হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতবী রহঃ এর বিরুদ্ধে কথিত আহলে হাদীস ও বেদআতিদের জঘন্য মিথ্যাচার
প্রশ্ন
From: zakaria
Subject: wahabi
Country : saudiarab
Mobile :
Message Body:
assalamualikum,youtube dekhlam akjon bokta dewband madrashar protstatar akida niye prosno tolche.mawlana kasem nanutobi(r) onar likhito kitab”tahjironnas” kitabe likhechen nobi karim(sa)er somoye o jodi kono nobi asto taholeo mohammad (sa) je sesh nobi,ata-e bohal thakto.prosno:keno tini a kotha bollen?keno tini a dhoroner akida rakten?
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
একটি সতর্কবাণী
সাধারণ মুসলমানদের প্রতি সতর্কতার জন্য জানাচ্ছি যে, আমাদের আকাবীরে দেওবন্দ যারা তাদের আজীবন মেহনত দ্বারা এ উপমহাদেশ থেকে বাতিল আক্বিদা, শিরক-বিদআতকে বিতাড়িত করার জন্য সংগ্রাম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শিরক-বিদআতপূজারীরা যেসব অভিযোগ করেছে তার সব ক’টিই মিথ্যাচার। এ সকল আক্বিদার সাথে আমাদের সামান্যতম কোন সম্পর্ক নেই। অধিকাংশই এতই মিথ্যাচার যে, লিখতে গিয়ে আশ্চর্য হয়ে যাই। ওরা মুসলমান দাবি করে এমন জঘন্য মিথ্যাচার করে কি করে? কোথাও শব্দের আগে পরের বক্তব্য বাদ দিয়ে খন্ড বক্তব্য উদ্ধৃত করে, কখনো শব্দ পাল্টে নিজ থেকে শব্দ বাড়িয়ে, কখনো এক পৃষ্ঠার পর কয়েক পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে আরেক পৃষ্ঠার শব্দ মিলিয়ে তৈরী করে এক মনগড়া প্লাটফর্ম। যা দেখে সাধারণ মুসলমান না বুঝেই স্বীকার হয় বিভ্রান্তিতে। তাই সকল পাঠকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ রেজাখানী গ্রুপ এবং কথিত আহলে হাদীস গ্রুপের পক্ষ থেকে যখনই আমাদের স্বর্ণালী আকাবীরদের বিরুদ্ধে কোন আপত্তিকর মিথ্যা শুনতে পান, তাহলে হক্কানী ওলামাদের কাছে এর সঠিক ব্যাখ্যা বা মূল কিতাব থেকে না পড়ে আন্দাজেই তা প্রচার করে গোনাহগার হবেন না। না জেনে এবং যাচাই বাছাই না করে তা প্রচার করে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ (سنن ابى داود-كتاب الأدب، باب فِى التَّشْدِيدِ فِى الْكَذِبِ، رقم الحديث-4994)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যা শুনে তা’ই বলতে থাকা [যাচাই বাছাই ছাড়া] ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ঠ। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৬২৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৮২০১, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-১৪১৫, মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-১৯৮০, মুসনাদে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, হাদীস নং-১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬১৩১}
কাসেম নানুতবী রহঃ খতমে নবুওয়াত অস্বিকার করেছেন?!
এ অভিযোগকটির জবাব খুঁজতে গিয়ে মূল কিতাব দেখে এতই আশ্চর্য হয়েছি যে, এমন বিকৃতি কোন মুসলমান করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। জঘন্য কোন কাফেরও এমন মিথ্যাচারের আশ্রয় নিতে পারে না। মূল বিষয়টির দিকে খেয়াল করুন।
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত কাসেম নানুতবী রহঃ এর বিরুদ্ধে এ মিথ্যুকদের অভিযোগ হচ্ছে তিনি খতমে নবুওয়ত তথা রাসূল সাঃ শেষ নবী হওয়াকে অস্বিকার করেছেন। [নাউজুবিল্লাহ]। এ মিথ্যাকে প্রমাণিত করার জন্য মৌলুবী আহমদ রেজা খাঁ তার লিখিত হুসামুল হারামাইন বইয়ে নানুতবী রহঃ এর লিখা তাহরীজুন নাস কিতাবের যে ইবারত উদ্ধৃত করে তা নিম্নরূপ-
بلكہ با لفرض آپ کے زمانہ میں بھی کہيں اور نبی ہو جب بھی آپ کا خاتم ہونا بدستور باقی رہتا ہے، بلکہ ا گر با لفرض بعدزمانۂ نبوی بھی کوئ نبی پيدا ہو تو بھی خاتمیت محمدی میں کچہ فرق نہ آۓگا، عوام کے خیال میں رسول اللہ کا ختم ہونا بایں میি ہے کہ آپ سب میں آخر نبی ہیں، مگر اہل فہم پر روشن ہے کہ تقدم یا تاخر زمانہ میں بالذات کچہ فضیلت نہیں الخ (حسام الحرمين مع تمهيد ايمانى-101)
অনুবাদ-বরং যদি ধরে নেয়া হয় রাসূল সাঃ এর জমানায়ও অন্য কোন নবী আসতো, তাহলেও রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়া বাকি থাকে। বরং যদি ধরে নেয়া হয় নবীর পরও কোন নবী সৃষ্টি হয় তবুও “মুহাম্মদ সাঃ সর্বশেষ নবী” একথার উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করবে না। সাধারণ মানুষের ধারণায় রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়ার কেবল অর্থ এটাই যে, তিনি সবার শেষে এসেছেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে সুষ্পষ্ট যে, আগে আসা বা পরে আসার মাঝে মৌলিকভাবে কোন বিশেষত্ব নেই। {হুসামুল হারামাইন মাআ তামহীদুল ঈমানী-১০১}
প্রিয় পাঠক! উল্লেখিত বক্তব্য দেখলে বাহ্যত বুঝা যায় যে, হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতবী রহঃ এর কিতাব তাহরীজুন্নাসে উক্ত ইবারত ধারাবাহিকভাবে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। অথচ চরম বিকৃতির সাথে ৩টি ভিন্ন পৃষ্ঠা থেকে ৩টি বক্তব্যকে এক সাথে এমনভাবে আনা হয়েছে যে, মনে হবে পুরোটাই একবারে নানুতবী রহঃ বলেছেন। অথচ তা ৩ স্থানে বলা বক্তব্যের জোড়াতালি।
১-কাসেমী প্রকাশনী দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত তাহরীজুন্নাসের ১৪ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হল প্রথম অংশ- بلكہ با لفرض آپ کے زمانہ میں بھی کہيں اور نبی ہو جب بھی آپ کا خاتم ہونا بدستور باقی رہتا ہے، [বরং যদি ধরে নেয়া হয় রাসূল সাঃ এর জমানায়ও অন্য কোন নবী আসতো, তাহলেও রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়া বাকি থাকে।]
২-আর দ্বিতীয় অংশ ، بلکہ ا گر با لفرض بعدزمانۂ نبوی بھی کوئ نبی پيدا ہو تو بھی خاتمیت محمدی میں کچہ فرق نہ آۓگا، [“বরং যদি ধরে নেয়া হয় নবীর পরও কোন নবী সৃষ্টি হয় তবুও “মুহাম্মদ সাঃ সর্বশেষ নবী” একথার উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করবে না”।] এ অংশটি উদ্ধৃত হল ২৫ নং পৃষ্ঠায়।
৩-আর তৃতীয় অংশ তথা عوام کے خیال میں رسول اللہ کا ختم ہونا بایں میلل ہے کہ آپ سب میں آخر نبی ہیں، مگر اہل فہم پر روشن ہے کہ تقدم یا تاخر زمانہ میں بالذات کچہ فضیلت نہیں [সাধারণ মানুষের ধারণায় রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়ার কেবল অর্থ এটাই যে, তিনি সবার শেষে এসেছেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে সুষ্পষ্ট যে, আগে আসা বা পরে আসার মাঝে মৌলিকভাবে কোন বিশেষত্ব নেই।} এ ইবারত উদ্ধৃত হল-৩ নং পৃষ্ঠায়।
প্রিয় পাঠক! খেয়াল করুন। মানুষ মনুষত্বের স্তরের কতটা নিচে নামতে পারলে কথাকে বিকৃত করার জন্য ১৪ নং পৃষ্ঠার বক্তব্যকে আগে তারপর ২৫ নং পৃষ্ঠার বক্তব্য তারপর ৩ নং পৃষ্ঠার বক্তব্যকে সাজিয়ে একটা ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে পারে। এমনভাবে বক্তব্যটিকে সাজানো হয়েছে যেন পুরো বক্তব্যটি এক পৃষ্ঠায়। অথচ ৩ নং পৃষ্ঠার আংশিক বক্তব্যকে সর্বশেষে এনে প্রথমে ১৪ নং পৃষ্ঠার আংশিক বক্তব্য আগে, আর মাঝে ২৫ নং পৃষ্ঠার আংশিক বক্তব্য উদ্ধৃত করার দ্বারা কতটা খেয়ানত করা হয়েছে ভাবা যায়? কাসেম নানুতবী রহঃ কে অভিযুক্ত করার জন্য এমন চাতুরীর কাজকে যদি ওরা ধর্ম প্রচার বলে তাহলে মিথ্যাচার প্রচার কাকে বলে? “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ” কুরআনের এ আয়াতের প্রতি কি তাদের ন্যুনতম বিশ্বাস আছে?
এভাবে আগের আংশিক বক্তব্যকে পরে এনে আর পরের বক্তব্যকে আগে এনেতো নাউজুবিল্লাহ কুরআনে কারীমের মাঝেও কুফরী সাব্যস্ত করা যাবে। বলা যাবে- إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ “নিশ্চয় যারা ঈমান আনে আর সৎকর্ম করে তারা জাহান্নামী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। নাউজুবিল্লাহ। এমনটি করা যাবে না”? আর এমন করলে এটাকে দ্বীন প্রচার বলবে না দ্বীন বিকৃতিকারী বলবে?
আসলে কী আছে তাহরীজুন্নাসে?
মৌলিকভাবে কাসেম নানুতবী রহঃ তার কিতাব তাহরীজুন্নাসে রাসূল সাঃ এর জন্য ৩ প্রকারের খাতিমিয়্যাত তথা সর্বশেষত্ব প্রমাণ করেছেন। যথা-
১-খাতিমিয়্যাতে জাতি, তথা সত্বাগত ও মৌলিকত্বে সর্বশেষ হওয়া।
২-খাতিমিয়্যাতে জমানি তথা কাল-সময় হিসেবে সর্বশেষ হওয়া।
৩-খাতিমিয়্যাতে মাকানী তথা স্থান হিসেবে সর্বশেষত্ব।
হযরতের বক্তব্যের সার নির্যাস হল-
খাতিমিয়্যাতে জমানী
অর্থাৎ রাসূল সাঃ এর নবুওয়াতের কাল এ দৃশ্যমান পৃথিবীতে সকল আম্বিয়াদের সর্বশেষে। তার পর কোন নবী আসবে না। [হযরত ঈসা আঃ এসে হুজুর সাঃ এর দ্বীনের উপরই আমল করবেন। ঈসা আঃ এর আসাটা হুজুর সাঃ এর শেষ নবী হওয়া এবং শেষ জমানার নবী হওয়ার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না।]
রাসূল সাঃ এর শেষ নবী হওয়া এতটাই স্বীকৃত ঐক্যমত্বের আক্বিদা যে, যাকে কিছুতেই অস্বিকার করা যাবে না। যদি কেউ অস্বিকার করে বা সন্দেহ করে সে নিঃসন্দেহে কাফের।
খাতিমিয়্যাতে মাকানী
অর্থাৎ সে ভূমি যাতে রাসূল সাঃ আগমণ করেছেন তা সকল ভূমির মাঝে শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন ভূমি নেই। তাই স্থানের দিক থেকেও রাসূল সাঃ খাতাম তথা সর্বশেষ।
খাতিমিয়্যাতে জাতি
এটাকে খাতিমিয়্যাতে মারতাবা তথা মর্যাদায় সর্বশেষ ও বলা হয়। অর্থাৎ রাসূল সাঃ নববী গুণে “মওসুফ বিজ জাত” তথা সত্বাগতভাবে গুণান্বিত। আর অন্যান্য নবীরা “মওসুফ বিল আরস” তথা অন্যের কারণে নববী গুণে গুনান্বিত। কারণ অন্য নবীদের নবুওয়ত রাসূল সাঃ এর ফয়েজ। আর রাসূল সাঃ এর নবুওয়ত কারো ফয়জে নয়।
মানে হল-যে পরিমাণ পূর্ণাঙ্গতা ও মর্যাদা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যতা এনে দেয় তা সকলই রাসূল সাঃ এর মাঝে সত্বাগতভাবে বিদ্যমান ছিল। আর অন্য নবী এবং বুজুর্গানে দ্বীন এবং অন্য সকল সৃষ্টিজীবের যে পূর্ণতা ও মর্যাদা অর্জিত হয় তা সবই রাসূল সাঃ এর সত্বার মাধ্যমে অর্জিত। তাই রাসূল সাঃ এ হিসেবেও খাতাম যে, সকল পূর্ণতা ও মর্যাদা রাসূল সাঃ এর কাছে এসে শেষ হয়।
কাসেম নানুতবী রহঃ উদাহরণ হিসেবে বলেন-দেখো! যখন কোন শিক্ষক কোন বিষয়ে বুৎপত্তির পূর্ণতা অর্জন করে তখন আমরা বলে থাকি যে, এ বিষয়টি আপনার কাছে এসে থেমে গেছে। অর্থাৎ আপনিই এ বিষয়ে চূড়ান্ত। তেমনি রাসূল সাঃ পূর্ণাঙ্গতার সর্বশেষ। অর্থাৎ পূর্ণতার ক্ষেত্রে রাসূল সাঃ এর উপমা কেউ নেই। এটাই হল জাতি খাতিমিয়্যাতের। অর্থাৎ কালের সর্বশেষত্বের সাথে রাসূল সাঃ এমনিতেই খাতিম তথা সর্বশেষ। {ওয়াজুজ জুহুর-৭৫}
যখন রাসূল সাঃ এর জন্য সত্বাগত নবী প্রমাণিত। তাই রাসূল সাঃ তখনও নবী ছিলেন যখন হযরত আদম আঃ সৃজিতই হন নি। এ কারণেই রাসূল সাঃ নিজেই ইরশাদ করেন-
عن عبد الله بن شقيق ؛ أن رجلا سأل النبي صلى الله عليه وسلم : متى كنت نبيا ؟ قال : كنت نبيا وآدم بين الروح والجسد (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب المغازى، ما جاء في مبعث النبي صلى الله عليه وسلم، رقم الحديث-37708)
অনুবাদ-আব্দুল্লাহ বিন শাকিক থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কে এক লোক প্রশ্ন করল-আপনি কখন থেকে নবী? তিনি বললেন-আমি তখন থেকেই নবী যখন আদম আঃ রুহ ও শরীরের মাঝামাঝি ছিলেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৭৭০৮, মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-৫২২২, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-৩১৯১৭, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-১৫৮৩৫}
عن العرباض بن سارية الفزاري قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : ( إني عند الله مكتوب بخاتم النبيين وإن آدم لمنجدل في طينته (صحيح ابن حبان، كتاب التاريخ، باب من صفته صلى الله عليه و سلم وأخباره، رقم الحديث-6404)
অনুবাদ-হযরত ইরবায বিন সারিয়্যা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন-নিশ্চয় আমি আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বশেষ নবী হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম তখন, যখন আদম আঃ মাটিতে মিশ্রিত ছিলেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৪০৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৬৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪১৯৯, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৪৫৫, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২২২, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং-৫৭৫৯, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৩১}
এ হাদীস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাঃ সত্বাগতভাবে হযরত আদম আঃ এর সৃষ্টি হওয়ার আগে থেকেই নবী ছিলেন। যেহেতু তিনি আগে থেকেই নবী। তাই তার পরে আসাটা কালের দিক থেকে সর্বশেষ নবী হলেও পূর্ব থেকেই তিনি মর্যাদা ও পূর্ণতার দিক থেকে সর্বশেষ নবী।
সুতরাং কালের দিক থেকে যদি কেউ নবী তার পরে হতোও তবু তার সর্বশেষত্বের বিশেষত্বের মাঝে কোন কমতি হতো না। কিন্তু রাসূল সাঃ কালের দিক থেকেও তার পর কোন নবী আসার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন-“আমিই শেষ নবী আমার পর কোন নবী আসবে না”। তথা জমানার দিক থেকেও তিনি সর্বশেষ। যেমন তিনি মর্যাদা ও পূর্ণতার দিক থেকে সর্বশেষ।
প্রিয় পাঠক! এবার হযরত কাসেম নানুতবী রহঃ এর বক্তব্যটি খেয়াল করে আবার পড়ুন-
বরং যদি ধরে নেয়া হয় রাসূল সাঃ এর জমানায়ও অন্য কোন নবী আসতো, তাহলেও রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়া বাকি থাকে। বরং যদি ধরে নেয়া হয় নবীর পরও কোন নবী সৃষ্টি হয় তবুও “মুহাম্মদ সাঃ সর্বশেষ নবী” একথার উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করবে না। সাধারণ মানুষের ধারণায় রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়ার কেবল অর্থ এটাই যে, তিনি সবার শেষে এসেছেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে সুষ্পষ্ট যে, আগে আসা বা পরে আসার মাঝে মৌলিকভাবে কোন বিশেষত্ব নেই।
এ বক্তব্যের কোন স্থানে “রাসূল সাঃ শেষ নবী নয় কালের দিক থেকে” একথাটি বলা হয়েছে? তিনি বলেছেন যে, যদি ধরে নেয়া হয় যে, আমাদের মহানবী সাঃ এর পর কোন নবী আসতো।
তিনি কি বলেছেন রাসূল সাঃ এর পর কোন নবী আসবে? তিনি বলেছেন “যদি আসতো”। “যদি আসতো” বলে কোন কথা বলা মানে যদি উক্ত কথাটিকে মেনে নেয়া তাহলে কুরআনে কারীমে “যদি হতো” মর্মে যেসব শিরকী কথা বলা হয়েছে সেসবের ক্ষেত্রে কী বলবেন? যেমনটি যদি বলে মহান রাব্বুল আলামীন নিজেই ইরশাদ করেছেন-
قُلْ إِن كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَاْ أَوَّلُ الْعابِِِدِينَ} [الزّخرُف : 81]
অনুবাদ-আপনি বলুন-যদি আল্লাহর কোন সন্তান থাকতো, তাহলে আমি হতাম তার প্রথম ইবাদতকারী। {সূরা জুখরুফ-৮১}
এ আয়াতে নবী সাঃ কে আল্লাহ শিখিয়েছেন যে, যদি আল্লাহর সন্তান থাকতো তাহলে রাসূল সাঃ ই হতেন সে সন্তানের প্রথম ইবাদতকারী।
একথার মানে কি আল্লাহ বা নবীজী সাঃ বলছেন যে, আল্লাহর সন্তান আছে? নাউজুবিল্লাহ। নাকি এটি কেবলি একটি উপমা। যা বুঝানোর জন্য আল্লাহ তাআলা উপস্থাপন করেছেন?
উল্লেখিত বক্তব্যেওতো কাসেম নানুতবী রহঃ “যদি হতো নবী” বলেছেন। “আমাদের নবীর পর নবী আসবেন” এমন দাবি কি একথা দ্বারা প্রমাণিত হয়? এতটুকু বুঝার ক্ষমতা যাদের নেই সেই আহম্মকগুলো আবার নিজেদের দ্বীনের দাঈ আর মুফাক্কিরে ইসলাম দাবি করে কি করে? লজ্জা থাকা দরকার।
খতমে নবুওয়াতের ব্যাপারে কাসেম নানুতবী রহঃ এর আক্বিদা
হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতবী রহঃ এ উপমহাদেশে দ্বীন প্রচারের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য মানুষ দুআ করবে ইনশাআল্লাহ। বেদআতি ও কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের মিথ্যাচার এ মহা মনীষীর সুনাম ও সুখ্যাতি কিঞ্চিতাংশও কমাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
কাসেম নানুতবী রহঃ এর আক্বিদা এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা সর্বোপরি মুসলমানদের আক্বিদা হল রাসূল সাঃ কালের দিক থেকে সর্বশেষ নবী। সেই সাথে মর্যাদার দিক থেকেও সর্বশেষ নবী। নবুওয়াতী গুণের পূর্ণতার দিক থেকেও সর্বশেষ নবী।
কাসেম নানুতবী রহঃ এর লিখা তাহরীজুন্নাস কিতাবটি যেকোন পাঠক পুরোটাই পড়লে বুঝতে পারবেন মূলত খতমে নবওয়াত প্রমাণ করার জন্য হযরত এ মহামূল্যবান গ্রন্থটি রচনা করেছেন। খতমে নবুওয়াতকে অস্বিকার করার জন্য নয়।
এ কিতাব ছাড়াও হযরতের লেখা মুনাযারায়ে আজিবাহ গ্রন্থে খতমে নবুওয়াত সম্পর্কে হযরতের কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি-
১-রাসূল সাঃ কালের দিক থেকে সর্বশেষ নবী এটাতো সবার কাছেই স্বীকৃত। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-৩৯}
২-কালের দিক থেকে রাসূল সাঃ সর্বশেষ মানাকে নিজের দ্বীন ও ঈমান মনে করি। অযোগ্যদের অপবাদের কোন চিকিৎসা নেই। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-৩৯}
৩-নবীজী সাঃ কালের দিক থেকেও সর্বশেষ একথা আমি অস্বিকার কারি না। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-৫০}
৪-এটাতো স্বীকৃত যে, কালের দিক থেকে রাসূল সাঃ সর্বশেষ এটাতো সর্বসম্মত মত। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-৬৯}
৫-রাসূল সাঃ এর পর কোন নবী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যে এটাতে সন্দেহ করে তাকে কাফের মনে করি। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-১০৩}
এরপরও যেসব অসৎ লোক দ্বীন প্রচারের নামে মিথ্যাচার প্রচার করে বেড়াচ্ছে এ পৃথিবী বিখ্যাত বুযুর্গ ও স্বীকৃত আলেমের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেত্রে শুধু পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতই পেশ করছি-
لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ } [آل عمران: 61]
অনুবাদ-মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত। {সূরা আলে ইমরান-৬১}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com
http://jamiatulasad.com/?p=1120
From: zakaria
Subject: wahabi
Country : saudiarab
Mobile :
Message Body:
assalamualikum,youtube dekhlam akjon bokta dewband madrashar protstatar akida niye prosno tolche.mawlana kasem nanutobi(r) onar likhito kitab”tahjironnas” kitabe likhechen nobi karim(sa)er somoye o jodi kono nobi asto taholeo mohammad (sa) je sesh nobi,ata-e bohal thakto.prosno:keno tini a kotha bollen?keno tini a dhoroner akida rakten?
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
একটি সতর্কবাণী
সাধারণ মুসলমানদের প্রতি সতর্কতার জন্য জানাচ্ছি যে, আমাদের আকাবীরে দেওবন্দ যারা তাদের আজীবন মেহনত দ্বারা এ উপমহাদেশ থেকে বাতিল আক্বিদা, শিরক-বিদআতকে বিতাড়িত করার জন্য সংগ্রাম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শিরক-বিদআতপূজারীরা যেসব অভিযোগ করেছে তার সব ক’টিই মিথ্যাচার। এ সকল আক্বিদার সাথে আমাদের সামান্যতম কোন সম্পর্ক নেই। অধিকাংশই এতই মিথ্যাচার যে, লিখতে গিয়ে আশ্চর্য হয়ে যাই। ওরা মুসলমান দাবি করে এমন জঘন্য মিথ্যাচার করে কি করে? কোথাও শব্দের আগে পরের বক্তব্য বাদ দিয়ে খন্ড বক্তব্য উদ্ধৃত করে, কখনো শব্দ পাল্টে নিজ থেকে শব্দ বাড়িয়ে, কখনো এক পৃষ্ঠার পর কয়েক পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে আরেক পৃষ্ঠার শব্দ মিলিয়ে তৈরী করে এক মনগড়া প্লাটফর্ম। যা দেখে সাধারণ মুসলমান না বুঝেই স্বীকার হয় বিভ্রান্তিতে। তাই সকল পাঠকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ রেজাখানী গ্রুপ এবং কথিত আহলে হাদীস গ্রুপের পক্ষ থেকে যখনই আমাদের স্বর্ণালী আকাবীরদের বিরুদ্ধে কোন আপত্তিকর মিথ্যা শুনতে পান, তাহলে হক্কানী ওলামাদের কাছে এর সঠিক ব্যাখ্যা বা মূল কিতাব থেকে না পড়ে আন্দাজেই তা প্রচার করে গোনাহগার হবেন না। না জেনে এবং যাচাই বাছাই না করে তা প্রচার করে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ (سنن ابى داود-كتاب الأدب، باب فِى التَّشْدِيدِ فِى الْكَذِبِ، رقم الحديث-4994)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যা শুনে তা’ই বলতে থাকা [যাচাই বাছাই ছাড়া] ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ঠ। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৬২৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৮২০১, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-১৪১৫, মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-১৯৮০, মুসনাদে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, হাদীস নং-১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬১৩১}
কাসেম নানুতবী রহঃ খতমে নবুওয়াত অস্বিকার করেছেন?!
এ অভিযোগকটির জবাব খুঁজতে গিয়ে মূল কিতাব দেখে এতই আশ্চর্য হয়েছি যে, এমন বিকৃতি কোন মুসলমান করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। জঘন্য কোন কাফেরও এমন মিথ্যাচারের আশ্রয় নিতে পারে না। মূল বিষয়টির দিকে খেয়াল করুন।
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত কাসেম নানুতবী রহঃ এর বিরুদ্ধে এ মিথ্যুকদের অভিযোগ হচ্ছে তিনি খতমে নবুওয়ত তথা রাসূল সাঃ শেষ নবী হওয়াকে অস্বিকার করেছেন। [নাউজুবিল্লাহ]। এ মিথ্যাকে প্রমাণিত করার জন্য মৌলুবী আহমদ রেজা খাঁ তার লিখিত হুসামুল হারামাইন বইয়ে নানুতবী রহঃ এর লিখা তাহরীজুন নাস কিতাবের যে ইবারত উদ্ধৃত করে তা নিম্নরূপ-
بلكہ با لفرض آپ کے زمانہ میں بھی کہيں اور نبی ہو جب بھی آپ کا خاتم ہونا بدستور باقی رہتا ہے، بلکہ ا گر با لفرض بعدزمانۂ نبوی بھی کوئ نبی پيدا ہو تو بھی خاتمیت محمدی میں کچہ فرق نہ آۓگا، عوام کے خیال میں رسول اللہ کا ختم ہونا بایں میি ہے کہ آپ سب میں آخر نبی ہیں، مگر اہل فہم پر روشن ہے کہ تقدم یا تاخر زمانہ میں بالذات کچہ فضیلت نہیں الخ (حسام الحرمين مع تمهيد ايمانى-101)
অনুবাদ-বরং যদি ধরে নেয়া হয় রাসূল সাঃ এর জমানায়ও অন্য কোন নবী আসতো, তাহলেও রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়া বাকি থাকে। বরং যদি ধরে নেয়া হয় নবীর পরও কোন নবী সৃষ্টি হয় তবুও “মুহাম্মদ সাঃ সর্বশেষ নবী” একথার উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করবে না। সাধারণ মানুষের ধারণায় রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়ার কেবল অর্থ এটাই যে, তিনি সবার শেষে এসেছেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে সুষ্পষ্ট যে, আগে আসা বা পরে আসার মাঝে মৌলিকভাবে কোন বিশেষত্ব নেই। {হুসামুল হারামাইন মাআ তামহীদুল ঈমানী-১০১}
প্রিয় পাঠক! উল্লেখিত বক্তব্য দেখলে বাহ্যত বুঝা যায় যে, হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতবী রহঃ এর কিতাব তাহরীজুন্নাসে উক্ত ইবারত ধারাবাহিকভাবে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। অথচ চরম বিকৃতির সাথে ৩টি ভিন্ন পৃষ্ঠা থেকে ৩টি বক্তব্যকে এক সাথে এমনভাবে আনা হয়েছে যে, মনে হবে পুরোটাই একবারে নানুতবী রহঃ বলেছেন। অথচ তা ৩ স্থানে বলা বক্তব্যের জোড়াতালি।
১-কাসেমী প্রকাশনী দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত তাহরীজুন্নাসের ১৪ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হল প্রথম অংশ- بلكہ با لفرض آپ کے زمانہ میں بھی کہيں اور نبی ہو جب بھی آپ کا خاتم ہونا بدستور باقی رہتا ہے، [বরং যদি ধরে নেয়া হয় রাসূল সাঃ এর জমানায়ও অন্য কোন নবী আসতো, তাহলেও রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়া বাকি থাকে।]
২-আর দ্বিতীয় অংশ ، بلکہ ا گر با لفرض بعدزمانۂ نبوی بھی کوئ نبی پيدا ہو تو بھی خاتمیت محمدی میں کچہ فرق نہ آۓگا، [“বরং যদি ধরে নেয়া হয় নবীর পরও কোন নবী সৃষ্টি হয় তবুও “মুহাম্মদ সাঃ সর্বশেষ নবী” একথার উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করবে না”।] এ অংশটি উদ্ধৃত হল ২৫ নং পৃষ্ঠায়।
৩-আর তৃতীয় অংশ তথা عوام کے خیال میں رسول اللہ کا ختم ہونا بایں میلل ہے کہ آپ سب میں آخر نبی ہیں، مگر اہل فہم پر روشن ہے کہ تقدم یا تاخر زمانہ میں بالذات کچہ فضیلت نہیں [সাধারণ মানুষের ধারণায় রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়ার কেবল অর্থ এটাই যে, তিনি সবার শেষে এসেছেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে সুষ্পষ্ট যে, আগে আসা বা পরে আসার মাঝে মৌলিকভাবে কোন বিশেষত্ব নেই।} এ ইবারত উদ্ধৃত হল-৩ নং পৃষ্ঠায়।
প্রিয় পাঠক! খেয়াল করুন। মানুষ মনুষত্বের স্তরের কতটা নিচে নামতে পারলে কথাকে বিকৃত করার জন্য ১৪ নং পৃষ্ঠার বক্তব্যকে আগে তারপর ২৫ নং পৃষ্ঠার বক্তব্য তারপর ৩ নং পৃষ্ঠার বক্তব্যকে সাজিয়ে একটা ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে পারে। এমনভাবে বক্তব্যটিকে সাজানো হয়েছে যেন পুরো বক্তব্যটি এক পৃষ্ঠায়। অথচ ৩ নং পৃষ্ঠার আংশিক বক্তব্যকে সর্বশেষে এনে প্রথমে ১৪ নং পৃষ্ঠার আংশিক বক্তব্য আগে, আর মাঝে ২৫ নং পৃষ্ঠার আংশিক বক্তব্য উদ্ধৃত করার দ্বারা কতটা খেয়ানত করা হয়েছে ভাবা যায়? কাসেম নানুতবী রহঃ কে অভিযুক্ত করার জন্য এমন চাতুরীর কাজকে যদি ওরা ধর্ম প্রচার বলে তাহলে মিথ্যাচার প্রচার কাকে বলে? “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ” কুরআনের এ আয়াতের প্রতি কি তাদের ন্যুনতম বিশ্বাস আছে?
এভাবে আগের আংশিক বক্তব্যকে পরে এনে আর পরের বক্তব্যকে আগে এনেতো নাউজুবিল্লাহ কুরআনে কারীমের মাঝেও কুফরী সাব্যস্ত করা যাবে। বলা যাবে- إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ “নিশ্চয় যারা ঈমান আনে আর সৎকর্ম করে তারা জাহান্নামী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। নাউজুবিল্লাহ। এমনটি করা যাবে না”? আর এমন করলে এটাকে দ্বীন প্রচার বলবে না দ্বীন বিকৃতিকারী বলবে?
আসলে কী আছে তাহরীজুন্নাসে?
মৌলিকভাবে কাসেম নানুতবী রহঃ তার কিতাব তাহরীজুন্নাসে রাসূল সাঃ এর জন্য ৩ প্রকারের খাতিমিয়্যাত তথা সর্বশেষত্ব প্রমাণ করেছেন। যথা-
১-খাতিমিয়্যাতে জাতি, তথা সত্বাগত ও মৌলিকত্বে সর্বশেষ হওয়া।
২-খাতিমিয়্যাতে জমানি তথা কাল-সময় হিসেবে সর্বশেষ হওয়া।
৩-খাতিমিয়্যাতে মাকানী তথা স্থান হিসেবে সর্বশেষত্ব।
হযরতের বক্তব্যের সার নির্যাস হল-
খাতিমিয়্যাতে জমানী
অর্থাৎ রাসূল সাঃ এর নবুওয়াতের কাল এ দৃশ্যমান পৃথিবীতে সকল আম্বিয়াদের সর্বশেষে। তার পর কোন নবী আসবে না। [হযরত ঈসা আঃ এসে হুজুর সাঃ এর দ্বীনের উপরই আমল করবেন। ঈসা আঃ এর আসাটা হুজুর সাঃ এর শেষ নবী হওয়া এবং শেষ জমানার নবী হওয়ার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না।]
রাসূল সাঃ এর শেষ নবী হওয়া এতটাই স্বীকৃত ঐক্যমত্বের আক্বিদা যে, যাকে কিছুতেই অস্বিকার করা যাবে না। যদি কেউ অস্বিকার করে বা সন্দেহ করে সে নিঃসন্দেহে কাফের।
খাতিমিয়্যাতে মাকানী
অর্থাৎ সে ভূমি যাতে রাসূল সাঃ আগমণ করেছেন তা সকল ভূমির মাঝে শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন ভূমি নেই। তাই স্থানের দিক থেকেও রাসূল সাঃ খাতাম তথা সর্বশেষ।
খাতিমিয়্যাতে জাতি
এটাকে খাতিমিয়্যাতে মারতাবা তথা মর্যাদায় সর্বশেষ ও বলা হয়। অর্থাৎ রাসূল সাঃ নববী গুণে “মওসুফ বিজ জাত” তথা সত্বাগতভাবে গুণান্বিত। আর অন্যান্য নবীরা “মওসুফ বিল আরস” তথা অন্যের কারণে নববী গুণে গুনান্বিত। কারণ অন্য নবীদের নবুওয়ত রাসূল সাঃ এর ফয়েজ। আর রাসূল সাঃ এর নবুওয়ত কারো ফয়জে নয়।
মানে হল-যে পরিমাণ পূর্ণাঙ্গতা ও মর্যাদা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যতা এনে দেয় তা সকলই রাসূল সাঃ এর মাঝে সত্বাগতভাবে বিদ্যমান ছিল। আর অন্য নবী এবং বুজুর্গানে দ্বীন এবং অন্য সকল সৃষ্টিজীবের যে পূর্ণতা ও মর্যাদা অর্জিত হয় তা সবই রাসূল সাঃ এর সত্বার মাধ্যমে অর্জিত। তাই রাসূল সাঃ এ হিসেবেও খাতাম যে, সকল পূর্ণতা ও মর্যাদা রাসূল সাঃ এর কাছে এসে শেষ হয়।
কাসেম নানুতবী রহঃ উদাহরণ হিসেবে বলেন-দেখো! যখন কোন শিক্ষক কোন বিষয়ে বুৎপত্তির পূর্ণতা অর্জন করে তখন আমরা বলে থাকি যে, এ বিষয়টি আপনার কাছে এসে থেমে গেছে। অর্থাৎ আপনিই এ বিষয়ে চূড়ান্ত। তেমনি রাসূল সাঃ পূর্ণাঙ্গতার সর্বশেষ। অর্থাৎ পূর্ণতার ক্ষেত্রে রাসূল সাঃ এর উপমা কেউ নেই। এটাই হল জাতি খাতিমিয়্যাতের। অর্থাৎ কালের সর্বশেষত্বের সাথে রাসূল সাঃ এমনিতেই খাতিম তথা সর্বশেষ। {ওয়াজুজ জুহুর-৭৫}
যখন রাসূল সাঃ এর জন্য সত্বাগত নবী প্রমাণিত। তাই রাসূল সাঃ তখনও নবী ছিলেন যখন হযরত আদম আঃ সৃজিতই হন নি। এ কারণেই রাসূল সাঃ নিজেই ইরশাদ করেন-
عن عبد الله بن شقيق ؛ أن رجلا سأل النبي صلى الله عليه وسلم : متى كنت نبيا ؟ قال : كنت نبيا وآدم بين الروح والجسد (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب المغازى، ما جاء في مبعث النبي صلى الله عليه وسلم، رقم الحديث-37708)
অনুবাদ-আব্দুল্লাহ বিন শাকিক থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কে এক লোক প্রশ্ন করল-আপনি কখন থেকে নবী? তিনি বললেন-আমি তখন থেকেই নবী যখন আদম আঃ রুহ ও শরীরের মাঝামাঝি ছিলেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৭৭০৮, মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-৫২২২, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-৩১৯১৭, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-১৫৮৩৫}
عن العرباض بن سارية الفزاري قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : ( إني عند الله مكتوب بخاتم النبيين وإن آدم لمنجدل في طينته (صحيح ابن حبان، كتاب التاريخ، باب من صفته صلى الله عليه و سلم وأخباره، رقم الحديث-6404)
অনুবাদ-হযরত ইরবায বিন সারিয়্যা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন-নিশ্চয় আমি আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বশেষ নবী হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম তখন, যখন আদম আঃ মাটিতে মিশ্রিত ছিলেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৪০৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৬৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪১৯৯, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৪৫৫, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২২২, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং-৫৭৫৯, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৩১}
এ হাদীস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাঃ সত্বাগতভাবে হযরত আদম আঃ এর সৃষ্টি হওয়ার আগে থেকেই নবী ছিলেন। যেহেতু তিনি আগে থেকেই নবী। তাই তার পরে আসাটা কালের দিক থেকে সর্বশেষ নবী হলেও পূর্ব থেকেই তিনি মর্যাদা ও পূর্ণতার দিক থেকে সর্বশেষ নবী।
সুতরাং কালের দিক থেকে যদি কেউ নবী তার পরে হতোও তবু তার সর্বশেষত্বের বিশেষত্বের মাঝে কোন কমতি হতো না। কিন্তু রাসূল সাঃ কালের দিক থেকেও তার পর কোন নবী আসার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন-“আমিই শেষ নবী আমার পর কোন নবী আসবে না”। তথা জমানার দিক থেকেও তিনি সর্বশেষ। যেমন তিনি মর্যাদা ও পূর্ণতার দিক থেকে সর্বশেষ।
প্রিয় পাঠক! এবার হযরত কাসেম নানুতবী রহঃ এর বক্তব্যটি খেয়াল করে আবার পড়ুন-
বরং যদি ধরে নেয়া হয় রাসূল সাঃ এর জমানায়ও অন্য কোন নবী আসতো, তাহলেও রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়া বাকি থাকে। বরং যদি ধরে নেয়া হয় নবীর পরও কোন নবী সৃষ্টি হয় তবুও “মুহাম্মদ সাঃ সর্বশেষ নবী” একথার উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করবে না। সাধারণ মানুষের ধারণায় রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়ার কেবল অর্থ এটাই যে, তিনি সবার শেষে এসেছেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে সুষ্পষ্ট যে, আগে আসা বা পরে আসার মাঝে মৌলিকভাবে কোন বিশেষত্ব নেই।
এ বক্তব্যের কোন স্থানে “রাসূল সাঃ শেষ নবী নয় কালের দিক থেকে” একথাটি বলা হয়েছে? তিনি বলেছেন যে, যদি ধরে নেয়া হয় যে, আমাদের মহানবী সাঃ এর পর কোন নবী আসতো।
তিনি কি বলেছেন রাসূল সাঃ এর পর কোন নবী আসবে? তিনি বলেছেন “যদি আসতো”। “যদি আসতো” বলে কোন কথা বলা মানে যদি উক্ত কথাটিকে মেনে নেয়া তাহলে কুরআনে কারীমে “যদি হতো” মর্মে যেসব শিরকী কথা বলা হয়েছে সেসবের ক্ষেত্রে কী বলবেন? যেমনটি যদি বলে মহান রাব্বুল আলামীন নিজেই ইরশাদ করেছেন-
قُلْ إِن كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَاْ أَوَّلُ الْعابِِِدِينَ} [الزّخرُف : 81]
অনুবাদ-আপনি বলুন-যদি আল্লাহর কোন সন্তান থাকতো, তাহলে আমি হতাম তার প্রথম ইবাদতকারী। {সূরা জুখরুফ-৮১}
এ আয়াতে নবী সাঃ কে আল্লাহ শিখিয়েছেন যে, যদি আল্লাহর সন্তান থাকতো তাহলে রাসূল সাঃ ই হতেন সে সন্তানের প্রথম ইবাদতকারী।
একথার মানে কি আল্লাহ বা নবীজী সাঃ বলছেন যে, আল্লাহর সন্তান আছে? নাউজুবিল্লাহ। নাকি এটি কেবলি একটি উপমা। যা বুঝানোর জন্য আল্লাহ তাআলা উপস্থাপন করেছেন?
উল্লেখিত বক্তব্যেওতো কাসেম নানুতবী রহঃ “যদি হতো নবী” বলেছেন। “আমাদের নবীর পর নবী আসবেন” এমন দাবি কি একথা দ্বারা প্রমাণিত হয়? এতটুকু বুঝার ক্ষমতা যাদের নেই সেই আহম্মকগুলো আবার নিজেদের দ্বীনের দাঈ আর মুফাক্কিরে ইসলাম দাবি করে কি করে? লজ্জা থাকা দরকার।
খতমে নবুওয়াতের ব্যাপারে কাসেম নানুতবী রহঃ এর আক্বিদা
হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতবী রহঃ এ উপমহাদেশে দ্বীন প্রচারের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য মানুষ দুআ করবে ইনশাআল্লাহ। বেদআতি ও কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের মিথ্যাচার এ মহা মনীষীর সুনাম ও সুখ্যাতি কিঞ্চিতাংশও কমাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
কাসেম নানুতবী রহঃ এর আক্বিদা এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা সর্বোপরি মুসলমানদের আক্বিদা হল রাসূল সাঃ কালের দিক থেকে সর্বশেষ নবী। সেই সাথে মর্যাদার দিক থেকেও সর্বশেষ নবী। নবুওয়াতী গুণের পূর্ণতার দিক থেকেও সর্বশেষ নবী।
কাসেম নানুতবী রহঃ এর লিখা তাহরীজুন্নাস কিতাবটি যেকোন পাঠক পুরোটাই পড়লে বুঝতে পারবেন মূলত খতমে নবওয়াত প্রমাণ করার জন্য হযরত এ মহামূল্যবান গ্রন্থটি রচনা করেছেন। খতমে নবুওয়াতকে অস্বিকার করার জন্য নয়।
এ কিতাব ছাড়াও হযরতের লেখা মুনাযারায়ে আজিবাহ গ্রন্থে খতমে নবুওয়াত সম্পর্কে হযরতের কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি-
১-রাসূল সাঃ কালের দিক থেকে সর্বশেষ নবী এটাতো সবার কাছেই স্বীকৃত। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-৩৯}
২-কালের দিক থেকে রাসূল সাঃ সর্বশেষ মানাকে নিজের দ্বীন ও ঈমান মনে করি। অযোগ্যদের অপবাদের কোন চিকিৎসা নেই। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-৩৯}
৩-নবীজী সাঃ কালের দিক থেকেও সর্বশেষ একথা আমি অস্বিকার কারি না। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-৫০}
৪-এটাতো স্বীকৃত যে, কালের দিক থেকে রাসূল সাঃ সর্বশেষ এটাতো সর্বসম্মত মত। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-৬৯}
৫-রাসূল সাঃ এর পর কোন নবী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যে এটাতে সন্দেহ করে তাকে কাফের মনে করি। {মুনাযারায়ে আজিবাহ-১০৩}
এরপরও যেসব অসৎ লোক দ্বীন প্রচারের নামে মিথ্যাচার প্রচার করে বেড়াচ্ছে এ পৃথিবী বিখ্যাত বুযুর্গ ও স্বীকৃত আলেমের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেত্রে শুধু পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতই পেশ করছি-
لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ } [آل عمران: 61]
অনুবাদ-মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত। {সূরা আলে ইমরান-৬১}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com
http://jamiatulasad.com/?p=1120
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন