শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১২

মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক দুই পরাশক্তি: ইরান-ইসরায়েল সামরীক সরাঞ্জাম

মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক দুই পরাশক্তি: ইরান-ইসরায়েল (বাংলানিউজ এর সৌজন্যে)

--------------------------------------------------------------------------------

সম্প্রতি ইরাক যুদ্ধের আগের কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। পশ্চিমা গণমাধ্যম এবার হৈচৈ শুরু করেছে যে, ইরান ধীরে ধীরে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্য ভালো নয়। আসলে পশ্চিমা গণমাধ্যম চাচ্ছে, আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পডুক যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন কয়েক দিন আগে কলকাতায় বলেছেন, “ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এতে ইসরায়েলের ওপর প্রচণ্ড ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু কেউ পশ্চিমা গণমাধ্যম বা হিলারিকে প্রশ্ন করছে না, ইসরায়েল যে প্রায় দুইশ’ পরমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে বসে আছে। তারপরও কি ইসরায়েল বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক নয়? আর বিদ্যুৎ উত্পাদনের জন্য (ইরানের দাবি) পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ করলেই ইসরায়েল ঝুঁকি অনুভব করে!

ইরান যদি সত্যি সত্যি পারমাণবিক অস্ত্র বানায়, তাহলে শুধু ইসরায়েল নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যরে স্থিতিশীলতা হুমকির মধ্যে পড়বে। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তার কথা। প্রতিদিনই ইরান নিয়ে গরম গরম প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালাক অথবা ইসরায়েলের সঙ্গে থাকুক।

মার্কিনিরা ইরাকে হামলা চালানোর আগে পশ্চিমা গণমাধ্যম কি শুরু করেছিল, তা নিশ্চয় পাঠকদের মনে আছে। বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমসসহ পাশ্চাত্যের বাঘা বাঘা সব গণমাধ্যম প্রতিদিনই প্রচার করছিল, ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র ও জীবাণু অস্ত্র রয়েছে। তাই বিশ্বকে নিরাপদ রাখতে হলে সাদ্দামের সেই অস্ত্র নির্মূল করতে হবে।

একে তো মার্কিনিরা ৯/১১ হামলায় চোখে সরষে ফুল দেখছিল তার ওপর গণমাধ্যমের এই হিম ধরানো প্রতিবেদন! সঙ্গে মার্কিন প্রসিডেন্ট হিসাবে ছিলেন যুদ্ধবাজ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ‘যোগ্য পুত্র’ জর্জ ডব্লিউ বুশ, যিনি আগেই আফগানিস্তানে লাখ লাখ বেসামরিক লোক হত্যা করে হাত পাকিয়েছিলেন। পাশাপাশি মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যম চাচ্ছিল, আরেকটি যুদ্ধ হোক।

সব সমীকরণ মিলিয়ে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ভোরে ঘুমন্ত ইরাকে আক্রমণ করে বসল যুক্তরাষ্ট্র। শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল, তা সবাই জানেন। সারা ইরাক তন্ন তন্ন করে একটি মারণাস্ত্রও পাওয়া গেল না। কিন্তু কয়েক লাখ বেসামরিক নাগরিক হত্যা ও প্রহসনমূলক বিচারে সাদ্দামকে ফাঁসি দিয়ে একটা পুতুল সরকার বসিয়ে মার্কিন বাহিনী তল্পিতল্পা গুটিয়ে গত বছর চলে গেল।

তবে ইরাক-আফগান যুদ্ধ সামাল দিতে গিয়ে কাবু হয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র এখন চাচ্ছে না, আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে। তাই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ অনেক কর্মকর্তা বার বার বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে ইরান সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাই এখন ইসরায়েল বলছে, প্রয়োজনে তারা একাই হামলা চালিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেবে। আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবে ইরানও বসে থাকবে না। নিজেকে রক্ষার অধিকার সবার রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে পাল্টা হামলা চালাবে ইরান।

ইরান-ইসরায়েল প্রতিবেশী দেশ না হওয়ায় এদের সামরিক শক্তি ও সম্ভাব্য হামলা-প্রতিরোধের কৌশল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তাই আমরা আজ দুই দেশের সামরিক শক্তির তুলনামূলক চিত্র দেখব। যদিওবা দুই দেশই তাদের অনেক সামরিক তথ্য বিশ্ববাসীর কাছে গোপন রেখেছে।

তাই এ আলোচনায় দুই দেশের স্বীকৃত শক্তির তুলনা করা হয়েছে।

প্রথমেই দেখা যাক জনসংখ্যার চিত্র। কেননা, যুদ্ধ শুরু হলে সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি অনেক সাধারণ জনগণকেও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়। সেই হিসেবে ইরান অনেকে এগিয়ে। ইরানের জনসংখ্যা ইসরায়েলের চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি। কিন্তু ইরানের বেশিরভাগ সামরিক সরঞ্জাম সেকেলে। তার প্রধান কারণ, ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশটিতে অস্ত্র রফতানি করেনি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের (রুস) এর ডেপুটি ডিরেক্টর ডেভিড বার্টসের মতে, ইরানের বেশিরভাগ ট্যাঙ্ক ও বিমানে পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

গত শতাব্দীর ৮০’র দশকে ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধে ইরানের অনেক সামরিক সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জাম সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে আধুনিক। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বেশি প্রশিক্ষিত হলেও ইরানের সামরিক বাহিনীর দীর্ঘ যুদ্ধ চালানোর অভজ্ঞিতা রয়েছে।

রবার্টস আরো বলেন, তবে এটা ঠিক ইরানের সামরিক বাহিনীর অনেক তথ্য পশ্চিমাদের হাতে নেই। অন্যান্য দেশের সামরিক বাহিনীর তুলনায় রেভ্যুলশনারি গার্ড অনেক বেশি সুসংগঠিত এবং তাদের বেতনও বেশি। পাশাপাশি ইরানের কুদস ফোর্স ও নৌ শক্তির বেশিরভাগই বিশ্ববাসীর কাছে অজানা। এমনও হতে পারে, ইরান ধারণার বাইরের বা অপ্রচলিত কোনো অস্ত্র ও কৌশলে যুদ্ধ চালাতে পারে। তবে এটাও ঠিক, দুই দেশের সামরিক বাহিনী এখনই সম্মুখযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে না। সবচেয়ে আগে হতে পারে বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।

ইরান
আয়তন: ১, ৬৪৮, ১৯৫ বর্গকিলোমিটার (১৬তম)
মোট জনসংখ্যা: ৭ কোটি ৮৯ লাখ
পুরুষ (১৬ থেকে ৪৯ বছর): ২ কোটি ৩০ লাখ
জিডিপি: ৯৯০.২১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
মাথাপিছু আয়: ১৩,০৫৩ মার্কিন ডলার

ইসরায়েল
আয়তন: ২০, ৭৭০/২২,০৭২ বর্গকিলোমিটার (১৫৪তম)
মোট জনসংখ্যা: ৭৫ লাখ
পুরুষ (১৬ থেকে ৪৯ বছর): ১৮ লাখ
জিডিপি ২৩৫.২২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার(৫০ তম)
মাথাপিছু আয়: ৩০,৯৭৫ মার্কিন ডলার(২৬তম)

সূত্র:ইন্টারনেট

‘মিডল ইস্টার্ন অ্যান্ড সাউথ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স উইথ স্টার্টফোর’ এর ভাইস প্রসিডেন্ট কামরান বোখারী বলেন, দুই দেশের শক্তির তুলনা করতে হলে আগে এদের ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে কথা বলতে হবে। মানচিত্রে দুই দেশকে কাছাকাছি মনে হলেও বাস্তবতা তা নয়। দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব অনেক।

আবার ইরান আগে ইসরায়েলে হামলা চালাবে না। ইসরায়েলই ইরানে হামলা চালানোর কথা বলছে। ইসরায়েলি বাহিনী সুসজ্জিত ও প্রশিক্ষিত হলেও দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালাতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ইরান ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। তারা চিন্তিত মার্কিনিদের নিয়ে। কেননা, ইরানের খুব কাছে বিভিন্ন দেশে মার্কিন বাহিনী ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার সেনা সদস্য, সাড়ে ৯ হাজার সদস্যের নৌবাহিনী এবং ৩৪ হাজার সদস্যের বিমান বাহিনী রয়েছে। এর বাইরে রিজার্ভ ফোর্স আকারে আছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার সেনা। বলা হয়ে থাকে, সেনাবাহিনীর ১ লাখ ৭ হাজার সদস্যকে জোর করে নৌবাহিনীতে ভর্তি করা হয়েছে। কেননা, ইসরায়েলি আইন অনুসারে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রত্যেক নাগরিক প্রয়োজন অনুসারে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য।

পক্ষান্তরে ইরানের সামরিক বাহিনীতে রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ সেনা। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি কঠোর আনুগত্যশীল রেভ্যুলশনারি গার্ডে রয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার সদস্য। ইরানের আইন অনুসারে, প্রত্যেক ইরানি পুরুষের বয়স ১৯ বছর পূর্ণ হলে সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে ১৮ মাস কাজ করতে হবে। এদের বাইরে ইরানের রয়েছে ৩৪ হাজার সদস্যের বিমান বাহিনী, ১৮ হাজার সদস্যের নৌবাহিনী, গ্রাউন্ড রেসিস্টেন্স ফোর্স এবং স্পেশাল অপারেশনের জন্য কুদস ফোর্স।

এবার দুই দেশের স্বীকৃত সামরিক সরঞ্জামের তুলনামূলক চিত্র দেখা যাক।

যুদ্ধ সরঞ্জাম:

ইরান
হস্তচালিত বড় কামান:২ হাজার ১০টি, স্বয়ংক্রিয় কামান: ৮৬৫টি, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘাঁটি: ২০০টি,
মর্টার(গোলা নিক্ষেপক): ৫ হাজার, ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র: ১ হাজার ৪০০টি, বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র: ১ হাজার ৭০১টি, সামরিক যান: ১২ হাজার, কর্মরত সামরিক সদস্য: ৫ লাখ ৪৫ হাজার, রিজার্ভ ফোর্স: ৬ লাখ ৫০ হাজার, বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট: ৯২০ কোটি মার্কিন ডলার

ইসরায়েল
হস্তচালিত বড় কামান: ৪৫৬টি, স্বয়ংক্রিয় কামান: ৬২০টি, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘাঁটি: ১৩৮টি, মর্টার (গোলা নিক্ষেপক): ৭৫০টি, ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র: ৯০০টি, বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র: ২০০টি, সামরিক যান: ৭ হাজার ৬৮টি, কর্মরত সামরিক সদস্য: ১ লাখ ৮৭ হাজার, রিজার্ভ ফোর্স: ৫ লাখ ৬৫ হাজার, বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট: ১ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার

সুত্র: ইন্টারনেট

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর রয়েছে সাড়ে তিন হাজার ট্যাঙ্ক। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক মেরকাভা এমকে ১৪৪১টি, মেরকাভা এমকে ২৪৫৫টি, মেরকাভা এমকে ৩৪৫৪টি, মেরকাভা এমকে ৪১৭৫টি এবং সেঞ্চুরিয়ান মডেলের ২০৬টি ট্যাঙ্ক। ৬২০টি স্বয়ংক্রিয় ও ৪৫৬টি হস্তচালিত বড় কামান রয়েছে। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মতে, এর বাইরেও ইসরায়েলের ছোট আকারের কয়েক হাজার কামান রয়েছে।

পক্ষান্তরে, ইরানের হাতে আছে ১ হাজার ৬১৩টি ট্যাঙ্ক। যেগুলোর মধ্যে একশ’টি স্থানীয়ভাবে তৈরি, যার নাম ‘জুলফিকার’। তাছাড়া একশ’টি পুরোনো মডেলের ব্রিটিশ ট্যাঙ্ক রয়েছে, যেগুলো ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে সংগ্রহ করা।

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দেড়শ’টি এম-৬০এ-১ ট্যাঙ্ক, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি টি-৭২ মডেলের ৪৮০টি এবং টি-৫৪/ টি-৫৫ মডেলের ৫৪০টি ট্যাঙ্ক রয়েছে। ইসরায়েলের তুলনায় ট্যাঙ্ক কম থাকলেও ইরানের কামান রয়েছে অনেক বেশি। ২ হাজার ১০টি হস্তচালিত ও ৮৬৫টি স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে ইরানের হাতে। অন্যান্য গুরুত্বর্পূণ সামরিক সরঞ্জামের তথ্য উপরের ছকে দেওয়া হয়েছে।

এবার নৌ শক্তির দিকে নজর দেওয়া যাক:

নৌশক্তি

ইরান
নৌবাহিনীর মোট জাহাজ: ২৬১টি, বাণিজ্যিক জাহাজ: ৭৪টি, প্রধান বন্দর: ৩টি, বিমানবাহী রণতরী: নাই
বড় রণতরী: ৩টি, ডুবোজাহাজ (সাবমেরিন): ১৯টি, দ্রুতগামী যুদ্ধজাহাজ (ফ্রিগেট): ৫টি, টহলদার সশস্ত্র ছোট জাহাজ: ১৯৮টি, জলে-স্থলে চলে এমন যান: ২৬টি

ইসরাইল
নৌবাহিনীর মোট জাহাজ: ৬৪টি, বাণিজ্যিক জাহাজ: ১০টি, প্রধান বন্দর: ৪টি, বিমানবাহী রণতরী: নাই
বড় রণতরী: ৩টি, ডুবোজাহাজ (সাবমেরিন): ৩টি, দ্রুতগামী যুদ্ধ জাহাজ (ফ্রিগেট): নাই, টহলদার সশস্ত্র ছোট জাহাজ: ৪২টি, জলে-স্থলে চলে এমন যান: নাই

সামগ্রকিভাবে বলা যায়, ইরানের নৌ শক্তি ইসরায়েলের তুলনায় অনেক এগিয়ে। উপকরণের বৈচিত্র্য এবং মজুদ ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ। বিশাল পারস্য উপসাগরের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হলে ইরানের তা প্রয়োজন আছে। ইরানের রয়েছে ২৩টি সাবমেরিন, যেগুলোর মধ্যে ১৫টি রাশিয়ার তৈরি।

পারস্য উপসাগরের অগভীর পানির জন্য ইরানিরা নিজেরাই তৈরি করেছেন কয়েকটি সাবমেরিন। পাশাপাশি ইরানের রয়েছে ফ্রিগেট ও উভচর যান যা ইসরায়েলের কাছে নেই। ইসরায়েলের বলতে গেলে জার্মানির তৈরি তিনটি সাবমেরিনই প্রধান শক্তি। ধারণা করা হয়, এই তিনটি ডুবোজাহাজ পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। তবে ইরান বা ইসরায়েল কারোরই বিমানবাহী রণতরী নেই।

ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর খ্যাতি দীর্ঘদিনের। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী নির্ভুলভাবে লক্ষ্যস্থলে হামলা চালিয়ে ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে। এরপরও বিভিন্ন সময় আরবের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। তাছাড়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, গাজা ও লেবাননের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই বিমান হামলা চালাচ্ছে দেশটি।

ইসরায়েলের রয়েছে ৪৬০টি যুদ্ধবিমান যেগুলোর মধ্যে ১৬৮টি জঙ্গি বিমান, ২৭টি বোয়িং এফ ১৫এ ঈগল। ইসরায়েল বিমান বাহিনী আকাশ থেকে ভূমিতে এবং আকাশ থেকে আকাশে একইসঙ্গে হামলা চালাতে সক্ষম।

পক্ষান্তরে ইরানের যুদ্ধবিমান আছে ৩৩৬টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার তৈরি ১৮৯টি জঙ্গি বিমান। সম্প্রতি ইরান চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। এটা সত্য হলে ইরানের বিমান বাহিনীর শক্তি এক লাফে অনেকগুণ বেড়ে যাবে।

দূরপাল্লার আক্রমণে সবচেয়ে গুরুত্বর্পূণ হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র। ধারণা করা হয়, ইরানের হাতে প্রায় হাজার খানেক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যেগুলোর সাহায্যে মধ্যপ্রাচ্য পেরিয়ে আরো দূরের এলাকায়ও তারা হামলা চালাতে পারবে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে ৩শ’টি স্বল্পপাল্লার। এর মধ্যে ইরানের তৈরি শাহাব-১ ও তোন্দার-৬৯ রয়েছে। ইরান মাঝারিপাল্লার কিছু ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। যেগুলোর মধ্যে শাহাব-২ এক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।

ঘাদর-১, ১৬শ কিলোমিটার এবং সাজ্জিল-২ ২৪শ’ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে। আর তা যদি সত্য হয় তাহলে সেই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় ইসরায়েল ছাড়িয়ে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশও পড়বে।

২০০৯ সালে ইরান ঘোষণা দেয়, তারা আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রেরও সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। আবার এ বছর জানুয়ারিতে ইরান মাঝারিপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।

দুই দেশের মজুদ ক্ষেপণাস্ত্র ও সম্ভাব্য কত দূরত্বে হামলা চালাতে পারে তা দেখা যাক। এখানে বলে রাখা ভালো, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলে ইরান-ইসরায়েল পরস্পর পরস্পরের যে কোনো লক্ষ্যস্থলে হামলা চালাতে পারবে।

ক্ষেপণাস্ত্র

ইরান
স্বল্পপাল্লা: শাহাব-২ (১, ২৮০ কিমি)
মাঝারিপাল্লা: ঘাদর -১ (১, ৬০০ কিমি)
দূরপাল্লা: সাজ্জিল-২ (২, ৪০০ কিমি)

ইসরায়েল
স্বল্পপাল্লা: জেরিকো-১ (১, ৮০০ কিমি)
মাঝারিপাল্লা: জেরিকো-২ (২, ৮০০ কিমি)
দূরপাল্লা: জেরিকো-৩ (৫০০০ কিমি)

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্বাস করে, ইসরায়েলের প্রায় ২শ’ পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্রও পরীক্ষিত। ইসরায়েলের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সাজ্জিল-২ পাঁচ হাজার মাইল দূর পর্যন্ত এক হাজার কেজি বিস্ফোরক বহন করে নিয়ে যেতে সক্ষম। স্বীকৃত সামরিক শক্তিতে ইসরায়েল এগিয়ে থাকলেও দীর্ঘ সময় ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডেভিড রবার্ট। তার মতে, এ কারণে ইসরায়েল মরিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চাইছে।

কামরান বোখারীর মতে, শেষ পর্যন্ত ইরানকে যদি যুদ্ধ শুরু করতেই হয় তাহলে তার ফল হবে মারাত্মক। সম্ভাব্য সেই যুদ্ধের দাবানলে ঝলসে যেতে পারে প্রতিবেশী দেশসহ পুরো বিশ্ব। 

http://sonarbangladesh.com/blog/akfhibbl/118991

২টি মন্তব্য:

  1. কি আর বলবো, লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। তবে যুদ্ধে ইসরায়েলকে যদি যুক্তরাষ্ট্র সহযোগীতা না করে তা হলে ইরানের কাছে ইসরায়েল কোনো ব্যাপার না। আর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহযোগীতা করবে না এটা কোনো দিনও হবে না।

    উত্তরমুছুন
  2. কি আর বলবো, লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। তবে যুদ্ধে ইসরায়েলকে যদি যুক্তরাষ্ট্র সহযোগীতা না করে তা হলে ইরানের কাছে ইসরায়েল কোনো ব্যাপার না। আর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহযোগীতা করবে না এটা কোনো দিনও হবে না।

    উত্তরমুছুন