শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১২

অমূল্যবানী শেখ মাহমুদুল হাছান ছাঃ





মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা.বা. এর বয়ান
তারিখ : ৭/১/১১ ইং, আল মুঈন মাদরাসা, কলতা বাজার ঢাকা

আল্লাহর ইচ্ছা এবং এক বুযুর্গের গল্প
সব কিছুর মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তাঁর ইচ্ছায় আমরা দুনিয়াতে এসেছি এবং তার ইচ্ছাতেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেব। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউই দুনিয়াতে আসতে পারে না, আবার কেউ যেতেও পারে না। আল্লাহর ইচ্ছা ও কুদরতের উপরই সবকিছু নির্ভর করে। হাকীমুল উম্মাৎ হযরত থানভী রহ. একটি সুন্দর ঘটনা লিখেছেন। ঘটনাটি হলো- এক বুযুর্গ ছিলেন। জনৈক ব্যক্তি উক্ত বুযুর্গের সাক্ষাতে এসে কুশল জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কেমন আছেন? উত্তরে বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, কোনো বাদশাকে কি একথা জিজ্ঞেস করতে হয় যে, “আপনি কেমন আছেন? শোন, আমি এমন এক বাদশা যার কথায় এই পৃথিবী পরিচালিত।” কথাটা শুনতে কুফুরী কালামের মত মনে হয়। কিন্তু বুযুর্গদের কথা এমনই হয়, তাদের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে কোন বিরূপ ধারণা করে ফেলা অনুচিত। তাদের কথার মাঝে অনেক সময় গভীর রহস্য লুকায়িত থাকে, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে অক্ষম; উক্ত বুযুর্গের কথাও তেমনি রহস্যাবৃত। তিনি যে বললেন- “পৃথিবীর সবকিছুর আমার কথা মত চলে’ এ কথার উদ্দেশ্য ও রহস্য কী? উদ্দেশ্য হলো, বুযুর্গ একথা বলতে চাচেছন যে, কোন বিষয়ে আমার নিজস্ব কোন ইচ্ছা নেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যে ইচ্ছা সেটাই আমার ইচ্ছা। আমি আমার ইচ্ছাকে কুরবান করে দিয়েছি আল্লাহর ইচ্ছার উপর। সুতরাং আল্লাহ যেটা ইচ্ছা করেন সেটা আমারই ইচ্ছা। অর্থাৎ আমার মাঝে আমি বলতে কিছুই নেই। আমি আমার সব কিছু আল্লাহর মাঝে বিলিন করে দিয়েছি। আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই আমার অন্তরে নেই। সেই হিসেবে মূল কথা এটাই হলো যে, আল্লাহই পৃথিবীর সবকিছু পরিচালনা করেন। আর আল্লাহর ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা। সুতরাং আমার ইচ্ছামতই পৃথিবী পরিচালিত হয়।
আমরা কি পারি না?
এবার তাহলে বুযুর্গের অবস্থা আর আমার-আপনার অবস্থা মিলিয়ে দেখি। বুযুর্গ তো স্বীয় অন্তরসহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মালিকের অনুগামী করেছে, আমরা কি পারি কোনো একটিমাত্র অঙ্গকেও আল্লাহর আনুগত্যে পুরোপুরি সোপর্দ করতে? আমরা যদি শুধুমাত্র একটি চোখ নিয়ে চিন্তা করি যে, তা আল্লাহর ইচ্ছা মুতাবেক চালাবো, তাহলে সেটাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আসলে আমাদের চেষ্টা নেই। চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। তা না হলে ঐ বুযুর্গ পারলেন কীভাবে? পৃথিবীতে এমন অসংখ্য বুযুর্গ পুর্বে ছিলেন এবং এখনো আছেন- যাদের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে সামান্য পরিমাণও আল্লাহর নাফরমানী প্রকাশ পায় না। উপযুক্ত চেষ্টা-সাধনা করেই তারা সেই স্তরে পৌঁছেছিলেন। আমার-আপনার জন্য কি সেই স্তরে পৌঁছা অসম্ভব? কক্ষণো না। প্রয়োজন শুধু মেহনত-মোজাহাদার। কিন্তু কেমন মোজাহাদা? কোনো বিষয়ে কৃতিত্ব দেখিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিতে চাইলে আপনি কেমন চেষ্টা মেহনত করবেন চিন্তা করুন! যেহেতু আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সকল বাদশা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের মালিক, অতএব তাঁর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য তেমন চেষ্টাই করতে হবে।

আনুগত্যের দু কারণ
আনুগত্য দু’ কারণে হয়। যথা (১) শাস্তির ভয়ে, (২) মুহাব্বতে। আমরা যে এখানে তাফসীর করছি ও শুনছি, কুরআন হাদীস পড়ছি ও পড়াচ্ছি, আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলার চেষ্টা করছি, এসব কিছুর পেছনে উপরোক্ত দুই কারণ বিদ্যমান। আমারা কেউ আল্লাহর শাস্তির ভয়ে এগুলো করছি, আবার কেউ আল্লাহ মুহাব্বতে করছি। আল্লাহ পাক উভয়কেই পুরস্কার দিবেন। তবে উভয়ের পুরস্কারের মাঝে পার্থক্য হবে। দুনিয়াতে যেমন পার্থক্য হয় তেমনি আখিরাতেও পার্থক্য হবে।
যে ব্যক্তি মুহাব্বতে কাজ করে তার মাঝে গোলামীর যোগ্যতা সৃষ্টি হয়। গোলাম চব্বিশ ঘণ্টাই মালিকের চিন্তা করে। আর যে ব্যক্তি ভয়ে কাজ করে সে শ্রমিকের মতো কাজ করে টাইম টু টাইম। শ্রমিক এবং গোলামের কাজের মধ্যে রয়েছে রাতদিনের পার্থক্য। শ্রমিক তার নিজের স্বার্থ দেখে, আর গোলাম তার মনিবের স্বার্থ দেখে।
উভয়টির প্রয়োজনীয়তা
সুলুকের রাস্তায় আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য ভয় এবং মুহাব্বত উভয়টা প্রয়োজন। কারণ সবার অন্তরে তো মুহাব্বত পয়দা হয় না। তাই আল্লাহর একান্ত প্রিয়পাত্র হতে না পারলেও অন্তত আল্লাহর নাফরমান না হোক, তার আযাবের ভয়ে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকুক; এ কারণেই ভয়কেও রাখা হয়েছে। যাতে এক নম্বর পজিশনে না পারলে দুই নম্বর পজিশনে হলেও থাকতে পারে। মানুষ স্বভাবগতভাবে যে কোনো ভয়ানক ও ক্ষতিকর জিনিস থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। যেমন, সাপ দেখলে পলায়ন করে। সুতরাং “গুনাহের কারণে জাহান্নামে যেতে হবে” এই ভয় যদি মানুষের মাঝে আসে তাহলে সে অবশ্যই গুনাহ ছেড়ে দেবে। এজন্যই তাছাওউফের লাইনে যারা প্রথম পা রাখে, তাদেরকে গুনাহের কাজের ভয় শেখানো হয়।

আল্লাহর মুহাব্বত এবং গোলামীর যোগ্যতা
আমাদের মাদরাসাসমূহে আছরের পর একটি বই পড়ে শুনানো হয় যার নাম এক মিনিটের মাদরাসা। তাতে প্রথমে গোনাহের পরিচিতি ও পরিণতির কথা বলা হয়। কারণ গোনাহের পরিনতি হলো ভয়ানক আযাব। এটা শুনে মানুষ গুনাহ ছেড়ে দেবে। চাই তার অন্তরে আল্লাহর মুহাব্বত থাক বা না থাক। বস্তুত ভয়ের কারণে মানুষ যখন গুনাহ ছেড়ে দেবে, তখন অটোমেটিক তার মাঝে আল্লাহর মুহাব্বত চলে আসবে। এজন্যই আগে বলা হয়েছে গুনাহ ছাড়তে। গুনাহ ছাড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ভয় করা। আলেমগণ এ কারণেই বলছেন, ভয় শেখো, ভয়ের ঘটনা শোনো; এরদ্বারা মুহাব্বত পয়দা হবে। আর কারো মাঝে যদি আল্লাহর মুহাব্বত চলে আসে তাহলে তার মাঝে গোলামীর যোগ্যতা এমনিতেই চলে আসবে। কারণ যে যাকে মুহাব্বত করে সে তার অনুসরণ করে। ভয় ও মুহাব্বত সৃষ্টি করার কতগুলো যাহেরী উপকরণ আছে- যেমন, নামায রোযা, হজ্ব প্রভৃতি। এগুলোর মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভয় এবং মুহাব্বত সৃষ্টি হয়। আর কিছু আছে বাতেনী উপকরণ, যা আল্লাহ তার কুদরতের মাধ্যমে বান্দার অন্তরে সৃষ্টি করে দেন।

মুহাব্বত সৃষ্টির পাঁচটি আমল
হযরত থানভী রহ. তার লিখিত শরীয়ত ও তরীকত কিতাবে লিখেছেন, আল্লাহর পক্ষ হতে অন্তরে মুহাব্বত সৃষ্টি করার পাঁচটি আমল রয়েছে (১) যিকরে দায়েম, অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর যিকির করা-সামান্য হলেও। (২) শুকরে নেয়ামত। অর্থাৎ আল্লাহ পাক যে আমাদেরকে হাত, পা, শরীর, আলো, বাতাস, মাটি, পানিসহ অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন এর শুকরিয়া করা। (৩) নেক কাজ করার সময় সহীহ নিয়ত তথা এখলাসের সাথে করা। হাদীস শরীফে এসেছে, বান্দা যখন নেক কাজে সহীহ নিয়ত করবে তখন আল্লাহ পাক তার প্রতিটি নিয়তের বদলায় নেকি দান করবেন। (৪) নিজ সামর্থ্যানুযায়ী গুনাহ বর্জন করা। তবে শক্তির বাইরের বিষয়ে ভিন্ন কথা। যেমন, কোন ব্যক্তি যদি কারো বুকের মাঝে পিস্তল লাগিয়ে বলে যে, তুই বল- “আল্লাহ নেই, আল্লাহকে মানি না” তাহলে এমতাবস্থায় সে নিরুপায়। এজন্য সে আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হবে না।
যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্তে¡ও গুনাহ বর্জন করবে না, সে অবশ্যই আল্লাহর হাতে গ্রেফতার হবে। (৫) সুহবতে আউলিয়া, অর্থাৎ যারা আল্লাহকে মুহাব্বত করে তাদের সান্নিধ্যে থাকা। তাঁদেরকে মুহাব্বত করা। যে আল্লাহর ওলীকে মুহাব্বত করবে আল্লাহও তাকে মুহাব্বত করবেন।
হযরত থানবী রাহ. এর ৫টির সঙ্গে আমিও একটি অতিরিক্ত করে দিলাম। তাহলো- আল্লাহর কাছে চাওয়া, ক্রন্দন করা। তাঁর কাছে হাত তুলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মুহাব্বতের প্রার্থনা করা। যে ব্যক্তি এই নিয়ামতের অধিকারী হতে পারবে তার জন্য সকল কাজ আসান তথা সহজ হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে কুরআনে পাকের এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন,
“আমার কাছে প্রার্থনা করো, আমি কবূল করবো। অর্থাৎ আমার নিকট চাও, আমি দেব।

আল্লাহর কাছে চাওয়ার উপকারিতা
এখানে আল্লাহ তাআলা এই কথা বলছেন যে, দেখ, তোমাদেরকে তো অনেক ঘটনা শুনালাম, অনেক আমলের কথা বললাম, যে আমলের দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবী হবে। যাহেরী আমলসমূহের মাধ্যমে কামিয়াবী পাওয়া যাবে কিন্তু যদি সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে প্রার্থনা জারী রাখো তাহলে কামিয়াবী পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত হবে।  ‹ ˜ ¢ ¤ এখানে একটি মদ আছে, মদ মানে লম্বা করে বলা, যাতে মানুষ শুনতে পারে। এ জন্য আল্লাহ পাক লম্বা ডাকে আহবান করেছেন। এক হাদীসে এসেছে, বান্দা যদি আল্লাহর কাছে না চায় তাহলে আল্লাহ তাকে বঞ্চিত করে দেন। পিতার কাছে সন্তান কোন কিছু চাইলে পিতার যেমন শান্তি লাগে, ঠিক তেমনি বান্দা যখন আল্লাহর কাছে চায় তখন আল্লাহরও শান্তি লাগে। তবে চাওয়ার পদ্ধতি ও নিয়ম আছে। সব সময় চাইলে হবে না।
দোয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেক কিতাব আছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বান্দা যদি পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে আমার কাছে দোয়া করে তাহলে আমি অবশ্যই তার দোয়া কবুল করবো।

দোয়া কবুলের পদ্ধতিসমূহ
এখন যদি কেউ বলে যে, কই, আমি যে এ বছর এমপি হওয়ার দোয়া করলাম, হতে তো পারলাম না। অথচ আল্লাহ তো বললেন যে, আমার কাছে প্রার্থনা করো, কবুল করবো। এর উত্তর হলো, পুর্বোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ লিখেছেন, আল্লাহ পাকের দোয়া কবুল করার পদ্ধতি তিনটি। অর্থাৎ তিনি তিনভাবে মানুষের দোয়া কবুল করেন।
(১) প্রার্থনাকারী যা চায় তা হুবহু দেয়া হয়। যদি তাতে ঐ ব্যক্তির কোন ক্ষতি না থাকে তবে আল্লাহ পাক কখনো দোয়ার সাথে সাথে দিয়ে থাকেন, আবার প্রার্থনাকারীর কোনো মঙ্গল বিবেচনায় পরবর্তীতেও দিয়ে থাকেন।
(২) যা প্রার্থনা করা হয় তা হুবহু দেয়া হয় না। কারণ কখনো কখনো এমন হয় যে, বান্দা যে জিনিস চায় তা সে নিজের জন্য মঙ্গলজনক মনে করলেও আল্লাহ তা মঙ্গলজনক মনে করেন না বিধায় ঐ জিনিস দেন না। তবে তার দোয়ার কারণে তাকে অন্য এক উপকারী জিনিস দান করেন। যেমন, কোন ব্যক্তি প্রার্থনা করলো যে, আল্লাহ আমাকে হাফেয বানিয়ে দিন, কিন্তু আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন না। কারণ আল্লাহ জানেন, তাকে হাফেয বানালে রমযান মাসে তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেবে। মানুষের বাসা-বাড়ীতে ঘুরে ঘুরে খতম পড়ে বিনিময় নেবে। যা তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে বিধায় দোয়া করা সত্তে¡ও আল্লাহ তাকে হাফেয বানাননি। তবে তার পরিবর্তে আল্লাহ তাকে আলেম বানিয়ে দিলেন।
কোন ব্যক্তি চাইলো এমপি হওয়ার জন্য। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে এমপি বানাননি, কারণ এ বছর এমপি হলে তার গলায় জুতার মালা পরিধান করানো হবে, তাই আল্লাহ তাআলা অন্য বছর তাকে এমপি বানিয়ে দেন।
(৩) দুনিয়ার জীবনে সমীচীন নয় এমন জিনিস প্রার্থনা করলে তা দেয়া হয় না, তবে কোনো প্রার্থনাকারীই যেহেতু বঞ্চিত হয় না তাই আল্লাহ তার প্রার্থনা বা দোয়ার কারণে আখেরাতে তার জন্য একটি বিনিময় নির্ধারিত করেন।

দোয়া করার সময় ও নিয়ম
এক হাদীসে এসেছে, আখেরাতের জীবনে বান্দা যখন দেখবে যে, তার জন্য হাজারো নিয়ামত প্রস্তুত, তখন সে ভাববে, যদি দুনিয়ার জীবনে একটি দোয়াও কবুল না হতো তাহলে কতই না ভালো হতো। দোয়ার জন্য হাত উঠানো শর্ত নয়। হাত উঠানো ছাড়াও দোয়া করা যায়। একা একাও দোয়া করা যায়। সম্মিলিতভাবেও দোয়া করা যায়। নামাযের পরে করতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। তবে উলামায়ে কেরাম নামাযের পর দোয়া করতে এজন্য বলেছেন যে, অনেক মানুষ এক সাথে নামায পড়েছে; এত মানুষের মধ্যে কয়েকজন হলেও তো মুখলিস বান্দা ও আল্লাহর ওলী থাকবেই, তাই দোয়া কবুলের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। দোয়া নামাযের অংশ নয়, তবে নামাযের পর দোয়া কবুলের সময় হিসেবে দোয়া করা যেতে পারে। তবে দোয়া করার সময় এদিকে লক্ষ রাখতে হবে যে, মাসবুকের নামাযের যেন কোন ক্ষতি না হয়। জোরে দোয়া ঐ সময় করা যায় যখন মানুষের তেলাওয়াত ও নামাযের কোন অসুবিধা না হয়। এতে মানুষের মনে তৃপ্তি আসে, আর মানুষ উচ্চ আওয়াজে ‘আমীন’ বলে। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দোয়া করতেন তখন হযরত সাহাবায়ে কেরামগণ জোরে জোরে ‘আমীন’ বলতেন। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, অনেক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরে জোরে দোয়া করতেন।

দোয়া কবূলের জন্য একটি বিশেষ শর্ত
আল্লামা মাযহারী,কুরতুবী, আলূসী রহ. তাদের স্ব স্ব তাফসীরের কিতাবে অনেক হাদীস এনেছেন, তার মধ্যে চমৎকার একটি হাদীসও এনেছেন। বলতে মনে চাচ্ছে না, তবুও ইসলাহের নিয়তে বলে দিচ্ছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন আল্লাহ তাআলাকে রব মেনে দোয়া করবে তখন তিনি তাদের দোয়া কবুল করবেন।
অনেকে দোয়ার ক্ষেত্রে গর্ব করে; মদীনা শরীফ, মক্কা শরীফ ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে গিয়ে দোয়া করে, কিন্তু দোয়ার সুফল নেই। কারণ কী? কারণ, যে মুখে দোয়া করে সে মুখে শুধু হারাম খাদ্য ভক্ষণ করেছে। যার খাদ্য হারাম, শরীরের রক্ত হারাম, গোস্ত হারাম, হাড্ডী হারাম, তার দোয়া কবুল হয় না। আল্লাহ পাক পবিত্র, তিনি পবিত্র মানুষের দোয়া কবুল করেন। যে দিলের মধ্যে আল্লাহর ভালোবাসা নেই, রাসূলের ভালোবাসা নেই, সেই মানুষের দোয়া তিনি কবুল করেন না। সে যখন দোয়া করে তখন আল্লাহর রাগ বেড়ে যায়।
বস্তুত এই হাদীসে দোয়া কবূল হওয়ার একটি বিশেষ শর্তের কথা বলা হয়েছে; তা হলো দোয়া কবুলের জন্য খানা হালাল হতে হবে। আমরা যে এতো দোয়া করি তা কেন কবুল হয় না? আসলে না হওয়ার কারণ দুটি (১) আমরা দোয়া করি কিন্তু আমাদের খাবার হালাল নয়। (২) যাদের জন্য দোয়া করি তাদের খাবার হারাম। ঘুষ ও সুদের টাকায় যার জীবন চলে তার জন্য কোনো বড় হুযুর দ্বারা দোয়া করালেও লাভ নেই।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন এক সহজ আমল বলে দিন, যা করলে জান্নাতে যেতে পারবো। তবে শুধু আমার জন্য নয়, বরং আপনার সমগ্র উম্মতের জন্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু সাঈদ! তুমি তিনটি কাজ করতে পারলে জান্নাতে যেতে পারবে। (১) হালাল খাদ্য খাবে। (২) সব আমল সুন্নত মুতাবেক করবে। (৩) মানুষ যেন তোমার দ্বারা কোন প্রকার কষ্ট না পায়। হে আবু সাঈদ এই তিনটি (নবীয়ানা, সাহাবীয়ানা) কাজ যদি তুমি করতে পার তাহলে তুমি জান্নাতে যেতে পারবে।

দোয়া কবূলের স্থান
মোটকথা দোয়া কবুলের জন্য শর্ত হলো হালাল খাদ্য ভক্ষণ। দোয়া স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে বেশি কবূল হয়। অর্থাৎ এমন বিশেষ জায়গা আছে যেখানে দোয়া বেশি কবূল হয়। এমন বিশেষ সময় আছে যখন দোয়া বেশি কবুুল হয়। এমন বিশেষ ব্যক্তি আছে যার দোয়া বেশি কবূল হয়। যেমন দুনিয়াতে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া কবুলের স্থানটি হলো বায়তুল্লাহ শরীফ। ওখানেও আবার শ্রেষ্ঠ স্থান হলো মাকামে ইব্রাহীম, মীযাবে রহমত ও মুলতাযাম। আল্লাহ পাক সকলকে সেখানে যাওয়ার তাওফীক দান করুন।
দোয়া কবুলের বিশেষ সময় হলো, জুমার রাত্রি, জুমার দিন আসরের পর, দুই ঈদের রাতে, লাইলাতুল কদরে, লাইলাতুল বরাতে ইত্যাদি। আর বিশেষ ব্যক্তি হলো ইয়াতিমের দোয়া, মাযলুমের দোয়া। তদরূপ বিশেষ ইবাদতের পরেও দোয়া কবূল হয়। যেমন, নামাযের পর, কুরআন তেলাওয়াতের পর দোয়া কবুল হয়।

আল্লাহ থেকে সহজে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণ
দোয়ার মাধ্যমে যেমন সহজেই আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা যায়, তেমনি আল্লাহর থেকে সহজে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার একটি কারণ রয়েছে, তাহলো অহংকার। পুর্বোক্ত আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে-
যারা ইবাদতের ক্ষেত্রে অহংকার করে অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অহংকার একমাত্র আল্লাহর জন্যই শোভনীয়। কারণ তিনি সবচেয়ে বড়। আর অহংকার আল্লাহর জন্য ভালো গুণ। এটা হাদীসেও এসেছে। মানুষের মধ্যে অহংকার ও অহমিকা সৃষ্টি হয় জ্ঞানের কারণে, মালের কারণে, পদমর্যাদার কারণে। ধর্মীয় অঙ্গনে হাফেয ও কারী সাহেবদের মাঝে অহংকার বেশি, কারণ তাদের অন্তরে আছে আল্লাহর পবিত্র কালাম। তারা তা সুন্দর করে পড়তে পারে। মাসয়ালা না জানার দরুন তাদের এ দশা। আর আলেমদের মাঝেও অহংকার আছে, কিন্তু মাসয়ালা জানা থাকার কারণে তারা তা দাবিয়ে রাখে। তবে যদি উত্তেজিত হয়ে যায় তাহলে আর ঠিক থাকতে পারে না। কারণ হলো, সমগ্র দুনিয়ার উত্তম জ্ঞান তাদের মাঝে। আর জ্ঞানের বাহ্যিক প্রকাশ হলো অহংকার। আলেমরা এতো এহসান করছে উম্মতের উপরে, এত মুজাহাদা ও কষ্ট করছে দ্বীনের জন্য, ইসলামের জন্য, এর পরেও তাদের মূল্যায়ন নেই।

বুখারী শরীফের একটি হাদীস
বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে,
নেওয়ার জন্য যে হাত পাতে সে নিচে থাকবে আর যে দেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় সে উপরে থাকবে। আমার এক উস্তাদ ছিলেন, তিনি মাদরাসা হতে বেতন নেয়ার সময় হাত উপরে রেখে বেতন নিতেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বললেন, বেতন না নিয়ে তো পারি না; তবে হাদীসের কথা মনে করে হাত উপরে উঠিয়ে নেই। নিচের দিক থেকে নিলে তো নিকৃষ্ট হয়ে যাব তাই উপর দিক দিয়ে নেই।
যাহোক আয়াতে আল্লাহ প্রথমে বললেন, আমার কাছে দোয়া করো আমি কবুল করবো। এরপরেই স্বাভাবিক ভাবে এই কথা আসে যে, যারা দোয়া করে না তারা জাহান্নামে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তা বলেননি। আল্লাহ বললেন, যারা আমার ইবাদত করে না তারা মুতাকাব্বির তথা অহংকারী। অতিসত্বর তারা লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এরূপ বলার কারণ হলো, দোয়াই তো একটা ইবাদত; শুধু ইবাদত নয় বরং হাদীসে এসেছে,

দোয়া হলো সমস্ত ইবাদতের মগজ।
অন্যান্য ইবাদত থেকে দোয়ার স্বাতন্তর্্য
কোনো ইবাদতকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে কোনো কিছুর প্রার্থনা করলে প্রার্থনাকারীর অন্তরে সাধারণ দুটি জিনিস থাকে। যথা- ভয় ও অহংকার। পক্ষান্তরে মাধ্যম ছাড়া প্রার্থনায় এগুলো থাকে না। সরাসরি আল্লাহর কাছে চাওয়ার দ্বারা আবদিয়াত বেশি প্রকাশ পায়। এ জন্যই প্রত্যেক ইবাদত ও আমলের সঙ্গে দোয়া রাখা হয়েছে, যাতে আমল করার পর দোয়া করা হয়। ইবাদত ও আমল করলে মাধ্যম ব্যবহার করে আবদিয়াত প্রকাশ করা হলো, পক্ষান্তরে দোয়ার মধ্যে সরাসরি আবদিয়াত প্রকাশ পায়। আবদিয়াতের অর্থ হলো, আল্লাহর সামনে নিজেকে অপদস্থ মনে করা, মিটিয়ে দেয়া, মেথর ও চামারের চেয়েও নিজেকে ছোট মনে করা। আর এই অবস্থাটা দোয়ার মাধ্যমে বেশি প্রকাশ পায়। শুধু বেশি বেশি ইবাদত করলে দিলের মধ্যে আমিত্বভাব সৃষ্টি হতে পারে, কুরআন শরীফ সুন্দর করে পড়তে পারলে অন্তরে অন্য রকম একটি ভাব সৃষ্টি হয়। কিন্তু দোয়ার মধ্যে এরূপ হয় না, দোয়ার মধ্যে কাঁদতে হয়, রোনাজারী করতে হয়। সকলেই বুঝতে পারে যে, এত বড় হুযুরও কাঁদে। মোট কথা দোয়ার মধ্যে তাওয়াজু তথা বিনয় সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়। সমস্ত ইবাদতের আত্মা হলো দোয়া। এ জন্য এমন কোন ইবাদাত নেই যার মধ্যে দোয়া নেই। ঐ ইবাদাত ইবাদাতই নয় যার মধ্যে দোয়া নেই। নামায, রোযা ইত্যাদি সকল ইবাদাতের মধ্যে দোয়া আছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই আয়াতের উপর বেশি বেশি আমল করার তাওফীক দান করুন!

আল্লাহর নেয়ামত
আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন জাগতিক প্রয়োজন সৃষ্টি করেছেন। সাথে সাথে এসব প্রয়োজন পূরণার্থে মানব জীবনকে অসংখ্য নেয়ামত দ্বারা আচ্ছাদিত করেছেন। তন্মধ্যে বিষেশ নেয়ামত হলো, রাত-দিনের সৃষ্টি। “আল্লাহ রাত সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা আরাম করতে পারো।” ঘুম হলো আরামের বস্তু। আল্লাহ পাক তা এমনভাবে রাতে দিয়েছেন যে, গভীর অন্ধকারে সবার একত্রে নিদ্রা চলে আসে। যাতে একজন অপর জনকে বিরক্ত না করে। আলো থাকলে ঘুম আসে না বিধায় তিনি রাতকে অন্ধকার বানিয়েছেন। তবে আরাম দুই প্রকার (১) যাহেরী (২) বাতেনী। শারীরিক আরাম হলো যাহেরী তথা বাহ্যিক আরাম আর আত্মিক আরাম হলো বাতেনী তথা অন্তরের আরাম। যারা ঘুমাতে যায় তাদের সবার রাতে ঘুম আসে। তারা শরীরের আরাম উপভোগ করে। আর যারা আত্মা ও দেমাগের আরাম খোঁজে তাদের কারো শেষ রজনীতে ঘুম আসে না। তখন তারা জাগ্রত অবস্থায় ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করে দিলের শান্তি ও আরাম উপভোগ করে।

সাহাবীদের রাতের অবস্থা
সাহাবীদের রাতের অবস্থা জানার জন্য একদিন শেষ রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে বের হলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধারণা ছিল যে, শেষ রাত্রি দোয়া কবুলের সময়, ইবাদতের সময়, এ সময়ে অন্তত আবু বকর তো ঘুমাবে না। তিনি হযরত আবু বকর রা. এর ঘরের কাছে গিয়ে হাজির হলেন, কিন্তু কোন তেলাওয়াত, যিকির ও দোয়ার সাড়া শব্দ না পেয়ে মনে খুব ব্যথা অনুভব করছেন। অতঃপর এক পা দুপা এগিয়ে যখন ঘরের বেড়ায় কান লাগালেন তখন গোঁঙ্গানো আওয়াজ শুনতে পেলেন। হযরত আবু বকর রা. ঐ সময় কাঁদছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধারণা সঠিক হলো। তিনি খুব খুশি হলেন।

আল্লাহ ওয়ালা হতে চাইলে
আমরা রাতে শব্দ করি তবে আমাদের সেই শব্দ হলো ঘুমের, ক্রন্দনের নয়। আল্লাহ ওয়ালা হতে চাইলে হযরত আবু বকর রা. এর মতো শেষ রাতে উঠে কাঁদতে হবে। চোখের পানি ফেলতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। যে ব্যক্তি শেষ রজনীতে উঠে নামায পড়বে, কুরআন শরীফ তারতীলের সঙ্গে তেলাওয়াত করবে আল্লাহ পাক তার দিল পাক করে ইলম ও মা’রেফাত প্রবেশ করাবেন। এ কথা দিবালোকের মত সত্য যে, শেষ রাতে জাগ্রত হওয়া ছাড়া কোন উস্তাদ বা ছাত্র আল্লাহ ওয়ালা হতে পারবে না। রাতের পরের নেয়ামত হলো-আমি দিনকে আলোকিত করে বানিয়েছি যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে পারো, রাস্তা ঘাটে যাতায়াত করতে পারো, কাজ করতে পারো।
দিন আল্লাহ পাকের এক নেয়ামত। সারা দুনিয়ার সকল লাইট একত্রিত করেও দিনের মত স্পষ্ট সুন্দর ও উজ্জ্বল আলো সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। দিনের আলোতে কাজ করে যে শান্তি, রাতে লাইটের আলোতে কাজ করলে সে শান্তি আদৌ পাওয়া যায় না।
তাই তো তিনি বলেছেন, “আল্লাহ পাক বান্দার উপর অনুগ্রহশীল। যদি তাই না হতো তাহলে চোখ দিয়ে আল্লাহর নাফরমানী করার পর সে চোখ আর সুস্থ থাকত না। আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, শিরা-উপশিরা কোনো আবেদন ছাড়াই তিনি দান করেছেন, অতঃপর সেই অঙ্গ দ্বারা নাফরমানী করলেও তিনি সেগুলো কেড়ে নেন না। তার চেয়ে বড় দয়ালু আর কে আছে!

অন্যান্য নেয়ামত
দুনিয়াতে ছাদ না থাকলে আমরা বাতি, পাখা ইত্যাদি লাগাতে পারি না। আল্লাহ পাকও আসমানকে ছাদ বানিয়ে তাতে সুর্য, চন্দ্র, তারকা, গ্রহ-উপগ্রহ দিয়েছেন। তিনি মানুষের আরামের জন্য বরফকে উপরে রেখেছেন। যখন প্রয়োজন হয় তখন তিনি বাতাসের মাধ্যমে সারা দুনিয়া শীতল করে দেন। এরপরও যদি শীতল না হয় তখন তিনি তা বাতাসের মাধ্যমে দুনিয়াতে ছেড়ে দেন। বরফগুলো বিশাল আকারের বিধায় তিনি বাতাসের সাহায্যে পাহাড়ে ছাড়েন। যদি তা টুকরো টুকরো করে ফেলতেন তাহলে দুনিয়ার মানুষের জন্য সমস্যার কারণ হতো।
মানুষের ছাদের মধ্যে খুঁটি দিতে হয় কিন্তু আল্লাহর ছাদের মধ্যে খুঁটি নেই। তিনি নিজেই বলেছেন, তোমরা যা দেখছো তা আমি খুঁটিবিহীন তৈরি করেছি। আসলেই কি আসমান খুঁটিবিহীন? এই প্রশ্নের উত্তরে মুফাসসিরগণ বলেন, আমরা তা জানি না। বস্তুত আসমানের খুঁটি আছে কি নেই সে ব্যাপারে চূড়ান্ত মত পেশ করা সম্ভব নয়। কারণ আমরা তা দেখি না। তবে দেখা না গেলে যে থাকতে পারবে না এটা জ্ঞানপ্রসুত কথা নয়। যেমন আত্মা আমরা দেখি না; তাহলে কি আমরা আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করবো?
আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আসমান, যমিন ও খুঁটিবিহীন ছাদ নিয়ে যদি চিন্তা করতে না পার তাহলে অপর একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করো। তা হলো-তিনি একমাত্র আল্লাহ যিনি তোমাদের অর্ধহাতের মধ্যে দুটি চোখ, ছিদ্রওয়ালা নাক, কান, বত্রিশ দাঁত সৃষ্টি করেছেন। এগুলো নিয়ে তুমি একটু চিন্তা কর যে, তিনি কত মহান।
আল্লাহ পাক মানুষকে হাত দিয়েছেন তার দ্বারা সে ঠাণ্ডা, গরম বুঝতে পারে। চোখের দ্বারা ভালো-মন্দ দেখতে ও বুঝতে পারে। জিহক্ষার দ্বারা মিষ্টি, ঝাল ইত্যাদি স্বাদ অনুভব করতে পারে। আর ব্রেইন তো জ্ঞানের মহা গোডাউন। কয়েক বছর পুর্বে সংঘটিত বিষয় আমরা কিভাবে বলি? মালামাল সব গোডাউনে স্টক করা থাকে, সেখান থেকে বের করে পেশ করি। মানুষের সকল কিছুর বুঝ ব্রেইনে জমা আছে। সেখান থেকে প্রত্যেক অঙ্গে সাপ্লাই হয়। হাকীমুল ইসলাম ক্বারী তৈয়্যব সাহেব রাহ. একজন উঁচু দরজার বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। তিনি বলতেন, ভাই! দেমাগ হলো উলামাদের আবাসস্থল। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সেখান থেকে কর্মের ক্রিয়া সংগ্রহ করে। এই উলামারা কোন দিনও ঝগড়া করে না। কান কখন বলেনা যে, আমি দেখার কাজ করবো। পা কোন দিনও বলে না যে, আমি ধরার কাজ করবো, হাত কোন দিন বলে না যে, আমি হাঁটার কাজ করবো, চোখ কোন দিনও বলে না যে, আমি চিবানোর কাজ করবো, অর্থাৎ একজনের দায়িত্বে অপরজন হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু বাহ্যিক দুনিয়ার জ্ঞানী যারা তারা এই নীতি মেনে চলতে পারে না।
এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, তোমরা তোমাদের চেহারা নিয়ে চিন্তা করে দেখ যে, আমি তা কত নিপুনভাবে সৃষ্টি করেছি। এত কিছুর পরও তোমরা কেমন করে আমার কুদরতকে অস্বীকার করো? আমি তো তোমাদেরকে পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টি হতে সবচেয়ে সুন্দর করে বানিয়েছি। আল্লাহ পাক মানুষের চেহারাতে এমন সৌন্দর্য দিয়েছেন যা পৃথিবীর অন্য কোন সৃষ্টির মধ্যে নেই। অপর এক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দর ও সুঠাম অবয়বে।
আল্লাহ পাক এমন কুদরত ওয়ালা যে, তার সৃষ্টিতে কোন খুত নেই। বর্তমানে পৃথিবীতে সাতশত কোটি ও অধিক মানুষ আছে, কিন্তু একজনের চেহারার সঙ্গে অপরজনের চেহারার মিল নেই। অর্ধহাত জায়গাতে তিনি এমন অমিল দিয়ে যেভাবে সৃষ্টি করলেন, এটা তার কুদরত ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ পাক আমাদেরকে বেশি বেশি তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দান করুন!

1 টি মন্তব্য: