শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

বীজ থেরাপি কি

আজ Seed Therapy বা বীজ দিয়ে চিকিৎসা বিষয়ে সংক্ষেপে জানবো ।
.
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে শুমাত্র বীজ ব্যবহার করা হয় , এনিয়ে গবেষনা ও হচ্ছে প্রচুর , ইউনানী , আয়ুর্বেদিক ও হোমিও ঔষধ তৈরিতেও সিড বা বীজ একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান । কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু বীজ সরাসরি বা পাউডার হিসেবে ব্যবহার করা হয় , ডায়বেটিস রোগে জামের বীজের ব্যবহার হচ্ছে বহুদিন থেকেই ( হোমিওতে জামের বীজ দিয়ে সিজিজিয়াম জ্যাম্বো , আয়ুর্বেদিতে সিরাপ জাম্বাইদ্যারিস্ট ইত্যাদি ওষুধ তৈরি হয় ) , কালোজিরা , মেথি , আমবীজ ইত্যাদি তো আমাদের ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে ।
সেলারি বীজ মূত্র বর্ধক হিসাবে কাজ করে। এক মুঠো সেলেরি বীজ চিবিয়ে রস খেতে পারেন অথবা এক কাপ গরম পানিতে কিছু সেলেরি বীজ দিয়ে ঢেকে দিন ,৮ মিনিট পর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এটা ইউ টি আই প্রতিরোধ করে।
হজমজনিত বিশৃঙ্খলার চিকিৎসায় ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা শাস্ত্র এবং আয়র্বেদ শাস্ত্রে লবঙ্গের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। লবঙ্গ বায়ুনাশকারী। ফলে এটি পাকস্থলীতে গ্যাস নির্গমণে বাধা দেয়। লবঙ্গ ও এলাচ গুঁড়া খেলে নিশ্বাসের দুর্গন্ধও দূর হয়।
তুলসীর বীজ গায়ের চামড়াকে মসৃণ রাখে । চর্মরোগে চমৎকার কাজ করে নিমের বীজের তৈল ।
মিষ্টিকুমড়ার বীজ হচ্ছে পুষ্টি ও ওষুধি উপাদানের বিরাট উৎস। এর বীজের ৩০ শতাংশই হচ্ছে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড, যা আমাদের দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এর বীজে আরও আছে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। এছাড়াও বীজে রয়েছে জিংক, আয়রন, কপার এবং প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন। মিষ্টিকুমড়ার বীজ শুধু পুষ্টিমানে নয়, অসংখ্য ওষুধি গুণেও গুণান্বিত। মিষ্টিকুমড়ার বীজ হতে উৎপন্ন তেলের রয়েছে নানারকমের ওষুধি ব্যবহার। নিম্নে এর ওষুধি গুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
প্রোস্টেট টিউমার নিয়ন্ত্রণে : বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারট্রোফি বা বিপিএইচ, যাকে সহজ বাংলায় বলা যায় প্রোস্টেটগ্রন্থির টিউমার। আমেরিকার পঞ্চাশোর্ধ্ব অধিকাংশ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগের ফলে প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হয়ে যায়। টেস্টোস্টেরন হরমোন ও এর থেকে ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্রিয়ায় প্রোস্টেটগ্রন্থির কোষগুলো উদ্দীপিত হয় এবং খুব দ্রুত নতুন নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে বাড়তে থাকে। ফলে প্রোস্টেটগ্রন্থিতে টিউমারের সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিককালের গবেষণায় দেখা যায়, মিষ্টিকুমড়ার বীজ হতে উৎপন্ন তেল প্রোস্টেটগ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ে সক্ষম। গবেষণায় আরও দেখা যায়, মিষ্টিকুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং ক্যারোটিনয়েড এবং ধারণা করা হয়, এদের জৈব রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলেই প্রোস্টেটগ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রিত ও নিবারিত হয়।
হাড়ক্ষয় রোধে : সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৫০ বছরের অধিক বয়সের মানুষের শতকরা ৩০ জনের কোমরের হাড়ে সূক্ষ্ম ফাটল এবং প্রতি ৮ জনে একজনের হাড়ে ক্ষয়রোগ হয়। এর এই হাড় ক্ষয়রোগের প্রধান কারণ হল শরীরে জিংকের অভাব। জিংকের এক সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক উৎস হল মিষ্টিকুমড়ার বীজ। সুতরাং খুবই সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মিষ্টিকুমড়ার বীজ যদি আমরা আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় যোগ করি, তবে খুব সহজেই কোমর ও মেরুদণ্ডসহ শরীরের অন্যান্য হাড়ের ক্ষয়রোধ করা সহজ হবে।
প্রজনন অক্ষমতা প্রতিরোধে : মিষ্টিকুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ জিংক। আর আমাদের শরীরে ২শ’র বেশি এনজাইমের (উৎসেচক) কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে জিংকের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। জিংক আমাদের দেহের কোষ আবরণীর গঠন ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যাবশ্যক। জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখে। খুব অল্প পরিমাণ জিংকের ঘাটতি আমাদের দেহের বিশাল ক্ষতি সাধন করতে পারে। যেমন- খুব অল্প জিংকের অভাবেও মানুষ প্রজনন অক্ষম হয়ে পড়ে এবং রোগা ও দুর্বল শিশুর জন্ম দিয়ে থাকে। এসব ভয়ংকর বিষয়সমূহ খুব সহজে, খুবই সাশ্রয়ে আমরা নিবারণ করতে পারি প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার মাধ্যমে।
বাতের ব্যথার চিকিৎসা : বাতের ব্যথা নিরাময়ে মিষ্টিকুমড়ার বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মিষ্টিকুমড়ার বীজ হাড়ের সন্ধিস্থলে ভেঙে যাওয়া চর্বির পরিমাণ বাড়তে দেয় না। এই ভেঙে যাওয়া চর্বিগুলোই হাড়ের সন্ধিস্থলে জমা হয়ে ব্যথার সৃষ্টি করে। এভাবে ভাঙা চর্বি জমতে বাধাদানের মাধ্যমে মিষ্টিকুমড়ার বীজ বাতের ব্যথা কমিয়ে থাকে।
অন্যান্য রোগে : মিষ্টিকুমড়ার বীজে রয়েছে ভিটামিন কে, ফসফরাস ও কপার- যা চুলপড়া, অরুচি ও হাড়ক্ষয় ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। যেমন রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে। ফাইটোস্টেরল এক বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ, যা উদ্ভিদে পাওয়া যায় এবং যার রাসায়নিক গঠন অনেকটাই কোলেস্টেরলের মত। গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যদি খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইটোস্টেরল গ্রহণ করি, তবে তা রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ফাইটোস্টেরলের এক বড় উৎস হল মিষ্টি কুমড়ার বীজ। আয়রন বা লৌহ আমাদের লোহিত রক্ত কণিকা ও মাংসপেশির এক গুরুত্বপূর্ণ গঠন উপাদান। আয়রন আমাদের সমস্ত শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে শরীরকে সতেজ রাখতে ও প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। অ্যানিমিয়াসহ আয়রনের (লৌহ) ঘাটতিজনিত রোগ প্রতিরোধে মিষ্টিকুমড়ার বীজ খাবার হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। কারণ মিষ্টিকুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। গবেষণায় দেখা যায়, আমরা যদি প্রতিদিন এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৩৫ গ্রাম মিষ্টিকুমড়ার বীজ খাই, তবে তা একাই আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার প্রায় ৩০% পূরণ করতে সক্ষম। ম্যাগনেসিয়ামের অভাবজনিত রোগ-প্রতিরোধেও মিষ্টি কুমড়ার বীজ কার্যকর। ম্যাগনেসিয়াম একটি খনিজ পদার্থ, যা আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া, প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। শুধু তাই নয়, ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের হরমোনের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে, হৃৎপিণ্ড সচল রাখতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, স্নায়ুতন্ত্রকে খবরাখবর আদান-প্রদানে সাহায্য করে, দৈহিক বৃদ্ধি ও হাঁড় মজবুত করতে সহায়তা করে এবং এছাড়াও আরও অসংখ্য জৈবিক কার্যাবলীতে সহায়তা করে।
এছাড়া ম্যাঙ্গানিজের অভাবজনিত রোগ-প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে মিষ্টি কুমড়ার বীজ। ম্যাঙ্গানিজ আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ম্যাঙ্গানিজের অভাবে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়। ফলে সৃষ্টি হয় আলঝেইমার্স, সিজোফ্রেনিয়া ও মৃগীরোগ। এর অভাবে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বাতের ব্যথাও সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেহেতু মিষ্টিকুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ, তাই প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মিষ্টিকুমড়ার বীজ খাবার হিসেবে গ্রহণ করে আমরা এসব রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। প্রতিদিন ৫০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়াই হতে পারে অসংখ্য জটিল রোগের ওষুধ ও পথ্য।
যৌন দূর্বলতার জন্য আলকুশি বীজ ( শোধন করা ) একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান , এছারা রক্ত আমাশয়ে কুরুচি বীজ ( হোমিওতে এর নাম হলারিনা এন্টি ডিসেন্ট্রিকা , আয়ুর্বেদিতে কুটজারিস্ট ও ইউনানীতে সিরাপ কুরুচি ও শরবতে বেলের সাথেও এই বীজ ব্যবহার হয় ) , প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হলে মিষ্টি কুমড়োর বীজ কাজ করে , যৌন শক্তি , দুর্বল শুক্রানু সবল করতে তেতুল বীজ , জন্ডিসের জন্য অড়হড় বীজ ইত্যাদি , এমন শত শত পরিচিত ও অপরিচিত বীজ ব্যবহার হয় বীজ থেরাপিতে ।
.
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক আঙুরের বীজের উপাদান নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা খুঁজে পেয়েছেন, ৭৬ শতাংশ লিউকেমিয়া ও ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে আঙুরের বীজ। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারও এটা সমর্থন করেছে।
পরে গবষেণাটি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যানসার রিসার্চ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, আঙুরের বীজে থাকা উপাদান নিউকোমিয়া কোষকে ধ্বংস করে। আঙুরের বীজে জেএনকে নামের এক ধরনের প্রোটিন থাকে যা ক্যানসারের জন্য দায়ী কোষগুলোকে দ্রুত ধ্বংস করে দেয়।
এমন প্রচুর গবেষনা হচ্ছে , এবং বীজ থেরাপি আমাদের নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে ।

কপি 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন