সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৬

বিশ্ব এজতেমার আখেরী মুনাজাত বেদআত নয়

প্রসঙ্গ  বিশ্ব এজতেমার আখেরী মুনাজাত:-


আজকাল বিশ্ব এজতেমার সন্মিলীত আখেরী মুনাজাত কে বেদআত বলার মত এত বড় দুঃসাহস দেখাতেও পিছ পা হননি সেই তথাকথিত আহলে হাদীস,লামাযহাবী বা গাইরে মোকাল্লিদদের বিপদগামী বন্ধুরা।তাদের কথা হল নবী সাঃ ও তাঁর ছাহাবীদের থেকে নাকী সন্মেলীত দোয়া বা মুনাজাতের কোন প্রমান নেই।তাইআমি এখানে ৪টি হাদিসের (সার সংক্ষেপ) ভিত্তিতে সন্মেলীত মুনাজাতের প্রমান দেয়ার চেষ্টা করব।আশা করি এতে সকল সংশয়ের নিরসন হবে ইনশাআল্লাহ।



1.আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বেদুঈন জুমুআর দিন রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (অনাবৃষ্টিতে) পশুগুলো মরে যাচ্ছে, পরিবার-পরিজন মারা যাচ্ছে, মানুষ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) দুআর জন্য দুহাত উঠালেন। লোকজনও দুআর জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে হাত উঠিয়ে দুআ করতে লাগলেন।   বুখারি-১০২৯মুলত এখানে বৃষ্টির জন্য দোয়া হলেও কিন্তু দোয়াটি ছিল সন্মিলীত।কিন্তু এ সন্মিলীত দোয়াটি কিন্তু তারাও করেন।


২.বিশিষ্ট ছাহাবী হাবীব বিন্ মাছলামা আল-ফেহরী রাঃ যিনি মোস্তাজাবুত দোয়াও ছিলেন,একদা তিনি এক যুদ্বের সেনাপতি নিযুক্ত হওয়ার পর যখন শত্রু পক্ষের মুখোমুখি হলেন তখন তিনি বললেন যে নবী সাঃ কে বলতে শুনেছি যে,যখনি কোন দল একত্রিত হয়ে কেউ দোয়া করেন এবং শ্রোতাবৃন্দ আমিন আমিন বলেন, তখন ঐ দোয়া কবুল করে নেন আল্লাহ তায়ালা।মাজমুয়ায়ে জাওয়ায়েদ- ১৭৩৪৭,মুস্তাদরাক-৫৪৭৮,আল-মোজেমুল কবীর-৩৫৩৬ নং হাদিস।হাদীস বিশারদ আল্লামা হাইছমী উক্ত হাদিসের রাবী, ছহীহ হিসাবে মতামত ব্যক্ত করেছেন।দেখুন সন্মানীত পাঠক বৃন্দ এখানে নবী সাঃ সন্মিলীত দোয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে।


৩.আল্লামাহ ইবনে-কাছীর আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়ার পৃঃ ৩২৮-৩৩৯/৬, একটি চমৎকার ঘটনা বর্নণা করেছেন যে,হযরত আলা-বিন-হাযরমী (রাঃ)তিনি বাইরাইনের এক জেহাদ থেকে কাফেলা সহ প্রর্ত্যাবর্তনের প্রাক্কালে পথিমধ্যে যাত্রা বিরতি করলে,তাদের খাদ্য রসদ বহনকরী উটটি হারিয়ে যায়।এমতাবস্হায় সকলেই অত্যন্ত পেরেশানীর হালতে রাত্রি অতিবাহীত করার পর ফজরের নামাজের পর সকলেই সন্মিলীত ভাবে এমন ভাবে মুনাজাত বা দোয়া করতে লাগলেন যে সুর্যদয়ের পর এর রশ্নি তাদের গায়ে স্পর্শ করল।এমন দীর্ঘ দোয়া তারা করলেন।এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করলেন।এবং সেই হারানো উটটিও তাদের হস্তগত হয়। সুতরাং এখানে সরাসরি একদল ছাহাবীর আমল দ্বারাও সন্মিলীত দোয়া প্রমানীত।



৪.হযরত সালমান রাঃ হতে বর্ণীত তিনি বলেন যে,রসুল সাঃ বলেছেন যে,যখণ কোন জামায়াত তাদের কোন হাজত পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর কাছে হাত উঠায়,তখন আল্লাহর উপর হক্ব হল প্রার্থীত বিষয়ে উক্ত জামায়াতকে দান করে দেয়া।মু,জেমে আত-তাবরানী ৬১৪২,আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ১৪৬,মাজমায়ে আজজাওয়ায়েদ-১৭৩৪১,কানজুল-উম্মাল-৩১৪৫ নং হাদিস।উক্ত হাদিসেও সন্মিলীত দোয়ার প্রমান পাওয়া যায়। সুতরাং বিশ্ব-এজতেমা বা অন্য কোন সময় সন্মিলীত মুনাজাত বেদআত বলা হাদিস ও ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক।


তাছাডা আমাদের আহলে হাদীস ভাইদের একটা বড সমস্যা হল তারা শুধু মাত্র ছেহা-ছিত্তার হাদিস ছাডা অন্য কোন হাদিস মানতে চায়না।অথচ ছেহাহ ছিত্তায় গডে মিলে সর্বমোট 38775 টি হাদিস (তকরার সহ)অথচ নবী সাঃ হইতে রেওয়ায়েত কৃত হাদিসের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষাধীক।আর বোখারীর সংকলন কৃত হাদীসের সংখ্যা-7275 টি হলেও তাঁর মুখস্ত ছিল প্রায় ৬ লক্ষাধীক হাদিস।তাহলে পূর্ণাঙ্গ শরিয়তের উপর আমল করতে হলে 38775 টি হাদিস কি যথেষ্ট?



ইজতেমার ২৫/৩০ মিনিটের আখেরি মুনাজাত আমাদের নীতিগত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যেহেতু বৃহৎ মজমা এবং মজমার অধিকাংশ মানুষ মুসাফির আর মুসাফিরের দোয়া কবুল হয়। তাছাড়া দেশের সাধারন মানুষের সাথে সাথে প্রধান প্রধান ব্যক্তিদের উপস্থিতি ও মজমার সামগ্রিক বিবেচনায় দীর্ঘ আখেরী মুনাজাত করা হয়। যেখানে দেশ, জাতি ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করা হয়। যেহেতু সবার কথাই মুনাজাতে বলা হয়।

 সেহেতু সকল পেশার মানুষ আখেরী মুনাজাতে শরীক হওয়ায় এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।তবে বিভিন্ন সমস্যার কারনে অনেক মুসল্লি স্ব-শরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও রেডিও অথবা টেলিভিশনের সামনে বসেই মোনাজাতে অংশ গ্রহণের ইছা রাখেন অনেকে মুসল্লি । আবার অনেকে মনে করেন রেডিও টেলিভিশনের সামনে বসে মোনাজাতে কোন ফায়দা নেই। বিষয়টি নিয়ে অনেকের মাঝেই দ্বিধা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ফেকাহ গবেষক মুফতি আবু সাঈদ যোবায়েরর সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে  বলেন, রেডিও টেলিভিশনের সামনে বসে মোনাজাত ধরায় কোন বাধা নেই। আল্লাহর ভূমিতে যে কোন জায়গায় বসেই প্রার্থনা করা যায়। তবে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে মোনাজাত করলে রহমত বরকতের যে আশা রয়েছে সে তুলনায় হয়তো কম পাওয়া যাবে। হাদিসে আছে হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আল ফিহরী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্রিত হয়ে এভাবে দোয়া করে যে, একজন দোয়া করে এবং অন্যরা আমিন বলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দোয়া কবুল করেন। (মুজামেকাবীর,মুস্তাদরাকেহাকিম।)


এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায় স্ব-শরীরে একত্রিত হয়ে মোনাজাত ও রেডিও টেলিভিশনের সামনে মোনাজাতের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। স্ব-শরীরে একত্রিত হওয়া আর টেলিভিশনের সামনে বসে মোনাজাত ধরা এক নয়। তবে বাধা-নিষেধও নেই। হতে পারে বান্দার মনের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ যে কারও দোয়াই কবুল করে নিতে পারেন। সেটা ভিন্ন কথা ।তাছাডা জনৈক লন্ডন প্রবাসী এক টেলিভিশন প্রশ্নোত্তর পর্বে,আবেগ আপ্লুত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে হারাম শরীফে রমজানে ছালাতুত তাহাজ্জত ও তৎপরবর্তি দোয়া চলাকালীন সময়ে টেলিভিশন বা অনলাইনে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঐ নফল-নামাজ ও সন্মিলীত দোয়ায় অংশ গ্রহন করা যাবে কিনা? তখন সন্মানীত স্কলার ও ঠিক একই ধরনের জবাব দিয়েছিলেন যে,টেলিভিশন বা বিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দোয়ায় শরীক হওয়াতে তেমন কোন বাঁধা-নিষেধ না থাকলেও নামাজে অংশ গ্রহন শুদ্ধ হবেনা কারন নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য এত্তেছাল তথা সারীবদ্ধ ভাবে একটার সাথে অন্যটা লাগোয়া হওয়া জরুরী।

 

 ওয়া-ছাল্লাল্লাহু আলা ছাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদ ওয়া-আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া-বারীক ওয়াছাল্লীম    


মৌলানা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
                  ফাজেলে জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া,
                             ব্লগার এন্ড অনলাইন ইসলামি এক্টিভিস্ট 
                 জোরারগঞ্জ, মিরসরাই চট্টগ্রাম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন