শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

মদিনা সনদ ও এর মূল বিষয়বস্তু

মদিনায় স্থাপিত প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের সচিবালয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিত
রাষ্ট্রপ্রধানের দ্প্তর
১.
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যক্তিগত সচিব : হযরত হানযালা ইবনে আলরবি
২. পত্রলিখন ও অনুবাদ বিভাগ (সচিব) : হযরত আলী (রা.), হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ও হযরত জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)
৩. সচিব : হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) ও হযরত শুরাহবিল ইবনে হাসান (রা.)
৪. সিলমোহরের আংটিটির সংরক্ষক : হযরত মুকরি ইবনে আবি ফাতিমা (রা.)
৫. অভ্যর্থনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত : হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) ও হযরত বারাহ (রা.)
৬. অর্থ ও হিসাব বিভাগ : হযরত মুয়ানকি ইবনে আবি ফাতিমা (রা.)
৭. জনস্বাস্থ্য বিভাগ : চিকিৎসক হারিস ইবনে সালাহ এবং আবিবার পুত্র
৮. শিক্ষা বিভাগ (স্বাক্ষরজ্ঞান) : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সাইদ (রা) ও আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)
৯. যাকাত ও সদ্কা বিভাগ : হযরত যোবায়ের ইবনে আওয়াম ও যুহাইর
১০. বিজয়ের পর মক্কার প্রশাসক ছিলেন : হযরত ইত্তাব ইবনে উসাইদ (রা.)
১১. ইয়েমেনের দায়িত্বে ছিলেন : হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)
১২. আম্মানের দায়িত্বে ছিলেন : হযরত আমর ইবনে আজ (রা.)
১৩. ওহি বিভাগ : হযরত আবু বকর এবং ওসমান (রা.) সহ চার খলিফা সবাই এবং হযরত জায়েদ ইবনে আজ সাবিত (রা.), উবায় বিন কাব (রা.), মুয়াবিয়া (রা.), খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা.), মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াসহ দশজন মেধাবী-উচু মর্যাদার সাহাবী
১৪. প্রতিরক্ষা বিভাগ : নবীজী (স.) নিজে ছিলেন তবে অধিনায়ক হিসেবে ৭২টি নিয়োগদান করেছিলেন
১৫. জননিরাপত্তা বিভাগ : হযরত কায়েস ইবনে সায়াদ (রা.)
১৬. বিচারপতি হিসেবে : হযরত ওমর ও হযরত আলী (রা.) সহ আটজন মশহুর বিদগ্ধ সাহাবী।

সূত্র : গভর্নমেন্ট আন্ডার দ্যা প্রফেট, ফুতহুল বুলদান, সিরাতে ইবনে হিশাম।
মদিনা সনদTHE MEDINA CHARTER
ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী মদিনা থেকে ঘোষিত ৪৭টি ধারা সংবলিত একটি সনদ বা সংবিধান। 

৬২২ খ্রীস্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনা নগরীতে হিজরতের করেন এবং মদীনা/মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। এসময় সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ। তাই কলহে লিপ্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাতৃত্ব্য ও সম্প্রীতি স্থাপন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা:) ৪৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনার সনদ নামে পরিচিত। এর প্রথম ১০ ধারায় বলা হয় যে, মুহাজির (দেশত্যাগী বা যারা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছিল), বনু আউফ, বনু সাইদা, বনু হারিস, বনু জুশাম, বনু নাজ্জার, বনু আমর, বনু নবীত ও বনু আউস পূর্বহারে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মনীতি এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পণের মাধ্যমে বন্দীদের মুক্ত করবে। ১১ থেকে ২০ ধারায় মুসলমানদের পারষ্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কিত আইন বিধৃত হয়। ২১ থেকে ২৬ ধারায় হত্যাকারীর শাস্তি, কোনো মুসলমান কোনো অন্যায়কারীকে আশ্রয় দিলে তার শাস্তি, কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসা পদ্ধতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদী বিষয়ক আইন সন্নিবেশিত হয়। ২৭ থেকে ৩৬ ধারায় সন্নিবেশিত হয় বিভিন্ন গোত্রের স্বরুপ সম্পর্কিত বিধান। পরবর্তী ধারাসমূহে যুদ্ধনীতি, নাগরিকদের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, নিজ নিজ ব্যয় নির্বাহ, এ সনদে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা, বন্ধুর দুষ্কর্ম, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ, নাগরিকের অধিকার, আশ্রয়দানকারী ও আশ্রিতের সম্পর্ক, নারীর আশ্রয়, সনদের স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শান্তি ভঙ্গের আশন্কা দেখা দিলে করণীয়, কুরাইশদের ব্যাপারে ব্যবস্থা, মদীনার উপর অতর্কিত আক্রমণ হলে করণীয় ইত্যাদী সন্নিবেশিত হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই প্রথম লিখিত চুক্তি ও সংবিধান। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টির মতে-" Out of the religious community of all Madinah the later and largest state of Islam arose" অর্থ্যাৎ মদীনা প্রজাতন্ত্রই পরবর্তীকালে ইসলামী সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূল স্হাপন করে। উক্ত সংবিধানে সকল পক্ষ মেনে নিয়ে স্বাক্ষর দান করেছিল।






 ৬২২ খ্রিষ্টব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্মের নবী

হজরত মুহম্মদ (সাঃ)  মক্কা থেকে মদিনা নগরীতে আসেন। ধীরে ধীরে নবীর নেতৃত্বে মদিনা মুসলমানদের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পরিণত হয়। এসময় সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ ছিল। কলহে লিপ্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রতৃত্বতৃত্ব্য ও সম্প্রীতি স্থাপন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা:) ৪৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনার সনদ নামে পরিচিত।
এই সনদ তৈরির প্রায় সমসাময়িক ইতিহাসবিদ ইবনে হিশাম (র.) তাঁর 'সিরাতুননবী (সা.)' গ্রন্থে এ সনদের ৫৩টি ধারার বর্ণনা করেছেন। [দ্র. ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে বাংলা ভাষায় অনূদিত এই গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের (ঢাকা : ১৯৯৪, পৃ. ১৬৩-১৭১।)] তবে উইলিয়াম মন্টেগোমারি ওয়াট তাঁর 'মুহাম্মদ অ্যাট মদিনা' গ্রন্থে এই সনদের (পৃ. ২২১-২২৫) ৪৭টি ধারা উল্লেখ করেছেন।
অধিকাংশ বাংলায় রচিত প্রায় সকল গ্রন্থে এই সনদের সংক্ষিপ্ত রূপ পাওয়া যায়। নিচে বাংলা উইকি থেকে এই সনদের বিষয় তুলে ধরা হলো।
এই সনদের মূল বিষয়বস্তু ছিল:
১) সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
২) হযরত মুহাম্মদ (স) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন।
৩) কোন সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদীনা বা মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদের কোনরুপ সাহায্য-সহযোগীতা করতে পারবে না।
৪) মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৫) মদিনার উপর যে কোন বহিরাক্রমণ কে রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে। এবং সেই আক্রমণ কে প্রতিরোধ করার জন্য সকল সম্প্রদায়কে এক জোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে।
৬) রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
৭) অসহায় ও দূর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
৮) সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদীনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে।
৯) কোন লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে। তজ্জন্য অপরাধীর সম্প্রদায় কে দায়ী করা যাবে না।
১০) মুসলমান, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরষ্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।
১১) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ বিচারক।
১২) মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুমতি ব্যতীত মদীনাবাসীগণ কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
১৩) মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।

 
 
 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন