সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

শাপলা চত্বরের গণজাগরণ বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিমত

হেফাজতে ইসলামের শনিবারের লংমার্চ ও মহাসমাবেশই ছিল গতকাল টক অব দ্য কান্ট্রি। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে লংমার্চ ও মহাসমাবেশ ঠেকাতে। সব বাধাবিপত্তি, অপপ্রচার, মিথ্যা প্রপাগান্ডা এবং বামপন্থী, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরাসহ সরকার সমর্থকদের প্রতিরোধের মুখে শনিবার রাজধানীতে মহাজগরণ ঘটে। হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে দেশব্যাপী শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ নবজাগরণের বিষয়ে রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, সরকারের তীব্র বাধা, সরকারি দল ও পুলিশের হামলা-মামলার মুখে ঢাকায় ২০ থেকে ২২ লাখ লোক এসেছেন শুধু প্রাণের টানে। ইসলামি চেতনার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এ জাগরণ রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের সততার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার বার্তাই দিয়েছে। তারা বলেন, সরকারের ইসলামবিদ্বেষী কার্যকলাপ, ইসলামবিদ্বেষী স্বঘোষিত নাস্তিকদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও শাহবাগের কথিত জাগরণ মঞ্চের ইসলাম ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র এবং আলেম ওলামাদের বিষয়ে সীমাহীন ঔদ্ধত্য প্রকাশের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে মতিঝিলের এ জাগরণ। সরকারের দলন নীতির ফলে দেশব্যাপী ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ঢাকা শহরে আমি ৫০ বছর ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছি। শনিবার হেফাজতে ইসলাম যে মহাসমাবেশ করেছে তা আমি আগে কখনও দেখিনি। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, লাখ লাখ লোকের এ সমাবেশ ঘিরে গোটা রাজধানীতে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। সারা ঢাকা শহর পরিণত হয়েছে মিছিলের নগরীতে। অভূতপূর্ব এ দৃশ্য যে কোনো নাগরিকের মনে দোলা দিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে দলমত নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ স্বেচ্ছায় সরকারের তৈরি করা বহু বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে মতিঝিলে সমবেত হয়েছেন। এদের কারোরই রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। শুধু ইসলামের প্রতি ভালোবাসা আর মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। এরা সবাই মহানবী (সা.)-এর উম্মত। তারা মহান আল্লাহ, মহানবী (সা.) ও পবিত্র ইসলামের অবমাননা সহ্য করতে পারেনি। তিনি বলেন, এ সমাবেশের সবচেয়ে বড় তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এ সমাবেশ ব্যর্থ করতে সরকার তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ অনুভূতি যে শক্তিশালী তা প্রমাণিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ইসলাম ধর্মের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কিংবা ইসলাম ও মুসলমানদের ভাবাদর্শকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। এ সমাবেশে মূলত এটা পরিষ্কার হয়েছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই সংবিধানে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বর্তমান সরকার সংবিধান থেকে এ বিষয়টি উঠিয়ে দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুলই করেছে। বর্তমান সরকারকে এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে এবং আগামীতে যারাই ক্ষমতায় আসতে চান, তাদেরও এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারপরও তারা লাখ লাখ লোকের একটি সমাবেশকে যেভাবে সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করেছে, এটা আমাদের দেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলেরই শিক্ষার বিষয়। মহান আল্লাহ, মহানবী (সা.) ও পবিত্র ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কেউ ভালো করতে পারবে না, এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রগতিশীলতার নামে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব পোষণকে দেশের আমজনতা ভালোভাবে নেয়নি, হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াই তার বড় প্রমাণ।
বিশিষ্ট সমাজচিন্তক ও কবী ফরহাদ মজহার বলেছেন, এই সমাবেশ পণ্ড করার জন্য সরকার সব রকমের চেষ্টা করেছে। শেষ চেষ্টা ছিল সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং আরও ২৭টি সংগঠনকে মাঠে নামানো। হেফাজতে ইসলাম প্রতিরোধ করার জন্য হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিও দেয়া হয়েছে। ট্রেন, বাস, ফেরি, নৌকা, লঞ্চসহ সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তার পরও লাখ লাখ মানুষের বৃহত্তম যে সমাবেশ ঢাকায় হয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। ঢাকায় যারা আসতে পারেননি, তারা সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করেছেন। যদি তাদের হিসাব নেয়া হয় তাহলে দেখা যায়, বড়জোর এক-দশমাংশ মানুষ ঢাকায় পৌঁছতে পেরেছেন। যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মাত্র ১০ ভাগের ১ ভাগ মানুষ সমাবেশে আসতে পেরেছেন। তাতেও যে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় এসেছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর।
তিনি বলেন, এই নষ্ট শহরে যেসব জালিম শ্রেণী এই দেশের জনগণকে শোষণ-লুণ্ঠন করে টিকে থাকে এবং যারা মনে করে এই দেশ শুধু তাদের, গণমানুষের পদভারে শহর প্রকম্পিত করে হেফাজতের জমায়েত বুঝিয়ে দিয়েছে তারা ছাড়াও বাংলাদেশে আরও কোটি কোটি মানুষ আছে। যে যুদ্ধ এই জালিম শ্রেণী শুরু করেছে, তার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে এর খানিক আভাস মাত্র তারা দিয়ে গেল।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম শুধু ঢাকায় সমাবেশ করতে চায়নি, তারা তাদের কর্মসূচিকে বলেছে ‘লংমার্চ’। মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে চীনের নিপীড়িত লড়াকু শ্রমিক-কৃষকদের নিয়ে গঠিত গণসৈনিকদের যুদ্ধ কৌশল হিসাবে এই দীর্ঘ পদযাত্রার সঙ্গে তাদের কর্মসূচির নামকরণে মিল রাখার মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলাম বুঝিয়ে দিয়েছে, মজলুমের যে কোনো লড়াইয়ের ধরনের সঙ্গে তাদের লডাইয়ের ধরনের মিল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তা ছাড়া তারা দাবি করেছেন, দীর্ঘ পদযাত্রার মধ্য দিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করার এই কৌশল কমিউনিস্টদের রণকৌশল বলা ঐতিহাসিক ভুল। কারণ ইসলামের ইতিহাসে এই ধরনের পদযাত্রার প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।
তিনি বলেন, সমাবেশ আগাগোড়াই ছিল শান্তিপূর্ণ। হেফাজতে নেতা পুলিশ প্রশাসনকে যে কথা দিয়েছেন, সেই ওয়াদামাফিক সময়মত তাদের সমাবেশ শেষ করেছেন। এতে স্পষ্ট বোঝা গেল কর্মীদের ওপর নেতাদের নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট শক্তিশালী। একটি শান্তিপূর্ণ লড়াইয়ের যাত্রা শুরু হলো।
কবি ফরহাদ মজহার আরও বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকলেও এই প্রথমবার ইসলাম নিজের প্রাধান্য নিয়ে হাজির হলো। শেখ হাসিনা ইসলামি রাজনীতিকে নির্মূল করতে গিয়ে তাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে গেলেন। ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের যে আধিপত্য গত ৪২ বছর আমরা বাংলাদেশে দেখেছি, তার দুর্বলতা ও ক্ষয়ের দিকটাও এতে প্রকট হয়ে উঠল।
তিনি বলেন, ইসলাম প্রশ্ন আগামী দিনে বাংলাদেশে রাজনীতির নির্ধারক হয়ে উঠবে। রাজনীতি যেভাবে গঠিত হতে থাকবে তার মধ্যে ইসলাম প্রশ্নের মীমাংসা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হয়ে নানাভাবে হাজির হতে থাকবে। কে কীভাবে করবেন তার ওপর তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ নির্ভর করবে। ইসলাম প্রশ্নের সঠিক মোকাবিলা না হলে রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা বাড়বে। অন্য দিকে এর সঠিক মীমাংসা বাংলাদেশের রাজনীতির বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটাতে পারে। অর্থাত্ বাংলাদেশের বৈপ্লবিক রূপান্তরের প্রশ্নও ইসলাম প্রশ্নের মীমাংসার সঙ্গে আরও সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়ল। এই সমাবেশের তাত্পর্য হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে নয়, বরং সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রদর্শন। হেফাজতে ইসলাম সমাবেশে তাদের ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। আমরা চাই বা না চাই, ভবিষ্যতে এই দাবির পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্ক ও জনমতই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হয়ে উঠবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ থেকে সবার জন্য শিক্ষার বিষয়টি হচ্ছে যে, ধর্মের প্রতি সম্মান থাকতে হবে। আলেম ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করলে তার ফল কি হয়, মতিঝিলের লাখ লাখ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ তার প্রতিফলন। শাহবাগের তরুণরা দেশের মানুষের অনুভূতিকে আমলে না নিয়ে যে ভাষায় বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রত্যেক ধর্ম কিংবা মতবাদের প্রতিই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। বাম দলগুলো ও শাহবাগের তরুণরা সম্ভবত এটা ভুলে গিয়েছিল। শাহবাগ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না, সেটার বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী লাখ লাখ তরুণ ফতুর হয়ে গেল, সেটা নিয়েও কোনো কথা হয়নি। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি বিশ্ববাসীর কাছে গোটা দেশের মানুষের মাথা হেঁট করে দিয়েছে, এটা নিয়েও কোনো কথা হয়নি শাহবাগে। তারা শুধু ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই বলেই স্লোগান দিল। ফলে এখন উল্টো ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে মতিঝিলের লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ থেকে ফাঁসির দাবি উঠেছে। মূলত কোনো মানুষকে হত্যার অধিকার কোনো মানুষের নেই। আমরা কারও অপরাধের জন্য শাস্তি দাবি করতে পারি। আদালত সেটা আইন অনুযায়ী বিবেচনা করবেন। কিন্তু জোর করে কারও ফাঁসি আদায় করার এখতিয়ার আমার নেই। এখন সেটাই হচ্ছে। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের সবগুলো দাবির সঙ্গে হয় তো আমি একমত নই। কিন্তু তারা সরকারের শত বাধা ডিঙিয়ে শুধু ইসলামকে ভালোবেসে বহুদূর থেকে হেঁটে মতিঝিলে এসে প্রমাণ করেছে, এদের আর অবজ্ঞার সুযোগ নেই। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ এ সমাবেশ দেশের ইতিহাসে একটি নজির হয়ে থাকবে। সরকার বিরোধিতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসহযোগিতা সত্ত্বেও নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে হেফাজতে ইসলাম এ সমাবেশ সফল করেছে। যা দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছে।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সব শ্রেণীর মানুষ নিয়েই রাষ্ট্র। সামাজিক হোক, ধর্মীয় হোক সব সম্প্রদায়ের তাদের আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে দেশের আলেম ওলামাদের মতামত প্রকাশ ঘটেছে। সমাবেশে তারা তাদের মতামত ও দাবি তুলে ধরেছেন। এতে কেউ সহমত প্রকাশ করবেন আবার কেউ দ্বিমতও প্রকাশ করবেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সারাদেশ থেকে লংমার্চ করে এ সমাবেশে লোক আসতে চেয়েছিল। সরকার এতে বাধা দিয়েছে। সরকার অংশগ্রহণকারীদের যোগদানে বাধা সৃষ্টি করে শুধু ভুলই করেনি, অন্যায় করেছে। কাউকে সমাবেশে যোগদানে বাধা দেয়া তার সাংবিধানিক অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা। সুশৃঙ্খল এ সমাবেশের একটি রাজনৈতিক তাত্পর্য রয়েছে। এটা হচ্ছে, রাজনীতিবিদদের উচিত হবে এ সমাবেশ নিয়ে পর্যালোচনা করা। এ সমাবেশ থেকে যে বার্তা পাওয়া গেছে, তা ভবিষ্যত্ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ সম্পর্কে বলেন, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। এখানে মিলিয়ন অব পিপলস (লাখ লাখ লোকের) সমাবেশ ঘটেছে। টিভির পর্দায় দেশের কোটি কোটি মানুষের চোখ আটকে ছিল ওই সমাবেশের দৃশ্য দেখতে। তিনি বলেন, গ্রামে-গঞ্জে বহু মানুষ আক্ষেপ করে বলছে, আমিও তো যেতে চেয়েছিলাম ওই সমাবেশে। সরকার আমাকে যেতে দিল না। দেশবাসীর সহমর্মিতা জয় করে নিয়েছে হেফাজতের কর্মীরা।
তিনি বলেন, আমাদের মিডিয়া ও সনাতনী ব্যক্তিরা একটা ভুল ধারণা দিচ্ছেন যে, হেফাজতে ইসলাম দেশকে মধ্যযুগীয় অবস্থায় বা অন্ধকার যুগে নিয়ে যাবে। এটা অত্যন্ত দুর্বল ও অযৌক্তিক ভাষ্য। এদের মধ্যে অনেকই আছেন, যারা উচ্চ শিক্ষিত। তারা হয়তো আমাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। কিন্তু তারা তাদের ধারায় সর্বোচ্চ শিক্ষিত। তাদের লিখিত বই আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের অনেক উঁচুমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। মাদরাসায় এখন আধুনিক শিক্ষা হচ্ছে। এরা এখন ইসলামকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখছে। এদের অনেক অর্জন রয়েছে।
আমাদের দেশে কেউ কেউ বলছেন, মাদরাসায় পড়া ছাত্ররা উচ্ছন্নে যাচ্ছে। এটা ভুল। মাদরাসায় পড়া ছাত্ররা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে তাদের ব্যাপারে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
শনিবার রাতে চ্যানেল আই’তে সংবাদপত্র পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শহীদুজ্জামান হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ সম্পর্কে আরও বলেন, রাত যত গভীর হয়, ভোরও তত তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসে। যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে। ঢালাওভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে মহান আল্লাহ ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়। কোনো দেশেই এটা সহ্য করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুক্তবুদ্ধির চর্চার নামে স্বাধীনতার মাত্রাতিরিক্ত নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায় না। এ কারণেই একটি শক্তি বেরিয়ে এসেছে। এটা শুধু শাহবাগের বিরোধিতা করাই এদের কাজ নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ইসলামিক সোসাইটি রয়েছে। এটাকে সেক্যুলারিজমের দিকে সুকৌশলে নেয়া হচ্ছে। ধর্মের প্রাধান্য সব দেশেই রয়েছে। ধর্মীয় ভণ্ডামি থেকে বেরিয়ে পরিচ্ছন্ন ধর্মীয় চর্চার দিকে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ সমাবেশ থেকে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের শিক্ষানীয় বিষয় হচ্ছে যে, মানুষের আস্থা নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসে। সততার সঙ্গে দেশ চালানোই তাদের প্রত্যাশা। দেশবাসী সততা ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার চায়। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার থেকে দেশের মানুষ রেহায় পেতে চায়। এ বিষয়টি বড় দুটি দলকে উপলব্ধির শিক্ষাই দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের এ মহাসমাবেশ।   



http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/04/08/195605#.UWKcJR_pfIU
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন