বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

আহলে হাদীস নাম ইংরেজ কতৃক অনুমোদীত


আহলে হাদীস নাম ইংরেজ কতৃক অনুমোদীত

 

ভারতবর্ষে ইংরেজ-বিরোধী ও ইংরেজ বিতাড়নে জিহাদ যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদেরকে ইংরেজ সরকার ওহহাবী বলে আখ্যায়িত করেছিল, যা পূর্বে ও আলোচনা করা হয়েছে ৷  আর মূলতঃ এরা বিদ্রোহী গ্রুপ এরা মূল ধারার হক্কানী ওলামাদের দল থেকে বেরিয়ে আসে , ইংরেজদের দালালী করার জন্য ৷

 তখন গাইরে মুক্বাল্লিদরা ওহহাবী নামের আখ্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তাই তারা তখন নিজেদের জন্য মুহাম্মদীএবং পরবর্তীতে আহলে হাদীসনাম বরাদ্দ করার সম্ভাব্য সকল অপতৎপরতা চালিয়ে গিয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে গাইরে মুক্বাল্লিদদের তৎকালীন মুখমাত্র মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লাহোরী বৃটিশ সরকারের প্রধান কার্যালয় এবং পাঞ্জাব, সি-পি, ইউ-পি, বোম্বাই, মাদ্রাজ ও বাঙ্গালসহ বিভিন্ন শাখা অফিসে ইংরেজ প্রশাসনের আনুগত্যতা ও বশ্যতা স্বীকার করত: তাদের জন্য আহলে হাদীসনাম বরাদ্দ দেয়ার দরখাস্ত পেশ করেন। এ দরখাস্তগুলোর প্রতি উত্তর সহ তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত তৎকালীন এশায়াতুস সুন্নাহপত্রিকায় (পৃ:২৪-২৬, সংখ্যা:২, খ:১১) প্রকাশ করা হয় যা পরে সাময়ীক নিবন্ধ আকারেও বাজারজাত করা হয়। তাদের মানসিকতা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কিছুটা আঁচ করার জন্য আপনাদের সমীপে সন্মধ্য হতে

 

একটি দরখাস্তের অনুবাদ নিম্নে পেশ করছি।

 

বখেদমতে জনাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী,

আমি আপনার খেদমতে লাইন কয়েক লেখার অনুমতি এবং এর জন্য ক্ষমাও পার্থনা করছি। আমার সম্পাদিত মাসিক এশায়াতুস সুন্নাহপত্রিকায় ১৮৮৬ ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওহহাবী শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমক হারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার সমীচিন হবে না, যাদেরকে আহলে হাদীসবলা হয় এবং সর্বদা ইংরেজ সরকারের নিমক হালালী, আনুগত্যতা ও কল্যাণই প্রত্যাশা করে, যা বার বার প্রমাণও হয়েছে এবং সরকারী চিঠি প্রত্রে এর স্বীকৃতিও রয়েছে।

অতএব, এ দলের প্রতি ওহহাবী শব্দ ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং সাথে সাথে গভার্মেন্টের বরাবর অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সাথে আবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এ ওহহাবী শব্দ রহিত করে আমাদের উপর এর ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং এ শব্দের পরিবর্তে আহলে হাদীসসম্বোধন করা হোক।

 

আপনার একান্ত অনুগত খাদেম

আবু সাঈদ মুহাম্মদ হুসাইন

সম্পাদক, এশায়াতুস সুন্নাহ .

 

 

দরখাস্ত মুতাবেক ইংরেজ সরকার তাদের জন্য ওহহাবশব্দের পরিবর্তে আহলে হাদীসনাম বরাদ্দ করেছে। এবং সরকারী কাগজ-চিঠিপত্র ও সকল পর্যায়ে তদের আহলে হাদীসসম্বোধনের নোটিশ জারি করে নিয়মতান্তিকভাবে দরখাস্তকারীকেও লিখিতভাবে মঞ্জুরী নোটিশে অবহিত করা হয়।

 

সর্বপ্রথম পাঞ্জাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী মি: ডব্লউ, এম, এন (W.M.N) বাহাদুর চিঠি নং-১৭৫৮ এর মাধ্যমে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংরেজিতে অনুমোদনপত্র প্রেরণ করেন। অতপর ১৪ই জুলাই ১৮৮৮ইং সি.পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৪০৭ এর মাধ্যমে এবং ২০শে জুলাই ১৮৮৮ইং ইউ.পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৩৮৬ এর মাধমে এবং ১৪ই আগষ্ট ১৮৮৮ইং বোম্বাই গভার্মেন্ট চিঠি নং-৭৩২ এর মাধ্যমে এবং ১৫ই আগষ্ট ১৮৮৮মাদ্রাজ গভার্মেন্ট চিঠি নং ১২৭ এর মাধ্যমে এবং ৪ঠা মার্চ ১৮৯০ইং বাঙ্গাল গভার্মেন্ট চিঠি নং-১৫৫ এর মাধ্যমে দরখাস্তকারী মৌলভী আবু সাইদ মুহাম্মদ বাটালভীকে অবহিত করা হয়।

(এশায়াতুস সুন্নাহ, পৃ:৩২-৩৯, সংখ্যা:২, খ:১১)

 

 

কোন মুসলিম জামাতের নাম অমুসলিম, মুসলামানদের চিরশত্রু খৃষ্টান নাছারাদের মাধ্যমে বরাদ্দ করা ঘটনা ইসলামী ইতিহাসের পৃষ্ঠায় বিরল। যা কেবল হিন্দুস্তানী গাইরে মুক্বাল্লিদদেরই গৌরব ও সৌভাগ্যের বিষয় ,তাই তারা এ ইতিহাসটা অত্যন্ত গৌরবের সহিত নিজেদের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করে তৃপ্তি লাভ করেছেন।  সুতরাং আহলে হাদীসরাই ২ কারনেই  প্রকৃত ওহহাবী ৷  একেতো আবদুল ওহহাব নজদীর মতবাদের প্রচারক ও দ্বিতীয়ত ইংরেজ কতৃক পরিবর্তিত নাম অনূসারে ৷

 

 

                       

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন