১ম রত্ন:-নাস্তিক্যবাদিদের মতে ‘যা দেখি না তা মানি না’ বিজ্ঞানের আলোকে যুক্তি খন্ডন,
নাস্তিক্য বাদিদের মতে ‘যা দেখি না তা মানি না’ এই কথাটা কত টুকু যুক্তিযুক্ত তা বিজ্ঞানের আলোকেই জেনে নেয়ার চেষ্টা করবো।
আজকাল আমাদের দেশে নাগরীক জীবনে নৈতীক শিক্ষার অভাবের কারণে শিক্ষা ব্যবস্হায় ধস নামার ফলে যত্রতত্র নাস্তিকদের দৌরাত্ব্য লক্ষ করা যাচ্ছে।এতে করে আমাদের সামাজীক জীবনে যেমন বিশ্রিঙ্খলা তৈরী হচ্ছে তেমনি ভাবে নতুন প্রজন্মের মনে বিভিন্ন বিভ্রান্তির দানা বাঁধছে।আজকাল ইন্টারনেট,ফেইজবুক,ব্লগও ইউটোব সহ নানান সামাজীক যোগাযোগের মাধ্যমে নাস্তিকরা ইসলামের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে অসত্য বানোয়াট কূরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।তারা ইসলাম, মুসলমান ,নবী-রসুল,ছাহাবায়ে কেরাম,এমন কি ইসলামের বিধিবিধান সহ সয়ং মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালাকে নিয়েও তারা কটুক্তি করতে কুন্ঠবোধ করেনি।এমন পরিস্হিতিতে যার যার অবস্হান থেকে এর প্রতিবাদ করা ঈমানী দায়িত্ব।এবং তৎ সঙ্গে লেখনীর মাধ্যমে ঐ সকল বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের যুক্তিনির্ভর জবাবের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে সতর্ক করাও অপরিহার্য কর্তব্য।কারণ তারা অজ্ঞতার কারণেই এমন বিভ্রান্তি চড়াচ্ছে।নাস্তিক্যবাদীদের প্রত্যেকটি কথার জবাব যূক্তিভিত্তিক লেখনীর মাধ্যমে দিয়েই তাদেরকে ইসলামের শীতল ছায়াতলে টানার চেষ্টা করাই যুক্তিযুক্ত,কিন্তু হত্যাকান্ড সমাধান নয়, বিচার বহির্ভূত যে কোন হত্যাকান্ড অমানবিক ,কাউকে হত্যাকরে কারো মতবাদকে দমানোর নজির প্রায় নেই বললেই চলে।যদিও তা সাময়ীক ।
ফেইজবুকে এক ভদ্র লোক এক নাস্তিকের সাথে তার কথোপকোথনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন,
ঐ নাস্তিক ভদ্রলোকটিসহ অন্যান্যদের যুক্তি হল "যা দেখি না তা মানি না" সেই হিসাবে স্রষ্টাকে দেখা যায়না তাই স্রষ্টাকে মানা যাবেনা বা স্রষ্টার অস্তিস্তকে বিশ্বাস করা যাবেনা ।এই অজ্ঞতাপূর্ণ বাক্যটি উচ্চারণ করে এমন এক মহান স্রষ্টাকে দর্শন লাভ করার আকাঙ্খায় জেদ ধরে বসে আছেন, অথচ সেই স্রষ্টার অসংখ্য অগণিত সৃষ্টিকেই তারা দেখার যোগ্যতা রাখেন না।সেখানে স্রষ্টাকে দেখবেন কি ভাবে?কিন্তু স্রষ্টার অগণীত সৃষ্টিকে না দেখেও বিশ্বাস করেন কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল স্রস্টাকে বিশ্বাস করেন না।
তাই আমার এ প্রবন্ধে বিজ্ঞানের আলোকেই তাদের যুক্তিটা খন্ডন করবো ইনশাআল্লাহ ।কারণ কোরান-হাদীস বা কোন ধর্মীয় গ্রন্থের যুক্তি বা রেফারেন্স তাদের কাছে যেহেতু অগ্রহন যোগ্য সেহেতু তাদের সেই কথিত বিজ্ঞান দিয়েই তাদেরকে দপা-রপাই যুক্তিযুক্ত।
১-যেমন, যে বাতাসের সাগরে মানব সম্প্রদায় ডুবে আছে, সেই বাতাসের উপাদান অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি মৌলিক পদার্থগুলোকে মানুষ মোটেও দেখতে পায় না।
প্রতিবার নি:শ্বাস নেয়ার সময় কোটি কোটি অক্সিজেন পরমাণু গ্রহণ করছে কিন্তু এর একটি পরমাণুকেও দর্শন লাভ করতে পারছে না। অথচ শুধুমাত্র একটি অক্সিজেন পরমাণুতে আটটি ইলেকট্রন, আটটি প্রোটন ও আটটি নিউট্রন কণিকা বর্তমান আছে। মানুষের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এই মৌলিক কণিকাগুলোর দর্শন লাভ করা সম্ভব নয়।
তাই বলে কি বস্ত্তবাদে বিশ্বাসীরা ‘যা দেখিনা তা মানি না’ এই নীতির উপর ভিত্তি করে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন এবং তাদের ভিতরে অবস্থিত মৌলিক কণিকাগুলোর অস্তিত্বকে অস্বিকার করার দুঃসাহস দেখাবেন ?
এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন ।
২- হাবিশ্বের সূচনা লগ্নে Stable Atom হিসেবে মৌলিক পদার্থ হাইড্রোজেনই সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়। বর্তমান মহাবিশ্বের শতকরা ৭৫ ভাগ পদার্থই হচ্ছে এই হাইড্রোজেন নামক মৌলিক পদার্থ। প্রতিটি নক্ষত্রের ভেতর জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সমগ্র মহাবিশ্বটি এই হাইড্রোজেন নামক মহাসুক্ষ্ম পরমাণুতে ভরপুর। বস্ত্তবাদীরাও অদৃশ্য হাইড্রোজেন দ্বারা এ মহাবিশ্বটি পূর্ণ হয়ে আছে বলে বিশ্বাস করেন।কিন্তু দেখেননা, না দেখেও বিশ্বাস করেন, অথচ তারা এই অদৃশ্য হাইড্রোজেনের স্রষ্টাকে অদৃশ্যের অজুহাতে তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে শুধু মানব সভ্যতার সাথেই প্রতারণা করছেন না, তারা নিজেরাও নিজেদেরকে প্রতারিত করছেন।
অদৃশ্য সৃষ্টি মানবেন আর অদৃশ্য স্রষ্টা মানবেন না এটা কোনো ধরণের মূর্খতা? দ্বিমুখী নীতির এর চেয়ে নির্লজ্জ উদাহরণ আর কী হতে পারে?
৩-এই মহাবিশ্বে শূন্য বলতে কিছুই নেই। কার্যত সর্বত্র শক্তি, তেজস্ক্রিয়তা ও মহাসুক্ষ্ম কণিকা দ্বারা ভরপুর। দৃষ্টি আওতার বহির্ভূত বলে আমরা তা দেখতে পাই না। প্রায় ভরশূন্য মহাসুক্ষ্ম কণিকা নিউট্রিনো প্রায় আলোর গতিতে সকল প্রকার বস্ত্তকে ভেদ করে মহাবিশ্বব্যাপি পরিভ্রমণরত রয়েছে। প্রতি ইঞ্চি জায়গা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ) মহাসুক্ষ্ম নিউট্রিনো কণিকা অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে। এদের গতিপথ কেউই রুখতে পারে না।
এমন কি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ভিতর দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন=১০০০ মিলিয়ন) পরিমাণ নিউট্রিনো কণিকা ভেদ করে চলে যাচ্ছে। অথচ আমরা তা অনুভব করতে পারি না,বা দেখিনা। অদৃশ্য নিউট্রিনো কণাগুলোর এসব নীরব কর্মকান্ড প্রমাণ করছে যে, ‘যা দেখিনা তা মানি না’ উক্তিটি শুধু অজ্ঞ বা মূর্খলোকদের জন্যই সাজে, জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য কখনোই তা শোভনীয় নয়।
৪- ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নামক দুইটি মহাসুক্ষ্ম জগৎ রয়েছে। এদের আকৃতি ও গঠন আমাদের দৃষ্টি শক্তির আওতার বহির্ভূত, তাই আমরা এদেরকে দেখতে পাই না। এরা এতই ক্ষুদ্রজগতের বাসিন্দা যে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে এরা রীতিমত আসা-যাওয়া করলেও আমরা এদের দেখতে বা অনুভব করতে পারি না। এদের কারণেই আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই, কখনো বা মৃত্যুও ঘটে। এই মহাসুক্ষ্ম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া জগৎও যেন ঐ সব বস্ত্তবাদে বিশ্বাসী নাস্তিক বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন করছে-হে জ্ঞানী সমাজ! কেন মিথ্যার ভান করছ? আমাদের না দেখেও যদি শুধুমাত্র আমাদের উপস্থিতির চিহ্ন দিয়ে বিশ্বাস করা যায় তাহলে স্রষ্টাকে না দেখে তার অনন্য, মহাবিস্ময়কর, কল্পনাতীত অগণিত জীবন্ত দর্শণ দেখার পরও কেন তাকে অস্বীকার করা হবে? এর কি কোনো যুক্তি আছে? এটাতো স্পষ্টত আত্মপ্রবঞ্চনার শামিল।উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো অনেক বেশি সুক্ষ্ম বলে আমরা তা দেখতে পাই না।
5-কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই মহাবিশ্বের বেশির ভাগ জিনিসই আমরা দেখতে পাই না। মাথার উপর কি বিশাল বিস্তৃত আকাশ।তাতে অবস্থান করছে লক্ষ কোটি মহাজাগতিক বস্ত্ত। যেমন, ধুমকেতু,কোয়াসার,ব্লাকহোল,সুপার নোভা, নিউট্রন স্টার, গ্যালাক্সী ইত্যাদি।
এই বস্ত্তগুলো কতটা বিশাল তা শুধু গ্যালাক্সীর কথা বিবেচনা করলেই বুঝা যাবে। এক একটি গ্যালাক্সীর আয়তন এক থেকে দেড় লক্ষ আলোকবর্ষ। আজকের বিজ্ঞান সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের যতটুকু অবস্থান অবলোকন করতে পেরেছে, বিজ্ঞানীদের অনুমান তা মোট মহাবিশ্বের বড়জোড় দশ ভাগ হবে। এই দশ ভাগের মধ্যেই চারশ কোটি গ্যালাক্সীসহ বিলিয়ন বিলিয়ন মহাজাগতিক বস্ত্তর সন্ধান পাওয়া গেছে।
তাহলে সহজেই অনুমান করা যায় বাকি ৯০ ভাগ মহাবিশ্বে গ্যালাক্সীর মত কিংবা তার চেয়ে বহুগুণ বড় কত বিলিয়ন বিলিয়ন মহাজাগতিক বস্ত্ত অবস্থান করছে। আজ পর্যন্ত আমরা যার সন্ধান লাভ করতে পারিনি,কিন্তু বিশ্বাস করি নাস্তিকরাও বিশ্বাস করেন ।একেমন অদ্ভুদ কান্ডজ্ঞানহীন কথা যে স্রষ্টার সৃষ্টিকে অদৃশ্য হওয়া সত্বেও বিশ্বাস করবে আর স্রষ্টাকে অদৃশ্য হওয়ার অজুহাতে বিশ্বাস করা যাবেনা।এদের চেয়ে কপাল পোড়া অপদার্থ জীবকি আর হতে পারে?
6- ১৮৮০ সালের পর থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা শুরু হলেও তা ব্যাপকতা লাভ করে ১৯ শতকের গোড়ার দিকে। কিন্তু তখনো মহাকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা তেমন কিছুই জানতেন না, কারণ তখনো টেলিস্কোপ (Telescope) আবিষ্কার হয়নি। ১৯২০ সালে ইডুইন হাবেল টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন। এজন্যে তখনো সবাই মহাকাশ বলতে আমাদের সৌরজগৎ সহ খালিচোখে দেখা যায় এই নগণ্য আকাশকেই মনে করতো। এর বেশি কল্পনাও করতে পারতো না। শুধু কি মহাকাশ বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখাতেই মানুষের জ্ঞান ছিল আজকের তুলনায় অতি নগণ্য। আজ হতে মাত্র এক থেকে দেড় শত বছর পূর্বে যদি বিজ্ঞান সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের অবস্থা হয় এতটাই নাজুক তবে চিন্তা করুন আজ থেকে১৪০০ বছর পূর্বে বিজ্ঞান সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান কতটা সীমাবদ্ধ ছিল। থাকবেই বা কী করে?
তখনকার যুগতো বিজ্ঞানের যুগ ছিল না, তখনকার যুগ ছিল জমাট বাধা অন্ধকার ও কুসংস্কারের যুগ। গোটা মানব সম্প্রদায় নানাবিধ কুসংস্কারে আছন্ন ছিল। কিন্তু অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে অন্ধকার অনুন্নত, জ্ঞানের আলোহীন পরিবেশে আরব মরুর বুকে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রিয় বাণী বাহকের কাছে অবতীর্ণ করলেন এমন কিছু বাণী যার মাধ্যমে সেই কুসংস্কার আছন্ন যুগেই পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মানব জাতিকে জানিয়ে দিলেন গ্যালাক্সী সম্পর্কে। আরো জানালেন বিগ ব্যাংগ থিওরী, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, Cosomic String অভিকর্ষবল, ব্ল্যাকহোল, সম্প্রসারণ শীল মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সিদের পশ্চাদ মুখিবেগ সম্পর্কে।
এভাবে আরো শ’খানেক বিষয়ে উদাহরণ আছে। উক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে পবিত্র কুরআনই যে মানব জাতিকে সর্বপ্রথম ধারণা দিয়েছেএ ব্যাপারটি নিশ্চিত করার জন্যে এবং এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষনের সমস্ত পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্যে উক্ত বিষয়গুলো পবিত্র কুরআনের যে সূরার যে আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে তা যথাক্রমে তুলে ধরছি।
২৫নং সূরা আল ফুরক্বান ৬১/৬২নং আয়াতে, তাফসীর মারেফুল কোরআন বাংলা , যথাক্রমে৯৬৪/৯৬৫/৯৬৬/৯৬৭/৯৬৮ পৃষ্ঠায় বিস্তারীত বর্নণা করা হয়েছে। ২১নং সূরা সূরায়ে আম্বিয়া ৩০/৩১নং আয়াতে, ৩৫ নংসূরা সূরায়ে ফাতির এর ৪১নং আয়াতে, ৫১নং সূরা, সূরায়ে আযযারিয়াতের ৭/৪৭/৪৮ নং আয়াতে, ৫৬নং সূরা, সূরায়ে ওয়াক্বিয়াহর ৭৫ ও ৭৬ নং আয়াতে, ৫৭নং সূরা সূরায়ে হাদীদের ৪/৫/৬নং আয়াতে এবং ৭১ নং সূরা, সূরায়ে নূহ এর ১৫/১৬/১৭/১৮/ও ১৯ নং আয়াতে এসব বিষয় সম্পর্কেআলোচনা করা হয়েছে।
একবার চিন্তা করুন যেখানে আজ হতে এক থেকে দেড় শত বছর পূর্বে উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষ কল্পনাও করতে পারতো না সেখানে আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে কিভাবে ১টি গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবেএই বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল? নিঃসন্দেহে এর রচয়িতা মহান স্রষ্টা নিজেই।
7- মাইকেল ফ্যারাডে যখন মৃত্যু শয্যায় তখন তার এক সহকর্মী তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ফ্যারাডে স্রষ্টা সম্পর্কে এখন তোমার ধারণা কী? মৃত্যুপথ যাত্রী ফ্যারাডে প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করে বললেন, ধারণা? স্রষ্টাকে অশেষ ধন্যবাদ আমাকে আর কোনো ধ্যান ধারণার উপর নির্ভর করতে হবে না। আমি কাকে বিশ্বাস করতাম জানতে পেরেছ।
১৬শ’ শতাব্দির বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকনের একটি বাণী স্বরণ করিয়ে দিতে চাই । ফ্রান্সিস বেকন বলেছিলেন-সামান্য দর্শন জ্ঞান মানুষকে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যায়, আর গভীর দর্শন জ্ঞান মানুষকে ধর্মের পথে টেনে আনে
আজকে যে সকল তরুন, নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হচ্ছে তাহল অল্প বিদ্যা ভয়ংকর হওয়ার সাথে সাথে পারিবারীক ভাবে সন্তানদের কে ধর্মীয় শিক্ষার নাগালে রেখেই প্রাচ্যাত্বের শিক্ষায় শিক্ষিত করার কারনে।
8-স্রষ্টার অস্বিত্বে কি ভাবে একটা লোক অবিশ্বাসী হতে পারে আমার বুঝে আসেনা
যদি আপনাকে কোন এক ব্যক্তি বলে এই শহরে একটা কারখানা আছে , যার নাই কোন মালিক , নাই কোন ইন্জিনিয়র , নাই কোন মিস্ত্রি , সমস্ত কারখানা মেসিন পত্র নিজে নিজে হয়ে গেছে , সমস্ত নাট-বল্টু নিজে নিজে লেগে গেছে । সমস্ত মেশিন নিজে নিজে চলছে । আশ্চার্য আশ্চার্য জিনিস পত্র নিজে নিজে বের হচ্ছে ।
এখন আপনিই বলুন যে , আপনাকে যে এই কথা বলবে তখন আপনি আশ্চার্য হয়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন কিনা?
এখন আপনি বিচার করুন , একটা কারখানা সম্বন্ধে আপনি কখনো এটা মানার জন্য প্রস্তুত হবেন না যে , এটা কেউ চালানো ছাড়া নিজে নিজে চলছে । তাহলে আপনি বলুন পৃথিবী ও আকাশের যে বিশাল কারখানা আমাদের সামনে চলছে , যেখানে চাঁদ ,সূর্য ও মহাবিশ্বে গ্যালাক্সীর মত কিংবা তার চেয়ে বহুগুণ বড় কত বিলিয়ন বিলিয়ন মহাজাগতিক বস্ত্ত অবস্থান করছে। এবং বড় বড় নক্ষত্র ঘড়ির কাটার মত চলছে ,আপনি এটা কিভাবে মানবেন ,যে এটা কেউ বানানো ছাড়া নিজে নিজে হয়ে গেছে এবং কারো চালানো ছাড়া নিজে নিজে চলছে ?
মানব জাতি তুচ্ছ বির্য ছিল । কিছু দিন পর বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে খুব সংকৃর্ণ স্হান হতে বের হয়েছে । তার জন্য মায়ের স্তন হতে দুধ উৎপন্ন হয়েছে , কিছু দিন পর ঐ মানবকে বুদ্ধি জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে । এখন আমার প্রশ্ন ? এত সব কিছু কে করলো ? নিশ্চয় আপনি উত্তর দিবেন সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালাই করেছেন ।
দুনিয়ার মধ্যে যে কোন কাজ চাই ছোট হোক কিংবা বড় , কখনো সুব্যবস্হা ছাড়া নিয়মিত ভাবে চলতে পারে না । যতক্ষণ পর্যন্ত তার কোন না কোন দায়িত্বশীল না হবে । এক স্কুলের দুজন প্রধান শিক্ষক , এক বিভাগের দুজন ডাইরেক্টর , এক ফোজের দুই কমান্ডর , এক দেশের দুজন প্রধানমন্ত্রী আপনি কি কখনো শুনেছেন ? আর যদি কখনো এমন হয় তবে আপনিই বলুন কি প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে ? এখন আপনি চিন্তা করুন যে , আপনার উপর কোটি কোটি ভারী - ভারী গাড়ি ঘুরছে যা আপনি স্বচোখে দেখছেন , এই পৃথিবী যেখানে আপনি বসবাস করছেন , এই চাঁদ যে রাতে বের হয় , এই সূর্য যে প্রতিদিন বেব হয় । এই সব কিছুর সুন্দর ব্যবস্হায় চলা একথার প্রমান নয় যে , এই পৃথিবীর স্রষ্টা এবং ব্যবস্হাপক কেবল এক আল্লাহ ,
পৃথিবীতে অসংখ্য জিনিষ আছে যা দেখা যায় না তবে মানুষ তার অস্বিত্ব স্বীকার করে । যেমনটি পূর্বেও আলোচনা করা হয়েছে
এক ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত কথা-বার্তা বলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করে তখন আমরা তার অন্তরে আত্মার অস্তিত্ব থাকার পূর্ণ বিশ্বাস করি । কিন্তু যখন সে জমিনে পড়ে যায় । আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায় , শরীর ঢিলা হয়ে যায় , তখন আমরা তার অন্তর হতে আত্মা বের হয়ে যাওয়ার পূর্ণ বিশ্বাস করি। অথচ তার আত্মা বের হতে আমরা দেখিনি ।
সুতরাং এমনি হাজারো লাখো উদাহরণ আছে যে অনেক সৃষ্টির রহস্য আমরা জানিনা বা দেখিনা কিন্তু না দেখা সত্বেও আমরা বিশ্বাস করি কিন্তু স্রষ্টাকে দেখা যায়না তাই বলে "যা দেখি না তা মানি না"এমন কথা আল্লাহদ্রোহী নাস্তিক ,গন্ডমূর্খ নাফরমানদের মানায়, কোনআস্তিকের জন্য নয় ।
পরিশেষে পরামর্শ স্বরুপ বলবো আজকে মানুষ নাস্তিক্যবাদের দিকে কেন ধাবীত হচ্ছে ?তার ৪টি কারণ আমরা খুঁজে পেয়েছি । ১ম:- পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৪২০টির মত ধর্ম প্রচলীত আছে আমরা সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা করি,আপনি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি গবেষনা দিয়ে সত্যকে গ্রহন করবেন এটাই বাস্তব,কিন্তু আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ ধর্মই হল ইসলাম।ইসলাম ছাড়া কোন ধর্মই বর্তমানে আল্লাহর নিকট গ্রহন যোগ্য নয়।আল কোরআন:
যাই হউক আপনি যে কোন ধর্মেরই অনূসারী হউননা কেন যদি পারিবারিক ভাবে সন্তানদেরকে ছোট বেলা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত না করেন তাহলে কোন এক সময় এ সন্তান নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।এই জন্যই অবিভাবককেই সন্তানদের প্রাথমীক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্হা করতে হবে।এ ক্ষেত্রে বড় আলেম মুফতি মোহাদ্দেস হওয়া জরুরী নয় বরং যে পরিমান এলেম অর্জনের দ্বারায় হারাম হালাল ও জরুরীয়াতে দ্বীন ও আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে চিনতে পারে ততটুটুক যথেষ্ট।
২য়:-পারিবারীক ভাবে ধর্মীয় অনূশাসন মেনে না চললেও ঐ সন্তান-সন্ততি কোন এক সময় নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হতে পারে অথবা নাস্তিক্যবাদকে সমর্থন দিতে পারে।ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে সে নিজেও নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।এজন্য অভিবাবকদের করনীয় পারিবারীক ভাবে যত টুকু সম্ভব ধর্মীয় অনূশাসন মেনে চলা। বিজাতীয় অশ্লীল কালসার থেকে পরিবারকে মূক্ত রাখা।
৩য়:-স্কুল-কলেজ ওবিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নাস্তিক্যবাদিদের লেখা পাঠ্যবই পাঠ করলে ধীরে ধীরে ঐ সকল ছাত্র-ছাত্রী সে যে কোন ধর্মাবলম্বী হউকনা কেন মনে মগজে নাস্তিক্ হয়ে বের হবে ।এই জন্য করণীয় ;সরকারকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী লেখকদের বই, পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক তথা ধর্মীয় শিক্ষার বই অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৪র্থ:- মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় অনুভূতীতে আঘাত দেয়ার শাস্তি না হওয়ার কারণে মানুষ নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।। এই জন্য সরকারই কঠোর আইনের মাধ্যমে এ জাতিকে নাস্তিক্যবাদের অভিশাপ থেকে মূক্তি দিতে পারে ,কারন শাস্তির ভয়ে হলেও তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া থেকে বিরত থাকবে। সুতরাং ১ম ও২য় আমাদের সাধারণ জনগনকে ব্যবস্হা নিতে হবে এবং ৩য় ও ৪র্থ টি সরকারকেই করতে হবে।
লেখক :-- এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নুরুলগন ইসলামিক একাডিমী মিরসরাই
অনলাইন ইসলামী এক্টিভিস্ট, কলামিষ্ট্ ও ব্লগার
ফাজেলে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া
মিরসরাই কাটাছরা চট্টগ্রাম
লেখক :-- এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নুরুলগন ইসলামিক একাডিমী মিরসরাই
অনলাইন ইসলামী এক্টিভিস্ট, কলামিষ্ট্ ও ব্লগার
অনলাইন ইসলামী এক্টিভিস্ট, কলামিষ্ট্ ও ব্লগার
ফাজেলে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া
মিরসরাই কাটাছরা চট্টগ্রাম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন