দেশী-বিদেশী লিংক জিনসেং এর ঔষধিগুণ,
 এএনবি ডেক্স : জিনসেং (ইংরেজি ভাষায়: এরহংবহম) অৎধষরধপবধব পরিবারের চধহধী গণের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি মাংসল মূলবিশিষ্ট এক ধরনের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি উত্তর গোলার্ধে পূর্ব এশিয়াতে, বিশেষ করে চীন, কোরিয়া ও পূর্ব সাইবেরিয়াতে, ঠান্ডা পরিবেশে জন্মে।শক্তিবর্ধক টনিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে জিনসেংয়ের প্রচলন আছে। জিনসেং শব্দটা উচ্চারণের সাথে যে দেশটির নাম উচ্চারিত হয় সেটি হলো কোরিয়া। জিনসেংকে অনেকে কোরিয়ান ভায়াগ্রা বলে থাকে। আসলে জিনসেং কী? এরহংবহম হলো গাছের মূল। এই গাছটির নামই এরহংবহম। হাজার হাজার বছর ধরে কোরিয়াতে জিনসেং ওষুধি গুণাগুণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জিনসেং গাছের মূল রোগ প্রতিরোধক এবং ইংরেজিতে বললে বলতে হয় চৎড়ধপঃরাবঃড়ড়ষ রহ ধিৎফরহম ড়ভভ ফরংপধংব।
জিনসেংকে কোরিয়ানরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকে। এর পুরো মূল সুপে দিয়ে দেয়, সিদ্ধ মূল খেতে হয়। চিবিয়ে চিবিয়ে এর নির্যাস নিতে হয়। জিনসেং দিয়ে মদও তৈরি হয়।
এছাড়াও জিনসেং-এর রয়েছে নানাবিধ খাদ্য উপকরণ। জিনসেং কোরিয়াতে এবং দেশের বাইরে জনপ্রিয় হলেও এর চাষাবাদ কিন্তু বেশ কঠিন। বর্হিবিশ্বে জিনসেং-এর প্রচুর চাহিদা মেটানোর জন্য কোরিয়ার এুবড়হম ংধহমনঁশ-ফড় প্রদেশের পুঞ্জী এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে জিনসেং-এর সফল চাষাবাদ চলছে সেই ১১২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে।
এই পুঞ্জী এলাকা জিনসেং দেশ হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত। ষোলশো শতাব্দী থেকেই এই এলাকায় জিনসেং খামার গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এটি কোরিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত জিনসেং উৎপাদনকারী এলাকা। পুঞ্জীতে ঝড়নবধশংধহ পাহাড়ে ৪০০-৫০০ মিটার উচ্চতায় জিনসেং-এর চাষ করা হয়। পাহাড়ের শীতল আবহাওয়া এবং উর্বর মাটি পুঞ্জী এলাকার জিনসেং-কে বলশালী করে তোলে। প্রতিবছর অক্টোবরের প্রথমদিকে পুঞ্জীতে জিনসেং উৎসব হয়ে থাকে। এই উৎসবে খেত থেকে সদ্য তোলা জিনসেং-এর স্বাদ গ্রহণ করা যায়। পরিভ্রমণকারীরা জিনসেং তুলবার অভিজ্ঞতাও নিতে পারে এই উৎসবে। জিনসেং উৎসবে আয়োজন করা হয় নানা রকম প্রতিযোগিতার। এর একটি হলো দি বেস্ট জিনসেং। অর্থাৎ কোন জিনসেং মূলটি দেখতে সবচে আকর্ষণীয়। এর জন্য ৪টি শর্ত হলো: (১) মূলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং একই সাথে মূলটি দেখতে একজন মানুষের আকৃতির কতটা কাছাকাছি হয়েছে। (২) মূলের বাইরের স্তরের পুরুত্ব এবং মূলের ওজন। (৩) মূলের দৈর্ঘ্য এবং (৪) জিনসেং মূলটির বয়স ছয় বছর হতে হবে। কারণ গাছের বয়স ছয় বছরের উপরে চলে গেলে মূল শক্ত হয়ে যায় এবং এর ওয়ুধি গুণাগুণ হ্রাস পায়। অবশ্য যে সব জিনসেং বন-বাদাড়ে প্রাকৃতিকভাব্ জন্মায় সেগুলোর মূলের গুণাগুণ ছয় বছরের পরও বিদ্যমান থাকে। উৎসবে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী জিনসেং মূল কিনতে চাইলে বিজয়ী খামার মালিকদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
তাছাড়া আরেকটি প্রতিযোগিতা হলো জিনসেং কুকার্স কনটেস্ট। এই প্রতিযোগিতা জিনসেংকে খাবার হিসাবে বিভিন্নভাবে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে আয়োজন করা হয়। এতে মূল চিন্তাধারাকে অক্ষুণœ রেখে সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। জিনসেং বলদানকারী এক জাতের গাছের মূল, কাজেই সে দিকটা বিবেচনায় রেখে উৎসবে কুস্তি প্রতিযোগতার আয়োজনও করা হয় ।
অশ্বগন্ধা আমাদের দেশের ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। গাছের গন্ধ ঘোড়া বা অশ্ব এর মত বলেই সংস্কৃতে একে অশ্বগন্ধা বলে। বাংলায় ও আমার অশ্বগন্ধা-ই বলে থাকি। শক্তিবর্ধক হিসেবে এবং এ্যাফ্রোডেসিয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেই ইংরেজিতে একে ওহফরধহ এরহংবহম বলে। ঝড়ষধহধপবধব ফ্যামিলির গাছ অশ্বগন্ধার বৈঙ্গানিক নাম ডরঃযধহরধ ংড়সহরভবৎধ (খ.) উঁহধষ. ডরঃযধহরহব নামক রাসায়নিক উপাদান এই গাছ থেকে আলাদা করার কারণে এই গাছের নামে ডরঃযধহরধ নামকরণ করা হয়েছে। আর ংড়সহরভবৎধ এসেছে ংড়সহরভবৎ থেকে যার মানে নিদ্রা আনয়নকারী। মূল এবং পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়।
এ গাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায় পাওয়া যায়। নিদ্রা আনয়নকারী ঔষধ হিসেবে প্রচীন মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে এর ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। অশ্বগন্ধা একটি ছোট গাছ। এটি দুই-আড়াই হাত উঁচু হয়। গাছটি শাখাবহুল। এতে ছোট ছোট মটরের মতো ফল হয়। ওষুধার্থে এর মূল ব্যবহার্য। ভেষজটির নাম একটি প্রাণীর বোধক। আবার তার ক্রিয়াশক্তিরও বোধক। অশ্বের একটি বিশেষ অঙ্গ (লিঙ্গ)। এই ভেষজটির মূলের আকৃতিও অশ্বের লিঙ্গের মতো। আবার এর গাছ-পাতা সিদ্ধ করলে এমন একটা উৎকট গন্ধ বের হয়, যার গন্ধ ঠিক অশ্বমূত্রের গন্ধের মতো। অপরদিকে ক্রিয়াকারিত্বের দিক থেকে অশ্বের যেরকম যৌনক্রিয়ায় অদম্য শক্তি, এই ভেষজটিও মানবদেহে এনে দিয়ে থাকে অশ্বের মতো চলৎশক্তিথ কি কর্মশক্তিতে আর কি ইন্দ্রিয়বৃত্তি চরিতার্থের সামর্থ্যে। এখানে তার বীর্যশক্তি অশ্বের মতো, কন্দ অশ্বের মতো এবং গাছ-পাতা সিদ্ধ গন্ধ অশ্বের মূত্রের মতো হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে 'অশ্বগন্ধ'।
আয়ুর্বেদ মতে, অশ্বগন্ধের অপর নাম বলদা ও বাজিকরি। সুতরাং অশ্বগন্ধা সেবনে যে দেহের যথেষ্ট পুষ্টি হয়, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এটি বাজিকরি অর্থাৎ কামোদ্দীপক ও রতিবর্ধক।
ইন্দ্রিয় শৈথিল্যে এটি একটি শ্রেষ্ঠ ওষুধ। প্রাচীন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সে যুগে বিলাসিনী নারীরা অশ্বগন্ধার মূল বেটে দেহে লেপন করতো, তাতে দেহকান্তির উৎকর্ষ বাড়ত, কামভাব জাগ্রত হতো এবং রতিশক্তি বর্ধিত হতো। অশ্বগন্ধার অন্য কয়েকটি ব্যবহারের কথাও জানা যায়। চক্রদত্ত বলেন, অশ্বগন্ধা গর্ভপ্রদ। ঋতুস্নানের পর বন্ধ্যা রমণী গোদুগ্ধের সঙ্গে সেবন করবে। শোথ রোগে গোদুগ্ধসহ অশ্বগন্ধা বেটে পান করলে উপকার হয়। সুনিদ্রার জন্য অশ্বগন্ধাচূর্ণ চিনিসহ সেব্য। মূল বেটে প্রলেপ দিলে বাত-বেদনা ভালো হয়। একটু গরম করে গ্রন্থিস্ফীতিতে উপকার হয়। ওষুধটি বল, বীর্য, পুষ্টিকারক এবং আগ্নেয় গুণসম্পন্ন।
ডা. ডি এন চট্টোপাধ্যায় ওষুধটি বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করে ইন্দ্রিয় দৌর্বল্যে যথেষ্ট ফল পেয়েছেন। অনেকে অনেক রোগে ভেলকিবাজি দেখিয়ে থাকেন। এটিও ক্রনিক ব্রংকাইটিসে ভেলকিবাজি দেখানোর মতো একটি ওষুধ। রোগী ক্রমাগত কাশতেই থাকে; কিন্তু কফ বা সর্দি ওঠার কোনো নাম-গন্ধও নেই। অশ্বগন্ধার মূল অন্তর্ধুমে পুড়িয়ে (ছোট মাটির হাঁড়িতে মূলগুলো ভরে সরা দিয়ে ঢেকে পুনঃমাটি লেপে শুকিয়ে ঘুটের আগুনে পুড়ে নিতে হয়। আগুন নিভে গেলে হাঁড়ি থেকে মূলগুলো বের করে গুঁড়ো করে নিতে হয়) ভালো করে গুঁড়িয়ে নিয়ে আধা গ্রাম মাত্রায় একটু মধুসহ চেটে খেতে হয়।
-mail:agronewsbd@gmail.com Cell: 01815-777923 01752-300743 Copyright © 2010 by ‘‘Agro News Of Bangladesh” All Rights Reserved.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন