মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

স্বামী-স্ত্রীর প্রতি হেদায়েত ,হাকীমুল উম্মাত হযরত থানবী রহ.

স্বামী-স্ত্রীর প্রতি হেদায়েত

হাকীমুল উম্মাত হযরত থানবী রহ.

স্বামীর উদ্দেশ্যে
হযরত হাকীম ইবনে মুয়াবিয়া রহ. স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, পিতা বলেন, আমি রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আমাদের স্ত্রীদের আমাদের উপর কী কী অধিকার রয়েছে? তখন উত্তরে তিনি বলেন,
১. যখন তুমি পানাহার কর, তখন তাকেও পানাহার করাও।
২. যখন তুমি পোশাক গ্রহণ কর, তখন তাকেও পোশাক দাও।
৩. স্ত্রীর মুখের উপর কখনো মারবে না বা আঘাত করবে না।
৪. কখনো ক্রদ্ধ হয়ে হস্ত পর্যন্ত স্পর্শ করবে না।
৫. তার সাথে উঠা বসা করা বন্ধ করবে না।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাময়ার সূত্রে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা যেন কেউ স্বীয় স্ত্রীদের ক্রীতদাসের মত মারপিট না কর।
হযরত আবু হুরাইরা রা. এর সূত্রে হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদেরকে স্ত্রীদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবহার করার নসীহত করছি। আমার এ উপদেশ তোমরা কবূল কর। কারণ, নারীদেরকে আল্লাহপাক শরীরের পার্শ্বদেশের হাড্ডি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, এখন যদি তোমরা ষোল আনা তাদের সোজা করতে চেষ্টা কর, তবে তা ভেঙ্গে যাবে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি ঘটবে। আবার যদি তাদেরকে মুক্তভাবে ছেড়ে দাও তবে তারা যে বাকা,সে বাকাই থেকে যাবে। এজন্য আমি তোমাদেরকে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার উপদেশ দিচ্ছি।
আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য
হাড্ডি সোজা করার মর্ম হলো, তাদের কোন কথা যদি স্বভাবের সাথে না মেলে, তবে তার সংশোধনের প্রচেষ্টায় সফল হতে পারবে না। যদি তাদের ত্রুটির পিছনে লেগেই থাকো তবে চূড়ান্তরূপে সম্পর্কের ইতি ঘটবে। এ জন্য ছোট-খাট তুচ্ছ ব্যাপার এড়িয়ে চলা উচিত এবং সেই সাথে এটাও জেনে রাখা উচিত যে, তাদের প্রতি কঠোর ব্যবহারে বেপরওয়া হয়ে উঠলে কখনো কখনো শয়তান স্ত্রীদের অন্তরে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার দুঃসাহস যুগিয়ে দেয়।
হযরত উম্মে সালমা রা. বর্ণনা করেন, আমি ও মায়মূনা রা. রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাজির ছিলাম, ইত্যবসরে (অন্ধ সাহাবী) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. এলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তার থেকে পর্দা করতে নির্দেশ দিলেন। আমরা আরজ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি তো অন্ধ, তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। নবীজী উত্তর দিলেন, তোমরাও কি অন্ধ হয়েছো যে, তাকে দেখতে পাচ্ছ না? (তিরমিজি, আবু দাউদ)

আনুষাঙ্গিক জ্ঞাতব্য
এটাও স্ত্রীদের অধিকারের অন্তর্ভুক্ত যে, পর-পুরুষের থেকে তাকে এমনভাবে পর্দায় রাখবে, যাতে তাকে কেউ দেখতে না পারে আর না সে কাউকে দেখতে পারে। এর ভিতর স্ত্রীদের দ্বীনের হিফাযত নিহিত রয়েছে। কারণ বেপর্দেগীর অমঙ্গলতা থেকে তারা এর মাধ্যমে বাঁচতে পারবে। পার্থিব উপকারিতাও এখানে অজানা নয়। কারণ অভিজ্ঞতায় বলে, কোন ব্যাপারে যখন বেশি গুরত্ব আরোপ করা হয় তখন তার সাথে নিবিড় ও প্রগাঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পর্দার মাঝে এ উপকারিতা বিদ্যমান তা বলাই বাহুল্য। এর মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক গভীর হবে এবং তার অধিকারও বেশি সংরক্ষিত হবে। তাহলে বোঝা গেল স্ত্রীদের পার্থিব উপকারিতা পর্দা পালনের মাঝে বেশি নিহিত।

স্ত্রীর উদ্দেশ্যে
হযরত আবু হুরাইরা রা. এর সূত্রে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি যদি কাউকে কারো জন্যে সিজদার নির্দেশ দিতাম তবে আমি অবশ্যই স্ত্রীদের জন্য স্বামীকে সিজদা করতে নির্দেশ দিতাম। এর দ্বারা স্বামীদের কত বড় হক প্রমাণিত হয়। ইবনে আবি আওফার সূত্রে হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, স্ত্রীরা ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার স্বামীর হক আদায় না করে।
আনুষাঙ্গিক জ্ঞাতব্য
অর্থাৎ শুধু নামায, রোযা আদায় করে যেন কোন স্ত্রী এটা মনে না করে যে, আমি আল্লাহর হক আদায় করে ফেলেছি, এটা ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় হয় না যতক্ষণ স্বামীর হক আদায় করা না হয়। কারণ, স্বামীর হক আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহপাক।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন যে, আমি হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরজ করলাম যে, কোন মহিলা সবচেয়ে বেশি ভাল? তদুত্তরে তিনি ইরশাদ করলেন, সে সকল মহিলারা শ্রেষ্ঠ যাদেরকে স্বামীরা যখন দেখে তখন আন্তরিক সুখ অনুভব করে এবং স্বামীরা যখন কোন নির্দেশ দেয়,তখন তারা তা পালন করে। আর নিজের আত্মমর্যাদা ও অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে অপছন্দনীয় কথা বলে স্বামীর বিরুদ্ধে যায় না।
দুনিয়া ও আখেরাতের উপকার পূর্ণাঙ্গরূপে একজন দম্পতির মাঝে তখনই কেবলমাত্র দেখা দেয়, যখন স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরে থাকবে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা, আর এটা তখনই গড়ে উঠে, যখন একে অন্যের অধিকার আদায় করে দেয়।
বিবাহের পর ভিন্ন ঘরের প্রয়োজনীয়তা
১. বিবাহের পর মাতা-পিতার সাথে এক পরিবারে থাকা সম্ভব হলে কোন বাধা নেই; কিন্তু একত্রে একই গৃহে থাকা কিছুতেই উচিত নয়। এর অপকারিতা প্রথমে বুঝে না এলেও পরবর্তীতে বোঝা যায়।
২. পারিবারিক অশান্তি থেকে বেঁচে থাকার জন্য মোক্ষম পন্থা হলো, এক গৃহে একত্রে না থাকা; কারণ একাধিক মহিলা এক স্থানে থাকলে বেশি অশান্তির কারণ হয়। (মালফুজাতে আশরাফিয়া : ৩২৭)
৩. আমার জনৈক বন্ধুর পারিবারিক অশান্তি ও ঝগড়া বিবাদের কথা জানানো হলে আমি আমার বন্ধুকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলাম: আমার এই পরামর্শের কথা যেন কেউ জানতে না পারে। পরে সে যৌথ পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর তদের মাঝে আর ঝগড়া-বিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি, শান্তিমত সবাই বসবাস করেছে। তবে সে পিতা-মতার খরচ বহন করেছে। (প্রাগুক্ত : ১৪১)
পুত্রবধুর সাথে একত্রে না থাকা উচিত
বর্তমান যুগে বিবাহের পর মাতা-পিতা থেকে আলাদা থাকা চাই, এতে উভয়ের শান্তি ও নিরাপত্তা রয়েছে। মিরাঠে আমার এক বন্ধু ছিল। সে চিঠি লিখে তার পারিবারিক অশান্তি ও কলহ বিবাদের কথা জানিয়ে এর সমাধান জানতে চাইল। আমি তাকে বললাম, তুমি দেরি না করে ভাড়া করা বাসায় উঠে পড়। সে আমার কথামত আমল করতে শুরু করলো এবং এরপর থেকে আর তার গৃহে বিবাদ দেখা দেয়নি।
আমি বলতে চাই, বিবাহের পর মাতা-পিতার উপর নির্ভরশীল না হয়ে আলাদা উপার্জন করা উচিত, আর এটাই যুক্তিযুক্ত।  http://dawatul-haq.com/catarticle.php?cid=16&id=255

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন