সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

কুরবানী সম্পর্কিত সুওয়াল জাওয়াব and মাছায়েলে কুরবানী তাৎপয্য

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?
 যিলহজ্জ মাসের দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে সাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ্ (নিত্যপ্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।


(1)  প্রশ্ন      নিজের ওয়াজিব কুরবানি করার পর মৃত আত্মীয়র জন্য কুরবানি করা যাই কিনা।


 জবাব:

নিজের ওয়াজিব কুরবানী আদায় করার পর মৃত আত্মীয়ের জন্য কুরবানী করতে পারবে। এ কুরবানীর সওয়াব পৌঁছে যাবে সেই মৃত ব্যক্তির আমলনামায়। আর মালিক থাকবে কুরবানীদাতা। অর্থাৎ এর গোস্ত অন্য কুরবানীর গোস্তের মতই কুরবানীদাতা ব্যবহার করতে পারবে।
দলিল:
فى البزازية- على هامش الهندية- واجاز نصير بن يحيى ومحمد بن سلمة ومحمد بن مقاتل فيمن يضحى عن الميت انه يصح به  مثل ما يصنع باضحية نفسه من التصدق والأكل، والأجر للميت والملك للذابح، (الفتاوى البزازية على هامش الهندية-6/295)

(2)   প্রশ্ন         ৫জন মিলে কুরবানী দেয়া হচ্ছে। এর মাঝে দুইজনের নিয়ত শুধু গোস্ত খাওয়া। কুরবানী দেয়া ইবাদত এমন মনে কর কুরবানী দিচ্ছে না। তাহলে বাকিদের কুরবানীর হুকুম কি?

জবাব:   কুরবানী শরীকদার দ্বীনদার ও আল্লাহর জন্যই কুরবানী দিচ্ছে এমন ব্যক্তি হওয়া আবশ্যক। যদি একজন শরীকের নিয়তও খারাপ থাকে, তাহলে সকল শরীকের কুরবানী বাতিল বলে সাব্যস্ত হবে।
দলিল
فى رد المحتار- ( وإن ) ( كان شريك الستة نصرانيا أو مريدا اللحم ) ( لم يجز عن واحد ) منهم لأن الإراقة لا تتجزأ (رد المحتار، كتاب الاضحية-9/472)  
প্রামাণ্য গ্রন্থাবলী
১-ফাতওয়া শামী-৯/৪৭২
২-ফাতওয়া তাতারখানিয়া-৩/৪৫৪
৩-মিনহাতুল খালেক আলাল বাহরির রায়েক-৯/৩২৫
৪-খানিয়া আলা হামিশিল হিন্দিয়া-৩/৩৪৯
৫-ফাতওয়া আলমগীরী-৫/৪০৪
৬-ফাতওয়া আল ওয়াল ওয়ালিজিয়্যাহ-৩/৭৫
৭-তাবয়ীনুল হাকায়েক-৬/৪৮৪
৮-খুলাসাতুল ফাতওয়া-৪১৫
والله اعلم بالصواب



(3)  প্রশ্ন     কয়েকজন মিলে শেয়ারে কুরবানী দেয়ার মাসআলা কি?



জবাব:
উট, গরু ও মহিষের মাঝে ৭ জন পর্যন্ত শরীক হয়ে কুরবানী করা জায়েজ আছে। এরচে’ বেশি শরীক হলে কুরবানী করলে কুরবানী হবে না।
আর বকরী, দুম্বা, ভেড়ার মাঝে কোন শরীকানা জায়েজ নয়।
দলিল:
فى البدائع- ولا يجوز بعير واحد ولا بقرة واحدة عن أكثر من سبعة
 ويجوز ذلك عن سبعة أو أقل من ذلك وهذا قول عامة العلماء___ والصحيح قول العامة لما روي عن رسول الله صلى الله عليه وسلم البدنة تجزي عن سبعة والبقرة تجزي عن سبعة (بدائع الصنائع، كتاب الاضحية،  فصل وأما محل إقامة الواجب-4/206-207)
وفى البحر الرائق- وقوله شاة أو سبع بدنة بيان للقدر الواجب والقياس أن لا يجوز إلا البدنة كلها إلا عن واحد لأن الإراقة قربة لا تتجزىء إلا أنا تركناه بالأثر وهو ما روي عن جابر رضي الله تعالى عنه قال نحرنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم البقرة عن سبعة والبدنة عن سبعة ولا نص في الشاة فبقي على أصل القياس (البحر الرائق-8/319)
প্রামান্য গ্রন্থাবলী:
১- বাদায়েউস সানায়ে-৪/২০৬-২০৭
২- আল বাহরুর রায়েক-৮/৩১৯
৩-ফাতওয়ায়ে শামী-৯/৪৫৭
৪-খুলাসাতুল ফাতওয়া-৩/৩১৫
৫-ফাতওয়া আলমগীরী-৫/৩০৪
৬-হেদায়া-৪/৪২৮






(4)
প্রশ্ন:
যার উপর কুরবানী ওয়াজিব, সে যদি কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানীর পশু না পায়, তাহলে কী করবে?

                                                                   জবাব:
                                                      
কুরবানীর পশু না পাওয়া অবস্থায় যদি কুরবানীর দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তাহলে কুরবানী যোগ্য একটি বকরীর সমমূল্য সদকা করে দেয়া ওয়াজিব।
দলিল:
فى البدائع الصنائع- وإن كان لم يوجب على نفسه ولا اشترى وهو موسر حتى مضت أيام النحر تصدق بقيمة شاة تجوز في الأضحية لأنه إذا لم يوجب ولم يشتر لم يتعين شيء للأضحية وإنما الواجب عليه إراقة دم شاة فإذا مضى الوقت قبل أن يذبح ولا سبيل إلى التقرب بالإراقة بعد خروج الوقت لما قلنا انتقل الواجب من الإراقة والعين أيضا لعدم التعيين إلى القيمة وهو قيمة شاة يجوز ذبحها في الأضحية (بدائع الصنائع، كتاب الأضحية، فصل واما كيفية الوجوب فانواع-4/203)
প্রামান্য গ্রন্থাবলী:
১. ফাতওয়ায়ে শামী-৯/৪২৩-৪৬৫
২. আল বাহরুর রায়েক-৮/৩২২
৩. ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৫/২৯৬
৪. বাদায়েউস সানায়ে-৪/২০৩
৫. খোলাসাতুল ফাতওয়া-৩/৩১৭
৬. হেদায়া-৪/৪৩০


(5)
প্রশ্ন:
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর উপর তার সম্পদ থেকে কুরবানী ওয়াজিব হবে কি?
জবাব:
بسم الله الرحمن الرحيم
না, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর সম্পদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তার সম্পদ থেকেও নয় তার পিতার সম্পদ থেকেও নয়।
দলিল:
فى رد المحتار-وليس للأب أن يفعله من مال طفله ، ورجحه ابن الشحنة .
قلت : وهو المعتمد لما في متن مواهب الرحمن من أنه أصح ما يفتى به  (الفتوى الشامية-9/458
প্রামান্য গ্রন্থাবলী:
১. ফাতওয়ায়ে শামী-৯/৪৫৮
২. ফাতওয়ায়ে খানিয়া আলা হামিশিল হিন্দিয়া-৩/৩৪৫-৩৪৬
৩. বাদায়েউস সানায়ে’-৪/১৯৭
৪. আল বাহরুর রায়েক-৮/৩১৯
৫. হেদায়া-৪/৪২৮



(6)  প্রশ্ন:

পশু জবাই করতে গিয়ে গর্দান আলাদা হয়ে গেলে হুকুম কি?


জবাব:
ইচ্ছাকৃত গর্দান আলাদা করে ফেলা মাকরুহে তাহরীমী। অনিচ্ছাকৃত হলে কোন সমস্যা নেই। মুরগী খাওয়াতে কোন গোনাহ ও হবে না এবং তা হারামও হবে না। { হেদায়া-৪/৪২২, ফাতওয়ায়ে রহিমিয়া-১০/৬৯, কিতাবুল ফাতওয়া-৪/১৯৩}
দলিল
فى رد المحتار-( و ) كره كل تعذيب بلا فائدة مثل ( قطع الرأس والسلخ قبل أن تبرد ) (الفتوى الشامية-9/427)
প্রামান্য গ্রন্থাবলী
১- ফাতওয়ায়ে শামী-৯/৪২৭
২-ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৫/২৮৬
৩- আল বাহরুর রায়েক-৮/১৭০
৪-হেদায়া-৪/৪২২

( 7)              প্রশ্ন          হারাম টাকা উপার্জনকারীর সাথে কুরবানী দেয়ার হুকুম কি?


জবাব:
হারাম টাকা কামানোর সম্ভাবনার সাথে সাথে হালাল টাকাও আছে সুনিশ্চিতভাবে। তাই স্বাভাবিকভাবে তার সাথে কুরবানীতে শরীক হতে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি একথা জানা যায় যে, তিনি হারাম টাকা দিয়েই কুরবানী দিচ্ছেন। কিংবা কুরবানী করার দ্বারা তার আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য নয়, বরং গোস্ত খাওয়া, বা মানুষকে দেখানো উদ্দেশ্য হয়, তাহলে নিয়ত খারাপ থাকার কারণে তার সাথে কুরবানী করা জায়েজ হবে না। এরকম ব্যক্তির সাথে কুরবানীতে শরীক হলে উক্ত পশুতে শরীক সবার কুরবানী বাতিল হয়ে যাবে।
فى رد المحتار- ( وإن ) ( كان شريك الستة نصرانيا أو مريدا اللحم ) ( لم يجز عن واحد ) منهم لأن الإراقة لا تتجزأ (رد المحتار، كتاب الاضحية-9/472)
প্রামাণ্য গ্রন্থাবলী
১-ফাতওয়া শামী-৯/৪৭২
২-ফাতওয়া তাতারখানিয়া-৩/৪৫৪
৩-মিনহাতুল খালেক আলাল বাহরির রায়েক-৯/৩২৫
৪-খানিয়া আলা হামিশিল হিন্দিয়া-৩/৩৪৯
৫-ফাতওয়া আলমগীরী-৫/৪০৪
৬-ফাতওয়া আল ওয়াল ওয়ালিজিয়্যাহ-৩/৭৫
৭-তাবয়ীনুল হাকায়েক-৬/৪৮৪
৮-খুলাসাতুল ফাতওয়া-৪১৫

উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

http://ahlehaqmedia.com/798




(8)   প্রশ্নকুরবানী কার উপর ওয়াজিব?

জাওয়াব: যিলহজ্জ মাসের দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে সাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ্ (নিত্যপ্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।

(9)         সুওয়াল: কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাঁটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য?

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, যারা কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে যিলহজ্জের চাঁদ ওঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল, হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن ام سلمة عليهاالسلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة و اراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.
অর্থঃ- “হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (কুরবানী না করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)
মূলত, ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা কুরবানী করবে এবং যারা কুরবানী করবে না, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। আর এ ব্যাপারে দলীল হলো এ হাদীছ শরীফ।
যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে,
عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لـهذه الامة قال له رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بـها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। তুমি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবে না। বরং তুমি কুরবানীর দিনে তোমার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবে। তোমার গোঁফ খাট করবে এবং তোমার নাভীর নিচের চুল কাটবে, এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা তুমি মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট কুরবানীর পূর্ণ ছওয়াব পাবে।” (আবু দাউদ শরীফ)
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা কুরবানী করবে না, তাদের জন্যও যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নিজ শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি কুরবানীর ছওয়াব পাবে।

( 10)  সুওয়াল: হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?

জাওয়াব: কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবে না। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অন্ডকোষ, (৩) মুত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) গুহ্যদ্বার, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ্ তাহ্রীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ্ তাহ্রীমী, আবার কেউ মাকরূহ্ তান্যিহী বলেছেন।



(11) সুওয়াল:    কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয আছে কি?
জাওয়াব: কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোনো হালাল পশুই হোক, তা যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সে দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয।

(12) সুওয়াল : যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব, সে তার নিজের নামে কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা-মাতার নামে কুরবানী দিলে তার নিজের কুরবানী আদায় হবে কিনা?জাওয়াব: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালিকে নিছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই কুরবানী করতে হবে। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে। যদিও বাবা মা-এর নামে কুরবানী করে; যাদের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নয়।



(13)  সুওয়াল :  কুরবানীর পশুর দুধ, গোবর ও রশি দ্বারা ফায়দা  লাভ করা জায়িয আছে কি?

জাওয়াব: সাধারণতঃ কুরবানীর পশুর দ্বারা কোনো প্রকারের ফায়দা লাভ করা জায়িয নেই। যেমন- (১) কুরবানীর পশুর উপর আরোহণ করে চলাচল করা,  (২) কুরবানীর পশুর পশম কেটে বিক্রয় করা, (৩) কুরবানীর পশু হাল চাষের কাজে ব্যবহার করা, (৪) কুরবানীর পশু দ্বারা বোঝা বহন করানো, (৫) কুরবানীর পশুর দুধ পান করা,  (৬) কুরবানীর পশুর গোবর দ্বারা ফায়দা লাভ করা,  (৭) কুরবানীর পশুর রশি, নাক বন্ধ, পায়ের খুরাবৃত, গলার আবরণ, জিনপোষ, লাগাম ইত্যাদি দ্বারা ফায়দা লাভ করা।     উল্লেখ্য, (১) কুরবানীর পশুর উপর আরোহণ করে চলাচল করা জায়িয নেই, তবে যদি কুরবানীর পশুর পানীয় ও ঘাসের বন্দোবস্ত করানোর জন্য আরোহণ করে কোথাও যায়, তাতে কোন ক্ষতি নেই। অথবা পালিত পশু যদি হয়, যার উপর মালিক পূর্ব থেকেই আরোহণ করতো এখন মালিক তা কুরবানী দেয়ার নিয়ত করেছে, তাতে আরোহণ করলেও ক্ষতি হবে না। তবে কুরবানীর দিন উপস্থিত হলে কুরবানী করে দিতে হবে, আরোহণ করার জন্য রাখা যাবে না। (২) কুরবানীর পশুর পশম কেটে বিক্রয় করা জায়িয নেই। যদি কেউ বিক্রি করে, তবে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তা কুরবানীর পূর্বে হোক বা কুরবানীর পরে হোক। আর কুরবানীর পর কুরবানীর পশুর পশম থেকে ফায়দা হাছিল করতে পারবে অর্থাৎ নিজ কাজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়াও দিতে পারবে। যেমন পশমী কম্বল ও চাদর ইত্যাদি। (৩) কুরবানীর পশুকে হালের কাজে ব্যবহার করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ হালের গরুকে কুরবানী দেয়ার নিয়ত করে যে, আমি হালের এই গরুটি আগামী ঈদের দিনে কুরবানী করবো, তাহলে কুরবানীর দিনের পূর্ব পর্যন্ত হালের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। কুরবানীর দিন উপস্থিত হলে, হালের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আর রাখা যাবে না। (৪) কুরবানীর পশুর দ্বারা বোঝা বহন করা জায়িয নেই। তবে উক্ত পশু পালিত হলে বোঝা বহন করাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে কুরবানীর দিন উপস্থিত হলে তখন আর বোঝা বহনের জন্য রাখা যাবে না। কুরবানী করে দিতে হবে। (৫) কুরবানীর পশুর দুধ পান করা বা বিক্রি করা জায়িয নেই। যদি কেউ পান করে বা বিক্রয় করে তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। কিন্তু যদি উক্ত প্রাণীর দুধ মালিক পূর্ব থেকেই পান করে বা বিক্রয় করে আসছে অর্থাৎ পালিত পশু যদি হয়, তাহলে দুধ পান করতে বা বিক্রয় করতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে কুরবানীর দিন উপস্থিত হলে তা কুরবানী করে দিতে হবে। (৬) কুরবানীর পশুর গোবরের হুকুমও দুধের অনুরূপ।     স্মরণীয় যে, কুরবানীর পশু যদি আইইয়ামে নহরের মধ্যে কিনে এনে সাথে সাথে কুরবানী করে, তাহলে তা থেকে কোনো প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি কুরবানী পশুর দুধ, গোশত, পশম ইত্যাদি দ্বারা ফায়দা হাছিল করে, তাহলে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তবে যদি আইয়্যামে নহরের দু’চারদিন আগে কিনে এনে পশুকে খাওয়ায় বা পান করায়, তাহলে তার দ্বারা ফায়দা হাছিল করতে পারবে যেমন- উক্ত পশু দুধ দিলে তাও পান করতে পারবে খাদ্যের বিনিময়ে। (৭) কুরবানীর পশুর রশি, নাক বন্ধ, পায়ের খুরাবৃত, গলার আবরণ, জিনপোষ, লাগাম ইত্যাদি দ্বারা কোনো প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি এ সমস্ত দ্রব্য দ্বারা কোনো প্রকার ফায়দা হাছিল করে, তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে।


(14)  সুওয়াল :  হারাম মাল কামাই করে ধনী হয়েছে- এমন ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয হবে কি? কুরবানী ওয়াজিব হবে কি?
জাওয়াব: না, হজ্জ ফরয হবে না। কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কেননা হজ্জ ফরয হওয়ার ও কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য ছাহিবে নিসাব হওয়া শর্ত। এখন যেহেতু হারাম উপায়ে অর্জিত মাল তার নিজস্ব নয়, তাই তার উপর হজ্জ ফরয হবে না, কুরবানী ওয়াজিব হবে না।
বরং তার প্রধান ফরয হলো- যাদের থেকে হারাম উপায়ে মালগুলো নেয়া হয়েছে, তাদের এ সকল মাল ফেরত দেয়া।




see more -----------------------------------------------------------------------------------

কুরবানী , ফাযায়েল- মাছায়েলে কুরবানী /কুরবানীর তাৎপয্য

https://www.facebook.com/notes/163322593858435/

































 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন