপুত্র উভয়ের প্রশংসা করেছেন। তো এখানে ইজতিহাদের পার্থক্য হয়েছে, কিন্তু বিভেদ হয়নি। এই পার্থক্যের আগেও যেমন পিতাপুত্র দুই নবী এক ছিলেন, তেমনি পার্থক্যের পরও।

(দেখুন : সূরা আম্বিয়া (২১) : ৭৮-৭৯)

তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে কুরতুবী (১১/৩০৭-৩১৯) ও অন্যান্য তাফসীরের কিতাব দেখে নেওয়া যায়।

মূল বিষয়ে ফিরে আসিঃ

ইদানীং কালে শবে বরাত নিয়ে মানুষদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের দ্বন্দ দেখা দিচ্ছে। কেউ কেউ এর ফাযাইল বর্ণনা করছেন, আবার কেউ কেউ এর অস্তিত্বকেই পুরোদমে অস্বীকার করে বসছেন। আবার কেউ কেউ আমলের নামে অনেক বিধর্মীদের রেওয়াজও অনুসরণ করছেন। উম্মতের এই করুণ অবস্থায় যেখানে আমাদের এক হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া দরকার, সেখানে প্রতিষ্ঠিত বিষয়ে কলহ সৃষ্টি করা এবং এ নিয়ে মাতামাতি করা উম্মতের ঐক্যের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। তবে উম্মতের ঐক্যের পাশাপাশি, কোরআন সুন্নাহর সঠিক বুঝের অভাবে কেউ যেন কোন আমল থেকে বিচ্যুত না হয়ে পড়েন কিংবা আমলের নাম করে বিদআত বা শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত না হয়ে পড়েন সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরী। কারণ আমরা সবাই জানি আল্লাহ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। তাই ইবাদতে যাতে কম না হয় কিংবা ইবাদতে যাতে ত্রুটি না হয়, এজন্য আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।

এজন্য আগত শাবানের পঞ্চদশ রজনীকে সামনে রেখে ধারাবাহিক ভাবে কোরআন ও হাদীছের আলোকে পবিত্র শবে বরাতের অবস্থান কেমন, তা আলোচনা করার চেষ্টা করব। এই ধারাবাহিক আলোচনার মধ্যে থাকবেঃ

১। শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু ভূমিকা এবং শবে বরাতের নামের পরিচিতি
২। সূরা দুখানের তাফসীর সম্পর্কে প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ সমূহ থেকে উদ্ধৃতি, তাফসীরের মাঝে বিরোধ মীমাংসার নীতিমালা এবং সেই নীতিমালার আলোকে সূরা দুখানের তাফসীর
৩। উসূলে হাদীছের কিছু নীতিমালা, অতঃপর শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীছ এবং সেসব হাদীছ সম্পর্কে মুহাদ্দিছীনে কেরামের মতামত
৪। হাদীছের আলোকে শবে বরাতের ফজীলত ও আমলসমূহ
৫। শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়

প্রতিটি বিষয় ধারাবাহিকভাবে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। তবে এই ব্যস্ত জীবনে অনেকে ব্লগের পোস্ট পড়ার জন্য বেশি সময় পান না বলে, আমার পোস্ট গুলো সংক্ষেপ করে পর্ব বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। তাই রজব মাসের শুরুতেই এই বিষয়ে লিখা শুরু করেছি, যাতে শাবানের পঞ্চদশ রজনী আসতে আসতে আমরা সবাই শবে বরাত সম্পর্কে কোরআন হাদীছের আলোকে স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারি।

তবে এখানে উল্লেখ্য যে , কারো কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকলে তা সুন্দর করে শালীন ভাষায় উল্লেখ করার জন্য অনুরোধ করা হল, ঝগড়া বিবাদ সম্পূর্ন পরিহারযোগ্য।

আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সহীহ এলেম ও সহীহ আমল করার তৌফিক দান করুন এবং কোরআন ও হাদীছের আলোকে শবে বরাত সম্পর্কে জানার জন্য এই পোস্টসমূহের সাথে থাকার তওফীক দান করুন। আমীন।

(চলবে ইনশাল্লাহ)

http://sonarbangladesh.com/blog/Tarek000/111547

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন