মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১১

মক্কা রয়েল টাওয়ারের বহুমাত্রিক উপযোগিতা ও ব্যবহার বিশ্ব স্বীকৃত

এম  আবদুল্লাহ  নিজামী   ভূঁইয়া


 টাওয়ারের বহুমাত্রিক উপযোগিতা ও ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে চলেছে দুনিয়া জুড়ে । ব্যবসা, বানিজ্য, মিলনায়তন, অফিস, রেস্তোরা, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, শপিং মল, আবাসনসহ নানা কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু টাওয়ার । টাওয়ার একটি দেশের উত্তরাধিকার ঐতিহ্যের প্রতীক। দেশীয় স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিক স্মারক (Architectural Monument) । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের বহিঃপ্রকাশ। তাজমহল ও বানিজ্যিক টাওয়ার এক নয়। টাওয়ার নির্মাণের পাশাপাশি জ্ঞান গবেষণাও দরকার। টাওয়ার নির্মাণ জ্ঞান গবেষণার পরিপন্থী নয়। টাওয়ারের নির্মাণ কৌশলের ভেতরে আছে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান। পাশ্চাত্যে টুইন টাওয়ার যেমন ছিল অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণও আছে। আমরা জানা মতে সৌদি আরবে একাধিক পূর্ণাঙ্গ প্রযুক্তি ও পেট্রোলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং রিয়াদে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শৃরু হয়েছে। সৌদি আরব তেল উত্তোলন ও বাজারজাতকরণে নিজেদের টেকসই প্রযুক্তির উপর রির্ভরশীল। সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া, বেনিন, বুরুন্ডি, কমোরোস, শাদ, বুরকিনা ফাসু, এঙ্গোলার মত দারিদ্যপীড়িত দেশের ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর প্রতি সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করা রাস্ট্র ও জনগণের অবশ্য কর্তব্য। তাই বলে নিজের দেশে বানিজ্যিক টাওয়ার নির্মাণ বন্ধ রেখে টাওয়ারের জন্য বরাদ্দকৃত সব অর্থ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিলিয়ে দেয়া যুক্তির কথা নয়, বরং বাস্তবতা বিবর্জিত খেয়ালীপনা।কারণ বানিজ্যিক টাওয়ারের সাথে একটি দেশের বেকারত্ব বিমোচন, চাকুরি সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আন্ত: রাস্ট্রীয় বানিজ্য, লাখ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা বিজড়িত। আশার কথা যে, মুসলিম-অমুসলিম বহু রাস্ট্র জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় সব সময়। পৃথিবীর সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে গগনস্পর্শী টাওয়ার আছে। কারণ টাওয়ার অপ্রয়োজণীয় বিলাস কেন্দ্র নয়, জীবনের অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ।

পৃথিবীর কয়েকটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ টাওয়ারের নাম উল্লেখ করা হলো : ১. জাপানের টোকিও স্কাই ট্রি (৬৩৪ মি.), কানাডার সি.এন টাওয়ার (৫৫৩ মি.), রাশিয়ার অস্তানকিনো টাওয়ার (৫৪০ মি.), আমেরিকার স্ট্রাটোসফেয়ার টাওয়ার (৩৫০ মি.) ও জার্মানীর ইউরোপাটার্ম টাওয়ার (৩৩৭মি.)।



মক্কা রয়েল টাওয়ার নির্মাণে ইতিবাচক দিক বেশ উজ্জ্বল। এই টাওয়ার দিয়ে মুসলিম জনগণের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হবে।মাত্র কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো

১. এ টাওয়ারের শীর্ষে রয়েছে ১৩০ ফুট রাজকীয় ঘড়ি যা ১৭ কি.মি. দূর থেকে সময় গণনা করা যায়। ফলে ১৭. কি.মি দুর হতে ঈমানদারগণ ৫ ওয়াক্ত নামায, ইফতার, সাহরী ও কর্মজীবিগণ সময় নিরুপণ করতে সক্ষম হবেন।

২. এতে আছে চন্দ্র পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, মুসলিম ঐতিহ্য সংরক্ষণে জাদুঘর যা রাস্ট্রীয়ভাবে জরুরী। মক্কার চার পাশে উঁচু পাহাড় থাকায় সমতল থেকে নতুন মাসের চাঁদ দেখা যায় না, টাওয়ার থেকে চন্দ্র পর্যবেক্ষণ অধিকতর সহজ। চাঁদ দেখার উপর অনেক ইবাদত ও রাস্ট্রীয় কর্মকান্ড নির্ভরশীল।সৌদি আরবে সরকারী বেসরকারী সব আফিস ও প্রতিষ্ঠাণ চান্দ্র মাসের হিসেব মতে পরিচালিত হয়।

৩. হজ ও ওমরাহ পালনকারী পুণ্যার্থীদের জন্য ৩ হাজার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত কক্ষ এ টাওয়ারের বৈশিষ্ট্য। প্রতিবছর রামাযান এবং হজ্বের মওসূমে এত বেশী মুসলমান মক্কায় জড়ো হয় যে, কোন হোটেলে জায়গা থাকে না। এ ছাড়া মক্কা টাওয়ার মক্কা নগরী পরিভ্রমণকারী ৫০ লাখ পুণ্যার্থীর আবাসন সুবিধা প্রদান করবে। এতে কিছু টা হলেও আবাসন সমস্যা লাঘব হবে।

৪. রামাযান এবং হজ্বের মওসূমে বিপুল লোক সমাগমের কারণে রাস্তায় নামায আদায় করতে হয়।মহিলা ও অসুস্থ হাজীগণ দুভোর্গের শিকার হন। প্রখর রোদ মাথায় নিয়ে খুতবা শ্রবণ ও জুমার সালাত আদায় করতে হয়। এ টাওয়ারে চাদের নিচে ১০ হাজার মানুষ নামায আদায় করতে সক্ষম এমন বিশাল প্রার্থনা হল রয়েছে। এবছর ৪০ লাখ মুসলমান ইবাদতের উদ্দেশ্যে রামাযানে মক্কা নগরীতে অবস্থান করেন।

৫. যে সব হাজী বধির, তারা তো মসজিদুল হারামের আযান কানে শুনতে পান না। শ্বেত ও সবুজ বাতির বিশেষ আলো প্রক্ষেপণ দেখে বধির হাজীরা নামাজের সময় নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন।

৬. বিন লাদেন গ্রুপ সৌদি আরবের খ্যাতনামা নির্মাণ প্রতিষ্ঠাণ। ঐতিহ্যগতভাবে হারামাইনের পুননির্মাণ ও সম্প্রসারণে বিন লাদেন গ্রুপের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। উসামা বিন লাদেন হচ্ছেন লাদেন পরিবারের বহু সদস্যের মধ্যে একজন। মক্কা টাওয়ার নির্মাণে তাঁর নিজের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

৭. এ টাওয়ারে প্রথম চার তলা শপিংমল, যেখানে রয়েছে নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান, শো রুম, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, আমদানী-রপ্তানী দপ্তর, বানিজ্যিক কার্যালয়, রেস্তোরা ইত্যাদী, যা মক্কা নগরী সফরকারী জনগণের চাহিদা পুরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

৮. মক্কা টাওয়ারে মানুষের ধারণ ক্ষমতা এক লাখ অর্থাৎ কোন না কোনভাবে এক লাখ মানুষ উপকৃত হবে হয়তো সেবা দেবে নয়তো সেবা নেবে।

৮. সু প্রাচীন কাল থেকে মক্কা ধর্মীয় ও বানিজ্য নগরী। মক্কা টাওয়ার বানিজ্যকে আন্তর্জাতিকীকরণ করবে।

৯. পৃথিবীর মধ্যম রেখা পবিত্র মক্কার উপর দিয়ে প্রলম্বিত, ফলে মক্কা পৃথিবীর টাইম জোনের কেন্দ্রবিন্দু। ১২৬ বছরের পুরনো গ্রিনিচমান (GMT) সময় পরিবর্তন করে মক্কার সময় চালু করা যাবে, এমন একটি পরিকল্পনা নিয়ে কর্তৃপক্ষ অগ্রসর হচ্ছেন। এতে করে মক্কা নগরীর আন্ত:রাস্ট্রীয় গুরুত্ব বেড়ে যাবে।

http://www.sonarbangladesh.com/blog/DaliaNuzha/65126

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন