{1 } নূরের নবী ‘মাটির নবী' বিতর্কের অবসান কবে হবে?
প্রফেসর ড. এবিএম মাহবুবুল ইসলাম : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যেই ষড়যন্ত্র চলছে, তার মূল কারণ এবং সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বকে সমাজে-রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার বিষয় যেখানে এই মুহূর্তে প্রধান আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত, সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয় বাদ দিয়ে তার আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে অনেকে ব্যস্ত। বাংলাদেশে মহানবী (সাঃ) নূরের না মাটির তৈরি আলেম-ওলামাদের মাঝে এ আলোচনা বেশি। এর প্রভাব পড়ছে শ্রোতাদের মাঝে। আলেমদের একটি অংশ বিশেষত: এক শ্রেণীর তরিকাপন্থী ওয়ায়েজীন বলছেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হচ্ছেন নূরের তৈরি। অন্যপক্ষ বলছেন তিনি হচ্ছেন মাটির তৈরি। উভয়পক্ষ কুরআন হাদিস থেকে স্ব স্ব সমর্থনে দলিল পেশ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে লিখব লিখব করে ভাবছি। গত ৩১ অক্টোবর ফোনে একজন জানালেন যে, তিনি শুনতে পাচ্ছেন, তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে একজন ওয়ায়েজ, সূরা আল মায়েদার ১৫নং আয়াতে মুহাম্মদ (সাঃ) যে নূরের তৈরি সে কথা বলা হয়েছে বলে ওয়াজ করছেন। উল্লেখ্য, এ আয়াতটি হচ্ছে ‘‘ক্বাদ যা আকুম মিনাল্লাহী নুরুন ও কিতাবুন মুবিন।' অর্থাৎ ‘‘আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্যই তোমাদের কাছে ‘নূর' এবং স্পষ্ট বিধান গ্রন্থ এসেছে’’। নিতান্তই দ্বীনি স্বার্থেই এ বিষয়ে কিছু লিখার প্রয়োজন অনুভব করলাম। এ বিষয়ে কোরআন সুন্নাহ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও নিজস্ব বুঝ (Understanding of Islam) অনুযায়ী কিছু লিখার চেষ্টা করছি।
নবী কি ছিলেন?
মহানবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) ছিলেন নবী- শেষ নবী। তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না এটাই ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেশতা ছিলেন? যদি মানুষ হয়ে থাকে, তাহলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, সকল মানুষই আদমের সন্তান আর আদম হলো মাটির তৈরি। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘কুল্লুকুম মিন আদম ওয়া আদম মিন তরাব’’। তোমরা সকলেই আদম থেকে উদগত আর আদম হলো মাটির তৈরি। এতো গেল সকল মানুষের গঠনতত্ত্ব। প্রতিটি মানুষের গঠনতত্ত্ব বা প্রকৃতি সম্পর্কে আল্লাহর বর্ণনা নিম্নরূপ : ‘‘(হে নবী বলে দিন) নিশ্চিতভাবে আমি (আল্লাহ) মানুষকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।’’ ‘‘ইন্নি খালেকুল ইনসান মিন ত্বীন’’ (সূরা ছোয়াদ : ৩৮:৭১)।
উপরোক্ত আয়াতে মানুষ বুঝাতে আদম ও ইনছান শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষ বা মানবজাতি বুঝাতে আর একটি শব্দ পবিত্র কোরআনে ব্যবহার করা হয়েছে আর তা হলো ‘বাশার' (এরাবিক ইংলিশ ডিকশনারী, পৃঃ ৫)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘‘হে নবী বলে দিন, (ইন্নামা আনা বাশারুন মিসলুকুম) নিশ্চিতভাবে আমি তোমাদের মতই মানুষ’’ I am only a man like you (আল কাহফ : ১৮:১১০) পূর্ব যুগের সকল নবীগণও (বাশার) মানুষ ছিলেন এবং তাদের বর্জন ও অস্বীকারকারীরাও তার স্বীকার করেছেন। যেমন- এ প্রসঙ্গে আল কোরআন বলছে, তারা তাদের নবীদের অস্বীকার করে বলতো তোমরাতো আমাদের মতই মানুষ। নবীগণও বলেছেন- (ইন্না নাহনু ইল্লা বাশারুন মিস্লুকুম তবে আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা তিনি অতি দয়া প্রদর্শন করেন। (সূরা ইবরাহীম, ১৪: ১১-১২)। নবুয়াত বা কিতাব দান কোন (বাশারের) মানুষের কাজ নয় বরং এটি আল্লাহর কাজ। তিনি বলেন, যাকে আল্লাহ কিতাব দিয়েছে তার একথা বলার অধিকার নেই যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার এবাদত কর। (সূরা আল ইমরান, ৩:৭৯)
অতএব আল্লাহর ভাষায় বাশার হলো : মানুষ আর সকল মানুষই মাটির তৈরি। (সূরা আর রহমান, ৫৫:১২, আল হিজর, ১৫:২৬, আল মু'মিনুন, ২৩:১২)। সকল নবী ছিলেন বাশার। সকল মানুষ আল্লাহর খলিফা। সূরা আল বাকারা ২:৩০, মুহাম্মাদসহ সকল নবীই হচ্ছেন আল্লাহর খলিফা। (Vicegerent)
নূরের তৈরি মানুষ
আল্লাহ সকল কিছুরই সৃষ্টিকর্তা। মানুষ কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর বহুমুখী ব্যবহার জ্ঞান তাদের দেয়া হয়েছে। যে মানুষকে তিনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন কিছু থেকেই তাকে সৃষ্টি করতে পারতেন। কারণ তার ক্ষমতা অসীম। মানুষের সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে আল্লাহ এবং তার রাসূল স্বয়ং বলেছেন, সকল মানুষ এবং মুহাম্মাদ (সা.) নিজেও মাটির তৈরি। আল্লাহর নবীতে বিশ্বাসী কোন মানুষ সচেতনভাবে স্বজ্ঞানে এর বিপরীত বলতে পারেন না। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো অনেক মুসলিম তাই বলে থাকেন। তারা বলছেন, মুহাম্মাদ (সা.) নূরের তৈরি। তারা কুরআনের যে কয়টি আয়াত দলিল হিসেবে পেশ করেন তা হলো, সূরা আল মায়েদার ১৫নং এবং আল আহজাবের ৪৫ নং আয়াতদ্বয়। আল মায়েদার আয়াতটি হলো: যে আহলে কিতাবগণ: তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন। কিতাবের যেসব অংশ তোমরা গোপন করতে তিনি তার থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে এসেছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ (নুরুন ও কিতাবুল মুবিন)। অর্থাৎ পাপাচারের অন্ধকার দূরীভূতকারী এবং আল্লাহর স্পষ্ট বিধানগ্রন্থ। আহজাবে বলা হয়েছে ‘হে নবী আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (‘দায়িয়ান' ওয়া ‘সেরাজাম' মুনিরা)।
নূর অর্থ আলো- জ্যোতি। মুনির অর্থ উজ্জ্বল, সেরাজ অর্থ বাতি। সেরাজাম মুনিরা অর্থ উজ্জ্বল বাতি। এ দু'টি আয়াতের সাদামাটা অর্থ হলো তোমাদের কাছে আলো এসে গেছে। আর এসে গেছে উজ্জ্বল বাতি। আলোর কাজ হলো অন্ধকার দূর করা। পবিত্র কুরআনে চাঁদের আলোকে বলা হয়েছে নূর, আর সূর্যের আলোকে বলা হয়েছে ‘দিয়া'। (সূরা ইউনুস: ১০:৫)। অন্ধকার ঘুচানোই আলোর কাজ। জাহেলিয়াতের অন্ধত্বই প্রকৃত অন্ধকার। এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, জাহেলিয়াত দূরীকরণের মহৌষধ হলো দ্বীন ইসলাম। অতএব, সূরা আল মায়েদায় বর্ণিত নূর যে সাধারণ অর্থের নয় এবং তা মুহাম্মাদ (সা.) নন বরং তা ইসলাম, এটিই যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবও বটে। আল আহযাবে বর্ণিত সেরাজাম মুনিরা (উজ্জ্বল বাতি) দ্বারা মুহাম্মাদ (সা.)-এর গুণাবলী বা দায়িত্ব বুঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে, নবী মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন সাক্ষী, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী, আল্লাহর নির্দেশের প্রতি দাওয়াতদানকারী এবং আল্লাহর অবাধ্যতাজনিত পাপাচারের অন্ধকার বিদূরিতকারী উজ্জ্বল বাতিস্বরূপ। এ আয়াতদ্বয়ের কোথাও কাউকে নূরের তৈরি বলা হয়নি।
মুহাম্মাদ (সা.)সহ সকল মানুষ মাটির তৈরি, এর সত্যতা কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা (decisively definite evidence) দ্বারা প্রমাণিত। শরীয়তের পরিভাষায় এ জাতীয় প্রমাণকে বলা হয় ‘দলিলে কাতয়ী'। এর অর্থ দালিলে কাতয়ী (অকাট্য দলিল) দ্বারা প্রমাণিত বা প্রতিষ্ঠিত কোন রায় বা সিদ্ধান্ত বা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করতে হলে অনুরূপ কোন দলিলে কাতয়ী ছাড়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মুহাম্মাদ (সা.)সহ সকল মানুষ মাটির তৈরি। আর ‘মুহাম্মাদ (সা.) নূরের তৈরি' প্রমাণ করতে হলে কুরআন সুন্নায় এ জাতীয় বাক্য স্পষ্টভাবে থাকতে হবে এবং পূর্বের বাক্যটি পরের বাক্য দ্বারা রহিত (মানসুখ/abrogated) হয়ে যা করে তার প্রমাণ থাকতে হবে। আর কিয়ামতের আগে পরেও কেউ এমন প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। নূর পবিত্র কুরআনের ২৪টি নামের একটি নাম। সেরাজাম মুনিরা মুহাম্মাদ (সা.)কে দেয়া আল্লাহর একটি স্নেহময়ী নাম- যেমনটি মোজাম্মিল, মোদাচ্ছির। পবিত্র কুরআনে কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার হয় রূপক অর্থে (Metaphoric)। যেমন হামজাতু আসাদুল্লাহ ওয়া আসাদ রাসূলিল্লাহ অর্থাৎ হামযা হচ্ছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সিংহ। এখানে সিংহ হিংস্র জানোয়ার অর্থে নয়। বরং অতীব সাহসী হিসেবে বুঝানো হয়েছে। তেমনি মুহাম্মাদ (সা.) হচ্ছেন উজ্জ্বল বাতি। অতএব, এ বাতির সংশ্রবে আসতে পারলেই দূরীভূত হয়ে যাবে যাবতীয় জাহেলিয়াত যুক্ত অন্ধকার।
নূর দ্বারা সমস্ত আসমানি কিতাব এবং ইসলামকেও বুঝানো হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চিতভাবে আমি নাযিল করেছি তাওরাত তাতে আছে হেদায়েত এবং নূর। (আল মায়েদা, ৫:৪৪, আল নিসা, ৪:৯১)। অতএব ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি এবং নূরের (কুরআন) প্রতি যা আল্লাহ নাযিল করেছেন (আল তাগাবুন, ৪:৮) নূর অর্থ আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ও বিধান গ্রন্থ। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘এটি হচ্ছে একটি কিতাব একে আমি নাযিল করেছি, যাতে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে (মিনাজ যুলুমাতে ইলান নূর) আনা যায়।' (ইবরাহীম, ১৪:১, আল ছাফ ৬১:৮)'। নূর মূলত: আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তিনি নিজেই নূর। যেমন আলোর উপর আলো যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তার আলোর প্রতি পরিচালিত করেন। (আল নূর ২৪:৩৫) (নুরুন আলা নূর-ইয়াহদি ইলা নূরিহী মান ইশায়া)।
নূরের স্পষ্ট বর্ণিত হলেও মুহাম্মাদ (সা.)কে নূরের তৈরি যারা বলেন, তারা বলে থাকেন যে, মহানবীর কোন ছায়া ছিল না, তাঁর পেশাব-পায়খানাও পবিত্র, তার পেশাব পায়খানা বের হওয়া মাত্র মাটি তা গিলে ফেলতো, তাঁকে মৃত ব্যক্তির নিকট স্বশরীরে হাজির করা হবে যাতে মৃত ব্যক্তির মান নাবিয়ুকা প্রশ্নের জবাব দানের সুবিধা হয় ইত্যাদি। এসবের চেয়েও মারাত্মক কথা হলো যেখানে আল্লাহ নিজেই নূর সেখানে মুহাম্মাদ (সাঃ)কে নূরের তৈরি বলার অর্থ হলো তিনিও নূর। আল্লাহ ও নূর, মুহাম্মাদ (সাঃ) ও নূর আল্লাহ ও শাহেদ মাশুহুম মুহাম্মাদ (সাঃ) ও শাহেদ মাশহুদ, তাহলে দুয়ের মধ্যে আর পার্থক্য থাকলো কোথায়? এ নূরতত্ত্ব আবিষ্কারকগণ আল্লাহর গুণাবলী নবীর প্রতি আরোপ করে আল্লাহ ও নবীকে একাকার করে দিচ্ছেন। যে কাজ আল্লাহর দ্বারাই একমাত্র সম্পাদনযোগ্য তা নবীর দ্বারা সম্ভব বলছেন, তাদের আচরণে, কাব্যে, গানে, সাহিত্যে। যেমন গায়াক বলেছেন, এমন কে আছে যে মুহাম্মাদের দরবার থেকে খালি হাতে ফিরে আসে? ইত্যাদি। মুহাম্মাদ (সাঃ)কে অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী বানিয়ে তাকে স্রষ্টার আসনে বসানোই এ তত্ত্ববাদীদের মূল লক্ষ্য যা শিরক ছাড়া কিছু নয়। মুসলিমদের মুশরিক বানানোর এ এক গভীর ষড়যন্ত্র-যেমনটা করেছিল পূর্ববর্তী নবীর অনুসারীরা বিশেষ করে ঈসা (আঃ)-এর ক্ষেত্রে। ঈশ্বরের সাথে তুলনা করতে হলে অথবা কাউকে ঈশ্বর বানাতে হলে তার অতি প্রাকৃতিক গুণাবলীর কথা বলতে হবে, তাকে অপরাপর মানবমন্ডলী থেকে ভিন্ন প্রকৃতির দেখাতে হবে। যেহেতু সরাসরি মুহাম্মাদ (সাঃ)কে খোদা বা খোদার পুত্র বলার সুযোগ নেই কুরআনের উপস্থিতিতে সেহেতু নূরের প্রলেপে তাকে আল্লাহ্র নূরের সাথে একাকীভূত করে মুসলিমদের মুশরিক তরিকায় নিয়ে যাওয়ার কৌশল পাতা হয়েছে ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই ইসলামের সুচতুর শত্রুরা তা করে আসছে। এ কাজে তারা সফল। হামদের স্থলে নাতে রাসূলের চর্চার। এতো গেল ইসরাইলি বা ঈসায়ী রেওয়াতের প্রতিফলন। অনুরূপভাবে কুরআন নিয়ে যারা গবেষণায় রত তাদের অনেকেও ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেন আয়োতে মাহকামা ও মোতাশাবিহার পার্থক্য নির্ণয় করতে গিয়ে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট (মোহকামাত) আর কিছু আয়াত রূপক (মোতাশাবিহাত) সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা আছে ফিতনা সৃষ্টি এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে এর মধ্যকার রূপকগুলোর অনুসরণ করে তারা। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘‘বোধশক্তি সম্পন্ন ছাড়া আর কেউ এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।’’ (আল ইমরান) নূরের নবীর ধারকদের ওয়াজ মাহফিল বক্তৃতা বিবৃতি লিখনী পর্যালোচনা-আলোচনার প্রতিটি বাক্যকে মূল্যায়ন করলে দেখা যায় যে, ইসলামের কল্যাণ নয় বরং মুসলিম সমাজে এর দ্বারা ফিতনাই ছড়ানো হচ্ছে বেশি, জান্নাতের নিকটবর্তী হওয়ার স্থলে মুসলিমদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে জাহান্নামের কাছাকাছি। স্বল্প শ্রমে জাহান্নাম ভর্তি করার এটা একটা কূটকৌশল যার ফাঁদে পা দিয়েছেন ইসলামের মূল তাৎপর্য সম্পর্কে অজ্ঞ একশ্রেণীর মুসলমান।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্পর্কে বানোয়াট কথা ও এর পরিণতি অতীব ভয়াবহ। কারণ যিনি যা নয় তাকে তা বলা, যার যে ক্ষমতা তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর গণ্য করা, সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকেও অগ্রহণযোগ্য। ইসলামে তা চরম দন্ডনীয় অপরাধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, মানুষ মাটির তৈরি-যদি সচেতনভাবে কেউ বলে তার নূরের তৈরি, এরূপ কথাকে চরম মিথ্যাচার এবং এমন ব্যক্তিকে মহা জালেম হিসেবে আখ্যায়িত করেচে আল কুরআন। (আল কুরআন, আল ছাফ: ৬১:৮)। মহানবী মুহাম্মাদ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি আমার থেকে কোন তথ্য বর্ণনা করে এবং সে জানে যে তথ্যটি মিথ্যা, এমন ব্যক্তি একজন মিথ্যাবাদী’’। মান ইহাদিসু সাইয়ান ওয়া হুয়া ইয়ালামু হিয়া কিযবুন ফাহুয়া আহাদুল কাজিব। অপর এক হাদিসে রাসূল আল্লাহ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে কোন অসত্য কথাকে হাদিস বলে চালিয়ে দেয়, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়। অপর এক হাদিসে মহানবী (সা) বলেছেন, আমার প্রশংসা করতে গিয়ে তোমরা অতিরঞ্জিত করো না। কেননা ঈসা (আঃ) এর অতি প্রশংসা করতে গিয়ে তাকে তারা আল্লাহ্র আসনে বসিয়েছিল।
যেসব ব্যক্তি বা আলেম জেনে বুঝে অথবা যাচাই বাছাই না করে মহানবী (সাঃ) যা নন, তা তার প্রতি আরোপ করেন অর্থাৎ তিনি নূরের তৈরি বলে থাকেন কোন প্রকার দলিলে কিতয়ী ছাড়াই এটা হবে একটা মিথ্যা অপবাদ। পবিত্র কুরআনের ভাষায় এরা মহা জালেম, ফেতনাবাজ ও মিথ্যাবাদী। বাস্তবতাও হচ্ছে তাই। এ জাতীয় ভদ্র লোকদের সমাবেশ থেকে অপরাপর ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও ইসলামী দলের বিরুদ্ধে কুৎসা, মিথ্যা অপবাদ অশালীন বাক্য ছড়ানো হয়। হাব-ভাবে মনে হচ্ছে এই কুৎসা রটনাই যেন হচ্ছে তাদের জীবনের একমাত্র মিশন। এই কুৎসা যদি গীবতে পরিণত হয় তা যদি মিথ্যা অপবাদে পরিণত হয়, তাহলে এর পরকালীন পরিণতি ভাববার সময়ও যেন তাদের নেই।
নবী কি ছিলেন?
মহানবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) ছিলেন নবী- শেষ নবী। তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না এটাই ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেশতা ছিলেন? যদি মানুষ হয়ে থাকে, তাহলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, সকল মানুষই আদমের সন্তান আর আদম হলো মাটির তৈরি। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘কুল্লুকুম মিন আদম ওয়া আদম মিন তরাব’’। তোমরা সকলেই আদম থেকে উদগত আর আদম হলো মাটির তৈরি। এতো গেল সকল মানুষের গঠনতত্ত্ব। প্রতিটি মানুষের গঠনতত্ত্ব বা প্রকৃতি সম্পর্কে আল্লাহর বর্ণনা নিম্নরূপ : ‘‘(হে নবী বলে দিন) নিশ্চিতভাবে আমি (আল্লাহ) মানুষকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।’’ ‘‘ইন্নি খালেকুল ইনসান মিন ত্বীন’’ (সূরা ছোয়াদ : ৩৮:৭১)।
উপরোক্ত আয়াতে মানুষ বুঝাতে আদম ও ইনছান শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষ বা মানবজাতি বুঝাতে আর একটি শব্দ পবিত্র কোরআনে ব্যবহার করা হয়েছে আর তা হলো ‘বাশার' (এরাবিক ইংলিশ ডিকশনারী, পৃঃ ৫)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘‘হে নবী বলে দিন, (ইন্নামা আনা বাশারুন মিসলুকুম) নিশ্চিতভাবে আমি তোমাদের মতই মানুষ’’ I am only a man like you (আল কাহফ : ১৮:১১০) পূর্ব যুগের সকল নবীগণও (বাশার) মানুষ ছিলেন এবং তাদের বর্জন ও অস্বীকারকারীরাও তার স্বীকার করেছেন। যেমন- এ প্রসঙ্গে আল কোরআন বলছে, তারা তাদের নবীদের অস্বীকার করে বলতো তোমরাতো আমাদের মতই মানুষ। নবীগণও বলেছেন- (ইন্না নাহনু ইল্লা বাশারুন মিস্লুকুম তবে আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা তিনি অতি দয়া প্রদর্শন করেন। (সূরা ইবরাহীম, ১৪: ১১-১২)। নবুয়াত বা কিতাব দান কোন (বাশারের) মানুষের কাজ নয় বরং এটি আল্লাহর কাজ। তিনি বলেন, যাকে আল্লাহ কিতাব দিয়েছে তার একথা বলার অধিকার নেই যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার এবাদত কর। (সূরা আল ইমরান, ৩:৭৯)
অতএব আল্লাহর ভাষায় বাশার হলো : মানুষ আর সকল মানুষই মাটির তৈরি। (সূরা আর রহমান, ৫৫:১২, আল হিজর, ১৫:২৬, আল মু'মিনুন, ২৩:১২)। সকল নবী ছিলেন বাশার। সকল মানুষ আল্লাহর খলিফা। সূরা আল বাকারা ২:৩০, মুহাম্মাদসহ সকল নবীই হচ্ছেন আল্লাহর খলিফা। (Vicegerent)
নূরের তৈরি মানুষ
আল্লাহ সকল কিছুরই সৃষ্টিকর্তা। মানুষ কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর বহুমুখী ব্যবহার জ্ঞান তাদের দেয়া হয়েছে। যে মানুষকে তিনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন কিছু থেকেই তাকে সৃষ্টি করতে পারতেন। কারণ তার ক্ষমতা অসীম। মানুষের সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে আল্লাহ এবং তার রাসূল স্বয়ং বলেছেন, সকল মানুষ এবং মুহাম্মাদ (সা.) নিজেও মাটির তৈরি। আল্লাহর নবীতে বিশ্বাসী কোন মানুষ সচেতনভাবে স্বজ্ঞানে এর বিপরীত বলতে পারেন না। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো অনেক মুসলিম তাই বলে থাকেন। তারা বলছেন, মুহাম্মাদ (সা.) নূরের তৈরি। তারা কুরআনের যে কয়টি আয়াত দলিল হিসেবে পেশ করেন তা হলো, সূরা আল মায়েদার ১৫নং এবং আল আহজাবের ৪৫ নং আয়াতদ্বয়। আল মায়েদার আয়াতটি হলো: যে আহলে কিতাবগণ: তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন। কিতাবের যেসব অংশ তোমরা গোপন করতে তিনি তার থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে এসেছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ (নুরুন ও কিতাবুল মুবিন)। অর্থাৎ পাপাচারের অন্ধকার দূরীভূতকারী এবং আল্লাহর স্পষ্ট বিধানগ্রন্থ। আহজাবে বলা হয়েছে ‘হে নবী আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (‘দায়িয়ান' ওয়া ‘সেরাজাম' মুনিরা)।
নূর অর্থ আলো- জ্যোতি। মুনির অর্থ উজ্জ্বল, সেরাজ অর্থ বাতি। সেরাজাম মুনিরা অর্থ উজ্জ্বল বাতি। এ দু'টি আয়াতের সাদামাটা অর্থ হলো তোমাদের কাছে আলো এসে গেছে। আর এসে গেছে উজ্জ্বল বাতি। আলোর কাজ হলো অন্ধকার দূর করা। পবিত্র কুরআনে চাঁদের আলোকে বলা হয়েছে নূর, আর সূর্যের আলোকে বলা হয়েছে ‘দিয়া'। (সূরা ইউনুস: ১০:৫)। অন্ধকার ঘুচানোই আলোর কাজ। জাহেলিয়াতের অন্ধত্বই প্রকৃত অন্ধকার। এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, জাহেলিয়াত দূরীকরণের মহৌষধ হলো দ্বীন ইসলাম। অতএব, সূরা আল মায়েদায় বর্ণিত নূর যে সাধারণ অর্থের নয় এবং তা মুহাম্মাদ (সা.) নন বরং তা ইসলাম, এটিই যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবও বটে। আল আহযাবে বর্ণিত সেরাজাম মুনিরা (উজ্জ্বল বাতি) দ্বারা মুহাম্মাদ (সা.)-এর গুণাবলী বা দায়িত্ব বুঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে, নবী মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন সাক্ষী, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী, আল্লাহর নির্দেশের প্রতি দাওয়াতদানকারী এবং আল্লাহর অবাধ্যতাজনিত পাপাচারের অন্ধকার বিদূরিতকারী উজ্জ্বল বাতিস্বরূপ। এ আয়াতদ্বয়ের কোথাও কাউকে নূরের তৈরি বলা হয়নি।
মুহাম্মাদ (সা.)সহ সকল মানুষ মাটির তৈরি, এর সত্যতা কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা (decisively definite evidence) দ্বারা প্রমাণিত। শরীয়তের পরিভাষায় এ জাতীয় প্রমাণকে বলা হয় ‘দলিলে কাতয়ী'। এর অর্থ দালিলে কাতয়ী (অকাট্য দলিল) দ্বারা প্রমাণিত বা প্রতিষ্ঠিত কোন রায় বা সিদ্ধান্ত বা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করতে হলে অনুরূপ কোন দলিলে কাতয়ী ছাড়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মুহাম্মাদ (সা.)সহ সকল মানুষ মাটির তৈরি। আর ‘মুহাম্মাদ (সা.) নূরের তৈরি' প্রমাণ করতে হলে কুরআন সুন্নায় এ জাতীয় বাক্য স্পষ্টভাবে থাকতে হবে এবং পূর্বের বাক্যটি পরের বাক্য দ্বারা রহিত (মানসুখ/abrogated) হয়ে যা করে তার প্রমাণ থাকতে হবে। আর কিয়ামতের আগে পরেও কেউ এমন প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। নূর পবিত্র কুরআনের ২৪টি নামের একটি নাম। সেরাজাম মুনিরা মুহাম্মাদ (সা.)কে দেয়া আল্লাহর একটি স্নেহময়ী নাম- যেমনটি মোজাম্মিল, মোদাচ্ছির। পবিত্র কুরআনে কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার হয় রূপক অর্থে (Metaphoric)। যেমন হামজাতু আসাদুল্লাহ ওয়া আসাদ রাসূলিল্লাহ অর্থাৎ হামযা হচ্ছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সিংহ। এখানে সিংহ হিংস্র জানোয়ার অর্থে নয়। বরং অতীব সাহসী হিসেবে বুঝানো হয়েছে। তেমনি মুহাম্মাদ (সা.) হচ্ছেন উজ্জ্বল বাতি। অতএব, এ বাতির সংশ্রবে আসতে পারলেই দূরীভূত হয়ে যাবে যাবতীয় জাহেলিয়াত যুক্ত অন্ধকার।
নূর দ্বারা সমস্ত আসমানি কিতাব এবং ইসলামকেও বুঝানো হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চিতভাবে আমি নাযিল করেছি তাওরাত তাতে আছে হেদায়েত এবং নূর। (আল মায়েদা, ৫:৪৪, আল নিসা, ৪:৯১)। অতএব ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি এবং নূরের (কুরআন) প্রতি যা আল্লাহ নাযিল করেছেন (আল তাগাবুন, ৪:৮) নূর অর্থ আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ও বিধান গ্রন্থ। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘এটি হচ্ছে একটি কিতাব একে আমি নাযিল করেছি, যাতে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে (মিনাজ যুলুমাতে ইলান নূর) আনা যায়।' (ইবরাহীম, ১৪:১, আল ছাফ ৬১:৮)'। নূর মূলত: আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তিনি নিজেই নূর। যেমন আলোর উপর আলো যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তার আলোর প্রতি পরিচালিত করেন। (আল নূর ২৪:৩৫) (নুরুন আলা নূর-ইয়াহদি ইলা নূরিহী মান ইশায়া)।
নূরের স্পষ্ট বর্ণিত হলেও মুহাম্মাদ (সা.)কে নূরের তৈরি যারা বলেন, তারা বলে থাকেন যে, মহানবীর কোন ছায়া ছিল না, তাঁর পেশাব-পায়খানাও পবিত্র, তার পেশাব পায়খানা বের হওয়া মাত্র মাটি তা গিলে ফেলতো, তাঁকে মৃত ব্যক্তির নিকট স্বশরীরে হাজির করা হবে যাতে মৃত ব্যক্তির মান নাবিয়ুকা প্রশ্নের জবাব দানের সুবিধা হয় ইত্যাদি। এসবের চেয়েও মারাত্মক কথা হলো যেখানে আল্লাহ নিজেই নূর সেখানে মুহাম্মাদ (সাঃ)কে নূরের তৈরি বলার অর্থ হলো তিনিও নূর। আল্লাহ ও নূর, মুহাম্মাদ (সাঃ) ও নূর আল্লাহ ও শাহেদ মাশুহুম মুহাম্মাদ (সাঃ) ও শাহেদ মাশহুদ, তাহলে দুয়ের মধ্যে আর পার্থক্য থাকলো কোথায়? এ নূরতত্ত্ব আবিষ্কারকগণ আল্লাহর গুণাবলী নবীর প্রতি আরোপ করে আল্লাহ ও নবীকে একাকার করে দিচ্ছেন। যে কাজ আল্লাহর দ্বারাই একমাত্র সম্পাদনযোগ্য তা নবীর দ্বারা সম্ভব বলছেন, তাদের আচরণে, কাব্যে, গানে, সাহিত্যে। যেমন গায়াক বলেছেন, এমন কে আছে যে মুহাম্মাদের দরবার থেকে খালি হাতে ফিরে আসে? ইত্যাদি। মুহাম্মাদ (সাঃ)কে অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী বানিয়ে তাকে স্রষ্টার আসনে বসানোই এ তত্ত্ববাদীদের মূল লক্ষ্য যা শিরক ছাড়া কিছু নয়। মুসলিমদের মুশরিক বানানোর এ এক গভীর ষড়যন্ত্র-যেমনটা করেছিল পূর্ববর্তী নবীর অনুসারীরা বিশেষ করে ঈসা (আঃ)-এর ক্ষেত্রে। ঈশ্বরের সাথে তুলনা করতে হলে অথবা কাউকে ঈশ্বর বানাতে হলে তার অতি প্রাকৃতিক গুণাবলীর কথা বলতে হবে, তাকে অপরাপর মানবমন্ডলী থেকে ভিন্ন প্রকৃতির দেখাতে হবে। যেহেতু সরাসরি মুহাম্মাদ (সাঃ)কে খোদা বা খোদার পুত্র বলার সুযোগ নেই কুরআনের উপস্থিতিতে সেহেতু নূরের প্রলেপে তাকে আল্লাহ্র নূরের সাথে একাকীভূত করে মুসলিমদের মুশরিক তরিকায় নিয়ে যাওয়ার কৌশল পাতা হয়েছে ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই ইসলামের সুচতুর শত্রুরা তা করে আসছে। এ কাজে তারা সফল। হামদের স্থলে নাতে রাসূলের চর্চার। এতো গেল ইসরাইলি বা ঈসায়ী রেওয়াতের প্রতিফলন। অনুরূপভাবে কুরআন নিয়ে যারা গবেষণায় রত তাদের অনেকেও ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেন আয়োতে মাহকামা ও মোতাশাবিহার পার্থক্য নির্ণয় করতে গিয়ে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট (মোহকামাত) আর কিছু আয়াত রূপক (মোতাশাবিহাত) সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা আছে ফিতনা সৃষ্টি এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে এর মধ্যকার রূপকগুলোর অনুসরণ করে তারা। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘‘বোধশক্তি সম্পন্ন ছাড়া আর কেউ এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।’’ (আল ইমরান) নূরের নবীর ধারকদের ওয়াজ মাহফিল বক্তৃতা বিবৃতি লিখনী পর্যালোচনা-আলোচনার প্রতিটি বাক্যকে মূল্যায়ন করলে দেখা যায় যে, ইসলামের কল্যাণ নয় বরং মুসলিম সমাজে এর দ্বারা ফিতনাই ছড়ানো হচ্ছে বেশি, জান্নাতের নিকটবর্তী হওয়ার স্থলে মুসলিমদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে জাহান্নামের কাছাকাছি। স্বল্প শ্রমে জাহান্নাম ভর্তি করার এটা একটা কূটকৌশল যার ফাঁদে পা দিয়েছেন ইসলামের মূল তাৎপর্য সম্পর্কে অজ্ঞ একশ্রেণীর মুসলমান।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্পর্কে বানোয়াট কথা ও এর পরিণতি অতীব ভয়াবহ। কারণ যিনি যা নয় তাকে তা বলা, যার যে ক্ষমতা তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর গণ্য করা, সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকেও অগ্রহণযোগ্য। ইসলামে তা চরম দন্ডনীয় অপরাধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, মানুষ মাটির তৈরি-যদি সচেতনভাবে কেউ বলে তার নূরের তৈরি, এরূপ কথাকে চরম মিথ্যাচার এবং এমন ব্যক্তিকে মহা জালেম হিসেবে আখ্যায়িত করেচে আল কুরআন। (আল কুরআন, আল ছাফ: ৬১:৮)। মহানবী মুহাম্মাদ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি আমার থেকে কোন তথ্য বর্ণনা করে এবং সে জানে যে তথ্যটি মিথ্যা, এমন ব্যক্তি একজন মিথ্যাবাদী’’। মান ইহাদিসু সাইয়ান ওয়া হুয়া ইয়ালামু হিয়া কিযবুন ফাহুয়া আহাদুল কাজিব। অপর এক হাদিসে রাসূল আল্লাহ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে কোন অসত্য কথাকে হাদিস বলে চালিয়ে দেয়, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়। অপর এক হাদিসে মহানবী (সা) বলেছেন, আমার প্রশংসা করতে গিয়ে তোমরা অতিরঞ্জিত করো না। কেননা ঈসা (আঃ) এর অতি প্রশংসা করতে গিয়ে তাকে তারা আল্লাহ্র আসনে বসিয়েছিল।
যেসব ব্যক্তি বা আলেম জেনে বুঝে অথবা যাচাই বাছাই না করে মহানবী (সাঃ) যা নন, তা তার প্রতি আরোপ করেন অর্থাৎ তিনি নূরের তৈরি বলে থাকেন কোন প্রকার দলিলে কিতয়ী ছাড়াই এটা হবে একটা মিথ্যা অপবাদ। পবিত্র কুরআনের ভাষায় এরা মহা জালেম, ফেতনাবাজ ও মিথ্যাবাদী। বাস্তবতাও হচ্ছে তাই। এ জাতীয় ভদ্র লোকদের সমাবেশ থেকে অপরাপর ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও ইসলামী দলের বিরুদ্ধে কুৎসা, মিথ্যা অপবাদ অশালীন বাক্য ছড়ানো হয়। হাব-ভাবে মনে হচ্ছে এই কুৎসা রটনাই যেন হচ্ছে তাদের জীবনের একমাত্র মিশন। এই কুৎসা যদি গীবতে পরিণত হয় তা যদি মিথ্যা অপবাদে পরিণত হয়, তাহলে এর পরকালীন পরিণতি ভাববার সময়ও যেন তাদের নেই।
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=102799
{ 2 } মানুষ কি নুর দিয়ে তৈরী ? না, মাটির তৈরী ! 2
বিদআতীদের নিকট আমার আরেকটি প্রশ্নঃ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদম সন্তানের বাইরে না ভিতরে? যদি বলে বাইরে তবে তো তার সাথে কথা বলা অনর্থক। আর যদি বলে যে, তিনিও আদম সন্তানের মধ্যে গণ্য, তখন আমরা বলব আদম (আলাইহিস্ সালাম) কিসের তৈরী, নুরের না মাটির?
যদি বলে ‘মাটির তৈরী’ আর এটা বলতে তারা বাধ্য- তাহলে তাদের নিকট প্রশ্নঃ মাটির তৈরী পিতার সন্তান কিভাবে নূরের তৈরী হল?
তাদের নিকট আরেকটি প্রশ্নঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহান আল্লাহর নিম্ন বর্ণিত বাণীর বাইরে না ভিতরেঃ ‘এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব। (সূরা ত্বো-হা: ৫৫)
যদি তারা স্বীকার করে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)ও উক্ত আয়াতের আওতাভুক্ত তাহলে তো তারা স্বীকার করেই নিল যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মাটির তৈরী, আর তা স্বীকার করাই ঈমানের দাবী। আর যদি বলে যে, না তিনি উক্ত আয়াতের আওতাভুক্ত নন তবে তো তাদের সাথে আর কোন কথাই নেই। কারণ তারা কুরআন ও হাদীছ অস্বীকারকারী বলে গণ্য হবে, যার ফলে কুফরী ফাৎওয়ার শিকার হবে।
আসলেই পৃথিবীতে যত বিদআতী রয়েছে, তারা সকলেই স্থূল বিবেকের অধিকারী। তারা সকলেই কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সঠিক মর্মবাণী অনুধাবন করতে ব্যর্থ, তাই তাদের এ অবস্থা যে, তারা কুরআন ও হাদীছের বিরোধিতায় লিপ্ত রয়েছে। তারা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দেখেও আমল করে না। বরং ইহুদীদের মত তার বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।
তাদেরকে আরেকটি প্রশ্নঃ নূরের তৈরী ব্যক্তির সন্তান-সন্তনি কিসের তৈরী? যেমন আমাদের নবী যদি নূরের তৈরী হন, তবে তার সন্তান-সন্ততি যেমন-ফাতেমা, যায়নাব, রুকাআইয়া, উম্মুকুলছুম এবং ক্বাসেম ও ইবরাহীম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁরা তাহলে কিসের তৈরী? তাদের যারা সন্তান যেমন ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনাহা)-এর সন্তান হাসান ও হুসাইন-তারা কিসের তৈরী?
যদি বলেঃ তারা মাটির তৈরী, নূরের তৈরী নন, তাহলে আমরা বলবঃ নূরের তৈরী ব্যক্তির সন্তান মাটির তৈরী কোন্ যুক্তিতে হবে? যিনি নূরের তৈরী হবেন (তার সন্তান-সন্ততি হলে)তার সন্তান-সন্ততিও নূরের তৈরী হবে এটাইতো স্বাভাবিক, তাহলে তারা নূরের তৈরী হলেন না কেন? আর যদি তারা বলে যে, নবীর মত তার সন্তান-সন্ততি যেমন-ফাতেমা, যায়নাব, রুকাআইয়া, উম্মুকুলছুম এবং ক্বাসেম ও ইবরাহীম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁরাও নূরের তৈরী! তাদের যারা সন্তান যেমন ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সন্তান হাসান ও হুসাইন-তাঁরাও নূরের তৈরী? যদি এমনটি তারা বলে তাহলে তো তাদের সঙ্গে আর কথাই নেই, কারণ তারা এমনই একটা কথা বলেছে যার মিথ্যাচারিতা ও ভিত্তিহীনতা একটা পাগলের নিকটও সুস্পষ্ট। ঐরূপ কথাতে বিবেকবান তো দূরের কথা পাগলরাই অট্টহাসি দিবে। কারণ একথা সর্বজন বিদিত যে বনী আদমের প্রজন্ম হিসাবে তাঁরাও সৃষ্টিগত দিক থেকে মাটির তৈরী।
তাই বলি বন্ধুগণ! বিদআতী দর্শন পরিত্যাগ করে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে আসুন, এখনও সময় আছে হেদায়াত লাভ করার। আল্লাহ আপনাদেরকে সুমতি দিন। কুরআন ও ছহীহ হাদীছের রাজ পথে পরিচালিত করুন।
(খ) ‘নবী সৃষ্টিগত দিক থেকে আমাদের মত মানুষ’ তবে তিনি হলেন অসাধারন মানুষ , কোন মানুষর সাথে তুলনাই করার মত নয় ৷
মর্মে হাদীছ থেকে প্রমাণঃ
১নং হাদীছঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেনঃ তোমরা সকলেই আদমের সন্তান, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। (বায্ যার প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল জামে’ হা/৪৫৬৮)।
২নং হাদীছঃ ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে। (বুখারী, ছালাত অধ্যায়, হা/৩৮৬, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯)
)।
‘মা আয়েশাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন। তিনি তার কাপড় সেলাই করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন। (আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০, মুখতাতাছার শামায়েলে তিরমিযী, হা/২৯৩, ছহীহাহ, হা/৬৭১)
*নবীকে যেসব দলীলের ভিত্তিতে বিদআতীরা নূরের সৃষ্টি প্রমাণ করতে চায় সেগুলি পর্যালোচনাসহ নিম্নে পরিবেশিত হলঃ বিদআতীরা নবীকে নূর প্রমাণ করতে যেয়ে দলীল স্বরূপ কুরআন থেকে কতিপয় আয়াত পেশ করে থাকে। যেমন,
মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’(সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬)।
অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি। আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। কাজেই একথা বলাই বাহুল্য যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম)সৃষ্টিগতভাবে নয়, বরং গুণগতভাবে ‘নূর’ (সৃষ্টিগতভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) আব্দুল্লাহ ও আমেনার ঔরষজাত সন্তান এটা কে না জানে? এমনকি বিদআতীরাও এই বাস্তব সত্যকে স্বীকার করে থাকে।
তবে যেহেতু তারা ‘নূর পার্টি’ তাই বলে থাকেঃ আব্দুল্লাহ ও আমেনার মিলনের মাধ্যমে তিনি আসেন নি, বরং আব্দুল্লাহর কপালে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) নূর আকারে ছিলেন, তিনি আমেনাকে চুম্বন করলে সেই নূর তার উদরে চলে যায়।
এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (সূরা আল্ আহযাব: ৪৫-৪৬)
নবীকে উক্ত আয়াতে যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট। নাকি বিদআতীরা বলবে ‘উনি আসলেই সৃষ্টিগত দিক থেকে উজ্জ্বল চেরাগ ছিলেন’! তার থেকে আগুণ নিয়ে মানুষ নিজেদের রান্না-বান্নার কাজ করতেন, তাদের চুলায় আগুণ ধরাতেন, বাড়ির চেরাগ জ্বালাতেন…? নাউযুবিল্লাহ
মহান আল্লাহ আল কুরআনকেও ‘নূর-জ্যোতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি ঈমান আনয়ন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরাহ আত্ তাগাবুন:৮)
অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম। (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন। জানিনা নূর পার্টিরা কুরআনের ক্ষেত্রে কী বলবে। নাকি বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি! অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল মুসলিমদের বিশ্বাস। কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী, এই জঘণ্য আক্বীদাহ সর্ব প্রথম ইসলামের ঘোরতর বিদআতী দল মুতাযিলারা অবলম্বন করে। আশা করি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এই বিদআতীরা ঐ বিদআতের সহমত হবে না। বরং তারাও বলবে যে, কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি নয়, বরং তা আল্লাহর বাণী..।
অতএব, কুরআনকে নূর বলার পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়, তবে রাসূলকে নূরের সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে? কারণ মহান আল্লাহ নবীকে যেমন ‘নূর’ বলেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র আল কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন। অতএব কুরআনে করীম সম্পর্কে নূর পার্টিদের যা উত্তর আমাদেরও ঠিক সেটিই উত্তর ‘নবী করীম’ সম্পর্কে। আল্লাহ সকল পথভ্রষ্টদেরকে হিদায়াত দান করুন-আমীন।
যদি বলে ‘মাটির তৈরী’ আর এটা বলতে তারা বাধ্য- তাহলে তাদের নিকট প্রশ্নঃ মাটির তৈরী পিতার সন্তান কিভাবে নূরের তৈরী হল?
তাদের নিকট আরেকটি প্রশ্নঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহান আল্লাহর নিম্ন বর্ণিত বাণীর বাইরে না ভিতরেঃ ‘এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব। (সূরা ত্বো-হা: ৫৫)
যদি তারা স্বীকার করে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)ও উক্ত আয়াতের আওতাভুক্ত তাহলে তো তারা স্বীকার করেই নিল যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মাটির তৈরী, আর তা স্বীকার করাই ঈমানের দাবী। আর যদি বলে যে, না তিনি উক্ত আয়াতের আওতাভুক্ত নন তবে তো তাদের সাথে আর কোন কথাই নেই। কারণ তারা কুরআন ও হাদীছ অস্বীকারকারী বলে গণ্য হবে, যার ফলে কুফরী ফাৎওয়ার শিকার হবে।
আসলেই পৃথিবীতে যত বিদআতী রয়েছে, তারা সকলেই স্থূল বিবেকের অধিকারী। তারা সকলেই কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সঠিক মর্মবাণী অনুধাবন করতে ব্যর্থ, তাই তাদের এ অবস্থা যে, তারা কুরআন ও হাদীছের বিরোধিতায় লিপ্ত রয়েছে। তারা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দেখেও আমল করে না। বরং ইহুদীদের মত তার বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।
তাদেরকে আরেকটি প্রশ্নঃ নূরের তৈরী ব্যক্তির সন্তান-সন্তনি কিসের তৈরী? যেমন আমাদের নবী যদি নূরের তৈরী হন, তবে তার সন্তান-সন্ততি যেমন-ফাতেমা, যায়নাব, রুকাআইয়া, উম্মুকুলছুম এবং ক্বাসেম ও ইবরাহীম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁরা তাহলে কিসের তৈরী? তাদের যারা সন্তান যেমন ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনাহা)-এর সন্তান হাসান ও হুসাইন-তারা কিসের তৈরী?
যদি বলেঃ তারা মাটির তৈরী, নূরের তৈরী নন, তাহলে আমরা বলবঃ নূরের তৈরী ব্যক্তির সন্তান মাটির তৈরী কোন্ যুক্তিতে হবে? যিনি নূরের তৈরী হবেন (তার সন্তান-সন্ততি হলে)তার সন্তান-সন্ততিও নূরের তৈরী হবে এটাইতো স্বাভাবিক, তাহলে তারা নূরের তৈরী হলেন না কেন? আর যদি তারা বলে যে, নবীর মত তার সন্তান-সন্ততি যেমন-ফাতেমা, যায়নাব, রুকাআইয়া, উম্মুকুলছুম এবং ক্বাসেম ও ইবরাহীম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁরাও নূরের তৈরী! তাদের যারা সন্তান যেমন ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সন্তান হাসান ও হুসাইন-তাঁরাও নূরের তৈরী? যদি এমনটি তারা বলে তাহলে তো তাদের সঙ্গে আর কথাই নেই, কারণ তারা এমনই একটা কথা বলেছে যার মিথ্যাচারিতা ও ভিত্তিহীনতা একটা পাগলের নিকটও সুস্পষ্ট। ঐরূপ কথাতে বিবেকবান তো দূরের কথা পাগলরাই অট্টহাসি দিবে। কারণ একথা সর্বজন বিদিত যে বনী আদমের প্রজন্ম হিসাবে তাঁরাও সৃষ্টিগত দিক থেকে মাটির তৈরী।
তাই বলি বন্ধুগণ! বিদআতী দর্শন পরিত্যাগ করে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে আসুন, এখনও সময় আছে হেদায়াত লাভ করার। আল্লাহ আপনাদেরকে সুমতি দিন। কুরআন ও ছহীহ হাদীছের রাজ পথে পরিচালিত করুন।
(খ) ‘নবী সৃষ্টিগত দিক থেকে আমাদের মত মানুষ’ তবে তিনি হলেন অসাধারন মানুষ , কোন মানুষর সাথে তুলনাই করার মত নয় ৷
মর্মে হাদীছ থেকে প্রমাণঃ
১নং হাদীছঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেনঃ তোমরা সকলেই আদমের সন্তান, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। (বায্ যার প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল জামে’ হা/৪৫৬৮)।
২নং হাদীছঃ ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে। (বুখারী, ছালাত অধ্যায়, হা/৩৮৬, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯)
)।
‘মা আয়েশাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন। তিনি তার কাপড় সেলাই করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন। (আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০, মুখতাতাছার শামায়েলে তিরমিযী, হা/২৯৩, ছহীহাহ, হা/৬৭১)
*নবীকে যেসব দলীলের ভিত্তিতে বিদআতীরা নূরের সৃষ্টি প্রমাণ করতে চায় সেগুলি পর্যালোচনাসহ নিম্নে পরিবেশিত হলঃ বিদআতীরা নবীকে নূর প্রমাণ করতে যেয়ে দলীল স্বরূপ কুরআন থেকে কতিপয় আয়াত পেশ করে থাকে। যেমন,
মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’(সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬)।
অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি। আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। কাজেই একথা বলাই বাহুল্য যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম)সৃষ্টিগতভাবে নয়, বরং গুণগতভাবে ‘নূর’ (সৃষ্টিগতভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) আব্দুল্লাহ ও আমেনার ঔরষজাত সন্তান এটা কে না জানে? এমনকি বিদআতীরাও এই বাস্তব সত্যকে স্বীকার করে থাকে।
তবে যেহেতু তারা ‘নূর পার্টি’ তাই বলে থাকেঃ আব্দুল্লাহ ও আমেনার মিলনের মাধ্যমে তিনি আসেন নি, বরং আব্দুল্লাহর কপালে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) নূর আকারে ছিলেন, তিনি আমেনাকে চুম্বন করলে সেই নূর তার উদরে চলে যায়।
এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (সূরা আল্ আহযাব: ৪৫-৪৬)
নবীকে উক্ত আয়াতে যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট। নাকি বিদআতীরা বলবে ‘উনি আসলেই সৃষ্টিগত দিক থেকে উজ্জ্বল চেরাগ ছিলেন’! তার থেকে আগুণ নিয়ে মানুষ নিজেদের রান্না-বান্নার কাজ করতেন, তাদের চুলায় আগুণ ধরাতেন, বাড়ির চেরাগ জ্বালাতেন…? নাউযুবিল্লাহ
মহান আল্লাহ আল কুরআনকেও ‘নূর-জ্যোতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি ঈমান আনয়ন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরাহ আত্ তাগাবুন:৮)
অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম। (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন। জানিনা নূর পার্টিরা কুরআনের ক্ষেত্রে কী বলবে। নাকি বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি! অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল মুসলিমদের বিশ্বাস। কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী, এই জঘণ্য আক্বীদাহ সর্ব প্রথম ইসলামের ঘোরতর বিদআতী দল মুতাযিলারা অবলম্বন করে। আশা করি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এই বিদআতীরা ঐ বিদআতের সহমত হবে না। বরং তারাও বলবে যে, কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি নয়, বরং তা আল্লাহর বাণী..।
অতএব, কুরআনকে নূর বলার পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়, তবে রাসূলকে নূরের সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে? কারণ মহান আল্লাহ নবীকে যেমন ‘নূর’ বলেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র আল কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন। অতএব কুরআনে করীম সম্পর্কে নূর পার্টিদের যা উত্তর আমাদেরও ঠিক সেটিই উত্তর ‘নবী করীম’ সম্পর্কে। আল্লাহ সকল পথভ্রষ্টদেরকে হিদায়াত দান করুন-আমীন।
{ 3 }
মানুষ কি নুর দিয়ে তৈরী ? না, মাটির তৈরী ! 3
১)
মানব সৃষ্টির প্রথম মানুষ আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) সহ সকল মানুষ মাটি দ্বারা
সৃষ্টি এ মর্মে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেনঃ-
১,১
পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির
মানুষ সৃষ্টি করব
(ছোয়াদ-৭১)
১,২
আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে
মাটি
দ্বারা সৃষ্টি একটি মানব জাতির পত্তন করব
(হিজর-২৮)
১,৩
আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা
থেকে উদগত করেছেন (নূহ্-১৭)
১,৪
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা
থেকে
(আর রাহ্মান-১৪)
১,৫
আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি
দ্বারা সৃষ্টি করেছি (হিজর-২৬)
১,৬ ‘এ মাটি থেকেই আমি
তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে
ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব (সূরা ত্বো-হা:
৫৫)
১,৭
আমি মানুষকে মাটির
সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি
। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি । এরপর আমি
শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত
করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিওকে মাংস দ্বারা
আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি । নিপুণতম সৃষ্টকর্তা আল্লাহ
কত কল্যাণময় । এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে । অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত
হবে (মু’মিনুন-১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬)
১,৮
আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা
থেকে সৃষ্টি করেছি
। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও
অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে । আর আমি এক
নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু
অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর । তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ
মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌঁছানো হয়,
যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না (হজ্ব-৫)
১,৯
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে
(দাহ্র-২)
১,১০
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে (আলাক-১)
১,১১ হাদীছঃ নবী (সাঃ)
বলেনঃ তোমরা সকলেই আদমের সন্তান, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি
(বায্ যার
প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল জামে’ হা/৪৫৬৮)
১,১২
স্বয়ং নবী বলেছেনঃ মানুষ
মাটির তৈরী,
ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী (মুসলিম, যুহদ ও রাক্বায়িক্ব অধ্যায়,
হা/৫৩৪)
২)
আল্লাহ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তারাও (মাটির তৈরী) মানুষ ছিলেনঃ-
২,১
“তোমার পূর্বেও জনপদ বাসীদের মধ্যে [নবী হিসেবে] প্রেরণ
করেছিলাম মানুষকে,
যাদের আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম”-সূরা ইউসুফঃ ১০৯
২,২
“তোমাদের পূর্বে আমি যত রাসুল প্রেরণ করেছি তারা
সকলেই ছিলো মানুষ
যারা খাদ্য গ্রহণ করতো, এবং রাস্তায় চলাফেরা করতো । বস্তুতঃ আমি তোমাদের একজনকে
অন্যজনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি । [হে মোমেনগণ] তোমরা কি ধৈর্য্য ধারণ করবে ?
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ [সব কিছু] দেখেন”-সূরা ফুরকানঃ ২০
২,৩ “তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ, যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম । যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহ্র] বাণীকে ধারণ করে থাকে”-সূরা আম্বিয়াঃ ০৭
২,৩ “তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ, যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম । যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহ্র] বাণীকে ধারণ করে থাকে”-সূরা আম্বিয়াঃ ০৭
২,৪
“তিনিই জেন্টাইল মানুষের জন্য তাদেরই
মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছেন,
যে তাদের নিকট আয়াত সমূহ আবৃত্তি করে, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও
প্রজ্ঞা । যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিলো সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে”-সূরা জুমুয়াহঃ
২
২,৫
হে পরওয়ারদেগার! তাদের
মধ্য থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন-
যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা
দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন (বাক্বারা-১২৯)
২,৬
তাদেরই
একজনকে তাদের মধ্যে রসুলরূপে প্রেরণ করেছিলাম
এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর (মু’মিনুন-৩২)
২,৭
“তোমাদের
মধ্য থেকেই তোমাদের
প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছি, যে তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে, তোমাদের
পরিশুদ্ধ করে, এবং তোমাদের কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং নূতন জ্ঞান শিক্ষা দেয়”-সূরা
বাকারাঃ ১৫১
২,৮
“এখন তোমাদের
মধ্যে থেকেই
তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে”-সূরা তাওবাঃ ১২৮
২,৯
তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমরাও
তোমাদের মত মানুষ,
কিন্তু আল্লাহ্ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছা, অনুগ্রহ করেন
(ইবরাহীম-১১)
২,১০
‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই
মধ্য থেকে
একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন,
তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা
ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল (সূরাহ আলে ইমরানঃ
১৬৪)
৩)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও (মাটির তৈরী) মানুষঃ-
====================================
====================================
৩,১
“তুমি বল, "আমি তো তোমাদের
মত একজন মানুষই
, ওহীর মাধ্যমে আমাকে প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ্ ।
সুতারাং তাঁর দিকে সত্য পথে চল; এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর”-সূরা হামীম
সিজদাহঃ ০৬
৩,২
“বল, "আমি
তোমাদের মত একজন মানুষ;
[কিন্তু] আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় ।
সুতারাং যে তাহার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে, এবং প্রভুর এবাদতে
কাউকে শরীক না করে” -সূরা কাহফঃ ১১০
৩,৩
“বল:" আমার প্রভু মহিমান্বিত! আমি তো হচ্ছি কেবল
একজন
মানুষ,
একজন রাসুল মাত্র”-বনী ইসরাইলঃ ৯৩
৩,৪
“এটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্য্যের বিষয় যে, আমি তাদেরই
একজনের নিকট
আমার ওহী প্রেরণ করেছি ?”-সূরা ইউনুসঃ ০২
৪)
ইবলীস ও জানে মানুষ মাটির তৈরীঃ-
৪,১
(ইবলীস) বললঃ আমি এমন নই যে, একজন
মানবকে সেজদা করব, যাকে
আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি
দ্বারা সৃষ্টি করেছেন (হিজর-৩৩)
৪,২
আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল ? সে
বললঃ আমি আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ । আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর
তাকে
সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা ।
বললেনঃ তুই এখান থেকে নেমে যা । এখানে অহঙ্কার করার অধিকার তোর নাই । অতএব তুই বের
হয়ে যা । নিশ্চয় তুই হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত (সূরাহ আল্ আরাফঃ
১১-১৩)
৫)
কাফেররাও ঈমান আনে নাই নবী রাসুলগণ (মাটির তৈরী) মানুষ বলেঃ-
৫,১
“তারা আশ্চর্য হয় যে, তাদের
মধ্যে থেকেই তাদের
নিকট একজন সতর্ককারী এসেছে । সুতরাং অবিশ্বাসীরা বলে, "এটা তো বড় আশ্চর্য ব্যাপার
!”-সূরা কাফঃ ০২
৫,২
“এরা আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, তাদের
মধ্য থেকেই
তাদের জন্য একজন সর্তককারী এসেছে এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে," এ তো একজন যাদুকর ,
মিথ্যা বলছে”-সূরা ছোয়াদঃ ০৪
৫,৩
আল্লাহ কি মানুষকে
পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন
? তাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে (বনী
ইস্রাঈল-৯৪)
৫,৪
“তাদের অন্তর [তা নিয়ে] তুচ্ছ বিষয়ের মত খেলা করে । পাপীরা তাদের গোপন পরামর্শ
লুকিয়ে রেখে [বলে]" সে
কি তোমাদের মত একজন মানুষ নয়
? তোমরা কি দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে ?”-সূরা আম্বিয়াঃ ০৩
৫,৫
“এবং তারা বলে, "এ কি রকম রসুল, যে
[মানুষের
মত]
আহার করে এবং রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে ? তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো
না, যে তাঁর সাথে থাকতো সতর্ককারীরূপে ? অথবা তাকে ধন ভান্ডার দেয়া হয় নাই কেন
অথবা উপভোগের জন্য তার কোন বাগান নাই কেন ?" দুষ্ট লোকেরা বলে, "তোমরা তো এক
যাদুগ্রস্থ লোকেরই অনুসরণ করছো"-সূরা ফুরকানঃ ০৭-০৮
৫,৬
“কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদের প্রধাণগণ
বলেছিলো, "আমরা তো তোমাকে আমাদের মত মানুষ
ব্যতীত আর কিছু দেখছি না
। আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের, অপরিপক্ক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন, তারা ব্যতীত আর
কাউকে তোমাকে অনুসরণ করতে দেখছি না । আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি
না, বরং আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি”- সূরা হুদঃ ২৭
৫,৭
কাফেররা বললঃ এতো
আমাদের মতই মানুষ
বৈ নয় , তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে । যদি
তোমরা তোমাদের মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে
(মু’মিনুন-৩৩, ৩৪)
৫,৮
তোমরা তো আমাদের
মতই মানুষ ।
তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাও, যার ইবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত
(ইবরাহীম-১০)
৬)
‘নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক থেকে মাটির তৈরী মানুষ’ মর্মে হাদীছ থেকে
প্রমাণঃ
৬,১ ‘তিনি আরো বলেনঃ
আমি তো
একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে
যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে (বুখারী, ছালাত অধ্যায়,
হা/৩৮৬, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯)
৬,২ ‘তিনি আরো বলেনঃ
আমি তো
একজন মানুষ, আমার নিকট বাদী আসে,
সম্ভবত তোমাদের একজন অপর জন অপেক্ষা বেশি বাকপটু হবে, তাই আমি ধারণা করে নিতে পারি
যে সে সত্য বলেছে কাজেই সে মতে আমি তার পক্ষে ফায়ছালা দিয়ে দিতে পারি । তাই আমি
যদি তার জন্য কোন মুসলিমের হক ফায়ছালা হিসাবে দিয়ে থাকি, তাহলে সেটা একটা
জাহান্নামের টুকরা মাত্র । অতএব সে তা গ্রহণ করুক বা বর্জন করুক (বুখারী, মাযালিম
অধ্যায়, হা/২২৭৮)
৬,৩ ‘মা আয়েশাকে যখন
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন ?
তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত
একজন মানুষ ছিলেন । তিনি তার কাপড় সেলাই
করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন (আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল
আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০,
মুখতাতাছার শামায়েলে তিরমিযী, হা/২৯৩, ছহীহাহ, হা/৬৭১)
৭)
পর্যালোচনা
নবী
(সাঃ) কে আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আঃ) থেকে স্বাভাবিক মানুষের যে নিয়ম আল্লাহ
করেছেন সে পদ্ধতিতেই আবদুল্লাহর ওরসে মা আমিনার গর্ভে এ পৃথিবীতে আগমন ঘটিয়েছেন
।
মহান
আল্লাহ একাধিক স্থানে বলেছেন যে নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক
থেকে
بشر
তথা
আমাদের
মতই একজন মানুষ । তবে সাধা
রন মানুষ নয় বরং অসাধারন মানুষ ৷
৭,১ প্রশ্নঃ নবী
মুহাম্মাদ (সাঃ) আদম সন্তানের বাইরে না ভিতরে ? যদি বলে বাইরে তবে তো তার সাথে কথা
বলা অনর্থক । কারন
মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্যান্য মানুষের মতই আদম সন্তান ছিলেন
(উপরের
১,১-১,১২ দ্রঃ)
।
আর যদি বলে যে, তিনিও
আদম সন্তানের মধ্যে গণ্য, তখন আমরা বলব আদম (আঃ) কিসের তৈরী,
নুরের না মাটির ?
যদি বলে ‘মাটির তৈরী’ আর এটা বলতে তারা বাধ্য- তাহলে তাদের নিকট
যদি বলে ‘মাটির তৈরী’ আর এটা বলতে তারা বাধ্য- তাহলে তাদের নিকট
প্রশ্নঃ মাটির তৈরী পিতার সন্তান
কিভাবে নূরের তৈরী হল ?
৭,২
মানুষ যেমন পানাহার করে, তেমনি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও পানাহার করতেন
(উপরের
৫,৫ ও ৫,৭ দ্রঃ)
।
৭,৩
অন্যান্য মানুষের যেমন সন্তানাদি ছিল, তেমনি রাসুলদেরও সন্তানাদি ছিল, স্ত্রীও ছিল
।
৭,৪
রাসুল (সাঃ) অতি মানব ছিলেন না যে তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না ।
এরশাদ
হচ্ছে-
“নিশ্চয়ই
তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারা সকলে মৃত্যু বরণ করবে” (সূরা
যুমার ৩৯:৩০)
৭,৫
আর একথা কিভাবে গ্রহণ করা যায় যে, তিনি নূরের তৈরী, অথচ যাকে মানব জাতির
হেদায়েতের জন্য, অনুসরণীয় একমাত্র
আদর্শ হিসেবে আল্লাহ পাঠালেন মাটির মানুষদের কাছে ।
“নিঃসন্দেহে তুমি মহান
চরিত্রের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছো” {সূরা আল ক্বালামঃ আয়াত ৪}
৭,৬
তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন এর ৭৯২ নং পৃষ্টায় আছে-
=============================================
=============================================
মানবের
রাসুল মানবই হতে পারেনঃ
ভিন্ন
শ্রেণীর সাথে পারস্পরিক মিল ব্যতীত হেদায়েত ও পথ প্রদর্শনের উপকার অর্জিত হয় না ।
ফেরেশতা ক্ষুধা পিপাসা জানে না, কাম-প্রবৃত্তিরও জ্ঞান রাখে না এবং শীত গ্রীষ্মের
অনুভুতি ও পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি থেকে মুক্ত । এমতাবস্থায় মানুষের প্রতি কোন
ফেরেশতাকে রসুল করে প্রেরণ করা হলে সে মানবের কাছেও উপরোক্ত্ কর্ম আশা করতো এবং
মানবের
দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করতো না ।
বলুনঃ
যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতা
(নুরের তৈরী) কেই তাদের নিকট পয়গম্বর করে প্রেরণ করতাম (বনী
ইস্রাঈল-৯৫)
৭,৭
নবী রাসুল নুরের তৈরী বা ফেরেশতা নন তাও আল্লাক তায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেনঃ-
আর আমি তোমাদেরকে
বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে এবং একথাও বলি না যে, আমি গায়বী খবরও
জানি; একথাও
বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা (নুরের তৈরী); আর তোমাদের দৃষ্টিতে
যারা লাঞ্ছিত আল্লাহতাদের কোন কল্যাণ দান করবেন না । তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল
করেই জানেন । সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায় কারী হব (হূদ-৩১)
৮) বিদআতীরা নবীকে নূর
প্রমাণ করতে যেয়ে দলীল স্বরূপ কুরআন থেকে কতিপয় আয়াত পেশ করে থাকে ।
যেমন,
৮,১ মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে । এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’(সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬)
অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ (অথবা আত্মা) তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি । আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন ।
৮,১ মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে । এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’(সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬)
অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ (অথবা আত্মা) তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি । আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন ।
৮,২ এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে
নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর
আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে । (সূরা আল্ আহযাব:
৪৫-৪৬)
নবী (সাঃ) কে উক্ত আয়াতে (রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট ।
নবী (সাঃ) কে উক্ত আয়াতে (রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট ।
৯,১ এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব
তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি
ঈমান আনয়ন কর । তোমরা যা কর, সে
বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত (সূরাহ আত্ তাগাবুন: ৮)
৯,২ অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।নূর পার্টিরা কী বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি !অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল মুসলিমদের বিশ্বাস । কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী,
৯,২ অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।নূর পার্টিরা কী বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি !অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল মুসলিমদের বিশ্বাস । কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী,
অতএব, কুরআনকে নূর বলার
পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়,
তবে রাসূলকে নূরের
সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে ?
কারণ মহান আল্লাহ নবীকে
যেমন ‘নূর’ বলেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র আল কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।
১০)
প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনি বলেছেন নবী সা. মাটির তৈরী । অথচ, রাসূল সা. তার এক
হাদিছে বলেন যে,
১০,১
আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন ।
এর জবাব কী ?
এ
উত্তরটা একটি হাদিছ দিয়ে-ই দেই । আল্লাহর রাসূল সা. অন্য হাদিছে বলেন যে,
১০,২
আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেন ।
ঐ হাদিছ এবং এই হাদিছের মর্ম একই ।
অর্থাৎ
আল্লাহর
রাসূলের রুহ মোবারক নূরের তৈরী, সমস্ত শরীর নয় ।
কেননা
মহানবী সা. এর রূহ বা পবিত্র আত্না মাটির তৈরী হবে তো দূরের কথা, কোন মানুষের
আত্নাই মাটির তৈরী নয় । বরং
সমস্ত মানুষের আত্নাই নূরের তৈরী ।
১১)
সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি কুরআন ও
হাদীছ বিরোধী কথা ।
১১,১
কারণ মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ.
‘নিশ্চয়
আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে
তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’ পরহেযগার (সূরা
হুজুরাত: ১৩)
১১,২
নবী (সাঃ) বলেনঃ হে মানব মন্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক, সাবধান! কোন আরবীর
আজমীর (অনারব) উপর, কোন আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই । অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের
ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য
নেই ।
প্রাধান্য
একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার ভিত্তিতে হবে
। ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে
সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’-পরহেযগার (আহমাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ । দ্রঃ শাইখ আলবানীর
গায়াতুল মারাম, পৃঃ১৯০, হা/৩১৩)
কাজেই
নবী (সাঃ) নূর থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি
থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয়
যেমনটি অসংখ্য বিদআতী তাই ধারণা করে বসেছে ।
বরং
নবী (সাঃ) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব, সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার
। সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ বন্ধু ।
আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের
অধিকারী, সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী । মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল
আলামীন, শাফিঊল লিল মুযনিবীন ।
এসব
বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই । ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম,
তাবেঈনে ইযাম, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস । যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে
আসছেন সকল সুন্নী মুসলিম ।
১২)
‘সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব অজর্ন করে’ এটা ইবলীস শয়তানের
ধারণা ও দাবী মাত্র ।
১২,১
এই অলিক ধারণার ভিত্তিতেই সে (ইবলীস) আগুনের তৈরী বলে মাটির তৈরী আদমকে সিজদাহ করতে
অস্বীকার করে ছিল (উপরের
৪,১ ও ৪,২ দ্রঃ)
।
‘নবী
(সাঃ) কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য
করলে সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের
যুক্তিটি
শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল
।
১২,২
কাফেররাও নবী রাসুলকে মাটির তৈরী মানুষ বলে তাঁর প্রতি ঈমাম আনে নাই, অনুসরণ করে
নাই, তাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে নাই (উপরের
৫,১ থেকে ৫,৮ দ্রঃ)
।
আপনারা
যারা নূরের তৈরী আক্বীদা পোষণ করেন, মাটির তৈরী বলে কি আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে চান
না ?!!
এ
রকম ভাবলে কাফেরদের সাথে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় নয় কি ?
শেষ
কথা আল্লাহ খালেক
(সব কিছুর স্রষ্টা)
আর সবকিছু তার মাখলুক
(সৃষ্টি)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আল্লাহ সমস্ত কিছুর
স্রষ্টা ও তিনি সমস্ত কিছুর কর্মবিধায়ক । আকাশ ও পৃথিবীর চাবিও
তাঁরই কাছে’ {যুমার
৬২-৬৩}
আর শ্রেষ্ঠ মাখলুক হল মানুষ (মাটির তৈরী) [যে কারনে আল্লাহ নুরের তৈরী ফেরেশতাকে মাটির তৈরী মানুষ আদম (আঃ) কে সেজদা করার আদেশ দিলেন]
আর শ্রেষ্ঠ মাখলুক হল মানুষ (মাটির তৈরী) [যে কারনে আল্লাহ নুরের তৈরী ফেরেশতাকে মাটির তৈরী মানুষ আদম (আঃ) কে সেজদা করার আদেশ দিলেন]
মানুষের মধ্যে
সর্বশ্রেষ্ঠ হল বিশ্বনবী
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) । তাঁর শ্রেষ্ঠতের বহু
কারন রয়েছে । তন্মধ্যে
তাঁর প্রতি আল্লাহর বানী
আল কুরআন নাযিল হয়েছে এবং তিনিই আল্লাহর বানীর সর্বাপেক্ষা বুঝদ্বার ও ব্যাখ্যা
বিশ্লেষক ।
আল্লাহ
আপনার প্রতি ঐশীগ্রন্থ
ও প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন
এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না । আপনার প্রতি আল্লাহর
করুনা অসীম (নিসা-১১৩)
জানাতে পারেনঃ-
এরপরেও যারা রাসুল (সাঃ) কে নুরের তৈরী
বলে আক্বীদা পোষণ করেন,
মৌখিকভাবে
না বলে কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল উল্লেখ করে লিখিত জানাবেন ?
http://sottersondhane.blogspot.com/2012/10/blog-post_3.html
মৌখিকভাবে না বলে কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল উল্লেখ করে লিখিত জানাবেন
কারন আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী , সত্যকে জানার চেষ্টা করি , মানুষ ভূলের উদ্ধে নয় ৷
এক মাত্র আল্লাহর নবীন ছাডা , যে কারো মনতব্য ,
মনতব্য কলামে করুন সকলেই উপকৃত হবে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন