Translate

মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭

মধুর স্বাস্হ উপকারীতা

মধুর স্বাস্থ্য উপকারিতা  :

পৃথিবীতে যত খাবার রয়েছে সব খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিকটি বিবেচনা করে যদি আমরা একটি তালিকা করি, তবে সে তালিকার প্রথম সারিতেই থাকবে ‘মধু’র নাম। মানবদেহের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই হতে পরিত্রান পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমানিত। হাজার বছর পূর্বেও মধু ছিল সমান জনপ্রিয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক সভ্যতায় মধু ‘ঔষধ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হত। এমনকি প্রতিটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও মধু সেবনের উপকারিতা এবং কার্যকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন পবিত্র আল কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরী কর, এরপর সর্ব প্রকার ফুল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।

মধু কি?

মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয় পদার্থ, যা মৌমাছিরা ফুল থেকে নেকটার বা পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা রাখে। পরবর্তীতে জমাকৃত পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর এবং কোষ বদ্ধ অবস্থায় মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মধু হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে।

মধুর উপাদান

মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।

প্রাচীন কাল থেকেই ঔষধ হিসেবে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে চাইনিজরা প্রতিদিন দুধ ও মধু মিশিয়ে সেটা রুটি দিয়ে খেতো। এটা তাদের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। আবার কেউ কেউ হালকা গরম পানিতে মধু দিয়ে অথবা চায়ের সাথে মধু দিয়ে খেতো। এখনও এই অভ্যাস অনেক চাইনিজদের মধ্যেই দেখা যায়। বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ দেশেই, বিশেষ করে এশিয়ান দেশ গুলোতে মধু খাওয়ার প্রচলণ বেশি। সকাল বেলা এক চামচ মধু আপনার দিনের শুরুটাকে মধুর মত মিষ্টি করে দিবে। শুধু তাই নয়, মধুর আছে অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। হাজারো গুণে ভরা এই মধুতে গুকোজ ও ফ্রুকটোজ আছে যা শরীরে শক্তি যোগায়। এর অন্যান্য উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

খাটি মধু চেনার উপায়

১. এক গ্লাস পানিতে এক চামচ পরিমাণ মধু দিন। তারপর আস্তে আস্তে গ্লাসটি নাড়া দিন। মধু পানির সঙ্গে মিশে গেলে নিশ্চিত হবেন সেটা ভেজাল মধু। আর মধু যদি ছোট পিণ্ডের মতো গ্লাসের পানিতে ছড়িয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন সেটা খাঁটি মধু।

২. মধুর আসল-নকল নির্ধারণ করতে এক টুকরো কাগজে অল্প একটু মধু লাগিয়ে নিন। এবার যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন। তারপর অপেক্ষা করতে থাকুন। মধুতে যদি পিঁপড়া ধরে তাহলে বুঝে নেবেন আপনার কেনা মধুতে ভেজাল আছে।

৩. পরিস্কার সাদা কাপড়ে অল্প একটু মধু লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। একটু পর কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন। কাপড়ে দাগ থেকে গেলে বুঝতে হবে এই মধু নকল। আর কাপড়ে দাগ না থাকলে সেটা খাঁটি মধু।

৪. একটি মোমবাতি নিন। মোমবাতির সলতে তে মধু লাগিয়ে মোমবাতি টি জ্বালানোর চেষ্টা করুন,যদি মোমবাতি টি ভাল ভাবে জ্বলে তাহলে মধুটি খাঁটি আর যদি ভাল ভাবে না জ্বলে তাহলে বুঝতে হবে মধুটি তে ভ্যাজাল আছে।

৫. একটি ব্লটিং কাগজ নিন, এবং তাতে কয়েক ফোঁটা মধু ফেলুন, যদি কাগজ মধু শুষে নেয় তাহলে মধুটি তে ভ্যাজাল আছে আর যদি কাগজের উপর মধু ফোঁটা আকারে রয়ে যায় তাহলে মধুটি খাঁটি।

৬. যদি দেখেন মধু তলানী হিসাবে জমা হচ্ছে, বা শীতে ছোট ছোট মেসরী বা চিনির দানার মত দেখাছ্চে   বা ফ্রিজে রাখলে বসে যায়,  চিনির টুকরার মমত হয় তাহলে বুঝবেন মধু আসল।

৭.  কুকুরের খাদ্যেরর সাথে  মদু মিশিয়ে দিন যদি কুকুর খায় তাহলে বুঝবেন নকল আর না খেলে বুঝবেন আসল।

♣ মধুর উপকারিতার কথায় লিখে শেষ করা যাবে না। মধুর নানাবিধ উপকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হলো।

পণ্যের গুণাগুণঃ

শক্তি প্রদায়ীঃ

৹ মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। মধুতে আছে প্রাকৃতিক চিনি। এই প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। বিশেষ করে যাদের মিষ্টি খাবারের নেশা আছে তারা অন্য মিষ্টি খাবারের বদলে মধু খেয়ে নিন। কিছু মানুষ আছে যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভোগেন এবং এই সমস্যা দূর করার জন্য কিছুক্ষন পর পর চা কফি খায়। এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন।

হজমে সহায়তাঃ

৹ এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে ক্রিয়া করে। পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ

৹ মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম যা শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে ঠান্ডা লাগা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে প্রতিদিন হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান। সঙ্গে একটু দারচিনির গুঁড়াও ছিটিয়ে নিতে পারেন। এতে মন ভালো হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ

৹ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়। যাদের নিয়মিত হজমের সমস্যা হয় তারা প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। মধু পেটের অম্লীয়ভাব কমিয়ে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। হজমের সমস্যা দূর করার জন্য মধু খেতে চাইলে প্রতিবার ভারী খাবারের আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খান।

রক্তশূন্যতায়ঃ

৹ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।

ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়েঃ

৹ বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাস কষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীর ভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাস কষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।

অনিদ্রায়ঃ

৹ মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।

পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ

৹ মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।

দেহে তাপ উৎপাদনেঃ

৹ শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।

হৃৎপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাসঃ

৹ মধুর সাথে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। মধু ও দারচিনির এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়। বেশি উপকার পেতে সকালের নাস্তার আগে এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে এক চামচ মধু ও অল্প দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত খান।

পানিশূন্যতায়ঃ

৹ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।

৹ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

রূপচর্চায়ঃ

৹ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়। মধুতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান। ত্বকের যত্নে মধুর জুড়ি নেই। সকালে ত্বকে মধু লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মধুর বেশ কিছু উপাদান ত্বক শুষে নেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের দাগও চলে যায়।

ওজন কমাতেঃ

৹ মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার করে, মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে। রতিদিন সকালে মধু খেলে ওজন কমে। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে বেশ খানিকটা ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে, শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়।

পণ্যের ব্যবহারবিধিঃ

৹ সকালে ত্বকে মধু লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মধুর বেশ কিছু উপাদান ত্বক শুষে নেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়। ত্বকে নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে ত্বকের দাগও চলে যায়।

৹ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে,শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়।

৹ মধুর সাথে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।

৹ যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন।

৹ হজমের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রতিবার ভারী খাবারের আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খান।

খাঁটি মধুর জন্য যোগাযোগ করুন।
Abdullah bhuiyan
০১৮২৯৩১৮১১৪

1 টি মন্তব্য: