শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

নাস্তিকদের প্রশ্নের সমোচীত জবাব

একটি ব্লগে এক ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক ইসলাম সম্বন্ধে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল।তার প্রশ্নগুলোর উত্তর ঠিক এভাবেই দেওয়া হয়েছিল: 

১) দশই রমজান শুক্রবার কেয়ামত। বাংলাদেশে যখন শুক্রবার তখন আমেরিকায় শুক্রবার নয়: মক্কায় বাংলাদেশের একদিন বা দুইদিন আগেই দশই রমজান হয়ে থাকে। তাহলে কিয়ামত সর্বত্র কিভাবে দশই রমজান হবে?

উত্তর: কেয়ামত যে “দশই রমজান”- এই কথা আপনি পেলেন কোথায়? কুরআন বা হাদীসের কোথায় “দশই রমজান” এর কথা উল্লেখ আছে?রেফারেন্স দিন। কেয়ামত সম্বন্ধে মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে বলা হয়েছে , কেয়ামত বা মহাপ্রলয় শুরু হবে শুক্রুবার হতে। কিন্তু কোন স্পেসিফিক মাসের কথা তো সেখানে  উল্লেখ নেই! আর যদি বলা হয় যে কেয়ামত শুরু হবে শুক্রুবার হতে , তবে তাতে সমস্যাই বা কোথায়? কোন না কোন একদিন তো কেয়ামত শুরু হবেই, হোক সেটা শুক্রুবার বা সোমবার।আর সেই কেয়ামত বা মহাপ্রলয়ের তান্ডব থেকে তো পৃথিবীর কেউই বাঁচতে পারবেনা,গোটা দুনিয়াই এফেক্টেড হবে এর দ্বারা ।একটি উদাহরণ দেই।ধরুন, আমি আপনাকে বল্লাম আগামি শুক্রবার সকাল ৯টা হতে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ৫দিন ব্যাপী টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে।তো,স্যাটেলাইট টিভির মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসে এই খেলা লাইভ উপভোগ করা সম্ভব,  ঠিক না?সময়ের ব্যবধান যাই হোক, ঐ সময়ে যে ঐ ক্রিকেট ম্যাচটি ঐ অঞ্চলে শুরু হবে তা-তো সত্যি,ঠিক না? ঠিক তদ্রুপ শুক্রুবার (যদি ধরে নেই সৌদি আরবের শুক্রবার) হতে কেয়ামত বা মহাপ্রলয় শুরু হলেও গোটা পৃথিবী জুড়েই এর ধ্বংসলীলা পরিলক্ষিত হবে। বুঝে আসছে?

২) সবেরবাত আরে ও বাংলাদেশে একদিনে হয় না। সবেবরাতের আগের দিন বাংলাদেশ থেকে দ্রুতগামী বিমানে সৌদি আরব গেলে দেখা যাবে সেখানে সবেবরাত একদিন আগেই হয়ে গেছে। তাহলে সে কিভাবে সবেবরাত পালন করবে? উল্টা ঘটলে দুবার সবেবরাত পাবে কে?

উত্তর: ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে “ভ্যালেন্টাইন্স ডে” পালন করা গেলে ১৫ই সা’বান শবে বরাত পালন করতে বাঁধা কোথায়? সময়ের ব্যবধানের কারণে বাংলাদেশের কোটা বাতিল হয়ে গেছে না-কি?
৩) কিছু কিছু দিন বেহেস্তের দরজা খোলা থাকে। ঐ দিনটা সারা পৃথিবীতে একে স্থানে একেদিন হলে বেহেস্তেও দরজা কদিন খোলা থাকবে?

উত্তর: আপনি বললেন- “কিছু কিছু দিন বেহেস্তের দরজা খোলা থাকে”-কোন কোন দিন খোলা থাকে একটু বলবেন কী? কুরআন/হাদীসের রেফারেন্সটাও কি একটু দিবেন? হাদীসে আছে শুধু মাত্র “রমজান” মাসেই বেহেশতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। এর বাইরে অন্য কোন মাসে/দিনে বেহেশতের দরজা খোলা হয় এধরনের কোন উল্লেখ হাদীসে শরীফে নেই। থাকলে সেটা আপানার বানানো।
৪) মেরুতে ছয়মাস দিন ও ছয় মাস রাত থাকে। সেখানে কিভাবে নামাজ-রোজা পালন করবে?

উত্তর: একদম সোজা! এরকম একটি প্রশ্ন নবীজি(স.)কে করা হয়েছিল। প্রশ্নটি ছিল “দাজ্জাল” এর আবির্ভাব এর পরে নামাযের সময় নির্ধারণ সংক্রান্ত। যখন দাজ্জাল আবির্ভূত হবে তখন এক একটি দিন এক বছরের সমান লম্বা হবে। এ বিষয়ে সাহাবারা নবীজির (সা.) দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিজ্ঞেস করেছিলেন -“ও আল্লাহর নবী! এমন একটি সময় আসবে যখন একটি দিনের দৈর্ঘ এক বছরের সমতুল্য হবে তখন কী এক দিনের নামায  কী গোটা বছরের জন্য যথেষ্ট হয়ে হবে? উত্তরে নবীজি (স.) বলেছিলেন-না, তখন তোমরা দিনের সময়গুলোকে ভাগ করে করে নিবে।” অর্থাত একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রতি ওয়াক্তের নামাযগুলো আদায় করে নিবে। বুঝলেন?

আর, মেরুতে যেহেতু ছয় মাস দিন ও ছয় মাসরাত সেহেতু সেক্ষেত্রে আপনি উপরোক্ত হাদীস মতে সময়কে ভাগ করে নিবেন এবং প্রতি ওয়াক্তের নামায গুলো আদায় করবেন এবং রোজাও ঐভাবে পালন করবেন। তাছাড়া, আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে উক্ত মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি কোন দেশের সময়ানুযায়ী নামায-রোজা পালন করা, মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগে যেটি খুবই সহজ সাধ্য কাজ । ক্লিয়ার?

৫)যারা কোনদিন ইসলামের দাওয়াত পায়নি এবং কোন অপরাধ করেনি তারা কেন বেহেস্তে যাবে না? গোলাম আজম কোন দিন না কোনদিন বেহেস্তে প্রবেশ করবে মুসলিম বলে অথচ মাদারতেরেসা প্রবেশ করবেন না অমুসলিম বলে এটা কি ন্যায় বিচার?

উত্তর: আপনার প্রশ্নটা ছিল-“যারা কোনদিন ইসলামের দাওয়াত পায়নি এবং কোন অপরাধ করেনি তারা কেন বেহেস্তে যাবে না?” তার আগে আপনি আমাকে বলুন-“যারা ইসলামের দাওয়াত পেয়েও ইসলাম কবুল করেনি তারা কেন বেহেস্তে যাবে?

আর আপনি জানতে চেয়েছেন মাদার তেরেসা বেহেস্তে প্রবেশ করবেন কি-না? তার আগে চলুন জেনে নেই পবিত্র কুরআনের আলোকে বেহেস্তে প্রবেশের ক্রাইটেরিয়াগুলো কী কী? সূরা আল আসরে (১০৩:১-৪) আল্লাহ সময়ের কসম করে বলছেন, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে লিপ্ত রয়েছে তারা ব্যতীত যারা ঈমান আনে, সত কাজ করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্য ধারনের উপদেশ দেয়। অর্থাত বেহেস্তে প্রবেশের শর্ত চারটি, যথা-ঈমান, সত কাজ, সত্যের উপদেশ এবং ধৈর্যের উপদেশ।মাদারতেরেসা যদি এই চারটি উপাদান মেনে চলে থাকেন তবে তিনি অবশ্যই বেহেস্তে প্রবেশ করবেন; অন্যথায় নয়।
৬)পুরুষ বেহেস্তেকমপক্ষে ৭০টি হুরী ও তার স্ত্রীকে পাবে এবং নারী বেহেস্তে গোলেমান ও তার স্বামীকেপাবে। তাহলে পুণ্যবান পুরুষের পাপিষ্ঠা স্ত্রীএবং পূণ্যবতী নারীর পাপী স্বামীও কি বেহেস্তে যাবে?

উত্তর: এক কথায় ‘না’। যেমন: হযরত আসিয়া(রা.) এর স্বামী ছিল পাপিষ্ঠ ফেরাউন। সুতারাং ফেরাউন বেহেস্তে যাবেনা। তেম্নি হযরাত লুত (আ.)এবং হযরাত নূহ’র(আ.) এর স্ত্রী ছিল পাপিষ্ঠ, তারাও বেহেস্তে যাবেনা। আল্লাহ যেমন বলছেন-“যারা কুফুরির নীতি অবলম্বন করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ নূহের স্ত্রী আর লূতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত পেশ করছেন। এরা ছিল আমার দু’পূণ্যবান বান্দার অধীনে।কিন্তু তারা দুজনেই তাদের স্বামীদ্বয়ের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারলনা।”(৬৬:১০)। ক্লিয়ার?

৭) হোসেনের পরজয়ের পর হোসেন ও তার বংশধরদের হত্যাকারীরা প্রায় ৬শ বছর রাজত্ব চালায়। এরাই প্রকৃতপক্ষে ইসলামের প্রসার ঘটায়। মুহম্মদের বংশধরদের রক্তে যাদের হাতরঞ্জিত তাদের হাতে যারা মুসলমান হয়েছে তারা কি প্রকৃত মুসলমান হবে?

উত্তর: আপনি বলেছেন-হোসেনের পরজয়ের পর হোসেন ও তার বংশধরদের হত্যাকারীরা না-কি প্রায় ৬শ বছর (!) রাজত্ব চালিয়েছিল।ইতিহাসের এতবড় মিথ্যা কথাটা আপনি কোথায় পাইলেন? হোসেনের হত্যাকারী ইয়াজিদ ৬৮০-৬৮৩ খ্রি. মোট তিন বছর রাজত্ব করেছিল।আর ইয়াজিদের উমাইয়া বংশ ইয়াজিদের মৃত্যুর পর অর্থাত ৬৮৩খ্রি. হতে ৭৫০ খ্রি.পর্যন্ত মোট ৬৭ বছর রাজত্ব করেছিল। তো, আপনি ৬৭ বছরকে “ছয়শ” বানাইলেন কেন? আর ইয়াজিদ না হয় খারাপ লোক ছিল তাই বলে যে তার বংশধররা খারাপ- একথা আপনাকে কে বলেছে?

৮)মুসলমানদের মধ্যে অনেকগুলো ভাগ ও উপভাগ রয়েছে। এদের মধ্যে কারা প্রকৃত মুসলমান এবং কেন? অন্যরা কি মুসলমান নয়?

উত্তর: দেখুন, একটি ক্লাশে ভালো ছাত্র যেমন থাকে, তেমনি খারাপ ছাত্রও থাকে।যারা ভালো করে মন দিয়ে পড়াশুনা করে তাদেরকে আমরা ভালো ছাত্র বলি, আর যারা করে না তাদেরকে আমরা বলি খারাপ ছাত্র বা দুষ্টছাত্র,  কিন্তু খারাপ বা দুষ্টদের অছাত্রও বলিনা। তেমনি মুসলমানদের মধ্যেও ভালো যেমন আছে, তেমনি মন্দও আছে। যেসকল মুসলমান আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান পোষণ করে এবং  কুরআন-হাদীস অনুযায়ী আমল করে তাঁরা ভালো মুসলমান আর যারা এসব পালন করেন না তাদের আমরা বলি খারাপ মুসলমান। আশা করি উত্তরটা পেয়েছেন। 
৯)উসমানের ইসলামবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করায় সাহাবা আবুজর গিফরীকে নির্বাসন দেয়া এবং তারা নিজের পছন্দসই কোরান বাদে বাকীগুলিকে পুরিয়ে ফেলার পরও সে কিভাবে আমাদের খলিফা? এছাড়া আলী বুদ্ধি, কৌশল এবং শেষে পেশিতে মোয়াবিয়ার কাছে পরাস্ত হলেন সে কিভাবে আল্লার তরবারী এবং খলিফা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? এছাড়া আবু বক্কর ও ওমরকে শ্বশুর এবংজামাতা অর্থাত আত্মীয়ার বন্ধনে আবদ্ধ করা কি ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল নয়? চার খলিফাই একই বংশভূক্ত এবং কেউ জামাতা কেউ শ্বশুর এটা স্পষ্টতই পারিবারিককরণ নয় কি?

উত্তর: প্রথমে আসি আবুজর গিফারী প্রসঙ্গে।আপনি বলেছেন, হযরত উসমান আবুজর গিফরীকে নির্বাসনে দিয়েছিলেন।তো তাতে সমস্যা কোথায়?আবুজর যে নির্বাসনে যাবেন এবং সেখানেই তাঁর একাকী মৃত্যু ঘটবে একথা রাসুলুল্লাহই(স.) ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপরিচালনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানকে অনেক সময় অনেক অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হতেওপারে, তা কারোও কাছে পছন্দীয় হতে পারে বা না-ও হতে পারে। হযরত উসমান এবং আবুজরগিফরী দু’জনেই আল্লাহর নবীর খুব ভালো সাহাবী ছিলেন।রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে হযরত উসমানের সাথে আবুজর গিফরীর কিছুটা মতভেদ হয়েছিল সত্যি, কিন্তু তাতে তাঁদের মর্যাদা কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি। আর ১৪০০ বছর পর এসে  আপনি যদি হযরত উসমানকে খলিফা হিসেবে না-ও মানেন তাতে উসমানের খেলাফতের কিচ্ছু আসে যায় না।

দ্বিতীয়ত: আপনি প্রশ্ন তুলেছেন হযরত উসমান কতৃক কুরআন পুড়ানো নিয়ে। আচ্ছা,বলুনতো কোন ঘটনা বা কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত উসমান বিভিন্ন স্থানে কুরআনের কপি পুড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন? ব্যাকগ্রাউন্ড জানলে এই প্রশ্ন আপনি কখনোই করতেন না।

আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল- “আলী বুদ্ধি, কৌশল এবং শেষে পেশিতে মোয়াবিয়ার কাছে পরাস্ত হলেন সে কিভাবে আল্লার তরবারী এবং খলিফা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন?” 

দয়া করে বলবেন কী হযরত আলী কোন যুদ্ধে এবং কোথায় মুয়াবিয়ার কাছে “বুদ্ধি, কৌশল এবং পেশিতে” পরাস্ত হয়েছিলেন?সিফ্ফিনের যুদ্ধে আসলেই কী কোন পক্ষ জিতেছিল? 

আর হযরত আলীর টাইটেল যে “আল্লাহর তরবারী” ছিল একথা আপনাকে কে বলেছে? মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা দরকার।

আর আপনার তৃতীয় আপত্তি ছিল- “চার খলিফাই একই বংশভূক্ত এবং কেউ জামাতা কেউ শ্বশুর এটা স্পষ্টতই পারিবারিককরণ নয় কি?” বংশভুক্তকেউ যদি উপযুক্ত থাকে তবে তাতে সমস্যা কোথায়? আর বলুন তো চার খলিফা কোন কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং কীভাবে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন? তারা কী টুপ করে ক্ষমতায়বসে পড়েছিলেন না-কি তাঁদের নির্বাচিত করা হয়েছিল? 


১০)ইমাম মেহেদী এত অস্ত্রের মুখে কেন তরবারীদিয়ে যুদ্ধ করবে এবং ঘোড়ায় করে সংবাদ পাঠাবে।

উত্তর: “ইমাম মেহেদী  তরবারী দিয়ে যুদ্ধ করবে এবং ঘোড়ায় করে সংবাদ পাঠাবে”- এই বক্তব্যটি কুরআন শরীফের কোন সূরায় বা  কোন হাদীসে উল্লেখ আছে দয়া করে বলবেন কী? ইমাম মাহদী আগমন সম্পর্কিত ৪০টি নির্ভরযোগ্য হাদীস আমি পড়ে দেখেছি, কিন্তু কোথাও ইমাম মাহদী যে ঘোড়ায় চড়বেন বা তরবারী দিয়ে যুদ্ধ করবেন এমন তথ্য  কোথাও পায়নি। বরং, ইমাম মাহদী আগমন সংক্রান্ত এক হাদীসে বলা হয়েছে এভাবে-“যখন প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হবে তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীনকে সহায়তা করার জন্য নন-আরবদের মধ্য থেকে এমন এক সেনাবাহিনীর উম্মেষ ঘটাবেন,যাঁদের হাতে থাকবে উন্নতমানের অস্ত্র-শস্ত্র এবং তাঁরা হবে দ্রুত আরোহী (গ্রেটরাইডার)।”(সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-৯৭১, ভল্যুম-৩)।এই হাদীসে ইমাম মাহদীর সময়ে উন্নতমানের যানবাহন এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে ইঙ্গিতকরা হয়েছে। তো, ‘ঘোড়ায় চড়া’ এবং ‘তরবারী ব্যবহারের’ তথ্যগুলি কোত্থেকে পেয়েছেন দয়াকরে একটু বলবেন কী?

১১)মানুষ মাটি দিয়ে সৃষ্টি। অন্য প্রাণীরা মাটির সৃষ্টি নয়। অথচ মানুষের কোষের সাথে অন্য প্রাণীর কোষে প্রচুর মিল রয়েছে। এমনকি গঠন পরিপাক, জনন প্রনালী অনেকটাই এক রমক অর্থাত তারা একই ভাবে সৃষ্টি। এর কারণ কি?

উত্তর: ভালো প্রশ্ন।এর জবাবটা পবিত্র কুরআনেই দেয়া আছে। সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-“… আর প্রাণসম্পন্ন সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম, তবু কী তারা বিশ্বাস করবেনা?(২১:৩০) ।” পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে-“আল্লাহ পানি হতে সমস্ত জীবন সৃষ্টি করেছেন(২৪:৪৫)।” এছাড়া বলা হয়েছে,“তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানুষ,…(২৫:৫৪)।” যেহেতু মানুষ সহ  সমস্ত প্রাণীই পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে,সেহেতু মানুষের কোষের সাথে অন্য প্রাণীর কোষের প্রচুর মিল রয়েছে এবং পরিপাক,জননপ্রণালীও অনেকটা একরকম। বুঝতে পেরেছেন?

১২)ঈমানদারদের চেয়ে বেঈমানদাররা বেশি সত কাজ করছেন কেন? আল্লাহর রহমত মুসলমানদের উপর কি করে গেছে? মুসলমানদের সাফল্য এত কম কেন? মুসলমানরা অনেকক্ষেত্রেই বিধর্মীদের দয়ায় বেঁচে থাকে কেন? তাহলে বিধর্মীরা কি আল্লাহর বেশি প্রিয় হয়ে যাচ্ছে?

উত্তর: “মুসলমানদের সাফল্য এত কম কেন?”এই প্রশ্নথেকেই বোঝা যাচ্ছে মুসলমানদের অতীত ইতিহাস সম্বন্ধে আপনি একদম ওয়াকিবহাল নন।সভ্যতার বিকাশ এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের উম্মেষে মুসলমানদের অবদান কী ছিল তাসংক্ষিপ্তভাবে জানতে নীচের লিংকগুলো ভিজিট করুন;


তবে, হাঁ,মুসলমানরা বর্তমানে সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেছে, কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীর ৬০ শতাংশ খনিজ সম্পদের মালিক হওয়া সত্বেও মুসলমানদের পিছিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কুরআন ও হাদীসের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া। যাহোক, এটি আরোও বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার  দাবী রাখে।

আপনি আরো প্রশ্ন করলেন- “মুসলমানরা অনেকক্ষেত্রেই বিধর্মীদের দয়ায় বেঁচে থাকে কেন?” এটা কী একটা প্রশ্ন হলো? মুসলমানরা যদি ইউরোপ-আমেরিকায় বিধর্মীদের তেল সরবরাহ বন্ধকরে দেয় তবে তাদের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। তবে কী আপনি বলবেন যে বিধর্মীরা মুসলমানদের দয়ায় বেঁচে আছে !! পৃথিবীতে বেঁচে থাকার তাগিদে সবাই সবার নির্ভরশীল,আল্লাহপাক সমাজটাকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন। যেমন: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলছেন,“তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছেন, মর্যাদায় তোমাদেরকতককে কতকের উপরে স্থান দিয়েছেন, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি ওগুলোর মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য,…”(৭:১৬৫)।

আপনি আরোও জিজ্ঞেস করলেন- ‘ঈমানদারদের চেয়ে বেঈমানদাররা বেশি সত কাজ করছেন কেন?’ ঈমানদার বা বেঈমানদার-কে কত পরিমাণ  সত কাজ করছে সে সংক্রান্ত কোন গবেষণাকর্ম কী আপনারকাছে আছে ? থাকলে একটু দেন তো। সতকাজ পরিমাপের মাপকাঠিই বা কী?


১৩) চোর ডাকাতদের রেজেক কে দেয়? যদি আল্লাহই চোর ডাকাতদের রেকেজ এভাবেই দেয় তবে তাদেও করার কি আছে? জারজ সন্তানদের রুহু যদি আল্লাহই সৃষ্টি করে থাকেন তাহলে শয়তান এখানে কি করেছে? মানুষের ভাগ্য ও হেদায়েত আল্লাহর হাতে থাকলে শয়তানের গুরুত্ব কি?

উত্তর: চোর ডাকাতদের রেজেক আল্লাহই দেন। মানুষেরসামনে সবসময় দু’টি পথ খোলা থাকে।একটি ভালো অপরটি মন্দ। দু’টি পথই আল্লাহর সৃষ্টি।দুধ খেলে যেমন শক্তি হয় তেমনি মদ খেলেও শক্তি হয়। ভালো বা মন্দ বেছে নেওয়ার দায়িত্ব মানুষের ।আল্লাহ মানুষকে যেমন ভালো কাজ করতে বাধ্য করেন না তেমনি মন্দ কাজ করতেও বাধা দেন না। তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গরু বা ছাগলকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেয়া হয়নি।  গরু বা ছাগল চাইলেই বিমানে করে উড়ে গিয়ে আমেরিকান গরু বা ছাগলের সংগে দেখা করতে যেতে পারে না।কিন্তু মানুষ চাইলে তা পারে।  গরু বা ছাগল চাইলেই সারা বছর প্রজনন করতে পারে না,কিন্তু মানুষ তা পারে ।মানুষকে অফুরন্তস্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। তাই শেষ বিচারের দিন মানুষের বিচার হবে, গরু-ছাগলের হবেনা। 
১৪)স্রষ্টা ছাড়া যদিকিছু সৃষ্টি না হয়। অর্থাত বলা হয় আল্লাহ না থাকলে এত সৃষ্টি হল কিভাবে এবং সুনিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কিভবে? তাহলে স্রষ্টা ছাড়া আল্লাহর নিজের সৃষ্টি কিভবে হল?

উত্তর: প্রশ্ন করলেন, “স্রষ্টা ছাড়া যদি কিছু সৃষ্টি না হয়। তাহলে স্রষ্টা ছাড়া আল্লাহর নিজের সৃষ্টি কিভবে হল?” ঠিক আছে, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম “এক্স” নামকবস্তু আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে। তবে, এবার বলুন তো এই “এক্স”কে কে সৃষ্টি করেছে?
১৫)মানুষকে লোভ দেখিয়ে কোন কাজ করানো বা ভয় দেখিয়ে কোন কাজ করানো অবশ্যই ঠিক নয়। তাহলে বেহেস্ত-দোজখের লোভ বা ভয় দেখিযে তাকে ধর্মের পথে আনানো কি সঠিক?

উত্তর: “ভালো করে পড়াশুনা কর, না হয় ফেল করবা”-এইভয় দেখিয়ে মা-বাবা যদি সন্তানকে উপদেশ দিতে পারে তবে বেহেশত-দোজখের লোভ বা ভয় দেখিয়ে ধর্মের পথে আনা  সঠিক হবে না কেন?

১৬)বৃষ্টিপাত নাকি মিকাইল ফেরেস্তা নিয়ন্ত্রন করেন। বৃষ্টিপাতের সিস্টেম আজ মানুষের জানা সেই সিস্টেমে মিকাইল ফেরেস্তার প্রয়োজন কোথায়? মানুষ বর্তমানে কৃত্রিম ভাবেও বৃষ্টি নামাচ্ছে। এটাকি মিকাইল ফেরেস্তার কাজে হস্তক্ষেপের সামিল নয়? তারপরেও তিনি নীরব কেন?
উত্তর: আচ্ছা, আজরাইল ফেরেশতা তো মানুষের জান কবজ করে। যখন মানুষ আত্মহত্যা করে তখন কী আজরাইলের কাজে হস্তক্ষেপ ঘটে? কী মনে হয়?


১৭)মৃত্যুর পর হিসাব নিকাশের পর বেহেশত দোযখ বরাদ্দ হবে, তাহলে কবরের আযাব কি জিনিশ? ঐখানে কিসের বেসিসে পানিশম্যান্ট দেয়া হবে? যদি মৃত্যুর পরপরি কাউকে বেহশত এর সুখ আর দোযখের কষ্ট ভোগ করান শুরু হয়ে যায় তাহলে শেষবিচারের দরকার টা কি?

উত্তর:সেই সহজ ব্যাপারটাও বুঝলেন না! একজন খুনীকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন কী করা হয়?তাকে হাজতে নেয়া হয়, এজাহার,চার্জশীট প্রস্তুত করা হয়, কোর্টে চালান করা হয়, জেলে নেয়া হয়, রিমান্ডে নেয়া হয় , স্বাক্ষ্য-প্রমাণ আনা হয়,বিচার করা হয়, সবকিছু প্রমাণ হলে তার ফাসীঁ হয়। ঠিক তেমনি কবর আযাব হচ্ছে রিমান্ড ও বিচারাদির প্রাথমিক প্রক্রিয়া আর শেষ বিচার হচ্ছে চুড়ান্ত বিচার যার পরেই হবে আসল শাস্তি বা মুক্তি।কথা বুঝে এসছে?

http://www.shodalap.org/rasel-eusoofi/24754/ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন