Translate

বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১২

আমার মিরসরাই স্কুলে যায় না ওরা

মিরসরাইস্কুলে যায় না ওরা জয়নাল আবেদীন, মিরসরাইসরকারি এক জরিপে উপজেলায় স্কুলবিমুখ শিশুর সংখ্যা বলা হয়েছে মাত্র ১৩১ জন! কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানী তথ্যের সঙ্গে সরকারি জরিপের হিসাবের অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে।
এক : মিরসরাইয়ের ৪ নম্বর ধুম ইউনিয়নের পশ্চিমাঞ্চলে জেগে ওঠা চরে নির্মিত আবাসন প্রকল্পে বসবাস করছে দুইশ পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দা মোহসেন আলী, কাজল বেগম, নুরুল হক জানান, এ আবাসন প্রকল্পে স্কুলবিমুখ শিশু রয়েছে কমপক্ষে ৪৫০ জন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, অতি দারিদ্র্যতা এবং অসচেতনতার কারণে এখানকার শিশুরা বিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছে।
দুই : মিরসরাই উপজেলার তিন ইউনিয়নের আট গ্রামের সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করছে প্রায় এক হাজার ৩৭৫ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার। তাদের সংগঠন মিরসরাই নৃ-তাত্তি্বক সমবায় সমিতির সভাপতি সাধন চন্দ্র ত্রিপুরা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এসব পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্গম পাহাড়ে বসবাস, দারিদ্র্যতা, শিশুর প্রতি নির্ভরতা এবং অসচেতনতার কারণে সিংহভাগ শিশু স্কুল থেকে দূরে। স্কুলে যায় না এমন শিশুর সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ হাজার।'
তিন : উত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র বেদে পল্লী রয়েছে মিরসরাইয়ের ৩ নম্বর জোরারগন্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় গ্রামে। বেদেপাড়ার সর্দার জাফর আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তিনশ পরিবারের এ পাড়ায় বাস করছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাসিন্দা। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজার। অথচ একজনও স্কুলে যায় না।'
আবাসন প্রকল্প, বেদেপাড়া এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের ছয় হাজার ৪৫০ জন শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছে। এ ছাড়া মিরসরাইয়ের ৯ নম্বর সদর ইউনিয়নের তিন গ্রামে নেই একটিও প্রাথমিক বিদ্যালয়। আবুনগর গ্রামের অসংখ্য শিশু বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মিরসরাইয়ের ২৯টি জেলেপল্লীতে বাস করে প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। জেলেপল্লীর একজন শিশুও বিদ্যালয়ে যায় না। পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রাখতে বাবা অথবা দাদার সঙ্গে মাছ শিকারে নেমে পড়ে শিশু বয়স থেকেই। জেলেপাড়ার শিশুদের বিদ্যালয়গামী করে তোলার কোন উদ্যোগ সরকারি-বেসরকারিভাবে নেওয়া হয়নি।
সুযোগ পেলে বিদ্যালয়ে পড়তে চায় বঞ্চিত শিশুরা- এমন কথা জানালেন অভিভাবকরা। ৪ নম্বর ধুম ইউনিয়নের মোবারকঘোনা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা বেলাল হোসেন, নুর বানু, বিবি আয়েশা; বেদেপাড়ার সর্দার জাফর আহাম্মদ এবং নৃ-তাত্তি্বক সমবায় সমিতির সভাপতি সাধন চন্দ্র ত্রিপুরা জানান, কোন না কোনভাবে সুযোগ পেলেই শিশুরা বিদ্যালয়ে পড়তে চায়। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের কোন রকমের দ্বিধা নেই।
মিরসরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, মিরসরাইয়ে ১৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৩টি কিন্ডারগার্টেন ও ৩৯টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে ৫৬ হাজার ৭১৩ জন শিশু শিক্ষার্থী। প্রাথমিক পর্যায়ে এ উপজেলায় ঝরে পড়ার হার ১৬ শতাংশ।
পুরো উপজেলায় মাত্র ১৩১ জন শিশু স্কুলবিমুখ রয়েছে দাবি করে হারুনুর রশিদ আরো বলেন, 'উপজেলার সব স্থানে সরেজমিন গিয়ে বাড়ি থেকে ধরে এনে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানো হচ্ছে। কিন্তু তারা নিয়মিত স্কুলে আসে না।'
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ কুতুব বলেন, মিরসরাইয়ে শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা না থাকলেও মহিলা অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রমে শিশুদের সম্পৃক্ত করা হয় বলেও দাবি করেন ইউএনও।
শিশু অধিকার দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি কোন সংস্থা সংগঠনের উদ্যোগে কোন কর্মসূচি না থাকার কথাও জানালেন ইউএনও সাঈদ কুতুব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন