শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭

স্বাধীনতা যুদ্ধে অালেম ওলামাদের অবদানের স্বীকৃতি, স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্র দ্বাদশ খন্ডে

স্বাধীনতা যুদ্ধের দলীলপত্র  দ্বাদশ খন্ডে
জমিয়তে উলামা ও আলেমদের অবদানের স্বীকৃতি

সংকলক এম এম আবদুল্লাহভূঁইয়া  

1971 সালের আগষ্ট মাসে বাংলাদেশের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গ 'জমিয়তে ওলামা’র বক্তব্য।  যা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলীলপত্রের দ্বাদশ খন্ডের ৪৫১, ৪৫২,৪৫৩ পৃষ্টায় উল্লেখ করা হয়েছে।  সেখানে এমন কিছু কথা বলেছেন তা আমাদের নজরে থাকলে চেতনাধারীদের "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" বলে ভিন্ন কোন ভ্রন্তমূলক প্রচারণাগুলো যে মূলত বিদ্ধেষসূচক প্রলাপ তা বুঝতে আমাদের খুব একটা বেগ পেতে হবে না ...

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলীলপত্রের দ্বাদশ খন্ডে বাংলাদেশের সমর্থনে 'জমিয়তে ওলামা’র যে বক্তব্য এসেছে তার উল্লেখযোগ্য কিছু লাইন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি ...

1. ধর্মের নামে, ইসলামের নামে, দেশের ঐক্য সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার নামেই এই শোষণ এবং অবিচার চলিয়াছে। যে পবিত্র ইসলাম এবং ধর্মের নাম দিয়া এই শোষণ সেই পবিত্র ইসলাম ধর্মে কিন্তু ইহার অবকাশ নাই।

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে  পূর্ব পাকিস্তানে যে শোষন, নিপীড়ন, জুলুম চলেছে ধর্মের নামে এর কোন অনুমতি বা অবকাশ পবিত্র ধর্ম ইসলামে নেই।

2. নবী স. স্পষ্ট ভাষায় ঘোষনা করিয়াছেন,
“যে রাষ্ট্রনায়ক কিংবা সরকার তাহার প্রজা সাধারণের কল্যাণ প্রচেষ্টা করেন না, তাহাদের সংগে বিশ্বাসঘতকতা করেন, নরকের আগুনই তাহার নিশ্চিত ঠাই।”

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে এখানে এই “রাষ্ট্রনায়ক কিংবা সরকার” বলতে “পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়ক কিংবা সরকারের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে”

3. অত্যাচার, অবিচার চুপ করিয়া সহ্য করিতে নাই, অত্যাচার অবিচারের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় এবং নীরব দর্শকের ভুমিকা গ্রহন করিতে নাই। ইহাতে সমগ্র সমাজের সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে অত্যাচার, অবিচার চুপ করিয়া সহ্য না করে এই প্রতিবাদ অবশ্যই করা উচিত।

4. শেখ মুজিব নেতৃত্ব হোল দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতীক।

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে শেখ মুজিবের নেতৃত্ব  অত্যাচার, অবিচার বিরুদ্ধে বাঙ্গালীর দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতীক।

5. ইসলামাবাদ চক্র প্রতিনিধি জেনারেল ইয়াহিয়া বাংলাদেশের ভাষাকে এবং রায়কে পদদলিত করবার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ...

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে ইসলামাবাদ চক্র প্রতিনিধি জেনারেল ইয়াহিয়া বাংলাদেশের ভাষা ও রায়কে পদদলিত করেছিলেন যার সাথে তৎকালিন ওলামাগণ একমত ছিলেন না।

6. ইয়াহিয়া শেখ মুজিবরকে প্রধান মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়া ছয়দফা দাবী হইতে বিচ্যুত করিতে চেষ্টা করিলেন

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে শেখ মুজিব যে পুর্ব পাকিস্তানীদের উপর অত্যাচার, অবিচার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছিলেন সেই আওয়াজকে বন্ধ করতে ইয়াহিয়া কুটচাল চেলেছিলেন

7. কিন্তু “জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করি তিনি স্পষ্ট জবাব দিলেন ...”

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে শেখ মুজিব ইয়াহিয়ার টোপ গ্রহন না করে নিজেকের জাতির একনিষ্ট খাদেম হিসেবে প্রমান করেছেন।

8. তাহারা ভাবে - ব্রিটিশ সরকারকেও একদা যে অসহযোগ আন্দোলনের অস্ত্র শেষ পর্যন্ত ঘায়েল করিয়াছে ... শোষিত বাঙ্গালী যদি সেই অস্ত্র ব্যবহার করে তবে আর রক্ষা নাই।

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে তৎকালিন পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে ব্রিটিশ সামরাজ্যবাদিদের মত একই কাতারের মনে করতেন ...

9. বাংলাদেশের সর্বত্র চলেছে তাহাদের পৈশাচিক নৃত্য।

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে তখন বাংলাদেশের ইয়াহিয়া নিরাপরাধ জনতা অবাধে নিধন করে চলছিল।

10. প্রায় 23 বছর ধরে যে অব্যক্ত ও জেহাদ চলে আসছিল তাই 25শে মার্চের রাত্রে রুপ নিল ভিন্নভাবে। ইয়াহিয়া খানের বিশ্বাসঘাতকতার ও বুলেটের গুলতে পরিবেশে জন্ম নিল মুক্তিবাহিনী। বাধ্য হল মানুষ জবাব দিতে।

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে 1971 সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পবিত্র ধর্ম ইসলামের ভাষায় ছিল “জিহাদ”

11. এই মুক্তিবাহিনীর উদ্দেশ্যে তাহের সাহেব হাদীস শরিফ হতে উল্লেখ করে বলেন, “নিজেদের প্রান, ধন-মান রক্ষায় যে নিহত হয় তাহার মৃত্যু শহীদের মৃত্যু”।

অর্থাৎ তৎকালিন ওলামাদের ভাষ্যমতে মুক্তিবাহিনীর মাধ্যে যারা জিহাদে অংশগ্রহন করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করছিলেন তারা পবিত্র ধর্ম ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদের মর্যাদা পাচ্ছিলেন।

12. সারা ভারত জমিয়ত ওলামার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আসাদ মাদানী প্রভৃতিও একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের স্বরুপ নিয়ে যেম বলেন, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সংগ্রামী জনসাধারণকেও অভিনন্দন জানান।

অর্থাৎ মাওলানা সৈয়দ আসাদ মাদানী (রাহ)-এর মত বড় বড় ব্যক্তিত্বরাও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ছিলেন। সৈয়দ আসাদ মাদানী (রাহ)-এর সমর্থন প্রমান করে এটা শুধু সৈয়দ আসাদ মাদানীর ভাষ্য ছিল না, বরং দারুল উলুম দেওবন্দের ভাষ্যও এটাই ছিল।

শেষত : উক্ত কনভেনশন প্রস্তাব গ্রহন করে
1. নি:শর্ত সমর্থন জানান বাংলাদেশের সংগ্রামকে
2. ঘৃণা প্রকাশ করে ইসলামাবাদ চক্রের ফাসিস্ত পদ্ধতিকে
3. দাবি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি এবং ঐ সংগে বিশ্বাবাসীর কাছে আবেদন করে ইসলামাবাদ সামরিক চক্রের বিচার
4. আশা প্রকাশ করে যে ভারত সরকার সময়মত স্বীকৃতি দেবে প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন