সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯

ইসলামে হালাল ব্যবসার পূর্ণাঙ্গ রুপরেখা

আলহামদুলিল্লাহ ইসলাম আমাদের দিয়েছেন খুব সুন্দর জীবন বিধান যা পৃথিবীর কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু আমরা মুসলিম জাতি হিসাবে গর্বের বিষয় কিন্তু অধিকাংশ মানুষইি জানেনা জানার চেষ্টা ও করেনা আসুন আমরা জেনে নি ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে  কোরআন হাদিস কি নির্দেশনা দিয়েছেন।
আমরা জানি আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাাকে করেছেন হালাল আর সুদকে করেছেন হারাম কিন্তু সই হালাল ব্যবসার নিয়ম পদ্ধতি সমপর্কে আমরা অবগত নই আসুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।

                            ইসলামে হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য ৫ প্রকার

ইসলাম একটি শাশ্বত, সার্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ জীনব ব্যবস্থা। সৃষ্টি জগতে এমন কোন দিক ও বিভাগ নেই, যেখানে ইসলাম নিখুঁত ও স্বচ্ছ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেনি। মহান আল্লাহ বলেন, مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ‘আমরা এ কিতাবে কোন কিছুই অবর্ণিত রাখিনি’ (মায়েদাহ ৫/৩৮)।
মানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মাদ (ছাঃ) অন্ধকারাচ্ছন্ন, পাপ-পঙ্কিলতাময় এ বসুন্ধরায় জাহেলিয়াতের সকল অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার-অশান্তি, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বিশেষ করে মানব নিষ্পেষণ ও সমাজ বিধ্বংসী অন্যতম মাইন সূদ, ঘুষ, লটারী ও মজুতদারী প্রভৃতি তিরোহিত করেন। আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র আলোকে হালাল ব্যবসা ভিত্তিক একটি সর্বোত্তম, অভূতপূর্ব আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এক কথায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের রয়েছে সঠিক কল্যাণকামী দিক নির্দেশনা। The Quran in everyday life গ্রন্থকার বলেন, All individual, Social, political, Finential and others problems which relating with human being, human welfare or human nature have been Completely discussed in the Quran. ‘ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যাবলী যা মানবজাতি, মানবকল্যাণ অথবা মানব প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত তার সবই পূর্ণাঙ্গভাবে আলোচিত হয়েছে আল-কুরআনে’।
সূদ সমাজ শোষণের অন্যতম হাতিয়ার এবং মানব সভ্যতার সবচেয়ে নিষ্ঠুর শত্রু। সূদী কারবারের ফলে সমাজের বিত্তশালীরা সমাজের অসহায়, নিঃস্ব, দরিদ্র বনু আদমের সম্পদ জোঁকের মত চুষে চুষে খেয়ে পাহাড় গড়ে তুলে। পক্ষান্তরে সমাজের হতভাগ্য হতদরিদ্র মানুষগুলো দিন দিন অর্থশূন্য হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরে। কিন্তু ইসলাম সাম্যের ধর্ম। তাই সূদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সর্বনাশা রাহুগ্রাস থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করতে ইসলাম সকল প্রকার সূদকে চিরতরে হারাম করে ইনছাফপূর্ণ সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করেছে। সাথে ব্যবসা ভিত্তিক অর্থনৈতিক লেনদেনের নির্দেশ দিয়েছে।
হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের আবশ্যিক পূর্বশর্ত।[1] আর হালাল  উপার্জনের  অন্যতম  প্রধান  মাধ্যম  হ’ল বৈধ পন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য করা। হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য জীবিকা নির্বাহের সর্বোত্তম মাধ্যম হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), খুলাফায়ে রাশেদীন, আশারায়ে মুবাশশারা সহ অধিকাংশ ছাহাবী ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পক্ষান্তরে কারূণ, হামান, আবু জাহল, উতবা-শায়বা, উবাই ইবনে খালফ প্রমুখ কাফের মুশরিকরা ধোঁকা, প্রতারণামূলক সূদভিত্তিক হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। বস্ত্ততঃ হালাল-হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের রূপরেখা সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত যরূরী। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।-
হালাল ব্যবসার বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা :
হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ’ (নিসা ৪/২৯)।
উল্লিখিত আয়াতে لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ (তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না) ‘অন্যায়ভাবে’ বলতে এখানে এমন সব পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে, যা সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক ও শরী‘আতের দৃষ্টিতে অবৈধ। লেনদেন অর্থ হচ্ছে পরস্পরের মধ্যে স্বার্থ ও মুনাফার বিনিময় করা। যেমন ব্যবসা, শিল্প ও কারিগরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সেখানে একজন অন্য জনের প্রয়োজন সরবরাহ করার জন্য পরিশ্রম করে এবং তার বিনিময় দান করে। তাছাড়া আয়াতে أَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنكُمْ (পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য) বাক্যটি সংযুক্ত করে বলে দেয়া হয়েছে যে, যেসব ক্ষেত্রে ব্যবসার নামে সূদ, জুয়া, ধোঁকা-প্রতারণা ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পদ হস্তগত করা হয়, সেসব পন্থায় সম্পদ অর্জন বৈধ ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তা হারাম ও বাতিল পন্থা। তেমনি যদি স্বাভাবিক ব্যবসার ক্ষেত্রেও লেনদেনের মধ্যে উভয় পক্ষের আন্তরিক সন্তুষ্টি না থাকে, তবে সেরূপ ক্রয়-বিক্রয়ও বাতিল এবং হারাম।[2]
ব্যবসা-বাণিজ্যকে কলুষিত করার বিভিন্ন রূপ দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সুনীতি ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে পরিচালিত হবার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে অপর এক দৃষ্টিভঙ্গিতে একে নিষিদ্ধ না বললেও বিষয়টি স্পষ্ট জানা যায় যে, ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে এরূপ কিছু বিষয় আছে যা মুমিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত তথা ছালাত আদায় হ’তে বিরত রাখতে পারে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে, رِجَالٌ لاَّ تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَلاَ بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاء الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْماً تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْأَبْصَارُ ‘সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং ছালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেদিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে’ (নূর ২৪/৩৭)।
মানুষের জীবন ধারণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব আদিকাল থেকেই স্বীকৃত। তবে জীবনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এরূপ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে নিজেদের রক্ষা করা মুমিনদের কর্তব্য। এজন্য জুম‘আর ছালাতের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا نُوْدِيْ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُوْنَ- فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلاَةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-
‘হে ঈমানদারগণ! জুম‘আর দিনে যখন ছালাতের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর। আর ছালাত সমাপ্ত হ’লে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (জুম‘আ ৬২/৯-১০)। উপরোক্ত আয়াতগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَطْيَبُ الْكَسُبِ عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ، وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُوْرٍ  ‘নিজ হাতে কাজ করা এবং হালাল পথে ব্যবসা করে যে উপার্জন করা হয় তাই সর্বোত্তম’।[3]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যখন ত্যাগ স্বীকার করে ছওয়াবের আশায় মুসলিম জনপদে কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানী করে এবং ন্যায্য মূল্যে তা বিক্রয় করে, আল্লাহর নিকট তিনি শহীদের মর্যাদা লাভ করেন।[4]
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিজারাহ (ةجارة ), বায়উন (بيع ), শিরা (شراء ) এ তিনটি শব্দ ব্যবহার করেছেন। আল-কুরআনে ৮টি স্থানে তিজারাহ (ةجارة )[5] ৭টি স্থানে বায়‘ (بيع )[6] এবং ১৪টি স্থানে শিরা (شراء )[7] শব্দ উল্লিখিত হয়েছে।

হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য : নিম্নোক্ত পাঁচটি পদ্ধতিতে ব্যবসা করলে তা হালাল হিসাবে ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
(১) বায়‘উ মুরাবাহ : লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে নগদ মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের একক ব্যবসা।
(২) বায়‘উ মুয়াজ্জাল : ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে এক সাথে অথবা কিস্তিতে উভয় পক্ষের সম্মতিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়।
(৩) বায়‘উস সালাম : ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরী‘আত অনুমোদিত পণ্য সামগ্রীর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,
قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ، وَالنَّاسُ يُسْلِفُوْنَ فِى الثَّمَرِ الْعَامَ وَالْعَامَيْنِ أَوْ قَالَ عَامَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةً. شَكَّ إِسْمَاعِيْلُ فَقَالَ مَنْ سَلَّفَ فِىْ تَمْرٍ فَلْيُسْلِفْ فِىْ كَيْلٍ مَعْلُوْمٍ، وَوَزْنٍ مَعْلُوْمٍ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় আসলেন তখন লোকেরা (ফল-ফসলের জন্য) অগ্রিমমূল্য প্রদান করত। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম মূল্য প্রদান করবে সে যেন তা সুনির্দিষ্ট মাপের পাত্রের দ্বারা ও সুনির্দিষ্ট ওযনে প্রদান করে’।[8]
(৪) বায়‘উ মুযারাবা : এক পক্ষের মূলধন এবং অপরপক্ষের দৈহিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শ্রমের সমন্বয়ে যৌথ ব্যবসা।[9] এ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ তাদের মাঝে চুক্তিহারে বণ্টিত হবে।[10] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাদীজা (রাঃ)-এর মূলধন দ্বারা এরূপ যৌথ ব্যবসা করেছিলেন। ছাহাবায়ে কেরাম অনেকেই এ পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন।[11]
মুযারাবায় যে ব্যক্তি পুঁজির যোগান দেয় তাকে ছাহিবুল মাল صاحب المال বা রাববুল মাল (رب المال ) এবং শ্রমদানকারী তথা ব্যবসা পরিচালককে মুযারিব (مضارب ) বা উদ্যোক্তা বলা হয়। এখানে ছাহিবুল মাল-এর পুঁজি হচ্ছে ব্যবসায় প্রদত্ত অর্থ-সম্পদ আর মুযারিবের পুঁজি হচ্ছে দৈহিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শ্রম।
মুযারাবা কারবারে লাভ হ’লে ব্যবসায় শুরুতে কৃত চুক্তির শর্তানুসারে ছাহিবুল মাল এবং মুযারিব উভয়েই উক্ত লাভ ভাগ করে নেয়। পক্ষান্তরে ব্যবসায় লোকসান হ’লে সম্পূর্ণ লোকসান কেবল ছাহিবুল মাল তথা পুঁজি বিনিয়োগকারীকেই বহন করতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে মুযারিবের ব্যয়িত শ্রম, বুদ্ধি ও সময় বৃথা যায়। মুযারিব কোন লাভ পায় না এটাই তার লোকসান। তবে ব্যবসা পরিচালনায় মুযারিবের অবহেলা কিংবা চুক্তির শর্ত ভঙ্গের কারণে লোকসান হ’লে সেক্ষেত্রে লোকসানের দায়ভার মুযারিবকেই বহন করতে হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে পুঁজির মালিকের কোন ভূমিকা থাকে না।[12]
(৫) বায়‘উ মুশারাকা : মূলধন ও লভ্যাংশের ব্যাপারে দুই বা ততোধিক অংশীদারের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে ব্যবসা।[13]
মুশারাকা পদ্ধতিতে ব্যবসায় লাভ হ’লে অংশীদারগণ পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে তা ভাগ করে নেয়। আর লোকসান হ’লে অংশীদারগণ নিজ নিজ পুঁজির আনুপাতিক হারে তা বহন করে।[14]
হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বরূপ :
ব্যবসা হালাল হওয়ার জন্য কতিপয় বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যথা ব্যবসা বৈধ হবে না। এখানে সংক্ষেপে সেগুলি আলোচনা করা হ’ল।
সততা : সততা, আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা ব্যবসা হালাল হওয়ার পূর্বশর্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إن التجار يحشرون يوم القيامة فجارا إلا من اتقى وبر وصدق  ‘ক্বিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসাবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, সততা ও ন্যায় নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত’।[15]
মূল্য নির্ধারণ : মূল্য নির্ধারণ বলতে পণ্যের এমন একটি নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ বুঝায়, যাতে লভ্যাংশ থাকবে যেন পণ্যের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আবার উক্ত পণ্যের ভোক্তাদের জন্যও কষ্টসাধ্য না হয়।
আনাস (রাঃ) বলেন, غَلاَ السِّعْرُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ سَعِّرْ لَنَا. فَقَالَ إِنَّ اللهَ هُوَ الْمُسَعِّرُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الرَّزَّاقُ وَإِنِّىْ لأَرْجُو أَنْ أَلْقَى رَبِّىْ وَلَيْسَ أَحَدٌ مِنْكُمْ يَطْلُبُنِىْ بِمَظْلَمَةٍ فِىْ دَمٍ وَلاَ مَالٍ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে (একবার পণ্যের) মূল্য বেড়ে গেল। তখন ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহই হচ্ছেন মূল্য নির্ধারণকারী; তিনি সঙ্কোচনকারী, সম্প্রসারণকারী ও রিযিকদাতা। আর আমি অবশ্যই এমন এক অবস্থায় আমার রবের সাথে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি যাতে তোমাদের মধ্য থেকে কেউ আমার বিরুদ্ধে রক্ত (প্রাণ) ও সম্পদ সম্পর্কে যুলুমের অভিযোগ উত্থাপন করতে না পারে’।[16]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন তিনি বললেন, بَلِ اللهُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ وَإِنِّىْ لأَرْجُو أَنْ أَلْقَى اللهَ وَلَيْسَ لأَحَدٍ عِنْدِىْ مَظْلَمَةٌ  ‘বরং আল্লাহই সঙ্কোচন-সম্প্রসারণ করেন। আমি অবশ্যই এমতাবস্থায় আল্লাহর সাথে মিলিত হ’তে চাই যে, আমার পক্ষ থেকে কারো প্রতি সামান্যতম যুলুমও থাকবে না’।[17]
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর ‘কিতাবুল উম্ম’-এ ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি একদা বাজারে হাতিব ইবনে আবী বালতা‘আর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তার কাছে ছিল কিসমিস ভর্তি দু’টি বস্তা। তখন ওমর (রাঃ) তার দাম জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে হাতিব (রাঃ) বললেন, এক দিরহাম। ওমর (রাঃ) বললেন, তায়েফ থেকে কিসমিস নিয়ে আসা একটি কাফেলার ব্যাপারে অবগত হ’লাম, তারা তোমাকে মূল্যে ঠকাচ্ছে। অর্থাৎ তারা এর চেয়ে বেশী দামে বিক্রি করছে। অতএব তুমি দাম বাড়িয়ে দাও অথবা বাড়ীতে গিয়ে যেভাবে ইচ্ছে বিক্রি কর। এ কথা শুনে হাতিব (রাঃ) বাড়ী চলে গেলেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) বিষয়টি চিন্তা করে হাতিব (রাঃ)-এর বাড়ীতে আসলেন এবং তাকে বললেন, আমি তোমাকে যেটা বলেছিলাম সেটা শাসক হিসাবে, যা অবশ্য পালনীয় নয়; বরং এর মাধ্যমে আমি দেশবাসীর কল্যাণ চেয়েছিলাম। সুতরাং তুমি যেভাবে এবং যে দামে ইচ্ছা বিক্রি কর।[18]
ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হারাম। কারণ তা যুলুমের নামান্তর। কেননা মানুষ তার সম্পদের উপর কর্তৃত্বের অধিকারী অথচ দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়াটা এর প্রতিবন্ধক স্বরূপ। রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের কল্যাণ হেতু দ্রব্যমূল্য কম রাখার ও উৎপাদন বৃদ্ধির যাবতীয় ব্যবস্থা করবে, এটাই তার বড় দায়িত্ব।[19]
লাভের পরিমাণ : কোন পণ্যে কত লাভ করা যাবে এরূপ কোন নির্দেশনা কুরআন-হাদীছে পাওয়া যায় না। আবার সকল পণ্যে এক রকম লাভ করা যাবে না এরূপ কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই। আসলে শরী‘আতে বিষয়টিকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কারণ লাভ নির্ণয়ের বিষয়টি নির্ভর করে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিস্থিতি-পরিবেশের উপর। তবে লাভের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে একটা ধারণা আমরা হাদীছ থেকে লাভ করতে পারি। উরওয়া ইবনে আবিল জাদ আল-বারেকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَرَضَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم جَلَبٌ فَأَعْطَانِى دِيْنَاراً وَقَالَ أَىْ عُرْوَةُ ائْتِ الْجَلَبَ فَاشْتَرِ لَنَا شَاةً. فَأَتَيْتُ الْجَلَبَ فَسَاوَمْتُ صَاحِبَهُ فَاشْتَرَيْتُ مِنْهُ شَاتَيْنِ بِدِيْنَارٍ فَجِئْتُ أَسُوْقُهُمَا أَوْ قَالَ أَقُوْدُهُمَا فَلَقِيَنِىْ رَجُلٌ فَسَاوَمَنِىْ فَأَبِيْعُهُ شَاةً بِدِيْنَارٍ فَجِئْتُ بِالدِّيْنَارِ وَجِئْتُ بِالشَّاةِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذَا دِيْنَارُكُمْ وَهَذِهِ شَاتُكُمْ. قَالَ وَصَنَعْتَ كَيْفَ. قَالَ فَحَدَّثْتُهُ الْحَدِيْثَ فَقَالَ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُ فِىْ صَفْقَةِ يَمِيْنِهِ.
‘নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট পশুর একটি চালানের সংবাদ আসল। তিনি আমাকে একটি দীনার দিয়ে বললেন, উরওয়া! তুমি চালানটির নিকট যাও এবং আমাদের জন্য একটি বকরী ক্রয় করে নিয়ে আস। তখন আমি চালানটির কাছে গেলাম এবং চালানের মালিকের সাথে দরদাম করে এক দীনার দিয়ে দুইটি বকরী ক্রয় করলাম। বকরী দু’টি নিয়ে আসার পথে এক লোকের সাথে দেখা হয়। লোকটি আমার থেকে বকরী ক্রয় করার জন্য আমার সাথে দরদাম করল। তখন আমি তার নিকট এক দীনারের বিনিময়ে একটি বকরী বিক্রয় করলাম এবং একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে চলে এলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এই হচ্ছে আপনার দীনার এবং এই হচ্ছে আপনার বকরী। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা করলে কিভাবে? উরওয়া বলেন, আমি তখন তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আপনি তার হাতের লেন-দেনে বরকত দিন’।[20]
উল্লেখ্য, উক্ত ছাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পক্ষে ১০০% লাভ করা সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ) তার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন এবং এ দো‘আর ফলে উক্ত ছাহাবী জীবনে প্রচুর বরকত লাভে ধন্য হয়েছেন। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, উক্ত ছাহাবী মাটি ক্রয় করলেও তাতে লাভ হ’ত। সুতরাং মজুতদারী না করে, প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে ক্রেতার স্বাভাবিক ও স্বেচ্ছা সম্মতির ভিত্তিতে কোন পণ্য বিক্রি করে বিক্রেতা ১০০% লাভ করলেও শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতা বা ভোক্তা যেন যুলুমের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা যরূরী।
লাভের সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছেন, সম্পদ ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে কমপক্ষে এতটুকু লাভ করা যায় যাতে ব্যবসায়ীর পরিবারের ভরণ-পোষণ, ব্যবসার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান ও ২.৫% যাকাত দেয়ার পর মূলধন অক্ষত থাকে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে দয়ার্দ্র, নম্র ও সদ্ব্যবহার পূর্বক ন্যায্য মূল্য গ্রহণ করা অত্যন্ত নেক কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, رَحِمَ اللهُ رَجُلاً سَمْحًا إِذَا بَاعَ، وَإِذَا اشْتَرَى، وَإِذَا اقْتَضَى  ‘আল্লাহ ঐ মহানুভব মানুষের প্রতি দয়া করেন, যে ক্রয়-বিক্রয়ে এবং নিজের পাওনা আদায়ে নম্রতা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করে’।[21]

                                             হারাম দ্রব্যের ব্যবসাও হারাম :
আল্লাহ তা‘আলা মদ, মৃত প্রাণী, রক্ত, প্রতিমা এবং শূকরের গোশত প্রভৃতি হারাম করেছেন। তিনি বলেন, حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ  ‘তোমাদের প্রতি মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত হারাম করা হয়েছে’ (মায়েদাহ ৫/৩)।
অন্যত্র তিনি বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছুই নয়। অতএব এগুলো থেকে বিরত থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (মায়েদাহ ৫/৯০)।
আল্লাহ তা‘আলা যেসব দ্রব্য হারাম করেছেন, সেসব দ্রব্যের ব্যবসাও হারাম করেছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মক্কা বিজয়ের বছর এবং মক্কা থাকাবস্থায় বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন,
إِنَّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيْرِ وَالأَصْنَامِ. فَقِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، أَرَأَيْتَ شُحُوْمَ الْمَيْتَةِ فَإِنَّهَا يُطْلَى بِهَا السُّفُنُ، وَيُدْهَنُ بِهَا الْجُلُوْدُ، وَيَسْتَصْبِحُ بِهَا النَّاسُ. فَقَالَ  لاَ، هُوَ حَرَامٌ. ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ ذَلِكَ قَاتَلَ اللهُ الْيَهُوْدَ، إِنَّ اللهَ لَمَّا حَرَّمَ شُحُوْمَهَا جَمَلُوْهُ ثُمَّ بَاعُوْهُ فَأَكَلُوْا ثَمَنَهُ.
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃত দেহ, শূকর ও প্রতিমা বেচা-কেনাকে হারাম করেছেন। তখন বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি কি মনে করেন যে, লোকেরা মৃত পশুর চর্বি দ্বারা নৌকায় প্রলেপ দেয়, তা দিয়ে চামড়ায় বার্ণিশ করে এবং লোকেরা তা চকচকে করার কাজে ব্যবহার করে? তখন তিনি বললেন, না, তা হারাম। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেন, কারণ মহান আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করেছেন অথচ তারা একে গলিয়ে নেয় এবং তা বিক্রি করে ও তার মূল্য ভক্ষণ করে’।[22] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَعَنَ اللهُ الْخَمْرَ وَشَارِبَهَا وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَمُبْتَاعَهَا وَعَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ ‘আল্লাহ লা‘নত বর্ষণ করেন মদের উপর এবং যে তা পান করে, যে তা পরিবেশন করে, যে তা বিক্রি করে, যে তা ক্রয় করে, যে তার নির্যাস তৈরী করে, যার জন্য নির্যাস তৈরী করা হয়, যে তা বহন করে আর যার কাছে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় সবার উপর’।[23]
বায়‘উল ঈনা তথা পাতানো ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ :
ইসলামী শরী‘আত বায়‘উল ঈনা তথা পাতানো ক্রয়-বিক্রয়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বায়‘উল ঈনার প্রকৃতি সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন,
والعينة ان يبيع ثيئا إلى غيره بثمن معين (مائة وعشريث ريمنار مثلا) إلى اجل (سنة مثلا) ويسلمه إلى المشترى ثم يشتريه قبل قبض الثمن بثمن اقلى من ذلك القدر (بمائة مثلا) يدفعه نقدًا-

* প্রধান মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদরাসা, জামালপুর।
[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০।
[2]. মুফতী মুহাম্মদ শফী, তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন, অনুবাদ ও সম্পাদনা: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ২৪৪ পৃঃ।
[3]. আহমাদ, মিশকাত হা/২৭৮৩, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬০৭।
[4]. কুরতুবী, আল-জামি লিআহকামিল কুরআন (কায়রো: দারুশ শাব, ১৯৭২) ১৯/৫৬ পৃঃ।
[5]. বাক্বারাহ ২/১৬, ২৮২; নিসা ৪/২৯; তওবা ৯/২৪; নূর ২৪/৩৭; ফাতির ৩৫/২৯; ছফ ৬১/১০; জুম‘আহ ৬২/১১।
[6]. বাক্বারাহ ২৫৪, ২৭৫; তওবা ৯/১১১; ইবরাহীম ১৪/৩১; হজ্জ ২২/৪০; নূর ২৪/৩৭; জুম‘আ ৬২/৯।
[7]. বাক্বারাহ ৪১, ৮৬, ৯০, ১০২, ১৭৫, ২০৭; আলে ইমরান ১৭৭ ও ১৮৭; নিসা ৭৪; মায়েদাহ ৪৪; তাওবা ৯, ১১১; ইউসুফ ২০, ২১।
[8]. বুখারী হা/২২৩৯; মুসলিম হা/১৬০৪।
[9]. আব্দুর রহমান আল-জাযায়রী, কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ (বৈরুত : দারুল ইলামিয়্যাহ, তা.বি), ৩/৩৪; শাহ ওয়ালী উল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, তা.বি.) ২/১১৬।
[10]. মুওয়াত্ত্বা হা/২৫৩৫, দারাকুৎনী হা/৩০৭৭, ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৭২, ৫/২৯২ পৃঃ; বুলূগুল মারাম হা/৮৯৫।
[11]. ইমাম শামসুদ্দীন আস-সারাখসী, আল-মাবসূত (বৈরুত : দারুল মা‘রিফাহ, ১৪১৪ হিঃ/১৯৯৩ ইং), ২২/১৮ পৃঃ।
[12]. আলী আল-খাফীফ, আশ-শিরকাতু ফী ফিকহিল ইসলামী (কায়রো : দারুন নশর, ১৯৬২ ইং), ৭৪ পৃঃ।
[13]. সা‘দী আবু হাবীব, আল-কামূসুল ফিকহ (পকিস্তান : ইদারাতুল কুরআন ওয়াল উলূমিল ইসলামিয়্যাহ, তাবি), ১৯৫ পৃঃ; মুফতী মুহাম্মাদ তাক্বী উছমানী, অনুঃ মুফতী মুহাম্মাদ জাবের হোসাইন, ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতি : সমস্যা ও সমাধান, (ঢাকা : মাকতাবাতুল আশরাফ, ২০০৫ ইং), ২৭ পৃঃ।
[14]. আবুদাঊদ হা/৪৮৩৬, সনদ ছহীহ, বুলূগুল মারাম হা/৮৭০, নায়লুল আওত্বার হা/২৩৩৪-৩৫।
[15]. তিরমিযী হা/১২১০, ইবনু মাজাহ হা/২১৪৬, ছহীহাহ হা/১৪৫৮, মিশকাত হা/২৬৭৭।
[16]. তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ হা/১২৬১৯।
[17]. আবূদাঊদ হা/৩৪৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৩৬।
[18]. ইমাম শাফেঈ (রহঃ), আল-উম্ম (কায়রো: দারুশ সাউব, ১৯৬৯), ২/২০৯ পৃঃ; মুছান্নাফ আব্দুর রায্যাক হা/১৪৯০৬, ৮/২০৭।
[19]. ইমাম শাওকানী (রহঃ), নায়লুল আওত্বার (কায়রো : মাকতাবাতুল হালাবী, ১৩৯১ হিঃ) ৫/৩৩৫।
[20]. বুখারী হা/৩৬৪২; আবূদাঊদ হা/৩৩৮৪; তিরমিযী হা/১২৫৮।
[21]. বুখারী হা/২০৭৬ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়; ইবনু মাজাহ হা/২২০৩; মিশকাত হা/২৭৯০।
[22]. বুখারী হা/২২৩৬; মুসলিম হা/১৫৮১; মিশকাত হা/২৭৬৬।
[23]. আবু দাঊদ হা/৩৬৭৪; মিশকাত হা/২৭৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৯১।


                      পরিমাপে কম-বেশী করা  নিষিদ্ধ :


পণ্য সামগ্রী  ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতাকে পরিমাপে কম দেয়া কিংবা মেপে নেয়ার সময় বেশী নেয়াকে  ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। কুরআন-হাদীছে এহেন কর্মকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও পরকালীন  দুর্ভোগের কারণ বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيْلٌ  لِّلْمُطَفِّفِيْنَ، الَّذِيْنَ  إِذَا اكْتَالُواْ عَلَى النَّاسِ  يَسْتَوْفُوْنَ، وَإِذَا كَالُوْهُمْ  أَو وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ، أَلَا يَظُنُّ  أُولَئِكَ أَنَّهُم مَّبْعُوْثُوْنَ، لِيَوْمٍ  عَظِيْمٍ،  يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ- ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার  সময় পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন লোকদের মেপে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না  যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহা দিবসে। যেদিন মানুষ দন্ডায়মান হবে বিশ্বপালকের সম্মুখে’ (মুতাফফিফীন ৮৩/১-৬)। তিনি আরও বলেন, وَالسَّمَاءَ رَفَعَهَا  وَوَضَعَ الْمِيْزَانَ،  أَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيْزَانِ،  وَأَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ  وَلاَ تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ- ‘তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড (দাঁড়িপাল্লা)।  যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদন্ডে। তোমরা ন্যায্য ওযন কায়েম কর এবং ওযনে কম দিও  না’ (রহমান ৫৫/৭-৯)। অন্যত্র তিনি আরও বলেন, وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ بِالْقِسْطِ  لاَ نُكَلِّفُ نَفْساً إِلاَّ  وُسْعَهَا ‘তোমরা মাপ ও  ওযন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেই  না’ (আন‘আম ৫/১৫২)।

তিনি আরও বলেন, وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُواْ بِالقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ ذَلِكَ خَيْرٌ  وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً ‘তোমরা মেপে দেয়ার সময় মাপ পূর্ণ করে দাও এবং সঠিক  দাঁড়িপাল্লায় ওযন কর। এটাই উত্তম ও পরিণামের দিক দিয়ে শুভ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৩৫)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

خَمْسٌ بِخَمْسٍ: مَا نَقَضَ قَوْمٌ الْعَهْدَ  إِلاَّ سَلَّطَ اللهُ عَلَيْهِمْ عَدُوَّهُمْ  وَمَا حَكَمُوْا بِغَيْرِ مَا أَنْزَلَ  اللهُ إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الْفَقْرُ  وَمَا ظَهَرَتْ فِيْهِمُ الْفَاحِشَةُ إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الْمَوْتُ  (أَوْ إِلاَّ ظَهَرَ فِيْهِمُ الطَّاعُوْنُ) ولا طَفَّفُوا  المِكْيالَ إلا مُنِعُوا النَّباتَ وأُخِذُوا بالسِّنِينَ ولا مَنَعُوا الزَّكاةَ إلا  حُبِسَ عَنْهُمُ  الْمَطَرُ–



                   ‘পাঁচটি বস্ত্ত পাঁচটি  বস্ত্তর কারণে হয়ে থাকে-
 (১) কোন কওম চুক্তিভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের উপর তাদের  শত্রুকে বিজয়ী করে দেন। (২) কেউ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বাইরে ফায়ছালা দিলে  তাদের মধ্যে দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়ে। (৩) কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীল কাজ বিস্তৃত হ’লে  তাদের মধ্যে মৃত্যু অর্থাৎ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। (৪) কেউ মাপে বা ওযনে কম দিলে তাদের  জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে। (৫) কেউ  যাকাত দেয়া বন্ধ করলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয়’।[1]

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর  (রাঃ) যখন বাজারে যেতেন, তখন বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলতেন, اِتَّقِ اللهَ وَأَوْفِ الْكَيْلَ وَالْوَزْنَ بِالْقِسْطِ فَاِنَّ الْمُطَفِّفِيْنَ يَوْمَ  الْقِيَامَةِ يُوْقَفُوْنَ  حَتَّى إِنَّ الْعَرَقَ لَيُلْجِمُهُمْ  إِلَى أَنْصَافِ آذَانِهِمْ ‘আল্লাহকে ভয় কর। মাপ ও ওযন ন্যায্যভাবে কর। কেননা মাপে কম দানকারীরা  ক্বিয়ামতের দিন দন্ডায়মান থাকবে এমন অবস্থায় যে, ঘামে তাদের কানের অর্ধেক পর্যন্ত  ডুবে যাবে’।[2]

                                                     প্রতারণা বা ধোঁকা  নিষিদ্ধ :

মানুষ মানুষকে ঠকানোর  জন্য যেসব পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে থাকে তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল প্রতারণা-ধোঁকা।  এটি একটি জঘন্য অপরাধ। এর দ্বারা মানব সমাজে সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। ইসলাম  ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ধোঁকা দিয়ে অর্থোপার্জন নিষিদ্ধ করেছে। আবু হুরায়রা  (রাঃ) বলেন,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ  فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيْهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ: مَا هَذَا يَا صَاحِبَ  الطَّعَامِ. قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ أَفَلاَ جَعَلْتَهُ  فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّىْ.

‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি খাদ্য স্তূপের পাশ দিয়ে  যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্য স্তূপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে তাঁর হাত ভিজা পেলেন। তখন  তিনি বললেন, হে খাদ্যের মালিক! ব্যাপার কি? উত্তরে খাদ্যের মালিক বললেন, হে  আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তাহ’লে ভিজা  অংশটা শস্যের উপরে রাখলে না কেন? যাতে ক্রেতা তা দেখে ক্রয় করতে পারে। যে প্রতারণা  করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[3]

সুতরাং ধোঁকা-প্রতারণা  বর্জন করা শুধু ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেই ফরয নয়, বরং প্রত্যেক কারবারে এবং  শিল্পকর্মের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। কারণ ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা সর্বাবস্থায় ও  সর্বক্ষেত্রেই হারাম।

উল্লেখ্য, যেসব পণ্যে  বিভিন্ন কারণে দোষ-ত্রুটি থেকে যায় সেগুলো গোপন রেখে বা কৌশলে তা বিক্রি করা  ইসলামে নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হচ্ছে ক্রেতাকে উক্ত দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে  জানাতে হবে। বিক্রয়ের সময় পণ্যের দোষ-ত্রুটি বলে দেয়া না হ’লে তা হালাল হবে না। আর  জানা সত্ত্বেও বিক্রেতা যদি না বলে তাহ’লে তা তার জন্য হালাল নয়।[4]

এ ব্যাপারে হাসান ইবনে  ছালেহ এর ক্রীতদাসী বিক্রয়ের ঘটনাটি একটি অনন্য উদাহরণ। তিনি একটি ক্রীতদাসী  বিক্রয় করলেন। ক্রেতাকে বললেন, মেয়েটি একবার থুথুর সাথে রক্ত ফেলেছিল। তা ছিল  মাত্র একবারের ঘটনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার ঈমানী হৃদয় তা উল্লেখ না করে চুপ  থাকতে পারল না, যদিও তাতে মূল্য কম হওয়ার আশংকা ছিল।[5]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেছেন,

اَلْبَيِّعَانِ  بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا، فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِىْ  بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَذَبَا وَكَتَمَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا-

‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ  বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়, ততক্ষণ তাদের চুক্তি ভঙ্গ করার এখতিয়ার থাকবে। যদি তারা  উভয়েই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহ’লে তাদের  ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে এবং পণ্যের দোষ গোপন  করে, তাহ’লে তাদের এ ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দূর হয়ে যাবে’।[6]

পশুর স্তনে দুধ জমিয়ে রেখে ক্রেতাকে অধিক দুধাল গাভী হিসাবে বুঝিয়ে বিক্রি  করা প্রতারণার শামিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنِ ابْتَاعَ شَاةً مُصَرَّاةً فَهُوَ  فِيْهَا بِالْخِيَارِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ إِنْ شَاءَ أَمْسَكَهَا وَإِنْ شَاءَ رَدَّهَا  وَرَدَّ مَعَهَا صَاعًا مِنْ تَمْرٍ  ‘যে ব্যক্তি দুধ আটকে রাখা বকরী ক্রয় করেছে সে তিন দিনের মধ্যে এটির  ব্যাপারে (সিদ্ধান্ত গ্রহণের) এখতিয়ার রাখে। আর তা হচ্ছে যদি সে চায় তো সেটিকে  রেখে দিবে, অথবা ফিরিয়ে দিবে এক ছা‘ পরিমাণ খেজুরসহ।[7]

                                           এম.এল.এম ব্যবসা

একুশ শতকের প্রতারণার এক  নতুন ফাঁদ হ’ল মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এম.এল.এম ব্যবসা)। এম.এল.এম ব্যবসার  সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, MLM is  like a train with no brakes and no engineer headed full throttle towards a  termial. অর্থাৎ ‘সর্বোচ্চ গতিতে স্টেশনমুখী একটি ট্রেনের মত যার  কোন ব্রেক নেই, নেই কোন চালক’।[8]

ব্রেকবিহীন গাড়ী যেমন যে  কোন মুহূর্তে এ্যাকসিডেন্ট করতে পারে, মাঝিবিহীন নৌকা যেমন অপ্রত্যাশিত স্থানে চলে  যেতে পারে, মাল্টি লেভেল ব্যবসাও ঠিক তদ্রূপ। যা তার সংজ্ঞা থেকেই জানা যায়। আর  বাস্তবতাও তাই। এ প্রতারণার জাজবল্যমান উদাহরণ হ’ল ‘ডেসটিনি-২০০০ প্রাইভেট লিঃ’ ও ‘যুবক’  যা অগণিত মানুষের শেষ সম্বলটুকুও চুষে নিয়ে নিঃস্ব করে ছেড়েছে।

সঊদী আরবের জাতীয় গবেষণা  ও ফৎওয়া বিভাগের স্থায়ী কমিটি (লাজনা দায়েমাহ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যে,  পিরামিড স্কীম, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম যে নামেই হোক না কেন এ ধরনের সকল  প্রকার লেনদেন নিষিদ্ধ। কেননা এর উদ্দেশ্য হ’ল কোম্পানীর জন্য নতুন নতুন সদস্য  সৃষ্টির মাধ্যমে কমিশন লাভ করা, পণ্যটি বিক্রি করে লভ্যাংশ গ্রহণ করা নয়। এ কারবার  থেকে বহুগুণ কমিশন লাভের প্রলোভন দেখানো হয়। স্বল্পমূল্যের একটি পণ্যের বিনিময়ে  এরূপ অস্বাভাবিক লাভ যে কোন মানুষকে প্ররোচিত করবে। আর এতে ক্রেতা-পরিবেশকদের  মাধ্যমে কোম্পানী এক বিরাট লাভের দেখা পায়। মূলতঃ পণ্যটি হ’ল কোম্পানীর কমিশন  লাভের হাতিয়ার মাত্র।[9]

একেক ব্যবসার প্রতারণার  কৌশল একেক রকম। যেমন পাট ব্যবসায়ীরা শুকনা পাটে পানি দিয়ে ওযন বাড়ায় ও নিম্নমানের  পাটে রং মিশিয়ে গুণগত মান বাড়ায়। চাউল ব্যবসায়ীরা মোটা চাউল মেশিনে সরু বানিয়ে  তাতে সেন্ট মিশিয়ে নামিদামী চিকন আতপ চাউল বানায়। ফল ব্যবসায়ীরা উপরে ভাল ফল  সাজিয়ে রেখে নীচ থেকে খারাপ ও পচা ফল ক্রেতাকে দিয়ে প্রতারণা করে।

                                                 ব্যবসায় দালালী :

ব্যবসা-বাণিজ্যে  প্রতারণার আরেক নাম হ’ল দালালী। দালালীর ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত  হয়। দালালীর মাধ্যমে কোন জিনিসের দাম ন্যায্য মূল্যের চেয়ে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয়া  হয়। এমনও দেখা যায় যে, একই ব্যক্তি বিক্রেতার পক্ষেও দালালী করে আবার ক্রেতার  পক্ষেও দালালী করে এবং উভয়ের নিকট থেকেই কমিশন গ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  দালালীকে নিষিদ্ধ করে বলেছেন, وَلاَ تَنَاجَشُوْا ‘তোমরা দালালী কর না’।[10] জমি, ঘর-বাড়ী, গরু-ছাগল, পাইকারী দ্রব্যসামগ্রী বেচা-কেনায় দালালীর আধিক্য  লক্ষ্য করা যায়।

                                              মওজুদদারী :

মওজুদদারী, কালোবাজারী,  মুনাফাখোরী ইত্যাদি অত্যন্ত ঘৃণিত ও পাপ কাজ। এগুলোর মাধ্যমে বাজারে পণ্যের  কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়, হঠাৎ দ্রব্যের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে যায়, ক্রয়মূল্য  মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যায়। ফলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তাই  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ ‘যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত  করে, সে পাপিষ্ঠ’।[11] অন্যত্র তিনি বলেন, لاَ يَحْتَكِرُ إِلاَّ خَاطِئٌ ‘অপরাধী (পাপিষ্ঠ) ব্যক্তি ছাড়া  কেউ মওজুদদারী করে না’।[12]

                                                        মিথ্যা কসম :

ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা কসম  অত্যন্ত ঘৃণিত একটি কাজ। তাই মিথ্যা কসম পরিহার করা উচিত। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,  আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,اَلْحَلِفُ مُنَفِّقَةٌ لِلسِّلْعَةِ  مُمْحِقَةٌ لِلْبَرَكَةِ   ‘কসম খাওয়ায়  মালের কাটতি বাড়ায়, কিন্তু বরকত কমে যায়’।[13] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন,إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِى  الْبَيْعِ فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ ‘ব্যবসায় অধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাক। এর দ্বারা মাল বিক্রি বেশী হয়,  কিন্তু বরকত কমে যায়’।[14]

মিথ্যা কসমকারী ব্যবসায়ীর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী প্রদান পূর্বক রাসূলুল্লাহ  (ছাঃ) বলেছেন,

ثَلاَثَةٌ  لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيْهِمْ  وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ، قَالَ أَبُو ذَرٍّ خَابُوْا وَخَسِرُوْا مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ  اللهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.

‘তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের  প্রতি দৃষ্টি দিবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে  যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আবু যার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কারা ধ্বংসপ্রাপ্ত  ও ক্ষতিগ্রস্ত? তিনি বললেন, টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারী, উপকার করে খোটা  প্রদানকারী এবং ঐ ব্যবসায়ী যে মিথ্যা কসম করে তার পণ্য বিক্রি করে’।[15]

                                                             খাদ্য ও ঔষধে ভেজাল :

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি  খাদ্যদ্রব্য ও ঔষধে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। মাছ-গোশত, শাক-সবজি, ফলমূল থেকে শুরু করে  মানুষের জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পর্যন্ত ভেজালে সয়লাভ হয়ে গেছে। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে  ‘রিড ফার্মা’ নামের একটি ঔষধ কোম্পানীর ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৭টি শিশু  মারা যায়। এছাড়া অনেক কোম্পানীর ট্যাবলেট, ক্যাপসুল তৈরী হচ্ছে আটা-ময়দা বা  খড়িমাটি দিয়ে। সিরাপে দেয়া হচ্ছে কেমিক্যাল মিশানো রঙ। এমনকি ‘ভল্টারিন’-এর মত  নামকরা ব্যথানাশক ইনজেকশনের অ্যাম্পুলে ভরে দেয়া হচ্ছে স্রেফ ডিস্টিল্ড ওয়াটার।  বিভিন্ন নামি-দামী দেশী কোম্পানী এমনকি বিদেশী কোম্পানীর ঔষধও নকল করে চলছে অনেক  ঔষধ কোম্পানী লেভেল ও বোতল ঠিক রেখে! এভাবে বর্তমানে প্রায় ৪০০০ রকম নকল ঔষধ  বাজারে চলছে। সরল মনে এসব ঔষধ সেবন করে শরীরে দেখা দিচ্ছে উল্টো প্রতিক্রিয়া।  এভাবে অকালে ঝরে পড়ছে অনেক তরতাজা প্রাণ। ৯ জুলাই’১২ পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট  মোতাবেক দেশে বর্তমানে ২৫৮টি এলোপ্যাথিক, ২২৪টি আয়ুর্বেদিক, ২৯৫টি ইউনানী ও ৭৭টি  হোমিওপ্যাথিসহ মোট ৮৫৪টি ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে’।[16]

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য  অধিদফতর প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১১-তে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী গত এক দশক  ধরে বাজারে যেসব ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে তার শতকরা ৫০ ভাগই ভেজাল মিশ্রিত। মহাখালী  জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল  পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ভোগ্যপণ্যের  শতকরা ৪৮ ভাগই ভেজাল এবং ২০১০ সালে এর হার ছিল ৫২ ভাগ। উক্ত ল্যাবরেটরীর রিপোর্ট  মোতাবেক দেশের বিভিন্ন কোম্পানীর ঘি ও বাজারের মিষ্টির শতকরা ৯০ ভাগই ভেজাল যুক্ত।  তারা বলেন, মাছে ফরমালিন ও ফলমূলে হরহামেশা কার্বাইড, ইথাইনিল ও এথ্রিল মিশানো  হচ্ছে। কাঁঠাল, লিচু, আপেল, ডালিম, বেদানা, তরমুজ ইত্যাদি বিষাক্ত কেমিকেলে চুবিয়ে  উঠিয়ে সপ্তাহকাল তাযা রেখে বিক্রি করা হয়। আম, আনারস, লিচু, পেয়ারা, কলা ইত্যাদিতে  মুকুল আসার পর থেকে শুরু করে ৮/১০ বার বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করা হয়। যা মানব  স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অনেক ব্যবসায়ী শূকরের চর্বি দিয়ে সেমাই ভেজে ঘিয়ে  ভাজা টাটকা সেমাই বলে চালিয়ে দেয়। অনেক বেকারীতে পচা আটা, ময়দা, ডিম ব্যবহার করা  হয়। অনেক হোটেলে মরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, কুকুরের গোশত ইত্যাদি বিক্রি করা হয়।  অনেক ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করা হয়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য দারুণ  ক্ষতিকর।[17]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেছেন, لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ ‘ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং কারো ক্ষতি করো না’।[18]

                                কাছে না থাকা পণ্য  বিক্রয় না করা :

কোন পণ্য ক্রয় করার পর  নিজ আয়ত্বে আসার পূর্বে বিক্রি করতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, مَنِ اشْتَرَى طَعَامًا فَلاَ  يَبِعْهُ حَتَّى يَسْتَوْفِيَهُ وَيَقْبِضَهُ ‘যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করেছে সে যেন তা  গ্রহণ ও তার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পূর্বে বিক্রয় না করে’।[19]

                                           গাছে থাকা অপরিপক্ক ফল  বা শস্য বিক্রয় না করা :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গাছে থাকা অপরিপক্ক ফল বা ফসল পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত  বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, أَنَّ رِسُوْلَ اللهِ صلى  الله عليه وسلم نَهَى عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتَّى يَزْهُوَ وَعَنِ السُّنْبُلِ حَتَّى  يَبْيَضَّ وَيَأْمَنَ الْعَاهَةَ نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُشْتَرِىَ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খেজুর গাছের ফল না পাকা  পর্যন্ত এবং দানা জাতীয় শস্যের ছড়া পেকে সাদা না হওয়া ও পোকা লাগা থেকে নিরাপদ না  হওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ  করেছেন’।[20]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, نَهَى عَنْ بَيْعِ الثِّمَارِ  حَتَّى يَبْدُوَ صَلاَحُهَا، نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُبْتَاعَ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফল পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।  তিনি বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন।[21] ইবনুল আরাবী বলেন, পরিপক্ক হওয়া মানে তার লাল বা হলুদ রং ধারণ করা’।[22]

                                         একজনের দামের উপর আরেকজন  দাম না করা :

ইসলাম সম্প্রীতি ও  ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। তাই এক মুসলমানের সাথে অপর মুসলমানের সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও  সৌহার্দ্যের ক্ষেত্রে যাতে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।  বিধায় এক মুসলিমের দর-দামের উপর অপর মুসলমানকে দর-দাম করতে নিষেধ করা হয়েছে।  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ  يَسُمِ الْمُسْلِمُ عَلَى سَوْمِ أَخِيهِ ‘কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের দর-দামের উপরে  দর-দাম করবে না’।[23]

তিনি আরও বলেছেন, لاَ يَبِعِ الرَّجُلُ عَلَى بَيْعِ أَخِيْهِ  وَلاَ يَخْطُبْ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيْهِ إِلاَّ أَنْ يَأْذَنَ لَهُ
‘কোন ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপরে ক্রয়-বিক্রয়ের কথা বলবে না এবং  মুসলিম ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর নিজের প্রস্তাব দিবে না। হ্যাঁ, যদি ঐ ভাই  অনুমতি প্রদান করে তবে পারবে’।[24]

                                      অনুমানভিত্তিক  ক্রয়-বিক্রয় না করা :

অনুমানের উপর নির্ভর করে  ক্রয়-বিক্রয় করলে ক্রেতা বা বিক্রেতা যে কোন একজন ক্ষতিগ্রস্ত হ’তে পারে। তাই  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অনুমানভিত্তিক বা স্তূপ আকারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ  করেছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, نَهَى عَنْ بَيْعِ الصُّبْرَةِ مِنَ التَّمْرِ  لاَ يُعْلَمُ مَكِيْلَتُهَا بِالْكَيْلِ الْمُسَمَّى مِنَ التَّمْرِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খেজুর মাপার জন্য প্রচলিত  পরিমাপক দ্বারা না মেপে স্তূপ আকারে খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।[25]

                                                অগ্রগামী হয়ে  ক্রয়-বিক্রয় না করা :

বিক্রেতা বাজারে পেঁŠছতে না  পারলে সে বাজার দর সম্পর্কে অবগত হ’তে পারে না। এমতাবস্থায় পথিমধ্যে ক্রয়-বিক্রয়  করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ক্রেতাকে বাজারে পৌঁছার পূর্বে  অগ্রগামী হয়ে পণ্য ক্রয় করতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেছেন, وَلاَ  تَلَقَّوُا السِّلَعَ حَتَّى يُهْبَطَ بِهَا إِلَى السُّوْقِ ‘বিক্রির বস্ত্ত বাজারে উপস্থিত করার পূর্বে অগ্রগামী হয়ে তা ক্রয়ের জন্য  যাবে না’।[26] তিনি আরও বলেন,لاَ  تَلَقَّوُا الْجَلَبَ، فَمَنْ تَلَقَّاهُ فَاشْتَرَى مِنْهُ فَإِذَا أَتَى سَيِّدُهُ  السُّوْقَ فَهُوَ بِالْخِيَارِ. ‘যারা পণ্যদ্রব্য বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছে, এগিয়ে গিয়ে তাদের  সাথে মিলিত হবে না। যদি কেউ এমন করে এবং কোন বস্ত্ত ক্রয় করে, তবে ঐ বিক্রেতা  বাজারে পৌঁছার পর (উক্ত বিক্রয়কে বহাল রাখা বা ভঙ্গ করার) অবকাশ পাবে’।[27]

                         একই জাতীয় বস্ত্ত কমবেশী  করে বিনিময় করা নিষিদ্ধ :

একই জাতীয় বস্ত্ত কম-বেশী  করে বিক্রি করা নিষিদ্ধ, যা সূদের নামান্তর। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

اَلذَّهَبُ بِالذَّهَبِ مِثْلاً بِمِثْلٍ  وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ مِثْلاً بِمِثْلٍ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ مِثْلاً بِمِثْلٍ  وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ مِثْلاً بِمِثْلٍ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ  وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ مِثْلاً بِمِثْلٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ ازْدَادَ فَقَدْ أَرْبَى  بِيعُوا الذَّهَبَ بِالْفِضَّةِ كَيْفَ شِئْتُمْ يَدًا بِيَدٍ وَبِيعُوا الْبُرَّ بِالتَّمْرِ  كَيْفَ شِئْتُمْ يَدًا بِيَدٍ وَبِيعُوا الشَّعِيرَ بِالتَّمْرِ كَيْفَ شِئْتُمْ يَدًا  بِيَدٍ

‘স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান  সমান, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য সমান সমান, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর সমান সমান, গমের  বিনিময়ে গম সমান সমান, লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান, যবের বিনিময়ে যব সমান সমান  বিনিময় করা যাবে। এগুলো লেনদেনে যে ব্যক্তি বেশী দিল অথবা বেশী গ্রহণ করল, সে সূদে  লিপ্ত হ’ল। রুপার বিনিময়ে স্বর্ণ যেভাবে ইচ্ছা নগদে বিক্রি করতে পার। খেজুরের  বিনিময়ে গম যেভাবে ইচ্ছে নগদে বিক্রি করতে পার। খেজুরের বিনিময়ে যব যেভাবে ইচ্ছে  নগদে বিক্রি করতে পার’।[28]

বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট  হয়েছে নিম্নোক্ত হাদীছে- আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বেলাল  (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উন্নতমানের কিছু খেজুর নিয়ে এলেন। তখন নবী করীম  (ছাঃ) তাকে বললেন, এগুলো কোথা থেকে এনেছ? বেলাল (রাঃ) জবাবে বললেন, আমাদের কিছু  নিম্নমানের খেজুর ছিল, সেগুলোর দুই ছা‘ দিয়ে এক ছা‘ ক্রয় করেছি। এটা করেছি নবী  করীম (ছাঃ)-কে খাওয়ানোর জন্য। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন,

أَوَّهْ أَوَّهْ عَيْنُ الرِّبَا عَيْنُ  الرِّبَا، لاَ تَفْعَلْ، وَلَكِنْ إِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَشْتَرِىَ فَبِعِ التَّمْرَ  بِبَيْعٍ آخَرَ ثُمَّ اشْتَرِهِ

‘ওহ! এটাই স্পষ্ট সূদ,  এটাই স্পষ্ট সূদ, এটা করো না। যদি উন্নত মানের খেজুর ক্রয় করতে চাও, তাহ’লে তোমার  কাছে যে খেজুর আছে তা প্রথমে বিক্রি করে দিবে। অতঃপর প্রাপ্ত মূল্য দিয়ে উন্নত  মানের খেজুর ক্রয় করবে’।[29]

                                    মুযাবানা পদ্ধতিতে  ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  মুযাবানা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,

نَهَى  رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْمُزَابَنَةِ أَنْ يَبِيعَ ثَمَرَ حَائِطِهِ  إِنْ كَانَ نَخْلاً بِتَمْرٍ كَيْلاً، وَإِنْ كَانَ كَرْمًا أَنْ يَبِيْعَهُ بِزَبِيْبٍ  كَيْلاً وَإِنْ كَانَ زَرْعًا أَنْ يَبِيعَهُ بِكَيْلِ طَعَامٍ، وَنَهَى عَنْ ذَلِكَ  كُلِّهِ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুযাবানা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। আর তা হ’ল  বাগানের ফল বিক্রয় করা। খেজুর হ’লে মেপে শুকনো খেজুরের বদলে, আঙ্গুর হ’লে মেপে  কিসমিসের বদলে, আর ফসল হলে মেপে খাদ্যের বদলে বিক্রি করা। তিনি এসব বিক্রি নিষেধ  করেছেন।[30]

পরিশেষে বলব, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ ও উত্তম,  যদি সেটা হালাল উপায়ে সম্পন্ন হয়। হালাল ব্যবসার পদ্ধতি সম্যক অবগত হয়ে সে মোতাবেক  সকল কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তাছাড়া যেসব কারণে ব্যবসা হারাম হ’তে পারে সেগুলি সর্বতোভাবে  বর্জন করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

– কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী

  [1]. কুরতুবী হা/৬২৬৫; ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০৯৯২;  ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৪০, সনদ হাসান।
  [2]. বুখারী হা/৪৯৩৮; মুসলিম হা/২৮৬২; কুরতুবী  হা/৬২৬৮।
  [3]. মুসলিম হা/১০২; তিরমিযী হা/১৩১৫; মিশকাত  হা/২৮৬০।
  [4]. ইউসুফ  আল-কারযাভী, ইসলামে হালাল-হারামের বিধান, অনুবাদ: মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম,  (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী, ১৯৮৪ইং), পৃঃ ৩৬০।
  [5]. ঐ, পৃঃ ৩৪০।
  [6]. বুখারী হা/২০৭৯; মুসলিম হা/১৫৩২।
  [7]. মুসলিম হা/১৫২৪।
  [8]. WWW.  Vandruff. com/mlm.html
  [9]. মাসিক আত-তাহরীক, মার্চ’১২, ১/২০১ নং ফৎওয়া।
  [10]. বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১৫৮১।
  [11]. মুসলিম হা/৪২০৬; মিশকাত হা/২৮৯২।
  [12]. মুসলিম হা/১৬০৫।
  [13]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আবু দাঊদ হা/৩৩০২; মিশকাত  হা/২৭৯৪।
  [14]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৯৩।
  [15]. মুসলিম হা/১০৫; মিশকাত হা/২৭৯৫।
  [16]. মাসিক আত-তাহরীক, আগস্ট ২০১২, পৃঃ ৭-৮।
  [17]. প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮-৯।
  [18]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০, ছহীহাহ হা/২৫০।
  [19]. মুসলিম হা/১৫২৬।
  [20]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৮৩৯।
  [21]. বুখারী হা/২১৯৪।
  [22]. মুসলিম হা/১৫৩৫-এর আলোচনা দ্রঃ।
  [23]. মুসলিম হা/২৭২৭।
  [24]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৫০।
  [25]. মুসলিম হা/১৫৩০।
  [26]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৪৯।
  [27]. মুসলিম হা/২৭২৪।
  [28]. তিরমিযী হা/১২৪০; ইবনু মাজাহ হা/২২৫৪।
  [29]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৬৯১।
  [30]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭১১।

কপি https://i-onlinemedia.net/6080
                       সংযোজক /
           এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
নুরুলগনি ইসলামি একাডেমী কাটাছরা
মিরসরাই চট্টগ্রাম
২২/৬/২০১৯

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন