সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'ত পরিচিতি

আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত নামের উৎস
যে হাদীসে মুসলমানদের তেয়াওর দলের বিভক্ত হওয়ার কথা বণিত হয়েছে, সে হাদীসকে হাদীসে ইফতেরাকে উম্মত বলা হয় এর অর্থ , উম্মতের দলাদলির বিবরণ m¤^wjZ হাদীস হাদীসটি তিরমিযী শরীফ , আবু দাউদ শরীফ ও মিশকাত শরীফসহ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এ হাদীসের মূল বক্তব্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শব্দগতভাবে সামান্য ব্যবধান থাকলেও সেগুলির মর্মে কোন ব্যবধান নেই তাই অর্থগত দিক থেকে হাদীসটা মুতাওয়াতির বা সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত ।এ হাদীসের এক বর্ণনায় জান্নাতী দলটির পরিচয়ে রাসূল সা. বলেছেন- যে তরিকায় আমি আছি , আর আমার সাহাবাগণ আছেন আর রাসূলের তরিকা বা তার অনূসৃত পদ্ধতিকে তার সুন্নত , আর সাহাবাগণের সমষ্টিকে সাহাবাগনের জমাত বলা হয় তাই আলোচ্য হাদীসের এ অংশটির মর্মার্থ হল , রাসূলের সুন্নত এবং তার সাহাবাগণের জমাত এর আর্দশে প্রতিষ্ঠিত দল আর এ মর্মেই এ হাদীসকে আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত নামের উৎস হিসেবে Aej¤^b করা হয়েছে
এ ছাড়া দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক মুহতামিম হাকীমুল ইসলাম আল্লামা ক্বারী তৈয়ব সাহেব র. আক্বীদাতুত তাহাবী এর ব্যাখ্যায় লেখেন : অর্থাৎ, মসনদে আহমদ ও আবু দাউদ শরীফের বর্ণনায় উক্ত হাদীসের শেষাংশ উল্লেখ আছে, জান্নাতী দলটিই হচ্ছে জমাত আরেক বিবরণে উল্লেখ আছে , যারা সুন্নত এবং জমাতের উপর প্রতিষ্ঠিত তারাই জান্নাতী দল এ বিবরণমতে রাসূলের হাদীসের মর্মই শুধু আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত নামের উৎস নয় ; বরং হাদীসের সরাসরি শব্দ থেকেই হকপন্থী মুসলমান দলের নামটি গৃহিত হয়েছে অর্থাৎ , আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত নামের দুটি অংশ রয়েছে প্রথম অংশ ,সুন্নত তরিকা , যা আলোচ্য হাদীসে শব্দটির মর্ম আর দ্বিতীয় অংশ সাহাবাগণের পবিত্র আত্মাসমূহ , যা শব্দটির মর্ম
সুতরাং এ হাদীস দ্বারা মিয়ারে হক্ব বা সত্যের মাপকাঠি অর্থাৎ , মুসলমানদের বাহাওরটি বাতিল দল থেকে একমাত্র হক বা সত্যপন্থী দলটি পরখ করার মানদন্ড একটি নয় ; দুটি সাব্যস্ত হল যার একটি হচ্ছে, রাসূলের সুন্নত , আর অপরটি , এর অনুসারী দল সাহাবাগণের জমাতসুতরাং সুন্নত এবং জমাত একটা অপরটা থেকে অবিচ্ছেদ্য কারণ সুন্নতের উপরই জমাত প্রতিষ্ঠিত, আর জমা তের দ্বারাই সুন্নত অনুসৃত
এ বিবরণ দ্বারা এ কথা দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে গেল যে , রাসূলের একটা প্রসিদ্ধ হাদীসের ভিত্তিতেই আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের নামকরণ করা হয়েছে এবং সুন্নতে রাসূল সা. এবং জমা তে সাহাবা সত্যের মাপকাঠি হওয়াই এ নামকরণের কারণ
প্রকত আহলে সুন্নত ওয়াল জমাত পরিচিতি
প্রথম কথা ঃ-
পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এক আদমের সন্তান তাই হযরত আদম আ. গোটা জগতের সকল মানুষের আদিপিতা আর তার স্ত্রী হাওয়া আ. সকল মানুষের আদিমাতা সেই আদম - হাওয় কে সৃষ্টি করে আল্লাহ তাআলা প্রথমে জান্নাতে বসবাস করতে দেন পরবতীতে শয়তানের প্রতারণায় নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়া কে কেন্দ্র করে তাদের উভ কে জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন পাঠাবার সময় সরাসরি তাদের দুজনকে আর তাদের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলে দেন ঃ-

সূরাতুল বাক্বারাহ ঃ৩৮-৩৯ অর্থাৎ, তোমার এখন তেকে (পৃথিবীতে) নেমে যাও অতপর ঃ আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে (পুনরায় জান্নাতে পৌছার) পত প্রদর্শক আসবে তখন যারা আমার পথের অনুসরন করবে , তাদের জন্য (ভবিষ্যতেরও ) কোন ভয় নেই এবং (অতীতেরও) কোন চিন্তা থাকবে না আর যারা অমান্য করবে এবং আমার বাণীসমূহকে অবিশ্বাস করবে , তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে
আল্লাহ তাআলা সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৃথিবীর মানুষকে আবার জান্নাতে ফিরে যাওয়ার পথ প্রদর্শনের জন্য লক্ষাধিক নবী রাসূল ও শতাধিক আসমানী কিতাব নাযিল করেন সে সকল নবী রাসূলের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হলেন আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. আর তার কাছে নাযিল করেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ আল কুরআন পবিত্র কুরআনের ভাষায় আল্লাহর প্রতিশ্রুত সেই পথ প্রর্দশনকে বলা হয়েছে হেদায়ত বা পথ দেখানো, আর তার প্রদর্শিত সেই পথকে বলা হয়েছে ছিরাতে মুস্তাক্বীম এর বাংলা অর্থ সোজা পথ কাদের জন্য সোজা পথ ? পৃথিবীর মানুষের জন্য কোথায় যাওয়ার সোজা পথ ? জান্নাতে যাওয়ার সোজা পথ
এবার প্রশ্ন আসে , সেই সোজা পথের ব্যাখ্যা কি ? মুফাসইসরীনে কেরাম(পবিত্র কুরআনের সম্মানিত ব্যাখ্যাকারগণ) ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সোজা পথের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পেশ করেছেন যেমন ঃ-
১.ইসলামের পথ
২.কুরআনের পথ
৩.নবীগণের পথ
৪.সিদ্দীকগণের পথ
৫.শহীদগণের পথ
৬.সালেহগণের পথ
৭.আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের পথ
এ ব্যখ্যাসমূহের প্রতিটারই তফসিলী বিবরণ আছে যা সবিস্তারে উল্লেখ করার অবকাশ এ পুস্তকে নেই তাই এখানে শুধু ছিরাতে মুস্তাক্বীমের সপ্তম ব্যাখ্যা অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জমাতের পথ বলতে কোন মতাদর্শ বুঝায়, তার সামান্য বিশ্লেষণ পেশ করা হচ্ছে কারণ আমাদের সমাজের কিছু লোক আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের নামে তাদের কতিপয় মনগড়া মতবাদ প্রচার করে বেড়াচ্ছেন
যার ফলে অনেক সরলপ্রাণ মুসলমান তাদের মনগড়া মতবাদেই আহলে সুন্নত ওয়াল জমাতের মতাদর্শ মনে করে প্রতারিত হচ্ছে
কুরআনের ভাষায় -
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়োতে ছিরাতে মুস্তাক্বীম এর উল্লেখ রয়েছে তন্মধ্যে এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে ঃ-
অর্থাৎ আর নিশ্চয়ই এটি আমার ছিরাতে মুস্তাক্বীম (বা প্রদশিত সোজা পথ )তাই তোমরা এ পথে চল, এ ছাঢ়া অন্যান্য পথে চলো না অন্যথায় সেগুলি তোমাদে কে তার পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে তিনি (আল্লাহ)অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তোমাদের এ উপদেশ দিচ্ছেন, যাতে তোমরা(ভ্রান্ত পথ থেকে) বাঁচতে পার
এ আয়াতে ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সোজা পথ কথার অর্থ ইসলাম বা কুরআনের পথও হতে পারে , আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের পথও হতে পারে যদি ইসলাম বা কুরআনের পথ গণ্য করা হয় , তাহলে অন্যান্য পথ বলতে অন্যান্য ধর্মের পথ বুঝতে হবে আর যদি সোজা পথ বলতে আহলে সুন্নত ওয়াল জমা তের পথ গণ্য করা হয় , তাহলে অন্যান্য পথ বলতে ইসলামের মনগড়া অপব্যাখ্যাকারী বাহাওর দলের ভ্রান্ত মতবাদ বুঝতে হবে



******************************************
দেশ-বিদেশে এখন মুসলিম উম্মাহর দুর্দিন চলছে। বাতিলের বহুমুখী ষড়যন্ত্র তাদের অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। ব্যক্তি, সামাজ, দেশ ও বিশ্ব- সবই যেন তাদের বিরুদ্ধে আমরণ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাই মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সভ্যতা-সংস্কৃতি আজ চরম হুমকির শিকার। শুধু তাই নয়, মুসলিম উম্মাহর জীবন পরিচালিত হয় যে শরীয়ার আলোকে, সেই শরীয়াকে আজ সমাজের সামনে বিতর্কের বিষয় হিসাবে উপস্থাপন করে তাকে খেলনার বস্ত্ততে পরিণত করা হচ্ছে। এ অবস্থা বেশি দিন স্থায়ী হলে আমরা সত্যি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যাবো। তাই দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহকে যাবতীয় ফিতনা-ফাসাদ থেকে রক্ষার স্বার্থে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।

এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন মুসলিম উম্মাহ হিসাবে আমাদের পরিচয় জানা। এই পরিচয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের আদর্শের সন্ধান পাবো। আর আমরা যখন আমাদের আদর্শের সন্ধান পাবো, তখন আমাদের আদর্শ বিরোধী সব দল ও ফিরকা চিহ্নিত হয়ে যাবে। স্পষ্ট হয়ে যাবে তাদের যাবতীয় বাতিল কর্ম-কান্ড। আর আদর্শ বিরোধী দল ও ফিরকা এবং তাদের কর্ম-কান্ড সম্পর্কে যখন জানা হয়ে যাবে, তখন আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণও সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা তাউফীক দান করুন।

আমাদের পরিচয়:
***************

আমাদের সংক্ষিপ্ত ও সাধারণ পরিচয়, আমরা ‘মুসলিম’ বা ‘মুসলমান’। আর কুরআন-হাদীসের আলোকে কিছুটা বিস্তৃত ও বিশেষায়িত পরিচয়, আমরা ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’।

‘মুসলিম’ তো আমাদের ধর্মীয় পরিচয়। এ নামের সূচনার কথা পবিত্র কুরআনে এসেছে। হযরত ইবরাহীম আ. সর্বপ্রথম এ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যুগে যুগে নবী-রাসূলদের আনীত সত্যধর্ম- কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে- যারা গ্রহণ ও অনুসরণ করেছেন এবং করেন, তারাই ‘মুসলমান’। একটি হাদীসে এর সমর্থনও পাওয়া যায়। হাদীসটি যথাস্থানে উল্লেখ করা হবে।  মুহাম্মদ সা. ‘ইসলাম’ ধর্মকে যে রূপ ও আঙ্গিকে তার উম্মতকে উপহার দিয়েছেন, আর তার একনিষ্ঠ অনুসারী সাহাবায়ে কেরাম রা. যেভাবে এই ‘ইসলাম’কে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাকে কোনো ধরনের রদবদল না করে যারা এই ‘ইসলাম’ এর অনুসরণ-অনুকরণ করে কিংবা চর্চা ও প্রচার করে, তারাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’।



সুতরাং আমাদের পরিচয়, আমরা ‘মুসলিম’ এবং ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’।
*****************************************************************



যুগের পালা বদলে ‘ইসলাম’ ও ‘মুসলিম’ শব্দের প্রতি বেশ অবিচার শুরু হয়। যে কেউ নিজ খিয়াল-খুশি মতো ‘ইসলাম’ এর ব্যাখ্যা করে এবং সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে নিজকে ‘মুসলিম’ বলতে ও ভাবতে শুরু করে। তাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ নামে আমাদের পরিচয় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। রাসূল মুহাম্মদ সা. এর মাধ্যমে আমাদের সঠিক পরিচয় জানিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র সঠিক মর্ম ও তাৎপর্য অনুধাবন করা জরুরি।

আমাদের পরিচয় ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ কেন?
সুন্নাহ ও জামাআর আনুসারী যারা তারাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’। তাই ‘সুন্নাহ’ ও ‘জামাআহ’ কী, বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। এখানে সংক্ষেপে উক্ত দু’টি বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।

সুন্নাহ:
*******

আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ‘অনুসৃত দলীল’ আকড়ে ধরার জন্য। তাই ‘অনুসৃত দলীল’ অনসন্ধান করা আমাদের জন্য জরুরি। আল্লাহ তাআলা মানবজীবনের উন্নতি ও সফলতার জন্য পবিত্র গ্রন্থ ‘আল কুরআন’ নাযিল করেছেন। আর এর ব্যাখ্যা করে তাকে সমাজ্জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেরণ করেছেন রাসূল মুহাম্মদ সা.কে। আর রাসূল সা. যেসময় যে সমাজে আগমন করেন, তখন সে সমাজে বিরাজ করছিল মানবেতিহাসের সব চেয়ে খারাপ অবস্থা। সমাজের এই খারাপ ও অস্থিতিশীল অবস্থা মুহূর্তেই বদলে যায়নি। রাসূল মুহাম্মদ সা. এর প্রতি ধাপে ধাপে ওহী প্রেরণ করে আল্লাহ তাআলা সমাজকে পরিশুদ্ধ করেন। নবুওয়াতের দীর্ঘ ২৩ বছরে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে যা একটি পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা তথা ‘শরীয়াহ’র রূপ লাভ করে।

এখানে একটি লক্ষণীয়। আর তা হলো, ওহীর মাধ্যমে রাসূল সা. বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে পর্যায়ক্রমে যেসব বিধান প্রবর্তন করেছেন, তার কোনোটা ছিলো সাময়িক, কোনোটা স্থায়ী। আর তা ছিলো সামাজিক প্রয়োজনেই। পরবর্তীতে রাসুল সা. সাময়িক বিধানগুলোর কোনোটা রহিত ঘোষণা করেছেন, কোনোটা আংশিক পরিবর্তিত আকারে রেখেছেন, আবার কোনোটা অপরিবর্তিত অবস্থায়ই রেখে দিয়েছেন। তাই একথা বলাই বাহুল্য যে, কিছু হাদীসের উপর সাহাবায়ে কেরামের আমল আছে আর কিছু হাদীসের উপর নেই। কিছু হাদীস অনুসৃত আর কিছু হাদীস অনুসৃত নয়। তাই প্রশ্ন হলো, ‘হাদীস’ এর বিশাল ভান্ডার থেকে ‘অনুসৃত দলীল’ হিসাবে কোন্ ধরনের ‘হাদীস’ গৃহীত হবে?

এব্যাপারে গভীর অধ্যয়নের পর জানা যায়, ‘হাদীসে’র দু’টি অবস্থা আমাদের সামনে বিদ্যমান। যার একটি ‘হাদীস’ নামেই প্রসিদ্ধ। অপরটি ‘সুন্নাহ’ হিসাবে পরিচিত। ‘হাদীসে’র বিশাল ভান্ডারের যেসবের উপর উম্মতের ‘আমল’ বিদ্যমান, তাকেই ‘সুন্নাহ’ বলে। অর্থাৎ ‘সুন্নাহ’র উপর উম্মতের ‘আমল’ রয়েছে, তাই ‘অনুসৃত দলীল’ হিসাবে এই ‘সুন্নাহ’-ই নির্ধারিত, ‘হাদীস’ নয়।

বিষয়টি দলীল-প্রমাণের সাহায্যে স্পষ্ট করার প্রয়াস পাবো।
************************************

‘সুন্নাহ’কে ‘অনুসৃত দলীল’ বলার কারণ দু’টি। যথা-


 1.ইসলাম মুসলমানদের একমাত্র জীবনাদর্শ। তাই ইসলামী শরীয়তকে জীবনের সর্বোত্র বাসত্মবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে অসংখ্য হাদীসে। আর হাদীসে যেখানেই এই তাগিদ দেয়া হয়েছে, সেখানেই ‘সুন্নাহ’র কথা বলা হয়েছে, হাদীস নয়।

রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,

من رغب عن سنتى فليس منى ـ رواه البخارى عن أنس بن مالك : ২/৭৫৭


অর্থ: যে ব্যক্তি  আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, সে আমার দলভূক্ত নয়। (বুখারী: ২/৭৫৭)



 عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ ـ رواه ابوداؤد عن العرباض بن ساريةصـ ২/৬৩৫, والترمذى وابن ماجه واحمد

অর্থ: তোমরা আমার সুন্নাহের এবং হেদায়াত ও সুপথপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাহের অনুসরণ করো এবং তা সুদৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরো এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরো। (আবু দাউদ: ২/৬৩৫, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)





أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: تركت فيكم أمرين لن تضلوا ماتمسكتم بهما- كتاب الله وسنة نبيه ـ رواه مالك صـ ৩৬৩



অর্থ: নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন- আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত এদুটিকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না; – আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ।- মুয়াত্তা ইমাম মালিক: ৩৬৩



أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال العلم ثلاثة أية محكمة، وسنة قائمة ، وفريضة عادلة.أخرجه إبن ماجه فى سننه عن عبد الله بن عمرو صـ৬



অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ইলম তিন প্রকার- আয়াতে মুহকামা, সুন্নাতে কায়েমা ও ফারিযায়ে আদেলা।

উপরে চারটি ‘হাদীস’ পেশ করা হয়েছে। প্রতিটি ‘হাদীসে’ ‘শরীয়তে ইসলাম’ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার প্রতি ‘উম্মত’কে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয়, প্রতিটি ‘হাদীসে’ ‘‘সুন্নাহ’’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে, ‘হাদীস’ নয়। তাই কোনো বিষয়ে কোনো ‘হাদীস’ পাওয়া গেলেই তা নির্দ্বিধায় আমলযোগ্য বিবেচনা করার সুযোগ নেই।



২. সহজের জন্য দ্বিতীয় কারণটি আলোচনার পূর্বে জানা দরকার ‘হাদীস’ কী?

হাদীসবিদগণ বিভিন্নভাবে হাদীসের সংজ্ঞা  দিয়েছেন। তন্মধ্যে এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।



الحديث هو أقوال النبى صلى الله عليه وسلم وأفعاله وسهوه وتقاريره وتروكه وماهمّ به ففعله أو لم يفعله وأحواله وشمائله وصفاته الخِلقية و الخُلُقية حتى الحركات والسكنات فى اليقظة والمنام سواء كان قبل البعثة أو بعدها ـ أنظر توجيه النظر ولمحات من تاريخ السنة و علوم الحديث صـ১১



অর্থ: হাদীস হল, নবী কারীম সা. এর কথা, কাজ, সাহু, সমর্থন, বর্জন এবং যা ইচ্ছা করেছেন বাস্তবে রূপান্তর করে থাকুন বা না থাকুন। তার অবস্থা, শামায়েল এবং তাঁর অবয়বগত ও চরিত্রগত গুণাবলী। এমনকি ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় নড়াচড়া এবং তা নবুওয়াতের পূর্বে হোক বা পরে।

শায়েখ তাহের জাযায়েরী হাদীসের সংজ্ঞায় বলেন,



الحديث ما أضيف إلى النبى صلى الله عليه وسلم من قول أو فعل أو تقرير أو ترك أو هَمٍّ أو سيرة أو حالة أو صفة خِلقية أو خُلُقية سواء كان قبل البعثة أو بعدها ـ أنظر توجيه النظر إلى أصول الآثر صـ ১/৩৭ للشيخ طاهر الجزائرى ومجموع الفتوى صـ ১৮/২-১০



অর্থ: নবী কারীম সা. এর দিকে সম্পৃক্ত কৃত কাজ, তার সমর্থন, বর্জন, ইচ্ছা, সীরাত, অবস্থা, অবয়ব ও চরিত্রগত গুণাবলী- তা নবুওয়াতের পূর্বে হোক বা পরে- তার সবই ‘হাদীস’। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: তাওযীহুন নজর ও মাজমুআতুল ফতওয়া ইবনে তাইমিয়্যা।

হাদীসের পরিচয় সংক্রান্ত হাদীস-বিশারদদের উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, হাদীসের একটি বড় ভান্ডার দখল করে আছে যেসব জিনিস তার মধ্যে রয়েছে-

ক. মানসূখ হাদীস,

খ. নবী কারীম সা. এর জন্য নির্ধারিত বিষয়াদি (যেমন, চারের অধিক বিবাহ),

গ. নবী কারীম সা. এর অবয়বগত গুণাবলী,

ঘ. নবুওয়াতের পূর্বের বিষয়াদি,

ঙ. জাল হাদীস … ইত্যাদি।

সচেতন পাঠক লক্ষ করলে দেখতে পাবেন, হাদীসের সংজ্ঞানুযায়ী যেসব বিষয় হাদীসের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে বা হয়ে থাকে, তার সবই ‘অনুসৃত’ নয়। তাই তা আমাদের দলীলও নয় এবং এসবের উপর আমল করাও জরুরি নয়। পক্ষান্তরে হাদীসে ইরশাদকৃত ‘সুন্নাহ’ হল, নবী কারীম সা. এর ঐসকল বিষয়াদি, যেগুলো আমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য। এবং এটাই দীন ও শরীয়তের  অনুসৃত পথ।

শায়েখ অব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ র. বলেন,

قال الشيخ عبد الفتّاح أبو غدّه فى هامش لمحات من تاريخ السنة وعلوم الحديث  ولفظ السنة إذا ورد فى كلام النبى صلى الله عليه وسلم وكلام الصحابة والتابعين رضى الله تعالى عنهم فالمرادبهالطريقةالمشروعةالمتبعةفىالدينوالمنهجالنبوىالحنيفوذلك فيما جاء منه في سياق الإستحسان و الثناء والطلب والإقتضاء والإيراد والسنة الفقهية التى تقابل الواجب ولايراد به ايضا المعنى الذى اصطلح عليه الأصوليون او المحدثون صـ১৪



অর্থ: ‘সুন্নাহ’ শব্দটি যখন নবী কারীম সা., সাহাবায়ে কেরাম রা. ও তাবেঈনে কেরাম র. এর ভাষায় উল্লেখ করা হয় তখন এর উদ্দেশ্য হয়, দীনের বিধিবদ্ধ অনুসরনযোগ্য ও নবী কারীম সা. এর মধ্যপন্থী জীবন ব্যবস্থা। এবং তা পছন্দনীয়, প্রসংশিত কাম্য ও কাঙ্খিত বিষয়াদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর দ্বারা ফিকহী ‘সুন্নাত’ উদ্দেশ্য নয়, যা ওয়াজিবের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। এবং সেই অর্থও উদ্দেশ্য নয়, যা উসূল ও হাদীস-বিশারদদের পরিভাষায় ব্যবহার হয়। (টীকা: লমহাত মিন তারীখিস সুন্নাহ: ১৪)

হাদীসের এই পরিচয় থেকে ‘সুন্নাহ’ ‘অনুসৃত দলীল’ হওয়ার দ্বিতীয় কারণও স্পষ্ট হলো। অর্থাৎ হাদীসে ‘সুন্নাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঐসকল বিষয়, যা অনুসরণযোগ্য এবং দীন ও শরীয়ত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।



উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনার দ্বারা একথা বুঝে আসে যে, মুসলমানদের জন্য ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ সা. এর রেখে যাওয়া আদর্শ হচ্ছে ‘সুন্নাহ’। তাই আদর্শ হিসাবে গ্র্হণ করতে হবে সুন্নাহকে, হাদীসকে নয়।



জামাআহ:
********

جماعةএর পূর্ণরূপ হচ্ছে جماعة الصحابة। অর্থাৎ মুসলিমজীবনের সর্বোত্র সাহাবায়ে কেরামের জামাআতকে অনুসরণ করা হবে। কারণ, কুরআন নাযিল হয়েছে রাসূল মুহাম্মদ সা. এর উপর। আর এই কুরআনের আমল প্রত্যক্ষ করেছেন কেবল তারাই, যারা রাসূল সা. এর প্রতি ঈমান এনে তার একান্ত সান্নিধ্যে সময় কাটিয়েছেন। তাই ‘সুন্নাহ’ এর সঠিক মর্ম তারাই ভালোভাবে বুঝে আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন। সুতরাং ‘সুন্নাহ’কে তার প্রকৃত ও সঠিক ব্যাখ্যা মোতাবেক নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে হলে তা অবশ্যই সাহাবায়ে কেরামের জামাতের আমলের নমূনায় করতে হবে; নতুবা সে ‘আমল’ ‘সুন্নাহ’ অনুযায়ী হবে না। আর কোনো ‘আমল’ ‘সুন্নাহ’ অনুযায়ী না হলে তা কখনোই আল্লাহ তাআলার নিকট গৃহীত হবে না।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন,

آمنوا كما آمن الناس قالوا أنؤمن كما آمن السفهاء ـ سورة البقرة: ১৩



অর্থ: তোমরা ঈমান আনো, যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে। তখন (মুনাফিকরা) বলল, আমরা কি সেভাবে ঈমান আনবো যেভাবে নির্বোধরা ঈমান এনেছে? -সূরা বাকারা: ১৩

এই আয়াতে الناس ও السفهاء  দ্বারা সাহাবায়ে কেরাম উদ্দেশ্য। তাফসীরে ইবনে কাসীর গ্রন্থে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,



يعنون اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم رضى الله عنهم قال ابو العالية والسدى بسنده عن أبن عباس وإبن مسعود وغير واحد من الصحابة صـ১/৭২



অর্থাৎ, তারা এদ্বারা রাসূল সা. এর সাহাবাগণকে উদ্দেশ্য করেছে। এটা আবুল আলিয়া ও সুদ্দী নিজ সনদে হযরত ইবনে আববাস ও ইবনে মাসউদ  এবং একাধিক সাহাবা থেকে বলেছেন। ১/৭২

বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ তিরমিযী শরীফে এসেছে,



২. عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن بنى إسرائيل تفرقت على ثنتين وسبعين ملة وتفترق أمتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار إلا ملة واحدة قالوا من هى يارسول الله! قال ماأنا عليه وأصحابى ـ رواه الترمذى فى أبواب العلم صـ ২/৯৩



অর্থাৎ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, নিশ্চয় বনী ইসরাঈল বাহাত্তরটি দলে বিভক্ত হয়েছে। আমার উম্মত তিহাত্তরটি দলে বিভক্ত হবে সকলেই জাহান্নামে যাবে শুধু মাত্র একটি দল ছাড়া। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা? নবী কারীম সা. ইরশাদ করলেন, আমি ও আমার সাহাবারা যার উপর আছে।-তিরমিযী: ২/৯৩

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করছে, আমল ও ঈমান তখনই নাজাতের মাধ্যম হবে, যখন তা জামা‘আতে সাহাবায়ে কেরামের আমলের নমূনায় হবে। তাই দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলা যায়, আদর্শের প্রশ্নে মুসলিম জাতির নাম হলো, আহলুস সুন্নাহ ওয়া জামা‘আতিস্ সাহাবা, আহলুল হাদীস নয়।



‘‘আহলুল হাদীস’’ পরিচয় কেন কাম্য নয়
**************************************

উপরে আমারা বিভিন্ন দলীল-প্রমাণের দ্বারা মোটামুটি স্পষ্টভাবে বলে এসেছি যে, মুসলমানদের আদর্শিক পরিচয়, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। স্বভাবতই এর বিপরীত কোনো নামে তাদের পরিচয় দেয়া হলে তা তাদের আদর্শের পরিচয় বহন করবে না। সেহেতু আহলুল হাদীস নাম তাদের জন্য কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়। কারণ, কুরআন ও হাদীস এর প্রমাণ নেই। তাই এটা বিদআত।



আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর বৈশিষ্ট
***********************************

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সবচেয়ে বড় আলামত হচ্ছে, তারা-

১. আকীদায় সবসময় মধ্যপন্থী।

২. বান্দাকে একেবারে কর্মক্ষমতাহীন জড় পদার্থও মনে করে না। আবার বান্দাকে কোনো কাজের কর্তাও মনে করে না।

৩. গোনাহগারকে বেঈমান মনে করে না। আবার কবীরা গোনাহকারীকে জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত নয়- এমনও মনে করে না।

৪. হযরত আলী রা.কে ফাসেকও মনে করে না। অপরদিকে তাকে মা’বূদ কিংবা নবীদের মতো মা’সূমও মনে করে না।

৫. পীরকে সকল ক্ষমতার অধীকারী মনে করে না।

৬. বাইআত হওয়াকে ফরয মনে করে না। আবার এটাকে পীর-তন্ত্র বলে শিরক বা বিদআতও বলে না।

সুন্নাহ ও জামাআতুস সাহাবার বিপরীত কোনো কর্ম-কান্ডকে ইসলামের নামে করা হলে তা বিদআত বলে গণ্য। তাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর বিপরীতে যেকোনো নামে বাতিল আত্ন প্রকাশ করলে আমাদের ঈমানী দায়িত্ব, তার অসারতা প্রমাণ করে দ্বীন-ইসলামের সঠিক অবয়ব জনমানুষের সামনে তুলে ধরা। এপর্যায়ে তাদের সাথে মোকাবেলার কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছি।





                          বাতিলের মোকাবেলা কিভাবে করবো
************************************************


 1.দ্বীনী কাজ এখলাসের সাথে করতে হয় নতুবা সেটা দ্বীনী কাজ বলে গন্য হয় না। তাই এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম নিয়তকে খালিস করে নেয়া জরুরি।
 2.বাতিলের মোকাবেলা নবী ও সাহাবীদের কাজ। তাই একাজের উপর আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে প্রতিদানের আশা রাখা।
 3.যেকোনো বাতিলের ব্যাপারে সম্মক অবগতি লাভ করতে হবে। এবং তাদের প্রকৃত স্বরূপ ঊদঘাটন করতে হবে। নতুবা আমাদের বক্তব্যকে মানুষ অপপ্রচার সাব্যস্থ করবে।
 4.যেকোনো বাতিলের ব্যাপারে উলামায়ে হাক্কানী ও আকাবেরে কেরামের বক্তব্য এবং তারা তাদের যে সকল ত্রুটি ধরেছেন তা জানা। এবং তাদের রদ্দের পদ্ধতি দেখা আবশ্যক।
 5.বাতিলের প্রতি ব্যক্তিগত কোনো বিদ্বেষ রাখা যাবে না। ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রতি হামদরদী থাকতে হবে। তাদেরকে হক বুঝানোর আকাঙ্খা থাকতে হবে।
 6.দাওয়াতের ভিত্তি সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহ হতে হবে। কেননা, কুরআনের أدع إلى سبيل ربك بالحكمة বলে সুন্নাহকেই উদ্দেশ্য  নেয়া হয়েছে। সুন্নাহের ত্বরীকায় দাওয়াত দিতে হবে। তাই نصوص এর বড় অংশ মুখস্থ করে নিতে হবে।
 7.নিজে কুরআন ও সুন্নাহের উপর মযবুতভাবে আমলদার হতে হবে।  জামাতের পাবন্দী ইবাদত ও জিকরের পাবন্দী করতে থাকতে হবে।
 8.কখনোই আঘাত করে বা খোচা দিয়ে কথা বলা যাবে না। কেননা, এভাবে কাউকে হিদায়াতের পথে আনা যায় না। এগুলো করা হয় আত্মতৃপ্তিলাভ করার জন্য যা সম্পূর্ণ تشهى। মনে রাখা দরকার,  تشهى  থেকে বাঁচতেই تقليد  বা  تقليد شخصى     কে আবশ্যক মনে করা হয়।
 9.বাতিলকে প্রথমে হকের পথে আনার চেষ্টা করতে হবে। তাদের বক্তব্যগুলোকেও সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা চাই। তাদের কথায় কোনো সঠিক বিষয় থাকলে তা বিবেচনায় আনা চাই। কেননা, إن الكذوب قد يصدق

10. তাদের ভ্রান্তিগুলোকে প্রথমে আপসে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। যদি তা কোনোভাবেই সম্ভব না হয়, তা হলে জনসাধারণকে তাদের বিভ্রান্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা ও খায়েরখাহীর বহিরপ্রকাশ ঘটাতে হবে। যাতে কেউ মনে করতে না পারে যে, এটা হিংসাত্মক কোনো মতানৈক্য।
 1.বাতিলের মাঝে অবশ্যই فرق مراتب করতে হবে। এক্ষেত্রে তাওহীদ ও ঈমানিয়াতের উপর আঘাতকারী বাতিল প্রথমে প্রতিহত করতে হবে। আমার ধারণা, এদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভন্ড পীরদের দ্বারা মানুষের ঈমান বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই মুকাবেলায় তাদেরকে প্রথমে তাদেরকেই বেছে নেয়া উচিত বলে মনে করি।

12. আমাদের মাঝে আত্মসমালোচনার মনোভাবও থাকা চাই। আমাদের সকল কাজ কি ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এর নীতি ও আদর্শ মোতাবেক কি না? এক্ষেত্রে বাতিলের কোনো কোনো কথা গ্রহণযোগ্যও থাকতে পারে। সব মিলিয়ে নিজেদের সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে। নতুবা لم تقولون ما لا تفعلون এর وعيد থেকে কেউ বাঁচতে পারব না।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন