যাদের উপর যাকাত ফরজ
সামর্থবান লোকর উপর যাকাত ফরজ।
তবে যাকাত ফরয হওয়ার জন্য কতগুলো শর্ত রয়েছে। যথা
ক. মুসলমান হওয়া।
খ. সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।
গ. বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া, নাবালেগ না হওয়া।
ঘ. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। নেসাবের পরিমাণ হলো-নিত্য দিনের প্রয়োজন পূরণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেয়ার পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ তথা ৬১২.৩৬ গ্রাম পরিমাণ রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ বা ৮৭.৪৮ গ্রাম পরিমাণ স্বর্ণ থাকা অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালের মালিক হওয়া।
ঙ. নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা। যদি পূর্ণ এক বছর না হয় তাহলে যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে না। হুজুর (সা) ইরশাদ করেছেন কোন সম্পদের যাকাত বছর অতিবাহিত হওয়া ব্যতিত ওয়াজিব হবে না। (হিদায়া ১/১৮৫)
চ. নিসাবের মালিক ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ না হওয়া।
=======================
নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বলতে যা যা বুঝায়
=======================
মৌলিক প্রয়াজনের তথা জীবন ধারণের জন্য যে সব বস্তু ও উপকরণ আবশ্যক, তার অতিরিক্ত সম্পদ কারো নিকট থাকলে যাকাত ওয়াজিব হয়। আর এ সব নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহে যাকাত আসে না। যেমন- বাসস্থান, প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়, ঘরোয়া আসবাবপত্র, আরোহনের যানবাহন, গাড়ী-মটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ফ্রিজ-ইস্ত্রী, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদির যাকাত আসে না। তদ্রুপ খাদ্যদ্রব্য, সাজ-সজ্জা ও বিলাসিতার জন্য গ্রহণকৃত বস্তুসমূহেও যাকাত আসে না। হীরা-জহরত, মণি-মাণিক্য, ইয়াক্বুত-যমরদ ইত্যাদি পাথর সমূহ যত মূল্যবানই হোক না কেন, কোন ব্যবসার উদ্দেশ্যে না হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। এমনিভাবে ukil engeneyar and আলেমদের কিতাবসমূহ বা ব্যক্তিগত অধ্যয়ণের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন জিনিস এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের পেশা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। এসব গুলোই মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভূক্ত। [ ফতওয়ায়ে আলমগীরি; উদ্র্ূ:৪/৭, ইলমূল ফিক্বহ: ৪/১৪]
-=======================================
যাকাত আদায়যোগ্য সম্পদ
===============
১ স্বর্ণ: [যে কোন আকৃতিতে আপন মালিকানাস্বত্বে বিদ্যমান]
২ রূপা: [যে কোন আকৃতিতে আপন মালিকানাস্বত্বে বিদ্যমান]
নোট: স্বর্ণ-রূপার অলংকারের ক্ষেত্রে মূল স্বর্ণ-রূপার মূল্য ধর্তব্য হবে। মেকিং চার্জ বা অলংকার মূল্য ধর্তব্য নয়।
৩ নগদ, নগদায়নযোগ্য অর্থ ও প্রাপ্য ঋণ .যে কোন সূত্রে আপন মালিকানায় বিদ্যমান,
ক. নিজ হাতে বা ব্যক্তি বিশেষের নিকট গচ্ছিত মজুদ অর্থ।
খ. ভবিষ্যত পরিকল্পনা পূরণের (যেমন, হজ্জ, বিবাহ, গৃহ নির্মাণের) উদ্দেশ্যে জমাকৃত অর্থ।
গ. বৈদেশিক মুদ্রা rryal , youro,dolar (দেশীয় মূল্যে তার মূল্যমান অর্থ )
ঘ. ব্যাংক, সমবায় সমিতি বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (চলতি, সঞ্চয়ী, দীর্ঘ মেয়াদী) যে কোন ধরনের জমাকৃত অর্থ ও তার বৈধ মুনাফা।
উল্লেখ্য, এ হিসাব চন্দ্রবর্ষের শেষে ব্যাংকের স্ট্যাটমেন্ট দেখে নির্ধারণ করতে হবে এবং ট্যাক্স ও সার্ভিস চার্জ কাটা গেলে তা হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে।
ঙ ব্যাংক লকারে গচ্ছিত সম্পদের অর্থমূল্য
চ ফেরতযোগ্য বীমা পলিসিতে জমাকৃত প্রিমিয়াম
ছ যে কোন বন্ড, ডিবেঞ্চার ও ট্রেজারী বিল ইত্যাদির ক্রয়মূল্য
জ ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের সমুদয় অর্থ .
ঝ কাউকে ঋণ হিসেবে প্রদত্ত অর্থ (যদি ঋণগ্রহীতা তা স্বীকার করে এবং প্রাপ্তির আশা থাকে)
ঞ পাওনা বেতন [যদি প্রাপ্তির আশা থাকে]
ট বিক্রিত পণ্যের মূল্য, যা এখনও হস্তগত হয়নি বা বিল অফ এক্সচেঞ্জ প্রাপ্তির আশা থাকে]
ঠ যে কোন স্থাপনা ভাড়া নেয়ার সময় (জামানত হিসেবে) প্রদত্ত সিকিউরিটি মানি, এ্যাডভান্স মানি কিংবা ব্যাংক গ্যারান্টি মানি, যদি তা ফেরতযোগ্য হয়। [এমনকি গ্যারান্টি মেয়াদকালে তা উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও] উল্লেখ্য: শেষোক্ত চার প্রকার সম্পদের যাকাত তাৎক্ষনিক আদায় জরুরী নয়, বরং যখন নূন্যতম ১০.৫ তোলা (১২২.৪৭ গ্রাম) রূপার মূল্য পরিমাণ পাওয়া যাবে, তখন পূর্বের সব বছরের যাকাত আদায় করতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক বছরই অন্যান্য সম্পদের সাথে এ গুলোর যাকাত আদায় করে নেয়া উত্তম।
৪ ব্যবসা পণ্যের মূল্য (যার নিম্নোক্ত অবস্থা হতে পারে)
ক বিক্রয়যোগ্য মজুদ পণ্য, উৎপাদিত পণ্য
খ পণ্য তৈরীর জন্য মজুদ কাঁচামাল
গ প্রক্রিয়াধীন পণ্য, প্যাকেটিং, প্যাকেজিং পণ্য
ঘ লাভে বিক্রির উদ্দেশ্যে ক্রয় করা যাবতীয় পণ্য (যেমন, জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, ধান, গম, আলু ইত্যাদি
ঙ যৌথ কারবারে বিনিয়োগকৃত অর্থের নগদ অংশ, তা দ্বারা ক্রয়কৃত ব্যবসাপণ্য ও যাকাতযোগ্য লভ্যাংশ
[উল্লেখ্য, ব্যবসাপণ্যের ক্ষেত্রে সকল পণ্যের একত্র পাইকারী বিক্রয়মূল্য ধর্তব্য হবে। নিজ ক্রয়মূল্য বা খুচরা বিক্রয়মূল্য ধর্তব্য নয়।]
খ. বিয়োগকৃত সম্পদসমূহ
=============
১ মৌলিক প্রয়োজন (চিকিৎসা, ব্যয়নির্বাহ) পূরণে নেয়া ঋণ
২ প্রবৃদ্ধি বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে নেয়া এমন ঋণ যা দ্বারা যাকাতযোগ্য সম্পদ (কাঁচামাল, ব্যবসাপণ্য) ক্রয় করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়নমূলক লোন, জমি, বিল্ডিং, মেশিনারিজ দ্রব্য ক্রয়ে নেয়া ঋণ বিয়োগ করা হবে না।
৩ ক্রয়কৃত পণ্যের অপরিশোধিত মূল্য, যা এ বছরই আদায় করতে হবে।
৪ দেনমোহর, যা চলতি বছর আদায়ের আশা আছে।
৫ বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে নেয়া ফেরতযোগ্য সিকিউরিটি বা এ্যাডভান্স মানি
৬ অধিনস্থদের অনাদায়ী বেতনÑভাতা
৭ অনাদায়ী ট্যাক্স, বাড়ী-দোকান ভাড়া, যাবতীয় সার্ভিস বিল
৮ অতীতের অনাদায়ী যাকাত (কেননা, তা পূর্ণই আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, পূর্বে একাধিক বছরে যাকাত আদায় না করে থাকলে সে বছরগুলির আনুমানিক গড় স্থিতি বের করে ২.৫% যাকাত হিসেবে আদায় করে দিবে। সন্দেহ মুক্তির জন্য নীট হিসাব হতে কিছু বেশি দিবে এবং ভুল-ত্রুটি ও বিলম্বের জন্য ইস্তেগফার করবে।
৯ সুদ, অবৈধ মুনাফা, বন্ড-লটারী পুরস্কার ও হারাম পন্থায় অর্জিত সমুদয় অর্থ (এসব সম্পদ সম্পূর্ণই সওয়াবের নিয়ত ব্যতিরেকে দান করে দিতে হবে।
note ======================http://351224351224.blogspot.com/2014/07/blog-post.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন