মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৬

বিক্রিত মাল ফেরৎ নেয়ার ফজিলত ,l“বিক্রিত মাল ফেরৎ নাই” এ শ্লোগানটি পরিহার করার চেষ্টা করি

বিক্রিত মাল ফেরৎ নেয়া বা পরিবর্তন করার ফজিলত যদি আমরা ব্যবসায়ীরা জানতাম , তাহলে অনেক ছাওয়াব অর্জনের পাশাপাশি আমাদের ব্যবসা বানজ্য আরও উন্নত হত ।তাহলে জেনে নি কি তার ফজিলত ।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্টের মার্কেট, শপিংমল ও দোকান ইত্যাদির মাঝে একটি বাক্য শ্লোগান রূপ নিয়েছে আর তা হলো ‘‘বিক্রিত মাল ফেরৎ নাই’’। আসলে এটি কি কোন ইসলাম সম্মত আচরণ না কি ইসলাম বর্হিগত আচরণ? আসুন দেখি এর বিস্তারিত আলোচনা......
❁ একটি সহীহ হাদীস এর মাঝে রাসূল (সা.) বলেন-
❖ سنن أبي داود (3/ 274)
3460 - حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ، حَدَّثَنَا حَفْصٌ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَقَالَ مُسْلِمًا أَقَالَهُ اللَّهُ عَثْرَتَهُ»
❏ হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সাথে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হওয়ার পর পুনরায় চুক্তি বাতিল করবে (অর্থাৎ বিক্রিত বস্তু ফেরৎ নিবে) আল্লাহ তার গুনাহ সমূহকেও ফেরৎ নিয়ে নিবেন (অর্থাৎ তাকে ক্ষমা করে দিবেন)। সুবহানাল্লাহ!
❀ প্রমাণ সূত্র : আবূ দাউদ-3/274, হাদীস-3460, ইবন মাজা-2/741, হাদীস-2199, মুসতাদরাকে হাকেম-2/52, হাদীস-2291, ইবনে হিব্বান-11/404, হাদীস-5029, শুয়াবুল ঈমান-10/415, হাদীস-7720, হিলয়াতুল আওলীয়া-6/345, হাদীস- সুনানুল কোবরা লিল বায়হাকী-6/44, হাদীস-11128, মুজামু আবী ইয়ালা আল মাওসেলী-261, হাদীস-326, শারহু মুশকেলিল আসার-13/314, হাদীস-5291, মুসনাদে শিহাব আল কাযায়ী-1/278, হাদীস-453, মাকারিমুল আখলাক লিল খারায়েতী-129, হাদীস-370, এছাড়াও আরো অসংখ্য কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে, হাদীসটি সহীহ তাই রেফারেন্স দিয়ে আলোচনা দীর্ঘ করলাম না।
❖ ব্যাখ্যা : আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, একটি পরিক্ষার স্থানে, যাতে মানুষ সফলকাম হলে পরকালে জান্নাত অর্জন করতে পারবে। আর সফলতার সব চেয়ে বড় মাধ্যম হলো গুনাহ মুক্ত হওয়া।
তাই বিক্রত মাল ফেরৎ নেয়ার দ্বারা আমরা গুনাহ মুক্ত হয়ে জান্নাতী হতে পারছি। তাহলে কেন “বিক্রিত মাল ফেরৎ নাই” এই শ্লোগান দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে?
অতএব আমরা আজ থেকে “বিক্রিত মাল ফেরৎ নাই” এ শ্লোগানটি পরিহার করার চেষ্টা করি এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করি যাতে করে মহান সত্তা আমাদেরকে উক্ত হাদীস অনুসারে আমল করে গুনাহ মুক্ত হয়ে জান্নাত পাওয়ার তাওফীক দান করেন। আমীন!
✏ উক্ত আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট যে, বিক্রিত মাল ফেরৎ নেয়া মানে সৎ ও তাকওয়ার কাজে অংশ নেয়া এবং কোন মুসলিম ভাই থেকে পেরেশানী ও চিন্তা ইত্যাদি দূরভীত করে আখেরাতে নিজের মুক্তির পথ অর্জন করা। তাই আসুন এখন আমরা এ সংক্রান্ত কোরআন ও সহীহ হাদীস এর বাণীগুলো আলোচনা করবো....
❁ এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন-
❖ {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ} [المائدة: 2]
❏ তোমরা পূর্ণ ও তাকওয়ার কাজে একে অন্যকে সহযোগীতা কর এবং গুনাহের কাজে সহযোগীতা কর না। (সূরা মায়েদা-02)
অতএব উক্ত আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম বিক্রিত মাল ফেরৎ নেয়ার দ্বারা মহান সত্তার নির্দেশও মানা হয়ে থাকে । কেননা এর দ্বারা অন্য মুসলিম ভাই এর সহযোগীতা হয় এবং নেক কাজেও অংশ নেয়া হয়।
❁ রাসূল (সা.) অন্য একটি সহীহ হাদীসে বলেন-
❖ سنن الترمذي ت شاكر (4/ 34)
1425 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا، نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الآخِرَةِ،
❏ হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন- যে ব্যক্তি কোন মুসলিম থেকে দুনিয়াবী কোন পেরেশানী দূর করে, মহান আল্লাহও তার থেকে আখেরাতের সমস্ত দুঃখ কষ্ট দূর করে দিবেন। তিরমিযী-4/34, হাদীস-1425 ।
অতএব কোন মুসলিম ভাই যখন বিক্রিত মাল ফেরৎ দেয়া নিয়ে কোন পেরেশানীতে পড়ে, আর আপনি ঐ মাল ফেরৎ নিয়ে তাকে পেরেশান মুক্ত করেন। তাহলে এর মাধ্যমে আপনিও আখেরাতের মহা দুঃখ ও কষ্ট থেকে মুক্ত পাবেন। অতএব এত বড় সাওয়াব এর কাজ থেকে আমরা কেন বঞ্চিত হবো?
❁ আবূ দাঊদ এর অন্য একটি সহীহ বর্ণনায় রয়েছে-
❖ سنن أبي داود (4/ 287)
4946 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ، وَعُثْمَانُ، ابْنَا أَبِي شَيْبَةَ الْمَعْنَى قَالَا: حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، قَالَ: عُثْمَانُ وَجَرِيرٌ الرَّازِيُّ، ح وحَدَّثَنَا وَاصِلُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى، حَدَّثَنَا أَسْبَاطٌ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، - وَقَالَ وَاصِلٌ: قَالَ: حُدِّثْتُ عَنْ أَبِي صَالِحٍ ثُمَّ اتَّفَقُوا - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:..... وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ»
❏ হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ ঐ পর্যন্ত তার বান্দার সহযোগীতার মাঝে থাকেন, যতক্ষন পর্যন্ত এক মুসলিম ভাই অন্য মুসলিম ভাই এর সযোগিতায় মগ্ন থাকে। আবূ দাউদ-4/287, হাদীস-4946 ।
অতএব বিক্রিত মাল ফেরৎ নেয়া মানে, অন্য মুসলিম ভাই এর সহযোগীতা করা, যা দ্বারা আপনি মহান আল্লাহর সহযোগীতা অর্জন করতে পারবেন।
❁ সহীহ বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে-
❖ صحيح البخاري (3/ 57)
2076 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا أَبُو غَسَّانَ مُحَمَّدُ بْنُ مُطَرِّفٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ المُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رَحِمَ اللَّهُ رَجُلًا سَمْحًا إِذَا بَاعَ الخ
❏ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি রহমত করুন, যে ক্রয়-বিক্রয়ের মাঝে সহজ করে থাকে। বুখারী-3/57, হাদীস-2076 ।
অতএব বিক্রিত মাল ফেরৎ নেয়া মানে বিক্রয়ের মাঝে অন্যের প্রতি সহজ করা, যা দ্বারা আপনি রাসূল (সা.) এর দোয়ার অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন।
✔ অতএব মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিক্রিত মাল ফেরৎ নেয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!
উক্ত মাসয়ালাটি : মুফতী মো. ছানা উল্লাহ কতৃক প্রকাশীত ,
সকলের অবগতির জন্য আমি কপি পৌষ্ট করলাম ,
তবে মাল ফেরৎ দেয়ার সিষ্টামটা আমি সৌদি আরবে  দেখেছি।  সরকারী ভাবে আইনসিদ্ধ একটা ব্যপার , যে কোন মালামাল ক্রয় করার তিন দিনের মধ্যে পরিবর্তন পরিবদ্ধন করার বিধান করা হয়েছে ।  তবে উক্ত মালের কোন পরিবর্বেতন করা যাবেনা হুবহু ফেরৎ দিয়ে তার পরিবর্তে অন্য মাল নিতে পারবে । তবে কাচা মাল বা খাদ্য দ্রব্য যা তাৎক্ষনীক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন বস্তু এর আওতাভূক্ত নয়  । 

আমাদের দেশেও যারা দ্বীনদার ব্যবসায়ী তারাও অনেকে ফেরৎ বা পরিবর্তন করার সুযোগ রেখেই ব্যবসা করছেন ।  আবার অনেকে এই সব কিছুর কোন তোয়াক্কাই করেনা ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন