Translate

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

কলম্বাসের পূর্বেই মুসলমান কর্তৃক আমেরিকা আবিষ্কার এবং আমেরিকায় ইসলাম বিস্তৃতির ক্রমধারা র বিস্তারীত আলোচনা

কলম্বাসের পূর্বে মুসলমান কর্তৃক আমেরিকা আবিষ্কার এবং আমেরিকায় ইসলাম বিস্তৃতির ক্রমধারা

Share0 ShareThis
১৮৩৫ সালে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত লেমিন কেবে (Lamine Kebe) বলেন “আমেরিকায় কিছু ভাল মানুষ আছে, কিন্তু আফ্রিকা এবং ইসলাম সম্পর্কে তারা সকলে খুবই অজ্ঞ (There are good men in America, but all are very ignorant of Africa and very ignorant of Islam)”। আমেরিকান জনগনের ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারনা না থাকলেও বহু পূর্ব থেকেই আমেরিকায় মুসলমানদের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। কলম্বাস পূর্ব যুগে দু একজন মুসলমানের আমেরিকায় আগমনের ইতিহাস পাওয়া গেলেও মূলত ষোড়শ শতক হতে আফ্রিকা থেকে ধৃত মুসলমান দাস দাসীদের মাধ্যমেই মুসলমানরা তাদের স্বীয় ঐতিয্য স্বল্প পরিসরে হলেও টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয় স্বমহিমায়।
কলম্বাস পূর্বযুগে আমরেরিকায় মুসলমান
১১৭৮ সালে সং শাসনামলে (Song Dynasty) সারকা (Circa) নামে একজন চাইনিজ লেখক কর্তৃক লিখিত একটি দলীল সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে যা সুং দলীল (Sung Document) নামে পরিচিত। সুং দলীল থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ১১৭৮ সালে চীন থেকে যাত্রা শুরু করে একদল মুসলমান নাবিক “Mu-Lan-Pi (বর্তমান ক্যালিফোর্নিয়া)” নামক আমেরিকার একটি অঞ্চলে পৌছায়। সে মোতাবেক কলম্বাসের তিন শতক আগে মুসলমানেরাই প্রথম আমেরিকায় আবিষ্কার করে।
ব্রিটিশ নৌ ইতিহাসবিদ গ্যাভিন মানজিস (Gavin Manzies) তার লিখিত বই “১৪২১” এ উল্লেখ করেছেন ১৪২১ সালে ঝেং হি (Zheng He) নামে একজন চাইনিজ মুসলমান কলম্বাসেরও ৭১ বছর পূর্বে আমেরিকায় গমন করেন। ঝেং হি তার নৌ অভিযান পরিচালনা করার জন্য ফুজিয়ান, গুয়াংডোং এবং ঝেজিয়াং (Fujian, Guangdong and Zhejiang) প্রদেশ থেকে বাছাই করে দক্ষ মুসলমান নাবিক সংগ্রহ করেন। অতঃপর ঝেং হি চুয়াঝৌ (Quazhou) প্রদেশে গমন করেন এবং সুন্দর ও নিরাপদ ভ্রমন প্রার্থনায় স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করেন। সেখান থেকেই ঝেং তার দলবল নিয়ে নৌ অভিযান শুরু করেন এবং আমেরিকায় পৌছতে সক্ষম হন।
সুং ডকুমেন্ট এবং ব্রিটিশ লেখক গ্যাভিন মানজিসের লেখার বিষয়বস্তু এখনও বিষদভাবে প্রমানিত হয় নি যদিও অনেক ইতিহাসবিদ তখনকার সার্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে ঘটনা দুটি সত্য হিসেবে প্রতিপাদ্য করেছেন। কর্নেল কেন্নোন (Colonel Kennon) নামক একজন নৌ ইতিহাসবিদ বলেছেন, “এশিয়া থেকে আমেরিকার গতিপথ যতটুকু আমি জানি, এবং জাপানিজ ও চাইনিজদের আমি যতটুকু দেখেছি, তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই অনেক গোড়া থেকেই তারা মাঝে মাঝে আমেরিকা উপকূল ভ্রমন করত (From what I know of the track across from Asia to America, and from what I have seen of the Japanese and Chinese, I have no doubt whatever that from very early times they occasionally visited our American shores (Kennon, 2005))।” উপরন্তু তখনকার সময়ে মুসলমানরা ছিল শিক্ষা দীক্ষাসহ সর্বেক্ষেত্রে আগ্রগামী। সমুদ্রে জাহাজ পরিচালনায়ও মুসলমানদের ছিল অসামান্য দক্ষতা। সে হিসেবেও ঘটনা দুটিকে সত্য প্রতিপাদন করা যায়।
কলম্বাসের ভারত বা জাপান (আমেরিকা) অভিযান
কারো কারো মতে ১৪৯২ সালে কলম্বাস কর্তৃক ভারত বা জাপান অভিযানের সময় তার প্রধান কয়েকজন সহযোগী ছিল মুসলমান। ১৪৯২ সালে স্পেনে সর্বশেষ মুসলিম খলীফার পতন হলে রাতারাতি রানী ইসাবেলা এবং ফার্দিনান্দ মুসলমানদের অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যান। গ্রানাডা জয় করার দুই তিন মাস পর একই বছর অর্থাৎ ১৪৯২ সালে রানীর অর্থনৈতিক সহযোগীতায় আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে কলম্বাস ভারত বা জাপান গমন করতে তার প্রাথমিক যাত্রা শুরু করেন। তার সঙ্গীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পিজোঁ ব্রাদার মার্টিন অ্যালঞ্চো পিজোঁ (Pinjon) এবং সেন্ট ইয়ানেজ পিজোঁ। পিজোঁ ভ্রাতৃদ্বয় ছিল মরক্কোর মুসলিম পরিবার আবু জাইয়ান পরিবারের উত্তরসূরী যাদেরকে জোরপূর্বক খ্রিস্টান হতে বাধ্য করা হয়েছিল। পিজোঁ শব্দটি এসেছে মূলত আবু জাইয়ান শব্দ থেকে। কারো কারো মতে শুধু পূর্ব পুরুষরাই নয়, পিজোঁ ভ্রাতৃদ্বয়ও মুসলমান ছিল যদিও তারা তা গোপন রেখেছিল।
ঐসময়ে মুসলমানেরা ছিল সর্বক্ষেত্রে অগ্রসর। বিশেষ করে সমুদ্রে জাহাজ পরিচালনায় তাদের দক্ষতা ছিল অত্যন্ত উচু মানের। আর একারনেই মূলত কলম্বাস পিজো ভ্রাতৃদ্বয়কে তার অন্যতম সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। যাত্রা শুরুর কয়েক মাস পূর্বে কলম্বাস স্পেনের পশ্চিম প্রান্তস্থ অ্যারাবিদা (Arrábida) নামক একটি ছোট্ট শহরে বসবাস শুরু করেন সেখান থেকেই সমুদ্র অভিযানের যাবতীয় পরিকল্পনা সম্পন্ন করেন। বস্তুত অ্যারাবিদা নামক শহরটি পূর্বে ‘আর রবিতা’ নামে পরিচিত ছিল। মুসলমানদের পরাজয়ের ফলে পরবর্তীতে এই শহরের প্রকৃত নাম বিকৃত করে ‘অ্যারাবিদা’ নামকরন করা হয় যা বর্তমানে পর্তুগালের অন্তর্ভুক্ত। অনেকের মতে কলম্বাসের সঙ্গীদের অনেকেই মুসলমান ছিল, তবে সেটা এখন পর্যন্ত প্রমানিত হয় নি। তবে ঐ অভিযানে পিজো ভাইদের মত আরো অনেকেই ছিলেন যাদের পূর্বপুরুষদেরকে জোরপূর্বক খ্রিস্টধর্ম গ্রহনে বাধ্য করা হয়েছিল বলে প্রমানিত হয়েছে।
ষোড়শ শতকে আমেরিকায় মুসলমান
ষোড়শ শতকে আমেরিকার সন্ধান পাওয়া একজন মুসলমান ছিলেন এস্তেফানিকো। যার প্রকৃত নাম ছিল মুস্তাফা আঝ-জামুরি এবং তিনি ১৫৩৯ সালে মৃত্যুবরন করেন। মুস্তফা আঝ-জামুরি ছিলেন মরক্কোর অধিবাসী। একদল পর্তুগীজ নাবিক কর্তৃক বন্দী করে ১৫২৭ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দাস হতে বাধ্য করা হয়। দু একটি সূত্রমতে পরবর্তীতে তাকে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহনেও বাধ্য করা হয়। জানা যায় মুস্তাফা আঝ-জামুরি ছিলেন ঔষুধ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, কারো মতে তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক।
অষ্টাদশ শতকে আমেরিকায় মুসলমান ও ইসলাম
অষ্টাদশ শতকে অসংখ্য আফ্রিকান নাগরিকদের অপহরন করে আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে দাস হতে বাধ্য করা হত। ইতিহাসবিদদের মতে মোট দাসদের মধ্যে কমপক্ষে শতকরা দশ ভাগ ছিল মুসলমান। এমনই একজন মুসলমান দাস ছিলেন আইয়ুব বিন সোলাইমান (Jon Ben Solomon) যিনি ১৭৩১ সালে গাম্বিয়া থেকে অপহৃত হন। আইয়ুব বিন সোলায়মান ছিলেন শিক্ষিত, বিচক্ষন এবং দাবী আদায়ে বদ্ধ পরিকর। উল্লেখ্য তখনকার সময়ে মুসলমানরা ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি শিক্ষিত। তারা পড়তে এবং লিখতে পারতেন। দাস হওয়া সত্ত্বেও আইয়ুব বিন সোলায়মান মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা প্রচারে লিপ্ত ছিলেন। একদিন কতিপয় আমেরিকান তার নগ্ন ছবি অঙ্কন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। অতপর আইয়ুব বিন সোলায়মান নগ্ন হতে অস্বীকার করলেন এবং পোষাক পরিহিত অবস্থায়ই তাদেরকে তার নগ্ন ছবি অঙ্কন করতে বললেন। জবাবে আমেরিকান লোকেরা বলল, আমরা তোমার শরীর না দেখে কিভাবে তা চিত্রায়িত করব। বিন সোলায়মান উত্তর দিলেন সামান্য পোষাকের অন্তরালে থাকা শরীরের ছবিই তোমরা অঙ্কন করতে পার না; তাহলে কিভাবে তোমদের কিছু চিত্রকর সৃষ্টিকর্তার ছবি অঙ্কন করে যাকে কেউই কখনও অবলোকন করে নি? শেষ পর্যন্ত তিনি যুক্তরাজ্যে রাজ পরিবারের সাথে দেখা করতে সমর্থ হন এবং দাস থেকে মুক্তি পেয়ে ১৭৩৪ সালে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। থমাস ব্লুয়েট (Thomas Bluett) নামক একজন আইনজীবী যিনি তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমন করেছিলেন, আইয়ুব সোলাইমান সম্পর্কে বলে, “তার সাথে কথোপকথন এবং তার প্রতি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করার আগে তিনি একটি বা দুটি চরন লিখলেন এবং অতঃপর যখন সেটা পড়লেন, তিনি ‘আল্লাহ’ এবং ‘মুহাম্মাদ’ শব্দগুলো উচ্চারন করলেন; তিনি এক গ্লাস মদ গ্রহন করতেও অস্বীকার করেছিলেন যা আমাদের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হয়েছিল, আমরা উপলব্ধি করলাম তিনি একজন মুহাম্মাদীন (মুসলিম), কিন্তু ঠিক কোন দেশ থেকে এসেছে তা ঠাহর করতে পারলাম না….আমরা বুঝতে পারলাম তিনি কোন সাধারন দাস ছিলেন না (Upon our Talking and making Signs to him, he wrote a Line or two before us, and when he read it, pronounced the Words Allah and Mahommed; by which, and his refusing a Glass of Wine we offered him, we perceived he was a Mahometan, but could not imagine of what Country he was…. we could perceive he was no common Slave)”

আইয়ুব বিন সোলায়মান, ১৭৭৩
আঠার শতকের আরও একজন উল্লেখযোগ্য আফ্রিকান বংশোদ্ভুত মুসলমান দাস ছিলেন বিলালী মুহাম্মাদ যাকে জর্জিয়ার স্যাপেলো দ্বীপে (Salelo Island) একজন দাস ব্যবসায়ীর কাছে বক্রি করা হয়। উল্লেখ্য বিলালী মুহাম্মাদের মালিক ছিলেন খুবই সহিষ্ণু এবং উদার মানসিকতা সম্পন্ন যিনি পরবর্তীতে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য চেষ্টা সাধনা করেন। ইতিহাসবিদদের মতে ১৭৭০ সালের দিকে বিলালী মুহাম্মাদ সিয়েরালয়নের একটি শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। কিশোর বয়সেই বিলালীকে অপহরন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথায় বাধ্য করা হয়। বিলালী মুহাম্মাদ ছিলেন কুরআন এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারী। বিলালী মুহাম্মাদ তার দাস জীবনের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেই জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিশেষ করে ইসলামী আইন কানুন বিষয়ে লেখালেখি করেন যা বর্তমানে বিলালী দলিল (Bilali Document) নামে পরিচিত। ১৮৫৭ সালে জর্জিয়ায় বিলালী মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর তার কামরা থেকে ১৩ পৃষ্ঠার হস্তলিখিত একটি দলিল উদ্ধার করা হয়। বিলালী মুহাম্মাদের হস্তলিখিত দলিল আরবি ভাষায় লিখিত হওয়ায় অনেক দিন ধরে যাদুঘরে পড়েছিল এবং ধারনা করা হয়েছিল এটা বিলালী মুহাম্মাদের ব্যক্তিগত ডায়েরী। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ‘বিলালী দলিল’ ছিল মূলত ইসলামী শরীয়তের বিভিন্ন দিক নিয়ে দিক নির্দেশনা যাকে বর্তমান সময়ের ইসলামী পন্ডিতরা আমরেরিকার ‘প্রথম ফিকাহ’ শাস্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন। অপহৃত অবস্থায় এক কাপড়ে আমেরিকায় যেতে বাধ্য হওয়ার অন্যদের মত বই পুস্তকতো দূরের কথা পবিত্র কুরআন শরীফটাও সাথে নিতে পারেন নি বিলালী মুহাম্মাদ। তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় তিনি যা লিখেছিলেনন প্রকৃতপক্ষে তার পুরোটাই ছিল অতীতের পড়াশোনার উপর ভিত্তি করে তৎকালীন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।
শুধু হস্তলিখিত দলিলই নয়, বিলালী মুহাম্মাদ কর্তৃক ইসলামের জন্য কাজ করার প্রমান পাওয়া যায়। উনিশ শতকের চল্লিশ দশকের শুরুর দিকে একজন গবেষক স্যাপেলো দ্বীপ ভ্রমন করেন। উক্ত গবেষক সেখানে বসবাসরত বেশকিছু আফ্রো-আমেরিকান নাগরিকের সাথে কথা বলেন যাদের অনেকের পূর্বপুরুষ ছিল মুসলমান। কেটি ব্রাউন নামক একজন মহিলা তার দাদা দাদী সম্পর্কে বলেন, সে তার দাদা দাদীকে নিয়মিত সুর্যদয় এবং সুর্যাস্তের মুহুর্তে এবং ঠিক দুপুরে নামাজ পড়তে দেখতেন। আরেক ব্যক্তি বলেন, আমি আমার চাচা ক্যালিনা এবং চাচী হেনা অনেক মজার বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেখতাম এবং তারা তাদের নামাজের ব্যাপারে ছিল খুবই সময়নিষ্ঠ। শ্যাড হল নামক আরেকজন লোক বলেন, দ্রুত অনেকে মাঠের মধ্যে জড়ো হত এবং কাপড় বিছিয়ে তার উপর তারা সুর্যদ্বয়, সুর্যাস্ত এবং ঠিক দুপুরে নামাজ আদায় করত। অপর একজন বৃদ্ধ মহিলা বলেন, আমি আমার দাদী/নানীকে একটি বই পড়তে দেখতাম এবং আমরা ছেলেমেয়েরা যখন খেলাধুলা করতাম যতদূর মনে পড়ে তখন তিনি আমাদেরকে বলতেন “আশামানাগাদ (Ashamanagad)”। ধারনা করা হয় কথাটি ছিল আসলে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদ”, “আশামানাগাদ” নয়।
এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন দাস দাসী সম্পর্কে জানা যায় যারা মুসলমান ছিলেন। প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা থাকায় তারাও গোপনে নিজেদের মধ্যে ইসলামী বিধি বিধান চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন।
অষ্টাদশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশেষ তৎপরতা
১৭৯০ সালে জর্জ ওয়াশিংটন ধর্মসভা (Synagog) সমীপে লিখিত তার প্রথম চিঠিতে লিখেন, “ইব্রাহীমের অধিকারে থাকা শিশুরা যারা এই ভূমিতে বসবাস করে তারা অব্যাহতভাবে এখানে বিয়ে করতে পারবে এবং অন্যান্য অধিবাসীদের সাথে শান্তিপূর্নভাবে বসবাস করবে যেখানে প্রত্যকেই আত্মমর্যাদা এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে নিরাপদে থাকবে, তাদেরকে কোনরুপ ভয়ভীতি দেখানোর মত কেউ থাকবে না (May the children of the stock of Abraham who dwell in the land continue to marry and enjoy the goodwill of the other inhabitants while everyone shall safely under his own vain and fitly, there shall be none to make him afraid)”। অন্য একটি চিঠিতে তিনি লিখেন, এমনকি তিনি মুহাম্মাদীনদেরকেও স্বাগত জানাবেন যদি তারা ভাল কর্মী হয়।
১৭৯০ সালে সাউথ ক্যারোলিনার বিধান সভা (legislative body) মরক্কোর একটি সম্প্রদায়ের জন্য প্রথম বিশেষ আইনগত অবস্থান (Special segal status) অনুমোদন করে। মূলত এই সকল মরক্কোন মুসলমানদেরকে ধরে নিয়ে দাস-দাসী হতে বাধ্য করা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে তারা এধরনের অমানবিক আচরনের বিরুদ্ধে কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্ট বরাবর একটি আবেদন জানায়। আবেদনে তারা উল্লেক করে তারা ককেশিয়ানও নয়, আফ্রিকানও নয়; সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জাতি, মূর (Moors)। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৯৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস ‘মূর সান্ড্রি অ্যাক্ট (Moors sundry acts)’ নামে একটি চুক্তিতে সাক্ষর যাতে তিনি ঘোষনা করেন, “মুসলমানদের আইন, ধর্ম এবং প্রশান্তির বিরুদ্ধে যায় এমন কোন বিরুদ্ধবাদী চরিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই (The United states had no character of enmity against the laws, religion or tranquility of Musalman)”।
উনিশ শতকের বিভিন্ন লেখকের লেখনীতে মুসলমানদের অস্তিত্ব
আঠার উনিশ শতকে কয়েকজন শিক্ষিত দাসসহ বেশ কিছু লেখকের গ্রন্থ থেকেও তখনকার সময়ে আমেরিকায় মুসলমানদের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৮৫৪ সালে চার্লস বল (Charles Ball) নামে একজন দাস যিনি ছিলেন খিস্টধর্মাবলম্বী একজন শিক্ষিত ব্যক্তি তার লিখিত একটি বইয়ে উল্লেখ করেন, “আমি কয়েকজন দাসকে চিনতাম যারা ছিল মুহাম্মাদ (স) এর অনুসারী শিক্ষিত লোক। সে সময় পর্যন্ত আমি কখনই মুহাম্মাদের ধর্ম (ইসলাম) সম্পর্কে কিছুই শুনিনি। আমার উপনিবেশে একজন লোক ছিল যিনি প্রত্যহ পাচঁ বার নামাজ আদায় করতেন, এবং নামাজ আদায় করার সময় সর্বদাই পূর্ব দিকে ঘুরে দাড়াতেন (I knew of several slaves who must have been from what I have seen learned Mohammadin. I knew of people I did not know who they were back then, now I know they were Muslims. At that time I had never heard of the religion of Muhammad. There was a man on my plantation who prayed five times a day, always turning to the east when he performed his prayer)”।
১৮৩৪ সালে অ্যালেন ডি অস্টিন (Allan D. Austin) তার “African Muslims in Antebellum America” বইয়ে বেশ কয়েকজন আফ্রিকান বংশোদ্ভুত দাসদের জীবনালেখ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাদের মধ্য ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক নামক একজন মুসলমান যিনি তার জীবনচরিতে লিখেছেন, আমাদের গোত্রের বিশ্বাসই হচ্ছে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস। যখন আমার দাস জীবন শুরু হয়েছিল তখন থেকে আজ পর্যন্ত তাদের কাছে থেকে দাস জীবনের অনেক তিক্ততার স্বাদ গ্রহন করেছি। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহর যার অধীনস্ত সকল ক্ষমতা এবং সকল কিছু, তিনি যা চান তাই করেন, এমন কেউ নেই আল্লাহ যা হুকুম করেছেন তা বাতিল করতে পারে আথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে যা দেওয়া হয়েছে তা অনুমোদন করতে পারে (The faith of our family is the faith of Islam. That was the beginning of my slavery life when I captured until this day, I tasted the bitterness of slavery from them but Alhamdulillah “all praise be to Allah under whose power or all things, He does whatever He wills, no one can turn aside what He has decreed or drained nor can any one with hold what he has given)”। ধারনা করা হয় তিনি কুরআন থেকে কথাগুলো লেখার চেষ্টা করেছিলেন।
আমেরিকায় প্রথম ধর্মান্তরিত মুসলমান
ইতিহাসবিদদের মতে এডোয়ার্ড উইলমোট ব্লাইডেন (Edward Wilmot Blyden) আধুনিক যুগের অন্যতম পুরনো একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। ব্লাইডেন ১৮৩২ সালের ৩ আগস্ট বর্তমান যুক্তরষ্ট্রের ভার্জিনিয়া দ্বীপে জন্মগ্রহন করেন। ব্লাইডেনের মা বাবা ছিলেন নাইজেরীয় বংশোদ্ভূত। ১৮৮৯ সালে ব্লাইডেন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। পরবর্তীতে তিনি লাইবেরিয়া গমন করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে লাইবেরিয়ার ইসলামী শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

এডোয়ার্ড উইলমোট ব্লাইডেন, ১৮৬০
ব্লাইডেনের ইসলাম গ্রহনের চার বছর ১৮৮৮ সালে মুহাম্মাদ আলেকজান্ডার রাসেল ওয়েব (Muhammad Alexandar Russel webb) নামক আরেকজন অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। রাসেল ওয়েব ১৮৪৬ সালের ৯ নভেম্বর নিউইয়র্কের হাডসনে জন্মগ্রহন করেন। রাসেল ওয়েব ছিলেন একাধারে লেখক, প্রকাশক এবং সমসাময়িক সময়ের অন্যতম সেরা সাংবাদিক। ১৮৮৭ সালে মিস্টার ওয়েব ম্যানিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্য দূত (Consular Representative) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। রাসেল ওয়েব ভারতের বেশ কয়েকজন মুসলমানের সাথে যোগাযোগ করতে সমর্থ হন। পরবর্তীতে তিনি ভারত ভ্রমন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে স্ত্রী এবং তিন সন্তানসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। ১৮৯৩ সালে রাসেল ওয়েব নিউইয়র্কে ‘আমেরিকান মুসলিম ব্রাদারহুড (American Muslim Brotherhood)’ নামক একটি ইসলামী সংগঠন প্রতিষঠা করেন যা আমেরিকার অন্যতম পুরনো একটি ইসলামী সংগঠন। তারপর থেকে ১৯১৬ সালের ১ অক্টোবর মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রান হিসেবে কাজ করে যান এবং আমেরিকান মুসলমানদের একজন মুখপাত্রে পরিনত হন।
উনিশ শতকে আমেরিকায় প্রথম কোন কাদিয়ানীর আগমন অতঃপর
১৯২০ সালে সর্বপ্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভুত ড: মুফতি মুহাম্মাদ সাদিক নামক একজন কাদিয়ানী আমেরিকায় গমন করেন এবং শিকাগো শহরে বসবাস শুরু করেন। ড: সাদেক শিকাগোতে ১৯২১ সালে আহমদিয়া মুসলিম কমিউনিটি (Ahmadia Muslim Community) নামে একটি সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেন। মুফতি সাদেকের আগমনের কয়েক বছর পর ওয়ালেস ডি ফারদ (Wallace Fard Muhammad) কর্মের সন্ধানে আমেরিকায় গমন করেন। তরা পিতা ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভিত কাদিয়ানী এবং মা ছিলেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক। ওয়ালেস ডি ফার্দ শিকাগোর কাদিয়ানী উপাসনালয়ে যাতায়াত করতেন। সে হিসেবে ধারনা করা হয় তিনি প্রথমদিকে কাদিয়ানী ধর্ম অনুসরন করতেন। ১৯৩০ সালে ‘দ্য লস্ট-ফাউন্ড নেশন অফ ইসলাম ইন দি ওয়াইল্ডার্নেস অফ নর্থ আমেরিকা (The Lost-Found Nation of Islam in the Wilderness of North America)’ নামে ডি ফার্দ একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে নেশন অব ইসলাম (Nation of Islam) নাম ধারন করে যার মাধ্যমে মুলত কাদিয়ানী ধর্ম প্রচার করা হত। ১৯৩৪ সালে ওয়ালেস ডি ফার্দ নিখোজ হলে তার সহচর এলাইজা মুহাম্মাদ (Elijah Muhammad) নেশন অব ইসলামের নেতা হন এবং আস্তে আস্তে কাদিয়ানী মতবাদ থেকে দূরে সরে সম্পূর্ন নতুন একটি মতবাদ প্রবর্তন করেন। এলাইজা মুহাম্মাদ ওয়ালেস ডি ফার্দকে ‘আল্লাহ’ ঘোষনা করেন। পাশাপাশি তিনি নিজেকে নবী দাবী করে বসেন। বস্তুত পূর্বে এলাইজা মুহাম্মাদ ছিলেন একজন মদ্যপায়ী বিপদগামী ব্যক্তি যিনি সাংসারিক জীবনেও ছিলেন অসুখী।
পরবর্তীতে এলাইজা মুহাম্মাদ তার ছেলে আকবার মুহাম্মাদকে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য পঠান। আকবার সেখানে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন এবং পিতার মতবাদের সাথে দ্বিমত পোষন করেন। ১৯৭৫ সালে এলাইজা মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর তার অপর ছেলে ওয়ারিথ দীন মুহাম্মাদ (Warith Deen Muhammad) নেশন অব ইসলামের প্রধান নির্বাচিত হন। তিনি ওয়ালেস ডি মুহাম্মাদকে আল্লাহ এবং এলিজাহ মুহাম্মাদকে নবী মানতে অস্বীকার করেন। পিতার ভ্রান্ত মতবাদ পরিহার করে ইসলামের মূল পাচটি স্তম্ভের সাথে এলাইজা মুহাম্মাদের অনুসারীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং পবিত্র কুরআন এবং রাসুল (স) এর আদর্শের দিকে তাদেরকে আহবান জানান। তিনি নেশন অব ইসলামের ৪০০ উপাসনালয়কে মসজিদে রুপান্তর করেন। আকবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন মুহাম্মাদ (স) হচ্ছেন আমাদের শেষ নবী, এর পরে আর কোন নবী বা রাসূল নেই। ১৯৭৬ সালে সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) উপাধির পরিবর্তে ওয়ারীথ দীন মুহাম্মাদ সাধারন ইমাম উপাধি গ্রহন করেন এবং ‘নেশন অব ইসলাম’ নামক সংগঠন হৃদ করে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড কমিউনিটি অফ আল-ইসলাম ইন দ্য ওয়েস্ট (The World Community of Al-Islam in the West)’ নামে মূল ধারার ইসলামী আন্দোলন শুরু করেন যা পরবর্তীতে ‘আমেরিকান সোসাইটি অফ মুসলিমস (American Society of Muslims)’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। একই বছর প্রথমবারের মত এলাইজা মুহাম্মাদ মসজিদে ১০০০০ মুসল্লীর উপস্থিতিতে ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালে লুইস ফারাখান (Louis Farrakhan) ওয়ারিথ দীন মুহাম্মাদের পুনগঠিত সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন এবং পুনরায় নেশন অব ইসলামের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে আকবর মুহাম্মাদও প্রকাশ্য তার পিতার প্রচারিত ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং কুরআন সুন্নাহের দিকে সকলকে আহবান জানান। ১৯৮০ সালে দীন মুহাম্মাদ তার নাম পরিবর্তন করে ওয়ারিদুদ্দিন মুহাম্মাদ নামকরন করেন। ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহ প্রদত্ত এবং তার রাসূল (স) শেখানো ইসলাম প্রচারে লিপ্ত ছিলেন ওয়ারিদুদ্দিন মুহাম্মাদ।

কনফারেন্সে ওয়ারিথ দীন মুহাম্মাদ (মাঝে)
আমেরিকায় ইমিগ্রান্ট মুসলমান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ফিলিপ টেদ্র (Philip Tedro) যিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে একজন গ্রীক নাগরিক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তিনি তার নাম পরিবর্তন করেন এবং পবিত্র হজ্জ্ব পালন করার পর হাজী আলী নাম ধারন করেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মরুভূমি বিষয়ে সেনাবাহিনীকে দক্ষ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়। সেজন্য মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সরকার বেশ কিছু সংখ্যক উট ক্রয় করে এবং উটগুলো পরিচর্যা করার জন্য বেশ কিছু বিদেশী নাগরিককে ভাড়া করে যাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুসলমান এবং তিনি ছিলেন হাজী আলী। ১৮৫৬ সালে হাজী আলী উট পরিচর্চা দলের সদস্য এবং সরদার বা পরিচালক নিয়োগ করা হয়। আমেরিকানরা হাজী আলীকে হাইজলি বলে ডাকত। ১৯০৩ সালে হাজী আলীর মৃত্যুর পর তাকে কোর্টসাইট অ্যারিজোনা (Quartzsite Arizona) নামক একটি স্থানে দাফন করা হয় এবং তার করবটি বর্তমানে কোর্টসাইট অ্যারিজোনার বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র। হাজী তার জীবনে অ্যারিজোনার একজন ইমাম ছিলেন।
উনিশ শতকের প্রথদিকে মার্কিন যুক্টরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন বিষয়ক কোন আইন ছিল না। যে কোন ব্যক্তি মাত্র ৫০ সেন্ট পরিশোধ করে মার্কিন যুক্টরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারত। ১৮৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট সরকার সে দেশের নির্দিষ্ট এলাকায় অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বসবাস করার অনুমতি দেয়। তখন থেকেই মুসলমানরা নিজেদের বিভিন্ন কমিউনিটি গড়ে তোলে। ১৮৯৯ সালে হাসান জুমআ সিরিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে আমেরিকার নর্থ ডেকোটা অঙ্গরাজ্যে (North Dakota) আগত প্রায় বিশ ত্রিশটি মুসলিম পরিবারের সমন্বয়ে গঠিত এমনই একটি কমিউনিটিকে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। ১৯২৯ সালে নোর্থ ডেকোটায় তারা একটি মসজিদ নির্মান করেন যেটি ছিল আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম একটি পুরনো মসজিদ। তার আগে লেবানন, জর্ডান, সিরিয়াসহ বিভিন্ন আরবদেশ থেকে আগত মুসলমানরা ১৯০৮ সালে আমেরিকায় প্রথম মসজিদ নির্মান করেন। এভাবে ক্রমাগত আলবেনিয়া, তুর্কিসহ অন্যান্য দেশ থেকে আগত মুসলমানরা আমেরিকায় মসজিদ নির্মানসহ ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন।
মার্কিন যুক্টরাষ্ট্রে ক্রমাগত মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্টরাষ্ট্র সরকার ভীত হয়ে ১৯২৪ সালে “ন্যাশনাল অরিজিন অ্যাক্ট অথবা এশিয়ান এক্সক্লুশন অ্যাক্ট (National origin act or Asian exclusion act)” নামে নতুন ইমিগ্রেশন আইন প্রনয়ন করে যার মাধ্যমে চীন, জাপান, ভারতসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আভিবাসীত্ব গ্রহনের অধিকার খর্ব করা হয়।
১৯২৮ সালে শেখ আলহাজ দাউদ আহমেদ ফায়সাল (Shaikh Al-haj Daoud Ahmed Faisal) নিউইয়র্কে দ্য ইসলামিক প্রোপাগেশান সেন্টার অফ আমেরিকা (The Islamic Propagacation Center of America) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘ইসলামিক মিশন সোসাইটি (Islamic Mision Society)’ নামেও আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। জানা যায় আমেরিকায় ইসলাম প্রচারের জন্য জর্ডানের শায়খ খালিদ এবং সৌদী বাদশাহ সৌদ শেখ ফায়সালকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগীতা করেন। ১৯৩০ সালে প্রফেসর এজেনদিন (Professor Ezeldeen) এর নেতৃত্বে ‘দ্য আদ্দিনু আল্লাহ ইউনিভার্সাল আরব অ্যাসোসিয়েশান (The Addeynu Allah Universal Arab Association)’ সংগঠনের সূচনা হয়।

শেখ দাউদ আহমেদ ফায়সাল (বাম থেকে দ্বিতীয়), ১৯৬৪/৬৫
১৯৫৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ইসলামী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে ‘দ্য ফেডারেশন অফ ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশান অফ দ্য ইউএস অ্যান্ড কানাডা (The Federation of Islamic Associations (FIA) of the US and Canada)’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৫ সালে শেখ দাউদ আহমেদ ফায়সাল নিউইয়র্ক সিটিতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেন যা এখনও চালু রয়েছে।১৯৫৭ সালের ২৮ জুন কয়েকটি মুসলিম দেশের অর্থায়নে The Islamic Center of Washington Dc” প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেন্টারটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি এইসেনহাওয়ার (Dwight D. Eisenhower) বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অধিনে অন্যান্য ধর্মের ইমারাতের মতই এই কেন্দ্রটি, উপসনা করার এই জায়গাটিকেও স্বাগতম। তোমাদের নিজস্ব ধর্ম এবং নীতি অনুযায়ী উপসনা করা এবং নিজস্ব চার্চ (মসজিদ) থাকার অধিকারের ব্যাপারে আমেরিকানরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করে যাবে (Under the American Constitution this Center, this place of worship is as welcome as could be any similar edifice of any religion. Americans would fight with all their strength for your right to have your own church and worship according to your own conscience and own beliefs)”। এটি ছিল মার্কিন যুক্টরাষ্টের ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিক মসজিদ। ১৯৬২ সালে আফ্রো-আমেরিকান মুসলমানদের দ্বারা ‘দার-উল-ইসলাম মুভমেন্ট (Dar-ul-Islam Movement)’ নামক আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২-৮৩ সালে এই সংগঠনের অবলুপ্তির আগ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন