যাকাতের পরিচয়
===========
‘যাকাত’ শব্দটি ‘তাযকিয়াতুন’ ধাতু থেকে নির্গত, অর্থ- পবিত্র করা, বৃদ্ধি করা, বিশুদ্ধ করা, ক্রমবৃদ্ধি ও আধিক্য ইত্যাদি। যাকাতের কারণে যেহেতু যাকাত দাতার মনে ও সম্পদে পবিত্রতা অর্জিত হয় এবং সম্পদ বরকতযুক্ত হয় এজন্য যাকাতকে যাকাত নামে অভিহিত করা হয়।
ইসলামের পরিভাষায় নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক মুসলমান প্রতি বছর তাঁর সম্পদের যে নির্ধারিত অংশ শরিয়তের নির্দেশ মুতাবিক গরীবদের মধ্যে ব্যয় করতে বাধ্য, তাকে যাকাত বলে।
যাকাত এর সূচনা
দ্বীন ইসলামের সূচনা হযরত আদম আ. থেকে। দ্বীন সব সময় এক ও অভিন্ন। কিন্তু বিভিন্ন নবী ও রাসূলের যুগে শরীয়ত ভিন্ন ভিন্ন ছিল। এতদসত্ত্বেও নামাজ ও যাকাত সকল নবী ও রাসূলের যুগেই চিরন্তন শরঈ বিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। তাওরাত, যাŸুর, ইঞ্জিল প্রভৃতি সকল আসমানী কিতাবেই যাকাতের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা স্মরণ করো, সে সত্যিকার প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী রাসূল ও নবী ছিল। সে তাঁর পরিবারের লোকদেরকে নামাজ ও যাকাতের নির্দেশ দিত এবং তার প্রতিপালকের সন্তোষভাজন ছিল।” (সূরা মারয়াম: ১৯/৫৪-৫৫) অন্যত্র এসেছে, “যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। (সূরা তওবা,৯/১১) উল্লেখিত আয়াতদ্বয় প্রমাণ বহন করে যাকাত পূর্ববর্তী নবিদের শরিয়তেও বিদ্যমান ছিল। আমাদের শরিয়তে হিজরি দ্বিতীয় সনে রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে যাকাত ফরয হয়েছে। (শরহে নুক্বায়াহ ঃ ১/১৪৫)
যাদের উপর যাকাত ফরজ
সামর্থবান লোকর উপর যাকাত ফরজ। তবে যাকাত ফরয হওয়ার জন্য কতগুলো শর্ত রয়েছে। যথাÑ
ক. মুসলমান হওয়া।
খ. সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।
গ. বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া, নাবালেগ না হওয়া।
ঘ. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। নেসাবের পরিমাণ হলো-নিত্য দিনের প্রয়োজন পূরণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেয়ার পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ তথা ৬১২.৩৬ গ্রাম পরিমাণ রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ বা ৮৭.৪৮ গ্রাম পরিমাণ স্বর্ণ থাকা অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালের মালিক হওয়া।
ঙ. নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা। যদি পূর্ণ এক বছর না হয় তাহলে যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে না। হুজুর (সা) ইরশাদ করেছেন কোন সম্পদের যাকাত বছর অতিবাহিত হওয়া ব্যতিত ওয়াজিব হবে না। (হিদায়া ১/১৮৫)
চ. নিসাবের মালিক ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ না হওয়া।
নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বলতে যা যা বুঝায়
=======================
মৌলিক প্রয়াজনের তথা জীবন ধারণের জন্য যে সব বস্তু ও উপকরণ আবশ্যক, তার অতিরিক্ত সম্পদ কারো নিকট থাকলে যাকাত ওয়াজিব হয়। আর এ সব নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহে যাকাত আসে না। যেমন- বাসস্থান, প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়, ঘরোয়া আসবাবপত্র, আরোহনের যানবাহন, গাড়ী-মটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ফ্রিজ-ইস্ত্রী, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদির যাকাত আসে না। তদ্রুপ খাদ্যদ্রব্য, সাজ-সজ্জা ও বিলাসিতার জন্য গ্রহণকৃত বস্তুসমূহেও যাকাত আসে না। হীরা-জহরত, মণি-মাণিক্য, ইয়াক্বুত-যমরদ ইত্যাদি পাথর সমূহ যত মূল্যবানই হোক না কেন, কোন ব্যবসার উদ্দেশ্যে না হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। প্রয়োজনীয় ব্যয়ের উদ্দেশ্যে কিছু মুদ্রা ক্রয় করলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না। এমনিভাবে আলেমদের কিতাবসমূহ বা ব্যক্তিগত অধ্যয়ণের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন জিনিস এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের পেশা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। এসব গুলোই মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভূক্ত। [ ফতওয়ায়ে আলমগীরি; উদ্র্ূ:৪/৭, ইলমূল ফিক্বহ: ৪/১৪]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন