শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

পৃথিবীতে লংমার্চ এর ইতিহাস

লংমার্চ অর্থাত্ দীর্ঘ যাত্রা। পৃথিবীতে কবে কোথায় কখন চালু হয়েছিল আমার জানা নেই।

  [ 1 ] তবে পৃথিবীর প্রথম লংমার্চ পরিচালিত হয় মহানবী (স.)-এর নেতৃত্বে। অত্যাচারী রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের আক্রমণ থেকে মুসলিম জাহানকে বাঁচানোর জন্য নবম হিজরিতে মদিনা থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে তাবুকের উদ্দেশে পরিচালিত হয় লংমার্চ। ইতিহাসে এই লংমার্চ তাবুক অভিযান হিসেবে খ্যাত হয়ে আছে। এই দীর্ঘ লংমার্চে রসুলের (স.) সঙ্গী ছিলেন ৩০ হাজার সাহাবি সৈন্য। আর ছিল ৯০০ উট ও ১০০ ঘোড়া। বাকি সবাই ছিলেন পদাতিক। বর্ণনা থেকে দেখা যায়, প্রতি ১৮ জন সৈন্যের জন্য ছিল মাত্র একটি উট। সেই ১৮ জন পর্যায়ক্রমে উটে সওয়ার হতেন। খাদ্য সামগ্রীর অপ্রতুলতার কারণে অনেক সময় গাছের পাতা খেতে হচ্ছিল। উটের সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও ক্ষুধার জন্য উটও খেতে হচ্ছিল। এজন্য ইতিহাসে এই বাহিনীর নাম হয়েছে ‘জায়সে উছরত’ বা অভাব-অনটনের বাহিনী।
অপরিসীম দুঃখ-কষ্ট সয়ে রসুলের (স.) নেতৃত্বে সত্যের সৈনিকরা ১৫ দিন ধরে একটানা হেঁটে পৌঁছে যান তাবুকে। সেখানে ২০ দিন অবস্থান করে বিজয়ী বাহিনী ফিরে আসে মদিনায়। মোট ৫০ দিন ব্যয় হয় এই অভিযানে।

[2]
 এরপর, যে লংমার্চ পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছিল, সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের মাথায় বজ্রাঘাত হেনে চীনের মাটিতে প্রতিষ্ঠা করেছিল সাম্যবাদ, সেই লংমার্চের নায়ক ছিলেন আজকের আধুনিক চীনের স্থপতি কমরেড মাও সে তুং। ১৯৩৪ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৯৩৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চলেছিল এই ঐতিহাসিক লংমার্চ। দক্ষিণ-পূর্ব চীনের জিয়াংশি ও ফুজিয়ান থেকে শুরু হয়ে এই লংমার্চ ১১টি প্রদেশ পাড়ি দিতে অতিক্রম করেছিল ১২ হাজার কিলোমিটার পথ। চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের সঙ্গে এই লংমার্চে অংশ নিয়েছিল ৮০ হাজার সশস্ত্র কমিউনিস্ট ক্যাডার অর্থাত্ রেড আর্মি। পৃথিবীর এই দীর্ঘতম লংমার্চের সেনারা পাড়ি দিয়েছে দুর্গম পর্বত, শ্বাপদসঙ্কুল চড়াই-উতরাই। জনবিরল ও খাদ্যশূন্য মালভূমি। খরস্রোতা নদী, হ্রদ ও গভীর বন। এছাড়া চিয়াং কাই শেকের কুওমিন টাং বাহিনীর আক্রমণ তো লেগেই ছিল। এই জীবন-মৃত্যুর লংমার্চে, ধারণা করা হয়, প্রথম ১২ মাসেই ৫০ হাজার কমিউনিস্টের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু কমরেডদের এই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি।
অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে শেষ হয় লংমার্চ। শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন চিয়াং কাই শেক। অবসান ঘটে সাম্রাজ্যবাদের দালালদের অত্যাচার-নির্যাতনের। চীনের আকাশে উদিত হয় লাল সূর্য। প্রতিষ্ঠিত হয় শোষণমুক্ত শাসনব্যবস্থা।

[ 3]
 আরেকটি ঘটনাকে পাশ্চাত্যের সাদা চামড়ার ইতিহাসবিদরা লংমার্চ হিসেবে দেখতে চান। সেই লংমার্চের ঘটনাটি ঘটে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়। সময়কাল ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। জার্মান সেনারা তাদের হাতে আটক ২ লাখ ৫৭ হাজার যুদ্ধবন্দির মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার বন্দিকে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে পোল্যান্ড ও চেকস্লোভাকিয়ার ওপর দিয়ে হেঁটে তাদের বন্দিশিবিরে যেতে বাধ্য করে। এ ঘটনাটিকে অনেকে ‘ব্ল্যাকমার্চ’ নামেও অভিহিত করে থাকেন। সামান্য কিছু খাবার ছাড়া বন্দিদের আর কিছু দেয়া হতো না বলে কেউ কেউ এটাকে ‘ব্রেডমার্চ’ও বলে থাকেন।

[ 4]
 আমাদের ইতিহাসে লংমার্চকে সংযুক্ত করার একক কৃতিত্ব মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও পানি আইনকে থোরাই কেয়ার করে গঙ্গার পানির ওপর বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকারকে অস্বীকার করে ভারত চালু করে মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ। শুকিয়ে যায় প্রমত্তা পদ্মা। দেখা দেয় ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ ছিল না। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সেই ঘোর দুর্দিনে মুক্তিযুদ্ধের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ ভারতের এই একতরফা পানি লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় কি যায় না ভেবে সবাই যখন তোতলাচ্ছিলেন, দ্বিধাহীন চিত্তে জাতীয় স্বার্থের পক্ষে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গর্জন করে উঠলেন মওলানা ভাসানী। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বাপ্নিক জাতিসংঘসহ সারা পৃথিবীর দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদের কাছে ভারতের পানি আগ্রাসনের স্বরূপ উন্মোচন করে পাঠালেন তারবার্তা। ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে সাফ জানিয়ে দিলেন, যদি আমাদের ন্যায্য পানি না দাও তাহলে আমি ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করব। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব ফারাক্কা বাঁধ। ইন্দিরা গান্ধী অনুরোধ করলেন লংমার্চ বাতিল করতে। মওলানা ভাসানী জানিয়ে দিলেন তাহলে পানি দাও। ১৬ মে, ১৯৭৬ সাল সকাল ১০টার মধ্যে রাজশাহীর মাদ্রাসা-ময়দানকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ মানুষের ঢলে ভেসে গেল পুরো শহর। লংমার্চ শুরু হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে ফারাক্কা অভিমুখে। সে ছিল জাতীয় ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ঘটনা। শুধু দেশপ্রেমকে বক্ষে ধারণ করে প্রতিবাদ প্রতিরোধের শপথে দৃপ্ত হয়ে আকাশ কাঁপিয়ে স্লোগান উঠল, ‘ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ।’ ‘চলো চলো ফারাক্কা চলো পদ্মার বুকে পানি আন।’ পেছনে লাখ লাখ মানুষের মেঘের মতো মিছিল নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে এগিয়ে চললেন অশীতিপর জননায়ক মওলানা ভাসানী। সন্ধ্যায় মিছিল পৌঁছল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে রাত্রিবাস। পরদিন মহানন্দা পাড়ি দিয়ে মিছিল চলল সীমান্ত অভিমুখে। শিবগঞ্জ পার হয়ে কানসার্ট হাইস্কুল ময়দান পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা গড়িয়ে যায়। আর এগুতে দেয়া হলো না মিছিলকে। ওদিকে সীমান্তে ফারাক্কার বাঁধ বরাবর হাজার হাজার সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে ভারত। মহামিছিলকে থামালেন মহানায়ক। বললেন, আমার নিরস্ত্র জনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছে ভারত। বিশ্ববাসীকে আমন্ত্রণ জানালেন বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যের চিত্র দেখে যেতে। ইন্দিরা গান্ধীর উদ্দেশে বললেন, হয় আমার ন্যায্য পানি দাও, নইলে আরও বড় কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাব আমি। দেশবাসীর উদ্দেশে বললেন, ভারত আমাদের বন্ধু হতে পারে না। সত্যিকারের কোনো বন্ধু এভাবে একটি বন্ধু দেশকে শুকিয়ে মারতে পারে না। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিলেন তিনি।
১৬ থেকে ১৭ মে ১৯৭৬—এই দুই দিন চলেছিল ফারাক্কা মিছিল। ১৯৭১ সালের পর ফারাক্কা লংমার্চকে কেন্দ্র করেই দ্বিতীয়বারের মতো সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এ দেশের মানুষ। আর সেই প্রথমবার ভারত ভীতসন্ত্রস্ত চিত্তে অনুভব করেছিল বাংলাদেশের গর্জন। তার পরই জিয়াউর রহমানের সরকার ফারাক্কা ইস্যু নিয়ে যায় জাতিসংঘে। আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছিল ভারত।

 আমার পরম সৌভাগ্য, আমি সেই মহামিছিলে সামান্য একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। যে কয়টা কাজ আমাকে আমার মাতৃভূমির জন্য ফোয়ারার মতো জাগিয়ে রাখে, ফারাক্কা লংমার্চ তার অন্যতম। ফারাক্কা লংমার্চে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা আমার জীবনের এক মূল্যবান সঞ্চয়।

[5 ]
 বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘাতক শান্তিবাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার শান্তি চুক্তির বিরুদ্ধে ১৯৯৭ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত হয় পার্বত্য লংমার্চ। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে খাগড়াছড়িতে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় এই লংমার্চ। এই লংমার্চের পথে পথেও ছিল বাধা আর বাধা। এই লংমার্চেও আমি কিছু ভূমিকা রাখি। খাগড়াছড়ি সমাবেশের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আমার ওপর।

 [6]
 বাংলাদেশের চলমান জীবনে আরও একটি লংমার্চের কথা স্মরণযোগ্য। ভারতের উগ্রসাম্প্রদায়িক ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), বজরং দল ও শিবসেনাদের গুণ্ডাপাণ্ডারা মুঘল সম্রাট জহিরুদ্দীন মোহাম্মদ বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়। এই ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইসলামি সংগঠনগুলো ঢাকা থেকে বেনাপোল সীমান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ লংমার্চ পরিচালনা করে। শায়খুল হাদিস আজিজুল হক, মুফতি ফজলুল হক আমিনী ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালে এই লংমার্চে দেশের ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। সে সময় সীমান্তে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন বেশ কয়েকজন।

[7]
‘আমরা সীমান্তবাসী’র লংমার্চেরও একটা প্রেক্ষাপট আছে। ২০১০ সালে বছরজুড়ে বাংলাদেশের সীমান্তে অপদখলীয় ভূমি নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ গুলি করে বেশ ক’জন বাংলাদেশীকে হত্যা ও আহত করে। সিলেটের জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর থেকে গোয়াইনঘাটের সোনারহাট সীমান্ত পর্যন্ত কয়েক দফা গুলির ঘটনায় সারা বছর সীমান্ত এলাকার জনসাধারণের ছিল উদ্বেগ, আতঙ্ক ও উত্কণ্ঠা। সীমান্ত এলাকার এসব অপদখলীয় জমি নিয়ে যৌথ জরিপকাজ শুরু হলে সীমান্তবাসীর মধ্যে আরেক দফা উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। এদিকে ভূমি রক্ষায় সিলেট সীমান্তের মানুষ আন্দোলন শুরু করে। সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে সেখানে কয়েক মাস ধরে চলছিল প্রতিরোধ আন্দোলন। তীব্র আন্দোলনের মুখে জরিপের নামে বাংলাদেশের ভূমি ভারতকে তুলে দেয়ার কার্যক্রম একপর্যায়ে স্থগিতও করা হয়। কিন্তু জরিপ চলাকালে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের কয়েক স্থানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী দখল করে নেয় বাংলাদেশের ভূমি। এই পরিস্থিতিতে দেশের ভূমি রক্ষা ও সীমান্তের প্রতিবাদী জনতার সঙ্গে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করার জন্য আমরা সীমান্তবাসী আয়োজন করে এই লংমার্চের। বাংলাদেশের ইতিহাসে সীমান্তবাসীর এই লংমার্চও আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচিত হবে।

 এই লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান সরকার কর্তৃক নির্যাতিত, আমার দেশ-এর অকুতোভয় সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ২০১১ সালে ১ অক্টোবর সিলেট থেকে জাফলং সীমান্ত পর্যন্ত পরিচালিত এই লংমার্চ কাঁপিয়ে দিয়েছিল বর্তমান শাসকদের মসনদের ভিত্তি।
[8]

 6 এপ্রিল 2013 শনিবার
আল্লামা শফীর আহ্বানে যারা আজ ধর্ম ও দেশ রক্ষার লংমার্চে অংশ নিয়েছেন নাস্তিকদের শস্তির দাবিতে ঢা কা  অভিমূখে ৷

 লংমাচের আগে সংবাদ সন্মেলনের কিছু  বক্তব্য ,

হেফাজতে ইসলামের আমির দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর লালবাগ মাদরাসায় আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আজকের (৬ এপ্রিল) বহুল আলোচিত-আলোড়িত লংমার্চ সম্পর্কে যখন বলছিলেন—‘আমাদের এই লংমার্চ কাউকে গদি থেকে হটানো বা কাউকে গদিতে বসানোর উদ্দেশ্যে নয়। নিরেট ঈমানের তাগিদে দেশ ও ইসলামের সুরক্ষার জন্য নিয়মতান্ত্রিক অহিংস ও অসহিংস আন্দোলন। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সব দলের মুসলমানকে এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তা না হলে আমাদের ওপর খোদায়ি গজব অনিবার্য। এ ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতেই এ বৃদ্ধ বয়সে আমি ময়দানে নামতে বাধ্য হয়েছি। কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নয়, বরং আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা.) এবং ইসলামের অর্পিত দায়িত্ব পালন নিয়ে, ঈমানের তাগিদ ও শাহাদাতের তামান্না নিয়ে ময়দানে নেমেছি।’
আল্লামা শফী সারা দেশের ঈমানদার জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘ঢাকামুখী লংমার্চকে স্বাগত জানাতে আমি ঢাকা চলে এসেছি। আপনারা ইসলাম ও দেশরক্ষার এই লংমার্চকে সর্বাত্মকভাবে সফলের জন্য চিড়া-মুড়ি, শুকনো খাবার আর হাতে তসবিহ ও জায়নামাজ, মুখে আল্লাহর নামের জিকির করতে করতে ঢাকায় আসুন। যেখানে বাধা আসবে সেখানেই জায়নামাজ বিছিয়ে আল্লাহর নাম স্মরণ করে বসে পড়ুন। ইনশাআল্লাহ কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হেফাজতে ইসলামের এই কর্মসূচিকে বানচাল করা যাবে না।’
এই বর্ষীয়ান মহাপুরুষ আবেগ ও বেদনা ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, ‘এই ৯৩ বছরের বৃদ্ধ বয়সে এখন আমার রাজপথে থাকার কথা ছিল না। এখন আমার প্রয়োজন ছিল বিশ্রামে থাকার। কিন্তু আরামকে হারাম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে আজ রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে। শুধু বাধ্যই বলবো কেন, আসলে আমার এবং এদেশের আলেম সমাজের এছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। আল্লাহ জাল্লাশানুহু, আমার পেয়ারা নবী হজরত রাসুলে করিম (সা.) না থাকলে, মসজিদ না থাকলে, আমার বেঁচে থাকার, কোনো মুসলমানের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এখন শহীদ নয়তো গাজী হওয়া ছাড়া কোনো মুসলমানের জন্য ঘরে বসে থাকা জায়েজ নেই। প্রত্যেকের নিজ নিজ শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী এর প্রতিবাদ না করলে এদেশের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। কেননা নব্বই ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত আমাদের এ দেশে বর্তমানে আল্লাহ ও রাসুল (স.)-কে কটাক্ষ করে যে ভয়ঙ্কর ও জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে, তা পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত কেউ করতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই।’
সেজন্যই সেই অন্যায় অন্যায্য অযৌক্তিক জুলুমের বিরুদ্ধে সংবিধানে ‘মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনস্থাপন, কোরআনবিরোধী নারী ও শিক্ষানীতি বাতিল, আল্লাহ-রাসুলের (সা.) ও ইসলামের অবমানাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস, শাহবাগি নাস্তিক-মুরতাদ, প্রিয় নবী (স.)-এর শানে কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমার এই লংমার্চ।






, যারা বলছেন দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না, তাদের মধ্যে বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টির জন্য সরকারের ছত্রছায়ায় নানা রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে। লোভ ও লালসার কথা তো আছেই। তার চেয়ে বেশি আছে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি। জেল ও জুলুমের আতংক। ফলে কারও কারও মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যেতে পারে।


লেখক, সন্মানীত কলামিষ্ট  ও সাংবাদিক   আ ব দু ল হা ই শি ক দা র



http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/04/06/195364#.UV-9cx_pfIU

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন