বাতিলের আতংক হাকীমুল উম্মত আশরাফ থানবী রহঃ এর বিরুদ্ধে কথিত আহলে হাদীস ও বেদআতিদের জঘন্য মিথ্যাচারের জবাব
প্রশ্ন
From: মির্যা সজিব
Subject: আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর কালিমা পাল্টে দেয়া প্রসঙ্গে
Country : Bangladesh
Mobile :
Message Body:
প্রথমেই জামিয়াতুল আস’আদের সুন্দর পদক্ষেপকে মন থেকে অভিনন্দন জানাই। দুআ করি আল্লাহ তাআলা আপনাদের মেহনতকে কবুল করেন।
ইন্টারনেটে আহলে হাদীসরা এবং রাজারবাগী, দেওয়ানবাগীসহ কিছু ভন্ড পীরের অনুসারীরা হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করছে। দয়া করে যদি এসবের জবাব জানাতেন তাহলে খুবই ভাল হতো। নিম্নে তাদের ভাষায় অভিযোগগুলো উত্থাপন করা হল-
১-হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবী দাবি করেছেন? নাউজুবিল্লাহ!
২-যার ঘটনাটি ঘটেছে, তাকে ধমকি সতর্ক করা হয়নি, অথচ তাকে তা করা দরকার ছিল। সেই সাথে লোকটি নতুন করে মুসলমান বানানো প্রয়োজন ছিল। ছিল তার বিবাহকে পুনরায় দেওয়ার। কিন্তু হাকীমুল উম্মত রহঃ এমনটি করেন নি, বরং তিনি কুফরীর উপরই সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। আর কুফরীর উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ কুফরী। তাই হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কাফের। নাউজুবিল্লাহ।
৩-এরকম শয়তানী ওয়াসওয়াসাকে কেন প্রশংসা করা হল? কেন এর তাবীর তথা ব্যাখ্যা করা হল?
বেদআতি গ্রুপ ও কথিত আহলে হাদীস গ্রুপ এটাকে মূল প্রতিপাদ্য বানিয়ে প্রচার করতে শুরু করেছে যে, “দেওবন্দীদের কালিমা মুসলমানদের কালিমা থেকে ভিন্ন”। নাউজুবিল্লাহ।
একদা স্বপ্নে আমি কালিমা পড়ছিলাম। কিন্তু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এ স্থলে হযরতের নাম নিচ্ছিলাম। তখনি আমার মনে উদয় হয় যে, আমি ভুল করছি কালিমা পড়ার ক্ষেত্রে। সঠিকভাবে পড়া উচিত। এ খেয়ালে দ্বিতীয়বার কালিমা শরীফ পড়লাম। মনেতো এটা আছে যে, সঠিকভাবে পড়বো, কিন্তু অনিচ্ছা সত্বেও মুখ থেকে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এর স্থলে আশরাফ আলী বেরিয়ে যায়। অথচ আমার একথা জানা আছে যে, এমনটি জায়েজ নয়। কিন্তু অনিচ্ছায় মুখ থেকে এটাই বেরিয়ে যায়। দুই তিনবার যখন এমনি হল। তখন হুজুর সাঃ কে আমার সামনে দেখতে লাগলাম। হুজুর সাঃ এর পাশে আরো মানুষ ছিলেন। আমি এমনটি করতে ছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। তখন আমার উপর কান্না প্রবলতা এত বেড়ে গেল যে, আমি দাঁড়ানো থেকে পড়ে গেলাম। সাথে অত্যান্ত জোরে চিৎকার দিলাম। আর আমার মনে হচ্ছিল যে, আমার ভিতর কোন শক্তি নেই। এমন অবস্থায় আমি ঘুম থেকে জেগে গেলাম। কিন্তু তখনো শরীরে ছিল অনুভূতিহীনতা। ছিল উক্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়াও। অথচ ঘুমন্ত ও জাগ্রত উভয় অবস্থায় রাসূল সাঃ এরই খিয়াল ছিল। কিন্তু জাগ্রত হওয়ার পর যখন কালিমা ভুল পড়ার কথা স্মরণ হল-তখন মন থেকে এ ধারণাটি দূর করার জন্য, এবং কখনো যেন এমন ভুল না হয়, তাই এ চিন্তায় বসে গেলাম। তারপর এক পাশে কাত হয়ে কালিমা শরীফের ভুল পড়ার ক্ষতিপূরণার্থে রাসূল সাঃ এর উপর দরুদ পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু তারপরও মুখ থেকে বের হচ্ছিল-আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা সায়্যিদানা ওয়া নাবিয়্যিনা ওয়া মাওলানা আশরাফ আলী, অথচ আমি সজাগ। ঘুমন্ত নই। কিন্তু আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি। আরো অনেক কারণ আছে, যা হুজুর [আশরাফ আলী থানবী রহঃ] এর সাথে মোহাব্বাতের কারণ। কত আর বলবো? [আল ইমদাদ-৩৫, মাহে সফর, ১৩৩৬ হিজরী]
প্রিয় পাঠকেরা! এ লিখায় একথা স্পষ্ট যে, কালিমায়ে তায়্যিবার ভুল স্বপ্নে হয়েছিল। আর যিনি স্বপ্ন দেখেছেন তিনি এতে যথেষ্ঠ পেরেশান হয়েছেন। আর স্বপ্নেই নিজের ভুল বুঝতে ছিলেন। তারপরও অনিচ্ছায় মুখ থেকে ভুল কালিমা বেরিয়ে যাচ্ছিল।
আর ঘুম থেকে জাগার পর যখন দরুদ শরীফ ভুল পড়ছিলেন তখনও তিনি বলছেন যে, আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। শুধু তাই নয়, তিনি তার ভুলের কারণে খুব কেঁদেছেনও।
এখানে কয়েকটি ভাবার বিষয় রয়েছে। ঠান্ডা মস্তিস্কে তা বুঝতে হবে।
১-
কালিমা ভুল পড়া সম্পর্কিত বিষয়টি ছিল স্বপ্নে। আর স্বপ্নের একটি বাস্তব ব্যাখ্যা আছে। যার নাম হল তাবীর। স্বপ্নের তাবীর দুই ধরণের হয়। স্বপ্ন হয় বাহ্যিকভাবে অনেক খারাপ হয় কিন্তু এর তাবীর হয় ভাল। আবার কখনো স্বপ্ন হয় ভাল কিন্তু এর তাবীর হয় খারাপ।
প্রথম প্রকার স্বপ্নের উদাহরণ হল-
ক-
রাসূল সাঃ এর চাচি উম্মুল ফজল বিনতুল হারেস রাঃ এক স্বপ্ন দেখলেন। তারপর তিনি হুজুর সাঃ এর দরবারে এসে বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আজ রাতে আমি একটি খুবই খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। রাসূল সাঃ বললেন-তুমি কি দেখেছো? বল। তিনি বললেন-এটা খুবই শক্ত সন্দিহান স্বপ্ন। রাসূল সাঃ বললেন-বলনা শুনি কী দেখেছো? হযরত উম্মুল ফজল বললেন-আমি দেখেছি যে, আপনার শরীর থেকে এক খন্ড গোস্ত কেটে আমার কোলে এসে পড়েছে। তখন রাসূল সাঃ বললেন-তুমি অনেক সু্ন্দর স্বপ্ন দেখেছো। এ স্বপ্নে ব্যাখ্যা হল- আমার মেয়ের [ফাতিমা রাঃ] ঘরে যে বাচ্চা হবে সে তোমার কোলে খেলবে। তো হযরত হুসাইন রাঃ জন্ম নিলেন। আর তিনি আমার কোলে খেলেছেন, যেমনটি রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। {মেশকাতুল মাসাবিহ-২/৫৭২}
লক্ষ্য করুন-বাহ্যিকভাবে স্বপ্ন কতটা খারাপ ছিল, উম্মুল ফজল রাঃ যা বলতেই দ্বিধা করছিলেন। অথচ এর তাবীর কত সুন্দর।
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ব্যাপারে আরেকটি ঘটনা উদ্ধৃতি করাটা উপযোগী মনে করছি। যাতে করে বেদআতি ভন্ড হানাফীদের অন্ধ চোখ খুলে। যারা হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর মুরীদের উপর বিভিন্ন ধরণের অভিযোগের আঙ্গুল তুলে।
খ
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহঃ একদা স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি রাসূল সাঃ এর মাযারে পৌছলেন। সেখানে পৌছে তিনি রাসুল সাৰ এর কবর মুবারক ভেঙ্গে ফেললেন। [আল্লাহ হিফাযত করুন]।
এ মারাত্মক ও পেরেশানী উদ্দীপক স্বপ্নটি তিনি তার উস্তাদকে জানালেন। সে সময় ইমাম সাহেব রহঃ মক্তবে পড়ছিলেন। তখন তার উস্তাদ বললেন-যদি সত্যিই তুমি এ স্বপ্ন দেখে থাক, তাহলে এর ব্যাখ্যা হল-তুমি রাসুল সাঃ এর হাদীসের অনুসরণ করবে। আর শরীয়তে মুহাম্মদী সাঃ কে পরিপূর্ণ তথ্য-তালাশ করে গবেষণা করবে। ব্যাস! যেভাবে উস্তাদ বলেছিলেন সে ব্যাখ্যাটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। {তাবীরুর রুউআ-১০৮, আকবর বুক ডিপো}
ভেবে দেখুন! কি রকম ভয়াবহ স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তাবীর তথা ব্যাখ্যা কত সুন্দর।
বলুনতো-বেরেলবী তথা বেদআতি গ্রুপেরা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উপর কি ফাতওয়া দিবে?
একথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, আজ যদি এ ঘটনার মাঝে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নামের স্থলে দেওবন্দী কোন আলেমের নাম থাকতো, তাহলে বেদআতি গ্রুপটি এ ফাতওয়া দেয়া শুরু করে দিত যে, দেওবন্দীরা রাসূলের দুশমনী করে রাসূল সাঃ কবর মুবারকও ভেঙ্গে দিচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ।
এ দু’টি স্বপ্ন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল-বাহ্যিকভাবে কোন স্বপ্ন ভয়ংকর হওয়া, এর তাবীরও ভয়াবহ হওয়া আবশ্যক নয়।
সুতরাং যে স্বপ্ন হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর মুরীদ দেখেছিলেন, তা বাহ্যিকভাবে ভয়াবহ হলেও, এর দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে, এর ব্যাখ্যা তথা তাবীরও ভয়াবহ হবে। যেমন আমরা খোদ হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রঃ এর বক্তব্য দ্বারা তা প্রমাণ করবো ইনশাআল্লাহ।
২
এটি একটি স্বপ্ন ছিল। আর স্বপ্ন ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা হয়। স্বপ্নে মুখ থেকে যা বের হয় শরীয়তে এর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। স্বপ্নের কোন বিষয় শরয়ী দলিল নয়। স্বপ্নে কোন কিছু হলে সেটার মাধ্যমে কোন কিছু প্রমাণিত হয় না। এমনকি কেউ যদি ঘুমের মাঝে কুফরী কালাম বলে তাহলে সে কাফের হয়ে যায় না। কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তির উপর শরয়ী হুকুমই আরোপিত হয় না। যেমন-
عن عائشة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال رفع القلم عن ثلاثة عن النائم حتى يستيقظ وعن الصغير حتى يكبر وعن المجنون حتى يعقل
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তিন ব্যক্তি থেকে [হিসাব-নিকাশের] কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে, ১-ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, ২-না বালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, ৩-পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে সুস্থ্য হয়। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৩০২৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪০৫, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৪২৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৭৩, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৯৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪২, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১০০৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৪০}
عن أبي قتادة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : ليس في النوم تفريط إنما التفريط في اليقظة
হযরত কাতাদা রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঘুমন্ত অবস্থার কোন ভুল হলে এতে কোন গোনাহ নেই, তবে সজাগ অবস্থায় হলে গোনাহ হবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৫৯৪, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৯৮৯, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪৬০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৯০২, সুনানে সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৭৩৭, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১৫৮৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৯৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৭৭, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-২১০১, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৩০৭৫}
এ সকল বর্ণনা দ্বারা ফুক্বাহায়ে কিরাম এ উসূল ও মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন যে, ঘুমন্ত অবস্থায় যে কোন ধরণের কথাই কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। চাই কেউ মুসলমান হোক, বা কেউ নাউজুবিল্লাহ মুরদাত হয়ে যাক। চাই কেউ বিবাহ করে নিক, বা কেউ তালাক দিয়ে দেক।
তাইতো আল্লামা মুহাম্মদ আমীন বিন ওমর আশ শামী হানাফী রহঃ লিখেছেন-
ولذا لا يتصف بصدق أو كذب ولا خبر ولا إنشاء وفي التحرير : وتبطل عبارته من الإسلام والردة والطلاق ، ولم توصف بخبر وإنشاء وصدق وكذب كألحان الطيور
অনুবাদ-আর এ কারণে ঘুমন্ত ব্যক্তির কথা, সত্য, মিথ্যা, সংবাদ, চুক্তি সম্পদান, ইত্যাদি গুণে গুনান্বিত হবে না। আর তাহরীরুল উসূলে রয়েছে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তির কতা যেমন ইসলাম গ্রহণ, অথবা মুরতাদ হয়ে যাওয়া, স্ত্রীকে তালাক দেয়া, ইত্যাদি সবই নিরর্থক হবে। না এসবকে সংবাদ বলা যাবে। না ইনশা, না সত্য, না মিথ্যা। এসবই পাখির আওয়াজের মতই বেকার সাব্যস্ত হবে। {ফাতওয়ায়ে শামী-২/৮৫৫, তালাক অধ্যায়, বেহুশ ব্যক্তির তালাক পরিচ্ছেদ, মিশরী ছাপা}
এর পর আরো লেখেন-
ومثله في التلويح ، فهذا صريح في أن كلام النائم لا يسمى كلاما لغة ولا شرعا بمنزلة المهمل
অনুবাদ-আর এমনিভাবে তালওয়ীহ এ আছে যে, এসব ইবারত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঘুমন্ত অবস্থার কথা না শাব্দিকভাবে কোন অর্থ আছে, না শরয়ীভাবে কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে। {প্রাগুক্ত}
শায়েখ ইবনে তাইমিয়া স্বপ্নের ব্যাপারে লিখেন-
والرؤيا المحضة التى لا دليل يدل على صحتها لا يجوز أن يثبت بها شيئ بالإتفاق
অনুবাদ-স্বপ্ন, যার সহীহ হওয়ার উপর কোন দলিল নেই। তার দ্বারা কোন কিছু প্রমাণিত হয় না সর্বসম্মত মতানুসারে। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২৭/৩৩৩}
হাদীস ও ফিক্বহের এসব স্পষ্ট ইবারত দ্বারা জানা যায় যে, ঘুম এবং স্বপ্ন অবস্থার কোন কথার উপর কোন ফাতওয়া দেয়া যায় না। যেহেতু মাসআলাটির বাস্তবতা এই, তাহলে হযরত থানবী রহঃ এরকম ব্যক্তির বিরুদ্ধে কি করে ফাতওয়া দিতে পারতেন? তাকে কিভাবে কাফের বা মুরতাদ বলতে পারতেন? যেখানে হাদীসি ও ইসলামী ফিক্বহ বলছে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তির কথা ধর্তব্য নয়। কোন গোনাহ নেই ঘুমন্ত ব্যক্তির কর্মকান্ড দ্বারা। সেখানে ঘুমিয়ে লোকটি কালিমা ভুল পড়ার কারণে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কী করে তার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিতে পারেন? যেখানে লোকটি নিজেই বলছেন, যে তিনি এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণেও অনেক কেঁদেছেন। খুব ভয় পেয়েছেন। তারপরও কোন পাগল ছাড়া কেউ কি উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুফরীর ফাতওয়া দিতে পারে? হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ তো কথিত আহলে হাদীস আর আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলবী এবং তার বেদআতি গ্রুপের মত আহমক নয় যে, এতটুকু দ্বীনী সমঝও তার নেই যে, শরীয়ত যার ব্যাপারে বলেছে তার কোন গোনাহ হয়নি। হয়নি কোন অপরাধ। সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুট করে ফাতওয়া দিয়ে দিবেন যে, লোকটি কুফরী কাজ করেছে।
আল্লাহ তাআলা এসব মুর্খদের দ্বীন বুঝার তৌফিক দান করুন।
“আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি”।
এর দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, মুরীদ সাহেব অনিচ্ছায় এসব কথা মুখ থেকে বেরিয়েছে। তিনি এর জন্য খুবই অনুতপ্ত। সেই সাথে এর জন্য কেদেছেনও খুব। এ ভুল কথাকে তিনি সঠিক মনে করেন নি। ভুল বলছেন বুঝতে পেরে পেরেশান হয়েছেন। আফসোস করেছেন। কেঁদেছেন।
এরকমভাবে অনিচ্ছাকৃত ভুল কথা মুখ থেকে বেরিয়ে গেলেও শরীয়তে কোন ধরপাকড় নেই। ইচ্ছেকৃত করলে অপরাধ তথা গোনাহ হয়। অনিচ্ছায় করলে কোন গোনাহ হয় না।
এ কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআন পাকে মুমিনদের এ দুআ পাঠ করতে শিখিয়েছেন যে,
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ [٢:٢٨٦]
হে আমাদের পালনকর্তা,যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি,তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। {সূরা বাকারা-২৮৬}
আর হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা এ দুআ কবুল করেছেন। অর্থাৎ অনিচ্ছায় ভুল করলে, বা ভুলে গেলে আল্লাহ তাআলা গোনাহ না লিখার দরখাস্ত আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেছেন। দেখুন-তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/৩৪৩, মিশরী ছাপা, সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৩৪৪, ৩৪৫}
অন্যত্র হাদীসে এসেছে-
عن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( إن الله وضع عن أمتي الخطأ والنسيان
অনুবাদ-হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার উম্মত থেকে ভুল ও ভুলে যাওয়াকে [হিসাব নিকাশ থেকে] বাদ দিয়ে দিয়েছেন। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৪৫, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১১২৩৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং- ৩৩, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭২১৯, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-৭৯৪, মুশনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১০৯০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৮৩৪০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১১৪১৬}
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, ভুলক্রমে যদি মুখ দিয়ে কোন কুফরী কালাম বলে ফেলে, তাহলে এর দ্বারা গোনাহ হবে না।
আরো স্পষ্ট প্রমাণ দেখুন-
أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ – وَهُوَ عَمُّهُ – قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلاَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِى ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِى وَأَنَا رَبُّكَ.
أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহ তাআলা গোনাহগার বান্দার তওবার দ্বারা এর চেয়েও বেশি খুশি হন, যে কোন মুসাফিরের আরোহনের উষ্ট্রী কোন বিয়াবানে হয়। আর সে তা হারিয়ে ফেলে। যাতে ছিল খাদ্য ও পানি। তারপর নিরাশ হয়ে পরে। তারপর সে আসে কোন গাছের নিকট। এসে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে যায় উষ্ট্রীটির ব্যাপারে নৈরাশ্যতা নিয়ে। তারপর কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখে উষ্ট্রীটি তার শিয়রে দাড়ানো। তারপর সে উষ্ট্রীটির লাগাম ধরে, তারপর প্রচন্ড খুশিতে বলে-হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা! আর আমি তোমার রব! প্রচন্ড খুশিতে ভুল বলে ফেলে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭১৩৬, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৪২৫}
এখানে লোকটি বলতে চাচ্ছিল যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার রব! আর আমি তোমার বান্দা! অথচ খুশিতে বলে ফেলেছে উল্টোটা। একথা লোকটি বেহুশ অবস্থায়ও বলেনি, বলেনি ঘুমন্ত অবস্থায়ও। না অচেতন অবস্থায়। কিন্তু অনিচ্ছায় মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে কুফরী কথা। যে কথা বলতে সে ইচ্ছে করে নি।
এ বিষয়কে বদনাম করা হয়নি। বরঞ্চ প্রশংসাসূচক হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং হাকীমুল উম্মত রহঃ এর মুরীদের উপর কেন এ খরগ?
ফুক্বাহায়ে কেরাম খাতা তথা ভুলের সংজ্ঞা এ বিশ্লেষণে যথেষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন কাজীখান রহঃ বলেন-
الخاطى من يجرى على لسانه من غير قصد كلمة مكان كلمة
অনুবাদ-ভুলকারী বলা হয়, যার মুখ দিয়ে অনিচ্ছায় এক কথার স্থলে অন্য কথা বেরিয়ে যায়। {ফাতওয়া কাজীখান আলা হামিশিল হিন্দিয়া-৪/৮৮৩}
তিনি আরো লিখেন-
الخاطى اذا جرى على لسانه كلمة الكفر خطاء بان اراد ان يتكلم بما ليس بكفر فجرى على لسانه كلمة الكفر خطاء لم يكن ذالك كفر عند الكل
অনুবাদ-আর ভুলকারী যদি ভুলে মুখ দিয়ে কুফরী কালিমা বলে ফেলে, অথচ এমন কালিমা বলতে চেয়েছিল যাতে কুফর নেই, কিন্তু ভুলে তার মুখ দিয়ে কুফরী কথা বেরিয়ে গেছে, তাহলে সকল ফুক্বাহায়ে কেরামের নিকট এটা কুফরী নয়। {প্রাগুক্ত}
আল্লাহ তাআলা ইয়ামিনে লগু তথা অযথা ইয়ামিনকে মাফ করে দিয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থাৎ ইয়ামিনে লগু এর উপর কোন পাকড়াও হবে না। {সূরা বাকারা-২২৫}
আর ইয়ামিনে লগু এর অন্তর্ভূক্ত এমন কথাও যা মুখ ফসকে বের হয়ে যায়, অনিচ্ছায় মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। {তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/২৬৭}
শাইখ ইবনে তাইমিয়া লিখেন-
اما القاتل خطأ فلا يؤخذ منه قصاص، لا فى الدنيا، ولا فى الآخرة،
অনুবাদ-ভুলক্রমে কাউকে হত্যা করলে তার উপর কেসাস জারি হয় না। দুনিয়াতেও না, আখেরাতেও না। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-৩৪/১২০}
ভুলক্রমে কাউকে হত্যা করলেও কিসাস আসে না। আসে না ভুলে কসম করলে কোন জরিমানাও। সেখানে সম্পূর্ণ অনিচ্ছায়, সেই সাথে কান্না ও অনুশোচনা সত্বেও ভুলক্রমে মুখ থেকে বের হওয়া কুফরী কথার কারণে কাফের সাব্যস্ত করাটা দ্বীন সম্পর্কে কতটা অজ্ঞতা একবার ভেবে দেখবেন কি?
শুধু তাই নয়, বেদআতিদের ইমাম আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলবী সাহেবের ফাতওয়াটিও দেখা যেতে পারে। যাতে করে বেদআতি গ্রুপটি নিজেদের স্ব-বিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে অন্তত ধারণা পায়।
“শরীয়তে আহকামে এযতিরার তথা নিরূপায় হয়ে কোন কিছু করার বিধান আহকামে এখতিয়ার তথা ইচ্ছেকৃত কোন করার বিধান ভিন্ন। {মালফুযাত-১/৫৫, ফরীদ বুক স্টল}
সম্মানিত পাঠক/পাঠিকাগণ এবার একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে বলুন তো, যেখানে মুরীদ ব্যক্তিটি নিজেই বলছেন যে,
আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি।
ইসলামি শরীয়ত যেখানে বলছে যে, অনিচ্ছায় কোন কিছু করলে শাস্তি হয় না। সেখানে লোকটি অনিচ্ছায় এমনটি করেছেন, ভুল করেছেন তিনি নিজেও জানেন, তাই আফসোস করেছেন, কেঁদেছেনও খুব। এমন ব্যক্তিকে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কি করে কাফের বলতে পারেন?
আর এখানে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ নিজেই কি করে কাফের হয়ে গেলেন? বেদআতি গ্রুপ আর কথিত আহলে হাদীসরা হক্কানী আলেমদের কাফের বানাতে পারলেই মনে করে থাকে বিরাট বড় দ্বীনের খিদমাত করে ফেলেছে। অথচ রাসূল সাঃ এর এ হাদীসের কথা তাদের মনেই থাকে না যে, -
ابْنَ عُمَرَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَيُّمَا امْرِئٍ قَالَ لأَخِيهِ يَا كَافِرُ. فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا إِنْ كَانَ كَمَا قَالَ وَإِلاَّ رَجَعَتْ عَلَيْهِ
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে, তাহলে তা উভয়ের যেকোন একজনের দিকে ফিরবে। যদি সে যেমন বলেছে বাস্তবে তা’ই হয়, তাহলেতো ঠিক আছে, নতুবা উক্ত বিষয়টি যে বলেছে তার দিকেই ফিরে আসবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৫০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫০৩৫, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৫৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২৩৭}
তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবুওয়াতেরই দাবি করার মুডেই ছিলেন। নাউজুবিল্লাহ।
আর সবচে’ বড় কথা হল-এ প্রশ্নটির জবাব খোদ আশরাফ আলী থানবী রহঃ আল ইমদাদের যে ঘটনা নিয়ে এত তোলপাড় করছে বেদআতি ও কথিত আহলে হাদীসরা, সেটিতেই উল্লেখ আছে।
এ হক্কানী ওলামা বিদ্বেষী গ্রুপটা যদি হযরতের কিতাবটি ভাল করে পড়ে তারপর প্রশ্ন উত্থাপন করতো, তাহলে এ প্রশ্ন করারই আর কোন প্রয়োজন থাকতো না।
আল ইমদাদে উক্ত স্বপ্নের তাবীর করতে গিয়ে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ লিখেন-
“কখনো কখনো স্বপ্ন দ্বারা জানা যায় যে, রাসূল সাঃ আগমন করেছেন। আর মনও সাক্ষ্য দেয় যে, রাসূল সাঃ ই এসেছেন। কিন্তু সাক্ষাতের সময় দেখা গেল চেহারা অন্য ব্যক্তির। এক্ষেত্রে আহলে তাবীর তথা স্বপ্ন ব্যাখ্যাতাগণ এটাই বলেন যে, এটা ইংগিত যে, এ ব্যক্তি মুত্তাবেয়ে সুন্নাত তথা সুন্নাতের অনুসারী। সুতরাং যেমন এখানে রাসূল সাঃ এর চেহারার বদলে অন্যের চেহারা দেখা স্বপ্নের তাবীর সুন্নাতের অনুসারী বলে দেয় হল, ঠিক এভাবেই রাসূল সাঃ এর নামের বদলে অন্য নাম মুখে আসার তাবীর যদি সুন্নাতের অনুসারী বলে করা হয় তাহলে এতে শরীয়তের কোন নিষিদ্ধ বিষয় আবশ্যক হল?” {আল ইমদাদ, মাহে জমাদিউস সানী ১৩৩৬ হিজরী, ১৯ নং পৃষ্ঠা}
আশা করি আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর বক্তব্য দ্বারা স্বপ্ন ও তাবীর তথা স্বপ্নের ব্যাখ্যার মধ্যকার সম্পর্কও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়টিকে আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবী দাবি করেছেন বলা, কালিমা পাল্টিয়ে দিয়েছেন বলে প্রচার করাটা কতটা নীচ আর জঘন্য মানসিকতা সম্পন্ন হলে করা যায় একবার ভেবে দেখি।
সুন্নাতের অনুসারী ব্যক্তি কি নবুওয়তের দাবি করে? যে ব্যক্তি বলছে এর মানে হল সুন্নাতের অনুসারী। যিনি সুন্নাতের অনুসারী তিনি তো রাসূল সাঃ এর পূর্ণাঙ্গ অনুগত। নবুওয়াতের দাবিতো হল রাসূল সাঃ এর সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা। তাহলে অনুগত দাবি করে বিদ্রোহ হয় কি করে?
এ রকম নীচ ও জঘন্য মিথ্যাচার প্রচারের নাম যদি মতিউর রহমান মাদানী, তাউসীফুর রহমান, আর বেদআতি গ্রুপের কাছে দ্বীন প্রচার হয়, তাহলে মিথ্যাচার আর ধোঁকাবাজী প্রচার কাকে বলে?
এরপরও যেসব অসৎ লোক দ্বীন প্রচারের নামে মিথ্যাচার প্রচার করে বেড়াচ্ছে এ পৃথিবী বিখ্যাত বুযুর্গ ও স্বীকৃত আলেমের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেত্রে শুধু পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতই পেশ করছি-
لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ } [آل عمران: 61]
অনুবাদ-মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত। {সূরা আলে ইমরান-৬১}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com
http://jamiatulasad.com/?p=1429
From: মির্যা সজিব
Subject: আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর কালিমা পাল্টে দেয়া প্রসঙ্গে
Country : Bangladesh
Mobile :
Message Body:
প্রথমেই জামিয়াতুল আস’আদের সুন্দর পদক্ষেপকে মন থেকে অভিনন্দন জানাই। দুআ করি আল্লাহ তাআলা আপনাদের মেহনতকে কবুল করেন।
ইন্টারনেটে আহলে হাদীসরা এবং রাজারবাগী, দেওয়ানবাগীসহ কিছু ভন্ড পীরের অনুসারীরা হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করছে। দয়া করে যদি এসবের জবাব জানাতেন তাহলে খুবই ভাল হতো। নিম্নে তাদের ভাষায় অভিযোগগুলো উত্থাপন করা হল-
অভিযোগ-১-
বেরেলবী তথা বেদআতি গ্রুপের পক্ষ থেকে এবং কথিত আহলে হাদীস গ্রুপের পক্ষ থেকে হযরত হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর উপর অভিযোগ করা হয় যে, হযরতের মুরীদ তার নামের কালিমা ও দরূদ পড়েছে, তখন হাকীমুল উম্মত রহঃ লোকটিকে ধমকি দেওয়ার বদলে তাকে সুন্নাতের অনুসারী বলে মন্তব্য করেছেন। যে কারণে তিনি কাফের। নাউজুবিল্লাহ! তাই কয়েকটি অভিযোগ দাঁড়ায়। যথা১-হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবী দাবি করেছেন? নাউজুবিল্লাহ!
২-যার ঘটনাটি ঘটেছে, তাকে ধমকি সতর্ক করা হয়নি, অথচ তাকে তা করা দরকার ছিল। সেই সাথে লোকটি নতুন করে মুসলমান বানানো প্রয়োজন ছিল। ছিল তার বিবাহকে পুনরায় দেওয়ার। কিন্তু হাকীমুল উম্মত রহঃ এমনটি করেন নি, বরং তিনি কুফরীর উপরই সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। আর কুফরীর উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ কুফরী। তাই হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কাফের। নাউজুবিল্লাহ।
৩-এরকম শয়তানী ওয়াসওয়াসাকে কেন প্রশংসা করা হল? কেন এর তাবীর তথা ব্যাখ্যা করা হল?
বেদআতি গ্রুপ ও কথিত আহলে হাদীস গ্রুপ এটাকে মূল প্রতিপাদ্য বানিয়ে প্রচার করতে শুরু করেছে যে, “দেওবন্দীদের কালিমা মুসলমানদের কালিমা থেকে ভিন্ন”। নাউজুবিল্লাহ।
জবাব
প্রথমেই আমরা দেখে নেই আসলে উক্ত কিতাবে লোকটির বক্তব্যটি কিভাবে আছে-একদা স্বপ্নে আমি কালিমা পড়ছিলাম। কিন্তু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এ স্থলে হযরতের নাম নিচ্ছিলাম। তখনি আমার মনে উদয় হয় যে, আমি ভুল করছি কালিমা পড়ার ক্ষেত্রে। সঠিকভাবে পড়া উচিত। এ খেয়ালে দ্বিতীয়বার কালিমা শরীফ পড়লাম। মনেতো এটা আছে যে, সঠিকভাবে পড়বো, কিন্তু অনিচ্ছা সত্বেও মুখ থেকে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এর স্থলে আশরাফ আলী বেরিয়ে যায়। অথচ আমার একথা জানা আছে যে, এমনটি জায়েজ নয়। কিন্তু অনিচ্ছায় মুখ থেকে এটাই বেরিয়ে যায়। দুই তিনবার যখন এমনি হল। তখন হুজুর সাঃ কে আমার সামনে দেখতে লাগলাম। হুজুর সাঃ এর পাশে আরো মানুষ ছিলেন। আমি এমনটি করতে ছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। তখন আমার উপর কান্না প্রবলতা এত বেড়ে গেল যে, আমি দাঁড়ানো থেকে পড়ে গেলাম। সাথে অত্যান্ত জোরে চিৎকার দিলাম। আর আমার মনে হচ্ছিল যে, আমার ভিতর কোন শক্তি নেই। এমন অবস্থায় আমি ঘুম থেকে জেগে গেলাম। কিন্তু তখনো শরীরে ছিল অনুভূতিহীনতা। ছিল উক্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়াও। অথচ ঘুমন্ত ও জাগ্রত উভয় অবস্থায় রাসূল সাঃ এরই খিয়াল ছিল। কিন্তু জাগ্রত হওয়ার পর যখন কালিমা ভুল পড়ার কথা স্মরণ হল-তখন মন থেকে এ ধারণাটি দূর করার জন্য, এবং কখনো যেন এমন ভুল না হয়, তাই এ চিন্তায় বসে গেলাম। তারপর এক পাশে কাত হয়ে কালিমা শরীফের ভুল পড়ার ক্ষতিপূরণার্থে রাসূল সাঃ এর উপর দরুদ পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু তারপরও মুখ থেকে বের হচ্ছিল-আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা সায়্যিদানা ওয়া নাবিয়্যিনা ওয়া মাওলানা আশরাফ আলী, অথচ আমি সজাগ। ঘুমন্ত নই। কিন্তু আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি। আরো অনেক কারণ আছে, যা হুজুর [আশরাফ আলী থানবী রহঃ] এর সাথে মোহাব্বাতের কারণ। কত আর বলবো? [আল ইমদাদ-৩৫, মাহে সফর, ১৩৩৬ হিজরী]
প্রিয় পাঠকেরা! এ লিখায় একথা স্পষ্ট যে, কালিমায়ে তায়্যিবার ভুল স্বপ্নে হয়েছিল। আর যিনি স্বপ্ন দেখেছেন তিনি এতে যথেষ্ঠ পেরেশান হয়েছেন। আর স্বপ্নেই নিজের ভুল বুঝতে ছিলেন। তারপরও অনিচ্ছায় মুখ থেকে ভুল কালিমা বেরিয়ে যাচ্ছিল।
আর ঘুম থেকে জাগার পর যখন দরুদ শরীফ ভুল পড়ছিলেন তখনও তিনি বলছেন যে, আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। শুধু তাই নয়, তিনি তার ভুলের কারণে খুব কেঁদেছেনও।
এখানে কয়েকটি ভাবার বিষয় রয়েছে। ঠান্ডা মস্তিস্কে তা বুঝতে হবে।
১-
কালিমা ভুল পড়া সম্পর্কিত বিষয়টি ছিল স্বপ্নে। আর স্বপ্নের একটি বাস্তব ব্যাখ্যা আছে। যার নাম হল তাবীর। স্বপ্নের তাবীর দুই ধরণের হয়। স্বপ্ন হয় বাহ্যিকভাবে অনেক খারাপ হয় কিন্তু এর তাবীর হয় ভাল। আবার কখনো স্বপ্ন হয় ভাল কিন্তু এর তাবীর হয় খারাপ।
প্রথম প্রকার স্বপ্নের উদাহরণ হল-
ক-
রাসূল সাঃ এর চাচি উম্মুল ফজল বিনতুল হারেস রাঃ এক স্বপ্ন দেখলেন। তারপর তিনি হুজুর সাঃ এর দরবারে এসে বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আজ রাতে আমি একটি খুবই খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। রাসূল সাঃ বললেন-তুমি কি দেখেছো? বল। তিনি বললেন-এটা খুবই শক্ত সন্দিহান স্বপ্ন। রাসূল সাঃ বললেন-বলনা শুনি কী দেখেছো? হযরত উম্মুল ফজল বললেন-আমি দেখেছি যে, আপনার শরীর থেকে এক খন্ড গোস্ত কেটে আমার কোলে এসে পড়েছে। তখন রাসূল সাঃ বললেন-তুমি অনেক সু্ন্দর স্বপ্ন দেখেছো। এ স্বপ্নে ব্যাখ্যা হল- আমার মেয়ের [ফাতিমা রাঃ] ঘরে যে বাচ্চা হবে সে তোমার কোলে খেলবে। তো হযরত হুসাইন রাঃ জন্ম নিলেন। আর তিনি আমার কোলে খেলেছেন, যেমনটি রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। {মেশকাতুল মাসাবিহ-২/৫৭২}
লক্ষ্য করুন-বাহ্যিকভাবে স্বপ্ন কতটা খারাপ ছিল, উম্মুল ফজল রাঃ যা বলতেই দ্বিধা করছিলেন। অথচ এর তাবীর কত সুন্দর।
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ব্যাপারে আরেকটি ঘটনা উদ্ধৃতি করাটা উপযোগী মনে করছি। যাতে করে বেদআতি ভন্ড হানাফীদের অন্ধ চোখ খুলে। যারা হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর মুরীদের উপর বিভিন্ন ধরণের অভিযোগের আঙ্গুল তুলে।
খ
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহঃ একদা স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি রাসূল সাঃ এর মাযারে পৌছলেন। সেখানে পৌছে তিনি রাসুল সাৰ এর কবর মুবারক ভেঙ্গে ফেললেন। [আল্লাহ হিফাযত করুন]।
এ মারাত্মক ও পেরেশানী উদ্দীপক স্বপ্নটি তিনি তার উস্তাদকে জানালেন। সে সময় ইমাম সাহেব রহঃ মক্তবে পড়ছিলেন। তখন তার উস্তাদ বললেন-যদি সত্যিই তুমি এ স্বপ্ন দেখে থাক, তাহলে এর ব্যাখ্যা হল-তুমি রাসুল সাঃ এর হাদীসের অনুসরণ করবে। আর শরীয়তে মুহাম্মদী সাঃ কে পরিপূর্ণ তথ্য-তালাশ করে গবেষণা করবে। ব্যাস! যেভাবে উস্তাদ বলেছিলেন সে ব্যাখ্যাটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। {তাবীরুর রুউআ-১০৮, আকবর বুক ডিপো}
ভেবে দেখুন! কি রকম ভয়াবহ স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তাবীর তথা ব্যাখ্যা কত সুন্দর।
বলুনতো-বেরেলবী তথা বেদআতি গ্রুপেরা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উপর কি ফাতওয়া দিবে?
একথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, আজ যদি এ ঘটনার মাঝে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নামের স্থলে দেওবন্দী কোন আলেমের নাম থাকতো, তাহলে বেদআতি গ্রুপটি এ ফাতওয়া দেয়া শুরু করে দিত যে, দেওবন্দীরা রাসূলের দুশমনী করে রাসূল সাঃ কবর মুবারকও ভেঙ্গে দিচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ।
এ দু’টি স্বপ্ন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল-বাহ্যিকভাবে কোন স্বপ্ন ভয়ংকর হওয়া, এর তাবীরও ভয়াবহ হওয়া আবশ্যক নয়।
সুতরাং যে স্বপ্ন হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর মুরীদ দেখেছিলেন, তা বাহ্যিকভাবে ভয়াবহ হলেও, এর দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে, এর ব্যাখ্যা তথা তাবীরও ভয়াবহ হবে। যেমন আমরা খোদ হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রঃ এর বক্তব্য দ্বারা তা প্রমাণ করবো ইনশাআল্লাহ।
২
এটি একটি স্বপ্ন ছিল। আর স্বপ্ন ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা হয়। স্বপ্নে মুখ থেকে যা বের হয় শরীয়তে এর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। স্বপ্নের কোন বিষয় শরয়ী দলিল নয়। স্বপ্নে কোন কিছু হলে সেটার মাধ্যমে কোন কিছু প্রমাণিত হয় না। এমনকি কেউ যদি ঘুমের মাঝে কুফরী কালাম বলে তাহলে সে কাফের হয়ে যায় না। কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তির উপর শরয়ী হুকুমই আরোপিত হয় না। যেমন-
عن عائشة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال رفع القلم عن ثلاثة عن النائم حتى يستيقظ وعن الصغير حتى يكبر وعن المجنون حتى يعقل
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তিন ব্যক্তি থেকে [হিসাব-নিকাশের] কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে, ১-ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, ২-না বালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, ৩-পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে সুস্থ্য হয়। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৩০২৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪০৫, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৪২৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৭৩, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৯৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪২, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১০০৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৪০}
عن أبي قتادة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : ليس في النوم تفريط إنما التفريط في اليقظة
হযরত কাতাদা রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঘুমন্ত অবস্থার কোন ভুল হলে এতে কোন গোনাহ নেই, তবে সজাগ অবস্থায় হলে গোনাহ হবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৫৯৪, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৯৮৯, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪৬০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৯০২, সুনানে সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৭৩৭, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১৫৮৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৯৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৭৭, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-২১০১, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৩০৭৫}
এ সকল বর্ণনা দ্বারা ফুক্বাহায়ে কিরাম এ উসূল ও মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন যে, ঘুমন্ত অবস্থায় যে কোন ধরণের কথাই কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। চাই কেউ মুসলমান হোক, বা কেউ নাউজুবিল্লাহ মুরদাত হয়ে যাক। চাই কেউ বিবাহ করে নিক, বা কেউ তালাক দিয়ে দেক।
তাইতো আল্লামা মুহাম্মদ আমীন বিন ওমর আশ শামী হানাফী রহঃ লিখেছেন-
ولذا لا يتصف بصدق أو كذب ولا خبر ولا إنشاء وفي التحرير : وتبطل عبارته من الإسلام والردة والطلاق ، ولم توصف بخبر وإنشاء وصدق وكذب كألحان الطيور
অনুবাদ-আর এ কারণে ঘুমন্ত ব্যক্তির কথা, সত্য, মিথ্যা, সংবাদ, চুক্তি সম্পদান, ইত্যাদি গুণে গুনান্বিত হবে না। আর তাহরীরুল উসূলে রয়েছে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তির কতা যেমন ইসলাম গ্রহণ, অথবা মুরতাদ হয়ে যাওয়া, স্ত্রীকে তালাক দেয়া, ইত্যাদি সবই নিরর্থক হবে। না এসবকে সংবাদ বলা যাবে। না ইনশা, না সত্য, না মিথ্যা। এসবই পাখির আওয়াজের মতই বেকার সাব্যস্ত হবে। {ফাতওয়ায়ে শামী-২/৮৫৫, তালাক অধ্যায়, বেহুশ ব্যক্তির তালাক পরিচ্ছেদ, মিশরী ছাপা}
এর পর আরো লেখেন-
ومثله في التلويح ، فهذا صريح في أن كلام النائم لا يسمى كلاما لغة ولا شرعا بمنزلة المهمل
অনুবাদ-আর এমনিভাবে তালওয়ীহ এ আছে যে, এসব ইবারত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঘুমন্ত অবস্থার কথা না শাব্দিকভাবে কোন অর্থ আছে, না শরয়ীভাবে কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে। {প্রাগুক্ত}
শায়েখ ইবনে তাইমিয়া স্বপ্নের ব্যাপারে লিখেন-
والرؤيا المحضة التى لا دليل يدل على صحتها لا يجوز أن يثبت بها شيئ بالإتفاق
অনুবাদ-স্বপ্ন, যার সহীহ হওয়ার উপর কোন দলিল নেই। তার দ্বারা কোন কিছু প্রমাণিত হয় না সর্বসম্মত মতানুসারে। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২৭/৩৩৩}
হাদীস ও ফিক্বহের এসব স্পষ্ট ইবারত দ্বারা জানা যায় যে, ঘুম এবং স্বপ্ন অবস্থার কোন কথার উপর কোন ফাতওয়া দেয়া যায় না। যেহেতু মাসআলাটির বাস্তবতা এই, তাহলে হযরত থানবী রহঃ এরকম ব্যক্তির বিরুদ্ধে কি করে ফাতওয়া দিতে পারতেন? তাকে কিভাবে কাফের বা মুরতাদ বলতে পারতেন? যেখানে হাদীসি ও ইসলামী ফিক্বহ বলছে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তির কথা ধর্তব্য নয়। কোন গোনাহ নেই ঘুমন্ত ব্যক্তির কর্মকান্ড দ্বারা। সেখানে ঘুমিয়ে লোকটি কালিমা ভুল পড়ার কারণে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কী করে তার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিতে পারেন? যেখানে লোকটি নিজেই বলছেন, যে তিনি এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণেও অনেক কেঁদেছেন। খুব ভয় পেয়েছেন। তারপরও কোন পাগল ছাড়া কেউ কি উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুফরীর ফাতওয়া দিতে পারে? হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ তো কথিত আহলে হাদীস আর আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলবী এবং তার বেদআতি গ্রুপের মত আহমক নয় যে, এতটুকু দ্বীনী সমঝও তার নেই যে, শরীয়ত যার ব্যাপারে বলেছে তার কোন গোনাহ হয়নি। হয়নি কোন অপরাধ। সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুট করে ফাতওয়া দিয়ে দিবেন যে, লোকটি কুফরী কাজ করেছে।
আল্লাহ তাআলা এসব মুর্খদের দ্বীন বুঝার তৌফিক দান করুন।
অভিযোগ নং-২
আচ্ছা ঠিক আছে। স্বপ্নের কথা কোন দলিল নয়। তাই স্বপ্নে কালিমা ভুল পড়ার কারণে লোকটির বিরুদ্ধে কুফরীর ফাতওয়া দেয়া যাবে না। কিন্তু উক্ত মুরীদ আগে কী লিখেছেন সেটা কি নজরে পড়েনি? তিনি নিজেইতো লিখেছেন যে, যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছেন তখনো তার অবস্থা তাই ছিল। এটাতো নিদ্রা অবস্থায় ছিল না, তাহলে এটি কেন কুফরী নয়?
জবাব
এখানেও লক্ষ্যনীয় হল-জাগ্রত হওয়ার পর মুরীদ সাহেবের বক্তব্যটি কি ছিল? তিনি বলছেন যে,“আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি”।
এর দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, মুরীদ সাহেব অনিচ্ছায় এসব কথা মুখ থেকে বেরিয়েছে। তিনি এর জন্য খুবই অনুতপ্ত। সেই সাথে এর জন্য কেদেছেনও খুব। এ ভুল কথাকে তিনি সঠিক মনে করেন নি। ভুল বলছেন বুঝতে পেরে পেরেশান হয়েছেন। আফসোস করেছেন। কেঁদেছেন।
এরকমভাবে অনিচ্ছাকৃত ভুল কথা মুখ থেকে বেরিয়ে গেলেও শরীয়তে কোন ধরপাকড় নেই। ইচ্ছেকৃত করলে অপরাধ তথা গোনাহ হয়। অনিচ্ছায় করলে কোন গোনাহ হয় না।
এ কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআন পাকে মুমিনদের এ দুআ পাঠ করতে শিখিয়েছেন যে,
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ [٢:٢٨٦]
হে আমাদের পালনকর্তা,যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি,তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। {সূরা বাকারা-২৮৬}
আর হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা এ দুআ কবুল করেছেন। অর্থাৎ অনিচ্ছায় ভুল করলে, বা ভুলে গেলে আল্লাহ তাআলা গোনাহ না লিখার দরখাস্ত আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেছেন। দেখুন-তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/৩৪৩, মিশরী ছাপা, সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৩৪৪, ৩৪৫}
অন্যত্র হাদীসে এসেছে-
عن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( إن الله وضع عن أمتي الخطأ والنسيان
অনুবাদ-হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার উম্মত থেকে ভুল ও ভুলে যাওয়াকে [হিসাব নিকাশ থেকে] বাদ দিয়ে দিয়েছেন। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৪৫, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১১২৩৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং- ৩৩, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭২১৯, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-৭৯৪, মুশনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১০৯০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৮৩৪০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১১৪১৬}
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, ভুলক্রমে যদি মুখ দিয়ে কোন কুফরী কালাম বলে ফেলে, তাহলে এর দ্বারা গোনাহ হবে না।
আরো স্পষ্ট প্রমাণ দেখুন-
أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ – وَهُوَ عَمُّهُ – قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلاَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِى ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِى وَأَنَا رَبُّكَ.
أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহ তাআলা গোনাহগার বান্দার তওবার দ্বারা এর চেয়েও বেশি খুশি হন, যে কোন মুসাফিরের আরোহনের উষ্ট্রী কোন বিয়াবানে হয়। আর সে তা হারিয়ে ফেলে। যাতে ছিল খাদ্য ও পানি। তারপর নিরাশ হয়ে পরে। তারপর সে আসে কোন গাছের নিকট। এসে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে যায় উষ্ট্রীটির ব্যাপারে নৈরাশ্যতা নিয়ে। তারপর কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখে উষ্ট্রীটি তার শিয়রে দাড়ানো। তারপর সে উষ্ট্রীটির লাগাম ধরে, তারপর প্রচন্ড খুশিতে বলে-হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা! আর আমি তোমার রব! প্রচন্ড খুশিতে ভুল বলে ফেলে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭১৩৬, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৪২৫}
এখানে লোকটি বলতে চাচ্ছিল যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার রব! আর আমি তোমার বান্দা! অথচ খুশিতে বলে ফেলেছে উল্টোটা। একথা লোকটি বেহুশ অবস্থায়ও বলেনি, বলেনি ঘুমন্ত অবস্থায়ও। না অচেতন অবস্থায়। কিন্তু অনিচ্ছায় মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে কুফরী কথা। যে কথা বলতে সে ইচ্ছে করে নি।
এ বিষয়কে বদনাম করা হয়নি। বরঞ্চ প্রশংসাসূচক হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং হাকীমুল উম্মত রহঃ এর মুরীদের উপর কেন এ খরগ?
ফুক্বাহায়ে কেরাম খাতা তথা ভুলের সংজ্ঞা এ বিশ্লেষণে যথেষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন কাজীখান রহঃ বলেন-
الخاطى من يجرى على لسانه من غير قصد كلمة مكان كلمة
অনুবাদ-ভুলকারী বলা হয়, যার মুখ দিয়ে অনিচ্ছায় এক কথার স্থলে অন্য কথা বেরিয়ে যায়। {ফাতওয়া কাজীখান আলা হামিশিল হিন্দিয়া-৪/৮৮৩}
তিনি আরো লিখেন-
الخاطى اذا جرى على لسانه كلمة الكفر خطاء بان اراد ان يتكلم بما ليس بكفر فجرى على لسانه كلمة الكفر خطاء لم يكن ذالك كفر عند الكل
অনুবাদ-আর ভুলকারী যদি ভুলে মুখ দিয়ে কুফরী কালিমা বলে ফেলে, অথচ এমন কালিমা বলতে চেয়েছিল যাতে কুফর নেই, কিন্তু ভুলে তার মুখ দিয়ে কুফরী কথা বেরিয়ে গেছে, তাহলে সকল ফুক্বাহায়ে কেরামের নিকট এটা কুফরী নয়। {প্রাগুক্ত}
আল্লাহ তাআলা ইয়ামিনে লগু তথা অযথা ইয়ামিনকে মাফ করে দিয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থাৎ ইয়ামিনে লগু এর উপর কোন পাকড়াও হবে না। {সূরা বাকারা-২২৫}
আর ইয়ামিনে লগু এর অন্তর্ভূক্ত এমন কথাও যা মুখ ফসকে বের হয়ে যায়, অনিচ্ছায় মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। {তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/২৬৭}
শাইখ ইবনে তাইমিয়া লিখেন-
اما القاتل خطأ فلا يؤخذ منه قصاص، لا فى الدنيا، ولا فى الآخرة،
অনুবাদ-ভুলক্রমে কাউকে হত্যা করলে তার উপর কেসাস জারি হয় না। দুনিয়াতেও না, আখেরাতেও না। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-৩৪/১২০}
ভুলক্রমে কাউকে হত্যা করলেও কিসাস আসে না। আসে না ভুলে কসম করলে কোন জরিমানাও। সেখানে সম্পূর্ণ অনিচ্ছায়, সেই সাথে কান্না ও অনুশোচনা সত্বেও ভুলক্রমে মুখ থেকে বের হওয়া কুফরী কথার কারণে কাফের সাব্যস্ত করাটা দ্বীন সম্পর্কে কতটা অজ্ঞতা একবার ভেবে দেখবেন কি?
শুধু তাই নয়, বেদআতিদের ইমাম আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলবী সাহেবের ফাতওয়াটিও দেখা যেতে পারে। যাতে করে বেদআতি গ্রুপটি নিজেদের স্ব-বিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে অন্তত ধারণা পায়।
“শরীয়তে আহকামে এযতিরার তথা নিরূপায় হয়ে কোন কিছু করার বিধান আহকামে এখতিয়ার তথা ইচ্ছেকৃত কোন করার বিধান ভিন্ন। {মালফুযাত-১/৫৫, ফরীদ বুক স্টল}
সম্মানিত পাঠক/পাঠিকাগণ এবার একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে বলুন তো, যেখানে মুরীদ ব্যক্তিটি নিজেই বলছেন যে,
আমি অনিচ্ছাকৃত ছিলাম। অপারগ ছিলাম। জিহবা নিজের আয়ত্বে ছিল না। সেদিন এভাবেই গেল। দ্বিতীয় দিন জেগেই ছিলাম। খুব কেঁদেছি।
ইসলামি শরীয়ত যেখানে বলছে যে, অনিচ্ছায় কোন কিছু করলে শাস্তি হয় না। সেখানে লোকটি অনিচ্ছায় এমনটি করেছেন, ভুল করেছেন তিনি নিজেও জানেন, তাই আফসোস করেছেন, কেঁদেছেনও খুব। এমন ব্যক্তিকে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কি করে কাফের বলতে পারেন?
আর এখানে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ নিজেই কি করে কাফের হয়ে গেলেন? বেদআতি গ্রুপ আর কথিত আহলে হাদীসরা হক্কানী আলেমদের কাফের বানাতে পারলেই মনে করে থাকে বিরাট বড় দ্বীনের খিদমাত করে ফেলেছে। অথচ রাসূল সাঃ এর এ হাদীসের কথা তাদের মনেই থাকে না যে, -
ابْنَ عُمَرَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَيُّمَا امْرِئٍ قَالَ لأَخِيهِ يَا كَافِرُ. فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا إِنْ كَانَ كَمَا قَالَ وَإِلاَّ رَجَعَتْ عَلَيْهِ
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে, তাহলে তা উভয়ের যেকোন একজনের দিকে ফিরবে। যদি সে যেমন বলেছে বাস্তবে তা’ই হয়, তাহলেতো ঠিক আছে, নতুবা উক্ত বিষয়টি যে বলেছে তার দিকেই ফিরে আসবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৫০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫০৩৫, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৫৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২৩৭}
অভিযোগ নং-৩
লোকটি উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখল। এটা স্বপ্নে হয়েছে। তারপর ভুলে দরূদ উল্টাপাল্টা বলেছে। এটা অনিচ্ছায় করেছে। তাই আইনত কোন অপরাধ হয়নি, ঠিক আছে। কিন্তু আশরাফ আলী থানবী রহঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যায় কেন বললেন যে, “লোকটি যার সাথে সম্পর্ক করার ইচ্ছে করছে সে সুন্নাতের অনুসারী?”।তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবুওয়াতেরই দাবি করার মুডেই ছিলেন। নাউজুবিল্লাহ।
জবাব
এ উদ্ভট প্রশ্নটির জবাব আগেই গিয়েছে। স্বপ্ন খারাপ হওয়া মানেই তার তাবীরও খারাপ হওয়াকে আবশ্যক করে না। বরং অনেক সময় খারাপ স্বপ্নে তাবীর ভাল হয়। আর ভাল স্বপ্নে তাবীর খারাপ হয়।আর সবচে’ বড় কথা হল-এ প্রশ্নটির জবাব খোদ আশরাফ আলী থানবী রহঃ আল ইমদাদের যে ঘটনা নিয়ে এত তোলপাড় করছে বেদআতি ও কথিত আহলে হাদীসরা, সেটিতেই উল্লেখ আছে।
এ হক্কানী ওলামা বিদ্বেষী গ্রুপটা যদি হযরতের কিতাবটি ভাল করে পড়ে তারপর প্রশ্ন উত্থাপন করতো, তাহলে এ প্রশ্ন করারই আর কোন প্রয়োজন থাকতো না।
আল ইমদাদে উক্ত স্বপ্নের তাবীর করতে গিয়ে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ লিখেন-
“কখনো কখনো স্বপ্ন দ্বারা জানা যায় যে, রাসূল সাঃ আগমন করেছেন। আর মনও সাক্ষ্য দেয় যে, রাসূল সাঃ ই এসেছেন। কিন্তু সাক্ষাতের সময় দেখা গেল চেহারা অন্য ব্যক্তির। এক্ষেত্রে আহলে তাবীর তথা স্বপ্ন ব্যাখ্যাতাগণ এটাই বলেন যে, এটা ইংগিত যে, এ ব্যক্তি মুত্তাবেয়ে সুন্নাত তথা সুন্নাতের অনুসারী। সুতরাং যেমন এখানে রাসূল সাঃ এর চেহারার বদলে অন্যের চেহারা দেখা স্বপ্নের তাবীর সুন্নাতের অনুসারী বলে দেয় হল, ঠিক এভাবেই রাসূল সাঃ এর নামের বদলে অন্য নাম মুখে আসার তাবীর যদি সুন্নাতের অনুসারী বলে করা হয় তাহলে এতে শরীয়তের কোন নিষিদ্ধ বিষয় আবশ্যক হল?” {আল ইমদাদ, মাহে জমাদিউস সানী ১৩৩৬ হিজরী, ১৯ নং পৃষ্ঠা}
আশা করি আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর বক্তব্য দ্বারা স্বপ্ন ও তাবীর তথা স্বপ্নের ব্যাখ্যার মধ্যকার সম্পর্কও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়টিকে আশরাফ আলী থানবী রহঃ নবী দাবি করেছেন বলা, কালিমা পাল্টিয়ে দিয়েছেন বলে প্রচার করাটা কতটা নীচ আর জঘন্য মানসিকতা সম্পন্ন হলে করা যায় একবার ভেবে দেখি।
সুন্নাতের অনুসারী ব্যক্তি কি নবুওয়তের দাবি করে? যে ব্যক্তি বলছে এর মানে হল সুন্নাতের অনুসারী। যিনি সুন্নাতের অনুসারী তিনি তো রাসূল সাঃ এর পূর্ণাঙ্গ অনুগত। নবুওয়াতের দাবিতো হল রাসূল সাঃ এর সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা। তাহলে অনুগত দাবি করে বিদ্রোহ হয় কি করে?
এ রকম নীচ ও জঘন্য মিথ্যাচার প্রচারের নাম যদি মতিউর রহমান মাদানী, তাউসীফুর রহমান, আর বেদআতি গ্রুপের কাছে দ্বীন প্রচার হয়, তাহলে মিথ্যাচার আর ধোঁকাবাজী প্রচার কাকে বলে?
এরপরও যেসব অসৎ লোক দ্বীন প্রচারের নামে মিথ্যাচার প্রচার করে বেড়াচ্ছে এ পৃথিবী বিখ্যাত বুযুর্গ ও স্বীকৃত আলেমের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেত্রে শুধু পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতই পেশ করছি-
لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ } [آل عمران: 61]
অনুবাদ-মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত। {সূরা আলে ইমরান-৬১}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com
http://jamiatulasad.com/?p=1429
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন