জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী যে কারনে আলেম সমাজের নিকট প্রত্যাখ্যাত হলেন ৷
এ ব্যপারে বলতে গেলে হয়তো অনেকে ব্যথিত হবেন , তবে আমি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ হেয় বা খাটো করার উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরতে চাইনা । আমি জানি, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে।
উত্তম খাবারের সাথে যেমন সুক্ষ পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহন করলে বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব তেমন অনুভূত হয়না এবং ধীরে ধীরে ঐ বিষাক্ত খাবার সহনীয় হয়ে যায় তেমনি মাওলানা মওদুদীর ত্রুটিযুক্ত কথা ও কাজগুলোকেও জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইয়েরা একসময় তাদের আক্বীদায় পরিনত করেন।
‘তাফহিমুল কোরআন’কে আলেম সমাজ নিষিদ্ধের দাবী করায় বর্তমান সংস্করনগুলো থেকে কিছু আপত্তিকর কথা বাদ দেওয়া হয়েছে যদিও এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া মাওলানা মওদুদী জীবিত থাকাকালীন বা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন ভুল স্বীকার করে তওবা করা হয়নি। তাই মুসলিম ভাইদের ঈমানের হেফাজতের জন্য এগুলো বর্ননা করা অত্যন্ত জরুরী মনে করছি ৷
যদি মওদুদী সাহেবের সেই ভ্রান্ত আক্বিদা থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে আহলে সুন্নাতের আক্বিদার মতাদর্শে অনূপ্রানীত হয়ে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করেন তবেই সফলতা আসবে ৷ সমগ্র পৃথিবীর ঈমান দার মুসলমানদের আক্বিদা হল
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ- তাদের মত পূত পবিত্র মহা মানব আল্লাহর জমিনে আকাশের নীচে আর দ্বিতীয় কেউ নেই ৷ এই হলো ইসলামী আকীদা।
তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়। মওদুদীর এআক্বিদা - বিশ্বাস এর কথা যদি ও জমাতের কোন কেন্দ্রিয় ভাইয়েরা এখন প্রকাশ্যে বলেনা তার পরও মাঝে মধ্যে তাদের অনেক নেতা কর্মিদের মুখে শুনে থাকি যে "ওরাও তো মানুষ সে হিসাবে কেউ সমালোচনার উর্দ্ধে নয়" ইত্যাদি নাউযুবিল্লাহ ৷
এর মানে মুখে বা জন সন্মুক্ষে প্রকাশ না করলে ও বাস্তবে তারা মওদুদীর আদর্শই বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর ৷
তাহলে আসুন সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু তথ্য জেনে নি
{ ১ } প্রসিদ্ধ নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]
“হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য় সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম প্রকাশ ১৯৯১ইং]
{ ২ } হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
{ ৩ } হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
{ ৪ } [হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:
“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]
{ ৫ } হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে:
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
{৬} “মহানবী (স.) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]
“মহানবী (স.) নিজে মনগ ড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]
(৭) আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
আল্লাহ তা'আলা যালেম। কেননা যেক্ষেত্রে নর ও নারীর অবাধ মেলামেশা রয়েছে, সেক্ষেত্রে ব্যাভিচারের কারণে আল্লাহর নির্দেশ রজম প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম। (তাফহীমাতঃ ২/২৮১)
(৮) ফেরেশতাদের সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
ফেরেশতারা ঐসব মাখলূকের মত যাদেরকে গ্রীক, ভারত ও অন্যান্য অঞ্চলের মুশরিকরা দেব-দেবী স্থির করেছে। (তাফহীমাত)
৯) নবীগণ সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
অন্যদের কথাতো স্বতন্ত্র, প্রায়শই পয়গম্বরগণও তাদের কুপ্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমণের শিকার হয়েছেন। (তাফহীমাতঃ ২/১৯৫)
(১০) নবীজী(সাঃ) সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের উর্ধে নন এবং মানবীয় দূর্বলতা থেকেও মুক্ত নন। (তরজমানুল কুরআনঃ এপ্রিল ১৯৭৬)
আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।
[তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
(১১) কুরআনুল কারীম সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
"কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় এ শব্দগুলোর (ইলাহ, রব, দ্বীন, ইবাদত) যে মৌল অর্থ প্রচলিত ছিল, পরবর্তী শতকে তা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এক একটি শব্দ ব্যাপকতা হারিয়ে একান্ত সীমিত, বরং অস্পষ্ট অর্থের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে পড়ে।" এক পৃষ্ঠা পর লিখেন- "এটা সত্য যে, কেবল এ চারটি মৌলিক পরিভাষার তাৎপর্যে আবরণ পড়ে যাওয়ার কারণেই কুরআনের তিন চতুর্থাংশের চেয়েও বেশি শিক্ষা এবং তার সত্যিকার স্পিরিটই দৃষ্টি থেকে প্রচ্ছন্ন হয়ে যায়।"
(কুরআন কী চার বুনিয়াদী ইসতিলাহেঃ ৮-১০)
(12) হাদীস সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত সারা (আঃ) এর ঘটনা সম্বন্ধে বলেন, "এটি একটি মিথ্যা নাটক।"
(রাসায়েল ও মাসায়েলঃ ৩/৩৬)
হাদীস তো কতিপয় মানুষ সুত্রে বর্ণিত হয়ে কতিপয় মানুষের কাছে পৌছেছে। কাজেই এসবের সত্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মিতে পারে না। বড়জোর ধারনা জন্মিতে পারে।
(তাফহীমাতঃ ১/৩৫৬)
(13) উসূলে হাদীস সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
এ আধুনিক যুগে পূর্ব যুগের বাজে কথা কে শোনে?
(তরজমানুল কুরআন ৪র্থ সংখ্যাঃ ১১১)
(14) সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মাপকাঠি বলে জানবে না এবং তাদের অনুসরন করবে না।
(দস্তুরে জামাতে ইসলামীঃ ৭)
(15) দাড়ি সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
হাদীসে শুধু দাড়ি রাখার হুকুম আছে। সুতরাং পরিমাণ যাই হোক হাদীসের উপর আমল হয়ে যাবে।
(১6) তাকলীদ সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
আমার মতে দ্বীনী ইলমে বুৎপত্তি রাখেন এমন ব্যক্তির জন্য তাকলীদ (মাযহাবের অনুসরণ) শুধু না-জায়েয ও গোনাহ নয় বরং এর চেয়েও জঘণ্যতম।
(রাসায়েল ও মাসায়েলঃ ১/২৪৪)
এখানে আরও মওদুদী সাহেবের কিছু ইসলাম বিকৃতির নমুনা তুলে ধরছি। এখানে পবিত্র কুরআন, হাদীস এবং মওদুদীর বিভিন্ন লেখা ও ভাষন থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে; এখানে পরিষ্কার যে মওদুদী জেনেশুনে ইসলামের বিকৃতি ঘটানোর অপচেষ্টা করেছে।
আল্লাহ আমাদের এধরনের দুরাত্মার খপ্পড় থেকে রেহাই দিন।
{17 }“শাসন ও কর্তৃত্ব করার নামই হচ্ছে ধর্ম, শাসন ব্যবস্থার আইন হল শরিয়া এবং উপাসনা হচ্ছে শাসন ব্যবস্থার ঐতিহ্যকে অনুসরন করা’’ - খুতবা, পৃষ্ঠা ২১৭।
{ 18} “লোকে সাধারণত বলে ইসলামের পাচটি স্তম্ভ: এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, নামাজ, যাকাত, রোযা এবং হজ্জ। এবং এ গুলোই ইসলাম, এই ভুল ধারণার মধ্যে তারা অনেকদিন ধরে আছে। আসলে এটা একটা বড় বিভ্রান্তি যা মুসলমানদের পথ এবং কর্মকে ধ্বংস করেছে।“
(কাউসার, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১- মওদুদীর ভাষণ থেকে উদ্ধৃত)
অথচ সহীহ বুখারী এবং মুসলিম শরীফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ইসলামের মূল স্তম্ভ পাচটি: ১. শাহাদাহ ২. সালাত ৩. বাধ্যতামূলক যাকাত প্রদান ৪. সাওম এবং ৫. হজ্জ।
{19} শুধু তাই নয়, মওদুদী হাদীস শরিফের ও সমালোচনা করতে ছাড়েনি। মওদুদী এ সম্পর্কে বলেছে:
“কোন সত্যবাদী মানুষই এই দাবী করতে পারবেনা যে ৬ - ৭ হাজার হাদীসের (সহীহ বুখারী শরিফ) সবগুলোই পুরোপুরি ঠিক।“
(১৯৫৫ সালের ১৫ মে বরকত হলে মওদুদীর দেয়া ভাষণ থেকে; যা পরে আল-ইতেশাম পত্রিকায় ২৭ মে ১৯৫৫ এবং ৩ জুন ১৯৫৫ তারিখে প্রকাশিত হয়।)
{20} শুধু এই নয়, হযরত মুহাম্মদ (স) চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) হারাম ঘোষনা করেছেন। কিন্তু মওদুদী হাস্যকর উদাহরণ টেনে তা হালাল করতে চেয়েছে:
“ধরেন সমুদ্রের মাঝে একটি নৌকা ডুবে গেল। একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বেচে গিয়ে এক নির্জন দ্বীপে গিয়ে ওঠে। এ অবস্থায় তাদের একসাথে থাকতেই হবে। কিন্তু ইসলামী আইন মতে তারা নিকাহ করতে পারবে না। তাই তাদের কাছে যে একমাত্র রাস্তাটা খোলা আছে তা হল নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে অস্থায়ী বিয়ে করা ততদিনের জন্য যতদিন না তারা লোকালয়ে পৌছাতে পারে বা লোকেরা তাদের খুজে পায়। অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) এ ক্ষেত্রে বা এর মত পরিস্থিতিতে জায়েজ।“
-তারজুমামুল কুরআন, ১৯৫৫, পৃষ্ঠা: ৩৭৯
{21} যুদ্ধবন্দী মহিলাদের ব্যাপারে মওদুদীর মতামত দেখুন:
“এমনকি বর্তমান যুগেও যুদ্ধবন্দী মহিলাদের সৈনিকদের মধে বন্টন করে দেয়া উচিৎ এবং সৈন্যদেরকে তাদের (মহিলাদের) ভোগ করার অনুমতি দেয়া উচিৎ।“
অথচ পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া আছে। আল্লাহ বলেন:
“অবশেষে যখন তাদেরকে (কাফিরদের) পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও (এবং মুক্তি দাও) ।”
- সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৪
{22} বাল্য বিবাহ নিয়ে মওদুদী বলেছে:
“নাবালিকা মেয়েদের (বয়:প্রাপ্তির আগে) বিয়ে করা যায়। স্বামীরাও তাদের সাথে সহবাস করতে পারে।“তাহফীমুল কুরআন, পঞ্চম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৭১
{23} বিভিন্ন নবী-রাসূলদের নিয়ে মওদুদীর সমালোচনার বিস্তর উদাহারণ আছে। যেমন নিচের মন্তব্যে সে হযরত ইউসুফ (আ) কে মানুষ হত্যাকারী জঘন্য মুসোলিনীর সাথে তুলনা করেছে -
“কিছু মানুষ যে ধারনা পোষণ করে যে তিনি [হযরত ইউসুফ (আ)] মিশরের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব চেয়েছিলেন শুধু সেখানকার অর্থ মন্ত্রী হবার জন্য তা আদপে ঠিক নয়; প্রকৃত পক্ষে তিনি একজন সৈরশাসক হতে চেয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত ইউসুফ (আ) যে পদ পান তা বর্তমানকালের ইতালির মুসোলিনীর অবস্থার সমতুল্য।“
- তাহফিমাত, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২২, ৫ম সংস্করণ
{24 } মওদুদী হযরত সুলাইমান (আ) এর ১০০ স্ত্রী থাকার ব্যাপারে মন্তব্য করেছে:
“হয় আবু হুরাইরা (রা) নবীর কথা শুনতে ভুল করেছেন অথবা তিনি পুরো ব্যাখ্যা শোনেননি।“
-রাসাইল -ও-মাসাইল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা: ২৭
এখন বলেন কিভাবে কোন সভ্য ও বিবেকবান মানুষ এই লোকের মতবাদে বিশ্বাস করতে পারে এবং একে ইসলাম বলে দাবী করতে পারে?
উপরোক্ত আকীদাসমূহ ছাড়াও মাওলানা মওদুদীর আরো অনেক ভ্রান্ত আকীদা রয়েছে। নমুনা হিসেবে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
মওদুদী সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন:
**********************************
১. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) -জাস্টিস তাকী উসমানী (রশীদ কল্যান ট্রাস্ট)
২. মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচার্যের ইতিবৃত্ত – মাওলানা মনজুর নোমানী (রহঃ) (ঐ)
৩. মওদূদী সাহেব ও ইসলাম -মুফতি রশীদ আহমাদ লুধীয়ানভী (রঃ) (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৪. মওদূদীর চিন্তাধারা ও মওদূদী মতবাদ -ইজহারে হক ফাউন্ডেশান; প্রাপ্তিস্থানঃ (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৫. ফিতনায়ে মওদুদীয়াত – মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)
৬. ভুল সংশোধন -মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)
৭. সতর্কবাণী -মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)
৮. হক্ব বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব- আল্লামা আহমাদ শফী, হাটহাজারী।
৯. ঈমান ও আক্বীদা -ইসলামিক রিসার্স সেন্টার, বসুন্ধরা।
১০. ফতোয়ায়ে দারুল উলূম (আংশিক)
১১. বিদেশী ও স্বদেশী ফেরাকে বাতেলাহ
(আল-কাউসার প্রকাশনী, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা
এ ব্যপারে বলতে গেলে হয়তো অনেকে ব্যথিত হবেন , তবে আমি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ হেয় বা খাটো করার উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরতে চাইনা । আমি জানি, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে।
উত্তম খাবারের সাথে যেমন সুক্ষ পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহন করলে বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব তেমন অনুভূত হয়না এবং ধীরে ধীরে ঐ বিষাক্ত খাবার সহনীয় হয়ে যায় তেমনি মাওলানা মওদুদীর ত্রুটিযুক্ত কথা ও কাজগুলোকেও জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইয়েরা একসময় তাদের আক্বীদায় পরিনত করেন।
‘তাফহিমুল কোরআন’কে আলেম সমাজ নিষিদ্ধের দাবী করায় বর্তমান সংস্করনগুলো থেকে কিছু আপত্তিকর কথা বাদ দেওয়া হয়েছে যদিও এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া মাওলানা মওদুদী জীবিত থাকাকালীন বা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন ভুল স্বীকার করে তওবা করা হয়নি। তাই মুসলিম ভাইদের ঈমানের হেফাজতের জন্য এগুলো বর্ননা করা অত্যন্ত জরুরী মনে করছি ৷
যদি মওদুদী সাহেবের সেই ভ্রান্ত আক্বিদা থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে আহলে সুন্নাতের আক্বিদার মতাদর্শে অনূপ্রানীত হয়ে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করেন তবেই সফলতা আসবে ৷ সমগ্র পৃথিবীর ঈমান দার মুসলমানদের আক্বিদা হল
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ- তাদের মত পূত পবিত্র মহা মানব আল্লাহর জমিনে আকাশের নীচে আর দ্বিতীয় কেউ নেই ৷ এই হলো ইসলামী আকীদা।
তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়। মওদুদীর এআক্বিদা - বিশ্বাস এর কথা যদি ও জমাতের কোন কেন্দ্রিয় ভাইয়েরা এখন প্রকাশ্যে বলেনা তার পরও মাঝে মধ্যে তাদের অনেক নেতা কর্মিদের মুখে শুনে থাকি যে "ওরাও তো মানুষ সে হিসাবে কেউ সমালোচনার উর্দ্ধে নয়" ইত্যাদি নাউযুবিল্লাহ ৷
এর মানে মুখে বা জন সন্মুক্ষে প্রকাশ না করলে ও বাস্তবে তারা মওদুদীর আদর্শই বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর ৷
তাহলে আসুন সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু তথ্য জেনে নি
{ ১ } প্রসিদ্ধ নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]
“হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য় সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম প্রকাশ ১৯৯১ইং]
{ ২ } হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
{ ৩ } হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
{ ৪ } [হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:
“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]
{ ৫ } হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে:
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
{৬} “মহানবী (স.) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]
“মহানবী (স.) নিজে মনগ ড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]
(৭) আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
আল্লাহ তা'আলা যালেম। কেননা যেক্ষেত্রে নর ও নারীর অবাধ মেলামেশা রয়েছে, সেক্ষেত্রে ব্যাভিচারের কারণে আল্লাহর নির্দেশ রজম প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম। (তাফহীমাতঃ ২/২৮১)
(৮) ফেরেশতাদের সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
ফেরেশতারা ঐসব মাখলূকের মত যাদেরকে গ্রীক, ভারত ও অন্যান্য অঞ্চলের মুশরিকরা দেব-দেবী স্থির করেছে। (তাফহীমাত)
৯) নবীগণ সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
অন্যদের কথাতো স্বতন্ত্র, প্রায়শই পয়গম্বরগণও তাদের কুপ্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমণের শিকার হয়েছেন। (তাফহীমাতঃ ২/১৯৫)
(১০) নবীজী(সাঃ) সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের উর্ধে নন এবং মানবীয় দূর্বলতা থেকেও মুক্ত নন। (তরজমানুল কুরআনঃ এপ্রিল ১৯৭৬)
আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।
[তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
(১১) কুরআনুল কারীম সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
"কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় এ শব্দগুলোর (ইলাহ, রব, দ্বীন, ইবাদত) যে মৌল অর্থ প্রচলিত ছিল, পরবর্তী শতকে তা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এক একটি শব্দ ব্যাপকতা হারিয়ে একান্ত সীমিত, বরং অস্পষ্ট অর্থের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে পড়ে।" এক পৃষ্ঠা পর লিখেন- "এটা সত্য যে, কেবল এ চারটি মৌলিক পরিভাষার তাৎপর্যে আবরণ পড়ে যাওয়ার কারণেই কুরআনের তিন চতুর্থাংশের চেয়েও বেশি শিক্ষা এবং তার সত্যিকার স্পিরিটই দৃষ্টি থেকে প্রচ্ছন্ন হয়ে যায়।"
(কুরআন কী চার বুনিয়াদী ইসতিলাহেঃ ৮-১০)
(12) হাদীস সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত সারা (আঃ) এর ঘটনা সম্বন্ধে বলেন, "এটি একটি মিথ্যা নাটক।"
(রাসায়েল ও মাসায়েলঃ ৩/৩৬)
হাদীস তো কতিপয় মানুষ সুত্রে বর্ণিত হয়ে কতিপয় মানুষের কাছে পৌছেছে। কাজেই এসবের সত্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মিতে পারে না। বড়জোর ধারনা জন্মিতে পারে।
(তাফহীমাতঃ ১/৩৫৬)
(13) উসূলে হাদীস সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
এ আধুনিক যুগে পূর্ব যুগের বাজে কথা কে শোনে?
(তরজমানুল কুরআন ৪র্থ সংখ্যাঃ ১১১)
(14) সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মাপকাঠি বলে জানবে না এবং তাদের অনুসরন করবে না।
(দস্তুরে জামাতে ইসলামীঃ ৭)
(15) দাড়ি সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
হাদীসে শুধু দাড়ি রাখার হুকুম আছে। সুতরাং পরিমাণ যাই হোক হাদীসের উপর আমল হয়ে যাবে।
(১6) তাকলীদ সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
আমার মতে দ্বীনী ইলমে বুৎপত্তি রাখেন এমন ব্যক্তির জন্য তাকলীদ (মাযহাবের অনুসরণ) শুধু না-জায়েয ও গোনাহ নয় বরং এর চেয়েও জঘণ্যতম।
(রাসায়েল ও মাসায়েলঃ ১/২৪৪)
এখানে আরও মওদুদী সাহেবের কিছু ইসলাম বিকৃতির নমুনা তুলে ধরছি। এখানে পবিত্র কুরআন, হাদীস এবং মওদুদীর বিভিন্ন লেখা ও ভাষন থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে; এখানে পরিষ্কার যে মওদুদী জেনেশুনে ইসলামের বিকৃতি ঘটানোর অপচেষ্টা করেছে।
আল্লাহ আমাদের এধরনের দুরাত্মার খপ্পড় থেকে রেহাই দিন।
{17 }“শাসন ও কর্তৃত্ব করার নামই হচ্ছে ধর্ম, শাসন ব্যবস্থার আইন হল শরিয়া এবং উপাসনা হচ্ছে শাসন ব্যবস্থার ঐতিহ্যকে অনুসরন করা’’ - খুতবা, পৃষ্ঠা ২১৭।
{ 18} “লোকে সাধারণত বলে ইসলামের পাচটি স্তম্ভ: এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, নামাজ, যাকাত, রোযা এবং হজ্জ। এবং এ গুলোই ইসলাম, এই ভুল ধারণার মধ্যে তারা অনেকদিন ধরে আছে। আসলে এটা একটা বড় বিভ্রান্তি যা মুসলমানদের পথ এবং কর্মকে ধ্বংস করেছে।“
(কাউসার, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১- মওদুদীর ভাষণ থেকে উদ্ধৃত)
অথচ সহীহ বুখারী এবং মুসলিম শরীফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ইসলামের মূল স্তম্ভ পাচটি: ১. শাহাদাহ ২. সালাত ৩. বাধ্যতামূলক যাকাত প্রদান ৪. সাওম এবং ৫. হজ্জ।
{19} শুধু তাই নয়, মওদুদী হাদীস শরিফের ও সমালোচনা করতে ছাড়েনি। মওদুদী এ সম্পর্কে বলেছে:
“কোন সত্যবাদী মানুষই এই দাবী করতে পারবেনা যে ৬ - ৭ হাজার হাদীসের (সহীহ বুখারী শরিফ) সবগুলোই পুরোপুরি ঠিক।“
(১৯৫৫ সালের ১৫ মে বরকত হলে মওদুদীর দেয়া ভাষণ থেকে; যা পরে আল-ইতেশাম পত্রিকায় ২৭ মে ১৯৫৫ এবং ৩ জুন ১৯৫৫ তারিখে প্রকাশিত হয়।)
{20} শুধু এই নয়, হযরত মুহাম্মদ (স) চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) হারাম ঘোষনা করেছেন। কিন্তু মওদুদী হাস্যকর উদাহরণ টেনে তা হালাল করতে চেয়েছে:
“ধরেন সমুদ্রের মাঝে একটি নৌকা ডুবে গেল। একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বেচে গিয়ে এক নির্জন দ্বীপে গিয়ে ওঠে। এ অবস্থায় তাদের একসাথে থাকতেই হবে। কিন্তু ইসলামী আইন মতে তারা নিকাহ করতে পারবে না। তাই তাদের কাছে যে একমাত্র রাস্তাটা খোলা আছে তা হল নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে অস্থায়ী বিয়ে করা ততদিনের জন্য যতদিন না তারা লোকালয়ে পৌছাতে পারে বা লোকেরা তাদের খুজে পায়। অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) এ ক্ষেত্রে বা এর মত পরিস্থিতিতে জায়েজ।“
-তারজুমামুল কুরআন, ১৯৫৫, পৃষ্ঠা: ৩৭৯
{21} যুদ্ধবন্দী মহিলাদের ব্যাপারে মওদুদীর মতামত দেখুন:
“এমনকি বর্তমান যুগেও যুদ্ধবন্দী মহিলাদের সৈনিকদের মধে বন্টন করে দেয়া উচিৎ এবং সৈন্যদেরকে তাদের (মহিলাদের) ভোগ করার অনুমতি দেয়া উচিৎ।“
অথচ পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া আছে। আল্লাহ বলেন:
“অবশেষে যখন তাদেরকে (কাফিরদের) পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও (এবং মুক্তি দাও) ।”
- সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৪
{22} বাল্য বিবাহ নিয়ে মওদুদী বলেছে:
“নাবালিকা মেয়েদের (বয়:প্রাপ্তির আগে) বিয়ে করা যায়। স্বামীরাও তাদের সাথে সহবাস করতে পারে।“তাহফীমুল কুরআন, পঞ্চম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৭১
{23} বিভিন্ন নবী-রাসূলদের নিয়ে মওদুদীর সমালোচনার বিস্তর উদাহারণ আছে। যেমন নিচের মন্তব্যে সে হযরত ইউসুফ (আ) কে মানুষ হত্যাকারী জঘন্য মুসোলিনীর সাথে তুলনা করেছে -
“কিছু মানুষ যে ধারনা পোষণ করে যে তিনি [হযরত ইউসুফ (আ)] মিশরের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব চেয়েছিলেন শুধু সেখানকার অর্থ মন্ত্রী হবার জন্য তা আদপে ঠিক নয়; প্রকৃত পক্ষে তিনি একজন সৈরশাসক হতে চেয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত ইউসুফ (আ) যে পদ পান তা বর্তমানকালের ইতালির মুসোলিনীর অবস্থার সমতুল্য।“
- তাহফিমাত, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২২, ৫ম সংস্করণ
{24 } মওদুদী হযরত সুলাইমান (আ) এর ১০০ স্ত্রী থাকার ব্যাপারে মন্তব্য করেছে:
“হয় আবু হুরাইরা (রা) নবীর কথা শুনতে ভুল করেছেন অথবা তিনি পুরো ব্যাখ্যা শোনেননি।“
-রাসাইল -ও-মাসাইল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা: ২৭
এখন বলেন কিভাবে কোন সভ্য ও বিবেকবান মানুষ এই লোকের মতবাদে বিশ্বাস করতে পারে এবং একে ইসলাম বলে দাবী করতে পারে?
উপরোক্ত আকীদাসমূহ ছাড়াও মাওলানা মওদুদীর আরো অনেক ভ্রান্ত আকীদা রয়েছে। নমুনা হিসেবে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
মওদুদী সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন:
**********************************
১. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) -জাস্টিস তাকী উসমানী (রশীদ কল্যান ট্রাস্ট)
২. মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচার্যের ইতিবৃত্ত – মাওলানা মনজুর নোমানী (রহঃ) (ঐ)
৩. মওদূদী সাহেব ও ইসলাম -মুফতি রশীদ আহমাদ লুধীয়ানভী (রঃ) (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৪. মওদূদীর চিন্তাধারা ও মওদূদী মতবাদ -ইজহারে হক ফাউন্ডেশান; প্রাপ্তিস্থানঃ (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৫. ফিতনায়ে মওদুদীয়াত – মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)
৬. ভুল সংশোধন -মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)
৭. সতর্কবাণী -মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)
৮. হক্ব বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব- আল্লামা আহমাদ শফী, হাটহাজারী।
৯. ঈমান ও আক্বীদা -ইসলামিক রিসার্স সেন্টার, বসুন্ধরা।
১০. ফতোয়ায়ে দারুল উলূম (আংশিক)
১১. বিদেশী ও স্বদেশী ফেরাকে বাতেলাহ
এর প্রতিটা কথা মাওলানা মওদূদী সম্পর্কে ভিত্তিহীন তথ্যবিভ্রাট - আংশিক কোটেশন এবং মাওলানার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা । আলাদা করে প্রতিটা কথার জবাব দেয়ার কোন অর্থ নাই । এসম্পর্কিত একটি বইয়ের খোঁজ দিচ্ছি ।
উত্তরমুছুনবইয়ের নাম : মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তাত্বিক পর্যালোচনা
লেখক : মাওলানা মুফতী মোহাম্মদ উইসুফ
সত্যি-ই যদি কেউ সততার সাথে বিষয়গুলো যাচাই করতে চান , বইটির পাতা উল্টিয়ে দেখতে পারেন । তবে প্রকৃতপক্ষে বিবেকবিবেচনা ও বুদ্ধি খাটিয়ে যারা ভাবতে পারেন, তাদেরকে এসকল হালকা অপপ্রচার বিভ্রান্ত করতে পারেনা । মাওলানা মওদুদীর হাতে গড়া ইসলামের এত শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী একটা আন্দোলন বিশ্বব্যাপী এভাবে ছড়িয়ে পড়া , আল্লাহর অশেষ রহমত ও দয়ার কারনেই সম্ভব হয়েছে । ইসলামী জীবনব্যবস্থার তিনটি মৌলিক বিষয়, ১. ইসলামী অর্থব্যবস্থা (ইসলামী ব্যাঙ্কিং ধারনার বিশ্বায়ন) ২. ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা (উদাহরন: মদীনা ইউনিভার্সিটির -! প্রাথমিক পরিকল্পনাবিদ মাওলানা)ও ৩. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কিত যুগোপযোগী চিন্তা ধারনার প্রাথিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন যেই ব্যক্তি, তার সম্পর্কে যদি বলা হয় তিনি ওজু করতে ভুল করেছেন , নিয়্যত করতে ব্যকরনগত ভুল করেছেন, অমুকের ব্যাপারে কুৎসা রটিয়েছেন, সেটা হাস্যকর অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই না !
ওলানা মওদূদী (রঃ)-এর বিরুদ্ধে পাক-ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকজন আলেম অবশ্যই বিরূপ মন্তব্য করেছেন। কিন্তু দুনিয়ার বড় বড় ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ও ইসলামের মহান বিশেষজ্ঞ বলে স্বীকার করেন। তাঁর লেখা তাফসীর ও অন্যান্য বই দুনিয়ার ৪০টি ভাষায় তরজমা হয়ে লক্ষ লক্ষ লোকের নিকট ইসলামের আলো পৌছাচ্ছে। সুতরাং এ দেশের কিছু সংখ্যক লোক ফতোয়া দিয়ে বা আলোকে চাপা দিয়ে রাখতে পারবেন না। আমার বিশ্বাস যে তারা যদি মওলানা মওদূদী (রঃ)-এর বইপত্র মন দিয় পড়তেন তাহলে পছন্দই করতেন।
উত্তরমুছুনজামায়াতে ইসলামী মওলানা মওদুদী (রঃ)-কে ফেকাহ বা আকায়েদের ইমাম মনে করে না। তাঁর ইজতেহাদকে মেনে নেয়াও জামায়াতের কোন নীতি নয়। জামায়াতে ইসলামীর নিকট মওলানা মওদুদী (রঃ) তিনটি কারনে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
উত্তরমুছুন(ক) এ যুগে মওলানা মওদুদীর সাহিত্য ইসলামকে একমাত্র পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে পেশ করে দ্বীন ইসলামের সঠিক মর্যাদা বহাল করেছেন। ইসলাম শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ বলে সমাজে যে ভুল ধারনা ছিল তা তাঁর লেখা বিপুল সংখ্যক বই পুস্তকের মাধ্যমে মানুষ বুঝতে শিখেছে। এ উপমহাদেশে ইসলামের এ ব্যপক ধারণা এমন স্পষ্ট ছিল না। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আল্লার দাসত্ব ও নবীর আনুগত্য করা যে ইসলামের দাবী একথা উপমহাদেশের মানুষের নিকট তিনিই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।কুরআন ও সুন্নাহ যে গোটা মানব জীবনের জন্য একমাত্র সঠিক ব্যপক হেদায়াত একথা তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
(খ) দ্বীন ইসলামকে বাস্তবে মানব সমাজে কায়েম করা যে মুসলমানের প্রধান দ্বায়ীত্ব একথা মওলানা মওদুদী (রঃ)অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে পেশ করেছেন।শুধু তা-ই নয়,এ শতাব্দীতে তিনিই ইকামাতে দ্বীনের ডাক দিয়ে এ উপমহাদেশে পয়লা বাতিলের বিরূদ্ধে জামায়াতবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ইকামাতে দ্বীনের এ ডাকে যারা সাড়া দিয়েছেন এবং দিচ্ছে তারা আন্দোলনের গুরুত্ব অনুভব করেই জামায়াতবদ্ধ হওয়া ফরয মনে করছে।
তিনি ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য এ জাতীয় আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বলেই গোটা উপমাহাদেশে ইসলাম আজ একটি বিপ্লবী আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। এমনকি আধুনিক শিক্ষিত ও ছাত্র মহলে পর্যন্ত ইসলামী জাগরনের সাড়া পরে গেছে।
(গ) মুসলিমদেরকে বিজ্ঞান সম্মত পন্থায় সুসংগঠিত করার জন্য মওলানা মওদুদী (রঃ) যে সাংগঠনিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন তা এ যুগে অতুলনীয়। আধুনিক যুগে বাতিল পন্থিদের মযবুত সংগঠনের সাথে পাল্লা দিয়ে মুসলমানদেরকে একটা সুশৃঙ্খল শক্তিতে পরিনত করার জন্য তিনি যে সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্ম কৌশল দান করেছেন এর ফলে তার দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া সত্বেও সংগঠন কোন দিক দিয়ে দুর্বল হবার আশংকা নেই।