শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৪

দাওয়াত-তাবলীগ নিয়ে অবান্তর কিছু প্রশ্নের জবাব, সংকলিত (1)



*******************************************************************************
1 দাওয়াত-তাবলীগ কি ?
দাওয়াত  অতি গুরুত্বপূর্ণ আ’মাল ,বলা চলে দাওয়াত সকল আ’মালের মা, কেননা দাওয়াতের দ্বারা সকল আ’মাল জিন্দা হয় , নবীদের শুধু এই কাজের জন্যই পাঠানো হত  সকল নবীদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্বই ছিল দাওয়াত ৷দাওয়াত ও তাবলীগ পরস্পর পরিপূরক শব্দ। কখনও কখনও সমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়  দাওয়াত শব্দের অর্থ হল আমন্ত্রণ বা আহবান করা। আর তাবলীগ শব্দের অর্থ হল জানানো। সহজ কথায় মানুষের ইসলামের দিকে ডাকা হল দাওয়াত আর মানুষের কাছে ইসলামের পরিচয় পেশ করাই হলো তাবলীগ। 
*******************************************

:
তাবলীগ জামাত সম্পর্কে কোন কোন লোক বা দলের নাক সিটকানি ভাব দেখলে মনে হয় এটা কত বড একটা অন্যায় কাজ ৷ এবং দাওয়াত-তাবলীগ নিয়ে অবান্তর  কিছু প্রশ্নের অবতারনা করে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্তি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে   অথচ পৃথিবীর  অনেক ওলামা-মাশায়েখই এ কাজের  সাথে সংযুক্ত আছেন ও থাকবে ৷ এবং কেয়ামত পর্যন্তই এ কাজ কোননা কোন ভাবেই অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ ৷
হক বাতিলের সংঘাত মুখর এ পৃথিবীতে বাতিলের সাথে অহর্নিষ সংগ্রাম করেই ইসলামকে সম্মুখে অগ্রসর হতে হয়েছে সর্বকালে। পরিণামে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হককেই বিজয়  করেছেন  আর বাতিলকে করেছেন নিশ্চিহ্ন ৷তাবলীগ জামাআতের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
বর্তমান পৃথিবীতে এমন কোন বাতিল ফিরক্বা নেই, যারা আল্লাহর পথে আহবানকারী তাবলীগ জামাআতের উপর আক্রমণাত্মক হামলা করেনি। বিশেষ করে লা-মাযহাবী তথা কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়  তারাই তাবলীগ জামাআতের উপর সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হামলা করছে এবং তাবলীগ সম্পর্কে সবচে’ বেশি মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে চলছে বিভিন্ন  বই পুস্তুক লিখে প্রচারের মাধ্যমে ও সাম্প্রতীক সময়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক ইউটোব ফেইজবুক ওব্লগের মাধ্যমে ৷
 শুধু বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি এ ইংরেজ সৃষ্ট দলটি। সাধারণ মুসলমানদের দ্বীন প্রচারী জামাআত থেকে দূরে রাখতে বিভ্ন্নি প্রকার মিথ্যা ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে ঘৃণ্য পদ্ধতিতে। আল্লাহ তায়ালা সাধারণ মুসলমানদের এ বাতিল দলের প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সহীহ বুঝ দান করুন ৷

আর  তাবলীগের  বৈধতা সম্পর্কে কোন কিছু বলার অবকাশ নেই তার পর ও সাধারনের জ্ঞাতার্থে  কোরআন-হাদীসের আলোকে আলোচনা করতে চাই ৷

2 কুরআনের আলোকে দাওয়াত-তাবলীগ

রাসূল সাঃ বিশ্ব মানুষের কাছে দ্বীনের এ দাওয়াত পৌঁছাবার ও প্রচার-প্রসারের মহান দায়িত্ব নিয়েই পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন। যেমন আগমণ করেছিলেন রাসূল সাঃ এর পূর্বে অগণিত নবী ও রাসূল ৷ রাসূল সাঃ কে তাবলীগ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

   1  { يَاأَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ [المائدة:67]
হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না  ৷  (সূরা মায়েদা : ৬৭)

রাসূল সাঃ হলেন সর্বশেষ নবী তার পর পৃথিবীতে দুনিয়াবাসীর প্রয়োজনে  আর কোন নবীর আগমন ঘটবেনা , যদি কেউ গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মত  নবুয়তের দাবী করে সে হবে দাজ্জাল কাফের বেঈমান , ও তার অনূসারীরাও হবে বেঈমান কাফের ৷ তাই বিদায় হজ্বের সময় রাসূল সাঃ বজ্র কণ্ঠের ঘোষণা فليبلغ الشاهد الغائب তথা “উপস্থিত লোকেরা যেন দ্বীনের এ দাওয়াত অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌছে দেয়” এর মাধ্যমে সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদীই তাবলীগ তথা দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হয়ে যায় ৷ যে ব্যক্তি দ্বীন সম্পর্কে যা জানে তা’ই অন্যের কাছে পৌছে দেয়ার দায়িত্বশীল করে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও [মানুষের কাছে] পৌঁছে দাও। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫৫৭০, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২৭৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬২৫৬, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৬৯}
সাহাবায়ে কিরাম রাসূল সাঃ এর উক্ত নির্দেশের বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন যথাযথভাবে। পরবর্তীতে সর্বযুগেই উলামায়ে উম্মত “ হাদীসের সফল বাস্তবায়নের জন্য জীবন বাজী রেখে সংগ্রাম করেছেন।


2  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ (النحل: ١٢٥(
আপনি আপনার প্রতিপালকের দিকে আহবান করুন হিকমত বা প্রজ্ঞা দ্বারা এবং সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উৎকৃষ্টতর পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক করুন। (সূরা নাহল: ১২৫)

3 অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (آل عمران:  ١٠٤(
আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)

4 অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ )آل عمران: ١١٠(
তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা ন্যায়কার্যে আদেশ এবং অন্যায় কার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহতে বিশ্বাস কর। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

5  আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা আরও বলেন:
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ (التوبة: ٧١ (
আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা: ৭১)

  আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা ৷

আর এ দায়িত্বপালনকারী মুমিনকেই সর্বোত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে ৷

6 মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلاً مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ )فصلت: ٣٣(
ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি তো মুসলিমদের একজন। ( সূরা ফুসসিলাত: ৩৩)

3 হাদীসের আলোকে দাওয়াত-তাবলীগ

1 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ، قُلْنَا لِمَنْ قَالَ للهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأئمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتهِمْ. (رواه مسلم)
দীন হলো নসিহত। সাহাবিগণ বললেন, কার জন্য ? বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য, মুসলিমগণের নেতৃবর্গের জন্য এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য। (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নসিহতের জন্য সাহাবিগণের বাইআত তথা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতেন। বিভিন্ন হাদিসে জারির ইবনু আব্দুল্লাহ রা. মুগিরা ইবনু শুবা রা. প্রমুখ সাহাবি বলেন:
بَايَعْتُ رَسُوْل اللهِ صلى الله عليه وسلَّمَ عَلى إقَامَةِ الصَّلاةِ وَإيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مسْلِمٍ (رواه البخاري)
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাইয়াত বা প্রতিজ্ঞা করেছি, সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান ও প্রত্যেক মুসলিমের নসিহত (কল্যাণ কামনা) করার উপর। (বোখারি)।
এ অর্থে তিনি সৎকার্যে আদেশ ও অসৎকার্যে নিষেধের বাইয়াত গ্রহণ করতেন। উবাদাহ ইবনু সামিত ও অন্যান্য সাহাবি রা. বলেন:
إنَّا بَايَعْنَاهُ عَلى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ ..وَعَلى الأمْرِ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهيِ عَنِ المُنْكَرِ وَ عَلى أنْ نَقُولَ في اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالى وَلا نَخَافُ لَومَةَ لائِمٍ فيهِ (أحمد صحيح)
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বাইয়াত করি আনুগত্যের… এবং সৎকর্মে আদেশ ও অসৎকর্মে নিষেধের এবং এ কথার উপর যে, আমরা মহিমাময় আল্লাহর জন্য কথা বলব এবং সে বিষয়ে কোন নিন্দুকের নিন্দা বা গালি গালাজের তোয়াক্কা করব না। (আহমাদ, বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য সনদে)।
***************
এ সমস্ত আয়াত ও হাদীসের পরিপেক্ষীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েই সকল যুগে ওলামায়ে কিরাম আপন দায়িত্ব পালনে সজাগ সতর্ক ছিলেন  ৷ অবশ্য সকল যুগে দাওয়াত ও তাবলীগের পদ্ধতি বা ধারা একই ছিল না  যুগ চাহিদার ভিত্তিতে ওলামায়ে কিরাম কুরআন ও হাদীস বর্ণিত মূলনীতির আলোকে সমাজ ও জাতির জন্য ফলপ্রসু ও কল্যাণকর নতুন পন্থা ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করে মানব জাতিকে রাহনুমায়ী করেছেন হিদায়েতের পথে ৷

কখনো মাদরাসা -মক্তব প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে. কখনো ওয়াজ ,তাফসীর মাহফিল ও নসীহতের মাধ্যমে ,কখনো লিখনী  বক্তৃতা ও সেমিরারের মাধ্যমে ,কখনো সহীহ হাদীস ও মাসলা-মাসায়েল একত্র করণও তার প্রচারের মাধ্যমে,কখনো খানকাহ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ৷ দাওয়াত ও তাবলীগের এ সকল পন্থাই কুরআন হাদীস সমর্থিত ৷ আবার কেউ দ্বীন প্রতিষ্ঠার  সংগ্রামে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বিভিন্ন সংঘঠনের ব্যনারে দ্বীনের প্রচার প্রসার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মাধ্যমে দাওয়াত-তাবলীগের এ কাজটি আঞ্জাম দানে সচেষ্ট রয়েছেন ৷ সম্প্রতিকালে দারুল উলুম দেওবন্দ ভারতের সূর্য সন্তান হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর কর্তৃক উদ্ভাবিত “দাওয়াত ও তাবলীগ” নামক দ্বীন প্রচারের এ পদ্ধতিটি ও সে ধারারই একটি কাজ ৷ এটা দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন বলে কিছু না ,  এটা দ্বীন প্রচারের বিভিন্ন মাধ্যমের একটি ৷ ইসলামের প্রচার ও প্রসারে এটি একটি নিরব বিপ্লব ও বটে ৷ দল মত নির্বিশেষে সকল মতের সকল দেশের লোকের সমাগমে  সমপূর্ন নিজস্ব খরচে কোন প্রতিদান গ্রহন ব্যতিরেকে বিশ্ব ব্যপি দ্বীন প্রচারের একটা প্লাট ফার্ম মাত্র  যা নজীর বিহীন ৷ পৃথিবীতে এমন কোন সংঘঠন নেই যার কার্যক্রম বিশ্ব ব্যপি বিসতৃত ও স্বীকৃত ৷
তবে হ্যাঁ কোন কোন  সংস্হা  সরকারী পৃষ্ঠ পোষকতায় বিভিন্ন  দেশে বহু অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৷ কিন্তু এ দাওয়াত-তাবলীগ এর জন্য কোন দান অনুদানের প্রয়োজন হয়না  এমন কি কোন কমিটি বা অফিসিয়ালী কোন কায্যক্রমের প্রয়োজন পডেনা বা নেইই ৷ একমাত্র দায়ী ইলা-ল্লাহ গন নিজস্ব অর্থে সারা পৃথিবী জুডে এ দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে   আল্লাহ ভুলা মানুষের ধারে ধারে গিয়ে আল্লাহর হুকুম ও রসুলের বানী পৌছে দিচ্ছে ৷


কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজকাল কিছু লোক ও দল দাওয়াত-তাবলীগের এ উর্ধমূখী সফলতায় ঈর্ষানীত হয়ে সরলমনা মুসলিমদের বিভ্রান্তি করার জন্য অযোক্তিক অযথা কিছু প্রশ্নের উদ্ভাবন করছেন তাই আমি আমার এ ক্ষুদ্র লেখনীতে  সত্য সন্ধানীদের জন্য বিভিন্ন মনিষীদের লেখা ও বিভিন্ন ওয়্যেবসাইড থেকে সংকলন করে , কোরআনের-হাদীসের আলোকে ঐ সকল অবান্তর কিছু প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো ৷





{ 4} তাবলীগ জামাআত ইসলাম ধর্মে  কি একটি নতুন বিদআত?

তাবলীগ জামাআত কোন নতুন দল বা সংগঠনের নাম নয়, বরং  ধারাবাহীক একটা আমল নবী করীম সাঃ এর তিরোধানের পূর্ব থেকেই বিদায় হজ্বের পর থেকে ব্যাপক হারে সাহাবায়ে কিরাম রাঃ এবং রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে প্রত্যেক যুগেই   পৃথিবীর সকল ওলামায়ে  কেরাম কমবেশি সম্মিলিত ও বিচ্ছ্ন্নিভাবে দাওয়াতের এ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন  ৷এখন ও অনেকে বিভিন্ন পন্থায় এ কাজ করে যাচ্ছেন ৷কিন্তু
হযরত ইলিয়াস রহঃ ব্যাপক আকারে ও সংগঠিতরূপে সেটির পুনঃজাগরণের চেষ্টা করেছেন মাত্র ৷
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই যেমন কর্মধারা ও সূচি থাকে, তিনিও তেমনি এ জামাতের জন্য কিছু কর্মধারা তৈরী করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য প্রাথমিকভাবে অধিক উপকারী ও জরুরী বিষয় চিন্তা করে ৷ পূর্ণ শরীয়তকে সামনে রেখে এর মাঝে কোন বিষয়গুলো প্রথমে আমলে আনতে পারলে পূর্ণ শরীয়তের উপর পাবন্দ হওয়া সহজ হয়ে যাবে তা চিন্তা করে একটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন ৷ যা কোনভাবেই শরীয়তের গন্ডির বাহিরে থেকে নয়। সেই সাথে শরয়ী কোন হুকুমকে অস্বিকার করে  ও নয় , তাছাডা এ  পদ্ধতিটি পালন করা কোন ফরজ-ওয়াজীব ও নয় ৷ অন্য যে কোন পদ্ধতিতে ও এ কাজ করা যেতে পারে ৷
যেমন বর্তমান মাদরাসা শিক্ষা শরীয়তের মাঝে নতুন কোন সংযোজন নয়, বরং সাহাবায়ে কিরামের মাঝে আসহাবে সুফফার যে জামাআত মসজিদে নববীতে (মসজিদে নববীতে রওজা মোবারকের পাশে লাগোয়া উঁচু স্হানটি এখন ও ইতিহাসের সাক্ষি হিসাবে বিদ্ধমান আছে ) সার্বক্ষণিক দ্বীন চর্চায় নিমগ্ন থাকতেন সেটাই ছিল সর্ব প্রথম মাদরাসা। যদিও বর্তমান মাদরাসা পদ্ধতি আর আসহাবে সুফফার মাদরাসার মাঝে পদ্ধতিগত অনেক পার্থক্য রয়েছে। মৌলিকত্বে কোন পার্থক্য নেই। সে সময় কোন সিলেবাস ছিল না। ছিল না কোন ক্লাসিক্যাল অবকাঠামো। ছিল না সার্টিফিকেট দেওয়ার পদ্ধতি। ছিল না বিধিবদ্ধ শিক্ষক ষ্টাফের কোন মূলনীতি ৷ কিন্তু পরবর্তীতে আম ফায়দার জন্য এবং দ্বীন চর্চায় অধিক উপকার অর্জনের নিমিত্তে একটি একাডেমিক পদ্ধতি আবিস্কার করা হয়েছে ৷ যে আবিস্কার কোন বিদআত নয় মর্মে সকল ওলামায়ে কিরাম একমত ৷তেমনি তাবলীগ জামাআতের বর্তমান সাংগঠনিক ভিত্তি হিসেবে কিছু মূলনীতি নির্ধারণও কোন নতুন বিষয় নয়, বা বিদআত নয়। কারণ মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান পদ্ধতিকে যেমন আমরা সওয়াবের কাজ মনে করি না, কিন্তু ইলমী দ্বীন চর্চাকে জানি সওয়াবের কাজ। তেমনি তাবলীগ জামাআতের পদ্ধতিটা মূলত সওয়াবের কারণ নয়, বরং এর দ্বারা যে কাজটি আঞ্জাম দেয়া হয় তথা তাবলীগ বা দ্বীন প্রচার সেটিই হল সওয়াবের কাজ ৷এ দু’টিতে কোন পার্থক্য নেই ৷ সুতরাং তাবলীগ জামাআতকে দ্বীন এর মাঝে নতুন সংযোজন বলে বিদআত সাব্যস্ত করাটা বিদআতের সংজ্ঞা ও দ্বীন সম্পর্কে চূড়ান্ত পর্যায়ের অজ্ঞতার পরিচায়ক ৷
 কারণ বিদআত বলা হয়
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিস্কার করে যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যাজ্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬০৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-২৫৫০, সহীহ মুসলিম-৪৫৮৯}
এই হাদিসে লক্ষ্য করুন কি কি শর্তে নব আবিস্কৃত বস্তুকে পরিত্যাজ্য বলেছেন নবীজী সাঃ।
-সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন বিষয় হতে হবে।
-দ্বীনী বিষয় হতে হবে ৷  সুতরাং দ্বীনী বিষয় ছাড়া যত নতুন বিষয়ই আবিস্কারই হোকনা কেন তা বিদআত নয় ৷ যেমন  মাদ্রাসা তৈরী , মসজিদ পাক্কা করা , বৈজ্ঞানিক আবিস্কার যেমন বিমান, গাড়ী ,কম্পিউটার ,মোবাইল সহ আরও নতুন নতুন আসবাব ইত্যাদী  এসব বিদআত নয়  কারণ এসব দ্বীনী বিষয় নয়। বরং বৈষয়িক বিষয় ৷
-দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার হতে হবে ৷  দ্বীনের জন্য হলে সমস্যা নাই ৷ কারণ দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার করা এর মানে হল এটা সওয়াবের কাজ সুন্নাত, ওয়াজিব ইত্যাদী  মনে করে আদায় করা ৷আর দ্বীনের জন্য হলে সেটা মূলত সওয়াবের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজের সহায়ক। যেমন মাদরাসা শিক্ষা একাডেমিক পদ্ধতি নববী যুগে ছিলনা। পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে। এই একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার নয়, বরং দ্বীনী কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে আবিস্কার হয়েছে। অর্থাৎ দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু সিষ্টেমটা মূলত সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক ৷ তেমনি তাবলীগের বর্তমান পদ্ধতিটি ইলিয়াস রহঃ আবিস্কার করেছেন দ্বীন প্রচারের সহায়ক হিসেবে ৷ তথা দ্বীনের জন্য আবিস্কার ৷ দ্বীন মাঝে আবিস্কার নয় ৷

তাই এটি বিদআত হওয়ার কোন সুযোগই নেই।
যারা বলেন এ পদ্ধতি বিদআত, তারা মূলত দ্বীন সম্পর্কে  বা বেদআতের সংজ্ঞা সমপর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার পরিচয় দেন এসব কথা বলে ৷


*************************
(5) তাবলীগ জামাআতের ছয় উসুলে কি ?
 অনেকে প্রশ্ন করেন  ইসলামের ভিত্তি যেহেতু ৫ টি, আর তাবলীগ জামাতের উসুল ৬ টি, এর জবাব কি ?

এ অভিযোগটিও একটি অজ্ঞতার পরিচয়বাহী ও হিংসাত্মক অভিযোগ ৷ যার কোন ভিত্তি নেই ৷ তাবলীগের ছয় উসুলের মাঝে পূর্ণ ইসলাম আছে একথা কোন তাবলীগী ভাই বলেন বলে মনে হয়না ,এমন কি তাবলীগ সংশ্লিষ্ট কোন কিতাবে ও এমন অবান্তর দাবী করা হয়নি , বরং তারা সর্বদা একথার দাওয়াত দেন যে, ছয় উসূলের উপর চললে পূর্ণ দ্বীনের উপর চলা সহজ হয় ৷ একথা কোন তাবলীগী ভাই বলেন না ,যে ছয় উসূলই পূর্ণঙ্গ দ্বীন ৷  সাথে সাথে তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত শুধু একথার উপর দেয়া হয় না যে, শুধুমাত্র ছয় উসূলই মানতে হবে অন্য কিছু নয়  , বরং দাওয়াত দেয়া হয় পূর্ণ শরীয়তের পাবন্দ হতে হবে,তাই নয় কি?
 মূলত ব্যখা বিশ্লেষন করলেই দেখা যায় এ ৬টির মধ্যেই পুরো দ্বীনের কিছু নমুনা পাওয়া যায় ৷
যেমনটি আল্লাহ তায়ালা ছয়টি বিষয়ের অনুসরণ করলে বান্দা সফলকাম হয়ে যাবে মর্মে সূরায়ে মু’মিনূন এ ঘোষণা করেন-
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ (1) الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاتِهِمْ خَاشِعُونَ (2) وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ (3) وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ (4) وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (5) الى اخر- وَالَّذِينَ هُمْ لأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ (8) وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ (9) أُوْلَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ (10) الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (11)
১-নিশ্চয় সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ। ২-যারা তাদের নামাযে আন্তরিকভাবে বিনীত। ৩-যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। ৪-যারা যাকাত সম্পাদনকারী। ৫-যারা নিজ লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। ৮-এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। ৯-এবং যারা নিজেদের নামাযের পরিপূর্ণ রক্ষনাবেক্ষণ করে। ১০ এরাই হল সেই ওয়ারিশ ১১-যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকার লাভ করবে তারা তাতে সর্বদা থাকবে। {সূরা মুমিনুন-১-১১}
এ আয়াত সমূহে লক্ষ করুন-ছয়টি কাজ করলে আল্লাহ তায়ালা সফলকাম হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সেই সাথে জান্নাতী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। অথচ এ ছয় কাজে রোযার কথা নেই। নেই হজ্বের কথাও। তাহলে কি আল্লাহর বলা সফলকাম হওয়ার জন্য রোযা রাখার প্রয়োজন নেই? নেই হজ্ব ফরজ হলে হজ্ব আদায়েরও। এ দু’টি গুরত্বপূর্ণ ফরজ ছাড়াই কি ব্যক্তি জান্নাতী হয়ে যেতে পারে? কিভাবে?
এর জবাব যেমন-এ ছয়টির মাঝেই পূর্ণ দ্বীন শামিল ৷তেমনি তাবলীগের ছয় উসূলের দাওয়াতের দ্বারাও পূর্ণ দ্বীনের উপর আমলের দিকেই আহবান করা হয়, যা কিছুতেই দ্বীনকে সীমাবদ্ধ করা নয়, যেমন আল্লাহ তায়ালা ও সীমাবদ্ধ করেন নি ৷ তাছাডা ছয় উসুল,তিন দিন ,১০দিন এক চিল্লা ১ বছর বা এর কম-বেশী যে কোন মেয়াদে সময় লাগানো বা সকাল বিকাল গাস্ত তথা দ্বিনী দাওয়াতের উদ্যেশ্যে ঘুরা পিরা ইত্যাদি কাজ গুলো কেউ ফরজ-ওয়াজিব  মনে করে এ গুলো আদায় করেন না ৷ বরং এ গুলো একটা কাজের সিষ্টাম মাত্র ৷ যেমন যে কোন সংস্হা বা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব একটা কর্ম পদ্বতি বিধি বিধানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে তেমনি একটা পদ্বতি মাত্র ৷   প্রয়োজনে এর পরিবর্তন ও সম্ভব, এমন নয় যে এর পরিবর্তন করা যাবেনা ৷ সুতরাং এমন কথা বলা অবান্তর যে এ গুলো বেদআত বা অন্য কিছু ৷
  তাছাডা তাবলিগের  ৬ উসুল মানে ভিত্তি না, বরং নীতি বা মুলনীতি । ব্যবহারিক অর্থে অনুসরণীয় নীতি বা কর্ম পদ্ধতি মাত্র  । আর বেনা - অর্থ ভিত্তি বা মূল  । বুনইয়াল ইসলাম অর্থ   ইসলামের ভিত্তি বা মূল । কিসের সাথে কি ?

প্রতিটি আন্দোলনের একটা কর্ম পদ্ধতি বা  মূল নীতি থাকে । তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ তাবলীগের কর্মীদের ৬ টি মুল বিষয়ের উপর মেহনত করে এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বা কার্যক্রম চালাতে বলেছেন, তাই এই ৬টা বিষয় তাবলীগ জামাতের উসুল বা কর্ম পদ্ধতি  । এগুলোকে ইসলামের উসুল/ভিত্তি  কখনো  বলা হয়নি বা কেউ মনেও করেন না  ৷এমন সহজ কথাটিকে প্যাচাল করে সহজ সরল মুসলিমদের মাঝে বিভ্রান্তী ছডানো ছাডা অন্য কিছু নয় ৷





 (6)তাবলিগে  এক চিল্লা ,তিন চিল্লা , ছয় মাস,এক বছর  সময় দেয়ার প্রথা কোথায় ফেলেন?

আসলে ভাই দোস্তবুজুর্গ কোরআন হাদীস গভীর ভাবে অধ্যয়ন করলে দেখবেন আমার আপনার মনের ভিতর ঘূর-পাক খাওয়া অনেক অবান্তর প্রশ্নের জবাব মিলেযাবে ৷ সবই কুরআন ও হাদীসের নস থেকে নেওয়া। কোনটিই নবোদ্ভাবিত কিছু নয় ৷ শরীয়তের সুস্পষ্ট ও সুক্ষ্ম দলীল দ্বারা এসব সুস্পষ্ট প্রমাণিত

তবে, শরয়ী দলীল জানার আগে দলীল নিষ্কর্ষণের উপায় বা সূত্র জানা অপরিহার্য। কেননা, সূত্র-জ্ঞানের অভাবও অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রশ্নের উদ্ভাবক।


তাই বলছি, কুরআন থেকে দলীল বা প্রমাণ উদ্ভাবনের মূলসূত্র ৪টিঃ
১) কুরআনী শব্দ বা বাক্যের আভিধানিক অর্থ ৷
২) কুরআনী শব্দের ব্যবহারের ভিন্নতা ৷
৩) কুরআনী শব্দের সুপ্ত আবেদন বা নির্দেশনা ৷
৪) কুরআনী শব্দের উদ্দেশ্য। (নূরুল আনওয়ার, পৃষ্ঠাঃ ১৩)

উক্ত নিয়ামনুসারে কুরআন ভিত্তিক  ৪০দিন বা চিল্লার দলীলঃ
১) و إذ واعدنا موسي أربعين ليلة
যখন আমি মূসা আলাইহিস সালামকে ৪০রজনীর প্রতিশ্রুতি দিলাম (সূরা বাকারাহ, আয়াতঃ ৫১)

২) و وعدنا موسي ثلثين ليلة و أتممناها بعشر فتم ميقات ربه أربعين ليلة
অর্থঃ আর আমি মূসা আলাইহিস সালামকে ৩০রাতের ওয়াদা দিয়েছি, আর তা পূর্ণ করেছি আরো ১০বাড়িয়ে, ফলে তার মেয়াদ পূর্ণ হলো ৪০রজনীতে। (সূরা আ'রাফ, আয়াতঃ ১৪২)

উক্ত আয়াতে হযরত মূসা আঃ কে ৪০ দিন শেষে ,ঘর ছেড়ে তূর পাহাড়ে হিজরতের মাধ্যমে তাওরাত দিয়েছেন বলে ঘোষনা করা হয়েছে সুতরাং, চিল্লার শিক্ষক ও উদ্ভাবক স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা আর আদায় কারী হযরত মূসা আঃ নন কি ?

3 فسيحوا في الأرض أربعة أشهرو اعلموا أنكم غير معجزي الله، و أن الله مخزي الكافرين
অর্থঃ তোমরা যমীনে পরিভ্রমণ করো চার মাসকাল, এবং ভালো করে বুঝে নাও যে, সর্বশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহকে কোনভাবেই তোমরা পরাভুত করতে পারবে না। বরং আল্লাহই মুশরিকদেরকে চরম লাঞ্চিত করে ছাড়বেন। (সূরা তাউবাহ, আয়াতঃ ২) উক্ত আয়াতে  ৪ মাস কাল যমীনে পরিভ্রমনের কথা বলা হয়েছে আল্লাহর কুদরতের নিশানা দেখে শিক্ষা গ্রহন করার জন্য তৎ সঙ্গে যদি এ সফর দ্বিনী সফর হয় তাহলে কতইনা মঙ্গল তাই নয় কি ?

হাদীস ভিত্তিক চিল্লার প্রমাণঃ

১) عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلي الله عليه و سلم : من صلي لله أربعين يوما في جماعة يدرك التكبيرة الأولي كتبت له برائتان: براءة من النار، و براءة من النفاق. (رواه الترمذي، باب ما جاء في فصل التكبيرة الأولي، رقم 241 قال الحافظ المنذري: رواه الترمذي و قال: لا أعلم أحدا رفعه إلا ما روي مسلم بن قتيبة عن طعمة عن عمرو قال المعلي رحمه الله: و مسلم و طعمة و بقية رواته ثقات، الترغيب 1/263)ـ
অর্থঃ হযরত আনাস ইবেন মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ৪০দিন তাকবীরে উলার সঙ্গে জামাতে নামায পড়ে সে দু'টি পরোয়ানা লাভ করবে ৷
ক) জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা
খ) মুনাফেকী থেকে মুক্তির পরোয়ানা (তিরমিযী শরীফ)
উক্ত হাদিসে ৪০ দিনের বা জামায়াত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ২টি পরোয়ানা পায়, যা একটা মানুষ তার ঘর বাডি এলাকা ছেডে মসজিদে অবস্হান করলে এ কাজটি সম্পাদন করা অতি সহজ হয় , যা এক মাত্র এ চিল্লার মাধ্যমেই সম্ভব ৷  আমি ব্যক্তি গত জীবনে অনেক বার চেষ্টা করেও  দেখেছি একাধারে চল্লিশ দিন বা জামায়াত তাকবির ঊলার সাথে নামাজ আদায় করতে গিয়ে কোননা কোন এক সময় তা ছুটে যায় , ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে পডে ৷তাহলে এক জন খেটে খাওয়া কর্ম জিবী মানুষ কি করে এটা হাসেল করতে পারবে ?

২)عن عبد الله قال حدثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهو الصادق المصدوق، قال: إن أحدكم يجمع في بطن أمه أربعين يوماً، ثم علقة مثل ذلك، ثم يكون مضغة مثل ذلك، ثم يبعث الله ملكاً فيؤمر بأربعة: برزقه وأجله، وشقي أو سعيد، فوالله إن أحدكم - أو: الرجل - يعمل بعمل أهل النار، حتى ما يكون بينه وبينها غير باع أو ذراع، فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل أهل الجنة فيدخلها، وإن الرجل ليعمل بعمل أهل الجنة، حتى ما يكون بينه وبينها غير ذراع أو ذراعين، فيسبق عليه الكتاب، فيعمل بعمل أهل النار فيدخلها (رواه البخاري، كتاب القدرـ رقم الحديث 1226/6221)ـ

উক্ত হাদীসে মায়ের উদরে প্রতি ৪০ দিন তথা  চিল্লায় শিশুর শারীরিক পরিবর্তনের কথা বর্ণিত হয়েছে। মায়ের পেটে যেমন ৩চিল্লা তথা  ১২০ দিন অবস্থানের পর শিশু প্রাণ পায় তেমন চিল্লার পেটে মানবজীবন ঈমানীপ্রাণ পায় ৷ এখান থেকে ওচিল্লার প্রমান বহন করে

3 বিভিন্ন হাদিসে  হিজরতে বাত্তার যে বর্ণনা দেওয় হয়েছে সে অনুযায়ী উম্মেতর জন্য এখন হিজরতে বাত্তাহ করার কোন সুরতই থাকতে পারে না, তবে হিজরতে বাদিয়াহর সুরত অদ্যাবধি বাকী আছে। যেমনঃ ৩ দিন, ১০ দিন, ৪০ দিন, ৪ মাস, ৭ মাস, ১ বছর, ৩ বছর, ইত্যাদি ৷ যদি দ্বীনকে সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা, শিক্ষা দেওয়া বা পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে হিজরত করা হয়, তবে   'হিজরতে বাদিয়া'র অন্তর্ভুক্ত হবে। তেমনি ভাবে ১০ বা ১২ বছরের জন্য মাদ্রাসা ইত্যাদিতে দ্বীনী উলূম হাসিল করার উদ্দেশ্যে নিজের প্রিয় এলাকা অন্যত্র হিজরত ও   হিজরতে বাদিয়ার অন্তর্ভুক্ত ৷

4
عن البراء رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم بعث خالد بن الوليد إلى أهل اليمن، يدعوهم إلى الإسلام. قال البراء: فكنت فيمن خرج مع خالد، فأقمنا ستة أشهر يدعوهم إلى الإسلام فلم يجيبوه. ثم إن النبي صلى الله عليه وسلم بعث عليا رضي الله عنه فأمره أن يقفل خالدا، إلا رجل كان يمم مع خالد أحب أن يعقب مع علي فليعقب معه. فكنت فيمن عقب مع علي. فلما دنونا من القوم خرجوا إلينا، فصلى بنا علي، ثم صفنا صفا واحدا، ثم تقدم بين أيدينا وقرأ عليهم كتاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، فأسلمت همدان جمعا. فكتب علي إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، فلما قرأ الكتاب خر ساجدا ثم رفع رأسه فقال: " السلام على همدان ، السلام على همدان ". هذا حديث صحيح [ ص: 282 ] أخرج البخاري بعضه بهذا الإسناد .

অর্থঃ হযরত বারা রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়ামান প্রদেশে তাবলীগের উদ্দেশ্যে হযরত খালীদ ইবেন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠান। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। আমরা দীর্ঘ ৬মাস যাবত সেখানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ অনবরত করে চলেছিলাম, কিন্তু তাদের কেউ তখনো আমাদের দাওয়াত কবুল করছিলো না। অতপর হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূল  সাঃ আমীরের দায়িত্ব দিয়ে খালীদ রাযিয়াল্লাহু কে ফিরে যেতে বলেন এবং তাঁর সাথে যারা ফিরতে চায় তারা ফিরতে পারবে আর যারা থেকে যেতে চায় তারা থাকতে পারে। আমি হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাথে আরো সময় বাড়িয়ে নিলাম।

অতপর, আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু আমাদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন পরে আমরা কাতারব্ন্দী হয়ে দাড়ালাম, এরপরে তিনি আমাদের মাঝে এগিয়ে এসে রাসূলুল্লাহর দাওয়াতনামা পড়ে শুনালেন সাথে সাথে হামদান গোত্রের সবাই এক সাথে ইসলাম কবুল করে নিলেন ৷।

এই খুশির সংবাদ লিখে হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহর নিকট পত্র পাঠালেন। যখন রাসূল উক্ত পত্রখানি পড়লেন, তখন সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। অতপর, মাথা উঠিয়ে বললেন, হামদানগোত্রের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হামদানগোত্রের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

অন্য রেওয়াতে আছে, উক্ত জামাত বা কাফেলা  নিয়ে হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু ৪ মাস পর ফিরে এলেন, বিদায় হজ্বের সময়। অতএব, উভয় আমীরের নেতৃত্বে আমাদের সময় অতিবাহিত হলো, প্রায় ১ বৎসর। (হায়াতুস সাহাবাহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৭৯/ বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড।)

এ হাদীসের সারাংশ দাড়ায়, হযরত খালেদ রাযিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে ৬ মাস ও আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে ৪ মাস ও তারো চেয়ে বেশী সময় তাবলীগী  দ্বীন প্রচারের উদ্দ্যেশে সফর করার প্রমাণ পাওয়া যায়





(7)  প্রশ্ন :নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদেরকে দাওয়াত দিতেন আর তাবলীগী ভাইরা মুমিন-মুসলমানদের দাওয়াত দেয় কেন?নবীজী তো মুসলমানদের কাছে কখনো জামাত পাঠাননি!


উত্তরঃ মুসলমানগণকে দাওয়াত দেওয়া শুধু বৈধই নয়, বরং আল্লাহ তা'আলার আদেশও। মুসলমানদের কাছে দাওয়াত দেওয়া বিদআত নয়, বরং আল্লাহ তা'আলার কঠোর নির্দেশ ও বটে ৷এ আদেশ কুরআনে রয়েছে, হাদীসে রয়েছে, ইতিহাসেও রয়েছে, রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাস্তব জীবনের সার্বিক আমলনামায়। নেই শুধু আমাদের জানা।

তাবলীগি ভাইয়েরা মুসলমানদের দাওয়াত দিয়ে থাকেন ভালই কথা ,কেননা আমার ধর্ম পালনে যদি কমতি থাকে তাহলে অন্য ধর্মের লোকেরা কেন ইসলামে আকৃষ্ট হবে ? আমি নিজে পরিবার পরিজন সহ  যারা আমার আশে পাশে আছেন,তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে , তাই আগে আমার নিজের ধর্ম পালন ঠিক করতে হবে  ৷ এই জন্যই বলা হচ্ছে '' তোমরা নিজে দোজখের আগুন থেকে বাঁচো এবং তোমার আহাল্ কে ওবাঁচাও " তাছাডা তাবলিগী ভাইয়েরা শুধু যে মুসলমানদের দাওয়াত দেন  শুধু তা না , বরং অমুসলিমদের কে দাওয়াত দিয়ে থাকেন যেটা বিভিন্ন কারগুজারীতে শুনতে পাই এবং হাজার মানুষ ইসলামের শীতল ছায়া তলে ও আশ্রয় নিচ্ছে ৷

আরবীতে একটি মূলনীতি আছে, عدم الوجدان لا يدل علي عدم الوجود অর্থাৎ, অজানা কখনো অনস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে না। তাই উক্ত প্রশ্নের উত্তরে প্রমাণস্বরূপ ৩টি আয়াত, ৫টি হাদীস ও ৪টি ইতিহাস পেশ করা হচ্ছেঃ

কুরআন ভিত্তিক দলীলঃ

১) و ذكر فإن الذكري تنفع المؤمنين
অর্থাৎ, (ঈমানী কথা) আলোচনা করতে থাকো (অর্থাৎ দাওয়াত দিতে থাকো), কেননা নিশ্চয় ঈমানী আলোচনা (দাওয়াত ইলাল্লাহ) মুমিনদের উপকারে আসবে। (সূরা যারিয়াত, আয়াতঃ ৫৫)

২) يايها الذين آمنوا آمنوا بالله و رسوله
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনো। (সূরা নিসা, আয়াতঃ ৩৫)

এই আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ঈমানদারগণকেই সম্বোধন করে ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন , তাদেরতো ঈমান আছে তার পরও ঈমানের দাওয়াত দেয়া মানে হচ্ছে   ঈমানকে আরো তাঁজা ও সুসংহত করা কারণ, তিনি চান নির্ভেজাল, খাঁটি ও তাঁজা ঈমান। এ আয়াত থেকে মুসলিমদের কে দাওয়াত দেয়ার সরাসরি নির্দেশনার কথা প্রমানীত হয় ৷

৩) قل لم تؤمنوا و لكن قولوا أسلمنا و لما يدخل الإيمان في قلوبكم، و إن تطيعوا الله و رسوله لا يلتكم من أعمالكم شيئا
মর্মার্থ, তোমরা ঈমানদার নও; কিন্তু মুসলমান। যদি তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করো তবে তোমাদের বিন্দুমাত্র অমলও নষ্ট করা হবে না। (সূরা হুজুরাত, আয়াতঃ ১৪)

এখানেও আল্লাহ তা'আলা মসজিতে নববীতে নবীর পেছনে নামাজ সম্পাদনকারী গ্রাম্য মুসলমানগণকেই ঈমান ও আমলের দাওয়াত দিয়েছেন  দাওয়াত দেওয়ার আদেশও দিয়েছেন, আরো দিয়েছেন ক্ষমা এ ,  আয়াত থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায়  ও কমজোর ঈমান ওয়ালা মুসলমানও ছিলো তাদেরকে ঈমান মুজবতী করার দাওয়াত দেয়া হয়েছে ৷ ভাই আজকে আমাদের এ ফেৎনার যুগে কি আমাদের সবাই মজবুত ঈমান ওয়ালা নাকী কম জোর ঈমান ওয়ালা ? যাদের ঈমান কমজোর তারা কি এ অবস্হায় মৃত্যু বরন করুক আপনি চান ? আজকে তাবলীগি ভাইয়েরা এই কাজটিই করতে নিজের জান-মাল নিয়ে মানুষের ধারে গিয়ে হাত-পা ধরে ঈমান-আমলের কথাটিই বলছেন মাত্র ৷

তবে হ্যাঁ এ কথাও সত্য যে নবী সাঃ ও ছাহাবায়ে কেরাম কাফেরদের কে ও দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন ,কাফেরদের মুসলমান বানিয়েছেন কিন্তু আজকের এ ফেৎনার যুগে কমজোর ঈমান ওয়ালা নামে মাত্র মুসলমান {বাংলাদেশের বিভিন্ন পাহাডী অঞ্চল সহ  উত্তরাঞ্চলে গরীব শ্রেনীর লোক }  যাদের কে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে বিদেশী এনজিওরা  যে কাফের বানাচ্ছে এ কথা কি কেউ ভেবে দেখেছেন ৷আজকে এ পথ হারা মানুষকে দ্বীনের, ঈমান -আমলের দাওয়াত না দিলে কাল কেয়ামতে আসামীর কাঠ গডায় দাঁডাতে হবেনা তো !

তাছাডা বিভিন্ন কারগুজারীতে শুনতে পাই  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মানুষ এ মেহনতের কারনে ইসলামে দিক্ষীত হচ্ছে যা আমাদের জানা নেই ৷ বিশ্ব এজতেমায় গেলে  দেখা যাবে নব-মুসলিমদের জামাত ৷সুতরাং তাবলীগ জামাত যে শুধু মাত্র মুসলিমদের দাওয়াত দেন শুধু তানয় অমুসলিমদের কে দাওয়াত দিয়ে থাকেন ৷ সুতরাং এ কথা বলার কোনই অবকাশ নেই যে তাবলিগী ভাইয়েরা শুধু মুসলিমদেরকেই দাওয়াত দিয়ে থাকেন ৷



হাদীস ভিত্তিক দলীলঃ

1  عن جرير ابن عبد الله قال: بايعت رسول الله صلي الله عليه و سلم علي إقام الصلاة و إيتاء الزكاة و النصح لكل مسلم ـ حياة الصحابةـ

মর্মার্থ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ৩টি কাজ করার জন্য শপথ পড়িয়েছেন। ১.নামাজ কায়েম করা, ২.যাকাত আদায় করা, ৩.দুনিয়ার সমস্ত মুসলমিদের কাছে নসিহত তথা তাবলীগ করা। (মুসলিম শরীফ,হায়াতুস সাহাবাহ)


2 عن قيس سمعت جريرا يقول بايعت رسول الله صلي الله عليه و سلم علي شهادة أن لا إله إلا الله و أن محمدا رسول الله و إقام الصلاة و إيتاء الزكاة و السمع و الطاعة و النصح لكل مسلم ـ الصفحة التاسعة الثمانون و مأتين ـ

অর্থাৎ, হযরত কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি হযরত জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট কয়েকটি বিষয়ে শপথ পড়েছি। ১. কালিমায়ে তাইয়িবার সাক্ষ্যপ্রদান
২. নামাজ কায়েম করা
৩. যাকাত আদায় করা
৪. (আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশসমূহ) মনযোগ সহকারে শোনা
৫. (আল্লাহ ও তার রাসূলের) নিঃসর্ত আনুগত্য করা
৬. সমস্ত মুসলমানের নিকট নসিহত তথা তাবলীগ করা। (হায়াতুস সাহাবাহ, বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠাঃ ২৮৯)

আলকাউসার অভিধানের ৫৭৩ পৃষ্ঠায় বলা আছে, النصح শব্দ যখন আল্লাহ তা'আলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় তখন তার অর্থ দাড়ায় "খাঁটি হওয়া", আর বান্দার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে অর্থ হয় "উপকার করা, তাবলীগ করা, উপদেশ দেওয়া, ইত্যাদি)

 উক্ত হাদীসদ্বয়ে   لكل مسلم   "মুসলিমগণ" শব্দ ব্যবহার করে মুমিন-মুসলিমদেরকে বিশেষভাবে দ্বীন বুঝিয়ে দাওয়াত দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (রূহুল বায়ান ও রূহুল মা'আনী ও বিভিন্ন তাফসীরের মত)



ইতিহাস ভিত্তিক দলীলঃ

১) স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাররা, সিরিয়া ও ইয়েমেন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় এবং আমল; আবদে কায়স ও বনু হারিস গোত্রের মুমিন-মুসলমানদের কাছেই তাবলীগ ও তালিমের জন্যেই অনেক জামাতবা কাফেলা  পাঠিয়েছিলেন। (বুখারী শরীফ, অধ্যায়ঃ باب تحريض النبي صلي الله عليه و سلم অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উৎসাহদান, ইবনে খালদূন, পৃষ্ঠাঃ ৮১৮, ইবনে সা'দ রচিত "তাবাকাত", ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৩৭, তাফসীরে তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৯৪, উসদুল গাবাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩৭৬-৩৭৮)


2) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবদুল্লাহ বিন তারিকের নেতৃত্বে আযল ও ক্বাররা গোত্রের মুসলমানদের কাছেই ৬২৫ খৃষ্টাব্দে ৬ জনের এক জামাত পাঠান।

সেই সৌভাগ্যবান ৬ জন হলেন,
১. হযরত মারছায রাদিয়াল্লাহু আনহু
২. আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু
৩. হাবীব রাদিয়াল্লাহু আনহু
৪. খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
৫. যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
৬. আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু।


الاستيعاب গ্রন্থের এবারত দেখুনঃ
قد بعث رسول الله صلي الله صلي الله عليه و سلم لـ"عضل و قارة مرثذ بن أبي مرثذ، عاصم بن ثابت، حبيب بن عدي، خالد بن الكبير، زيد بن دثنة، عبد الله بن طارق ليتفقهوا في الدين و يعلمهم القرآن و شرائع الإسلام - الاستيعاب ـ الجزء الثاني، رقم الصفحة :خمس و ثلاثمأة

শেষ কথাঃ উপরোক্ত  আয়াত, হাদীস, ইতিহাস ও নবীর বাস্তব জীবনের কর্মপন্থা এবং যুগ যুগ ধরে  নবীর ওয়ারীস মুসলিম মনিষীদের বিভিন্ন আমলের দ্বারা    সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে মুসলমানদের দ্বিনী দাওয়াত দেয়া ঈমানী দায়িত্ব ৷ তবে হ্যাঁ দাওয়াতের হাজারো নিয়ম পদ্বতির মধ্যে বর্তমান দাওয়াত-তাবলীগ ও একটি ৷ অতএব, এটি পরিস্কার যে, মুসলমানদেরকে দাওয়াত না দেওয়া সুস্পষ্ট কুরআন-সুন্নাহ বিরুধী জঘন্য অপরাধ ও ইসলামের অমোঘ বিধান রহিত করণের নামান্তর ৷ আল্লাহ সকল কে হক্ব কথা বুঝার তাওফিক দিন ৷





(8)  তাবলীগি ভাইয়েরা রাষ্ট্রীয় বা সামাজীক ভাবে  অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনা কেন ?এটা কি ফরজ নয় ?


*******************************************************************

উত্তর :সর্ব প্রথম কথা হল নামাজ রোজা হ্জ্ব যাকাতের মত দাওয়াতের কাজ ও ফরজ এবাদত ৷আর এফরজ কাজটি দুই ভাগে বিভক্ত : ১ ফরজে আইন ২ ফরজে কেফায়া ৷
১ নিজের শক্তি সামর্থ অনুযায়ী নিজের পরিবার পরিজন ,পাডা-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধব আত্বীয় স্বজনদের  সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা ফরজে আইন ৷
২ মুসলমানদের পক্ষ থেকে একটি কাফেলা সব সময় দ্বীনি দাওয়াত ও শিক্ষা দিক্ষায়  লিপ্ত থাকা ৷ এক দল দাওয়াতের কাজ করতে থাকবে অপর দল নিজের জরুরতে বাডি ঘরে অবস্হান করে দৈনন্দিন কাজে লিপ্ত থেকে ধর্ম-কর্ম করবে ৷ এবং যারা বাহিরে গেছেন তাদের পরিবারের যথা সম্ভব খোজ খবর নিবে  ও সহায়তা করবে ৷ অতঃপর বাহিরের কাফেলা প্রত্যাবর্তন করলে , ঘর-বাডিতে অবস্হান কারী কাফেলা দ্বীনের দাওয়াতে বা দ্বীন শিক্ষার জন্য বাহিরে যাবে ৷ এ ভাবে মুসলমানগন দলভূক্ত হয়ে মুসলিম অমুসলিম সকলের কাছে দাওয়া দিবে ৷সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে ৷এ ধরনের পর্যাপ্ত জামাত ময়দানে কাজ করা ফরজে কেফায়া ৷

এবার মূল কথায় আসা যাক ৷তাবলীগ জামাত কোন তথাকথিত রাজনৈতিক দল নয়,এর কোন নেতা নেই,  নেই কোন কমিটি ,এমন কি একটি অফিস ও  নেই ৷যদিও মসজিদ ভিত্তিক এর কায্যক্রম পরিচালনা  করে থাকেন , সংঘবদ্ধ ভাবে তিন দিনের বেশী কেউ এক সাথে কোথাও অবস্হান ও করেনা তা হলে কে করবে কি ভাবে করবে  প্রতিবাদ  ৷ এখানে  বিভিন্ন মতের মানুষ  আসেন এবং সময় দেন তাছাডা  অন্য ভাবে বলতে  গেলে এটা একটা বয়স্ক দ্বীনি শিক্ষালয় ৷ বাংলাদেশে যত ইসলামিক দল আছে কম-বেশী তারা সকলেই তাবলীগ জামাতে সময় দেন বা সমর্থন করেন  দু-একটি ছাডা ।তেমনি ভাবে আছে সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থকও . বলতে গেলে তাবলীগ জামতের মত  অন্যায়ের প্রতিবাদ অন্য আর কেউ করেনা বা করতে পারেনা ৷ কারন তাবলীগে সময় দানকারী  বা সমর্থন কারী সকলেই যার যার অবস্হান থেকে অন্যায়ের বিরুদ্বে প্রতিবাদ করেন ৷এবং এই সকল লোক প্রতিবাদ করা মানেই হল তাবলীগ জামাত প্রতিবাদ করা। !!!

তাছাডা তাবলীগি ভাইয়েরা একেবারেই যে অসৎ কাজের নিষেধ করেনা তা  নয় ৷তবে গভীর ভাবে চিন্তা করলে বুঝা যাবে যে, সৎ কাজের আদেশের মধ্যেই বস্তুত অসৎ কাজের নিষেধ ও হয়ে যায় যেমন  তারা  নামাজ পডার দাওয়াত দেন, এবং উৎসাহ প্রদান করেন এতে অনেকে পাক্কা নামাজী হয়ে যায় ,তাদের এ দাওয়াতের মাধ্যমে নামাজ না পডা যে মুনকার বা অসৎ কাজ ছিল হেকমতের সাথে সেই মুনকারের বাঁধা হয়ে গেল ৷কোন প্রতিবাদ বা সংঘর্ষের প্রয়োজন হয়নি ৷ তেমনি ভাবে অন্যান্য কাজ সমূহ ৷ মূলত তাবলীগি ভাইয়েরা সব সময় হেকমত অবলম্বন করেন ৷এই পদ্বতিতে তারা অনেক  "নাহী আনিল মুনকার " করে থাকেন ৷

তবে এমন কিছু কাজ বা প্রতিবাদ তাৎক্ষনিক করা সম্ভব হয়না যে গুলো মুসলমানদের জন্য ফরজে কেফায়ার পর্যায়ের কিন্তু  দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংঘঠন গুলো এ ফরজে কেফায়াটা আদায় করছেন বলে তাবলীগির পক্ষ থেকে ও আদায় হয়ে যায় , স্বতন্ত্র ভাবে প্রয়োজন পডেনা ৷যেমন নাস্তিক মুরতাদ দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরীন ও কুখ্যাত ধর্মদ্রোহী লতিফ সিদ্দীকির বিরুদ্বে সহ   অন্যান্য ইসূতে মুসলমানরা প্রতিবাদ করছে ৷ এতে তাবলীগের ভাইয়েরা ও সামেল আছেন পরোক্ষ ভাবে যদি ও স্বতন্র ব্যানারে নয় ৷

আবার বিভিন্ন হেকমতের কারনে অনেক "নাহী আনীল মুনকার " করা অনেক মুশকীল হয়ে পডে , ফরজে কেফায়ার দায়িত্ব আদায় করতে গিয়ে অনেক জরুরী কাজ এমন কি ফরজে আইন ও বাধা গ্রস্হ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷ কারন সারা বিশ্বব্যপি যে কাজটি সম্প্রসারীত সেখানে বিভিন্ন দল আর মতের লোক থাকাই  স্বাভাবীক এক্ষেত্রে এমন কি শরয়ী কোন  মাযহাবী এখতেলাফী মাছায়ালার ও অবতারনার থেকে  বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয় ৷

এ জন্যই শেখ যাকারিয়াহ রহঃ জিম্মাদারদের বলতেন তারা যেন সমাজের মুনকারাতের ব্যপারে মাথা না ঘামান ,তারা যে কাজ নিয়েই অগ্রসর হচ্ছেন সেটা নিয়েই থাকেন( কারন আমি ব্যক্তিগত ভাবেও হযরতের কথার মধ্যে হেকমত খুজে পাই তাহল একটা জামাত যখন ভিন্ন এলাকায় বা ভিন্ন দেশে গমন করেন তখন মুনকারাতের প্রতিবাদ করতে গেলে আসল মাখছুদ পাওত হয়ে যাবে ৷ তাছাডা ঐ সকল এলাকায় বা দেশেতো স্হানীয়রাই যথেষ্ট প্রতিবাদ করার জন্য ) অতঃ পর তিনি হযরত মাওঃ আশরফ আলী থানবী রঃ এর একটি উদ্বৃতি দিয়ে বলতেন বিশ্বব্যাপি কাজের স্বার্থে তারা যখন মুনকারাতের ব্যাপারে প্রতিবাদ না করার উসূল বানিয়েছেন তাদের সেই উসূলের উপরই থাকা উচিত ৷মালফুজাতে শাইখ রঃ ২৮ ৷
=============***********

===========******************==============******

(9) প্রশ্ন :তথা  কথিত আহলে হাদীসদের  অভিযোগ  ফাযায়েলে আমাল ও ফাযায়েলে সাদাকাতে দুর্বল হাদীস আছে। তাই এ কিতাবটি পড়া উচিত হবে না আসলে কি তাই ?
 উত্তর:
নয়টি ‘আমলের ফযিলত সম্বলিত এই ফাযায়েল আমাল বা তাবলিগী নেসাব বইটি    আজ-
.*পৃথিবীর একত্রিশটি ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে ৷
.*সৌদি আবর, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ইরান, উজবেকিস্তান, বার্মা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইংল্যান্ড, আফ্রিকা, আমেরিকা, কানাডা, তুর্কি, জাপান, যাম্ভিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফ্রান্স, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, কেনিয়া, পর্তুগাল এর মতো তেইশটি দেশের একশত *পঁয়তাল্লিশ জন দার্শনিক ও শারী’আত বিজ্ঞানী ফাযায়েলে ‘আমালের বৈজ্ঞানিক প্রত্যয়পূর্ণ সেবা ও একে অন্নান্য ভাষায় রুপান্তরকরণে মগ্ন আছেন ৷. শুধুমাত্র পাক-ভারত সীমানার ভিতরে চৌহাত্তরটি প্রকাশনা প্রতিষ্টান নিয়মিত এই কিতাব প্রকাশ করে যাচ্ছে ৷ এতে করে এর অনুলিপি কোটির উপরে ছাডিয়ে যাবে

এই পুর্ণ কিতাবে যা “ফাযায়েলে ‘আমাল” বা “তাবলীগী নেসাব” নামে প্রসিদ্ধ, শাইখুল ‘হ্দীস যাকারিয়্যা (রহঃ) কোন সুশৃংখল পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে সংকলন করেননি ,বরং বিভিন্ন পরিচ্ছেদ ও বিষয়বস্তুর উপরে ভক্ত অনরাগী  সহ উনার চাচা মহেদয়ের অনুরোধে  তিনি এক একটি করে    ৯ টি পান্ডলিপী তৈরী করেন ৷ মূল্যবান নয়টি কিতাবের (১. হেকায়াতে সাহাবা ২.ফাযায়েলে নামায ৩.ফাযায়েলে তাবলীগ ৪.ফাযায়েলে যিক্‌র্‌ ৫.ফাযায়েলে কুরআন ৬.ফাযায়েলে রমজান ৭.ফাযায়েলে দরূদ ৮.ফাযয়েলে সাদাক্বাত ৯.ফাযায়েলে ‘হাজ্জ) - 
আর এটাকে তাবলীগের দায়িত্বশীলরা দাওয়াতী কাজে বের হওয়া বন্ধুদের দ্বীনী শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। এজন্যই কিছু প্রকাশক এই ফাযায়েল সমষ্টিত পান্ডলিপী  “তাবলীগী নেসাব” নামে প্রকাশ করেন ৷ বা অনেকে
 “ফাযায়েলে ‘আমাল” হিসাবে ও প্রকাশ করেন  ৷

  এ মহৎ কিতাবের প্রতি  শোকুন এর দৃষ্টি পডেছে , তথা  কথিত আহলে হাদীসদের  অভিযোগ  ফাযায়েলে আমাল ও ফাযায়েলে সাদাকাতে দুর্বল হাদীস আছে। তাই এ কিতাবটি পড়া উচিত হবে না আসলে কি তাই ?
এ ব্যপারে মুহতারম মাওলানা লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা এর ফতোয়াটি হুবহু পাঠকদের সুবিধার্থে তুলে ধরা হল ৷

মুহাদ্দিসীনে কেরামের মূলনীতি হল দুর্বল হাদীস ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য
যেমন-
সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহঃ বলেন-
قال العلماء من المحدثين والفقهاء وغيرهم يجوز ويستحب العمل فى الفضائل والترغيب والترهيب بالحديث الضعيف ما لم يكن موضوعا (الأذكار-৭-৮<
মুহাদ্দিসীন ও ফুক্বাহায়ে কেরাম এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম বলেন-দুর্বল হাদীসের উপর ফাযায়েল ও তারগীব তথা উৎসাহ প্রদান ও তারহীব তথা ভীতি প্রদর্শন এর ক্ষেত্রে আমল করা জায়েজ ও মুস্তাহাব। যখন উক্ত হাদীসটি জাল না হয়। {আল আজকার-৭-৮}
এ মূলনীতিটি নিম্ন বর্ণিত বিজ্ঞ ব্যক্তিগণও বলেছেন-
- মোল্লা আলী কারী রহঃ-মওজুয়াতে কাবীর-৫, শরহুন নুকায়া-১/৯
- ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরী রহঃ-মুস্তাদরাকে হাকেম-১/৪৯০
- আল্লামা সাখাবী রহঃ- আল কাওলুল বাদী’-১৯৬
- হাফেজ ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী রহঃ- মাজমুআ ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-১/৩৯
আহলে হাদীস নামধারী গায়রে মুকাল্লিদগণও এ মূলনীতিতে একমত
- শায়খুল কুল মিয়া নজীর হুসাইন সাহেব দেহলবী রহঃ- ফাতওয়া নজীরিয়া-১/২৬৫
- নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান- দলীলুত তালেব আলাল মাতালিব-৮৮৯ {নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেবকে গায়রে মুকাল্লিদদের আকাবীরদের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে ধর্তব্য করা হয়। {আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল কুরআন ওয়া সুন্নাত কি রওশনী মে, লেখক-মুবাশশির আহমাদ রাব্বানী-২/১৮১}
- মাওলানা সানাউল্লাহ ওমরতাসরী রহঃ- আখবারুল হাদীস-১৫ শাওয়াল ১৩৪৬ হিজরী।
- হাফেজ মুহাম্মদ লাখওয়ী রহঃ- আহওয়ালুল আখরাস-৬
- মাওলানা আব্দুল্লাহ রূপরী সাহেব রহঃ- ফাতওয়া আহলে হাদীস-২/৪৭৩
শায়েখ জাকারিয়া রহঃ ও এ মূলনীতির কথা বলেছেন-
“এ বিষয়ে সতর্ক করাও জরুরী যে, হযরত মুহাদ্দিসীন রাঃ গণের নিকট ফাযায়েলের বর্ণনায় অনেক সুযোগ আছে। আর মামুলী দুর্বলতা গ্রহণযোগ্য। তবে সুফীয়ায়ে কেরামের ঘটনাতো ঐতিহাসিক বিষয়। আর এটা জানা কথা যে, ঐতিহাসিক বিষয় হাদীসের মর্যাদার তুলনায় খুবই কম ৷

{ফাযায়েলে আমাল, উর্দু এডিশন-৩৮৪, রেসালায়ে ফাযায়েলে নামায, তৃতীয় অধ্যায়, ফাযায়েলে আমাল পর ইশকালাত আওর উনকা জাওয়াব নম্বর-৬৫, ফাযায়েলে দরূদ-৫৬}
বিঃদ্রঃ
হযরত শায়েখ জাকারিয়া রহঃ যদি কোথাও দুর্বল হাদীস বর্ণনাও করেছেন, সেখানে সাথে সাথে আরবীতে লিখে দিয়েছেন যে, এ হাদীসটি দুর্বল।
শায়েখতো অনেক হেকমত ও দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন এ ব্যাপারে ,কারণ হাদীস সহীহ দুর্বল বলাটা এটা বিজ্ঞ ওলামাদের কাজ। তাই তিনি এসব যারা বুঝেন তাদের জন্য আরবীতেই বিষয়টি পরিস্কার করে দিয়েছেন, উর্দুতে তা আর অনুবাদ করেন নি। কারণ যার কাজ তাকেই সাজে, অন্যরা করতে গেলেই সমস্যা বেঁধে যায়। যেমন বর্তমান জমানায় অনুবাদ পাঠকরাও হাদীসের সহীহ জয়ীফ নিয়ে মন্তব্য করে হাদীসকে হাস্যকর ও জগাখিচুরী পাকিয়ে ফেলছে।
ফেতনা রুখার জন্যই শায়েখ হাদীসের সহীহ জয়ীফ হওয়ার কথা আরবীতে বলেছেন। উর্দুতে অনুবাদ করেন নি। হযরাতের ভাষ্য অনুযায়ী এটাও বুঝা যায় যে, হযরত ফাযায়েলে আমালে খুব কম হাদীসই দুর্বল এনেছেন।
যে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসীনরা স্বীয় কিতাবে ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস এনেছেন
১- ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ স্বীয় কিতাব “আস সুন্নাহ” এর মাঝে ৩০৩টি।
- ইমাম বায়হাকী রহঃ “কিতাবুল আসমাই ওয়াস সিফাত” গ্রন্থে ৩২৯টি।
- ইবনে তাইমিয়া রহঃ তার “আল মুনতাকা” গ্রন্থে ২৬২টি।
- হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ তার “বুলুগুল মারাম মিন আদিল্লাতিল আহকাম” গ্রন্থে ১১৭টি।
- ইমাম নববী রহঃ তার খুলাসাতুল আহকাম মিন মুহিম্মাতিস সুনান ওয়া কাওয়ায়িদিল ইসলাম” গ্রন্থে ৬৫৪টি।
- মুহাম্মদ ইবনে খুজাইমা রহঃ তার “কিতাবুস সিহাহ” গ্রন্থে যা সহীহ ইবনে খুজাইমা নামে প্রসিদ্ধ এনেছেন-৩৫২টি।
- মুহাম্মদ ইবনে হিব্বান রহঃ তার “কিতাবুস সিহাহ” যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামে প্রসিদ্ধ, তাতে এনেছেন-২৯৪টি।
- ইমাম দারা কুতনী রহঃ তার “সুনানে দারা কুতনী” তে অনেক দুর্বল হাদীস এনেছেন বলে মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন।
- গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খানও তার “কিতাবু নুজুলিল আবরার” নামক গ্রন্থে ১৩৩টি দুর্বল হাদীস এনেছেন।
والله اعلم

তাছাডা ফাজায়েলে আমালে কিছু   সহীহ, দ্বঈফ, আর প্রসঙ্হক্রমে কিছু দূর্বল হাদীস এসেছে, যা লেখক নিজেই  উল্লেখ করে দিয়েছেন ৷
ফাযাঈলে আমাল এর এই ঘাটতির জন্য মুন্তাখাব হাদীস নামে একটি কিতাব লিখেছেন আল্লামা ইউসুফ রাহ.। এটিও মাসজিদে তালীম হয় ৷ আর উপমহাদেশের বাইরে তালীমের জন্য তাবলীগের আলীমরাই “রিয়াদ্বুস সালেহীন” বইটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা আল্লামা নবভী রাহ. লিখিত এবং ৯৯% হাদীসই সিহাহ সিত্তাহ থেকে নেয়া। এই কিতাবটি ও সবাই নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন বা মসজিদে তালীম করতে পারেন , বা অন্য কোন হদীস বা তাফসীরের কিতাব  যদি ফাযাঈলে আমাল পড়তে না চান,হইতে পারে অদূর ভবিষ্যতে মুরুব্বীদের পরামর্শে আরও নতুন নতুন কিতাব সংযোজন হতে পারে ৷ ফাজায়েলে আমালে কিছু  দ্বঈফ, দূর্বল হাদীস  আছে বলে কি পুরো কাজটাই সমালোচীত হবে এটা কখনো কাম্য নয় ৷




(10) পরিবার রেখে দীর্ঘ দিনের তাবলীগি সফর কি বৈধ ?
উত্তর:-
ভাই দোস্ত যারা এমন প্রশ্ন করেন তাদের থেকে একটি কথা আগে জেনে নিন যে স্ত্রী-সন্তান সন্ততী রেখে রিজীকের তাডনায় দীর্ঘ দিনের সফরে বিদেশ গমন বৈধ কি অবৈধ ?যদি বৈধ হয় , হারাম নাহয়
তাহলে দ্বীনের প্রচারের জন্য বাহিরে থাকাতে পরিবারের প্রতি এত অযথা দয়া উপছে উঠছে কেন?

টাকা কামানোর জন্য বিদেশ গমন করে বছরের পর বছর পরে থাকলেও এ নিয়ে কোন প্রশ্ন না করে, দ্বীনের কাজে বাহিরে থাকায় প্রশ্ন কেন? দ্বীনের কাজের সাথে এত দুশমনী কেন?

قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ [٩:٢٤]

বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাস্তায় জেহাদ তথা চেষ্টা-মেহনত  করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। {সূরা তাওবা-২৪}

এ আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় সন্তান সন্ততি, স্ত্রী আর বাসস্থানের মোহাব্বতে আল্লাহর রাস্তায় বের না হওয়ার ব্যাপারে কঠিন হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। যা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, পরিবারের প্রতি খেয়াল রাখার ঠুনকো ওজর দেখিয়ে এ থেকে বিরত থাকা সরাসরি আল্লাহর ধমকিতে নিপতিত হওয়ার নামান্তর।

তবে হ্যাঁ দ্বিনী সফরকালীন সময়ে পরিবারের ভরনপোষনের ব্যবস্থা অবশ্যই করে যেতে হবে এতে কোন সন্ধেহের অবকাশ নেই যেটা ফরজ ও বটে । \এটা ভিন্ন বিষয় ,কারন পরিবারের বরন পোষনের ব্যবস্হা করা ও ওয়াজীব ৷ কিন্তু দ্বীনী সফরই করা যাবে না পরিবার থাকায় এমনটি ধারণা করা দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয় ৷


এবার শরিয়তের প্রমান দেখুন
 পরিবার ছাড়া সাহাবাদের দ্বীনী সফরের অসংখ্য প্রমান রয়েছে যা পডে লেখে শেষ করা যাবেনা

**********

 রাসূল সাঃ পবিত্র স্ত্রীগণকে রেখে একত্রে ২৯ দিন অন্যত্র অবস্থান করেছেন মর্মে স্পষ্ট বর্ণনা হাদীসে এসেছে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৯৮৪}

রাসূল সাঃ পরিবার সঙ্গে না নিয়ে একাধিক সফর করেছেন আর রাসূল সাঃ এর আদেশে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ বছরের অধিক সময়ও পরিবার ছাড়া দ্বীনী সফরে রত ছিলেন। যা উপরে এক চিল্লা তিন চিল্লা  ছয় মাস কোথায় ফেলেন অংশে বর্ননা করা হয়েছে৷       



হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ এর নেতৃত্বে একটি  জামাত বা কাফেলা ১ম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত নাজরান ও ইয়ামেনে অবস্থান করেন। {বুখারী-২/৬২৩, তাবারী-৩/১২৬, ইবনে খালদুন-১/৮২৮}

৩-

হযরত আলী রাঃ এর নেতৃত্বে ১ম হিজরীতে চার মাসের সফর হামাদানও ইয়ামেনে। {বুখারী-২/৬২৩, তাবারী-৩/১৩১-১৩২, ইবনু সাআদ-২/১৬৯-১৭২}

৪-

হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ রাঃ এর নেতৃত্বে বাজীলাহ ও ইয়ামানে ২ মাসের সফর। {তাবারী-৩/১৫৮, ইবনে সাআদ-২/২৬৬, ইবনে খালদুন-১/৮৪৫}

৫-

হযরত জারীর বিন ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ এর নেতৃত্বে বাজীলাহ ও ইয়ামানে ২ মাসের সফর। {ইবনে খালদুন-২/৮৪৫, তাবারী-৩/১৭৮, বুখারী-২/৬২৫}

৬-

হযরত তামীমে দারী রাঃ এর নেতৃত্বে লাখম উপগোত্রে ৪০ দিনের সফর {ইবনে সাআদ-১/৩৪৩-৩৪৪, মাজমূআত-৪২-৪৩}

কতিপয় দ্বীন বিরোধী, ঈমানের দুশমনদের কথায় দ্বীনের কাজের ক্ষেত্রে অযথা সন্দেহ সৃষ্টি থেকে আল্লাহ পাক সকলকে হিফাযত করুন আমিন ৷  



http://www.youtube.com/watch?v=owSwH1bx4RY&feature=youtu.be 



https://www.facebook.com/photo.php?fbid=162263760630985&set=a.162263743964320.1073741859.100005420863115&type=3&theater 





 (11)   তাবলীগ করার জন্য কি আলেম হওয়া শর্ত?

 প্রশ্ন ;.  অনেকে বলে থাকেন  বর্তমান প্রচলিত তাবলীগ জামাতে সাধারণ মুসলমানগণ যে, তাবলীগ করছেন, তাদের জন্য এ কাজ করা জায়েজ নয়। বরং তাবলীগ করার জন্য আলেম হওয়া শর্ত। আসলে কি তাই ?

দাওয়াত শব্দের অর্থ হল আমন্ত্রণ বা আহবান করা। আর তাবলীগ শব্দের অর্থ হল জানানো। সহজ কথায় মানুষ কে ইসলামের দিকে ডাকা হল দাওয়াত আর মানুষের কাছে ইসলামের পরিচয় পেশ করাই হলো তাবলীগ ৷এ কাজটি যে যতটুকু জানে সেই মোতাবেক অন্যের কাছে পৌছিয়ে দেয়াই হল তাবলীগ ৷ এ জন্য আলেম হওয়া জরুরী নয় ৷
তবে আলেম হওয়া  উত্তম ৷কারন  এক হল হিফাযতে দ্বীন তথা দ্বীনের মৌলিকত্ব রক্ষা করা  আরেক হল ইশাআতে দ্বীন তথা দ্বীনের  প্রচার করা

হিফাযতে দ্বীন তথা দ্বীনের মৌলিকত্ব রক্ষার জন্য আলেম হওয়া অত্যন্ত  জরুরী। কেননা, কোন কাজ বেদআত, কোন কাজ শীর্ক? কোন কাজ কুফরী? কোন কাজ হারাম? এসকল বিষয় কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অসীম জ্ঞান অর্জন  ছাড়া জানা সম্ভব নয়। তাই এসব বিষয় সমাজে প্রবিষ্ট করলে তা প্রতিরোধ করার জন্য কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞ উলামা প্রয়োজন উলামা ছাড়া এসব প্রতিরোধ  করা সম্ভব নয় ৷

পক্ষান্তরে দ্বীন প্রচার সাধারণ মুসলমান দিয়েও হতে পারে ৷
 এ কারণেই রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২৭৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৫৪২}

এখানে আলেম, গায়রে আলেম কাউকেই সুনির্দিষ্ট করেননি। বরং সকল মুসলমানদের উপর দায়িত্ব হল, যিনি দ্বীনের যে বিষয় জেনেছেন তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়া। এর নামইতো তাবলীগ ৷

আর দ্বীনের জটিল বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ ও গায়রে আলেমদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন তারা আলেম ও ফক্বীহ মুজতাহিদদের অনুসরণ করে চলতে  নিজে নিজে মনগড়া মত প্রকাশ না করতে
ইরশাদ হচ্ছে-

فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [١٦:٤٣]

আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; {সুরা নাহল-৪৩}

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-

وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا [٤:٨٣]তাদের কাছে যখন কোন সংবাদ আসে, তা শান্তির হোক বা ভীতির, তারা তা [যাচাই বাছাই না করেই] প্রচার শুরু করে দেয়। তারা যদি তা রাসূল বা যারা কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের কাছে নিয়ে যেত, তবে তাদের মাঝে যারা তার তথ্য অনুসন্ধানী তারা তার বাস্তবতা জেনে নিত। {সূরা নিসা-৮৩}

কিন্তু দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে এরকম কোন বাধ্যবধকতা নেই। বরং মুর্খরাও দ্বীন প্রচার করতে পারে। যেমনটি রাসূল সাঃ এর আরো হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয়।

যেমন রাসূল সাঃ বিদায় হজ্বের সময় উপস্থিত লাখো সাহাবাগণকে সম্বোধন করে বলেছেন- فَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ তথা উপস্থিত ব্যক্তিরা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দাও। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৪৬, ১৩৫৪}

সুনিশ্চিতভাবে বিদায় হজ্বের ঐ ভাষণের সময় উপস্থিত সকল সাহাবাগণ আলেম ছিলেন না ৷ কারণ সেখানে এমন ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন, যাদের অনেকেই তখন নতুন মুসলমান হয়েছেন ৷  অনেকে রাসূল সাঃ কে সর্বপ্রথম দেখেছেন। সুতরাং তাদের আলেম হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। অথচ রাসূল সাঃ সবাইকেই দায়িত্ব দিয়েছেন, যেন তারা দ্বীনের এ দাওয়াতকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেন ৷

সুতরাং এর দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান যে, দ্বীন প্রচারের জন্য আলেম হওয়ার দাবিটি বোকামী সূলভ দাবি ছাডা আর কিছুই না ৷

(12)     তাবলীগী ভাইরা জিহাদ করে না কেন? তাবলীগী ভাইরা ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে না কেন?

দ্বীনি কাজের অনেকগুলো শাখা আছে যা গননা করে শেষ করা যাবেনা তবে  এর মধ্যে তাবলীগ ও একটি প্রধানতম শাখা আরো যেসব শাখা রয়েছে, যেমন
১- গ্রহণযোগ্য আমীরের নেতৃত্বে কাফিরদের মুকাবিলা করে দ্বীনে ইসলামকে সমুন্নত করার মানসে জিহাদ করা ৷
২- খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মানসে কাজ করা ৷
৩- ইসলাম বিদ্বেষীদের ইসলামের বিরুদ্ধে নানাভিদ অপপ্রচার ও মিথ্যা অভিযোগের জবাব দেয়া কথা ও লেখনির মাধ্যমে ৷
৪- ইসলামের মৌল বিশ্বাস ও আমল সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক সঠিক সমাধান জানিয়ে জাতিকে শিরক-বিদআত থেকে মুক্ত রাখতে চেষ্টা-মেহনত চালিয়ে যাওয়া যা বিশ্বের সকল মুফতি মুহাদ্দেস সহ ওলামা-মাশায়েখ গন আঞ্জাম দানে সচেষ্ট আছেন ৷
৫- কুরআন ও সুন্নাহের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মিটিং মিছিল মানববন্ধন সভা সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে  প্রতিবাদ করে হকের আওয়াজকে বুলন্দ করা।
৬- দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার  মাধ্যমে বিজ্ঞ  আলেম -ওলামা তৈরী করে দ্বীন প্রচারে সচেষ্ট হওয়া ইত্যাদি ৷
৭-
সঠিক পদ্ধতিতে যারাই উপরোক্ত কাজ করছেন, তারা সবাই দ্বীনের কাজ করছেন। গুরুত্বের দিক দিয়ে কারো কাজ কারো কাজ থেকে  কম নয় ,

আইয়্যামে জাহেলিয়াতের কুফরীর অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতিকে দ্বীনের আলোয় আলোকিত করতে রাসূল সাঃ , রক্তঝরা মেহনত করেছেন। সাহাবাগণ অকাতরে জীবন বিলিয়েছেন, ঘর-বাড়ি সংসার সন্তান সন্ততি সব কিছুর মায়া ত্যাগ করে  দ্বীনের দাওয়াতের জন্য, দ্বীনকে বুলন্দ করতে জিহাদের ময়দান থেকে জিহাদের ময়দানে ছুটে বেরিয়েছেন ৷যার কারনে বিদায় হজের দিন উপস্হিত প্রায় সোয়া লক্ষ ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মাত্র ১০ হাজারের মত ছাহাবীর কবর মক্কা-মদীনায় পাওয়া যায় , আর বাকীদের কবর  পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছিডিয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৷ কেন তা ?একমাত্র দ্বীন প্রচারের জন্যই তো তাইনা !
সেই সাথে একদল সাহাবা সারাক্ষণ মসজিদে নববীতে দিনরাত দ্বীনের ইলম আহরণ করেছেন, (যারা আসহাবে ছুফ্ফাহ নামে পরিচিত ছিল আজও মসজিদে নববীতে সেই স্হানটি ইতিহাসের সাক্ষি হিসাবে বিদ্যমান আছে  রওজা মোবারকের পাশে )

দ্বীনী বিষয়ে প্রাজ্ঞতা অর্জনের জন্য। কারণ মূল দ্বীন হল, আল্লাহর আদেশ আর নিষেধ পালন করার নাম ,যদি কুরআন ও হাদীস আত্মস্থকারী গবেষক ব্যক্তিগণ না থাকেন, তাহলে পুরো জাতি ধর্মের নামে অধর্ম পালন করতে শুরু করে দিবে। তারা বুঝতেই পারবে না, তারা যা পালন করছে বা যা বলছে তা দ্বীন নয়। তাই ইলমে দ্বীন অন্বেষণ করা, দ্বীন শিক্ষার কাজে ব্রত থাকা দ্বীনের একটি অত্যাবশ্যকীয় ফরজ কাজ। সেই সাথে প্রয়োজনে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়াও দ্বীনের একটি ফরজ কাজ। ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার মেহনতও দ্বীনের কাজ।

এক কথায় একটি আরেকটির পরিপূরক। কোনটির অবদানই কোনটি থেকে কম নয়। তবে সকল জমানায়ই সবচে’ বড় কাজ অবশ্যই কুরআন ও হাদীসের প্রাজ্ঞ আলেম তৈরী করা , কারণ প্রাজ্ঞ আলেম না থাকলে, কুরআনের অপব্যাখ্যা, মিথ্যা-জাল বর্ণনা মানুষের ঈমানে বিশ্বাসে ঢুকে পড়ে অবশেষে গোটা ধর্মটাই একটি বিকৃত ধর্মে রূপ লাভ করবে। এ কারণে প্রাজ্ঞ আলেম তৈরী করার প্রচেষ্টা দ্বীনের একটি আবশ্যকীয় জরুরী বিষয়।
সেই সাথে দ্বীনের তাবলীগও দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়। রাসূল সাঃ সারা জীবন মৌলিকভাবে যে কাজ করে গেছেন সেটির নাম তাবলীগ।
সেই সাথে রাসূল সাঃ সশরীরে ২৭টি জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। সুতরাং জিহাদও একটি ফরজ আমল। আমলী জিন্দেগী গঠন করতে অসংখ্য হাদীস বলে গেছেন। যা বুঝে পালন করা উম্মতের জন্য জরুরী। তাই ইলমে দ্বীন অন্বেষণ করাও ফরজ। সঠিক পদ্ধতিতে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও দ্বীনের একটি অংশ ৷
তাছাডা সবাই একসাথে সব কাজ করতে সক্ষম নয়। তাই সবাইকে সব কাজের জন্য বাধ্য করাও উচিত নয়। একদল দ্বীনের যে কাজ করছেন, তারা অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ ভাব রাখাও উচিত নয়। কিংবা ছোট নজরে দেখারও কোন অবকাশ নেই ৷

এ কথাটি আরও স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই যে

শুধু মাত্র তাবলীগকেই  দ্বীনের কাজ মনে করা গোমরাহী,তবে  বলতে হবে তাবলীগও দ্বীনের একটি কাজ ।
 শুধু মাত্র জিহাদই দ্বীনের কাজ মনে করা গোমরাহী, তবে বলতে হবে জিহাদও দ্বীনের কাজ।
শুধু খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনীতিই   দ্বীনের কাজ মনে করা গোমরাহী, তবে বলতে হবে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মেহনতও দ্বীনের কাজ।
শুধু মাত্র ইলমে দ্বীন  শিক্ষা-দীক্ষায় রত থাকাই দ্বীনের কাজ মনে করা গোমরাহী,  তবে বলতে হবে ইলমে দ্বীনের শিক্ষা-দীক্ষা ও   দ্বীনের কাজ।
তেমনি ভাবে আত্মশুদ্ধি হাসিলের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে মেহনত করাই দ্বীনের কাজ মনে করা গোমরাহী, তবে বলতে হবে আত্মশুদ্ধি হাসিলের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে মেহনত করাও দ্বীনের কাজ ৷
সকলেই যার যার অবস্হানে থেকেই সঠিক পদ্ধতিতে  দ্বীনের কাজ করছেন এতে কোন সন্দেহ নেই ৷ না হয় অন্ধের হাতি দেখার ঘটনার মতই হয়ে যাবে,কারন শুধু মাত্র পাঁ পেট বা কান আর মাথার নাম হাতি নয় বরং এ সব গুলোর সমষ্টির নামই হল হাতি ৷ তদ্রুপ তাবলীগ ,রাজনীতি,জেহাদ ফি সাবিলিল্লাহ , এলমে দ্বীন শিক্ষা ও তাসাউফ এর সমষ্টির নাম হল ইসলাম একটা ছাডা অন্যটি বিকলঙ্গ ৷

এইভাবে যারাই সঠিক পদ্ধতিতে দ্বীনের কাজ করছেন, সবাইকে এক কাজে নিয়ে আসার জন্য বলা বোকামী বৈ কিছু নয় ৷ সবাইকে নিজের মত সঠিক পদ্ধতিতে দ্বীনের কাজ করতে দিন , তবে সবার পদ্ধতিই যেন কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক পদ্ধতি হয় এটি হল বিবেচ্য বিষয় ৷

সুতরাং তাবলীগ জামাতের ভাইরা কেনসশস্ত্র জিহাদে অংশ নেয় না, ইসলামী খিলাফতের জন্য আন্দোলনে রত হয় না? এ প্রশ্নটি করা যেমন অযৌক্তিক, তেমনি সকল হক্কানী মুজাহিদগণ কেন কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ রেখে দাওয়াত ও তাবলীগে এসে যায় না এমন প্রশ্নও অযৌক্তিক।
এমনিভাবে সকল প্রাজ্ঞ গবেষক আলেমকে দাওয়াত ও তাবলীগের চিল্লায় পাঠানোর মানসিকতাও একটি অযৌক্তিক মানসিকতা। যেমন সকল দাওয়াত তাবলীগের সাথিদের মাদরাসায় ভর্তি করে বিজ্ঞ আলেম বানানোর জন্য চেষ্টা করা ও অযৌক্তিক ৷
যাইহোক। সহজ কথা হল, সঠিক পদ্ধতিতে যারাই দ্বীনের কাজ করছেন, সবাই হকের পথে আছেন। সকলের কাজই প্রশংসনীয়। সবার জন্য সব কাজ করা সম্ভব নয়। তবে সবাইকে সবাই সাপোর্ট দিতে হবে। তাহলেই ইসলামের বিজয় সহজ হবে। শক্তি বৃদ্ধি পাবে। অযথা বিতর্ক আমাদের মাঝে বিভক্তির দেয়ালকেই মজবুত করে দিবে যা কখনো কাম্য নয় ৷


(13) তাবলিগ জামাত সম্পর্কে মদিনা ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিদের কর্তৃক প্রস্তুতকৃত  একটি রিপোর্ট


আহ্‌নাফ বিন আলী আহ্‌মাদ

যদিও তাবলীগ জামাতকে হক হিসেবে প্রমান করার জন্য কোন নির্দৃষ্ট রিজনের আলেমদের ফতোয়ায় তেমন কোন প্রভাব ফেলে না তারপরও অনেকের কনফিউশন দূর করার জন্য বলতে পারি নজদের অনেক বড় বড় শায়খগন তাদের কিতাব , পত্র ও প্রতিবেদনে তাবলীগ জামাতের পক্ষ অনেক কথা বলেছেন। আরবের অন্যতম আলেম আবু বকর যাবের আল জাযায়েরি তাবলিগ জামাতের পক্ষে “আলকাউলুল বালীগ ফি জামাতিত্‌ তাবলীগ” নামে সতন্ত্র একটি কিতাব লিখেছেন। সেখানে সে বিরোধীদের অনেক গুলো প্রশ্নের শরঈ জবাব দিয়েছেন। শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায রহঃ তার অনেক পত্রে তাবলিগ জামাতের সাথে বের হওয়ার জন্য অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তার অনেকগুলো পত্র রয়েছে। এছাড়াও আরবের গ্রান্ড মুফতি ইবরাহীম আলে শেখ এ জামাতের অনেক প্রসংশা করে আরবের বিভিন্ন স্থানের আলেমদের কাছে পত্র লিখেছেন যেন সকলে এ জামাতকে সাহায্য করে। এছাড়াও রয়েছে মদিনা ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধী দল কর্তৃক তাবলীগ জামাতের ইজতেমা ও বিভিন্ন কার্য প্রনালি পরিদর্শন পূর্বক একটি প্রতিবেদন যা হরহামেশা বিন বায রাহঃ তার পত্রে উল্লেখ করে থাকেন। আরো অনেক অনেক কথা ।
আজকে আমরা ইনশাল্লাহ  মদিনা ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধী দল কর্তৃক তাবলীগ জামাতের ইজতেমা ও বিভিন্ন কার্য প্রনালি পরিদর্শন পূর্বক যে প্রতিবেদনটি   প্রস্তুত করেছে তা উল্লেখ করবো । আর এটা বলে রাখা দরকার যে শায়খ বিন বায রাহঃ এর কাছে কেউ তাবলীগ জামাত সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করতেন।
প্রতিবেদনটির মূল আরবী পাঠের স্ক্রিন শর্টঃ নীন্মে দেয়া ব্লগ ওয়্যেবসাইটে  ৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি পাবেন সংক্ষেপ করনের লক্ষ্যে এখানে উল্লেখ করলামনা শুধু মাত্র অনুবাদ টুকুই উল্লেখ করলাম ৷


=====
অনুবাদঃ
মদিনা ইউনিভার্সিটির সম্মানিত উস্তাদ
শায়খ মুহাম্মদ আমান জামী ও শায়খ আবদুল করীম সাহেবান
এর বাংলাদেশে তাবলীগ জামাত পরিদর্শন
একটি সমীক্ষা
‘তাবলীগ জামাত’ এর পক্ষ থেকে জামিয়া ইসলামিয়া (মদিনা মুনাওয়ারা) এর কাছে একটি দাওয়াতনামা পাঠানো হয়, তথায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত তাবলীগি জামাতের ইসলামী বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। জামিয়া কর্তৃপক্ষ দাওয়াত গ্রহণ করে এবং অংশগ্রহণের জন্য হাদীস গবেষণা বিভাগ থেকে আমি মুহাম্মদ আমান ইবনে জামীকে শরীয়া বিভাগ থেকে জনাব আবদুল করীম মুরাদকে নির্বাচন করে। আমরা ১০/২/১৩৯৯ হিজরী সোমবারে করাচী যাওয়ার জন্য মদীনামুনাওয়ারার এয়ারপোর্ট ত্যাগ করে ঠিক ৬.৩০ ঘটিকায় জেদ্দা এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। সাথে সাথে জামিয়ার অফিস পরিচালক উস্তাদ, মুসফির যাভাহানীর মাধ্যমে পাকিস্তানএয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করলাম। উস্তাদ মুসফির পূর্বেই এই এয়ারলাইন্সে বুকিংদিয়ে রেখেছিলেন বিধায় অন্ততঃ দশ মিনিট অন্তর আমাদের ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজসম্পন্ন হয়ে গেল । অতঃপর আমরা সফরের জন্য তৌরি হয়ে ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করলাম। একঘন্টা পর ঘোষণা দেওয়া হলো বিমানের টেকনিকাল অসুবিধার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্যযাত্রা বিরতি থাকবে। আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম, এমনকি যোহরের নামাযের সময় হল এবংআমরা বিমান বন্দরেই নামায আদায় করলাম। অতঃপর আমাদের খানা দেওয়া হল এতে বুঝতেপারলাম যাত্রাবিরতী আরো বিলম্ব হবে। অপেক্ষা করতে করতে এশার পর ঘোষনা করা হল ,রাতের এগারোটায় বিমান যাত্রা করবে। অতঃপর নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রা শুরু হল। আমরাবিমানে চড়েই ঘুমিয়ে পড়লাম, করাচীর পাশাপাশি আসার পর ঘুম ভাঙ্গল। সহীহ সালামতেপৌছাতে পারলাম বলে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলাম। ফজরের পূর্বেই আমরা করাচী শহরেপ্রবেশ করলাম। ফজরের নামাজ হোটেলে নিজ রুমে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পরলাহোর যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করলাম যা পূর্বেই প্রোগ্রাম ছিল। পরে স্থিক করেনিলাম যে প্রথমে ঢাকা যাব আসার পথে ইনশাআল্লাহ লাহোর আসব। ১২/২/১৩৯৯ বুধবার ঢাকাযাওয়ার আশায় কাটালাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম জুমাবার ব্যাতিত ঢাকা যাওয়া সম্ভবহবে না। কারণ পাকিস্তান থেকে ঢাকার জন্য সপ্তায় শুধুমাত্র দুইবার বিমান যাত্রাকরে। মঙ্গলবার পাকিস্তান এয়ারলাইন্স এবং জুমাবারে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়াতৃতীয় কণ পন্থা নেই। অতএব আমরা জুমাবারের জন্য সিট বুকিং করুলাম।
জুমাবার আছরের পর বিমানে চড়লাম এবংআলহামদুলিল্লাহ রাতের শেষভাগে ঢাকায় পৌছলাম। করাচী থেকে ঢাকা পৌছতে আমাদের সাড়েতিন ঘণ্টা সময় লাগল। এদিকে আমাদেরকে এবং আমাদের সাথে যারা ইজতেমার জন্য আসছেনসবাইকে স্বাগতম জানানোর জন্য বিমান বন্দরে একটি কমিটি উপস্থিত ছিল, যাতে আমাদেরপূর্বের পরিচিত কিছু পাকিস্তানি ও সুদানী ভায়েরাও ছিলেন। তারা আমাদের জন্য এবংইজতেমায় আগমানকারী সকল মেহমানের জন্য বিশেষ ইমিগ্রেশনের ব্যাবস্থা করলেন। ফলেআমাদেরকে কোন রকমের চেক করা হল না এমনকি আমাদের লাগেস পর্যন্ত খোলা হল না। শুধুরঙ্গিন চকের একটি দাগ দিয়ে কার্য সমাধা করা হল। অথচ আমাদের সাথে আগমনকারী অন্যান্যপ্যাসেঞ্জারের সব মালপত্র কড়াভাবে চেক করা হচ্ছিল। তারপর আমাদেরকে বিমান বন্দরেরপার্শ্বে তাদের একটি মসজিদে নিয়ে গেলেন যেন সকল মেহমানদেরকে তাদের স্ব-স্থানেঅর্থাৎ ইজতিমার পাশাপাশি নির্মিত তাঁবুতে পৌছে দিতে পারে। ফজরের পূর্বে আমাদেরকেনির্দিষ্ট স্থানে পৌছে দেওয়া হল। আযানের পূর্বে আমরা কিছুক্ষণ ঘুমালাম। অতঃপর আযানহল , আমরা পার্শ্ববর্তী মসজিদে ফজরের ফজরের নামায পড়লাম। মসজিদটি ছিলো বড় একটি হল।যা অন্ততঃ দেড় দেড় কিলোমিটার জমিতে বিস্তৃত ছিল। যেন হাজার হাজার লোক একসাথে নামাযআদায় করতে পারে। আর যেন ইজতেমার এই জনসমুদ্র যাকে ১০ লক্ষের কাছাকাছি ধারণা করাহয়েছে, একই সাথে একই ইমামের পিছনে নামাজ পড়তে পারে। নামাজ পড়ার সময় লাউড স্পিকারব্যাবহার করা হল না। বরং মসজিদের বিভিন্ন স্থানে অনেক মুকাব্বির ঠিক করা হলো।এমনিভাবে কোন একটি নামাজী সে ইমাম থেকে যত দূরেই থাকুক না কেন , মুকাব্বিরের আওয়াজশুনতে কোন অসুবিধা হয় না এবং সহজভাবে ইমামের অনুসরণ করতে পারে। তবে বিশেষতঃনামাজের সময় লাউড স্পীকার ব্যবহার করা হয় না কেন? তার কারণ আমি জানতে পারি নাই।অথচ তাঁরা বক্তৃতা , বিবৃতির সময় ঘোষণা ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। তবে এত সুন্দর নিয়মে এত ভাল এন্তেজাম কিভাবে করতে পারলেন তা বলতে গেলে মানুষ আশ্চর্যান্বিত নাহয়ে পারে না। কারণ মসজিদ এবং মেহমানদের জন্য ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে একেবারে হালকানির্মান সরঞ্জাম দিয়ে। তা ব্যবহার করা হয় তারপর ইজতেমা শেষে মালিকের কাছে পৌছেদেওয়া হয় অথচ তখনও তা বিক্রি উপযোগী থাকে। এ সকল সরঞ্জামে বাশ , রশি , কাঠ ইত্যাদিথাকে। তথায় পেরেক ব্যাবহার করা হয় নাই যেন সরঞ্জাম নষ্ট না হয়। কারণ তা বিভিন্নব্যাবসায়ী ও বিভিন্ন কারখানা মালিকের পক্ষ থেকে কল্যানমূলক কাজে দান সাহায্যহিসেবে দেওয়া হয়েছে। আবার এরাই তা তৈরি করেছে। পরে যখন ইজতিমা শেষ হয়ে যায় তখনএরাই আবার তা খুলে ফেলে অতি সহজভাবে, যেমন সহজভাবে তারা তৈরি করেছিল। এটা একপ্রকারঅতি আশ্চার্যান্বিত মসজিদ সেই ইসলামী পরিবেশে যা শান্তি, স্তিতিশীলতা ওঅনুনয়-বিনয়তার প্রতিক।
নামাযের পর মুসল্লিগণ মসজিদে বিভিন্ন স্থানে মজলিসে বসে পড়লেন। এটা দেখে মনে হল যেন মুসলমানদের প্রথম কালের মসজি দ্গুলোর মত। যখন মসজিদ থেকে শুধু নামায ও অন্য ইবাদত উদ্দেশ্যহত, পারস্পারিক গর্ব প্রদর্শ্নবা নির্মাণ প্রতিযোগিতা উদ্দেশ্য গত না, আল্লহুল মুসতাআন। মশিদের বিভক্ত জামাতগুলো পারস্পারিক মুখস্থ কোরআন মজীদ শুনাতে লেগে গেলেন,তিলাওয়াতটি ছিল ছোট ছোয় সূরায় সমৃদ্ধ,যা প্রায় সকল মুসল্লীদের মুখস্থ থাকে। সুর্যোদয়পর্যন্ত এই তিলাওয়াত চালু ছিল। তারপর নাস্তার সময় হল। নাস্তার পরপর সেমিনার তথা ধর্মীয় বক্তৃতা শুরু হয়। সেই দিন ১৫/২/১৩৯৯ হিজরী তারিখ শনিবারচাসতের সময় আমরা সেই মসহিদে এক জামাতের সাথে শায়খ ঊম্র (পালনপুরীর)বয়ানে উপস্থিত হলাম। তিনি আরবীতেবয়ান করছিলেন। আর দে বয়ানটি ছিল বিশেষভাবে আরব্দের জন্য। তাঁর বক্তৃতাটিছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী। এতে তিনি জামাতের কর্মততপরতা সম্পর্কে বিভিন্ন দাওয়াত দানের ধরণ, বেরহওয়ার উদ্দেশ্য ইত্যাদি বর্ণ্না করলেন। সারসংক্ষেপকথা ছিল এই যে, ‘খুরুজে’র উদ্দেশ্য আহবানকারী এবং আমন্ত্রিত ব্যক্তিবরগেরপরিবেশ পরিবর্তন করা। কারণ যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হন তাঁরা সবাইদায়ী থাকেন না বরং অধিকাংশরা এমন যে তাদেরকে সংস্কার করা,ইস্লাম ও ইস্লামের সাথে ভালবাসারপ্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং ধর্মীয় যে সকল বিষয়ে তারা অজ্ঞ , সেবিষয়ে তাদেরকে জ্ঞাত করাই উদ্দেশ্যে হয়। বারংবারেরঅভিজ্ঞতা একথা প্রমান করেছে যে, উক্ত উদ্দেশ্য পূরণ তখনই সম্ভব হয় যখন মানুষ জীবনের বিভিন্ন কার্যাদি চিন্তাভাবনাছেড়ে বের হয়ে পড়ে এবং সংস্কারমুখী কোন ভাল পরিবেশে প্রত্যবর্তন করে । শায়খ উমরেরবক্তৃতার পর ঘোষণা দেওয়া হল যে, আরবরা জোহরের পর সাধারণ স্টেইজে উপস্থিত হবেন। আমাদের মধ্যেএকজনকে বয়ান করতে বলা হল। আমরাও দাওয়াত কবুল করলাম এবং জোহ্রের নামাজেরপর আমি বয়ান করলাম। সাথে সাথে কয়েক ভাষায় অনুবাদ করা হল। অতঃপর রবিবার১৬/২/১৩৯৯ হিজ্রী নামাজের পর একটি একটি বয়ান শুনতাম যা উর্দু থেকে আরবীতে অনুবাদকরে শুনা হত। শায়খ আব্দুল করীম মুরাদ নির্দিষ্ট সময়ে বয়ানকরলেন। তাওহীদে ইবাদত, ছালেহীনের সম্মানে সীমালংঘন এবংতাদের কবরে ঘর নির্মান ইত্যাদি থেকে সতর্ক্করন ইত্যদি ছিল তাঁর বয়ানের বিষয় । তবে এক্সহনিবারেরবয়ান ছিল সাধারণ বিষ্যে , বিশেষতঃ কালিমায়ে তাওহীদকে বাস্তবায়ন করার ব্যপারে। ইজতেমার স্থানছিল সাজধানী থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে । বাস্তবতঃ এ কারণেই তারা নামাজ আদায় করতে বরংইজতেমা চলাকালীন মসজিদে বিদ্যমান থাকতে সক্ষম হয়েছেন । তবে আমরাএবগ আমাদের মত অন্য জারা দেরিতে পৌছেছে তারা ইজতেমার পুর্বে ও পরে রাজধানীতেজেতে পারেনি। আমরা ইজতেমাশেষ হওয়ার সাথে সাথে মঙ্গলবারে অতিসত্বর পাকিস্তান অবিমুখে রয়্যানা দিলাম, সেখানে আমাদের বিশেষ সাক্ষাতেরপ্রগ্রাম ছিল । অন্য লোকেরা আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দান উদ্দেসশ্যেবের হয়ে গেলেন। তারা প্রত্যেক বক্তৃতার পর বিভিন্ন জামাত ফাশকীলদিতেন । মঙ্গল্বারের দিনয়ি ছিল দ্যীদেরকে দাওয়াত সম্পর্কেবিশেষ নসীহত ও নির্দেশ্না দান এবং বিদাআয় দেওয়ার দিন। এই দিনে সবখুশী কান্নায় পরিণত হল, যা তাদের আল্লাহর ওয়াস্তে পারস্পারিক ভালবাসা, আল্লাহর প্রেমেআত্তোতসর্গ করা, আল্লাহর প্রতি আহবানের জন্য সব ছেড়ে ফারেগহওয়া এবং এক আল্লহর সাথে তাঁর বান্দাদের আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপনের জলন্ত প্রমান বহনকরে । বাস্তবে এটিই হল তাবলিগের সেমিনার সেমিনারসমূহ, তাদের কথাবার্তা,তাদের আচার আচরণ বা চাল চরিত্র এবং তদের বিভিন্ন ত্যগ তিতিক্ষার সারসংক্ষেপ। কিন্তু যারা এই জামাতকে ভালভাবে চিনতে পারেনি, অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তাঁদেরবাস্তব সত্যকে এড়িয়ে চলতে চায় তাদের কথা ভিন্ন হবে বয়কি।
একথা স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া উচিত মনে করি যে, এরা (তাবলীগি ভাইয়েরা) অন্যান্য দাওয়াতী দল অপেক্ষা অধিক সৌভাগ্যবান । কারন এরা যে অমুল্য ধনের অধিকারী তা অন্যদের কাছে দেখা যায় না, তা হল যাদেরকে এরা হিদায়েত ও আত্তসুদ্ধির পথে আনতে চান , তাঁদের সাথে ধৈর্য ,ভাল ব্যবহারএবং তাঁদের সুন্দর পরিচালনা, ধর্ম অনুরাগী, জ্ঞানপিপাসু ও আত্নশুদ্ধি উৎসাহীলোকজনের জন্য এদের ধৈর্যের মত । আল্লাহতায়ালা এদের সিংহভাগ হচ্ছে আমাদের ইউরোপ, আমেরিকাতে পাঠাই কিন্তু তাঁদের কোন প্রকারের অভিভাবকত্ব ও তত্বাবধায়ন ব্যতীততাদেরকে নিজের হালে ছেড়ে দেই । এই জামাতে তাব্লীগের বদৌলতে আল্লাহপাক এসকল যুবকের অনেককে হিদায়াত দান করেছেন এবং পরিবেশের প্রভাবে ধর্মদ্রোহী হওয়া থেকে রক্ষাকরেছেন । আমার কাছে এরূপ অনেক অবিজ্ঞতা ও অনেক কাহিনী রয়েছে যা বলতে গেলে দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন ।
একথা স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া উচিত মনে করি যে, এরা (তাবলীগি ভাইয়েরা) অন্যান্য দাওয়াতী দল অপেক্ষা অধিকসৌভাগ্যবান । কারন এরা যে অমুল্য ধনের অধিকারী তা অন্যদের কাছে দেখা যায় না, তা হলযাদেরকে এরা হিদায়েত ও আত্তসুদ্ধির পথে আনতে চান , তাঁদের সাথে ধৈর্য ,ভাল ব্যবহারএবং তাঁদের সুন্দর পরিচালনা, ধর্ম অনুরাগী, জ্ঞানপিপাসু ও আত্নশুদ্ধি উৎসাহীলোকজনের জন্য এদের ধৈর্যের মত । আল্লাহতায়ালা এদের সিংহভাগ হচ্ছে আমাদেরইউরোপ,আমেরিকাতে পাঠাই কিন্তু তাঁদের কোন প্রকারের অভিভাবকত্ব ও তত্বাবধায়ন ব্যতীততাদেরকে নিজের হালে ছেড়ে দেই । এই জামাতে তাব্লীগের বদৌলতে আল্লাহপাক এসকল যুবকেরঅনেককে হিদায়াত দান করেছেন এবং পরিবেশের প্রভাবে ধর্মদ্রোহী হওয়া থেকে রক্ষাকরেছেন । আমার কাছে এরূপ অনেক অবিজ্ঞতা ও অনেক কাহিনী রয়েছে যা বলতে গেলে দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন ।
 একটি ছোট্ট কাহিনী
উদাহরণস্বরূপ রিয়াদবাসীদের এক যুবকের ছোত একটি কাহিনী বলছি। যুবকটি আমেরিকারএকটি জামাতের সহিত ঢাকার ইজতেমায় উপস্থিত হয়েছিল। সে আমেরিকার জাহেলী চাল-চলনেহাবুডুবু খাচ্ছিল, পরে আল্লাহপাক তাকে এই জামাতের বদৌলতে তা থেকে নাজাত দিয়েছেন ।দে আমার কাছে ওমরা করার আশা প্রকাশ করল, হয়ত উমরা তাঁর পাপ মোচন করবে এবং তাঁরথেকে জাহেলিয়্যাত দূর করবে। আমি তাকে উতসাহিত করলাম  । তাওবার ফযীলত ও গুরুত্ব্ব বর্ননা করলাম ।আর  তাওবার কারনে , পুর্বের পাপ মোচন হওয়ারকথা বললাম। সে লজ্জাবোধ করত। বলল, ‘হে ভাই মুহাম্মদ! আমি ওমরাতো করতে চাই কিন্তুওম্রার নিয়ম-কানুন জানি না। কোথায় কি করব, মক্কায় পৌঁছার পর কি করতে হবে তা আমারজানা নেই। কারন আমেরিকা জাওয়ার পর হাই স্কুলে যা পড়ে ছিলাম সব ভুলে গেছি । তাঁরকথেয়ায় মর্মাহত হলাম। তাকে বললাম, তাহলে একটু নির্জনে চল, আমি তমাকে ওমরার কাহসমুহবলে দিব, সে বলল, অনুগ্রহপুর্বক আপনি কি আমাকে একটু ক্যাসেট করে দিবেন কি? আমিবললাম , যদি আপনার কাছে ক্যাসেট  আররেকর্ডার থাকে তাহলে আমার কোন অবিযোগ নেই । সে একটি রেকর্ডার নিয়ে আসল। আমি তাঁরজন্য ওমরার আ’মাল এবং এবং হজ্জের আমাল সংক্ষিপ্তভাবে রেকর্ড করে দিলাম। তারপর আমিতাকে মসজিদে নববী এবং জামিয়া ইসলামিয়া পরিদর্শ্ন করার জন্য উৎসাহিত করলাম যেনজামিয়ার পক্ষ থেকে তাকে উপকারী বি-পুস্তক দেওয়া যেতে পারে । দি কাহিনী এবং এরপুর্বের কথাসমুহ বলে আমার উদ্দেশ্য হল একথাই স্পস্টভাবে বলা যে, তাব্লীগ জামাতেরমেহনতের ফল অনেক। যা বর্ননা করার জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। দ্বীনের প্রতিআহবানকারী অন্যান্য জামাতের কাহ এত ফল্প্রসু নইয় । এটি এমন এক সত্য কথা যাকেঅস্বীকার করা শত্রু বন্ধু কার পক্ষে সম্বব হবে না ।
এর রহস্য হল, আল্লাহর দিকে আহবান এবং মানুসদেরকে সতপথে আনার জন্য চেষ্টাকরাকে এই জামাতের লোকেরা ইহকালীন জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য বলে ধরে নিয়েছেন এবং তারাদাওয়াতকে বাম হাতে ধরে ডান হাতে দাওয়াতের নামে টাকা কামাই করার পক্ষপাতি নয় বরংউভয় হাত দ্বারা দাওয়াতকে ধরেছে। অতঃপর একের কাছে লোকজনের মুখ থেকে প্রশংসাবানীকুড়ানোর কোন মোহ পরিলক্ষিত হয় না বরং একের কাছে প্রশংসা ও নিন্দা উভয় সমান।  সুতরাং জীবন এলের কাছে অনেক সস্তা ও সহজ ।এটুকু ইঙ্গিত আমি যথেষ্ট মনে করলাম । কারন ব্যপারটি স্পষ্ট ,আর আমি যেরূপ পুর্বেবলেছি, তাবলীগ জামাতের দাওয়াতের গভীর প্রভাব ও স্পষ্ট । আর কর্মীদের কর্মীদেরমর্মসফলতার প্রমান তাঁদের কর্মই।
আমরা এই দাওয়াত পুর্ন পরিবেশে তিন দিন অতিবাহিত করলাম এবং জেদ্দাউ চলে আসারজন্য রবিবারের বিমানে (২৩/২/১৩৯৯হিজরী) বুকিং দিলাম। তবে এর মধ্যে আমাদের একজনলাহোর থেকে ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত হল। সে বুধবার ১৯/২/১৩৯৯ হিজ্রী তারিখে লাহোররওয়ানা হল, কিন্তু বিবিন্ন কারনে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে পারল না । বরং সে সোমবার২৪/২/১৩৯৯ হিজরী পারল না । বরং সে সোম্বার ২৪/২/১৩৯৯  হিজরী বুধবারে সম্পন্ন হল।
বিঃ দ্রঃ- উল্লেখ্য যে, তাবলিগ জামাতের বিশেষ কোন সরকারী নাম নেই কিন্তু লোকেরা তাদেরকে উক্ত নামে স্মরণ করে যা বাস্তবে তাঁদের দাওয়াত ও আমল অর্থাৎ তাবলীগও তাযকীরের উপর প্রমান বহন করে।
আর একথা লক্ষ্য করা যায় যে , দাওয়াত, তানযীমের প্রশিক্ষণ এবং বারংবারেরমজলিস সমুহে উপস্থিতি ইত্যাদি তাদেরকে তাঁদের কাজের মধ্যে সুবিন্যস্ততা অর্জন করেদিয়েছে । সুতরাং যে কোন কাজ তারা নির্দ্ধিধায় এবং বিরক্তিহীনভাবে আঞ্জাম দিয়েথাকেন। তাই বলি , অনেক বড় বাজেটের প্রয়োজন হবে এবং অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে, এরূপবড় একটি ইজতেমা এরা বিনা কষ্টে এবং উল্লেখযোগ্য কোন খরচ ব্যতীত করে ফেলতে পারে ।এত বড় ইজতেমায় বিভিন্ন স্থান থেকে , আগত মেহমান্দের মেহমানী  ব্যতীত অন্য কোন খাতে তাঁদের বেশি খরচ হয় না ।জামাতের প্রতিটি ব্যক্তি ইজতেমার জন্য নিজেকে নিজে দায়িত্বশীল মনে করে । প্রত্যেকেদায়িত্বের সহিত যার যে কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে । সবাই সাধ্যমতে সহযোগিতা করে এবংনিজেই ইজতেমার কাজে শরীক হয়।, প্রত্যেকেই খেদমত নেওয়ার স্থানে খেদমত করতে চান ।এতে করে এদের পারস্পারিক মায়া মমতা বেড়ে যায় ।
প্রস্তাবাদী
তাবলীগ জামাত এবংতাদের বহুমুখী ইসলামী কার্যকলাপ যা তাঁদের মহান স্পষ্ট সফলতা থেকে বুঝা যায়, যারকিঞ্চিত আমি বর্ননা করেছি এবং যা শত্রু ও বন্ধু সবাই এক চোখে দেখে । এসবের আমি যেবিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছি তারপর আমি কিছু প্রস্তাব পেশ করতে চাই। তা হলো এই-
(১)জামাতের সহিত সত্য ও কার্যকরি এবংপ্রভাবান্বিত ও প্রভাব বিস্তারকারী সহযোগীতা করা।
(২)আমাদের ছাত্রদেরমাঝেও যেন জামাতের কর্মতৎপরতা চালু করা হয়, যাতে করে তারা উপকৃত হবে এবং অন্যেরউপকার করবে। আমাদের ছাত্ররা এরূপ তৎপরতা এবং এই মবারক দাওয়াতের বেশি মুখাপেক্ষি।
(৩) জামিয়া ইসলামিয়াযেন জামাতের সভা মজলিস এবং সাক্ষাত ও সেমিনারসমূহে বেশি বেশি  অংশগ্রহণ করে, যাতে শিক্ষাবোর্ডের মেম্বারগণ ওছাত্ররাও থাকে।
পরিশেষে আল্লাহরকাছে প্রার্থনা করি যেন, আমাদের কার্যসমূহ খালেছ তাঁর জন্য তিনি কবুল করেন এবংআমাদের লোক দেখানো ও প্রসিদ্ধ লাভের মোহ থেকে অনেক দূরে রাখেন, তিনি উত্তমপ্রার্থনা গ্রহণকারী।
বিনীত
মুহাম্মাদ আমান ইবনে আলি আলজামী
প্রধান, হাদিস ও ইসলামি গবেষণা বিভাগ
জামিয়া ইসলামিয়া , মদিনা মুনাওয়ারা
অনুবাদ শেষ হল।
সূত্র:-
(14) জমাতে তাবলীগ সমপর্কে সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি শেখ বিন বায রঃ এর পত্র /অভিমত
পত্রটির  হুবহু অনুবাদঃ সৌদআরবেরসাবেকপ্রধানমুফতিহযরত আল্লামা .                                                                                               আবদুল আজীজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বায এর পত্র .                                                                                               শায়খ ফালেহ বিন নাফে আল্‌ হারবীর প্রতি .
নং  ৮৮৮৯/খ, তারিখ ১২/৮/১৪০৬ হিজরী

আবদুল আজীজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বায এরপক্ষ থেকে সম্মানিত ভাই শায়খ ফালেহ বিন নাফে আল হারবীর প্রতি। আল্লাহপাক আপনাকে ধর্মীয় বিষয়ে প্রজ্ঞা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে হৃদয়ের উম্মাদনা দান করুন-আমিন।সালামুন আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।

পরবার্তা এই যে, গত ২৬/৭/১৪০৬ হিজরী তারিখে প্রেরিত আপনার পত্র আমার হস্তগত হয়েছে। পত্রের বিষয়বস্তু অর্থাৎ তাবলীগ জামাত সম্পর্কে আপনার বিরূপ ধারণা এবং তাদের সম্পর্কে আমার লিখিত মতামত এবং আমার পূর্বে আমাদের উস্তাদ সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতী শায়খ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আলে শায়খ(রাহঃ) এর মতামতের প্রতি আপনার নিন্দা প্রকাশ ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। দুইটি বিষয়ই আমার কাছে অত্যন্ত নিন্দিত মনে হয়েছে। তা হল প্রথমতঃ আমাদের উস্তাদের প্রতি আপনার এরূপ অসম্মান সূচক ব্যাবহার, দ্বিতীয়তঃ আপনি কতিপয় ব্যাক্তিবর্গের নাম উল্লেখ করেছেন যে, তারা নাকি আমাদের উস্তাদের সাথে একমত নন।

আপনার লেখা পড়ে আমি আশ্চর্য হই যে, কোথায় এসকল কথিত আলেম-ওলামা আর কোথায় আমার মুহতারাম উস্তাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা,জ্ঞানের প্রসরতা, ধীরস্থতা ও বুদ্ধিমত্তা? আমরা আলহামদুলিল্লাহ নিজের ধর্মসম্পর্কে জ্ঞান রাখি, প্রথমে লাভ-লোকসান খতিয়ে দেখি তারপর যার উপর হৃদয় সুনিশ্চিতহয় তাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। অনেক খোঁজ-খবর নেওয়ার পর বর্তমানে আমরা এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত যে, আমাদেরকে তাবলীগ জামাতের পার্শ্বে দাড়াতে হবে। সাথে সাথে তাদের মধ্যে কারো কারো কাছে যে ঘাটতি রয়েছে সেজন্য তাকে বুঝাতে হবে। আর ভূল হওয়া মানুষের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা হেফাযত রাখেন তাদের কথা ভিন্ন।

আপনার পত্রে উল্লেখিত আমার আলেম ভাইগণ ও ছাত্র সমাজ যদি তাবলীগি ভাইদের মিলেমিশে দাওয়াতের কাজে যোগদান করতেন এবং তাঁদের ধারণা মতে তাবলীগি ভাইদের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করতেন এবং তাদের ভূল ভ্রান্তি চিহ্নিত করে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতেন তাহলে এর দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানের অনেক উপকার হত। পক্ষান্তরে তাদের ঘৃনা করা,তাদের থেকে দূরে থাকা, লোকজনকে তাঁদের সাথে মেলামেশা থেকে বিরত রাখা মস্তবড় ভূল।এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশংকাই বেশী।

আপনি নিজের মনগড়া মতবাদ ছেড়ে আল্লাহর প্রতি প্রার্থনা করুন যেন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে তাঁর পছন্দনীয় বান্দাদের উপকারী বিষয়াদি বুঝার তৌফিক দান করেন। আর যেন উম্মতের মতবিরোধের বিষয়ে সত্যের সন্ধান দান করেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি আমাদেরকে সত্যকে সত্য বুঝে তা অনুসরণ করার তাওফিক দেন। আর যেন মিথ্যাকে আমাদের সামনে অস্পষ্ট না রাখেন। তিনিই সর্বশক্তিমান।

প্রধান পরিচালক
ইসলামী গবেষণা ও ফতওয়া অধিদপ্তর।

বিঃদ্রঃ আপনি শায়খ মুহাম্মদ আমান সম্পর্কে বলেছেন যে, “উনি তাবলীগ জামাতের সুনাম করা ছেড়ে দিয়েছেন এবং এখন তিনি তাদেরকে বেদাতী বা অপসংস্কারক মনে করেন।” তিনি আপনার এ কথাকে অস্বীকার করেছেন এবং এ কথা শুনে খুবই আশ্চর্য হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তাবলীগ জামাত সম্পর্কে তিনি স্বচক্ষে পরিদর্শন করে যে মত ব্যাক্ত করেছিলেন বর্তমানেও তার উপর অটল আছেন।

অনুবাদ শেষ হল। 
সূত্র:-
 ১৫   তাবলীগি ভাইদের জন্য মসজিদে থাকা খাওয়া ও ঘুমানো কি জায়েয ?
===================================================
আসলে আমরা শরিয়তের অনেক কিছু না জেনেও মুখরোচক অনেক কথা বলে ফেলি তা কখনোই ঠিক না ৷ সর্ব প্রথম এক কথায়  বলব তাবলীগি ভাই বা অন্যন্যদের জন্য,চাই সে মুক্বীম বা মুসাফির ইউক  মসজিদে থাকা খাওয়া ও ঘুমানো জায়েয ৷এ জন্য ৯টি হাদিস ৭জন তাবেয়ী সহ  স্বনামধন্য  চার মাযহাবের ইমামদ্বয়ের মতামত পেশ করবো ইনশাআল্লাহ ৷
তাই দয়া করে নিচের হাদিসগুলোর দিকে খেয়াল করুন: 
 ইমাম বুখারী রঃ বোখারী শরীফের  অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন بَاب نَوْمِ الرِّجَالِ فِي الْمَسْجِدِ অর্থাৎ ‘পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয’। এ অধ্যায়ে দলিল হিসেবে তিনটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১. সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজের সম্পর্কে বলেন
عَبْدُ اللَّهِ، " أَنَّهُ كَانَ يَنَامُ وَهُوَ شَابٌّ أَعْزَبُ لَا أَهْلَ لَهُ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ . ولفظ ابن ابى شيبة-كنا ونحن شباب نبيت في عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد ونقيل. وهكذا لفظ الترمذى.
তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না। তখন তিনি মসজিদে নববীতেই (রাতে ও দিনে) ঘুমাতেন। (সহীহ বুখারী,) জামে তিরমিযী (তিরমিযী শরীফ) ও ইবনে আবীশাইবার বর্ণনায় বক্তব্যটি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে ‘আমারা একদল যুবক রাতে ও দিনে মসজিদে শয়ন করতাম’। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫ হি.) বলেন وهو جواز النوم في المسجد لغير الغريب ... এতে স্থানীয় লোকদের জন্যও (যারা মুসাফির নয়) মসজিদে ঘুমানো জায়েয বলে প্রমাণিত হয়। (উমদাতুল কারী)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ.৮৫২ হি.) বলেন قوله: "باب نوم الرجال في المسجد" أي جواز ذلك، وهو قول الجمهور، অর্থাৎ পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয। এটাই অধিকাংশের মত। (ফাতহুল বারী)
ইমাম বুখারী রহ.  সহীহ বুখারীতে আরওএকটি অধ্যায় রচনা করেছেন  “باب نَوْمِ الْمَرْأَةِ فِي الْمَسْجِدِ ‘মহিলাদের জন্য মসজিদে ঘুমানো । এ অধ্যায়ে দলীল হিসেবে বর্ণনা করেন:-
عَنْ عَائِشَةَ "أَنَّ وَلِيدَةً كَانَتْ سَوْدَاءَ لِحَيٍّ مِنْ ...فَجَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ فَكَانَ لَهَا خِبَاءٌ فِي الْمَسْجِدِ أَوْ حِفْشٌ قَالَتْ فَكَانَتْ تَأْتِينِي فَتَحَدَّثُ عِنْدِي قَالَتْ فَلاَ تَجْلِسُ عِنْدِي مَجْلِسًا إِلاَّ قَالَتْ: وَيَوْمَ الْوِشَاحِ مِنْ تعَاجِيبِ رَبِّنَا ... أَلاَ إِنَّهُ مِنْ بَلْدَةِ الْكُفْرِ أَنْجَانِي
একটি বাদীর ঘটনা। ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হযরত আয়শা রা.। তিনি বলেন মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর থাকার জন্য মসজিদে একটি তাবু খাটানো হল। (সহীহ বুখারী হা. নং ৪৪৯, ই:ফা:)
এ হাদীসে ব্যাখ্যায় ‘হানাফী’ ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা আইনী রহ. বলেন: قال ابن بطال فيه أن من لم يكن له مسكن ولا مكان مبيت يباح له المبيت في المسجد سواء كان رجلا أو امرأة ইবনে বত্তাল রহ. বলেছেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায় রাত যাপনের স্থান নেই এমন যে কোন নারী-পুরুষের জন্য মসজিদে থাকা জয়েয। (উমদাতুল কারী বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ)
২. হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমার ঘরে এসে আলীকে (রা.) পাননি। জিজ্ঞেস করলেন আলী কোথায়? ফাতেমা বললেন, আমাদের দু’জনে মধ্যে কিছু রাগারাগি হয়েছে। ফলে তিনি রাগ করে এখানে বাইরে চলে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে বললেন তাকে একটু খুঁজে দেখ কোথায়। লোকটি এসে জানাল, আলী রাঃ মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন। শরীর এক পাশ থেকে চাদর পড়ে গেছে। আর গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গায়ের বালি ঝেড়ে দিচ্ছেন আর বলছেন ‘আবু তোরাব উঠ উঠ। (সহীহ বুখারী)
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আইনী রহ. বলেন
فيه إباحة النوم في المسجد لغير الفقراء ولغير الغريب وكذا القيلولة في المسجد فإن عليا لم يقل عند فاطمة رضي الله تعالى عنها ونام في المسجد وفي كتاب المساجد لأبي نعيم من حديث بشر بن جبلة عن أبي الحسن عن عمرو بن دينار عن نافع بن جبير بن مطعم عن أبيه يرفعه لا تمنعوا القائلة في المسجد مقيما ولا ضيفا.
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় ঘর-বাড়িহীন দরিদ্র ও ভীনদেশী মুসাফির ছাড়া স্থানীয়দের জন্যও মসজিদে ঘুমানো জায়েয। অনুরূপ মসজিদে কাইলূলা (দিবসকালীন বিশ্রাম) করাও জায়েয। কারণ (জায়েয বলেই) হযরত আলী (রা.) ফাতেমা রা. এর ঘরে বিশ্রাম না করে মসজিদে গিয়ে ঘুমালেন। ইমাম আবু নু‘আইম ইসফাহানী রহ. ‘কিতাবুল মাসাজিদে’হযরত জুবাইর ইবনে মুতইম (রা) থেকে বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন মেহমান বা স্থানীয় যে কেউ মসজিদে বিশ্রাম নিতে আসলে তাকে বাধা দিও না। (উমদাতুল কারী)
৩. তৃতীয় বর্ণনায় আহলে ছুফ্ফার বিবরণ তুলে ধরেছেন। তাঁরা মসজিদে নববীতেই রাত দিন থাকতেন। এ অধ্যায়ে উল্লিখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে রজব রহ. (মৃ.৭৯৫ হি.) বলেন وليس المقصود من ذلك في هذا الباب إلا نومهم في المسجد ولا شك في أن أهل الصفة كانوا ينامون في المسجد ، لم يكن لهم مأوى بالليل والنهار غير الصفة ، এখানে এ হাদীস বর্ণনা করার উদ্দেশ্য আহলে ছুফ্ফার মসজিদে ঘুমানোর কথা তুলে ধরা। সন্দেহ নেই আহলে ছুফ্ফা মসজিদেই ঘুমাতেন। রাত দিনে তাদের ঘুমানোর আর কোন স্থান ছিল না।
ইবনে সা‘দ রহ. (মৃ.২৩০ হি.) বর্ণনা করেন عن يزيد بن عبد الله بن قسيط ، قال : كان أهل الصفة ناسا فقراء من أصحاب رسول الله لا منازل لهم ، فكانوا ينامون على عهد رسول الله في المسجد ويظلون فيه ، ما لهم مأوى غيره ،..ذكره ابن رجب فى فتح البارى له আহ্লে ছুফ্ফা ছিলেন রাসূলের একদল দরিদ্র সাহাবী। তাদের কোন বাড়ি ঘর ছিল না। তাঁরা মসজিদেই ঘুমাতেন, মসজিদেই থাকতেন। এছাড়া তাদের আর কোন আশ্রয় ছিল না। (তাবাকাতুল কুবরা ইবনে সাদ, ফাতহুল বারী ইবনে রাজব)
এ সংক্রান্ত আরো কয়েকটি হাদীস ৪. সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী রা. বলেন
" أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ مُسْتَلْقِيًا فِي الْمَسْجِدِ وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। (সহীহ বুখারী)
৫. হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন,
أَنَّ أَبَا ذَرٍّ الْغِفَارِيَّ كَانَ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه و سلم فَإِذَا فَرَغَ مِنْ خِدْمَتِهِ، آوَى إِلَى الْمَسْجِدِ، فَكَانَ هُوَ بَيْتُهُ، يَضْطَجِعُ فِيهِ، فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم الْمَسْجِدَ لَيْلَةً، فَوَجَدَ أَبَا ذَرٍّ نَائِمًا مُنْجَدِلًا فِي الْمَسْجِدِ، فَنَكَتَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم بِرِجْلِهِ حَتَّى اسْتَوَى جَالِسًا، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم :" أَلَا أَرَاكَ نَائِمًا؟ "، قَالَ أَبُو ذَرٍّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَأَيْنَ أَنَامُ، هَلْ لِي مِنْ بَيْتٍ غَيْرُهُ؟،. قال فى المجمع: رواه أحمد والطبراني وروى بعضه في الكبير وفيه شهر بن حوشب وفيه كلام وقد وثق
হযরত আবুযর রা. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করতেন। ফারেগ হলেই মসজিদে চলে যেতেন। মসজিদই ছিল তাঁর ঘর। এখানেই ঘুমাতেন। একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেন আবুজর মসজিদে শুয়ে আছেন। তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন। আবুযর রা. উঠে বসলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন তুমি এখানে ঘুমিয়ে কেন? আবুযর বললেন হে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আর ?! এ ছাড়াকি আমার আর কোন ঘর আছে? (মুসনাদে আহমদ হা.২৬৯২৮ মাজমাউযযাওয়াইদ হা. ২০২৩)
৬ অন্য বর্ণনায় রয়েছে
أنه كان يخدم النبي صلى الله عليه و سلم فإذا فرغ من خدمته أتى المسجد فاضطجع فيه.رواه الطبراني في الأوسط وفيه شهر وفيه كلام وقد وثق
তিনি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করতেন। যখনই অবসর হতেন, মসজিদে এসে শুয়ে আরাম করতেন। (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানী। মাজমাউযযাওয়াইদ হা. ২০২৪)
মোট কথা হযরত আবুযর রা. এর থাকার মত কোন ঘরই ছিল না। তিনি সব সময়ই মসজিদে থাকতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিনই তাঁকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি।
৭ বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে, সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী রা. বলেন
" أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ مُسْتَلْقِيًا فِي الْمَسْجِدِ وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى " وَعَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، قَالَ: كَانَ عُمَرُ وَعُثْمَانُ يَفْعَلَانِ ذَلِكَ.
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন হযরত উমর ও উসমান রা. ও এভাবে মসজিদে ঘুমাতেন। (সহীহ বুখারী)
৮ হযরত হাসান বছরী (মৃত. ১১০ হি.) রা. বলেন
قال رأيت عثمان بن عفان نائما فيه ليس حوله أحد وهو أمير المؤمنين قال وقد نام في المسجد جماعة من السلف ...
আমি হযরত উসমান (রা)কে দেখেছি মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। তাঁর পাশে কেউ নেই। অথচ তখন তিনি আমীরুল মুমিনীন। হযরত হাসান আরো বলেন সাহাবা তাবেয়ীদের অনেকেই মসজিদে ঘুমাতেন। (তাবারী, উমদাতুল কারী)
৯ ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন হারেছ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় মসজিদে রুটি ও গোশত খেতাম’। (ইবনু মাজাহ, সনদ হাসান, হা/৩৩০০, ‘খাদ্য’ অধ্যায়
===
এ বিষয়ে ৭ জন  তাবেয়ীর  মতামত তুলে ধরছি আশা আরও ষ্পষ্ট হয়ে যাবে 
۱. عن الحارث بن عبد الرحمن قال سألت سليمان بن يسار عن النوم في المسجد فقال كيف تسألون عن هذا وقد كان أهل الصفة ينامون فيه ويصلون فيه -হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেন, হযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম মসজিদে ঘুমানোর বিধান কী? তিনি উত্তরে বললেন তোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন কর? আহলে ছুফ্ফাতো মসজিদেই থাকতেন, মসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফ্ফার মসজিদে ঘুমানোটাই এর দলীল। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১১)
٢. عن يونس قال رأيت بن سيرين ينام في المسجد -হযরত ইউনুস রহ. বলেন আমি তাবেয়ী ইবনে সীরীনকে মসজিদে ঘুমাতে দেখেছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা )
٣. عن الحسن قال كان له مسجد يصلي فيه وينام فيه -বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহ. এর একটি মসজিদ ছিল। তিনি তাতে নামাজও পড়তেন, ঘুমাতেনও। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৩)
٤. عن بن جريج قال قلت لعطاء أتكره النوم في المسجد قال بل أحبه -ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন আমি হযরত আতা রা. কে জিজ্ঞেস করলাম মসজিদে ঘুমানোকে কি আপনি অপসন্দ করেন? বললেন না, বরং মসজিদে ঘুমানোকে আমি পসন্দ করি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৭)
٥. سعيد بن المسيب إنه سئل عن النوم في المسجد فقال أين كان أهل الصفة يعني ينامون فيه -হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিবকে জিজ্ঞেস করা হল মসজিদে ঘুমানো জায়েয আছে কী? তিনি উত্তরে বললেন আহলে ছুফ্ফা কোথায় থাকতেন তাহলে? অর্থাৎ তারা মসজিদেই ঘুমাতেন। (সুতরাং মসজিদে ঘুমানো জায়েয এবং এটি সুস্পষ্ট) (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২২)
٦. عن بن أبي نجيح قال نمت في المسجد الحرام فاحتلمت فيه فسألت سعيد بن جبير فقال اذهب واغتسل يعني ولم ينهه -হযরত ইবনে আবী নাজীহ বলেন আমি মসজিদে হারামে ঘুমিয়েছিলাম। তখন আমার স্বপ্নদোষ হল। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবাইর রহ. কে জিজ্ঞেস করলাম কি করব? বলেন গোসল করে আস। অর্থাৎ তিনি তাকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২৩ )
۷. وقال عمرو بن دينار : كنا نبيت في المسجد على عهد ابن الزبير -৭ হযরত আমর ইবনে দীনার বলেন সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. এর খিলাফত কালে আমরা মসজিদেই রাত যাপন করতাম। (ফাতহুল বারী, ইবনে রজব।)

সারকথা, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়সাল্লাম, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হযরত আবুযর গিফারী রা. ও আহলে ছুফ্ফা সকলেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন। তাই তাবেয়ী-তবে তাবেয়ীনের অনেকেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। ফলে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণ আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। তবে ইমাম মালেক ও আহমদ রহ. বলেছেন নিজের পৃথক ঘুমানোর জায়গা থাকা সত্ত্বেও মসজিদকে নিয়মিত ঘুমানোর জায়গা বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। হাঁ ইবাদত ও নেক কাজের উদ্দেশ্যে সকল মাযহাবেই নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানো জায়েয। (দ্র. ফাতহুল বারী ইবনে রজব, ই‘লামুস্-সাজিদ বিআহ্কামিল মাসাজিদ মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ যারকাশী (মৃ.৭৯৪ হি.) পৃ. ৩০৫-৩০৭)

হানাফী আলেমদের মতে, বদরুদ্দীন আইনী রহ. (মৃ. ৮৫৫ হি.) হানাফী মাযহাবের একজন উল্লেখযোগ্য মুহাদ্দিস ও ফকীহ। মসজিদে ঘুমানো জায়েয হওয়া সম্পর্কে তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তথাপি হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আলফাতাওয়াল হিন্দিয়া’য় (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী) উদ্ধৃত হয়েছে وَلَا بَأْسَ لِلْغَرِيبِ وَلِصَاحِبِ الدَّارِ أَنْ يَنَامَ في الْمَسْجِدِ في الصَّحِيحِ من الْمَذْهَبِ وَالْأَحْسَنُ أَنْ يَتَوَرَّعَ فَلَا يَنَامُ كَذَا في خِزَانَةِ الْفَتَاوَى বিশুদ্ধ মত অনুসারে মুসাফির ও স্থানীয় উভয়ের জন্যই মসজিদে ঘুমানো জায়েয। তবে উত্তম হল (অবশ্য প্রয়োজন ছাড়া) না ঘুমানো। খিযানাতুল ফাতাওয়া। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)
তবে অপ্রয়োজনে ঘুমানো উচিত নয় উল্লেখ করে অনত্র বলেন
وَيُكْرَهُ النَّوْمُ وَالْأَكْلُ فيه لِغَيْرِ الْمُعْتَكِفِ وإذا أَرَادَ أَنْ يَفْعَلَ ذلك يَنْبَغِي أَنْ يَنْوِيَ الِاعْتِكَافَ فَيَدْخُلَ فيه وَيَذْكُرَ اللَّهَ تَعَالَى بِقَدْرِ ما نَوَى أو يُصَلِّيَ ثُمَّ يَفْعَلَ ما شَاءَ كَذَا في السِّرَاجِيَّةِ
ই‘তিকাফের নিয়ত ছাড়া মসজিদে ঘুমানো ও খাওয়া-দাওয়া করা মাকরূহ (তবে এটি মাকরূহে তাহরীমী তথা হারাম নয়; বরং মাকরূহে তান্যীহী অর্থাৎ অপসন্দনীয় ও অনুচিত কাজ)। তাই যদি কেউ মসজিদে ঘুমাতে চায়, তাহলে তার উচিৎ ই‘তিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে ইচ্ছানুসারে আল্লাহর যিকর অথবা নামায পড়ে নেবে। তার পর যা ইচ্ছা করবে। সিরাজিয়া। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

ইমাম আলাউদ্দীন হাছ্কাফী রহ. (মৃ. ১০৮৮ হি.) এর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ইবনে আবীদীন শামী রহ. (মৃ.১২৬০ হি.) তাঁর বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ “ফতুয়ায়ে শামীতে” লেখেন
قال فى الدر المختار: لكن قال ابن كمال لا يكره الأكل والشرب والنوم فيه مطلقا ونحوه في المجتبى. وقال ابن عابدين فى شرحه: ( قوله لكن إلخ ) استدراك على ما في الأشباه وعبارة ابن الكمال عن جامع الإسبيجابي لغير المعتكف أن ينام في المسجد مقيما كان أو غريبا أو مضطجعا أو متكئا رجلاه إلى القبلة أو إلى غيرها فالمعتكف أولى ا هـ ونقله أيضا في المعراج وبه يعلم تفسير الإطلاق. قال ط : لكن قوله رجلاه إلى القبلة غيرمسلم لما نصوا عليه من الكراهة ومفاد كلام الشارح ترجيح هذا الاستدراك. والظاهر أن مثل النوم الأكل والشرب إذا لم يشغل المسجد ولم يلوثه لأن تنظيفه واجب كما مر.
ইবনু কামাল পাশা রহ.‘জামে ইস্বীজানীর’ উদ্ধৃতিতে বলেন ই‘তিকাফকারী ছাড়া অন্যদের জন্যও মসজিদে ঘুমানো জায়েয। ব্যক্তি স্থানীয় হোক বা মুসাফির। চিৎ হয়ে ঘুমাক কিংবা কিবলার দিকে বা যে কোন দিকে পা দিয়ে। সুতরাং ই‘তিকাফকারীর জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। শামী রহ. বলেন মি‘রাজুদদিরায়া কিতাবেও তা উদ্ধৃত করেছেন। ... তবে তাঁর বক্তব্যে কিবলার দিকে পা দেওয়া জায়েয হওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। বরং তা মাকরূহ। শামী রহ. বলেন মসজিদে ঘুম খাবার-দাবার জায়েয বটে; কিন্তু তা যেন মসজিদকে অপবিত্র না করে। কারণ মসজিদ পবিত্র রাখা ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ফাতাওয়ায়ে শামী)
সুতরাং মসজিদে ই‘তিকাফের নিয়ত ছাড়াই ঘুমানো জায়েয। তবে ই‘তিকাফের নিয়ত করে নেয়া ভাল। তবে সর্বাবস্থায়ই মসজিদের আদবের প্রতি লক্ষ রাখা আবশ্যক।
উপরোল্লেখিত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায়,
১. যার থাকার যায়গা নেই, যে মুসাফির বা পথিক (এখানে মুসাফির বলতে বাড়ি থেকে দূরে যে কোন লোককেই বুঝানো হয়েছে। ফিকহ শাস্ত্রের পরিভাষার মুসাফির উদ্দেশ্য নয়)
৩. যে ইবাদত বন্দেগী তথা নেক কাজ করার জন্য মসজিদে থাকতে চায়, ৩.যে ইতিকাফের নিয়ত করেছে,
৪. যে দীনী ইলম জ্ঞান শিখতে বা শিখাতে চায় তাদের সকলের জন্যত মসজিদে থাকা অবশ্যই জায়েয।
৫. বরং এসকল উদ্দেশ্য ছাড়াও মসজিদে ঘুমানো যায়েজ। তবে এক্ষেত্রে ইতিকাফের নিয়ত করে নেয়া ভাল।
বলা বাহুল্য যে,
১.তাবলীগ জামাতের লোকেরা সাধারণত মুসাফিরই হয়ে থাকে। অন্তত বাড়ী থেকে এত দূরে যায় যেখান থেকে বাড়ীতে এসে ঘুমাতে হলে তাঁর দাওয়াতের কাজ, তাঁর দীন শিক্ষা করা বা দীন শিক্ষা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যটিই ব্যর্থ হবে।
২.তা ছাড়া তাবলীগে গমনের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য হল তালীমের মাধ্যমে, মোজাকারা (পরষ্পরে আলোচনা) ও মোশাওয়ারার মাধ্যমে নিজে দীন শিক্ষা করা, অন্য নতুন সাথীদেরকে দীন শিক্ষা দেওয়া এবং এলাকার মুসলামান ভাইদেরকে দীন শিক্ষা দেওয়া ও তাদেরকে মসজিদমুখী করা।
৩.তাছাড়া তাবলীগে গমনের আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য হল, মানুষ আপন বাড়িতে নিজ পরিবেশে থেকে গুনাহে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের গুনাহের অভ্যাস ছাড়িয়ে নেক কাজের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলার জন্যই বছরে বা মাসে কিছু দিন আল্লাহর ঘরে নেক কাজের উদ্দেশ্যে থাকা।
৪. লোকেরা যখন তাবলীগের উদ্দেশ্যে বের হয়, তখন মারকাজ থেকে তাদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে কঠুরতার সাথে। তাদের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত যিম্মাদারকে তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব থাকে। তখন তাদের বলা হয় সব সময় নফল ইতিকাফের নিয়ত করে রাখতে । এবং মসজিদের সকল আদব রক্ষা করে চলতে।
সুতরাং উপরে উল্লেখিত চারটি কোন একটি শর্ত না থাকলেও মসজিদে ঘুমানো যায়েজ। কোন একটি শর্ত পাওয়া গেলেত অবশ্যই যায়েজ। আর যদি চারটি শর্তই থাকে তাহলে তাদের মসজিদে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা ওঅনর্থক ৷
বিশেষ করে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হুকুম করেছেন “ তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সেজদাকারী তথা নামাযীদের জন্য পবিত্র করে রাখ” (২.সূরা বাকারা আয়াত ১২৫)
এখানে আল্লাহ তাআলা ইতিকাফকারীদের জন্য তাঁর ঘরকে সাজিয়ে রাখতে বলেছেন। সুতরাং কেউ যদি মসজিদে থাকার সময় ইতিকাফের নিয়ত করে তাহলে কার সাধ্য আছে আল্লাহর মেহমানকে আল্লাহর ঘরে থাকতে বাধা দেয়ার!
আসলে আমাদের সমাজের সাধারণ মুসলমানরা না জানার কারণে বা কিছু মুর্খ, স্বার্থান্বেশী, দাওয়াতজীবী ও ওয়াজজীবী দাওয়াত খাওয়া ও ওয়াজেব্যবসা করাই যাদের পেশা এমন ব্যক্তিরাই এমন অবান্তর কথা বলে সাধারন মানুষ কে বিভ্রান্ত করছে ৷ এরা বুঝতেও রাজি না। আল্লাহ, এরাত আমাদেরই জ্ঞাতি ভাই। এদের তুমি সঠিক জ্ঞান দান কর। আমাদেকে এবং তাদেরকে সকলকে ক্ষমা করে দাও।


মসজিদে বায়ূ ত্যাগ করা:

আবার কেউ কেউ নির্লজ্জের মত তাবলীগীদের বদনাম করার জন্য বলে এরা মসজিদ নাপাক করে। এদেরকে মসজিদে থাকতে দেওয়া উচিত নয়।

কিন্তু তাঁদের এ মন্তব্যটি বড়ই দুঃখ জনক। মূলত এটি বিদ্বেষ প্রসূত। হিংসা বিদ্বেষের বসবর্তী হয়েই মানুষ এ ধরণের অপকথা বলতে থাকে। বস্তুত মসজিদ ইবাদতের স্থান। একে দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে পবিত্র রাখা ওয়াজীব । মসজিদে  আমাদের সকল কে  নামায, তিলাওয়াত, যিকির, তালীম (দ্বীনি শিক্ষা-দীক্ষার কাজ) ও ওয়াজ-নসীহতের জন্য  মসজিদে অবস্থান করতে হয়। ফলে যে কোন সময় বায়ূ নিঃসারণের সম্ভাবনা থাকে। কারণ বায়ূ ত্যাগের বিষয়টি অনেক সময়ই ইচ্ছাধীন থাকেনা। আপনিতেই বের হয়ে যায়। তাই অনিচ্ছাকৃত ভাবে বায়ূ ত্যাগ হয়ে গেলে তাতে কোন সমস্যা নেই। এমনটি হয়ে গেলে যথা সম্ভব  তাডা তাডি ওজু করে আসা ৷
মসজিদে বায়ু ত্যাগ করা থেকে আবশ্যই  বিরত থাকতে হবে। তবে গ্যাসের সমস্যা থাকলে বাথরুমে  বা বাহিরে গিয়ে তা ত্যাগ করা উচিত।

 উপরে যেহেতু মসজিদে ঘুমানো যে জায়েয এ নিয়েই সংক্ষিপ্তস্বরে ফলপ্রুসু আলোচনা হয়েছে ৷সকলেরই জানা কথা ঘুম গেলে অজু ছুটে যায়, তার কারন  ঘূমে মানুষ যেমন অচেতন হয় তেমনি শরীর ঢীলা হয়ে বাতাস বাহির হওয়ার আশংকা ও থাকে , এ কারনেই অজু ভঙ্গ হয়ে যায় ,এখন প্রশ্ন হল মসজিদে ঘুমন্ত অবস্হায় যে বাতাস বাহির হওয়ার আশংকা সোনালী যুগের মজবুত ঈমানদারদের কারো কি বোধগম্য হয়নি ? নাকি এখনকার ফেৎনা ফাসাদের যুগে কমজোর ঈমান ওয়ালাদের হয়েছে ? আল্লাহ আমাদের সকল
ফেৎনা ফাসাদের থেকে রক্ষা করে সঠিক দ্বীন বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন ৷



১৬  ফাযায়েলে আমলে বুযুর্গানে দ্বীনের অনেক ঘটনাকে আহলে হাদীসের ভাইয়েরা শীর্ক বলে থাকেন এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ?


উত্তর :
   এ ব্যপারে আসলে অজ্ঞতাই কাজ করছে বলে প্রতিয়মান হয় কারন হাদিসের জ্ঞান  আর শীর্ক এর সজ্ঞা জানা থাকলে এমনটি হতোনা  


*********************======================


নিজে নিজেই কিছু অনুবাদ পড়ে আল্লামা সাজার প্রবণতা ইদানিংকালে বেড়ে গেছে। কোন কিতাবের অনুবাদ পড়ে বুঝতে না পারলে, বা কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে নিজে নিজেই এর সামাধান খুঁজে। না পেলে প্রচার করতে শুরু করে কিতাবটি ভুল। শিরকে পূর্ণ। আদৌ কি বিষয়টি এমন কিনা? কোন বিজ্ঞ আলেম থেকে তা জেনে নেবার প্রয়োজনীয়তা বোধ না করায় গোমরাহ হচ্ছে এ সমাজের অনেক নতুন প্রজন্ম।

অষুখ হলে বিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে না গিয়ে নিজে নিজে চিকিৎসা করাকে কেউ নিরাপদ না মনে করলেও,

বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ইঞ্জিনিয়ারের কাছে না গিয়ে নিজে নিজেই নির্মাণ শুরু করাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে  না করলেও, আজকের সমাজের মানুষেরা কুরআন সুন্নাহের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের শরনাপন্ন হওয়া ছাড়া নিজে নিজেই সব শিখে নেবার মত দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আর গোমরাহীর অতলে যাচ্ছে তলিয়ে।

কোন কিতাবের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন জাগলে এ বিষয়ে প্রাজ্ঞদের কাছে এর জবাব জানতে চাইতে হবে। নিজে নিজে সমাধান খুঁজে না পেলে বদনাম ছড়ানোটা আহমকীর নিদর্শন। নিজের অজ্ঞতাকে দলিল নেই , এর উপর প্রমাণ পেশ করাটা বোকামী ছাড়া আর কী হতে পারে?

ফাযায়েলে আমাল ও আকাবীরে দেওবন্দ এবং হক্কানী ওলামাদের উপর উত্থাপিত অভিযোগের অবস্থা তা’ই। কিছু অতি পন্ডিত লোক কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির তত্বাবধান ছাড়া নিজে নিজে কিতাবগুলো পড়ে। তারপর প্রশ্ন জাগে। নিজে নিজেই এর সমাধান খুঁজে। উত্তর না পেয়ে ছড়াতে শুরু করে এ কিতাব ভুল। শিরকে পূর্ণ।

ডাক্তারী বই নিজে নিজে পড়ে কোথাও প্রশ্ন জাগলে নিজে নিজে খুঁজে উত্তর না পেয়ে যদি উক্ত পাঠক ডাক্তারী ঐ বইকে ভুল সাব্যস্ত করে, তাহলে বিজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে যেমন বিষয়টি চরম হাস্যকর হয়। তেমনি এ অতি পন্ডিত কুরআন সুন্নাহের অনুবাদ পাঠকদের অভিযোগের ধরণ দেখে হাসি পায় বিজ্ঞ আলেমদের।



=========================*************

হাদিস শরীফে আছে,
عن عبد الله بن عمرو : أن النبي صلى الله عليه و سلم قال بلغوا عني ولو آية وحدثوا عن بني إسرائيل ولا حرج (صحيح البخارى، كتاب الانبياء، باب ما ذكر عن بني إسرائيل، رقم الحديث-3274)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, “আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। আর বনী ইসরাঈলের বিষয় বর্ণনা কর, কোন সমস্যা নাই
{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২৭৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬২৫৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৬৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৮৪৮}

এখানে দ্বীন প্রচারের সুবিধার জন্য যদি বনী ইসরাঈলের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী  বর্ণনা করা দোষের না হয়, তবে দ্বীন প্রচারের সুবিধারন জন্য উম্মতে মোহাম্মদীর ভিতরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো প্রচারে সমস্যা কোথায় ?তা বোধগম্য নয় ৷

শাইখুল হাদীস আল্লামা শায়েখ জাকারিয়া রহঃ এর লিখা ফাযায়েলে আমালকিতাবটিতে তিনি ফাযায়েল সম্পর্কিত বেশ কিছু হাদীস বিভিন্ন হাদীসের কিতাব থেকে একত্র করেছেন। সেই সাথে এ উম্মতের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম তথা বুযুর্গানে দ্বীনের জীবনে  ঘটে যাওয়া ঈমান উদ্দীপক কিছু ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন।
ঘটনা মূলত ঘটনাই। এর দ্বারা  শরয়ী কোন বিধান তথা ফরজ ওয়াজীব বা সুন্নাত সাব্যস্হ  হয়না। আর বুযুর্গানে দ্বীন থেকে ঘটিত আশ্চর্য ঘটনাবলী কোন শরয়ী দলিল ও নয়, কিন্তু ঈমান উদ্দীপক মাত্র ৷ যার মাধ্যমে আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এগুলোতে অযথা শিরক খোঁজাটা বোকামীর শামিল। সেই সাথে শিরকের অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।
বুযুর্গানে  দ্বীনের কারামাত তাদের নিজের ইচ্ছাধীন নয়। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়।আর আউলিয়ায়ে কেরামের কেরামত হক্ব বা সত্য ৷ যদি কেউ মনে করে যে, কারামাত বা আশ্চর্য ঘটনাবলীর ঘটানোর মূল ক্ষমতা বুযুর্গের, তাহলে এটা শিরক হবে, এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু একথাতো ফাযায়েলে আমালের কোথাও লিপিবদ্ধ নাই যে, কারামাতগুলো ঘটানোর ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট বুযুর্গের। তাহলে এসব ঘটনা শিরক হল কিভাবে?

আর বনী ইসরাঈল হল হযরত মুসা আঃ ও হযরত ঈসা আঃ এর উম্মত বা জাতি। যদি হযরত মুসা ও ঈসা আঃ এর জাতির ঘটনা বর্ণনা করাতে কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে শ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম উম্মত, উম্মতে মুহাম্মদীর বুযুর্গানে দ্বীনের ঈমানদীপ্ত ঘটনা বর্ণনা করা শিরক বা দোষণীয় হয় কি করে?
তাহলে কি গায়রে মুকাল্লিদদের মতে উম্মতে মুহাম্মদীর চেয়ে বনী ইসরাঈলরা বেশি মর্যাদার অধিকারী? বা বেশি শ্রেষ্ঠ? বেশি বুযুর্গ?আল্লাহ হক্ব বুঝার তাওফিক দিন ৷ আমিন

(17)  তাবলীগের পাঠ্যক্রমে কুরআন ও প্রচলিত হাদীসের কোন গ্রন্থের তালিম না দিয়ে শুধু মাত্র তাবলীগি নেসাব কেন তালিম দেয়া হয় ?


উত্তর :
আগে বলুনতো সদ্য ভূমিষ্ট শিশুকে ভাত খাওয়ানো হয় নাকি দুধ-মধু ?কেন ?এই প্রশ্নের যেই জবাব এটার ও সেই জবাব তার পরও একটু খোলাসা করে বললে বুঝতে আরও সহজ হবে ৷এটা কোন প্রচলীত কোন মাদ্রাসা নয় যে কোরআন হাদীস তাফসীর গ্রন্থগুলো তালিম দেয়া হবে। এখানে এমন কিছু কিতাব নির্ধারীত আছে যা দ্বারা  স্বল্প সময়ের জন্য আসা মানুষগুলোর মাঝে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করার আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়।
তাবলীগি ভাইদের কোরআন তাফছীর,হাদীস বা অন্য ইসলামী গ্রন্থ পড়তে নিষেধ নেই। তবে যে লোকটি এখনো অ, , , খ পড়তে শিখেনি। তাকে যদি একটি সাহিত্য গ্রন্থ দেয়া হয় তাহলে সেতো পড়তে পারবে না বরং তাকে দিতে হবে একটি আদর্শলিপি। যাতে সে পড়া শিখতে পারে। তদ্রুপ তাবলীগ জামায়াতে যে সমস্ত ভাইয়েরা আসেন তারা যাতে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের পড়া শিখতে পারে তার জন্য সে অনুযায়ী সহ উপায়ে ফাযায়েলে আমল, ফাযায়েলে সাদাকাত, মুন্তাখাব হাদীস, হায়াতুস সাহাবা ইত্যাদি গ্রন্থ পড়তে দেয়া হয়। ফাযায়েল অর্থ হলো লাভ। মানুষ যে জিনিসে লাভ দেখে তা পাওয়ার জন্য জীবনও দিয়ে দেয় তাইনা । সে জন্য তাবলিগের ভাইদের দ্বীনের জ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে এই ধরনের গ্রন্থ গুলো আগে পড়তে উৎসাহিত করা হয়।পরে যখন প্রাথমীক জ্ঞান অর্জনের পর যা মন চায় তাই পডতে পারবে ৷তাছাডা সমালোচকদের উদ্দোশ্যে বলবো আপনারা এক বারের জন্য হলেও তালিমে বসে দেখুন পরিক্ষা মূলক ,যে লোকটির মুখ থেকে সূরায়ে ফাতেহাটি পর্যন্ত ঠিক ভাবে উচ্ছারণ করতে পারেনা  তাকে যদি তাফসীর-হাদিসের বোঝা দিয়ে দেন তা কি বহন করা সম্ভব হবে ?আপনি নিজেই এর সিন্দান্ত দিতে পারবেন ৷
===================*****************************=================




/////////////////*****************************************///////////////////////////////

বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাসঃ
 রাজধানি ঢাকার পাশেই টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমাকে উছিলা করে যে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমাগম ঘটে তা হঠাৎ করে হয়নি ৷ নিবেদিত প্রাণ তাবলীগ... অনুসারীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বিশ্ব ইজতেমা আজকের রুপ লাভ করেছে। যতটুকু জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমা সর্ব প্রথম শুরু হয় আজ থেকে ষাট বছর পূর্বে ১৯৪৬ইং সালে কাকরাইল মসজিদে ৷এরপর ১৯৪৮ইং সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের তৎকালীন হাজী ক্যাম্পে। এরপর ১৯৫৮সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। তখন এটা কেবল ইজতেমা হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু প্রতি বছর ইজতেমায় অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৬৬সালে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খেলার মাঠে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ঐ বছরই প্রথম শুধু বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগন অংশ গ্রহন করায় বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সাল থেকে এ যাবত পর্যন্ত স্থায়ীভাবে বিশ্ব ইজতেমা নামে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন মানুষের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে তুরাগ নদীর উত্তর-পূর্ব তীরে রাজউকের প্রায় ১৬০ একর (এখন প্রায় ১৭৫ একর) বিশাল ভুমির উপরে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিগত ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখিত জায়গায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবার লিখিত অনুমতি প্রদান করেন। বিভিন্ন পত্রিকা/ পরিসংখ্যানের হিসাবে দুই পর্ব মিলিয়ে প্রায় ষাট থেকে সত্তর লাখ মানুষ এতে অংশ গ্রহন করেন। এবং প্রায় ১০০টিরও বেশী দেশের প্রায় অর্ধ লক্ষ বিদেশি মেহমান এতে অংশ গ্রহন করেন। তিন দিনের ইজতেমা শেষে আখেরী মুনাজাতে বিশাল জন সমুদ্রে পরিনত হয় ইজতেমা ময়দান! ঐ দিন সরকার কর্তৃক ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপতি,প্রধ ানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ আখেরি মুনাজাতে শরীক হন। আখেরি মুনাজাতে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে মুনাজাত করা হয়। এই বিশ্ব ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বেশ কয়েক মাস ধরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষ পালাক্রমে মাঠ প্রস্তুতের কাজে অংশগ্রহন করে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আল্লাহর অশেষ কুদরতে পুরো ব্যাবস্থাপনা ব্যায় বহুল ও সময় সাপেক্ষ হলেও অত্তন্ত নিখুঁত ভাবে পুরো কাজ সম্পন্ন হয় আলহামদুলিল্লাহ। প্রতি বছরই ইজতেমা শেষে হাজার হাজার জামাত দেশের অভ্যন্তরে ও সারা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতী কাজের আঞ্জাম দেয়ার জন্য বের হন নিজের জান মালের কোরবানির দ্বারা। আল্লাহ আমাদের সবাকেই এই মোবারক মেহনতের সাথে পরিপূর্ণ ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন। 


                   




৫টি মন্তব্য:

  1. তাবলীগ জামাতে নারী পুরুষ এক সাথে জাওয়া জায়েজ আছে কি ?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. বিশেষ ব্যবস্থায় যাওয়া যায়। অনেক নিয়ম কানুন আছে। বিস্তারিত জানতে পুরনো তাব্লিগি ভাইদের সাথে কথা বলুন।

      মুছুন
  2. ভাই নারীরা যে চিল্লায় বের হয়। এর কোন দলিল আছে। থাকলে জানাবেন উপকৃত হব।

    উত্তরমুছুন