মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা ও গুরুত্ব : ইবরাহীম খলিলুল্লাহ ছাদেকী
শ্রমের গুরুত্ব
ইসলামি সমাজের প্রত্যেক নাগরিককে জীবিকার্জন করতে হবে, রিজিক অন্বেষণে বিচরণ করতে হবে বিস্তৃত এই পৃথিবীতে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন। তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব তোমরা তার পৃষ্ঠে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক আহরণ কর। [সূরা মুলূক : ১৫]
শ্রম বলতে বুঝায় কোন দ্রব্যের উৎপাদনে বা রাষ্ট্রের সেবায় ব্যক্তির একক বা যৌথ প্রয়াস। শ্রম দারিদ্র মোকাবেলার একমাত্র প্রথম হাতিয়ার। সম্পদ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। মানুষকে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে প্রেরণ করেছেন। আর পৃথিবীকে আবাদ ও বসবাস যোগ্য করার অন্যতম উপাদান হল শ্রম।

শ্রমের ব্যাপারে ইসলামের মূলনীতি

১. ইসলাম প্রত্যেক নাগরিককে স্ব-স্ব যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও আগ্রহের বিত্তিতে যে কোন কর্মক্ষেত্র নির্বাচন করার অবাধ স্বাধীনতা দান করে। রাষ্ট্রের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোন নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে কোন নাগরিককে গ্রহণ করতে বাধ্য করে না। অনুরূপ ইসলামে নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তি ও সমাজের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক ক্ষতিকর কর্ম  ছাড়া যে কোন কাজে ইসলাম বাধা সৃষ্টি করে না।
২. যে রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামি  ব্যবস্থা ও বিধি বিধান বলবৎ আছে, সে রাষ্ট্রে প্রত্যেকে নিজের শ্রমের ফসল ভোগ করতে পারে এবং নিজের মৌলিক
প্রয়োজন ও পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। ইসলামি ব্যবস্থায় কোন শ্রমিক নিজের শ্রমের ফল ও ফসল থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। শ্রমিক তার ঘাম শুকাবার আগে শ্রমের বিনিময় প্রাপ্ত হবে। [আল-হাদীস] এটা ইসলামের শিক্ষা। শ্রমের বিনিময় দানে কোন ধরণের গড়িমসি চলবে না। শ্রমের যথাযথ মূল্য না দেয়া একটি জুলুম। আর জুলুম ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। অতএব একজন শ্রমিক তার শ্রমের পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করে শ্রমিক স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হতে পারে। আর ইসলামও চায় অর্থ, সম্পত্তির মাধ্যমে একজন মানুষ সূখী জীবন গড়ে তুলক, যেন সে অন্য কারও মুখাপেক্ষী না হয়।

রিযিক অন্বেষণে শ্রমদান ইবাদত

অনেকে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার নাম করে উপার্জন হতে বিরত হন। তাদের মতে মানুষকে ইবাদতের জন্য যেহেতু সৃষ্টি করা হয়েছে তাই ইবাদতই করে থাকব। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, জ্বিন ও মানুষকে আমি আমার উপাসনার জন্যই সৃষ্টি করেছি। [সূরা জারিয়াত : ৫৬]
তাই নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য আল্লাহর ইবাদতে বিঘœতা সৃষ্টি করা যাবে না। আল্লাহর হক্ব আদায়ের জন্য অবশ্যই পুরোপুরি ইবাদতে নিবেদিত প্রাণ হতে হবে। সন্নাসিরা যেমন বসে উপাসনামগ্ন থাকে। এ শ্রেণীকে রাসূল সা. শিক্ষা দিয়েছেন যে, ইসলামে সন্ন্যাসবাদ নেই। পার্থিব কাজ-কর্ম যখন বিশুদ্ধ নিয়তে, ইসলামি বিধিবিধান লংঘন না করে সম্পাদন করা হয়, তাও ইবাদতে পরিগণিত হয়। মানুষ যখন নিজের স্বার্থ, পরিবারের লালন, আত্মীয়-স্বজনের দয়া এবং সৎকাজে সহায়তা দানের জন্য রোজগার করে, তা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর একটি অংশ হিসেবে ধর্তব্য হয়। অতএব রিযিক সন্ধানে শ্রম, চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদির মাধ্যমে যে কেউ রিযিক অন্বেষণ করতে গেলে তা ইবাদতের পরিপন্থী নয়। বরং রিযিক অন্বেষণে শ্রম দান করা এটাও একটি বৃহৎ ইবাদত। কেননা বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী ব্যবসায়ীগণ সিদ্দীক ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবে। ব্যবসা ইবাদত, ব্যবসায় শ্রম দেয়া সুন্নতে নববী। অতএব ব্যবসা কিংবা অন্য ক্ষেত্রে হালাল উপার্জন করার জন্য শ্রম দান করা ইবাদত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই।

বিদেশে শ্রম দানে ইসলামের উৎসাহ

অনেকে নিজের দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় বেকারত্ব গ্রহণ করেন। রোজগারের জন্য তারা স্বজন ত্যাগ করতেও আগ্রহী নয়। বিদেশে কাজের সুযোগ পেয়েও তারা দেশে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব নিয়ে বাস করেন। ইসলাম এ শ্রেণীর মানুষকে দেশ ত্যাগের জন্য উৎসাহিত ও প্রবাসী জীবন গ্রহণ করতে উদ্ভুদ্ধ করেন। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন- “প্রবাসে যাও ধনী হতে পারবে।” [তাবরাণী আওসাত : ৫/৩২৪ হাঃ ৯৬৫৭]
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যে আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করবে, সে পৃথিবীতে অনেক স্থান ও স্বচ্ছলতা পাবে। [সূরা নিসা : ১০০]
অতএব কর্ম সংস্থানের জন্য  দেশ ত্যাগ করা ইসলামের  পরিপন্থী নয়। ইসলাম  তাকে পরিপূর্ণ (ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ)  সমর্থন করে। এজন্য  আমাদের উচিত হবে,  আল্লাহ প্রদত্ব শ্রম দিয়ে   নিজের আর্থিক উপার্জনের ব্যবস্থা করি, সুন্দর পরিবার  গঠন করি, শ্রমদানে মানুষকে উৎসাহিত করি, বেকারত্ব রোধ করি, ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের চেষ্টা করি। নিজেরে শ্রমের মাধ্যমে নিজের সুন্দর জীবন গঠন করা হয়। আর বিক্ষাবৃত্তি হল সর্ব ধর্মে স্বীকৃত ঘৃণিত কাজ। তাই আসুন মানবজাতিকে ঘৃণিত কাজ থেকে বাঁচাই। আর নিজের শ্রমের মাধ্যমে নিজে প্রতিষ্ঠিত হই। অপরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা করি। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, তরুণ ইসলামি গবেষক।

আল জান্নাতের অন্নান্য পাতা

নির্বাচিত

ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় নারীর অবদান : ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

নারী ও পুরুষের সমন্বিত প্রয়াস ও অংশীদারিত্বে মানব জাতির বিকাশ হয়েছে। সমাজ ও সভ্যতা নির্মাণে নারী বা পুরুষ কারো ভূমিকা কোন অংশে কম নয়। কিন্তু ইতিহাসের বাস্তবতা হচ্ছে, মানব জাতি যখন যেখানে আসমানী শিক্ষা হতে দূরে সরে গেছে, সেখানে সমাজের

মানবজীবনে মহানবী সা. এর সীরাতের গুরুত: ড. মোহাম্মদ আরিফুর রহমান

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সর্বশেষ নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর মহান আদর্শ ও পূতপবিত্র চরিত্রের জন্য তিনি মানবজাতির ইতিহাসে সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব। মানবজীবনে তাঁর সীরাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের ঘোর

খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের দৃষ্টিতে নবীজির সত্যতা: শামসুদ্দীন সাদী

পৃথিবীতে আগমনের পূর্বেই বিভিন্ন আসমানি কিতাবে নবীজির আগমনের সুসংবাদ ও আলামত লিপিবদ্ধ ছিল। সর্বপ্রথম যেই রমজানে নবীজির ওপর ওহি অবতীর্ণ হয়, জিবরাইলের প্রচ- চাপায় নবীজি জ্বরে আক্রান্ত হন। শরীরে কম্পন আরম্ভ হয়। কোনো মতে বাড়িতে এসে হযরত খাদিজাকে বললেন, আমাকে

ঈদুল ফিতর উদযাপন : তাৎপর্য ও শিক্ষা / মাওলানা আহমদ মায়মূন

দুনিয়ার সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে উৎসব দিবস পালনের রেওয়াজ চলে আসছে। লোকেরা উৎসবের দিন সাজগোজ করে বের হয় এবং আনন্দ-ফুর্তি করে। জীবনের কান্তি-অবসাদ দূর করে মন-মেজাজকে প্রফুল্ল করে তোলার জন্য আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা মানুষের জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ইরানের

সুখি দাম্পত্য জীবন গড়তে রাসূল সা. এর আদর্শ / ড. মুফতী আবদুল মুকীত আযহারী

বিবাহে সচ্ছলতা বিবাহ করা ও করানো মুসলমানের জন্য একটি কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত (পুরুষ হোক বা নারী) তাদেরকে বিবাহ করিয়ে দাও এবং তোমাদের মধ্যে দাসদাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও (বিবাহ করিয়ে দাও)। যদি তারা অভাবী হয়

আল-কুরআনে সাহাবীদের যত জিজ্ঞাসা : হালাল বস্তুনিচয়-সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা / মাওলানা মুজিবুর রহমান

[জুন সংখ্যার পর] পালক পুত্র বধু নিজ পুত্রবধূ হারাম। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নাই। তদ্রƒপ পালকপুত্রবধূ হালাল এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নাই। কারণ, আল্লাহ তাআলা পালকপুত্রকে নিজ পুত্রের মতো মর্যাদা প্রদান করেননি। এরশাদ হচ্ছে, আল্লাহ তোমাদের মুখে-ডাকা পুত্রকে ঔরসজাত

বিয়েতে অবহেলিত কিছু আমল / মুফতী পিয়ার মাহমুদ

বিয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসা যেভাবে মানব জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন, শিা-দীার প্রয়োজনীয়তা যেভাবে যুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে, একজন যৌবনদীপ্ত মানুষের সুস্থ জীবন যাপনের জন্য বিয়ের অপরিহার্যতা তেমনই। তাই ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফযীলত ও মর্যাদা তুলনাহীন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,

সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কুরআন মাজীদ / এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান

যাবতীয় কল্যাণ, সর্বপ্রকার জ্ঞান-গরিমা, প্রজ্ঞা ও রহস্যের আধার হল আলকুরআন। একে অনুসরণ করেই দুনিয়া ও আখিরাতে পাওয়া যায় সুখের সন্ধান, মেলে সঠিক পথের দিশা। আলকুরআন মহান আল্লাহর বাণীর অপূর্ব সমাহার বিস্ময়কর এক গ্রন্থের নাম। আলকুরআন আল্লাহর প থেকে অবতীর্ণ সংরতি

ঈদের আনন্দ নিভে গেল আবদুল মালেক মুজাহিদ

কতিপয় লোক বড়ই দুর্ভাগা হয়ে থাকে। তারা পিতামাতার অধিকার সমূহের প্রতি আদৌ পরোয়া করে না। স্ত্রী প্রেমে তারা এতই উন্মত্ত হয়ে পড়ে যে, মাতাপিতাকে সম্পূর্ণরূপে ভুলে বসে। মাতাপিতার আকাঙ্খার প্রতি মোটেই সম্মান প্রদর্শন করে না। এটা এরূপই এক হতভাগ্য ব্যক্তির

সম্পাদকীয় : স্বাগতম জান্নাতের প্রস্তুতি মাস রমযান

পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে মাসিক আল-জান্নাতের অগণিত পাঠক-পাঠিকা, মু‘মিন মুসলমান ভাইবোনদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি। মাহে রমজানের সাথে আল- জান্নাতের একটি সম্বন্ধ আছে। এই সম্বন্ধ তার নামের কারণে। হয়তবা প্রতিমাসে তাতে যে লেখাগুলো ছাপা হয়, তারও কারণে। কেননা,

পবিত্র রোযার বিধান : শিক্ষা ও উদ্দেশ্য / মাওলানা আহমদ মায়মূন

রমজানের রোযার বিধান দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমাদের জন্য রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য; যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। [সূরা বাকারা: ১৮৩] রোযাকে আরবীতে সওম বলা হয়। ‘সওম’ মানে বিরত থাকা,

অফুরান রহমত ও বরকতের বেহেশতি সওগাত তারাবীহ্ নামায / ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

মাহে রমযানের একটি বিশেষ আকর্ষণ নামাযে তারাবীহ্। বলা যায়, এটি এ মাসের আধ্যাত্মিক অলংকার ও সৌন্দর্য। রমযানের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরই শুরু হয় এ নামায। মুসল্লীদের ঢল নামে মসজিদে মসজিদে। যারা অবহেলায় এতদিন ঠিকমত নামায আদায় করেনি, তারাও সারীবদ্ধ হয়

মাসিক আল-জান্নাত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন