মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

মাইকে জোরে জিকির কতটুকু যুক্তিযুক্ত ও আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা

আললাহর জিকির করা অত্যন্ত ভাল কাজ, সকলেই আল্লাহর জিকির করতে হবে ,তবে তাহল শরিয়তের গন্ডিতে থেকেই
জোরে বা আস্তে জিকির উভয়টা জায়েয এতে কোন সন্দেহ নেই ।
কিন্তু জোরে জিকির করতে গিয়ে অপরের ক্ষতি হয় এমন জিকির কাম্য নয় ।যেমন আমাদের দেশে অনেক  মসজিদে ফজরের পর মাইকে জিকির করা হয় ,এমন বিকট আওয়াজে জিকির করা হয় তাতে করে অনেকেই কমপ্লেইন করে থাকেন , যেমন আমি ব্যক্তিগত ভাবেও দেখেছি যে সমস্যা গুলো সামনে এসেছে ,
যেমন
1 অনেকে ঐ সময় ( মহিলা পুরুষ) নিজ ঘরে  ফজরের নামাজ আদায় করে থাকেন কিন্তু  বিকট আওয়াজের কারনে সূরা কেরাত ও ঠিক ভাবে  পড়তে পারেনা ,
2 অনেক  তাহাজ্জত গুজার ফজরের নামাজের পর একটু ঘুমান কিন্তু এতে করে তাঁর ঘুমের ক্ষতি হয় ।
3 অনেক রূগি থাকেন শব্দ দূষনের কারণে তার ক্ষতি হয়।
4 অনেক শিশু সন্তানের ঘুমের ক্ষতি হয়।
5 অনেকে বাডিতে বসে  ঐ সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন বা অধ্যয়ন করেন, কিন্তু আওয়াজের কারনে তা ঠিক ভাবে মন লাগিয়ে তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করতে  পারেনা ।
6 হয়তো কোন ছাত্র ফজরর পর অধ্যয়ন করতে চাইলে ঠিক ভাবে তা হয়না ।
7 শবে বরাতের রাত্রে আমি দেখেছি নিজ বাড়িতে একাগ্রচিত্তে কিছু এবাদত বন্দেগী বা দোয়া দরুদ ইত্যাদি পডবে, কিন্তু  এশার পর থেকে মাইকে বিকট আওয়াজে জিকির বা থেমে আলোচনা করার  কারনে  এবাদতে  মনোনিেশ করতে পারেনা  ।
    ইত্যাদি সমস্যা গুলো আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই শেকায়েত করেছেন 
  এবং আমি নিজেও ভূক্তভূগী তাই মাইকে জিকির করা কত টুকু উচিত কি উচিত না  মাইকে জিকির কতটুকু যুক্তিযুক্ত  ঐ কথা টুকু নীচের আলোচনা থেকেই বুঝতে পারবেন 

  এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া 

জোরে ও আস্তে যিকিরের সীমা

(৮) ماذهب إليه الفقيه أبوجعفرالهندواني (توفي ৩৬২) والإمام أبوبكر محمد بن الفضل من أنه لابد في الجهر من اسماع غيره فأدني الجهر عنده إسماع غيره ولوكان واحدا وأدني السر إسماع نفسه لامجرد تصحيح الحروف وهو الصحيح كمافي الوقاية والنقاية وملتقي الأبحر وهو مختار شيخ الاسلام وقاضي خان وصاحب المحيط والحلواني كمافي معراج الدراية واختاره شراح الوقاية والنقاية وملتقي الأبحر وشراح الهداية وعامة اصحاب الفتوي وفي المضمرات هو المختار (سباحة الفكر في الجهر بالذكر ص ১৮)

{৮} অর্থ : হযরত ফকীহ আবু জাফর হিন্দাওয়ানী (রহ.) [মৃত্যু ৩৬২ হিজরী] এবং হযরত ইমাম আবুবকর মুহাম্মদ ইবনে ফজল (রহ.) বলেন, জোরে যিকির হওয়ার জন্য আবশ্যক হল এতটুকু আওয়াজ হতে হবে যা অন্যরা শুনতে পায়। আর জোর যিকিরের নিম্ন স্তর হল কমপক্ষে একজন শুনতে পায়। আর আস্তে যিকিরের নিম্ন স্তর হল, এতটুকু আওয়াজে হতে হবে যাতে নিজে শোনা যায় শুধু শব্দ উচ্চারণ করলেই হবে না, এটাই বিশুদ্ধ মত। এমনই উল্লেখ আছে, 'বিকায়া', 'নিকায়া', 'মুলতাকল আবহুর' নামক কিতাবসমূহে। আর শায়খুল ইসলাম, কাজী খান এবং মুহীত কিতাবের লেখক হালওয়ানী (রহ.) এমনই বলেছেন। যা উল্লেখ আছে 'মিরাজুল দিরায়া' নামক কিতাবে। এ মতটি গ্রহণযোগ্য হিসাবে সীকৃতি দিয়েছেন, 'বিকায়া' 'নিকায়া' 'মুলতাকুল-আবহুর' 'হেদায়া ইত্যাদি কিতাবের ব্যাখ্যাকারীগণ এবং গ্রহণযোগ্য সমস্ত মুফতী সাহেবগণ। 'মুজমারাত' নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, এ মতটিই বেশী গ্রহণযোগ্য। (সিবাহাতুল ফিকির ফিজ জিহরী বিয যিকির ১৮ পৃ.)

 وفي الدر المختار ؛ أدني المخافتة إسماع نفسه ومن بقربه فلو سمع رجل أو رجلان فليس بجهر انتهي ؛ قال ابن عابدين في رد المحتار ... أدني المخافتة إسماع نفسه أومن بقربه من رجل أورجلين ؛ مثلا وأدني الجهر إسماع غيره ممن ليس بقربه كأهل الصف الأول ؛ وأعلاه لاحد له انتهي كلامه ؛ (سباحة الفكر في الجهر بالذكر ص ১৯)

{৯} অর্থ : দুররুল মুখতার নামক কিতাবে আছে, আস্তে আওয়াজের সর্বনিম্ন সীমা হল নিজে শুনতে পারা এবং নিকটবর্তী কেউ শুনতে পারা। যদি একজন বা দুইজন শুনতে পায় তাহলে সেটাও জোরে হিসাবে ধরা হবে না। বরং তা আস্তে আওয়াজের মধ্যেই থাকবে। এর ব্যাখ্যায় হযরত আল্লামা শামী (রহ.) ফতোয়া শামীতে বলেন, আস্তের সর্বনিম্ন সীমা হল নিজে শুনতে পারা এবং নিকটবর্তী কেউ শুনতে পারা। যেমন পাশের একজন বা দুইজন শুনতে পেল। আর জোরে যিকিরের সর্বনিম্ন স্তর হল এতটুকু আওয়াজে বলা যা নিকটে নয় এমন কেউ শুনতে পান। যেমন নামাজের প্রথম কাতারের মুসল্লিগণ। তবে জোরের সর্বোচ্চ আওয়াজের কোন সীমা নেই। (সিবাহাতুল ফিকরী ফিজ জিহরী বিয-যিকরি, ১৯ পৃ.)

সূরা আরাফের ২০৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় জালালাইন শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ "জুমাল" ও "ছাবী" গ্রন্থে উল্লেখ আছে,

السر هوان مخفى الصوت بحيث يسمعه المتكلم دون غيره وماعداه الجهرُ

অর্থ : আস্তে ঐ আওয়াজকে বলা হয়, যা বক্তা নিজে ব্যতীত অন্য কেউ শুনতে পায় না। এ ছাড়া সকল আওয়াজকেই জেহের বা জোরে বলা হয়। এ ব্যাখ্যায় সর্বনিম্ন আওয়াজ ঐ আওয়াজকে বলা হল, যা শুধু নিজে শুনা যায়। এ ছাড়া সকল উচ্চ আওয়াজকেই জেহের বা জোরে বলা হল। সুতরাং এখন স্পষ্ট যে আয়াতে মধ্যম আওয়াজ বলতে কোন আওয়াজকে বলা হচ্ছে অর্থাৎ চিৎকারের চাইতে কম এবং নিজে শুনা যায় তার চেয়ে বেশী আওয়াজে যিকির করার কথা বলা হচেছ। এ কিতাবে এর পর আরো উল্লেখ আছে

الا أن تقول ذلك اصطلاح الفقهاء بل السركما قالوا الجهر ما يسمعه البعيد

অর্থ : উল্লেখিত ব্যাখ্যা দ্বারা যদি জোরে আওয়াজের সীমা বুঝতে কষ্ট হয় তাহলে ব্যাখ্যাকারী স্পষ্টভাবে বলেন, এসব হল ফকীহগণের পরিভাষা মাত্র। মূলতঃ জোরে আওয়াজ ঐ আওয়াজকে বলা হয় যা দূরের মানুষ শুনতে পায়। আর খফী বা আস্তে আওয়াজের সীমা হল যা শুধু নিজ কানে শুনা যায়। "শরহে বেকায়া" নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

ادنى الجهر اسماع غيره وأدنى المخافة اسماع نفسه وهو الصحيح

অর্থ : জোরে আওয়াজের সর্বনিম্ন সীমা হল, যা অন্যকে শুনানো যায়। আর আস্তে আওয়াজের সর্বনিম্ন সীমা হল, যা নিজ কানে শুনা যায়। এ ব্যাখ্যাই সঠিক। (শরহে জালালাইন জুমাল ও ছাবী)


বন্ধুরা এবার আপনারাই চিন্তা করুন মাইকে বড় করে জিকির করা যাবে কি যাবেনা আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন । 

মৌলানা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া 
কাটাছরা,মিরসরাই,
চট্টগ্রাম 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন