৭১'এ স্বাধীনতা যুদ্ধে ওলামায়ে কেরামের অবদান
colact এম এম আবদুল্লাহভূঁইয়া
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের এই দেশ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত হয় এবং বাংলার হৃদপিন্ডে টকটকে লাল স্বাধীনতার সুর্য উদ্ভাসিত হয়। সবুজ-শ্যামল স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেয়েছে হিজল তমাল,তরুলতা আর সবুজ শ্যামলতায় ঘেরা রুপসী রাংলাদেশ। বিশ্বের দরবারে আমাদের আত্ম পরিচয় ঘটেছে স্বাধীন জাতি হিসাবে। স্বাধীনতা প্রতিটি জাতির গৌরব ও অহংকারে বিষয়।
৭১’ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের। পাকিস্তানীরা ছিল জালিম আর এদেশের নিরীহ মানূষ ছিল মাজলুম। সুস্থ-বিবেক সম্পন্ন কোন মানুষ কখনো জালেমের পক্ষাবলম্বন করতে পারেনা। মাজলুমকে সাহায্য করা, তাদের পক্ষে কথা বলা এটাই মনুষত্বের পরিচয় এবং ঈমানী দায়িত্ব। আর সে জন্যই এদেশের আলেম সমাজ ও এদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাড়িয়ে দেশের মানুষকে পাকিস্তানী জালিম শাসকদের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। পাকিস্তানীহানাদার বাহিনীর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাজপথে যুদ্ধে করেছেন। কাজ করেছেন দেশ-প্রেমিক হয়ে। অসংখ্য উলামায়ে কেরামগণ তাদের জান-মাল ,সব শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে এ দেশের মাজলুম জনগণের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে উলামায়ে কেরামদের অবদান অনস্বীকার্য। নিম্নে উলামায়ে কেরামগণের নাম ও তাদের অবদানের কথা খুবই সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হল।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক আবহাওয়া এমন যে কোন আলেম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, এ রকম কোন সংবাদ শোনার জন্য আমাদের কান অভ্যস্ত নয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক স্বার্থে ইসলাম এবং ইসলামের সাথে সম্পর্কিত সকল কিছুর গায়ে স্বাধীনতা বিরোধীর লেবেল দেয়ার চেষ্টা করছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে ওলামায়ে কেরামের অংশ গ্রহনকে খাটো করে দেখা হচ্ছে। ইতিহাসের পাতা থেকে ওলামাদের অবদানকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। যার কারণে আমরা ভুলে যেতে বসেছি যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য পেশার লোকদের পাশাপাশি বহু ওলামায়ে কেরামও যে অংশ নিয়েছেন। তাদের অনেকে রণাঙ্গনে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেছেন এবং অনেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সাথে দেশের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছেন। তাই আমি ইতিহাসের পাতা থেকে বিভিন্ন মনিষীদের লেখনি থেকে সংকলন করতঃ সাধারনের উদ্দ্যেশে সামান্য কিছু উপস্হাপন করার চেষ্টা করছি ।
আমরা যারা বাংলাদেশে বাস করছি, তারা সকলেই জানি, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ১৯৭১সালে। এর আগে এ দেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত ছিল।আর পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ১৯৪৭ সালে এবং ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত এ-দেশগুলোর স্বতন্ত্র কোনো নাম ছিল না। সমষ্টিগত নাম ছিল-মহাভারত।
১৯৪৭ সালের পূর্বে প্রায় ২০০ দুইশত বছর মহাভারত শাসন করেছিল ইংরেজরা। ইংরেজদের শাসনামলের আগে,মহাভারতের শাসন ক্ষমতা ছিল মুসলমানদের ।
ইংরেজদের শাসনআমলে ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে, তৎকালীন উপ-মহাদেশের সবচেয়ে বড় আলেম, আল্লামা শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ এর বড় সাহেবজাদা আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. ১৮০৩ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জালিম বলে ফতোয়া দিলেন।এই দেওবন্দি আলেমদের একটি ফতোয়া "ভারত বর্ষ দারুল হারব হয়ে গেছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদ করা ফরজ" একইসাথে ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাও দেন।এই ঘোষণা বা ফতোয়ার ভিত্তিতে, ভারত বর্ষের সকল মুসলমান, স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণ-পণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার ফলে শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার মুসলমান তথা-আলেমদের রক্তের বিনিময়ে ইংরেজদের হাত থেকে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। যার কারনে ইংরেজ বিতাড়িত হয় এবং ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়। ভারতবর্ষ ইংরেজ মুক্ত হতে পেরেছে বলেই পাকিস্তান এবং তার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পেরেছে।
এর দ্বারা সহজেই বুঝতে পারছেন যে, ভারত উপ-মহাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনে আলেম-উলামার কতখানি অবদান ছিল।
এখানে আরও আরেকটু স্পষ্ট করে বলতে চাই যে,ভারত স্বাধীন হওয়ায় পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার উপর। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে ভারত স্বাধীন হওয়ার উপর এবং ভারত স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর ঘোষণা বা ফতোয়ার উপর। এক আধ্যাত্বিক মহা-পুরুষ আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে, আজ ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ স্বাধীন হল। অথচ,স্বাধীনতা ইতিহাসের পাতায় উলামায়ে কেরামের কোনো নাম ও নেই। আর যারা আজকে মুক্তিযোদ্ধা বলে চিৎকার করছে, জিজ্ঞাসা করলে জানাযাবে যে এদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসও জানেনা। আজ অনেকে উলামায়ে কেরামের এই অসামান্য অবদানকে স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করে,
এবার আসা যাক আমাদের বাংলাদেশ নামক এ ভূখন্ডের সেই ১৯৭১ এ রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের আলেম সমাজের কি ভূমিকা ছিল ?এই স্বাধীনতা যুদ্ধে সাধারন জনগনের স্বঃপুত অংশ গ্রহন যেমন ছিল ,তেমনি আলেম ওলামাদের অংশ গ্রহনের কথাও অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই ।যদি তাই হয় তাদের অবদানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে ।যদিও কেউ কেউ তৎকালীন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারনে এর বিরোধীতাও করেছিল,তাই বলে কি আজকে যাদের জন্মই হয়নি সেই সময়,শুধুমাত্র ধর্মীয় লেবাসের কারনে রাজাকার বলে উপহাশ করা অত্যন্ত দুঃখ জনক।
=======================================================
৭১’ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক উলামায়ে কেরামই ছিলেন মুক্তিকামী মানুষের সিপাহসালার। বাংলাদেশের বিখ্যাত আলেম ও বুযুর্গ কওমী ওলামাদের শীরমনি আল্লামা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রাহ.)ও মাওঃ এমদাদুল হক আডাইহাজারী অন্যতম, সে সময় তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন,“এ যুদ্ধ ইসলাম আর কুফরের যুদ্ধ নয়,এটা হল জালেম আর মাজলুমের যুদ্ধ"। এ যুদ্ধ ছিলো জালেমের বিরুদ্ধে মাজলুমের লড়াই। পাকিস্তানীরা জালেম আর এ দেশের বাঙ্গালীরা মাজলুম।তাই সামর্থ্যানুসারে দলমত নির্বিশেষে সকলকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে হবে এবং এটাকে প্রধান কর্তব্য বলে মনে করতে হবে”। এ দেশের শ্রেষ্টবুজুর্গ ফেদায়ে মিল্লাত আল্লামা হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী (রাহ.) এর বিশিষ্ট খলিফা,আধ্যাত্মিক রাহবার আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্র্র্ণভী ছিলেন আরএকজন দূরদশী সিপাহসালার। তিনি তখন পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন না করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন এবং বিপদগ্রস্থ বাঙ্গালী মানুষদেরকে সাহায্য- সহযোগীতা করেছিলেন। তৎকালিন সময়ে একবার তিনি আ্ল্লামা আশরাফ আলী ধরমপুরী (রাহ.) কে ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন যে ,“ আমি সুর্যের মত ¯স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে,কয়েক দিনের ভিতরেই এ দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে এবং পাকিস্তানী হানাদারের জুলুমের কবল থেকে এ দেশের জনগন মুক্তি লাভ করবে”। সত্যি ভবিষ্যৎবানী বাস্তব হয়েছে।আড়াইহাজার থানার কমান্ডার মরহুম শামসুল হকের অধিনে আল্লামাএমদাদুলক আড়াইহাজারী (রাহ.) মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন। তিনি বলেন ১৯৭১ সালে যখন আমি লালবাগ মাদরাসার ছাত্র তখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। যুদ্ধ শুরু হলে আমার মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমি হাফেজ্জি হুজুর ( রাহ.) কে প্রশ্ন করলাম; হুজুর এ যুদ্ধে আমাদের ভূমিকা বা কর্তব্য কি? তখন হুজুর আমাকে বললেন পাকিস্তানী জালিম হানাদার বাহিনীর জুলুম থেকে এ দেশের মানুষকে রক্ষা করা অবশ্যই তোমার আমার সকলের কর্তব্য। তাই বসে থাকার সময় নেই ,জালিমদের কবল থেকে মাজলুমদেরকে বাচাঁনোর জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন কর। এ দেশের নিরীহ জনগনকে সহযেগিীতা করা আমাদের ইমানী দায়িত্ব। আর সেই সময় হাফেজ্জি হুজুর (রাহ.) বলেছিলেন,“হুব্বুল ওয়াতান মিনাল ঈমান” অর্থাৎ ‘দেশ প্রেম ঈমানেরে অঙ্গ’। তাঁর এ কথার উত্তর শুনে আমি বেশ অনুপ্রাণীত হলাম এবং আর বসে থাকতে পারলাম না। আমিও মুক্তিযুদ্ধেশরীক হয়ে গেলাম।
হযরত মাওলানা মুফতি মাহমুদ (রাহ) ও বাঙ্গালী মুসলমানদের পক্ষে ছিল। তার বক্তব্য ছিল বাঙ্গালীদের পক্ষে। মাওলানা আব্দুস সালাম, তিনি বলেন ৭১’সালে আমি করাচি ইউসুফ বিন নুরী মাদরাসার ছাত্র, একদিন মুফতিমাহমুদ সাহেব মাদরাসায় এলে তাকে এক নেতা শেখ মুজিব সম্পর্কে বলেছিল শেখ মুজিব গাদ্দার কে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। তাকে এখনই হত্যা করা হবে তখন মুফতি সাহেব হুজর রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেন শেখ মুজিব গাদ্দার নন; তিনি একজন দেশ প্রেমিক মুসলমান।
মুফতি মাহমুদ (রা.) ১৩ মার্চ এক বক্তব্যে পরিস্কার ভাষায় পাকিস্তানের ইয়াহইয়া খানের ভুট্রোর নীতিকে ভুল আখ্যা দিয়ে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহব্বান জানান। ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় যে,স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগঠক হিসেবে এবং এদেশের মানুষকে মুক্তি যুদ্ধে উৎসাহ ও সহযোগীতায় আলেম সমাজের ভুমিকাই সবচয়ে বেশী। কিন্তু আজকে ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম নেই।
কারন সক্রীয়ভাবে মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন অসংখ্য কওমী উলাময়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখগণ। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন আল্লামা হাফেজ্জি হুজুর ( রাহ.) আল্লামা লুৎফুর রহমান বরুণী (রা.) ,আল্লামা কাজীমু’তাসিম বিল্লাহ, আল্লামা মুফতি নুরুল্ল্যাহ ( রাহ.) আল্লামা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী (রাহ.) আল্লামা শামসুদ্দিন কাসেমী ( রাহ.) ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, প্রমুখ।
স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের অবিসাংবাদিত মুসলিম নেতা বিশ্বের প্রখ্য্যাত আলেম আওলাদেরাসুল সাইয়্যেদ আসয়াদ আল মাদানী ( রা.) এর ভূমিকা অবিস্মরনীয়। যখন পাকিস্তানী বাহিনী এদেশের নিরীহ মানুষের উপর বর্বোরোচিত হামলা চালালো তাৎক্ষনিক তিনি পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেন এবং নিরীহ বাঙ্গালীদের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে কেরাম দের ভুমিকা তথা অবদান দেখে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর আবদুল জলিল হযরত হাফেজ্জি হুজুর (রাহ )এর হাতে বাইয়াত তথা মুরিদ হয়ে গেলেন। তিনি বায়ইয়াত হওয়ার পর তাকে তাঁর ভক্তও শীষ্যরা প্রশ্ন করল আপনি একজন মুক্তিযুদ্ধা হয়ে কিভাবে হাফেজ্জী হুজু রের মতো রাজাকারের কাছে মুরিদ হলেন, জবাবে তিনি বলেছিলেন হযরত হাফেজ্জি হুজুর (রাহ.) কোন রাজাকার নন,তিনি শ্রেষ্ট আলেম এবং সত্যিকার একজন দেশপ্রেমিকও মুক্তিযোদ্ধা,কিন্তু তোমাদের তাজানানেই। কিন্ত আফসোস! আজ হাফেজ্জি হুজর এর অনুসারী তথা কওমী পড়ুয়া আলেম-ওলামা সহ অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম সহ অন্যান্য সাধারন মুসল্লিদের কে শুধু মাত্র ধর্মীয় লেবাসের কারনে রাজাকার বলে উপহাস করা হচ্ছে, অসম্মানী করা হচ্ছে।এটা কাম্য নয়। ঐতিহাসিক বাস্তব সত্য যে, ১৯৭১ সালের এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে কেরামদের অবদানই সবচেয়ে বেশী ছিল।তাদের অবদানকে অস্বীকার করা মানেই তাদের শ্রমকে অবজ্ঞা করা।আমরা জানি দলমত নি্বিশেষে যে যার যার অবস্হান থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করছে আমরা সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছি।কারো অবদানকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। কেউ রনাঙ্গনে,কেউ কমান্ডার হিসাবে,কেউ অস্র দিয়ে, বুদ্ধি- পরামর্শ দিয়ে কেউবা অর্থ দিয়ে আবার কেউবা দোয়ার মাধ্যমে অংশ গ্রহনকরেছেন।সকলকে যার যার অবস্হানে রেখেই মূল্যায়ন করতে হবে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সেই জামেয়া ইসলামিয়া জমিরিয়া কাছেমুল উলুম পটিয়া চট্রগ্রামের (আমার বিদ্যাপিঠ) অবদানের কথাএকটু না বললে হয়না ।অত্র প্রতিষ্ঠানের নাম তো আমরা সবাই শুনছি।বাংলাদেশের ক্বওমী মাদ্রাসা গুলির মধ্যে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা হল চট্রগ্রামের জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া (পটিয়া মাদ্রাসা)১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে মরহুম প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান যে এই চট্রগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এই তথ্য কি আমরা জানি ? এবং মেজর জিয়াউর রহমান কে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহআলাইহি কে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা হত্যা করে এটা কি আমরা আপনারা জানি ?
তাহলে আজকেই জেনেনি কি ঘটেছিল সেই সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতমপ্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মদ উনার “ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র” গ্রন্থের ৫৪,৫৫ ও ১০২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন - “ হানাদার বাহিনী যখন এপ্রিল মাসে চট্রগ্রাম শহরে আসল আমরা তখন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের ট্রান্সমিটার ও অন্যান্য বেতার যন্ত্রপাতি নিয়ে পটিয়ারউদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের সাথে তখন ছিল মেজর জিয়া।
কর্ণফুলি নদী পার হয়ে পটিয়ার মাটিতে পাঁ দিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান চিন্তা করছিল কোথায় তিনি আশ্রয় নিবেন। সেই সময় পটিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম ছিলেন প্রিন্সিপাল শায়খুল আরব ওয়াল্ আজম্ হাজী ইউনুস রহঃ। উনি সেই সময় হজ্জে গিয়েছিলেন।মুহাদ্দেস আল্লামা দানেশরহমাতুল্লাহ আলিইহি তখন পটিয়া মাদ্রাসার দায়িত্বে ছিলেন। উনিই জিয়াউর রহমান কে উনার মাদ্রাসায় আমন্ত্রন জানান। যুদ্ধেরকারনে মাদ্রাসা ছুটি ছিল। মেজর জিয়াউর রহমান ১ সপ্তাহ পটিয়া মাদ্রাসায় ছিলেন। ১ সপ্তাহ পর মেজর জিয়াউর রহমান পটিয়া মাদ্রাসা ত্যাগ করেন।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গোয়েন্দা মারফত তথ্য পেয়ে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি যে পটিয়া মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মুহাদ্দেস আল্লামা দানেশ ও অন্যান্য শিক্ষকরা জিয়াউর রহমানকে আশ্রয় দিয়েছিল।
কিন্তু যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিশ্চিত হয় যে পটিয়া মাদ্রাসার সম্মানিত আলেমরা মুক্তিযুদ্ধ সমর্থনকরেছে, তখনি ১৯৭১ সালের ১৭এপ্রিল সেই পটিয়া মাদ্রাসার উপর জঙ্গি বিমান দিয়ে বোমা বর্ষকরা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনী।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই বোমা বর্ষনে পটিয়া মাদ্রাসার সম্মানিত নায়েবে মুহতামিম ও মুহাদ্দেস আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ আলাইহি ও জামেয়ার ক্বারী জেবুল হাসানের একজন মেহমান শহীদ হন এবং আরো অনেক সম্মানিত শিক্ষক গুরুতর আহত হন। মেজর জিয়াউর রহমান প্রায়ই এই পটিয়া মাদ্রাসার কথা বিশেষ করে আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ আলাইহির কথা বলতেন। পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ ১৯৭১সালে স্পষ্ট ফতোয়া দিয়েছিলেন যে আমরা মজলুম আর পাকিস্তানিরা জালেম,মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করা ফরয এই তথ্য এখনকার কয় জনে জানে ? আমরা শুধু জানি যে রাজাকার আল বদর আলশামস এইসব বাহিনীরলোকেরা ইসলামের নাম ব্যবহার করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনীর গনহত্যা কে সমর্থন করেছে কিন্তু আমাদের দেওবন্দ পন্থী কওমি মাদ্রাসার সম্মানিত আলেমরা যে মুক্তিযুদ্ধ কে সমর্থন করেছিল অনেক আলেম মুক্তিযুদ্ধ করেছিল এই তথ্য আমরা কয় জন জানি?যুগান্তর পত্রিকার সাবেক সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলীর একটা অসাধারন বই,নাম হল “ আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোজে ”শিরোনামে ৯১২ পৃষ্ঠার এই বইয়ে তথ্যপ্রমান দিয়ে অনেক আলেমের ১৯৭১ সালে তাদের মুক্তিযুদ্ধের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন।অনেক মনিষী উক্ত বইয়ের সহায়তা নিয়েছেন,আমিও কিছু চেষ্টা করছি মাত্র।তিনি
গ্রামে গ্রামে ঘুরে শতাধিক আলেম মুক্তিযোদ্ধাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছেন এবং তাদের অনেকের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। এ জন্যে আমরা শাকের হোসেইন শিবলির কাছে কৃতজ্ঞ। উল্লেখ্য যে, আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা জনাব শাকের দিয়েছেন, এর বাইরে আরো অনেক হাজারো আলেম মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, যা ইতিহাসের পাতায় স্হান পায়নি।তবে কেন পায়নি তা বোধগম্য নয়।
এই বইটিতে আপনারা অনেক বড বড় আলেম যারা দেশের বিভিন্ন ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়তাঁদের বীরত্বের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু ঐ আলেমরা কিন্তু আওয়ামীলিগ বা ছাত্রলীগ করতো না।উনারা শুধু দেশ মাতৃকার টানে ওনির্যাতীত নারীদের কে পাকিস্তানী হানদার বাহিনীর লালসার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই মুক্তিযুদ্ধকরেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনা থানা যার মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীর করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয় ,এবং ১৩৯৫ জন পাক আর্মি আত্মসমর্পন করে তিনি হলেন মাওলানা মুখলেছুর রহমান।বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদথেকে প্রকাশিত মাওলানা মুখলেছুর রহমান এর মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট এর সনদক্রমিক নং ২০২০৬।১৯৭১সালে মাওলানামুখলেছুর রহমান চাদপুরের কচুয়া মাদ্রাসায় তাফসীরে জালালাইন পড়তেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি ভারতে পালিয়ে যান।ভারতের উদয়পুরেরঅদূরে পাটনা ক্যাম্পে ক্যাপ্টেন সুজাতআলীর নেতৃত্বে উনারা একসাথে ৯০০ জনট্রেনিং নেন।ট্রেনিং শেষে উনারা ভারতের মিয়ার বাজার সীমান্ত দিয়ে চৌদ্দগ্রাম হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।বাংলাদেশে উনাদের অধিনায়ক ছিলেন মেজর হায়দার।
ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে পদুরবাড়ি লেংড়া বাজারের দিকে জয়দা নামক একটি গ্রাম যেই গ্রামের মাওলানা বাড়ির সবাই মুক্তিযুদ্ধা ছিলেন। মাওলানা বাড়ির ছেলে মাওলানা হাবীবুর রহমান চানুযিনি সরাসরী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গেজেটে প্রকাশিত উনার মুক্তিনং ১০০৯,মাওলানা হাবীবুর রহমান চানু বর্তমানে মুক্তাগাছা থানা বাংলাদেশমুক্তিযোদ্ধা সংসদের থানা কমিটিতে আছেন। উনি ময়মনসিংহ সদরের চড়পাড়া ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করা। মাওলানা বাড়ির জামাই হাফেয মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমদ ভারতীয় ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধা। উনার মুক্তিযুদ্ধা নং ৯৫২। মুক্তাগাছার জয়দা গ্রামের মাওলানা বাড়ি ১৯৭১ সালে অনেক হিন্দু পরিবার কে আশ্রয়দিয়েছিল।
মুক্তাগাছা থানার সকল হিন্দুরা এখনো মাওলানা বাড়ির লোকদের কাছে কৃতজ্ঞ। মাওলানা বাড়ির সবাইতাবলীগ জামাতের সাথে যুক্ত।মাওলানা বাড়ির ছেলে মাওলানা মাহমুদুল হাসান কাকরাইল মসজিদের একজন মুরব্বী।ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যে আলেমদের সংগঠন “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” উনারাওকিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে অনেক গুলি ফতোয়া দিয়েছিলেন।জমিয়তের সকলেই দেওবন্দি আলেম আজও বাংলাদেশে রাজনিতীতে সক্রীয় আছেন।
“জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” ১৯৭১সালে স্পষ্টভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যে নির্মম ভাবে পূর্ব পাকিস্তানি জনগণদেরকে হত্যা করছে এইব্যাপারে অনেকগুলি বিবৃতি দিয়েছিল। এই ফতোয়া গুলি ইসলামিক ফাউন্ডেশনবাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদমাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহির যে জীবনী বের হয়েছে সেই বইটির শেষে পরিশিষ্ট আঁকারে দেয়া হয়েছে। ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলার হিন্দু মুসলমানসকল ধর্ম মত পেশার লোকেরা অংশ গ্রহন করেছিল। বাংলার আলেম সমাজও এরথেকে দূরে ছিল না। তথাকথিত কিছু ইসলামী দলের কতিপয় ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অপকর্ম কে ভিত্তি করে দয়া করে হক্কপন্থী আলেম উলামাদের কে রাজাকার আলবদর আল শামস বলে গালি দিবেন না।বাংলার আলেম সমাজ প্রত্যক্ষ ওপরোক্ষভাবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জড়িত ছিল এতে কোন সন্দেহনাই।
এখন সময় এসেছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রধান মুহাদ্দিস ছিলেন শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি।আমীমুল এহসান রহঃ উনিও কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন হত্যা ওনারী ধর্ষনের বিরুদ্ধে । পরবর্তীতে ইয়াহিয়া সরকার উনাকে জোর করে সৌদিআরব পাঠিয়ে দেয়।দেশ স্বাধীন হবার পরউনি বাংলাদেশে ফিরলে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব তাঁকে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদেরপ্রধান খতীব হিসাবে নিযুক্ত করেন।উপমহাদেশে শিয়া মতবাদেরবিলুপ্তি সাধনে শায়খুল ইসলাম আমীমুলএহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর অনেক অবদান ছিল। [ তথ্যসূত্রঃ শায়খুল ইসলামআমীমুল এহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর জীবন ও কর্ম, ইসলামিক ফাউন্ডেষন বাংলাদেশ]
ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদরে যে সবচেয়ে বড় ক্বওমী মাদ্রাসা জামিয়া ইউনুসিয়া সেই মাদ্রাসার প্রধান মুহতামিম ফখরে বাঙ্গালআল্লামা তাজুল ইসলাম রহমাতুল্লাহ আলাইহি তিনিও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় অনেক বড় বড় আলেম উনার ফতোয়া শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল।অনেক মুক্তিযুদ্ধাকে ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহঃ নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পরমরহুম শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন।
[ তথ্যসুত্রঃ ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহমাতুল্লাহ আলাইহি ও উনারসাথীবর্গ, লেখকঃ হাফিয মুহাম্মদনুরুজ্জামান,ইসলামিক ফাউন্ডেশন,বাংলাদেশ]
ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিকযে আলেমদের সংগঠন “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” উনারাওকিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশেরমুক্তিযোদ্ধার পক্ষে অনেকফতোয়া দিয়েছিলেন।“জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” ১৯৭১সালে স্পষ্টভাবে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী যে নির্মম ভাবে পূর্বপাকিস্তানি জনগণদেরকে হত্যা করছে এইব্যাপারে অনেকগুলি বিবৃতি দিয়েছিল। এইফতোয়া গুলি ইসলামিক ফাউন্ডেশনবাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত শায়খুল ইসলামহযরত হোসাইন আহমদমাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহিরযে জীবনী বের হয়েছে সেই বইটিরশেষে পরিশিষ্ট আঁকারে দেয়া হয়েছে।বিশিষ্ট গবেষক আলেম ডঃ মুশতাক আহমেদ“শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদমাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহিঃ জীবন ওকর্ম” শিরোনামে তথ্য ও তত্ত্ববহুলঅভিসন্দর্ভ প্রনয়ন করেছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসবিভাগে থেকে এই অভিসন্দর্ভউপলক্ষ্যে মাওঃ মুশতাক আহমেদ কে পি.এইচ.ডি.ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে। আর ইসলামিকফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ডঃ মুশতাক আহমেদেরএই অভিসন্দর্ভ টিই শায়খুল ইসলাম হযরতহোসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহআলাইহির জীবনী বই আকারে বের করেছে।বর্তমানে বাংলাদেশে একটা ফ্যাশনে পরিনতহয়েছে যে ইসলামনিয়ে যারা রাজনীতি করে ইসলামনিয়ে যারা লেখালেখি করে তাদেরকে রাজাকার হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।এটা কথাটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এইকথাটাও সত্য যে আমাদেরক্বওমী মাদ্রাসার আলেমরা স্পষ্টভাবে সেই সময় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর নির্যাতনেরবিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। উনারা শুধুফতোয়াই দেননি অনেক কওমি মাদ্রাসারছাত্রদের কে মুক্তিযুদ্ধেও পাঠিয়ে ছিলেন।তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধথাকবে দয়া করে হক্কানী আলেমদেরকে রাজাকার আল বদর বলে গালি দিবেননা। যত বড় মুক্তিযোদ্ধাই আসুক দেওবন্দভিত্তিক কোন কওমি মাদ্রাসার আলেমকে রাজাকার হিসাবে প্রমান করতে পারবে না ।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে শতাধিক আলেম মুক্তিযোদ্ধাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছেন এবং তাদের অনেকের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। এ জন্যে আমরা শাকের হোসেইন শিবলির কাছে কৃতজ্ঞ। উল্লেখ্য যে, আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা জনাব শাকের দিয়েছেন, এর বাইরে আরো অনেক হাজারো আলেম মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, যা ইতিহাসের পাতায় স্হান পায়নি।তবে কেন পায়নি তা বোধগম্য নয়।
এই বইটিতে আপনারা অনেক বড বড় আলেম যারা দেশের বিভিন্ন ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়তাঁদের বীরত্বের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু ঐ আলেমরা কিন্তু আওয়ামীলিগ বা ছাত্রলীগ করতো না।উনারা শুধু দেশ মাতৃকার টানে ওনির্যাতীত নারীদের কে পাকিস্তানী হানদার বাহিনীর লালসার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই মুক্তিযুদ্ধকরেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনা থানা যার মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীর করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয় ,এবং ১৩৯৫ জন পাক আর্মি আত্মসমর্পন করে তিনি হলেন মাওলানা মুখলেছুর রহমান।বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদথেকে প্রকাশিত মাওলানা মুখলেছুর রহমান এর মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট এর সনদক্রমিক নং ২০২০৬।১৯৭১সালে মাওলানামুখলেছুর রহমান চাদপুরের কচুয়া মাদ্রাসায় তাফসীরে জালালাইন পড়তেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি ভারতে পালিয়ে যান।ভারতের উদয়পুরেরঅদূরে পাটনা ক্যাম্পে ক্যাপ্টেন সুজাতআলীর নেতৃত্বে উনারা একসাথে ৯০০ জনট্রেনিং নেন।ট্রেনিং শেষে উনারা ভারতের মিয়ার বাজার সীমান্ত দিয়ে চৌদ্দগ্রাম হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।বাংলাদেশে উনাদের অধিনায়ক ছিলেন মেজর হায়দার।
ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে পদুরবাড়ি লেংড়া বাজারের দিকে জয়দা নামক একটি গ্রাম যেই গ্রামের মাওলানা বাড়ির সবাই মুক্তিযুদ্ধা ছিলেন। মাওলানা বাড়ির ছেলে মাওলানা হাবীবুর রহমান চানুযিনি সরাসরী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গেজেটে প্রকাশিত উনার মুক্তিনং ১০০৯,মাওলানা হাবীবুর রহমান চানু বর্তমানে মুক্তাগাছা থানা বাংলাদেশমুক্তিযোদ্ধা সংসদের থানা কমিটিতে আছেন। উনি ময়মনসিংহ সদরের চড়পাড়া ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করা। মাওলানা বাড়ির জামাই হাফেয মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমদ ভারতীয় ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধা। উনার মুক্তিযুদ্ধা নং ৯৫২। মুক্তাগাছার জয়দা গ্রামের মাওলানা বাড়ি ১৯৭১ সালে অনেক হিন্দু পরিবার কে আশ্রয়দিয়েছিল।
মুক্তাগাছা থানার সকল হিন্দুরা এখনো মাওলানা বাড়ির লোকদের কাছে কৃতজ্ঞ। মাওলানা বাড়ির সবাইতাবলীগ জামাতের সাথে যুক্ত।মাওলানা বাড়ির ছেলে মাওলানা মাহমুদুল হাসান কাকরাইল মসজিদের একজন মুরব্বী।ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যে আলেমদের সংগঠন “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” উনারাওকিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে অনেক গুলি ফতোয়া দিয়েছিলেন।জমিয়তের সকলেই দেওবন্দি আলেম আজও বাংলাদেশে রাজনিতীতে সক্রীয় আছেন।
“জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” ১৯৭১সালে স্পষ্টভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যে নির্মম ভাবে পূর্ব পাকিস্তানি জনগণদেরকে হত্যা করছে এইব্যাপারে অনেকগুলি বিবৃতি দিয়েছিল। এই ফতোয়া গুলি ইসলামিক ফাউন্ডেশনবাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদমাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহির যে জীবনী বের হয়েছে সেই বইটির শেষে পরিশিষ্ট আঁকারে দেয়া হয়েছে। ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলার হিন্দু মুসলমানসকল ধর্ম মত পেশার লোকেরা অংশ গ্রহন করেছিল। বাংলার আলেম সমাজও এরথেকে দূরে ছিল না। তথাকথিত কিছু ইসলামী দলের কতিপয় ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অপকর্ম কে ভিত্তি করে দয়া করে হক্কপন্থী আলেম উলামাদের কে রাজাকার আলবদর আল শামস বলে গালি দিবেন না।বাংলার আলেম সমাজ প্রত্যক্ষ ওপরোক্ষভাবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জড়িত ছিল এতে কোন সন্দেহনাই।
এখন সময় এসেছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রধান মুহাদ্দিস ছিলেন শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি।আমীমুল এহসান রহঃ উনিও কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন হত্যা ওনারী ধর্ষনের বিরুদ্ধে । পরবর্তীতে ইয়াহিয়া সরকার উনাকে জোর করে সৌদিআরব পাঠিয়ে দেয়।দেশ স্বাধীন হবার পরউনি বাংলাদেশে ফিরলে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব তাঁকে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদেরপ্রধান খতীব হিসাবে নিযুক্ত করেন।উপমহাদেশে শিয়া মতবাদেরবিলুপ্তি সাধনে শায়খুল ইসলাম আমীমুলএহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর অনেক অবদান ছিল। [ তথ্যসূত্রঃ শায়খুল ইসলামআমীমুল এহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর জীবন ও কর্ম, ইসলামিক ফাউন্ডেষন বাংলাদেশ]
ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদরে যে সবচেয়ে বড় ক্বওমী মাদ্রাসা জামিয়া ইউনুসিয়া সেই মাদ্রাসার প্রধান মুহতামিম ফখরে বাঙ্গালআল্লামা তাজুল ইসলাম রহমাতুল্লাহ আলাইহি তিনিও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় অনেক বড় বড় আলেম উনার ফতোয়া শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল।অনেক মুক্তিযুদ্ধাকে ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহঃ নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পরমরহুম শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন।
[ তথ্যসুত্রঃ ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহমাতুল্লাহ আলাইহি ও উনারসাথীবর্গ, লেখকঃ হাফিয মুহাম্মদনুরুজ্জামান,ইসলামিক ফাউন্ডেশন,বাংলাদেশ]
ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিকযে আলেমদের সংগঠন “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” উনারাওকিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশেরমুক্তিযোদ্ধার পক্ষে অনেকফতোয়া দিয়েছিলেন।“জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” ১৯৭১সালে স্পষ্টভাবে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী যে নির্মম ভাবে পূর্বপাকিস্তানি জনগণদেরকে হত্যা করছে এইব্যাপারে অনেকগুলি বিবৃতি দিয়েছিল। এইফতোয়া গুলি ইসলামিক ফাউন্ডেশনবাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত শায়খুল ইসলামহযরত হোসাইন আহমদমাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহিরযে জীবনী বের হয়েছে সেই বইটিরশেষে পরিশিষ্ট আঁকারে দেয়া হয়েছে।বিশিষ্ট গবেষক আলেম ডঃ মুশতাক আহমেদ“শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদমাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহিঃ জীবন ওকর্ম” শিরোনামে তথ্য ও তত্ত্ববহুলঅভিসন্দর্ভ প্রনয়ন করেছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসবিভাগে থেকে এই অভিসন্দর্ভউপলক্ষ্যে মাওঃ মুশতাক আহমেদ কে পি.এইচ.ডি.ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে। আর ইসলামিকফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ডঃ মুশতাক আহমেদেরএই অভিসন্দর্ভ টিই শায়খুল ইসলাম হযরতহোসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহআলাইহির জীবনী বই আকারে বের করেছে।বর্তমানে বাংলাদেশে একটা ফ্যাশনে পরিনতহয়েছে যে ইসলামনিয়ে যারা রাজনীতি করে ইসলামনিয়ে যারা লেখালেখি করে তাদেরকে রাজাকার হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।এটা কথাটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এইকথাটাও সত্য যে আমাদেরক্বওমী মাদ্রাসার আলেমরা স্পষ্টভাবে সেই সময় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর নির্যাতনেরবিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। উনারা শুধুফতোয়াই দেননি অনেক কওমি মাদ্রাসারছাত্রদের কে মুক্তিযুদ্ধেও পাঠিয়ে ছিলেন।তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধথাকবে দয়া করে হক্কানী আলেমদেরকে রাজাকার আল বদর বলে গালি দিবেননা। যত বড় মুক্তিযোদ্ধাই আসুক দেওবন্দভিত্তিক কোন কওমি মাদ্রাসার আলেমকে রাজাকার হিসাবে প্রমান করতে পারবে না ।
তথ্যসূত্রঃ শায়খুল ইসলামআমীমুল এহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর
তথ্যসুত্রঃ ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুললাম রহমাতুল্লাহ আলাইহি ও উনারসাথীবর্গ, লেখকঃ হাফিয মুহাম্মদনুরুজ্জামান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন,বাংলাদেশ]
সংকলক-:
মাওলানা অাবদুল্লাহ ভুঁইয়া
ফাজেলে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া
০১৮২৯১৩৮১১৪
০০৯৬৬৫০৪৯৬৭৮৬৩
মাশাল্লাহ ।জাযাকাল্লাহ
উত্তরমুছুন