বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮

ত্বীন বা ডুমুর রহস্য ও নাস্তিকদের উদ্ভট প্রশ্নের অসারতা


নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর খাঁড়া গঠনে সৃষ্টি করেছি —আত-ত্বীন পর্ব ১

শপথ ডুমুর এবং জলপাই ফলের। শপথ সিনিন এলাকার তুর পর্বতের। আর এই নিরাপদ শহরের। নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর খাঁড়া গঠনে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তাকে নিকৃষ্টতম পর্যায়ে নেমে যেতে দেই। তবে তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং সঠিক কাজ করেছে। তাদের জন্য এমন সুন্দর প্রতিদান রয়েছে, যা কখনও শেষ হবে না। এরপরও কীভাবে তুমি বিচার দিনকে অস্বীকার করতে পারো? আল্লাহ কি অন্য সব বিচারকের থেকে বড় বিচারক নন?  — আত-তীন


শপথ ডুমুর এবং জলপাই ফলের। শপথ তুর পর্বতের। আর এই নিরাপদ শহরের।

আল্লাহ تعالى যখন কোনো কিছুর শপথ করেন, তা নিশ্চয়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ? একারণে অনেকেই গবেষণা করেছেন ডুমুর এবং জলপাই ফলের মধ্যে এমন কী রহস্য রয়েছে যে, কুর‘আনে এই দুটি ফলের নাম দেওয়া হলো? গবেষণা থেকে যদিও এসব ফলের অনেক উপকারিতা বেড়িয়ে এসেছে, কিন্তু আল্লাহর تعالى সৃষ্টি প্রতিটি ফলেরই বিরাট সব উপকারিতা রয়েছে। এক কলা’র বিশাল গুণ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখা যাবে। তাই আমাদেরকে দেখতে হবে এইসব ফলের নাম এবং তারপর ধারাবাহিকভাবে দুটি জায়গার নাম উল্লেখ করার মধ্যে আর কোনো কারণ আছে কিনা।

অনেক সময় কোনো জায়গার নাম হয়ে যায় সে জায়গায় জন্ম নেওয়া কোনো ফুল, ফল, ফসল বা কোনো বিশেষ ঘটনার নাম থেকে। যেমন, কেউ যদি বলে, “ফজলি আমের কসম!…” এটা শুনলে বাংলাদেশীদের মনে পড়ে রাজশাহীর কথা। একইভাবে আরবদেরকে যখন আত-তীন এবং যয়তুন-এর কথা বলা হয়, তখন তাদের মনে পড়ে বায়তুল মাকদিস-এর আশেপাশের এলাকার কথা যেখানে এই ফলগুলো প্রচুর পরিমাণে জন্মে এবং যেখানে ঈসা (আ)-এর নবুয়ত প্রাপ্তি হয়েছিল। একইভাবে তুর পর্বত হচ্ছে সেই বিশেষ জায়গা, যেখানে আল্লাহ تعالى সরাসরি মুসা عليه السلام-এর সাথে কথা বলেছিলেন। আর নিরাপদ শহর হচ্ছে মক্কা। আজকে পৃথিবীতে তিনটি বৃহত্তম ধর্ম—ইসলাম, খ্রিস্ট এবং ইয়াহুদি—এই তিন জাতির জন্যই এই তিনটি জায়গা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ঘটেছে এই তিন জায়গায়। এই বিশেষ গুরুত্বকে তুলে ধরার জন্যই সম্ভবত আল্লাহ تعالىএই শপথগুলোর উল্লেখ করেছেন।[৪][১৭][১৮]

নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর সোজা গঠনে সৃষ্টি করেছি

গত কয়েক যুগ ধরে নাস্তিকরা মানুষের দেহের কিছু তথাকথিত ত্রুটিকে ব্যাপক প্রচার করে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, মানুষ কোনো বুদ্ধিমান স্রষ্টার ডিজাইন নয়, বরং এটি বহু বছরের অনিয়ন্ত্রিত বিবর্তনের ফসল। তাদের এই দাবি প্রমাণ করার জন্য তারা মানব দেহের নানা অঙ্গের ডিজাইনে কিছু ভুল বের করেছে। যেমন, তাদের প্রশ্ন হচ্ছে: কেন মানুষের শ্বাস এবং খাওয়ার জন্য একটাই নালী? যদি নাক থেকে ফুসফুস পর্যন্ত শ্বাসনালী আলাদা হতো, আর খাওয়ার জন্য মুখ থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত আলাদা নালী থাকতো, তাহলে কি সেটা আরও বেশি ভালো হতো না? তাহলে মানুষের শ্বাসনালীতে খাবার আটকে যেত না। হেঁচকি উঠত না। গলায় ইনফেকশন হয়ে শ্বাস কষ্ট কম হতো ইত্যাদি। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ—শ্বাস নেওয়া এবং খাওয়া— এই দুটোর জন্য একটি মাত্র নালী রাখাটা কি বিরাট বোকামি নয়? এটাই কি প্রমাণ করে না যে, মানুষ কোনো বুদ্ধিমান স্রষ্টার সৃষ্টি নয়, বরং বুদ্ধিহীন বিবর্তনের ফসল?

প্রথমত, একই শ্বাস এবং খাদ্য নালী নিয়ে হাজার নয়, লক্ষ নয়, বরং ছয়‘শ কোটি মানুষ এখন পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লক্ষ বছর ধরে মানবজাতি বহাল তবিয়তে আছে। মানুষের দেহের এই ডিজাইন কত সফল তা প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নাস্তিকদের কথামত যদি মানুষ বানানো হয়, তাহলে সেই মানুষের নাক থেকে একটা নালী ফুসফুসে যাবে, আর একটা আলাদা নালী মুখ থেকে পাকস্থলীতে যাবে। তারপর যখন সর্দি লেগে নাক বন্ধ হয়ে যাবে, তখন মানুষ দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে, কারণ সে তো আর তখন মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে পারবে না? তখন তাদের ডিজাইন মতো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মানুষকে দুটো নাক দিতে হবে।

একইভাবে মুখের বেলায়ও একই সমস্যা হবে। এখন মানুষকে মুখ দিয়ে খাওয়ানো না গেলে, নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো হয়। তাই তখন দুটো মুখও দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ তখন কথা বলবে কীভাবে? কথা বলার জন্য ফুসফুস থেকে বাতাস জিভ এবং ঠোঁটের সংস্পর্শে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার দরকার হয়। যদি মুখের সাথে ফুসফুসের কোনো সংযোগ না থাকে, তাহলে শুধুই নাক দিয়ে ঘোঁতঘোঁত করা ছাড়া মানুষ আর কোনো কথা বলতে পারত না। আর প্রাণিজগতের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে উন্নত হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো ভাষা এবং কথা বলতে পারা।

আরেকটি ব্যাপার হলো, মানুষের ফুসফুস থেকে প্রায়ই অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে আসে, যেটা আমরা এখন বুঝতে পারি না, কারণ তা ফুসফুস থেকে বেরিয়ে শ্বাসনালীর মাথায় এসে তারপর খাদ্যনালী দিয়ে নীচে পাকস্থলীতে নেমে যায়। কিন্তু নাস্তিকদের ডিজাইনমতো মানুষ বানালে আর সেটা হবে না। সেই তরলকে অবশ্যই নাক পর্যন্ত আসতে হবে। সেটা যেহেতু নিজে থেকে হবে না, তাই মানুষকে কিছুক্ষণ পরপর ফোঁৎ করে এই বাড়তি তরল নাকে নিয়ে আসতে হবে। তখন সারাদিন কিছুক্ষণ পরপর মানুষের নাক থেকে তরল গড়িয়ে পড়তে থাকবে এবং মানুষকে কিছুক্ষণ পর পর ফোঁৎ করতে হবে।

আরও বড় সমস্যা হলো, মানুষ যখন দৌড়ায় বা শারীরিক পরিশ্রম করে, তখন বাড়তি অক্সিজেনের জন্য মুখ হাঁ করে শ্বাস নিতে হয়। এখন নাস্তিকদের কথামতো নাক এবং শ্বাসনালী আলাদা হয়ে গেলে আর মুখ হাঁ করে শ্বাস নেওয়া যাবে না। নাকের মতো ছোট ফুটো দিয়ে শ্বাস নিয়েও মানুষ কুলোতে পারবে না। একারণে মানুষের নাকের ফুটো হতে হবে হাঁ করা মুখের মতো বিশাল।

এখন আমরা যদি নাস্তিকদের ডিজাইন মতো মানুষের মুখমণ্ডল দেখতে কেমন হবে চিন্তা করি, তাহলে তাতে বড় বড় চারটি গহ্বরসহ দুটো আলাদা নাক থাকবে এবং দুটো মুখ থাকবে। এত জায়গার জন্য মাথা হবে প্রায় দ্বিগুণ আকৃতির। গলা এবং ঘাড়ে তিন-চারটা নালী যাওয়ার জন্য তা দ্বিগুণ চওড়া হতে হবে। এত ভারি মাথা এবং গলা বয়ে বেড়ানোর জন্য গরুর মতো মোটা ঘাড় লাগবে। বিরাট মাথা, গলা সহ সেই ঘাড় বয়ে বেড়ানোর জন্য মোটা শক্ত কোমর লাগবে। তারপর এত বড় মাথা, ঘাড়, কোমর, বিশাল শক্ত মেরুদণ্ড বয়ে বেড়ানোর জন্য বড় বড় থামের মতো দুটো পা এবং ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বিরাট থলথলে নিতম্ব লাগবে। এই দেহ নিয়ে মানুষের পক্ষে  সোজা হয়ে দাঁড়ানো সম্ভব হলেও দৌড়-ঝাপ, খেলাধুলা করা সম্ভব হবে না। গরিলার মতো বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে হবে। গরিলারা কোনোদিন পারবে না মানুষের মতো সভ্যতা তৈরি করতে। তাদের মাথায় মানুষের মস্তিষ্ক লাগিয়ে দিলেও হবে না। তাদের সেই দেহ নেই, যা মানুষের দেহের মতো একইসাথে কঠিন, ভারি এবং সূক্ষ্ম কাজ করতে পারে।

আল্লাহ تعالى মানুষের দেহের প্রতিটি অঙ্গকে একদম নিখুঁত আকৃতিতে, অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখে তৈরি করেছেন। মানুষের হাত হচ্ছে এক বিস্ময়। এই হাত দিয়ে একইসাথে প্রায় তিন হাজার পাউন্ড ভরবেগের আঘাত করতে পারে। আবার ব্রেইন সার্জারির মতো অত্যন্ত সূক্ষ্ম কাজও করতে পারে। মানুষের দেহের ডিজাইন পুরো প্রাণিজগতের সবচেয়ে সুন্দর ভারসাম্য বজায় রেখে তৈরি করা ডিজাইন। নাস্তিকদের দাবিমতো এই ভারসাম্য রক্ষা না করে বরং বাকি সব প্রাণীর যত যা শক্তিশালী, নিখুঁত অঙ্গ আছে, তার সব একসাথে জোড়া লাগিয়ে মানুষ বানালেই যদি হতো, তাহলে সেটা এমন এক কিম্ভূত আকৃতির বিকট প্রাণী হতো যে, তা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শীর্ষে ওঠা তো দূরের কথা, ঠিকমতো নড়াচড়াই করতে পারত না।

তাইতো মহান আল্লাহ ঘোষনা করেছেন "আমি মানুষ কে সবচেয়ে সুন্দর গঠনে সৃষ্টি করেছি"।

অ্যাপেন্ডিক্স – অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ

সেক্যুলার স্কুলগুলোতে এবং ডাক্তারি বইগুলোতে এখনও পড়ানো হয় যে, মানুষের দেহে কিছু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ রয়েছে, যেগুলো বানর থেকে মানুষ বিবর্তন হওয়ার সময় মানুষের দেহে রয়ে গেছে।  নাউযুবিল্লাহ।

দেখানো হয় যে, অ্যাপেন্ডিক্স, এডেনয়েড, টনসিল—এগুলো সব অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ। যদি সত্যি সৃষ্টিকর্তা থাকতেন, তাহলে এই অপ্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো থাকত না। মানুষের বিবর্তন প্রকৃতির এক ত্রুটিপূর্ণ খেলা দেখেই এ ধরনের বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ এখনও দেখা যায়।

তবে ২০১০ সালে চারজন বিবর্তনবাদীই এটা প্রমাণ করেছেন যে, এডেনয়িড এবং টনসিল হচ্ছে লিম্ফয়েড টিস্যুর ভাণ্ডার, যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য প্রয়োজনীয়।[৪০২] বিখ্যাত Grolier Encyclopedia-তে বলা হয়েছে যে, অ্যাপেন্ডিক্সকে এতদিন মনে করা হতো অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ, কিন্তু এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যবহারের জন্য অন্যতম অঙ্গ।

 সাইন্স ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সংখ্যায় বলা হয়েছে যে, একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা দল প্রমাণ করেছেন: কমপক্ষে ৩২ বার অ্যাপেন্ডিক্স-এর বিবর্তন হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীতে, যেই প্রাণীগুলো একে অন্য থেকে বিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ অ্যাপেন্ডিক্স অঙ্গটি প্রকৃতির কোনো ভুল নয়, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অঙ্গ, যা বিশেষ কিছু প্রাণীকেই দেওয়া হয়েছে। তারা প্রস্তাব করেছেন যে, এই অঙ্গটি মানুষের পরিপাকতন্ত্রে হজমে সুবিধা হবার জন্য প্রয়োজনীয় ভালো ব্যাকটেরিয়াকে সংরক্ষণ করে। যদি কারও বড় ধরনের ডাইরিয়া, কলেরা হয়ে পরিপাকতন্ত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া হারিয়ে যায়, তখন অ্যাপেন্ডিক্স আবার সেই ভালো ব্যাকটেরিয়া পরিপাকতন্ত্রে সরবরাহ করে।[৪০৪]

সময়ের পরিক্রমায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করছে যে, মানুষের দেহের ডিজাইনে কোনো ভুল নেই, কোনো অপরিকল্পিত ঘটনা নেই। প্রতিটি অঙ্গ নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছে কোনো না কোনো জরুরি কাজের জন্য। মহান আল্লাহ تعالى কত নিখুঁতভাবে মানুষের দেহ তৈরি করেছেন, সেটা আমরা ধীরে ধীরে জানতে পারছি। আল্লাহ تعالىকখনই প্রয়োজন ছাড়া কিছু করেন না। তাঁর প্রতিটা কাজ অত্যন্ত নিখুঁত, সর্বোচ্চ প্রজ্ঞার নিদর্শন।যদিও নাস্তিক্য বাদিরা তা এখনো মানত পারছেনা,আমরা আশা করি অচিরেই সব ধোয়াসা কেটে যাবে।

অপ্রয়োজনীয় ডিএনএ

২০০১ সালের পর থেকে কিছু নাস্তিক বিজ্ঞানীরা ব্যাপক প্রচার শুরু করেন যে, মানুষের যত ডিএনএ আছে, তার মধ্যে ৯৭% হচ্ছে ‘জাঙ্ক ডিএনএ’ অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় ডিএনএ। এই নিয়ে প্রচুর গবেষণা পত্র, বইয়ের পর বই লেখা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা থাকলে সে যে ‘বিরাট বোকা’ তা প্রমাণ করার জন্য এই জাঙ্ক ডিএনএ দেখানো হতো।

তারপর ২০০৩ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের ৪৪২ জন বিজ্ঞানীর ৩২টি গবেষণাগারে গবেষণা করে যা বের হলো, তাতে নাস্তিকদের মুখে চুনকালি পরে গেলো। দেখা গেলো ৮০% এর বেশি ডিএনএ কোনো না কোনো কাজে সক্রিয়। একইসাথে এটাও বের হলো যে, ডিএনএ অনেক জটিল এবং মানুষ এখনও ডিএনএ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারেনি।[৪০৫]

অথচ এর আগেই নাস্তিক বিজ্ঞানীরা এমন সব আর্টিকেল এবং বই লিখে ফেললেন যে, তারা পুরোপুরি বুঝে গেছেন ডিএনএ কী এবং তা কীভাবে কাজ করে। তাদের লেখাগুলো পড়লে পরিষ্কারভাবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়: তারা লেখার সময় সুকৌশলে কথার মারপ্যাঁচে ঢেকে রাখেন যে, বিজ্ঞান এখনও সেই বিষয়ে সবকিছু জানতে পারেনি। বরং তারা যে ব্যাপারে লিখছেন, সেই ব্যাপারে যা কিছুর জানার আছে, তার সব তারা জানেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে কোনো প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক মত নেই। তাই তারা যা বলছেন, তা পরীক্ষিত প্রমাণিত সত্য এবং সেই ব্যাপারে মানবজাতি শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছে।—এই প্রকাশ্য প্রতারণার উদ্দেশ্য একটাই— খ্যাতি। 


মানুষকে সঠিক পথ দেখানো তাদের উদ্দেশ্য নয়। যদি তাদের উদ্দেশ্য সৎ হতো, তাহলে তাদের লেখার ভাষা অনেক নমনীয় হতো। কিন্তু তখন কেউ আর তাদের বই কিনত না, লেকচারও শুনত না। আর তাদের মধ্যে যদি সত্যিই সততা থাকতো, তাহলে তাদের দাবি ভুল প্রমাণ হওয়ার পর তারা বাজার থেকে বইগুলো তুলে নিত। কিন্তু সেটা কখনও হতে দেখা যায় না। বরং বহু ভুল প্রমাণিত তথ্যসহ নাস্তিক বিজ্ঞানীদের লেখা বই এখনও বিপুল পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে।

তারপর আমি তাকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ে নেমে যেতে দেই, সুরা ত্বীন

আমরা যদি কুমির বা বাঘের মতো হিংস্র প্রাণীগুলোর দিকে দেখি, এদের যখন ক্ষুধা লাগে, তখন এরা শিকার করে খায়। এদের যখন পেট ভরা থাকে, তখন সামনে দিয়ে নাদুস নুদুস শিকার হেঁটে গেলেও তারা ফিরেও তাকায় না। কিন্তু প্রাণীজগতে মানুষই একমাত্র সৃষ্টি, যারা প্রয়োজনের থেকে যত বেশি পারে হাতিয়ে নেয়। সচ্ছল জীবন থাকার পরেও, আরও সম্পদ হাতানোর জন্য প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, খুন করে। একদিকে মানুষ সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে সুন্দর গঠনের সৃষ্টি, অন্যদিকে এরাই এতটা নীচে নামতে পারে যে, তার ধারে কাছেও অন্য কোনো প্রাণী যেতে পারে না। এরা নিজেদের স্বার্থের জন্য কোটি মানুষকেও খুন করতে পারে। কোটি মানুষকে নকল, ভেজাল খাবার খাইয়ে হাসপাতালে পাঠাতে পারে। বোমা মেরে কয়েক প্রজন্ম বিকৃত করে দিতে পারে। অভাবের তাড়নায় নিজের শিশুকে হত্যা করতে পারে। ছোট বাচ্চাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে কেটে বাজারে বিক্রি করতে পারে।

মানুষ যখন আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান না মেনে মানব রচিত বিধানের পিছনে দৌডাবে তখনই মানুষ নিকৃষ্ট জীবে পরিনত হতে বাধ্। 

(চলবে)

[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০]

সংকলিত ও সংযোজিত। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন